গল্পঃ_অপয়া | অবহেলার কষ্টের গল্প

অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০১__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


সারাদিন কাজ শেষে মাত্রই কচুর শাক দিয়ে ভাত খেতে বসেলো শ্রাবন্তি। ঠিক তখনই শ্রাবন্তির মা রাবেয়া বেগম বলে উঠলো.......... 


রাবেয়া বেগমঃ>>বিয়ের এক মাসের মধ্যে যেই মেয়ে স্বামীকে খেয়ে বসে থাকে তাকে কি বলে জানিস!!অপয়া? আর তুই ঠিক তাই? মরতে পারিস না তুই?? 


কথাটা বলেই শ্রাবন্তির সামনে থেকে ভাতের থালা ছুড়ে ফেলে দিলো ওর মা রাবেয়া বেগম? 


মায়ের এমন আচরনে শ্রবান্তি তেমন কিছুই মনে করলো না। শুধু বা হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছতে মুছতে হাঁটা দিলো বাহিরের দিকে। গন্তব্য পুকুরের পাশের কলা বাগান পার হয়ে কবর স্থানটায়। গত একটি বছর ধরে এসব সহ্য করে আসছে শ্রাবন্তি। বলতে গেলে গা সওয়া হয়ে গেছে শ্রাবন্তির এসব।।  


আসলে বাবা মা অবিবাহিত মেয়েকে বছরের পর বছর খাওয়াতে পারে কিন্তু বিবাহিত মেয়ে বোধহয় মা বাবার বোঝা। তাই হয়তো রাবেয়া বেগম নিজের মেয়ের সাথে এমন আচরন করছে।


গত এক বছর ধরে শ্রাবন্তি বিধবা হয়ে বসে আছে বাবা মায়ের অভাব এর সংসারে। হাজার কাজ করলেও দুই বেলা দুই মুঠো ভাত খেতে যুদ্ধ করতে হয় শ্রাবন্তিকে।।


শ্রাবন্তির বাবা রহিম আলি হলেন একজন ভাগচাষী।। পরের জমিতে কাজ করে যতটুকু আয় হয় সেটা দিয়েই সংসার চলে।। তার উপর তিনটা সন্তান ঘাড়ের উপর।। সবাইকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন তিনি। শ্রাবন্তি তার বড়

মেয়ে,, আর ছোট মেয়ে সৃতি।। আর একটা ছোট ছেলে আছে বছর দশেকের।।


রহিম আলি আজ থেকে এক বছর আগে অনেক টাকা খরচ করে ধুমধাম করে তার বড় মেয়ে শ্রাবন্তিকে এই গ্রামের সবচেয়ে ভালো ছেলটার সাথে বিয়ে দিলেন।।


রহিম আলি ভেবেছিলেন মেয়েটা খুব সুখী হবে। অবশ্য শ্রাবন্তির সুখের কমতি ছিলো না।। শ্রাবন্তির স্বামী নয়ন প্রচন্ড ভালোবাসতো তাকে।।কিন্তু হতভাগীর কপালে সেই সুখ বেশি দিন সইলো না। কারন বিয়ের ২৬দিনের মাথায় বিধবা হলো শ্রাবন্তি।। এরপর ফিরে আসলাে বাবার বাড়ি। সেই থেকে মেয়েটা অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছে কিন্তু একটুও সুখের দেখা পায়নি৷।। 


কিছুদিন পর রহিম আলির বাড়িতে আবারো বিয়ে হবে। 

শ্রবান্তির ছোট বোন সৃতির বিয়ে হবে ১ সাপ্তাহ পর৷। 


গ্রামের মানুষ বলে সে নাকি অপয়া? তাই তাকে গ্রামের শুভ কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না।। রাবেয়া বেগমও আজ-কাল তাই মনে করেন?? বারবার মনে হয় অপয়া বড় মেয়েটার জন্য ছোট মেয়েটার বিয়েতে গন্ডগোল হবে না তো।। ফল-স্বরুপ প্রায়ই শ্রাবন্তির সামনে থেকে ভাতের থালা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন তিনি??তার উপর নানা অত্যাচার তো আছেই?? শ্রাবন্তি অবশ্য মুখ বুঝে সহ্য করে নেয় এসব।। তারই বা কি করার আছে।। 


প্রায় সময় শ্রাবন্তির জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে।। কারো ঘরে সন্তান আছে অথবা কেউ ঘাটের মরা।।


প্রত্যেকটা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় শ্রবান্তি।।নয়নের সৃতিটুকু আঁকড়ে ধরে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায় শ্রাবন্তি।

তাতে মায়ের সাই না পেলেও বাবার প্রশ্রয় আর ভাই বোনর সমর্থন ঠিকই পায় শ্রাবন্তি।।সবে মাত্র ক্লাস শেষ বাড়ি আসলো সৃতি। বাড়িতে এসেই বলতে লাগলো.....


সৃতিঃ>>আপা এই আপা??


মাঃ>>কিরে কি হয়েছে? আপাকে খুঁজছিস কেনো?? 


সৃতিঃ>>আপা কোথায় মা??


মাঃ>>জানিনা আমি।। দেখ কোথায় আছে??


সৃতিঃ>>মা তুমি আজকেও আপাকে খেতে দাওনি তাইনা? বারান্দায় সবগুলো ভাত পড়ে আছে? মা 

তুমি কি চাও আপাকে মেরে ফেলতে?? 


ছোট মেয়ের মুখে এ কথাটা শুনে রাবেয়া বেগম কোনো কথা বললেন না।। আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন রান্না ঘরে?? মেয়েটা এই বাড়িতে ফিরে আসার পর ভালো করে কথা বলেননি তিনি ঠিকই কিন্তু শ্রাবন্তি 

তো তারই নিজের মেয়ে? কষ্ট তারও হয়? বুকটা ফেঁটে যায় ওই হতভাগীর জন্য।। তবে সেটা সবার আড়ালে।। 

যেটা সবাই দেখে না।।


সৃতি খুব ভালো করেই জানে শ্রাবন্তি কষ্ট পেলে কোথায় যায়।। তাই আর দেরি না করে চলে গেলো কবর স্থানে।। 

গিয়ে দেখলো নয়নের কবরের পাশে বসে হাউমাউ করে 

কাঁদছে শ্রাবন্তি আর বিলাপ করছে........


~~~আপনি কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন? আমি কি খুবই খারাপ ছিলাম।। আপনি আমাকে কেনো নিয়ে গেলেন না আপনার সাথে করে??আমার যে আপনাকে ছাড়া খুবই কষ্ট হয়।। 


আমার দুঃখের কথাগুলো কার কাছে বলবো আমি। কি নিয়ে বাঁচবো আমি বলতে পারেন?? রোজ রোজ তিলে তিলে মরার চাইতে একেবারে মরে গেলেই তো শান্তি পাইতাম।। আমি যে আর পারছি না??? এই একাকিত্ব জীবন যে আমাকে শুধুই কষ্ট দেয়.........???


দূর থেকে দাঁড়িয়ে শ্রাবন্তির কান্না দেখছে সৃতি।। ১ বছর 

আগেও শ্রাবন্তি ছিলো হাসিখুশি প্রাণচ্ছল একটা মেয়ে।

কিন্তু আজ সেই শ্রাবন্তি মনে করতে পারে না শেষ কবে হেঁসেছে।।।।।।


আচ্ছা ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া বেঁচে থাকা সত্যিই কি কষ্টের।। হয়তো সত্যিই খুব কষ্টের।। তাহলে কি শ্রাবন্তি কখনোই সুখের ছোঁয়া পাবেনা। সারাজীবন কি অপয়া নামক অভিশপ্ত জীবন তাকে ঘিরে থাকবে।। 


আচ্ছা শ্রাবন্তি কি সুখী হবে নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলে। তাহলে কি 

করবে সে।। অপয়ার মতো ভালোবাসার মানুষ ছাড়া একা বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে নাকি নতুন করে জীবন  

সাঁজানোর জন্য ভালোবাসার মানুষের হাত ধরবে??


আর কিছুই ভাবতে পারছে না সৃতি।।।ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো শ্রাবন্তির কাছে?? সৃতির উপস্থিতির টের পেয়ে শ্রবান্তি তার চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো.........



♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০২__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


শ্রাবন্তিঃ>>কিরে বোন তুই এখানে??


সৃতিঃ>>মা আজকেও খেতে দেয়নি তোকে??


শ্রাবন্তিঃ>>কই না তো.? আমি তো খেয়েছি?? 


সৃতিঃ>>আমাকেও মিথ্যা বলবি??


এই পর্যায়ে ডুঁকরে ডুঁকরে কেঁদে উঠলো শ্রাবন্তি।।আর কাঁদতে কাঁদতে বললো..........


শ্রাবন্তিঃ>>মায়ের আর কি দোষ বল? বিধবা হয়ে গাড়ে বসে আছি। তারপর আবার সামনে তোর বিয়ে।। সবাই ভাবছে আমার জন্য তোর বিয়েতে বাঁধা পড়বে?? 


সৃতিঃ>>আপা তুইও কি তাই ভাবছিস??


শ্রাবন্তিঃ>>একটা কথা কি জানিস বোন?? সবাই মিলে একটা মিথ্যা যদি কানের কাছে সব সময় বলতে থাকে সেটা এক সময় সত্যিই মনে হয়। আর তাছাড়া সবাই তো ভুল বলে না?? আমার সাথে বিয়ে না হলে হয়তো নয়ন আজও বেঁচে থাকতো?? 


সৃতি তার বোনের কথা শুনে চুপ করে রইলো।। কোনো কথা বললো না।।একটু পর শ্রাবন্তি আবার বলতে শুরু করলো......... 


শ্রাবন্তিঃ>>জানিস আমারও মনে হচ্ছে আমি অপয়া??

তা না হলে ৩ ঘর পরেই তো আমার শ্বশুর বাড়ি।। 

অথচ দেখ সেখানেও আমার জায়গা হলো না স্বামীর মৃত্যুর পর??


সৃতিঃ>>একদম চুপ। অনেক হয়েছে। এতক্ষণ কিছুই বলিনি। এবার বাড়ি চল??


এরপর দু বোন বাড়ি যেতে লাগলো।।বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দুই বোন দেখতে পেলো তাদের বাবা তাদের দিকেই আসতেছে। এরপর তিনি এসে বললেন...........


বাবাঃ>>কিরে মা কোথায় গিয়েছিলি দুই বোনে?? 


সৃতিঃ>>এইতো সামনেই।। জানো বাবা মা আজকেও আপাকে খেতে দেয়নি?? 


বাবাঃ>>হুম শুনলাম। তাের মার আর কি দোষ বল। নানান লোকে কান ভারী করে?? মায়ের কথায় রাগ করিস না মা।। চল খেয়ে নেই?? 


বাসায় গিয়ে রহিম আলি তার দুই মেয়েকে নিয়ে খাবার খেতে বসলেন।। দূর থেকে বাবা আর মেয়েদের ভালোবাসা দেখছেন রাবেয়া বেগম।। তার চোখে পানি চিকচিক করছে।। শ্রাবন্তি তার নিজের মেয়ে।। অনেক আদর যত্নে মেয়েটাকে বড় করেছেন তিনি। সেই মেয়ের কপালে এতটা কষ্ট হবে কে জানতো।।। 


সত্যি বলতে মায়ের অভিশাপেও দোয়া থাকে।। রাবেয়া বেগম প্রত্যেক নামাজের মোনাজাতে শ্রাবন্তির দুর্দশা যেনো কেটে যায়৷। তিনি বিশ্বাস করেন তার এই অপয়া অভাগী মেয়েও একদিন রাজরাণী হবে।।শুধু মাত্র যদি বিয়েতে রাজি হতো।।। 


মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলো সৃতির। ঘুম ভেঙে শ্রাবন্তি পাশে দেখলো না সে।। তাই ধীরে পায়ে এগিয়ে গেলো পুকুর পাড়ের দিকে।। হয়তো সেখানে বসেই নিজের অতিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে শ্রাবন্তি।। যা এক বছর আগে ঘটে ছিলো শ্রাবন্তির জীবনে.........~~~

 

শ্রাবন্তি সে-দিন কলেজ থেকে বাসায় যাচ্ছে বান্ধবীদের সাথে। ঠিক তখনই রাস্তায় এলাকার কিছু বখাটে খুব ডিস্টার্ব করছিলো তাদের।। আর ঠিক সেই সময় সিনেমার নায়কের মতো তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো শ্রাবন্তিদের প্রতিবেশী নয়ন ভাই।।


নয়নকে দেখেই পালিয়ে গিয়েছিলো ছেলেগুলো।। আর সে-দিন থেকেই শ্রাবন্তির বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো নয়ন।।।


যদিও আগে তাদের মাঝে টুকটাক কথা হইতো?? কিন্তু তারপর থেকে তাদের কথা বলা বাড়তে থাকলো। আর

আর শ্রবান্তির কিশোরী মনে সিনেমার নায়কের জায়গা করে নিয়েছিলো নয়ন।। 


শ্রাবন্তি কলেজ থেকে আসার সময় ইচ্ছে করেই নানা অজুহাত দেখিয়ে বান্ধবীদের সাথে আসতো না।।। একদিন শ্রাবন্তি তার বান্ধবীদের ফাঁকি দিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিলো রাস্তার মোড়ের মাথায়।। ঠিক যেখানে নয়ন দাঁড়িয়ে থাকতো। শ্রাবন্তিকে দেখেই মুখে হাল্কা

রাগী ভাব এনে নয়ন বলে উঠলো........... 


নয়নঃ>>কিরে তোর সাঙ্গ পাঙ্গু কই??


শ্রাবন্তিঃ>>একাই এসেছি??


নয়নঃ>>কেনো রে? ঝগড়া করেছিস নাকি?? 


শ্রাবন্তিঃ>>উহু??


নয়নঃ>>তাহলে??


শ্রাবন্তিঃ>>জানিনা??


নয়নঃ>>আচ্ছা শোন,,একা চলাফেরা করিস না।। আর ছেলেগুলো ভালো না,, আবার বিরক্ত করতে পারে??


শ্রাবন্তিঃ>>তাতে কি তুমি তো আছো??


নয়নঃ>>সব সময় যদি আমি না থাকি??


শ্রাবন্তিঃ>>থাকতে হবে??


নয়নঃ>>আমার কিসের দায় তোকে রক্ষা করার।।

তোর বাপে কি আমারে ঠেকা দিয়া রাখছে?? 


শ্রাবন্তিঃ>>ঠেকা নিলেই হয়।। কে বারণ করছে??


নয়নঃ>>কি বললি?? 


শ্রাবন্তিঃ>>কিছু না??


কথাটা বলেই সেদিনের মতো লজ্জায় রাঙা হয়ে ছুটে পালিয়েছে শ্রাবন্তি। আর নয়ন কতশত স্বপ্ন বুনিয়েছে

সেই চঞ্চল,,উচ্ছল কিশোরীকে নিয়ে।


পরের দিন শ্রাবন্তি কলেজ থেকে আসার আগেই নয়ন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।। শুধু মাত্র শ্রাবন্তির অপেক্ষায়।। দীর্ঘ এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলো সে।। অথচ বিন্দু মাত্র ক্লান্ত বোধ করেনি।। হয়তো ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করাটাই স্বাভাবিক।।এক ঘন্টা পর যখন শ্রাবন্তি আসলো একরাশ হাসি দিলো।। 

হয়তো ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়ে সে সুখী।। 

শ্রাবন্তি কাছে আসতেই নয়ন বললো.............


♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০৩__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


নয়নঃ>>তোমার আসতে কোনো কষ্ট হয়নি তো??


শ্রাবন্তিঃ>>কষ্ট হলে তুমি কি করবে??


নয়নঃ>>কিছু করতে পারবো কিনা জানিনা,,তবে তোমার কষ্ট হলে আমার খারাপ লাগবে??


শ্রাবন্তিঃ>>তাই??


নয়নঃ>>হুমম??


শ্রাবন্তিঃ>>তা খারাপ লাগবে কেনো জানতে 

পারি মিঃ??


নয়নঃ>>ভালোবাসি খুব ভালোবাসি তাই?? 


~~~

শ্রাবন্তি চুপ করে নয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। 

হুমম এটাই ভালোবাসা।। এটা কোনো ভালো লাগা নয়।

ভালোবাসা কি জানেন। ভালোবাসা সম্পুর্ণ পবিত্র। কিন্তু আমরা সমাজের কিছু মানুষ ভালোবাসা বলতে জানি শুধু শারীরিক সম্পর্ক এবং টাকা পয়সার সাথে সম্পৃক্ত। সেটা ভালোবাসা নয় সেটা সম্পুর্ণ মোহ। আর কিছুই না।।।


একটা কথা মনে রাখবেন..প্রিয় জনের জন্য রেস্টুরেন্টে এক ঘন্টা বসে থাকার পর যখন আপনার প্রিয়জন কাছে আসে তাকে ঠাসস ঠাসস করে দুটি চড় এবং যা তা বলে অপমান করার নাম ভালোবাসা নয় নয় নয়।। কখনোই নয়???


বরং তার জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ করে তাকে দেখে একরাশ হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করা.....তোমার আসতে কোনো কষ্ট হয়নি তো..?? এর নামই ভালোবাসা।। হ্যা এটাই সত্যি কারের ভালোবাসা।।।।


বিয়ের পর আমাকে হাত খরচের জন্য মাসে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হবে এগুলোকে ভালোবাসা বলে না।। 

এগুলোকে বলে চাহিদা মিঃ..?? কারন আপনি যতদিন ২০ হাজার টাকা করে দিবেন ততদিন আপনার প্রতি ভালোবাসা নামক অভিনয় করবে।কিন্তু যখন আপনার টাকা পুরিয়ে যাবে তার সাথে সাথে মিথ্যা ভালোবাসাটা পুরিয়ে যাবে।।। 


সত্যি কারের ভালোবাসায় কোনো চাহিদা থাকে না।।কি দিলো কি দিলো না।। কিছুই থাকে না।। থাকে না মাস শেষ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি বা গল্প। বরং তিনি 

আপনার খারাপ অবস্থায় আপনাকে উৎসাহ দিবেন।।। 

হ্যা এটাই তো সত্যি কারের ভালোবাসা তাইনা।। 


যাইহোক এবার গল্পে ফিরে যাই।।শ্রাবন্তি চুপ করে নয়ন এর দিকে তাকিয়ে রইলো। নয়ন আবার বলে উঠলো....


নয়নঃ>>শ্রাবন্তুি বিয়ে করবি আমায়??


নয়নের এমন কথায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো শ্রাবন্তি।। হুট করে নয়ন এমন কিছু বলবে ভাবতে পারেনি শ্রাবন্তি।। 

লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিয়েছিলো সে। নয়ন আবার বলে উঠলো...........


নয়নঃ>>তোরে মুখে কিছু বলতে হবে না। নুর কাকার দোকান থেকে তোর জন্য আলতা,স্নো আর পাউডার নিয়ে আসছি।। তোর যদি মত থাকে তাহলে এগুলো নিবি।। আর না হলে এগুলো না নিয়ে চলে যাবি??


শ্রাবন্তিঃ>>আমি কিছু জানিনা নয়ন ভাই।। বাবায় যদি রাজি থাকে তাহলে আমিও।। বাবারে আমি কষ্ট দিতে পারবো না?? 


