স্বামীর পরকীয়া | বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প |

 বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

আজ তিন বছর পর মুখোমুখি হলাম আমার স্বামীর। যার সাথে তিন বছর ধরে সেপারেশনে আছি। বলাবাহুল্য আমাদের ডিভোর্স হয় নি। স্বামীর কোলে আছে দেড় বছরের এক বাচ্চা মেয়ে। মেয়েটা অবশ্য আমার নয়। আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীর। যার কারনে আমাদের সংসার জীবনের ইতি ঘটেছিলো তিন বছর আগে। আমি দেখতে যে খারাপ বা কালো তেমনটা না। আমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী স্মার্ট। প্রিন্সেস ডায়নার একটা বিখ্যাত উক্তি আছে না?আমি যাকে ভালোবেসে ছিলাম,সে ছাড়া গোটা বিশ্ব আমায় ভালোবেসে ছিল। প্রিন্সেস ডায়না তো কোনো অংশে কম ছিলো না। না রূপে আর না আভিজাত্যে। সব দিক দিয়েই সে এগিয়ে ছিলো। সেখানে প্রিন্সেস ডায়নার স্বামী তাকে ঘরে রেখে বাহিরে পরনারী তে আসক্ত হয়েছিল। সেখানে আমার স্বামী কোন ঝাড়। যাদের মেন্টালিটি খারাপ তাদের স্ত্রী যতোই সুন্দর হোক না কেনো বাহিরের নারীদের দিকে তাদের লালসাযুক্ত চোখ যাবেই। 


রিলেশন করে বিয়ে করেছিলাম আমি আর সাইমন। বিয়ের আগে সম্পর্ক ছিলো দু বছরের। বিয়ের আড়াই বছরে এসে তার মনে হয়েছিলো আমার সাথে তার সংসার করা আর পসিবল না। সে দ্বিতীয় বিবাহ করতে চায়। তার ই অফিসের এক কলিগ কে। যেদিন এই কথাটা আমায় সাইমন বলেছিল সেদিন শুধু নির্বাক হয়ে তার পানে চেয়েছিলাম। সাইমন হয়তো ভেবেছিলো আমি তার পায়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলবো প্লিজ এমন টা করো না। আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করো না। কিন্তু নাহ সাইমনকে অবাক করে সেদিন শুধু বলেছিলাম,,


" কাকে বিয়ে করতে চাও।


" আমার অফিসের কলিগ রাইমা কে।


" কত দিনের সম্পর্ক তোমাদের?


সাইমন অবাক হয়েছিলে বটে এ কথা শুনে কিন্তু পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,


" সাত মাসের।


" ওহ আচ্ছা বেশ তো বিয়ে করো আমার আপত্তি নেই। আচ্ছা আমরা বিয়ের আগে কয় বছর রিলেশনে ছিলাম?


" হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো?


নাবিলা সাইমনের কাছে গিয়ে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে,,


" আহা বলোই না কয় বছরের রিলেশন ছিলো আমাদের। 


" হবে হয়তো বছর দুয়েক।


" দু বছর চার মাস পনেরো দিনের ছিলো। ষোলো দিনের মাথায় আমরা বিয়ে করি। বিয়ের আগে যেনো কি বলেছিলে আমায়? আমি ব্যাতিত অন্য মেয়ের দিকে চোখ যাবে না। আমাকে খুব ভালোবাসো। আমি হীনা তুমি শূন্য ব্লা ব্লা ব্লা আরো কত কি তাই নাহ! সেসব প্রেম ভালোবাসা প্রতিশ্রুতি কি তাহলে নিকটনের ধোঁয়ায় মতো সময়ের সাথে আকাশে মিলে গেছে।


" জানি না। কিন্তু তোমার সাথে সংসার করতে চাইছি না।


" বেশ।


" ডিভোর্স চাই।


" আমাদের কাবিননামা জানি কত?


" এগারো লাখ।


" কে যেনো এতো টাকা দিয়েছিলো কাবিননামায়।


" আমি।


" যেই তোমার মাসিক ইনকাম ত্রিশ হাজার সেই তুমি এগারো লাখ কিভাবে দিবে আমায়! একটা সময় আমাকে হারানোর ভয়ে এতো টাকা কাবিননামা করেছিলে। 


" সে চিন্তা তোমার করতে হবে আমি যেভাবে পারি দিয়ে দিবো।


" থাক তোমার দিতে হবে না টাকা। তুমি বিয়ে কর আমি চলে যাব। কখনো তোমার সামনে বউয়ের অধিকার নিয়ে আসবো না।


সাইমন উৎফুল্ল হয়ে বলে,,


" সত্যি চলে যাবে। যদি ফের বউয়ের অধিকার নিয়ে চলে আসো তখন?


