পরকিয়া গল্প
আসাদ অফিস থেকে এসেই আমার চুল টেনে ধরলো। তারপর বললো,
--- 'যা।তুই আমার বাসা থেকে এক্ষুনি বেরিয়ে যা।'
আমি অবাক হয়ে বললাম,
--- 'আসাদ,কী হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন তুমি?'
আসাদ আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
--- 'চুপ।একদম চুপ। আরেকটা কথাও বলবি না তুই। সোজা বের হয়ে চলে যা।কাল তোকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো। ওখানে সাইন করে দিবি!'
আসাদ আমার স্বামী।তার সাথে আমার চার বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক। হঠাৎ করে যে সে এমন করছে কেন তা একদম বুঝতে পারছি না আমি!এর আগে রোজদিন সে অফিস থেকে ফেরার সময় পকেটে করে একটা না একটা গিফট নিয়ে ফিরতোই আমার জন্য। কিন্তু আজ এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন আমার সাথে?ওর মুখে ডিভোর্সের কথা পর্যন্ত বলছে।অথচ তার সন্তান আমার পেটে।বাবু পেটে আজ পাঁচ মাস ধরে।আমার নিজেকে হঠাৎ অসহায়ের মতো মনে হচ্ছে। কেমন কান্না আসছে চোখ গলে।মা মাগরিবের নামাজ পড়ছিলেন।ঘরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ করে তিনি দৌড়ে এলেন।আর আসাদের কাছ থেকে আমায় ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,
--- 'কী হয়েছে তোর? এমন অসভ্যতামি শুরু করেছিস কেন বউমার সাথে?'
আসাদ সঙ্গে সঙ্গে মুখ বিকৃত করে মাকে বললো,
--- 'মা কাকে তুমি বউমা ডাকছো? তুমি জানো ও কী করেছে?'
--- মা অবাক হয়ে বললেন,'কী করেছে?'
--- 'ফেসবুকে তার নাগরকে তার নগ্ন দেহের ছবি দিয়েছে।একটা না মা অনেক গুলো ভিডিও ও আছে।তুমি ভাবতে পারো ও কতটা জঘন্য মেয়ে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! আমার তো একে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আমার সন্দেহ হচ্ছে ওকে।মনে হচ্ছে ওর পেটে যে সন্তান আছে এটা আমার না!'
মা এবার খানিক থমকে গেলেন।তার মুখ কেমন কালচে হয়ে গেছে। তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,
--- 'আসাদ,এই আসাদ, এইসব কী সত্যি বলতেছস বাজান?'
--- আসাদ বললো,'কেউ কী তার স্ত্রীর উপর এমন নোংরা অপবাদ এমনি এমনি দেয়? আমার কাছে ভিডিও আছে।তার নাগর এসে দিয়ে গেছে।আর বলে গেছে, পাঁচ লাখ টাকা না দিলে এই ভিডিও তার নাগরে ফাঁস করে দিবে!'
আসাদের মুখ থেকে কথাগুলো শুনে আমার কান গরম হয়ে উঠলো।আর সহ্য হচ্ছে না। নিজের হাতকে সামাল দিতে না পেরে ওর কাছে গিয়ে ওর দু গালে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে বললাম,
--- 'ছিঃ!ভাবতেও ভীষণ অবাক লাগছে যে এতো দিন তোমার মতো একটা ছোট লোকের সাথে আমি সংসার করেছি।'
আসাদ আবার রেগে গেলো।সে এবার আমার একটা হাত টেনে ধরে নিয়ে গেল ঘরে। তারপর ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে পকেট থেকে তার ফোন বের করলো। সেই ফোন থেকে সে একটা ভিডিও অপেন করলো।যেখানে আমি স্পষ্ট আমাকেই দেখতে পাচ্ছি। আমি শুয়ে আছি বিছানায় ঘুমের ভান করে। আর আমার সমস্ত নগ্ন শরীরের ছবি ভেসে আছে ওখানে।এমনকি পিঠের বাম পাশে যে একটা সরু কালো কুচকুচে তিল আছে ওটাও।এটা কীভাবে সম্ভব!
