স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা
একটি অমূল্য ভালোবাসার গল্প 😭💔
আমার বউটার আজ ডেলিভারি পেইন শুরু হয়েছে,আমি তাকে বুকে
জড়িয়ে ধরে আছি। খুব ছটফট করছিল আর কান্না করছিল পাগলীটা।
.
আমি আমার জানটার কষ্ট একদমই সহ্য করতে পারি না। ওর সামান্য খারাপ লাগা টুকু আমার কাছে মৃত্যুের চেয়ে ভয়াবহ। এককথায় নিজের জান নিজের দেহে আছে তা কখনোই মনে করিনা।
.
ওকে বিয়ে করার পর কোনো কিছুর অভাব এবং কষ্ট কি জিনিষ কখনো ওকে বুঝতে দেইনি।
কোনো চাওয়া অপূর্ন রাখিনি…
সে খুব অভিমানী ছিল,অল্পতেই অভিমান করতো আর কাদতো। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে ওর কান্না থামাতাম।
.
কিন্তুু আজ আর ওর কষ্টের কান্না থামানোর মত কোনো উপায় জানা নেই!
(চোখের পানিটুকু আটকাতে পারলাম না)
.
দেরী না করে খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম!….. সময় যতই যাচ্ছে পাগলীটার যন্ত্রনার পরিমাণ ততই বাড়ছে, চিৎকার করে কাদছিল।
.
ওর কান্নায় আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো।
আজ একটা কথাও বলেনি আমার সাথে,কারন অসহ্য যন্ত্রনায় তার জানটা বেরিয়ে যাচ্ছিল।
.
আসলে মা হতে হলে একটা মেয়েকে কতটা কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়,
সেদিন আমি আমার জানটা”কে দেখে বুঝেছি।
.
ডাক্তার তাকে ডেলীভারি রুমে নিয়ে যাচ্ছে,সাথে সাথে আমিও যাচ্ছিলাম।……
কিন্তুু ডাক্তার আমাকে রুমে ডুকতে দিল না।
ডাক্তার”কে অনেকবার অনুরোধ করলাম!….
ডাক্তার আমার জানটা খুবই ভিতু……
আমার ওর সাথে থাকা খুব দরকার,প্লীজ আমাকে সাথে নিন।
.
ডাক্তার কোনো কথায় শুনলো না।
এই দিকে আমার জান’টা চোখ বন্ধ করে যন্ত্রনায় ছটফট করছিল।
.
আমাকে বাইরে রেখে ওরা আমার জান’টা কে ভিতরে নিয়ে গেল।
যাওয়ার সময় আমার লক্ষি সোনাটা চোখ মেলে একবার আমার দিকে তাকালো……………”কি মায়া যে ওর চোখে বলে বুঝাতে পারবো না।
.
আমি বাইরে অপেক্ষা করছি,আল্লাহ’কে ডাকছি আর কাদছি!…
আধা ঘন্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলেন।
এসে বললেন;
– আপনি একটু আমার চেম্বারে আসেন….
.
ডাক্তারঃ- আপনার স্ত্রীর অবস্থা খুব একটা ভাল না, দুঃখের সাথে বলছি আমরা যেকোনো একজন’কে
বাচাতে পারবো!…হয় মা অথবা সন্তান!!
.
এখন আপনিই বলুন কাকে চান…….?
আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।কারন আমি পাগলীটাকে ছাড়াও থাকতে পারবোনা,
.
আবার…………….
ডাক্তারের হাত ধরে বলেছিলাম ডাক্তার আমি দু’জনকেই চাই।
যত টাকা লাগে ডাক্তার আমি আপনাকে দিব!,
দরকার হয় আমার ঘর বাড়ি,জায়গাজমি এমনকি আমার দুটো কিডনী সব কিছু বিক্রি করে দিয়ে
আপনাকে টাকা দেব!….#প্লিজ ডাক্তার…
.
– আচ্ছা আপনি ভেঙ্গে পড়বেন না,আমরা দেখছি, আল্লাহ’কে ডাকুন….ডাক্তার আবার ডেলীভারি রুমে ঢুকলেন।বাইরে আমি, আমার জানা সবগুলো দোয়া কালেমা পড়ছিলাম,আর আল্লাহকে ডাকছিলাম।
প্রায় ১ ঘন্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলেন……
.
আমি উঠে দাড়িয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাস করলাম ডাক্তার আমার জান’টার এখন কি অবস্থা,আর আমার সন্তান কেমন আছে…?
আমি কি এখন একটু আমার জান’টার সাথে দেখা করতে পারি!,
কেবল একনজর আমার সন্তান’কে দেখতে পারি…..?
