গল্প:ওসির_অহংকারী_মেয়ে | অহংকার নিয়ে গল্প

ভালোবাসার কষ্টের গল্প

ভালোবাসার কষ্টের গল্প

গল্প:ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_১)

মেলায় ঘুরতে গিয়ে একটা মেয়ের উপরে নজর আটকে গেলো,মেয়েটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি,মেয়েটার হাসিটা যেন কলিজা ছিদ্র করে অপরপ্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে গেছে,এমন সুন্দরী ললনা এর আগে আমি কখনো দেখিনি,এক কথায় বলতে গেছে হুর-পরী


এমন সময় তিশান ডাক দিয়ে বলে আরে দোস্ত মেয়েটাতো চলে যাচ্ছে,তিশানের কথায় হুশ ফিরে আসলো,হা তাইতো মেয়েটা তো চলে যাচ্ছে,এখন কি করা যায় বন্ধু.... 

মেয়েটাতো কলিজায় দাগ লাগিয়ে দিয়েছে,


তিশান,চল একটা কাজ করি মেয়েটার পিছু নেই..?


ওকেহ চল....

আমি আর তিশান মেয়েটার পিছু নিলাম,মেয়েটা মেলায় ওর বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে,কলিজাটা বারবার খালি মোচড় দিচ্ছে,ইচ্ছে করছে এখনি গিয়ে ভরা মজলিসে সবার সামনে প্রপোজ করি,কিন্তু নাহ তা করা যাবে না,


এভাবে প্রায় ত্রিশ মিনিট মেয়েটার পিছু নিলাম,মেয়েটাও হয়তো কিছু টের পেয়ে গেছে,হটাৎ দেখি মেয়েটা আমার দিকেই আসছে,বন্ধু এখন কি করবো মেয়েটাতো আমার দিকেই আসছে

কিন্তু তিশানের কোন সাড়া শব্দ নাই,পাশে ফিরে দেখি বেটা পালিয়েছে,এখন তো বুক ধুপধুপ ধুপধুপ করছে,সালা কি স্বার্থপর বন্ধুরে বিপদের সময় লেজ গুটে পালিয়েছে,মামুর বেটা একবার সুযোগে পাই তোমাকে,স্বার্থপর বন্ধুর পরিচয় আমিও দিব..


মেয়েটা একদম আমার কাছে চলে আসে,এই ছেলে কি সমস্যা তোমার...?


আমি,কোথায় কি সমস্যা...? 


মেয়েটা,এই কথা ঘুরাচ্ছিস কেন রে তুই....?

সমস্যা যদি নাই থাকে তাহলে আমার পিছু কেন নিচ্ছিস...?


আমি,আকাশ চুপ করে থাকে,


মেয়েটা,কিরে কথা বলছিস না কেনো...?

এত সময় তো আমার পিছু পিছু ঠিকই ঘুরঘুর করেছিস,এখন কথা বলতে সমস্যা কোথায়...?


আমি,আসলে সত্যি বলতে কি প্রথম দেখায় আপনাকে ভালো লেগে গেছে,আই মিন ভালোবেসে ফেলেছি,তাই আপনার পিছু নিয়েছি,


মেয়েটা,এই ছোটলোকের বাচ্চা কি বললি তুই বলে গালের মধ্যে ঠাসসসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়....?


আমি,তো পুরা থ মেয়েটার কান্ড দেখে,মেলার অনেক মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে,লজ্জায় একদম মাথা কাটা যাচ্ছে,


মেয়েটা,এই তোর কত্ত বড় সাহস যে তুই আমাকে ভালোবাসার কথা বলিস..?দেখতে তো পুরা ফকিন্নির মত লাগে,তোর কোনো যোগ্যতা আছে আমাকে ভালোবাসার ? আমার বাবা কি করে জানিস ?

আমার বাবা হচ্ছে ওসি,আর তোকে দেখতে তো মনে হয় কৃষকের ছেলে,গাইয়া কোথাকার দ্বারা তোর ব্যবস্থা করছি পাপাকে এখনি ফোন দিচ্ছি,লকাপে ঢুকিয়ে যখন কোষে কয়েকটা দিবে এমনি প্রেমের ভুত মাথা থেকে চলে যাবে,মেয়েটা ওর বাবাকে ফোন করে আসতে বলে,


আমি,কি করবো কিছুই মাথায় কাজ করছে না,লোকজন জড়ো হয়ে গেছে অনেক,মানুষজন সবাই আমাকে চিড়িয়াখানার পশুর মত ঘুরে ঘুরে দেখছে,মাথা নিচে নামিয়ে রেখেছি,এমন সময় একটা পুলিশের গাড়ি আসে,আর তার থেকে মোটামুটি একটা বয়স্ক লোক নেমে আসে,যতটুকু সম্ভব উনি মেয়েটার বাবা,


মেয়েটা,দৌড়ে ওর বাবার কাছে চলে যায়,পাপা ঐ ছেলেটা আমার সাথে অসভ্যতামো করেছে,আমার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়,


মেয়েটার বাবা,এসে এই ছেলে আমার মেয়ের সাথে অসভ্যতামো করা,চল বেটা তোকে থাকায় নিয়ে তোর খাতির যত্ন করছি,লোকটা আমার কলার ধরে টানতে টানতে গাড়িয়ে গাড়ির দিকে নিয়ে যায়,


আমি,স্যার আপনি প্লিজ একটা বার আমার কথাটা শুনুন ?

আমি কিচ্ছু করিনি,আমি যাস্ট উনার পিছু নিয়েছিলাম,প্লিজ স্যার আমায় ছেড়ে দিন,


ওসি স্যার,এই ছেলে তোর সাহস তো কম না,আমার মুখের উপরে কথা বলিস,নাহ তোকে এভাবে হবে না,লাথি খাওয়া মানুষ কখনো কথায় শুধরাবে না,এই সেলিম গাড়ি থেকে মোটা রোলারটা নিয়ে আয় তো...?


স্যারের কথা মতো সে মোটা রোলারটা নিয়ে এসে স্যারের হাতে দিলো,স্যার সোজা লাঠিটা হাতে নিয়ে আমায় হাটুর মধ্যে সেজোরে একটা বাড়ি মারে,


আমি,তো বাড়ি খেয়ে মনে হয় এখনি উপরে চলে যাবো,ব্যথায় মাটিতে বসে পড়লাম,চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়ছে,এদিকে মানুষ চেয়ে চেয়ে হাসছে আর বলছে একদম ঠিক হয়েছে বেটার সাথে,ফ্লাট করা মেয়েদের সাথে,একদম উচিৎ শিক্ষা দেওয়া উচিৎ বেটাকে,


ওসি স্যার,চুপচাপ গাড়িতে উঠ,না হয় লোকজনের সামনে এমন উদুম কেলানি কেলাবো মানসম্মান তো যাবে যাবেই প্লাস শরীরের একটা হাড় ও ঠিক ঠাক জায়গা মত খুজে পাবি না


আমি,না না স্যার প্লিজ আমি উঠছি,আকাশ মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু মাগো বলে চিৎকার দিয়ে আবার মাটিতে বসে যায়,ব্যথার চোটে উঠে দাঁড়াতেও পারছে না সে,


ওসি স্যার রেগে গিয়ে আমাকে টেনে হেঁচড়ে গাড়িয়ে তুলে,বেটা অনেক ঢং ধরেছিস,এসব ঢং আমার সামনে ধরে কোন কাজ হবে না,


এদিকে ব্যথায় আমার কলিজা বের হয়ে যাবে মনে হচ্ছে,কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না,আমাকে থানায় নিয়ে গিয়ে মাটিতে আছড়ে ফেলে,


ওসি স্যার,এই বেটাকে নিয়ে গিয়ে লকাপে ঢুকা,আমার মেয়ের সাথে অসভ্যতামো করে ওর কত্ত বড় সাহস,ওকে মেরে ওর হাড্ডি গুড্ডি এক করে দে,কাল সকালের আগে যেন বেটা কোন রকমে ছাড়া না পায়..?

সকালে আমি এসে যেন দেখি বেটা আধমরা হয়ে আছে,না হয় কিন্তু তোদের কপালেও শনি আছে..?


সেলিম,স্যার আপনি টেনশন নিবেন না,ওর মাথা থেকে এইসব দুই নাম্বারি চিন্তা একদম বের করে ফেলে দিব,


তারপর ওসি স্যার চলে যায়,আর আমাকে লকাপে ঢুকিয়ে সারারাত 

মারধোর করে,আমার রুহু যেন এখনি বের হয়ে যাবে,সকাল বেলা ওসি স্যার আসে,আর আমাকে লকাপ থেকে বের করে উনার সামনে নিয়ে যায়,


ওসি স্যার,বেটা এখন কেমন লাগছে...?

তুই জানিস না কার মেয়ের দিকে নজর দিয়েছিস,সামনের থেকে এসব করার আগে দেখে নিবি ঐ মেয়ের বাবাও আমার মত বড় অফিসার কিনা,এবারের মত ছেড়ে দিলাম যাহ বাড়ি যা?


আমি,মনে মনে হাসছি আর বলছি হায়রে পাওয়ার,তুই সামান্য একটা থানার ওসি মাত্র,এটা নিয়েই এত অহংকার বাপ মেয়ের,আর আমি কে সেটা যদি তুই জানতি তাহলে মাটি ছিদ্র করে সেটার নিচে ঢুকে যেতি,যাক সমস্যা নেই সময়ের অপেক্ষায় বসে থাকলাম,আমার ও সময় আসবে,একক,দশকে সব হিসাব করে নিব,কমদামি কাপড় আর নরমাল গেটাপ নিয়ে থাকি বলে চোখে পড়ে না


থানা থেকে বের হয়ে দুই কদম দিতেই ২০-২৫ টা দামি দামি গাড়ি আমার সামনে দাঁড় করায়,যেমন ল্যাম্বারঘিনি ভেনেনো,মার্সেডিজ বেঞ্চ মেব্যাক,ফেরারি পনিনফারিনা সের্জিও,মেবাক এক্সেলেরো ইত্যাদি এই টাইপের গাড়ি,সব কয়টার দরজা অটোমেটিক খুলে যায়, আমি একটাতে উঠে বসে গেলাম,তারপর সেটাতে করে বাসায় চলে যাই,


সেটা এক কনস্টেবল এর চোখ এড়ায়নি,সে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলো,যেই ছেলে সারারাত লকাপে বন্দী থেকে মাইর খেলো,সেই ছেলে সকাল বেলা এত দামী গাড়ি,কনস্টেবল যেন কোনো মতেই হিসাব মিলাইতে পারতেছে না,সে গিয়ে ওসি স্যারকে সব বলে,


ওসি স্যার যেন বিশ্বাস এই করতে পারছে না,সে থানার সামনে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গুলো চেক করে,তারপর সে নিজের চোখে দেখে,ওসির তো হুশ এই উড়ে গেছে,তার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে কপালে উঠে আছে....

এটা কি করে সম্ভব,যেই গাড়ি আমরা কয়েক বছর মেহনত করলেও কিনতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই,আর এমন খ্যাত মার্কা ছেলের কাছে এত দামী মডেলের গাড়ি তাও আবার বিভিন্ন ব্রান্ডের,যেই গাড়ি শহরের কোটিপতি রাও কিনার ক্ষমতা রাখে না....


আমি,আমার ভাড়া বাসায় চলে এলাম,গাড়ি গুলো আমায় নামিয়ে দিয়ে ওদের গন্তব্যে চলে গেলো,শরীরের ব্যথায় নড়াচড়া করতে পর্যন্ত অসুবিধে হচ্ছে আমার,নাহ আর রান্না করবো না,বাহির থেকে কিছু নিয়ে এসে খেয়ে নিব,কিন্তু হাঁটাচলা করতে পারছি না,মনে হচ্ছে যেন পায়ের হাড়টা ভেঙ্গে গেছে,ব্যথায় কাতর হয়ে যাচ্ছি,না পারতে ডক্টরের কাছে গেলাম,উনি আমার পা দেখেই বলে দিলো পায়ের ভিতরের হাড় ভেঙ্গে একটার উপরে একটা উঠে গিয়েছে,উনি রাতারাতি প্লাস্টার করে দিলো,


পরেরদিন

সকাল বেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,সারারাত পায়ের ব্যথায় ঘুম হয়নি,কিন্তু যত যাই হোক আমার ক্লাসে যেতে হবে,কারন কিছুদিন পর আমার পরিক্ষা,এখন ঠিকটাক মত ক্লাস না করলে পরিক্ষায় আন্ডা পাবো,তাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ক্লাসের দিকে রওনা দিলাম,


মেইন রোডে ঐঠে রিক্সা নিয়ে কলেজের দিকে রওনা হয়েছে,ওর হা আপনাদের তো বলাই হয়নি আমার পরিচয়...


(আমার নাম আকাশ সে তো সবাই জানেন,বাবা- মা ভাই বোন তাদের পরিচয় গল্পের সাথে থাকলে পেয়ে যাবে,আর আমি পড়ি হচ্ছে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে)


এবার গল্পে আসা যাক,

কোন ভাবে গিয়ে কলেজে পৌঁছালাম,পায়ে ব্যান্ডেজ প্লাস পড়নে কোন ভালো জামা কাপড় ও নেই,সবাই আমাকে দেখে হাসছে,কেউ কেউ তো টিটকারি করছে ঐ যে দেখ কলেজের নাম্বার ওয়ান খ্যাতটা যাচ্ছে,কি আর করবো লজ্জায় মাথা নামিয়ে হাটা দিলাম,মাথা নিচু করে হাটছি হটাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম,ব্যথায় মাগো বলে ষাঁড়ের মত চেঁচিয়ে উঠলাম,


ব্যথার উপরে ব্যথা পেয়েছি,রুহু যেন এখনি বের হয়ে যাবে,কিন্তু সব কিছু ফেলে কার সাথে ধাক্কা লাগলো সেটা দেখার জন্য মাথা উপরে তুলতেই দেখি কালকের মেয়েটা,যে আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে,


মেয়েটা,আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে,মনে হয় এখনি গিলে খেয়ে ফেলবে,


আকাশ,কিন্তু আমি কি করবো আমি তো ইচ্ছা করে এমন করিনি,

আমি মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালাম,আসলে সরি আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি,


মেয়েটা,আমার গালের মধ্যে কোষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো,


আকাশের চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়ছে..


মেয়েটা,এই ছোটলোকের বাচ্চা তুই আমার পিছু করতে করতে এখানে পর্যন্ত চলে এসেছিস..?

কালকের মারে তোর কি শিক্ষা হয়নি...?


পাশে থেকেই একটা মেয়ে বলে উঠলো,আরে এই খ্যাতটা এখানেই পড়ে,

মেয়েটা,কিহহহ বলিস..?

আমি এই খ্যাতদের কলেজে ট্রান্সফার হয়ে এসেছি,ছিহহহ আমার ভাবতেও তো গা শিউরে উঠছে,


আকাশ,চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,আর ভাবছে পোশাক-আশাকে যদি মানুষকে খ্যাত আর ছোটলোক নির্বাচন করা হয়,তাহলে তোরা আমার কাছে এর থেকে বড় খ্যাত,তোরা যেই কাপড় পড়ে নিজেকে মর্ডান আর বড়লোক দাবি করছিস,সেই কাপড় দিয়ে আমার ঘরের ময়লা পরিষ্কার করে,


থাক আর নিজেকে মহান বলে পরিচয় দিব না,আমি খ্যাত তাই আমাকে সবাই খ্যাত বলে,


মেয়েটা,এই ছোটলোক তুই এখনো যাসনি...?

দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে,..?


সবাই আকাশকে দেখে হাসাহাসি করছে,কারন নতুন একটা মেয়ে আসলো সে পর্যন্ত কথা শুনাতে কমতি দিলো না,কলেজের সবাই তো কথা শুনায় শুনায় এই,বাকি আজকে নতুন একজন আসলো সেও কথা শুনিয়ে দিলো,


মন খারাপ করে ক্লাসে চলে গেলাম,ক্লাসে গিয়ে প্রথমের বেঞ্চে বসলাম,কিন্তু স্যার এসে আমায় অপমান করে উঠিয়ে দিলো,


স্যার,এই ছেলে তোমায় কতদিন বলেছি এমন নোংরা জামা কাপড় পরে কলেজে আসবে না,তাও আজ পড়ে এসেছো,যাও শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসো,


আকাশ,তিশান,আজ কলেজে আসেনি,তাই মন খারাপ হলেও ভালো করার মত কেউ নেই

সবাই হাসাহাসি করছে আমাকে নিয়ে,সেটা রোজ এর একটা রুটিন,তবে সবার কথা শুনে নিজের কাছে নিজেকে খুব অপমান লাগে,আজ নিজের কিছু নেই বলে সবাই এমন খোটা দেয়,তবে আবার নিজেকে নিয়ে গর্ব ও করি,কারন ছেড়া নোংরা কাপড় পরিধান করলেও সেটা নিজের টাকায় কেনা,


ক্লাস শেষ করে ভাঙ্গা পা নিয়েই বাসার দিকে রওনা দিলাম,হেটেই যেতে হবে পকেটে টাকা নাই,আসার ভাড়াটা খালি ছিলো আমার কাছে দুপুরে বাসায় গিয়ে কি খাবো সেটার ও কোন ঠিক ঠিকানা নাই,কলেজের সীমানা পার হতেই কেউ একজন এসে পায়ের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো,ভাই আপনি আমাদেরকে বাঁচান,আপনি ছাড়া আমাদের কোন অস্তিত্ব নাই,প্লিজ ভাই আপনি আবার আগের রূপে ফিরে আসেন..?


আকাশ,নাহ রে ভাই তা আর হবে না

তোদের ভাই মরে গেছে বলে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_২)


আকাশ,ক্লাস শেষ করে ভাঙ্গা পা নিয়েই বাসার দিকে রওনা দিলাম,হেটেই যেতে হবে পকেটে টাকা নাই,আসার ভাড়াটা খালি ছিলো আমার কাছে,দুপুরে বাসায় গিয়ে খাবার খাবো তার ও কোন ঠিক ঠিকানা নাই,


কলেজের সীমানা পার হতেই কেউ একজন এসে পায়ের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো,ভাই আপনি আমাদের বাঁচান..? 

আপনি ছাড়া আমাদের কোন অস্তিত্ব নাই,প্লিজ ভাই আপনি আবার আগের রূপে ফিরে আসেন...?


আকাশ,নাহ রে ভাই তা আর হবে না

তোদের ভাই মরে গেছে বলে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম..


এই ভাঙ্গা পা নিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাসায় এসেছি,বাসায় আসার পর পা টা যেন মাটিতে ফেলতে পারছি না,ব্যথায় জান টা মনে হয় এখনি বের হয়ে যাবে,এদিকে পকেট ফাঁকা কি ভাবে কি করবো মাথায় যেন কাজ করছে না,নাহ পাশের দোকান টাতে গিয়ে দেখি বাকি দেয় কিনা,


বাসা থেকে বের হতেই দেখি সেই ছেলাটা,যে আমার পা চেপে ধরেছিলো,আমি ওকে দেখেও না দেখার ভান করে দোকানে গিয়ে মামাকে বললাম,মামা আমাকে কিছু খাওয়ার জিনিস দিন পরে টাকা হলে বিল দিয়ে যাবো,


দোকানদার,দেখো মামা আমার দোখানে অল্প টাকার মাল,তার মধ্যে যদি তোমাকে বাকি দেই আমার পেট চলবে কি ভাবে..?


আকাশ,শরমে মাথা নত করে ঘরের দিকে চলে এলাম,একটু পর দেখি কেউ একজন দরজায় বাড়ি দিচ্ছে,

গিয়ে দরজা খুলে দিলাম,দরজা খুলে দেখি সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে,হাতে অনেক গুলো খাবার নিয়ে,

এই কিরে তোর কি চাই..?

বললাম না আমি আর আগের রূপে ফিরে যাবো না..


ছেলেটা,ভাই আপনি যাই করেন করেন,কিন্তু আমি আপনার সাথে থাকতে চাই,আপনি চলে আসার পর থেকে আমাদের অবস্থান নড়কে পরিণত হয়ে গেছে,শহরের কোন জায়গায় গিয়ে থাকতে পারছি না,ভাই প্লিজ আপনার পায়ে পড়ি আমাকে আপনার সাথে রাখেন...?


আকাশ,নিজের এই তো থাকার জায়গা নাই তোমাকে কি রাখবো,


ছেলেটা,ভাই দরকার হয় আপনার ঘরের এক কোনায় পড়ে থাকবো,আপনার কোন টাকা পয়সা লাগবে না,আপনার খাওয়া দাওয়া থেকে নিয়ে শুরু করে সব আমি দেখবো,প্লিজ আমাকে না করিয়েন না...?


আকাশ,আচ্ছা থাকো

ছেলেটার নাম পল্লব,সে আগে আমার কাজের সাথী ছিলো, তাই না করলাম না


পল্লব,ভাই আপনার জন্য কিছু খাবার এনেছি সেগুলো খেয়ে নিন,

আকাশের খুব খিদে পেয়েছে তাই খেতে শুরু করে,এমন সময় পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠে,সে ফোনটা পকেট থেকে বের করে হাতে নেয়,নাম্বারটা দেখেই তার চোখ কপালে উঠে যায়,আল্লাহ এ তো আম্মুর নাম্বার..?


ফোনটা রিসিভ করতেই,আম্মু কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে,

আম্মু,বাবা তুই কোথায়রে...? কেমন আছিস তুই...?


আকাশ,আম্মু আছি কোন এক রাজ প্রাসাদে,আর তোমাদের দোয়ায় ভালো আছি


আম্মু,বাবা প্লিজ আর কতদিন এভাবে রাগ করে থাকবি..? 

এবার অন্তত ঘরে ফিরে আয়..?


আকাশ,নাহ আম্মু সেটা আর সম্ভব না,যতদিন না নিজেকে মানুষ বানাতে পারবো ততদিন আমি ঘরে ফিরে আসবো না,আর গতকাল বহুদিন পর গাড়িতে উঠলাম ভালোই লাগলো


আম্মু,বাবা তোর জন্য আমার সব সময় মন কাঁদে,তোর নাম্বারটা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি কথা বলবো বলে,তোর বাবাও রোজ তোর জন্য কান্না করে আর আফসোস করে,যে সেদিন ওর গায়ে হাত না তুললে হয়তো সে আজ বাড়িতে থাকতো,বাবা ফিরে আয় না ঘরে...?


আকাশ,আম্মু প্লিজ এভাবে বলো না,তোমার ছেলে কোনদিন এই মানুষ হবে না ঐ রাজ প্রাসাদে থাকলে,আজ যখন পথে নেমে এসেছে দুনিয়ার বাস্তবতার সাথে মোকাবেলা করার জন্য,তখনি বুঝে আসছে দুনিয়াদারী এতটা সোজা না,নিজেকে তৈরি করার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছি,নিজেকে মানুষের মত মানুষ না বানিয়ে কোনদিন ঘরে ফিরবো না,ভালো থেকো মা বলে ফোনটা কেটে দিলাম,কারন আর একটু কথা বললে হয়তো চোখের পানি বৃষ্টির জ্বলে পরিণত হবে


খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম করে বিকাল বেলা পল্লবকে সাথে নিয়ে একটু বাহির থেকে হেটে এসে পরে পড়তে বসি,কারন কিছুদিন পর আমার পরিক্ষা আসতে চলেছে এখন না পড়লে পিছিয়ে যাবো,

রাত বারোটার দিকে পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ি,


সকালে উঠে যথাযথ সময়ে কলেজে চলে যাই,আজ পল্লব রিক্সা ভাড়া দিয়ে দিয়েছে,ছেলেটার কথা যে কি বলবো,পাগলের মত ভালোবাসে সে আমায়,আমার জন্য মরে যেতেও প্রস্তুত সে,


কলেজে গিয়ে শুনি আজ নাকি ক্লাস হবে না,তাই বাহিরে একটা গাছের নিচে বসে আছি,সবাই আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করছে,কেউ কেউ বলছে ঐ যে কলেজের পাগলটা গাছ তলায় বসে আছে,অনেক মন খারাপ হয় ওদের কথা শুনলে,তবে এখন কেন জানি অভ্যাস হয়ে গেছে,আগের মত আর গায়ে লাগে না ওদের কথা গুলো,তিশান টাও আজকে আসে নাই একা একা ভালো ও লাগছে না,উঠে চলে যাবো এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন ডাক দিয়ে বলে এই আকাশ দাঁড়াও, 


আমি,পিছনে ফিরে দেখি আরু,মেয়েটা আমাদের সাথেই পড়ে,আমাদের ক্লাসমেট,দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর,মন মানুষিকতাও অনেক ভালো,সবাই আমাকে কথা শুনালেও আজ পর্যন্ত সে আমায় কখনো কথা শুনায় নি,

জ্বি কিছু বলবেন...?


আরু,হা বলার জন্যেই তো এসেছি


আকাশ,জ্বি তাড়াতাড়ি বলুন আমি চলে যাবো,আর আমার মত খ্যাতের সাথে আপনি কথা বলছেন সেটা কেউ দেখলে লোকে আপনাকে কথা শুনাবে,


আরু,এই ছেলে তোমার এত তাড়া কিসের হা..?

চুপচাপ যেখানে বসে ছিলে সেখানেই বসো,


আকাশ,মেয়েটা আমায় জোর করে বসালো..

আচ্ছা বসলাম এবার তো বলেন..?


আরু,আমাকে তোমার ফ্রেন্ড বানাবে...?


আকাশ,তো পুরা থ মেয়ে বলে কি,কোথায় ও আর কোথায় সে,এই আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন হা.?

আপনি কোথায় আমি কোথায়..?

শুধু শুধু আমার সাথে মিশে নিজের নাম কেন খারাপ করতে চাচ্ছেন আপনি...?

সরি আমি পারবো না,লোকে আমার জন্য আপনাকে কথা শুনাবে এটা কখনোই আমি মেনে নিতে পারবো না,আমি খ্যাত হতে পারি তবে মানুষকে অপমানিত করতে পারবো না, 


আরু,এই আকাশ এবার কিন্তু তুমও বেশি বারাবাড়ি করছো..?

কে কি বলবে সেটা আমার উপরে ছেড়ে দাও,আর কলেজে আমাকে নিয়ে কথা বলবে এমন কারোর বুকের পাঠা হয় নাই,হাত বাড়িয়ে রেখেছি বন্ধু বানিয়ে নাও..


আকাশের কাছে কল্পনা মনে হচ্ছে,আচ্ছা যান আজ থেকে আমরা বন্ধু, 


আরু,তাহলে এখন থেকে আপনি নয় তুমি বলবে,

আকাশ,আচ্ছা ঠিক আছে,

আরু গিয়ে দশ টাকার বাদাম কিনে নিয়ে এসেছে,দুজনে বসে বসে সেগুলো চিবোচ্ছে আর গল্প করছে,দুজনের মধ্যে বেশ ভালো একটা ভাব জমে গেছে,


আকাশ লক্ষ্য করে দূর থেকে একটা লেডি গ্যাং এদিকেই আসছে সেখানে অহংকারী মেয়েটাও আছে,আকাশ নিজেকে আড়াল করে ফেলে কারন ওর জন্য এখন আরুকে ওরা কথা শুনাবে,


আরু ওদের কাউকে দেখতে পায়নি,কারন সে আমার উল্টোদিকে বসেছে,সে বকবক করেই যাচ্ছে এদিকে আকাশের বুক ধুপধুপ করছে,


মিম নামের একটা মেয়ে আছে আমাদের ক্লাসে পড়ে,সে অহংকারী মেয়েটাকে বলে হেনা ঐ যে দেখ খ্যাতটা আজকে আবার বান্ধবীও বানিয়ে নিয়েছে(গল্পের নায়িকার নাম হেনা)সবাই তো বুঝেই গেছেন


হেনা,হা চল ওদের মজা নিয়ে আসি,


আকাশ,ও তার মানে মেয়েটার নাম হেনা,কিন্তু ওর ভয়ের মাত্রাটা আরো বেড়ে গিয়েছে,এখন সবাই মিলে আমাকে অপমান করবে


হেনা,আকাশের কাছে গিয়ে কিরে খ্যাত আজকে দেখছি আবার বন্ধুও পাতিয়ে নিয়েছিস,সেও কি তোর মত খ্যাত নাকি বলে হাসতে শুরু করে। হেনার কথা শুনে সবাই হাসাহাসি করছে,


তখনি আরু পিছন দিক থেকে ঘাড় ঘুরে তাকায়,সবাই তো অবাক আরুকে দেখে,সবার মুখের বুলি বন্ধু হয়ে গেছে,কারন আরু এত কোটিপতি হওয়া সত্বেও এমন একটা খ্যাতের সাথে বসে গল্প করছে,কোথায় আকাশ নামক খ্যাতটা আর কোথায় আরু,কেউ হিসাব মিলাতে পারছে না,


তবে সবার মুখের বুলি বন্ধ হয়ে গেছে কারন আরুকে কেউ কিছু বলে পার পাবে না,সেটা যত বড় বাপের বেটাই হোক না কেন,

তবে হেনা বলা বন্ধ করে নাই,সে আকাশের মজা উড়াচ্ছে,হেনা নতুন তাই সে আরুকে চিনে না,


আরু,এই মেয়ে আর একবার যদি আকাশকে নিয়ে কিছু বলেছো অবস্থা খারাপ করে ছেড়ে দিব,তুমি যত বড় বাপের বেটাই হও না কেন,আমি কাউকে পরোয়া করি না,সে তোমার বাপের টাকায় খায় না তোমার বাপের টাকায় পড়ে যে তুমি ওকে কথা শুনাচ্ছো...


হেনা,আরুর কথা শুনে রেগে লাল হয়ে গেছে,এই মেয়ে তোমার কেন এত গায়ে লাগছে আমার বলা আমি বলছি তোমার এত কিসের সমস্যা...? 


আরু,আমার অনেক সমস্যা কারন সে আমার বন্ধু,সো মুখ সামলে কথা বলো,

আকাশ,তো আরুর কথা শুনে হা হয়ে আছে।


হেনা,দেখা যাবে এই ফকিন্নিটার সাথে কয়দিন বন্ধুত্ব থাকে,আর শোন ছোটলোক তোকে আমি দেখে ছাড়বো।


আরু,দেখে নিয়েছো এখন ভাগো...


হেনা,রাগে ফসফস করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়,

আকাশ,হা হয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে,


আরু,কেমন দিলাম।

আকাশ,কি বলবে ভাষা খুজে পাচ্ছেনা সে,

থেংক উ..


আরু,আরে বন্ধু বান্ধবের মাঝে নো থেংকস নো সরি


আকাশ,তুমি সত্যি অনেক ভালো একটা মেয়ে,

আরু,

দুজনে অনেকটা সময় আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসে,আকাশের আজ খুব খুশি লাগছে একটা ভালো বান্ধবী পেয়েছে,আর তার উপরে নাম্বার ও দিয়ে দিয়েছে,বাসায় এসে দেখে পল্লব খাওয়া দাওয়া সব রেডি করে ফেলেছে,যাক ভালো হয়েছে আর রান্না করতে হবে না,


তারপর সে কাপড় চোপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে যাবে ঠিক সেই সময় ফোনটা আবার বাজা শুরু করে,

সে কাপড় গুলো ওয়াশরুমে রেখে এসে ফোনটা রিসিভ করে,

হ্যালো কে বলছেন...?