আমার মাথা ঘুরছে।প্রচন্ড রকম ঘুরছে।আসাদ এবার মোবাইল ফোনের ভিডিওটা অফ করে মোবাইল খানা তার পকেটে রাখলো। তারপর আমার গলায় চেপে ধরে বললো,
--- 'কী রে, আগে তো আমায় ছোট লোক বললে, এখন তুই -ই বল সত্যিকার ছোট লোকটা কে?'
ভয়ে আমি থরথর করে কাঁপছি। কোন কথা বলার শক্তি পাচ্ছি না। অসহায়ের মতো শুধু কাঁদছি।
আসাদ এবার ধমকে উঠলো আমায়।আর আমার গালে তার হাতের সবটুকু শক্তি প্রয়োগ করে সে দু দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
--- 'যা।ভাগ এখান থেকে।নষ্টা কোথাকার। তোকে দেখলেই এখন আমার বমি পাচ্ছে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!'
আমি তবুও নড়ছি না।ঠিক বিছানার উপর বসে আছি।আসলে এই মুহূর্তে আমার ঠিক কী করা উচিৎ তাই ভুলে গেছি!আসাদ আবার ধমকে উঠলো। ধমকে উঠে সে বললো,
--- 'কী?কথা কান দিয়ে ঢুকে না।এমনি এমনি যাবি না না?ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে?'
আমি এবার ঝট করে আসাদের পায়ে পড়ে গেলাম।আর ওর পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
--- 'আসাদ, বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানি না।প্লিজ তুমি আমায় বিশ্বাস করো!'
--- আসাদ শান্ত গলায় বললো,'পা ছেড়ে উঠো।আর আমার কথা শুনো।'
আমি ওর পা ছেড়ে ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়ালাম।এবার সে বললো,
--- 'আগে যে ভিডিও টা দেখালাম ওখানে যে নগ্ন মেয়েটি শুয়ে আছে এটা কে? তুমি না?'
--- আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,'হ্যা আমি।'
এবার আসাদ আমার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দরজা দিয়ে বাইরে বের করে দিলো। তারপর বললো,
--- 'যা ভাগ তুই।সব তো নিজের মুখেই স্বীকার করেছিস এখনও আমার ঘরে থাকতে চাইছিস কেন?যা।ওই নাগরের কাছে যা তোর। আমার এখানে তোর কোন জায়গা নাই। তুই আগামীকাল ঠিক ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবি।'
মা এমনিতে আমায় খুব আদর সোহাগ করতেন। কিন্তু আজ তিনি জেনে গিয়েছেন এতো দিন তিনি যাকে আদর সোহাগ করে এসেছেন সে কোন ভালো মেয়ে নয়,নষ্টা।এমন মেয়ের জন্য তার মায়া হবে কেন? তিনি তাই কোন কথাই বললেন না আর। শুধু দর্শক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন তার ছেলে কীভাবে একটা পাপী মেয়েকে তার বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছে।
'
এর মধ্যেই হঠাৎ বিজয় বাসায় এলো। আসাদের ছোট ভাই বিজয়।সে এসে এসব দেখে বললো,
--- 'ভাইয়া, তোমার তো দেখি কোন কান্ড জ্ঞান নাই।এই যে এইভাবে তুমি ভাবীকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছো লোকে শুনলে কী বলবে শুনি?মান সম্মান নষ্ট হবে না আমাদের?'
