গল্প: দ্বিতীয় স্ত্রী | স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

 স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক গল্প

স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক গল্প

গল্প :- দ্বিতীয় স্ত্রী
আজ আমার বিয়ে হয়েছে ২য় বারের মত। আমার প্রথম স্বামী রায়হান মারা গেছে আজ দুই বছর। এখন

আমাকে আমার দুই ননদ বাসরঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে। বাসর ঘরটা গোলাপ ফুল,সাদা কি একটা ফুল

দিয়ে সাজানো নাম জানি না। আর সেই সকাল থেকে বসে আছি তাই কোমর টা ব্যথা করছে। তাই একটু হাটি বলে খাট থেকে নামলাম। তারপর গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালাম। আয়নায় আজ আমাকে সুন্দরই লাগছে কিন্তু প্রথমবারের মত না। সেই সময় মুখে একটা লজ্জা লজ্জা ভাব ছিলো। রায়হানের সাথে ৩বছর প্রেম করে তারপর বাবা মায়ের আর্শীবাদ নিয়েই বিয়ে করেছিলাম। সেই বাসর রাতে চোখে লজ্জা ছিলো। কিন্তু সেদিন রায়হানের ভালোবাসার ই ছোয়ায় সব ভুলে গেছি। রায়হানের কথা আজ আমার ২য় স্বামীর ঘরে মনে পড়ছে হায় রে জীবন।


এমন সময় হঠাৎ কার যেন পায়ের শব্দ পেলাম। ছুটে খাটে উঠে বসলাম। নতুন বউ যেহেতু এভাবে ত আর ঘোরাঘুরি করতে পারি না। মা খুব অসুস্থ। বলতে গেলে মারাই যাবে এত অসুস্থ। কিন্তু মারা যাবার আগে আমার খুশি দেখতে চায় সে। তাই বাবা তাড়াতাড়ি আমার জন্য ছেলে খুঁজে বিয়ে দিলো তাও এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে দিয়েছে।


শুনেছি ছেলের সাথে নাকি তার আগের বউয়ের ডিভোর্স হয়েছে। (মানে ছেলের জন্যেও এটা দ্বিতীয় বিয়ে)


তাই আমি বিয়েতে এক্টু অমত করেছিলাম। চেয়েছিলাম যার স্ত্রী মারা গেছে এমন কাউকে বিয়ে করতে সে হয়তো হারানোর ব্যথা বুঝবে। তাহলে দুজন দুজনকে সান্তনা দিতে পারতাম। এখন কাকে দিব?


সে হয়তো নিজ ইচ্ছাতে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে। সে কি বুঝবে আমার কষ্ট। নাকি রাতে শুধু আমার শরীর খুঁজবে আর দিনে কাজের মেয়ে। এসব কথা মাকেও বলেছিলাম। কিন্তু মা তখন বললো।


---জামাই মানেই এগুলোরে মা। তোকে মানাইয়া নিতে হবে।


উত্তরে আমিও মাকে বললাম।


---মা রায়হান তো এমন ছিল না।


তারপর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমাকে বললো।


---বেশী সুখ কপালে সই না'রে তোর তাই আল্লাহ নিয়ে গেলো জামাইবাবাকে।


আমিও মায়ের কথা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারতাম না। তাই আর কথা বাড়ায় নি তাদের কথানুযায়ী রাজী হয়ে যাই। আমাকে বাবা ছেলের ছবি দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই দেখি নি। অবশ্য ছেলে দেখাও করতে চেয়েছিল আমিই দেখা করি নি। এমন কি ছেলের নাম পর্যন্ত শুনতে চাই নেই।


তখন বাবা শুধু বলেছিলো ছেলে নাকি খুব ভালো।আমাকে খুশী রাখবে।


আমি বাবার এমন কথা বললেই তখন আমার ঘরে চলে যেতাম। তারপর আমার লকেট টা খুলতাম। ওখানে রায়হানের ছবি আছে। আজ বধুসাজে অনেক গহনা ই আছে কিন্তু আমার কাছে অমুল্য সেই লকেট। কিন্তু ভয় লাগছিলো। যদি সে এই বাসরঘরের সব গহনার সাথে সেটাও খুলে ফেলে। 


আমি আমার মনকে রেডি করেছিলাম আমার দেহ নিয়ে যতই সে খেলুক কিন্তু আমার এই মন শুধু রায়হানের। ভালোবাসাও শুধু রায়হানের জন্য।

এসব চিন্তা নিয়ে যখন মাথা ঘোরপাক খাচ্ছিলো আমার তখন কে যেন দরজা খুলে ভেতরে আসলো।

কে আর হবে আমার নতুন স্বামী। আমার খুব ভয় লাগছিলো। আজ আমি আর রায়হানের থাকব না। তারপর সে আমাকে ডাক দিলো।


--মিরা........


ডাক শুনে হঠাৎ আমি চমকে উঠলাম। কারন এটা আমার পরিচিত কন্ঠ। কিন্তু কে সে?

তারপর সে আবার ডাক দিলো।


--মিরা বুচি.?


এবার আমি রীতিমত অবাক। কে ইনি?

এইভাবে তো আমাকে শুধু রায়হান ডাকতো। এখন আমার রায়হানের কথা মনে আসছিলো খুব। চোখ আর ধরে রাখতে পারলাম না। রায়হান বলে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম। তারপর সে এসে আমার কাধে হাত রাখলো। কিন্তু আমি ক্রমশ কান্না করে যাচ্ছি। 

তখন এক পর্যায়ে আমার মনে হল এক ফোটা পানি আমার কাধে পড়লো। আমি কান্না থামালাম, তারপর

মাথা উঠিয়ে দেখলাম। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কাব্য।


হ্যাঁ কাব্য......