আমি,বায়জিদ থানার দারোগা বলছি,আপনি কি আকাশ মাহমুদ...? 

আকাশ,হা হবো একজন,কি দরকারে ফোন দিয়েছেন সেটা বলেন...?


দারোগা,আপনার ছোট ভাই মুন্না এখন জেলে বন্দী,তাকে শহরের ছেলেদের সাথে গ্যাঞ্জাম করার সময় আটক করেছি,ওকে অনেক মারধর করে ছেলে পেলেরা,তাই তাকে বাঁচিয়ে এনে থানায় আটক করে রেখেছি,আর থানার মধ্যেই ওর ট্রিটমেন্ট চলছে...!


আকাশের তো মাথা একশতে একশো গরম হয়ে যায়,ওর কলিজার ছোট ভাইকে কে মেরেছে কার এত বড় সাহস...

নাহ আমার আবার আগের রূপে ফিরে যেতে হবে,এই ভেসভোসা ছেড়ে আবার নিজের কেরেক্টারে ঘুছে যাবো,আর অনেক মানুষকে অনেক কিছু দেখানোর বাকি আছে,আকাশ মাহমুদ কি সেটা এখনো কেউ জানে না,উপরে দেখতে খ্যাত হলেও ভিতর থেকে পুরো আগুনের গোলা....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_৩)


আকাশের তো মাথা একশতে একশো গরম হয়ে যায়,ওর কলিজার ছোট ভাইকে কে মেরেছে,কার এত বড় সাহস,

নাহ আমাকে আগের রূপে ফিরে যেতে হবে,এই ভেসভোসা ছেড়ে আবার আগের ক্যারেক্টারে ঘুছে যাবো,আর অনেক মানুষকে অনেক কিছু দেখানোর বাকি আছে,আকাশ মাহমুদ কি সেটা এখনো কেউ জানে না,

উপর থেকে দেখতে খ্যাত হলেও ভিতর থেকে পুরো আগুনের গোলা,


আকাশ,রানাকে ফোন করে,রানা তুই কোথায় রে...?

রানা হচ্ছে শহরের নাম করা মাস্তান,


রানা,এই যে ভাই একটা গ্যাঞ্জামে আসছি,ভাই সমস্যা নাই বলেন..?


আকাশ,মুন্নাকে নাকি গতরাতে কারা মেরেছে...?


রানা,ভাই আসলে কি যে বলবো শহরের কিছু ছেলেপেলেরা মিলে একটা দল পাকাইছে Rex নামের,ওদের সাথে ঝামেলা হইছে নাকি ওর,


আকাশ,তোরা থাকতে কি ভাবে ওকে মারলো,আমি না হয় নাই কিন্তু তোরা কোন মরা মানুষের লোম ছিঁড়তেছিস..?


রানা,ভাই প্লিজ আপনি রাগবেন না,আমি দেখছি মুন্নার কি হয়েছে,আর ওদের বারোটা বাজাচ্ছি আমি,আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন


আকাশ,ওকে ফোন রাখলাম বলে ফোনটা রেখে দেয়,

মেজাজ পুরো মাথায় উঠে আছে,আমার অবর্তমানে আমার ছোটভাই দেরকে মেরে যায় এত বড় সাহস,নাহ নিজের রূপ পরিবর্তন করতে হবে,না হয় কেউ ভালো থাকতে দিবে না,


কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে সে কেনো ঘর ছেড়েছে,ঘর ছাড়ার উদ্দেশ্য কি,সে যদি আবার এগুলার মধ্যে নিজেকে জড়ায় তাহলে তার এই ত্যাগ বৃথা যাবে,নাহ দুনিয়াদারী যেই দিকে যাবে যাক আমাকে মানুষের মত মানুষ হতে হবে,


তারপর 

সে ফ্রেশ হতে চলে যায়,ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার প্রিপারেশন নেয় তখনি আরু ফোন করে,


আরু,এই আকাশ কি করো..?

খাবার খেয়েছো...?


আকাশ,হা এইতো খেয়ে দেয়ে মাত্র শুতে যাবো...

আরু,এই ডিস্টার্ব করলাম নাতো..?


আকাশ,আরে পাগল কি বলছো এগুলা,ডিস্টার্ব কেন হতে যাবো,আচ্ছা বলো তুমি খেয়েছো...?


আরু,হা খেয়েছি আরো অনেক আগে,আচ্ছা শুনো তোমায় যেই জন্য ফোন করেছি,আজ বিকালে একটু ঘুরতে বের হবো রেডি থেকো,


আকাশ,আমার পা তো ভালো না কি করে ঘুরবো..?


আরু,আরে আমি আছি না,আমি তোমায় ধরে থাকবো,আর দুজনে মিলে অনেক ঘুরবো,


আকাশ,আচ্ছা ঠিক আছে

এবার একটু বিশ্রাম নেই তাহলে...


আরু,ওকে টাটা বলে লাইন কেটে দেয়,

কিন্তু আকাশের একটা জিনিস মাথায় কাজ করছে না,হটাৎ আরু কেন ওর সাথে এত ঘনিষ্ঠ হতে চাচ্ছে,এর পিছনে কি কোন কারন আছে

ধুর যাই হবে হোক,এত মতলব খুজে লাব নেই,ফোন রেখে দিয়ো একটু বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করলাম,


বিকাল বেলা আরুর ফোন পেয়ে ঘুম ভাংলো,

আরু,এই তুমি কোথায় রেডি হয়েছো...?


আকাশ,নাহ এখন মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম তোমার ফোন পেয়ে,


আরু,আচ্ছা আমি গাড়ি নিয়ে আসছি তোমার বাসার সামনে,এই সময়ের মধ্যে তুমি রেডি হয়ে নাও,


আকাশ,আচ্ছা তা ঠিক আছে,কিন্তু আমার বাসা কোথায় সেটা তুমি জানো...?


আরু,হা জানি

আমি অনেক আগ থেকেই জানি তুমি কোথায় থাকো


আরুর কথা শুনে আকাশের টনক নড়ে উঠলো,এই মেয়ের অন্য কোনো মতলব নাই তো

ধুর কি ভাবছি আমি ওর নামে উল্টো-পাল্টা

আচ্ছা ঠিকানা জানলে চলে এসো

আমি ফ্রেশ হচ্ছি.....


আকাশ,উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়,পরে একটা শার্ট বের করে গায়ে দেয়,পুরাতন শার্ট,আল্লাহ জানে আরু কি মনে করবে

কিন্তু কি করবো,আমার তো আর শার্ট নেই,দুইটাই শার্ট একটা কলেজের আরেকটা বাসার


একটু পর আরু বাসার নিচে এসে হর্ণ বাজালো,আচ্ছা পল্লব তুই একটু থাক আমি বাহিরে যাচ্ছি,আমার আসতে হয়তো একটু সময় লাগবে,


পল্লব,আচ্ছা ভাই সমস্যা নাই,


আকাশ,তারপর বাসা থেকে নিচে নামে,পরে আরুর গাড়ি করে দুজনে মিলে ঘুরতে বের হয়,আচ্ছা আরু আমরা কোথায় যাচ্ছি...?


আরু,শুরুতে আমরা পার্কে ঘুরবো,পরে দুজনে রেস্টুরেন্টে খাবো পরে মলে যাবো,


আকাশ,আমার কাছে তো টাকা নেই


আরু,চোখ গরম করে আকাশের দিকে তাকায়

আকাশ,এই কি হয়েছে এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছো কেন..?


আরু,এই ছেলে কি সমস্যা হা...?

তোমার কাছে টাকা আছে কি নাই সেটা তোমাকে একবারো জিগ্যেস করেছি,আর তোমার টাকা দিয়ে আমার কাজ কি,তোমায় আমি ঘুরতে এনেছি সমস্ত খরচ আমার,কথা কম বলবে একদম


আকাশ,এই এত রেগে যাচ্ছো কেন..?

আরু,রাগবো না তো কি করবো,তুমি সব সময় নিজেকে এত ছোট করে দেখো কেন হা...?


আকাশ চুপ হয়ে যায়।


আরু,নেক্সট টাইম এই সব কথা শুনলে হবে খালি মুখ থেকে

আকাশ,মনে মনে বাবাগো কি রাগ


আরু,এই নামো পার্কে এসে পড়েছি,

আকাশ,তারপর দুজনে গাড়ি থেকে নেমে পার্কের ভিতরে ঢুকলাম,সবাই আমার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে,ফাস্টে বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই বুঝে নিয়েছি মানুষ কেন বারবার আমার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে,কারন আমাকে দেখতে একদম পুরো খ্যাত লাগছে,আর আরুকে হুর-পরীর মত,

কিন্তু আরুর সেই দিকে কোন ভ্রূক্ষেপ এই নাই,আমার পোশাক-আশাক নিয়ে যেন তার কোন মাথা ব্যথাই নেই,বাকি মানুষে আমাকে নিয়ে নানান মন্তব্য করে চলেছে


আরু,এই চলো ওদিকটায় গিয়ে বসি,

আকাশ,তারপর দুজনে গিয়ে ঐপাশে একটা খালি জায়গা ছিলো সেখানে গিয়ে বসলাম,দুজনে বসে বসে গল্প করছি,বেশ অনেকটা সময় গল্প করলাম,


আরু,এই চলো অনেকটা সময় হয়ে গিয়েছে এবার গিয়ে কিছু খাবো,

আকাশ,আরু আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো,

আরু,এই কি খাবে...?

আকাশ,তোমার যা ভাল লাগে অর্ডার করো,


আরু,তার নিজের পছন্দ মত অর্ডার করলো,খাওয়া দাওয়া করে এই চলো...?


আকাশ,এখন আবার কোথায় যাবে..?

আরু,মলে যাবো আমার কিছু কেনাকাটা করতে হবে


আকাশ,আচ্ছা চলো..

আরু,গাড়ি স্টার্ট করে শপিংমলের সামনে গিয়ে থামলো,পরে দুজনেই মলে ঢুকলাম,মলের ভিতরে এসি লাগানো,ঠান্ডায় মাইগ্রেনের সমস্যা করছে,হাত পা ও ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার,আরু আমার না খুব সমস্যা হচ্ছে এসির বাতাসে,মাইগ্রেনের সমস্যা করতেছে,


আরু,আচ্ছা দাঁড়াও,আরু ব্যাগ থেকে একটা চাঁদর বের করে দিয়ে বললো,নাও এটা নাকে মুখে পেঁচিয়ে নাও..?


আকাশ,আরুর চাঁদরটা নিয়ে নাকে মুখে পেঁচিয়ে নিলাম,এবার একটু বেটার ফিল হচ্ছে,


আরু,আমাকে নিয়ে একটা দোকানে ঢুকলো,আংকেল ভালো কোয়ালিটির কয়েকটা পেন্ট দেখান তো..?


দোকানদার,মামনী কার জন্য দেখাবো,সাইজটা একটু বলো..?


আরু,আকাশকে দেখিয়ে দিয়ে ওর সাইজের লাগবে,

আকাশ,আরুর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়,এই আরু তুমি কি করছো আমার জন্য পেন্ট কিনছো কেনো..?


আরু,চোখ রাঙিয়ে আকাশের দিকে তাকায়,এই ছেলে বেশি কথা বলতেছো মনে হয়..? অবস্থা কিন্তু খারাপ করে ছেড়ে দিব আমার মুখের উপরে কথা বললে...


আকাশ

আরু,আকাশের জন্য দুইটা দামী পেন্ট আর দুইটা শার্ট কিনে,এই নাও এগুলা তোমার জন্য,কাল থেকে যদি কলেজে ঐসব পড়ে আসো খারাপ হবে,মানুষ তোমাকে কথা কেনো শুনাবে হা...?


আকাশ,কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না,

কারন আরুকে সে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে,এই মেয়েটার মধ্যে কোন দেমাগ বা হিংসা নাই,একদম সাধারণ একটা মেয়ে,গাড়ি দেখলেই বুঝা যায় বাপের অঢেল সম্পত্তি,তাও অহংকার বলতে কি সেটা তার মধ্যে নাই,


আরু,আচ্ছা চলো অনেক সময় হয়েছে এবার বাসার দিকে যাওয়া দরকার,

আকাশ,হা ঠিক বলেছো অনেকটা সময় হয়েছে এবার যাওয়া দরকার,


দুজনে লিফট দিয়ে নেমে শপিংমল থেকে বের হবে,ঠিক সেই সময় কেউ একজন ইচ্ছা করে এসে আকাশের গায়ের সাথে ধাক্কা খায়,সে ধাক্কা দিয়ে সে নিজেই মাটিতে পড়ে গেছে,


আকাশ,লক্ষ্য করে দেখে হেনা,আকাশ তো অবাক

হেনার সাথে অনেক গুলা মেয়ে আছে,হয়তো শপিং করতে এসেছে,

ধুর যাই করুক তাতে আমার কি


হেনা তো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে,হেনার চেঁচামেচি শুনে মানুষজন জড়ো হয়ে গেছে,

পাশেই অনেকগুলো উশৃঙ্খল ছেলে পেলে দাঁড়িয়ে ছিলো,ওরা দৌড় আসে এই এই এখানে কি হয়েছে...? 


হেনা,দেখন না ভাইয়া এই খ্যাত ছেলেটা আমাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছে বলে কান্না জুড়ে দেয়


আকাশের তো মাথায় কাজ করতেছে না,এই মেয়ে এই সব উল্টো-পাল্টা কি বলতেছে


ছেলে গুলা,এই পোলা মেয়ে দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়তে ইচ্ছা হয় বলে আকাশকে মারতে আসে,তখনি আরু ওদের পথ আটকায়,


আরু,এই আপনারা না জেনে কোন কথা বলতে আসবেন না,দোষ আকাশের না দোষ হচ্ছে ঐ মেয়ের,সে নিজের ইচ্ছায় এসে ধাক্কা খেয়েছে,


হেনা,ভাইয়া আপনারা বিশ্বাস করেন এই মেয়ে মিথ্যা বলছে ওরা দুজনে মিলে প্লান করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে,


ছেলেগুলা,আরুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আকাশের গালের মধ্যে কোষে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়...


হেনা,তো মনে মনে খুশি বেটা খচ্চর কালকের শোধ তুলে নিলাম


ছেলেগুলা,এই তুই মুখের থেকে চাঁদরটা সরা,তোর ভিডিও করে নেটে ছেড়ে দিব,

আকাশ,চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,


ছেলেগুলা,এই তোরে একবার বলছি যে কথা কানে যায় না...?

না আরো কয়েকটা দিব বলে আকাশের কলার টেনে ধরে,,


আকাশ,গলা থেকে চাদরের পেচটা খুলে মুখ থেকে চাদরটা সরায়,

ছেলেটা আকাশকে দেখে ওর চোখ বড় বড় হয়ে যায়,ভয়ে ওর গা কাঁপা শুরু করে দিয়েছে,ছেলেটার সাথে বাকি যারা ছিলো সবাই আকাশকে দেখে ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়,ছেলেটা আকাশের কলার ছেড়ে দিয়ে ওর পায়ের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে,ভাই আমাকে মাফ করে দেন,ছেলেটা ভয়ে আকাশের পা ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়,


সবাই তো অবাক 

সবাই আসলো ওকে মারতে আর ওকে দেখে সবাই পালিয়ে গেলো,বিশেষ করে হেনা তো বিশ্বাস এই করতে পারছে না,যারা ওকে মারতে আসলো তারাই আকাশের পায়ে ধরে মাফ চাচ্ছে

কি হচ্ছে কি এই সব


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_৪)


সবাই তো অবাক

সবাই মিলে ওকে মারতে এসে ওকে দেখে সবাই পালিয়ে গেলো,

বিশেষ করে হেনা তো বিশ্বাস এই করতে পারছে না,যারা ওকে মারতে আসলো তারাই আকাশের পায়ে ধরে মাফ চাচ্ছে

কি হচ্ছে এই সব...


এই খ্যাত ছেলেটার পায়ে ধরে কেনে মাফ চাচ্ছে ওরা

ধুর মাথায় কাজ করছে না,


এদিকে ছেলেটা আকাশের পা ধরে পড়ে আছে,ভাই আপনার পায়ে ধরে মিনতি করছি,ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দেন..?


আকাশ,এই পা ছেড়ে উঠে দাঁড়াও..?

ছেলেটা,ভাই আপনি আমায় মাফ না করলে আমি আপনার পা কখনো ছাড়বো না


আকাশ,এই তোকে উঠে দাঁড়াতে বলেছি না বলে গরম হয়ে যায়,


আরুর মাথায় যেন কিছুই কাজ করছে না,যেখানে সবাই ওকে অপমান করে সেখানে এই ছেলে আকাশের পায়ে ধরে মাফ চাচ্ছে,মাথা ঠিক আছে নাকি এই ছেলের আল্লাহ জানে


কিন্তু বাকি ছেলে গুলো পালিয়ে গেলো কেন,একজনের মাথা খারাপ ধরে নেওয়া যায়,কিন্তু বাকি যারা ছিলো ওরা কেন পালিয়ে গেলো,আরুর কোনো ভাবেই হিসাব মিলছে না,তাহলে আকাশের কি অন্য কোনো পরিচয় আছে যেটা আমরা জানি না

আকাশকে নিয়ে হাজারো কৌতূহল মাথায় কাজ করছে,


ছেলেটা,মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়..

আকাশ,আজকের মত কিছু বললাম না

সব ছেড়ে ভালো হয়ে গিয়েছি,না হয় তোরা তো জানিস যে তোদের মৃতদেহ দেখে এত সময়ে মানুষের কান্নার রোল পড়ে যেতো

ভবিষ্যতে যদি এমন ভুল দেখি ঐদিন এই ভুবনে তোদের শেষ দিন হবে

ভালো থাক চললাম,এই আরু চলো বলে আরুকে নিয়ে শপিংমল থেকে বের হয়ে যায়,


সমস্ত কিছু যেন হেনার মাথার উপর দিয়ে গেলো

ছেলেটার ভয়ে এখনো হাত পা কাঁপতেছে,


হেনা,কি ভাই ওকে মারতে গিয়ে নিজেরাই ভয়ে কাবু হয়ে গেলেন..?

আপনারা চারজন আর ঐ খ্যাতটা একা ছিলো,তাও আপনারা ওকে মারতে পারলেন না,বাহ শুরুতে তো অনেক বীরবল দেখিয়েছেন..? 


ছেলেটা,হেনার গালের মধ্যে কোষে একটা থাপ্পড় বসাই দেয়,

হেনা,থাপ্পড়ের টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরের উপরে গিয়ে পড়ে,

এই মেয়ে তোর গুষ্টি মারি,আরেকটা শব্দ বের করবি মুখ দিয়ে তাহলে তোকে থাপড়াইতে থাপড়াইতে এখানেই মেরে ফেলবো,ফাজিল মেয়ে কোথাকার...


নিজের জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরেছি এতেই শুকরিয়া,এই

মেয়ে তুই জানিস এই ছেলে কে...?

বা কি তার পরিচয়..?

আমি কেন আমার মত একশত ছেলেপেলে আসলেও ওর শরীরের পশম পর্যন্ত বাকা করতে পারবো না,

আজকে তোর জন্য নিজের জীবনটা ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিলাম

দোষ ভাইয়ের না দোষ তোর,তুই ইচ্ছা করে ভাইকে ধাক্কা দিয়েছিস,সোজা এখন এখান থেকে কেটে পর,না হয় আরেকবার যদি আমার চোখের সামনে পরিস,তাহলে তোকে খুন করে দিব..


হেনা,ভয়ে শপিংমল ছেড়ে বের হয়ে যায়,বান্ধবীদেরকে নিয়ে,

কিন্তু হেনা ভিতরে ভিতরে রাগে ফসফস করছে,একে তো শপিং করতে পারে নাই,দ্বিতীয় এই খ্যাত আকাশের জন্য অপরিচিত একটা ছেলের হাতে থাপ্পড় খেলো,

সব এই খ্যাত আকাশের দোষ,বেটাকে আমি ছাড়বো না,

তোর জন্য মার খেয়েছি তোর শেষ দেখেই ছাড়বো আমি,

আর সালা ফকিন্নির বাচ্চা কি বললো ওর মত একশত ছেলেপেলে আসলেও এই খ্যাতটার কিছু করতে পারবে না,

আরে একশত ছেলেপেলে কেন,খ্যাত টাকে আমি নিজেই সাইজ করবো,


অন্যদিকে আরু গাড়ি ড্রাইভ করছে আকাশ চুপচাপ বসে আছে,এমনিতে আরুর মাথায় তো আকাশকে নিয়ে হাজারো কৌতূহল,তার মধ্যে ছেলেটাকে বলা আকাশের শেষ কয়েকটা কথা তাকে আরো ভাবাচ্ছে,সে শিউর আকাশের কথা শুনে যে আকাশের কোন লুকানো অতিত আছে,


আকাশ,চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে,মন মেজাজ একদম বিগড়ে আছে আকাশের,কচুপোড়া দুনিয়ায় মানুষ গুলো এত আজিব কেন,আমি ভালো থাকলে ওদের শরীরে এত জ্বালা করে কেন,যেখানেই যাই পিছনের অতিতের সাথে রিলেটিভ কোন কর্মকান্ড ঘটে যায়,আকাশের গালে আঙ্গুলের ছাপ বসে আছে,


আরু,গাড়ি ড্রাইভ করে আকাশের বাসার সামনে এনে আকাশকে

নামিয়ে দেয়,

আকাশ,গাড়ি থেকে নেমে আরু সাবধানে যেও,আর কোন সমস্যা হলে আমায় ফোন দিও বলে সে ঘরের দিকে হাটা দেয়,


আরু,আচ্ছা তুমিও ভালো থেকো


আকাশ,বাসার ভিতরে ঢুকবে আরু পিছন থেকে আবার ডাক দেয়,

এই আকাশ শুনো তো একটু..?


আকাশ,হা বলো..?


আরু,কাছে আসো...?

আকাশ,আরুর কাছে গিয়ে হা বলো...?


আরু,ঠুসস করে আকাশের গালে একটা কিস বসিয়ে দেয়


আকাশ,এই এই কি হলো এটা..?

আরু,কই কি হয়েছে...?

আরে এত চাপ নিচ্ছো কেন,বন্ধুকে ভালোবেসে দুই একটা পাপ্পি দেওয়াই যায়


আকাশ,আচ্ছা গেলাম,সে বাসার ভিতরে চলে আসে,আরু ও চলে যায়,

আকাশ,এসে দেখে পল্লব ও বাসায় নাই,সে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে পড়তে বসে,পল্লব একটু পরেই চলে আসে,


পল্লব,ভাই আপনার গায়ে নাকি কে হাত দিয়েছে..?

কিন্তু তাও নাকি আপনি তাঁদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন..


আকাশ,কিরে তুই কি করে জানলি..?

পল্লব,ভাই আমি আপনাকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি,আপনার গায়ে হাত দিয়ে কি ভাবে বেঁচে যাবে,আপনার গায়ে হাত দিয়েছে আর আমি ওকে ছেড়ে দিব সেটা আপনার মনে হয়

বেটাদের কেচ্ছা-কাহিনী খতম


আকাশ,আরে তোরা কি কখনো মানুষ হবি না

তোদের নিয়ে আর পারি না,আমি যেই খানে কিছু করিনি সেই খানে তুই কেন উল্টো-পাল্টা করতে গেলি,


পল্লব,এটা তো কম ভাই আপনার গায়ে আঘাত করবে এমন জানতে পারলেও জীবন কেঁড়ে নিব


আকাশ,জানে ওদের যত মানা করুক কিন্তু কাজ হবে না,বেটাদের খেইল খতম করে দিয়েছে পল্লব 

আচ্ছা আমার পড়তে হবে,তুই কোন কাজ থাকলে শেষ কর,

আকাশ পড়ায় মন দেয়,পড়া শেষ করে রাতের বেলায় খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,


কিন্তু অন্যদিকে হেনার চোখের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে আকাশ,ওকে আজ মাইর খাইয়েছে খ্যাতটা,কিন্তু একটা জিনিস মাথায় কাজ করছে না আকাশকে মারার পর সে কোন রিয়েক্ট করলো না,ছেলেটা দেখতে খ্যাত হলেও ওর মধ্যে ভালোকিছু গুন আছে


ধুর আমি ঐ খ্যাতটাকে নিয়ে কি সব উল্টা-পাল্টা চিন্তা ভাবনা করছি, 

তবে খ্যাতটার কোন একটা দিক হেনাকে দূর্বল করে দিচ্ছে,আকাশকে সে কোন ভাবেই তার সৃতিশক্তি থেকে সরাতে পারছে না,


সকাল বেলায় আকাশ ঘুম থেকে উঠে কলেজে চলে যায়,

আরুও আজ আগেভাগে চলে আসে,তিশান ও আজ কলেজে এসেছে,তিশান আকাশের সাথে আরুকে দেখে তো অবাক,


আকাশ,তিশান আরু আমাদের বন্ধুত্বর মধ্যে নতুন জয়েন হয়েছে,

ক্লাস শুরু হতে আরো ৩০ মিনিট বাকি তাই সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে,

এমন সময় হেনা কলেজে আসে,এসেই দেখে তিনজন একসাথে বসে গল্প করছে,


হেনার কেন জানি একদম গা জ্বলে যাচ্ছে,বিশেষ করে আকাশের সাথে আরুকে দেখে,নাহ দাঁড়া তোদের ব্যবস্থা করছি,তোদের দুইটাকে আমি কখনোই একসাথে থাকতে দিব না,


ক্লাসের ঘন্টা পড়ে সবাই ক্লাসে চলে যায়,

আকাশ,আজ আবার সামনে বসেছে,স্যার এসে দেখে আকাশ কাপড় পালটেছে,যাক তাহলে এবার নতুন কাপড় কিনে পরিধান করেছো,তাই আর কিছু বললাম না,


হেনা,স্যার কিনেছে না কেউ ভিক্ষে দিয়েছে,এসব খ্যাত মার্কা ছেলেদের সামর্থ্য আছে নাকি নতুন কাপড় চোপড় কিনার 


হেনার কথা শুনে ক্লাসের সবাই সজোড়ে হেসে দেয়,

স্যার,এই স্টপ স্টপ.. এটা ক্লাস কোন বিনোদনের কারখানা না,


স্যার,লেকচার দিতে শুরু করে,সবাই স্যারের কথার দিকে ফোকাস করে কিন্তু হেনা অন্যকিছু ভাবছে,আকাশকে সে শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে,

কিন্তু কি ভাবে দিবে একটা বুদ্ধি আটে

হা পেয়েছি

এবার বেটা যাবি কই...


ক্লাস শেষ করে আকাশ তিশান আর আরু গাছ তলায় বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় হেনা আকাশকে ডাক দেয়..


আকাশ,শুনেও না শুনার ভান করে আছে,

হেনা,আকাশের কাছে গিয়ে এই আকাশ শুনো তো একটু..?

তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে...


আরু,এউ আকাশ তুই যাবি না,তোকে আবার অপমান করবে..

আকাশ,সরি আপনার সাথে আমার কোন কথা নাই আপনি যেতে পারেন,


হেনা,প্লিজ শুনো যাস্ট দুই মিনিট কথা বলবো খুব দরকার

আকাশ,নাহ বলেছি না আপনার সাথে আমার কোন কথা নাই,

আপনি যান এখান থেকে,


হেনা,প্লিজজজজজ একটু কথা শুনো না

আকাশ,আচ্ছা আরু তোমরা দাঁড়াও কি বলে শুনে আসি,এত করে রিকোয়েস্ট করছে


আরু,আমি শিউর আবার অপমান করবে

আকাশ,আরে অপমান করলে করুক আমার সয়ে গেছে,

তারপর সে হেনার কাছে যায়,জ্বি কি জন্য ডেকেছেন এবার বলেন..?


হেনা,আসলে আকাশ সরি কালকের বিষয়টার জন্য,শুধু কালকের না আগের সমস্ত খারাপ ব্যবহারের জন্য সরি


আকাশ,আরে আরে কি করছেন পাগল হয়ে গেছেন নাকি,

আপনি কোথায় আর আমি কোথায়,আপনি হচ্ছেন ওসির মেয়ে,আর আমি হচ্ছি কোথায় একটা খ্যাত মার্কা ছেলে,আমার কাছ থেকে মাফ চাওয়া আপনার মানায় নাকি


হেনা,আকাশ জানি তুমি আমার উপরে এখনো রেগে আছো

প্লিজ মাফ করে দাও..?

তোমায় আর কখনো খ্যাত বলবো না


আকাশ,আচ্ছা যান মাফ করে দিয়েছি,এবার ভালো থাকেন বলে চলে আসতে ধরছে এমন সময় হেনা আবার ডাক দেয়,


হেনা,এই আকাশ দাঁড়াও..?

আকাশ,আবার কি..?


হেনা,এত তাড়াহুড়ো কেন তোমার হা,একটু কথা বললে কি হয় আমার সাথে..?

আকাশ,আরে আজিব তো কি বলবো আপনার সাথে,মাফ চাইতে এসেছেন কাজ শেষ,এরপর আর কি কথা থাকতে পারে


হেনা,প্লিজ আমি তোমার বন্ধু হতে চাই

আমাকে তোমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে শামিল করে নাও..


আকাশ,আচ্ছা আপনি আসলে কোন মতলব নিয়ে এসেছেন বলেন তো,শুরুতে মাফ চাইলেন এখন বলছেন বন্ধু হতে চান,আসলে ঘটনাটা কি..?

এক রাতের মধ্যে কি এমন পরিবর্তন হয়ে গেলো যে আমার মত খ্যাতের সাথে ভালো ব্যবহার করছেন..?


হেনা,কি, কি, কি,কিসের মতলব থাকবে,আমার কোম মতলব নেই,আমি তোমার বন্ধু হতে চাই


আকাশ,ধুর আপনার সাথে কথা বলাই বেকার,আপনাকে বন্ধু বানানো ইম্পসিবল কখনোই না,আমার মাথা খারাপ হয়নি যে আপনাকে বন্ধু বানাতে যাবো,আকাশ হেনাকে রেখে তিশানদের কাছে চলে আসে,হেনাও আকাশের পিছনে পিছনে আসে,


হেনা,এই আরু আমি তোমাদের বন্ধু হতে চাই

আকাশকে বলেছি সে আমাকে বন্ধু বানাতে রাজি হচ্ছে না,প্লিজ তোমরা আমাকে বন্ধু বানিয়ে নাও...?


আরু,সরি হেনা মাফ করো

আমাদের আর কোন বন্ধুর দরকার নাই,এই আকাশ চল তো বাসায় চলে যাবো,যত্তসব পাগল ছাগলের কারখানা,

অপমান করে আসছে বন্ধু বানাইতে


হেনাকে পাত্তা না দিয়ে যে যার মতন বাসায় চলে আসে,

হেনা তো রেগে মেগে শেষ,সালা ছোটলোকের বাচ্চাগুলা আমার বন্ধুত্বকে ঠুকরে দেয়,তোদের সব কয়টাকে আমি দেখে ছাড়বো,বন্ধু তো আমি হবোই, আর খ্যাত টাকে শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো,


আকাশ,বাসায় এসে পড়ে,বাসায় এসে যখন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে তখন দেখতে পায় পুরো ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে আছে,আর একটা হাত কব্জি থেকে কাটা ফ্লোরে পড়ে আছে,

এটা দেখে তো আকাশের হুশ এই উড়ে গেছে,আল্লাহ পল্লব এর কিছু...


