খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প
--- ম্যাডাম ডিভোর্সের কারণ হিসেবে কি লিখবো? আপনার হাজবেন্ড আপনার ওপর শারিরীক টর্চার করেন নাকি পরকীয়া প্রেম?
--- কিছুই না ।
--- কিছুই না? ম্যাডাম তা'হলে লিখি আপনার শ্বশুরবাড়ির লোক আপনার ওপর টর্চার করে?
--- নাহ্ ।
--- তা'হলে কীভাবে ডিভোর্স হবে ম্যাডাম?
--- লিখুন আমরা আর সম্পর্ক এগোতে পারছিনা । তাই ডিভোর্স চাই ।
--- কিন্তু ম্যাডাম এটা তো স্ট্রং কারণ না । স্ট্রং কারণ ছাড়া তো ডিভোর্স সম্ভব না ।
--- আপনি লিখুন । আমার হাজবেন্ড এর ওপর তো আমি অযথা দোষারোপ করতে পারবো না । আমরা আমাদের সম্পর্ক এগোতে পারছি না , চাইছি না জন্য আলাদা হতে চাইছি ।
--- ডোন্ট মাইন্ড ম্যাডাম আপনাদের কি এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিলো?
--- নাহ্ লাভ ম্যারেজ ।
--- লাভ ম্যারেজ?
--- জ্বী । চার বছর সম্পর্কের পর আমরা বিয়ে করি এবং সাড়ে সাত বছর সংসার আমাদের ।
--- ম্যাডাম এতদিন পর ডিভোর্স?
--- জ্বী ।
আনোয়ার শেখ এবার সোজা হয়ে বসলেন । চশমা টা ঠিক করে মনযোগী হয়ে তাকালেন তার সামনে বসে থাকা নারীটির দিকে । ছিপছিপে , মাঝারি গড়নের উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের সে । পরণে বেগুনী রঙা একটা শাড়ি তার সাথে ঢিলেঢালা একটা বেণী , সাজগোজ খুব সাধারণ আর হাতে কালো চামড়ার একটা ঘড়ি ব্যাস! ওহ্ একটা কালো চামড়ার ব্যাগও সে কোলের ওপর নিয়ে বসে আছে । সাজগোজ কিংবা মুখের নকশা দেখে মনে হচ্ছে রুচিশীল একজন মানুষ আর বেশ টাকাপয়সা ওয়ালা । এত মায়াবী মেয়েটার কি এমন হলো সে ডিভোর্স চাইতে আসলো? এসব নানাকিছু ভাবনা মাথায় আসলো আনোয়ার সাহেবের । হালকা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে উনি ক্লায়েন্ট কে জিজ্ঞেস করলেন_
--- ম্যাডাম আপনি যদি মাইন্ড না করেন তা'হলে একটা প্রশ্ন করতে পারি কি?
--- জ্বী বলুন? আর আমাকে ম্যাডাম বলার দরকার নেই আমার নাম রুশরা । রুশরা বলেই ডাকতে পারেন ।
--- রুশরা মা আপনি আমার মেয়ের বয়সী হবেন । মা আপনি খুব মায়াবী । এমন মায়াবী মানুষের জীবনে দুঃখের ছায়া নামার কারণ কি জানতে পারি মা? আপনি আমাকে আপন ভেবে বলতে পারেন । যদি আমি সমস্যা সমাধান করতে পারি? এবারে একটু নড়েচড়ে বসলো রুশরা নামক নারীটি ।
--- বুঝতে পারছি না কোথা থেকে শুরু করবো ।
--- আপনি শুরু থেকেই শুরু করুন মা কোনো সমস্যা নেই ।
--- তা'হলে আমার ছেলেবেলার কাহিনী থেকেই শুরু করি?
--- আচ্ছা ।
.
একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো সে_
.
আমার বাবা'র বাড়ি রংপুরে । রংপুরের স্থানীয় মানুষ আমরা। আমার ছোট চাচা রাজনীতি করতেন এবং সেই সুবাদে আমাদের খুব নামডাক এলাকায় । আমাদের যৌথ পরিবার , সেই সুবাদে ভাইবোন সংখ্যা মোটামুটি অনেক । ফুপিরাও আমাদের সাথেই থাকতেন । তো সব ভাই বোনের মধ্যে আমি সবচাইতে ছোট এবং আমার বাবা'র একমাত্র মেয়ে । বাবা মা অনেক কষ্টের পর আমাকে পেয়েছেন । এক মেয়ে এবং সবার ছোট হিসেবে আমি ছিলাম সবার চোখের মনি ।
আমি মুখ দিয়ে বলার আগেই সবকিছু হাজির হয়ে যেত আমার সামনে । এতো এতো আদর থাকা সত্বেও আমার মধ্যে উড়নচণ্ডী স্বভাব টা আসলো না ।এই ব্যাপারটায় সবাই অবাক আবার গর্ববোধ করতে থাকলো । আমি পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলাম , স্কুলে সবসময় প্লেসের মধ্যেই থাকতাম । ভালো স্টুডেন্ট , সাহসীকতা এবং ভদ্রতার কারণে আমার নামডাক ছিলো পাড়ায় । বন্ধু বান্ধবের মায়েরা আমাকে দিয়ে সবসময় তুলনা করতো এ নিয়ে বন্ধু মহলে অনেকেই আমাকে পছন্দ করতো না । আমি ওসব আমলে নিতাম না ।
আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো এবং সে ছিলো আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ । কারো কথা আমলে না নিলেও ও যদি একবার আমার সাথে অভিমান করতো তা'হলে আমার পৃথিবী থমকে যেত! আমি অশান্ত হয়ে উঠতাম , বুঝতে পারতাম না আমার এখন কি করা উচিৎ? ও অবশ্য বেশি রেগে থাকতো না তবে ওর যখন রাগ ভাঙতো তখন আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম ।
ও খুব হাসতো হেসে বলতো _
--- " এখন যে খুব কাঁদছিস , যখন আমার বয়ফ্রেন্ড হবে বা তোর বয়ফ্রেন্ড হবে তখন তো ভুলেই যাবি । এরকম পাগলামি করতে পারবি না ।"
আমি আরো কেঁদে ফেলতাম ,বলতাম_
--- " ওরকম দিন কখনোই আসবে না । "
কিন্তু ওরকম দিন আসলে আসলো জীবনে। ক্লাস নাইনে ওর একটা বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেলো ওর বয়ফ্রেন্ড হওয়ার পর থেকে ওর সাথে আমার যেই বন্ডিং টা আগের মতো থাকলো না । আমি ওকে বলতাম তুই বদলে যাচ্ছিস কিন্তু ও বলতো নাহ্ আমি আগের মতোই আছি । আমি আর কিছু বলতাম না । ওর বয়ফ্রেন্ড আমার সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমাকে নক দিতো মাঝেমধ্যে ।আমি তেমন রিপ্লাই করতাম না । একদিন ওর বয়ফ্রেন্ড সহ ও ঘুরতে যাচ্ছিলো তো সেদিন আমাকেও নেয় । আমরা দু'জনেই শাড়ি পরেছিলাম । আমরা যখন রাস্তায় ঘুরছি , ভীড়ের মাঝে এক ফাঁকে ছেলেটা আমার শরীরে বাজে ভাবে হাত দেয় । আমি তৎক্ষনাৎ আমার বান্ধবী কে বলে দিই , বান্ধবী ক্ষেপে যায় । ছোটখাট ঝগড়া করে চলে আসি । অন্যদিনের মতো ও আর আমাকে মানাতে আসেনা । আমার খুব খুব কষ্ট হয় । আমি নিজেই থাকতে পারছিলাম না তাই পরে আমিই যোগাযোগ করি । সব ঠিক হয় মোটামুটি কিন্তু আমাদের দূরত্ব কমে না ।