নয়নঃ>>ঠিক আছে আমি কালকে আব্বারে চাচার কাছে পাঠাবো? তোরে আমি খুব তাড়াতাড়ি ঘরে

নিয়ে আসবো??


পরের দিন বিকেল বেলায় মফিজ শেখ এর তেঁতুল গাছ থেকে তেঁতুল চুরি করে এনে খাচ্ছিলো শ্রাবন্তিরা তিন ভাই বোন। দুষ্টুমি আর কূটবুদ্ধিতে দুই বোন পাকা হলেও

অকাজ গুলো ভাইকে দিয়ে করায় তারা।। এই যেমন এর গাছে উঠে আম, জাম, লিচু,পেঁপে চুরি করে আনা।।

তারপর সেগুলো বাড়ি এনে তিন ভাই বোন এক সাথে খাওয়া। এর যেনো মজাই আলাদা। শ্রাবন্তি একটু তেঁতুল মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বাদ নিতে লাগলো।। হটাৎ করে তার ছোট ভাই শাওন এসে বললো..........


শাওনঃ>>বাড়িতে মামুন চাচা,,আর চাচার ছেলে নয়ন ভাই আইছে? বড় আপার বিয়ের কথা বলতেছে?

নয়ন ভাইয়ের সাথে নাকি আপার বিয়ে হবে। কি মজা আপার বিয়ে খাবো??


কথাটা বলার সাথে সাথে শ্রাবন্তি আর সৃতি দৌড়ে এসে আড়ালে দাঁড়ালো।। নয়ন আর নয়নের বাবা মামুন সাহেব উঠানে চেয়ারে বসে আছে।। নয়নের বাবা আর শ্রাবন্তির বাবা বসে বসে কথা বলছে।। আর নয়ন চুপ করে বসে আছে। চুপ করে বসে আছে বললে ভুল হবে।

নয়নের দুচোখ শ্রাবন্তিকে খুঁজে চলেছে।। কিছুক্ষণ পর নয়নের বাবা মামুন সাহেব বলে উঠলো.... 


মামুন সাহেবঃ>>দেখো রহিম আলি,,আল্লাহর রহমতে আমার টাকা পয়সা কোনো কিছুর অভাব নেই। আর আমার এই একটাই পোলা।। স্বয় সম্পত্তি যা আছে সবই ওর.? তাছাড়া আমার পোলার মতো পোলা এই গাঁয়ে নেই। বিড়ি সিগারেট এর নেশা নেই। আর আমি কি কইতাম।। তোমরা ছোটবেলা থেকেই দেখতেছো ওরে? ও কেমন সেটা তোমরাও জানো??

~~~

আর আমগো শ্রাবন্তি মা ও নম্র ভদ্র। গুরুজনরে সম্মান দেয়।। তারে গাঁয়ের সবাই ভালোবাসে। আমার পোলা যখন কইলো ওরে বিয়ে করতে চায় আমি না করিনাই।

আশাকরি তোমারও আপত্তি নেই?? 


রহিম আলিঃ>>দেখেন ভাই সাহেব,,,আপত্তি আমারও হইতো না। নয়ন বাপ ছেলে ভালো। কিন্তু আমার মেয়ে কলেজে পড়ে আর নয়ন বাপ ননম্যাট্রিক এখানেই আমার আপত্তি? নয়ন বাপ যদি ম্যাট্রিক পাশ হইতো তবুও আমি ভেবে দেখতাম??

~~~

আর তাছাড়া আপনার যত কিছুই থাকুক না কেনো ছেলে তো বেকার? আমি কোন ভরসায় আমার মেয়েকে তুলে দিবো তার হাতে??


মামুন সাহেবঃ>>তুমি কি আমারে অপমান করতেছো??


রহিম আলিঃ>>ছি ছি ভাই সাহেব,, এমন কিছুই না??


মামুন সাহেবঃ>>তাহলে তুমি একজন ভাগচাষী হয়ে আমার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে অস্বীকার 

করাে কিভাবে?? 


রাগে গজগজ করতে লাগলো নয়নের বাবা মামুন শেখ।

তিনি রাগে উঠে চলে যেতে লাগলেন।। কিন্তু নয়ন নিজে আটকালো তার বাবাকে। এবার নয়ন নিজেই বললো...


নয়নঃ>>চাচা আপনার সব কথা আমি মানলাম।। কিন্তু আপনি আমারে কথা দেন,,আমি যদি ম্যাট্রিক পাশ করে একটা কাজ জুটাতে পারি তাহলে আপনি শ্রাবন্তিকে আমার কাছে দিবেন? কথা দেন তার আগে শ্রাবন্তিকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবেন না?? 


রহিম আলিঃ>>ঠিক আছে কথা দিলাম?? 


সেদিনের পর নয়ন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় নবম শ্রেণিতে। এবং এস এস সি পাশ করে সে। শুধু তাই নয়।লোকজন ধরে ইটালির ভিসা করায়।। সেখানে একটা কাজের ব্যাবস্থা করে ফেললো নয়ন।। ততদিনে শ্রবান্তি এগিয়ে গিয়েছি অনেক দূর। এ গ্রেড নিয়ে এইস এসসি পাশ করে এলাকার কলেজে ইতিহাসে অনার্স ভর্তি হয় শ্রাবন্তি।। 


এরপর পুরো গ্রামকে সাক্ষী রেখে ধুমধাম করে বিয়ে হয় নয়ন আর শ্রাবন্তির।। বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় নয়ন ইটালি চলে যায়।। এই ১৫ দিন ছিলো শ্রাবন্তির জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম দিন৷। নয়ন এই দিনগুলোতে নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজার করে দিয়েছে শ্রাবন্তিকে।। 


নয়ন ইটালি চলে যাওয়ার আগে শ্রাবন্তি ২দিন অভিমান করে কথা বলেনি তার সাথে।। শেষমেশ যাওয়ার আগের দিন রাতে নয়নের বুকে মাথা রেখে খুব কেঁদেছে শ্রাবন্তি।


কে জানতো এটাই ছিলো নয়নের বুকে শ্রাবন্তির শেষ মাথা রাখা?? আগে জানলে হয়তো শ্রাবন্তি আরো কিছুক্ষণ মাথা রেখে শুয়ে থাকতো নয়নের বুকে। হয়তো বা যেতেই দিতো না বিদেশে?? নয়ন যাওয়ার আগে শ্রাবন্তিকে একটা ফোন উপহার দিয়ে যায়।। 

আর কথা দিয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে?? 


হ্যা নয়ন কথা রেখেছিলো। বিদেশে চলে যাওয়ার মাত্র ১১ দিনের মাথায় ফিরে আসলো সে। তবে এসেছিলো লাশ হয়ে।। নয়নের প্রাণহীন দেহটা উঠোনে রাখতেই চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো শ্রাবন্তি? যখন 

জ্ঞান ফিরলো ততক্ষণে দাফন সম্পুর্ণ হয়ে গেছে নয়নের।। কারনে নয়নের লাশ দেশে আসতেই ৩ দিন লেগে গিয়েছিলো।। লাশে পঁচন ধরতে শুরু করেছে।।


কবরে যাওয়ার আগে তাই শেষ দেখা হয়নি নয়ন আর 

শ্রাবন্তির। জ্ঞান ফিরতেই পাগলের তান্ডব শুরু করলো শ্রাবন্তি। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসতে থাকে লোকজন এক নজর দেখার জন্য শ্রাবন্তিকে।। এর কিছুদিন পর শ্বশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো শ্রাবন্তিকে।। 

তারপর ধীরে ধীরে শ্রাবন্তি শান্ত স্রোতহীন নদীর মতো হয়ে গেলো।।।।


তবে রাগ,দুঃখ,অভিমান তার আজও আছে।। সেটা শুধু

জানে কবরে শুয়ে থাকা নয়নের প্রাণহীন দেহটা।। 


মাঝ রাতে নিঃস্তব্ধ পুকুর পাড়ে অতিত এর স্মৃতি চারণ করছিলো শ্রাবন্তি। ঝি ঝি করে ঝিঝি পোঁকা ডাকছে।

শ্রাবন্তির ইচ্ছে করছে নয়নের মায়া ভরা মুখটা একটি বার দেখতে। আজ কাল খুব ইচ্ছে করে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে নয়নের কাছে চলে যেতে।। 


হটাৎ পিঠে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছু ফিরে তাকালো শ্রাবন্তি।।তাকিয়ে দেখে পিছনে সৃতি দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে চুপ করে আছে। এ যেনো এক নিরবতা পালন করছে তারা।। নিরবতা ভেঙে সৃতি বললো......


সৃতিঃ>>কিরে আপা অন্ধকারে একা একা কি করিস?

তোর ভুতের ভয় করে না? আগে তো খুব ভয় পেতিস

ভুতকে??


শ্রাবন্তিঃ>>ভুতকে কারা ভয় পায় জানিস বোন।। যারা বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা আছে।। আমি তো বাঁচতেই চাইনা আমার আবার কিসের ভয়??


আর কোনো কথা বাড়ালো না সৃতি?? চুপচাপ শ্রাবন্তির পাশে গিয়ে বসলো। সৃতি যেনো নিজের বোনকে চিনতে পারছে না।। রাতের আঁধারে এই রহস্যময় রমণীকে খুব অচেনা লাগছে সৃতির।। এই কি তার প্রাণোচ্ছল বড় আপা।। সৃতি এসব ভাবতেছে,, শ্রাবন্তি আবারো বলতে শুরু করলো......... 


শ্রাবন্তিঃ>>তোর বিয়ের তো বেশি দিন নেই বোন।। এক সপ্তাহ বাকি নেই? একটা কথা সব সময় মনে রাখিস।

নিজের স্বামীকে কখনো চোখের আড়াল করিস না।।

আঁচলে বেঁধে রাখিস।। আঁচলের বাঁধন আলগা হলেই কিন্তু আর খুঁজে পাবি না??


সৃতিঃ>>আচ্ছা আপা ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া বেঁচে থাকা কি খুব কষ্ট?? 


শ্রাবন্তিঃ>>খুব কষ্ট_রে বোন।। অন্তর_টা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।। সেটা কাউকে দেখানো যায় না??


কথাটা বলেই বিড়বিড় করতে করতে পুকুর পাড় থেকে উঠে ঘরের দিকে পা বাড়ালো।। 


অন্যদিকে সৃতি পুকুর পাড়ে বসে বসে ভাবতেছে!! সে তাহলে কিভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে।।।


এই বিয়েটা করা ভুল হবে না তো.?? এই বিয়েটা করলে সৃতিও তার আপার মতো ভালোবাসার কষ্ট এভাবে তিলেতিলে শেষ হবে না তো? উঁহুহু আর কোনো কিছুই ভাবতে পারলো না সৃতি।।ধীরে ধীরে পা বাড়ালো ঘরের দিকে।। এরপরেই তো.....


♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০৪__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল


কথাটা বলেই বিড়বিড় করতে করতে পুকুর পাড় থেকে উঠে ঘরের দিকে পা বাড়ালো।। 


অন্যদিকে সৃতি পুকুর পাড়ে বসে বসে ভাবতেছে!! সে তাহলে কিভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে।।।


এই বিয়েটা করা ভুল হবে না তো.?? এই বিয়েটা করলে সৃতিও তার আপার মতো ভালোবাসার কষ্ট এভাবে তিলেতিলে শেষ হবে না তো? উঁহুহু আর কোনো কিছুই ভাবতে পারলো না সৃতি।।ধীরে ধীরে পা বাড়ালো ঘরের দিকে।। এরপরেই তো.....


দেখতে দেখতে সাতটা দিন পার হয়ে গিয়েছে।।আজকে সৃতির বিয়ে।। সকাল থেকে তোড়জোড় এর শেষ নেই।।

শহরের বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে সৃতির।। ছেলে বিরাট বড় ব্যাবসায়ী।। সবার খুশি যেনো ধরে না।।তবে এতকিছুর মধ্যে একমাত্র সৃতিই অখুশি।।


কারন সৃতি ঠিক করেছে নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে পালিয়ে যাবে।। সৃতির প্রেমিক তামিমও অবশ্য পালানোর জন্য তৈরি হয়ে আছে। তামিম কথা দিয়েছে গ্রামের সীমানায় পুরোনো খালপাড়ে অপেক্ষা করবে সৃতির জন্য।। তিলে তিলে গড়ে তোলা ২ বছরের প্রেম তাদের দুজনের।। এতো সহজে হাত ছাড়তে চায় না।।


পাশের গ্রামের কাসিম আহমেদ এর ছেলে তামিম।।খুব নম্র ভদ্র স্বভাবের সে।। যেমন তার সুন্দর্য তেমনই তার গুন।। যা না বললেই নয়। শহরের ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে তামিম।। খুবই মেধাবী ছাত্র।। 


কাসিম আহমেদ এর খুব স্বপ্ন ছোট ছেলেকে দেখে শুনে বিয়ে দিবেন৷। তাছাড়া পাশের বাড়ির মেয়ে,, যার জন্য কাসিম আহমেদ সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে না।। হ্যা এটাই সমাজের নিয়ম। তামিম ও সৃতি অবশ্য এসব ধারধারে না। তাই পালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে। এখন শুধু সুযোগের পালা।। 


পুরো বাড়িতে বিয়ের আমেজ লেগে গেছে?? ছোট বড় সবাই হাতে মেহেদী লাগাতে ব্যাস্ত।। আর কেউ রঙ খেলায় ফন্দি আঁটছে। কেউ আবার মায়ের কাছে ঘ্যান 

ঘ্যান করছে কোন জামাটা পড়বো।। মুরুব্বিরা মেতে উঠেছে নানা রকম রঙ তামাশায়?? কখনো নিজেদের মধ্যে আবার কখনো নাতি নাতনিদের সাথে।। 


এসব কিছুর মধ্যে মধ্যম বয়সের মানুষ গুলোর কাজের চাপে রেস্ট করার সময় মিলছে না।। পুরষেরা বাজার আর বর যাত্রীর আপ্যায়ন এর ব্যাবস্থা নিয়ে খুব ব্যাস্ত।


মহিলাদের একদল পেঁয়াজ, রসুন, আদা কাটাকাটিতে ব্যাস্ত।। এতো মানুষের রান্না একার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তাছাড়া হাতে সময় কোথায়! বাদ যোহর বিয়ে।।


অন্য দল কনে সাজাতে ব্যাস্ত?? বিয়ের বাড়িতে কাজের শেষ আছে।। এতকিছুর মধ্যেও শ্রাবন্তির কোনো কাজ নেই। শ্রাবন্তিকে কেউ কোনো কাজে ডাকেনি। কারন সে যে অপয়া।।


শুভ অনুষ্ঠানে তার কি আর কাজ করার আছে।। ঘরের একপাশে বসে বসে শ্রাবন্তি সব কান্ড দেখছে।। আজকে ছোট বোনের বিয়েতে হয়তো তার সবচেয়ে বেশি কাজ করার কথা ছিলো।। কিন্তু নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর।।


ইতিমধ্যেই ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা হৈচৈ শুরু করেছে বর এসেছে,,বর এসেছে।। সাথে সাথে ছোট বড় সবাই ছুটলো নতুন বর দেখতে।।


শালীকারা সবাই বরের গেইট ধরতে ব্যাস্ত?? গেইট ধরে যা টাকা পাবে ভাগ করে নিবে সবাই।। এতকিছুর মধ্যে সৃতি দেখলো ঘরে সে ছাড়া আর কেউ নেই।। সবাই বর দেখতে ছুটেছে!!এইতো সুযোগ।। 


চট করে কোনো আত্মীয়ের কালো বোরকা আর নিকাব পড়ে নিলো সৃতি। বিয়ে বাড়িতে বোরকা পড়ে কে যাচ্ছে 

আর কে আসছে দেখার সময় কোথায়।। 


তারপর সারা বাড়ি খুঁজেও কনে_কে পাওয়া গেলো না।

বিয়ে বাড়িতে হুলস্থুল।। কথাটা এক কান, দু কান করে বর যাত্রীদের কানে গিয়ে পৌঁছালো।।


ছেলের বাবা একজন বড় ব্যাবসায়ী।। এক কথায় খুবই বুদ্ধিমান মানুষ।। তিনি কথাটা শুনে কোনো উচ্চবাচ্য করলেন না। তিনি রহিম আলিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন.........


ছেলের বাবাঃ>>দেখেন ভাইসাব,আমি ব্যাবসায়ী মানুষ। 

সমাজে একটা মান সম্মান আছে।। আপনার মেয়ে যে এভাবে নাক কাটবে আমি কখনো ভাবতেও পারিনি।। 

আমি অশান্তি চাচ্ছি না।। আমি এখন খালি হাতে ফিরে গেলে আমাকে আর আমার ছেলেকে নিয়ে পাঁচ জনে পাঁচ কথা বলবে?? তার চেয়ে অন্য কোনো বিবাহযোগ্য মেয়ে থাকলে বলেন!!বিয়েটা মিটে যাক???


রহিম আলি এমন কোনো বিবাহ যোগ্য মেয়ের সন্ধান পেলেন না।। যাকে আপাতত কনে রুপে বর পক্ষের সামনে পাঠানো যায়।। অনেক ভেবেচিন্তে কাউকে না পেয়ে রহিম আলি বললেন...........


রহিম আলিঃ>>দেখেন ভাই সাহেব,,তেমন কাউকে তো দেখতে পারছি না।। আমার শালীর একটা মেয়ে আছে সে নিতান্তই এক শিশু।। ৭ম শ্রেনিতে পড়ে?? আর আমার দুইটাই মেয়ে।। আর বড় মেয়ের কথা তো জানেনই।। বিয়ের এক মাস পরেই বিধবা হয়ে আমার কাছেই আছে?? 


ছেলের বাবাঃ>>তাহলে আপনার বড় মেয়েকেই সাজিয়ে নিয়ে আসুন??


রহিম আলিঃ>>কি যা তা বলছেন?? আপনার ছেলে মানবে নাকি?? আর তাছাড়া কে মানবে এই বিয়ে?? 


ছেলের বাবাঃ>>ঠিক আছে আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলে দেখতেছি।। যদি রাজি থাকে তাহলে ওই মেয়েকে কনে সাজায়ি আনবেন। আপনি নাহয় বাড়ির সবার সাথে পরামর্শ নেন..??


রহিম আলি নিজের স্ত্রীর কাছে বরের বাবার দেওয়া প্রস্তাব রাখতেই তিনি খুশি হয়ে উঠলেন।।অন্যদিকে ছেলেকে রাজি করিয়ে নিয়েছে ছেলের বাবা।। কিন্তু 

এতে মত দিলেন না একজন সে হলো শ্রাবন্তি।। 


শ্রাবন্তির কথা হলো নিজের ছোট বোনের হবু স্বামীকে বিয়ে করতে পারবে না।। শ্রাবন্তির কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো শ্রাবন্তির মা রাবেয়া বেগম। রাগে ক্ষোভে শ্রাবন্তিকে তিনি বলে উঠলেন...........


রাবেয়া বেগমঃ>>হতভাগী এতো বড় সুযোগ পেয়ে তুই হারাবি।। গাঁয়ের মানুষের লাথি ঝ্যাটা খেয়েও তোর লজ্জা হয়নি। ওতো বড় মাসুষটা যে তোকে ঘরে তুলতে চাচ্ছে এটা তোর সৌভাগ্য।। আর তুই এখনো বোকামি করবি? এমন সুযোগ বারবার ফিরে আসে না??