ভার্সিটিতে আমি, রায়হান, আর কাব্য খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। আমার আর রায়হানের সর্ম্পক হওয়ার পর ই ও ওর পরিবারের সাথে বিদেশ চলে যায়। ওর জন্য আমি প্রচুর কেঁদেছিলাম। কারন সে আমাকে কিছু না বলেই চলে গিয়েছিলো।


কিন্তু আজ এমন সময়ে ওর সাথে আবার দেখা যখন আমি তার ২য় স্ত্রী। আমার চোখে জল দেখলে কাব্য আগেও আমার সাথে কান্না করতো। আজো কান্না করছে। তারপর আমি ওকে দেখার পর আমার কান্না থামালাম। আমি এ মুহুর্তে বুঝতেই পারছি না কি করবো। পুরানো বন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে খুশী হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরবো? না কি নতুন স্বামী হিসেবে ওকে সালাম দিবো।


আমার জীবন যেন এক মোড়ে এসে থেমে গেছে। আমার একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম। তারপর কাব্য আমার স্তব্ধটা বুঝতে পেরে। চটজলদি ছুটল পানি আনতে আর ছুটতে গিয়ে পড়ে গেলো।


আর তা দেখে আমি সাথে সাথেই হেসে উঠলাম। আজ অনেকদিন পর আমি হেসেছি রায়হান যাবার পর এই প্রথম আমার মুখ দিয়ে হাসি ফুটলো।

.

.

.

গল্প :- দ্বিতীয় স্ত্রী

পর্ব :- ০১

Writer :- Kabbo Ahammad

.

.

.

গল্প :- দ্বিতীয় স্ত্রী

পর্ব :- ০২

Writer :- Kabbo Ahammad

.

.

.

-: আর তা দেখে আমি সাথে সাথেই হেসে উঠলাম। আজ অনেকদিন পর আমি হেসেছি। রায়হান মারা যাবার পর এই প্রথম আমার মুখ দিয়ে হাসি ফুটলো।

আসলে কাব্য এভাবে পড়ে যাওয়ায় আমি হাসছিলাম।আর হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে কান্না করে দিলাম। তখন আমার কান্না দেখে কাব্য উঠে আমার কাছে আসলো তারপর বললো।


--এই নে বুচি

(এক গ্লাস পানি আমার সামনে এগিয়ে দিয়ে)


---প্লিজ কাব্য আমাকে বুচি ডেকো না। আমার রায়হানের কথা মনে পড়ে যায়। (মিরা)


--হু আচ্ছা, ডাকবো না। মিরা বলে ডাকবো। প্লিজ এবার পানিটা নাও।


তখন আমি কাব্যর দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। ওর কথা আর রায়হানের কথার সাথে বেশ মিল আছে। আর থাকবে ই তো ভার্সিটিতে ও আর রায়হান খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলো।


তারপর আমি পানিটা নিয়ে পান করলাম। সত্যি বলতে অনেক পানির পিপাসা পেয়েছিলো। পানিটা খেয়ে নেওয়ার পর গ্লাস টা নিয়ে গেলো কাব্য। ও যাবার পর মনটা কেমন জানি করছিলো। আমার সাথে এটা কি হলো। যাকে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছি সে আমার জীবন নিয়েই চলে গেলো। আর যার চলে যাওয়ার পর অথাৎ কাব্য বিদেশে চলে যাওয়ার পর আমি আর রায়হান ওকে অনেক খুঁজেছিলাম। অবশ্য বেশী রায়হান খুঁজেছিলো। কিন্তু আজ তার দেখা মিলেছে ঠিক কিন্তু রায়হান নেই। আমি এসব ভাবছিলাম। 


এদিকে কিছুক্ষন পর দেখি কাব্য একটা প্লেটে ভাত নিয়ে এসেছে। তারপর আমাকে বললো।


--এই নাও ভাত খাও।


---না আমার ক্ষুধা লাগে নাই। তুমি খাও


তারপর দেখলাম কাব্য ভাত মাখছে। কি আর মনে হয় নিজেই খাবে। কিন্তু না, কাব্য ভাত মাখিয়ে আমার মুখের সামনে নিয়ে এসে বললো।


--মিরা হা করো প্লিজ। (কাব্য)


---না আমি খাবো না।(মিরা)


--আচ্ছা মিরা তোমার মনে আছে আমাদের ইংলিশ প্রফেসর এর নাম কি?(কাব্য)


---হুম মনে আছে। দিলারা মাহবুব।(মিরা)


কথাটা বলার মাঝে কখন যে কাব্যর কথার মাঝে আমি হা করে ভাতটা খেয়েছি মনে নেই। কাব্য ঠিক এভাবে আমাকে ওর কথার ছলে ভাত খাইয়ে দিলো। আর আমিও কখন যে ভাত খাওয়া শেষ টের ই পেলাম না।


--মিরা দেখেছো ভাত খাওয়া শেষ এখন হতে আমিই তোমাকে ভাত খাইয়ে দিবো। অনেক রোগা হয়ে গেছ।আগে কত সুন্দর গোলুমলু ছিলে আর এখন।(কাব্য)


এদিকে আমি কাব্যর এ রকম কথা শুনে আবার আমার চোখ ছলমল করে উঠলো। খুব ইচ্ছা করছিলো বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে একটু কান্না করি। কিন্তু ভয় করছিলো যদি অনুভূতির কারনে অন্য কিছু হয়ে যায়। কারন ও এখন আমার ২য় স্বামী। আমার এই দেহটার প্রতি ওর তো অধিকার আছে। তখন কাব্য আমার কান্নার চোখ দেখে বললো।


