গল্প: বিয়ে | হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প

 রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

--- এই নিয়ে তোমার জন্য আমি চার-চারবার বিয়ে ভাঙলাম...

--- তো?

--- তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?

--- বাসি তো

--- তাহলে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়?(রাগি স্বরে বললাম)

--- কি বলিস এসব! আমি এক্কনো ছোট্ট বাচ্চা না?এখন বিয়ে করলে লোকে কি বলবে?(মজার ছলে বলল)


ইচ্ছে তো করছে ঠাস ঠাস করে দুই গালে দুইটা কসিয়ে চর দিই।২৮বছরের বুড়ো বলছে ছোট্ট বাচ্চা।(মনে মনে)


--- কিছু ভাবছিস?

--- হ্যাঁ

--- কি?

--- আমি বুঝে গেছি তুমি আমায় কখনও বিয়ে করবে না।তুমি তোমার লাইফটা নিয়ে এখন যেমন খুশী ইনজয় করতে পারো।আমি চললাম। ব্রেকাপ।

--- এই শোন আলফা শোন না.. ধ্যাত চলে গেল!


ফালাক ভাইয়ের কথা না শুনেই ছাদ থেকে এক প্রকার নেমে চলে আসলাম।যে জীবনটাকে নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবে না।সব সময় বোকামু আর ইনজয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে।পেয়েছেটা কি?অনেক হয়েছে আর না ব্রেকাপ মানে ব্রেকাপ। 


ওহহ আপনাদের তো আমার পরিচয়টাই দেওয়া হলো না।আমি আলফা।অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী।ফালাক আমার চাচাতো ভাই।ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে প্রেম।আজ অনেক হয়েছে।ওর এসব বেখেয়ালী আলাপন আর নেওয়া যায় না।


রাতে বইটা হাতে নিয়ে বসে আছি।পড়াই মন বসছে না।নাহ কেন ভাবছি আমি ফালাক ভাইকে নিয়ে এতো।ব্রেকাপ তো করেই এসেছি।যে গেছে সে গেছে।তখনই দরজায় করো কড়াঘাতের আওয়াজ।আমি তাকিয়ে দেখি ফালাক ভাই।তখনই বইয়ের দিকে মনোযোগ দিয়ে জোড়ে শব্দ করে পড়তে শুরু করলাম।এবার এক প্রকার ভেতরে এসেই আমার বইটা ধরে টান দিলো।


--- কি হচ্ছেটা কি?

--- চাচি খেতে ডাকছে তোকে, খেতে আয়!

--- আমার ক্ষুদা নেই! যাও বলো গিয়ে!

--- না তোকে যেতে হবে!

--- না যাবো না।আমার সামনে পরীক্ষা অনেক পড়া দাও বই দাও।(হাত থেকে বইটা কেড়ে নিলাম)

--- তুই যে কেমন পড়ছিস তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে!

--- মানে?

--- মানেটা হলো,, ব্রেকাপ করবি ভালো কথা আমার দেওয়া গোলাপটা তোর বইয়ের পাতায় কেন রেখেছিস?দেখ তো পাপড়িগুলো শুকিয়ে গেছে।এতে তো গন্ধও পাবি না।তোর কাছে থাকলে তুই দেখবি আর শুধু শুধুই আমাকে ভেবে কষ্ট পাবি।দে আমাকে আমি ফেলে দিই।


--- এই তুমি যাও তো এখান থেকে (বলেই ঠেলতে ঠেলতে ঘরের বাইরে বের করে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম)


কিছুক্ষণ পড় আবার কেউ দরজায় নক দিচ্ছে।ভাবলাম ফালাক ভাই হয়তো।জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে দরজাটা খুলেই ছুড়ে মারলাম।তাকিয়ে দেখি মা।হাতে খাবার।হয়তো আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।এই রে হয়েছে আজ আমার...


