রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
-গল্পঃ_এক্স_গ্রার্লফ্রেন্ড_যখন_বউ
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
সারা দিনের ক্লান্তি শেষে জলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছি।মনের সুখে একের পর এক টান দিয়ে যাচ্ছি। পুর্নিমার মস্তবড় চাঁদটা আমার বাসার ছাদটাকে ঝলসে দিচ্ছে।। মাঝে মাঝে আকাশের চাঁদটা মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে।
একটু পর পর দমকা হাওয়া আমার অশান্ত মনকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করছে। সিগারেটের শেষ টানটা দিয়ে ছাদের সাথে পিষে দিলাম। পকেট থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম ১ঃ৩০ বেজে গেছে। নাহ আর লেট করা ঠিক হবে না। এবার রুমে যাওয়া দরকার।
এই বলে ছাদ থেকে নিঁচে যেতে লাগলাম।নিজের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
ভিতরে ডুকবো নাকি ডুকবো না সেটা ভাবতে ভাবতে আস্তে করে দরজায় দুইটা টোকা দিলাম। সাথে সাথে দরজা খুলে গেলো।
খুলে গেলো বললে ভুল হবে,কেউ দরজাটা খুলে দিলো। মনে হয় সে আমার জন্য অপেক্ষায় ছিলো।
দরজা ধরে সে দাঁড়িয়ে আছে।আমি তাকে পাশ কাটিয়ে রুমে ডুকে পড়লাম। ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেই আমার জানের কোলবালিশ টাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম।
বিয়ের আগে কত স্বপ্ন ছিলো,,বিয়ের পর কোলবালিশ রুমেই রাখবো না। কিন্তু সেটা আর হলো না। বিয়ের পরেও সেই কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে হলো। অবশ্য সেটা নিজের ইচ্ছায়।
শুনেছি বাসর রাত নিয়ে মেয়েদের অনেক পরিকল্পনা থাকে, এই মেয়েটিরও হয়তো ছিলো কিন্তু তাতে গুড়ে বালি। মেয়েটিরও হয়তো অনেক আশা ছিলো কিনা জানিনা। তবে মেয়েটির মুখ দেখে বেশ বুঝতে পারছি, সে আমার কার্য্যকলাপে অনেকটা অবাক হয়েছে।
আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যা ভাবে ভাবুক তাতে আমার কি আসে যায়। বেশিক্ষণ তার দিকে না তাকিয়ে পাশে ফিরে শুয়ে পড়লাম। সকাল বেলায় ঘুম ভাঙ্গলো মেয়েটির ডাকে.........
মেয়েটিঃ এই যে শুনছেন? ( মানে আমার নতুন বউ )
আমিঃ,,,,,,,,,,,,,,?? ( চুপ করে রইলাম )
মেয়েটিঃ কি হলো উঠেন না, আর কত ঘুমাবেন?
ঘুমম ঘুমম চোখে তার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো পাশে ফিরে শুয়ে পড়লাম। এবার আমাকে বললো.....
মেয়েটিঃ অনেক বেলা হয়ে গেছে তো, এবার উঠেন?
মেজাজ টা পুরাই গরম হয়ে গেলো..। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দিলাম একটা ঝাড়ি। ঝাড়ি দিয়ে বলতে শুরু করলাম.......
আমিঃ কানের কাছে একদম চিৎকার চেঁচামেচি করবেন না। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।
ভুলেও আমার কাছে আসবেন না?
মেয়েটিঃ না মানে আম্মা....?( পুরোটা না বলতে দিয়ে)
আমিঃ চুপপপ থাকেন,, আমার সামনে থেকে যান তো। আপনাকে আমি সহ্য করতে পারছি না। কি হলো যান?
মেয়েটি কিছু সময় আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হয়তো বিয়ের দ্বিতীয় দিন এমন কথা আশা করেনি। তারপর চুপ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
স্পষ্ট দেখতে পেলাম মেয়টির চোখের কোনে পানি চলে এসেছে। কাঁদলে কাঁদুক তাতে আমার কি।
ধ্যাত আর ঘুম আসছে না। কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে আম্মু কে বললাম.......
আমিঃ আম্মু ক্ষুদা লাগছে, খেতে দাও?
আম্মুঃ তুই টেবিলে গিয়ে বস,বউ মা তোকে খেতে দিচ্ছে?
চুপচাপ খাবার খেয়ে রেডি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। মাত্র পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি পেলাম। এর মধ্যে আব্বু আম্মু বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করলো। আমার ভালো, মনে হয় কারো সহ্য হয় না।
অনেক টা জোর পুর্বক ভাবে মেয়ে দেখার জন্য নিয়ে গেলো আমাকে। ব্যাস অঘটন টা ওখানে ঘটে গেলো। মেয়েকে আব্বু আম্মুর পছন্দ হয়েছে।তাই ওই দিনেই জোর করে আমার গলায় ফাঁসি ঝুলিয়ে দিলো।
মেয়েটিকে যে আমার পছন্দ হয়নি তা না। বরং আশ্চর্য হয়ে ছিলাম অনেকটাই। কি আর করার বিয়ে টা শেষ মেশ করতে হলো আমাকে।। টংয়ে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় এক দোস্ত বলে উঠলো.......
