গল্পঃ_দুই_পৃথিবী | ভালোবাসা কষ্টের গল্প

 ভালোবাসা কষ্টের

ভালোবাসা কষ্টের

গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০১)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


মাঝ রাতে ক্ষীণ আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো সানিতার। 

যদিও এতো ক্ষীণ আওয়াজে কারো ঘুম ভাঙা সম্ভব নয়। আর সানিতার পক্ষে তো আরো সম্ভব নয়। কারন ছোট বেলায় তাকে লেডি কুম্ভকর্ণ বলে ডাকা হতো। অবশ্য বড় হওয়ার পরেও একজন ডাকতো তাকে। কিন্তু তার কথা এখন আর ভাবতেও চায় না সানিতা। 


সেই লোকটার কথা ভাবলেই একরাশ কষ্ট গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে আসে। তবে আজকাল অল্পতেই ঘুম ভেঙে যায় সানিতার। কারন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে।। 

আজকাল ঘুমানোটাই একটা ঝকমারি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোন কাইত হয়ে শুয়েও শান্তি পাওয়া যায় না। বাচ্চাটা আবার মাঝে মাঝে লাথি দেয়। তখন শরীর আর মনে এক ধরনের শিহরণ বয়ে যায়। 


ঘুম ভেঙে স্বামী রাফসানকে বিছানায় দেখতে পেলো না সানিতা। বাথরুমেও যে যায়নি নিশ্চিত। কারন বাথরুমের লাইট অফ। তাহলে এতো রাতে কোথায় যেতে পারে রাফসান। সানিতা আর রাফসানের বিয়ে হয়েছে বছর দুয়েক।একেবারে পারিবারিক ভাবে বিয়ে। 

যদিও রাফসান পছন্দ করে ঘরে তুলেছে সানিতাকে তবুও সানিতা রাফসানকে সহ্য করতে পারতো না। তার অবশ্য যুক্তি সংগত কারন ছিলো। তবুও ছেলেটা ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে সানিতার মনে জায়গা করে নিয়েছে। 


সানিতা আর রাফসান একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকে ঢাকা শহরে৷ রাফসানের চাকরির সুত্রে তাদের শহরে থাকা। রাফসানের পরিবার অবশ্য লক্ষীপুর শহরে থাকে তাদের পৈত্রিক বাড়িতে।


বর্তমানে সানিতা এবং রাফসানের সাথে সানিতার বোন সীমা থাকে। মাস খানেক হলো রাফসান গিয়ে সীমাকে নিয়ে এসেছে সানিতার দেখা শোনা করার জন্য। যদিও কাজের কাজ তাকে দিয়ে কিছুই হয় না। কারন সীমা সারাক্ষণ সাজুগুজু নিয়েই ব্যাস্ত,,তবুও সানিতার সাথে কেউ একজন থাকলে রাফসান নিশ্চিত থাকে...... 


সানিতার ঘুম ভেঙেছে মিনিট দশেক।। এর মধ্যে একটি বারের জন্য রাফসানের দেখা মিলেনি। মাঝ রাতে একটা মানুষ যাবে কোথায়। সানিতা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। উঁহু রাফসান বেলকনিতেও নেই। ডাইনিং টেবিলে আসতেই সানিতা খেয়াল করলো সীমার ঘরের লাইট জ্বালানো,, ঘরে আলো জ্বলছে,সেই সাথে হালকা আওয়াজ আসছে।


তারপর সানিতা এগিয়ে গেলো দরজার কাছে৷। হালকা করে ঘরের দরজা খুলতেই সানিতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কারন সে দেখলো সীমার বিছানায় রাফসান আর সীমা, কারো গায়ে কোনো কাপড় নেই।

তারা দুজনে কুকর্মে লিপ্ত। তারা তাদের কাজে এতটাই মগ্ন যে সানিতা সবকিছু দেখে আবার ফিরেও আসলো কিন্তু তারা তাও টের পায়নি। 


নিজের ঘরে এসে সানিতা ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেলো। মাথাটা কাজ করছে না তার। কয়েক মুহূর্ত আগে সে যা দেখলো তার বারবার মনে হচ্ছে তা যেনো দুঃস্বপ্ন ছিলো। ভালোবাসার মানুষ গুলো এভাবে রাতের অন্ধকারে তাকে ধোঁকা দিবে ভাবতেও পারেনি সানিতা। 

মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার। 


আপনি কি গল্প পড়তে ভালোবাসেন! তাহলে আজই আমাদের পেইজে জয়িন করুন। গল্প পড়ে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে....


আজ মনে হচ্ছে পাপ বাপকেও ছাড়ে না।।একদিন সেও পাপ করেছিলো। আজ কি তারই ফল পেলো.? কিন্তু সে তো জেনে শুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু করেনি৷ তাহলে কিসের শাস্তি পাচ্ছে সে। ভাবতে ভাবতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সানিতা। 


দেখতে দেখতে আরো বিশ মিনিট পার হয়ে গেলো এরই মধ্যে ঘরে ফিরে এলো রাফসান। সানিতাকে জেগে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো সে। তবুও বুঝতে দিলো না সে সানিতাকে। কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো........ 


রাফসানঃ সানিতা কি হয়েছে? ঘুম থেকে উঠে গেলে যে। শরীর খারাপ লাগছে.??


সানিতাঃ তুমি কোথায় ছিলে.?? 


রাফসানঃ আসলে ঘুম আসছিলো না। তাই বেলকনিতে গিয়ে বসে ছিলাম.?? 


সানিতাঃ ও আচ্ছা। তা তুমি এতো ঘামছো কেনো রাফসান.??


রাফসানঃ যা গরম পড়ছে এমনি ঘেমে যাচ্ছি। তা তুমি কখন উঠলে.??


সানিতাঃ মাত্রই.??


রাফসানঃ আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো। দেখি আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই.??


সানিতাঃ দরকার নেই। গায়ে হাত দিও না.??


রাফসানঃ কেনো.?? 


সানিতাঃ ভালো লাগছে না.?? 


রাফসানঃ আচ্ছা ঘুমাও.??


সানিতার চোখে আজ ঘুম আসছে না।। মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। মা বেঁচে থাকলে হয়তো তার জীবনটা আজ অন্যরকম হতো। মা বহু বছর আগে তার জীবন থেকে চলে গেছে, সাথে নিয়ে গেছে তার হাসি, আনন্দ, ভালো থাকা।। সানিতার তখন কত আর বয়স হবে! বছর পাঁচেক। কানাঘুষা শুনতে পেতো তার বাবা নাকি চরিত্রহীন ছিলেন।। নষ্টা মেয়ে মানুষের পিছনে নাকি টাকা উড়ায়।। নষ্টা মেয়ে মানুষ ঠিক কি জিনিস সানিতা জানতো না। মাঝে মাঝে মাকে দেখতো লুকিয়ে কাঁদতে।। মহিলা মাঝরাতেও নামাজে বসে মোনাজাতে কান্নাকাটি করতো। আল্লাহ হয়তো তাকে বেশিদিন কষ্ট দিতে চায়নি। তাই নিজের কাছে নিয়ে গেলেন। 


সানিতার মায়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই লিভার,কিডনি 

সব পঁচে গেলো, রক্তবমি করতেন তিনি৷ সানিতার বাবা চিকিৎসা করাতে চাননি করেনও নি। শেষের দিকে সানিতার নানাভাই তাকে আর তার মাকে নিজের কাছে 

এনে চিকিৎসা করান সানিতার মায়ের.... 


ভদ্রলোক এতো চেষ্টা করেও নিজের মেয়েকে বাঁচাতে পারেন নি। মেডিকেল সাইন্সে একটা কথা আছে,, যে রোগী নিজে বাঁচতে চায় না,, পৃথিবীর কোনো ঔষধ তাকে বাঁচাতে পারে না। হ্যা কথাটা হয়তো ঠিক। তাইতো সানিতার মাও বাঁচেনি। চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মহান রবের কাছে। যেখানে কোনো বিশ্বাসঘাতকা নেই।।।


মা মারা যাবার পর সানিতার দায়িত্ব ওর নানাভাই নিতে চাইলেও ওর মামা মামীরা তা হতে দেয়নি।। ফলে তাকে অগত্যা বাবার কাছেই ফিরে আসতে হয়। 


এক মাসের মাথায় সানিতার বাবা বিয়ে করে আনলেন সানিতার ২য় মা অর্থাৎ সৎ মাকে। সতীনের সন্তানকে যতখানি সহ্য করা যায় ভদ্র মহিলা ঠিক ততখানি সহ্য করতেন সানিতাকে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সানিতার সৎ মায়ের গর্ভে আসে সীমা। সেই থেকে সানিতা নিজ হাতে মানুষ করেছে সীমাকে। 


এতোকিছুর পরেও সানিতার মা মারা যাবার পর থেকে

আজ পর্যন্ত কথা বলেনি ওর বাবার সাথে। কারন সানিতা মনে মনে ওর বাবাকেই ওর মায়ের খুনি মানে।


ভদ্রলোকের ও সম্ভবত কিছুটা পাপবোধ কাজ করতো।

তাই সে সানিতার পড়া লেখার কোনো ক্রুটি রাখেনি। লোকে বলে সানিতা দেখতে নাকি হুবহু তার মায়ের মতো। আজ সানিতার মনে হচ্ছে তার কপালটাও তার মায়ের মতো। কিন্তু নাহ, মায়ের মতো পরিনতি নিজের হতে দিবে না। সে চায় না তার সন্তান বড় হয়ে আরো একটা সানিতা তৈরী হোক। তাই সে বাঁচবে। নিজের সন্তানকে নিয়ে নতুন পৃথিবী সাজাবে। যেখানে বিশ্বাস ঘাতক এর অস্তিত্ব থাকবে না..........


-গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০২)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


ভদ্রলোকের ও সম্ভবত কিছুটা পাপবোধ কাজ করতো।

তাই সে সানিতার পড়া লেখার কোনো ক্রুটি রাখেনি। লোকে বলে সানিতা দেখতে নাকি হুবহু তার মায়ের মতো। আজ সানিতার মনে হচ্ছে তার কপালটাও তার মায়ের মতো। কিন্তু নাহ, মায়ের মতো পরিনতি নিজের হতে দিবে না। সে চায় না তার সন্তান বড় হয়ে আরো একটা সানিতা তৈরী হোক। তাই সে বাঁচবে। নিজের সন্তানকে নিয়ে নতুন পৃথিবী সাজাবে। যেখানে বিশ্বাস ঘাতক এর অস্তিত্ব থাকবে না.........


মাঝরাতে নিজের স্বামী আর বোনকে এক সাথে কুকর্মে 

লিপ্ত থাকা অবস্থায় দেখে ফেললে যে কোনো মেয়ের মাথা ঠিক থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সানিতা মাথা ঠান্ডা করে আছে৷ সে খুব ভালো করেই জানে এভাবে অশান্তি করে লাভ হবে না।। বরং ওরা সানিতাকে ভুল প্রমানিত করার চেষ্টা করবে। তার চেয়ে যা করতে হবে ভেবে চিন্তে করতে হবে। 


সকাল বেলায় সানিতার ঘুম ভাঙলো ০৮টায়।। রাফসান 

নিজ হাতে ব্রেকফাস্ট তৈরী করে খাওয়াতে এসেছে সানিতাকে।। বিয়ের পর থেকেই অবশ্য সকালের খাবার রাফসান নিজ হাতে বানায়। রাফসানে এক কথা তার মহারানী তার সামনে কাজ করবে না, আরাম করবে।।


রাফসান অফিসে যাওয়ার পর সানিতা দুপুরে খাবার রান্না করে রাফসানের দুপুরের খাবার ড্রাইভার কে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। রাতে আবার দুজন এক সাথে রান্না করে। 

তারপর এক প্লেটে খায়। 


রাতের বেলা ঘুমানোর আগে বেলকনির দোলনায় বসে দুজন এক সাথে কফি খায়। ইদানীং সানিতার পাল্লায় পড়ে রাতে ঘুমানোর আগে কফি খাওয়াটা রাফসানের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রাতের বেলা কফি বিলাস করার জন্য সানিতা বেলকুনিটা নিজের মতো করে সাঁজিয়েছে৷। গোলাপ, হাসনাহেনা, টগর, মাধবীলতা সহ নানা রকমের ফুলের টব,লাল-নীল বাতি,দোলনা, মেঝেতে দামী গালিছাসহ যেনো এক ফালি স্বপ্ন মিলে আছে বেলকুনিটায়।। আর এই সব সানিতা নিজ হাতে করেছে। 


রাফসানের কোনো কলিগ কিংবা বন্ধু যতবার এই বাড়ি এসেছে সানিতার রুচির প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে৷ যেমন রুপ, তেমন রান্নার হাত, তেমনই কাজের হাত সানিতার। যে কোনো ছেলে এমন মেয়ে পেলে ধন্য হয়ে যাবে। এই জন্য সানিতাকে নিয়ে খুব হিংসে করে রাফসানের অফিস কলিগরা রাফসানকে । রাফসান নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে সানিতাকে৷ সানিতাও কোনো শব্দ না করে চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছে.। হঠাৎ করে সানিতা বলে উঠলো.........


সানিতাঃ তুমি খাবে না রাফসান.??


রাফসানঃ হ্যা খাবো। আগে আমার মহারানী আর রাজকন্যা খেয়ে নিক তারপর.??


সানিতাঃ চলো আমি খেতে দিচ্ছি তোমাকে.??


রাফসানঃ না না থাক। আমি সীমার সাথে খেয়ে নিবো। ও বেচারি আবার একা একা খাবে.??


সানিতাঃ বেচারি.?? 


রাফসানঃ না মানে আসলে ও আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে এটুকু করা উচিৎ। মেয়েটা একা 

একা খাবে ওর হয়তো ভালো লাগবে না.??


সানিতাঃ তুমি দেখছি ওর ব্যাপারে খুব কেয়ারিং.??


রাফসানঃ আরে তা হবে কেনো। এটা ভদ্রতা.??


সানিতাঃ ওহহ আচ্ছা.??


সকাল ১০ টা বাজে। ইতিমধ্যে রাফসান খেয়ে অফিসে চলে গেছে। বাড়িতে মানুষ বলতে সানিতা আর সীমা। 

সীমা নিজের ঘরে বসে ইউটিউব এ কি একটা ভিডিও দেখছিলো। ঠিক সে সময় সানিতা ওর ঘরে এসে ডাক দিলো...........


সম্পুর্ণ গল্পটা পড়তে Abdullah al Shahjalal পেইজের সাথে থাকুন।। কথা দিচ্ছি হৃদয় ছুঁয়ে যাবে? আপনাদের মতামত আমার অনুপ্রেরণা।। ভালো রিসপেন্স ফেলে নেক্সট পর্ব দ্রুত পাবে৷


সানিতাঃ সীমা.?


সীমাঃ হ্যা আপু কি বলবি?


সানিতাঃ কি করিস?


সীমাঃএই তো ইউটিউব এ কিছু হোম মেইড ফেসিয়াল এর ভিডিও দেখছিলাম.?


সানিতাঃ তুই কি একটা জিনিস খেয়াল করেছিস.?


সীমাঃ কি আপু.?


সানিতাঃ তোর স্কিনের গ্লো নষ্ট হয়ে গেছে.? 


সীমাঃ কি বলিস আপু! সত্যি.? 


সানিতাঃ হ্যা কেমন রাফ হয়ে যাচ্ছে স্কিন.?


সীমাঃ কি করা যায় বলতো আপু.?


সানিতাঃ শোন এই সব হোম মেইড জিনিস দিয়ে কিছু হবে না বুঝলি। তুই বরং পার্লারে গিয়ে পুরো বডি পলিশিং করে আয়। সেটা আরো ভালো হবে.?


সীমাঃ কিন্তু অনেক টাকা লাগবে কই পাবো.?


সানিতাঃ আমি দিচ্ছি। তুই এখনই যা।। আর শোন তাড়হুড়োর কিছু নেই, ভালো করে করবি বুঝলি.?


সীমাঃ থ্যাংক ইউ আমার সোনা আপু.?