--- মুখপুরি পানি মারলি কেন?(ভেতরে ঢুকে ভাতের থালাটা রেখেই শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুজছে)

--- সরি মা দেখি নি

--- ইচ্ছে করেই পানি মেরেছিস তুই।দাঁড়া আজ তোর হচ্ছে। (ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে)


--- না মা বিশ্বাস কর আমি ভেবেছিলাম বিড়াল।তখন থেকে দুটো বিড়ালের খ্যাপা খ্যাপা কন্ঠ শুনছিলাম।ম্যাও ম্যাও করছিল আর আমার পড়ার ডিস্টার্ব হচ্ছিল।আর তুমিই তো বল বিড়াল যখন খ্যাপে তখন বিড়ালের গায়ে পানি দিলে দৌড়ে পালিয়ে যাই। (দৌড়াতে দৌড়াতে)


তখনি বাবার ডাক পরে।আর মা হাফ ছেড়ে চলে যায়।যাওয়ার সময় বলে যাই তোকে আমি পড়ে দেখে নেবো।তাকিয়ে দেখি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ফালাক ভাই হাসছে...


--- খুব হাসি পাচ্ছে তাই না তোমার?

--- খুব।হা হা হা

--- সব তোমার জন্য হয়েছে?

--- মানে তুই কি আমার উপর পানি মারতে চাইছিলি?

--- হুমম

--- কি???

--- কোনও কথা বলবা না।যাও এখান থেকে।আবার কেন এসেছো?

--- তোকে খাইয়ে দিতে।

--- ওহহ।কিন্তু আমি তোমার হাতে খাবো না।

--- কেন?

--- আমরা ব্রেকাপ করছি না? তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকবে।

--- আমি কখন করলাম করছিস তো তুই একা।

--- তোমার সাথেই তো করছি।

--- কিন্তু আমি করি নি।নে বস.. (হাত ধরে টেনে খাটে বসিয়ে ভাত মাখিয়ে) হা কর..


আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ খেয়ে নিলাম।


--- শোন আলফা কাল আবার তোকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে।

--- ভালো হয়েছে।এবার আমি বিয়ে করে নেবো।তুমি আমার বিয়েতে নাচ দেখাইও সবাইকে।

--- মারবো একটা চর

--- কেন?

--- পাত্র পক্ষ আসলে এমন কিছু করিস যেন বিয়েটা ভেঙে যায়

--- আমাকে পাগলা কুত্তায় কামড়াইছে যে আমি এমন কিছু করে মায়ের হাতে ঝাড়ুর বাড়ি খাবো?

--- তাইলে বিয়ে করে নিস আমি চললাম,,, (যেই যাবে আমি হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলাম আর বুকে মাথা রেখে বলতে লাগলাম)

--- তুমি একটা ঢেঁড়স।কিচ্ছু বোঝ না।

--- কি বুঝি না আমি?

--- এই যে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি।

--- কে বললো আমি বুঝি না?

--- তাহলে বিয়ে কেন করছো না আমাকে তুমি?


সাথে সাথে আমাকে ঠেলে উঠে বসলো।


--- এই তুই থাম তো! শুধু বিয়ে বিয়ে! তোকে এখন বিয়ে করলে আমি খাওয়াবো কি?


আমি আবার বিছানাই ফেলে দিলাম।আর ঝাপটে ধরে রেখে বললাম।


--- কেন তুমি যা খাবে তাই!

--- তুই কিছু বুঝিস না আলফা সর আমাকে যেতে দে(ভ্রু কুচকে বলল)


আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে..


--- সব বুঝি আমি!

--- আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে আমাকে এখন যেতে দে। আর তোর সামনে পরীক্ষা পড়াই মন দে।(কথাগুলো বলে আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে গেলো)


পরের দিন সকালে.....


চলবে.....


__বিয়ে

পর্ব : ০১

লেখিকা : লীজা 



__বিয়ে

পর্ব : ০২

লেখিকা : লীজা 

,

পরের দিন সকালে ফালাক ভাই আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে দেখে আমি তার বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি।


--- এই হাট, ওঠ আলফা ওঠ


আমি মাথা ঝাকিয়ে তাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।


--- এই তুই উঠবি? নাকি তোর মাথায় আমি পানি ঢেলে দেব? 