শ্রাবন্তিঃ>>মা তোমাকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে তোমার আরেকটা মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সৃতির কথা একটু ভেবে দেখো??


রাবেয়া বেগমঃ>>যে গেছে নিজের কপাল নিয়ে গেছে।। আর তাছাড়া যেই মেয়ে বংশের মুখ পোড়ায় তাকে আমি মেয়ে মানি না?? কিন্তু এই বরপক্ষ যদি আজকে আমার বাড়ি থেকে খালি হাতে ফিরে যায়,তাহলে কিন্তু আমি আর তোর বাপ এক দড়িতে ঝুলবো? দুই বোন আর কত নাক কাটবি আমগো??


সৃতি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাওয়ায় অবশেষে শ্রাবন্তির সাথে সৃতির হবু বরের বিয়েটা হয়ে গেলো।। লোকটাকে চেনেও না,, জানেও না শ্রাবন্তি।। নামটাও জানেনি,কারন দেখেনি কখনো। হয়তো ছোট বোনের স্বামী হিসেবে দেখতো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ সেই লোকটাই শ্রাবন্তির স্বামী।।।


বিয়ে মিটতে মিটতে মাগরিব এর আযান হয়ে গিয়েছে।। 

নামায শেষে বর যাত্রী বউ নিয়ে রওনা হবে।। আজকে সারাদিনে এতকিছুর মধ্যে নয়নের কবরের কাছে যাওয়া হয়নি শ্রাবন্তির।। বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে তার।।


হয়তো আজ থেকে নয়নের কবরের কাছে আর যাওয়া হবে নাশ্রাবন্তির।। নয়নের মৃত্যু পর্যন্ত কেউ তাদেরকে আলাদা করতে পারেনি।। কিন্তু শ্রাবন্তির মনে হচ্ছে এই একটা বিয়ে তাদের দুজনের মাঝে জনম জনমের জন্য আলাদা করে দিয়েছে।। 


শ্রাবন্তির ইহকাল ও পরকাল কোথাও হয়তো নয়ন আর থাকবে না।। ভাবতেই পারছে না শ্রাবন্তি।। কথাটা ভাবতেই যেনো বুক ফেঁটে কান্না আসতেছে শ্রাবন্তির।। 


শ্রাবন্তির খুব চিন্তা হচ্ছে। সে চলে গেলে নয়নের কবরের

যত্ন নিবে কে? খুব সুন্দর একটা ডালিম গাছ লাগিয়েছে 

শ্রাবন্তি নয়নের কবরে। তারই বা যত্ন নিবে কে?? তার অবর্তমানে নয়নের যে খুব কষ্ট হবে।।


অন্যদিকে বরের পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবন্তির সদ্য বিয়ে করা নিলয়। বিদায় বেলায় আগত। গাড়িতে উঠতেই শ্রাবন্তির বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।। চেনা গ্রাম,চেনা মানুষ,চেনা পৃথিবী আর নয়নকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে শ্রাবন্তি অনেক দূরে??


কে জানে সেখানে শ্রাবন্তির জন্য কি অপেক্ষা করছে।। 

কেউ কি এতটা সহজে মেনে নিবে তাকে। মনে তো হয় না।। আর শ্রাবন্তির স্বামী নিলয় কি পারবে সৃতির জায়গায় শ্রাবন্তির মতো একটা বিধবা মেয়েকে মেনে নিতে।। নাকি সেখানেও শ্রাবন্তির সুখ সইবে না। ক্লান্তি

আর চিন্তায় দুচোখ বন্ধ হয়ে আসলো শ্রাবন্তির।।।


♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০৫__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


অন্যদিকে বরের পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবন্তির সদ্য বিয়ে করা নিলয়। বিদায় বেলায় আগত। গাড়িতে উঠতেই শ্রাবন্তির বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।। চেনা গ্রাম,চেনা মানুষ,চেনা পৃথিবী আর নয়নকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে শ্রাবন্তি অনেক দূরে??


কে জানে সেখানে শ্রাবন্তির জন্য কি অপেক্ষা করছে।। 

কেউ কি এতটা সহজে মেনে নিবে তাকে। মনে তো হয় না।। আর শ্রাবন্তির স্বামী নিলয় কি পারবে সৃতির জায়গায় শ্রাবন্তির মতো একটা বিধবা মেয়েকে মেনে নিতে।। নাকি সেখানেও শ্রাবন্তির সুখ সইবে না। ক্লান্তি

আর চিন্তায় দুচোখ বন্ধ হয়ে আসলো শ্রাবন্তির।।।


শ্বশুর বাড়িতে পা দিয়ে শ্রাবন্তির জীবনে শুরু হলো অন্য

একটি কষ্টের অধ্যায়।। নতুন বউ ঘরে পা রাখতে না রাখতেই শুরু হলো কানাকানি?? নিলয়ের নানি হাসতে হাসতে বলে উঠলো............ 


নিলয়ের নানিঃ>>নতুন বউয়ের বয়সের তো দেখি 

গাছ পাথর নেই। তা শুনলাম এক ঘর ঘুরে আইছো? তোমার তো আমার থেকেও অভিজ্ঞতা বেশি??


কথাটা বলার সাথে সাথে চারদিকে হাসির রোল পড়ে গেলো।। অথচ শ্রাবন্তি বয়সে সৃতির থেকে মাত্র দুই বছরের বড়।। শ্রাবন্তির ইচ্ছে করছে মাটির নিচে ঢুকে যেতে।। এতটা অপমান_ও বুঝি তার পাওয়া ছিলো।।


ওদিকে নিলয়ের মা খুশি বেগম কাঁদতে কাঁদতে অস্থির।

নিজের ঘরে শুয়ে আছেন তিনি।। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ওই মেয়ের মুখ তিনি দেখবেন না।। তার ওমন সোনার টুকরো ছেলের সাথে কোনো দোজবর মেয়ে তিনি মেনে নিবেন না।। 


ফুুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন তিনি। আর পাশে বসে 

বাতাস করছে আর স্বান্তনা দিচ্ছে ওনার বোন আমেনা বেগম।। বোনকে থামানোর জন্য হুট করে বললো.......


আমেনা বেগমঃ>>আপা এবার অন্তত চুপ কর।। আর কত কাঁদবি। এভাবে কেঁদে কোনো লাভ আছে? বিয়ে তো আর আটকাতে পারিস নাই।। সুতরাং এখন কান্না করে কোনো লাভ নেই??


খুশি বেগমঃ>>ওই মিনসে ( নিলয়ের বাবাকে) আমার এতো বড় সর্বনাশ করবে আমি কি জানতাম? আমি বেঁচে থাকতে ওই মেয়েকে কিছুতেই ঘর করতে দিবো না?? 


আমেনা বেগমঃ>>এভাবে কান্না করলে আটকাবি কি ভাবে শুনি? তার চেয়ে ভালো শান্ত হয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে এমন কিছু করতে হবে যাতে ওই মেয়ে নিজে থেকে পালিয়ে যায়! বুঝলি কিছু? এতে করে শাপ_ও মরবে লাঠিও ভাঙবে না??


খুশি বেগমঃ>>কি করা যায় বলতো তাহলে?? 


আমেনা বেগমঃ>>ধীরে সুস্থে যা করার করবি।। কিন্তু মানুষের কাছে খারাপ হবি কেনো? মুখে মুখে ভালো ব্যাবহার করে দোষ মুক্ত থাকবি!বুঝা গেলো কিছু??


খুশি বেগমঃ>>আচ্ছা তাহলে তুই থেকে যা। তোর জামাইরে বল একা চলে যাইতে। এসব আমার 

একা বুদ্ধিতে হবে না?? 


আমেনা বেগমঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে।। এবার তুই চোখ মুছে খাবার খেয়ে নে.? আমি দেখছি কি করা যায়?? 


এদিকে শ্রাবন্তি ঘরে একা বসে আছে।। তার পাশে কেউ নেই। তার জায়গায় সৃতি থাকলে হয়তো এখানে অনেক

লোকজন থাকতো।। শ্রাবন্তি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো ""সৃতি কোথায় গেলি রে বোন...।। খুব জোর টয়লেট পেয়েছে তার। কিন্তু এই বাড়ির কিছুই চিনে না শ্রাবন্তি।। আর নতুন বউ হেঁটে চলে বেড়ানো ঠিক নয়।।


শ্রাবন্তি ঘরের চারদিকে একবার দেখতে থাকে। যে ঘরে বসে আছে এটা সম্ভবত নিলয়ের ঘর।। কারন ঘর ভর্তি নিলয়ের নানা রকমের ছবি।। ঘরটাও খুব বিলাস বহুল ও খুব সুন্দর করে সাজানো।।


ঘরের ভিতরে বড় খাট,,দামি আসবাবপত্র সব জায়গায় যেনো আবিজাত্য ছড়ানো। এর আগে এতো বড় বাড়ি বা এতো বিলাসবহুলতা দেখেনি শ্রাবন্তি।অবশ্য নয়নের বাবাও বেশ বড়লোক ছিলো। তবে গ্রাম্য বড়লোক।। পাকা বাড়ি ছিলো।। তবে উপরে টিনের চালা।। আবার নয়ন! উফফ নয়নের কথা মনে পড়তেই শ্রাবন্তির চোখ দুটি ছলছল করে উঠলো।। এমন সময় দুজন মহিলা ঘরে ঢুকলো।। একজন মধ্যবয়সী,অন্য জন নিতান্তই কম বয়সী।। উহু একবারে মহিলা বলা যায় না। শ্রাবন্তি শাড়ি ঠিক করে নিয়ে বসলো।। মহিলা বলে উঠলো.....


ভদ্র মহিলাঃ>>কিগো নতুন বউ বসে ঝিম মারছো যে। ঘুম পাচ্ছে বুঝি? তা তো পাবেই যা ধকল গেলো?? 


হা করে তাকিয়ে আছে শ্রাবন্তি। কারন এদের কাউকে চিনে না সে।। ভদ্র মহিলা সম্ভবত সেটা বুঝলেন। তাই নিজেই বললেন.........


ভদ্র মহিলাঃ>>ওহ আমাদের তো চেনো না.?? আমি 

হলাম তোমার চাচী শ্বাশুড়ি। আর এই হলো তোমার ননদ চৈতি??


কথাটা শেষ করতে না করতেই চৈতি বলে উঠলো........


চৈতীঃ>>তুমি চেঞ্জ করবে না ভাবি? সেই কখন থেকে এভাবে বসে আছো??


শ্রাবন্তিঃ>>একটু বাথরুমে যাবো??


চৈতীঃ>>ওমা আগে বলবা তো। তোমার ঘরের সাথেই তো বাথরুম আছে।। আসো তোমাকে দেখিয়ে দেই??


বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসার সাথে সাথে শ্রাবন্তির চাচী শ্বাশুড়ি বললেন......


চাচী শ্বাশুড়িঃ>>একা একা শাড়ি পড়তে পারবে,,নাকি সাহায্য লাগবে???


শ্রাবন্তিঃ>>না আমি পারবো?? 


চাচী শ্বাশুড়িঃ>>তা তে পারবেই।। তোমার তো আবার বিয়ের অভিজ্ঞতা আছে। তা বাপু তোমার শ্বাশুড়ি যা শুরু করেছে,, এখানে কয়দিন ভাত খাইতে পারবা কে জানে.?? 


কথাটা শুনে রায়া ঝাঝিয়ে উঠে বললো.........


চৈতীঃ>>আহহ কাকী,কি যা তা বলতেছো??


চাচী শ্বাশুড়িঃ>>হ রে বাপু তোমার মায়ের নামে বললে তোমার খারাপ লাগবেই? থাক আমি আর পরের সংসারের ব্যাপারে আমি আর কিছু বলতে চাইনা? তা নতুন বউ পেটে দানাপানি কিছু পড়েছে। কথায় আছে পেটে খেলে পিঠে সয়.??


শ্রাবন্তিঃ>>না খাওয়া হয়নি??


চাচী শ্বাশুড়িঃ>>শেষ কখন খেয়েছো??


শ্রাবন্তিঃ>>কাল রাতে??


চাচী শ্বাশুড়িঃ>>বলো কি?? এতক্ষন না খেয়ে! আমি হলে তো বেহুশ হয়ে যাইতাম?? অবশ্য তুমি গ্রামের মেয়ে তার উপর আবার চাষী বাড়ির। না খেয়ে থাকা অভ্যাস আছে তোমার! কি বলো??


ভদ্র মহিলার কথা শুনে শ্রবান্তি কিছুই বললো না। চুপ করে রইলো। ঠিক তখনই চৈতি বলে উঠলো.......


চৈতীঃ>>দাঁড়াও ভাবি আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসতেছি?


চৈতী এই কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শ্রাবন্তির চাচী শ্বাশুড়ি হালকা করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলো.......... 


চাচী শ্বাশুড়িঃ>>ভালো করে বুঝে শুনে বাপু। তোমার শ্বাশুড়ি মোটেও ভালো মানুষ না।। কি দিয়ে কি প্যাচ লাগাবে টেরও পাবে না?? শেষে দেখা যাবে তোমার আর এই সংসার করা হইলো না??


শ্রাবন্তি চুপ করে রইলো। উনি আবারো বলতে শুরু করলেন........


চাচী শ্বাশুড়িঃ>>নিজের স্বামীকে আঁচলে বেধে রাখবে। স্বামী ঠিক তো জগৎ ঠিক?? 


হটাৎ দরজার কড়া নাড়ার শব্দে চুপ হয়ে গেলেন তিনি।

চৈতী খাবার নিয়ে চলে এসেছে। শ্রাবন্তিকে খাইয়ে দিচ্ছে ওর চাচী শ্বাশুড়ি।। ভদ্র মহিলা একটু কথা বেশি বললেও বেশ দয়ালু।। 


শ্রাবন্তিকে খুব যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন?? খাওয়া দাওয়া শেষে শ্রাবন্তিকে হালকা করে সাজিয়ে দিলেন চৈতী।।এবং সাথে হালকা কিছু গয়না পড়িয়ে দিলো। এরপর দুজনে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো!হটাৎ করে চৈতী ফিরে আসলো।। তারপর চৈতী শ্রাবন্তির কানে কানে বলতে লাগলো.........


চৈতীঃ>>ভাবি একটু ওয়েট করো। আমি গিয়ে দ্রুত ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিতেছি। তারপর কেউ ডিস্টার্ব করবে না। বেস্ট অফ লাক?? 


এরপর দৌঁড়ে পালিয়ে গেলো চৈতী। রাত প্রায় ১২ টা শ্রাবন্তী একা ঘরে বসে আছে। সেই যে চৈতী গিয়েছে আর আসেনি! উঁকি পর্যন্ত দেয়নি।। 


শ্রাবন্তির বড্ড ঘুম পাচ্ছে।। কিন্তু নতুন বউ এভাবে বসে বসে ঘুমানো ঠিক নয়। বড্ড অসহ্য লাগছে শ্রাবন্তির। কে জানে কোথায় ফেঁসে গিয়েছে সে। হটাৎ করে মেকি কাশির আওয়াজে ঘোর কাটলো শ্রাবন্তির। এই কাশির অর্থ দরজার বাহিরের মানুষটা ঘরের ভিতরে ঢুকতে চাচ্ছে।। 


শ্রাবন্তি নিজের কাপড় ঠিক করে নিলো।। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো নিলয়।। নিলয়কে দেখে শ্রাবন্তির গলা শুকিয়ে গেলো। না জানি কি বলে এটা ভেবে। টেনশনে শ্রাবন্তি নিজেই বলতে শুরু করলো......... 


শ্রাবন্তিঃ>>বিশ্বাস করেন আমি এই বিয়েটা করতে চাইনি। আমি জানি আপনার পক্ষে সৃতির জায়গায় আমাকে মনে নেওয়া অসম্ভব। আমি আশাও করছি না তেমন কিছু। আমি কাজের মেয়ের মতো থাকবো। দয়া করে তাড়িয়ে দিবেন না আমাকে?? 


কথা বলতে বলতে শ্রাবন্তির ঘোমটা সরে গিয়েছে। এই প্রথম শ্রাবন্তিকে দেখছে নিলয়। দেখছে বলতে হা করে তাকিয়ে আছে।। কারন শ্রাবন্তি অসম্ভব সুন্দরী।।

শুধু সুন্দরী বললে ভুল হবে।। একেবারে মায়াবতী উঁহুু মায়াময়ী। চাঁদের মতো মুখে ঠোঁটের কাছে তিলটা যেনো আরো বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে তার রুপ।

নিলয় হা করে তাকিয়ে দেখছে শ্রাবন্তিকে।। নিলয়কে 

চুপ থাকতে দেখে শ্রাবন্তি কাঁদো কাঁদো মুখে বললো...


শ্রাবন্তিঃ>>কথা বলছেন না কেনো? আপনি কি আমাকে বের করে দিবেন??


নিলয়ঃ>>আপনি এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো বলুন তো।।

আর আমাকে দেখে কি খুব রাগী মনে হয়? আর মেনে না নেওয়ার কি আছে? আপনি আমার বিয়ে করা বউ।

কলেমা পড়ে বিয়ে করেছি নিজের সম্মতিতে। আর 

এটা কি নাটক সিনেমা নাকি যে মেনে নিবো না?? 


শ্রাবন্তিঃ>>আপনি কি আমার অতীত জানেন। আপনি কি জানেন আমি বিধবা??


নিলয়ঃ>>আচ্ছা এই বিধবা শব্দটা কি আপনি অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে চাইছেন। 

কি ভাবছেন আমি ঝাপিয়ে পড়বো আপনার উপর। 

এই জন্য বুঝি বিধবা পরিচয় দিয়ে এড়াতে চাচ্ছেন আমাকে? নাকি অন্য কিছু?? 


নিলয়ের কথা শুনে রিতীমত অবাক শ্রাবন্তি৷ আমতা আমতা করে সে বললো..........


শ্রাবন্তিঃ>>না মানে.....[পুরোটা বলতে না দিয়ে]


নিলয়ঃ>>না মানে আসলে কিছুই না। আপনি হেজিটেট ফিল করবেন না। বিধবা বিয়ে করা আমার নবীর সুন্নত। 

আর তাছাড়া আমি বিশ্বাস করি আপনার দ্বারা আমার কল্যাণ আছে বলেই আল্লাহ আপনাকে আমার জন্য তৈরি করেছেন। আর আমার আল্লাহ আমাকে যা নিয়ামত দিয়েছে আমি খুশি মনে গ্রহণ করেছি। আল্লাহ না চাইলে কখনোই এই বিয়েটা হতো না? তাই আমি না মানার কেউ নই বুঝা গেলো??


নিলয়ের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো শ্রাবন্তি। আল্লাহ বুঝি সত্যিই তার কষ্টের দিন ঘুচালো। একটা মানুষ এতটা ভালো হয়। নিলয় আবারো বললো.....


নিলয়ঃ>>এইযে ম্যাডাম হা করে তাকিয়ে না থেকে 

অজু করে আসেন নামাজ পড়তে হবে??


শ্রাবন্তি কিছু একটা বলতে যাবে, ঠিক তখনই দরজায় দুমদুম আওয়াজে দুজনে সেদিকে মন দিলো। বাহিরে থেকে নিলয়ের খালা চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো...


খালাঃ>>নিলয় দরজা খোল বাবা। তাড়াতাড়ি এসে দেখে যা কি সর্বনাশ হলো রে বাপ??


♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০৬__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


নিলয় দরজা খুলে খালার সাথে তার মায়ের রুমে গেলো।। নিলয়ের পিছু পিছু শ্রাবন্তিও গেলো নিলয়ের মায়ের ঘরে৷ ভদ্র মহিলা বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। নিলয় গিয়ে তার মায়ের পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বললো..........


নিলয়ঃ>>কি হয়েছে মা তোমার??


মাঃ>>দেখ না বাবা হাঁটুর ব্যাথা বেড়ে গেছে। কিছুতেই উঠতে পারছি না বিছানা থেকে।। কিন্তু তোরা আবার উঠে আসতে গেলি কেনো?? 


নিলয়ঃ>>খালাই তো ডেকে নিয়ে এসেছে??


কথাটা বলেই নিলয় তার খালা আমেনা বেগমের দিকে তাকালেন। আমেনা বেগম আমতা আমতা করে বলতে শুরু করলেন..........


আমাদের আগের পর্বগুলো যদি না পড়ে থাকেন তাহলে এখনই পড়ে নিন৷ গল্পটা ভালো না লাগলে কেমন্ট করে জানাবেন তাহলে নেক্সট পর্বে সমাপ্ত করে দিবো। গঠন মুলক কমেন্ট করুন। ইতিঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল


আমেনা বেগমঃ>>না মানে আসলে আমি ভাবলাম নিলয়কে একবার ডাকি??


কথাটা শেষ করতেই নিলয়ের মা খুশি বেগম কপট রাগ দেখায় নিজের বোনের উপরে। রাগ দেখিয়ে বললো.....


খুশি বেগমঃ>>কাজটা তুই মোটেও ঠিক করিস নি??


শ্বাশুড়ির কথা শুনে পাশ থেকে শ্রাবন্তি বলে উঠলো....


শ্রাবন্তিঃ>>খালা তো ঠিকই করেছে মা??


নিলয় চুপ করে রইলো কোনো কথা বলছে না। শ্রাবন্তির কথা শুনে সেদিকে কান দিলো না নিলয়।। কারন তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভীষণ বিরক্ত। ছোটবেলা থেকেই 

নিজের খালার বাড়িয়ে বলার স্বভাবটা সে জানে। 

আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বেশ কর্কশ গলায় সে বলে উঠলো............ 


নিলয়ঃ>>খালা তুমি বরং ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো। 

মায়ের কাছে আমরা আছি??


আমেনা বেগম উঠে চলে যেতেই নিলয় ইশারা করলো শ্রাবন্তিকে পাশে বসার জন্য। নিলয় মায়ের পা টিপতে লাগলো। শ্রাবন্তি অবশ্য অনেকবার চেয়েছে শ্বাশুড়ির পা টিপতে! কিন্তু নিলয় তা করতে দেয়নি৷ 


রাত প্রায় ০৩ টার দিকে খুশি বেগম ঘুমের অতলে চলে গেলেন। নিলয় আর শ্রাবন্তি তখনও বসে রয়েছে তার পাশে। শ্রাবন্তি অবশ্য হাতের উপর ভর দিয়ে বসে বসে ঘুমাচ্ছে।


ঘুমানোটা খুবই স্বাভাবিক।। সারাদিন যা ধকল গেলো তাতে করে একটু বিশ্রামের দরকার ছিলো। মেয়েটার ঘুমন্ত মুখ দেখে খুব মায়া হচ্ছে নিলয়ের৷ 


হটাৎ নিলয় লক্ষ করলো শ্রাবন্তি একেবারে খাটের ধারে বসে আছে। যখন তখন পড়ে যেতে পারে ঘুমের ঘোরে৷

নিলয় এমন কান্ড দেখে বলে উঠলো......... 


নিলয়ঃ>>শ্রাবন্তি.?


নিলয়ের ডাকে আকস্মিক ভাবে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় নিজেকে সামলাতে পারেনি শ্রাবন্তি। পিছনের দিকে পড়ে যেতে নিলে নিলয় ধরে ফেলে তাকে। তারপর জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে।। শ্রাবন্তির মাথাটা চেপে ধরলো নিজের বুকে।


হুট করে এমন কিছু হবে শ্রাবন্তি আশা করেনি৷। লজ্জা পেয়ে যায় সে। তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো.........


শ্রাবন্তিঃ>>সরি আমি আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম??


নিলয়ঃ>>কোনো ব্যাপার না।। আসলে আমারই ভুল হয়েছে। আপনার ঘুমের প্রয়োজন ছিলো। এখন তো 

মা ঘুমিয়ে পড়েছে। চলেন ঘুমানো যাক??


শ্রাবন্তিঃ>>উহু এখন আর ঘুমিয়ে কাজ নেই। ঘন্টা খানিক পর ফজরের আযান দিবে। এখন ঘুমালে ফজরের নামাজ কাযা হয়ে যাবে??


নিলয়ঃ>>তা ঠিক বলেছেন। কেউ তো উঠেনি,,তাহলে চলেন আমরা ছাদ যাই। এই ফাঁকে আপনাকে ছাদটা দেখানো হয়ে যাবে। জানেন তো ছাদে সবজি বাগান করেছি আমি??


শ্রাবন্তিঃ>>ঠিক আছে চলুন??


নিলয়ঃ>>দাঁড়ান আগে দুকাপ কফি বানিয়ে আনি। খাবেন তো কফি??


শ্রাবন্তিঃ>>আমি তো কফি খাইনা। কখনো খাইনি আাসলে সেভাবে?? 


নিলয়ঃ>>তাহলে চা। চলবে??


শ্রাবন্তিঃ>>হুমম চলবে। আমাকে রান্না ঘর দেখিয়ে দিন আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি??


নিলয়ঃ>>আরে নাহ। বউ হয়ে যখন এসেছেন হেঁসেলের দায়িত্ব তো নিতেই হবে। আজকে নাহয় নিলয় স্পেশাল টি খান??


শ্রাবন্তিঃ>>আপনি চা বানাতে পারেন নাকি??


নিলয়ঃ>>সব পারি ম্যাডাম। আপনি আমাকে তুচ্ছ ভাববেন না??


কথাটা বলে একসাথে হেসে উঠলো দুজনে। নিলয় খুব ফাঁকা হাতে চা বানাচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখছে শ্রাবন্তি।। এই ছেলেটা সত্যি অন্যরকম। সবার থেকে আলাদা।। চা খেতে খেতে অন্ধকার রাত্রী শেষে

ভোরের আলো ফোঁটা দেখছে নিলয় আর শ্রাবন্তি।।


এবার শ্রাবন্তির মনে হচ্ছে ঠিক এভাবেই পাশে দাঁড়ানো মানুষটার ছোঁয়ায় তার জীবনের আধার কালো রাতটা কেটে যাবে৷


ফজরের আযান দিয়েছে অনেকক্ষণ হয়েছে। কিন্তু সৃতি এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। তামিম অনেকক্ষন ধরে ডেকে চলেছে নামাজের জন্য। কিন্তু মেয়ের কোনো হুশ নেই.......


তামিমঃ>>সৃতি উঠো না। আযান দিয়ে দিয়েছে। নামাজ পড়ে নাহয় ঘুমিও??


সৃতিঃ>>উফফ তামিম ঘুমাতে দাও প্লিজ। সারাটা রাত ঘুমাতে দাওনি? সারারাত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে এখন ডাকছো কেনো। যাও না প্লিজ??


তামিমঃ>>কই জ্বালিয়েছি। শান্তিতে একটু আদরও করতে দাওনি। এখন আবার জ্বালানোর বদনাম??(কিছুটা রেগে কথাটা বললো)


সৃতিঃ>>ওলে আমার বাবুটা রাগ করে না। ঘুমাতে 

দাও প্লিজ?? 


তামিমঃ>>নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাও। কিন্তু এভাবে শুয়ে থাকা যাবে না?? 


সৃতিঃ>>আমি যদি নামায পড়ি সকালের নাস্তা তোমাকে বানাতে হবে?? 


তামিমঃ>>ঠিক আছে রাজি। ভার্সিটিতে যাওয়ার 

আগে আমি নাস্তা বানিয়ে দিবো?? 


সৃতিঃ>>ঠিক আছে উঠতেছি??


তামিমঃ>>এইতো আমার মিষ্টি বউ টা??


কথাটা বলে সৃতির কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায় তামিম।।

হটাৎ কি মনে করে আবার ফিরে আসলো।। এসে জগ থেকে পানি নিয়ে ছিটিয়ে দেয় সৃতির চোখে মুখে।। 

তারপর এক দৌঁড় দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো৷ সৃতিও কম নয়। বাইরে থেকে ছিটকিনি দিয়ে দেয় বাথরুমের। তারপর জোরে জোরে হাসতে হাসতে বলে......... 


সৃতিঃ>>নে ব্যাটা এবার সামলা??


_এদিকে নামাজ শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে নিলয়। শ্রাবন্তির অবশ্য ঘুম পেলেও ঘুমানোর সাহস হচ্ছে না। নতুন বউ ঘুমিয়ে পড়লে আবার কে কি বলবে

কে জানে। তাই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শ্রাবন্তি।

হটাৎ করে পেছন থেকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শ্রাবন্তিকে। ঘটনার আকস্মিক ভাবে চমকে উঠলো সে।  


♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০৭__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


_এদিকে নামাজ শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে নিলয়। শ্রাবন্তির অবশ্য ঘুম পেলেও ঘুমানোর সাহস হচ্ছে না। নতুন বউ ঘুমিয়ে পড়লে আবার কে কি বলবে

কে জানে। তাই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শ্রাবন্তি।

হটাৎ করে পেছন থেকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শ্রাবন্তিকে। ঘটনার আকস্মিক ভাবে চমকে উঠলো সে।

পিছনে ঘুরতেই শ্রাবন্তি দেখলাে চৈতি তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। চৈতীকে দেখে মুচকি হাসলো শ্রাবন্তি। চৈতী আদূরে স্বরে বললো.........


চৈতীঃ>>ভাবি তুমি এখানে। আমি আরো তোমাকে খুঁজতেছি। রুমে নেই, ওয়াশ রুমে নেই, আমি ভয় 

পেয়ে গেছিলাম??  


শ্রাবন্তিঃ>>কি ভেবেছিলে ভাবি পালিয়েছে?? 


চৈতীঃ>>ধুরর তা কেনো ভাববো। কিন্তু ভাবি তোমার চোখ মুখ এতো লাল কেনো??


শ্রাবন্তিঃ>>আসলে ঘুম হয়নি তো সারারাত?? 


চৈতীঃ>>কি ব্যাপার ভাইয়া বুঝি সারারাত ঘুমাতে দেয়নি??


চৈতীর কথায় লজ্জা পেয়ে যায় শ্রাবন্তি। তারপর চৈতীর কান টেনে দিয়ে বললো.........


শ্রাবন্তিঃ>>আমার ননদিনী দেখছি খুব পাঁকা। তা এতো পাঁকামো শিখায় কে??


চৈতীঃ>>আছে কেউ?? 


শ্রাবন্তিঃ>>তা কে সেই মহারাজ শুনি??


চৈতীঃ>>উঁহু। ক্রমশ প্রকাশ্য। এখন চলো তো মা ডেকে পাঠিয়েছে তোমাকে?? 


শ্রাবন্তিঃ>>কিছু হয়েছে কি??


চৈতীঃ>>আরে নাহহ। আজকে নাকি বউ-ভাত নাকি। তোমাকে রান্না করতে হবে,,তাই সব বুঝিয়ে দিবে??


শ্রাবন্তিঃ>>ওহহ চলো?? 


চৈতীঃ>>তুমি যাও আমাকে আবার প্রাইভেট পড়তে যেতে হবে?? 


শ্রাবন্তিঃ>>কিসে পড়ো তুমি??


চৈতীঃ>>ইন্টার পরিক্ষা দিবো??


শ্রাবন্তিঃ>>ওহহ। আমার সৃতিও এবার ইন্টার 

পরিক্ষা দিতো?? 


চৈতীঃ>>মানে তোমার সেই বোন যার সাথে ভাইয়ার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো?? 


শ্রাবন্তিঃ>>হুমমম??


দুজনে চুপ হয়ো গেলো। কেউ আর কোনো কথা বললো না। শ্রাবন্তি কষ্টে আর চৈতী লজ্জায় চুপ হয়ে গেলো৷ 


অন্যদিকে ছোট একটা শহরের কোণে এক কামরার ফ্ল্যাটে গড়ে উঠেছে সৃতি আর তামিমের লাল নীল ছোট সংসার৷ তামিমের ভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় ছোট একটা বাসা ভাড়া করে আছে তারা। তামিমের বন্ধুদের সাহায্যে বিয়ে থেকে শুরু করে সংসার পাতা কোনোটাতেই খুব একটা ভুগতে হয়নি তাদেরকে। আর তামিম টিউশনি করে যা আয় করে তাতেই কোনোমতে চলে যাবে দুজনের সংসার৷


জীবন যুদ্ধে যতই কষ্ট হোক না কেনো সৃতিকে হারাতে রাজি নয় তামিম। জীবন চলার পথে এই মেয়েটাকে তার চায় ই চায়।। তামিমের বাবা অবশ্য মেনে নিয়েছে তাদের এই পরিনয়। কিন্তু তামিম ভালো করেই জানে 

তাদের ভালোবাসা দিয়ে একদিন সৃতির পরিবারকেও মানিয়ে নিতে পারবে তারা। 


সৃতি বসে রান্নার জন্য তরকারি কাটতে লাগলো। আজ শাড়ি পড়েছে সে। ভেজা চুলগুলো এলিয়ে দিয়েছে সারা পীঠে। একেবারে পাকা গিন্নী লাগছে তাকে। শাড়ির ফাঁকে পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।। তামিম পিছন থেকে গিয়ে সোজা জড়িয়ে ধরলো। তারপর তামিমের হাত দুটি অবাদে বিচরণ করতে থাকে সৃতির পেটে। ঠিক তখনই কপট রাগ দেখিয়ে সৃতি বললো.....


সৃতিঃ>>কি শুরু করছো। শান্তিতে একটু রান্নাও করতে দিবে না নাকি? সরো তো এখন??


তামিমঃ>>উফ চুপ করো তো। সব সময় শুধু বকা দাও। বিয়ের আগে কত ভালো ছিলে তুমি। বিয়ের পর কেমন দজ্জাল হয়ে গিয়েছো। এমন করলে আমি কিন্তু আমার ক্লাসের মেয়েদের সাথে মেলামেশা করবো?? 


সৃতিঃ>>কি বললে! এতো সাহস! বলেছিলাম না ক্লাসের কোনো মেয়ের সাথে মেশা যাবে না। তুমি শুধু আমার?? 


তামিমঃ>>তাহলে আদর করতে দাও??


সৃতিঃ>>উঁহু একদম না??


তামিমঃ>>তাহলে গেলাম কিন্তু?? 


সৃতিঃ>>ধ্যাত??


তামিমঃ>>কে ধ্যাত??


সৃতিঃ>>তুমি??


তামিমঃ>>দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা?? 


এই কথা বলে সৃতিকে কোলে তুলে নেয় তামিম। এভাবে চলছে তাদের দুষ্টু মিষ্টি সংসার। 


এদিকে খুশি বেগম একের পর এক রান্নার ফরমায়েশ করে যাচ্ছে শ্রাবন্তিকে। শ্রাবন্তিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেগুলো শুনছে৷ ৮/১০ টা আইটেম রান্না করতে হবে। হুট করে আবারো খুশি বেগম বলে উঠলো........ 


খুশি বেগমঃ>>কি পারবে তো রান্না গুলো করতে।

দুপুর বেলায় কিন্তু অনেক লোক খেতে আসবে। 

দেখো বাপু নাক কেটো না আবার??


শ্রাবন্তিঃ>>পারবো??


খুশি বেগমঃ>>তুমি তো আবার চাষাভুষার মেয়ে।চাষারা আবার ভালো খাবার চোখে দেখে নাকি। তারপর তোমার আগে যেখানে বিয়ে হয়েছিলো 

তারাও তো চাষা! তাইনা??


শ্রাবন্তি চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো 

তার অনেক কিছুই বলার আছে! কিন্তু বলতে পারছে না। কারন সে তো এখন নতুন বউ। তাই মুখ বুঝে সহ্য করাটাই তার ধর্ম। খুশি বেগম আবারো বলে উঠলো... 


খুশি বেগমঃ>>কতবার বুড়োকে বলে ছিলাম ছোটলোক ঘর থেকে মেয়ে আনিও না। বুড়ো আমার কোনো কথাই শুনলো না। ভালো ঘরের মেয়েরা কি মা বাবার সম্মান নষ্ট করে পালায়? মেয়েটা তো পালিয়ে গেলো আর বাপ মা এই আধবুড়ি বিধবা কে গছিয়ে দিলো। কপাল মন্দ হলে যা হয়! সবই আমারই কপাল??


চুপচাপ কথা গুলো শুনছে আর চোখের পানি ফেলছে শ্রাবন্তি। নাহ তার জীবনের কষ্ট হয়তো গুচার নয়। আল্লাহ হয়তো তার জন্য সুখ রাখেইনি। শ্রাবন্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভদ্র মহিলা বেশ বিরক্ত হলেন৷ কথায় আছে যাকে দেখতে না পারি তার চলন ব্যাকা৷ 

ভদ্র মহিলার দশা ঠিক তাই........


খুশি বেগমঃ>>কি ব্যাপার কিছু বলবে??


শ্রাবন্তিঃ>>না...??


খুশি বেগমঃ>>তাহলে সঙ এর মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? রান্না বসাও গিয়ে। মতির মাকে বলো রান্না 

ঘরে কোথায় কি আছে সব দেখিয়ে দিবে?? 


হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো শ্রাবন্তি।


নিলয়ের ঘুম ভাঙলো বেলা ১০ টায়।। ঘুম থেকে উঠেই শ্রাবন্তিকে খোঁজার চেষ্টা করলো সে। কিন্তু আশেপাশে শ্রাবন্তিকে দেখতে পেলো না সে। রান্না ঘরে আসতেই শ্রাবন্তির দেখা মিললো।। শ্রাবন্তির দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে দিয়ে নিলয় বললো..........


নিলয়ঃ>>গুড মর্নিং..??


শ্রাবন্তিঃ>>শুভ সকাল..?? 


নিলয়ঃ>>কি করেন আপনি?? 


শ্রাবন্তিঃ>>এইতো রান্না করতে বললেন মা.??


নিলয়ঃ>>কি কি রান্না হবে??


শ্রাবন্তিঃ>>সাদা ভাত,পোলাও,খাশির মাংস,মুরগির মাংস,মাছের ঝোল,ডাল,আর শেষ পাতে পায়েস?? 


নিলয়ঃ>>এতো রান্না আপনি একা করবেন নাকি। কাউকে তো রান্না ঘরে দেখছি না??


কথাটা বলে নিলয় চিৎকার করে মতির মা (কাজের বুড়াকে) ডাকতে লাগলো.......


নিলয়ঃ>>মতির মা এই মতির মা..??


মতির মা ভয়ে ভয়ে এসে দাঁড়িয়েছে নিলয়ের সামনে। কারন দেখতে শান্ত হলেও নিলয়ের রাগ নেহাৎ কম নয়। 

এরপর মতির মা বললো......


মতির মাঃ>>জ্বি ভাইজান বলেন..??