ব্যাস অবশেষে সীমাকে বাহিরে পাঠানো গেছে।। ফাঁকা বাড়িতে রাফসান আর সীমার জন্য কি ফাঁদ পাতা হয়েছে তাদের কল্পনার বাহিরে। সানিতা দ্রুত কাকে একটা ফোন করে সিসি ক্যামেরা আনালো। এবং সেটা খুব সাবধানে সীমার ঘরে লাগিয়ে দিলো। সেই সাথে সানিতার ছোট মা এবং শ্বশুর বাড়ির সবাইকে আসতে বললো। আর সবকিছু রাফসান আর সীমার কাছে সারপ্রাইজ হিসেবে রাখতে বললো। 


আগামী কালকে সবার সামনে প্রমাণ সহ সব সত্য ফাঁস করবে সানিতা।। সেই সাথে আরো দুইজনকে ডেকে পাঠিয়েছে সানিতা।। আগামী কালকে নিজের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দিবে সে...... 


রাত বাড়ছে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। গভীর রাতে প্রকৃতি এক

রহস্যময়ী রুপ ধারণ করেছে। বৃষ্টি যেনো কান্না হয়ে ঝড়ছে৷ প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি পড়ছে সানিতার দুচোখ দিয়ে। দুই বছরের অধিক সময় বিবাহিত জীবন তাদের।। কতশত সৃতি জড়িয়ে আছে তাতে৷ আজ এক লহাময় সব যেনো মলিন হয়ে গিয়েছে। সানিতা কাঁদতে চায় না কোনো বিশ্বাস ঘাতকের জন্য। তবুও পাগল মন কি আর কথা শোনে।। 


-গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০৩)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


রাফসান কিছুক্ষণ হয়েছে সীমার ঘরে গিয়েছে, গোপন অভিসারে। সানিতা ঘুমিয়ে গেছে ভেবে আলতো করে উঠে গেছে বিছানা ছেড়ে,যাতে সানিতার ঘুম না ভাঙে। 

কিন্তু যে ঘুমের ভান করে আছে তার ঘুম তো ভাঙে না। 

মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সানিতা। আর মনে মনে বলে...

*

*

যাও রাফসান যাও।। আজকেই তোমার লুকিয়ে সীমার কাছে যাওয়ার শেষ দিন। তোমার সুখ যদি সীমাতে হয় তাহলে তুমি তাই পাবে। তবুও তোমার মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয়ে নিজেকে আটকিয়ে রাখবো না।


পরের দিন শুক্রবার,প্রায় সকাল ১০টা বাজে। সানিতার প্ল্যানমাফিক তার বাপের বাড়ি থেকে বাবা, ছোট মা আর শ্বশুর বাড়ি থেকে শ্বশুর শ্বাশুড়ি আর দুই ননদ এসে হাজির।। সকাল সকাল সবাইকে দেখে সীমা আর রাফসানের চক্ষু চরকগাছ। এর মধ্যে হাজির আরো দুইজন। উঁকিল সাহেব আর সানিতার এক পরিচিত,যে সিসি ক্যামেরার ব্যাপারটা জানতো।


একমাত্র সানিতা ছাড়া কেউ জানে না কি ঘটতে চলছে।

কেউ কিছু বলার আগেই সানিতা গত রাতের ভিডিওটা অন করে দিলো। ঘরে উপস্থিত কেউ ভাবেতে পারেনি এমন কিছু দেখবে৷ প্রত্যেকে অবাক হয়ে আছে। রাফসান আর সীমার বিস্ময় যেনো সপ্তমে পৌঁছালো।

সেই সাথে লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারছে না দুজনের কেউ। দুজনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 


সবাই এতটাই বিস্মিত কারো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ঘটনার বিস্ময় কাটতেই রাফসানের বাবা এগিয়ে এসে পায়ের জুতা খুলে রাফসানকে মারতে লাগলেন,

আর অকথ্য ভাষায় গালি দিতে লাগলেন। রাফসানের মা কাঁদছেন হাউ মাউ করে৷ তিনি নিজের চোখে 

বিশ্বাস করতে পারছেন না তার গর্ভের সন্তান এতোটা শয়তান হতে পারে।।


অন্যদিকে রাফসানের বোনেরা রাফসানকে ধিক্কার জানাচ্ছে এতো সুন্দর, নম্র ভদ্র একটা বউ পেয়েও এমন অধঃপতন এর জন্য। 


এতো কিছুর মাঝেও চুপ করে আছে দুজন। তারা হলেন সীমার বাবা মা। এবার সবাইকে থামিয়ে দিয়ে সানিতা বলে উঠলো........... 


সানিতাঃ দেখেন আব্বা আপনারা প্লিজ শান্ত হন। আমি কোনো অশান্তি করার জন্য আপনাদের ডাকিনি। ডেকেছি আমার কিছু সিদ্ধান্ত জানাতে। আপনাদের ছেলেকে আপনারা যা খুশি বলতে পারেন তবে আমার সামনে নয়, আমি যাওয়ার পর.??


সানিতার শ্বশুর বলে উঠলেন........ 


শ্বশুরঃ কোথায় যাবি তুই মা? তুই বললে ওই ছেলেকে আমি ত্যাজ্য করে দিবো। ওর মুখ দেখবো না। আমরা তোকে আর আমার বংশধরকে নিয়ে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিবো.?? 


সানিতাঃ না বাবা রাফসান আপনাদের সন্তান। আমি চাইনা আমার জন্য আপনারা সন্তান হারা হোন৷

তার আগে রাফসান আর সীমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। রাফসান তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমার দোষ ঢাকতে পারতাম বা তোমাকে বুঝাতে পারতাম। আমি কেনো তোমার সম্মান নিয়ে এভাবে খেললাম? কেনো তোমাকে ছোট করলাম? 

|||

তোমার মনে আছে রাফসান একদিন আমি তোমাকে কি বলেছিলাম? বলেছিলাম আমার কোনো ভুল হলে আমাকে মেরো অথবা আমাকে আর ভালো না

লাগলে আমাকে বলে দিও আমি চলে যাবো তোমার জীবন থেকে। তবুও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না। আমার সন্তানকে আমার মতো শৈশব হারা করো না। 

|||

আমি কখনো চাইনি আমার মায়ের পরিনতি আমার হোক। আমার মা আমার বাবার দোষ ঢেকেছিলো, বাবাকে ভালো পথে আনার চেষ্টা করছিলো তাতে আমার মায়ের কি লাভ হলো বলতে পারো রাফসান।

আমার মাতো অকালে চলে গেলো,আমি এতিম হয়ে গেলাম।

|||

আর আমার বিশ্বাস ঘাতক বাবা! তার কি হলো। সে তো দিব্যি ছোট মাকে নিয়ে সুখে সংসার 

করছে তার তো কোনো শাস্তি হয়নি! তাইনা বাবা??


সানিতার বাবা হা করে তাকিয়ে আছেন। দীর্ঘ ২০ বছর পর তার মেয়ে তাকে বাবা বলে ডেকেছে তাও এভাবে অপমান করার জন্য। এর থেকে বড় শাস্তি বুঝি আর হয় না৷। সানিতা আবারো বলতে শুরু করলো...........


সানিতাঃ তুমি কি কখনো আমার মায়ের কবরের কাছে যাও বাবা?? না জানি কত অনাদর অবহেলায় মা আমার শুয়ে আছে। আচ্ছা বাবা তুমি মাকে ইহকালে শান্তি দাওনি। আমার মা কবরে ঠিকই শান্তি পাচ্ছে তাই না বাবা.??

|||

রাফসান তুমি আমাকে অনেক খুশি করেছিলে, সেই সাথে অনেক সম্মান? আমি অতীতের সব যন্ত্রণা ভুলে গিয়েছিলাম শুধু তোমার ভালোবাসায়। তুমি আমাকে বলতে পারতে তুমি সীমাকে ভালোবাসো। আমি নিজে সরে যেতাম তোমার জীবন থেকে। এভাবে ঠকালে কেনো আমাকে আর আমার সন্তানকে??

|||

আর সীমা,সেই ছোট বেলা থেকে তোকে মানুষ করেছি নিজের সন্তানের মতো, সৎ বোন হিসেবে কখনো দেখিনি৷ আজ সেই তুই এভাবে আমার সন্তানের হক মারলি। কেনো রে বোন? কি ক্ষতি করেছি তোর আমি?


সীমাঃ হ্যা করেছিস। অনেক ক্ষতি করেছিস। শুনবি কি ক্ষতি করেছিস। তাহলে শোন। 

|||

ছোট থেকে তোর জন্য সবার ভালোবাসা কম পেতাম।। বাবা সবচেয়ে ভালো জামাটা তোর জন্য আনতো,,তুই বাবার সাথে কথা বলিস না জেনেও। পারা প্রতিবেশীরা তোর রুপে গুনে মুগ্ধ ছিলো। সব সময় শুনতে হতো আমি তোর মতো রুপে গুনে সুন্দর নই। আমার ব্যাবহার তোর মতো মিষ্টি না। এতিম বলে সবাই তোকে বেশি ভালোবাসতো। 

|||

তোর মনে আছে ভার্সিটির অপুর্ব ভাইয়ার কথা।। তোর কথায় উনি আমাকে বিনা টাকায় পড়াতে আসতেন। 

উনাকে আমি খুব ভালোবেসে ফেছিলাম। নিজের করে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনাকে আমার মনের কথা জানাতেই উনি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে উনি আর তুই একে অপরকে ভালোবাসিস। আর উনি তোকে ছাড়া ভাবতেও পারবে না নিজের জীবনে। 

সেদিন আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোর ভালোবাসা কেড়ে নিবো আমি। আজকে আমি সফল। আর তাই আমার অনুতাপ নেই.??


আমাদের আগের পর্ব গুলো যদি এখনো না পড়ে থাকুন তাহলে এখনই পড়ে নিন। এবং নেক্সট পর্বের জন্য লাইক কমেন্ট করে অবশ্যই Abdullah al Shahjalal পেইজের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে..... 


সানিতাঃ আমাকে তুই মনে মনে এতোটা ঘৃণা করিস বোন। ঠিক আছে তোকে আর কিছু বলার নেই। 

আমি না হয় দোষী কিন্তু আমার সন্তান?? তার কথা একটি বার ভাবতিস??

|||

তা রাফসান তোমার অভিযোগ গুলো বলো। আমার যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে তো.??


এই পর্যায়ে রাফসান দৌঁড়ে এসে সানিতার পা জড়িয়ে ধরলো আর বললো........


রাফসানঃ প্লিজ মহারাণী আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।

আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে। তোমাকে আর বাবুকে ছাড়া আমি বাঁচবো না??

|||

আমি মোহে পড়ে ভুল করে ফেলেছি।। আর এমন হবে না। আমি সীমাকে ভালোবাসি না। আমি শুধু তোমাকে চাই। তুমি বলো কি করলে আমাকে মাফ করবে,আমি তাই করবো??


সানিতাঃ আমি তোমাকে একটা শর্তে মাফ করতে পারি। তুমি আমাকে তালাক দিয়ে সীমাকে বিয়ে 

করতে হবে। 

কারন আমি যদি মাফ করে তোমার কাছে থেকেও 

যাই, আমি আর তোমাকে বিশ্বাস করতে পারবো 

না। সেক্ষেত্রে তুমি হাজার ভালো হলেও। আর 

বিশ্বাস ছাড়া সম্পর্ক হয় না। আর তাছাড়া সীমার সতিত্ব নষ্টের দাম তোমাকেই দিতে হবে?? 


এটুকু কথা বলতেই সানিতার চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো৷ সানিতা মনে মনে ভাবছে,,সে হয়তো পৃথিবীর ১ম মেয়ে যে নিজ হাতে স্বামীকে বোনের সাথে বিয়ে দিচ্ছে, তাও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। 


রাফসান আর তার পরিবারকে রাজি করিয়েছে নিজের সন্তানের দোহাই দিয়ে। আর সানিতার বাবা!! তিনি একটা জড় পদার্থ বৈ তো নন।। সীমা আর ওর মায়ের খুশি যেনো ধরে না। একেবারে রাজ্য সহ রাজপুত্র। 


আগামী কালকে বিয়ে হবে রাফসান আর সীমার। আর সেই বিয়ে উপলক্ষে সকল পাঠক পাঠিকার রইলো বিয়ের দাওয়াত,তাও আমার পক্ষ থেকে। আমার বিয়ে হয়তো খেতে পারবেন না,, তাই রাফসান আর সীমার বিয়েটা খেয়ে আমাকে মুগ্ধ করুন। তোড়জোড়ে কোনো ক্রটি রাখেনি সানিতা।


যদিও ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ে হচ্ছে। তবুও সাজসজ্জার ব্যাবস্থার কিছু কম রাখেনি সানিতা। এই সবকিছু যদিও তাকে একা হাতে করতে হচ্ছে,কারন তার সাথে ছোট মা ছাড়া এই বিয়েতে হাত লাগাতে কেউ উৎসাহী নয়। 


রাফসানের বাবা মা বোনেরা গ্রামে ফিরে যেতে চাইলো।

কিন্তু সানিতা বলছিলো তারা চলে গেলে নিজের আর সন্তানের ক্ষতি করবে সানিতা। 


সানিতার শ্বশুর সোহেল সাহেব কিছুতেই বুঝতে পারছে না মেয়েটা এসব পাগলামি কেনো করছে।। তার স্ত্রী নীলা বেগম অবশ্য পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন বিয়েটা মিটলেই সানিতাকে নিয়ে চলে যাবে। তিনি বেঁচে থাকতে আর এই কুলাঙ্গার সন্তানের মুখ দেখবেন না।। 

তিনি তো আর তেমন মা নন,, সন্তানের দোষ ডেকে পরের মেয়েকে কষ্ট দিবেন। ক্লান্তিময় দিনের শেষে নিজের পছন্দের বেলকুনিতে শেষবা রের মতো এক কাপ কফি নিয়ে বসলো সানিতা। আজ সে বড্ড ক্লান্ত।


ছোট বেলা থেকে জীবন নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে আজ সে পরিশ্রান্ত। মায়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। ছোট বেলায় ব্যাথা পেলে মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদতো সানিতা। আরো মায়েরও যেনো চোখের মনি ছিলো সে। এতো বড় দুনিয়ায় তারা যেনো দুজন দুজনের ছিলো। 


সারাদিনের সব কাজ শেষে,,মা সানিতাকে বুকের মাঝে আগলে ঘুমাতেন। আর সানিতাও ছিলো তেমনই। সারাদিন মায়ের আঁচল ধরে ঘুরতো। তাই বন্ধুরা সবাই তাকে ডাকতো মা ন্যাওটা। তাতে অবশ্য সানিতার কিছু যায় আসে না। 


সানিতার যখন বয়স ০৫ বছর ঠিক তখন তার মা তাকে মিথ্যে দুনিয়ায় একা রেখে চলে গেলেন পরোপারে।। এরপর সানিতার জীবনটা যেনো মরুভূমি হয়ে গেলো। নানার বাড়ি থেকে মামারা ফেরৎ পাঠিয়ে দিলো তাকে। অন্যদিকে মায়ের কবরটা যে নানার বাড়িতেই রয়ে গেলো। সানিতার খুব ইচ্ছে হতো মায়ের কবরের কাছে গিয়ে মাকে খুব আদর করতে। 


মাঝ রাতে মনে হতো সানিতার মা তাকে যেনো ডাকছে।

বৃষ্টি হলে তার মনে হতো মা যেনো ভিজে যাচ্ছে। কত কষ্ট হচ্ছে মায়ের তাই মাঝ রাতে ঘর থেকে বের হয়ে সে নিজেও ভিজতো যাতে মায়ের সাথে বৃষ্টিতে ভেজার কষ্টটা ভাগ করে নিতে পারে।।


 সানিতার মায়ের মৃত্যুর ১মাসের মাথায় বাবা বিয়ে করে নিয়ে আসলেন ছোট মা কে। ভদ্র মহিলা কখনো তার গায়ে হাত তুলেনি। তবে যে ভাষা আর ব্যাবহার করতেন তার থেকে বুঝি মারই ভালো ছিলো। 