আমি দপ করে উঠে বসলাম। 


--- সমস্যাটা কি তোমার? বিয়ে করতে বললে করবা না।এখন কাছে আসলেও এমন করবা?

--- না মানে বলছিলাম আসলে আমার ঘরে কেন এসেছিস? কেউ দেখলে তো তোরই বদনাম হবে।


আমি আবার শুয়ে পরলাম।


--- হোক।তাতে তোমার কি? তুমি তো বিন্দাস ঘুরছো, ফিরছো আর নিজের কথা ভাবছো।

--- কই বিন্দাস ঘুরছি, ফিরছি? সারাদিন তো কত্ত কাজ করি আমি।

--- তুমি যে কি কাজ কর তা আমার ভালো করে জানা আছে।তাই তুমি তোমার কাজ নিয়ে পরে থাকো আর আমি আজ ছেলে পক্ষ আসলেই হ্যাঁ বলে দেব।

--- তখন আমার কি হবে?

--- সেটা তুমি বোঝো গিয়ে আমার কি! 


বলেই উঠে চলে আসবো। ফালাক ভাই পিছনের থেকে আমার হাতটা ধরে বসলো।আমি হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেস্টা করি আর সে ছেড়ে দেয়। 


--- একটা আনরোমান্টিক,ভীতুর ডিম, ঢেঁড়স কোথাকার।ভালোবাসাতেও যানে না।


বলে চলে আসলাম।আর ফালাক ভাই সেখানে মাথায় হাত দিয়ে বসে কিছু একটা ভাবতে থাকে।


বেলা ১০টা বাজে খাবার টেবিলে বসে মাকে ডাকছি, 


--- মা খেতে দাও ভার্সিটির দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।


মা কোথা থেকে একটা ঝাড়ু হাতে নিয়ে এসে আমার সামনে উঁচু করে ধরে,


--- কি হলো মা তোমার হাতে ঝাড়ু কেন?

--- তোকে মারবো তাই!

--- আমি কি করেছি? (ভয়ে আমতা আমতা করে বলি)

--- সকাল থেকে ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়িয়ে এখন এসেছিস খেতে?

--- ওহহ এইজন্য? ঠিক আছে আজ খাবো না। 

--- কি বললি? (চোখ রাঙিয়ে বলে) 

--- না! কিছু না মা! আমার ভালো লাগছে না 

--- তাহলে ডাকলি কেন? 

--- এমনি আসলে গলাটা বসে গেছে মনে হচ্ছিল তাই তোমায় ডেকে দেখছিলাম ঠিক হয় কিনা।


মা ঘুরে চলে যায়।আর আমি উঠে চলে যাবো এমন সময় চাঁচি এসে হাত ধরে টেনে বসায়।


--- আরে আরে না খেয়ে চলে যাচ্ছিস কেন? বস আমি তোকে খেতে দিচ্ছি। 

--- খাবো না আমি।

--- কিছুক্ষণ আগে তো মাকে ডাকলি খাবি বলে।

--- এখন খাব না।

--- মা কি কিছু বলেছে?

--- আমি মাথা নারিয়ে হ্যাঁ বলি।

--- তাই রাগ হয়েছে বুঝি? 

--- হুমমমম। 

--- আরে বোকা মেয়ে মা তো আর সারাক্ষণ বসে থাকে না! একটু রেগে গেছে হয়তো।

--- এ কেমন রাগ বলো, চাঁচি? আমার ভালো লাগে না। তুমি তো কত্ত ভালো।


পাশ থেকে মাহি এসে বলে, 


--- হ হ আমার মাতো অনেক ভালো একদম রিনা খানের মতো।


চাচি উঠেই কোমরে শাড়ির আঁচলটা গুজে ঝাড়ু খুঁজতে থাকে।


--- এ আমার ঝাড়ুটা কই রে? এতো বড় সাহস আমাকে রিনা খানেন মতো বলা! আজ হচ্ছে তোর।


চাচি ঝাড়ু খুঁজতে খুঁজতে মাহির পিঁছে ছুটতে থাকে।আর আমি খাবার টেবিল থেকে আবার উঠে যাওয়া ধরি।এমন সময় ফালাক ভাই এক হাতে নাস্তার প্লেট নিয়ে এসে অন্য হাতে আমাকে টেনে বসায়।আমি ফালাক ভাইকে দেখে অন্যদিকে মুখ করে থাকি।সে পরোটা ছিড়ে ভাজি ভরে আমার মুখের সামনে এনে ধরে, 