এর মাঝে ছেলেটা আবার আমাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে।আমি বান্ধবী কে বলায় ও ভায়োলেন্ট হয়ে যায়! আমি ওকে প্রুফ দিতে চাই কিন্তু ও কিছু দেখতেই রাজি না । ঐ ছেলের প্রতি ওর ভালোবাসা এতটাই গভীর যে ও আমাদের বন্ধুত্ব ভুলে যায় । আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাই । খুব খুব কষ্ট পাই আমি । ঐ ঘটনার পর থেকে আমার ভালোবাসার ওপর একটা ঘৃণা চলে আসে । যে ভালোবাসা মানুষকে অন্য সম্পর্ক থেকে দূরে নিয়ে যায় তা অভিশপ্ত , এটাই মনে হতে থাকে আমার । আমি হয়ে যাই অনুভূতিহীন পাথর স্বরুপ ।
.
চলবে,
গল্প : _বিচ্ছেদ
পর্ব : ০১
কলমে : তাসনীম সারা
__বিচ্ছেদ (পর্ব : ০২)
তাসনীম সারা
২.
আমি যখন দশম শ্রেণীতে উঠলাম তখন একটা ফ্যামিলি অকেশানে আমার কাজিনদের বন্ধুরা দাওয়াতে এসেছিলো ।
সেই বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিল আমার হাজবেন্ড ইয়াসির আহমেদ ।
সেদিনই নাকি আমাকে ভালো লেগে যায় তার কিন্তু আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখে আমি তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট ।
সে তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ আর আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ।
বয়সের ব্যবধানের সাথে সাথে ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের ও মিল ছিলো না আমাদের ।
আর তাছাড়াও আমি স্বাধীনচেতা ফ্যামিলির মেয়ে অপরদিকে সে রক্ষণশীল ফ্যামিলি বিলং করে ।
স্টুডেন্ট সেও ভালোই ছিলো , তারাও রংপুরেরই বাসিন্দা কিন্তু গ্রামাঞ্চলের ।
ওদের পৈতৃক সম্পত্তি অনেক , বাবা একজন রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার ।
ওরা তিন ভাইবোন এবং ও ই সবার থেকে বড় ।
বড় হিসেবে ওর দায়িত্বও বিশাল , ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে আর টিউশন করিয়ে যা আর্ন হয় তা বাসায় পাঠায় ।
যদিওবা ওদের অভাব নেই কিন্তু এক্সট্রা এ্যাসেট এগুলো ।
আর ম্যাক্সিমাম সময়ই সকল খরচ ওর চাচা দিয়ে থাকেন না চাওয়া সত্বেও ।
কারণ একটাই ওর বাবা ওর চাচা কে রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের আপন ছোট ভাইয়ের আসনে বসিয়েছে , পড়াশোনা করিয়েছে , সম্পত্তি লিখে দিয়েছে এবং সংসার পেতে দিয়েছে ।
ওর চাচা ওর কাছে আরেকজন বাবা ।
আমি মূলত ওর সম্পর্কে প্রথম দিনই ইনফরমেশন কালেক্ট করেছিলাম কারণ ও আমাকে প্রত্যেকটা পদে পদে বুঝিয়ে দিয়েছে ও আমার ওপর ইন্টারেস্টেড ।
আমি তো ভালোবাসায় তখন বিশ্বাসী না , ওর স্ট্যাটাস টা মনে করিয়ে দেবার জন্যই সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিয়েছিলাম ।
ভেবেছিলাম ও হয়তো প্রপোজ করে দিবে কিন্তু আমার ধারণা ছিলো ভুল ।
ওরা আরো তিনদিন আমাদের বাসায় থাকলো কিন্তু প্রথম দিনের ন্যায় দ্বিতীয় দিন থেকে আমার ওপর ইন্টারেস্ট দেখালো না আর এমনকি আমার দিকে তাকাতোও না অবধি ।
আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই ভাইয়া রা ব্যাটাকে কিছু বলে আটকেছে ।
কয়েকদিন পর আমার স্কুলের সামনে হঠাৎই তার সাথে দেখা , আমাকে দেখে সে ই এগিয়ে এসে কথা বললো ।
আমি তো অবাক , তবুও ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বললাম ।
সে আবার আমাকে চা খাওয়াতে চাইলো , আমার বিরক্ত লাগছিলো আমি নানা অজুহাত দেখিয়ে চলে আসলাম ।
দু'দিন পর আবার দেখা হলো ঐ স্কুলের সামনেই ।
কিন্তু সেদিন ছাড়লো না চা খাওয়ালোই ।
দ্বিতীয় দিনও আমলে নিলাম না কিন্তু এর পর প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতে লাগলো ।
কখনো বাসার গলির সামনে , কখনো মোড়ের দোকানে কখনো স্কুলের সামনে কখনোবা টিউশন ক্লাসে গিয়ে ।
বারবার তো কো ইন্সিডেন্টলি দেখা হতে পারে না , এবার আমার মস্তিষ্কে ব্যাপারটা নাড়া দিলো ।
কিছুটা চিন্তা আর পাল্টা নজরদারি করতেই সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো ।
সে আসলে আমাকে ফলো করে , আমার পিছেই লেগে থাকে কিন্তু ঠিক ছ্যাচড়া প্রেমিকের মতো না ।
অথবা ওরকমই কিন্তু বোঝাতে চায় না ।
যেদিন আমার কাছে ব্যাপারটা খোলাসা হলো সেদিন আমি ঠিক করলাম এবার সরাসরি কথা হবে ।
পরদিন সে আবার দাঁড়িয়ে ছিলো আমার স্কুলের সামনে ।
আমি সোজা বেরিয়ে তার কাছে গিয়ে বললাম_
-- ঐদিকে চলুন কথা আছে ।
সে ভয়ে চুপসে গেলো ।
কিন্তু আমার পেছন পেছন গেলো ।
কলেজের পাশে একটা পুকুর ছিলো , ঐ পুকুর পাড়ে গিয়ে তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম_
-- আপনি আমার পেছন পেছন ঘুরঘুর করেন কেনো?