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_৫)


আকাশ,বাসায় এসে পড়ে,বাসায় এসে যখন ঘরে ঢুকে তখন দেখতে পায় পুরো ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে আছে,আর একটা হাত কব্জি থেকে কাটা ফ্লোরে পড়ে আছে,এটা দেখে তো আকাশের হুশ এই উড়ে গেছে,আল্লাহ পল্লব এর কিছু হলো না তো,সে ঠিক আছে কিনা আল্লাহ জানে,


তাড়াতাড়ি ঘরের ভিততে ঢুকে দেখি পল্লব সেই ছেলেটাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে,যেই ছেলেটা শপিংমলে আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো,ছেলেটার হাত পল্লব কেটে ফেলেছে,ছেলেটার হাত থেকে অনবরত রক্ত ঝরে পড়ছে,আর ছেলেটা ব্যথায় কাতরাচ্ছে,কিন্তু কি করার ওর মুখের মধ্যে পল্লব কাপড় গুঁজে দিয়েছে,না হয় দুনিয়াদারী এক দিকে করে ফেলতো চেঁচিয়ে,


আকাশ,এই পল্লব কি করছিস কি....?

পল্লব,ভাই এই জানোয়ার টার কত বড় সাহস যে সে আপনার গালে থাপ্পড় মেরেছে,তাই ওর হাত কেটে ফেলেছি,বাকি ওকে মেরে ফেলবো এখনি..


আকাশ,এই তুই পাগল হয়ে গেছিস হা,আমাকে মেরেছে আমি মাফ করে দিয়েছি যা ওকে ছেড়ে দিয়ে আয়,


পল্লব,কি বলছেন ভাই আপনার গায়ে সে হাত তুলছে আর আপনি বলছেন ওকে ছেড়ে দিতে..?


আকাশ,হা আমিই বলছি যা ওকে ছেড়ে দিতে,

পল্লব,ওকে ভাই ছেড়ে দিচ্ছি,ছেলেটাকে হসপিটালের সামনে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসে,


দুপুরে খাবার খেয়ে আকাশ শুয়ে আছে এমন সময় আরু ফোন দেয়,

আরু,কি করছো..?

খাওয়া দাওয়া হয়েছে তোমার...?


আকাশ,হা হয়েছে,তুমি খেয়েছো...?

আরু,হা খেয়েছি,আচ্ছা ঠিক আছে তুমি রেস্ট করো,কাল কলেজে আসলে কথা হবে


আকাশ,আচ্ছা বলে ফোন রেখে দেয়,তারপর একটু রেস্ট করে বিকাল বেলা বাসার নিচে একটু হাঁটাহাঁটি করে কিছুক্ষণ পর আবার বাসায় এসে পড়ে,পরে পড়তে বসে,কারন সামনে পরিক্ষা আসতে চলেছে এখন পড়ায় ফোকাস করতে হবে,না হয় তার এই ত্যাগ বিফলে যাবে,পড়াশোনা শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,


সকাল বেলা...

ঘুম থেকে উঠে যথাযথ সময়ে কলেজে চলে যায়,গিয়ে দেখে কেউ আসে নাই,কেউ বলতে আরু আর তিশান এই দুই জনের কেউ আসে নাই,তবে সে লক্ষ্য করে হেনা এসেছে,তাই সে নিজেকে আড়াল করে ফেলে,

কিন্তু হেনার চোখে ধরা খেয়ে যায়,


হেনা,হা এটাই সুযোগ ওর সাথে একা কথা বলার,না হয় চামচা গুলা আসলে আর কথা বলতে দিবে না,তাই সে আকাশের কাছে চলে যায়,

আকাশ,হেনাকে দেখে থতমত খেয়ে যায়,কিরে আমি তো নিজেকে আড়াল করে ফেললাম,তাও এই মেয়ে আমায় দেখলো কি করে,


হেনা,আকাশের কাছে গিয়ে এউ ছেলে তোমার সমস্যা কি হা..?

আমায় দেখলে এভাবে পালিয়ে বেড়াও কেনো..?


আকাশ,কে,কে,কে বলেছে আমি আপনাকে দেখলে পালিয়ে বেড়াই,


হেনা,শুনো আমি বাচ্চা না আমি সব কিছুই বুঝি,আচ্ছা তুমি কি আমায় মাফ করবে না..?

আমি তো সমস্ত কিছুর জন্য সরি হয়েছি,তাও আমাকে তোমাদের বন্ধু বানাবে না,মানুষ মাত্রই তো ভুল,আর আমিও সেই ভুল করেছি,কিন্তু তার জন্যে তো ক্ষমা ও চেয়েছি,কিন্তু তুমি আমাকে ক্ষমা করছো না,


আকাশ,আরে আজিব তো ক্ষমা তো করে দিয়েছি..

হেনা,তাহলে বন্ধু বানাতে সমস্যা কোথায়..?


আকাশ,আপনার হয়তো মাথা নষ্ট হয়ে গেছে,বন্ধু আর ক্ষমা দুইটা আলাদা জিনিস,তা ছাড়া আপনি একজন ওসির মেয়ে,আপনার সাথে আমাদের বন্ধুত্ব কি করে হয়,কোথায় আপনি কোটিপতির মেয়ে আর কোথায় আমরা ছোটোলোক খ্যাত,তার চেয়ে বড় কথা সেদিনের মাইরের কথা আমার মনে আছে,সারাটা রাত আপনার বাবার হুকুমে তিনার চামচা গুলো আমায় মেরেছে,আমি আর নতুন করে কোন ঝামেলা চাই না,আর আপনার বাবার কাছে মার ও খেতে চাইনা,


হেনা,খাপপপ করে আকাশকে জড়িয়ে ধরে,আর সাথে সাথে কান্না করে দেয়,আকাশ প্লিজ আমায় এভাবে ফিরিয়ে দিও না,আমি কেন জানি তোমার অবহেলায় নিতে পারছিনা


আকাশ,এই এই কি করছেন,প্লিজ ছেড়ে দেন,মানুষ দেখলে

কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে,


হেনা,নাহ আমি ছাড়বো না,আগে বলো আমাকে তোমাদের বন্ধু বানাবে..?

বিশেষ করে তোমার..?


আকাশ,তোমাকে বন্ধু বানিয়ে পরে তোমার বাবার মার খাই...?

সমস্ত দোষারোপ আমার উপরেই আসবে যে আপনাকে ফুঁসিয়ে ফাঁসিয়ে পাগল করে ফেলেছি,


হেনা,নাহ এমন কিচ্ছু হবে না,আমার বাবার টা আমি দেখে নিব,প্লিজ আকাশ আমাকে ফিরিয়ে দিও না🥺


আকাশ,আচ্ছা ঠিক আছে ছাড়ো তিশান আর আরু আসুক আগে,ওদের মতামত কি সেটা দেখি


হেনা ছেড়ে দেয়,একটু পর আরু আর তিশান আসে,হেনা আকাশের পাশে বসে আছে,আরু তো এসেই রাগারাগি শুরু,এই আকাশ এখানে কি হচ্ছে...?

এই মেয়ে তোর সাথে কেন..?


আকাশ,সকাল থেকে আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে আমাদের বন্ধু হবে বলে,আমি বলেছি তোরা আসলে দেখা যাবে,এখন তোরা এসেছিস এবার তোরা বুঝ কি করবি...?


আরু,কি করবো ওর মত মেয়ে বন্ধু আমাদের চাই না

আকাশ,তিশান তোর কি মতামত..? 


হেনা,তিশান প্লিজ না করো না করুন সুরে


তিশান,দেখ আমি আর কি বলবো,মেয়েটা যেহেতু সরি হয়েছে সেই দিক থেকে একটা সুযোগ দেওয়া যায়,আর বন্ধুই তো হতে চেয়েছে এর থেকে বেশি কিছু তো আর না


আরু,দেখ ওকে বন্ধু বানিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনিস না আকাশ..?


আকাশ,বাদ দে আরু,সে আমাকে মেরে ফেলবে অতিজোর গেলে

থাক মরে যাবো,এর চাইতে বেশি কিছু তো আর না,সে যখন এত করে বলছে একটা সুযোগ দেওয়া দরকার,


আরু,আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস

হেনা,তারপর সবার বন্ধু হয়ে যায়,সে আরু তিশান আকাশ সবার সাথেই একটা ভালো সম্পর্ক বানিয়ে ফেলে,কিন্তু আকাশকে নিয়ে মনের মধ্যে অন্য রকম কিছু একটা ফিলিংস কাজ কারে,ইচ্ছে করে আকাশকে নিয়ে সারাজীবন পাড় করে দেই,


কলেজে এখন কোন বেস্ট বন্ধু প্যানেল থাকলে সেটা আকাশদের,

হেনার বান্ধবীরা সবাই অবাক,মীম তো আরো অবাক

যেই মেয়ে আকাশকে খ্যাত ছাড়া কিছুই ডাকতো না,পদে পদে অপমান করতো সেই মেয়ে আজ তার বন্ধু,


হেনা,পুরোপুরি ভাবে বন্ধু প্যানেল পরিবর্তন করে ফেলছে,আকাশ তিশান আরু এই তিনজন বাদে এখন তার আর কোন বন্ধু নাই,মীম তারপর আরো বাকি যারা ছিলো কারোর সাথেই কথা বলে না,সে কেমন যেন এক রকমের পাগল হয়ে যাচ্ছে আকাশের জন্য,আকাশেকে তার মনের মধ্যে জায়গা দিয়ে ফেলেছে,


এভাবেই দিন কাটতে থাকে,তাদের চারজনের বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়ে যায়,

তারা যাই করে চারজন এক সাথে করে,আর কলেজে এখন যদি কেউ ভুল করে আকাশকে কিছু বলেছে যে খ্যাত বা ছোটোলোক এই টাইপের কিছু,তাহলে হেনা তার বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দিবে,


আকাশের মনেও হেনাকে নিয়ে কিছুটা ভালোলাগা কাজ করে,কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে যদি ভালো লাগা টাকে বাস্তব রূপ দিতে যায়,তাহলে তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে প্লাস হেনা উল্টো-পাল্টা রিয়েক্ট করবে

নাহ থাক ভিতরেই থাক ভালো লাগা,সে তার ভালোলাগাকে নিজের ভিতরে দমিয়ে রাখে,


কিন্তু হেনা আকাশের সাথে সব সময় লেগে থাকে,ওর ভালোমন্দ সব সময় খোজ খবর রাখে,খেয়েছে কিনা নিহের যত্ন নিচ্ছে কিনা রোজ খেয়াল রাখে,আকাশও সেইম ভাবে হেনার কেয়ার করে,


আকাশ,হেনার আচরণ দেখে কিছু একটা ফিল করে যে হেনাও তাকে সামথিং সামথিং কিছু একটা,কিন্তু হেনা তো কখনো মুখ ফুটে বলবে না,কারন সে মেয়ে যা করার আকাশকেই করতে হবে,তাই সে একটা ফন্দী আটে,


একদিন রাতের বেলায় আকাশ অন্য একটা মেয়ে ফ্রেন্ডকে দিয়ে হেনাকে ফোন করায়,এই যে আপনি কি হেনা বলছেন...?


হেনা,জ্বি আমি হেনা কিন্তু আপনি কে..?

---আমি আকাশের গার্লফ্রেন্ড,

হেনা,কোন আকাশ...?

---আরে আপনার বন্ধু আকাশ আছে যে ওর গার্লফ্রেন্ড


হেনা,এই মেয়ে তোর কি মাথার তাড় মা'র ছিড়ে গেছে হা..?

তুই আকাশের গার্লফ্রেন্ড মানি..?

হেনার তো রাগ উঠে যায়,


---আরে আরে আপনি এত রাগ করছেন কেন,আমার কথাটা 

তো শুনবেন আগে...


হেনা,এই মেয়ে কি শুনবো হা কি শুনবো,তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস সেটা বল..?


---আরে আপনি আগে একটু শান্ত হোন প্লিজ,ধীরে ধীরে সব বলছি,দেখেন আমি আজ থেকে নিয়ে বিগত দুই বছর আগের থেকে আকাশকে ভালোবাসি,কিন্তু আকাশ আমাকে ভালোবাসে না,ওকে অনেকবার প্রপোজ করেছি কিন্তু সে রাজি হয় না,কিন্তু ইদানিং কিছুদিন ধরে দেখছি আপনার সাথে আকাশ ঘোরাফেরা করে,প্লিজ আপনি আকাশের থেকে দূরে সরে যান,আমার আকাশকে চাই..?

আমি ওকে নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসি...


হেনা,এই ফকিন্নির ঘরে ফকিন্নি তুই শুধু দুই বছর কেন,তুই যদি দুইশো বছর ও আকাশের পিছনে ঘুরিস তাও সে তোকে ভালোবাসবে না,কারন আমি তাকে ভালোবাসতে দিব না,সে খালি আমার আমি ওকে ভালোবাসি,তুই কোথা থেকে আসছিস ফকিন্নি..? 

একদম মেরে জ্বলে ভাসিয়ে দিব....


---ওকে আমিও দেখে নিব,সে তোমাকে কি ভাবে ভালোবাসে বলে লাইন কেটে দেয়,


অন্যদিকে আকাশ তো হাসতে হাসতে শেষ,আল্লাহ কি পাগল মেয়েরে বাবা,নাহ কালকেই ওকে প্রপোজ করবো,আচ্ছা থেংক উ রে দোস্ত আমাকে সাহায্য করার জন্য,


পরেরদিন সে কলেজে গিয়ে হেনার খোজ করতে থাকে,কিন্তু হেনাকে কোথাও খুজে পায় না,পরে কেউ একজনকে জিগ্যেস করলে সে বলে হেনাকে নাকি কলেজের পাশের পার্ক টাতে বসে থাকতে দেখেছে,


আকাশ,দৌড়ে পার্ক টাতে চলে যায়,গিয়ে দেখে হেনা মন খারাপ করে বসে আছে,এই হেনা কি হয়েছে তোমার...?

তোমাকে কত সময় ধরে খোঁজ করলাম,কিন্তু কোথাও পেলাম না,পরে একজন থেকে জানতে পারলাম তুমি পার্কে এসে বসে আছো..?


হেনা,কেন আমার খোঁজ কেন করতে হচ্ছে তোমার..?


আমার সাথে তোমার কি যে আমার খোজ করতে হবে,


আকাশ,তুমি কি সত্যি বুঝো না আমার সাথে তোমার কি...?

হেনা,নাহ বুঝি না তোমার সাথে আমার কি,লুইচ্চা কোথাকার মনে মনে


আকাশ,আরে পাগলি তুমি আসলেই একটা গাধা,তোমাকে যে আমি ভালোবাসি যেটা কি তুমি বুঝো না..?


হেনা,তো থথথথথথ

কি বলছো কি আকাশ সত্যি তুমি আমায় ভালোবাসো..?


আকাশ,হা রে বাবা আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি

হেনা,তাহলে প্রপোজ করো


আকাশ,আল্লাহ এখন প্রপোজ কি ভাবে করবো,আসেপাশে তো কোন ফুল ও নাই,পকেটে একটা কলম ছিলো সেটা বের করে হেনাকে প্রপোজ করে,তুমি কি আমার বাবুর আম্মু হবে


হেনা,আকাশের কান্ড দেখে তো রেগে মেগে আগুন

এই খাটাশ পোলা কলম দিয়ে জীবনেও কাউরে প্রপোজ করতে দেখছিস..?


আকাশ,কি করবো কোহ ফুল তো নাই

হেনা,তাহলে আজকে করতে হবে না,কালকে ফুল নিয়ে এসে কলেজে সকলের সামনে জোড় গলায় প্রপোজ করবি..


আকাশ,কেন সকলের সামনে কেন..?

হেনা,কারন কেউ যাতে এরপর তোর পিছনে আর ঘুরঘুর না করে,

তুই খালি আমার সেটা যেন সবাই জানে,আর শোন প্রপোজ করার পর জড়িয়ে ধরবি কিন্তু...?


আকাশ,আচ্ছা ঠিক আছে

আকাশ,পরেরিদন সকাল বেলা ফ্রেশ হয়ে আরুর কিনে দেওয়া জামাটা পড়ে,তারপর গোলাপ ফুলের একটা তোড়া নিয়ে কলেজে যায়,হেনা অনেক আগেই এসে বসে আছে...


--হেনা,এই এত সময় লাগে আসতে হা..?

-আকাশ,আরে একটু দেরি হয়ে গেছে।

--হেনা,আচ্ছা সমস্যা নাই এবার প্রপোজ করো


আকাশ,একটু বড় গলায়,

Listen to all of you who are here,I am going to make a special announcement in front of you,


এলান টা হচ্ছে যে আমি হেনাকে ভালোবাসি,শুধু ভালোবাসি না নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি,হেনা তুমি কি দেবে আমায় একটা সুযোগ তোমায় ভালোবাসার মত..?কথা দিলাম তোমার এই দু'টো হাত কখনোই ছাড়বো না,


হেনা,পা থেকে জুতাটা খুলে ঠাসসসসস করে জুতোর বাড়ি বসায় দেয় আকাশের গালে....


আকাশ,তো পুরা অবাক....

কলেজের সবাই আকাশের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_৬)


আকাশ,হেনা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি,শুধু ভালোবাসি না নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি,হেনা তুমি কি দেবে আমায় একটা সুযোগ তোমায় ভালোবাসার মত..?

কথা দিলাম তোমার এই দু'টো হাত আমি কখনোই ছাড়বো না..


হেনা,পা থেকে জুতোটা খুলে ঠাসসস করে জুতোর বাড়ি বসিয়ে দেয় আকাশের গালে...


আকাশ,তো পুরো অবাক,

কলেজের সবাই আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,


হেনা,কিরে ফকিন্নির বাচ্চা তোর সাহস কি করে হয় আমাকে প্রপোজ করার...?

নিজের চেহারাটা ভালো করে কখনো আয়নায় দেখেছিস..?

ছোটলোকের বাচ্চা চলে এসেছিস আমাকে প্রপোজ করতে 


আকাশ,হেনা তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না,কলিজা আমি জানি তুমি আমার সাথে মজা করছো,


হেনা,জুতোটা দিয়ে আরেকটা বাড়ি লাগিয়ে দেয় আকাশের গালে,এই ছোটলোক মজা করবো মানি?

কিসের মজা তোর সাথে,বলে ছিলাম না ঐদিন তোকে আমি দেখে ছাড়বো,আমাকে অপমান করা,তার উপরে আমাকে লোকের কাছে থাপ্পড় খাওয়ানো,কি ভেবেছিস আমি এত সহযে সব ভুলে যাবো আর তোকে ছেড়ে দিব,


ছোটলোক তোর নিজেকে নিজে ভালোবাসার মত পয়সা নাই,কি সব কমদামী জামা কাপড় পরিধান করেছিস,আর চলে এসেছিস আমাকে ভালোবাসতে খ্যাত গাইয়া কোথাকার,


আকাশ,মাটির দিকে চেয়ে আছে আর চোখ দিয়ে জ্বল ঝড়াচ্ছে,

চোখের জ্বলে যেন আশপাশের মাটি ভিজে কাঁদা হয়ে গেছে,আকাশের বিশ্বাস এই হচ্ছে না যে হেনা তার সাথে এইরূপ আচরণ করেছে,কি দোষ ছিলো তার যাস্ট সামান্য একটু বন্ধুর থেকে কথা শুনেছে,আর নিজের দোষে নিজে মার খেয়েছে,এই জন্য এত ক্ষোভ আমার উপরে,


কিন্তু সে যে আমায় বিনাদোষে সারারাত মাইর খাইয়েছে,সারারাত ননস্টপ দুইটা মানুষ আমায় মেরেছে সেইটা কি কিছুই না

চোখের পানি যেন বৃষ্টির পানিতে পরিণত হয়ে গেছে...


হেনা,এই ছোটলোক শোন তোকে একটা পরামর্শ দেই,আগে নিজেকে ঠিক কর,তোর যে স্টাটাস তোর জন্য আমরা না তোর জন্য তো গ্রামের ছকিনা পারফেক্ট,আর শোন আমি কে সেটা চিনে রাখবি,

ফকিন্নি গাইয়া কোথাকার থাক চললাম....


হেনা,আর ওর বান্ধবী যারা ছিলো সবাই চলে গেলো,মীম ও আছে হেনার সাথে,আই মিন এটা ওদের প্লানিং ছিলো আমাকে এই ভাবে অপমান করবে


সকলেই হাসাহাসি করছে আমাকে নিয়ে,দুই এক জন তো চেঁচিয়ে ও বলছে কিরে খ্যাত আর মেয়ে খুজে পেলি না,শেষ মেষ ওসির মেয়েকে ধরেছিস,বাহ ভালোই তো ফন্দী এঁটেছিস ওর বাবার টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য,


--শরমে মথা উঠাতে পারছি না,সবাই টিটকারি করছে

হটাৎ এমহ সময় কোথাথেকে জানি আরু আসে,


আরু,এই কার কি সমস্যা এবার আমাকে বল..?

তোদের কি খেয়ে দেয়ে কাজ নাই হা..?

ওর যাকে মনে হয় তাকে প্রপোজ করবে,তোরা ওকে নিয়ে কটুক্তি করার কে...?


আরুকে দেখে সবাই চলে যায়,

আরু,এই হাঁদারাম ছেলে মাটি থেকে উঠে দাঁড়া,

আকাশ,এখনো মাটিতে বসে বসে কান্না করছে,


আরু,এই আর কত কাঁদবি,আরু আকাশকে ধরে উঠায় মাটি থেকে,

এই তোকে বলেছিলাম না যে এই মেয়ের মতিগতি ভালো না,সে যে কোন সময় তার রং পরিবর্তন করতে পারে,কিন্তু তুই কি বলেছিলি অতিজোর গেলে মরে যাবি,কিন্তু এখন ভেবে দেখতো এটা মরে যাওয়া না এই চাইতেও বেশি কষ্টের..? 


আকাশের মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না,

আরু,আচ্ছা হয়েছে এবার আমার সাথে চল বলে আরু আকাশকে ধরে ধরে কেন্টিনে নিয়ে যায়,তারপর একটা ঠান্ডা পানির বতল কিনে কিছুটা পানি আকাশের মাথায় ঢালে আর কিছুটা ওকে খেতে দেয়,


আকাশ,খাপপপ করে আরুকে কেন্টিনের মধ্যে জড়িয়ে ধরে,

আরু,তো অবাক,কিন্তু সে কিছুই বলছে না,


আকাশ,সত্যি আমার সাত জন্মের ভাগ্যরে যে আমি তোর মত একটা ফ্রেন্ড পেয়েছি,প্লিজ আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না তো?


আরু,আরে পাগল নাকি কি বলছিস?

তোদের কেন ছাড়তে যাবো,শোন সবার মত আমি না রে,আমার বাবার ও কম নাই কোন কিছু,কিন্তু গরিমা শব্দটা আমার কাছে নাই,আরে বাবার টাকায় অহংকার করে ফায়দা কি,আর অহংকার করা কি ভালো জিনিস নাকি,কিন্তু হেনা যা করলো তার জন্য তাকে পস্তাতে হবে

আমার বন্ধুকে সে কষ্ট দিয়েছে আমি তার সাথে কড়া গন্ডায় হিসাব করবো সব...


আকাশ,সত্যি আমি লাকি যে তোর মত একটা ফ্রেন্ড পেয়েছি,আমার আর কাউকে চাই না,


আরু,হয়েছে এবার থাম,ক্লাস তো আজ আর করা হবে না,তুই এখানে বস আমি নাস্তা নিয়ে আসছি,


আকাশ,বসে বসে ভাবছে নাহ এবার আসল রূপ দেখাতেই হবে,মানুষের মন বলতে কিছুই নেই,কার বাবার কতটুকু আছে সেটা নিয়েই দুনিয়া চলে এখন,আরে হেনা তোর বাপ মাত্র একটা থানার ওসি,তোর বাবার মত দশটা ওসিকে আমি আকাশ পেন্টের পকেটে রাখি,আর আমার বাবার কথা না হয় বাদ এই দিলাম,

আর একটু ধৈর্য ধরো তারপর বুঝতে পারবে এই ছেছড়া খ্যাত আকাশ মাহমুদ কে


আরু,নাস্তা নিয়ে আসে,আকাশের খাওয়ার কোন ইচ্ছা নাই কিন্তু আরুর জোড়াজুড়িতে খেতে হচ্ছে,আর মরার তিশান একদিন ক্লাসে আসলে দশদিন আসে না,কি ভাবে যে ওরা কি করবে আল্লাহ জানে,


আকাশ,আচ্ছা দোস্ত হেনা এমনটা কেন করলো,ছোট একটা কারনে সে আমাকে এত বড় শাস্তি দিলো,


আরু,শোন ওদের কাছে ছোট বড় নাই,বাবার টাকা আছে দেখে নিজেকে এলিটক্লাস মনে করে,আর বাকি সবাই খ্যাত,আর সে তোকে কখনোই ভালোবাসে নি,সে তোকে মুরগা বানিয়েছে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য,এটার মূর্খ কারন,এটা আমি অনেক আগেই বুঝেছি,কিন্তু কিছু বলিনি কারন তুই আমায় খারাপ ভাববি


আকাশ,দোস্ত আমি এখন কি করবো..?


হেনা,কি করবি জানিস না?

অপমানের প্রতিশোধ নিবি,যেমন কুকুর তেমন মুগুর,


আকাশ,আরু কি বলিস ওর বাবা থানার ওসি,আর তার চেয়ে বড় কথা ওর থেকে অপমানের প্রতিশোধ কি ভাবে নিব..?


আরু,তাহলে শোন মেয়েদের মন গলাতে দুই মিনিট ও লাগে না,সে তোকে যতই ফেক লাভ করুক না কেন,এখন তুই তাকে রিয়েলাইজ করাবি দূর থেকে...


আকাশ,সেটা আবার কি ভাবে..?


আরু,শোন ওকে এক কথায় জেলাস করাবি,সে যখন দেখবে তুই অন্যের সাথে রিলেশন করছিস তখন তার ভিতরে নাড়া দিয়ে উঠবে,আর সে তো তোকে সহ্য করতে পারে না,তাহলে তুই যে রিলেশন করিস সেটা যদি সে জানে তাহলে বুঝ ওর কতটা ফাটবে


আকাশ,সবই ঠিক আছে কিন্তু আমার সাথে রিলেশন কে করবে..?

আরু,কেন আমি করবো...


আকাশ,আরে কি বলছিস কি উল্টো-পাল্টা..?


আরু,আরে এত সেন্টি খাচ্ছিস কেন?

রিয়েল তো করবো না যাস্ট ওকে বাজানোর জন্য করাবো,দেখিস ওর কতটা ফাটে,আর শোন তুই দুই তিনদিন কলেজে আসবি না,

তারপর আমরা আমাদের রোল প্লে করবো..


আকাশ,ওকেহ তাহলে..

সেদিন তারপর দুজন দুজনের মত বাসায় চলে যায়,সময় কাটতে থাকে আকাশ টানা এক সাপ্তাহ কলেজে যায় না,


এদিকে

হেনার কেন জানি খুব খারাপ লাগছে,কাকে যেন সে খুব মিস করছে,সব সময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকে সে,কোন কিছুতেই যেন আগের মত আর শান্তি নাই,সে রাতের বেলায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে,যে আকাশকে সেদিন এই ভাবে অপমান না করলেও পারতো,ছেলেটা যেমন এই হোক মনটা অনেক ভালো,সেদিন যখন কেউ বন্ধু বানায় নি,আরু তিশান সবাই বলেছে আমি ওর বিপদ ডেকে আনবো কিন্তু সে বলেছে অতিজোর গেলে মরে যাবে,তাও সে আমাকে ওদের মত ফিরিয়ে দেয় নি,


ধুর কি সব ভাবছি আমি,আমার মাথা একদম নষ্ট হয়ে গেছে ঐ খ্যাত ছেলেটার জন্য,নাহ ছেলেটার কাছে মাফ চাওয়া উচিৎ, 

কিন্তু ছেলেটা তো আজ এক সাপ্তাহ ক্লাসে আসে না,ওর কাছে মাফ চাইবো কি ভাবে,নাহ কাল দেখি কলেজে আসে কিনা,

হেনা সকালে উঠে নাস্তা করে আগেভাগে কলেজে চলে যায়,


আরুর,প্লান মোতাবেক আজ আকাশ ও কলেজে যায়,সবাই আকাশকে বাঁকা চোখে দেখছে,

আরু আর আকাশ দুজনে একটা জায়গায় বসে আছে,ক্লাসের এখনো ঘন্টা খানিক বাকি,


এদিকে হেনা কার কাছ থেকে যেন জানতে পারে আকাশ এসেছে কলেজে,সে আকাশের খোজ করতে করতে এসে দেখে আকাশ আর আরু একটা গাছের নিছে বসে আছে,আকাশের কাঁধের মধ্যে আরু মাথা হেলান দিয়ে রেখেছে,আরু লক্ষ্য করে যে হেনা ওদেরকে খেয়াল করছে,আরুও অভিনয় শুরু করে দেয়,কলিজা তোমাকে ঐ হেনা কথা শুনিয়েছে অপমান করেছে,কিন্তু আমি কখনো তোমার সাথে এমনটা করবো না,কারন আমি তোমায় খুব ভালোবাসি...


হেনার তো রাগে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে,সালা শাঁকচুন্নি তুই ভালোবাসলেই কি হবে নাকি,আকাশ ও তো তোকে ভালোবাসতে হবে,আর তোর যা খুশি কর না,কিন্তু আমার নামটা কেন বেঁচে খাচ্ছিস,


আকাশের তো আগা মাথা কিছুই বুঝে আসছে না,আরু কি পাগল হয়ে গেলো নাকি


হেনা,রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়,

আরু,আরে পাগল হেনা এসেছিলো,


আকাশ,ওহ বুঝেছি


হেনার মাথা তো ফুল গরম সে ক্লাস না করে বাসায় চলে যায়,সালা লুইচ্চা পোলা

তোরা যা করবি কর তাতে আমার কি..