--- নে হা কর,


আমি মাথা ঝাকিয়ে না বলি।


--- রাগ হয়েছে বুঝি?

--- হুমমম

--- কিন্তু কেন? 

--- আবার জানতে চাইছো?

--- আচ্ছা আর জানতে চাইবো না।খাবারটা খেয়ে নে এবার

--- খাবো তবে তোমার হাতে খাবো না আমি

--- ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি 


বলে যেই চলে যাবে। আমি একটান দিয়ে আবার বসিয়ে দিয়ে ফালাক ভাইয়ের হাতে পরোটার টুকরোটা ধরিয়ে মুখের মধ্যে ভরেই হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিই।


--- আউচ ব্যাথা লাগলো তো।এভাবে কেউ কামড় দেয়? 

--- আমি দিই।বিয়ে করবে না বলেছিলে না? তোমার সামনে যখন অন্য কাউকে বিয়ে করবো তখন বুঝবে ব্যাথা কি জিনিস।


কথাটা বলে আমি তখনই উঠে ভার্সিটিতে চলে আসি।ভেবেছিলাম সামনে পরীক্ষা এখন একটা ক্লাসও মিস দেওয়া যাবে না।অথচ আজ লেট হয়ে গেল।পর পর দুটো ক্লাস মিস।তবুও পরের ক্লাসগুলো করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দেখি ফালাক ভাই ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে আছে।আমি দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কেটে চলে যেতে লাগি।ফালাক ভাই আমাকে ডাকলেও শুনি না।তারপর পিছনের থেকে হাত ধরে টেনে আমাকে নিজের কাছে টেনে নেয়।আমার দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে,


--- যাবি নাতো আমার সাথে? 

--- নাহ

--- ঠিক আছে


জোর করে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রিক্সায় বসায়।


(৩)


আমি রিক্সাতে বসে দাপাদাপি ঝাঁপাঝাপি শুরু করে দিই।আর নিজেকে ফালাক ভাইয়ের থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেস্টা করি। ফালাক ভাই আমার হাতদুটি এমনভাবে শক্ত করে ধরে রেখেছে যে নড়তে চরতেও পারছি না।পা দুটিও নিজের পা দিয়ে চেপে রেখেছে।আমি রাগি দৃস্টিতে ফালাক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,


--- তুমি আমাকে ছাড়বে নাকি আমি চিৎকার দিবো?


সঙ্গে সঙ্গে ফালাক ভাই এক হাত দিয়ে আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে অন্য হাতটি নিয়ে আমার মুখটি চেপে রাখে।


--- এমন করিস না আলফা।প্লিজ! আমি তোর পায়ে পরি রে বোন আমার কথাটা একবার শোন।


আমি এক ঝাড়ি দিয়ে বলি,


--- ছাড়ো! পায়ে পড়ছে! নেকা সষ্ঠি..পায়ে পড়লেই হয়ে গেলো! হুম।


একটা ভেংচি কেটে আমার মুখটা ঘুরিয়ে নিই।


--- এই শোন না আলফা


ফালাক ভাই আমার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতে যায়। আমি ফালাক ভাইয়ের হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকি।


--- ও আউচ।এই ভাবে কথায় কথায় কামড় দিস কেন?


 ফালাক ভাই ব্যথায় নিজের হাত ঝারা দিতে থাকে।


--- কি বললে তুমি? আমি তোমায় কথায় কথায় কামড় দিয়? ঠিক আছে! 


ফালাক ভাইয়ের হাতটি আমার মুখের সামনে ধরে।


--- এইবার দেখও আমি কি করি! 