নিলয়ঃ>>তোমার ভাবি যে একা এতগুলো রান্না করছে তোমার কি উচিৎ ছিলো না ওকে সাহায্য করা??


মতির মাঃ>>জ্বি ভাইজান ছিলো..??


নিলয়ঃ>>তাহলে কেনো করলে না..??


মতির মাঃ>>আম্মায় বারন দিছে??


এদিকে চেঁচামেচি শুনে নিলয়ের মা আর খালা বের হয়ে আসলো ঘর থেকে। খুশি বেগম তড়িঘড়ি করে ছেলের দিকে এগিয়ে আসলেন আর বললেন.........


খুশি বেগমঃ>>কি হয়েছে বাবা এতো চেঁচামেচি কিসের??


নিলয়ঃ>>মা তুমি মতির মাকে বারণ করছো

শ্রাবন্তিকে সাহায্য করতে?? 


খুশি বেগম চুপ করে আছেন।। তিনি খুব ভালো করেই জানেন মিথ্যা বলে লাভ নেই এখন৷ মাকে চুপ থাকতে দেখে নিলয় আবার বলে উঠলো......... 


নিলয়ঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে তোমাদের কাউকে কিছু করতে হবে না। আমি নিজে শ্রাবন্তিকে রান্নার কাজে সাহায্য করবো?? 


ছেলের কথা শুনে ক্ষেপে উঠলেন খুশি বেগম। কিছুটা রাগী গলায় বললেন........ 


খুশি বেগমঃ>>তুই ব্যাটা ছেলে হয়ে রান্না ঘরে কেনো ঢুকবি? আমি তোকে ঢুকতে দিবো না। আর মতির মাকে আমি নিজে আসতে বলতাম। ওই মেয়ে নিজে বলেছে সব কিছু একাই পারবে। আর এখন ভালো মানুষের নাটক করছে?? 


নিলয়ঃ>>শ্রাবন্তি কোনো নাটক করেনি মা। আমি

সব বুঝি??


খুশি বেগমঃ>>হ্যা হ্যা সব দোষ তো মায়ের৷ বউ 

এসেছে মাত্র দুইদিন আর এর মধ্যেই মা খারাপ!

শেষে তুই কিনা বউয়ের আঁচল ধরলি??


এই কথা বলে কান্নার স্বরে হেঁসকি তুলছে খুশি বেগম। আর পাশে থেকে তার বোন আমেনা বেগম শান্তনা দিতে লাগলো.........


আমেনা বেগমঃ>>আপা কাঁদিস না! সবই কপাল??


নিলয় আর এক মুহুর্ত সেখানে দাঁড়ালো না। হনহন করে হাঁটা দিলো বাহিরের দিকে। নিলয় চলে যেতেই শ্রাবন্তির উপর রেগে উঠলেন খুশি বেগম..........


খুশি বেগমঃ>>অপয়া মেয়ে মানুষ! দিলি তো আমার ছেলেটাকে বাহিরে পাঠিয়ে। তুমি দেখছি আগুন 

লাগবে আমার সংসারে??


দুপুর বেলায় সব আত্মীয় স্বজনকে নিজ হাতে খেতে দিলো শ্রাবন্তি। শ্রাবন্তির হাতের রান্না খেয়ে সবাই প্রশংসা করতে লাগলো। শ্রাবন্তির শ্বশুর খাবার খেয়ে এক হাজার টাকার দুটি নোট গুঁজে দিলো শ্রাবন্তির হাতে। আর প্রাণ ভরে দোয়া করে বললো........


শ্বশুরঃ>>দোয়া করি মা শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে অনেক দিন ঘর সংসার করো।। আর মানুষকে হেদায়েতের পথে আনো তোমার ভালো গুণ দিয়ে?? 


কথাটা বলেই নিজের স্ত্রী আর শালির দিকে তাকালেন তিনি। খুশি বেগম মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। বিকেলের মধ্যে আত্মীয় স্বজন যার যার বাড়িতে চলে গেলেন।


সারাদিন শেষে রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফিরেছে নিলয়৷

তখন সারাদিনের কাজকর্ম শেষে গোসল করে চুল আচড়াতে বসেছে শ্রাবন্তি। পিছন থেকে এমন দৃশ্য দেখে মাতাল মাতাল লাগছে নিলয়ের। এরপর নিজের অজান্তেই ঘরে ঢুকে শ্রাবন্তির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো নিলয়। তারপর জোরে জোরে বলতে লাগলো...........


নিলয়ঃ>>চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।। মুখ তার শ্রাবন্তীর কারুকার্য অতীদূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারিয়েছে দিশা। সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতরে,তেমনই দেখছি তারে অন্ধকারে। বলেছে সে এতোদিন কোথায় ছিলেন পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন..???


নিলয়ের আবৃত্তি শুনে কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায় শ্রাবন্তি।স্বলজ্জা হাসি দিয়ে শ্রাবন্তি জিজ্ঞেস করলো.......


শ্রাবন্তিঃ>>আরে আপনি কখন এলেন.??


নিলয়ঃ>>সবে মাত্র.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>সারাদিন সবাই আপনার কত খোঁজ করছে। ফোনটাও তো বন্ধ ছিলো। সবাই কত চিন্তা করেছিলো জানেন..??


নিলয়ঃ>>আপনি করেন নি?? 


শ্রাবন্তিঃ>>হুমম করেছি বৈ কি। চলেন আপনাকে

খেতে দেই??


নিলয়ঃ>>চলেন??


খাবার বেড়ে নিলয়কে খেতে দিলো শ্রাবন্তি। নিলয় খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছে। নিলয়ের খাওয়া দেখে শ্রাবন্তির খুব মায়া হচ্ছে.....


শ্রাবন্তিঃ>>সারাদিন নিশ্চয়ই কিছু খাওয়া হয়নি তাইনা??


নিলয়ঃ>>কই না তো.??


শ্রাবন্তিঃ>>লুকাচ্ছেন কেনো? আপনার চোখ মুখ বলে দিচ্ছে সারাদিন খাওয়া হয়নি??


নিলয়ঃ>>সেই কথা যদি বলেন তাহলে আপনার চোখ মুখও কিন্তু একই কথা বলছে? তা বলি কি এই 

অধমের সাথে খেতে বসলে আপনার জাত যাওয়ার সম্ভাবনা আছে?? 


শ্রাবন্তিঃ>>কি যে বলেন। দাঁড়ান বসছি??


একটা প্লেটে নিজের জন্য ভাত বেড়ে নিলো শ্রাবন্তি। খেতে খেতে নিলয় বললো........


নিলয়ঃ>>আমি একান্তই দুঃখিত আপনার কাছে

মাফ চাচ্ছি?? 


শ্রাবন্তি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো.......


শ্রাবন্তিঃ>>কিসের জন্য.?? 


নিলয়ঃ>>আমার পরিবারের ব্যাবহারের জন্য। আপনার হয়তো এই ব্যাবহার গুলো পাওনা ছিলো না?? 


শ্রাবন্তিঃ>>বাদ দিন মানুষের কথা আমার গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। আপনাকে আর একটা তরকারি দেই??


নিলয়ঃ>>প্রসঙ্গ বদলাচ্ছেন.??


শ্রাবন্তিঃ>>উঁহু! ঝামেলা এড়াচ্ছি। এই যে আপনি দুপুর থেকে না খেয়ে আছেন সেটাও আমার জন্য। 

আমি আরো কোনো ঝামেলার কারন হতে চাই না?? 


শ্রাবন্তির কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো নিলয়।এই মায়াবতী মেয়েটার জন্য প্রচন্ড মায়া হচ্ছে তার। আচ্ছা এটাকে কি ভালোবাসা বলে! ভালোবাসা কি এতো সহজে হয়!নিজের মনকে প্রশ্ন করে নিলয়। 


খাওয়া দাওয়া শেষ করে শ্রাবন্তি রুমে এসে বিছানা ঠিক করছে। আচমকা নিলয় এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো শ্রাবন্তিকে। তারপর তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দেয় তার কপালে৷ নিলয়ের এমন আচরণে বেশ অপ্রস্তত হয়ে যায় শ্রাবন্তি। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সে।। শ্রাবন্তিকে ছেড়ে দিয়ে নিলয় বলে........


নিলয়ঃ>>ভয় পেও না শ্রাবন্তি। আমি জানি অতিতকে ভুলা তোমার জন্য অনেক কষ্টের। আমি তোমাকে কখনো জোর করবো না।যেদিন তুমি নিজে আমার কাছে আসবে আমি সেদিনের অপেক্ষা করবো। এই কয়েকটা দিন আমরা নাহয় বন্ধু হয়ে থাকি। আমি কি তোমাকে তুমি করে বলতে পারি? এটুকু অধিকার কি আমাকে দেওয়া যায়?? 


শ্রাবন্তি কিছুই বললো না, শুধু সম্মতি সুচক একটা হাসি দিলো। এই হাসির অর্থ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে নিলয়। এমন সময় দরজায় কারো কড়া নাড়ার শব্দে ফিরে তাকালো দুজন। নিলয়ের ধারণা আজকেও তার খালা এসেছে নতুন কোনো বাহানা নিয়ে। আজ নিলয় ২/৪ টা কথা শুনিয়ে দিবে তার খালাকে। এই ভেবে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলে দেখলো তার ধারণা ভুল করে দিয়ে নিলয়ের বাবা দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে দেখে নিলয় বলে উঠলো...........


নিলয়ঃ>>ভিতরে আসো বাবা.??


বাবাঃ>>হুমম আসছি। ঘুমিয়ে পড়েছিলি নাকি?? 


পাশ থেকে শ্রাবন্তি বলে উঠলো........ 


শ্রাবন্তিঃ>>না বাবা ঘুমোই নি.?? 


বাবাঃ>>শোনো বউমা তোমাদের দুজনকে একটা 

কথা জানাতে আসলাম.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>কি কথা বাবা.??


বাবাঃ>>তুমি হয়তো জানো না আমাদের পৈত্রিক বাড়ি লক্ষীপুর জেলায়। ব্যাবসার জন্য ঢাকায় আশা আমার। তখন থেকেই ঢাকায় বাড়ি করে স্হায়ী হওয়া। আমার মা আর ভাইয়েরা কিন্তু পৈত্রিক বাড়িতেই থাকেন এখনো। মায়ের বয়স হয়েছে তাই বিয়েতে আসতে পারেনি। এখন নাত-বউ দেখতে চেয়েছে। আমি কথা দিয়েছি তোমরা দুজন কালকে সকালে সেখানে যাবে৷ গোছগাছ করে নাও.?? 


নিলয়ঃ>>কিন্তু বাবা....??(পুরোটা বলতে না দিয়ে)


বাবাঃ>>কোনো কিন্তু নয়। কালকে সকালে তোমরা দুজনে যাচ্ছো! এটাই ফাইনাল..??


এবার দুজনে সম্মতি দেয়। নিলয়ের বাবা ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। 


এদিকে অনেক রাত হয়ে গেছে, কিন্তু তামিমের ফেরার নাম নেই। বারবার তাকে কল দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে সৃতি। এই অজানা অচেনা শহরে সে এতো রাতে কোথায় খুঁজবে নিজের স্বামীকে। বারবার তার মনে কুচিন্তা ডাকছে৷ বাহিরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। তামিমের কিছু হয়নি তো। তার বড় বোনের মতো তামিমকে হারাতে হবে না তো। 


♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০৮__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


এবার দুজনে সম্মতি দেয়। নিলয়ের বাবা ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। 


এদিকে অনেক রাত হয়ে গেছে, কিন্তু তামিমের ফেরার নাম নেই। বারবার তাকে কল দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে সৃতি। এই অজানা অচেনা শহরে সে এতো রাতে কোথায় খুঁজবে নিজের স্বামীকে। বারবার তার মনে কুচিন্তা ডাকছে৷ বাহিরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। তামিমের কিছু হয়নি তো। কথাটা ভাবতেই বুকের ভেতর ধক করে উঠলো সৃতির। 


অন্যদিকে শ্রাবন্তিদের লক্ষীপুর পৌঁছাতে সকার ১১ টা বেজে গেলো। লক্ষীপুর নেমে কিছু ফল মিষ্টি কিনতে নেমেছিলো নিলয়। শ্রাবন্তি গাড়িতেই বসে ছিলো। হঠাৎ রাস্তার অপর পাশে চোখ যেতেই চক্ষুচরক কাজ।

রাস্তার অপর পাশের মানুষটি শ্রাবন্তির খুব চেনা। কিন্তু সে এখানে আসবে কি করে। তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা খুলে শ্রাবন্তি এমন ভাবে এগিয়ে গেলো ওপারের মানুষটির দিকে,যেনো ধরতে না পারলে পালিয়ে যাবে...


গত রাত ছিলো সৃতির জীবনে সবচেয়ে স্বরণীয় রাত।। ঝড় বৃষ্টির রাত ১ টা বেজে গেছে তবুও তামিম ঘরে ফিরেনি চিন্তায় প্রাণ যায় যায় সৃতির। ঠিক সেই সময় তামিম আসলো কাকভেজা হয়ে৷ দরজা খুলেই তামিমের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো সৃতি। তামিমও দুই হাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো সৃতিকে। এরপর 

সৃতির মুখটা আলতো করে তুলে জিজ্ঞেস করলো.....


তামিমঃ>>এই পাগলী এভাবে কাঁদছো কেনো? 

আমি কি মরে গেছি?? 


তামিমের কথায় সৃতির কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায়। 

কাঁদতে কাঁদতে সে বললো...........


সৃতিঃ>>তুমি আসছিলে না চিন্তায় চিন্তায় আমি 

শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম.??


তামিমঃ>>কি ভেবেছিলে আমি আর নেই.?? 


সৃতিঃ>>একদম চুপ যত্তসব আজেবাজে কথা। 

ভিজে গেছো তো একদম। তুমি দাঁড়াও আমি 

গামছা নিয়ে আসছি??


এই কথা বলে সৃতি গামছা আনতে গেলো। গামছা এনে তামিমের মাথা মুছ দিলো। তারপর একটা প্লেটে করে ভাত এনে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে দিতে বললো.......


সৃতিঃ>>কোথায় ছিলে এত রাত পর্যন্ত.??


তামিমঃ>>বলছি আগে তুমি খেয়ে নাও.??


খাওয়া দাওয়া শেষ করে তামিম কোলে করে বিছানায় নিয়ে বসায় সৃতিকে। তারপর প্যান্টের পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করে। বক্স খুলতেই বের হয়ে আসে এক জোড়া রুপোর নুপুর। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সৃতি। নুপুর জোড়া পায়ে পড়িয়ে দিতে দিতে তামিম বললো..........


তামিমঃ>>রায়পুর গিয়েছিলাম।। ওখানে নুপুর ভালো বানায়। ক্লাস শেষে টিউশনি করিয়ে যেতে হয়েছে তো তারপর আবার ঝড় বৃষ্টি। আটকে গিয়েই তো দেরি 

হয়ে গেলো আমার মিষ্টি বউয়ের কাছে আসতে??


সৃতিঃ>>এসবের কি দরকার ছিলো শুনি.?? 


তামিমঃ>>বিয়ের পর তো তোমাকে সেভাবে কিছুই দিতে পারিনি। তাই সোনা না পারি রুপা দিলাম??


সৃতিঃ>>পাগল একটা। আর কখনো এমন পাগলামি করবে না?? 


মুখে মুখে তামিমকে বকা দিলেও মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে সৃতি। কতবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নুপুর জোড়া দেখছে তার হিসেব নেই। সত্যি! প্রিয়জনের কাছ থেকে অনেক ছোট উপহারও অনেকটা খুশি এনে দেয়।


আজ সকাল সকাল তামিম ক্যাস্পাসে চলে যেতেই বের হয়েছে সৃতি। নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে তামিমের জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনবে সে। মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে নতুন সংসারের টুকটাক তৈজসপত্রের দাম করছিলো সে। আকস্মিক ভাবে রাস্তার অপর পাশ থেকে কেউ এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। কয়েক সেকেন্ড এর মাথায় সৃতি বুঝতে পারলো যে মানুষটা তাকে জড়িয়ে ধরেছে সে আর কেউ নয়! তারই আপন বড় বোন.? শ্রাবন্তিকে ছাড়িয়ে অবাক আর ভয় মিশ্রিত কন্ঠে সৃতি বলে উঠলো...........


সৃতিঃ>>আপা তুই এখানে? তুই কিভাবে এলি এখানে??


শ্রাবন্তি কোনো কথা বললো না। অনেক দিন পর অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে নিজের বোনকে পেয়েছে সে। তার কি আর হুঁশ আছে। পিছন থেকে নিলয় উত্তর দিলো...


নিলয়ঃ>>আমি নিয়ে এসেছি?? 


নিলয়ের কথা শুনে সৃতির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। শ্রাবন্তির দিকে তাকিয়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে সে বললো..........


সৃতিঃ>>ছিহ আপা তুই শেষমেষ এই লোকটার সাথে হাত মিলিয়েছিস। আমি ভাবতেই পারছিনা??  


শ্রাবন্তিঃ>>সৃতি তুই আমার কথা শোন। তুই যা 

ভাবছিস তা নয়??


সৃতিঃ>>কোনো দরকার নেই। বরং তুই শোন আমি তামিমকে বিয়ে করে ফেলেছি। আর আমি কখনো তাকে ছেড়ে এই লোকটার সাথে যাবো না?? 


শ্রাবন্তিঃ>>আরে তুই আমার কথাটা শোন??


সৃতিঃ>>বললাম তো না?? আর মিস্টার নিলয় ভালো করে শুনে রাখেন, আমার আপাকে যতই হাত 

করেন না কেনো আমাকে আপনি কখনো পাবেন না?


এইবার সৃতিকে একটা ধমক দিলো শ্রাবন্তি। তারপর বলে উঠলো....... 


শ্রাবন্তিঃ>>বোনু কাকে কি বলছিস জানিস? উনি আমার স্বামী.?? 


শ্রাবন্তির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো সৃতি। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে তার। এসব কি শুনছে সে। তারপর অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে........ 


সৃতিঃ>>কি বলছিস আপা?? 


শ্রাবন্তিঃ>>হ্যা তোকে সব বলছি। তার আগে 

বল তুই এখানে কিভাবে??


সৃতিঃ>>আমরা তো এখানেই থাকি আপা? তামিম লক্ষীপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ে.??


সৃতির কথায় অবাক হয়ে যায় নিলয়৷ এরপর শ্রাবন্তিকে 

শ্রাবন্তিকে জিজ্ঞেস করে........


নিলয়ঃ>>শ্রাবন্তি তুমি জানতে না নিলয় কোথায় পড়ে?? 


শ্রাবন্তিঃ>>না।। ওরা তো আমাদের গ্রামের না, পাশের গ্রামের৷ তাছাড়া ওদেরকে ভালো ভাবে চিনতাম না। আর আমার বোনটাও তেমনই। নিজের ভালোবাসার কথা জানায়নি আমাকে?? 


সৃতিঃ>>জানাতে চেয়েছিলাম আপা৷ কিন্তু তখন তোর মনের অবস্থা তেমন ছিলো না?? 


পরিস্থিতি হালকা করতে পাশ থেকে নিলয় বললো.....


নিলয়ঃ>>তা শালিকা দুলা ভাইকে নিয়ে যাবে না তোমার বাড়িতে। নাকি তাও বারণ.??


 কথাটা শুনে সৃতি মুচকি হাসি দিয়ে বললো.........


