প্রেমে ছ্যাকা খাওয়ার গল্প | ছ্যাকা খাওয়া স্ট্যাটাস

কষ্টের ছ্যাকা খাওয়া পোষ্ট

কষ্টের ছ্যাকা খাওয়া পোষ্ট

আমার ছোট ফুফুর চারজন মেয়ে। সবাই পিঠাপিঠি। ফুফুরা গ্রামে থাকেন না। ফুফার চাকরির হাত ধরে ঢাকায় বসবাস করেন।


বড় ফুফাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমাদের পরিবারের সবার যেতে হবে। আমাদের পরিবারের জনসংখ্যাও কম নয়। আমিই শুধু বাবার একমাত্র ছেলে। আমার অন্য দুই চাচার ঘরে ছেলে সন্তানের সংখ্যাই আটজন। 


ফুফু শহুরী হওয়ায় আমাদের সাথে একটু দূরত্ব রয়েছে। তেমন খোঁজ-খবর নেওয়া হয় না। কিন্তু তাদের প্রথম মেয়ের বিয়েতে কেউ যেন বাদ না থাকেন, সে নিয়ে কড়া নিবেদন রয়েছে। আর আমরা না গেলে ছোট চাচা ভীষণ রাগ করবেন। সেদিক বিবেচনা করে যেতে রাজি হই। তার থেকে বড় কথা হল, অন্য চাচাতো ভাইয়েরা বেশ আগ্রহ নিয়েই যেতে রাজি। এমনকি আমাকেও খুব করে ধরেছেন যেতে।


 তখন আমি পরিমিত বয়সের ছেলে। ফুফাতো বোনদের একজন চাচাতো বোন রয়েছে। আমি জানতাম না। চিনতামই না। অন্যঘরের চাচাতো ভাইয়েরা কমবেশী ফুফুর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো বলে ঐ চাচাতো বোনকে চিনতো। চাচাতো বোনের নাম মুন্নি। কি স্নিগ্ধ চেহারা। হৃদয় কাড়া। যে দেখে সবাই প্রেমে পড়ে। 


আমার বয়সী এক চাচাতো ভাই আমাকে জানাল- সবার ঐদিকে যাওয়ার এতো আগ্রহ কেন জানো? ঐ মুন্নিকে ঘিরেই। যেহেতু সবাই পরিমিত বয়সের। সবারই চোখের আকর্ষণ কেড়েছে মুন্নি আপু।


আমার মেজো কাকার বড় ছেলের একবার ডায়রি হাতে পাই। সেখানে লেখা ছিল- মুন্নি আর ক'টা দিন অপেক্ষা করো। তোমার জন্য গিফট নিয়ে আসবো। তখন বুঝিনি এই মুন্নি কে!


অন্য এক ফুফাতো ভাই কয়েকটা চিঠি লিখে রেখেছেন এই মুন্নিকে কেন্দ্র করে। অন্য আরো চাচাতো ভাইদের মনেও নাকি মুন্নি জায়গা করে আছে। 


আসলে মুন্নি আপু সবসময় আমার ফুফাতো বোনদের বাসায় পড়ে থাকতো। তাদের সাথে তার দিন কাটতো। আর আমার চাচাতো ভাইয়েরাও আলাদা আলাদা সময় যেই ফুফুর বাসায় যেত। মুন্নি আপুর সাথে কথা বলতো। মুন্নি আপুও তেমন বয়সের নয়। মাত্র তরুনীর বয়সে পা দিয়েছে। মন ছিল উড়ুউড়ু। যেই কথা বলতে আসতো। তার সাথেই তাল মিলাতো। এটাতেই হয়তো সবার মনআবেগের ভেসে উঠে-মুন্নি আপু তার!


খুব ঘটা করেই সবাই একসাথে ফুফুর বাড়ি যাই। তখন সন্ধ্যা নামি নামি। ঐদিনই আপুর হলুদ সন্ধ্যা। আপু কি সুন্দর সেজেছে। তার থেকে বেশী সুন্দর লাগছে মুন্নি আপুকে। পরীর মত এদিক ওদিক ঘুরছে। সত্যিই চোখে পড়ার মত মেয়ে। চাচাতো ভাইয়েরা সবাই একটু আলাদা করে কথা বলার জন্য ব্যাকুলহৃদে অপেক্ষায় থাকে। আমি সেদিন দেখেছি একটা মেয়ের জন্য কতোজন আগ্রহী হতে পারে। তখন মনে পড়ল ঐতিহাসিকের এই কথাটা- একজন রুপসী নারী পুরো একটি দেশ ও জাতিকে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। লক্ষ লক্ষ সৈন্যও তা করতে পারে না। নারীর মধ্যে রয়েছে এক তীব্র আকর্ষন। অপ্রতিরোধ্য এক নেশা ও অদৃশ্য এক যাদু! পৃথিবী বিখ্যাত বীর যোদ্ধাকেও রাজ সিংহাসন থেকে নামিয়ে পথের ফকির বানিয়ে দিয়েছে এই নারীই!!!!!