ডাক্তার নীরব………
দু’চোখে দু’ফোটা বেদনার জল নিয়ে বলতে লাগলো,
– আপনার স্ত্রীর কন্যা সন্তান হয়েছে, কিন্তুু………..
– কিন্তু কি ডক্টর…. ?😰
.
– আমরা খুব দুঃখিত, আমরা মা মেয়ে কাউ’কেই বাচাতে পারিনি…………
.
ডাক্তারের মুখে কথাটা শোনার পর আমার কেন জানি মনে হলো!…..
আকাশ তার নিজের জায়গা”য় নেই,মাটিও আমার পায়ের নিচ থেকে সরে গেছে।চারিদিকে অন্ধকার হতে শুরু করলো,নিশ্বাস’টা বন্ধ হয়ে এলো।
.
শেষবারের মত একটাবার নি:শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলাম।কিন্তুুু পারলাম না, মনে হচ্ছে আমিও মরে
যাচ্ছি!…….জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম……
.
জ্ঞান ফিরে আসার পর বাবা মাকে পাশে পেলাম;
সবাই কাদতেছিল তখন…….
আর একটা অন্ধকার ঘরে আমার নিষ্পাপ মেয়ে আর আমার জানটাকে রাখা আছে।
.
আমি আমার জানটার কাছে গিয়ে দেখি একটা সাদা চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে রেখেছে,পাশেই আমার নিষ্পাপ সন্তানও।
চাদর’টা সরালাম,আমার জানটা মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।আমার মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর,একবারে মায়ের মতো।আস্তে করে ডাক দিলাম,জান ……
জান ওঠ আমি এসেছি,,
.
কিরে,মেয়ে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি নাকি….?
ওঠ না, ওঠ না সোনা, একটু কথা বল আমার সাথে!,
দেখ,আমি কিন্তুু কেঁদে ফেলবো ওঠ বলছি।
আচ্ছা না উঠলি,এখন থেকে আমি আবার রোজ অনেক রাত করে বাড়ী ফিরবো।
তখন বুঝবি কেমন লাগে!…
.
আমাকে দেখে,আমার মা হাউ মাউ করে কেদে উঠলো। বাবা’রে বউ’ মা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে,
ও আর কোনোদিন উঠবে না।(মা)
.
আমিঃ- এইটা কি করে হয় মা…আমি জান ছাড়া বাচতে পারবো নাকি?
পাগলী’টা প্রমিজ করেছিলো আমাকে ছেড়ে ঔ কোথাও যাবেনা কোনদিন।
.
দেখ,ও এখনই উঠে পড়বে, উঠেই আমাকে বলবে..
কুত্তা, বান্দর,সজাড়ু,,,তুই এতক্ষন কৈ ছিলি,তুই জানিস না অন্ধকারে একা একা ভয় করে আমার।….
।।
আমি আবার ডাকলাম,কিন্তুু আমার জানটা আজ আর কিছুতেই উঠছে না,
একটাবারও আমাকে দেখলো না।😰
একটা’বার আমার সাথে কথা বললো’না।
বলবে কি করে,আমার জানটা যে সত্যি সত্যিই তার প্রমিজ ভঙ্গ করে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক
দূরে!………..
.
যেখান থেকে পৃথিবীর সবকিছু বিনিময়ে কাউকে আবার ফেরানোর অপশন নেই!
আমার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ছিলাম।
আজ থেকে আমি একা,আমি বড়ই একা হয়ে গেলাম।আমার জান আমাকে ছেড়ে চলে গেছে খুব বহুহু দূরে,
কাদতে কাদতে আবার জ্ঞান হারালাম।
।।
জ্ঞান ফিরে নিজেকে বাড়িতে আবিষ্কার করলাম।
আমার মেয়ে আর আমার জানটাকে সবাই গোসল করাচ্ছে।…………………(এটাই শেষ গোসল)
.
এইদিকে সবাই আমাকে বোঝাচ্ছিল!..
বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর,বড়ই পাশান,কেদে আর কি হবে, নিজেকে একটু শক্ত কর…কারন বেচে থাকতে হবে যে।
নিজেকে আমি কিভাবে শক্ত করবো……..?
নিজেকে শক্ত করার কোনো কিছু জানা নেই তো আমার।
.
জীবনের শেষবারের মত একবার দু’চোখ ভরে ২জন কে দেখলাম।
কথা বলার বাকশক্তি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি,
কথা বলার কোনো শক্তিই নেই!…
আছে শুধু দু’চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি…….😰
সন্ধা হয়ে এলো,মা মেয়েকে পাশাপাশি কবর দিলাম আমাদের বাড়ীর আমবাগানে….