সে থতমত খেয়ে জবাব দিলো_
-- আমি? আমি কই? মানে ..
-- প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় দেখা হওয়া তো কো ইন্সিডেন্স না । দু একদিন দেখা হলো মানলাম কিন্তু গত একমাস থেকে প্রতিদিন?
-- আসলে রুশরা ।
-- দাঁড়ান আগে আমাকে কথা বলতে দিন । আপনি আসলে আমার পিছে পড়েছেন কেনো? আমার আর আপনার বয়সের ব্যবধান দেখেছেন? আপনি ভালো জায়গায় পড়াশোনা করছেন ভদ্র মানুষ অথচ একটা টিন এইজ মেয়ের পেছনে এভাবে পড়ে আছেন?
আপনার আসলে মতলব টা কি? আমার ভাইয়েরা আপনাকে বলেনি আমার সম্পর্কে?
নাকি আমাদের টাকা পয়সা দেখে..
-- ইনাফ রুশরা । তুমি আমাকে বলার সুযোগই দিচ্ছো না শুধু নিজের মনগড়া গল্প পেড়ে যাচ্ছো । আমার স্বভাব এরকম নয় কিন্তু হয়ে গেছে আমি কি করতে পারি? সেদিন তোমাকে দেখার পর থেকে , তোমার খোঁজ খবর নেয়ার পর থেকে আমার তোমাকে ভালো লেগে গেছে আমি কি করবো এখানে?
আমি অনেকবার ভেবেছি তুমি কোথায় আর আমি কোথায় , আমাদের কিছুরই মিল নেই তবুও এই বেহায়া মনটা মানছে না ।
তোমাকে আমার ভালো লেগে গেছে এখানে আমার দোষ কোথায় বলো?
রাতে আমি ঠিকমত ঘুমুতে ভুলে গেছি , চোখ বন্ধ করলে তোমার চেহারা ভেসে ওঠে ।
তোমাকে পাবো না ভাবলে বুকে ব্যাথা হয় ।
-- শোনেন এসব ব্যাথা ট্যাথা আসলে আমার জন্য না আপনার হার্টে প্রবলেম হইছে ডাক্তার দেখান ।
-- আমার ডাক্তার তো তুমিই রুশরা ।
-- আরে আজব । আমি ডাক্তার হতে যাবো কেনো? ভালোয় ভালোয় বলছি আমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করুন নইলে হাত পা আস্ত থাকবে না ।
বিরক্ত হয়ে বললাম আমি ।
-- আমি কি তোমায় ডিস্টার্ব করছি রুশরা?
উনি অসহায়ভাবে জিজ্ঞেস করলেন ।
-- হ্যাঁ করছেন । নেক্সট টাইম আর যেন না দেখি ।
রূঢ়ভাবে বলে আমি চলে গেছিলাম ফিরেও তাকাই নি ।
বাসায় এসে ভেবেছিলাম থ্রেড দিয়েছি কাজ হবে নিশ্চয়ই কিন্তু না হলো না ।
পরদিন একদম গলির মুখে ।
আমি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সে মাথা নিচু করে বললো_
-- তোমাকে না দেখে ভালো লাগছিল না রুশরা ।
আমি জবাব না দিয়ে চলে গেলাম ।
তারপর আবার একদিন দেখা হলো , প্রতিদিনই সকালে নয়তো বিকেলে দেখা হতোই আর আমি পাত্তা না দিয়ে চলে আসতাম তবে তার মুখে একটা কথাই ছিলো _
" তোমাকে না দেখলে আমার ভালো লাগেনা রুশরা।"
.
আরো একটা মাস অতিবাহিত হলো ।
একদিন কাক ডাকা ভোরে হঠাৎ সে আমার বাড়ির সামনে এসে আমাকে কল করলো ।
আননোউন নাম্বার দেখে প্রথমে রিসিভ না করলেও একসময় বিরক্ত হয়ে রিসিভ করতে হলো ।
আমি হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে কথা ভেসে আসলো_
" আমি তোমার বাসার সামনে রুশরা প্লিজ একবার আসবে?"
আমি কন্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম কে? এবং অবাক হয়ে গেছিলাম তার সাহস দেখে ।
কয়েকটা কড়া কথা শোনানোর জন্য নিচে গেছিলাম কিন্তু আমি তো আরো অবাক ।
কুচকানো একটা শার্ট , এলোমেলো চুল আট টকটকে লাল চোখ নিয়ে সে দেয়ালে মিশে দাঁড়িয়ে আছে ।
আমাকে দেখে এক পা দু পা করে এগিয়ে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বললো_
-- ঢাকায় ফিরবো রুশরা । তোমাকে কতদিন দেখবোনা । খুব কষ্ট হচ্ছে ।
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম লোকটার দিকে ।
দেখতে পারবে না জন্য কেউ কাঁদে?
ভ্রু কুঁচকে বললাম_
-- কেঁদেছেন আপনি?
সে মাথা নেড়ে বললো_
-- উঁহু কিন্তু ঘুমাতে পারিনি । আসতে আসতে ৬ মাস লেগে যাবে আমি কি তোমাকে কল করতে পারি?
-- নাহ্ পারেন না ।
-- প্লিজ রুশরা?
কাতর স্বরে রিকোয়েস্ট করলো সে ।
আমার হাসি পেয়ে গেলো , হাসি চেপে বললাম ।
-- ঠিকাছে কিন্তু যখন তখন কল দেয়া যাবেনা । একটা নির্দিষ্ট টাইম থাকতে হবে সেটা আমি বলে দিবো ।
এবার তার মুখে হাসি ফুটলো ।
সে প্রশস্ত হাসি দিয়ে আচনক আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো_
-- থ্যাংক ইউ সো মাচ রুশরা । থ্যাংক ইউ ।
আমি দ্বিতীয় বার হতভম্ব ।
মৃদু চিৎকারে বললাম_
-- করছেন কি?
সে চট করে সরে এসে মাথা নিচু করে বললো_
-- স্যরি রুশরা বুঝতে পারিনি ।
আমি চুপ করে ছিলাম ।
সে আবারো বললো_
-- স্যরি রুশরা । এক্সট্রিমলি স্যরি । মাফ করে দাও..