এভাবেই দিন কাটতে থাকে,আকাশ আর আরু এমন অভিনয় করে যে তারা দুইজন লাভার,অন্যদিকে হেনা তো দিনদিন পাগল হয়ে যেতে থাকে আকাশ আর আরুকে একসাথে দেখে,হেনাকে দেখলেই দুজনের অভিনয় শুরু,হেনার শুরুতে শুরুতে খারাপ না লাগলেও পরে হেনা দূর্বল হয়ে পড়ে আকাশের প্রতি,আরুর সাথে আকাশকে দেখলে তার ভিতরে কেন জানি মোচড়ে উঠে,


হেনা,বুঝে উঠতে পারছে না সে কি করবে,খ্যাত ছেলেটার জন্য তার ভিতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছে,হয়তো সে আকাশকে ভালোবেসে ফেলেছে,

আকাশের সাথে আরুকে সে যেন একদম এই সহ্য করতে পারে না,

নাহ আকাশ শুধু আমার আর কারোর না,কিন্তু আরু আর আকাশের ঘনিষ্ঠতা দেখে হেনার কেন জানি মনে হয় ওদের দুজনের ভিতরে প্রেমের গভীর শিকড় গজিয়ে গেছে,যা কখনো আলাদা হবে না,


কিন্তু হেনাও নাছোড়বান্দা নাহ আমিও হার মানবো না,বেটা যদি আমার না হয় তাহলে আর কারোর হতে দিব না,ওকে মেরে ফেলবো,


আকাশ,তো হাসতে হাসতে শেষ,তার এখন খুব শান্তি লাগছে,ভিতর থেকে যেই শান্তিটা অনুভব করছে অপমানের প্রতিশোধ নিয়ে,তা কখনো বলে বুঝানো যাবে না,তবে সে লক্ষ্য করেছে যে হেনা তার কাছে আবার ফিরে আসতে চায়,কারন হেনার চোখের চাহনি দেখলেই বুঝা যায়,কিন্তু সে আর কখনোই ফিরাবে না,এবং সে নিজেও পড়বে না,এই ছলনাময়ীর সাথে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না,


হেনা,মনে মনে ঠিক করে আকাশকে সে খতম করে দিবে,সে শহরের নাম করা কিলার যে আছে তার কাছে কন্টাক্ট দেয় আকাশকে মেরে ফেলার,ফকিন্নি খ্যাত এবার যাবি কই,তুই আমার ভালোবাসার ও যোগ্য না,কিন্তু তোকে নিয়ে মনের মধ্যে একটা সংশয় কাজ করে তাই তোকে খতম করে দিব,আর এতদিন মানুষিক অনেক অত্যাচার করেছিস তোরা দুইটা আমাকে,তোদের ঘনিষ্ঠতা আমার দুই চোখের বিষ,তুই কি মনে করেছিস তোকে আমি ছেড়ে দিব বলে পৈচাশিক একটা হাসি দেয়..


পরেরদিন সকাল বেলা,

আকাশ রেডি হয়ে কলেজে আসে,ঘন্টা পড়ে গেছে তাই সবাই ক্লাস করছে,এমন সময় ১০-১৫ টা গাড়ি আসে যার সব কয়টার মধ্যে ছেলেপেলে দিয়ে ভর্তি,সবার হাতে চাকু চেইন ছুরি বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র,ওরা এসে কলেজে ভাংচুর শুরু করে এই আকাশ মাহমুদ কে..?


হেনা,তো সেই খুশি আকাশ এবার যাবি কই.?

তোর জম এসে গেছে,তোকে এবার মেরে কুঁচিকুঁচি করবে,

সবাই তো ভয়ে শেষ,যাকে সামনে পাচ্ছে সবাইকে মারধর শুরু করছে,এই বল আকাশ কে..?


ছেলে একটা দেখিয়ে দেয়,আকাশের ক্লাসরুম টা,ঐ যে ঐ দিকে সে আছে,প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন..


লিডার,যে ছিলো সে অর্ডার করে এই তোরা যা বেটাকে তুলে নিয়ে আয়,দুই জনকে পাঠায় আকাশকে তুলে আনার জন্য,আকাশের মুখে মাক্স লাগনো,আরুর তো চোখে পানি চলে আসে,মনে হয় সে এখনি কান্না করে দিবে,


ছেলে দুইটা আকাশকে তুলে নিয়ে যায়,

ভাই এইযে মাল টারে তুইলা নিয়া আসছি,লিডার অর্ডার করে সবাই ইচ্ছা তরফে মার ওরে,মারতে মারতে ওরে মেরেই ফেলবি একদম,সবাই আকাশকে মারতে শুরু করে,


সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখছে কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে না,সবাই ইচ্ছা তরফে মারতেছে আকাশকে,হটাৎ আকশের মুখ থেকে মাক্সটা খুলে যায়,লিডার আকাশের চেহারাটা দেখে আকাশ ভাই বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে ঝুকে পড়ে...


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_৭)


ছেলে দুইটা আকাশকে তুলে নিয়ে যায়,ভাই ধরেন এই যে মাল টারে তুইলা নিয়া আসছি,লিডার ওর্ডার করে সবাই ইচ্ছা তরফে মার ওরে,মারতে মারতে মেরেই ফেলবি একদম,সবাই আকাশকে মারতে শুরু করে,


কলেজের সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখছে কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে না,সবাই ইচ্ছা তরফে মারতেছে আকাশকে,হটাৎ আকাশের মুখ থেকে মাক্সটা খুলে যায়,লিডার আকাশের চেহারাটা দেখে আকাশ ভাই বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে ঝুঁকে পড়ে!


আরু,কান্না করতেছে আকাশকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য,

কিন্তু কেউ শুনছে না ওর কথা,

অন্যদিকে হেনা তো সেই মজা পাচ্ছে,বেটা তুই আমার 

না হলে কারোর হতে দিব না,


আকাশের,নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়তেছে,লিডারটা দৌড়ে এসে আকাশের পায়ে পড়ে যায়,ভাই আমাকে মাফ করে দিন,ভাই বিশ্বাস করেন এটা যে আপনি আমি কখনোই জানতাম না,আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে,আপনার পায়ে পড়ি ভাই এবারের মত ক্ষমা করে দিন,আমি জানি একটু পর হয়তো আমার লাশ পড়ে থাকবে কলেজের মাটিতে,কিন্তু ভাই বিশ্বাস করেন আমি না জেনে ভুল করেছি..


সবাই তো অবাক,কি হচ্ছে এই সব....


আকাশ,তো হিংস্র পশুর মত হয়ে গেছে,এমন সময় মুন্না আর পল্লব কোথা থেকে যেনো হুট করে চলে আসে,সাথে আরো বিশাল একটা গ্যাং,


আকাশ,পা টা সরিয়ে নিয়ে মুন্নাকে ডাক দেয়,এই মুন্না হকি টা দে..?

মুন্না,গাড়ি থেকে হকিটা বের করে আকাশের হাতে দেয়,

আকাশ তো এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে,যারা যারা আকাশকে মেরেছে সব কয়টাকে মেরে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে,


মুন্না দৌড়ে এসে রকির থোবড়া বরাবর সজোড়ে একটা লাথি মারে,

কুত্তার বাচ্চা তোর কত বড় সাহস,তুই আমার ভাইয়ের গায়ে হাত দিস?

তুই শহরের মাস্তান হয়েছিস তো কি হয়েছে,ভাই কে সেটা কি তুই ভুলে গেছিস..?

আজ ভাই ভালো হয়ে গেছে সব ছেড়ে ছুড়ে,তাই বলে তোরাও সুযোগটা কাজে লাগালি...?


হেনার তো চোখ বড় বড় হয়ে আছে,কি হচ্ছে কিছুই তার মাথার ভিতরে ঢুকছে না,কিসের ভাই এর কথা বলছে ওরা,আর আকাশ মাহমুদ আসলেই কে,হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে,কলেজের সবার তো হুঁশ এই উড়ে গেছে,কারন যেই ছেলেকে সবাই খ্যাত ছোটলোক বলে টিটকারি করতো তাকে সবাই ভাই ভাই করছে কেন,আর লিডারটা ওর পায়ে ধরে মাফ চাচ্ছে কেন,


আকাশ,এই মুন্না ছেড়ে দে রকিকে,মুন্না তো পাগল হয়ে গেছে পুরা,যে আকাশ ভাইয়ের গায়ে এই দুই টাকার রকি মাস্তান হাত দিয়েছে,

মুন্না তো কোন মতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না,তাও আকাশের কথায় সে শান্ত হয়ে যায়,


আকাশ,এই রকি তোকে কে কন্টাক্ট দিয়েছে..?

রকি,ভাই আপনার কলেজের এই একটা মেয়ে,

আকাশ,ওকে বুঝেছি আমি...


রকি,ভাই আপনার পায়ে ধরে মাফ চাচ্ছি আপনি আমায় মাফ করে দিন,

আকাশ, সোজা এখন এখান থেকে দফা হ,


রকি,মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য,এমন সময় দেখে যে হেনা দাঁড়িয়ে আছে,রকি হেনার কাছে গিয়ে ওর গালের মধ্যে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়,


আজ তোর জন্য নিজের জীবন চলে যেতো,এই মেয়ে কন্টাক্ট দেওয়ার সময় কি বলেছিলি,ভাই ছোটলোক খ্যাত দেখে তাকে তোর সহ্য হয় না,আরে নাদানের বাচ্চা ভাই ছোটলোক খ্যাত না,ভাইয়ের ঘরে ফ্লোর মুছার কাপড় যেটা আছে সেটা পর্যন্ত তোদের কিনার সামর্থ নাই,ভাই কে জানিস...?


এই শহরের মোস্ট প্রপোলার টপ বিজনেসম্যান ইয়াকুব সাহেবের ছেলে,

আর ভাইয়ের আরেকটা পরিচয় আছে,এই শহরের যতগুলো নাম করা মাস্তান আছে সব গুলার বাপ সে....


হেনার তো চোখ কপালে উঠে গেছে,মনে হচ্ছে যেন তার কানটা এখনি ফেটে যাবে,কলেজের সবাই তো মুখে হাত দিয়ে ফেলছে,কি বলে এই খ্যাত মার্কা ছেলে বাংলার টপ বিজনেসম্যান এর ছেলে,সবার যেন সমস্ত কিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো,এই ছেমড়ি তুই যত কোটিপতির মেয়ে হোস না কেন,ভাইয়ের পায়ের নিচে পরে থাকবি...


হেনার তো চোখ মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে,কথাগুলোর ওজন সে নিতে পারছে না,


রকি,তার পুরো টিমকে নিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে চলে যাবে,এমন সময় রানা কোথা থেকে যেনো চলে আসে,আর সে এসে রকির পুরো টিমকে মেরে মাটিতে মিশিয়ে দেয়,রকিকে মেরে মাটিতে ফেলে রাখছে,রকির নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে,রকির রুহু যাচ্ছে আর আসছে,


 রানা দৌড়ে আকাশের কাছে আসে,ভাই আপনার কিছু হয়নি তো.?

ভাই আসতে দেরি হয়ে গেছে,ভাই জানোয়ারের বাচ্চা গুলা নাকি আপনার গায়ে হাত দিছে...?


আকাশ,আরে রানা তুই আগে শান্ত হ,আমার কিছু হয় নাই,আমি ঠিক আছি,রানা টিমের লোকজনকে দেখে সবাই ভয়ে কলেজের ভিতরে ঢুকে পড়ে,একেক জনের হাতে বড় বড় আর্মস, 


রানা,কি ভাবে শান্ত হবো ভাই,ওরা আমার কলিজার ভাইয়ের গায়ে গাত দিছে,ওদের রক্ত পান না করলে আমার ভিতরটা ঠান্ডা হবে না,


আকাশ,এই রানা হয়েছে এবার অফ যা,আর আমি এইসব ছেড়ে দিয়েছি,

দশ মিনিটের মধ্যে পুর কলেজ খালি হয়ে যাওয়া চাই,একটা রক্তের দাগ ও যেনো না থাকে,আর রকিকে নিয়ে গিয়ে হসপিটাল ভর্তি কর..!


রানা,আচ্ছা ভাই দশ মিনিট না,আপনার চোখের পলক পড়তেই পুরো কলেজ ফাঁকা হয়ে যাবে,চোখের পলক পড়তেই পুর কলেজ ফাঁকা হয়ে যায়,


আকাশ,ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছে,কিন্তু পুরো কলেজের স্টুডেন্ট ওর দিকে তাকিয়ে আছে,সবার একটাই কথা, যাকে আমরা খ্যাত বলতাম সেই আসল বাদশা

আরু,কোথা থেকে জানি দৌড়ে এসে আকাশকে সকলের সামনেই খপপপ করে জড়িয়ে ধরে,এই তুই ঠিক আছিস তো বলে কান্না করে দেয়!


আকাশ,হা রে ঠিক আছি তো,এই তুই এভাবে কান্না করছিস কেন.?


আরু,তোর যদি আজ কিছু হয়ে যেতো তাহলে কেমন হতো জানিস তুই কিছু..?

আকাশ,আরে কিছু হবে না আমার,আর এই বাংলার বুকে আমার গায়ে হাত দিবে এমন কারোর বুকের পাঠা হয় নাই,আর গায়ে হাত দেওয়া তো দূরের কথা আমার নাম শুনলেই একশো হাত দূরে চলে যাবে,(হি ইজ বিল্লা দ্যা ডন)


আরুর,কান্না যেনো থামতেছেই না,

আকাশ,আরুকে ঘুরিয়ে ওর চোখের পানি গুলো মুছে দেয়,এই পাগলী আর কান্না করিস না,তোদের মত বন্ধু থাকতে আমার কে কি করবে

আর তিশান কুত্তাটা আজ ও আসে নি,ওকে কখনোই পাবো না বিপদে আপদে,ধুর আমার আর কাউকে লাগবে না তুই সারা জীবন আমার পাশে থাকলেই হয়...


আরু,সারা জীবন তোর পাশে থাকবো আমি,

আকাশ,ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে সবাই আকাশকে ঝাপটে ধরে,যে যার মত করে ক্ষমা চাচ্ছে,আমাদের ভুল হয়ে গেছে, আমরা না জেনে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করেছি,প্লিজ আমাদেরকে মাফ করে দাও,


আকাশ,শারীরিক গঠন বা পোশাক আশাক দেখে তোমরা মানুষকে বিবেচনা করো,তোমাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের কমতি রয়েছে,সেটাকে পরিবর্তন করো তাহলে নিজ থেকেই মাফ পেয়ে যাবে,


অনেকের মনে এখনো সংশয় কাজ করছে আকাশকে নিয়ে,আসলেই কি সে ইয়াকুব সাহেবের ছেলে,ইয়াকুব সাহেবের ছেলে হলে সে কেন ছদ্মবেশ ধরলো,ওর বাবার তো টাকার কোন অভাব নাই,তাও কেনো এমন কমদামী পোশাক-আশাক পরিধান করে সে


আজ কলেজে ক্লাস হবে না,পুরো কলেজ আকাশকে নিয়ে থমকে আছে,স্যার রাও অবাক যে ইয়াকুব সাহেবের ছেলে এই কলেজে পড়ে,

বাংলার টপ বিজনেসম্যান এর ছেলে এই কলেজে পড়ে,তাদের যেনো বিশ্বাস এই হচ্ছে না,


আকাশ,এই আরু চল আজ ক্লাস করবো না,আরু আর আকাশ ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যায়,ক্লাস থেকে বের হতেই কলেজের গেইটের সামনে ১০-১৫ টা গাড়ি হাজির,গাড়ি গুলো যেমন তেমন গাড়ি না,দুনিয়ার যত নামি-দামি ব্রান্ড আছে সব গুলো গাড়িই আছে,মার্সেডিজ,ল্যাম্বারঘিনি,

সবাই তো গাড়ি গুলোর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে,ওরা নিজের সচক্ষে কখনো এমন গাড়ি দেখবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই,


আকাশ,মার্সেডিজ এর দরজা খুলে ভিতরে বসে যায়,সাথে আরুও আছে,


সবার কনফিউশান দূর হয়ে গেছে যে আকাশ মাহমুদ কে...!


এদিকে,সবাই তো কানা ফোঁসা করছে,আকাশ মাহমুদ এত বড় লোকের ছেলে,কিন্তু হেনা কলেজের কোন এক কোনায় বসে বসে চোখের পানি ঝড়াচ্ছে,সে নিজেকে নিজে ধিৎকার দিতে থাকে,ছিহ হেনা তুই নিজেকে কোটিপতি আর মর্ডানে মনে করতি,তুই নিজেকে এলিটক্লাস দাবী করতি,আজ দেখ তোর পরিণতি,তুই যাকে ছোটলোক আর খ্যাত বলতি ওর বাসার কাজের লোক ও তোর থেকে বেশি মর্ডান,আর যোগ্যতাশীল,


ছিহ হেনা কি ভাবে পারলি এমন একটা ছেলের মন নিয়ে খেলা করতে,সে এত বড় মাপের একজন মানুষ হওয়ার পরেও নিজের টাকার আর নিজের পজিশন নিয়ে অহংকার করে নি,আর তুই সামান্য একটা ওসির মেয়ে হয়ে এত দেমাগ তোর,হেনা নিজেকে ধিৎকার দিয়ে কান্না করতে থাকে...!


আকাশ,ওর ড্রাইভারকে বলে সোজা গাড়ি টান দিয়ে থানায় যেতে,আজ ওসির বারোটা বাজাবে সে...


সবাই ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন......! 


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_৮)


হেনা,কি ভাবে পারলি এমন একটা ছেলের মন নিয়ে খেলা করতে,সে এত বড় মাপের একজন মানুষ হওয়া সত্বেও নিজের টাকা আর নিজের পজিশন নিয়ে অহংকার করে নি,আর তুই সামান্য একটা ওসির মেয়ে হয়েও এত দেমাগ তোর..?

হেনা,নিজেকে ধিৎকার দিয়ে কান্না করতে থাকে...


আকাশ,ওর ড্রাইভারকে বলে সোজা গাড়ি টান দিয়ে থানায় যেতে,আজ ওসির বারোটা বাজাবে সে...


ড্রাইভার,আকাশের কথা মত গাড়ি টান দিয়ে থানার সামনে নিয়ে যায়,

এদিকে আরুর তো মাথা ভো ভো করে ঘুরছে এড দামী গাড়িতে সে কোন দিন উঠেনি,আরে উঠা তো দূরের কথা সে মিজের সচক্ষে দেখে নি,

সে ভাবতেই পারছে না আকাশ শহরের নাম করা কোটিপতির ছেলে,


আকাশ থানায় গিয়ে সোজা ওসির কাছে চলে যায়,


ওসি,কিরে গরিবের বাচ্ছা আজ কি মনে করে থানায় এলি..?

ঐদিনের ধোলাই তো মনে হয় কম হয়ে গেছে..


আকাশ,এই ওসি গলা নামিয়ে কথা বল,তোর মত দুই টাকার ওসি আমার পকেটে থাকে,আকাশ ওসির অনুমতি না নিয়েই চেয়ারে বসে পড়ে আর ওসির টেবিলে পা তুলে দেয়,


ওসির তো মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আকাশের কর্মকান্ড দেখে,

এই ছোটলোক তোর কত্ত বড় সাহস,তুই আমার সামনে এসে আমার টেবিলের উপরে পা তুলে দিস,একে তো অনুমতি নিস নি তার উপরে আবার বেয়াদবি ও করছিস.?


আকাশ,এই ওসি গলা নামিয়ে কথা বল,না হয় কন্ঠনালিটা সোজা লক করে ফেলবো,তুই বাপ চিনতে এখনো ভুল করেছিস,বলেছিলাম না একক দশকে সব হিসাব করবো,সময় টা এসে গেছে..


ওসি তো সেই লেভেলের ক্ষেপে গেছে,এই বেয়াদবের বাচ্চা আমার সাথে বেয়াদবি বলে সে আকাশের কলার ধরে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়...


আকাশ,এই ওসি খুব বড় ভুল করছিস,পুরোনো হালখাতার হিসেব এখনো বাকি,তার উপরে নতুন করে আবার হিসেবের খাতা ভাড়ি করছিস..?


ওসি,এই কনস্টেবল এদিকে আয় বেটাকে নিয়ে গিয়ে লকাপে ঢুকা আর ইচ্ছা মতো ধোলাই কর,মাথা থেকে পা পর্যন্ত ধোলাই কর যাতে করে বাকি জীবন আর হাঁটাচলা করতে না পারে,


আরু,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে,কারন আসার সময় আকাশ ওকে বারন করে দিয়েছে,আরু মনে মনে ভাবছে আজ ওসির শেষ দিন,কতবড় তুফান আসতে চলেছে তার কোন আইডিয়া নাই,


কনস্টেবল আকাশকে নিয়ে গিয়ে লকাপে ঢুকায়,ওসি হাতের মধ্যে বড় একটা রোলার নেয়,আর বাকি দুই-তিন জন কনস্টেবল ও হাতের মধ্যে রোলার উঠিয়ে নেয়,


আকাশকে ওরা লকাপের মধ্যে ঢুকিয়ে শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে,

ওসি রোলারটা দিয়ে যেই না আকাশকে মারতে যাবে তখনি পুরো থানা কাঁপতে আরম্ভ করে,কনস্টেবল একজন দৌড়ে এসে বলে স্যার রানা মাস্তান থানায় এসেছে,তার সাথে কয়েক শতাধিক ছেলে পেলে...


ওসির তো কলিজা কাঁপা শুরু করে,রানা ভাই থানায় কেন,আল্লাহ জানে আজ কপালে কি লিখা আছে,ওসি রানাকে যমের মত ভয় পায়,শুধু ওসি না শহরের যত নামি-দামি ব্যাক্তি আছে সবাই রানাকে বাঘের মত ভয় পায়,


ওসি লকাপ থেকে বের হয়ে রানার কাছে যায়,ভাই আপনি হটাৎ এখানে?

আর ভাই আপনি কেন কষ্ট করে আসতে গেলেন,আমায় একবার শুধু ফোন করে বলতেন আমি চলে যেতাম,ওসি এক কনস্টেবলকে বলে এই তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস যা ভাইয়ের জন্য চা নিয়ে আয়,


ওসির তো ভয়ে বুক ধুপধুপ করছে,বাকি থানার যারা আছে কারোর কলিজায় পানি নাই,কারন রানা মাস্তান থানায় এসেছে,ওর নাম শুনে নাই এই শহরে এমন একটা মানুষ ও নাই,ওর নাম নিয়ে ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদেরকে মা বাচ্চাকে ঘুম পাড়ায়,


রানা,এই ওসি তোর খেল খতম,তোর নাকি অনেক পাওয়ার বেড়েছে..? 

ওসি,রানার পায়ে পড়ে যায়,ভাই আপনার পায়ে পড়ি আমার কি ভুল হয়েছে বলেন আমি শুধরে নিচ্ছি,ভাই বিশ্বাস করেন আমি কোন ভুল করিনি...


আকাশ,তো লকাপের ভিতর থেকে পৈচাশিক হাসি হাসছে,

আরুর ও সেই হাসি পাচ্ছে,


রানা,এই ওসি তুই কোন ভুল করিস নি,তুই যেটা করেছিস সেটা মহাভুল,যেই ভুলের কোন ক্ষমা নাই,আর তুই আমার পা ধরেছিস কোন সাহসে তোকে তো জুতার তলায় পিষে মারবো...


ওসি,ভাই আপনার পায়ের জুতাটা দিয়ে ইচ্ছা মত আমাকে মারেন,আমি আপনার পোষা কুকুর,কিন্তু ভাই জানে মারিয়েন না,আমার যা ভুল হয়েছি আমি তা শুধরে নিব,প্লিজ ভাই একটা সুযোগ দেন....?


রানা,তোকে আমি কেনো পৃথিবীর কোন কারোর সাধ্য নাই তার হাত থেকে বাঁচানোর,সে যদি তোর প্রান ভিক্ষা দেয় তাহলেই তোর দেহতে প্রান থাকবে..


এমন সময় কনস্টেবল চা নিয়ে আসে,ভাই আপনার চা,চা,চা,,,তোতালাতে তোতলাতে,কনস্টেবল এর হাত অনবরত কাঁপতেছে,মনে হয় এখনি জায়গার মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করবে....


রানা,এই ওসি তুই লকাপে কাকে আটক করেছিস..?


ওসি,ভাই সে থানায় এসে বড় গলায় কথা বলছিলো তাই আটক করেছি,

ভাই সে মনে হয় আপনার লোক,আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই,আমি এখনি ছেড়ে দিচ্ছি....


রানা,ওসির বুকের মধ্যে সজোড়ে একটা লাথি মারে,ওসি সোজা লাথি খেয়ে ফ্লোরে গিয়ে ছিটকে পড়ে,এই কুত্তার বাচ্চা সে আমার লোক না,বরং আমি তার পোষা কুত্তা....


ওসির চোখ বড় বড় হয়ে যায়,রানা মাস্তান কি বলছে 

এই সব উল্টা পাল্টা


রানা,সি ইজ বিল্লা ভাউ,যাকে এক নামে পুরো শহর চিনতো,বিল্লাহ দ্যা কিং,

আমি রানা তার কাছে কাট-পুতলি,আমার মত রানা তার আসেপাশে অনেক গুলা ঘুরঘুর করে,


তুই তাকে লকাপে আটক করেছিস,তাহলে ধরে নে তোর সমাধিটা এই থানায় এই হবে আজকে,


ওসির চোখ দিয়ে ঝর্নার মত পানি ঝরতে আরম্ভ করে,ওসির কলিজা যেন শুকিয়ে গেছে,সে কি করছে তার কোন আইডিয়া নাই,বিল্লাকে লকাপে না শুধু তাকে সারারাত মেরেছেও,

থানার মধ্যে যত পুলিশ মৌজুদ ছিলো কারোর কলিজা সাথে নাই,আজ ওসির পাত্তা কেটে গেছে,


ওসি,দৌড় লকাপে ঢুকে পড়ে,আর আকাশের পায়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে,

ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে আমায় ক্ষমা করে দিন,ওসি নিজের হাত দিয়ে নিজের মুখে সজোড়ে আঘাত করতে থাকে,ও ভাই আমায় ক্ষমা করে দিন,আমি জানতাম না আপনি কে,আর আমি আমার পাওয়ার এর ও অপব্যবহার করেছি,আর কোনদিন এমন করবো না বলে আকাশের পায়ে ঝাপটে ধরে কান্না করতে থাকে,


আকাশ,এই ওসি পা ছেড়ে উপরে উঠ,দেখছিস পাওয়ার....?

হা এটাই পাওয়ার,দশজন কনস্টেবল সাথে নিয়ে গিয়ে মানুষকে তুলে এনে লকাপে ঢুকিয়ে মারধর করা এটা পাওয়ার না,পাওয়ার হচ্ছে তোর মত ওসি এসে পায়ে ধরে হামাগুড়ি দিয়ে মাপ চাওয়া,কি বলেছিলাম তোর হালখাতা ভাড়ি হচ্ছে,কিন্তু শুনলি না সেই এসে আমার পায়ে ধরে হামাগুড়ি দিয়ে কান্না করছিস,যা জীবনটা ভিক্ষা দিলাম,কারন এই সমস্ত কিছু আমি ছেড়ে দিয়েছি,না হয় তোর দেহটা এত সময়ে ফ্লোরে পরে থাকতো,এরপর আর এমন পাওয়ার এর অপব্যবহার করিস না...?


ওসি,ভাই আমার জীবন থাকতে আর কোনদিন এমনধারা করবো না...


আকাশ,এই রানা চল..? 

তারপর সবাই বাসায় চলে যায়,


কনস্টেবল,একজন ওসির উপরে গরম হয়ে যায়,এই ওসি শোন এটাই হচ্ছে মনুষ্যত্ব,তোর মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব নাই...


ওসি,যেনো পাগল হয়ে গেছে,তার মধ্যে কোন হিতাহিত জ্ঞান নাই,


আকাশ,বাসায় এসে পড়ে,সাথে আরুকেও নিয়ে আসে,


আরু,আকাশ তুই এতবড় মাপের একজন হওয়ার পরেও এমন নরমাল হয়ে থাকিস কেন রে..?


আকাশ,ভেসভোসা তে কি আছে...

খালি অহংকার এটাই তো...

শোন অহংকার আমার দুই চোখের শত্রু,


আরু,আসলেই রে তুই মহান একজন মানুষ,তোর মত একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী করে পেতাম জীবনটা সুন্দর হয়ে যেতো


আকাশ,কেন করে নে, বারন করেছে কে...?


আরু,নাহ রে তা আর হবে না,কারন একজনের সাথে আমার সম্পর্ক আজ তিন বছরের সে ইতালি থাকে,ওকে আমি অনেক অনেক অনেক লাভ করি,

আর তার চেয়ে বড় কথা তোকে আমি বন্ধু ভাবি আকাশ,তোর পাশে এভাবেই সারাজীবন থাকতে চাই,আজ যদি তাকে ছেড়ে দিয়ে তোর সাথে জীবনের সূত্রপাত করি,তাহলে এটা স্বার্থের লোভ ছাড়া আর কিচ্ছু হবে না


আকাশ,যাক তোরা ভালো থাক এটাই দোয়া,আর শোন তোকে নিয়ে আমার মনে এমন কোন ফিলিংস নাই,কারন তুই একটা ভালোমানুষ,তোর মত ভালো চরিত্রের অধিকারী হতে হলে আমায় আরো সাতবার জন্ম নিতে হবে,

সারা জীবন তোর পাশে এভাবে বন্ধু হয়ে থাকতে চাই


আরু,আকাশ তুই নিজেকে যাই ভাবিস না কেন,তুই আসলেই অনেক ভালো যেটা আমি জানি

আচ্ছা শোন আজ যেতে হবে রে অনেকটা সময় হয়ে গিয়েছে,


আকাশ,আচ্ছা যা কাল কলেজে গেলে দেখা হবে,

আর শোন ড্রাইভার তোকে বাসা পর্যন্ত একদম এগিয়ে দিয়ে আসবে,বাসায় পৌঁছে আমায় ফোন করিস...


আরু,আচ্ছা তারপর চলে যায়,

আকাশ,এখন দুনিয়ার সব চাইতে হ্যাপি একটা মানুষ, কারন সে নিজেকে বদলাতে শিখে গেছে,তার মধ্যে এখন কোন হিংস্রতা নাই,তার চাইতে বড় কথা হচ্ছে তার জীবনে আরু নামের একটা ভালো বন্ধু পেয়েছে,


পরেরদিন সকাল বেলা রেডি হয়ে কলেজে চলে যায়,

আজ একদম পুরো ভিন্ন গেটাপে,ল্যাম্বারঘিনিটা নিয়ে সে নিজে ড্রাইভ করে কলেজের সামনে পার্ক করে,তারপর সে ভিতর থেকে নেমে আসে,পুরো কলেজের সবাই গাড়িটার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে,

আকাশকে দেখে সবাই তো অবাক,এক কথায় রাজপুত্রের মত লাগছে,ওকে দেখে কেউ চোখ ফিরাতে পারছে না,


এমন সময় কেউ একজন পিছন থেকে এসে আকাশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,আর আকাশের ঘাড়ের মধ্যে কয়েকটা চুমু বসিয়ে দেয়...


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_৯)


আকাশ,আজ একদম পুরো ভিন্ন গেটাপে,ল্যাম্বারঘিনিটা নিয়ে সে নিজে ড্রাইভ করে কলেজের সামনে গিয়ে পার্ক করে..

তারপর সে গাড়িটার ভিতর থেকে নেমে আসে,পুরো কলেজের সবাই তো গাড়িটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,,,,


আকাশকে দেখে তো সবাই অবাক,ওকে দেখে কেউ চোখ ফিরাতে পারছে না,এক কথায় রাজপুত্র লাগছে,


এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন এসে আকাশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,আর আকাশের ঘাড়ের মধ্যে কয়েকটা চুমু বসিয়ে দেয়....


আকাশ,তো ভেভাচাকা খেয়ে যায়,সে পিছনে ঘুরে দেখে হেনা,

আকাশের মেজাজ তো পুরা গরম হয়ে গেছে,সে হেনার গালের মধ্যে ঠাসসসস ঠাসসস করে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়,


এই তোর কত্ত বড় সাহস যে তুই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিস...?