সৃতিঃ>>নিশ্চয়ই নিয়ে যাবো.?? 


তুই ঘন্টা পর সৃতি আর তামিমের এক কামড়ার পাখির বাসায় বসে আছে নিলয় আর শ্রাবন্তি৷ এভাবে বোনকে পেয়ে শ্রাবন্তির খুশি যেনো আর ধরে না৷ আর শ্রাবন্তির হাসি মাখা মুখটা বড্ড বেশি সুখ দিচ্ছে শ্রাবন্তিকে৷ ইতিমধ্যে তামিমকে খবর দিয়ে নিয়ে এসেছে সৃতি। তামিমও বসায় আসার সময় সাধ্য মতো বাজার করে নিয়ে এসেছে। তামিম ও শ্রাবন্তি চলে যেতে চাইলেও কিছুতেই না খেয়ে যেতে দেয়নি তামিম আর সৃতি। 


পুর্বের সমীকরণ যাই থাকুক এই চার জনের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সৃতি অবশ্য নিজের কৃতকর্ম আর 

তখনকার ব্যাবহারে কিছুটা লজ্জিত আর সংকোচ ছিলো,,কিন্তু নিলয়ের অন্তরিক ব্যাবহারের কাছে তা বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। 


রান্না ঘরে বসে রান্না করছে দু বোন,সেই সাথে টুকিটাকি

গল্প৷ এটুকু সময়ের মধ্যে সৃতির পালিয়ে আশার পরের সব ঘটনা তাকে জানিয়ে দিয়েছে শ্রাবন্তি। এতে অবশ্য সৃতিও খুশি। কারন সেদিন যদি সৃতি পালিয়ে না আসতো তাহলে তার জনম দুখীনি বোন আজ এই দিনটা দেখতো না৷ মনে মনে নিলয়ের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায় সৃতির।৷ গল্পের এক পর্যায়ে সৃতি শাবন্তিকে বলে উঠলো............ 


শতাদিক লাইক কমেন্ট না ফেলে নেক্সট পর্ব পাবেন না। 


সৃতিঃ>>আপা তুই কি দুলা ভাইকে মেনে নিয়েছিস। মানে আমি বলতে চেয়েছি তোদের কি স্বামী স্ত্রীর 

মতো স্বাভাবিক সম্পর্ক হয়েছে?? 


শ্রাবন্তিঃ>> না হয়নি। মানুষটা অনেক ভালো রে। আমার সাথে কোনো অসভ্যতা করেনি। আর না 

কোনো জোর জবরদস্তি??


সৃতিঃ>>তুই কি...... ভাইকে ভুলতে পারিস নি আপা??


শ্রাবন্তিঃ>>ভালোবাসা কি এতো সহজে ভোলা যায়??


সৃতিঃ>>দেখ আপা তোকে কয়েকটা কথা বলছি।। যেই মানুষটা তোকে ছেড়ে পরকালে চলে গিয়েছে সে কিন্তু আর কখনে ফিরে আসবে না। চলে যাওয়া মানুষটার জন্য তোর মনে যায়গা থাকলেও বাস্তবে তাকে না টানা ভালো। এতে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না??

|||

আর যেই মানুষটা তোর অতিত জেনেও তোকে এতটা সম্মান দিলো তাকে বঞ্চিত করিস না তার অধিকার থেকে?? আর তাছাড়া নিলয়ের ভাইয়ার চেখে তোর জন্য আমি ভারোবাসা দেখেছি??


শ্রাবন্তিঃ>>কিন্তু দ্বিতীয় বার কি ভালোবাসা যায়?? 


সৃতিঃ>>২য়,৩য় ভালোবাসা বলে কিছুই হয়না রে বোন। 

প্রত্যেক ভালোবাসা আলাদা আলাদা অনুভুতি বহন করে। তাই প্রত্যেক ভালোবাসাই প্রথম ভালোবাসা??


এখানে শ্রাবন্তির স্বামী মারা গেছে যার জন্য বলা হয়েছে প্রত্যেক ভালোবাসা প্রথম ভালোবাসা। কিন্তু আপনার স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় আপনি যদি অন্যের ভালোবাসা গ্রহন করে প্রথম ভালোবাসা মনে করেন তাহলে সম্পুর্ণ ভুল। স্বামীকে ভালোবাসুন সংসার সুখী হবে।। এমন হাজারো মেয়ে আছে যারা স্বামীকে হারিয়ে সারাজীবন একাকিত্ব ভাবে জীবন কাটিয়ে দেয়। তবে সত্যি বলতে একাকিত্ব জীবনটাই দুঃখ ও কষ্ট মোড়ানো।। অবশেষে বলতে চাই চরিত্রবান স্বামীর ভালোবাসা শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা। ভালো থাকুক সত্যিকার ভারোবাসা গুলো💝💝


সৃতির কথা গুলো হৃদয়ে নাড়া দিলো শ্রাবন্তির। কেননা নিলয় নামক মানুষটির জন্য কিছুদিন ধরেই তার মায়া নামক অন্তরের গোপন অনুভুতিরা ছুটে চলেছে। আজ সেই অনুভুতির মধ্যে কিছুটা রঙ মিশিয়েছে সৃতি। 


খাওয়া দাওয়া শেষ করে তামিম ও সৃতির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো নিলয় আর শ্রাবন্তি। উদ্দেশ্য নিজ গন্তব্যে। 


ঘন্টা খানেক পর শ্রাবন্তিদের গাড়ি এসে থামলো প্রকান্ড এক দোতলা বাড়ির সামনে। বেশ পুরোনো বাড়িটা৷ তবে আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। গাড়ি থামাতেই কয়েকজন মহিলা আর কিচু কচিকাঁচা ছুটে এলো তাদের অভ্যর্থনা জানাতে। এদের মধ্যে সেই মহিলাও আছে,,,বিয়ের দিন রাতে যেই মহিলা শ্রাবন্তিকে খাইয়ে দিয়েছিলেন৷ 


এতো মানুষ দেখে শ্রাবন্তি হকচকিয়ে গেলো। কেননা কে কি হয় তার পক্ষে মনে রাখাও সম্ভব নয়। নিলয় গাড়ি থেকে নেমে কুশল বিনিময় করতে লাগলো সবার সাথে। 

ইতিমধ্যে সারা বাড়িতে অনেক মানুষ উপস্থিত হয়েছে নতুন বউ দেখতে৷ 


শ্রাবন্তি যেহেতু গ্রামের মেয়ে তাই তার কাছে এসব খুবই স্বাভাবিক।। এরই মাঝে তাদের খাওয়া দাওয়া সম্পুর্ণ হয়েছে। খাওয়া দাওয়া শেষে শ্রাবন্তিকে নিয়ে দাদীর ঘরে গেলো নিলয়৷ কালো রঙের একটা বনেদী খাটে ধবধবে সাদা বিছানার চাদর পাতা,,আর সেখানে শুয়ে আছে ভদ্রমহিলা। বেশ বয়স্ক হলেও তার চেহারায় এখনে বেশ জৌলুশ রয়েছে। দেখেই বুঝা যায় বয়স কালে বেশ সুন্দরী ছিলেন তিনি।। বিছানার পাশে বসে আলতো করে ভদ্রমহিলার গায়ে হাত দিলো নিলয়। তারপর ধীর গলায় বললো............


নিলয়ঃ>>দাদী..?? 


নিলয়ের ডাকে ভদ্রমহিলা চোখ মেলে তাকালো,তারপর আদূরে গলায় বললে..........


দাদীঃ>>দাদু ভাই তুমি নাকি??


নিলয়ঃ>>হ্যা দাদী আমি এসেছি..??


দাদীঃ>>হ্যা টের পেয়েছি! বুড়োর মতো গায়ের গন্ধ।

বুড়ো বেঁচে থাকতে আমাকে এই ভাবেই ঘুম থেকে ডেকে তুলতো? তা দাদু ভাই আমার নাত বউ কই??


নিলয়ঃ>>এসেছে তো.? শ্রাবন্তি এগিয়ে আসো

দাদীর কাছে??


নিলয় এই কথা বলে একটু পাশে সরে গিয়ে শ্রাবন্তিকে বসার জায়গা করে দিলো। শ্রাবন্তি এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো.........


শ্রাবন্তিঃ>>আসসালামু আলাইকুম দাদী.??


দাদীঃ>>ওয়ালাইকুম আসসালাম.??


দাদীঃ>>তুমি কেমন আছো দাদু ভাই। দেখি তোমার মুখটা.??


ভদ্রমহিলা কথাটা বলে দুই হাতে শ্রাবন্তির মুখ তুললো আর নিলয়কে বললো........


দাদীঃ>>কিছুই তো দেখতে পারছি না? দাদু ভাই ওইখান থেকে চশমা টা দাও..??


চশমা পড়ে শ্রাবন্তিকে দেখে ভদ্রমহিলার চোখ জুড়িয়ে গেলো। শাবন্তির মাথায় হাত দিয়ে আদর করতে করতে বললেন...........


দাদীঃ>>মাশাআল্লাহ সুন্দর বউ হয়েছে.? নিলয় দাদু ভাই আলমারি তে একটা কাটের বাক্স আছে,, ওটা আমারে দাও.?? 


কাঠের বাক্স খুলতেই অনেক গুলো ভারী ভারী গয়না দেখা গেলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সেগুলো বনেদী গয়না৷ 

আর সেই সাথে অনেক ভারী ভারী আর পুরোনো মডেলের৷ বাক্স থেকে এক জোড়া বালা বের করে তিনি শ্রাবন্তির হাতে পড়িয়ে দিলেন। আর বললেন........


দাদীঃ>>বুড়ো বেঁচে থাকতে এগুলো গড়ায় দিয়েছিলো। 

আজ সেও নেই। আমার তিন কাল এক কালে ঠেকছে তাই এগুলো রাখছি নাতনি আর নাত বউদের জন্য।। তা নতুন বউ হাদিয়া পছন্দ হয়েছে??? 


শ্রাবন্তিঃ>>জ্বি দাদী.??


দাদীঃ>>তয় আলহামদুলিল্লাহ। সুখী হও দাদু ভাই। আমার বংশ বৃদ্ধি করো.?? 


দাদীর কথায় নিলয় ও শ্রাবন্তি দু জনে বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো। পরের দিন সকাল বেলায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়ির মধ্যে সারা রাস্তা ঘুমিয়েছে শ্রাবন্তি।। আর নিলয় জেগে জেগে শ্রাবন্তির ঘুমন্ত মুখ দেখছে। কত মায়া লুকিয়ে আছে সেই মুখে তা শুধু নিলয় জানে।। শ্রাবন্তির ঘুম ভাঙতেই দেখলো নিলয় তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। 

শ্রাবন্তি বেশ অপ্রস্তত হয়ে গেলো সেই সাথে নিলয় নিজেও। ধরা খেয়ে নিলয় আমতা আমতা করে বললো.


নিলয়ঃ>>ইয়ে মানে বলেছিলাম কি চা খাবেন??


শ্রাবন্তিঃ>>খাওয়া যায়.??


নিলয়ঃ>>তাহলে গাড়ি দাঁড় করাতে বলি.??


শ্রাবন্তিঃ>>আচ্ছা.?? 


তারপর রাস্তার কাছের দোকান থেকে দুই জনে চা খেয়ে রওনা দিলো বাড়ির পথে। আঁকা বাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে পৌছালো তাদের গন্তব্যে। শ্রাবন্তি ও নিলয় গ্রাম থেকে এসেছে দুদিন হয়েছে। এরই মধ্যে পুরোদমে কাজে লেগে গিয়েছে নিলয়। বিয়ের কয়েকটা দিন ব্যাবসায় যা অবহেলা হয়েছে খেটে পুষিয়ে দিয়ে চায় সে। 


এদিকে সৃতির কাছ থেকে ফিরে এসে শ্রাবন্তি সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিলয়ের সাথে দুরত্ব মিটিয়ে নিবে৷। তাকে দিবে স্বামীর অধিকার। সেই চিন্তা করেই রাতের বেলায় সবাইকে খাবার খেতে দিয়ে নিজের রুমে যায় শ্রবন্তি।। লাল টকটকে জামদানী শাড়ি পড়ে নেয় সে। চুল গুলো ছেড়ে দেয়, সেই সাথে হালকা সাজ আর গয়না।


এরপর অপেক্ষা করতে থাকে নিলয়ের জন্য। সে জানে ঠিক এই সময় নিলয় ঘরে ফিরবে। এভাবে অনেকটা সময় কেটে যায় কিন্তু নিলয়ের ফিরে আসার নাম নেই। 


বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে শ্রাবন্তি। নাহহ এই সময়ে তো নিলয় বাসায় ফিরে আসে। আজ কি হলো,বুকের মাঝে বিষাদের সুর বেজে উঠলো শ্রাবন্তির৷ প্রিয় জনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুলো কেনো যে এমন স্বস্তিহীন হয় কে জানে। 


এদিকে নিলয়ের বাবা এক ধ্যানে খাবার খেয়ে যাচ্ছেন।

বলতেই হবে বউমার হাতের রান্না খাসা। ধ্যান ভাঙলো মোবাইলের রিংটোনে। নিলয়ের কর্মচারি জুবায়ের কল দিয়েছে। কলটা রিসিভ করে বললেন.........


বাবাঃ>>হ্যা জুবায়ের বলো.??


জুবায়েরঃ>>চাচা নিলয় ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে.??


♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_০৯__♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


জুবায়েরঃ>>চাচা নিলয় ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে.??


কথাটা শোনা মাত্রই খুশি বেগমের বুকে শোকের মাতল উঠলো৷ স্বজোরে কান্না করতে লাগলেন তিনি৷ সেই সাথে বিলাপ করতে লাগলেন..........


খুশি বেগমঃ>>আমি জানতাম আমার ছেলে বাঁচবে না? 

আমার মায়ের মন? ওই কালনাগিনী ঘরে ঢুকে আমার সংসারটা ছারখার করে দিলো গো.। আমার তো একটাই ছেলে। ওই স্বামীখেকো ডাইনীটা বাঁচতে দিলো না আমার ছেলেকে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো। ও নিলয়ের বাপ আমাকে নিয়ে চলো আমার বুকের মানিকের কাছে। আমি আমার বুকের মানিককে একটি বার দেখবো..??


প্রতিটা কথা স্পষ্ট শ্রাবন্তির কানে আসলো।। কিন্তু এখন সেদিকে নজর নেই শ্রাবন্তির৷ নিলয়ের জীবন আজ তার বড় চাওয়া।। কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবন্তি তার শ্বশুরের কাছে মিনতি করলো..........


শ্রাবন্তিঃ>>বাবা আপনার দুইটি পায়ে পড়ি আপনি আমাকে নিয়ে যান ওর কাছে। আমি ওকে একটি বারের জন্য দেখতে চাই??


কথাটা শোনা মাত্র শ্রাবন্তির শ্বাশুড়ি শ্রাবন্তির চুলের মুঠি

ধরে টানতে টানতে তাকে ঘরে নিয়ে গেলো। তারপর বাহিরে থেকে দরজা লাগিয়ে বলতে লাগলো............ 


শ্বাশুড়িঃ>>অপয়া মেয়ে মানুষ। আজ শুধু তোর জন্য আমার ছেলেটা এক্সিডেন্ট করেছে। আগে ছেলের অবস্থা দেখে আসি তারপর ফিরে এসে তোকে এই 

বাড়ি থেকে তাড়াবো??


খুশি বেগম কথাটা বলেই হনহন করে বের হয়ে গেলেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে। নিলয়ের বাবা কোনো কথা বাড়ালো না। তার সেই মনের অবস্থা নেই। হাটা দিলো স্ত্রীর পিছু পিছু। 


এক্সিডেন্ট!! ঠিক এই রকম একটা এক্সিডেন্ট শ্রাবন্তির জীবন থেকে সব সুখ কেরে নিয়েছিলো৷ সেদিন শ্রাবন্তির সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বিদেশের রাস্তাতে হাঁটছিলো নয়ন। অন্যমনুষ্ক হয়ে রাস্তা পার হতেই একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় তাকে। সেদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় নয়ন৷ সেই সাথে বিদায় নেয় শ্রাবন্তির সুখ আর আনন্দ। নয়নের মৃত্যুর পর শ্রাবন্তি ফোনটা বিসর্জন দেয় পুকুরের পানিতে। 


শ্রাবন্তির শ্বাশুড়ি বাহিরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পর শ্রাবন্তি আর সময় নষ্ট করলো না। 

অজু করে দু রাকাত নফল নামাজ পড়ে মোনাজাত ধরলো...........


শ্রাবন্তিঃ>>হে আল্লাহ,হে রহমানু রহিম,আজ তুমি প্রমান করে দিলে সত্যি আমি অপয়া। সবাই ঠিকই বলে৷ কিন্তু আল্লাহ আমি নিজে তো নিজেকে তৈরি করিনি! তুমিই করছো। তবে কেনো আমাকে এই পৃথিবীতে পাঠালে।। 

|||

আমার জন্য নয়ন মরেছে। আজ যখন নিলয়কে মনের কথা বলতে যাবো তারও এতো বড় ক্ষতি হলো৷ 

হে মাবুদ আমার মতো রাক্ষসীর বেঁচে থাকার লাভ কি। 

তোমার প্রাণ চাই তো! আমার প্রাণ নিয়ে নাও তবুও নিলয়কে বাঁচিয়ে দাও।।

|||

ইতিহাসে বাবর নিজের জানের সদকা দিয়ে হুমায়ুন কে বাঁচিয়ে ছিলো। তার দোয়া তুমি যদি কবুল করেছো আমারটাও করতে হবে??

|||

হে মাবুদ আমার জানের সদকা নিয়ে নিলয়কে বাঁচিয়ে তুলো তুমি.??


এরপর শ্রাবন্তি ঠিক করলো নিজের গলায় দড়ি দিয়ে আত্বহত্যা করবে। কিন্তু কিছুতেই ফাঁস বাঁধতে পারছিলো না সে। বাধ্য হয়ে সারা ঘরে খুজতে লাগলো এমনকিছু যা দিয়ে নিজের জানের সদকা দেওয়া যায়।


সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে ইঁদুর মারা এক শিশি বিষ খুঁজে পেলো নিলয়ের ঘরে। আর সেটাই খেয়ে নিলো শ্রাবন্তি। এরপর চোখ দুটি আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে এলো শ্রাবন্তির।


শ্রাবন্তির জ্ঞান ফিরতেই খেয়াল করলো সে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। পাশে তাকাতেই দেখলো নিলয়ের বাবা(মানে শ্রাবন্তির শ্বশুর) আর চৈতি দাঁড়িয়ে আছে।। 

সব থেকে অবাক করা বিষয় হলো বেডের সামনের চেয়ারে নিলয় বসে আছে। শ্রাবন্তি বুঝতে পারছে না সে স্বপ্নে দেখছে কিনা। নিজের হাতে চিমটি কাটতে গিয়ে দেখলো তার হাতে স্যালাইন এর নল লাগানো। তার মনের কথাটা বুঝতে পেরে নিলয় বলে উঠলো........... 


নিলয়ঃ>>তুমি স্বপ্ন দেখছো না,সব সত্যি.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>কিন্তু....(পুরোটা বলতে না দিয়ে) 


নিলয়ঃ>>কিন্তু কি


শ্রাবন্তিঃ>>তোমার তো এক্সিডেন্ট হয়েছিলো.??