সোহেলঃ কি মামা রাতে ঘুম কেমন হলো?
আমিঃ আরে মামা রাতটা পুরাই বিন্দাস কাটছে৷ কি যে মজা হইছে তোদের বলে বুঝাতে পারবো না?
বলেই সবাই হাঁসতে লাগলাম। আড্ডা দিতে দিতে কখন যে ২ টা বেজে গেছে খেয়াল করিনি। হটাৎ করে আম্মুর কল আসলো। কলটা রিসিভ করতেই আম্মু আমাকে বলে উঠলো.........
আম্মুঃ ওই হারামজাদা কই তুই, তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়?
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো। এরপর আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আল্লাহ ভালো জানে আজ কপালে কি আছে। আম্মু এতো রাগলো কেনো বুঝতে পারছি না।
দরজায় নক করতেই মেয়েটি দরজা খুলে দিলো।। মনে হয় সে জানতো আমি এখনই চলে আসবো৷ যাইহোক রুমে ডুকার সাথে সাথে আম্মুর হাই লেভেলের ঝাড়ি...
আম্মুঃ তোর কি কোনোদিন বুদ্ধি সুদ্ধি হবে না৷ ।তোর জন্য যে কেউ না খেয়ে বসে থাকতে পারে সে খেয়াল কি তোর আছে?
আমিঃ আমার জন্য আবার কে না খেয়ে বসে আছে?(অনেক টা অবাক হয়ে)
আম্মু আর কিছু বলার আগেই আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসলাম।
টেবিলের উপর এতো গুলো পছন্দের খাবার দেখে ক্ষুদা যেনো আমার আরো ১০ গুন বেড়ে গেছে। খাবার গুলো যদিও অনেক সুস্বাদু ছিলো, তবুও মেয়েটাকে ঝাড়ি দিয়ো বললাম......
আমিঃ এগুলো কি রান্না করেছেন, এগুলো মানুষ খায়। যত্ত সব অখাদ্য কুখাদ্য রান্না করেছেন। রান্না পারেন
না, রান্না করতে বলছে কে। ঢং দেখলে বাঁচি না?
কথাটা বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে যেতে লাগলাম। এমন সময় মেয়েটি বললো...........
মেয়েটিঃ না খেয়ে উঠবেন না প্লিজ। একটু অপেক্ষা করেন। আমি ডিম ভাজি করে এনে দেই..?
আমিঃ আপনার ডিম ভাজি আপনি খান। আপনার হাতের রান্না খাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।
এতো দরদ দেখাতে হবে না..?
কথাটা বলে কোনো রকম হাতটা ধুয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে মেয়েটি এক কাপ চা নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
চায়ের কাপ হাতে নেওয়ার সময় দেখলাম মেয়েটা মুখ একদম শুকিয়ে গেছে, চোখগুলো ফুলে গেছে।
মনে হয় অনেক কান্না করেছে৷ কাপটা আমার হাতে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দিন যত যাচ্ছে মেয়েটির জ্বালানোর মাত্রা ততই বাড়ছে।। ছোট ছোট ব্যাপারে হাজরটা কথা শুনাইতাম।
মুখে কিছু না বললেও লুকিয়ে লুকিয়ে যে কান্না করতো সেটা তার মুখ দেখলেই স্পষ্ট বুঝা যায়। একবার তো ফ্রিজের থান্ডা পানি গায়ে ঢেলে দিয়েছেলাম।
জ্বরের জন্য সাতদিন বিছানা থেকে উঠতে পারেনি এত কিছুর পরেও আমার আদর যত্নের কোনো কমতি রাখতো না। সব সময় আমার কেয়ার করতো। হটাৎ করে মনে পড়ে গেলো.....পুরোনো দিনের কথা গুলো।।
তখন আমি ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ালেখা করি।। প্রাইভেট পড়ে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম...হটাৎ একটা মেয়েকে দেখে খুব ভালো লেগে যায়। লাভ এন্ড ফাস্ট সাইট যাকে বলে আরকি ওই টাইপ কিছু একটা।
হিজাবি টাইপ বোরকা পড়েছিলো মেয়েটা। তার চোখে এতটাই মায়া ছিলো যে...আমাকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে।
তখন রাস্তার পাশের চায়ের দোকান বা কোনো বাসার গলির ভিতর দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আঁখি কে খুঁজে বেড়াতাম।
এই ভাবে এক বছর শুধু তাকে দেখেই গেলাম। সাহস করে আঁখি কে মনের কথাটা বলতে পারলাম না।
সামনা সামনি কথা বলতে না পারলেও, ফেসবুকের মাধ্যমে সেই কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।
দিনটা ছিলো ২০ এ জুন, হটাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো নিজের অজান্তেই। আঁখি আমাকে বিনা নোটিশে ব্লক লিস্টের ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। এই ফাস্ট টাইম কেউ আমাকে ব্লক লিস্টে রেখে দিয়েছে।