হেনা,সাহসের কি আছে আমার বিএফ কে আমি জড়িয়ে ধরেছি,


আকাশ,এই মেয়ে সেটআপ মুখ সামলে কথা বল,তোর সাথে আমার কোন কালেই কোন কিছু ছিলো না,হটাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে বিএফ দাবী করছিস...?


হেনা,প্লিজ আকাশ আমায় এভাবে অস্বীকার করো না,আমি যা করেছি ভুল করেছি,প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিয়ে নিজের করে নাও

হেনা মনে হয় যে সে এখনি কান্না করে দিবে...


আকাশ,এই ড্রামাবাজ মেয়ে অনেক হইছে তোমার ছলনা,এবার আর নাহ আমি আমার মত ভালোই আছি,আর এইসবের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই,বিশেষ করে তো তোমার সাথে একদম এই নাই,ছলনাময়ী মেয়ে নিজের রাস্তা মাপো,আর আমি তো খ্যাত আমার সাথে কি করে কথা বলছো ঘৃণা হচ্ছে না এখন....?


হেনা,মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,কি বলবে সে কিছুই বলার মত নাই,কারন সে এমন বিহেভিয়ার আগে দেখিয়ে এসেছে আকাশকে,আজ তা ফেরত পাচ্ছে একক দশকে


আকাশ,এই মেয়ে সরো তোমার মত মেয়ের সাথে আমার কোন কিছুই নাই,আর নিজের স্টাটাস দেখেছো তুমি...?

সাধারণ একটা ওসির মেয়ে,আর আমি কার ছেলে সেটা তো হয়তো জেনেই গেছো,তাহলে এবার ভাগো,আমার লেভেলের না তুমি....


হেনা,ছোট বাচ্চার মত কান্না করে দেয় আকাশের কথা শুনে,

আকাশ,হেনাকে ফেলে রেখে ক্লাসে চলে যায়,


হেনার নিজের দোষেই সবটা হয়েছে,অহংকার পতনের মূল আসলেই কথাটা সত্যি....

হেনা,কান্না করতে করতে বাসায় চলে যায় ক্লাস না করে...


আকাশ,ক্লাস রুমে ঢুকতেই সবাই ওর সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসে,বিশেষ করে মীম...

আসলে সরি আকাশ হেনার সাথে মিলে তোমায় কষ্ট দিয়েছি,প্লিজ আমাকে তোমার বন্ধু বানাবে..?


আকাশ,মীম শুনো সরির কিছু নাই,নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাও,

কেন এতদিন আমি খ্যাত ছিলাম,কিন্তু এখন কি এমন হলো যে মাফ চাচ্ছো..?

শুনো তোমরা হচ্ছো স্বার্থপর কাতারের মানুষ,তোমার সাথে বন্ধুত্ব তো দূরের কথা,তোমার ছায়া পর্যন্ত আমার ধারে কাছে আসতে পারবে না...

লেভেল আছে তোমার যে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে আসছো,আমার বাসার পশুপাখি ও তো তোমার থেকে বেশি যোগ্যতা সম্পূর্ণ,হাহ আসছে বন্ধুত্ব করতে...


আকাশের কথা শুনে মীম মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে যায়,

কারোর মুখে কোন কথা নাই,কারন আকাশের আসল পরিচয় জানার পর সবাই বুঝে গেছে আকাশের লেভেল কোথায়,সবাই ওকে অপমান করতো,কিন্তু কেউ জানতো না সে যে এই শহরের নাম করা কোটিপতির ছেলে,আকাশের কাছে তারা কিছুই না....


একটু পর আরু আসে ক্লাসে,তিশান ও আজ ক্লাসে এসেছে,তিশান তো আকাশের ব্যাপারটা শুনে পুরা থথথথথ..

ক্লাস শুরু হয়ে যাবে,তাই সবাই নিজের জায়গা ঠিক করে নেয়,


আকাশ,আজো সামনে বসেছে,পাশেই সিটেই আরু আর তার থেকে এক বেঞ্চ দূরে তিশান,স্যার ক্লাস নিতে এসে দেখে আকাশ সবার সামনে বসেছে,আজ ওর কাপড় চোপড় দেখে স্যারের হুশ এই উড়ে যায়,


স্যার,ভিতরে ভিতরে নিজেকে নিজে ধিৎকার দিচ্ছে,কারন তিনিও আকাশকে কথা শুনিয়েছেন,স্যার চুপচাপ ক্লাস করে চলে যায়,একটু পর কেউ একজন এসে বলে ওকে হেডস্যার আমায় ডাকছে,


আকাশ,হেডস্যারের কাছে যায়,


হেডস্যার,আকাশ তোমায় নিয়ে প্রাউড করি যে তুমি আমাদের কলেজে পড়ছো,ইয়াকুব সাহেবের ছেলে আমাদের কলেজে পড়ে আমার সেটা বিশ্বাস এই হচ্ছে না,প্লিজ কখনো কোনকিছু দরকার হলে আমায় বলবে,


আকাশ,ওকেহ স্যার....

তারপর আরো কিছু কথা বলে স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে আসে,আর মনে মনে ভাবতেছে দুনিয়ার নেজাম পাল্টে গেছে,ভালো মন দিয়ে কোন কিছুই যায় আসে না মানুষের,একটাই জিনিস দিয়ে বিবেচনা করা হয় টাকা পয়সা পাওয়ার...


আগে যখন ভেসভোসা ধরে ছিলমা হেডস্যার কেন,একটা কুকুর পর্যন্ত মুখ ফিরে তাকায়নি,আর আজ আসল পরিচয় জানার পর পুরো কলেজ পিছনে পড়ে গেছে,


ক্লাস শেষ করে আরু তিশান আকাশ সবাই কেন্টিনে বসে গল্প করছে,এমন সময় একটা মেয়ে এসে আকাশকে প্রপোজ করে,মেয়েটা অন্য ডিপার্টমেন্ট এর,মেয়েটা দেখতে হেব্বি মাশাল্লাহ,কিন্তু আকাশ সোজা জানিয়ে দেয় সে রিলেশন করবে না,কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা সেও আকাশকে ছাড়বে না,


আরু আর তিশানের তো সেই হাসি পাচ্ছে,

আকাশের এদিকে মেজাজ খারাপ হচ্ছে,


মেয়েটা,এই আকাশ রিলেশন করলে কি হয়...?

এমন করে তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন..?


আকাশ,এই মেয়ে তুমি আমার চোখের সামনে থেকে যাও তো, না হয় মাথায় তুলে আছাড় দিব,একটু গরম হয়ে বলে,


মেয়েটা,ভয়ে সেখান থেকে চলে যায়,

আকাশের মেজাজ একদম খারাপ করে দিছে মেয়েটা,এ তোরা থাক আমি যাচ্ছি...


আরু,সে কি রে একটু গল্প করি আয় না,

আকাশ,না রে আমার ইচ্ছা করছে না গল্প করতে,

থাক তোরা আমি যাই,


আরু,এই থাম আমরাও চলে যাবো তাহলে,তুই না থাকলে দুইজন গল্প করে কি করবো,তারপর সবাই সবার বাসায় চলে যায়,


আকাশ,বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নেয়,পরে একটা ঘুম দেয়, বিকালে ঘুম থেকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করে,পরে আবার পড়তে বসে কারন একদম নিকটে চলে আসছে পরিক্ষা,এখন ধুমিয়ে পড়তে হবে,

অনেক রাত পর্যন্ত পড়ে,সমস্ত পড়া কমপ্লিট করে ঘুমিয়ে পড়ে,


পরেরদিন

সকাল বেলা ঘুম থেকে রেডি হয়ে নাস্তা করে কলেজে চলে যায়,

কিন্তু কলেজে গিয়ে যা দেখে তার তো হুঁশ এই উড়ে যায়,

গতকাল যেই মেয়েটা আমাকে প্রপোজ করেছিলো সেই মেয়েটাকে হেনা উদুম কেলানি....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_১০)


আকাশ,সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে কলেজে চলে যায়,

কিন্তু কলেজে গিয়ে যা দেখে তাতে তো আকাশের হুঁশ এই উড়ে যায়....


গতকাল যেই মেয়েটা আমাকে প্রপোজ করেছিলো,তাকে হেনা উদুম কেলানি কেলাচ্ছে,

মেয়েটা,আমাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে ছুটে এসে আমার পিছনে লুকালো,


হেনা,তেড়েফুঁড়ে আসতেছে মেয়েটাকে মারার জন্য,


আকাশ,এই কি সমস্যা তোমার হা?

তুমি ওকে মারছো কেন?


হেনা,আমার অনেক সমস্যা,সে তোকে প্রপোজ করেছে কোন সাহসে?

আকাশ,এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো,তোমার লেভেলের না আমি,যে তুমি আমার সাথে তুই তুকারি করবে,আর কথা হচ্ছে ওর ইচ্ছে হয়েছে সে আমাকে প্রপোজ করেছে,তোমার সমস্যা কোথায় এতে..?


হেনা,না তোকে কেউ প্রপোজ করতে পারবে না,তোকে খালি আমি প্রপোজ করবো,ওর কতবড় সাহস সেটা আমি আজ দেখবো বলে মেয়েটাকে আবার মারতে ধরে,এবার আকাশের মেজাজা খারাপ হয়ে যায়,সে ঠাসসসস করে হেনার গালে কোষে একটা লাগাই দেয়,এই তোকে একবার বলেছি না যে আমি তোর লেভেলের না,তার পরেও তুই তুকারি করতেছিস,আর তোর কতবড় সাহস তুই আমার জিএফ এর গায়ে হাত দিস,সে আমাকে গতকাল প্রপোজ করেছে আর আমি এক্সেপ্ট করে নিয়েছি,


হেনা,গালে হাত দিয়ে কান্না করতে করতে প্লিজ আকাশ তুমি এমন টা করো না,তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসবে,তোমার ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার শুধু আমার আছে,প্লিজ ওকে না করে দাও...


আকাশ,হাহহহ আমার এত ঠেকা পড়ে নাই,যে তোমার মত ধোঁকাবাজকে আবার ভালোবাসতে যাবো,ভুলি নাই আমি এখনো কোনকিছু,মনে আছে সেদিন সবার সামনে জুতোর বাড়ির কথা


সেদিন আমার সবটাই তোমার ছিলো,কিন্তু আজ অন্যজন পাড়ি জমিয়েছে,সে যাই করুক না কেন আশা করি সে অন্তত তোমার মত ধোঁকাবাজি করবে না,আর প্লিজ তোমার ড্রামা গুলো বন্ধ করো,আর আমার চোখের সামনে থেকে দফা হও...


হেনা,কান্না করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়....!

মেয়েটা তো সেই খুশি যে আকাশ তাকে এক্সেপ্ট করে নিয়েছে,


আকাশ,এই সবাই দাড়িয়েছিল কি দেখছেন যান ক্লাসে যান,

আর এই যে মেয়ে তুমি আমায় যত ভালোই বাসো না কেন,কখনো আমার মনে ঢুকতে পারবা না,কারন যখন আমার ভেসভোসা খারাপ ছিলো তখন কেউ আমার ধারেকাছেও আসতো না,আর আজ যখন নিজকে বদলে নিয়েছি মানুষের লাইন পড়ে গেছে,


এমন লোক দেখানো ভালোবাসা আমার দরকার নাই,

যে ভালোবাসায় মন দেখেনা,মানুষটা কেমন সেটা বিবেচনা করে না,খালি দেখতে কেমন টাকা পয়সা আছে কিনা সেটা দেখে,এমন ধারা ভালোবাসা আমার দরকার নাই,আর শুনো হেনার সামনে তোমায় এমন বলেছি তার অন্য কারন আছে,এখন তুমি যেতে পারো আমার দ্বারা ভালোবাসা হবে না,সে এটা বলেই মেয়েটাকে রেখে ক্লাসের দিকে চলে যায়,


স্যার ক্লাস করাচ্ছে,স্যারের লেকচার শুনছি মন দিয়ে,কিন্তু হটাৎ কি কারনে জানি জানালার দিকে নজর যায়,তখনি চোখে পড়লো অনেক গুলো গাড়ি কলেজের গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে,

গাড়ি গুলো আমার পরিচিত মনে হচ্ছে,ধুর যাই হবে হোক স্যারের লেকচারের দিকে মন দেই,স্যারের লেকচার শুনছি এমন সময় পিয়ন এসে বলে হেডস্যারের রুমে এখনি ডেকেছে আমাকে...


পিয়নের সাথে সাথে হেডস্যারের রুমে গেলাম,ভিতরে ঢুকতেই তো বড় ধরনের একটা ঝাটকা খেলাম,

কারন হেডস্যারের রুমে হেডস্যার একা না,উনার সাথে আরেকটা লোক বসে আছেন,যিনি হচ্ছেন আমার বাবা

হা এবার বুঝে আসছে গাড়ি গুলো চেনা চেনা কেন লাগছিলো...


--লোকটা আমাকে দেখতে পেয়ে চেয়ার থেকে উঠে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো,

--আমার ভিতরে কোন ফিলিংস কাজ করছে না, আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি,


--বাবা তুই এতবড় শাস্তি কি করে দিলি আমাদেরকে,আজ একটা বছর তুই ঘর থেকে বাহিরে,সেদিন না হয় রাগ করে তোর গায়ে হাত তুলেছিলাম,আর কিছু কথা শুনিয়েছিলাম,তাই বলে তুই এভাবে আমাদেরকে ছেড়ে চলে আসবি,আজ একটা বছর আমাদের মনে কোনো শান্তি নাই,তোর মা রোজ কাঁদে তোর জন্য,আর আমার কথা না হয় বাদ এই দিলাম,আজ তোর হেডস্যার খবর না দিলে তো তোর কোন খোঁজ এই পেতাম না,বাবা তুই কি ভাবে পাড়লি আমাদের ছেড়ে একটা বছর কাটিয়ে দিতে,


আকাশ,ওর বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে মাত্র এক বছর হয়েছে,আরো অনেকটা সময় পড়ে আছে


আকাশের বাবা,প্লিজ আকাশ আর রাগ করে থাকিস না,প্লিজ এবার ঘরে ফিরে চল..?


আকাশ,নাহ কখনোই নাহ..

ঘরের গন্ডিতে ঐদিন পাড়া দিব যেদিন মানুষের মত মানুষ হতে পারবো,কারন ঐ দিন এটা বলে ঘর ছাড়তে বলেছিলে আমার মত কুলাঙ্গার সন্তান তোমার দরকার নাই,আরো বলেছিলি আমার মত ছেলে দুনিয়ায় বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নাই,আমার মরে যাওয়াই ভালো...

কিছুই ভুলিনি আমি,জেদ করে যেমন ঘর ছেড়েছি,তেমন মানুষের মত মানুষ হতে পারলেই ঘরে ফিরবো আবার


আর আপনার যদি স্যারের সাথে কোন কাজ থাকে তাহলে কলেজো আসতে পারেন,আমার খোজ নিতে কলেজে আসতে হবে না,

আমার সামনে পরিক্ষা আমাকে তাতে ফোকাস করতে দিন,চলি এবার আমার গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস চলছে....


আকাশ,চলে যাচ্ছে কিন্তু হটাৎ একটা কথা মনে পড়ে,

সে পিছনে ফিরে ওহ হা একটা কথা বলতে ভুলে গেছি,শুনেন আমি যেমন এই ছিলাম যেই পথেই ছিলাম না কেন,কখনো অন্যায় করি নাই,মানুষের ক্ষতি করি নাই,আর আপনি আজ বেঁচে আছেন আমি আকাশের জন্য,সেই জন্য আমিই কুলাঙ্গার হয়ে গেলাম


আকাশ,হেডস্যারের রুম থেকে বের হয়ে ক্লাসে চলে আসে,

ইতিমধ্যে পুরো কলেজে খবর পৌঁছে গেছে যে এই শহরের টপ বিজনেসম্যান ইয়াকুব সাহেব কলেজে এসেছে,তাই স্যাররা ক্লাস ছুটি দিয়ে দিছে,


পুরো কলেজে গমগম করছে মানুষের জন্য,কলেজ স্টুডেন্ট আরো বাহিরের অনেক মানুষ ও কলেজে এসেছে ইয়াকুব সাহেবকে দেখার জন্য,


আকাশের সেই দিকে কোন আক্ষেপ নাই,তার মন খারাপ হয়ে আছে,তাই সে আরুকে নিয়ে গাছ তলায় চলে যায়,


আরু,কিরে তোর বাবা আসছে তোর আরো খুশি হওয়ার কথা,কিন্তু সেখানে তুই মন খারাপ করে বসে আছিস..?


আকাশ,কারন আমি উনার ছেলে না তাই...

আরু,মানে কি বলছিস আকাশ...?


আকাশ,তুই তো জেনেই গেছিস আমি কে,দেখ আমি যাই করেছি কখনো মানুষের খারাপ করিনি,মানুষের সাথে অন্যায় বা খারাপ আচরণ করিনি,আর আজ সেই লোক ও বেঁচে আছে আমার জন্য,পিন্টু হাজি উনার পিছনে লোক লাগিয়ে দিয়েছিলো মারার জন্য,কিন্তু আমার জন্য কিছু করতে পারে নি,আমি উল্টো ওদের সব কয়টাকে সাইজ করেছি,আর সেই ঘরের মানুষ এই আমাকে বলে আমি নাকি কুলাঙ্গার,আমার নাকি বেঁচে থাকার অধিকার নাই,আমি সন্ত্রাস....


আরু,দেখ আকাশ তুই হয়তো কষ্ট পেয়ে কথা গুলো বলছিস,কিন্তু দেখ তোর বাবা রাগের থেকে কথা গুলো বলেছে,আর তুই যত ভালোই করিস না কেন,তোর কাজ করার লাইনটা তো খারাপ তাই তিনি হয়তো রিয়েক্ট করেছেন...


আকাশ,আরু তুই কি উনার পক্ষ হয়ে কথা বলছিস...?


আরু,আরে নাহ উনার পক্ষ নিয়ে কথা বলতে যাবো কেন,আমি তোর পক্ষ নিয়েই কথা বলছি,আচ্ছা থাক এবার আর গাল ফুলিয়ে থাকতে হবে না,চল কেন্টিনে যাবো আইসক্রিম খাবো....


আইসক্রিম খেয়ে দুজনে দুজনের বাসায় চলে যায়,

ইয়াকুব সাহেব নৈরাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যায়,


অন্যদিকে হেনা তো বাসায় গিয়ে সমস্ত কিছু তোলপাড় করে ফেলছে,ওকে কেউ থামাতে পারছে না,আমি আকাশকে ভালোবাসি,আমার আকাশকে চাই,বাসায় যত কাঁচের শোপিস ছিলো সব ভেঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি করে ফেলেছে...


হেনার বাবা আই মিন ওসি,মা রে তুই তাকে অপমান করেছিস,আমিও তাকে অত্যাচার করেছি,এত কিছুর পরেও কি সে তোকে মেনে নিবে...?


হেনা,আমি জানি না,আমার আকাশকে লাগবে ব্যস লাগবেই,না হয় আমি সুইসাইড করবো শেষ কথা,তোমার আমার ভালো চাও তো ওকে এনে দাও..?

না হয় তোমাদের মেয়ের মৃত লাশ কাঁধে নিতে প্রস্তুত হও...


আকাশ,বাসায় এসে গোসল করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে,পরে একটু ঘুম যাবে বলে ভাবে কিন্তু তখনি অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে,


আকাশ,হ্যা কে বলছেন...?

আমি থানার ওসি বলছি....


আকাশ,আমাকে কি কারনে ফোন করেছেন..?

ওসি,প্লিজ বিল্লা ভাউ আমার কথাটা একটু শুনেন,আমার মেয়েটা আপনাকে খুব বেশি ভালোবাসে,সে আপনাকে না পেলে নাকি সুইসাইড করবে,প্লিজ আপনি আমার মেয়েটাকে গ্রহণ করে নেন...


আকাশ,এই ওসি মাথা পাগল হয়ে গেছে হা,সামান্য একটা ওসির মেয়েকে আমি বিয়ে করবো,এটা কখনোই সম্ভব না,আর কে কি করবে এত কিছু আমার দেখার সময় নাই,সুইসাইড করবে না কি করবে সেটা ওর ব্যাপার,এর পরেরবার যদি আমার নাম্বারে ফোন আসে তাহলে অবস্থা খারাপ করে ছেড়ে দিব


আর আমার রিলেশন আছে অন্য মেয়ের সাথে,কিছুদিন পর আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি,আপনার মেয়েকে বলবেন অযথা কোন কিছু করে নিজের বিপদ ডেকে না আনতে,এতে আপনার মেয়ের এই ক্ষতি হবে,বায় ভালো থাকেন...!


আকাশ,ফোন কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,বিকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে কারোর হাতের স্পর্শে,কেউ একজন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আকাশ মিটমিট করে চোখটা খুলে দেখে আম্মু

আম্মু তুমি....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_১১)


আকাশ,ফোন কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,বিকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে কারোর হাতের স্পর্শে,কেউ একজন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আকাশ মিটমিট করে চোখটা খুলে দেখে আম্মু,সে দেখে তো অবাক

আম্মু তুমি.....?


আকাশে আম্মু,হা আমি...

আকাশ,লক্ষ্য করে ওর আম্মু কান্না করছে...

আম্মু,তুমি কান্না করছো কেন..?


--আজ এক বছর পর তোকে দেখতে পেয়েছি,আজ একটা বছর ধরে তোর চাঁদ মাখা মুখ খানা দেখি না,তো কান্না করবো না তো কি করবো,


আকাশ,ও ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়,আম্মু আমায় ক্ষমা করে দাও

আমি নিজেকে মানুষ করার জন্য ঘর ছেড়েছি,কিন্তু আম্মু তুমি আমার খোজ পেলে কোথায়...?


--তোর আব্বু আজ বললো তুই এখানে একটা কলেজে পড়াশোনা করিস,

আর তা ছাড়া তোর ড্রাইভারের সাথে আমার গতকাল দেখা হয়েছে,ওদেরকে জিগ্যেস করেছি তোর কথা,কিন্তু ওরা বলেছে তোর নিষেধ আছে ঠিকানা বলতে,তাও অনেক জোর করে তোর ঠিকানা মুখ থেকে বের করেছি...


আকাশ,ওর আম্মুর কথা শুনে হা হয়ে তাকিয়ে আছে,তবে আম্মুর সাহস দেখে আমার অবাক লাগছে,যে উনি থাকে এক শহরে,আর সেই শহর থেকে আমার খোজ করার জন্য অন্য শহরে চলে আসছে,তাও আবার একা..


আব্বু জানে তুমি যে আমার খোজে এসেছো..?

--হা জানে...


আকাশ,তাহলে তোমায় একা ছেড়ে দিলো কি করে...?

--ছেড়েছো কোথায় আমি জোর করে বের হয়েছি,বলেছি আমার ছেলের কাছে যাবো আমি,আমায় যদি আটকানোর চেষ্টা করে তাহলে চিরতরে ঘর ছেড়ে দিব,আর তা ছাড়া ঐ লোকের জন্য তুই ঘর ছেড়েছিস,একটা বছর আমার কত চোখের জ্বল ঝরেছে জানিস,রোজ রাতে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলতাম...


আকাশ,আম্মু সরি

--এই পাগল ছেলে কি করছিস,যা হয়েছে হয়েছে এবার ঘরে চল...?


আকাশ,নাহ আম্মু এটা সম্ভব না...?

--তুই যদি আজ আমার সাথে ঘরে না যাস তাহলে আমি এখান থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো...


আকাশ,আম্মু তুমি কি বলছো এই সব উল্টা-পাল্টা,

--আমি এত কিছু বুঝি না তোর ঘরে যেতে হবে আমার সাথে...


আকাশ,আম্মমমমমু

--তুই আমার সাথে যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল,

আকাশের আম্মু যখন বাসায় এসেছে তখন পল্লব ছিলো না বাসায়,

সে পল্লবকে ফোন করে বলে বাসায় আসতে,সে তার নিজ বাড়িতে ফিরে যাবে,পল্লব আকাশের ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় আসে,


আকাশ,আচ্ছা পল্লব তুই থাক আমি বাড়ি যাচ্ছি,

পল্লব,আচ্ছা ভাই তাহলে আজ রাতে আমিও আমার বাড়িতে ফিরে যাবো,


আকাশ,হা তাই কর,বাসার মানুষ অনেক চিন্তায় আছে...

তারপর আকাশের আম্মু আর আকাশ মিলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,এদিকে আকাশ ফোন করে ওর সমস্ত গাড়ির ড্রাইভারকে বলে দেয় সবাই যেন ওর বাড়িতে চলে যায় গাড়ি নিয়ে,


বাসায় পৌঁছাতেই রুহি এসে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়,

এই কুত্তা শয়তান বদমাইশ কই ছিলি তুই এতদিন বলে মারতে শুরু করে..?

রুহি আকাশের ছোটবোন... 


আকাশ,আরে আরে মারছিস কেন লাগছে তো..

রুহি,চুপ কুত্তা কোথাকার তোর শরীরে একদম হাতের নোখ ঢুকিয়ে দিব,

কি ভাবে পারলি তুই আমাকে ভুলে থাকতে ভাইয়া..?


আকাশ,চুপ করে আছে...

--আকাশের আম্মু এই রুহি এখন বকবক করিস না,পরে এইসব আলাপ করিস,এখন অনেক দূর থেকে এসেছে আগে একটু ফ্রেশ হতে দে...


আকাশ,আজ এক বছর পর বাসায় এসেছে,বাসাটা সেই আগের মতই আছে,কিন্তু কেমন নিরব একটা পরিবেশ ঘরটাকে মরা বাড়ির মত বানিয়ে ফেলেছে,আমি আমার যেই রুম ছিলো সেটাতে চলে গেলাম,গিয়ে দেখি সমস্ত কিছু আগের মতই আছে,অবাক হলাম আমার রুমটা একদম পরিপাটি করে গোছানো দেখে,তার মানে এই রুমটা রোজ কেউ গুছিয়ে রাখে,

আকাশকে পেয়ে বাসার সবাই মহাখুশি,আকাশও খুব খুশি সে সবার সাথে হেসে খেলে কথা বলতেছে,শুধু তার বাবাকে ছাড়া,কারন সেই মানুষটার প্রতি তার কেন জানি একটা অভক্তি চলে আসছে...


--আকাশের বাবাও কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে,তিনিও ভিতরে ভিতের কুকড়ে কুকড়ে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছেন...


আকাশ,একেবারে বাসায় ফিরে আসছে,সে সারাদিন বাসায় থাকে পরেরদিন সকাল বেলা রেডি হয়ে নিজের গাড়িটা নিয়ে কলেজে চলে যায়,

কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকবে এমন সময় হেনা তার সামনে পথ আটকায়,


হেনা,এই আকাশ দাঁড়াও তোমার সাথে আমার শেষ কিছু কথা আছে...

আকাশ,তোমার মত মেয়ের সাথে আমার কোন কথা নাই..


হেনা,নাহ তোমার কথাগুলো শুনতে হবে বলে হেনা আকাশের পথ আটকে ধরে...


আকাশ,আচ্ছা বলো কি বলবে..?

হেনা,আকাশ তুমি কি সত্যি আমায় ভালোবাসো না..?

আমার জন্যে কি তোমার একটুও মায়া হয় না..?


আকাশ,এই মেয়ে ড্রামা বন্ধ করো,তোমাকে আমার দুই চোখেই সহ্য হয় না,আর রইলো ভালোবাসা,শুনো তুমি ভালোবাসার মত যোগ্য মেয়ে না,তোমার থেকে পতিতা মেয়েও ভালো আছে,তুমি তো মুখোশধারী শয়তান মেয়ে,তোমার মত মেয়েকে যে কি ভাবে আমি ভালোবেসে ছিলাম সেটা এক মাত্র আল্লাহ জানে....


হেনা,আকাশ বলো আরো বলো,যা ইচ্ছে হয় বলো আমাকে নিয়ে,যত অপবাদ দিতে ইচ্ছে হয় দাও,কিন্তু প্লিজ আমায় ফিরিয়ে নাও,আমি তোমার সাথে যা করেছি অন্যায় করেছি,আমি জানি যে আমি 

ক্ষমার যোগ্য না,

কিন্তু বিশ্বাস করো আমার তোমাকে চাই,তুমি ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতে পর্যন্ত কষ্ট হয়,তোমাকে না পেলে আমি সত্যি মরে যাবো...


আকাশ,এই ধোঁকাবাজ মেয়ে মরবি না হয় যা করবি কর,আমাকে কেন বলতেছিস এই সব কথা,তুই হচ্ছিস বিষাক্ত একটা সাপ,যার জীবনে যাবি তাকে দংশন করে বিষে নীল করে দিবি,তোর মত মেয়ে ভালোবাসার যোগ্য না,আর শোন তোর যা ইচ্ছা হয় তাই কর,মরবি না কি করবি সেটা তোর একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার,কিন্তু এই সব কথাবার্তা আমার সামনে বলিস না,

যা দূরে গিয়ে মর আমি গেলাম.... 


আকাশ হেনাকে রেখে ক্লাসে চলে আসে,হেনা সেখানেই বসে

 কান্না করে দেয়,


আকাশ ক্লাসে এসে আরুর সাথে কথা বলছে এমন সময় স্যার ক্লাসে ঢুকে,

স্যার আসা মাত্রই সবাই নিরব হয়ে যায়,এভাবে চার ঘন্টা হওয়ার পর কলেজ ছুটি হয়ে যায়,


আকাশ আর আরু ক্লাস শেষ করে কেন্টিনের দিকে যাবে,এমন সময় আকাশের নজর পড়ে কলেজের গেইটের দিকে,হেনা এখনো সেখানে মাটিতে বসে আছে,যেভাবে বসা ছিলো ঠিক সেভাবেই বসে আছে,আকাশের মাথায় ঢুকছে না মেয়েটা চার ঘন্টা একটা জায়গার মধ্যে কি ভাবে বসে ছিলো


ধুর আমার কি,ওর ভালো লেগেছে তাই সে বসেছিলো,

আকাশ ওকে পাত্তা না দিয়ে আরুকে নিয়ে কেন্টিনের দিকে হাটা দেয়,

হেনা আকাশকে দেখতে পেয়ে ঘাড় ঘুরে আকাশের দিকে অসহায় ভাবে এক ঝলক তাকায়,হেনা হয়তো আকাশকে কিছু একটা বলতে চায়,

কিন্তু আকাশের কোন ফিলিংস এই নাই যে হেনার কথা শুনবে,সে দেখেও না দেখার ভান করে কেন্টিনে চলে যায়,


আকাশ আর আরু কেন্টিন থেকে নাস্তা করে ফিরে আসে,কিন্তু আকাশ লক্ষ্য করে হেনা আর নাই,সে চলে গেছে,আর সে যেই জায়গাটায় বসে ছিলো সেখানে চোখের পানিতে ভিজে মাটিগুলো কাঁদা হয়ে আছে...


ধুর তাতে আমার কি,আমাকে কাঁদিয়েছে এখন সে নিজে কাঁদুক.. 