এভাবে কেটে গেলো বছর খানেক। ততদিনে সেই মেয়েটা সংসারের অনেক কাজ শিখে গিয়েছে। 


এরপর ছোট মা জন্ম দিলেন সীমাকে। অঘোষিতভাবেই সীমার দায়িত্ব এসে পড়লো সানিতার উপর।। অতটুকু বাচ্চা যার শৈশব টাকে উপভোগ করার কথা ছিলোসে নিজেই একটা বাচ্চাকে সামলাতো। এভাবে কেটে যায় বেশ কয়েকটি বছর৷ এতোকিছুর মাঝেও পড়াশোনা ছাড়েনি।তাতে অবশ্য সানিতার বাবারও কিছুটা কৃতিত্ব আছে। তবুও বাবার সাথে কথা বলেনি সানিতা।।কারন মনে মনে বাবাকেই তার মায়ের খুনি হিসেবে জানে।

এইস এসসির পর এলাকার পাব্লিকেই চান্স হলো সানিতার।। ভার্সিটিতে গিয়ে যেনো এক নতুন জীবনের সুচনা হলো তার। 


যে সানিতা হাসতে ভুলে গিয়েছিল আজ সেই সানিতার হাসি আনন্দ যেনো তার পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। আনন্দে এক নতুন মাথা যোগ করলো অপুর্ব। খুব আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছিলো তাদের প্রেম। তারা দুজন খুব ভালো করে জানতো তাদের মধ্যে কতো ভালোবাসা। অপুর্ব সানিতাকে এতো ভালোবাসতো যে মুখ দেখে সানিতার মনের কথা বুঝে ফেলতো। 


এমন অনেক দিন হয়েছিল সানিতা না খেয়ে ক্যাম্পাসে যেতো,আর অপুর্ব মুখ দেখেই বুঝে ফেলতো। অগত্যা সানিতাকে খেতেই হতো। নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে সানিতার ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো পুরন করতো অপুর্ব।। 

সানিতাও মাঝে মাঝে রান্না করে নিয়ে যেতো অপুর্বের জন্য। অপুর্ব অবশ্য সেগুলো নিজ হাতে খেতো না। সানিতাকে খাইয়ে দিতে হতো।


অপুর্বের একটা বাইক ছিলো।। মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়তো দুজন। অচেনা এলাকায় ঘুরতো

আর নদীর পাশে দিন কাটাতো দুজন। সেই সাথে মাঝ রাতে ফিসফিস করে কথা বলা তো ছিলোই দুজনের মধ্যে।। কতশত স্বপ্ন বুনতো তারা। 


তারা ঠিক করে রেখেছিলো ০১ম সন্তান মেয়ে হলে নাম রাখবে অর্পিতা। আর ছেলে হলে নাম রাখবে সাজ্জাদ। 

তারপর অবশ্য সব এলোমেলো হয়ে গেলো। অপুর্ব বিদেশে চলে গেলো স্কলারশিপ নিয়ে। কথা ছিলো বিদেশ থেকে ফিরে এসে বিয়ে করবে সানিতাকে। কিন্তু এক আত্মীয় এর বাড়িতে বেড়াতে এসে সানিতাকে পছন্দ করে ফেলে রাফসান। তারপর বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় সানিতার ছোট মা কে।। ছোট মা অবশ্য চায়নি 

এতো ভালো ঘরে পড়ুক সতীনের ছা। 


তবে এই বিয়েটা সীমার কাছে ছিলো তুরুপের তাস।। সানিতা এবং অপুর্বকে আলাদা করার জন্য। তাই মা বাবাকে সে নিজেই রাজি করায়। 


এরপর সানিতাকে না জানিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়।। সানিতা যতক্ষণে বুঝতে পারলো ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। নিজের মোবাইলটাও খুঁজে পায়নি সে। 

কারন সীমা মোবাইল লুকিয়ে রেখেছিলো।।আর সীমার কড়া পাহাড়ায় পালাতেও পারেনি সানিতা....


অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেলো সানিতা আর রাফসানের৷ 

আর সীমা অপুর্বকে জানায় বড়লোক দেখে ঝুলে পড়েছে সানিতা। সীমার অনেক বুঝানোর পরেও অপেক্ষা করেনি অপুর্বের জন্য। সীমার সাজানো মিথ্যা কথা গুলো বিশ্বাস করে অপুর্ব।। আর সেই থেকে ঘৃণা করতে থাকে সানিতাকে। 



গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০৪)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


একদিন অবশ্য ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছে সানিতাকে। সেসব মনে পড়লেই সানিতার দু চোখ দিয়ে বৃষ্টি নামতে থাকে।। 


অতীতের স্মৃতি গুলোতে হারিয়ে গিয়েছিলো সানিতা। হুশশ ফিরলো রাফসানের ডাকে.......... 


রাফসানঃ মহারাণী একা একা কফি খাচ্ছো যে.? 


ত্যাচ্ছিল্লের সুরে সানিতা বললো......


সানিতাঃ আমি আবার দোকা পাবো কোথায়.? 


রাফসানঃ আমাকে কি আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না। আমার সন্তানের কথা ভেবে.? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি সীমাকে বিয়ে করতে চাই না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মহারাণী?? 


সানিতাঃ ভালোবাসার মানে তুমি বুঝো না মি: রাফসান। 

ভালোবাসা হয় পবিত্র, নিষ্পাপ। ভালোবাসলে মানুষ সামান্য চাহিদাকে তুচ্ছ ভাবে। ভালোবাসায় কোনো ধোকা থাকে না। থাকে অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা। 

যা তুমি হারিয়েছো.? আমি আর কোনো কথা বাড়াতে চাই না। আসি.??


রাফসানঃ কোথায় যাবে। বাবা মায়ের সাথে গ্রামে যাবে.??


সানিতাঃ কয়েক ঘন্টা আগে ডিবোর্স পেপারে সাইন

করে আমার ব্যাপারে জানার অধিকার তুমি হারিয়েছো। আমাকে আর আমার সন্তানকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দাও.??


সানিতা আর দাড়ালো না।। সে জানে এই মানুষটা তাকে ছাড়া অচল। খুব ভালোবাসে তাকে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে অনেক বড় অন্যায় করেছে সে।। আর সেই জন্য তার একটাই শাস্তি। বাকি জীবনটা তাকে সানিতা আর নিজের সন্তানকে ছাড়া বাঁচতে হবে।


হ্যা অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেলো রাফসান আর সীমার। কথা ছিলো সানিতা রাফসানের বাবা মায়ের সাথে তাদের বাড়ি ফিরে যাবে। কিন্তু ভোরের আলো ফোটার আগেই সানিতা বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো একা একা। 

প্রথমে গেলো নানার বাড়ির গ্রামে। মায়ের কবর তাকে খুব টানছিলো।। এরপর পা বাড়ালো অজানা,, অচেনা 

পৃথিবীর দিকে। যেখানে ভাগ্য নিয়ে যায়.......... 

 

অন্যদিকে বেলকুনিতে বসে গান শুনছে আর সিগারেট এর ধোঁয়া উড়াচ্ছে রাফসান। সারাদিন তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে তার মহারাণী কে। কিন্তু কোথাও পায়নি। পাঁচ মাসের পেট নিয়ে একটা মেয়ে কতদূরেই বা যেতে পারে একা একা। কোনো যে সে সামান্য মোহ ত্যাগ করতে পারলো না,, তাহলেই তো নিজের স্ত্রী সন্তানকে হারাতে হতো না। নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে রাফসানের। একের পর এক সিগারেট এর ফিল্টার ফেলছে আর নতুন একটা জ্বালাচ্ছে। ধোঁয়ায় ভরে গেছে জায়গাটা।। এই মুহুর্তে সীমা কফি নিয়ে আসলো আর বললো..........


সীমাঃ তোমার কফি.?


রাফসানঃ আমি কফি চেয়েছি.?


সীমাঃ তুমি তো এই সময় কফি খাও তাই দিলাম.?


রাফসানঃ সেটা তো সানিতার হাতের কফি। তোর হাতের কফি খাই নাকি আমি.?


সীমাঃ তুমি তুই তুকারি করছো কেনো.? 


রাফসানঃ বেশ করেছি। আমান সামনে থেকে 

সরে যা নাহলে তোকে খুন করে দিবো। তোর 

জন্য আমি সব হারিয়েছি.? 


সীমাঃ তোমার পুরোনো বউ চলে গেছে নিজের দেমাগের জ্বালায়। এতে আমার কি দোষ। 

তুমি এমন ব্যাবহার করবে না আমার সাথে.? 


রাফসানঃ দেখবি কি করবো। নষ্টা মেয়ে মানুষ.? 

 

এই কথাটা বলেই রাফসান মগটা ছুড়ে ফেলে দিলো?? তাৎক্ষণিক ভাবে মগ ভাঙার শব্দে আৎকে উঠলো সীমা। চিনামাটির মগটা মেঝেতে খান খান হয়ে পড়ে আছে। সীমা আর কথা বাড়ালো না,কারন এই মুহুর্তে তার মোবাইলে কারো কল এসেছে। সীমা কল রিসিভ করলো আর বললো..........


সীমাঃ হ্যালো.?


ওপাশ থেকে সীমা যা শুনলো তার জন্য সে একেবারেই প্রস্তুত ছিলো না। ফোনটা বিছানায় রেখে সীমা আবার রাফসানের কাছে এসে দাঁড়ালো, আর বললো............


সীমাঃ রাফসান.?


রাফসানঃ আবার এসেছিস। তোর লজ্জা এতো 

কম কেনো.?


সীমাঃ রাফসান আমাদেরকে একবার বাড়িতে 

যেতে হবে। সর্বনাশ হয়ে গেছে.?? 


রাফসানঃ সর্বনাশ তো আমার হয়েছে। তোদের 

আর কি হবে.? 


সীমাঃ বাবা একটু আগে সুইসাইড করেছে রাফসান। 

মা ফোন করেছিলো। আমাদের এক্ষনি যেতে হবে.? 


রাফসানঃ তোর বাবা তুই যা। আমাকে এর মধ্যে

টানিস না। আমাকে একা থাকতে দে.?


সীমাঃ কিন্তু.? 


রাফসানঃ তোর বাবার জন্য আজ আমার মহারাণীর এতো কষ্ট। মানুষটা মারা গিয়েছে, আমি তাকে নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু আমি যাবো না। আমাকে একা থাকতে দে,,বিরক্ত করিস না.?


এরপর সীমা একাই গেলো তার বাবার বাড়ি।। রাফসান বাড়ি ছেড়ে কোথাও নড়েনি। এমনকি অফিসেও যায়নি। পরের দিন রাফসান একা বাড়িতে ছিলো। সীমা বাবার বাড়ি থেকে ফিরেনি....


সন্ধা বেলায় রাফসানের নামে ডাক যোগে একটা চিঠি আসলো। রাফসান বুঝতে পারছে না, তাকে চিঠি কে পাঠাতে পারে! আর তাতে কিই বা লেখা থাকতে পারে..


মাস চারেক হয়েছে দেশে ফিরেছে অপুর্ব।। যদিও দেশে ফেরার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিলো না তার, তবুও মায়ের জন্য ফিরতে হয়েছে তাকে। দেশে আসার পর থেকেই সানিতার স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সে হয়তো সুস্থ থাকতে পারবে না। তাই বাড়ি ঘর ছেড়ে সে ঢাকা শহরে চলে এসেছে। এখানে মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে বড় পদে একটা চাকরি পেয়েছে সে। সেই সাথে বাংলো আর গাড়িও পেয়েছে।। 

আজ সে একজন ধনী লোক। তার কাছে সব আছে। 

নেই শুধু তার মহা মুল্যবান সম্পদ তার প্রেয়সী।। যার জন্য এতোকিছু করেছিলো সে। অপুর্ব মনে মনে ভাবতে লাগলো........ 


সানিতা হয়তো এতদিনে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার

করছে। কিন্তু তার পৃথিবীটা মরুভূমি হয়ে গেছে।  

__

__

অপুর্বের মা ইতি মধ্যেই ছেলের জন্য পাত্রী পছন্দ করে ফেলেছেন। পাত্রী হিসেবে নিজের বোনের মেয়েকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।৷ তাই অপুর্বের মা তাদের সাথে নিজের বোনের মেয়ে নিশিকে নিয়ে এসেছেন ঢাকা শহরে।। যাতে কাছাকাছি থেকে অপুর্ব ও নিশির মধ্যে প্রেম টা তৈরি হয়।। অপুর্ব অবশ্য তাতে আপত্তি না করলেও আগ্রহীও নয়।


এদিকে অপুর্ব ভাবতে থাকে অতীতের সেই দিন গুলো।। 

যেই দিন গুলো ছিলো অনেক মধুর আর ভালোবাসার। ভাবতে থাকে সানিতার সেই কথা গুলো। সেদিন অপুর্ব সানিতাকে বলেছিলো........ 


অপুর্বঃ আচ্ছা বিয়ে করতে কি অনেক কিছু দিতে

হয় সানিতা.?


সানিতাঃ কই না তো.?


অপুর্বঃ কিন্তু আমি তো বিয়েতে দেখি একটা লাগেজ ভরা জিনিস দেয় ছেলে পক্ষ.?


সানিতাঃ আচ্ছা.? 


অপুর্বঃ আমি যদি এতোকিছু দিতে না পারি তুমি বিয়ে করবে না আমাকে.?


সানিতাঃ ধুর পাগল। আমার ওতোকিছু লাগবে না। শুধু একটা লাল টুকটুকে শাড়ি আর একটা নাকফুল দিও ব্যাস। আর আমার কিচ্ছু লাগবে না তুমি থাকলে.?


অপুর্বঃ আচ্ছা তাহলে আমি বিদেশ থেকে ফেরার সময় শাড়ি আর নাকফুল নিয়ে আসবো.?


সানিতাঃ আচ্ছা ঠিক আছে.? 


হ্যা অপুর্ব তার কথাগুলো রেখেছে।। দেশে আসার সময় নিয়ে এসেছে বিয়ের লাল টুকটুকে শাড়ি আর নাকফুল।

কিন্তু কথা রাখেনি সানিতা। সে লাল শাড়ি পড়ে ফেলেছে তবে অন্যের বধু সাজে। অপুর্বের আনা শাড়ির জন্য অপেক্ষা করেনি। তবুও আপুর্ব এসব কিনেছে। হয়তো পৌঁছে দিবে সানিতার শ্বশুর বাড়ি।

হাজার হলেও এসব কিছুর হকদার সানিতা। সানিতাকে সে দেখিয়ে দিতে চায় সে সানিতার মতো বেইমান নয়।।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অপুর্ব মনে মনে বলতে লাগলো......... 


**কেনো সানিতা এভাবে আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলা করলো? আমার আজ বাড়ি, গাড়ি, টাকা, পয়সা, সব আছে। কিন্তু যার জন্য এসব করা সেই তো নেই। যেই প্রিয়সীর সুখের জন্য সম্রাজ্য গড়েছি আমি সেই প্রিয়সী আজ অন্য কারো৷ আর কয়েকটা দিন কি অপেক্ষা করা যেতো না? এতো লোভ তোমার? আগে যদি তোমার আসল রুপ জানতে পারতাম তাহলে এই বিয়েটা খুব সহজে মেনে নিতাম। তোমার জন্য নিশির সাথে সারা জীবন শুধু অভিনয় করে যেতে হবে আমার। 


অপুর্বের ভাবনার ঘোর কাটলো নিশির ডাকে.........


নিশিঃ অপুর্ব ভাইয়া। ব্যাস্ত.?


অপুর্বঃ না। কিছু বলবি নিশি.?


নিশিঃ তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিলো।

একবার ছাদে আসবে.?


অপুর্বঃ হ্যা চলো.?


-গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০৫)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


অন্যদিকে চিঠির খাম খুলতেই রাফসান বুঝতে পারলো 

চিঠিটা লিখেছেন সানিতার বাবা। খুব সম্ভবত ভদ্রলোক সুইসাইড করার আগে চিঠিটা পোস্ট করেছেন। খাম খুলে রাফসান পড়তে শুরু করলো........... 