মা বললেন,'বিজয় তো ঠিকই বলেছে।'
--- বিজয় এবার বললো,'ভাবী ঘরে থাকুক। তুমি বরং তার বাবাকে খবর দাও। তিনি এসে দেখুক তার মেয়ে কী করেছে! তারপর তিনিই একটা ডিসিশন দিয়ে যাবেন।'
আসাদ কথাটা ভাবলো। তারপর এক ধাক্কা দিয়ে আমায় দূরে সরিয়ে দিয়ে সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আসাদ বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিজয় বললো,
--- 'ভাবী,যা হয়েছে হয়েই গেছে। এইসব কিছু নিয়ে অত মাথা ঘামাবার প্রয়োজন নাই। আমার খিদে পেয়েছে খুব।একটু চা বিস্কুট দাও।'
এই কথা বলে বিজয় ওর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। এই সময় শাশুড়ি মা আমার কাছে এসে বললেন,
--- 'না। তুমি এই বাড়ির কোন কাজে হাত দিবা না।হাত দিলে সব নাপাক হয়ে যাইবো।'
মাও আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন!তিনিও আমায় নোংরা ভাবছেন।ভাবতেই নিজের প্রতি ঘেন্না আসছে। ইচ্ছে করছে নিজেই নিজের গলা টিপে মরে যেতে!
'
ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে আমি কাঁদতে লাগলাম।আর ভাবতে লাগলাম,যদি কাল বাবা এখানে আসেন আর এসব শুনেন তখন কী তিনি তার মেয়ের সম্পর্কে প্রকাশ হওয়া বিষয়টা মেনে নিতে পারবেন?কিছুতেই পারবেন না। এমনিতেই তার শরীর ভালো না। দু'দিন পর পর অসুখ বাঁধে। সেই অসুখ কিছুতেই সাড়তে চায় না। এবার যদি এসব শুনে বাবার কিছু একটা হয়ে যায় তখন!
ভাবছি আর কাঁদছি। ভীষণ রকম কাঁদছি।এই সময় বিজয় এলো আমার কাছে। এসে বললো,
--- 'ও ভাবী,তোমায় না বলেছিলাম চা দিতে দাওনি তো!'
--- আমি কান্নাভেজা গলায় বললাম,'আমি তো খারাপ মেয়ে রে ভাই। আমার হাতের চা কী তুই খাবি!'
--- বিজয় মুখ ভার করে বললো,'ভাবী,মা তোমায় কিছু বলেছে তাই না? আচ্ছা মা গুলো এমন কেন?কী অদ্ভুত! পুত্রবধূর নামে কোন কিছু খুঁজে ফেলে তা যাচাই-বাছাই না করেই তা নিয়ে মেতে উঠে।'
আমি ওর কথায় মনোযোগ না দিয়ে কাঁদতেই থাকলাম।বিজয় বললো,
--- 'ভাবী প্লিজ একটু থামো।শান্ত হও।'
--- আমি কান্নাভেজা গলায় বললাম,'শান্ত হবো কী করে রে ভাই।কাল যখন বাবা এখানে এসে এসব শুনবে তখন কী হবে ভাবতে পারিস?বাবা এমনিতেই অসুস্থ মানুষ।মা মারা যাওয়ার পর থেকে তার দিনগুলো কাটছে কী দুঃখে! তবুও তিনি শুধু আমার দিকে চেয়ে বেঁচে আছেন।আর আমায় কতো বিশ্বাস করেন তিনি।'
--- বিজয় বললো,'অস্থির হইয়ো না তো তুমি।আমি সব বুঝবো। এখন যাও তুমি চা করে নিয়ে আসো।আর ওই বিষয়টা আমি দেখছি।'
--- আমি বললাম,'মা তো নিষেধ করেছেন আমি যেন চা টা না করি!'
--- বিজয় বললো,'তুমি যাও।চা করো গিয়ে।মা কিছু বললে আমি দেখছি।'
আমি ভয়ে ভয়ে চা করতে চুলোর দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু ভাগ্য ভালো মা কিছু বললেন না। হয়তোবা তিনি বিজয়ের কথা শুনতে পেয়েছেন। নয়তোবা তার দয়া হয়েছে আমার প্রতি কোন একটা কারণে!বিজয়ের জন্য চা বিস্কুট নিয়ে এলাম। বিজয় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে
বললো,
--- 'ভাবী,সত্যি করে কিছু কথা বলবে আমায়!'