--প্লিজ মিরা কান্না করো না। তোমার চোখের পানি দেখলে আমার কষ্টে বুক ফেটে যায়। যাও ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।


আমিও কাব্যর কথামত ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর সব গহনা খুললাম। কিন্তু লকেট টা দেখে আর কান্না থামাতে পারলাম। বেসিনের কল ছেড়ে জোড়ে কান্না করছিলাম। চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম। আর রায়হানের ছবিটা খুলে দেখছিলাম। রায়হানকে খুব বলতে ইচ্ছা করছে দেখো তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ডকে পেয়েছি কিন্তু তোমার বুচি তার ২য় স্ত্রী।

তখন হঠাৎ কাব্য ওয়াসরুমের দরজা ধাক্কা দিলো। আর বললো।


--মিরা........

মিরা একটু বের হও প্লিজ।


কাব্যর আওয়াজ শুনে আমি জলদি লকেট টা লুকালাম। কারন মাকে কথা দিয়েছি মা বলেছিলো।


---মারে তোর বর্তমান স্বামীকে কখনো বুঝতে দিবি না যে তুই জামাইবাবাজীকে মিস করছিস।


তখন আমিও মাকে বলেছিলাম।


---রায়হানকে আমি কখনো ভুলতে পারবো না আর তুমি মিস করার কথা বলছো।


মা তখন আমার কথা শুনে কাঁদতো।

যাই হোক আমি মায়ের কথা রাখতে পারলাম না। কাব্যর সামনে আমি রায়হানের জন্য কেঁদেছি। তারপর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলাম। দেখি কাব্য বিছানা গুচাচ্ছে। এটা দেখে হঠাৎ আমার বুকে ব্যথা উঠলো। তাহলে এখন কি কাব্য আমাকে তার স্ত্রী বলে ঝাপিয়ে পড়বে? হয়তো পুরুষ ই ত....


তখন জান্য আমাকে দেখে একটু মুচকি হাসি দিলো আর বললো।


--মিরা তুমি খাটে ঘুমাও আমি সোফায় ঘুমাবো।


কথাটা শুনার পর আমি ওর দিকে একদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম হয়ত বন্ধু বলে আমাকে দেখে একটু মায়া করলো। তারপর আমি গিয়ে বিছানায় বসলাম

ও সোফায় বসে ল্যাপটপ দিয়ে কাজ করছে। আমি ওর দিকে তাকিয়েছিলাম আর ভাবছিলাম বাবা তো বলেছিলো আমার স্বামী মানে কাব্য ডিভোর্সি।


কিন্তু আমি জানি কাব্য অনেক ভালো একটা ছেলে তাহলে কেন ওর ডিভোর্স হলো?? তখন মনে একটু সাহস করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম।


---আচ্ছা কাব্য তুমি বিয়ে কবে করলে? আর ছাড়াছাড়ি কবে হলো??


আমার প্রশ্ন শুনে কাব্য কিছুক্ষণ চুপ ছিলো। প্রায় অনেক্ষন। মনে হয় আঘাত পেয়েছে আমার কথায়। তাই আমি আর কিছু বললাম না। আমার নিজের কষ্টের শেষ নেই আবার অন্যের কষ্ট কি ভাববো?? তাই শুয়ে পড়তে নিলাম তখনি কাব্য বলে উঠলো।


--ওর নাম রিয়া ছিলো।


কাব্যর কথা শুনে আমি সাথে সাথেই উঠে বসলাম। তারপর কাব্য আবার বলতে শুরু করলো।


--রিয়ার সাথে আমার বিয়ে বাবা মার মাধ্যমেই হয়েছিলো। এবং বিয়ের কিছুদিন পর আমরা বিদেশ চলে যাই। তার ১বছর পর আমার ১টা মেয়ে হয় ওর নাম রাইসা। কিন্তু রাইসার বয়স যখন ৫মাস রিয়া তখন নতুন করে কাউকে ভালোবাসে নতুন একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়ে যায়। অবশ্য আমি পরকিয়া বলবো না এটাকে। রিয়াকে হয়তো আমি খুশী রাখতে পারি নি তাই সে নতুন ভালোবাসা পেয়েছে যে তাকে খুশী রাখবে। তারপর ও আমার কাছে ডিভোর্স চায়।এবং আমিও ওকে খুশি মনে ডিভোর্স দেই। কিন্তু খারাপ লাগতো আমার মেয়ের জন্য। আমি আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে যেতাম মাঝে মাঝে। রিয়া এবং তার স্বামী আমাকে দেখা করতে দিত কিন্তু মিনিট খানেকের জন্য। তারপর থেকে নিজের মেয়ের সাথে মিনিট খানেক দেখা করতাম। এভাবে রাইসার বয়স যখন দুই বছর পূর্ণ হয়, তখন আমার রাইসা না'কি খুব অসুস্থ হয়ে যায়। অবশ্য আমি তখন বিদেশে। তারপর একদিন সকালে রিয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললো আমার মেয়ে রাইসা নাকি আর দুনিয়াতে নেই। আসলে আমি কতটা দুর্ভাগা যে নিজের মেয়েকে শেষ দেখা পর্যন্ত দেখতে পারি নাই।


তারপর কাব্য একটু স্তব্ধ। 

এদিকে আমার কাব্যর কথা শুনে মনে হচ্ছিলো আমার কষ্ট ওর কষ্টের কাছে তুচ্ছ। কারন কাব্য যখন রাইসার কথা বলছিলো আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো তখন আমি নির্বাক দর্শকের মত তা দেখছি আর ভাবছি কি করবো আমি?? 