~~

~~

   বাবা রাফসান। তুমি যখন এই চিঠিটা পড়ছো হয়তো 

             আমি তখন পরকালে পাড়ি জমিয়েছি। 

    ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি আত্মহত্যা মহাপাপ। কিন্তু দেখো আজকে আমাকে সেই রাস্তাটাই বেছে নিতে হচ্ছে।। তোমাকেও যেনো এই একই রাস্তা বেছে নিতে না 

  হয় সেই জন্য চলে যাওয়ার আগে তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে ইচ্ছে হলো।সেই সাথে আমার জীবনের সব

      থেকে বড় সত্যি তোমাকে জানাতে চাই আমি। 


 আমি তখন ২৫ বছরের যুবক।। আমার বাবা মা পছন্দ 

       করে ঘরে এনেছিলেন সানিতার মা শায়লাকে। 

 মেয়েটার চেহারা যতটা মিষ্টি ছিলো তার স্বভাব ছিলো 

 এর থেকেও মিষ্টি। ঠিক আমার সানিতা মায়ের মতো।। 


কথায় আছে মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না। 

 আমিও বুঝিনি। রাত দিন খারাপ সঙ্গে ডুবে থাকতাম। 

     শায়লা অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে।। কিন্তু কেনো জানিনা বিয়ের দুই বছর 

  পর ওকে আর ভালো লাগতো না আমার। হতে পারে মোহ শেষ হয়ে গিয়েছিলো।।। তরপরেও মেয়েটা আমার 

                       যত্নে অবহেলা করতো না। 


    মেয়েটা যে ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেটাও  

                   আমাকে বুঝতে দেয়নি। ওর যখন  

  চিকিৎসা প্রয়োজন ছিলো আমি তখনো মনে ভাবতাম

               বুঝি নাটক করছে। ওর কিছুই হবে না। 

তারপর আমার সব ধারণা ভুল প্রমান করে চলে গেলো। 

        ভেবেছিলাম মেয়েটাকে নিয়ে জীবন কাটাবো। 

  কিন্তু মেয়েটা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। 


এরপর খুব একা লাগতো। হাজার হলেও পুরুষ মানুষ।।

                       করে ফেললাম ২য় বিয়ে। 

  আর সেটাই ছিলো আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল। 


 কারন সীমার মা সৎ চরিত্রের মহিলা ছিলো না।। আগে

  থেকেই অবৈধ সম্পর্ক ছিলো ওর চাচাতো ভাইয়ের 

সাথে। শুধু লোভে পড়ে বিয়ে করেছিলো আমাকে। বিয়ে

 হওয়ার পরেও ওরা ওদের সম্পর্ক চালিয়ে যেতে।। শুধু

   তাই নয় লোকটার যাতায়াত ছিলো আমার বাড়িতে। 

আমিও সে সব মেনে নিয়েছিলাম। কারন অতীতে আমি

                        অনেক পাপ করেছিলাম। 

আমার জীবনে সব থেকে বড় সত্যি যা কাউকে বলিনি৷

                         আজ তোমাকে বলছি...👇


সীমা আমার সন্তান না। সীমা ওর মা আর তার চাচাতো

      ভাইয়ের পাপের ফসল? বলতে পারো এর থেকে   

 বড় শাস্তি কোনো পুরুষের জন্য আর কিছু হতে পারে।


তোমাকে এতোকিছু জানানোর একটাই কারন,, আমার  

                      মতো ভুল তুমি করো না।


সীমা একদম ওর মায়ের মতো হয়েছে। তেমার জীবনটা

                            ছারখার করে দিবে। 


আর তাছাড়া তোমাদের ডিভোর্স এখনো কার্যকর হয়নি

    কারন সানিতা অন্তঃসত্ত্বা। আর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ডিভোর্স হয় না। তাই তুমি সানিতা মাকে খুঁজে বের করে 

 নিয়ে আসো। তোমার সন্তানকে পিতৃহীন হতে দিও না।

 

আর আমার মাকে অতীতের সব দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দিও

                    তোমার ভালোবাসার ছোঁয়ায়।


 ইতিঃ 

এক হতভাগ্য বাবা.....


রাফসানের দু চোখ অশ্রুতে ভিজে গেছে। একটা মানুষ এতটা কষ্ট পুষে রেখেছিলো মনে। রাফসান মনে মনে ঠিক করলো সানিতার বাবার মতো ভুল করবে না। আকাশ পাতাল খুঁজে হলেও ফিরিয়ে আনবে নিজের স্ত্রী সন্তানকে। দরকার হলে যতক্ষণ না সানিতা ফিরবে সানিতার পা ছাড়বে না সে। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে হলেও ফিরে পেতে চায় সানিতাকে।।


যারা গল্প পড়তে পছন্দ করেন এখনই আমাদের পেইজ এর লাইক বাটনে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন। এবং কেমন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার মতামত। ধন্যবাদ সবাইকে.....ইতিঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


এদিকে অপুর্বের মা জাকির বেগম দেখলেন অপুর্ব আর নিশি এক সাথে ছাদের দিকে যাচ্ছে। এই দেখে তার খুশি যেনো আর ধরে না। তার মানে ছেলে মেয়ে দুটোর মধ্যে ভাব ভালোবাসা জমতে শুরু করেছে। ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে অপুর্ব আর নিশি। কারো মুখে কোনো কথা নেই। প্রথমে অপুর্ব মুখ খলুলো............... 


অপুর্বঃ কি হলো নিশি। কিছু বলছো না যে। তুমি আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলে। রাইট.?


নিশিঃ আসলে কি দিয়ে শুরু করবো বা তুমি কিভাবে নিবে বুঝতে পারছি না। সত্যি বলতে ভয় লাগছে বাট

না বলেও উপায় নেই। বিয়ের ডেট এগিয়ে আসছে.?


অপুর্বঃ হবু স্বামী হিসেবে বলতে সংকোচবোধ করলে বড় ভাই হিসেবে বলতে পারো৷ আগে তো আমি 

তোমার খালাতে ভাই.? 


নিশিঃ আসলে এই বিয়েটা আমি করতে পারবো না.?


অপুর্বঃ কেনো.?


নিশিঃ আমার একটা রিলেশন আছে। ৩ বছর রার্নিং। 

আর আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই.? 


অপুর্বঃ বাসায় বলছো.? 


নিশিঃ হ্যা বাট লাভ হয়নি। এই জন্যই বাবা এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাবা মা কেউ ওকে মেনে নেয়নি?


অপুর্বঃ কিন্তু কেনো.? 


নিশিঃ ও একটা বেসরকারি কম্পানিতে জব করে.?


অপুর্বঃ আমিও তো বেসরকারি কম্পানিতে জব করি। তাতে কি হয়েছে.? 


নিশিঃ আসলে ও ক্লারিক্যাল পোস্টে জব করে আর ফ্যামিলির অবস্থা খুব একটা ভালো না.?


অপুর্বঃ তুমি মানিয়ে নিতে পারবে তো? খালা খালু তোমাকে তো হাই ফাই ভাবে মানুষ করেছে.?


নিশিঃ আমি পারবো। তাছাড়া ও অনেক মেধাবী ছেলে। আমি জানি ও আরো ভালো কিছু করে দেখাবে.?


অপুর্বঃ ঠিক আছে। আমাদের বিয়ের জন্য ঠিক করা ডেটেই ওর সাথে তোমার বিয়ে হবে.?


নিশিঃ কিন্তু বাড়ির সবাই.?


অপুর্বঃ আমি আছি তো। আমি সব ম্যানেজ করে নিবো.?


নিশিঃ থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু না মনে করলে.?


অপুর্বঃ কি কথা.?


নিশিঃ তুমি সানিতা আপুকে ভুলতে পেরেছো.?


অপুর্বঃ অন্যের বউকে মনে রেখে কি লাভ বলতো।। 

আর তাছাড়া বিশ্বাসঘাতকেরা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না.?


নিশিঃ তাহলে শাড়ি আর নাকফুল কার জন্য এসেছো।। আমি কিন্তু দেখে ফেলেছি। আর আমি জানি ওগুলো কার জন্য নিয়ে আশা। তবে কেনো মুখে স্বীকার করছো না। আচ্ছা একটা কথা বলো তো,,যদি এমন কিছু জানতে পারো সানিতা আপু পরিস্থিতির স্বীকার ছিলো? 


অপুর্বঃ তাতেও তো সত্যিটা বদলে যায় না। ও তো পরের বউ ই থাকে তাইনা.?


নিশিঃ তবে কি জানো আপুর কপাল পোড়া না হলে তোমাকে পেয়ে হারাতো না। 


অপুর্বঃ তুমিও তো পেয়ে হারাচ্ছো.?


নিশিঃ কিহ.?


অপুর্বঃ কিছু না। আই এম জাস্ট জোকিংক? আচ্ছা শোনো এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। যা বলার আমি নিজে বলবো.??


নিশিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। চলো এখন নিচে যাই.?


অপুর্বঃ তুমি যাও আমি আসতেছি.?


আজ অনেক গুলো দিন হয়ে গেছে সানিতা চলে গেছে অপুর্বের জীবন থেকে। তবুও অপুর্ব ভুলতে পারেনি তাকে। প্রথম ভালোবাসা হয়তো এতো সহজে ভুলা যায় না। সেখ চোখ,সেই মুখ, সেই অভিমান,সেই পাগলামি অপুর্ব হয়তে কখনো ভুলতে পারবে না। ফোন ধরতে দেরী হলে কেঁদে ভাসাতো মেয়েটা।।। তারপর যথারীতি ফোন দিতো অপুর্বের রুমমেট কে। 


নিজের প্রথম টিউশনির টাকা দিয়ে অপুর্বের জন্য ০১টা 

ম্যানিব্যাগ কিনেছিলো সানিতা। অপুর্ব আজও সেই ম্যানিব্যাগ ব্যাবহার করছে। সবই আগের মতো আছে।। শুধু পাল্টে গেছে অপুর্ব আর সানিতার সম্পর্কের সমীকরণ। সানিতা হয়তো এখন খুব সুখে ঘর করছে।। 


-গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০৬)

-লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


অপুর্ব যখন ভাবতেছ সানিতা তাকে ফাঁকি দিয়ে হয়তো 

এখন স্বামীর সাথে সুখে সংসার করছে, ঠিক সেই সময়

সানিতা নিজের জীবন সংগ্রামে ব্যাস্ত। দুর্বল শরীরে সারাদিনের ক্লান্তিকর জার্নি শেষ করে অবশেষ সানিতা এসে পৌঁছালো নিজের গন্তব্যে......


সৃষ্টিকর্তা যখন একটা রাস্তা বন্ধ করে দেন তখন হাজার টা রাস্তা খুলে দেন। সানিতার কাছে সেই নতুন রাস্তার নাম নোভা। সানিতার ছোট বেলার বান্ধবী নোভা।

স্কুল কলেজে একই সাথে পড়েছে তারা।। উচ্চমাধ্যমিক এরপর তাদের রাস্তা টা আলাদা হয়ে গেছে। এরপর অবশ্য বেশ কয়েক বছর যোগাযোগ ছিলো না। গেলো বছর একটা গেট টুগেদার আবার দেখা হয়েছে তাদের। 


নোভা খুব গরীব ঘরের মেয়ে ছিলো। অনেক কষ্টে পড়া লেখা শেষ করে এখন একটা কম্পানিতে চাকরি করে। 

বিধবা মাকে নিয়ে একটা বাসা বাড়া করে সেখানেই থাকে। বিয়েটা অবশ্য এখনো করা হয়ে উঠেনি এখনো৷ তাতে অবশ্য নোভা আর ওর মায়ের খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই। আর শালার মাথা ব্যাথা সব আমার। কবে যে বিয়ে করবো আল্লাহ ভালো জানে🙉🙉 


সানিতা এসে উঠেছে নোভার কাছে।। তার অবশ্য দুইটা কারন। প্রথমত,,সানিতা জানে এই অবস্থায় সঠিক সাহায্য টা সে নোভার কাছেই পাবে। আর দ্বিতীয়ত, রাফসানের সাথে নোভার তেমন একটা আলাপ নেই। 


আর যাই হোক অন্তত নোভার কাছে খোঁজ খবর নিতে পারবে না রাফসান। এতোদিনের সংসার জীবনে এটুকু অন্তত জানে সানিতা যতকিছুই হোক না কেনো হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না রাফসান। 


কিছুক্ষণ আগে বাস টার্মিনাল থেকে সানিতাকে বাসায় নিয়ে এসেছে নোভা। সানিতাকে দেখে মা, মেয়ের খুশি যেনো ধরে না। সত্যি মানুষ দুইটা বড্ড আন্তরিক........


নোভাঃ আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো তোর.? 


সানিতাঃ তা একটু হয়েছে বৈ কি.? অচেনা জায়গা তারপর এতটা দূর। বড্ড ক্লান্ত লাগছে রে.?


নোভাঃ সেটা তো বুঝতে পারছি। মা তে বারবার ঘরে বাইরে করছে। তোর চিন্তায় আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছে.? 


সানিতাঃ আন্টি মানুষটা খুব ভালো রে। আচ্ছা আমি তোদের খুব অসুবিধায় ফেললাম তাইনা.?


নোভাঃ হ্যা ফেলেছিস। এবার দূর হ কুত্তি.?


সানিতাঃ রাগ দেখাচ্ছিস কেনো.? 


নোভাঃ তা দেখাবো না?? আমি আর মা ছাড়া তো আমাদের কেউ নেই। তুই আসবি শুনে মা যে কত খুশি??


সানিতাঃ হ্যা তবে আমি একা হলে একটা কথা ছিলো। 

এই অবস্থায় এসে তোদের বিরম্বনায় ফেললাম। 

আচ্ছা শোন আমার একটা উপকার করবি প্লিজ.?


নোভাঃ হ্যা ম্যাডাম জানি আপনি কি বলবেন। চাকরি খুঁজে দিতে বলবেন তাইতো.?


সানিতাঃ তুই কি করে জানলি এটা বলবো.? 


নোভাঃ সেই ছোট বেলা থেকে দেখছি তোকে। তোর আত্মসম্মানবোধ সম্পর্কে জানি আমি। তাইতো ব্যাবস্থাও করে রেখেছি.?


সানিতাঃ সত্যি! তা কি ব্যাবস্থা শুনি.?


নোভাঃ জানিস তো আমি একটা প্রাইভেট কম্পানিতে পার্সোনাল আসিস্ট্যান্ট হিসবে জব করি। প্রাইভেট হলেও কিছু রুলস এন্ড রেগুলেশন আছে। 

তবুও আমি বস কে বলেছি৷ বস বলেছে প্রপার একটা ইন্টারভিউ নিবে। ঠিক মনে হলে আপাতত একটা পোস্ট দিবে৷ পরে অবশ্য পার্মানেন্ট করে নিবে। দেখে নিস চাকরিটা হয়ে যাবে তোর। 

আমার বস খুব রাগী মানুষ। অফিসের সবাই খুব ভয় পায় উনাকে।। কিন্তু জানিস তো ভেতরে ভেতরে মানুষটা খুব দয়ালু.?? 


সানিতাঃ বাব্বাহ! বসের নামে এক ঢোক পানি বেশি খাচ্ছিস। তো নাম কিরে তার.? 


এমন সময় নোভার মা নাস্তা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। আর বলতে লাগলেন........


নোভার মাঃ বাবা রে বাবা,মেয়েটা আসতেও পারে না। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বকবক। সানিতা মা এখন আয়তো খেয়ে নিবি.?


সানিতাঃ হাতো ধোঁয়া নেই তো আন্টি। বেসিন 

কোন দিকে.?


নোভার মাঃ হাত ধোঁয়া লাগবে না। এই দিকে আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি.? 


