স্বামী স্ত্রীর মিলন | স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা

স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা

 প্রেমে_পড়া_বারণ

      বাসর ঘরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কতো রোমান্টিক কথাবার্তা হয় ! আমার বাসর ঘরে আমাকে দেখে নিরঞ্জনা চোখ গোল গোল করে প্রশ্ন করে বসলো,


 - তোমার কন্যা রাশি বিয়ের আগে বলনি কেনো?


আমি এক প্রশ্নে তব্দা খেয়ে গেলাম। প্রশ্ন কমন পড়ে নাই। আমি জানতাম বাসর ঘরে প্রশ্ন করা হয়, ওগো তোমার কি আমার আগে আর কেউ ছিলো জীবনে কিংবা তুমি কি আমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবে এ টাইপের প্রশ্ন। আমি উত্তরও ঠিক করে রেখেছিলাম। “ তুমিই আমার জীবনের প্রথম আর শেষ বউ” টাইপের উত্তর। কিন্তু আমার রাশি কেন কন্যা রাশি এই উত্তর তো মুখস্ত করি নাই।


 - কন্যা রাশিতে সমস্যা কি?


আমার বউ আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

 - প্রেম করেছো কয়টা? আর বিয়ে শাদি আরো আছে নাকি?

এই সেরেছে! প্রেমের পরিসংখ্যান তো আমার কাছেও নেই। ডজন খানেক তো হবেই। তবে সেগুলো সবই প্রাইমারি স্কুল পর্যন্তই টিকেছিলো। হাই স্কুল অব্দি পৌছুতে পারেনি। ক্লাস নাইন পর্যন্ত একটা কোনো রকমে টিকিয়ে ছিলাম। সেই মেয়ে এখন আমাকে কানাডা থেকে মেসেঞ্জারে “ হাই” লিখে পাঠায়। ভালো কথা মনে পড়েছে, ওকে তো ব্লক মেরে দেয়া দরকার। 

যদিও প্রশ্ন কমন পড়েনি তবু সাদা খাতা তো আর জমা দেয়া যায় না। আমি যথেষ্ট আত্নবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিলাম,

 - কি যে বলো, তুমি তো আমার রাব দে বানা দে জোড়ি। জীবনে আমি মা ছাড়া অন্য কোন নারীর হস্ত স্পর্শও করিনি।

 - তাহলে কি স্পর্শ করেছো? অন্যকিছু?


এই মেয়ের তো পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া করার অভ্যাস আছে মনে হচ্ছে। আমি প্ল্যান বি কাজে লাগালাম,


 - শোনো এইসব আজে বাজে প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে এসো আমরা আমাদের নতুন জীবনের প্ল্যান করি।


নিরঞ্জনা একটা হাই তুলে বললো,


-প্ল্যান করার কিছু নাই। সবকিছুই প্ল্যান করা আছে।কাল থেকে পই পই করে বুঝে নেবো। কন্যা রাশি তাই না? দরকার হলে এনআইডি কার্ড সংশোধন করে বৃষ বা মেষ রাশির মধ্যে যেকোনো একটা দিন ডেট অফ বার্থ হিসেবে বেছে নেবে।


ভেড়া , মহিষের রাশি? বাসর ঘরেই ভেড়া হয়ে গেলাম?

বিয়ের মাস খানিকের মধ্যে আমি নিরঞ্জনার মুরিদ হয়ে গেলাম। এই মেয়ে আসার পর আমি বুঝলাম, বাজার কিভাবে করতে হয়? মোবাইল আনলকের কি কি সিস্টেম আছে? আর কিভাবে মোবাইলে কথা বললেও ওপাশ থেকে কল ওয়েটিং দেখায় না ইত্যাদি নানাবিধ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বাজারবিদ্যা বিষয়ে একটা অনার্স কোর্স ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে খোলা যায় এটা নিরঞ্জনাকে দেখে আমি উপলব্ধি করলাম। যেমন একদিন ডিম কিনতে বাজারে গেলাম।


-“ডিমের দাম কত?”


-“৫৬ টাকা হালি আপা।“


ঢাকার দোকানদাররা আমাকে মামা ডাকলেও নিরঞ্জনাকে আপা ডাকে। দোকানদারের কারণে আমি আর নিরঞ্জনা তো মামা ভাগনী হয়ে গেলাম। নাউজুবিল্লাহ! কোন এক গবেষণায় পড়েছিলাম, বিয়ের বয়স যত গড়ায় স্বামী স্ত্রীর চেহারা নাকি ভাই বোনের মতো হয়ে যায়। মামা ভাগ্নীর মতো হয়ে যায় এরকম তো শুনিনি।