কাব্যকে বন্ধুর মত সান্তনা দিবো নাকি স্ত্রীর মত?

তারপর একটা সময় কাব্য ওর চোখ মুছে লাইট ওফ করে দিয়ে বললো।


--মিরা ঘুমাও প্লিজ। আজ অনেক ধকল গেছে। আমি শুইয়ে পড়লাম।


কিন্তু আজ আমি যেন রায়হানের কথা না ভেবে কাব্যর কষ্টের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে কাব্য আমাকে ডাক দিলো। আমি ঘুমের ঘোরে স্পষ্ট শুনছি কাব্য বলছে।


--মিরা....মিরা ঘুম থেকে উঠো প্লিজ।


তারপর আমি ওর কথামত উঠলাম।


--নামায পড়বে না মিরা?


---না।

যার আজ কিছুই নেই সে আজ আল্লাহর কাছে কি চাইবে?


আমার কথা শুনে কাব্য কিছুক্ষণ চুপ ছিলো। তারপর বললো।


--রায়হানের আত্তার শান্তি।


কথাটা শুনার সাথে সাথেই আমি ওর মুখের দিকে চেয়েছিলাম। কারন আমার ২য় স্বামী আমার ১ম স্বামির আত্তার শান্তি চাচ্ছে?

কাব্যর মুখে আমার ১ম স্বামির শান্তি কামনা চাওয়া দেখে একটু অবাক হলাম। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব হাস্যকর লাগছিলো। কারন ২য় স্বামি ১ম স্বামীর শান্তি কামনা করছে। পরে মনে পড়লো রায়হান কাব্যর বন্ধু তাই হয়তো।


কিন্তু রায়হানের শান্তির জন্য আমি সব করতে পারি তাই আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়লাম।কুরআন শরিফ পড়লাম। রায়হান মারা যাওয়ার পর থেকে আমি এক ওয়াক্ত নামায ও পড়ি নি। কারন আল্লাহতালার উপর কেমন যেন একটা রাগ চলে এসেছিলো। শুধু মনে হত তিনি আমায় নিঃস্ব করেছেন।কিন্তু আজ কেন জানি কাব্যর কথায় আল্লাহর প্রতি আমি আবারো বিশ্বাস ফিরে পেলাম।


তারপর কাব্য মসজিদ থেকে ফিরে এসে দেখলো আমি কোরআন শরিফ পড়ছি। তাই রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ পর আবার বের হয়ে গেলো। আমি কোরআন পড়া শেষ করে ঘড়িতে দেখলাম ৮টা বাজে। আমি জলদি তৈরি হলাম। যতই ২য় স্ত্রী হই নতুন বাড়ির বউ তো। তারপর

সবার জন্য নাস্তা বানাতে রান্নাঘর এ যাবার সময় দেখি ডাইনিং টেবিলের উপর সব খাবার সাজানো।

আমি ভাবলাম হয়তো আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়েছে তাই খাবার রান্না করা আগেই হয়েছে। কিন্তু পরে দেখলাম কাব্য রুটির বাটি হাতে করে নিয়ে আসছে।


আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু কেন জানি এখন আর কান্যর সাথে কথা বলতে সংকোচ করছি। কিন্তু ভার্সিটিতে সারাদিন ওর সাথে বকবক করতাম আর এখন ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। তারপর আমি ওইখান থেকে চলে আসার সময় কাব্য আমায় পিছন দিয়ে ডাক দিলো।


--মিরা কোথায় যাচ্ছো??এখানে আসো ব্রেকফার্স্ট করবে। আজ আমি সব নিজের হাতে বানিয়েছি।


তখন আমি ঘুরে তাকালাম অবাক চোখে। যে কিনা এক গ্লাস পানিও নিজ হাতে খেতো না ভার্সিটিতে থাকতে সে কি না আজ রান্না করছে????

তখন কাব্য আবার বললো।


--অবাক হচ্ছো ঠিক না?? অবাক হওয়ার ই কথা।

কারন আগে আমি নিজ হাতে কিছুই করতাম না আর আজ রান্না করছি?? সব সময় শিখিয়ে দিয়েছে।

রাইসা চলে যাবার পর সব শিখিয়ে দিয়েছে আল্লাহতালা। আচ্ছা মিরা এদিকে এসো তাড়াতাড়ি।


তখন আমি ওর কথামতো চেয়ারে গিয়ে বসলাম। কাব্য আগের রাতের মত নাস্তাও নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো। আমি নাও করতে পারলাম না। কিন্তু কাব্যর বাসায় কেউ নেই। ওর মা-বাবা নেই। শুধু ২টি বোন আছে এক বোন বিবাহিত তার নাম ইরা আরেক বোন সুরভী। সুরভি ইরার বাসায় থেকেই পড়াশোনা করে। তাই বাসায় আমি আর কাব্য একা। তাই বেশী ভয় করে।


কাব্য আমাকে ভাত খাইয়ে দেয়ায় আমার একটা কথাই মনে পড়ছে। রায়হানের বাড়িতে বিয়ের প্রথমদিন আমি সব নাস্তা করেছিলাম। তাই খাওয়ানো শেষ হলে আমি থালাবাসন ধোয়ার জন্য নিলাম। রাত্রে কাব্য আমার শরীর না খুঁজলেও দিনে হয়তো আমাকে কাজের মেয়ে হিসেবেই চায়। (মনে মনে ভাবলাম)