নোভার মায়ের হাতে খাবার খাচ্ছে সানিতা।। শেষ কবে মায়ের হাতে খাবার খেয়েছে মানে পড়ে না সানিতার৷ 

মায়ের পরে রাফসান খাইয়ে দিতো যত্ন করে। কিন্তু আজ সেই সুখ টুকুও সইলো না তার কপালে।  


আজকাল সানিতা মনে মনে ভাবতে থাকে সে কি খুব পাপী?? না হলে সৃষ্টিকর্তা এভাবে কেনো বারবার ভালোবাসার মানুষগুলোকে কেড়ে নেন। 


এই পর্বটি যথেষ্ট বড় করেছি!! আর বড় করতে বলবেন না প্লিজ। আর দয়া করে আপনারা গঠন মুলক মন্তব্য করবেন। নেক্সট পর্ব তো আমি এমনিই দিবো আপনারা শুধু লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকুন।

আপনারা পাঠক পাঠিকারা আমার অনুপ্রেরণা। সুতরাং আপনাদের মন্তব্য আমাকে আরো ভালো করে লিখতে সাহায্য করবে। আমার গল্পকে ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ। আমিও অনেক ভালোবাসি আপনাদেরকে 😍

ইতিঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


পরের দিন সকাল সকাল নোভার সাথে বের হয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে সানিতা। যে ভাবেই হোক এই চাকরি টা তাকে পেতেই হবে। এই যুগে একটা বাচ্চাকে একা মানুষ করা অনেক খরচ। সানিতা চায় না তার বাচ্চার আদর যত্নে বিন্দুমাত্র অবহেলা হোক। 


তাছাড়া সানিতা ঠিক করেছে জবটা পার্মানেন্ট হলে সে নিজেই একটা বাসা বাড়া নিবে। তাতে সম্পর্কটা ভালো থাকবে নোভা আর ওর মায়ের সাথে। নোভাদের অফিস টা বেশ বড়। দেখলেই বোঝা যায় অফিসের মালিক অনেক বড়লোক। তিনি নাকি বিদেশে থাকেন। 

দেশে খুব একটা আসেন ও না। সম্প্রতি নোভাদের যিনি বর্তমান বস তার হাতেই দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। লিফটে করে থার্ড ফ্লোরে আসলো নোভা আর সানিতা। সানিতাকে বসতে দিয়ে চেম্বারের ভিতরে চলে গেলো নোভা। আর বললো........


নোভাঃ মে আই কাম ইন স্যার.? 


বসঃ ইয়েস কাম.?


নোভাঃ স্যার আপনাকে যার কথা বলেছি তাকে নিয়ে এসেছি। আমি কি তাকে ভেতরে পাঠিয়ে দিবো নাকি অপেক্ষা করতে বলবো.?


বসঃ এক কাজ করো পাঠিয়ে দাও.? আর তুমি একাউন্টস এর ফাইল গুলো একটু চেক করো। আমাকে বিকেলের মধ্যে রিপোর্ট দিবে.?


নোভাঃ ওকে স্যার.? 


সানিতাকে ভিতরে যেতে বলে নোভা নিজের কাজে চলে গেলো।। সানিতার মনে ভয় ভয় কাজ করছে। শুনেছে মানুষ টা নাকি রাগী। যত দোয়া দরুদপাঠ করে সানিতা পা বাড়ালো চেম্বারের দিকে।। চেম্বারের দরজা খুলে সানিতা বললো.........


সানিতাঃ মে আই কাম ইন স্যার.?


বসঃ ইয়েস কাম.?


এইবার দুজনের চোখে চোখ পড়তেই দুজনেই হতবাক।

এই মুহুর্ত টা হয়তো দুজনের কেউ ই আশা করেনি। 

অপুর্ব--সানিতা মুখোমুখি দুজনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে অপুর্ব ই নোভার বস।। সানিতা এটা অন্তত আশা করেনি,, ভাগ্য তাকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করাবে। 


অপুর্ব শুনেছে পৃথিবী টা গোল। কিন্তু তার আজকে মনে

হচ্ছে পৃথিবী টা পোল তো অবশ্যই,, তবে একটা বৃত্ত। আড়াই বছর আগে থেকে যে বিন্দু থেকে সে পাড়ি জমিয়েছিলো আজ সেই বিন্দুতেই মিলেছে। যাকে ভুলতে এতো দূরে চলে আসা আজ সেই মানুষটাই তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তাও এই অবস্থায়। 


দুজনের চোখের কোণে পানি চিকচিক করতেছে। কিন্তু কেই কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে,, যেনো হাজার বছরের তৃষ্ণা মেটাতে এক ফোঁটা পানির সন্ধান পেয়েছে।। নীরবতার দেয়াল ভেঙে সানিতা বলে উঠলো.............


সানিতাঃ অপুর্ব তুমি.?


অপুর্বঃ আপনি আমার নাম ধরে ডাকছেন কেনো? 

কল মি বস এন্ড স্যার.? 


সানিতাঃ সরি স্যার.? 


অপুর্বঃ বসুন। তা এখানে এই অবস্থায় চাকরির খোঁজে? 

নোভার কাছে শুনলাম আপনার বড়লোক বর আবার বিয়ে করেছে? তাহলে সুখ সইলো না?

আসলে কি জানেন তো! লোভীদের সাথে এমনই হয়.? 


সানিতাঃ দেখেন স্যার আমি এখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। আর আপনি একজন বাইরের লোক হয়ে আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলবেন না.?? 


অপুর্বঃ ওকে আপনার সার্টিফিকেট গুলো দেখান.??


সানিতাঃ এই নিন.?


অপুর্বঃ তা আপনি এই অবস্থায় পারবেন তো? দেখেন 

এটা আমাদের প্রাইভেট কম্পানি। এতো ছুটি দিতে পারবো না আমরা। মাঝপথে আবার জব টা ছেড়ে দিবেন না তো? মাঝপথে ছেড়ে দেওয়া তো আপনার স্বভাবগত বৈশিষ্ট.??


সানিতাঃ আমি পারবো.? 


অপুর্বঃ ওকে। আপনি এবার আসতে পারেন। বাকিটা জানিয়ে দেওয়া হবে.? 


সানিতাঃ ওকে.?


অপুর্বঃ শুনুন.?


সানিতাঃ ইয়েস.?


অপুর্বঃ নোভার কাছেই উঠেছেন.?


সানিতাঃ সেটা আপনার জানার বিষয় নয়.?


অপুর্বঃ চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। 

নিজের যত্ন নিবেন.? 


সানিতাঃ তাতে আপনার কি.?


অপুর্বঃ আমার কিছু না। তবে এটা প্রাইভেট কম্পানি।

লুক টা ম্যাটার করে.? 


সানিতাঃ ঠিক আছে.? 


বস এর চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নোভা। ভিতরে কি হচ্ছে, না জানা পর্যন্ত কাজে মন বসছে না তার। 

সানিতা বের হয়ে আসতেই নোভা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো.............. 


নোভাঃ কিরে সানু, ভিতরে কি হলো জয়িন করতে বলেছে তো.?


সানিতাঃ জানিনা। ভালো লাগছে না। আমি রুমে যাবো.?


নোভাঃ কি হয়েছে রে। বস খারাপ ব্যাবহার করেছে। 

আসলে মানুষ টা একটু রাগী.? 


সানিতাঃ সে সব কিছু না। আমার ভালো লাগছে না.? 


নোভাঃ শরবত খাবি.?


সানিতাঃ না.?


নোভাঃ তাহলে চা। তুই তো আবার চায়ের পোকা.?


সানিতাঃ না। বলছি তো ভাল্লাগছে না.?


নোভাঃ আচ্ছা চল তোকে অটো তে উঠিয়ে দিয়ে আসি.?


সানিতাঃ চল.?


সানিতা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে,, এই চাকরিটা তার জন্য এতটা সহজে হবে না। অপুর্ব বরাবরই জেদি একটা ছেলে। এবার সব রাগ জেদ সানিতার উপর খাটাবে সে। জীবন এতটা কঠিন হয়ে যাবে সানিতা কখনে কল্পনা করেনি।। যেই মানুষ টা সানিতার ভরসা ছিলো এক সময় আজ তার সাথে স্নায়ুযুদ্ধ করতে হবে।


সন্ধ্যা ৬ টায় অফিস থেকে ফিরে এসেছে নোভা।। হাতে এক ব্যাগ বাজার আর মিষ্টির প্যাকেট। এসেই সানিতাকে জড়িয়ে ধরলো আর বলতে শুরু করলো....


নোভাঃ সানু তুই কি ম্যাজিক জানিস নাকি রে। আজকে আমার প্রমোশন হয়েছে। আর বস বলেছে আমার পোস্টে তোকে রিক্রুট করবে।। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে না বলে বুঝাতে পারবো না। দেখ বাজার থেকে পোলাও এর চাল আর মাংস নিয়ে এসেছি। সেলিব্রিটি তো করতেই হবে। দাঁড়া মাকে দিয়ে আসি এসব.??


-গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০৭)

-লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


মা..... ও মা......নোভা তার মাকে ডাকতে ডাকে ভিতরে চলে গেলো। সানিতা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে অপুর্ব এসব কেনো করছে।। কিন্তু নোভার খুশির কাছ তার এটুকু কষ্ট কিছুই না। অপুর্ব হয়তো তাকে সাময়িক কষ্ট দিবে, কিন্তু সানিতা এটাও জানে, অপুর্ব যতই রেগে থাকুক আজও সে অপুর্বের কলিজা......... 


এদিকে অপুর্ব অতীতের কথা গুলো ভাবতে লাগলো....

 

অপুর্বঃ আচ্ছা সানিতা তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো.?


সানিতাঃ যতটা ভালোবাসলে দূরে যাওয়া যায় না 

ঠিক ততটা.?


অপুর্বঃ আচ্ছা ধরো, কোনো একটা কারনে আমাদের বিয়ে হলো না। আমি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনলাম। তখন তুমি কি করবে.? 


সানিতাঃ খুন করে ফেলবো। তুমি জানো না তুমি শুধু আমার.? আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে না তুমি.? 


অপুর্বঃ বাব্বাহ এতো অধিকার.?


সানিতাঃ হুম মিস্টার। এতোই অধিকার। তোমার শরীরের প্রতিটা পশমও আমার, শুধু আমার.?


অপুর্বঃ আচ্ছা তুমি একটা জিনিস খেয়াল করেছো সানিতা.?


সানিতাঃ কি গো.?


অপুর্বঃ এই ক্যাম্পাসে এতো গুলাে কাপল। এদের মধ্যে অধিকাংশ প্রেমেই কিন্তু সফলতা পাবে না। ভার্সিটি লাইফের প্রেমগুলো ৮০ ভাগই শেষ পর্যন্ত সফল হয় না। আচ্ছা আমাদের এমন হবে না তো.?


সানিতাঃ কেমন.?


অপুর্বঃ এই যে ক্যাম্পাস লাইফ শেষ প্রেমের 

সম্পর্ক শেষ.? 


সানিতাঃ উঁহু হবে না.? 


অপুর্বঃ গ্যারান্টি কিসের.?


সানিতাঃ দ্যা গ্রেট সানিতার.?


অপুর্বঃ দেখা যাবে ম্যাডাম। বেঁচে থাকলে সব 

দেখবো.?


সন্ধায় ছাদে চা খাচ্ছে আর অতীতের স্মৃতিচারণ করছে অপুর্ব। সেই দিনগুলো কত সুন্দর ছিলো। সানিতা যখন শুধুই অপুর্বের ছিলো। কেনো যে সব এলো মেলো হয়ে গেলো। না হলে সানিতা আজ অপুর্বের জীবন সঙ্গীনি হয়ে থাকতো।। সানিতাকে এভাবে চোখের সামনে দেখে অপুর্বের মনে মিশ্র অনুভুতি কাজ করছে। একদিকে মনে হচ্ছে যা হয়েছে ভালো হয়েছে। আর যাইহোক সানিতাকে তো সে রোজ দেখতে পারবে।। আবার মনে হচ্ছে এটা তো সে চায়নি। সে তো সানিতার সুখ চেয়েছিলো।। ভালোবাসার মানুষ যতই অপরাধ করুক তার কষ্ট কখনো সহ্য হয় না।। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়া হোক বা নাই হোক, ভালোবাসার মানুষের সুখই তো সুখ। আর সেটাই পবিত্র ভালোবাসার চিহ্ন........ 


অনেকক্ষণ হয়েছে নিশি ছাদে এসেছে কিন্তু অপুর্ব টের পায়নি। অতীতের ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেছে সে। হঠাৎ অপুর্বের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে নিশি বলে উঠলো........


নিশিঃ অপুর্ব ভাইয়া.?


অপুর্বঃ কিছু বলবে নিশি.?


নিশিঃ একা একা ছাদে বসে চা বিলাস করছো

একবার তো ডাকতে পারতে.? 


অপুর্বঃ এমনি ডাকা হয়ে উঠেনি। কি অবস্থা তোমার.?


নিশিঃ খুব টেনশন হচ্ছে বিয়ের তো আর বেশি দিন বাকি নেই। তুমি কিভাবে কি ম্যানেজ করবা কিছুই মাথায় আসছে না.? 


অপুর্বঃ দায়িত্ব যখন নিয়েছি উপায় বের করে নিবো।

এখন তুমি বলো তোমার ভালোবাসার মানুষের কি খবর? সে বিয়ের জন্য রেডি তো.? 


নিশিঃ তা রেডি কিন্তু সে আমার মতোই ভয় পাচ্ছে। বাবা যা রাগী.? 


অপুর্বঃ আমি আছি তো? তাছাড়া মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া করেগা কাজি.?


নিশিঃ তা ঠিক। কিন্তু আমি বাবার অমতে গিয়ে সজিবকে (নিশির প্রেমিক) পেতে চাই না.? 


অপুর্বঃ চিন্তা করো না। খালুজান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিবেন.?


নিশিঃ সেটা কি করে সম্ভব.? 


অপুর্বঃ ওতো জেনে তোমার কাজ নেই। বিয়ের শপিং করতে হবে তো.?


নিশিঃ হ্যা তা তে হবেই.?


অপুর্বঃ কালকে রেডি হয়ে থাকবে। আমি অফিসে গিয়ে কল দিলে আমার অফিসের নীচে গিয়ে দাঁড়াবে।তারপর আমরা শপিং মলে যাবো। ও হ্যা আমাদের সাথে কিন্তু আরো একজন যাবে.?


নিশিঃ সেটা কে.? 


অপুর্বঃ ক্রমশ প্রকাশ্য। আপাতত তুমি বসো আমি গেলাম। কয়েকটা কাজ সারতে হবে?? 


রাত ১টা বেজে গেছে।। রাফসান এখনো বাড়ি ফিরেনি। 

সীমার প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে কোথায় যেতে পারে রাফসান। 

ভাবতে ভাবতে দরজায় বেল বেজে উঠলো। সীমা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। মদ খেয়ে টলতে টলতে বাড়ি ফিরেছে রাফসান। আজ দুদিন হয়ে গেলো সে তার মহারাণীর সন্ধান পায়নি৷ মাথাটা যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছে তার৷ দরজা খুল দিতেই সীমার উপর ধমক দিতে শুরু করলো রাফসান.............


রাফসানঃ কি হলো? সামান্য দরজা খুলে দিতে এতো সময় লাগে? বাড়িতে বসে কি ঘাস কাটিস??


সীমাঃ এতো রাতে মানুষ ঘাষ কাটে না কি করে জানো না তুমি। রাত ১ টা বাজে রাফসান। আর তুমি এখন আসছো। বাড়িতে যে বউটা একা সেই খেয়াল আছে তোমার.?


রাফসানঃ কে বউ? তুই বউ? তোকে আমি বউ হিসেবে 

মানি না.?


সীমাঃ তা মানবে কেনো?? তুমি তো তোমার পুরোনো বউকে বউ মানবে। আর চেয়ে দেখো সে গিয়ে তার পুরোনো প্রেমিকের কাছে উঠেছে। তোমার বউ এতো ভালো মানুষ না যে এমনি এমনি চলে যাবে। নিজের যাওয়া প্রয়োজন ছিলো তাই এসব ঢং করেছে.?


রাফসানঃ পুরোনো প্রেমিক? সানিতার রেলিশন ছিলো?? 


সীমাঃ ছিলো না মানে? সে কি বেহায়াপনা!! দেখলেও লজ্জা লাগে। আমার তো মনে হয় সানিতা তার কাছে গেছে। আর নিজের দোষ ঢাকতে আমাদেরকে সবার সামনে এভাবে ছোট করে গেছে.?