.
স্বার্থপরের মত আমার ভীতু বউ’টাকে একাকি অন্ধকার ঘরে রেখে আসলাম।
ওকে ছেড়ে আসতে মন চাইছিল না।
মন চাইছিলো ওদের সাথেই থেকে যাই।
সবাই আমাকে জোর করে টেনে হেচড়ে ঘরে নিয়ে আসলো!…
.
অনেক রাত হয়ে গেছে…
গতকাল রাতে আমার পাশে আমার জান ছিল।
কালকে কেন জানি,আমাকে একটু বেশি আদর করেছিল।
সারারাত আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল……
-কিন্তুু আমার পাশে আজ পাগলীটা নেই,আজ আমি একা!…
.
চোখে ঘুম নামের কোনো অস্তিত্বই আমার নেই।
লাইট’টা অন করলাম,সারা ঘর জুড়ে জড়িয়ে ছিল পাগলীটার স্মৃতি।
.
যেদিকেই তাকাচ্ছি কেবল ওকেই দেখতে পাচ্ছি!
– এই সেই আয়না যে আয়নার সামনে পাগলীটা সাজতো,আর আমি ওকে জ্বালিয়ে মারতাম।
মাথা আচড়ানোর সময় কতবার যে চুল
এলোমেলো করে দিয়েছি!..
কিন্তুু আজ থেকে পাগলী’টাকে আর জ্বালাতে পারবোনা আর কোনদিন।
.
শত ইচ্ছে করলেও তাকে আর দেখতে পাবোনা,তাকে ছুতে পারব না কিছুতেই।😰
হাজার ইচ্ছে করলেও তাকে বুকে জড়িয়ে একটু আদর করতে পারব না।
আমার সব কিছু এলোমেলো করে দিয়ে স্বার্থপরের মতো ও আমাকে একা ফেলে চলে গেছে।…
.
আজ থেকে সারারাত বাইরে থাকলেও কেউ বলবে না,
– কুত্তা,বান্দর এতক্ষন কোথায় ছিলি….?
সারাদিন না খেয়ে থাকলেও কেউ এসে বলবে না,
– নে গিল,আমাকে ছাড়া তো আর খাবি’না।
.
মনে মনে আল্লাহ্ কে বলতেছিলাম,
নিজেকে এখন আমি কি দিয়ে সান্ত্বনা দেব তুমিই বলো শুনি।আমি এখন কি নিয়ে বেঁচে থাকবো এই পৃথিবীতে যেখানে আমার আপন মানুষটাই আজ আর নেই..?
এত বড় শাস্তি কেন দিলা আমারে,কি অপরাধ ছিলো আমার…?
.
তার ব্যবহৃত সব জিনিস নাড়াচাড়া করতেছিলাম।
হঠাৎ ডাইরীর শেষ পাতায় চোখ আটকে গেল।
যেখানে লিখা ছিল!…….,
জান,
আমি জানি তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস…..
আমাকে ছাড়া থাকতেও তোর অনেক কষ্ট হবে।
আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি সোনা,
এবং কি নিজের জীবনের থেকেও অনেক বেশি।
আর কিছুদিন পর’ই আমি তো মা হতে চলেছি!..
শুনেছি মা হওয়ার সময় নাকি অনেক কষ্ট হয়,অনেকে মারাও যায়।আমি যদি মরে যাই,
তাহলে একটুও কাদবি না কিন্তুু!
আমার সন্তানকে দেখে রাখিস,ওকে অনেক আদর করিস।
ঠিক মত খাস,শরীরের যত্ন নিস,আর হ্যা রাতে একদম বাসার বাইরে থাকবি না।তুই অনেক ভালো’রে,
আমি বিনা কারনে তোর উপর অনেক অবিচার করেছি,
রাগ করেছি,তোকে কষ্ট দিয়েছি।
আমাকে ক্ষমা করে দিস সোনা….
.
আমি যদি মরে যায় তুই একটা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবি।দেখিস ও আমার থেকেও তোকে বেশী ভালোবাসবে।আমাকে তুই কথা দে,সব সময় ভালো থাকবি!…….
এটা মনে রাখিস, আমি সব সময় তোকে দেখবো।
তুই যদি ভাল থাকিস আমিও ভাল থাকবো।
যদি কষ্টে থাকিস!…
তবে মনে রাখিস আমিও কষ্টে থাকবো।
ভালো থাকিস সোনা,
♥ইতি
তোর........
.
সমাপ্ত------