-- কানে ধরেন ।
-- কান ধরবো?
-- আজ্ঞে ।
সে ইতস্তত করে কানে ধরলোও ।
হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল আমার কিন্তু আমি তো হাসবো না তার সামনে ।
হুট করে পেছনে ঘুরে গেলাম আর বাড়ির ভেতরে হাঁটা দিলাম ।
সে পেছন থেকে জানতে চাইলো_
-- আমি কি এভাবেই থাকবো?
বাড়ির ভেতর ঢুকে মাথা বাড়িয়ে বললাম_
-- দুই সেকেন্ডে উধাও হতে পারলে ভালো নইলে দাঁড়িয়ে থাকেন এভাবে ।
এবার তার মুখে হাসি ফুটলো ।
সে মৃদু চিৎকার করে বললো_
ভালোবাসি প্রিন্সেস । খুব মিস করবো কিন্তু!
আমি কেনো যেন লজ্জা পেয়ে হেসে দিলাম ।
লোকটা সত্যিই পাগল ।
(৩)
আমাদের প্রেমের সূচনা মূলত সেদিন থেকেই ।
আমি অবশ্য তখনো হ্যাঁ বলিনি , এক তরফা ও ই বলে যেত ।
আমি ছিলাম একজন ভালো শ্রোতা ।
মুঠোফোনের ওপাশে ও ওর সব অনুভূতি বিনা সংকোচে প্রকাশ করে যেত আর এপাশে আমি ওর নিঃসংকোচ প্রকাশভঙ্গীমা দেখে হাসতাম কখনো ভালো লাগতো , কখনোবা লজ্জায় লাল হতাম এটা ভেবে ভালোবাসা জিনিসটা আমার জীবনেও এসেছে সত্যি?
ওর প্রতি যে আমার একটা অনুভূতি কাজ করা শুরু করে দিয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারতাম তক্ষুনি খুব বেশী করে যখন স্কুল থেকে বেরিয়ে ওকে অপেক্ষা করতে দেখা যেত না , টিউশন ক্লাসের বাইরে ও নেই , গলির মাথায়ও দাঁড়িয়ে নেই শুধু আছে মুঠোফোনের বিপরীতে ।
মাঝেমধ্যে কান্না পেত , এই কান্নার মানে আমি জানতাম না ।
নিজেকে বকে দিয়ে বলতাম "সম্পর্ক নেই আবার কান্না কিসের?"
আমি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করতাম ।
নিজের কষ্ট , আনন্দ যতটা প্রকাশ করার দরকার ততটা করতাম না ভালো লাগতো না কেনো জানি!
এজন্য কষ্টের রাতগুলিতে যখন মনে হতো হ্যাঁ ও হয়তো আমাকে সঙ্গ দিলে মন খারাপ ছুটে যাবে তখনও আমি যোগাযোগ করতাম না ওর সাথে ।
ও একটা মেসেজ পাঠালে শুধু সেটারই জবাব দেয়া হতো পাল্টা প্রশ্নও কখনো করিনি ।
__
দেখতে দেখতে আমার এসএসসি পরীক্ষা এসে গেলো , পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ।
সব কিছুর থেকে দূরে । ও কে না বলেই ফোনটাও বন্ধ করে রেখে দিলাম ।
পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই হচ্ছিল , প্রতিদিন পরীক্ষা দিয়ে এসে ইচ্ছে করতো ফোনটা বের করে ওকে নিউজ টা জানাই কিন্তু আবার মন বলতো ফোন বের করা মানে লক্ষ্য চ্যুত হওয়া।
এই ভেবে আর অশান্ত মন কে শান্ত করা হতো না ।
যা হোক পরীক্ষা আমার ভালোয় ভালোয় কেটে গেলো , প্রাক্টিক্যাল শুরু হবার আগে বাবা জানালেন লাস্ট প্রাক্টিক্যাল শেষে একদিন গ্যাপ দিয়ে পরদিন ই আমাকে ঢাকায় পাঠাবেন খালার বাসায় । কলেজ ওখানেই ।
জানিনা কেনো এটা শুনে আমার দারুণ খুশি লাগলো , সেও তো ঢাকাতেই থাকে ।
এটা নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তারই একটা সাইন?
দু'টো দিন উদ্দীপনায় কাটলো ।
লাস্ট প্রাক্টিক্যালের দিনে সকল বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করলাম ঘুরতে যাবো , কে জানে আর কখনো সবাই একসাথে থাকার সুযোগ হবে কি না!
পরীক্ষা শেষে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে অন্যদের আসার অপেক্ষা করছি হঠাৎ মনে হলো একটা পরিচিত মুখ?
উৎসুক হয়ে চারিদিকে খুঁজতে থাকলাম ভাবছিলাম সে আসবে কি করে?
এই খোঁজা খোঁজির মধ্যে হাতে টান পড়লো , কারো শক্ত হাত আমার কবজি টা মুঠো বন্দী করে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো ।
রাগতে রাগতে নিজেকে সামলে নিলাম মানুষটা কে দেখে ।
ইয়াসির?
আমি একই সাথে অবাক এবং খুশি হলাম ।
খুশির যুক্তিযুক্ত কারণ জানিনা কিন্তু মনে অন্যরকম এক আনন্দ হলো আমার ।
কোনো এক গলির মুখে নিয়ে গিয়ে সে আমার হাতটা ছেড়ে দিলো আমি চোখ তুলে চাইলাম তার মুখ পানে ।
বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে গেলো আমার ।
সুন্দরমতো চেহারা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে , চোখ বসে গেছে ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে ।
চুল উশকোখুষকো , দাড়ি বড় হয়ে গেছে ।
দেখে মনে হচ্ছে রাস্তার পাগল দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে ।
আমি কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু তার আগেই সে একপ্রকার চেঁচিয়ে বললো_
-- আমাকে তোমার মানুষ মনে হয় না? হ্যাঁহ্ প্রায় দু'মাস হলো যোগাযোগ বন্ধ করেছো ।
জানি পড়ার চাপ কিন্তু আমাকে একটা বার বললে হতো না? হুট করে ফোন অফ করে রেখে দিয়েছো , রাইটিং শেষ এটলিস্ট শেষ এক্সামের দিন তো একটু যোগাযোগ করলে হতো?
তোমার বিরহে আমার মরণদশা এ কথা তো তুমি জানো , এত নিষ্ঠুর কেনো তুমি?
সব জেনেও নীরব?
আমি দু কদম এগিয়ে এসে বললাম_
-- আমাদের কি মান অভিমানের সম্পর্ক হয়েছে? জবাবদিহিতার অধিকার আছে?