আকাশ কলেজের পাশে পার্ক করা তার যেই গাড়িটা আছে সেটা স্টার্ট করে আরুকে সাথে নিয়ে নেয়,আরুকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে সে তার বাড়িতে চলে যায়,


বাসায় মোটামুটি ভালোই লাগছে এখন আকাশের,সবাই অনেক কেয়ার করে তার,সারাদিন মা আর ছোটবোনের সাথে হাসি ঠাট্টা করেই সময় চলে যায়,রাতের বেলা খেয়ে দেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে আর ঘুমানোর চেষ্টা করছে,কিন্তু ঘুম কোন ভাবেই ঘুম আসতেছে না,বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ খালি ছটফট করতেছে,ঘুম কোথাও যেন উধাও হয়ে গেছে,


আকাশ,চোখ বুঝে শুয়ে আছে,তখনি তার সাকলের কথাগুলো মনে পড়ে,

নাহ আজ মেয়েটাকে অনেক কথা শুনিয়েছি,এমনভাবে না বললেও পারতাম,মেয়েটার চোখ মুখ দেখে কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা আমায় সত্যিই ভালোবাসে,এবার তার ভালোবাসার মধ্যে কোনো খুঁত নাই,

কিন্তু কি আর করবো সে তো আমার মন নিয়ে খেলা করলো,আমিও তো তাকে সত্যি ভালোবাসতাম,আর এখনো বাসি,কারন প্রথম প্রেম কখনো ভুলা যায় না,


তবে যত যাই হোক মেয়েটাকে এই ভাবে কাঁদানো আমার একদম উচিৎ হয় নি,নাহ কালকে কলেজে গিয়ে ওর সাথে কথা বলবো,যদি ওর হাবভাব ভালো দেখি তাহলে সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করবো....


আকাশ,হেনাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে,সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে কারোর ফোনের আওয়াজে,সে মিটিমিট করে চোখটা খুলে বালিশের কাছ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে,ফোনটা কানে দিতেই অপরপাশ থেকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠে,বিল্লা ভাউ আপনাকে বলেছিলাম আমার মেয়েটাকে নিজের করে নিতে,কিন্তু আপনি নেন নি,


যদি নিতেন আজ আমার মেয়েটার এমন দুর্দশা হতো না,সে জীবিত থাকতো


আকাশের তো কিছুই ঢুকছে না মাথায়,এই কি বলছেন উল্টা-পাল্টা আপনি...?


--হা যা শুনেছেন ঠিকই শুনেছেন,গতকাল রাতে হেনা সুইসাইড করেছে

জানেন বিল্লা ভাউ সে রাতের বেলা আমাকে আর ওর মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো,আর বারবার খালি একটা কথাই বলছিলো আম্মু-আব্বু তোমারা দুজনেই আমাকে মাফ করে দিও,কিন্তু বিশ্বাস করেন কখনোই বুঝতে পারি নাই যে আমাদের মেয়েটা এতবড় একটা কান্ড করে ফেলবে...


হেনার আব্বুর কথা শুনে আকাশ বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ে...

আকাশের যেন দুনিয়াদারী ঘোলাটে হয়ে গেছে হেনার আব্বুর কথা শুনে...

আকাশের নিশ্বাসটাও যেন এখনি বের হয়ে যাবে শরীর ছেড়ে,

কি বললো এটা যে হেনা সুইসাইড করেছে,আকাশ চিৎকার করে কান্না করে দেয়,নাহ হেনা এটা করতে পারে না,সে গতকাল আমাকে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো,সে মরতে পারে না.....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_১২)


হেনার আব্বুর কথা শুনে আকাশ লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ে...

আকাশের যেন দুনিয়াদারী পুরো ঘোলাটে হয়ে গেছে হেনার আব্বুর কথা শুনে,আকাশের নিশ্বাসটাও যেনো এখনি বের হয়ে যাবে শরীর ছেড়ে,

কি বললো এটা যে হেনা সুইসাইড করেছে,আকাশ চিৎকার করে কান্না করে দেয়,নাহ হেনা এটা করতে পারে না,সে আমায় গতকাল কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো,সে মরতে পারো না....


আকাশ,তাড়াতাড়ি করে শার্টটা গায়ে দিয়ে আরুকে ফোন করে,আরু হেনা নাকি সুইসাইড করেছে...?


আরু,জানি না আমিও এমনটা শুনলাম,তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় দুজনে মিলে হেনার বাসায় যাবো,


আকাশ,আচ্ছা তুই দ্বারা আমি কিছু সময়ের মধ্যে আসছি,আকাশ কোনো মতে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির চাবিটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে,চোখে মুখে হতাশার ছাপ,গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে আরুর কাছে চলে যায়,তারপর দুজন মিলে হেনার বাসায় যায়,


হেনার বাসার সামনে মানুষ দিয়ে ভর্তি,আকাশ যত এগোচ্ছে ভয়ের মাত্রা ততই বাড়ছে,আল্লাহ হেনার যেনো কিচ্ছু না হয়,আমি ওকে খুব ভালোবাসি,

আকাশরা আস্তে আস্তে করে ঘরের ঘরের দিকে এগোতে থাকে,একটু সামনে যেতেই দেখে সাদা কাপড় মোড়ানো একটা লাশ মাটিতে শুইয়ে রেখেছে,এটা দেখে আকাশের কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠে,আল্লাহ হেনার কিছু হলে আমিও মরে যাবো


আকাশকে দেখতে পেয়ে হেনার বাবা এগিয়ে আসে,

এই যে আকাশ মাহমুদ ওরফে বিল্লাহ ভাউ,আমার কলিজার টুকরো মেয়েটা মাটিতে ঘুমিয়ে আছে


হেনার আব্বুর কথা শুনে আকাশের কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে,ওর যেনো বিশ্বাস এই হচ্ছে না,নাহ এটা হেনা না,আমি এটা বিশ্বাস করি না,হেনার কিচ্ছু হতে পারে না,আকাশ দৌড়ে গিয়ে লাশটার মুখ থেকে কাফনের কাপড়টা সরিয়ে ফেলে,আকাশ লাশটাকে দেখে সজোড়ে এক চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে,হেনা ছোট বাচ্চার মত ঘুমিয়ে আছে,


আকাশ,কলিজা তুমি এটা কি করলে,আকাশ সজোড়ে চিৎকার করে কান্না করছে,কলিজা আজ আমি তোমার সাথে সমস্ত কিছু ঠিক করে নিতাম,কলিজা একটু ধৈর্য ধরলে না তুমি,পাগলের মত এটা কি করে বসলে,আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো,কাকে কলিজা বলে ডাকবো,কে আমাকে ভালোবাসবে তোমার মত করে,মানুষ বলতেই ভুল,তুমিও না হয় না যেনে শুনে কিছুটা ভুল করেছো,কলিজা শাস্তি তো আমি তোমাকে দেওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু আমি যেখানে শাস্তি দেই নি সেখানে তুমি নিজেকে নিজে শেষ করে দিলে কলিজা,


কলিজা এটা কেন করলে,এখন আমায় কে ভালোবাসবে,নাহ তুমি মরতে পারো না,আমার কলিজা মরতে পারে না,এই যে আপনারা সবাই বিশ্বাস করেন আমার কলিজা মরে নাই,ও কলিজা উঠো না বলে হেনার দেহটাকে পাজকোল করে ঝড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে.....


আরু,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে,ওর চোখ দিয়েও বৃষ্টির ফোটার মত পানি ঝড়ে পড়ছে,আকাশের কান্না যেনো ওর কলিজাটাকে ছিদ্র করে দিচ্ছে,

একটু হেয়ালির জন্য দু'টো জীবন আজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,হেনা এমন ধারা কাজ করেছে আরুর ও যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না,হেনা কেন তুমি এমনটা করলে,আকাশের চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি আমি,ছেলেটা তোমায় পাগলের মত ভালোবাসে,এখন ওর কি হবে!তুমি যে তাকে ছেড়ে চলে গেলে,ছেলেটা যে এখন পাগলের মত কান্না করছে,ওর চোখের পানি যে আমার সহ্য হয় না,সবটাই হয়তো আমার দোষ,আমি তোমাদের মাঝে কেন এসেছি,না হয় আজ হয়তো তুমি এমনটা করতে না


হেনার আব্বু-আম্মু সবাই কান্না করছে,

আকাশ,এখনো হেনাকে পাজকোল করে জড়িয়ে ধরে আছে,


হেনার আব্বু,এই যে আকাশ ভাই আর কান্না করে কোন লাভ নাই,

আপনি আমার নয়নের মনি টাকে আমাদের থেকে কেঁড়ে নিয়েছেন,

এই যে ধরেন হেনার হাতে একটা চিঠি ছিলো,যেটাতে লিখা ছিলো তোমরা এই চিঠিটা আকাশের হাতে পৌঁছে দিবে প্রিয় মা-বাবা...


আকাশ,চিঠিটা হাতে নিয়ে খুলে পড়তে আরম্ভ করে,


হে কলিজার টুকরা আমি জানি তুমি কাঁদছো,

প্লিজ কেঁদো না..


কলিজা আমি অন্যায় করেছি তাই নিজেকে ছোট্ট একটা শাস্তি দিলাম

কলিজা আমি জানি আমার মধ্যে অহংকারে ভরা ছিলো,কিন্তু বিশ্বাস করো সেই খেয়াল তোমার সাথে মিশবার পড়ে উধাও হয়ে গিয়েছে,কলিজা মানুষ বলতেই তো ভুল আমিও না হয় ভুল করেছিলাম,তোমায় ভরা মজলিসে অপমান করেছি,কিন্তু বিশ্বাস করো তোমায় অপমান করার ইচ্ছা ছিলো না আমার...


তোমার জন্য সত্যি আমার মনে ভালোবাসা ছিলো,শুরুতে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভালোবেসেছিলাম,কিন্তু পরে কি ভাবে যেনো তোমায় ভালোবেসে ফেলেছে।

কলিজা বিশ্বাস করো তোমাকে অন্যের সাথে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না,তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখলে গা জ্বলে যেতো,মনে হতো আমার জিনিসে কেউ হস্তক্ষেপ করছে,তাই রাগ সহ্য করতে পারিনি তোমায় অপমান করে বসেছি,তার মধ্যে তোমায় নিয়ে পুরোনো একটা ক্ষোভ ছিলো,যে আমায় থাপ্পড় খাইয়েছো আমায় অপমান করেছো তার প্রতিশোধ নিব,সমস্ত কিছু মিলিয়ে তোমার উপরে একটা ক্রোধ ছিলো,তাই জেদের বসে তোমার উপরে ঝাল মিটিয়েছি...


এসব করার সময় আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না,কিন্তু পড়ে ঠিকই আমি এর জন্য অনুতপ্ত হয়েছি,কলিজা বিশ্বাস করো তুমি শহরের নাম করা কোটিপতির ছেলে এটার প্রতি আমার কোন লোভ ছিলো না,বরং এটা শুনার পর আরো ভালোভাবে রিয়েলাইজ করেছি,যে তুমি শহরের নাম করা কোটিপতির ছেলে হওয়ার পরেও তোমার মধ্যে বিন্দু পরিমান অহংকার নাই,আর আমি দুই টাকার ওসির মেয়ে হয়ে আমার এত অহংকার,

তাই নিজেকে শুধরে নিয়ে তোমার কাছে ফিরে গিয়েছিলাম।


কিন্তু কলিজা আমার কপালে মাফ জুটেনি

জানো কলিজা সেদিন চারটা ঘন্টা মাটিতে বসে কেঁদেছিলাম,ভরসা ছিলো কলেজ শেষ হলে তুমি এসে যখন আমার ঐ অবস্থায় দেখবে,তখন তুমি সব ভুলে গিয়ে আমায় বুকে টেনে নিবে...

কিন্তু এমহ কিছুই করো নি


কলিজা তোমার হয়তো বিশ্বাস হবে না,যে আমার ভালোবাসা তোমার বড়লোক নামটার উপরে,বিশ্বাস করো তোমায় সত্যি ভালোবাসতাম কলিজা,এই যে তার প্রমাণ ও দিয়ে গেলাম নিজেকে শেষ করে দিয়ে

বিষের বোতল পুরোটা খেয়ে ফেললাম...


লোভ থাকলে নিজেকে শেষ করতাম না

কলিজা টাকা পয়সা নিয়ে কেউ কবরে যেতে পারে না,এই যে যখন তুমি চিঠিটা পড়বে তখন হয়তো আমি এই দুনিয়ায় থাকবো না,যদি তোমাকে দেখানোর জন্য হতো এইসব কিছু,তাহলে অন্তত নিজেকে শেষ করতাম না। যাদের টাকা পয়সার লোভ আছে তাদের জীবনের লোভ নাই এটা কি করে হতে পারে

জীবন এই যদি না থাকে তাহলে টাকা পয়সার লোভ করে কি হবে


এর পরেও যদি তোমার মনে হয় তোমার কোটিপতি নামটার উপরে আমার লোভ ছিলো তাহলে কলিজা আমি ব্যর্থ


কলিজা অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে মাফ করে দিও আমায়,

তোমায় হয়তো আর কখনো দেখতে পাবো না,কারন আমার দুচোখ বন্ধ হয়ে যাবে


কলিজা জীবিত থাকতে কখনো একবার জড়িয়ে ধরে চুমুও দাও নি,কলিজা চিঠির এই লাইনটা যখন পড়বে তখন তো আমি মরা লাশ হয়ে গেছি,এখন কি একটা বার বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিবে...

তাহলে উপরে গিয়ে শান্তি পেতাম....

কলিজা ভালো থেকো..

ইতি 

তোমার ভালোবাসা না পাওয়া অভাগিনী...


আকাশ,হেনাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কলিজা গো তুমি এটা কেন করলে,তোমায় একটা না হাজারটা চুমু দিব আমি,আকাশ বুক ফাটিয়ে কান্না করতেছে আর হেনার মৃত দেহটাকে জড়িয়ে ধরে ওর চোখে মুখে কপালে পাগলের মত চুমু খাচ্ছে...


আকাশের কান্না দেখে আরুর কান্নার মাত্রা যেন আরো বেড়ে গেছে,

আরু সহ্য করতে না পরে সে সেখান থেকে চলে আসে,


হেনার আব্বু,এই আকাশ ভাই আপনি এবার এখান থেকে চলে যান,আমার মেয়েটাকে তো বাঁচতে দিলেন না,মৃত বানিয়ে দিয়েন এখন আফসোস করে লাভ কি...


আকাশ,এই ওসি একদম চুপ..

আমার কলিজা মৃত না,আমার কলিজা আমার বুকে ঘুমিয়ে আছে,একদম একটা সাউন্ড ও করবি না,সাউন্ড করবি তো গলার কন্ঠনালি সোজা টেনে বের করে ফেলবো...


হেনার আব্বু,ভাই আপনার যা করার আমার সাথে করেন,কিন্তু আমার মেয়ের লাশ আমি আপনাকে স্পর্শ করতে দিব না,থানা থেকে কিছু পুলিশ আসছে,হেনার আব্বু এই তোরা কি দেখছিস? উনাকে নিয়ে গিয়ে বাহিরে রেখে আয়,আমার মেয়ের আসেপাশেও আসতে দিব না আমি...


আকাশ,তো কোন মতেই হেনাকে ছেড়ে উঠবে না,সে শক্ত করে হেনাকে জড়িয়ে ধরে আছে,ওসির কথা মতো পুলিশ গুলো জোর করে আকাশকে বাড়ির বাহিরে রেখে আসে,


--এই তোরা কি করছিস..?

প্লিজ আমাকে ভিতরে যেতে দে আমার কলিজাটা যে ঘুমিয়ে আছে..


থানার পুলিশ গুলো,ভাই মাফ করবেন স্যারের ওর্ডার আমরা অমান্য করতে পারবো না...


আকাশ,ঘরের বাহিরে বসেই কান্না করছে,আর মাটিতে বসে বসে সে পাগলের মত প্রলাপ করছে,আকাশের যেন পুরোপুরি মাথা নড়ে গেছে..


একটু পর পুলিশ গুলো হেনার লাশটাকে গাড়িতে করে কোথায় যেন নিয়ে চলে যায়...


আকাশের মাথা পুরো আউট হয়ে গেছে,

সে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে আরুকে ডাকতে থাকে,কিন্তু আরুর কোন খোজ খবর নাই,তাই সে একাই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে আরম্ভ করে,কিন্তু সে কোথায় যাচ্ছে তার কোন হুঁশ নাই,তার ভিতরটা যেন ফেটে যাচ্ছে,হেনার মায়াভরা মুখটা তার চোখের সামনে এখনো ভেসে উঠছে,আকাশ গাড়িটা ড্রাইব করে নিয়ে একটা দোকানের সামনে দাঁড় করায়,পরে দোকানের ভিতর থেকে দুইটা মদের বোতল কিনে আনে,


একদিকে গাড়ি ড্রাইভ করছে আরেকদিকে মদ পান করা শুরু করে....

নাহ আমার কলিজা কেনো মারা গেলো,আজ আমি নিজেকেও শেষ করে দিব,গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি আসতে আসতে দুইটা বোতল শেষ করে ফেলে,


আকাশ বাসায় ঢুকতেই ওর আম্মু জিগ্যেস কিরে বাবা তোর কি হয়েছে তোকে এমন হতাশ লাগছে কেনো...?

আর তোর মুখে দিয়ে কি সব বাজে গন্ধ আসছে..?


আকাশ,এই মহিলা চুপ..

একদম চুপ একটা সাউন্ড ও না,আমার কলিজা মরে গেছে আজ আমিও নিজেকে শেষ করে দিব...


আকাশের আম্মুর তো কিছুই মাথায় কাজ করছে না,কি সব বলছে আকাশ উল্টা-পাল্টা,কলিজা মরে গেছে,নিজেকে শেষ করে দিবে...


আকাশ,ঢুলতে ঢুলতে নিজের রুমে চলে যায়,রুমে গিয়ে ব্লেড খুজতে আরম্ভ করে,খু্ঁজতে খুঁজতে পেয়েও যায়,ব্লেডটা রগ বরাবর চেপে ধরে কলিজা আমিও তোমার কাছে চলে আসতেছি বলে রগের উপরে চালিয়ে দেয়,সাথে সাথে হাত থেকে ফুলকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়.....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ

(পর্ব_১৩)


আকাশ,ঢুলতে ঢুলতে নিজের রুমে চলে যায়,রুমে গিয়ে ব্লেড খু্ঁজতে আরম্ভ করে,ব্লেড পেয়েও যায়,ব্লেডটা রগ বরাবর চেপে ধরে কলিজা আমিও তোমার কাছে চলে আসতেছি বলে রগের উপরে চালিয়ে দেয়,

সাথে সাথে হাত থেকে ফুলকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়...


হাত দিয়ে অনবরত রক্ত বের হয়ে পড়ছে,একটা সময় আকাশ সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যায়,পরে আর কিছু মনে নাই....


--আকাশের আম্মু,ছেলেটার কি হয়েছে যে ছেলেটা আজ নেশা করে এসেছে,আমার ছেলে তো এমন ছিলো না,নাহ ওর কিছু একটা হয়েছে,নাহ ওর কাছে গিয়ে জিগ্যেস করি কি হয়েছে...


আকাশের আম্মু রুমে এসে দেখে আকাশ বেহুশ হয়ে ফ্লোরের উপরে পড়ে আছে,আর পুরো ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে আছে,আকাশের এই অবস্থা দেখে ওর আম্মু সজোড়ে একটা চিৎকার মারে....


--আকাশের আব্বু আর রুহি নিচেই ছিলো,আকাশের আম্মুর চিৎকার শুনে উনারা দৌড়ে রুমে আসে,বাসায় আরো কাজের মানুষ যারা ছিলো সকলেই দৌড়ে আসে,এসে দেখে পুরো ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে আছে আর আকাশ ফ্লোরের উপরে পড়ে আছে,


--আকাশের আম্মু তো হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিছে,আকাশের আব্বুও পাগল হয়ে গেছে আকাশের এই অবস্থা দেখে,তিনি তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে,তারপর আকাশকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়...


আকাশকে তাড়াতাড়ি ইমারজেন্সি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়,

সবাই বাহিরে অপেক্ষার করছে,একটু পর একজন ডাক্তার বের হয়ে আসে ইমারজেন্সি রুম থেকে,


--আকাশের আব্বু,ডাক্তার আমার ছেলের কি অবস্থা..? 


ডাক্তার,দেখেন সে রগের মধ্যে এমন ভাবে ব্লেড চালিয়েছে যার ফলে তার পুরো রগ কেটে গেছে,আর অনেক ব্লিডিং ও হয়েছে,আপনারা তো জানেন এই একটা মানুষের শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বের হওয়া এটা কখনোই ভালো লক্ষণ নয়...


তবে আমরা আমাদের সাধ্য মত চেষ্টা করেছি,আশা রাখতে পারেন সে এখন সেইভ আছে,বাকি যদি উপর ওয়ালার অন্য কোনো হুকুম থাকেন সেটা উনিই ভালো জানেন,আচ্ছা আপনারা এখন টেনশন করিয়েন না রুগী সুস্থ হয়ে যাবে,রুগীর এখনো জ্ঞান ফিরেনি,জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে,তারপর আপনারা রুগীর সাথে দেখে করতে পারবেন....

এটা বলে ডাক্তার চলে যায়,


এদিকে আকাশের আম্মুর তো রুহু বের হয়ে যাবে যাবে অবস্থা,তার সোনার টুকরা ছেলেটার কিছু হলে তিনিও বাঁচবেন না...


একদিন পেরিয়ে দুই দিনের মাথায় আকাশের জ্ঞান ফিরে আসে,

 

আকাশের জ্ঞান ফিরার পর সে হেনাকে খুজতে থাকে,

নার্স,একজন কেবিন থেকে বের হয়ে এসে আপনাদের মধ্যে হেনা কে..?


--আকাশের আম্মু,আমাদের মধ্যে তো হেনা নামের কেউ নাই...

নার্স,পেসেন্ট হেনা নাম বলে বলে ডাকতেছে...


--আকাশের আম্মু,আচ্ছা আমাকে যেতে দিন আমি দেখছি,

নার্স,আচ্ছা আপনি ভিতরে আসুন...


--আকাশের আম্মু,কেবিনের ভিতরে ঢুকে আকাশের মাথার কাছে গিয়ে বসে,আকাশ ওর আম্মুকে দেখতে পেয়ে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে কান্না করে দেয়,আম্মু আমার হেনা সুইসাইড করেছে,মেয়েটা আমায় খুব ভালোবাসতো,আমিও ওকে খুব ভালোবাসতাম,কিন্তু মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়,তাই আমি ওর থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম,মেয়েটা সেটা মেনে নিতে পারেনি তাই সে সুইসাইড করেছে,আমার ওকে চাই...?


--আকাশের,আম্মুর তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না,তবে উনি কিছুটা ক্লিয়ার যে ছেলে পাগলামো টা করেছে হেনার জন্য...


আকাশ,আম্মু আমার হেনাকে চাই?ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও?


--আকাশের আম্মু,আচ্ছা বাবা তুই সুস্থ হয়ে নে,তারপর আমরা সবাই মিলে হেনাদের বাসায় যাবো,আচ্ছা আমি খোজ লাগাচ্ছি হেনার....


আকাশকে আরো তিনদিন হসপিটালে রাখা হয়,মোট পাঁচদিন পর হসপিটাল থেকে আকাশকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়,


আকাশ, ধিরে ধিরে পাগল হয়ে যাচ্ছে সর্বক্ষন খালি হেনার নাম মুখে,যে ওর হেনাকে চাই...


--আকাশের আম্মু,খবর লাগিয়েছিলো ড্রাইভারকে দিয়ে,

ড্রাইভার খোজ চালিয়ে দেখে আসলেই মেয়েটা সুইসাইড করেছে...


--আকাশের আম্মু,তো হতাশ হয়ে যায়,এখন ছেলেকে কি জওয়াব দিবে,

ছেলে তো হেনা করে করে নিজকে শেষ করে দিচ্ছে,খাওয়া দাওয়া করছে না কিচ্ছুই করছে না,ওর এক কথা হেনাকে চাই...


আকাশ হেনা হেনা করে করে পাগল হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু কেউ হেনাকে এনে দিচ্ছে না,আর এনে দিবেই কি বা করে হেনা তো মরে গেছে,সে যেই দুনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে সেই দুনিয়ায় একবার কেউ গেলে আর ফিরে আসতে পারে না,কিন্তু আকাশের মন তো মানছে না,ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে হেনা আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নাই..


আকাশ এখন মোটামুটি সুস্থ,সে গাড়িটা বের করে হেনার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,সে হেনার বাবা-মায়ের সাথে গিয়ে কথা বলবে,কিন্তু হেনার বাসায় গিয়ে দেখে সব কিছু তালা মারা,ঘরের মেইন দরজায় বড় একটা তালা ঝুলানো,সে পাশের একটা মানুষের কাছ থেকে জিগ্যেস করে উনারা কোথায় গিয়েছেন..?


--মানুষটা,উনার মেয়ে মারা যাওয়ার পরেরদিন এই এই শহর ছেড়ে উনারা অন্য কোথাও চলে যায়,


আকাশ,কিন্তু কেন..?


--উনাদের নাকি এই শহরে দম বন্ধ হয়ে আসছে,উনার মেয়ের জন্যই নাকি উনারা এই শহরে পোস্টিং হয়েছে,কিন্তু উনার মেয়েই যেহেতু নাই তাহলে উনারা এখানে থেকে কি করবেন,তাই উনারা অন্য কোথাও পোস্টিং নিয়ে চলে গেছে...


আকাশ,আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন উনারা কোথায় গেছেন...?

-- নাহ আমাদের তো বলে যায়নি কোথায় যাবে,তবে এই টুকু বলেছে উনারা এই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে....


আকাশের চোখ জোড়া আবার ভিজে যাবে মনে হচ্ছে,আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ,তার পরে আকাশ গাড়ি স্টার্ট করে বাসায় দিকে রওনা দেয়,


--আকাশের আম্মু একটা বারবার ফোন দিচ্ছে,উনারা তো পাগল হয়ে গিয়েছে ছেলেটা গাড়ি নিয়ে কোথায় চলে গেলো,এমনিতে শরীর ভালো না আবার যদি কোন দূর্ঘটনা হয়,আল্লাহ তুমি রক্ষা করো আমার ছেলেটাকে..


আকাশের,ফোন বেজেই চলেছে কিন্তু সে ইচ্ছা করে ফোন পিক করছে না,কারন তার কিছুই ভালো লাগছে না এখন, তার একা কিছু সময় চাই,

আকাশের ভিতরটা যেনো ভেঙ্গে চুরে চুরমার হয়ে গেছে,হটাৎ আকাশের আরুর কথা মনে পড়ে,আল্লাহ এতদিন ওর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম,

ফোনটা হাতে নিয়ে আরুকে ফোন দেয়,ফোন বারবার সুইচ অফ আসছে..


আকাশ,গাড়ি ঘুরিয়ে আরুর বাসার দিকে রওনা দেয়,

আরুর বাসায় গিয়েও দেখে সেইম অবস্থা,আরুর বাসায় ও তালা ঝুলানো,আসেপাশের মানুষ থেকে জিগ্যেস করলে তারা বলে তারা নাকি কিচ্ছুই জানে না,তারা কোথায় গিয়েছে ঘর তালা মেরে,আকাশের যেন এখন পুরোপুরি ভাবে দুনিয়াদারী অন্ধকার হয়ে গেছে,

এখন ওকে কে সামলাবে,হেনা ওকে ছেড়ে অন্য দুনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে,এদিকে আরুর ও কোন খোজ পাওয়া যাচ্ছে না,আকাশ অনেক বন্ধু বান্ধবের কাছে খোজ লাগায় আরুর ব্যাপারে কিন্তু কেউ নাকি কিচ্ছুই জানে না,সে নাকি বিগত তিনদিন ধরে ক্লাসে আসছে না...


আকাশ,মন খারাপ করে বাসায় চলে আসে,


--আকাশের আম্মু তো পাগল পাগল হয়ে গেছে,এই ছেলে কোথায় গিয়েছিলি..? আকাশকে দেখতে পেয়ে

আমাকে আর কত টেনশনে রাখবি বল..?


আকাশ,কোনো জওয়াব না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়,

রুমে গিয়ে নিরবে কান্না করতে থাকে হেনার সৃতি গুলো মনে করে করে,

কলিজা তুমি কেন আমায় ছেড়ে চলে গেলে,আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে তোমাকে ছাড়া থাকতে,সময়ে তোমার মূল্য দেইনি তাই বলে আজ এই ভাবে পস্তাতে হবে আমাকে..


--আকাশের আম্মু,বাহির থেকে খাওয়ার জন্য ডাকছে,কিন্তু সে বারন করে দিয়েছে খাবে না,আকাশের আম্মু অনেক করে রিকোয়েস্ট করে,কিন্তু সে খাবে না খাবেই না,আকাশের আম্মু হতাশ হয়ে ফিরে যায়,


আকাশ পুরোপুরি খাওয়া দাওয়া অফ করে দিয়েছে,

সব সময় হেনার কথা মনে করে করে নিরবে কান্না করে,নিজেকে সে সব সময় তার রুমের মধ্যেই বন্দী করে রাখে,বাহিরের আবহাওয়া যেনো তার কাছে বিষাক্ত মনে হয়,কারোর সাথেই ঠিক মত কথা বলে না,মা-বাবা বোন সবার সাথেই ধিরে ধিরে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে,ধরতে গেলে এক প্রকারের ম্যান্টালি সিক হয়ে গেছে,মুখের গোঁফ,দাঁড়ি সমস্ত কিছুই বড় হয়ে গিয়েছে,কিন্তু সে কিছুই কাটায় না,


এভাবে দেখতে দেখতে চারমাস পার হয়ে যায়,এতদিনে আকাশের অবস্থা ক্রমশ আরো খারাপ হয়ে যায়,সে পুরোপুরি পাগল হয়ে গিয়েছে,

সবার কথা সে ভুলেই গিয়েছে,এক কথায় তার খালি হেনার কথা মনে আছে,বাকি মা-বাবাকেও ঠিক মত চিনতে পারে না সে..

কলেজ তো সে বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছে..


একদিন রাতের বেলায় কান্না করতে করতে ফ্লোরের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে,

সকাল বেলা কারোর স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গে,সে অনুভব করে কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে তার উষ্ণ ঠোঁট জোড়া দিয়ে চুমু খাচ্ছে,আর নরম সুরে বলছে এই আকাশ আর কত ঘুমাবে?

আকাশ মিটমিট করে চোখ খুলে দেখে হেনা,আকাশ লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে পরে,কলিজা তুমি এসে গেছো....?

আমি জানতাম তুমি আসবে,আমার কলিজা আমায় রেখে কখনো মরতে পারে না,আকাশ দুইহাত দিয়ে হেনাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে...


হেনা,কলিজা কি হাল করেছো তুমি নিজের?

আমি তোমায় রেখে কি ভাবে মরতে পারি বলো...

আমি জানি তুমি আমায় খুব ভালোবাসো,আমি যদি মরে যাই তাহলে যে আমার কলিজাটাও ভালো থাকবে না....


এমন সময় আকাশের আম্মু আকাশের রুমে আসে,


আকাশ,ওর আম্মুকে দেখে আম্মু হেনা ফিরে এসেছে আমার কাছে..