নাবিলা কথা দিয়ে কথা রাখতে জানে। সেটা তোমার থেকে ভালো আর কে জানবে।


" হুম তাহলে কালই চলে যেয়ো আমি কাল রাইমা কে বিয়ে করবো। আমি তো ভেবেছি তুমি সহজে মানবেই না হাতে পায়ে ধরে বিয়ে করো বিয়ে করো না বলে কাঁদবে। 


সাইমনের কথা শুনে বেশ হাসি পেলো। হাসলাম না বরং গলায় কাঠিন্যে এনে বললাম,,


" আমি কেনো তোমার পা ধরে কাঁদবো? আমি কি অন্যায় করেছি নাকি ভুল? সময় কথা বলবে কে কার পা ধরে। আমি তো সেদিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন এই দিনটা আসবে।


সাইমন কথাটা শুনে অট্টহাসি তে মেতে উঠে। কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলে,,


" নাইস জোক্স নেক্সট প্লিজ। দিবাস্বপ্ন দেখো এটা কখনোই হবার নয়। রাইমা আমায় খুব ভালো বাসে। 


" যেখানে সাড়ে চার বছরের মাথায় এসে আমার বিশ্বাস ভেঙে অন্য নারীতে আসক্ত হয়েছো সেখানে ছয় মাসের সম্পর্কে তোমার এতো আত্মবিশ্বাস বাহ! 


" কারন আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। 


" তাহলে কি আমার সাথে সেসব টাইমপাস ছিলো।


" তুমি যা মনে করো।


" আমি তো অনেক কিছুই ভেবে বসে আছি। তোমার পতন টা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো।


" বললাম তো দিবাস্বপ্ন দেখো কারন এটা শুধু দিবাস্বপ্নেই সম্ভব। 


কথাটা বলে সাইমন বেরিয়ে যায় রুম থেকে। এতোক্ষণ আটকে রাখা কান্না গুলো এবার উপচে বেরিয়ে আসে। শেষ বারের মতো নিজের ঘর আসবাবপত্র গুলো ছুঁয়ে দেখে নেয়। আলমারি থেকে জামা কাপড় প্যাক করে নিয়ে বেরিয়ে যায়। সেই থেকে আজ অব্দি সাইমনের সামনে যায় নি নাবিলা। আজ আকস্মিক দেখা হয়ে গেছে তাদের শপিংমলে।


বেশ খানিকক্ষণ নিরবতা থেকে নাবিলা বলে উঠে,, 


" আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবেন আমায়। কিছু বলার থাকলে বলুন তা না হলে আসি। 


সরসা সাইমন নাবিলার হাত ধরে বলে,,


" বাহ অনেক টা পাল্টে গেছো তুমি নাবিলা। আগের থেকেও সুন্দরী হয়েছো দেখতে।


" সময় মানুষ কে পাল্টে দেয়। 


" ফিরে আসে আমার জীবনে নাবিলা। তোমার মতো করে সত্যি কেউ আমায় ভালোবাসতে পারে নি। রাইমা আমাকে ঠকিয়েছে সে আমার সাথে সংসার করা শর্তেও বাহিরে সম্পর্ক করেছে। দেখো আমার এই দুধের শিশুর যখন ছয় মাস তখন সে অন্য পুরুষের সাথে পালিয়ে যায়।


নাবিলা ঝটকা মে'রে সাইমনের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,,


" এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি। হাত ধরছেন কেনো। আর আপনার স্ত্রী কার সাথে চলে গেছে কি করছে না করছো সেগুলো কি আমি জানতে চেয়েছি? 