সীমার কথা শুনে আমি একটা কথাই বলবো চোরে চুরি আবার শিনা চুরি😠😠


এই কথা শুনে আর কিছু ভাবতে পারছে না রাফসান।। তার মাথা কাজ করছে না। সানিতাকে যে রাফসান বড্ড বেশি ভালোবাসে!! সে সানিতা কখনো অন্য কারো হতে পারে না। রাফসান যতই অন্যায় করুক না কেনো সে তো সানিতার যত্নের অবহেলা করেনি। 


আপনাদের রিসপেন্স দেখে ভালো খুব লাগছে। গল্পটা

একটু বড় করার ইচ্ছে আছে। কেউ ধৈর্য্য হারাবেন না।

এভাবে আমাকে সাপোর্ট করবেন আশাকরি। সবার প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো 💖

ইতিঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


সানিতা তাকে ধোঁকা দিয়ে অন্য কারো হাত ধরবে এটা 

রাফসান কিছুতেই মেনে নিবে না। সানিতা যে তার সন্তানের মা। প্রচন্ড রাগে, দুঃখে, ঘৃণায় আজ অনেক দিন পর সীমাকে নিজের শরীরে আহ্বান করলো রাফসান। বিয়ের পর এই প্রথম সীমাকে কাছে টানলো রাফসান। বলতে গেলে এটাই তাদের প্রথম বৈধ মিলন।


রাফসানের স্পর্শে ভালোবাসার কোনো চিহ্ন পাচ্ছে না সীমা। সীমার শরীরটাকে পশুর মতো আঁচড়ে,কামড়ে দিচ্ছে রাফসান। পচন্ড ব্যাথায় বারবার কুঁকড়ে উঠছে সীমা। রাফসানের অবশ্য সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। 


নিজের প্রয়োজন শেষে সীমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় রাফসান। পাড়ি দিলো ঘুমের অতলে। সীমার সারা শরীর ব্যাথা করছে। খুব কান্না পাচ্ছে তার। নিজের শরীরের কাপর ঠিক করে বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো সীমা। 


~আচ্ছা সানিতাকে শাস্তি দিতে গিয়ে কোথাও নিজেকে শাস্তি দিয়ে ফেলছে না তো সে? এই জীবন টা চেয়েছিলো সে। এই জীবনের জন্যই কি সানিতান সাথে এতো অন্যায় করেছে সে?? আর কিছুই ভাবতে পারছে না সীমা।।।


এইদিকে মাঝরাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে সানিতা। কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। আচ্ছা রাফসান এখন কি করছে? সে কি খুঁজছে তাকে? নাকি সীমাকে নিয়ে সুখের পৃথিবী সাজাচ্ছে?? আচ্ছা অপুর্ব এখন কি করছে? অপুর্ব কি বিয়ে করেছে? সে কি ভুলতে পেরেছে সানিতাকে? আজ নিজেকে বড্ড একা লাগছে সানিতার। 


রাফসানের জন্য সীমা আছে। অপুর্বের জন্য হয়তো ওর বউ আছে। কিন্তু সানিতা? তার জন্য তো কেউ নেই। তাতে কি হয়েছে। নিজের সন্তানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচবে সানিতা। সবাই তাকে ছেড়ে গেলেও তার নারী ছেড়া ধন তাকে নিশ্চয়ই ছেড়ে যাবে না। শুয়ে শুয়ে এসব কথাই ভাবতেছে সানিতা। ঠিক তখনই নোভা বলে উঠলো......


নোভাঃ কিরে সানু,,ঘুমাস নি.?


সানিতার হুশশ ফিরলো নোভার ডাকে........ 


সানিতাঃ নারে ঘুম আসছে না.? 


নোভাঃ রাফসান ভাইয়ার কথা ভাবছিস। দেখ ভাবাটাই হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু একবার যেটা ফেলে এসেছিস সেটা ভুলে যাওয়াই ভালো। তাছাড়া যে একবার ঠকায় সে বারবার ঠকায়। আর সবচেয়ে বড় কথা রাফসান ভাইয়া এখন সীমার স্বামী.?? 


সানিতাঃ হুমম সবই বুঝি আমি। কিন্তু মনটা বড় 

বেহায়া রে.?


নোভাঃ হুমম কিন্তু তোর ওই ডাইনি বোনটাকে একদম সহ্য হয় না আমার? ছোট বেলা থেকে দেখছি তোর ক্ষতি করার জন্য একেবারে তৈরী থাকে সব সময়।

ওর জন্যই তো সবকিছু হারালি তুই। শয়নাতি একটা।

দেখিস ওর ভালো হবে না। জ্বলে পুড়ে মরবে.??


সানিতাঃ অভিশাপ দিস না নোভা। শতহোক আমার ছোট বোন। হয়তো এই ঘটনার পর আমিও তাকে

ঘৃণা করি তবুও আমি ওর খারাপ চাই না রে.?


নোভাঃ হ তুমি তো সিরিয়ালের নায়িকা। খারাপ কেমনে চাইবা। যত্তসব। আচ্ছা শোন কালকে তো তোর জয়নিং ভয় লাগছে না.? 


সানিতাঃ লাগছে তো.?


নোভাঃ কোনো ভয় নেই,,আমি আছি তো নাকি। আমি এতদিন বসের পি এ ছিলাম তো। সুতরাং উনার টুকিটাকি সব জানি আমি। আমি হেল্প করবো তোকে। দেখিস তোর কোনো কষ্ট হবো না.? 


সানিতাঃ ওকে ম্যাডাম।৷ আচ্ছা তোদের বস কব বিবাহিত.? 


নোভাঃ না। তবে বিয়ে ঠিক হয়েছে উনার খালাতো 

বোনের সাথে। জানিস মেয়েটা খুব সুন্দরী,তেমনই 

তার মিষ্টি ব্যাবহার। একবার এসেছিলো বসের 

মায়ের সাথে। কি যে অমায়িক ব্যাবহার.? 


সানিতাঃ ওহহ ভালো তো.?


-গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০৮)

-লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো সানিতার। বুকের বাম পাশে তীব্র ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার৷


পরের দিন সকাল বেলা অফিসে গিয়ে আধ ঘন্টা যাবৎ অপুর্বের চেম্বারে বসে আছে সানিতা। অপুর্ব না তো কোনো কথা বলছে, না তো কোনো কাজ করছে। এক দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে আছে সানিতার দিকে। অপুর্বের এমন আচরণে সানিতার ভিষণ অস্তিত্ব লাগছে। এভাবে কেউ হা করে তাকিয়ে থাকলে যে কারো অস্বস্তি হতে বাধ্য।। অপুর্বের এমন কান্ড দেখে সানিতা বলে উঠলো............... 


সানিতাঃ স্যার?


অপুর্বঃ হুমম?


সানিতাঃ কিছু বলবেন?


অপুর্বঃ বলবো বলেই তো ডেকেছি?


সানিতাঃ তো বলেন?


অপুর্বঃ আমি কখন কি বলবো, না বলবো সেটাও কি তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে। আমি তোমার বস 

না তুমি আমার বস? 


সানিতাঃ সরি স্যার?


অপুর্বঃ আচ্ছা মিস সানিতা। উফস!! মিসেস সানিতা 

বলেন তো ধোঁকা দেওয়ার শাস্তি কি হওয়া উচিৎ?


সানিতাঃ জানি না?


অপুর্বঃ আচ্ছা বলেন তো ছেড়ে যাবো না বলে 

ছেড়ে চলে গেলে তাকে কি বলা উচিৎ? 


সানিতাঃ এসব অদ্ভুত প্রশ্ন না করে কোনো কাজ থাকলে বলুন। নয়তো আমি চলে যাচ্ছি? 


অপুর্বঃ কাজ আছে বলেই তো ডেকেছি? 


সানিতাঃ তো বলুন কি কাজ?


অপুর্বঃ এই নিন স্টোর রুমের চাবি। আর আমি ১০টা ফাইলের লিস্ট দিচ্ছি সেই ১০টা ফাইল খুঁজে বের 

করে নিয়ে আসবেন। তারপর সেগুলো রিপোর্ট তৈরী করে জমা দিবেন। তাও ১ ঘন্টার মধ্যে। 

লেইট হলে কিন্তু শাস্তি পাওনা আছে। আর এক ঘন্টা পর যখন আমার রুমে আসবেন রিপোর্ট জমা দিতে তখন অবশ্যই এক কাপ ব্ল্যাক কফি আনবেন?

উইডাইট সুগার। গট ইট??


সানিতাঃ ইয়েস স্যার?


অপুর্বঃ আর শুনুন সাবধানে যাবেন।। আমাদের 

স্টোর রুমে কিন্তু ইয়া বড় বড় মাকড়সা আছে?


সানিতাঃ ওরে বাবা আমি যাবো না? 


অপুর্বঃ যেতেই হবে। ইটস ইউর ডিউটি?


সানিতাঃ আপনি তো জানেন আমি মাকড়সা ভয় পাই। প্লিজ আমি যাবো না আপনি আসাদ ভাইকে (পিয়ন) পাঠান। আমি রিপোর্ট রেডি করে দিবো?


অপুর্বঃ ঠিক আছে আসাদকে পাঠাবো তবে একটা 

শর্ত আছে?


সানিতাঃ কি শর্ত?


অপুর্বঃ আমার মাথা টিপে দিতে হবে অনেকক্ষণ ধরে? 


সানিতাঃ ঠিক আছে চাবিটা আর লিস্ট টা দিন৷ 

আমি স্টোর রুমেই যাচ্ছি? 


অপুর্বঃ মাকড়সা আছে কিন্তু? 


সানিতাঃ ওরা আপনার থেকে সেইফ?


অপুর্বঃ ওকে। বেস্ট অফ লাক?


রাগে গজগজ করতে করতে অপুর্বের চেম্বার থেকে বের হয়ে আসলো সানিতা। ঠিক সেই সময় নোভা এগিয়ে আসলো আর বললো........


নোভাঃ কিরে মুড অফ কেনো? সকাল সকাল স্যার বকেছে নাকি?


সানিতাঃ এ ছাড়া আর কি করতে পারে তোদের স্যার। পাঁজি লোক একটা?


নোভাঃ এভাবে বলিস না?


সানিতাঃ তো কিভাবে বলবো? ইংরেজিতে বলবো?


সানিতার কথা শুনে হাহাহা করে হেসে উঠলো নোভা। আর বললো......


নোভাঃ পাগলী মেয়ে একটা। তুই পারিস ও বটে?


সানিতাঃ আচ্ছা নোভা শোন না,,তোদের স্টোর রুমে 

কি কোনো মাকড়সা আছে? 


নোভাঃ আরে নাহ। এখানে স্টোর রুম একেবারে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন? আসাদ ভাই প্রতি সপ্তাহে 

লোক এনে পরিস্কার করায়?


নোভার কথা শুনে সানিতা বুঝতে পারলো, অপুর্ব তাকে ভয় দেখানোর জন্য এসব বানিয়ে বলেছে। অপুর্বের উপর প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে সানিতার।। বিড়বিড় করে সানিতা বললো'"""দাঁড়াও মি: অপুর্ব এর প্রতিশোধ আমি নিবো।।"""


নোভাঃ কিরে কিছু বললি সানু?


সানিতাঃ না। তুই তোর কাজ কর। আমি গেলাম?


যেখানে এক ঘন্টার মধ্যে ফাইল খুঁজে বের করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা সেখানে ১০ টা ফাইল খুঁজতে পাক্কা দেড় ঘন্টা লেগে গেলো সানিতার। ক্লান্ত হয়ে সে এবার অপুর্বের চেম্বারের দিকে গেলো। ফাইলের উপর মুখ গুঁজে বসে আছে অপুর্ব।। সানিতা গিয়ে বললো........


সানিতাঃ মে আই কাম ইন স্যার?


অপুর্বঃ নো। আসার কোনো দরকার নেই।। ইউসলেস একটা। একে তো কাটায় কাটায় ৩০ মিনিট লেইট। তারপর আবার আমার কফি ও আনলে না। এভাবে অমনোযোগী হয়ে কাজ করার দরকার নেই। বাই দ্যা ওয়ে রিপোর্ট রেডি?


সানিতাঃ না স্যার খুঁজে পেতেই দেড় ঘন্টা লেগেছে? 


অপুর্বঃ তা তো লাগবেই। লেডি কুম্ভকর্ণ। ঘুমানো ছাড়া আর কিছু পারো তুমি? 


সানিতাঃ আমি এক্ষুনি কফি নিয়ে আসছি স্যার?


অপুর্বঃ মনে আছে তো ব্ল্যাক কফি উইদাউট সুগার? 


সানিতাঃ ইয়েস স্যার?


দাঁড়াও ব্যাটা অপুর্ব।। সানিতাকে এই ভাবে জ্বালানোর শাস্তি কি ভাবে দেই দেখো। সানিতাকে তো চিনো না চান্দু। কথাগুলো মনে মনে বললো সানিতা। তারপন গিয়ে ব্ল্যাক কফি বানিয়ে নিয়ে আসলো। সেই সাথে কফির মধ্যে ৮/১০ চামচ লবণ মিশিয়ে দিলো। প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে সানিতার। এইবার ব্যাটা অপুর্ব বুঝতে পারবে সানিতার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার ফল। কফি 

মুখে দিয়েই থু থু করে ফেলে দিলো অপুর্ব।। তারপর বলেতে শুরু করলো........... 


অপুর্বঃ এটা কি বানিয়েছো সানিতা?


সানিতাঃ কেনো স্যার কফি?


অপুর্বঃ আমি লবণ দিয়ে কফি বানাতে বলেছিলাম নাকি? ড্যামেড?


সানিতাঃ আপনি তো চিনি দিতে বারণ করেছেন।

কিন্তু লবণ দিতে তো বারণ করেন নি স্যার?


অপুর্বঃ স্টোপিড! মজা নিচ্ছো? আজকে সারাদিন কাজ করবে তুমি। এটাই তোমার পানিশমেন্ট। 

নাও গেট লস্ট?


অপুর্বের চেম্বার থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেলো সানিতা। অপুর্ব তাকে এভাবে বকা দিবে ভাবতেও পারেনি সে। সে তো নিজে এসব শুরু করেনি। শুরু করেছে অপুর্ব। তাহলে এখন রাগ দেখানোর মানে কি।

নিজের ডেস্কে বসে একমনে রিপোর্ট তৈরী করছে সানিতা। ধ্যান ভাঙলো নোভার ডাকে.............


নোভাঃ সানিতা লাঞ্চ ব্রেক দিয়েছে। ক্যান্টিনে চল 

খেয়ে আসি?


সানিতাঃ তুই যা আমি পরে যাবো?


নোভাঃ উঁহু এক্ষুনি যাবি। এই সময় খাবারে অনিয়ম করলে বেবির ক্ষতি হবে? 


সানিতাঃ আচ্ছা চল?


সানিতা সবেমাত্র খাবার নিয়ে বসেছর।। ঠিক সেই সময় পিয়ন এসে বললো বস নাকি সানিতাকে ডেকেছে। 

এক্ষুনি যেতে হবে। জরুরী তলব। সানিতা যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো আর বললো.........


সানিতাঃ নারে নোভা তোর এই পাঁজি বস আমাকে শান্তি দিবে না? 


এরপর রাগে গজগজ করতে করতে অপুর্বের চেম্বারের দিকে পা বাড়ালো সানিতা........


সানিতাঃ ডেকেছেন স্যার?


অপুর্বঃ হ্যা কোথায় ছিলে?


সানিতাঃ ক্যান্টিনে খাচ্ছিলাম?


অপুর্বঃ শুধু নিজে খেলে হবে? আমার খাবার কে গুছিয়ে দিবে?


সানিতাঃ নোভা যে বললো আপনার খাবার আসাদ 

ভাই গুছিয়ে দেয়? 


অপুর্বঃ দিতো! আজ থেকে তুমি দিবে। কেবিনে দেখো লাঞ্চ বক্স আছে। কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি গুছিয়ে দাও। ক্ষিদে পেয়েছে?


সানিতাঃ আচ্ছা দিচ্ছি? 


সানিতাঃ এই নিন গুছিয়ে দিয়েছি। আপনি খেয়ে নিন আমি যাই?


অপুর্বঃ তুমি গেলে আমাকে কে খাইয়ে দিবে?


সানিতাঃ দেখেন মি: অপুর্ব হতে পারে আপনি আমার বস, কিন্তু আমি আপনার বউ না যে খাইয়ে দিবো। 

সৃষ্টি কর্তা দুইটি হাত দিয়েছেন,,দয়া করে সেগুলো ব্যাবহার করুন?


অপুর্বঃ তার মানে তুমি খাইয়ে দিবো না? 


সানিতাঃ না?


অপুর্বঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি নোভাকে বলতেছি? তোমার বান্ধবী কিন্তু আমাকে খাইয়ে দিতে পারলে 

ধন্য হয়ে যাবে? 