-আকাশের আম্মু,হেনাকে দেখে কুঁকড়ে কান্না করে দেয়.....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ

(পর্ব_১৪)


--আকাশ একদিন রাতের বেলায় কান্না করতে করতে ফ্লোরের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে,

সকাল বেলা কারোর স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গে,সে অনুভব করে কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে তার উষ্ণ ঠোঁট জোড়া দিয়ে চুমু খাচ্ছে,আর নরম সুরে বলছে এই আকাশ আর কত ঘুমাবে?


আকাশ মিটমিট করে চোখ খুলে দেখে হেনা,আকাশ লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে পরে,কলিজা তুমি এসে গেছো....?

আমি জানতাম তুমি আসবে,আমার কলিজা আমায় রেখে কখনো মরতে পারে না,আকাশ দুইহাত দিয়ে হেনাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে...


হেনা,কলিজা কি হাল করেছো তুমি নিজের?

আমি তোমায় রেখে কি ভাবে মরতে পারি বলো...

আমি জানি তুমি আমায় খুব ভালোবাসো,আমি যদি মরে যাই তাহলে যে আমার কলিজাটাও ভালো থাকবে না....


এমন সময় আকাশের আম্মু আকাশের রুমে আসে,


আকাশ,ওর আম্মুকে দেখে আম্মু হেনা ফিরে এসেছে আমার কাছে..

-আকাশের আম্মু,হেনাকে দেখে কুঁকড়ে কান্না করে দেয়...

কারন আকাশ একটা বালিশকে আঁকড়ে ধরে আছে নিজের শরীরের সাথে,আর বালিশের সাথে নিজে নিজেই পাগলের মত বকবক করছে,সে যেটাকে হেনা বলে দাবি করছে সেটা হেনা না,সেটা একটা বালিশ... 


আকাশ,পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে,সে উঠতে বসতে হেনাকে দেখতে পায়,ঘরের দেওয়ালের সমস্ত জায়গায় হেনার নাম লিখে ভরে ফেলেছে,আকাশ আজ ছয়মাস ঘর থেকে বের হয় না,খাওয়া দাওয়াও ঠিক মত করে না,ওর আম্মু ওকে অনেক কষ্টে খাবার খাওয়ায় যে খাবার খেলে হেনাকে এনে দিবে...


--আকাশের আম্মু,বাবা আর কত এভাবে পাগলামি করবি বল?

এখানে হেনা নাই,তুই যাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছিস সেটা একটা বালিশ...


আকাশ,এই আম্মু তুমি বেশি জানো,আমি বলেছি না এটা আমার হেনা,আর তাও সে আমার সামনে বসে আছে...


--আকাশের আম্মু,আচ্ছা যা ঠিক আছে এটা তোর হেনা,বাবা এবার চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়..


আকাশ,নাহ আমি ঘুমাবো না,আমি সারারাত হেনার সাথে গল্প করবো,


--আকাশের আম্মু,আকাশ এখন কিন্তু ভালো হবে না,আমি কিন্তু হেনাকে চলে যেতে বলবো,


আকাশ,নাহ প্লিজ আম্মু এটা করবে না,আমি ঘুম যাচ্ছি,আকাশ বালিশটাকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে পড়ে,আর অন্যদিকে আকাশের আম্মু চোখ দিয়ে পানি ঝরাতে ঝরাতে রুম থেকে বের হয়,তিনার কত সুন্দর সুস্থ সবল ছেলেটা কি হয়ে গেলো,ছেলের এই অবস্থা যেনো তার কলিজাটা একদম ছিদ্র করে দিচ্ছে,তিনি রুমে গিয়ে আওয়াজ করে কান্না করে দেয়,আকাশের আব্বুও পাশে বসা,তিনিও কান্না করছেন,


--এই আকাশের আব্বু আমাদের ছেলে কি আর কখনো ঠিক হবে না?আমার ছেলের এই অবস্থা দেখে আমার কলিজা যে সইছে না,

প্লিজ তুমি আমার ছেলেকে ঠিক করে দাও,আমার ছেলেকে আমি আবার আগের রূপে দেখতে চাই!


--আকাশের বাবা,আমারো যে ক্ষমতা নেই কিছু করার,সমস্ত কিছুই যে উপর ওয়ালার হাতে,তবে আমি বান্দা হয়ে একটা চেষ্টা করতে পারি,কাল আমি সেটা করবো...


--আমি জানি না তুমি কি করবে,কিন্তু আমার ছেলে সুস্থ হওয়া চাই,

পরেরদিন সাকল বেলা,আকাশের আব্বু ওকে সেলুনের দোকানে নিয়ে যায়,ওর দাঁড়ি,গোঁফ গুলো কাটানোর জন্য,আকাশের দাঁড়ি,গোঁফ না কাটার কারনে ইয়া বড় বড় হয়ে গেছে,সে তো কোন মতেই রুম থেকে বের হবে না,তাও আকাশের আব্বু ওকে ফুঁসিয়ে ফাঁসিয়ে নিয়ে যায়,যে হেনাকে এনে দিবে বলে...


--দাঁড়ি গোঁফ কাটার পর আকাশ নিজেকেই চিনতে পারছে না,

সে কেমন ছিলো আর এখন তাকে কত স্মার্ট লাগছে,সে নিজের মুখমণ্ডল বারবার হাত বুলিয়ে দেখছে,


দাঁড়ি,গোঁফ কাটার পর আকাশের বাবা আকাশকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়,ঘুরার কারনে যদি তার মাইন্ড ফ্রেশ হয়,আকাশকে নিয়ে একটা পার্কে যায়,যেখানে আকাশ ছোটকালে আসার জন্য খুব বায়না করতো,


--বাবা তোর মনে আছে,তুই ছোট কালে এখানে আসার জন্য কত বায়না করতি?


আকাশ,হা বাবা,আর আমি জানি তুমি আমায় এখানে কেন নিয়ে এসেছো,কারন যাতে আমার মাইন্ড ফ্রেশ হয়,শুনো আব্বু তার কোনো প্রয়োজন নেই,আমি ঠিক আছি,আমি নিজেই চাইতাম না দুনিয়ার রংমহল দেখি,হেনা চলে যাওয়ার পর ইচ্ছা করেই নিজেকে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী করে রেখেছি,কারন আমার হৈ -হল্লোড় সব হেনার মৃত্যুর সাথে কবরে দাফন হয়ে গিয়েছে,দুনিয়া যেনো আমার কাছে বিষের মত মনে হচ্ছিলো,তাই নিজেকে কষ্ট দিয়েছি এতদিন,আমার জন্যই সে এমনটা করেছে,আর আমিই কি ভাবে রং তামাশা করে বেড়াবো,তবে হা নিজেকে বন্দী রাখতে রাখতে একটা সময় সত্যিই আমার দেমাগে প্রেসার আসতে থাকে,সব জায়গায় হোনাকে দেখতে আরম্ভ করি,আমার হিতাহিত জ্ঞান বলতে কোনো কিছুই ছিলো না,কিন্তু আজ এতদিন পর যখন বাহিরের পরিবেশ দেখলাম,নিজের ভেসভোসা ছেড়ে অন্য রূপে দেখছি নিজেকে,এখন সত্যিই মনে হচ্ছে আমি কতবড় পাগলামো করেছি....


--বাবা যা হয়েছে ভুলে যা,আর প্লিজ একটু নরমাল হওয়ার চেষ্টা কর,তোকে আমরা আবার আগের মত দেখতে চাই,আর তুই জানিস তোর মা রোজ কান্না করে তোকে দেখে,কত রাত না ঘুমিয়ে চোখের পানি দিয়ে বিছানা ভিজিয়েছে সেটা একমাত্র আমি জানি...


আকাশ-নাহ বাবা এবার আর কষ্ট দিব না আম্মুকে,আর একফোঁটা চোখের পানিও পড়তে দিব না আম্মুর চোখ থেকে,আমি আবার আগের মত হয়ে যাবো,আর আমি কাল থেকে তোমার যে কোনো একটা অফিসে জয়েন হবো ভাবছি...


--বাবা,এতটা খুশি লাগছে যে তোকে বলে বুঝাতে পারবো না,তোর যেই অফিসে ইচ্ছা হয় জয়েন কর,কাজ করতে ইচ্ছা না করলে করবি না,দরকার হয় আমার যত অফিস-আদালত আছে সব গুলাতে একদিন করে করে ঘুরে ঘুরে দেখবি...


কথাবার্তা বলে বাপ ছেলে দুজনেই ঘরে চলে যায়,আকাশের আম্মু তো খুশিতে কান্না করে দেয়,যে তিনার ছেলে আবার আগের মত হয়ে ফিরে এসেছে,তিনি খুশিতে আকাশের গালে কপালে অনেকগুলো চুমু একে দেয়...


--বাসায় আজ আকাশের সমস্ত পছন্দের খাবার গুলো রান্না করা হয়,পরেরদিন সকাল বেলা সে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেয়,কারন আজ থেকে সে তার বাবার অফিসে জয়েন করবে,পরে নাস্তা করে রেডি হয়ে বাবা-মা দুজনের পায়ে ধরে সালাম করে,পরে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়,


সবাই ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশকে ওয়েলকাম করার জন্য,আকাশ অফিসে পৌঁছানার সাথে সাথেই সবাই তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে ওয়েলকাম জানায়,পরে আকাশকে তার কেবিন দেখিয়ে দেওয়া হয়,ম্যানাজার মোটামুটি আকাশকে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে দেয়,আকাশ একটা জিনিস লক্ষ্য করে অফিসের সবাই মোটামুটি মিশুক,নাহ এই অফিসেই থেকে যাবো,অন্য অফিসে আর যাবো না,সারাদিন অফিসেই কাঁটায়,প্রথমদিন তাই কাজের আগা মাথা বুঝে আসছে না,তাও যতটুকু পারে করে আজকের মত বাসায় চলে আসে,


--কিরে বাবা অফিস কেমন লাগলো?

--আকাশ,আম্মু অনেক ভালো লেগেছে,আমি এই অফিসেই থেকে যাবো,অফিসের সবাই মোটামুটি মিশুক.... 


--আচ্ছা,তোর যা ভালো লাগে কর..


আকাশ,রীতিমতো প্রতিদিন অফিসে সময় দিতে থাকে,এতদিন অফিসের বস ছিলো না,তাই কোনো এসিস্ট্যান্ট ও ছিলো না,আকাশ অফিসে যাওয়ার পর থেকে নুসরাত নামের একটা মেয়েকে আকাশের এসিস্ট্যান্ট নিযুক্ত করা হয়,মেয়েটা বেশ ভদ্র,আচার ব্যবহার ও সুন্দর,নুসরাত এক দিনেই আকাশের সাথে ভাব জমিয়ে ফেলে,আকাশ ও আর দ্বিমত করেনি,কারন সে তো আকাশের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট,ওকে এড়িয়ে চললে কি ভাবে কাজ হবে...


--অফিস শেষ করে বিকাল বেলা বাসার দিকে রওনা হয় আকাশ,জ্যামে আটকে আছে গাড়ি,এমন সময় আকাশের নজর পরে একটা গাড়ির মধ্যে,যেখানে পিছনের সিটে আরুর মত কেউ একজন বসে আছে,আকাশ প্রথমে থতমত খেয়ে যায়,এটা কি আরু না অন্য কেউ,আকাশ একটু ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে হা এটা তো আরু এই,আকাশ গাড়ি থেকে নেমে গাড়িটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,এমন সময় জ্যাম ছেড়ে দেয়,আর গাড়িটা টান দিয়ে চলে যায়,

আকাশ,তাড়াতাড়ি করে নিজের গাড়িতে ফিরে আসে,কিন্তু তত সময়ে সে চলে গেছে,আকাশ পরে নিজের বাড়িতে ফিরে আসে,


আকাশের কোনো মতেই হিসেব মিলছে না,হুট করে আজ থেকে ছয়মাস আগে আরু কোথায় চলে গেছে,কোনো যোগাযোগ নাই কিচ্ছু নাই,মেয়েটা আমার সাথে সমস্ত যোগাযোগ অফ কেন করে দিলো,হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,ধুর আজ ওর সাথে কথা বলতে পারলেই সবটা ক্লিয়ার হয়ে যেতো,তবে এত কিছুর ভিড়ে সে হেনাকে ভুলতে পারে নি,যত যাই হোক মনের কোনো এক কোণে হেনার জন্য জাগয়া রয়ে গেছে,একাকিত্ব সময় গুলো হেনার সৃতি তাকে কাঁদায়,


বাসার এসে দেখে ওর আব্বু-আম্মু ওর বিয়ের আলাপ করছে,যে এবার ছেলেটাকে বিয়ে করিয়ে দেওয়া উচিৎ,ছেলেটা আর কত একা থাকবে,তার চেয়ে বড় কথা আমাদের ও তো নায় নাতনির মুখ দেখতে ইচ্ছে হয়...


--আকাশের আব্বু,আকাশ এদিকে আয়?

আকাশ,হা আব্বু বলো..?

--আমরা চাচ্ছি এবার ঘরে বউমা আনবো?

আকাশ,বাবা এই বিষয় নিয়ে আমার কোনো মতামত নাই,তোমাদের যা ভালো লাগে করো,আমি তোমাদের মতের উপরে যাবো না,তবে আমাকে আরো কিছুটা সময় দিতে হবে.?


--আচ্ছা সময় নে,কিন্তু আমরা মেয়ে ঠিক করে রাখছি এখন,তোর যখন সময় হবে বলবি,তখন এই তোর বিয়ে করাবো....


আকাশ,নিজের রুমে চলে যায়,আকাশের কোনো ইচ্ছায় নাই বিয়ে করার,কারন সে যাকে আপন করতে চায় সে তার থেকে আরো বেশি দূরে চলে যায়,আজ বিয়ে করে ঘরে বউ আনবে,কিন্তু পরে যখন তার উপরে মন বসবে তখন সেও দূরে সরে যাবে,এসব নিয়ে ভাবছে এমন সময় রফিক ভাই ফোন করে বলে স্যার কালকে চট্টগ্রামে মিটিংয়ে যেতে হবে,একটু আগে যদি অফিসে আসতেন আপনি..?

রফিক হচ্ছে অফিসের ম্যানাজার...


আকাশ,আচ্ছা সমস্যা নেই,আমি আগেই চলে আসবো..


--স্যার একদিনে হয়তো আশা যাবে না,আপনি একদিনের প্লান করে বাসা থেকে আসবেন প্লিজ..?


আকাশ,ওকেহ,বলে ফোন রেখে দেয়,পরেরদিন তাড়াতাড়ি করে উঠে নাস্তা করে নেয়,আর ওর আব্বুকে বলে আজ চট্টগ্রাম যেতে হবে অফিসের মিটিংয়ের জন্য,আজ হয়তো বাড়ি ফিরবো না,বাড়ি ফিরতে হয়তো কাল হবে..


--আচ্ছা সমস্যা নেই,সাবধানে যেও...


আকাশ,সাথে করে একসুট কাপড় ব্যাগে করে নিয়ে অফিসের জন্য রওনা দেয়,১০ টার ফ্লাইটে তারা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে,আকাশের সাথে যাবে নুসরাত,আকাশ অফিসে এসে ফাইল গুলো একবার দেখে নেয়,তারপর যাত্রা করে চট্টগ্রামপর উদ্দেশ্যে,২ টায় মিটিং,তারা বিমানে করে যাওয়ায় ১২ টার মধ্যেই পৌঁছে যায়,

হোটেল আগে থেকেই বুক করা আছে,তাই তারা সোজা এসে হোটেলে উঠে,এই হোটেলেই মিটিং হবে,পরে তারা কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে দুইটা বাজে মিটিং করে,ওদের সাথে ডিল কনফার্ম, 

পরে চারটায় মিটিং শেষ হয়...


এরপর কি করবে,হোটেল বসে বসে বোরিং লাগছে,এই নুসরাত চলো সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে আসি,


--নুসরাত,স্যার চলেন,আমারো অনেক দিনের ইচ্ছা সমুদ্র সৈকত দেখবো,পরে দুজনে মিলে সমু্দ্র সৈকত দেখতে বের হয়,


নুসরাত তো সমুদ্র দেখতে পেয়ে সে পানিতে নেমে পড়ে,সে তো মহাখুশি,অন্যদিকে আকাশ চুপচাপ একটা পাথরের উপরে বসে আছে,আর সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছে,এমন সময় পাশে অনেক চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসে,আকাশ লক্ষ্য করে অনেক গুলো মানুষ জড়ো হয়ে হৈ-হুল্লোড় করছে,আকাশ ও দৌড়ে যায় কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য,একজন থেকে জিগ্যেস করলে যে ভাই কি হয়েছে...?


সে বলে ভাই মাইয়া পুয়া ওগ্গো মাথা ঘুরিয়েরে পড়ি গেইয়ি,চিটাগাং এর ভাষায়,মানে মেয়ে একটা মাথা ঘুরে পড়ে গেছে,


আকাশ,মানুষজন ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় মেয়েটাকে দেখার জন্য,

সে যা দেখে তার তো কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে,আকাশের চোখ বড় বড় হয়ে যায়,বেহুশ হওয়া মেয়েটাকে দেখে,সে দেখতে পায় হেনা বেহুশ হয়ে মাটিতে....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_১৫)


--আকাশ,লক্ষ্য করে অনেকগুলো মানুষ জড়ো হয়ে হৈ-হুল্লোড় করছে,সেও দৌড়ে যায় কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য,একজন থেকে জিগ্যস করলে যে ভাই কি হয়েছে..?


--সে বলে ভাই মাইয়া পুয়া ওগ্গো মাথা ঘুরিয়েরে পড়ি গেইয়ি,চিটাগাং এর ভাষায়,মানে মেয়ে একটা মাথা ঘুরো পড়ে গেছে,


আকাশ,মানুষজন ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় মেয়েটাকে দেখার জন্য,সে যা দেখে তার তো কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে,আকাশের চোখ বড় বড় হয়ে যায় বেহুশ হওয়া মেয়েটাকে দেখে,সে দেখতে পায় হেনা বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে আছে,আকাশের তো মাথায় এই কাজ করছে না,হেনা জীবিত হলো কি করে,সে তো মারা গিয়েছে,ওর লাশকে আমি আকাশ ঝাপটে ধরে কান্না করেছি,ইম্পসিবল মরা মানুষ জীবিত হয় কি করে,নাহ আমার কি কোথায় ভুল হচ্ছে,সে নিজেকে চিমটি দিয়ে দেখে,নাহ সে ব্যথা অনুভব করছে,তার মানে কি হেনা জীবিত,তাও আবার আমার চোখের সামনে,


--সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখছে,কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না...

আকাশ,এই ভাই আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন,প্লিজ আমার সাথে কেউ একটু হেল্প করুন,আমি মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো..


--একজন বলে উঠে ভাই আপনি কি মেয়েটাকে চিনেন ?

আপনার রিলেটিভ এমন কিছু হয় নাকি...?


আকাশ,বেশি কিছু বলবো না,শুধু এটাই বলবো ওর সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক,এবার বুঝে নেন ওকে আমি চিনি কি চিনি না...


আকাশ,হেনাকে কোলে করে তুলে নিয়ে একটা সিএনজি দাঁড় করায়,এই ভাই আসেপাশে কোনো হাসপিটাল থাকলে প্লিজ ইমারজেন্সী আমাকে নিয়ে চলুন,


--ড্রাইভার চিটাগং সাউদান মেডিকেল কলেজের সামনে দাঁড় করায় গাড়ি,

আকাশ,ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে হেনাকে কোলে করে নিয়ে হসপিটালের ভিতরে ঢুকে,আকাশ নার্স একজনকে দেখতে পেয়ে এই যে সিস্টার প্লিজ একটু দেখুন তো ওর কি হয়েছে?


--নার্স, ওয়ার্ডবয় একজনকে ডেকে হেনাকে কেবিনে শিফট করায়,

আকাশ,পাশেই একটা চেয়ারে বসে আছে,একটু পর নার্সটা কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে,আপনি প্লিজ চিন্তা করবেন না,উনার কিছু হয়নি,যাস্ট মাথা ঘুরে পড়ে বেহুশ হয়ে গিয়েছে,অনেকদিন ধরে হয়তো খাওয়া দাওয়া প্লাস ঘুম কোনোটাই উনি ঠিক মতন করেন না,তাই শরীর দূর্বল হয়ে আছে,সেই জন্য মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে গেছেন..


ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা উনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি ৬ ঘন্টার জন্য,৬ ঘন্টা হলেই উনার জ্ঞান ফিরে আসবে,আপনি একদম চিন্তা করবেন না,আর আপনি চাইলে কেবিনে যেতে পারেন,

তারপর নার্স চলে যায়...


আকাশ,কেবিনের বাহিরে চেয়ার দখল করে বসে আছে,ভাবছি কেবিনের ভিতরে যাবো,অনেকটা সময় তো বাহিরে বসে রইলাম,এবার গিয়ে মেয়েটাকে এক নজর দেখে আসি,কিন্তু এমন সময় ফোনটা বেজে উঠে,ফোনটা হাতে নিতেই মাথার টনক নড়ে উঠলো,নুসরাতের ফোন,ওহহহ শিট ম্যান মেয়েটার কথা তো একদম ভুলেই গেছি,মেয়েটাকে যে একা ফেলে রেখে চলে এসেছি,সেটা আমার মাথায় এই ছিলো না,


--নুসরাত,স্যার আপনি কোথায় কান্নার সুরে..?

আপনি আমায় একা ফেলে রেখে কোথায় চলে গেছেন,স্যার প্লিজ আমার খুব ভয় করছে,প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি আসুন..


আকাশ,বুঝতে পেরেছে মেয়েটাকে একা ফেলে রেখে চলে এসেছে,তাই সে ভয়ে কান্না করে দিয়েছে,এই তুমি এখন কোথায়..?


নুসরাত,স্যার রুম আটকে হোটেলের ভিতরে বসে আছি,প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি আসুন,আমার খুব ভয় করছে স্যার,কখন কে আমার সাথে কি করে বসে...


আকাশ,আরে পাগলী মেয়ে তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন,তোমার কেউ কিচ্ছু করবে না,আমি আর অল্প সময়ের মধ্যেই চলে আসবো...


নুসরাত,না স্যার প্লিজ আপনি এখনি আসুন...


আকাশ,প্লিজ এমন করো না,আমি কিছু সময়ের মধ্যেই চলে আসবো,খুব দরকারী একটা কাজে আঁটকে পড়েছি...


নুসরাত,আচ্ছা স্যার আমি দরজা লক করে বসে আছি,আপনি আসলেই খুলবো,তাড়াতাড়ি চলে আসবেন কিন্তু প্লিজ স্যার?


আকাশ,আচ্ছা,তারপর ফোন কেটে দেয়,রাত ১১ টা বাজে হেনার জ্ঞান ফিরে আসার সময় হয়েছে,এতটা সময় সে হেনার পাশেই বসে ছিলো,এমন সময় আকাশের আম্মু ফোন দেয়,আকাশ কথা বলার জন্য কেবিন থেকে বের হয়ে হসপিটালের এক কোনায় চলে যায়...


--আকাশের আম্মু,বাবা কেমন কাটলো তোর দিন..?

আকাশ,আম্মু ভালো খারাপ মিলিয়ে,আর একটা গুড নিউজ আছে সেটা পরে বলবো,এখন একটু তাড়াহুড়োয় আছি,পরে কথা বলবো,নিজের খেয়াল রেখো বলে ফোনটা কেটে দেয়,মেয়েটার হয়তো জ্ঞান ফিরে এসেছে এত সময়ে,নাহ কেবিনে যাওয়া দরকার,আকাশ কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে হেনা নাই,আকাশ পুরো কেবিন খোজ করে কিন্তু হেনাকে সে কোথাও দেখতে পায় না,


আকাশের তো চোখের পানি টলমল করছে,একবার হেনাকে হারিয়েছি নিজের দোষে,এবার ও কি ওকে হারিয়ে ফেললাম,আকাশ হটাৎ লক্ষ্য করে হেনা বেডে যেখানে শুয়ে ছিলো সেখানে একটা সাদা কাগজ,সে কাগজটা হাতে নিয়ে ভাজ খুলে দেখে কিছু লিখা আছে,সে লেখাটা পড়তে আরম্ভ করে, কলিজা প্লিজ আমায় মাফ করে দাও,আমি তোমার বিশ্বাস রাখতে পারি নি,আর আমি চলে যাচ্ছি,আমার জ্ঞান অনেক আগেই ফিরে এসেছে,সুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম যে তুমি কখন কেবিন থেকে বের হবে,আর আমি সেই সুযোগে চলে যাবো,প্লিজ আমার খোঁজ করো না,আমি ধোঁকাবাজ একটা মেয়ে,তোমার জীবনে আমার থেকেও হাজারগুন ভালো মেয়ে আসবে,

ভালো থেকো...


আর কিছু লিখা নাই,


আকাশ ধাপাসসস করে মাটিতে বসে পরে,তার এখন কি করনীয় সেটাই মাথায় কাজ করছে না,হেনা আমার থেকে দূরে চলে যেতে কেন চাইছে,এমনটাই যদি হতো তাহলে শুরুতে সে আমায় ওর ভালোবাসায় কাবু কেন করলো,

ওর যদি দূরে সরে যাওয়ার এই নিয়ত থাকতো তাহলে আমায় ভালোবেসেছিলো কেন,হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,তার উপরে আরুর কোনো খোঁজ নাই আজ ছয়মাসের উপরে,সে আমার এত ভালো বন্ধু ছিলো,কিন্তু হটাৎ কি এমন হলো যে সে আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছে,নাহ ঘটনা তো কিছু একটা আছে,এর ভিতরের রহস্য কি সেটা আমার বের করতে হবে,আসল মারপেঁচটা কোথায় সেটা আমি বের করেই ছাড়বো...


তারপর

আকাশ,হোটেলে ফিরে আসে,রুমের দরজায় বাড়ি দিতেই নুসরাত দরজা খুলে দেয়,কারন আকাশ আসার সময় ফোন করে দিয়েছে সে আসছে,


নুসরাতের চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে আছে,আকাশ দেখেই বুঝতে পারে যে মেয়েটা অনেকটা সময় ধরে কান্না করেছে,তাই তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ফুলে,নুসরাত আকাশকে দেখতে পেয়ে বিছানা থেকে নেমে আসে,


আকাশ,এই মেয়ে কি হাল করেছো চেহারার?


নুসরাত,খপপপ করে আকাশের কলার ধরে ফেলে,এই কুত্তা,বিলাই,খাটাশ,উল্লুক তুই আমাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলি হা..?

তুই জানিস আমার কত ভয় লাগছিলো,কেউ যদি আমার সাথে কিছু করে বসতো বলে আবার কান্না শুরু


আকাশ,তো থথথ.... আল্লাহ এই মেয়ে করছে টা কি,একে তো কলার ধরেছে,দুই আবার তুই তুকারিও করছে,ওর মাথা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে,কাকে কি বলছে ওর মধ্যে কোনো হিতাহিত জ্ঞান নাই...

এই প্লিজ প্লিজ কান্না থামাও,সত্যি অনেক জরুরী একটা কাজে গিয়েছিলাম


নুসরাত,এই কুত্তা তুই এমন কি কাজে গিয়েছিলি যে আমায় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পাড়লি না,একটা অবলা মেয়েকে এভাবে রেখে চলে গেছিস কুত্তা কোথাকার...


আকাশ,প্লিজ নুসরাত তুমি শান্ত হও,আমি জানি তোমার মাথা ঠিক নেই,


নুসরাত,এই তোর মাথা ঠিকের গুষ্টি মারি,তুই আমাকে এত সময় কাঁদিয়েছিস,এখন তোকে আমি শাস্তি দিব,তুই মাথা নিচু কর..?


আকাশ নিশ্চুপ। 


নুসরাত,এই উল্লুক তোকে মাথা নিচু করতে বলেছি...?


আকাশ,এই এই রেগে যাচ্ছো কেন,করছি করছি..

নুসরাত,আকাশ মাথা নিচু করলে ওর চুল গুলা মুঠো করে ধরে টানতে থাকে,

আকাশ,তো ব্যথায় শেষ,প্লিজ নুসরাত ছেড়ে দাও খুব লাগছে,


নুসরাত,আকাশকে ছেড়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে,স্যার প্লিজ আমায় আর কখনো একা রেখে যাবেন না,আমার একা একা খুব ভয় করে,নুসরাত নাক টেনে টেনে কান্না করতেছে...


আকাশ,কি বলবে কিছুই মাথায় কাজ করছে না,মেয়েটার হিতাহিত জ্ঞান নাই,তাই সে আমায় জড়িয়ে ধরেছে,সে হয়তো জানেই না সে কেমন ধারা আচরণ করছে,আর আমি যে তার অফিসের বস সেটা সে ভয়ের সাথে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছে,কিন্তু আকাশের চরম লেভেলের হাসি পাচ্ছে নুসরাতের নাক টেনে কান্না করা দেখে,এই মেয়ে হয়েছে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো পরে আমি যাবো,আমি আসার সময় খাবার ওর্ডার করে দিয়ে এসেছে,এখন হয়তো খাবার দিয়ে যাবে,


নুসরাত,লক্ষ্যি মেয়ের মতন ফ্রেশ হতে চলে যায়,


--দুজনেই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নেয়,একই রুমে দুইটা বেডরুম,একটাতে নুসরাত আরেক টাতে আকাশ শুয়ে আছে,এতকিছুর ভিড়েও আকাশ কোনো ভাবে হেনাকে ভুলতে পারছে না,নাহ কিছু একটা করতে হবে,

হেনা হয়তো এই শহরেই থাকে,আকাশ সিদ্ধান্ত নেয় সে আরো কয়েকদিন চিটাগাং শহরে থাকবে,যে করেই হোক হেনাকে সে খুজে বের করবে,

কিন্তু কি করে খুজবে এত বড় শহর,তখনি তার মাথায় আসে হেনার আব্বুর কথা,হেনার আব্বু তো ওসি,তিনি একটা না একটা থানায় তো অবশ্যই পেশাগত আছে,আর হেনাকে যেহেতু এই শহরে দেখেছি,তার মানে ওর বাবাও এই শহরের যে কোনো একটা থানার ওসি...


আকাশ,রানাকে ফোন করে,এই রানা চিটাগাং শহরের যতগুলো থানা আছে,সব গুলো থানার অফিসার পদে যারা যারা আছে,তাদের ছবি সহ ডিটেইলস চাই..?


রানা,ওকে ভাই কাল সকালের মধ্যেই পেয়ে যাবেন!


আকাশ,আর কাল সকালে আমাদের যত পরিচিত মানুষ আছে চট্টগ্রামে সবাইকে একটা জায়গায় মিটাপ করতে বলবি আমার সাথে,জায়গার ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি,


রানা,আচ্ছা ভাই...


তারপর 

আকাশ,ফোন কেটে দেয়,সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার আগেই হোটেলের একটা বয় এসে খাবার দিয়ে যায় সাথে একটা ফাইল ও দিয়ে যায়,

আকাশ,ফ্রেশ হয়ে এসে ফাইলটা ঘাটতে আরম্ভ করে,ফাইলটা রানা পাঠিয়েছে লোক দিয়ে,আকাশ একটা একটা করে কাগজ আর ছবি ঘেটে ঘেটে দেখছে,কাগজের মধ্যে অফিসারদের সমস্ত তথ্য আছে,হুট করে হেনার আব্বুর কাগজটা সামনে চলে আসে,কাগজের উপরে হেনার আব্বুর ছবি,আকাশ একবার দেখেই চিনতে পেরে যায় যে এটা হেনার আব্বু,সকাল বেলা নুসরাতকে বলে তুমি থাকো আমি একটা কাজে যাচ্ছি,আর তোমার সাথে দুইটা মেয়ে সব সময় থাকবে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই,

নুসরাতকে রেখে সে বের হয়ে যায়....