--- আমি বললাম,'বলবো।'
--- বিজয় এবার বললো,'তোমার কী বিয়ের আগে কারোর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল?'
--- আমি বললাম,'না।'
--- 'বিয়ের পর?'
--- 'কী বলছিস এসব?'
--- 'এমনিই জিজ্ঞেস করছি। আচ্ছা ভাইয়ার কারোর সাথে কোন সম্পর্ক আছে কি না জানো তুমি?'
ওর মুখ থেকে এই কথা শুনে আমার যা রাগ পেলো!আমি বললাম,
--- 'এটা কী করে বলতে পারলি তুই বিজয়?তুই জানিস না তোর ভাই কত ভালো?'
--- বিজয় বললো,'আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোমায় আমি।বলো তো ভাইয়া রাত করে ছাদে টাদে যায় কি না।মানে এই অভ্যেস আছে কি না!'
আমি এমনিতেও ঘুমের গাধা।ও ছাদে যায় কি না আমি জানি টানি না। তবে দু'দিন রাত করে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আসাদ আমার পাশে নাই। ভাবলাম ওয়াশরুমে আছে। কিন্তু ওখানেও নাই। দীর্ঘক্ষণ পরে সে ছাদ থেকে এলো।আমি বললাম,
--- কোথায় ছিলে এতোক্ষণ?
--- সে বললো,ছাদে গিয়েছিলাম।যা গরম পড়েছে!
আসাদের কথা মিথ্যে ছিল না।গরম সেদিন বেশিই ছিল।বিজয় বললো,
--- 'কী বলো ভাইয়া ছাদে যায় কি না মাঝেমধ্যে?'
--- আমি বললাম,'যায়। বেশি গরম পড়লে যায়।'
--- বিজয় হাসলো। মৃদু হেসে বললো,'কিন্তু আমি দেখেছি ঠান্ডার সময়ও যায়।সে যাক এটা মন্দের কিছু না।ছাদে বড়ো বড়ো মনুষীরাও যায়। চাঁদ-তারা দেখে। আকাশ দেখে।আর...
বিজয় কথা শেষ করলো না।শেষ না করেই সে আবার আমায় জিজ্ঞেস করলো,
--- 'আচ্ছা ভাবী, ভাইয়া কী তার ফোন তোমার নাগালের মধ্যে রাখে?'
এবার আমার সত্যিই খুব রাগ পাচ্ছে।এটা কেমন কথা!আমি বললাম,
--- 'তোর ভাইয়ের ফোন আমার নাগালে রাখলেই কী আর না রাখলেই কী আমি কী তার ফোন হাতে নেয় নাকি!'
বিজয় আমার এই কথা শুনেও হাসলো। বড়ো রহস্যময় সে হাসি।যা দেখে আমার বুক কেঁপে উঠলো।
'
মুখোশ_ধারী
-১ম_পর্ব
অনন্য_শফিক
-মুখোশ_ধারী
-২য়_পর্ব এবং শেষ পর্ব
অনন্য_শফিক
'
'
'রাতে আসাদ বাসায় ফেরার আগেই চুপিচুপি বিজয় আমার ঘরে এলো।মা তখন এশার নামাজ পড়ছেন তার ঘরে।বিজয় এসেই আমার ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তখন ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।মনে মনে ভাবলাম আল্লাহ জানে বিজয় আবার কোন ফন্দি আঁটছে!ও তো আবার আমায় কোন বিপদে ফেলবে না?বিজয় ধীর পায়ে হেঁটে আমার কাছে এলো। তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে চুপিচুপি বললো,
--- 'ভাবী,ভয় পেয়েছো?'
--- আমি মাথা কাঁত করে বললাম,'খুব!'
বিজয় মৃদু হাসলো। কিন্তু তার হাসির কোন শব্দ হলো না।সে এবার বললো,
--- 'ভাবী, লুকোচুরি খেলাটা কখনো খেলেছো ছোট বেলায়? তুমি তো নেত্রকোনায় শৈশব কাটিয়েছো! তোমাদের ওখানে এটাকে বলে পলাবান্ধি খেলা।'
--- আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,'খেলেছি।'
--- বিজয় বললো,'আজ রাতে আবার এই খেলাটা খেলবে তুমি।খেলতেই হবে তোমার।'
--- আমি বড় অবাক হয়ে বললাম,'এটা কী বলছিস তুই বিজয়?'