বলেই যেই কামড় দিতে যাবো ফালাক ভাই টেনে আমার মুখের কাছে আমার হাতটি নিয়ে আসে। আর তখন আমার মুখের কামড় এসে আমার হাতেই লাগে।আমি কামড়টা দিয়ে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠি। চিৎকার করে ফ্যালফেলিয়ে কাঁদি।আর ফালাক ভাই জোড়ে জোড়ে হাসে।


--- দেখেছিস কাউকে কামড় দিলে কেমন লাগে?


আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি,

--- খুব মজা নিচ্ছো তাই না?

--- না না মজা কেনো হবে? তুই তো নিজেই নিজেকে কামড় দিলি!

--- আমি দিয়েছি নাকি? সব তোমার দোষ! 


আমি একটা ধাক্কা দিয়ে ফালাক ভাইকে দূরে সরিয়ে দিয়ে,


--- তুমি তো আমার কাছে আর কখনও আসবেই না।


কিছুক্ষণ পর,


তাকিয়ে দেখি ফালাক ভাই চুপ করে আছে।আমি মাথা তুলে বলি।আচ্ছা ফালাক ভাই তুমি নাচতে যানো? না যানলে ইউটিউব দেখে শিখে নিও, নাগিন ড্যান্স।আর যদি তাও না পারো আমার বিয়েতে তুমি শুধু একটু কোমরটা দুলিয়ে গানের তালে তালে হেঁটে দেখিও। 


আমি কথাটা বলার পর, ফালাক ভাই আমার কোমড়টা ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।


--- তোকে অন্যকারও হতে দিলে তো বিয়ে করবি?


আমি ফালাক ভাইয়ের শার্টের কলারটি টেনে ধরি,


--- তাহলে বল তুমি আমায় বিয়ে করবে?


ফালাক ভাই আমার হাত থেকে শার্টের কলারটি ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,


--- সে সময় হলে দেখা যাবে এখন চুপচাপ বসে থাক তো।


আমি রেগে গিয়ে ফালাক ভাইয়ের পিঠে ইচ্ছা মতোন কিল বসাতে থাকি।সামনে তাকিয়ে দেখি রিক্সাটা অন্য রাস্তা ধরেছে।আমি ফালাক ভাইয়ের কাছে জানতে চাই, 


--- এই রিক্সা এদিকে কেন যাচ্ছে বাড়ি তো ওদিকে!


ফালাক ভাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার চোখদুটি নিজের হাত দিয়ে ঢেকে রাখে।


--- সেটা সারপ্রাইজ।এবার তুই তখনই চোখ খুলবি যখন আমরা পৌঁছাবো। 

--- ঢং করো ঢং? ছাড়ও আমার চোখ! নইলে কিন্তু আমি উসটা দিয়ে ফেলে দেব রিক্সা থেকে তোমায়।


ফালাক ভাই আমার চোখটা ছেড়ে দেয়,


--- ধূর! এমন পাগলি কেন তুই? সারপ্রাইজও নিতে চাস না!


--- শোনও আমার ওসব সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ ভালো লাগে না।যা হবে সামনা সামনি।অতো ধৈর্য নেই আমার! তাই বল কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়? 

,


চলবে....



__বিয়ে

পর্ব : ০৩ (সমাপ্ত) 

লেখিকা : লীজা 


আমি রেগে গিয়ে ফালাক ভাইয়ের পিঠে ইচ্ছা মতোন কিল বসাতে থাকি।সামনে তাকিয়ে দেখি রিক্সাটা অন্য রাস্তা ধরেছে।আমি ফালাক ভাইয়ের কাছে জানতে চাই, 


--- এই রিক্সা এদিকে কেন যাচ্ছে বাড়ি তো ওদিকে!