নিলয়ঃ>>হ্যা..??


শ্রাবন্তিঃ>>কিন্তু তুমি তো সুস্থ। আসলে কি হচ্ছে 

আমার সাথে কিছুই বুঝতে পারছি না?? 


নিলয়ঃ>>দাড়াও বুঝাচ্ছি তোমাকে.??


এই কথা বলে নিলয় চৈতির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে। 

চৈতি ইশারার মানে বুঝে বাবার দিকে তাকায়। তারপর বলে..........


চৈতিঃ>>বাবা তোমার তো অনেক ধকল গেলো। সারারাত ঘুমাওনি। চলো চা খাইয়ে আনি??


বাবাঃ>>হ্যা চল..??


চৈতি বাবাকে নিয়ে বাহিরে চলে যেতেই নিলয় দুই হাত শ্রাবন্তিকে দিয়ে আঁকড়ে ধরলো। তারপর বললো.......


নিলয়ঃ>>এসব কি পাগলামি করছো শ্রাবন্তি? কেনো করছো এমন.? আমার সাথে থাকা কি তোমার জন্য এতই অসম্ভব যে নিজেকে শেষ করে দিতে গেছো??

তুমি যদি একটি বার আমাকে বললে আমি নিজেই ছেড়ে দিতাম তোমাকে??


শ্রাবন্তিঃ>>তুমি আমাকে ভুল বুঝছো নিলয়.? আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো। আর তাইতো..??


উত্তেজনায় শ্রাবন্তি বুঝতে পারলো না নিলয়কে সে তুমি

করে বলে ফেলেছে। শ্রাবন্তির মুখে তুমি ডাক শুনে নিলয় তো খুব অবাক। হাসি হাসি মুখে নিলয় জিজ্ঞেস করলো........


নিলয়ঃ>>কি বললে..??


শ্রাবন্তিঃ>>কই কি বললাম.??


নিলয়ঃ>>তুমি আমাকে তুমি বললে.??


শ্রাবন্তিঃ>>ওহহ সরি। খেয়াল করিনি.??


নিলয়ঃ>>এবার যদি তুমি থেকে আপনি বলো আমি কিন্তু সত্যি সত্যি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো.??


কথাটা বলার সাথে সাথে নিলয়ের মুখ এক হাতে দিয়ে চেপে ধরলো শ্রাবন্তি। আর বলতে লাগলো............ 


শ্রাবন্তিঃ>>খবরদার এসব বলবে না। কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না তোমার এক্সিডেন্ট এর কথাটা কি মিথ্যা ছিলো?? 


নিলয়ঃ>>নাহহ।। এক্সিডেন্ট হয়েছে কিন্তু গুরুতর নয়। অফিসের সিঁড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি করে নেমে বাড়ি আসছিলাম! হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যাই। পরে দুই চারজন স্টাপ আমাকে ধরে সদর হাসপাতাল নিয়ে আসে? তেমন কিছু হয়নি। শুধু গোড়ালির হাড় ফেটে গিয়েছে এক জায়গায় আর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। 

|||

জুবায়ের ফোন করে সেই খবরটা দিতে গিয়েছিলো কিন্তু বাবা সবটা না শুনে ফোন কেটে দেয়। এরপর বাবার ফোন বন্ধ পায় জুবায়ের.?? 


এতক্ষণে শ্রাবন্তি খেয়াল করলো নিলয়ের বাম পায়ে ব্যান্ডেজ। এরপর বললো.......


শ্রাবন্তিঃ>>তোমার খুব লেগেছে তাইনা.??


নিলয়ঃ>>একদম লাগেনি। ডাক্তার বলেছে ২১ দিন বেড রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে??


শ্রাবন্তিঃ>>কিন্তু একটা বিষয় বুঝলাম না আমি এখানে কিভাবে এলাম.??


নিলয়ঃ>>হসপিটাল থেকে বাসায় গিয়ে দেখি বাহিরে থেকে দরজা লাগানো। ঘরের ভিতরে ঢুকতেই দেখি তুমি ওই অবস্থায় পড়ে আছো। তারপর তোমাকে 

সবাই মিলে হসপিটালে নিয়ে আসলাম। সেই কালকে থেকে এই শরীর নিয়ে বসে আছি তোমার পাশে। 

তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও শ্রাবন্তি। তোমার এই অবস্থার জন্য আমার মা দায়ী। আমি জানি মায়ের কথায় কষ্ট পেয়ে এমনটা করছো তুমি.??


শ্রাবন্তিঃ>>উঁহু ভুল ভাবছো তুমি।। মায়ের কথায় আমি এসব করিনি। ওনার যা মনের অবস্থা ছিলো তাতে এই ব্যাপারটা স্বাভাবিক.??


নিলয়ঃ>>তাহলে কিসের রাগ ছিলো তোমার। কেনো এমন করলে শ্রাবন্তি.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>আমি ভেবেছিলাম নয়নের মতো তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছো। 

আর তাইতে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছিলাম.?? 


নিলয়ঃ>>কিন্তু আমি চলে গেলে তোমার কি 

আসে যায়.??


শ্রাবন্তিঃ>>আসে যায়.??


শ্রাবন্তিঃ>>কেনো আসে যায়.??


শ্রাবন্তিঃ>>কারন আমি ভালোবাসি তোমাকে। অনেক ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি একা থাকতে 

পারবো না তাই.??


নিলয়ঃ>>কিহহ! কি বললে তুমি..??


শ্রাবন্তিঃ>>ভালোবাসি প্রিয়💝


নিলয়ঃ>>এবার সম্ভবত আমি স্বপ্ন দেখছি.??


শ্রাবন্তিঃ>>মোটেও না। কালকে তোমাকে আমি বলতে চেয়েছিলাম। সেজে ছিলাম তোমার জন্য.?? 


নিলয়ঃ>>ওহহ শিট বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করার সুযোগ টা হারালাম কি কপাল আমার.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>তুমি কথা দাও আমাকে ছেড়ে কোথাও 

যাবে না। তাহলে এমন সুযোগ রোজ আসবে.??


নিলয়ঃ>>ইশশ এতো সহজে কে ছাড়ছে আপনাকে ম্যাডাম। তবে তুমিও আমাকে কথা দাও এমন পাগলামি আর কখনো করবে না.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>তুমি পাশে থাকলে করবো না.?? 


নিলয়ঃ>>গুড গার্ল.??


শ্রাবন্তিঃ>>শোনো.??


নিলয়ঃ>>কি.??


শ্রাবন্তিঃ>>আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে.??


নিলয়ঃ>>ওলে বাবা কি মিষ্টি আবদার.?? 


কথাটা বলেই শ্রাবন্তিকে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে নেয় নিলয়। এমন সময় চৈতি আর নিলয়ের বাবা এসে হাজির। ওদের এই অবস্থায় দেখে নিলয়ের বাবা লজ্জা পেয়ে দরজার কাছ থেকে সরে যায়। আর চৈতি দুই হাতে মুখ ঢেকে বললো.........


চৈতিঃ>>ইশশশ ভুল সময়ে এন্ট্রি নিয়েছি.??


চৈতির কথায় লজ্জা পেয়ে দুজন দুজনকে ছেড়ে দিলো।

এরই মধ্যে কয়েকটি দিন কেটে গিয়েছে। নিলয় এখন অনেকটা সুস্থ। আগামী সাপ্তাহে ব্যান্ডেজ কাটতে যাবে সে। এই কয়েকটা দিন প্রাণপাত করে সেবা করেছে নিলয়ের। এক কথায় শ্রাবন্তির সেবার কারনে দ্রুত সুস্থ হয়ে গেছে নিলয়। তবে এসব একদম ভালো লাগছে না খুশি বেগমের। এই মেয়েকে তিনি তাড়াতে চেয়েছেন।। কিন্তু স্বামী আর ছেলে মেয়ের কারনে পেরে উঠছেন না।


সন্ধ্যা বেলায় পান চিবুচ্ছিলেন আর সেই সবই ভাবছেন খুশি বেগম। হঠাৎ বোন আমেনা বেগমের ডাকে ভাবনায় ছেদ ঘটে তার.......


আমেনা বেগমঃ>>কিরে আপা কি ভাবছিস..??


খুশি বেগমঃ>>না কিছু না..?? 


আমেনা বেগমঃ>>বলেছি কি অনেকদিন হয়ে গেছে এসেছি। আদিল এর আব্বু(আমেনা বেগমের স্বামী) চলে যেতে বলেছে। এখন কি করবো.??


খুশি বেগমঃ>>তুই বরং চলেই যা.?? এমনিতেও তোকে দিয়ে কোনো কাজের কাজ হয়নি আমার। ওই মেয়ে দিব্যি আরামে সংসার করছে। সেই সাথে আমার স্বামী ছেলে মেয়েকে হাত করে নিয়েছে। ওকে এ বাড়ি থেকে তাড়াতে পারিস নি তুই.?? 


আমেনা বেগমঃ>>আরে সেই ব্যাবস্থা ভেবে ফেলেছি। তোর সাথে পরামর্শ করতে আসা। বাড়িতে যাওয়ার আগে কাজ সেরেই যাবো.?? 


খুশি বেগমঃ>>আর বড় বড় কথা বলিস না.??


আমেনা বেগমঃ>>মোটেও বড় বড় কথা বলছি না।। যা একটা বুদ্ধি এঁটেছি ওই মেয়েকে পৃথিবী থেকে তাড়িয়ে দিবো। কাঁকপক্ষীও টের পাবে না.?? 


খুশি বেগমঃ>>তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে আমেনা। কিসব যা তা বলছিস.??


আমেনা বেগমঃ>>যা তা কেনো হবে আপা। ওকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলে আমাদের লাভ ছাড়া 

ক্ষতি হবে না.?? 


খুশি বেগমঃ>>দেখ মেয়েটাকে আমি পছন্দ করি না ঠিক আছে। কিন্তু মানুষ খুন করবো কেনো। তাছাড়া মানুষ জানাজানি হলে কোমড়ে দড়ি পড়বে৷ সেই খেয়াল আছে তোর.?? 


আমেনা বেগমঃ>>আরে নাহ তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো। আমার কাছে ভালো একটা প্ল্যান আছে তুই আগে শুনেই দেখ.??


খুশি বেগমঃ>>কিন্তু..?? 


আমেনা বেগমঃ>>কোনো কিন্তু না। তুই শোন! ওই মেয়ে প্রতিদিন সবার আগে ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরে যায়.??


খুশি বেগমঃ>>হ্যা যায়.??


আমেনা বেগমঃ>>আমাদের বেশি কিছু করতে হবে না.।

শুধু রাতে ঘুমানোর আগে গ্যাসের পাইপ টা লিক করে আসবো। সারারাত রান্না ঘরে একটু একটু করে গ্যাস ছড়াবে। সকালে গ্যাস অন করতেই ওর ভাবলীলা সাঙ্গ।

|||

এতো ভোর বেলায় তো কেউ উঠে না। আর নিলয়ের পক্ষেও ওই পা নিয়ে দ্রুত ছুটে আসাও সম্ভব নয়। 

সবাই এটাই ভাববে অসাবধানবশত আগুন লেগে 

মারা গিয়েছে..??

সব সময়তো গল্প শুনাই। পাঠক পাঠিকা মন দিয়ে শুনুন আজ একটা কথা বলি..উপরে যেই লেখাটা দেখছেন এটা লিখতে আমারো মনের ভিতর কষ্ট হয়েছে। কারন এমন ঘটনা বাংলাদেশে হয়েও থাকে। হয়তো আপনার চোখের আড়ালে নয়তো আমার৷ তবে এমনটা হয় এটাই সত্যি.....

~

আজ আপনি যেই স্থানে আছেন! গতকালকে আপনার মা ও শ্বাশুড়ি সেই স্থানে ছিলো। আজ আপনার মা ও শ্বাশুড়ি যেই স্থানে আছে! আগামী কালকে আপনাকে সেই স্থানে যেতে হবে। সুতরাং ভালো কিছু করার চেষ্টা করবেন, তাহলে ভালো কিছু পাবেন।

~

আপনার মেয়েকে যেমনটা সুখী দেখতে চান তার শ্বশুর বাড়ি, ঠিক তেমনই অন্য একজন মা সুখী দেখতে চায় তার মেয়েকে আপনার বাড়ি। কথা গুলো সব সময় মনে রাখবেন। একদিন হয়তো আমি থাকবো না,কিন্তু লেখা গুলো সারাজীবন রয়ে যাবে গল্পের পাতায়........