বিজয় আবার মৃদু হাসলো। হেসে বললো,
--- 'এটা আমার ফাইনাল কথা। আমার কথা না শুনলে তুমি তোমার জন্য বিপদ ডেকে আনবে।মান সম্মান হারাবে। নিজের জন্মদাতা পিতাকে অসম্মানিত করবে। কোন অপরাধ না করেও অপরাধী সাজবে।ডিভোর্সী হয়ে সারা জীবন কেঁদে কেটে কাঁদাবে!'
ওর কথার কোন কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। এখন আমি কী করবো? আসলে আমার কী করা উচিৎ? বিজয়ের সব কথা মেনে নেয়া? কিছুই বুঝতে পারছি না!বিজয় বললো,
--- 'হাতে সময় কম। ভাইয়া আজ দেরি করে বাসায় ফিরবে এটা নিশ্চিত।যা করার মার নামাজ শেষ হওয়ার আগেই করতে হবে।'
--- 'কী করতে হবে আমার?'
--- 'লুকোতে হবে।'
--- 'কতোক্ষণ লুকিয়ে থাকতে হবে?'
--- 'যতোক্ষণ চোরটাকে ধরতে না পারো ততোক্ষণ।আজ চোর ধরা পড়বে নিশ্চিত!'
--- আমি এবারও অবাক হয়ে বললাম,'চোরটা কে বল তো?'
--- বিজয় হেসে বললো,'তুমি জগতের এক নম্বর গাধা!চোরটা কে তা জানার জন্যই তো লুকোবে। এখন জিজ্ঞেস করো আমায় কোথায় লুকোতে হবে।'
--- আমি বললাম,'বিজয়, কোথায় লুকিয়ে থাকবো আমি?'
--- বিজয় বললো,'চিলেকোঠার চৌকির নীচে। ওখানে চুপচাপ বসে থাকতে হবে।একদম নড়াচড়া করা যাবে না। ওখানে মশা কামড়াবে। তবুও নড়াচড়া করা যাবে না।'
বিজয় কী সব অদ্ভুত কথাবার্তা বলছে।নাকি ও নিজেই কোন ফায়দা লুটতে চায় আমার কাছ থেকে?আমায় মিথ্যে বলে ওখানে পাঠিয়ে তারপর আমার সাথে অসভ্যতামি করবে না তো আবার!বিজয় আমার দিকে তাকালো। তারপর বললো,
--- 'মার নামাজ প্রায় শেষ! এখন কী করবে বলো?'
বিপদের আশঙ্কা জেনেও আরেক বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় আমি বললাম,
--- 'আমি যাচ্ছি। এক্ষুনি যাচ্ছি।'
বিজয় আবার হাসলো। শব্দহীন হাসি। এই হাসিটাও রহস্যময়। ভীষণ রহস্যময়!
'
চুপচাপ সিঁড়ি দিয়ে গিয়ে উঠলাম ছাদে। তারপর চিলেকোঠায় রাখা চৌকিটার নীচে গিয়ে বসলাম। ওখানে আঁধার। ঘুটঘুটে আঁধার।আর মশা। মশাদের ভীষণ অত্যাচার। তবুও বসে রইলাম ওখানে। অপেক্ষা করছি চোর ধরার জন্য। কিন্তু আমার মন কেমন করছে।আসল চোরটা কে আমি ঠাহর করতে পারছি না কিছুতেই! আসাদকে আমি সন্দেহ করতে পারি না একদম।কারণ ওকে আমি ভালোবাসি। তবে বিজয়কে আমার খুব ভালো ঠেকছে না!ওর প্রতি আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছে। ব্যাপারটা এমন না তো যে উপকারের নাম নিয়ে অপকারের সুযোগ লাভ করলো সে!কী জানি!