-- ওহ্ আমার অনুভূতি তোমার কাছে কিছুই না তাই না? আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা এতদিন থেকে বুঝিয়ে আসছি তুমিই তো বুঝতে চাইছো না ।
আর কি করলে বুঝবে? কি করলে প্রমাণিত হবে আমি তোমায় ভালোবাসি?
আমি মুচকি হাসলাম , কন্ঠের ধীরতা বজায় রেখে বললাম _
-- কই একদিনও তো প্রেম নিবেদন করলে না প্রেমিক পুরুষের মতো । একদিনও তো জিজ্ঞেস করলে না "তুমি আমার প্রেয়সী হবে?"
ও অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে ।
নস্টালজিক হয়ে গেছে ও , তাকিয়েই আছে ।
তারপর হঠাৎ কোথাও একটা ছুটে গেলো , খানিক বাদে যখন আসলো তখন দেখি ওর হাতে কয়েকটা বেলী ফুল ।
হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে সেগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বললো_
-- হবে আমার প্রেয়সী? আমার মনের অসুখের ঔষধ? এই ছন্নছাড়া জীবনটাকে গুছিয়ে দিবে? একটু অধিকার নিয়ে বলবে? এখন আমি এসেছি আর এলোমেলো পাগলের মতো থাকা যাবেনা ।
কথা দিচ্ছি তোমার চোখে জল আসতে দেবো না ।
আমি এটা শোনা মাত্রই কেঁদে ফেললাম , ও অপ্রস্তুত হয়ে বললো_
-- এই রে কাঁদিয়ে দিলাম যে?
আমিও হাঁটু গেড়ে বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম_
-- আজকে মাফ এরপর কাঁদালে ভয়ংকর শাস্তি দিবো ।
ও মুচকি হেসে বললো_ পবিত্র ভালোবাসার কসম তোমার শাস্তি মাথা পেতে নেবো ।
আনোয়ার সাহেব বুঝতে পারলেন তো ও ওর কথাটা রাখতে পারেনি ।
আমার চোখের জলের কারণ হয়েছে , ভালোবাসার কসম কেটেছিল শাস্তি ওর প্রাপ্য ।
এতটুকু বলে থামলো রুশরা ।
আনোয়ার সাহেব ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইলেন_
-- কি এমন হলো মা যে বিচ্ছেদের কষ্ট নেমে আসলো?
-- হু বলবো তো । আপনি কি আমাকে একটু পানি খাওয়াতে পারবেন?
-- অবশ্যই৷ মোখলেস? মোখলেস?
দারোয়ান দৌড়ে আসলো তার সাহেবের গলা শুনে , বিনীত ভঙ্গিতে বললো_
" আজ্ঞে সাহেব?"
-- ম্যাডামের জন্য পানি নিয়ে আসো?
-- জ্বী সাহেব ।
হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো দারোয়ান
দু মিনিটের মাথায় পানির গ্লাস নিয়ে হাজির ।
-- রেখে যাও ।
-- জ্বী ।
পানির গ্লাস রেখে চলে গেলো দারোয়ান ।
আনোয়ার সাহেব গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন_
-- নিন মা?
রুশরা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে তিন চুমুকে পানিটা শেষ করলো ।
তারপর গ্লাস রেখে ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে আলতো করে মুখটা মুছে নিলো ।
আনোয়ার সাহেব চুপচাপ তার কাজকর্ম দেখছিলেন ।
সবকিছুতেই মায়াবী মায়াবী ভাব , নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছেন উনি নিজেই ।
টিস্যুটা আবার ব্যাগে রেখে রুশরা একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বললো_
-- আচ্ছা যা বলছিলাম ,
সেদিন আমার আর বন্ধুদের সাথে ঘোরা হয় না ।
তার সাথেই সময় কাটাই ।
জানাই ঢাকা যাবো , সে বড় খুশি হয় ।
বলে সে আরো দু'দিন এখানে থাকবে তারপর ঢাকায় যাবে ।
মেনে নিই সেটাই ।
সেদিন রাতেই ঢাকায় চলে যাই আমি ।
এরপর আবার আমাদের প্রেম শুরু হয় মুঠোফোনের মাধ্যমে ।
কতটা সময় দেখতে দেখতেই কেটে যায় , আমার মধ্যে ম্যাচিওরিটি আসতে শুরু করে ।
সম্পর্কের ভীত মজবুত হতে শুরু করে ।
কিন্তু এর মাঝেই আমার খালাত ভাই আমাকে প্রপোজ করে বসে , আমি রাজি হই না ।
সে সময় নিতে বলে , কিন্তু আমি তো কমিটেড ।
ইয়াসির কে জানালে সে একটু মন খারাপই করে ।
খালা বাসা থেকে অন্য কোথাও যাওয়ারও উপায় নেই কারণ ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে উঠে গেছি আমি ।
মুখ বুঁজে থাকতে হয় , অনেক সমস্যা ফেস করতে হয় ।
ভাইয়ার পাগলামি সহ্য করতে হয় কিন্তু সব কিছুর উর্ধ্বে, সব অশান্তির ঔষধ ইয়াসির ।
ও সাহস যোগায় আমাকে
আমি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারিনা আমার খালাত ভাই আমার ওপর নজর রাখতে শুরু করে ।
ও জেনে যায় সবটা , আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে বাসায় জানানোর ।
মানসিক টর্চার করতে থাকে , বলে ওর সাথে রিলেশন না করলে আমার সম্পর্কের কথা বাসায় জানিয়ে দিবে ।
ভেঙে পড়ি আমি , ইয়াসিরের সাথে যোগাযোগ করতে হয় লুকিয়ে ।
তারপর একদিন মনে হয় নাহ্ আর লুকোবো না , যা হবার হবে!
এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই আমি বাসায় সব জানিয়ে দিই ।
সবাই তো অবাক , সবার একটা বিষয়ই পছন্দ হয়না ছেলের বয়স ।
ওকে সবাই ভালো ছেলে হিসেবে চেনে কিন্তু আমার চাইতে বয়সে এতবড় ছেলেকে কি করে মানবে?