 

~~~

বোন আমানে বেগমের উপরের কথাগুলো শুনে খুশি বেগম বলে উঠলো........... 


খুশি বেগমঃ>>এসব না করলে হয় না.?? 


আমেনা বেগমঃ>>একটা কথা ভালো করে শুনে রাখ আপা। আজকে ওই মেয়ে তোর স্বামী আর ছেলে মেয়েকে হাত করেছে। একদিন এমন একটা সময় আসবে দেখবি গোটা সংসার হাত করে নিবে। আর সেদিন তোর কোনো জায়গা থাকবে না এই সংসারে।

এখন তুই যদি না চাস তাহলে দরকার নেই এসবের.?

*

আমেনা বেগমের মতো কিছু মহিলার কারনে একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। সাথে সাজানো একটা সংসার। 


আমেনা বেগমের কথা শুনে তার বড় বোন খুশি বেগম বলে উঠলো......... 


খুশি বেগমঃ>>না না আমার সংসার আমি কখনে কারো হাতে যেতে দেবো না.??


খুশি বেগমের কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে খুশি বেগম সারাজীবন পৃথিবীতে রাজত্ব করবেন। অথচ তিনি ভুলে গেছেন তিনি স্বল্প সময়ের দুনিয়ায় একজন সাধারন যাত্রী। সবকিছু রেখে খুব দ্রুতই ফিরে যেতে হবে মহান রবের কাছে। 


খুশি বেগমের কথা শুনে তার বোন আমেনা বেগম বলে উঠলো............ 


আমেনা বেগমঃ>>তাহলে রাজি হয়ে যা.??


খুশি বেগমঃ>>ঠিক আছে যা ভালো বুঝিস তাই কর.? 


এই কথাটা বলেই খুশি বেগম দরজার দিকে তাকালেন। 

এমন সময় তিনি খেয়াল করলেন দরজার আড়াল থেকে একটা ছায়া সরে গেলো। গলাটা শুকিয়ে গেলো খুশি বেগমের! কিছুটা অপরাধবোধ আর কিছুটা চিন্তায়। খুশি বেগম কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলে উঠলেন.....


♥__গল্পঃ_অপয়া__পর্ব_১০_ও_শেষ_পর্ব_♥

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


এই কথাটা বলেই খুশি বেগম দরজার দিকে তাকালেন। 

এমন সময় তিনি খেয়াল করলেন দরজার আড়াল থেকে একটা ছায়া সরে গেলো। গলাটা শুকিয়ে গেলো খুশি বেগমের! কিছুটা অপরাধবোধ আর কিছুটা চিন্তায়। খুশি বেগম কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলে উঠলেন.....


খুশি বেগমঃ>>না থাক দরকার নেই.?? 


আমেনা বেগমঃ>>আবার কি হলো.?? 


খুশি বেগমঃ>>মনে হয় আমাদের কথা কেউ শুনে ফেলেছে। পর্দার আড়াল থেকে আমি একটা ছায়া

সরে যেতে দেখেছি.?? 


আমেনা বেগমঃ>>আরে ধুরর কেউ শুনলে বাইরে 

থেকে চলে যেতো নাকি। তোর মন দুর্বল হয়ে 

আছে তাই এমন দেখছিস.??


খুশি বেগমঃ>>হবে হয়তো.?? 


আর কোনো কথা বাড়ালেন না খুশি বেগম। সারাদিনের সব কাজের পর,রাতে সবাইকে খেতে দিয়ে,রান্না ঘরের 

সব কাজ সেরে সবে মাত্র নিলয়ের খাবার নিয়ে ঘরে এসেছে শ্রাবন্তি।। এই কয়েকদিনে সংসারের সব কাজ তুলে নিয়েছে নিজের ঘাড়ে। 


এদিকে শ্রবান্তি রান্না ঘর থেকে বের হতেই প্ল্যান মাফিক কাজ সেরে নিলো দুই বোন। যদিও খুশি বেগমের মনে সংশয় কাজ করছে কিন্তু বোনের কাছে সে অসহায়। আর যাইহোক না কেনো বোন তো তার ভালোর জন্যই এসব কিছু করছে। 


ঘরে এসে শ্রাবন্তি দেখলো নিলয় বসে বসে মোবাইলে গেমস খেলছে।। শ্রাবন্তি গিয়ে হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিলো। তারপর রাগী গলায় বললো.......


শ্রাবন্তিঃ>>ঘরে বসে আছো বলে কি এই যন্ত্রটা ব্যাবহার করতে হবে এমন কোনো কথা আছে। 

কোরআন/হাদিস পড়তে পারো,নয়তো গল্পের বউ পড়তে পারো। তা না করে কিসব আজে বাজে গেমস। ওসব রেখে খাবার খেয়ে নাও..??


নিলয়ঃ>>তুমি খাইয়ে দাও.??


শ্রাবন্তিঃ>>ফ্র্যাকচার টা পায়ে হয়েছে হাতে নয়। সেটা মনে আছে তো.??


নিলয়ঃ>>তো.? আমার বউয়ের হাতে আমি খাবো। কোন শালা কি বলবে.?? 

 

শ্রাবন্তিঃ>>ইশশ মুখের কি ভাষা.??


নিলয়ঃ>>তাতে কি হয়েছে। নিজের বউয়ের সামনেই তো বলছি। আর তাছাড়া তোমার ভাই তো আমার শালা। শালা খারাপ ভাষা না। শালা আদরের ডাক.?


শ্রাবন্তিঃ>>হয়েছে হয়েছে আর ভাষা চর্চা করতে হবে না। নাও তো হা করো.?? 


নিলয়ঃ>>তুমি খাবে না.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>আগে খেয়ে নাও। খেয়ে ঘুমাও তারপর খাবো.?? 


নিলয়ঃ>>উঁহু। আমার সাথে খেতে হবে।। এবং এই 

প্লেট থেকেই খাবে। কারন খাওয়ার নাম করে তুমি আরো দেরি করবে। আমার আবার বউকে জড়িয়ে 

না ধরলে ঘুম হয় না.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>তাই বুঝি.??


নিলয়ঃ>>হুমম তাই.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>যদি কখনো আমি না থাকি তখন কি করবে তুমি.? এতোটা নির্ভরশীল হইও না আমার উপর। যদি আমি না থাকি তোমাকে তো বাঁচতে হবে.??


নিলয়ঃ>>তুমি আবার কোথায় যাবে.??


শ্রাবন্তিঃ>>কোথায় আর যাবো, মানুষের হায়াতের 

কথা বলা যায়। আজ আছি কাল নেই.?? 


নিলয়ঃ>>একদম চুপ। আবার যদি এসব কথা বলছো তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। আর আমার আল্লাহ পরম দয়ালু, অসীম করুনাময়। আমার তার উপর ভরসা আছে। তিনি এতো সহজে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিবেন না..?? 


কথা গুলো বলতে বলতে গলাটা ধরে এলো নিলয়ের। চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। নিলয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে শ্রাবন্তি বললো........


শ্রাবন্তিঃ>>ধুরর। এই পাগল, আমি এখনো মরিনি.??


দুজনের খাবার খাওয়া শেষ হতেই প্লেট নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো শ্রাবন্তি। মৃত্যুর কথা কেনো মনে হলো সে নিজেও জানে না। তবে তার মনের ভিতর কেমন যেনো কু ডাকছে। মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে৷ 


পরের দিন সকাল বেলা শ্রাবন্তির ঘুম ভাঙতেই দেখলো নিলয় তাকে জড়িয়ে ধরে শান্তি মতো ঘুমাচ্ছে। নিলয়ের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো সে। তারপর ওজু করে নামাজ পড়ে নিলো। 


ফজরের নামাজ পড়ে শ্রাবন্তি উঠে যাচ্ছিলো সকালের কাজের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ করেই কোরআন শরীফের দিকে নজর গেলো তার। খুব ইচ্ছে হলো তিলাওয়াত করার। নিলয়ের ঘুম সবেমাত্র ভেঙেছে, শ্রাবন্তির মিষ্টি সুরের তিলওয়াত শুনে। শ্রাবন্তির তিলওয়াত শুনতে 

খুব ভালো লাগছে তার৷ ঘুম ঘুম স্বরে নিলয় বললো....


নিলয়ঃ>>বাহহ শ্রাবন্তি তুমি তো খুব সুরালো গলায় কোরআন তিলওয়াত করো.??


শ্রাবন্তিঃ>>হুমম। আমার নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে সুর করে কোরআন তিলওয়াত

করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়.??


নিলয়ঃ>>এই হাদিসটা তো আমি জানতাম-ই না। 

আর তাছাড়া তোমার তিলওয়াত শুনতে ইচ্ছে 

করছে আরো.??


শ্রাবন্তিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি যখন উঠে পড়েছো

তোমার চা বানিয়ে আনি। চা খেতে খেতে তিলওয়াত শুনলে আরো ভালো লাগবে.??


এই কথাটা বলে শ্রাবন্তি রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো।।

রান্না ঘরে গিয়ে চুলায় পানি বসিয়ে সবে মাত্র গ্যাস অন করতে যাবে শ্রাবন্তি। ঠিক তখনই তার শ্বশুর ডাক দিয়ে বলতে লাগলো......


শ্বশুরঃ>>বৌমা.??


শ্রাবস্তিঃ>>হ্যা বাবা চা খাবেন তো.? দাঁড়ান গ্যাস অন করে আসতেছি.??


শ্বশুরঃ>>না বৌমা। তুমি গ্যাস অন করিও না.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>কেনো বাবা.??


শ্বশুরঃ>>দাঁড়াও বলছি। তার আগে অন্যদেরকেও ডাকি.??


নিলয়ের বাবা এই কথাটা বলেই চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে লাগলেন। ডাক শুনে চৈতি, নিলয় সবাই ছুটে এলো। নিলয় ক্রেসে ভর দিয়ে কোনোমতে আসতে পেরেছি। তবে এসেই ডাইনিও এর চেয়ারে বসে পড়লো


এদিকে খুশি বেগম আর আমেনা বেগম নিশ্চিত হয়েছে নিশ্চয়ই শ্রাবন্তির গায়ে আগুন লেগেছে তাই তারাও ছুটে এলো৷ কিন্তু এসে শ্রাবন্তিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হকচকিয়ে গেলো দুই বোন।। নিলয় আর চৈতি হা করে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। জন্ম থেকে

দেখে এসেছে তাদের বাবা শান্তশিষ্ট মানুষ। সবকিছু সমঝোতায় মিটিয়ে নেন। সেই মানুষটাকে এভাবে চেচাতে দেখে দুজনেই অবাক.।। বিস্মিত গলায় নিলয় তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো..........


নিলয়ঃ>>বাবা কি হয়েছে তোমার। তুমি তো এভাবে চেঁচামেচি করো না.?? 


বাবাঃ>>কি হয়েছে সেটা তোর মা আর খালাকে জিজ্ঞেস কর,তাহলে সব বুঝবি। আমি এক্ষুনি পুলিশকে ফোন দিবো.??


নিলয়ঃ>>কিন্তু কেনো বাবা! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। হয়েছে টা কি? মা তুমি কি কিছু জানো?? 


ভয়ে একপাশে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে খুশি বেগম আর আমেনা বেগম। খুশি বেগম আমতা আমতা করে উত্তর দিলেন.........


খুশি বেগমঃ>>ক..কই..না..না তো.??


নিলয়ঃ>>বাবা তুমি প্লিজ বলবে। এভাবে রহস্য না করে.??


বাবাঃ>>কি হয়েছে শুনলে অবাক হয়ে যাবি। তোর মা আর খালা বৌমাকে খুন করার ব্যাবস্থা করে রেখেছে?


কথাটা শোনা মাত্রই শ্রাবন্তি,নিলয়, চৈতি ৩ জনে অবাক হয়ে গেলো। অনেকটা অবাক হয়ে নিলয় বলে উঠলো... 


নিলয়ঃ>>কি যা তা বলছো বাবা। তোমার মাথা ঠিক আছে.?? 


বাবাঃ>>আমি ঠিকই বলছি। কাল রাতে দুই বোন মিলে গ্যাসের পাইপ লিক করে রেখেছে। যাতে বৌমা গ্যাস অন করা মাত্রই গায়ে আগুন লেগে মারা যায়.? কি বৌমা তুমি রান্না ঘরে গ্যাসের গন্ধ পাওনি.??


শ্রাবন্তিঃ>>হ্যা একটু গন্ধ পেয়েছি,কিন্তু....??(পুরোটা বলতে না দিয়ে)


বাবাঃ>>কোনো কিন্তু নয়।। এসব আমি কালকে রাতে শুনেছি। ভেবেছিলাম খুশি তার বোনের কথায় রাজি হবে না। ২৭ বছরের সংসার জীবনে এটুকু বিশ্বাস 

তার উপর ছিলো। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গেলাম একটা ভুল মানুষের সাথে এতো বছর সংসার করেছি আমি। ছিহহ..??


নিলয়ঃ>>বাবা যা বলেছে তা কি সত্যি মা.? তুমি কি সত্যিই এই জঘন্য কাজটা করেছো মা.??


খুশি বেগম চুপ করে আছেন,একটা কথাও বলছেন না। 

আজ নিজের মানুষের কাছে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন তিনি। পাশ থেকে আমেনা বেগম উত্তর দিলেন...........


আমেনা বেগমঃ>>মোটেও না। আপনার কাছে কি প্রমান আছে দুলাভাই.??


বাবাঃ>>প্রমাণ.? প্রমাণ লাগবে.? ঠিক আছে এখন তুমি নিজে গ্যাস জ্বালিয়ে প্রমাণ করবে আমি ভুল.?? 


কথাটা শুনে আমেনা বেগম দই কদম পিছিয়ে গেলেন। তারপর বললেন..........


আমেনা বেগমঃ>>আ..আমি কেনো জ্বালাবো। আমি পারবো না। আপা তুই কিছু বল..??


পাশ থেকে খুশি বেগম উত্তর দিলেন....... 


খুশি বেগমঃ>>হ্যা নিলয়ের আব্বা তুমি যা বলছো সব সত্যি। আমরা শ্রাবন্তিকে মারতে চেয়েছিলাম.??


কথাটা শুনতেই নিলয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। 

আর কোনো কথা বললো না সে। নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশ থেকে নিলয়ের বাবা বলে উঠলেন.......


বাবাঃ>>আমি এক্ষুনি পুলিশকে ফোন করছি.?? 


পাশ থেকে শ্রাবন্তি বলে উঠলো....... 


শ্রাবন্তিঃ>>বাবা পুলিশ না ঢেকে ঘরের ব্যাপার টা ঘরেই মেটান.? পুলিশ ঢুকলে বাড়ির সম্মান থাকবে.? আর তাছাড়া আমার কোনো অভিযোগ নেই মায়ের উপর৷ কোনো মায়ে চাইবে না তার ছেলে একটা বিধবা অপয়া মেয়ে নিয়ে সংসার করুক। আমি মা হলে হয়তো আমিও চাইতাম না। 

|||

আর আমি এখানে আসার পর থেকে আপনি, আপনার ছেলে, চৈতি আমাকে দিয়েছে সেটাই তো আমার জন্য অনেক বেশি.? আপনি মাকে একদম দোষ দিবেন না। বরং আপনার ছেলে সুস্থ হলে আমি নিজেই চলে যাবো।

মায়ের অমতে আমি সংসার করতে চাই না বাবা.??


শ্রাবন্তি কথাগুলো শেষ করতেই নিলয় বলে উঠলো...... 


নিলয়ঃ>>শ্রাবন্তি আর একটা কথা বললে এই মুহুর্তে তোমাকে আমি তালাক দিবো.??


নিলয়ের কথা শুনে শ্রাবন্তি চুপ হয়ে গেলো। নিলয় আবার বলতে লাগলো......


নিলয়ঃ>>যেই বাড়িতে আমার বউয়ের প্রাণের নিরাপত্তা নেই। সেই বাড়িতে থাকবো না আমি। তোমার সংসার নিয়ে তুমি থাকো মা.? আমার বউকে নিয়ে আজকেই আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো.?? 


শ্রাবন্তিঃ>>তুমি কি পাগল হলে। আমি কোথাও 

যাবো না.??


নিলয়ঃ>>ঠিক আছে তুমি যেতে না চাইলে আমি একাই যাবো। তবে মনে রেখো শ্রাবন্তি এই মুহুর্তে তুমি আমার সাথে না বের হলে সারাজীবনের জন্য আমাকে হারাবে? 


এই কথা বলে নিলয় নিজের ঘরে চলে গেলো। শ্রাবন্তিও অনুসরণ করলো নিলয়কে। এতো বড় কথা বলার পর তো আর কিছু করার থাকে না। 


এদিকে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন খুশি বেগম।।আজ তার কোনো কিছু বলার মতে ভাষা নেই। নিজের একটা ভুলের জন্য সবাই আজকে তার বিরুদ্ধে কথা বলছে। হুট করে চৈতি বলে উঠলো..........


চৈতিঃ>>ছিহহ মা। আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে 

তুমি এসব করেছো.??


এই কথা বলেই নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো চৈতি। চৈতি চলে যেতেই নিলয়ের বাবা আমেনা বেগম এর কাছে এসে বললেন.........


বাবাঃ>>এই মুহুর্তে তুমি আমার সংসার ছেড়ে চলে যাবে। আর যদি এই বাড়িতে পা দিয়েছো তাহলে তোমার স্বামীকে এসব জানাতে বাধ্য হবো আমি??

|||

কালেমা পড়ে তোমার বোনকে বিয়ে করে তার দায়িত্ব নিয়েছিলাম আমি। এই বয়সে তো তালাক দিয়ে লোক হাসাতে পারবো না। তবে আর কোনোদিন তাকে 

ভালোও বাসতে পারবো না। কিন্তু তোমাকে আর চোখের সামনে দেখতে চাই না আমি.??


স্বামী কথাটা বলেই চলে গেলো। স্বামী চলে যেতেই খুশি বেগম ধপপ করে ফ্লোরে বসে পড়লেন। এক লহমায় তার প্রিয়, চেনা মানুষ গুলো পর হয়ে গিয়েছে। অথচো তাদের জন্যই শ্রাবন্তি মেয়েটাকে তাড়াতে চেয়েছিলেন। লজ্জায়, ঘৃণায়,অনুশোচনায় তার চোখ দিয়ে অনবরত বৃষ্টি নামছে। 


সাতশত ত্রিশ দিন, মানে দুই বছর। হ্যা গুনে গুনে দুইটা বছর নিজের বাড়িতে পা রাখেনি নিলয়। সেই সাথে নিজের মায়ের সাথে কথা পর্যন্ত বলেনি। সেদিন শ্রাবন্তিকে নিয়ে ওই অবস্থায় বের হয়ে যায় নিলয়। সেদিন কারো কোনো কথায় টলেনি সে।। তবে এই দুই বছরে বাবা মায়ের প্রতি কর্তব্যে ক্রুটি রাখেনি। ঠিক সময়ে সংসার খরচ সহ যখন যা লাগতো পাঠিয়েছে।।


শ্রাবন্তি অবশ্য অনেকবার নিলয়কে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু নিলয় শোনেনি। 


এই দুই বছরে পুত্র শোক আর অনুশোচনায় ক্রমশ দগ্ধ

হয়েছেন খুশি বেগম।। শুধু তাই নয়, নিজের চোখে বোনের পরিণতি দেখেছেন তিনি।। আমেনা বেগমের ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন বছর দেড়েক।।এরই মধ্যে শ্বাশুড়ি মাকে কোণঠাসা করে ফেলেছে তারই পছন্দ করে আনা ছেলের বউ।।


শ্রাবন্তির অবশ্য ননদ আর শ্বশুরের সাথে সবসময় কথা বার্তা হয়৷। এই দুই বছরে সুখ উপচে পড়ছে শ্রাবন্তি আর নিলয়ের ছোট সংসার-টায়। সেই সংসারে আসতে চলেছে নতুন একজন অতিথি। শ্রাবন্তি মা হতে চলেছে। ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। শ্রাবন্তি এখন নিজের হাতে কিছুই করতে পারে না। তাই শ্রাবন্তির মা আর সৃতি থাকে শ্রাবন্তির কাছে। সৃতি আর তামিমকে অবশ্য 

মেনে নিয়েছে বাড়ির সবাই। মাস ছয়েক আগে বেশ ভালো বেতনের একটা চাকরিও জোগাড় করেছে তামিম। তাদের এখন একটাই চাওয়া। সৃতির কোল আলো করে আসুক একটা সন্তান। তবেই তাদের ষোলকলা পূর্ণ হয়। সৃতি অবশ্য বলেছে আগে আপার বাচ্চাটা মানুষ করে দিবে তারপর নিজেরটার চিন্তা.।।


এদিকে নিলয়ের সন্তান আসার খবর চৈতির কাছ থেকে জেনেছেন খুশি বেগম। কথায় আছে আসলের ছেয়ে সুদের দাম বেশি। ঠিক তেমনই নিলয়ের চেয়ে নিলয়ের সন্তানকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেশি হয় খুশি বেগমের।। ছোট ছোট কয়েকটা কাঁথা সেলাই করেছেন তিনি। আজকাল স্বামীর পিছনে লেগে থাকেন ওই বাড়িতে কাঁথা গুলো দিয়ে আসার জন্য। ভদ্রলোক অবশ্য স্ত্রীর এমন পরিবর্তনে অনেক খুশি। শুধু ছেলেটা যদি বুঝতো। 


নিলয়ের মঝেও আজকাল বাবা বাবা অন্যরকম একটা ভাব এসেছে। আহারে কবে যে আমারো বাবা হওয়ার একটা ভাব আসবে😭 বিয়েই তো করতে পারিনি বাবা হবো কিভাবে😫। নিজের অনাগত সন্তানের জন্য হাজারটা চিন্তা হয় তার। শ্রাবন্তি আজকাল কিছু খেতে পারে না, তবুও সন্তানের কথা ভেবে জোর করে খায়।। 

তাছাড়া বাচ্চার জন্য ঠিক মতো ঘুমাতেও পারে না।।


শ্রাবন্তিকে দেখে নিলয়ের আজকাল বড্ড বেশি মায়ের কথা মনে পড়ে। তার মাও ঠিক এভাবে তাকে দুনিয়ার মুখ দেখিয়েছে। ইচ্ছে করে মায়ের কাছে চলে যেতে৷ কিন্তু ওই ইগো! ওটাই তো বাঁধা দেয়। 


শ্রাবন্তির আজ ডেলিভারি।। খুব সুন্দর ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছে সে। একদম নিলয়ের মতো ফর্সা আর মায়াকারা মুখ হয়েছে ছেলেটার৷ 

শ্রাবন্তির মা বাচ্চাকে কোলো নিয়ে বসে আছে। আর ঠিক পাশের বেডে শুয়ে আছে শ্রাবন্তি। নিলয় ঠিক 

তার পাশেই বসে আছে শ্রাবন্তির হাতটা ধরে। ওটিতে নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক মহুর্তের জন্য শ্রাবন্তিকে হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছিলো তার।। তাই শ্রাবন্তিকে বেডে দেওয়ার পর থেকেই হাত ধরে বসে আছে সে।। 

এমন সময় স্বামী আর মেয়ের সাথে শ্রাবন্তির রুমে ঢুকলেন খুশি বেগম। মাকে দেখে নিলয় উল্টো দিকে ফিরে রইলো। সব লাজ লজ্জা ভুলে ছেলের কাঁধে হাত দিলেন খুশি বেগম। তারপর বললেন...........


খুশি বেগমঃ>>মাকে আর কত কষ্ট দিবি বাবা। আমার দাদু ভাইয়ের জন্য কি ক্ষমা করা যায় না.?? 


নিলয় আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।পিছনে ঘুরে জড়িয়ে ধরলো মাকে। তারপর সেই ছোট্ট বেলার মতো কাঁদতে লাগলো। মা ছেলের অভিমানের পালা বুঝি এতোদিনে শেষ হলো। শ্রাবন্তির চোখেও পানি। তারপর খুশি বেগম ধীর পায়ে শ্রাবন্তির কাছে এগিয়ে গিয়ে বসলেন। তারপর বললেন......... 


খুশি বেগমঃ>>মা রে, অপয়া বলে তোকে আমি অনেক অপমান করেছি। কিন্তু আজ বুঝেছি তুই আমার ঘরের লক্ষী৷ আমাকে মাফ করে দে মা। তবুও দাদু ভাইকে আলাদা করিস না আমার থেকে। ওকে নিয়ে ফিরে চল। কথা দিচ্ছি অভিযোগের সুযোগ দিবো না.?? 


তারপর শ্রাবন্তির মায়ের কাছ থেকে নিলয়ের ছেলেকে কোলে তুলে নিলেন নিলয়ের মা। নাতিকে দেখে চমকে উঠলেন তিনি। ঠিক নিলয়ের ছোট বেলার মুখটা বসানো। নাতির মুখ দেখে তিনি বলতে লাগলেন........


খুশি বেগমঃ>>দাদু ভাইয়ের তো নাম রাখা লাগবে.??


পাশ থেকে চৈতি উত্তর দিলো.........


চৈতিঃ>>ওর নাম আমি ঠিক করে রেখেছি। ওর নাম হবে চাঁদ। ফুফির চাঁদ..??


 চৈতির কথা শুনে মুখ বেঁকিয়ে সৃতি বলে উঠলো....... 


সৃতিঃ>>এই যে বেয়ান সাহেব, এই কয়েকটা মাস কষ্ট করলাম আমি আর নাম হবে আপনার সাথে মিলিয়ে! মোটেও না। ওর নাম হবে খালামনির সাথে মিলিয়ে 

ওর নাম হবে সোহেল.?? 


চৈতিঃ>>না চাঁদ.??


সৃতিঃ>>না না সোহেল.?? 


চৈতিঃ>>চাঁদ.?? 


সৃতিঃ>>সোহেল.??


এভাবে খুন শুটিতে মেতে উঠলো পুরো পরিবার।। আজ 

যে তাদের খুশির দিন। দোয়া করবেন সারাজীবন যেনো ভালো ভাবে বাকি দিন গুলো কাটাতে পারে দুজনে......


যথেষ্ট রিসপেন্স ফেলে নেক্সট স্টোরি দ্রুত শুরু করবো। 

        ___________সমাপ্ত________


পর্রবের আরও গল্প পড়ুন।