কিন্তু না।

কাব্য আমার ভাবনা মিথ্যা করে দিলো। ও আমার হাত থেকে সব নিয়ে গেলো আর বললো।


--মিরা তুমি রেষ্ট নাও। আমি ই সব করবো।


কিন্তু আমি কোন কথাই বললাম না। যদি রায়হান থাকতো তাহলে হয়তো ঝগড়া টগড়া করতাম হয়তো।

তাই আমি চুপচাপ রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আর লকেট এ রায়হানের ছবি দেখতে লাগলাম। আমার খুব মন খারাপ থাকলে শুধু রায়হানের ছবি দেখি। ছবি টা দেখতেই আর চোখ ধরে রাখতে পারলাম না। 


যদিও রায়হানের শুধু মা আর বোন ছিলো হুমাইরা। রায়হান মারা যাবার পর ভেবেছিলাম সারাটি জীবন তাদের নিয়ে থাকবো কিন্তু তা আর হলো না। রায়হানের মা আমাকে শুধু খোটা দিতো আমি নাকি অপায়া আমি নাকি রায়হানকে খেয়েছি। কিন্তু আজব ব্যপার তিনিও বিধবা। তাও মুখ বুজে সব শুনতাম। কারন ওই বাড়ীতে রায়হানের একটা গন্ধ ছিলো। রায়হানের বোন হুমাইরা ডিভোর্সি ওর একটা ছেলে আছে নুহাশ। ও আমাকে খুব ভালোবাসে সারাদিন মামি মামি করতো। আর হুমাইরা আমার কাছে নুহাশকে দিয়ে সব কাজ করতো। রায়হান মারা যাবার পর নুহাশকে আমার কাছেও আসতে দিতো না। বলতো আমি নাকি রায়হানের মত নুহাশকেও খাবো। তাও মুখ বুজে থাকতাম। কিন্তু একদিন বাবাকে ডেকে আমাকে দিয়েই দিলো। খুব পা ধরেছিলাম রায়হানের মায়ের যে কাজের মেয়ের মত থাকবো আমি তাও থাকতে দিন। কিন্তু কিছুই শুনলো না আমাকে চলে যেতে বললো। এইসব কথা ভেবেই চোখ আর ধরে রাখতে পারি না। কান্না করতে লাগলাম।তখন কাব্য এসে দরজা ধাক্কা দিলো। আমি জলদি লকেট লুকিয়ে, চোখ মুছে দরজা খুললাম। তারপর কাব্য আমাকে বললো।


--মিরা তুমি কান্না করলে তোমাকে টমেটোর মত লাগে।আর টমেটো আমার ভালো লাগে না। চলো কোথায় ঘুরতে যাবে?


---না কাব্য।


--আচ্ছা তাহলে বাদ। আমি বাসায় আছি। তুমি রেস্ট নাও।


আমি বুঝতে পারছি কাব্য আমাকে ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। অবশ্য সবসময় চেষ্টা করতো। আমার সাথে কথা বলতো। কিন্তু আমি বলতাম না। আমি আমার মতই থাকতাম। এইভাবেই ১মাস কেটে গেলো। কাব্য বাসায় থেকেই কি জানি কাজ করে আমি কখনো জিজ্ঞেস করি নি। আমাকে সময় কাটানোর জন্য কাব্য বই কিনে দিয়েছে। আমি তাই পড়তাম। পড়তে পড়তে হাসির গল্প হলেও কেদে দিতাম। কাব্য টস্যু নিয়ে এসে আমার চোখ মুছে দিতো। এই একমাসে এমন কোন দিন ছিলো না কাব্য আমাকে খাইয়ে দেয় নি। আর আমি রায়হানকে যে মনে করি নি।


কাব্য রাত্রে বসে বসে ডায়রি লিখতো স্বামীর অধিকার আজো চাই নি সে। কে জানে কবে চেয়ে বসে।

তো একদিন কাব্য ওর ফোন রেখে বাথরুমে গেলো।হঠাৎ তখন ফোন বাজছিল অনেকক্ষণ ধরে তাই কাছে গিয়ে দেখলাম। তাকিয়ে দেখলাম কাব্যর ১ম স্ত্রী রিয়া ফোন দিয়েছে। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম ও কেন ফোন দিলো??


তারপর কাব্য এসে ফোন ধরলো। আমি আর জিজ্ঞেস করি নি। কেন ফোন দিয়েছে। কিন্তু কাব্য কথা বলা শেষ করলো। এবং ও নিজেই বললো।


--মিরা।

রিয়া ফোন দিয়েছিলো। ওর কিছু টাকা লাগবে কি দরকার। আমি পাঠিয়ে দিবো বলেছি। এজন্য না যে আমার প্রাক্তন স্ত্রী বরং এর জন্য যে ও আমার মেয়ের মা ছিলো একসময়ে।


এটা বলেই ও চলে গেলো। আমার ওর কথা শুনার পর কেন জানি মন মোচড় দিয়ে উঠলো। এক নতুন অনুভতি জাগ্রত হলো মনে। বন্ধুত্ব ভালোবাসার আরেক নাম। শুধু কেউ কষ্টের সময় ভালোবেসে হাত ধরলে সব কষ্ট ধুয়েমুছে যায়।

.

.

.

গল্প :- দ্বিতীয় স্ত্রী

পর্ব :- ০৩

Writer :- Kabbo Ahammad

.