রাত বারোটার কাছাকাছি সময়ে সবাই আপুর পাশে বসে ছবি তুলতে থাকে। সবার আকাঙ্খা মুন্নি আপুর সাথে ছবি তুলবে। মুন্নি আপুও কাউকে হতাশ করেনি। সবার সাথেই ছবি তোলে। হাসি খুশীই।


বিপত্তি বাঁধে আরেকটু পর। মুন্নি আপুদের বাসা ফুফুর বাসা থেকে একটু দূরে। সারাদিন ঘুরেফিরে মেয়েটা কাহিল হয়ে আছে। মুন্নি আপু বাসায় চলে যাবে। কে তাকে দিয়ে আসবে এটা নিয়ে প্রতিযোগিতা লাগে। বড় চাচাতো ভাই অন্যদের বলে আমি মুন্নিকে দিয়ে আসি। তোরা থাক। ফুফাতো ভাই মানেন না। ওনি বলেন ওনিও সাথে যাবেন। অন্য চাচাতো ভাইদের মনেও একটু কেমন মনমানিল্যতা চলে আসে। বড় চাচাতো ভাই তার আনা গিফট একান্তে দিতে চেয়েছিল। ফুফাতো ভাই তার চিঠি দেওয়ার জন্য এতো আবেগ দেখিয়েছিল। একজন আরেকজনের এই পছন্দের বিষয়টা জানতো। কিন্তু সবার মনের আশা হল- মুন্নি আপু কাকে একসেপ্ট করেন। পরে রাগারাগি করে কেউই যাননি। আমি আর এক ফুফাতো বোন মুন্নি আপুকে তাদের বাসায় দিয়ে আসি।


বিয়ের পর ফুফাতো বোনকে ছেলে পক্ষ নিয়ে যাবে। আমাদের গ্রামের রেওয়াজ অনুযায়ী নতুন বউয়ের সাথে তার আত্নীয়-স্বজনের ভেতর ছোট মেয়ে বা ছেলেরা যাবে। যেন নতুন বউ সে বাড়িতে একজন গল্পের সাথী পান। অপরিচিত পরিবেশ, অপরিচিত মানুষের মাঝে নিজের একাকিত্ব দূর করতে পারেন।


দুলা ভাইয়ের বাড়ি টাঙ্গাইল। নবীনগর থেকে ভালোই দূরত্ব হওয়ায় কেউ যেতে রাজি হচ্ছিল না। ছোট মেয়ে বা ছেলেদের পরিবর্তে বড়রাও কেউ রাজি নয়। অবশেষে সবাই বলে কয়ে মুন্নি আপুকে রাজি করান সে বাড়িতে যেতে। মুন্নি আপুর যাওয়ার কথা শুনে আমার চাচাতো ভাইয়েরা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সবাই যাবে। ওবাড়িতে গিয়ে যদি একটু ভাব জমানো যায়। হয়তো এই আশায় সবার এতো আগ্রহ। অবশ্য দুলা ভাইদের বাড়ি থেকে যমুনা সেতু কাছেই। যাওয়ার হাত ধরে সবার একটা ট্যুর দেওয়ার ধান্ধা।  


যমুনা সেতুতে যেতে মুন্নি আপুর ভাড়া দিতে সবার সে কি আগ্রহ। কারটা গ্রহন করবেন এমন ভেবে বিরক্ত হয়ে মুন্নি আপু নিজেই নিজের ভাড়া দেন। আর বলে দেন কেউ যেন পথেঘাটে তার প্রতি আর কেয়ার না দেখায়।


আমার অন্য ঘরের এক ফুফাতো ভাই কিভাবে যেন মুন্নি আপুর আম্মুর ফোন নাম্বার নিয়ে আসেন। প্রথমে এস এম এসে, পরে একেবারে ফোনে কথা বলে মুন্নি আপুর সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেন। তাদের মন দেওয়া নেওয়া হয়। এক সময় ভালো সম্পর্কের দিকে গড়ায়। ফুফাতো ভাই মুন্নি আপুকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুতি নেন। প্রথম দিকে অন্য সকল চাচাতো ভাইয়ের মন খারাপ হলেও আস্তে আস্তে সবাই মানিয়ে নেন। যেন তারাই সুখে থাকেন। এক জিবনে এক মেয়েকে নিয়ে আর আফসোস করে কি হবে!


ফুফাতো ভাই একদিন গোপনে মুন্নি আপুর সাথে দেখা করতে যান। সাথে তার একফ্রেন্ডকে নিয়ে যান। তারা মুন্নি আপুর সাথে বাসা থেকে দূরে এক জায়গায় দেখা করেন। মজার ব্যাপার হল- নিয়ে যাওয়া ফ্রেন্ড ছিল একটু উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে। তিনি মুন্নি আপুকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেন। ফুফাতো ভাইকে না জানিয়ে পরেরদিন নিজের পরিবার নিয়ে মুন্নি আপুকে আংটি পরিয়ে বিয়ের ডেট দিয়ে আসেন। ফুফাতো ভাই এই খবর শুনে তো হার্টঅ্যাটাক অবস্হা। কি আর করবেন! মুন্নি আপুকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেন তার পরিবার জানেন। 


চারদিন পর বিয়ে। তৃতীয় দিনের মাথায় মুন্নি আপু সবাইকে ফেলে পাড়ি জমান তার ছোট্টকালের ক্লাসমেট বন্ধু রাহুলের সাথে। ফুফাতো ভাইকে কাঁদিয়ে, সদ্য বিয়ে ঠিক হওয়া ছেলেকে রেখে, আমার অন্য চাচাতো ভাইদের মুখ পানসে করে নিজেরা নিজেদের মত করে ঘর বাঁধেন।


ছ্যাকা

নজরুল ইসলাম


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।