সানিতাঃ দরকার নেই আমি দিচ্ছি? 


অপুর্বঃ এখনো দেখছি আগের মতো হিঃসুটে 

আছো?


সানিতাঃ তাতে আপনার কি? খাইয়ে দিচ্ছি 

চুপচাপ খান?


সানিতা নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে অপুর্বকে। অনেক দিন পর সানিতার হাতে খাবার খাচ্ছে অপুর্ব। পরোনো দিন গুলো খুব মনে পড়ছে তার। আগে সানিতার হাতে খাবার খাওয়ার জন্য নানা বাহানা করতো অপুর্ব........


অপুর্বঃ দেখি মুখটা শুকিয়ে একদম হনুমানের মতো হয়ে গেছে আমার পি এ ম্যাডামের। আসো আমিও তোমাকে খাইয়ে দেই?


সানিতাঃ কোনো দরকার নেই। আমি একাই খেয়ে নিবো?


অপুর্বঃ তুমি না খেলে আমি নোভাকে ডেকে এনে খাবার খাইয়ে দিবো? 


সানিতাঃ খাচ্ছি তো?


কথাটা বলতেই দুজনে এক সাথে হেসে উঠলো। দেখতে দেখতে বিকাল ৫ টা বেজে গেছে। অফিস টাইম শেষ। 

তখনো ডেস্কে বসে একমনে কাজ করে যাচ্ছে সানিতা।

হঠাৎ নোভা এসে দাঁড়ালো সানিতার সামনে.............


নোভাঃ কিরে সানিতা বাড়ি যাবি না?


সানিতাঃ তোর পাঁজি বস যেতে দিচ্ছে কই? ১০ টা ফাইল হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এগুলো শেষ না করে যেতে দিবে না বলেছে?


নোভাঃ দেখি ফাইল গুলো? 


সানিতাঃ এই দেখ?


নোভাঃ ওমা! বস মনে হয় ভুল করে এই ফাইল গুলো তোকে দিয়েছে। এগুলোর রিপোর্ট অনেক আগেই

তৈরী করা আছে।। আমি নিজ হাতে করেছি। দাঁড়া আমার কাছে এর কপিও আছে?


নোভার কথাগুলো শুনে সানিতার বুঝতে বাকি রইলো না এসব অপুর্বের কারসাজি। হনহন করে অপুর্বের রুমে এগিয়ে গেলো সে। সানিতাকে ঢুকতে দেখে ওকে পাত্তা না দিয়ে নিশির নাম্বারে কল করলো অপুর্ব। ওপাশ থেকে কলটা রিসিভ করতেই সানিতাকে শুনিয়ে শুনিয়ে অপুর্ব বলতে লাগলো...... 


অপুর্বঃ হ্যালো নিশি! আমার বাবুটা কি করে এখন?


অপুর্বের কথা শুনে নিশির বিস্ময় জেনো সপ্তমে পৌঁছে গেলো। অপুর্ব ভাইয়া এই ভাবে কথা বলছে তাও তার সাথে। অপুর্বের এমন বিহ্যাব দেখে নিশি বললো........


নিশিঃ অপুর্ব ভাইয়া আমি নিশি। এভাবে কথা 

বলছো কেনো?


অপুর্বঃ জানি তো বাবু। আমার বাবুটাকে যে বলেছি রেডি হয়ে থাকতে সেটা কি মনে আছে তার। 

তুমি রেডি হও বাবু আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি। বিয়ের 

শপিং করতে হবে তো তাইনা?


নিশিঃ ওকে আপুর্ব ভাইয়া! আমি আসছি?


এদিকে সানিতা মনে মনে অপুর্বকে ইচ্ছে মতো বকা দিচ্ছে। শয়তান, গাধা, পাজি, বেয়াদপ প্রেম করবি কর। আমাকে শুনিয়ে কি মজা পাচ্ছিস তুই। হুট করে অপুর্ব সানিতাকে বলে উঠলো.......... 


অপুর্বঃ এই যে ম্যাডাম আমাকে গালি দেওয়া শেষ হলে একটু শুনবেন। কথা ছিলো? 


সানিতাঃ আপনি কি করে বুঝলেন গালি দিচ্ছি? 


অপুর্বঃ তোমার মন পড়তে পারি আমি?


সানিতাঃ মিথ্যা কথা। মন পড়তে পারলে ভুল

বুঝতেন না?


অপুর্বঃ আমি এখন তর্কে যেতে চাচ্ছি না? বিয়ের শপিং করতে যাবো আমি আর নিশি। সাথে তুমিও যাবে?


সানিতাঃ আমি কেনো যাবো। আমি যেতে পারবো না? 


অপুর্বঃ ঠিক আছে তাহলে তোমার চাকরি খেয়ে 

নিবো আমি?


সানিতাঃ আমি আর এই চাকরি করবো না? 


অপুর্বঃ একটা কথা শুনে রাখো,তুমি না গেলে তোমার চাকরি থাকবে না। তোমার চাকরি না থাকলে নোভার চাকরিও থাকবে না? নাও চয়েস ইজ ইউর'স?


সানিতাঃ ওকে আমি যাবো?


অপুর্বঃ ওকে বাহিরে চলো?


চেম্বারের বাহিরে নোভা দাঁড়িয়ে আছে সানিতাকে নিয়ে বাড়ি যাবে বলে। অপুর্ব আর সানিতা বাহিরে আসতেই নোভা বলে উঠলো............. 


নোভাঃ স্যার অফিস তো ছুটি সানিতাকে নিয়ে যাই?


অপুর্বঃ না। তুমি চলে যাও! ওর কাজ আছে?


নোভাঃ কিন্তু স্যার ওকে এই অবস্থায় একা রেখে কিভাবে যাবো?


অপুর্বঃ চিন্তা করো না। তোমার বান্ধবীকে খেয়ে ফেলবো না আমি?


নোভাঃ আসলে স্যার ও তো এখান কার রাস্তা ঘাঠ কিছই চিনে না এখানকার। তাই আর কি?


অপুর্বঃ আমি আছি তো! পৌঁছে দিবো বাসায়। তুমি এখন যাও?


নোভাঃ ওকে স্যার। সানিতা গেলাম রে। টেক কেয়ার? 


অগত্যা অপুর্ব আর নিশির সাথে শপিং মল যেতে হলো সানিতাকে। সানিতাকে দেখে প্রথমে নিশির চিনতে একটু অসুবিধা হলেও ঠিক চিনেছে নিশি। আসলে অপুর্বের মোবাইলে সানিতার অনেক ছবি দেখলেও এই প্রথম সামনাসামনি দেখছে নিশি। এবার নিশির কাছে অপুর্বের ওমন ব্যাবহারের কারন স্পষ্ট হলো। সানিতার সাথে খাতির জমাতে খুব চেষ্টা করছে নিশি। বারবার আপু বলে ডাক দিচ্ছে।। কিন্তু সানিতা কেনো জানি না মেয়েটাকে সহ্য করতে পারছে না।। 


গল্পের আগের পর্ব গুলো না পড়ে থাকলে এখনই পড়ে নিন।। আর সব সময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিত্য নতুন গল্প পড়তে পেইজে জয়িন করে সাথে থাকুন।।। ইতিঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


দীর্ঘ দুই ঘন্টা ক্লান্তিকর শপিং শেষে সানিতাকে ঠিকানা আর ভাড়া সহ একটা অটো তে তুলে দিয়ে নিশিকে নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলো অপুর্ব।। 


সানিতার অবশ্য এটা একদম ভালো লাগেনি।। সানিতা ভাবছে,নিশি কি এমন যাদু করলো যে, এই অবস্থায় ওকে একা গাড়িতে তুলে দিয়ে নিশিকে নিয়ে চলে গেলো অপুর্ব। আবার ভাবছে,অপুর্ব তো নিশির হবু স্বামী। ওর কথাই তো ভাববে অপুর্ব।। প্রাক্তনকে কেই 

বা মনে রাখতে চায়।। 


অন্যদিকে গাড়িতে বসেই নাছোরবান্দা নিশি সবকিছু জানতে চাইলো অপুর্বের কাছে। অপুর্বও অগত্যা নিশিকে সব ঘটনা খুলে বললো।। হাজার হলেও 

মেয়েটা বন্ধুর মতো। তবে সানিতার কথা ভাবতেই হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো অপুর্বের মুখে। মেয়েটা নিশ্চয়ই এতক্ষণ মনে মনে অপুর্বকে গালি দিচ্ছে। সানিতাকে ফেলে নিশিকে এভাবে নিয়ে চলে আসাটা অবশ্যই আঘাত দিবে সানিতাকে। অবশ্য আঘাত দেওয়াই উচিৎ। সানিতারও বুঝতে হবে,তার বিয়েতে 

এতটাই আঘাত পেয়েছিলো অপুর্ব। 


এদিকে অটো থেকে নামতে গিয়ে সানিতা লক্ষ করলো তার পাশে একটা শপিং ব্যাগ। সানিতা ভাবলো ওরা বোধহয় ভুল করে ব্যাগ টা ফেলে গেছে। অটো থেকে নামার সময় ব্যাগ টা হাতে করে নামলো সানিতা পরে ফেরত দিবে বলে। 


ঘরে গিয়ে কৌতূহলবশত ব্যাগটা খুলে দেখলো ব্যাগের ভেতর একটা লাল পাড় সাদা জামাদানী। কিছু আর্নামেন্টস আর একটা চিরকুট।। সানিতা চিরকুট টা খুলে পড়তে লাগলো...


কি ম্যাডাম সানিতা?? ভাবছেন তো ব্যাগটা আমরা ভুল করে ফেলে গেছি। আজ্ঞে না! ওগুলো আপনার। মনে আছে, আমার কাছে বায়না করেছিলেন আমাদের হলুদে লাল পাড়ের সাদা জামদানী পড়বেন। 

আমাদের তো আর গায়ে হলুদ হলো না। আমার হলুদে না হয় পড়বেন।""""


-গল্পঃ_দুই_পৃথিবী (পর্বঃ_০৯_ও_শেষ_পর্ব)

-লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


চিঠি টা পড়ে সানিতা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝে আসছে না। দেখতে দেখতে কয়েকটি দিন কেটে গেলো। এদিকে অপুর্ব আর নিশির বিয়ে ঘনিয়ে আসলো।

~

~

আজ অপুর্ব আর নিশির হলুদ ছোঁয়া। আত্মীয় স্বজনরা হৈচৈ করছে সারা বাড়ি। শুধু আত্মীয় স্বজন নয়, একমাত্র ছেলের বিয়েতে ছেলের অফিস শুদ্ধু সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে অপুর্বের বাবা। খাওয়া দাওয়া সব তার বাড়িতেই হবে দুদিন ভরে। 


কথায় আছে,, সাত মাসের গর্ভাবস্থায় মেয়েদের ওপর স্বর্গীয় সৌন্দর্য নেমে আসে। সেটা অবশ্য সানিতাকে দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ইচ্ছে না থাকলে ও নোভার জোরাজুরিতে বিয়ে বাড়িতে আসতে হলো সানিতাকে। 


অপুর্বের দেওয়া লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়েছে সানিতা। খোঁপায় দিয়েছে একগুচ্ছ লাল গোলাপ আর অপুর্বের দেওয়া হালকা গয়না, সেই সাথে চোখে কালো কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।।এটুকুতেই বিয়ে বাড়ির সবার নজর তার দিকে। আরো একজনের নজর তার দিক থেকে সরছে না। আর সে হলো অপুর্ব? 

অপুর্ব মনে মনে ভাবছে,,একটা মেয়ে এতটা সুন্দর হয় কিভাবে? এই রুপের আগুনে তাকে বারবার পুড়ে মরতে হয়।


অন্যদিকে অপুর্ব আর নিশিকে এক সাথে স্টেজে দেখে চোখ ছলছল করছে সানিতার। আর অপুর্ব ও তেমনই।

কেমন নির্লজ্জের মতো হেসে হেসে মেয়েটার সাথে গল্প করছে। সানিতা অবশ্য জানতো অপুর্বের বিয়েতে তার কষ্ট হবে। কিন্তু এতটা কষ্ট হবে সে ভাবতে পারেনি। বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। 


অপুর্ব অবশ্য ভালো করেই বুঝতে পারছে সানিতার কষ্ট হচ্ছে। তাই মনে মনে হাসি পাচ্ছে তার৷ এই মেয়েটা এতো হিংসুটে সেই সাথে বড্ড কঠিন।। ভাঙবে তবুও মচকাবে না"। মনে মনে হাসছে অপুর্ব। 


প্রেগনেন্সি কীট হাতে নিয়ে বসে আছে সীমা।। সীমা যা ভেবেছিলো সেটাই সত্যি হয়েছে। মা হতে চলেছে সে। সানিতাকে হয়তো রাফসানের মন থেকে সরাতে পারেনি সে।। কিন্তু রাফসানের জীবনে নিজের খুঁটি শক্ত করার রাস্তা পেয়ে গেছে সে। 


অন্যদিকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়া করে 

সাজছে নোভা। সানিতাকে বারবার বলছে রেডি হয়ে নিতে। কারন আজ অপুর্বের বিয়ে। সেখানে যেতে হবে।। 

কিন্তু সানিতার একটাই কথা"" সে যাবে না অপুর্বের বিয়েতে। নোভা হাজার বার কারন জানতে চাইলেও সে একবারো বলেনি। পেট হয়তো একটু বড় হয়েছে সেই সাথে শরীরটা ও দুর্বল। তাই বলে এতটাও খারাপ অবস্থা নয় যে সানিতা বিয়েতে যেতে পারবে না। এক পর্যায়ে নোভা জেদ ধরে বসলো,সানিতা না গেলে নোভা

নিজেও যাবে না.........


নোভাঃ সানিতা তুই না গেলে আমিও যাবো না? 


সানিতাঃ জেদ করিস না নোভা। আমি যেতে 

পারবো না? 


নোভাঃ আচ্ছা সানিতা একটা সত্যি কথা বলবি। 

তুই কি বস কে আগে থেকে চিনতিস?


সানিতাঃ তোর এমন মনে হচ্ছে কেনো? 


নোভাঃ বস আর তোর দুজনের হাব ভাব অদ্ভুত লাগে৷ মনে হয় তোরা দুজন দুজনকে অনেক দিন ধরে 

চিনিসম। তাছাড়া আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে বস 

এর বিয়ে নিয়ে তুই কেনো জানি অখুশি?


সানিতা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।।হু হু করে কেঁদে উঠলো। তারপর নোভাকে শুরু থেকে শেষ পর্যস্ত সব বললো। সব শুনে নোভা একেবারে অবাক। তবে তার মধ্যে একটা কথা শুনে বেশ চমকে উঠলো নোভা। সে শুধু একটা কথাই ভাবছে সৎ বোন হলেও সীমা তো নিজেও একটা মেয়ে। তাহলে মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এতো বড় সর্বনাশ করতে পারলো, ঠিক কতটা জঘন্য হলে। 


অন্যদিকে বিয়ে বাড়িতে হুলস্থুল। বিয়ে বাড়ি থেকে বর উধাও। কোনো ভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আপুর্বকে।

এমনকি অপুর্বের ফোনটা ও বন্ধ। বাড়ির সবাই চিন্তিত থাকলেও একজন খুব শান্ত হয়ে আছেন।। তিনি হলেন নোভার বাবা। 


অনুগ্রহ পুর্বক সবাই কমেন্ট করে জানাবেন আপনাদের কাছে গল্পটা কেমন লেগেছে। এবং নতুন গল্প পড়তে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাবেন। দেখতে দেখতে গল্পটা শেষ। আজকে নাইস বা নেক্সট না লিখে গঠন মুলক কিছু লিখবেন। এবং ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।। ইতিঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।।


ভদ্রলোক কে দেখে বোঝা যাচ্ছে না তার মেয়ের বিয়েটা ভেঙে গেছে। বরং সবার হুলস্থুলে তিনি খুব বিরক্ত বোধ করছেন। তাই সবাইকে ডেকে বললেন""তোমরা চিন্তা করো না।। যথা সময়ে বর আসবে। এবং আমার মেয়ের বিয়ে সম্পুর্ণ হবে। 


নিশির ফোনে ছোট একটা টেক্সট দিয়ে ফোন বন্ধ করে লং ড্রাইভে গেছে অপুর্ব। টেক্সট পড়ে মুচকি মুচকি হাসছে নিশি। টেক্সট এ লেখা ছিলো""বিয়েটা মিটে গেলে নিচের নাম্বারে একটা টেক্সট দিও।।এটা আমার নতুন নাম্বার ০১৮+++++৫৫৫।। 


আমার মোবাইল নাম্বার টা দিয়ে দিলাম। প্রয়োজন হলে আপনারা আমাকে কল দিয়েন কোনো সমস্যা নেই। 


সন্ধ্যা ৬ টা। নিশির সাথে সজিবের বিয়েটা মিটে গেছে।। 

নিজ হাতে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়েটা দিয়েছেন নিশির বাবা। এরই মধ্যে অপুর্ব বাড়িতে ফিরে এসেছে। বাড়িতে লোকজন আছে বলেই বাড়ির কেউ এখনো কিছু বলছে না তাকে।।কিন্তু অপুর্ব খুব ভালো করেই জানে বাড়ি টা ফাঁকা হলে অনেক কথার সম্মুখীন হতে হবে তাকে। ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আপুর্ব৷ বিদায়ের আগে তার পাশে এসে দাঁড়ালো নিশি আর বললো.......