ফালাক ভাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার চোখদুটি নিজের হাত দিয়ে ঢেকে রাখে।


--- সেটা সারপ্রাইজ।এবার তুই তখনই চোখ খুলবি যখন আমরা পৌঁছাবো। 

--- ঢং করো ঢং? ছাড়ও আমার চোখ! নইলে কিন্তু আমি উসটা দিয়ে ফেলে দেব রিক্সা থেকে তোমায়।


ফালাক ভাই আমার চোখটা ছেড়ে দেয়,


--- ধূর! এমন পাগলি কেন তুই? সারপ্রাইজও নিতে চাস না!


--- শোনও আমার ওসব সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ ভালো লাগে না।যা হবে সামনা সামনি।অতো ধৈর্য নেই আমার! তাই বল কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়? 


--- বিয়ে করতে।করবি আমায় বিয়ে? 


ফালাক ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে আমি ভেতরে ভেতরে নাচানাচি শুরু করে দিয়।যদি পারতাম রিক্সার মধ্যেই হাত পা ছুড়ে ছুড়ে নাচতাম।খুশিতে তো এখন আর আমার তরই সইছে না। আমি নিরব থেকে কিছুক্ষণ পর পর মুচকি হেসে হাতের কনুই দিয়ে ফালাক ভাইকে খোঁচা দিচ্ছি।আর বলছি,


--- সত্যি ফালাক ভাই? বলও না! বলও না! তুমি আমায় বিয়ে করবে?


ফালাক ভাইও মুচকি মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে আমাকে সম্মতি যানাচ্ছে। আমি হুট করেই ফালাক ভাইকে জড়িয়ে ধরি।


--- আগে বলতে কথাটা! শুধুই এতোক্ষণ ঝগড়া করলে

--- ঝগড়া কি আমি করেছি? করেছিস তো তুই।শরীরের সব এনার্জি নস্ট হয়ে গেছে তোর এই ঝগড়ার কারণে।

--- সরি! আগে যানলে আমি কক্ষনো তোমার সাথে এমনটা করতাম না।দেখতে শুরশুর করে তোমার সাথে চলে আসতাম।

--- ঠিক আছে।এখন চুপটি করে বস তো।


আমাদের রিক্সাটা এসে কাজি অফিসের সামনে থামে।আমরা রিক্সা থেকে নামতেই আমার ছোট ভাই তুষার আমাদের দিকে এগিয়ে আসে।


--- ফালাক ভাই এতো দেরি করলে কেন? আমরা সেই কখন থেকে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি যানো?

--- আর বলিস না তুষার রাস্তায় একটা বানর নাচ চলছিল তোর আপু বলল না দেখালে নাকি বিয়ে করবে না 

--- এটা কিন্তু ঠিক না ফালাক ভাই। আপু বলল বলে শুধু আপুকেই দেখাবে?

--- কেন তুইও দেখবি নাকি?

--- হুমমম

--- আরে পিচ্চি বাদর নাচ ছোটদের দেখার জন্য না এটা বড়দের জন্য তুই আগে বড় হ তারপর দেখিস

--- না আমি মাহিকে নিয়ে এখন যাব বল কোন রাস্তায় হচ্ছে। 


আমি দুজনকে জোড়ে একটা ধমক দিলাম।তারপর ফালাক ভাইয়ের শার্টের কলারটা টেনে ধরে বললাম,


--- ওই আমার ভাইটাকে কি বোকা পেয়েছো তুমি? 

--- আরে না একটু মজা করছিলাম

--- রাখও তোমার মজা!


একটা ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে ভাইকে নিয়ে হাঁটা ধরি।ফালাক ভাই আমার পিঁছনে পিঁছনে আসে।কাজি অফিসের মধ্যে ঢুকেই আমি অবাক।দেখি দাদা-দাদি কাজির সামনের চেয়ারে বসে আছে।ফালাক ভাই আমার পাশে এসে দাড়ালে আমি ফালাক ভাইয়ের হাতে একটা চিমটি কাটি।


---:আহ! চিমটি কাটলি কেন?


আমি হাতের ইশারায় দাদা-দাদিকে দেখিয়ে বলি,


--- দাদা-দাদি ওখানে বসে কি করছে?

--- আমি এনেছি

--- কেন?

--- বিয়ে দিতে

--- এই বয়সে আবার বিয়ে? 