নিরঞ্জনা চোখ গোল গোল করে দোকানীর দিকে তাকিয়ে খেকিয়ে উঠলো,

“ ৩০ টাকা হবে? এইটুকু এইটুকু ডিম! মুরগীর ডিম কি না তাও তো আমার সন্দেহ আছে।“


ডিমওয়ালা সম্ভবত এই ধরণের দামাদামির জন্য প্রস্তুত ছিলোনা। তার উপর তার ডিমের পিতৃ পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ। আমার ধারণা ছিলো ডিম ওয়ালা এরপর রেগে মেগে কোনো একটা অশ্লীল বাক্য ছুড়ে দেবে। তার বদলে সে মুখ কাচুমাচু করে ছোট স্বরে বললো,

“ তিন হালি নিলে দশ টাকা কম দিয়েন আপা।“

-“ দুই হালি নিবো । আশি টাকা লাস্ট দাম।“


দুই হালি ডিম নিয়ে নিরঞ্জনার এই দামাদামিতে আমি বিপর্যস্ত। সে নিজেও জানে এটা শপিং মল না। শপিং মল হলে সে তিন হাজার টাকার ড্রেস সাড়েতিনশ টাকায় কেনার দক্ষতা রাখে। তবে এটাও ঠিক এই ডিমওয়ালা শেষ পর্যন্ত এই দু হালি ডিম মুরগীর ঘরের দামে দিতেই বাধ্য হবে। না দিলে সে অন্য কাস্টমার এর সাথে কথা বলারই ফুরসত পাবে না।অতপর দুই হালি ডিম একশ টাকায় রফা হলো নিরঞ্জনার। এবার শুরু হলো, ডিম বাছা। আটটি ডিম বাছতে ডিমের ঝুড়ির তলদেশ পর্যন্ত আলগা করে ফেলা হলো। এই কাজ একজন মহিলা না করে পুরুষ করলে ডিম ঝুড়ি সহ মুখে মেরে দিতো। আমি অবশ্য এইসব ছোট খাটো বিষয়ে কখনোই মাথা ঘামাই না। আমি মাথা ঘামাই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট নিয়ে, প্রিয়াংকা নিকের বিয়ে নিয়ে।


অতএব কন্যা রাশি থেকে মেষ রাশিতে পরিণত হওয়া আমার ঢের কাজ আছে বৈ কি!


সন্ধ্যা বেলায় নিরঞ্জনাকে এক কাপ চা করে দিতে বললাম। অপূর্ব এক কাপ চা করে এনে নিরঞ্জনা আমার মোবাইলটা হাতে নিয়ে বললো, 


" শামছু নামে একটা মেয়ে ফোন দিয়েছিলো। তুমি বাথরুমে ছিলে তাই আমি ধরে ছিলাম। বললো, আর্জেন্ট কি কথা আছে। কল দিতে বলেছে।


কি সর্বনাশ! শামছু নামে আমি আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর হার্ট থ্রব নিতুর নাম সেইভ করে রেখেছিলাম।


নিরঞ্জনা আমার চেয়ারের হাতলের উপর বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,


- শোনো, একটা মেয়ের নাম মেয়ের নামে সেইভ করলে তো সন্দেহ লাগে না। একটা কেন, একশ মেয়ে তোমাকে ফোন দিতে পারে। তুমি তো আর দ্যা ম্যান ইন দ্যা হোল এর মতো একা একা জঙ্গলে বাস করো না। তোমাকে হাজারও মানুষের সাথে মিশতে হয়। সেই হাজারটা মানুষের মধ্যে নিতুরাও থাকবে।কিন্তু আমাকে এভাবে লুকোনোর তো দরকার নেই। একটা মেয়ে জানে তার সংসারের সুতোটা ঠিক কত জোরে লাটাই এর সাথে আটকে আছে। সুতো ছেঁড়ার আগেই মেয়েরা ঘুড়ি মাটিতে নামিয়ে আনে। সুতরাং বেশি উড়ো না।


ভালোবাসায় ঠাসা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে নিরঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বললাম, লাটাই যদ্দিন তোমার হাতে ঘুড়ি ফসকাবার ভয় নেই কিন্তু টানাটানি বেশি করে সুতোটাই যেনো আবার ছিড়ে ফেলো না।


নিরঞ্জনা আমার হাতে হাত রেখে খুব আস্তে স্বরে বললো, যদি কখনো উড়ে যেতে ইচ্ছে করে আমাকে বোলো, লাটাই ছেড়ে দেবো কিন্তু সুতো ছিড়তে দেবো না।


আমি খেয়াল করলাম, নিরঞ্জনার আঙুলগুলো শক্ত করে আমার হাতটা খামচে ধরে রেখেছে। এতটা শক্ত করে ধরেছে যে, ব্যাথা লাগছে। জীবনে প্রথমবার একটা ব্যাথাকে এতো আরামদায়ক মনে হচ্ছে কেন?


এমন আরও স্বামী স্ত্রীর গল্প পড়ুন।