নিশিঃ অপুর্ব ভাইয়া?


অপুর্বঃ কি বিয়ের কনে! খুশি তো?


নিশিঃ হুমম খুশি। কিন্তু মাথার মধ্যে অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর ঘুরপাক খাচ্ছে! উত্তর চাই?


অপুর্বঃ বলে ফেলো?


নিশিঃ কি এমন করলে তুমি? যে বাবা সজিবকে সহ্য করতে পারতো না সে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের বিয়ে দিলো?


অপুর্বঃ ম্যাজিক?


নিশিঃ বলো না অপুর্ব ভাইয়া? 


অপুর্বঃ তেমন কিছুই করিনি। শুধু যাওয়ার আগে খালুজানকে একটা চিঠি লিখে রেখে গেছিলাম। 

এরপর যা করার চিঠিটাই করেছে?


নিশিঃ কি এমন লেখা ছিলো তাতে?


অপুর্বঃ দাঁড়াও তোমাকে দেখাই। চিঠিটা লেখা শেষে তোমাকে দেখানোর জন্য ফোনে ছবি তুলে রাখলাম। কারন আমি জানতাম তুমি দেখতে চাইবে?


এরপর নিশি ফোনটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো... 


প্রিয় খালুজান,, আমি ভালো করে জানি আমি পালিয়ে যাওয়ার কারনে আপনি দুঃখ পাবেন। কিন্তু এই ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলো না। আপনার মেয়েকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। আমি কোনো,দুনিয়ায় কোনো ছেলে ওকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। কারন নিশি ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সজিবের সন্তানের মা হতে চলেছে সে। আমি অনেক কষ্টে সজিবকে রাজি করিয়েছি। সজিব যথা সময়ে আসবে বিয়ে করতে। বিয়ে দিবেন কিনা সেটা আপনার ইচ্ছে। 

তবে আর কয়েক দিন পর ওর শরীরে নানা চিহ্ন ফুটে উঠবে। তাতে আপনার সম্মান কমবে বৈ বাড়বে না৷""


চিঠিটা পড়ে নিশি হাসতে হাসতে বললো.......


নিশিঃ এতো কুবুদ্ধি তেমার মাথায় অপুর্ব ভাইয়া,আগে জানতাম না। একটা কথা বলবো অপুর্ব ভাইয়া? সানিতা আপু যখন সব হারিয়ে তোমার সামনে এসে পড়েছে ওকে কাছে টেনে নাও।। সমাজে একটা বাচ্চা সহ একা একটা মেয়ের জীবন অনেক কঠিন??


অপুর্বঃ আমি সব বুঝি নিশি। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক কে বিশ্বাস করা যায় না??


নিশিঃ আমার কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে না মেয়েটা এমন করতে পারে। হয়তো সে পরিস্থিতির স্বীকার ছিলো। আচ্ছা একটা কথা বলো তো, সানিতা আপুর বিয়ের খবর তোমাকে কে জানিয়েছে??


অপুর্বঃ ওর সৎ বোন সীমা?


নিশিঃ এক্সাক্টলি কি বলেছিলো?


অপুর্বঃ বলেছিলো বড়লোক দেখে সানিতা ঝুলে পড়েছে?


নিশিঃ আচ্ছা সীমা মেয়েটা সাম হাউ তোমাকে 

পছন্দ করতো? 


অপুর্বঃ উঁহু পছন্দ করতো না ইনফ্যাক্ট প্রপোজ করেছিলো একবার?


নিশিঃ ওহ মাই গড। তুমি এতো চালাক অথচ তুমি এটা ভাবলে না হয়তো এটা সীমার চক্রান্ত ছিলো? 


অপুর্বঃ তবুও সানিতা জানাতে পারতো আমাকে?


নিশিঃ হয়তো সে সুযোগ পায়নি। ভালোবাসার মানুষকে ভুল বোঝা অনেক সহজ৷ কিন্তু আগলে রাখা কঠিন।

যা সবাই পারে না।। টক টু সানিতা আপু।। জানতে চাও সেদিন কি হয়েছিলো। ওর পাশে দাঁড়াও সেটাই সত্যি কারের ভালোবাসা??


এরই মধ্যে কেটে গেলো দেড় মাস। সানিতা আজ কাল অপুর্ব কে এড়িয়ে চলে। কারন তাদের দুজনকে নিয়ে অফিসে নানান রকম গুঞ্জন উঠেছে৷ সবাই আঙুল তুলছে সানিতার দিকে।। এই পোড়া সমাজে পুরুষকে কেউ খারাপ বলে না।। যুগে যুগে কলঙ্ক আসে। মেয়েদের উপর। কলিযুগের সীতা থেকে একবিংশ শতাব্দীর মর্ডাণ মেয়েদের ও তার থেকে নিস্তার নেই।। 


এমনি একদিন বার্ষিক মিটিং চলছিলো অফিসে৷ সবার সাথে মিটিং এ বসেছিলো সানিতা। হঠাৎ করে পেটে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করতে লাগলো। আস্তে আস্তে ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো। কিন্তু মিটিং চলাকালীন কাউকে বিরক্ত করতে চায়নি সানিতা। তাই পেটে মধ্যে চেপে ধরে বসে রইলো সানিতা। 


এইদিকে ব্যাথা এতটাই বাড়লো যে, সানিতার মনে হচ্ছে 

তার শরীরের সমস্ত হাড় কেউ এক সাথে গুড়ো গুড়ো করে দিচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে চেয়ার সহ পড়ে যেতে নিলে অপুর্ব ধরে ফেললো তাকে৷ ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে অপুর্ব আর নোভা। সানিতার সিজারিয়ান শুরু হয়েছে ঘন্টা দুয়েক আগে। সামান্য সিজারিয়ান করতে এতো সময় লাগবে কেনো বুঝতে পারছে না আপুর্ব। অস্থিরতায় বারবার ঘাম মুছছে সে।। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে তার। 


অবশেষে ডাক্তার বের হয়ে আসলো ওটি থেকে। অপুর্ব আর নোভা দৌঁড়ে গিয়ে জানতে চাইলো কি অবস্থা। 

ডাক্তার মুখের মাক্স খুলতে খুলতে কঠিন গলায় জবাব দিলেন............


ডাক্তারঃ আই এম সরি মি: অপুর্ব? 


ওই দিকে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে রাফসান।

অবশেষে নিজের মহারাণীর সন্ধান পেয়েছে সে। বেশ কয়েকদিন ধরেই ফোন ট্র্যাক করার চেষ্টা করেছে সে।। কিন্তু ফোনটা বন্ধ থাকার কারনে লোকেশন ট্র্যাক করা যাচ্ছিলো না। সৌভাগ্যবশত কাল রাতে একবার অন হয়েছিলো ফোন।। সেইখান থেকে সানিতার লোকেশন পেয়েছে রাফসান। 


ব্যাগ গুছানো শেষে রাফসান বের হতে যাবে এমন সময় 

সীমা এসে রাফসানের পথ আগলে দাঁড়ালো........


সীমাঃ তোমাকে আমি আর কোনো পাগলামি করতে দিবো না রাফসান। আমাদের সন্তান আসতে চলেছ। 

ওর কথা ভেবে তোমাকে সানিতাকে ওর ভুলতে হবে??


সীমার কথা শুনে রেগে গিয়ে জোরে একটা ধাক্কা দিলো রাফসান। ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেলো সীমা। 

জোরে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো সে।।রাফসান দেখলো মেঝেতে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।। গাড় লাল রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে........ 


After 3 years a go.....

        __________

   _______________

___________________

দেখতে দেখতে ০৩ টি বছর কেটে গেছে। এই ০৩ বছরে 

যেমন শহর টা বদলে গেছে ঠিক তেমনই বদলে গেছে কতগুলো জীবন আর সম্পর্কের সমীকরণ। অপুর্ব 

আর সানিতা এখন সুখী দম্পতি। তাদের এক বছরের একটি মিষ্টি মেয়ে আছে। মেয়েটার নাম রেখেছে সুস্মিতা! সানিতার নামের সাথে মিলিয়ে। 

আধো আধো মুখে মাত্র কথা বলতে শুরু করেছে সে।। 

আধো আধো কন্ঠে যখন বাচ্চাটা সানিতাকে মা বলে ডাকে তখন সানিতার বুকটা খুশিতে ভরে উঠে। 


সীমা প্রায়ই রাফসানকে নিয়ে বেড়াতে আসে সানিতার বাসায়। তাদের দুজনেরই সুস্মিতাকে ছাড়া চলে না৷ মেয়েটা এতো মায়াবী হয়েছে, যে কারো মন সহজে জয় করে নিবে। 

~~

~~

সেই দিন হসপিটালে একটি মৃত কন্যা সন্তান জন্ম দেয় সানিতা। অনেকক্ষণ প্রসব যন্ত্রণা চেপে বসে থাকার কারনে পেটের মধ্যে মারা যায় বাচ্চাটা। বাচ্চাটা মারা যাওয়ার পর মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়ে সানিতা। দীর্ঘদিন সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে। নোভা আর অপুর্ব মিলে অনেক কষ্টে সুস্থ করে তোলে তাকে। তারপর অপুর্ব বিয়ে করে সানিতাকে। অবশ্য নোভা নিজ দায়িত্বে সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দেয় অপুর্ব আর সানিতার৷ সানিতা বিশ্বাস করে, খুব ভাগ্যবতী হলে এমন বান্ধবী জুটে কারো৷ 


সানিতার ডিভোর্স পেতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।। যেহেতু ডিভোর্স ফাইল করার পর, সে সময়ের মধ্যে সানিতার ডেলিভারি হয়ে যায়,,সেহেতু নতুন করে ডিভোর্স ফাইল করতে হয়নি সানিতাকে৷। সবকিছু খুব ভালো ভাবে মিটে গিয়েছে। সানিতার অবশ্য ধারণা 

তার সেদিনের মৃত সন্তান, যে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো সেটা সুস্মিতা হয়ে ফিরে এসেছে। অপুর্ব ও অবশ্য তাতে সাই দেয়। এটুকু ভেবে যদি মেয়েটা যন্ত্রণা ভুলে থাকতে পারে দোষ কোথায়........

~

~

~

সেইদিনের এক্সিডেন্ট এর পর থেকে সীমার জীবনটা ও পালটে গিয়েছে। সেদিন রাফসানের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে সীমার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে জরায়ু এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যে, ডাক্তার বলে দিলো যে সীমা আর কখনো মা হতে পারবে না। সেদিনই চিরতরে মা হওয়ার ক্ষমতা হারায় সীমা। 


আর রাফসান!! তার দুই দুইটা সন্তান জন্ম হওয়ার কথা থাকলেও নিজের দোষে আজ সে নিঃসন্তান। সীমাকে 

হসপিটাল রেখে সানিতার খোঁজে যাওয়ার সময় একটা গুরুতর এক্সিডেন্ট হয় তার। এক্সিডেন্ট এ প্রাণে বেঁচে গেলেও পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে গেছে রাফসানের। সামান্য অনুভুতি শক্তি ছাড়া তেমন কিছুই কাজ করে না রাফসানের। 


এতোকিছুর পর সীমা বুঝতে পারছে,তার সাথে যা কিছু 

হয়েছে সবই প্রকৃতির প্রতিশোধ। সব হারিয়ে সীমা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে৷ আজকাল সীমা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। সানিতাকে খুঁজে বের করে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছে সে। অসুস্থ রাফসানের সেবা করে দিন কাটিয়ে দেয় এখন সীমা।। 

কাটিয়ে উঠেছে শুধু মাত্র সুস্মিতাকে পেয়ে৷ সীমা আর 

রাফসানের এই দুঃসময়ে সানিতা-অপুর্ব কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেয়নি তাদের থেকে।। বরং সানিতা বেশ খানিকটা সময় অসুস্থ রাফসানের সাথে কাটায়। এতে অবশ্য বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই অপুর্বের।।। 


অপুর্ব বরং সুস্মিতাকে আস্তে আস্তে শেখাচ্ছে সীমাকে মণি মা আর রাফসানকে ভালো বাবা ডাকতে,, যাতে সীমা আর রাফসান অন্তত মা-বাবা ডাক শুনতে পারে। 


অন্যদিকে নিশি আর সজিবেরও সুখের সংসার৷ সজিব এখন অনেক বড় একটা চাকরি করে। নিশির বাবা-মা আজ প্রকৃত অর্থে খুশি সজিবের মতো জামাই পেয়ে।। নিশির ২ বছরের ছেলে আছে একটা। 


নিশি অবশ্য যতবারই অপুর্ব আর সানিতার সাথে দেখা হবে,, ততবারই বলবে..সুস্মিতাকে সে তার ছেলের বউ করে ঘরে নিয়ে যাবে। অপুর্ব আর সানিতা অবশ্য তার উত্তর দেয় না। শুধু মুচকি মুচকি হাসে। 


নোভাও বিয়ে করে নিয়েছে বছর দুয়েক আগে। নোভার স্বামী জুবায়ের,, অপুর্বের খুব ভালো বন্ধু। অপুর্ব আর সানিতা অবশ্য ঘটকালি করে বিয়েটা দিয়েছে তাদের।। 

যদিও এখনো কোনো সন্তান আসেনি তাদের মাঝে তবুও তারা খুব সুখী দম্পতি। 


আজ সুস্মিতার ১বছরের জন্মদিন। আর সেই উপলক্ষে অপুর্ব-সানিতা, রাফসান-সীমা, নোভা-জুবায়ের, এবং নিশি আর সজিব এক জায়গায় হয়েছে। সবাই মিলে অনেকদিন পর বেশ আড্ডা জমে উঠেছে। সানিতার হাতের স্পেশাল চা আর পকোড়া আড্ডায় এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। 


জন্মদিনের কেক কাটা শেষে সুস্মিতা প্রথমে অপুর্বেক কেক খাওয়াতে যায়। অপুর্ব কেক টা না খেয়ে সুস্মিতাকে নিয়ে যায় রাফসানের কাছে৷ আর বলে... 


অপুর্বঃ আগে তোমার ভালো বাবাকে খাইয়ে দাও মামনি??


সুস্মিতা রাফসানকে কেক খাইয়ে দিচ্ছে। রাফসানের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।। আর সুস্মিতা তার ছোট ছোট হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। 

এমন একটা দৃশ্যে ঘরে উপস্থিত সবার চোখে জল। 


সানিতার মনে হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আজ বহু চরাই উৎরাই পার করে সুখের মুখ দেখছে সে। এই মুহুর্তে অপুর্বের মনে হচ্ছে,তার মেয়েটা বড্ড ভাগ্যবতী।। এক সাথে দুজন বাবা ও দুজন মায়ের ভালোবাসা পাচ্ছে সে। 


 এই ছোট একটা প্রাণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে চারজনের

                                নতুন পৃথিবী। 


_________সমাপ্ত______


এক মাত্র আমাদের ওয়েব সাইটে আপনি সব পর্ব একসাথে পাবেন।


পর্রবের আরও গল্প পড়ুন।