'
বাসায় চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে।মার গলা উপর থেকেও শোনা যাচ্ছে।মা বলছেন,
--- 'ছোকরিটা কোথায় গেল? পালিয়ে গেছে নাকি?'
--- বিজয় বললো,'যেতেও পারে।আমি কী জানি!'
--- মা আবার বললেন,'পালিয়ে গিয়ে প্রমাণ করে দিলো ছোকরিটা আসলেই নষ্টা! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!'
--- বিজয় তার মার সাথে গলা মিলিয়ে বললো,'ছিঃ ছিঃ ছিঃ ভাবী তো আসলেই নষ্টা। ছিঃ!'
--- মা বললেন,'পালিয়ে গেলেই কী সে বেঁচে যাবে?এটা তার ভুল ধারণা।আমি ওকে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।ওর বাপের বাড়ি গিয়ে সাড়া পাড়ার মানুষ ডেকে এনে সবার সামনে ওর বাপ আর ওকে অসম্মান করে আসবো। লজ্জায় ওরা কোনদিন মুখ দেখাতে পারবে না এরপর!'
--- বিজয় বললো,'এই ভালো। এই ভালো!'
(শেষাংশ) 👇
আসাদ ফিরেছে।সে এসেই যখন শুনেছে আমি চলে গেছি তখন অত চিৎকার চেঁচামেচি করলো না। মাকে বললো ভাত দিতে। খাওয়া দাওয়া করে সে বললো,
--- 'আল্লাহ যা করেন ভালোই করেন।ভালোই ভালোই আপদ বিদেই হয়েছে। এখন একটা ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিলেই হবে।'
সে খুব উৎফুল্ল।যেন বিরাট সাওয়াবের কাজ করে ফেলেছে সে।বিজয় বলেই ফেললো,
--- 'ভাইয়া,তুই তো আজ খুব ফুরফুরে মেজাজে আছিস রে! '
আসাদ খানিকটা ভরকে গিয়ে বললো,
--- 'ফান করবি না আমার সাথে!সিরিয়াস হতে শিখ।'
বিজয় সিরিয়াস হতে পারলো না।বড় ভাইয়ের সামনে খিলখিল করে হেসে উঠলো। আসাদ ধমক দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে দপদপ থপথপ করে উঠে এলো ছাদের উপর। তারপর এসে দাঁড়ালো চিলেকোঠার দেয়ালে ঠেস দিয়ে। এখানে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো।তারপর ফোন বের করে কোথায় যেন ফোন করলো।
'
আসাদ বললো,
--- 'মোহিনী ঘর এখন খালি। তোমার সতীনকে আউট করে দিয়েছি!'
কথাটা বলেই হা হা হা করে হেসে উঠলো আসাদ।আর সঙ্গে সঙ্গে আমার বুকটা ধ্বক করে কেঁপে উঠলো।কপালটা ঘামতে লাগলো।চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে এলো। তবে কী এতোদিন একটা প্রতারকের সাথে ঘর সংসার করে এসেছি আমি!ভাবতেই ঘেন্না হচ্ছে নিজের প্রতি! কাকে ভালোবাসলাম তবে এতো দিন?ও পাশ থেকে মোহিনী কী বললো কী জানি। কিন্তু আসাদ আবার বললো,
--- 'মোহিনী,কী নাটকটাই না করেছি।বেচারীকে দুধের সাথে ঘুমের অষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ছবিটবি তুলে নিজেই আবার বলেছি,এই হারামজাদী, কোন নাগরের সাথে এসব করেছিস তুই!'