আকাশ,সিএনজি নিয়ে অক্সিজেন চলে যায়,সেখানে রানার সমস্ত ছেলেপেলে অপেক্ষা করে আছে আকাশের সাথে মিটাপ করতে,আকাশ ওদের সাথে মিটাপ করে,তারপর সব কয়টাকে নিয়ে কাগজের ঠিকানা মত চলে যায়,আকাশ সবাইকে বাহিরে থাকতে বলে,সে একাই থানার ভিতরে ঢুকে,ভিতরে ঢুকেই দেখে হেনার আব্বু চেয়ারের উপরে বসে আছে,


হেনার আব্বু আকাশকে দেখতে পেয়ে থতমত খেয়ে যায়,কলিজার পানি যেনো সব শুখিয়ে গেছে ওসির,এখনি যেনো দম আটকে মারা যাবে,

আকাশ,কোনো কথা ছাড়াই ঠাসসসসসসস করে ওসির গালের মধ্যে থাপ্পড় লাগাই দেয়....


থানার সবাই তো থথথথথ হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে...

এই এলকায় ওসিকে ভয় পায় না এমন কেউ নাই,আর থানার লোকেরা তো বাঘের মত ভয় পায় ওসিকে,কারন এলকায় এসে অনেক গুন্ডা বদমাইশকে সে মেরে সোজা করে ফেলেছে,আর সেই ওসিকেই থাপ্পড় মারলো এই ছেলে,


আকাশ,এই ওসি হেনা কই তাড়াতাড়ি বল..?

 না হলে তোর লাশ বের হবে আজ এই থানা থেকে...


ওসি,সাথে সাথে ঝাপটি খেয়ে আকাশের পায়ে পড়ে যায়....

আকাশ ভাই আমাকে মাফ করে দেন...


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(র্ব_১৬)


--আকাশ,এই ওসি হেনা কই তাড়াতাড়ি বল?না হয় তোর লাশ বের হবে আজ এই থানা থেকে..


ওসি,ঝাপটি মেরে আকাশের পায়ে পড়ে যায়,আকাশ ভাই আমাকে মাফ করে দেন...


আকাশ,এই ওসি তুই মাফ চাচ্ছিস কেন?

তোর মাফ চাওয়ার কিছুই নাই,আমার শুধু হেনাকে চাই,না হয় তোর আজ কি হাল করবো তুই নিজেও ভেবে পাবি না...


ওসি,আকাশ ভাই প্লিজ আপনি শান্ত হোন,আমি হেনার কাছে নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে,থানার সবাই এখনো হা হয়ে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে,ওসি করছে টা কি সামান্য একটা ছেলের পায়ে ধরে বসে আছে,কে এই ছেলে কারোর মাথায় যেনো কোনো কিছু ঢুকছে না,


--ওসি আকাশকে নিয়ে ওর বাড়িতে যায়,

আকাশ,হেনা কই?

ওসি,ভাই ঐ রুমটাতে আছে,


আকাশ,কোনো কথা ছাড়াই রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে যায়,তারপর সে দরজা লক করে দেয়,আকাশের তো মাথা ভর্তি রাগ,সে আজ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর চাইবে....


হেনা,খাটের উপরে পা মেলে বসে আছে,সে আকাশকে দেখে তো থতমত খেয়ে যায়,এই এই তু তু তুমি?


আকাশ,হা আমি,কেন অন্য কারোর আশার কথা ছিলো নাকি?


হেনা,আকাশ কি সব বলছো উল্টো-পাল্টা?

আর তুমি এখানে কেন এসেছো,প্লিজ চলে যাও এখান থেকে,তোমার সাথে আমার সমস্ত সম্পর্ক বহু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে,তোমার চেহারাও আমি দেখতে চাই না প্লিজ চলে যাও এখান থেকে...


আকাশের তো মেজাজ গরম হয়ে যায়,সে গিয়ে হেনাকে ধাক্কা দিয়ে খাটের উপরে ফেলে দেয় আর গলা চিপে ধরে,এই মেয়ে তোর কথায় কি আমি এখান থেকে চলে যাবো নাকি?

অনেক কষ্ট দিয়েছিস তুই আমাকে,তোর সাথে হিসাব চুকানো বাকি এখনো আমার,আজ সমস্ত শোধ তুলবো আমি তোর থেকে,ছয়টামাস পুরো পাগল ছিলাম আমি,তোর চিন্তায় আমার রাতের ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গিয়েছে,তুই আমার সাথে এমন ধারা ছলনা করলি কি ভাবে,তার জওয়াব আজ তোকে দিতে হবে কুত্তার বাচ্চা,


--আকাশ হেনাকে ছেড়ে দিয়ে কোমর থেকে বেল্ট খুলতে আরম্ভ হয়ে,তোর শরীর থেকে আজ আমি হাড্ডি মাংস আলাদা করে ফেলবো..


হেনাতো ঐ অবস্থায় এই খাটের উপরে জড়োসড়ো হয়ে পড়ে আছে,চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে,কি করনীয় এখন তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না..


আকাশ,বেল্ট টা খুলে হাতে নিয়ে হেনাকে ইচ্ছে মত মারতে আরম্ভ করে,হেনা ব্যথার তাড়নায় মুখ চেপে কান্না করছে,আর আকাশের কাছে মিনতি করছে প্লিজ আকাশ আমায় ছেড়ে দাও,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,কিন্তু নাহ আকাশের ছাড়ার কোনো নাম গন্ধ নাই,সে আজ মানুষ থেকে পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে,সে হেনাকে বেল্ট দিয়ে মেরেই চলেছে..


বেল্টের বাড়ির চোটে হেনার শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে ফেটে রক্ত বের হচ্ছে,ঠোঁট তো কেটে রক্ত লাল হয়ে গিয়েছে একদম,হেনার বাবা -মা বাহির থেকে মিনতি করছি প্লিজ আকাশ ভাই আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দিন,সে মরে যাবে,


আকাশ,একটা পর্যায়ে সে নিজে কান্না করে দেয় হেনার অবস্থা দেখে,

বিশেষ করে ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে,আকাশ এটা দেখে চেঁচিয়ে কান্না করে দেয়,হাত থেকে বেলটা ফেলে দিয়ে হেনাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে,কলিজা তুই এটা কেন করলি,তুই কি জানিস না তুই ছাড়া যে আমার বিশ্বাস নেওয়া পর্যন্ত দায় হয়ে গিয়েছে,তোকে ছাড়া একটা নিশ্বাস নেওয়ার কথা পর্যন্ত চিন্তা করতে পারি না আমি,তোর যদি সত্যি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি কি ভাবে বেঁচে থাকতাম বল?

কি কারনে তুই আমাকে এতটা কষ্ট দিলি?


হেনাও কান্না করছে আকাশকে জড়িয়ে ধরে,কলিজা এমনটা করেছি বলে আজ তুমি জীবিত আছো,না হয় তোমাকে ও মেরে ফেলতো,তোমার ভালোর জন্যই আমি এমন একটা নাটক করে তোমার থেকে দূরে সরে গিয়েছি,কারন তোমার ক্ষতি হোক এটা আমি চাই না,দরকার হয় দূর থেকে ভালোবাসবো,তাও তোমার ক্ষতি হতে দেই কি করে বলো,


আকাশ,হেনা তুমি কি বলছো আমার তো কিছুই ঢুকছে না মাথায়,কিসের ক্ষতির কথা বলছো,আর আমাকে কে মেরে ফেলতো...?


হেনা,চুপ করে আছে....


আকাশ,প্লিজ হেনা বলো,এভাবে চুপ করে থেকো না,

কে আমায় মারতে চায়,যার জন্য তুমি আমার থেকে এতদূরে সে গিয়েছো?


হেনা,আকাশকে ছেড়ে দিয়ে শুনো তাহলে,তোমাকে শুরু থেকে সমস্তটা বলি,আরু তোমায় মেরে ফেলতে চায়!


আকাশের তো হুঁশ এই উড়ে যায় হেনার কথা শুনে,কি বলছো হেনা এটা কি করে সম্ভব,আর আরুই বা আমাকে কেন মারতে চাইবে...


হেনা,কারন তুমি জাফর ইকবালের নাম শুনেছো,জিনি বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যান ছিলো একটা সময়,যাকে তোমার বাবা টক্কর দিয়ে ১ম পজিশন দখল করেছে?


আকাশ,হা চিনি কিন্তু উনার সাথে আরুর সম্পর্ক কি?

আর জাফর ইকবাল তো মারা গিয়েছেন....


হেনা,আরু কে জানো?

আরু হচ্ছে জাফর ইকবাল সাহেবের মেয়ে,সে তোমার উপরে প্রতিশোধ নিতে চায়...


আকাশের তো চোখ বড় বড় হয়ে যায় হেনার কথা শুনে,

কিন্তু কেন?আমি ওর কি ক্ষতি করেছি?


হেনা,তুমি ক্ষতি করোনি,কিন্তু তোমার বাবা করেছে,জাফর ইকবাল সাহেব দীর্ঘ বহু বছর দেশের মধ্যে টপ বিজনেসম্যান এর তালিকায় ছিলো,যাকে তোমার বাবা হারিয়ে দিয়ে ১ম পজিশন দখল করে,এটা জাফর ইকবাল সাহেবের সহ্য হয়নি,তিনার থেকেও শীর্ষে কেউ পৌঁছে গেছে এটা তিনি মানতেই পারেন নি,যার কারনে তিনি ডিপ্রেশনে চলে যায়,পরে একটা সময় দেখা যায় তিনি অতিরিক্ত ডিপ্রেশনে যাওয়ার ফলে হার্ট এটাক করে মারা যায়,উনার বাসার সবাই জানতো উনার পজিশন অন্যকেউ দখল করার ফলে তিনি ডিপ্রেশনে চলে যায়,আর তার থেকে হার্ট এটাক করে,তাই তিনার বড় মেয়ে আরু শপথ করে যাদের কারনে উনার এই অবস্থা হয়েছে,তাদের কাউকে শান্তি দিবে না সে...


জাফর ইকবাল সাহেবের মৃত্যুর জন্য সবাই তোমার ফ্যামেলিকেই দায়ী করছিলো,তাই আরু কাজে নেমে পড়ে তোমাদের জীবন থেকে সুখ নামক বস্তুটাকে মুছে দিতে,আরু বহু আগে থেকেই সুযোগ খুঁজলিছো যে তোমাদের জীবন থেকে সুখ কি ভাবে কেড়ে নিবে,কিন্তু কোনো ভাবেই তার চিন্তাধারাকে বাস্তবায়ন করতে পারছিলো না,এমন সময় মুরগী নিজে গিয়ে ধরা দেয়,আর সেই মুরগী হচ্ছো তুমি,আরু যেই কলেজে পড়ে তুমি নিজেই সেই কলেজে গিয়ে ভর্তি হলে,তারপর কি আর ব্যছ আরু কাজে নেমে পড়লো তোমার পিছনে,সে চেয়েছিলো তোমাকে পটিয়ে তোমার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করবে,আর তোমার পরিবার থেকে সুখ কেঁড়ে নিবে,সে তোমাকে কাবু করার আগেই তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হয়ে যায়,এটা সে কোনো মতেই মানতে পারছিলো না,পরে সে লোক দিয়ে আমাকে জিম্মি করে,আর বলে আমি যদি তোমার জীবন থেকে দূরে সরে না যাই সে তোমাকে মেরে ফেলবে,এটা শুনে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম,আর যখন জানলাম সে জাফর ইকবাল সাহেবের মেয়ে,তারপর তো আমার ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো,তখন আমি তাকে বলেছি যে আমি তোমার জীবন থেকে সরে যাবো,কিন্তু সে তোমার আর তোমার পরিবারের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না,সে তো তোমার জীবন থেকে ভালোবাসা নামক সুখটা কেঁড়ে নিয়েছেই,তাহলে তার আর কি চাই,তবে তোমার আচার-ব্যবহার দেখে তোমার উপর থেকে তার ক্ষোভ টা কমে যায়,তাই সেও আমার সর্তে রাজি হয়ে যায়,


সে আমায় কথা দিয়েছিলো,যে তোমার কোনো ক্ষতি সে করবে না,

তাই তোমার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম,কিন্তু আমি জানি তুমি আমায় কখনো দূরে যেতে দিবে না,তাই মৃত্যুর নাটক করি বাবা-মার সাহায্য নিয়ে,যাতে করে তুমি আমায় একদম ভুলে যাও,কারন কলিজা তোমার কোনো ক্ষতি হোক সেটা আমি মরে গেলেও চাই না,তবে আরুও ভাবতে পারে নাই আমি এমন কিছু করে বসবো,

আরু ধরে নিয়েছে আমি মরে গিয়েছি,তাই সে তোমার থেকে দূরে সরে যায়,কারন প্রতিশোধ সে নিয়ে ফেলেছে তোমার জীবন থেকে আমাকে একদম চিরতরে সরিয়ে দিয়ে,


আকাশের তো কান্নায় চোখ গুলো ঘোলাটে হয়ে আসছে হেনার কথা শুনে,হেনা তুমি আমার ভালোর জন্য এতকিছু করলে,আর সেই আমিই তোমাকে না জেনে বেরেহেম ভাবে বেল্ট দিয়ে মারলাম,

কলিজা আমায় মাফ করে দাও..?


হেনা,এই আকাশ কি বলছো এই সব,প্লিজ এভাবে বলো না আমার খুব কষ্ট হয়,

আকাশ,সাথে সাথে হেনাকে ঝাপটে ধরে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়,আর বলে কলিজা এই দুনিয়ায় আমার থেকে তোকে কেউ আলাদা করতে পারবে না,তুই শুধু আমার আর কারোর না,তোর সমস্ত কিছুর উপরে শুধু আমার অধিকার আছে,আর কারোর কোনো অধিকার নাই,দুজনেই কান্না করছে,তবে হা এটা কোনো দুঃখের কান্না না,এটা শুখের কান্না...


--তবে ভিতরে ভিতরে আকাশের ক্ষোভ জন্ম নিয়ে নিয়েছে,সে আরুর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে,আরু তুই খালি ওয়েট কর,তুই আমার জীবনের সুন্দর দিনগুলো নষ্ট করেছিস,আমার জীবন থেকে সুখ কেঁড়ে নিতে চেয়েছিস,এবার আমি তোর রুহু টাই শরীর থেকে বের করে ফেলবো....


গল্প-ওসির_অহংকারী_মেয়ে

-লেখক_আকাশ_মাহমুদ 

(পর্ব_১৭_এবং_শেষ)


--আকাশের ভিতরে ক্ষোভ জন্ম নিয়ে নিয়েছে,সে আরুর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে,আরু তুই খালি ওয়েট কর,তুই আমার জীবনের সুন্দর দিন গুলো নষ্ট করেছিস,আমার জীবন থেকে সুখ কেঁড়ে নিতে চেয়েছিস,এবার আমি তোর রুহুটাই শরীর থেকে বের করে ফেলবো...


আকাশ,হেনাকে ছেড়ে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয়,চলো আমার সাথে,আজকের পর তোমাকে এক মিনিটের জন্যেও চোখ থেকে আড়াল করবো না..


--আকাশ,হেনাকে কোলে করে নিয়েই রুম থেকে বের হয়,হেনাও আকাশকে জড়িয়ে ধরে ওর কোলের মধ্যে ছোট বাচ্চার জড়োসড়ো হয়ে আছে,আকাশ রুম থেকে বের হতেই হেনার বাবা আকাশের পায়ে পড়ে যায়..


--ভাই আপনি আমার মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

ভাই আপনার পায়ে পড়ি,আমার মেয়েটার কিছু করবেন না,ওর কিছু হলে আমরা মরে যাবো...


আকাশ,এই ওসি একদম চুপ,আমার বউকে আমি নিয়ে যাচ্ছি,হেনাকে আমি আর এক সেকেন্ডের জন্যেও নিজের থেকে আড়াল করবো না,ওকে আমি বিয়ে করে সারাজীবন আমার বাসার বউ করে রেখে দিব,অনেক সাধনার পর ওকে আমি ফিরে পেয়েছি..


--হেনার আব্বু,আকাশের পা ছেড়ে দেয়,কারন তিনি কিছু একটা লক্ষ্য করেছে,আকাশ কথা বলার সময় তার চোখের মধ্যে পানি টলমল করছিলো,তিনি বুঝে গেছেন যে আকাশের মত ভালো আর কেউ বাসতে পারবে না হেনাকে,সে নিজের জীবন দিয়ে হলেও হেনাকে রক্ষা করবে,


আকাশ,হেনাকে কোলে করে নিয়েই ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে,

পরে সিএনজি একটা ঠিক করে সোজা হোটেলে চলে যায়,আর যাদের সাথে মিটাপ করেছিলো,তাদেরকে সে থানার সামনে থেকেই বিদায় করে দেয়,কারন হেনার বাসায় সবাইকে নিয়ে আসা সম্ভব না,হোটেলে পৌঁছেও হেনাকে সে কোল থেকে নামায় না,হোটেলের সবাই তো মুচকি মুচকি হাসছে আকাশের অবস্থা দেখে,কিন্তু আকাশের এতে কিচ্ছু আসে যায় না,সে তার বউকে কোলে উঠিয়েছে....


--হেনাকে কোলে করে নিয়ে নিজের রুমে যায়,নুসরাত তো আকাশকে দেখে অবাক,কারন তার কোলের মধ্যে মেয়েটা কে,


নুসরাত,স্যার মেয়েটা কে?

আকাশ,তোমাদের ভাবি...


নুসরাত,ভেবাচেকা খেয়ে যায় আকাশের কথা শুনে,স্যার ভাবি মানে?

আকাশ,ভাবি মানে ভাবি,আজ কালের মধ্যে আমার বিয়ে করবো


নুসরাতের তো মাথায় ঢুকতেছে না,আকাশ হুট করে কাকে ধরে নিয়ে এসে ভাবি বলছে


আকাশ,নুসরাত সব গুছিয়ে নাও আজকেই আমরা ফিরে যাচ্ছি,

তারপর আকাশ তিনটা টিকেট কনফার্ম করে,সেদিন এই আকাশ হেনাকে নিয়ে ওর শহরে ফিরে যায়,আকাশের বাসার সবাই তো অবাক হেনাকে দেখে,যদিও অবশ্য তারা আগে কখনো হেনাকে দেখে নি,কিন্তু আকাশ তাদেরকে ছবি দেখিয়েছিলো....


--আকাশের আম্মু,আকাশ হেনা না মরে গিয়েছে?

তাহলে সে ফিরে আসলো কি করে?


আকাশ,আম্মু তার পিছনে অনেক লম্বা ইতিহাস,এমন সময় আকাশের আব্বু আসে,

--কিসের ইতিহাস? 


আকাশ,তারপর সমস্ত কিছু খুলে বলে,আকাশের আব্বু তো শুনে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়,কিহহহ জাফর ইকবালের মেয়ে এমন কাজ করেছে,ওয়েট দ্বারা আমি খবর লাগাচ্ছি,ওদের বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দিব,


আকাশ,না বাবা প্লিজ তুমি এমন কিছুই করো না,যা করার আমি করছি,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে,আমার প্রতিশোধ আমিই নিব,আর তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করো!


আকাশের আব্বু,ওকেহ তোর যেমনটা ভালো লাগে সেটাই কর,

আকাশ,লোক লাগিয়ে দেয় জাফর ইকবাল সাহেবের বাড়ির খোজ নিতে,

একটু পর খবরি ফোন দিয়ে জাফর ইকবাল সাহেবের বাড়ির সমস্ত ডিটেইলস দেয়,আরু যেই বাসাটা দেখিয়েছিলো আগে,সেটা যদি হতো তাহলে সে মিনিটের মধ্যেই আরুক বের করে ফেলতো,কিন্তু আরু তো সেই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে....


আকাশ,হেনা তুমি থাকো আমি একটু আসছি,সে ল্যাম্বারঘিনিটা নিয়ে টান দিয়ে সোজা জাফর ইকবাল সাহেবের বাড়িতে চলে যায়,সেখানে গিয়ে দেখতে পায়,একটা বয়স্ক মহিলা বাড়িতে,এই যে আন্টি আরু কোথায়?


--বাবা তুমি কে আরুর বন্ধু হয়তো,ওহ তুমি কি ওকে দেখতে এসেছো?

কিন্তু সে তো এখানে নাই...


আকাশ,মানে? তাহলে সে কোথায়?


--কেন বাবা তুমি জানো না,সে যে আজ একমাস যাবৎ ব্লাড ক্যান্সার হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঙ্গা নড়ছে?


আকাশের তো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়,আন্টি কি বলছেন আপনি?

-- হা বাবা,আজ একমাস ধরে আমার মেয়েটা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা নড়ছে,জানিনা কার বদদোয়া লেগে এমন হয়েছে,কোন পাপের ফল সে ভোগ করছে,বাবা জানো আমার মেয়েটা ছাড়া আমার আর কেউ নাই,ছোট মেয়েটা থেকেও না থাকার মত,সে নিজকে সামলাতে কষ্ট হয়ে যায়,আমাকে সামলাবে কি করে,উনি বলতে বলতেই কান্না করে দেয়...


আকাশের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে,আরুর উপর থেকে সমস্ত রাগ মিনিটের মধ্যেই উধাও হয়ে যায়,আর সে বুঝতে পারে বয়স্ক মহিলাটাই আরুর আম্মু,আন্টি আপনি প্লিজ কান্না করবেন না,আরুর কিচ্ছু হবে না,যত ভালো চিকিৎসা লাগে আমি ওকে করাবো,ওর কিচ্ছুই হবে না,আপনার মেয়েকে আমি আপনার কোলে ফিরিয়ে দিব,


আকাশ,আরুর আম্মুর থেকে ঠিকানা নিয়ে হসপিটালে চলে যায়,সেখানে গিয়ে দেখে আরু একটা বেডের উপরে শুয়ে আছে,ওর মুখে মাক্স লাগানো,তার কেবিনের বাহিরে লিখা ভিতরে প্রবেশ নিষেধ,

তাও আকাশ ডাক্তার থেকে অনেক কষ্টে অনুমতি নিয়ে কেবিনের ভিতের যায়,আরুকে দেখে আকাশের বুক ফেটে কান্না আসছে,আকাশ আরুকে ডাক দেয়,এই আরু উঠ?

দেখ আমি এসে গেছি,দেখ তোর বন্ধু আকাশ এসে গেছে,কিন্তু আরুর কোনো সারা শব্দ নাই,এই আরু তুই কি আমার সাথে কথা বলবি না,সেই যে আমাকে ছেড়ে চলে এসেছিস,তারপর তোর আর কোনো খোঁজ এই পায়নি রে আমি...


আরু,আস্তে আস্তে চোখ মেলার চেষ্টা করছে,সে চোখ খুলে দেখে আকাশ তার সামনে বসে আছে,আরুর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে,আরু আকাশকে ঈশারায় বলে মুখ থেকে মাক্সটা খুলে দিতে,আকাশ তাই করে,মুখ থেকে মাক্সটা খুলে দেয়...


--আকাশ তুই এসেছিস?

আমি জানতাম তুই আসবি,কারন তোকে না দেখলে যে আমি মৃত্যুর স্বাদ কখনোই ভোগ করতে পারবো না,তোকে যে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি,বিধাতা যে তোর কাছে মাফ না চাইয়ে আমাকে মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করাবে না,আকাশ প্লিজ আমায় মাফ করে দিস রে?

তোর জীবন থেকে সুন্দর সময় গুলো আমি কেঁড়ে নিয়েছি,তোর ভালোবাসার মানুষটা যে আমার জন্য নিজেকে শেষ করে দিয়েছে,পাপ করতে করতে পাপের বোঝা ভাড়ি করে ফেলেছি আমি,বাবার মৃত্যুর জন্য তোদেরকে দায়ী করে তোর জীবন থেকে শান্তি নামক বস্তুটা কেঁড়ে নিয়েছি,

কিন্তু বিশ্বাস কর এখন উপলব্ধি করতে পারছি,যে কারোর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী থাকে না,উপর ওয়ালার যখন হুকুম থাকে তখনি তার মৃত্যু হয়,আমি জানি না তোর কাছে কি ভাবে মাফ চাইলে তুই আমাকে ক্ষমা করবি,কিন্তু বিশ্বাস কর তুই যদি আমায় মাফ না করিস,তাহলে উপরে গিয়েও শান্তি পাবো না


আকাশ,এই পাগলি মেয়ে এই সব কি বলছিস উল্টা-পাল্টা?

তোর উপরে আমার কোনো রাগ এই নাই,আমি সমস্ত কিছু ভুলে গিয়েছি,আর হেনা মরেনি,সে ফিরে এসেছে,সে তোর কথায় আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছে এমন একটা নাটক করে,আর এখন সমস্ত কথা বাদ,তোকে আগে সুস্থ হতে হবে...


আরু,আকাশ আমার হাতে যে আর সময় নাই রে,সুস্থ হয়েও কি করবো?


আকাশ,এই মেয়ে একদম চুপ,তোর কিচ্ছু হবে না,তোর কিচ্ছু হতে পারে না,আমি তোকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করবো,


আরু,আকাশ প্লিজ এমনটা করিস না,কোনো লাভ হবে না এতে,উল্টো বরো তোর খরচ হবে...


আকাশ,আরু একদম চুপ থাকতে বলেছি তোকে,আর একটা কথাও বলবি না তুই,আকাশ সাথে সাথে ওর বাবাকে ফোন করে,বাবা আজকেই ইন্ডিয়ার তিনটা টিকিট কাটো তো বিমানের?


--কেন তুই ইন্ডিয়ার টিকিট দিয়ে কি করবি?


আকাশ,বাবা হাতে এত সময় নেই,বেশি কিছু বলতে পারবো না,সময় হলে সব বলবো,হেনাকে রেডি থাকতে বলো,আমি এসে ওকে নিয়েই রওনা দিব...


--আচ্ছা আমি টিকেট কেটে রাখছি,আর হেনাকেও বলছি,

আকাশের আব্বু তৎক্ষনাৎ তিনটা টিকেট কেটে রাখে ইন্ডিয়ার,

আকাশ,আরুকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে ছাড়িয়ে নিয়ে ওর সাথে করে বাসায় নিয়ে যায়,পরে বাসা থেকে হেনাকে সাথে নিয়ে ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্য ফ্লাইটে করে রওনা দেয়,আরুকে মাদ্রাজ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবে


 আকাশ,সেখানে যাওয়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা বলে যে অনেক দেরি হয়ে গেছে,তবে শেষ একটা চিকিৎসা করা যেতে পারে,যদি ৪ সাপ্তাহ ডায়ালাইসিস করানো যায় তাহলে রুগি সুস্থ হয়ে যাবে,আর যদি এর আগে কিছু হয়ে যায় সেটা উপর ওয়ালা জানেন...


আকাশ,নাহ তাহলে সেটাই করান,আরুকে ডায়ালাইসিস করানো হয়,এভাবে পর,পর চারবার ডায়ালাইসিস করানো হয়,কিন্তু আরুরু কিচ্ছুই হয় নি আল্লাহর রহমতে,বরং সে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছে,আকাশ আরুকে নিয়ে দেশে ফিরে,আরু এখন মোটামুটি সুস্থ,


আরু হেনা থেকে মাফ চেয়ে নেয়,প্লিজ হেনা আমায় মাফ করে দিস,আমি যাদের ক্ষতি করেছি,তারাই আমার জীবন বাঁচিয়েছে.. 


হেনা,এই আরু পাগলামো কেন করছিস,তুই জানিস না বন্ধুদের মধ্যে সরি টরি এসব কিছুই চলে না...

শোন আমি সব ভুলে গিয়েছি,এখন থেকে তুই আমার বান্ধবী না খালি,তুই আমার বোন ও,সো মাফ টাফ ভুলেও চাইবি না গরম হয়ে


আরু, আচ্ছা


--দেশে আসার কিছুদিন পর আকাশের আব্বু-আম্মু আকাশের আর হেনার বিয়ের ডেট ফিক্সড করে,

তারপর ওদের বিয়ে হয়ে যায়,আকাশের আর হেনার বিয়ের সমস্ত কিছু আরুই প্লানিং করে,কি ভাবে কি করবে,


তিনজন একটা পরিবারের মত হয়ে গিয়েছে,

আজ আকাশ আর হেনার বিয়ে হয়েছে এক বছর হতে চললো,

হেনা মা হতে চলেছে,সবাই তো মহাখুশি,বিশেষ করে আকাশের বাবা -মা,যে তাদের বংশের প্রদীপ আসতে চলেছে,হেনার বাবা-মাও এসেছে হেনাকে দেখতে,আকাশের কেন জানি হেনার বাবার প্রতি অন্য রকম একটা ঘৃণা কাজ করে,কারন লোকটার আগের চরিত্রের কথা এখনো সে ভুলতে পারেনি,তাও সমস্ত কিছু ভুলে আপন করে নিয়েছে,সেটা করতো না অবশ্য,সেটা করেছি খালি একমাত্র হেনার মুখের দিকে চেয়ে,


আরু তো মহাখুশি যে হেনার বেবি হতে চলেছে,

এই হেনা তোর তো ছেলে হবে তুই জানিস?


হেনা,আরু তুই কি করে জানলি রে?

আরু,কারন আমার তো বিএফ নাই বর ও নাই

তাই তোর ছেলে হবে,আর আমি তোর ছেলের সাথে চুটিয়ে প্রেম করবো


হেনা,আল্লাহরে আল্লাহ

শয়তানকেও হাড় মানাবি তুই


এমন সময় আকাশ অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরে,

এই যে দুইজনের মধ্যে কি ফুসুরফাসুর চলছে শুনি?


হেনা,শুনবা কি ফুসুরফাসুর চলছে,এমন সময় আরু হেনার মুখ চেপে ধরে,এই হেনা প্লিজ বোন না আমার বলিস না


হেনা,মুখ থেকে আরুর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে,এই যে আমার নাকি ছেলে হবে,আর তার সাথে আরু নাকি চুটিয়ে প্রেম করেব,ওর নাকি কেউ নাই


আকাশ,ওহহহ এই কথা

দ্বারা বদমাইশ মেয়ে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি,

এভাবেই হাসিখুশি ভাবে চলতে থাকে দিনকাল,

কিছুদিন পর আরুর বিয়ের দিন তারিখ পাকা হয়,

পাঠক ভাইরা আপনারা সবাই আইসেন কেমন?


এভার ভাগেন


সমাপ্তি....!

পুরো গল্পের মাঝে যত রকম ভুল ত্রুটি হয়েছে,সবাই সেগুলোকে ক্ষমার নজরে দেখবেন.....! 


আবার দেখা হচ্ছে কোনো এক নতুন গল্পের সাথে,

এ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন..

সুস্থ থাকবেন...

খোদা হাফেজ....!


পর্রবের আরও গল্প পড়ুন।