বাবা চাচা রা রাজি থাকেনা একদমই , দুই পরিবারের কথা হয় ।
বাবা আমার কান্নায় দূর্বল হয়ে শর্ত জুড়ে দেন ওকে ভালো পজিশনে যেতে হবে তা হলেই আমাকে পাবে নয়তো না , ততদিন আমাদের যোগাযোগ বন্ধ থাকবে ।
মেনে নিই আমরা , কিন্তু আমি থাকতেই পারছিলাম না যোগাযোগ না করে ।
যোগাযোগের উপায় হিসেবে বের করি চিঠি লেখা ।
পুরাতন যুগের মতো আমাদেরও পত্র আদান প্রদানের মাধ্যমে প্রেম শুরু হয় ।
প্রতি শুক্রবার করে ওর চিঠি আসতো , আমি ৬ টা দিন অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতাম ওর চিঠির জন্য ।
চিঠি পাওয়ার পর ওর দু'টো ভালোবাসা মেশানো কথা শুনেই আমার অন্তর জুড়িয়ে যেত ।
মনে হতো ভালোবাসা মধুর , আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ও আর ওর ভালোবাসা ।
অবর্ণনীয় সুখে আমাদের দিনগুলো অতিবাহিত হতে শুরু করলো ।
মাঝেমধ্যে মনে হতো এই ভালোবাসা সবার জীবনে আসুক ।
এই পবিত্র ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার জীবনে সবারই আছে , সবারই..
গল্প: বিচ্ছেদ (পর্ব : ০৩|সমাপ্ত)
তাসনীম সারা
(৪)
দু বছরের মাথায় ইয়াসিরের চাকরি হয়ে যায় এবং ফাইনালি দু পরিবারের সম্মতি তে আমাদের বিয়েটা হয়ে যায় ।
আমার জীবনে সবচাইতে খুশির দিন হয়ে যায় আমার বিয়ের দিন টা ।
আজকাল ভালোবাসে তো সবাই কিন্তু মানুষটা কে পায় কয়জন?
আমি পেয়ে নিজেকে সর্বোচ্চ সুখী দাবী করতে থাকি ।
বাবা মা চাইছিলেন আমি অন্তত আমার পড়াশোনা টা বাসা থেকেই করি কিন্তু নাহ্ আমি বাসায় থাকলাম না শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই উঠলাম ।
নতুন নতুন সংসার , নতুন সব খুব খুব ভালো লাগছিলো ।
শ্বশুরবাড়ির সবাই কি ভালোটাই বাসে!
সংসারের তালে আমার আবার ওদিকে পড়াশোনা পিছিয়ে যেতে থাকলো , ওরও ছুটি শেষ হয়ে আসছিলো ।
ওর বাবা কে বলায় বাবা তো প্রায় সাথেসাথেই বললেন তোরা ঢাকায় যা , বন্ধ পেলে না'হয় আসবি ।
লেখাপড়ার ক্ষতি করার তো দরকার নেই ।
ওর বাবা এ কথা বললেও আমি একটা জিনিস লক্ষ করলাম মা ব্যাপারটা অতোটা পছন্দ করলেন না ।
যাক আমরা ঢাকায় চলে আসলাম ।
সব মোটামুটি ভালোই চলছিল , আমাদের দু'জনের ছোট্ট সংসার ।
আমার পড়াশোনা ওদিকে ওর অফিস , বন্ধ পেলেই হুট করে চলে যেতাম রংপুরে ।
সুখ স্বাচ্ছন্দ্যই কাটছিলো সময়৷
দেখতে দেখতে দু'টো বছর কেটে যায় আমাদের সংসারের ।
একদিন সকালবেলা খবর আসে বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আমাদের যেতে হবে ।
আমরা তাড়াহুড়ো করে বেরুলাম , পথেই খবর এলো বাবা আর নেই ।
বাবা চলে যাওয়ার পর শোকের ছায়া নেমে এলো সংসারে ।
মা পাগলপ্রায় ।
তাকে সামলাতে আমরা কয়েক মাস থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম ।
আমার আব্বা-আম্মা এসে বোঝাতো ওনাকে , মাঝেমধ্যে ওনার পুরানো বান্ধবীদের সাথে দেখা করাতাম ।
ওনার বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে গিয়ে হয়তোবা বাড়ির বউ দের নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল ।
উনি সেদিন বাসায় এসে আমাদের ডেকে বললেন_
" বিয়ে তো হয়েছে মেলাদিন হইলো , এটাই আসল সময় বাচ্চা কাচ্চা নেয়ার । পরে বয়স বেশি হয়ে গেলে তোর বউয়ের ই কষ্ট হবে।"
আমি একদম ই প্রস্তুত ছিলাম না এটা শোনার জন্য ।
আমার ক্যারিয়ার গড়ার সময় এটা , আমি মোটেই বেবী চাইছিলাম না ।
এটাসেটা বুঝিয়ে সেদিনের মতো ব্যাপারটা সামাল দেয়া গেলো ।
কিন্তু ওর মাথায়ও ব্যাপারটা গেঁথে গেছিলো বুঝি!
ও আমাকে প্রায়ই ভাবতে বলতো , কীভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে তার প্ল্যান করতো ।
এর ওদিকে তো মা প্রতিদিনই বলতেই থাকলো ।
আমাদের সংসারে অশান্তি মূলত এই বাচ্চা ঘটিত তর্ক বিতর্ক নিয়েই শুরু হলো ।
একসময় আমিও ভাবলাম স্বামী, শ্বাশুড়িকে নারাজ করি কেনো?
বাচ্চা তো দূর্বলতা না হয়ে শক্তি হতে পারে?
আমি রাজি হয়ে গেলাম ।
আমার ক্লাস মিস যাচ্ছিলো বললাম ঢাকায় ফেরত যেতে ।
ও ওর মা, ভাই বোনকে একা ছাড়তে পারছিলো না আমি বললাম আমাদের সাথে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হোক?
কিন্তু নাহ্ আমার শ্বাশুড়ি কিছুতেই যাবেন না ঢাকায় ।
ওনার সাজানো সংসার ছেড়ে নাকি ইট পাথরের শহরে এসে ওনার একদমই ভালো লাগবে না ।
অনেক বোঝালাম আমরা কিন্তু আম্মা রাজি না ।
শেষে চাচা শ্বশুর বললেন তারা দেখবেন কোনো সমস্যা নেই ।
প্রয়োজনে তাদের ছেলে আর ছেলের বউ এ বাড়িতে উঠবে ।
এখানে একটা কথা চাচা শ্বশুরের ছেলের সাথে আমার একদিনও দেখা হয়না এর মাঝে কারণ ছেলেটা ময়মনসিংহে জব করতো ও নাকি বদলি নিয়ে রংপুরে শিফট করতে চায় এখন ।
কথা ওটাই হলো ওরাই আমাদের বাড়িতে থেকে সার্বিক টা দেখাশোনা করবেন ।
আমরা খুশিই হলাম ।
আরো একটা বছর গেলো এভাবে ই ।
আমি বিসিএস এর প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম ওদিকে বেবী প্ল্যানও করছিলাম কিন্তু চেষ্টা করেও কনসিভ করতে পারছিলাম না ।
মায়ের প্রেশার বেড়ে গেলো কিন্তু ও আমার পাশে ছিলো ।
ডাক্তার দেখানো হলো , ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলো ।
নানারকম বাজে চিন্তা আসছিলো আমার মাথায় ।
একরকম উত্তেজনার বসে আমিই পরদিন হসপিটালে গিয়ে খবর নিলাম একা একা ।
ডাক্তার আমার হাতে রিপোর্ট দিয়ে বললো "ইউ আর আ্যাবসোলিউটলি ফাইন , ইউ ক্যান বি আর মাদার বাট মেইন প্রবলেম তোমার হাজবেন্ড এর মধ্যে । ও কখনো বাবা হতে পারবে না ।"
আমি থমকে গেছিলাম এটা শুনে ।
কাতর হয়ে জানতে চাইলাম কোনো চিকিৎসা করানো পসিবল কি না?