" তুমি তো আমারই স্ত্রী সেই হিসেবে তো রাইসার ও মা। তুমি প্লিজ আমার লাইফে ব্যাক করো।


নাবিলা তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে,,


" ও হ্যালো মিস্টার সাইমন এটা আপনার মেয়ে, আমার নয়। আপনার মেয়ের দায়িত্ব আমার না। আর আপনার লাইফে ব্যাক করতে বলছেন, আমি কেনো আপনার লাইফে ব্যাক করবো আপনার স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে চলে গেছে দেখে। মেয়েকে একা মানুষ করতে পারছেন না বলে বাহ! আপনি যেভাবে আমায় বিয়ে করা সত্ত্বেও বাহিরে রিলেশন করে বেরিয়েছেন সেম আপনার ওয়াইফ ও আপনার সাথে তেমনটা করছে। রিভেঞ্জ অব নেচার নামে একটা প্রবাদ বাক্য আছে জানেন তো। কাউকে ঠকালে প্রকৃতি কোনো না কোনো উপায়ে ঠিক সেটা সুদে আসলে ফেরত দেয়। যাই হোক আপনাকে একদিন বলেছিলাম একটা সময় আসবে আপনি আমার কাছে আসবেন আমাকে আপনার লাইফে ফেরত যেতে, দেখেছেন সেটাই হলো। আমি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো সাইন করে দিয়েন ভালো থাকবেন মেয়েকে নিয়ে। ভীষণ মিষ্টি হয়েছে দেখতে।


" এতোদিন যখন পাঠাও নি ডিভোর্স পেপার তাহলে এখন কেনো পাঠাবে। 


" কারন এখন আমি আপনাকে ডিভোর্স দিলে যেই প্রশান্তি টা পাবো তখন দিলে সেটা পেতাম না। আপনি কি মনে করেছেন আমি রাইমার ব্যাপারে জানতাম না! ওর যে আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো আর ও যে কেমন মেয়ে সব আমার জানা। মাকাল ফলের লোভ হয়েছিলো আপনার। মাকাল ফল যেমন বাহির থেকে দেখতে সুন্দর ভেতরটা দুর্গন্ধ ও শাঁসযুক্ত খাওয়ার অনুপযোগী। তেমনটা রাইমা।


সাইমন অসহায়ত্ব নিয়ে বলে,,


" ওর মা হয়ে কি থাকা যায় না?


" না থাকা যায় না। আমি অন্যের বাচ্চার মা হতে চাই না। সমস্যা কি একজন কে পায়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করছেন সে চলে গিয়েছে তাতে কি আরেকটা বিয়ে করবেন। ছেলেদের মেয়ের অভাব হয় না। একটা গেলে আরেক টা আসে।


" আমার তো আরেক টা চাই না আমার তোমাকে চাই।


" সেই রাস্তাটা তিন বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। যেদিন আমার সংসার অন্যের অধীনে ছিলো। ভালো থাকবেন অযথা আমার থেকে প্রত্যাশা রাখবেন না।


কথাটা বলে বেরিয়ে আসে নাবিলা। বাহিরে এসে প্রশান্তির একটা শ্বাস ফেলে। অপেক্ষার অবসান তাহলে ফুরালো। দীর্ঘশ্বাস যে লেগে যায় তার প্রমাণ অনেকবারই পেয়েছি, তাই বিশ্বাস করি রিভেঞ্জ অব ন্যাচার বলে নিশ্চয় কিছু আছে। 


খুব যত্ন করে কষ্ট দেন যাতে কেউ যেন টের না পায়! তবে নিজেকেও একটু তৈরি রাখবেন ভবিষ্যতের জন্য। যে কষ্টগুলো কাউকে দিচ্ছেন দুনিয়াতেই তার পুরোটা না হলেও মিনিমাম এক তৃতীয়াংশ ভোগ করে যেতে হবে আপনাকেও। গোলাকার এই পৃথিবীতে আপনার দেওয়া কষ্টগুলো ঘুরে ফিরে কিন্তু আপনার কাছেই একদিন না একদিন ফেরত আসবেই।

সবার মনে রাখা উচিত, মানুষের দীর্ঘশ্বাস খুব খারাপ। সামনে এগোতে গেলে শেকলের মতো পা জড়িয়ে টেনে ধরে। ভালো থাকুক চারপাশের মানুষগুলো। ভালোবাসার, ঘৃণার, কাছের, দূরের সবাই ভাল থাকুক। অভিশাপ না দিলেও ‘রুহের হায়’ বলে একটা কথা আছে, যাকে রিভেঞ্জ অব নেচার বলে। যেটা আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে। প্রকৃতি কিছুই ভোলে না। সময়ের ব্যবধান মাত্র।


-সমাপ্ত


-অণুগল্প

-রিভেঞ্জ_অব_নেচার


এমন আরও বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।