ভালোবাসায় কষ্ট
একটি শর্ট গল্প
মাঝরাতে হঠাৎ ফোনটা উচ্চশব্দে বেজে ওঠে। ভীষণ বিরক্ত হয় মীরা। এখন কি কল আসার সময়?
বালিশের নিচ থেকে ফোনটা নিয়ে নিভু নিভু চোখে একবার তাকায় ফোনের স্কিনে। মাইশা নামটা জ্বল জ্বল করছে।
মীরার বিরক্ত আরও বেড়ে যায়। এই মেয়েটার একটাই স্বভাব মাঝরাতে হুটহাট কল করবে। তারপর তার বয়ফ্রেন্ডের নামে নালিশ দেবে।
হয়ত আজকেও মিহাল ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে। তাই মীরাকে নালিশ দেওয়ার জন্য কল করছে।
মীরা ফোনটা বন্ধ করে বালিশের নিচে রেখে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে মীরা।
একটা কথা কানে বারবার বাজছে
"মীরা মাইশা সুইসাইড করেছে"
প্রথমে মীরা নিজের শোনার ভুল ভেবে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করে। তখন এলাকার মসজিদের মাইক থেকে উচ্চশব্দ ভেসে আসে। সেখানেও বলা হচ্ছে
"এলাকাবাসী দুঃসংবাদ। মজিবুর রহমানের মেয়ে মাইশা ইন্তেকাল করিয়াছেন।
এবার মীরা এক লাফে উঠে বসে। তার হাত পা কাঁপছে।
" মাইশা আর নেই।
মীরা কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে। অনেক গুলো মেসেজ এসেছে মাইশা রহমান নামের আইডি থেকে।
শেষ মেসেজটা এমন ছিলো "কাল আমার কবরে মিহালকে এক মুঠো মাটি দিতে বলিস। আমার বাবা আর বাকিদের সাথে মিহালও যেনো আমার খাটিয়া বহন করে আমাকে কবর পর্যন্ত নিয়ে যায়"
মীরা এবার চিৎকার করে ওঠে। হাত পা কাঁপছে তার।
কাঁপা কাঁপা হাতে মিহালকে কল করে।
বেশি সময় নেয় না সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ হয়।
মীরার কথা না শুনেই মিহাল বলে ওঠে
"মীরা আমি বিয়ে করে নিয়েছি। মাইশা আমার ক্লাসের ছিলোই না। ওর মতো মেয়ের সাথে রিলেশন করা যায় কিন্তু বিয়ে না।
মাইশাকে এটা বোঝাও। মেয়ে মানুষ এতো আত্মসম্মানহীন কি করে হতে পারে? মাইশাকে পুরো এক সপ্তাহ ধরে বুঝিয়ে যাচ্ছি ওকে আমার ভালো লাগে না। তবুও কুকুরের মতো পেছনে পড়ে আছে।
মীরা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। মনে পড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে মাইশাকে ইনগোর করছে মীরা। মাইশা কিছু বলতে চাচ্ছিলো মীরা শুনে নি৷
" মীরা আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও প্লিজ। ওই পাগলকে বোঝাও৷
মীরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
"মাইশাকে প্রপোজ করলেন আপনি। পেছন পেছন ঘুরলেন আপনি। দুই বছর ধরে পাগলও বানালেন আপনি৷ আবার এখন পাগল বলে তাচ্ছিল্যও করছেন আপনি। মাইশা খুব বোকা মিহাল ভাই। তাইতো পাগলের মতো আপনাকে ভালোবেসেছিলো। আপনার হাতের এক মুঠো মাটি পাবে বলে দুনিয়াটাও ছেড়ে দিলো।
আপনি শান্তিতে থাকুন। পাগল আর আপনাকে জ্বালাবে না
মীরা কল কেটে দেয়।
মেসেঞ্জারে ঢুকে।
মাইশার হাজার হাজার মেসেজ।
" আমার সাথে একটু কথা বল না মীরা। আমি না ম*রে যাচ্ছি। স্যার বলে প্রচন্ড কষ্টের কথা কারো সাথে শেয়ার করলে কষ্ট কমে। আমার কষ্টটা কমিয়ে দে না।
"মীরা মিহাল বিয়ে করে নিয়েছে। আমি ওকে অন্য কারো পাশে সয্য করতে পারবো না রে।
" মীরা তোকেও আর কখনো আমি ডিস্টার্ব করবো না।
শুধু আজকে একটু কথা বল।
"মীরা আমার ছোট বোনটাকে দেখে রাখিস। আমার মা বাবাকেও একটু দেখিস।
তোরা ভালো থাকিস।
এরকম আকুতি ভরা অনেক মেসেজ। ফোনটা বুকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠে মীরা। নিজে হাতে বেস্টফ্রেন্ডটাকে মে*রে ফেললো। মীরা কাল একটু কথা বললে হয়ত মাইশার মনোভাব পরিবর্তন হয়ে যেতো। হয়ত মাইশা একটু সাহস পেতো। বেঁচে থাকার একটা রাস্তা খুঁজে পেতো।
মীরা ছুঁটে দেখতে যায় মাইশাকে৷ বাড়ি ভর্তি মানুষ। উঠোনে সাদা কাফনে মুরিয়ে খাটিয়াতে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে মাইশাকে৷
মাইশার মা বাবা বোন সবাই কাঁদছে৷ মাইশাকে এক নজর দেখার জন্য সবাই ছুটে আসছে৷
কিন্তু সে আসলো না যার জন্য আজকে মাইশা এভাবে শুয়ে আছে।
একটা ছেলের জন্য মাইশা এই সুন্দর পৃথিবীটাকে বিদায় জানালো।
মেইন রোডের পাশে মাইশাকে কবর দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন মীরা নিয়ম করে মাইশার কবরের পাশে বসে থাকে৷ কতো কথা বলে। কিন্তু এখন মাইশা মীরার সঙ্গ চাইছে না।
যখন মাইশার মীরাকে দরকার ছিলো তখন পাই নি। আজকে দরকার নেই অথচ মীরা তার আশেপাশেই থাকে।
মানুষ এমনই।
" মানুষ মরে যায় মানুষের অভাবে
অথচ মানুষ বুঝতেই পারে না"
বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।