কিন্তু ডাক্তার বলে দিলো চিকিৎসা ফলপ্রসূ হবে না ।
আমি সারা রাস্তা ভাবতে ভাবতে আসছিলাম কি করা যায়?
ব্যাপারটা জানলে ও খুব খুব কষ্ট পাবে ।
ঠিক করলাম এখন জানাবো না , কিন্তু ও তো রিপোর্ট চাইবে?
কিছু তো দরকার , জানিনা কেনো আমি রিপোর্ট চেইঞ্জ করানোর সিদ্ধান্ত নিলাম ।
ভাবলাম ওকে বলবো চিকিৎসা করালেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো আর আমার একটা কনফিডেন্স ছিলো আমি ও এই সংবাদ শুনলেও আমার হাত ছাড়বে না ।
আমি ওটাই করলাম । রিপোর্ট বদলে দিলাম ।
ও রিপোর্ট হাতে পেয়ে নির্বাক হয়ে বসে ছিলো কতক্ষণ ।
তারপর আমাকে বললো সমস্যা নেই আল্লাহ চাইলে হবে ।
মা ব্যাপারটা জানার পর খুব নারাজ হয়ে গেলেন ।
আমি আবার আমার পড়াশোনার দিকে নজর দিলাম ।
ও পূর্বের তুলনায় একটু চুপচাপ হয়ে গেছিলো , মা কল দিলে ওকে আলাদা হয়ে কথা বলতে বলতো ।
আমার খারাপ লাগতো কিন্তু প্রকাশ করতাম না কারণ আমার ওর ওপর আস্থা ছিলো ।
যেই পড়াশোনার পেছনে এত কষ্ট করছিলাম আমি সেটার ফল পেলাম ফাইনালি ।
বিসিএসএ আ্যাডমিন ক্যাডারে হয়ে গেলো ।
পোস্টিং হলো রংপুরে ই ।
দারুণ খুশি হয়েছিলাম যে যাক এখন শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে পারবো কোনো সমস্যা হবে না ।
ওর জব ঢাকায় থাকার কারণে ও থেকে গেলো আমিই রংপুরে চলে গেলাম ।
আমার শ্বাশুড়ি আমাকে আগের মতো পছন্দ করতো না ঠিক ।
আমার সাথে তেমন কথাবার্তা বলতো না , আমি চেষ্টা করছিলাম সম্পর্ক সহজ করার কিন্তু ওদিক থেকে সাঁড়া নেই ।
একটা ইন্টারেস্টিং কথা শুনবেন?
আমার চাচা শ্বশুরের ছেলে কে ছিলো জানেন?
আমার সেই স্কুল জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড টা ।
এতবছর পর ওকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম ।
ওর বউ আমার বান্ধবী নয় অন্য মেয়ে ।
আমাকে দেখে ছেলেটা বললো_ কি ভাবী চমকে গেলেন আমাকে দেখে? আগের কথা মনে রাখবেন না । বয়স কম ছিলো ভুল করে ফেলেছি কিন্তু এখন আমারও সংসার হয়েছে!
আমি পূর্বের কাজের জন্য অনুতপ্ত ।
ছেলেটা বললেও আমি কেনো যেন বিশ্বাস করতে পারলাম না , একদিকে ভাবছিলাম নাহ্ হয়তো আসলেই ভালো হয়েছে বউ-বাচ্চা আছে চরিত্র ভালোও হতে পারে । আমার সিক্সথ সেন্স বলছিল ও আমার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে ।
এর মাঝে আবার ইয়াসির অসুস্থ হয়ে গেলো ।
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওকে হসপিটালে এডমিট করা হলো ।
জানা গেলো ওর কিডনিতে প্রবলেম , রিপ্লেস করতে হবে ।
আম্মা আমাকে দোষারোপ করলেন ।
কেঁদে কেঁদে বললেন এই অলক্ষীটা আমার সংসার খেতে ই এসেছে ।
না সন্তান দিতে পারে আর না সংসারী ।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম আম্মার কথা শুনে ।
ভালো খারাপ সময় সব সংসারে ই আসে তা'হলে এটা নিয়ে আম্মা আমাকে কীভাবে দোষারোপ করতে পারেন?
সব ঝামেলা আমাকেই পোহাতে হচ্ছিলো ইয়াসিরের কিডনি রিপ্লেসের জন্য ডোনার খুঁজছিলাম অন্যদিকে মায়ের খারাপ কথা ।
সহ্য করার মতো না তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছিলাম ।
আল্লাহ্ কে ডাকছিলাম খুব করে ।
আল্লাহ্ সহায় হলেন এবং ডোনার পাওয়া গেলো ।
এ যাত্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসলো ইয়াসির ।
কিন্তু ওর ভেতর আমূল পরিবর্তন আসলো যেন!
বাসায় সবসময় আম্মা আমাকে নিয়ে অভিযোগ করতে থাকলেন ।
ওর মন মস্তিষ্ক বিষিয়ে তোলার ছোট্ট প্রয়াস ।
বুঝতে পারছিলাম ওদের পরিকল্পনা ছেলেকে আরেকটা বিয়ে করানোর ।
আমি চুপচাপ ছিলাম । আমাদের ভালোবাসা পরীক্ষা করার সময় ।
__
(৫)
এর মাঝে হুট করে শাহেদ মানে আমার চাচা শ্বশুরের ছেলে কি করে যেন জেনে গেলো রিপোর্ট টা ভুল ।
ও খোঁজ খবর লাগিয়ে জানলো মূল সমস্যা আমার মাঝে নয় ইয়াসিরের মাঝে ।
ওর আমার ওপর দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন হলো ।
সবসময় কেমন কামনার চোখে দেখতে লাগলো আমাকে ।
সবার সামনে ঠিকঠাক কিন্তু সবার অলক্ষে আমার কাছে আসতে চাইতো । ছোঁয়ার বাহানা খুঁজতো ।
আমি ইয়াসিরের সাথে শেয়ার করলাম ব্যাপারটা ।
ও বললো তোমার ভুল ধারণা এটা , শাহেদের ওয়াইফ আছে বেবী আছে ও কেনো করবে এটা?