-: মিরা।

রিয়া ফোন দিয়েছিলো। ওর কিছু টাকা লাগবে কি যেন দরকার। আমি পাঠিয়ে দিবো বলেছি। এজন্য না যে ও আমার প্রাক্তন স্ত্রী। বরং এর জন্য যে ও আমার মেয়ের মা ছিলো একসময়ে।


এটা বলেই ও চলে গেলো। আমার ওর কথা শুনার পর কেন জানি মন মোচড় দিয়ে উঠলো। এক নতুন অনুভতি জাগ্রত হলো মনে। বন্ধুত্ব ভালোবাসার আরেক নাম। শুধু কেউ কষ্টের সময় ভালোবেসে হাত ধরলে সব কষ্ট ধুয়েমুছে যায়।


কাব্যর কথা শুনে আমার মন মোচড় দিয়ে উঠলো।

কাব্য এত ভালো যে তার মৃত মেয়ের মায়ের জন্য এত করছে। কাব্যর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো কখনো তার প্রথম স্ত্রীকে সাহায্য করত না। করবেই বা কেন??


পুরুষজাতি তো যে তাকে ছেড়ে গেছে তার জন্য এত কিছু করবে তাদের একটা তথাকথিত নিজের অহংকার আছে না। কিন্তু আজ আমার যেন কাব্যর জন্য সম্মান

বেড়ে গেলো। কাব্য ৫ দিন পর রিয়ার বাসায় যাবে বললো। আর তখন আমি যেন একাকিত্ব বোধ না করি তার জন্য কাব্য তার ছোট বোন সুরভীকে আমার কাছে দিয়ে গেলো।


সুরভি ক্লাস নাইনে পড়ে। অনেক মিষ্টি মেয়ে। কাব্য যাওয়ার সময় শুনেছি কাব্য সুরভিকে বলছে।


--সুরভি, তুই কিন্তু তোর ভাবিকে ১ মিনিটের জন্যেও চোখের আড়াল করবি না। কোন কটু কথা বলবি না

ইরার মত। আর আমি রান্না করে দিয়েগেছি,

আর লক্ষি বোন আমার তোর ভাবী একটু অসুস্থ তাই পারলে খাইয়ে দিস। (কাব্য)


---জ্বী ভাইয়া, তুমি কোন টেনশন করো না। 


এদিকে আমি রুমের ভিতর বসে শুনছি। আমি কাব্যর কাছে গিয়ে ওকে যে বলবো যে সাবধানে যেয়েও সেই ইচ্ছা থাকা সত্তেও। আমি বসে আছি। তারপর কাব্য যাওয়ার সময় আমার কাছে বলে গেলো।


--মিরা।

আমি রিয়ার বাসায় যাচ্ছি। ওদের বাসা একটু দূরে এজন্য আসতে যেতে দুইদিন লাগবে। এ দুই দিন সুরভি আর তুমি সাবধানে থেকো।


আমি তখন ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম।


---হ্যাঁ। সাবধানে যেও।


কাব্য তখন আমার কথা শুনে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলো।


তারপর আমি আর সুরভি বাসায় একা। সুরভী খুব ভালো মেয়ে। আমি ওর সাথে গল্প করতে করতে যে কখন সময় কেটে যেতো বলাই যায় না। কিন্তু

এমনটা নয় যে আমার কাব্যর কথা মনে পড়ে না।

হ্যাঁ অবশ্যই মনে পড়ে। তো সুরভি একদিন কাব্যর ওই ডায়রিটা পড়ছিলো যেটা কাব্য রোজ রাত্রে লিখে।

তারপর দেখলাম সুরভি ৫ সেকেন্ড পর পর শুধু ডায়েরির পাতা উল্টাচ্ছে। এটা দেখে আমি একটু হাসছিলাম কিন্তু ওর সামনে না। যদি আবার মন খারাপ করে। কিন্তু মনে হয় সুরভি ডায়েরি টায়েরি পড়তে ভালোবাসে না তাই এইভাবে শুধু পাতা উল্টাচ্ছে। আমি তখন ওইখান থেকে রান্নাঘরে চলে গেলাম। তার কিছুক্ষন পর দেখি সুরভি আমার কাছে আসলো। আর বললো।


---ভাবী, একটা কথা বললে রাখবে।


---কি কথা?? দেখি রাখা যায় কি না


---না, আগে বলো রাখবে।


---আচ্ছা রাখবো বলো।


---এই যে ভাইয়ার ডায়েরীটা তুমি যখন সময় পাবে তখন একটু কষ্ট করে পড়বে।


---আচ্ছা সময় পেল পড়বো।


তারপর সুরভি আবার বললো।


---যতক্ষন না পড়বে ততক্ষন কিন্তু ভাইয়াকে দিবে না।


---আচ্ছা দিবো না।


তারপর আমি ডায়েরিটা নিয়ে ড্র্রয়ারে রেখে দিলাম।আমার সত্যি বলতে ডায়েরী পড়ার কোন ইচ্ছা নেই।

পরদিন কাব্য বাসায় আসলো। বাসায় এসেই চিৎকার দিয়েই বললো।


--এক গ্লাস পানি দাও তো।


আমি এক গ্লাস পানি নিয়ে ওর কাছে গেলাম। আর তখন কাব্য বললো।


--তুমি কেন আনলে? সুরভিকে বলতে তুমি তো অসুস্থ।


কাব্যর কথা শুনে আমার একটু রাগ ই হলো। তখন সাথে সাথে আমিও বললাম।


---আমি মারা যাবো না একটু কাজ করলে।


বলেই চলে আসলাম।


তারপর সুরভিও পরদিন চলে গেলো। আমার ইচ্ছা করছিলো ওকে রেখে দিতে। কিন্তু কাব্যকে বলতে কেমন যেন লাগছে। কারন ওর বোন যদি ও না রাখে তাহলে আমার কি।