তাকে পিরে পাবার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যেক বার আমাকে ধুর- ধুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে...পড়া শোনা মন বসাতে পাড়তাম না। ঠিক মতো কোনো কাজ কাম করতে পাড়তাম না। সব সময় শুধু আঁখির কথা মনে পড়তো।
ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয়টা নিয়ে আর আগের মতো গুছিয়ে উঠতে পারিনি৷।কিন্তু আল্লাহর রহমতে আপ্রান চেষ্টার পরে শেষমেশ ভালো একটা চাকরি পেলাম।
চাকরি পাবার পর থেকেই আব্বু ও আম্মু আমার পিছু লেগে যায়। অনেকটা চাপে পড়ে মেয়ে দেখতে যাওয়া।
পাত্রীকে যখন আমার সামনে নিয়ে আসা হয়, তখন এতটাই অবাক হয়েছিলাম, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
সেই চোখ,সেই মুখ, সেই ঠোঁট আমি রিতীমতো স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কারন মেয়েটি আর কেউ না,সেই ছিলো আঁখি।
আব্বু আম্মুর পছন্দে সেদিন আমার বিয়ে টা হয়৷ যদিও বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা ছিলো না আমার৷
আবার মানাও করছিলাম না। দীর্ঘ ৫ বছর পর আঁখিকে আমার করে পাবো কল্পনা ও করিনি।
আঁখির উপর এতদিনের অভিমানের ফলেই ইচ্ছে করে ওকে কষ্ট দিতাম।। একটু বুঝুক মানুষের ইমোশনে কষ্ট দিলে কেমন লাগে।
যদিও ওকে কষ্ট দিতাম, নিজেও কষ্ট পেতাম। আঁখি না খেয়ে থাকলে আমি ও খেতাম না।
ও যখন কান্না করতো তখন আর সহ্য করতে পারতাম না। তাই বাথরুমে গিয়ে নিজেও কান্না করতাম। রাতের পর রাত ওর মুখ দেখেই পার করে দিতাম।
প্রতিদিন ও ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিতাম।
এতো কষ্ট দিতাম,অথচ পাগলীটা কিছুই বলতো না। বিয়ের প্রায় ৬ মাস পার হয়ে গেছে অথচো আজও বুঝতে দেইনি কতটা ভালোবাসি ওকে।
পাগলীটাকে অনেক কাঁদাইছি,,, আর না।। বড্ড বেশি ভালোবাসি তো, ভালোবাসার মানুষের ভুল যদি ক্ষমা নাইবা করতে পারি,,,তাহলে আমি কেমন প্রেমিক...
সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ২০ টা লাল গোলাপ কিনে নিয়ে আসলাম। আজ আমার অনেক স্পেশাল একটা দিন।
আজ থেকে ঠিক ২ হাজার ৭ দিন আগে,, প্রথম আমি
আঁখিকে দেখেছিলাম। ২ হাজার গোলাপ ফুল কিনা তো আর সম্ভব না। তাই ২০ টা গোলাপ ফুল কিনেছি।
অফিসের ব্যাগটা রুমে রেখে সোজা ছাদে চলে গেলাম। কারন সন্ধায় পাগলীটা ছাদে বসে থাকে। আমি গিয়ে তাকে বললাম.............
আমিঃ এতো কিনারে কি হচ্ছে হুম। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো নাকি?
আঁখিঃ আপনি যদি চান তাহলে দিতে পারেন?
আমিঃ তাহলে এই গোলাপ ফুল গুলো কাকে দিবো?
ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আঁখি। তারপর আমি আঁখি কে বললাম............
আমিঃ আমি বরাবরই একটা আন রোমান্টিক, স্টুপিড, ভীতুর ডিম ছিলাম। তাইতো তোমাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দাও আমাকে।
কথা দিলাম আর কখনো কষ্ট দিবো না তোমাকে?
এরপর আঁখি আমার হাতের ফুল গুলো নিয়ে অনেক টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। তখন থেকে আমার শার্ট ভিজেই যাচ্ছে। তারপর আমি আঁখি কে বললাম....
আমিঃ পাগলী আর কত কান্না করবে, এবার একটু থামো?
এ কথা বলে আমি ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে আবার বললাম..........
আমিঃ আচ্ছা আমি যে তোমাকে এত কষ্ট দিতাম, তুমি কিছু বলতে না কেনো?
আঁখিঃ কে বলেছে তুমি আমাকে শুধু কষ্ট দিতে।। সারাদিনের হাজারো কষ্ট নিমিষেই ভুলে যেতাম,
যখন তুমি প্রতি রাতে আমার কপালে একটা করে
চুমু দিতে। এই জন্য সব কিছু ভুলে যেতাম এক নিমিষেই??
আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আর বলতে লাগলাম.........
আমিঃ আমার ভুলটা কি শোধরাবার সুযোগ দিবে?
আঁখিঃ সেটা তো তুমি অনেক আগেই মিটিয়ে দিয়েছো?
আমিঃ তাই ম্যাম?
আঁখিঃ হুমম ঠিক তাই স্যার?
এরপর হটাৎ করে আঁখি কে কোলে তুলে নিলাম। গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে বললাম,,,এই নাও তোমার পুরুস্কার।
------------------সমাপ-----------------------