আসাদ হাসছে।হা হা হা করে হাসছে।ওর এই হাসিটা এসে কাঁটার মতো আমার গায়ে বিঁধছে। আমার খুব ইচ্ছে করছে ওকে জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিতে। ইচ্ছে করছে এক ধাক্কা দিয়ে ওকে ছাদ থেকে নীচে ফেলে দিতে। কিন্তু যেখানে আমি বসে আছি ওখান থেকে এক চুলও নড়তে পারছি না।যেন মাটির সাথে আমার পা মিশে গেছে।যেন পায়ের তলা থেকে শেকড় বেরিয়ে গিয়ে মিশে গেছে মাটির সাথে।যেন আমি কোন বৃক্ষ হয়ে গেছি। আর কোনদিন ঠাঁয় থেকে নড়তেই পারবো না!
'
আমার এখন উঠা প্রয়োজন। তারপর চোরটাকে হাতে নাতে ধরা। চিৎকার করে মাকে ছাদে আনা। কিন্তু চিৎকার করার সুযোগ কী আমি পাবো?এর আগেই যদি লাথি মেড়ে নীচে ফেলে দেয় আমায় আসাদ! ভয় করছে। ভীষণ রকম ভয় করছে!
'
আসাদ এখনও কথা বলছে।ও বলছে,
--- 'মোহিনী,আমরা বিয়ে করবো আরো ছ' মাস পর। মাকে বুঝতে দেয়া যাবে না কিছুতেই ব্যাপারটা।সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমার মা পরহেযগার মহিলা। তিনি এসব মেনে নিতে পারবেন না।উল্টো আমায় তেজ্য করে দিবেন বুঝলে!'
তারপর আবার হেসে উঠলো আসাদ।যেন ওর হাসির রোগ হয়ে গেছে।যেন কথায় কথায় সে হাসবে আর হাসতেই থাকবে!
'
আসাদ মোবাইলেই মেয়েটাকে চুমু খেয়েছে।আর আমি এসে চুপিচুপি দাঁড়িয়েছি চিলেকোঠার দরজার কাছে।ভাবছি ধীর পায়ে গিয়ে আসাদের কলার চেপে ধরবো। তারপর চিৎকার করে মাকে ডাকবো। বিজয়কে ডাকবো। কিন্তু আমার আর ডাকতে হলো না। তখন উদ্ভট এক ঘটনা ঘটে গেছে। সিঁড়ির কাছ থেকে দৌড়ে এসে মা আসাদের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলেন। তারপর ফ্লোরে আছাড় দিয়ে সেই ফোন টুকরো টুকরো করে ফেললেন। এবার আসাদের গালে এলোপাথাড়ি চড় বসিয়ে দিতে দিতে তিনি বললেন,
--- 'হারামজাদা ইবলিশ, আমার ভাবতেও অবাক লাগছে আমার পেটে তোকে ধরেছিলাম।আগে যদি জানতাম তুই এমন অমানুষ হবি তবে তোকে কোনদিন জন্ম দিতাম না রে হারামজাদা। তোকে কোনদিন জন্ম দিতাম না!'
বিজয় মার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দেখছে।আর হাসছে।মৃদু করে হাসছে। সেই হাসিও ভীষণ রহস্যময়। আচ্ছা এখনও কী আসাদ তার ভাইকে বলবে, "আমার সাথে ফান করবি না একদম।সিরিয়াস হতে শিখ।সব সময় হাসা এটা কেমন ধরনের স্বভাব?"
না আসাদ কিছুই বললো না। বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো ঠাঁই।তার মাথা মাটির দিকে।এবার আমি ওর কাছে গেলাম।ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ইচ্ছে করছিলো ওর মুখে থুথু ছিটিয়ে দিতে। কিন্তু ওর মুখে নিজের থুতু ফেলতেও ঘেন্না লাগছিলো।আমি আসাদকে আর কিছুই বললাম না। ওর সামনে দিয়ে হেঁটে সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে বললাম,
--- 'আচ্ছা এখন তো প্রমাণ হলো সত্যিকার ছোট লোকটা কে?'
তারপর আর পেছনে না তাকিয়ে সিঁড়ি ডিঙিয়ে একেবারে নীচে নেমে এলাম।আসার সময় পেছন থেকে বিজয়ের হা হা শব্দের হাসি শুনলাম। এই প্রথম সে শব্দ করে হেসেছে।
--সমাপ্ত--