চোখে পানি চলে আসবে | অনেক কষ্টের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

--- "মা!ঝটপট রেডি হয়ে নাও।তোমার জন‍্য সারপ্রাইজ আছে। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি।আধ ঘন্টার মধ‍্যে আমরা বেরোচ্ছি।"


--- "সেকি কোথায়?হঠাৎ!না বাবা।বৌমা বাড়ি নেই।জানলে এ নিয়ে বড়ো অশান্তি হবে।"


--- "প্লীজ মা। অশান্তির ভয়ে দশটা বছর কুঁকড়ে কাটালাম।আর কত! আমার পছন্দ তোমার পছন্দ আর সেইসঙ্গে আমাদের ভালোলাগা গুলো কিভাবে একটার পর একটা বিসর্জন দিয়ে চলেছি তা তো তোমার অজানা নয় মা।"


অয়নের চোখের কোণে জল। সুলতা দেবীর বুকের মধ‍্যে মোচড় দেয়। একমাত্র ছেলেকে কম কষ্ট করে তিনি আর সুলোচন বাবু মানুষ করেছেন!ছোট্ট একটা প্রাইভেট ফার্মে কাজ করতেন সুলোচন বাবু।ক'পয়সাই বা মাইনে পেতেন!তাই দিয়ে কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চলতো।অথচো,ছেলেকে কিছু বুঝতে দেননি তাঁরা। অয়নের স্কুলের বেতন,প্রাইভেট টিউটরের মাইনে কোনো কিছু আটকে থাকতো না। তার জন্যে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়েছে সুলোচন বাবুকে।তার ফলশ্রুতি আজকের অয়নের প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর সুলোচন বাবুর টি.বি.আক্রান্ত হয়ে অকাল প্রয়াণ।ছেলের সাফল‍্য দেখে যেতে পারেন নি তিনি।তবে বাড়িটার একটা অংশ তিনি করে যেতে পেরেছিলেন।এজন‍্যই সুলতা দেবী এই বাড়িটার মায়ায় বড্ড জড়িয়ে পড়েছেন।সুলোচন বাবুর স্পর্শ সুখ পান যেন তিনি!


অয়ন ছোটোবেলা থেকেই খুব শান্ত আর বুঝদার ছেলে। মা ছাড়া কিছু বুঝতো না।সেই ছেলেই যখন পাত্রী সন্ধানরতা সুলতা দেবীকে রুনার কথা বলে তখন তিনি যুগপৎ ভাবে বিস্মিত এবং ব‍্যথিত হন।রুনা অয়নের ব‍্যাচমেট্।একই কলেজে পড়াশোনা করার সূত্রে পরিচয়,প্রেম এবং পরিণয়। অভিজাত পরিবারের একমাত্র মেয়ে রুনা নিজেও মোটা মাইনের চাকরি করে।

 প্রথম দিকে যাও বা ঠিকঠাক চলছিলো তালটা কাটে রূপান আসার পর। নাতিকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন সুলতা দেবী।কিন্তু,রুনার এসব ব‍্যাকডেটেড ব‍্যবস্হাপনা একদম পছন্দ নয়।চব্বিশ ঘন্টা ট্রেইন্ড আয়া নিযুক্ত হল।না,সুলতা দেবী একদম সফিস্টিকেটেড নয়।কখন কি রোগ জীবাণু আসবে তাঁর থেকে ছোট্ট রূপানের শরীরে। মনে ভারি কষ্ট পেয়েছিলেন সুলতা দেবী।


রাতের একসাথে খাওয়া টাও বন্ধ হয়েছে কতদিন হল। বেড়াতে বড় ভালোবাসতেন তিনি।অয়নের বাবা বেঁচে থাকতে বছরে নিয়ম করে কাছেপিঠে ঘোরা হত।সেসব এখন অতীত।রুনা একদম পছন্দ করে না শাশুড়ী কে নিয়ে ঘোরা।এমন ই আরো কতশত কিছু রুনার অপছন্দ এবাড়ির। সুলতা দেবী সবই বোঝেন।কিন্তু,তিনি যে নিরুপায়!আর ওই যে স্বামীর স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটার উপর তীব্র টান!