আমি বুঝলাম প্রমাণ ছাড়া পসিবল না ।
শ্বাশুড়ি মা কথায় কথায় ঝগড়ার বাহানা খুঁজতে শুরু করলেন ।
প্রতিদিন বাড়িতে ঝামেলা লাগতোই একপ্রকার ।
ইয়াসির শুরু শুরু তে কিছু বললেও এখন চুপচাপ হয়ে গেলো ।
আমাদের মাঝে একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়ে গেছিলো আমি বুঝতাম ।
শাহেদের অত্যাচার বাড়লো ।
ও আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতো সুযোগ পেলেই ।
একদিন আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলো আমি শাহেদ কে থাপ্পড় মারলাম , চেঁচামেচি করলাম ।
সবাই ছুটে আসলো চেঁচামেচি শুনে ।
সবটা খুলে বললেও কেউ বিশ্বাস করলো না বরং উল্টো আমাকেই কথা শোনালো ।
শাহেদ ব্যাপারটা অন্যভাবে প্রেজেন্ট করলো ।
আম্মা তো রাগে আগুন ।
আমি ইয়াসির কে বললাম চলো আলাদা হয়ে যাই ।
আলাদা হবার কথা শুনে ও আমার ওপর চড়াও হলো ।
বললো আই থিংক উই নিড আ ব্রেইক ।
বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এর সম্পর্কে ব্রেইক হতে পারে হাজবেন্ড ওয়াইফ এর সম্পর্কে এমন কিছু কি আদৌ আছে ??
আমি বিশ্বাস করতে ই পারছিলাম না ওর কথা ।
তবে এটা বুঝতে পারছিলাম বাবা হওয়ার চাহিদা ওকে ওর ভালোবাসা ভুলিয়ে দিয়েছে ।
ওর মা নতুন বিয়ে করানোর যে চিন্তার বীজ ওর মাথায় ঢুকিয়েছেন তা অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছে ।
নিজের জীবনের ওপর হাসি আসছিলো আমার ।
তবে আমি নিজেকে প্রমিস করেছিলাম শাহেদের অত্যাচার আমি আর সহ্য করবো না ।
এতে আমাদের আলাদা হতে হোক সমস্যা নেই ।
ও তো একটা পাপেট হয়ে গেছিলো ওর মায়ের হাতের , এর পরেও আমাকে কত অপমান সইতে হয়!
ও দ্বিতীয় বিয়েতে মত না দিলেও না ও করেনা ।
আমি জানতে চাই ও আসলে কি চায়?
ও বলে তোমাকে ছাড়া তো আমার থাকা সম্ভব না কিন্তু মা..
বুঝে যাই ওর মন কি চায়!
আনোয়ার সাহেব একটা সংসার কখনোই ছোটখাট কারণে ভাঙে না ।
আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তো আমার ওপর শারিরীক নির্যাতন করেনি ওরা আমাকে মানসিক ভাবে ভেঙে দিয়েছে ।
আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম সে একটা ব্রেইক চেয়েছে সম্পর্কে ।
জীবনে প্রথমবার সে কিছু চাইলো আর আমি দেবোনা তা কি হয়?
ও ব্রেইক চাইছিলো দিচ্ছি ব্রেইক ।
-- আর শাহেদের শাস্তি?
-- ওর শাস্তি তো সৃষ্টিকর্তাই দিয়েছেন আনোয়ার সাহেব । গত একমাস আগে ওর একটা আ্যাক্সিডেন্ট হয় এবং ও প্যারালাইজড হয়ে যায় ।
-- আপনার হাজবেন্ড কি কখনো জানতে পারবেন না মূল সমস্যা ওনার মাঝেই?
-- সে তো জানে ।
-- জানে?
-- জ্বী । শাহেদ এবার আসলেই ওর ভুলটা বুঝতে পেরেছিল হয়তো । ও ই সবাইকে আসল সত্যিটা জানায় ।
-- মা তা'হলে সব তো ঠিক হবার পথে । বিচ্ছেদ টা কি জরুরী?
-- আনোয়ার সাহেব সম্পর্কে যখন তিক্ততা আসে তখন সম্পর্ক বয়ে বেড়ানোর থেকে বের হয়ে আসা ভালো ।
বিশ্বাস স্বচ্ছ কাঁচের মতো , এটা একবার ভেঙে গেলে ভালোবাসাও পারেনা জোড়া লাগাতে ।
আমার হাজবেন্ড কে আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম , কখনো মাথায় আসেনি সে খারাপ সময়ে আমার হাত ছেড়ে দেবার চিন্তা মাথায় আনবে কিন্তু আমি ভুল প্রমাণিত হলাম ।
আমার অন্ধবিশ্বাসের এবং ওর আমার বিশ্বাস ভাঙার শাস্তি একমাত্র বিচ্ছেদ ।
-- মা তবুও যদি একটু ভাবতেন?
-- আনোয়ার সাহেব কথার ভেতরও কথা থাকে । কিছু জিনিস ব্যক্তিগত থাকে ।
ব্যক্তিগত কিছু জিনিস থাকে যেগুলো কাউকে বলা যায় না ।
সম্পর্ক সহজ করতে যখন একজন উপায় হিসেবে ব্রেইক বেছে নেয় এমনকি অপরজন চেষ্টা করার পরেও সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে তখন আসলে আর চেষ্টার নয় বিচ্ছেদের দরকার পড়ে ।
আমার হাজবেন্ড ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে কিন্তু বড্ডো দেরি হয়ে গেছে ।
শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে বিচ্ছেদ দরকার ।
হয়তোবা কখনো সৃষ্টিকর্তা চাইলে আলাদা পথে হাঁটতে হাঁটতে একটা গন্তব্যে দেখা হয়ে যাবে আমাদের ।
রুশরা অনেক শক্ত থাকার চেষ্টা করলো কিন্তু তার অজান্তেই তার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো ।
আনোয়ার সাহেব চুপচাপ মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন ।
একটু ভালো করে লক্ষ করলেই দেখা যায় এই মায়াবী মুখটাতে অসহনীয় কষ্ট , যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠছে!
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পেপারে কলম বসালেন আনোয়ার সাহেব ।
ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে হয়তো কখনো বিচ্ছেদও দরকার ।
সমাপ্ত
__