সুরভী যাওয়ার পর বাসায় কেমন জানি হাহাকার ছেয়ে গেলো। রাত্রে রায়হানের কথা মনে পড়ছিলো খুব। তাই লকেট টা বের করে কান্না করছিলাম। কাব্য তখন বাসায় ছিলো না।


রায়হানের দুইদিন পর মৃত্যুবার্ষিকী। দুইবছর ধরে। আমি খিচুড়ি রান্না করে মাদ্রসায় দিতাম। তখন তো রায়হানের বিধবা ছিলাম তাই দিতাম। কিন্তু এইবছর আমি কাব্যর স্ত্রী কিভাবে দিবো? এইসব ভেবেই কান্না করছিলাম। কিন্তু কাব্য কখন যেন পিছন থেকে এসে কাশি দিলো। আমি জলদি লকেট টা লুকাতে গিয়ে লকেট টা ছিড়ে পড়ে গেলো কাব্যর সামনে। আমার এতটুকু সাহস ছিলো না যে উঠে লকেট টা নিবো।

তারপর কাব্য লকেট উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো। আমার বাধা দেওয়ার যেন কোন ক্ষমতা ছিলো না। কি বলে বাধা দিতাম? 


বলতাম আমার ১ম স্বামী আমাকে এটা বাসররাতে দিয়েছে। আর আমার ২য় স্বামীর কাছে কি এটা বলতাম। 


কাব্য চলে যাওয়ার পর আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম

.

.

.

গল্প :- দ্বিতীয় স্ত্রী 

পর্ব :- ০৪ এবং শেষ

Writer :- Kabbo Ahammad

.

.

.

-: বলতাম আমার ১ম স্বামী আমাকে এটা বাসররাতে দিয়েছে। আর আমার ২য় স্বামীর কাছে কি এটা বলতাম। 


কাব্য চলে যাওয়ার পর আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। আমি চিৎকার করে কান্না করছি কিন্তু পুরা বাড়ি ফাকা তাও আজ কাব্য ছুটে আসলো না। হয়তো কাব্য বাসায় নেই। তারপর কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা নিজেও জানি না। তখন হঠাৎ আলমারির শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো। আমি চোখ মেলে দেখলাম কাব্য কিছু একটা খুঁজছে। গায়ের জামা দেখে মনে হলো এখন এসেছে। আমার আর ওর দিকে নজর নেই। শুধু নজর ওর হাতের দিকে। আমার লকেট টা কোথায় চোখ দিয়ে তাই খুঁজছিলাম। কিন্তু মুখে বলার সাহস নেই যে আমি বলবো, কাব্য আমার লকেট টা দাও।


কাব্য হঠাৎ তখন আমার দিকে তাকালো। আর আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। কোন মুখে ওর দিকে তাকাতাম আমি। তারপর কাব্য আবার লাইট অফ করে বাহিরে চলে গেলো। আমার একটু অবাক লাগছিলো কারন আজ কাব্য আমাকে খাইয়ে দেয় নি। আর কাব্যর মনটাও কেমন জানি খারাপ লাগছিলো। এইসব ভাবতে ভাবতে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে কাব্য ডাক দিলো।


--মিরা ঘুম থেকে উঠো প্লিজ।


আমি জলদি করে উঠে বসলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে নামায পড়লাম। তখন কাব্য বললো।


--মিরা, চাল,মাংস সব এনেছি। এখন যাও রান্না করো।


আমি একটু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।


---কি রান্না করবো??


--ওমা তুমি ভুলে গেছো আজ রায়হানের মৃত্যুবার্ষিকী। তুমি না রোজ মাদ্রাসার বাচ্চাদের খিচুড়ি রান্না করে দাও। তার জন্য ই তো এনেছি। জলদি রান্না করো ১২টায় দিয়ে আসবো।


আমি ওর কথা শুনে যেন মুর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি বলবো কি করবো সব যেন বোধ হারিয়ে গেলো ওর কথা শোনার পর। কাব্য তখন আমার হাত ধরে আমাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেলো। তারপর আমি জলদি রান্না করা শুরু করলাম। অবশ্য কাব্য আমাকে অনেক সাহায্য করছে।


অবশেষে রান্না শেষ হলো কাব্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলো। আর আমি পিছন থেকে ওকে দেখতে লাগলাম তখন অন্য রকম একটা অনুভুতি যেন কাজ করছিলো আমার মধ্যে।


রায়হানের জন্য এমনকি মসজিদে মিলাত ও দিলো কাব্য এবং সেই মিষ্টি কাব্য নিজে রায়হানদের বাসায় নিয়ে গেলো। আজ রায়হানের মৃত্যুবার্ষিকী অথচ আজ রায়হানের জন্য আমার চোখের পানি পড়ে নি। বরং কাব্যর এত ভালো মানুষিকতার জন্য কেঁদেছি। 


রাত্রে কাব্য আমাকে আবার খাইয়ে দিলো কিন্তু আজকে ওর খাইয়ে দেওয়াতে যেন আমিই সবচেয়ে বেশী খুশি হলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন রুমে গেলাম তখন কাব্য বললো।


--হাতটা দাও তো মিরা?


---কেন?