ছেলের আবদারে তার দেওয়া নতুন ঘিয়ে জামদানি পরে লজ্জা লজ্জা করছিলো।এই বুড়ো বয়সে এসব সাজগোজ।লোকে বলবে কি।কিন্তু ছেলে শুনলে তো।অয়ন যেন সেই ছোট্ট টি হয়ে গেছে। গঙ্গার ধার দিয়ে গাড়ি ছুটছে।স্টিয়ারিং হাতে ছেলের পাশের সীটে বসা সুলতা দেবী অবাক বিস্ময়ে একবুক গর্ব নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন।খোলা জানালা দিয়ে হু হ করে হাওয়া ঢুকছে।ঘন্টাখানেক চলার পর চা এর ব্রেক।


অবশেষে একটা ভারি সুন্দর গাছপালা ঘেরা বাগানবাড়িতে মা'কে নিয়ে ঢোকে অয়ন।সুলতা দেবীর চোখ জুড়িয়ে যায়।বুক ভরে শ্বাস নেন।বাড়িটার নামটাও সুন্দর।


                             "শান্তিনীড়"।


সত‍্যি!মার জন‍্য এখনো কতটা ভাবে ছেলে টা!


পরক্ষণেই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে ভুলটা ভাঙে সুলতা দেবীর।


--- "খোকা! শেষ পর্যন্ত তুইও-"


--- "স‍্যরি মা।আমি আর অশান্তি নিতে পারছি না।তোমার জন‍্য তো আমি আমার সন্তান আর তার মাকে হারাতে পারি না!তুমিও তো একটু মানিয়ে নিতে পারতে। তাছাড়া,আমাদের দু'জনের পক্ষেই সুবিধা হয় রুনাদের বাড়ি থেকে অফিস যাতায়াত করলে।রূপানেরও কোনো অসুবিধা হবে না।ওর দাদু দিম্মা যথেষ্ট কেয়ারিং।আর আদব কায়দাও ছোটোবেলা থেকেই ও রপ্ত করে নিতে পারবে ওঁদের থেকে। বাড়িটা আপাততঃ ভাড়া দিয়ে দেবো।পরে বিক্রি করে দেবো সময় মতো।সত‍্যি! কি অড্ জায়গায় বাবা বাড়িটা বানিয়েছিলো! এখানে তুমি তোমার মতো বয়সীদের নিয়ে থাকবে ভালো।তাছাড়া,তোমার শরীর ও বিশেষ ভালো নয়।এখানে ডাক্তার পরিষেবা ভালো।আমি কি তোমার খারাপ চাইতে পারি বলো।আশা করি তুমি অবুঝ হবে না।"


একটানা কথাগুলো বলে শ্বাস নেয় অয়ন।সবকিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে যায় সুলতা দেবীর।দশ'মাস পেটে ধরে,বুকের দুধ খাইয়ে মুখের রক্ত তুলে বড় করা ছেলের,বুড়ি মা'টার জন্য শেষ বয়সের ব‍্যবস্হাপনা বড়ই সুন্দর!


কান্নাভেজা গলায় মৃদুস্বরে সুলতা দেবী বলেন,


--- ''আজ আমার সন্তানের বাবা বেঁচে থাকলে কোনোভাবেই পারতিস না আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে ঠেলে দিতে।সেই সন্তানের মা'র অধিকার,জোর কিভাবে সন্তানের বাবার সাথে চলে যায়,তা আজ দেখলাম।যাইহোক,ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি তোর বৌয়ের যেন এই অবস্থা না হয়।তোরা ভালো থাকিস।"


------------(#সমাপ্ত) (#অনুগল্প)-------------

  

গল্প:ন্তানের_বাবা


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।