--- ধূর হাট! আমাদের বিয়ে দিতে এসেছে।

--- ওওও তাই বল

--- তাই তো বললাম

--- ঠিক আছে চলো।


 আমি একটু লজ্জা লজ্জা মুখ করে তাদের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। তারা আমাদের দেখে উঠে দাড়িয়ে দুজকে হাত ধরে চেয়ারে নিয়ে বসায়।আমার থুতনিতে ধরে দাদি বলে,


--- কিরে দাদুভাই বিয়ের জন্য এতো অস্থির হয়ে গিয়েছিলি? একবার তো আমাদেরকে বলে দেখতে পারতি। আমরা যদি জানতাম তাহলে আরও অনেক আগে তোদের বিয়ে করিয়ে দিতাম।


আমি উঠে দাড়িয়ে দাদিকে জড়িয়ে ধরি।


--- সব দোষ ওই ফালাক ভাইয়ের। যানো তো দাদি কাউকে বলতে দেয় না।খুব খারাপ!


ফালাক ভাই আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়।


--- বড্ড বেশি কান ভাঙাচ্ছিস তুই দাদির।চুপচাপ বিয়েটা করে নে নইলে কিন্তু আমি চলে যাব 

--- ওই তুমি আমাকে ধমকাচ্ছো? 


দেখেছো দাদি তোমার নাতি এমন করে সবসময় আমার সাথে দাদি ফালাক ভাইকে একটা জোড়ে ধমক দেয়।ফালাক ভাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। তারপর দাদি বলে, 


--- দেখছিস তো মেয়েটা তোর এসব ছেলে মানুষি পছন্দ করছে না।বিয়ের সময় অন্তত একটু মিস্টি করে কথা বল।তা না একদম দাদার মতোন ঢেঁড়স হচ্ছিস।

--- ঠিক আছে দাদি।দেখি আলফা আমার দিকে তাকা তো।


ফালাক ভাই আমার মুখের সামনে নিজের মুখটা নিয়ে এসে কথাটা বলে।আমি চোখ তুলে ফালাক ভাইয়ের দিকে তাকাই।ফালাক ভাই কিছুক্ষণ নিরবে থেকে ভ্রু কুচকে ওঠে।


--- কি হলো?

--- তোকে একটুও বউ বউ লাগছে না আলফা।কোনও সাজগোজ কিচ্ছু নেই।আজ থাক অন্য একদিন আসবো। চল..


বলেই আমার হাত ধরে টেনে উঠে আসতে যায় আর দাদি ফালাক ভাইয়ের কানটা টেনে ধরে।


--- ইয়ারকি হচ্ছে? 

--- আহ দাদি কানটা ছাড়ও লাগছে তো।

--- ঠিক আছে দাদি ছাড়বে না।একটু বেশি করে কান মলা দাও।যেন আর কখনও না বলতে পারে বিয়ে করবে না।


ফালাক ভাই দাদুকে ডাকে।


--- ও দাদু এভাবে চুপ করে দাড়িয়ে আছো কেন কিছু বল না তোমার গিন্নিকে

--- আমি কি বলব দাদুভাই? তোমার দাদিকে যে আমি বড্ড ভয় পাই।ওর মুখের উপর আমি কিছু বলি না।

--- ধূর! আর হয় না! 


ফালাক ভাইকে কান মলা খেতে দেখে আমি আর তুষার মুখ টিপে হাসি।দাদি ফালাক ভাইয়ের কানটা ছেড়ে দিয়ে বলে।


--- এবার ফটাফট বিয়েটা করে ফেল তো।বাড়িতে বাকি সদস্যরা অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য।


--- ঠিক আছে দাদি। দুজনেই এক সাথে বলি।


অতঃপর বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।বিয়ের পর কাজি অফিসের থেকে বের হয়ে দাদা-দাদি আর তুষারকে একটা রিক্সা ডেকে উঠিয়ে দিই।আর আমরা অন্য রিক্সায় উঠে আবার ঝগড়া করতে লাগি।


-----সমাপ্ত-----


এমন আরও গল্প পড়ুন।