--প্লিজ দাও


আমি হাতটা বাড়ালাম। তখন কাব্য আমাকে আমার লকেট টা ঠিক করে এনে দিলো। কাব্য আমার দিকে তাকিয়ে বললো।


--জানো এটা কাল ঠিক করার জন্য আমি তোমাকে গতকাল খাইয়ে দিতে পারি নি। স্যরি।


এ মুহুর্তে আমি কাব্যকে কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। ইচ্ছা করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে। কিন্তু মনে সাহস ছিলো না। আমি লকেট টা খুলে দেখিও নি। একটু করে কাব্যর দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়লাম। আজ চোখে পানিও নেই। চোখের পানি বন্ধ হওয়ার যেন একটা কারন পেয়ে গেছিলাম।


পরেরদিন সকালে কাব্যকে বললাম।


---কাব্য, সুরভীকে আমাদের কাছে আনবে। আমাদের এখান থেকেই লেখাপড়া করুক।


আমার কথা শুনে কাব্য যেন খুশিতে পাগল হয়ে গেলো।


--হ্যাঁ নিশ্চয় আনবো। তুমি এই প্রথম আমার কাছে কিছু চেয়েছো। এছাড়া আগে সুরভী আমার আর রিয়ার সাথে থাকতো। কিন্তু রিয়া ওকে ভালোভাবে ট্রিট করতো না। তাই ইরার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর এখন তুমি যেহেতু বলছো আমি আগামীকাল গিয়ে নিয়ে আসবো।


আজ কাব্যর মুখে রিয়ার কথা শুনে কেন জানি আমার খুব খারাপ লাগলো। 


এদিকে এই বলে কান্য সুরভীকে আনতে চলে গেলো। তখন আমার সুরভীর দেওয়া ডায়েরির কথা মনে পড়লো। ও এখন আসবে যদি জিজ্ঞেস করে কি বলবো???


তাই ড্রয়ার থেকে ডায়েরীটা বের করলাম। ডায়েরী টা খুলতেই প্রথম পেজে একটা ডেইট লেখা ছিলো। ডেইট টা কাব্য আর আমার বিয়ের।


পরের পেজ উল্টালাম দেখি লেখা দুইটি লাইন।


"ও আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলো। আর আজ ওর সাথেই আমার বিয়ে হলো কি ভাগ্য"


এটা দেখে আমার যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।


আমি আবার পেজ উল্টালাম।

দেখি লেখা।


"ও আজ আমার সাথে কথা বলে নি। আমি ই কথা বলেছি"


আর আমি এইভাবে পেইজ উল্টাতে লাগলাম আর প্রতি পেইজে এক কথা ছিলো। এই দেড় মাসে যে আমি কখন কথা বলেছি আর কখন কথা বলি নি।


তারপর শুধু শেষের পেইজে লেখা ছিলো।


"আমি ওকে আবার ভালোবেসে ফেলেছি"


এখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। এটা ভালো লাগার পানি।


এদিকে কাব্য সুরভীকে নিয়ে আসলো। তারপর আমি কাব্যর সাথে যেন স্বাভাবিক হতে লাগলাম আসতে আসতে। কিন্তু আমি ওকে কি ভালোবাসি তা জানি না।এভাবে রায়হানের কথা মনে পড়তো মাঝে মাঝে কিন্তু এখন কান্না করি না।


আর এইভাবেই ৮মাস কেটে গেলো।


তো একদিন রান্নাঘরে আমি কাজ করছি তখন সুরভি এসে বললো।


---ভাবী,জলদি আসো। দেখো ভাইয়া কি এনেছে।


এসে আমার হাত টেনে নিয়ে গেলো দেখি বাইক। আমি সাথে সাথেই কাব্যকে চিৎকার দিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আর ঐ প্রথমবার বললাম।


---প্লিজ কাব্য। রায়হান এই বাইকের জন্য এক্সিডেন্ট হয়েছে আমি কিছু করতে পারি নি। কিন্তু তোমাকে আমি হারাতে পারবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।


সত্যি বলতে আমি নিজের অজান্তে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেই ঐ দিন মুখ দিয়ে স্বীকার করেছি।

আর কান্য ও যে আমাকে ভালোবাসে তা ওই দিন বলেছে। তাও নিজেদের সময় দিয়ে।


এরপর আজ দেড়বছর পর আমরা আমাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করি। কাব্য আমাকে বলেছিলো।


--এখন বুচি বলে ডাকি?


---না কাব্য। আমি মিরা নাম দিয়ে আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই।


এরপর আজ ৫ বছর আমার নতুন জীবনের দ্বিতীয় স্ত্রী রুপে। আমার জমজ সন্তান হয়েছে তাদের বয়স ৬ মাস ১টি মেয়ে ১টি ছেলে। মেয়ের নাম আমি রেখেছি রাইসা আর ছেলের নাম কাব্য রেখেছে রায়হান। 


আজ ওই লকেট ও আমি খুলে রেখেছি। কারন রায়হান ই আমার আর কাব্যর ফ্রেন্ডশিপ করেছিলো ওই হয়তো আমাকে আর কাব্যকে এক সুতায় বেধে রেখেছে। তাই আমার কাছে ২য় বিয়ে মানে পুনরায় হাসির জন্য একটি কারণ।

.

.

বিঃদ্রঃ গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, আর এটা প্রায় দেড় বছর আগের লেখা, হয়তো কিছুটা অগোচালো ছিলো, তারপরেও আমি চেষ্টা করেছি একটু গুছিয়ে দেওয়ার জন্য।


আর এতদিন গল্পটা ধের্য্য সহকা‌রে পড়ার জন্য সবাই‌কে অসংখ্য ধন্যবাদ। গল্পটা কেমন লাগ‌লো জানা‌বেন। আর হ্যাঁ ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।


ভা‌লো থাক‌বেন। 

আল্লাহ হা‌ফেজ।

.

সমাপ্ত............


আরও এমন পর্বের গল্প পড়তে ক্লিক করুন।