গল্প: অলৌকিক বউ | ভয়ংকর গল্প ২০২৪

 রহস্যময় গল্প

রহস্যময় গল্প

অলৌকিক বউ...👹👿

পর্ব: ০১


মৃত মানুষের হাত থেকে এক ফালি মাংস কেটে খুব গোপনে আমার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আমার কাছে এইটা অস্সাভাবিক কিছু না, বা খুব যে ভয় লাগছে এমন কিছুও না। কারণ গত পাঁচ থেকে সাত মাসে আমাদের এলাকার কবরস্থানে যত গুলো লাশ দাফন হইছে প্রত্যেকটা লাশ এর ডান হাতের মাংস এভাবে চুরি করে আমি নিয়ে গেছি।


প্রথম দিন যে এত ভয় লাগছিলো বলে বোঝানো যাবে না। তবে আমার যে কিছু হবে না এইটা আমি জানতাম। কারণ আমার সাথে আছে অলৌকিক একটা শক্তি। আমি চাইলে এই কবরস্থান কে শশান বানিয়ে দিতে পারি, আবার আমার মন চাইলে এই কবরস্থান কে পৃথিবীর সকল অলৌকিক শক্তির মিলনক্ষেত্র বানিয়ে দিতে পারি। তাহলে বুঝুন আমি কত শক্তিধর একজন পিশাচ।


এখন রাত প্রায় তিনটা। এই সময় একা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। আকাশে চাঁদ নেই, মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে। কেন জানিনা আমার এখন অন্ধকার খুব ভালো লাগে। আগে এই অন্ধকার খুব ভয় লাগতো, আমি একটু ভীতু টাইপের ছেলে ছিলাম। কিন্তু এখন আমার মনে হয় আমার থেকেও বেশি সাহসী আর কেউ নেই।একটু একটু করে আমার বাসার সামনে চলে আসলাম। ঘরের ভেতরে ঢুকে খুব সাবধানে দরজা আটকিয়ে আমার রুমে গেলাম।


রুমের দরজা খুলতেই এক দৌড়ে আমার বউ আমার সামনে হাজির। আমার হাত থেকে মাংসের টুকরো টা নিয়ে গোপগোপিয়ে খেতে শুরু করলো।


যেন পৃথিবীর সব থেকে ভালো খাবার তার হাতে। অন্য কোথাও মনোযোগ নেই তার। শুধু তার হাতে থাকা একজন মানুষের মাংসের অবশিষ্ট অংশ নিয়ে বেস্ত। 


তার খাওয়া প্রায় শেষ, তখনই সে আমার দিকে তাকিয়ে, তার রক্ত মাখা মুখে একটা খুব সুন্দর হাসি দিয়ে অবশিষ্ট মাংসের অংশ টুকু আমার দিকে এগিয়ে দিলো। এগিয়ে দিয়ে কোকিল কণ্ঠী একটা স্বরে বললো, তুমিও একটু খাও। দেখো তোমার খুব ভালো লাগবে। অনেক মজা এই খাবার।


আমিও ওর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে আমার দুই হাত দিয়ে খুব আলতো করে ওর গালে স্পর্শ করলাম। গালে হাত দিয়ে বললাম, তুমি খাও। জানিনা আবার কবে এনে দিতে পারবো। তাই তুমি তৃপ্তি করে খাও।


আমার কথাই ওর চোখ দুইটা কেমন জানি জ্বলে উঠলো, যেনো প্রচুর ভালোবাসায় ভরা দুটি চোখ। এতো ভালোবাসার মধ্যেও একটু অভিমান লুকিয়ে আছে। অভিমানী মুখ নিয়ে খুব সাবধানে এক টুকরো মাংস সে একটা ধারালো ছুরি দিয়ে কাটলো তারপর ও নিজেই ওর হাত দিয়ে আমার মুখের সামনে তুলে ধরলো।


আমি প্রথমে খেতে চাইনি তবে না খেয়ে পারলাম না। মিরা যে এতো মিষ্টি করে, ভালোবাসা নিয়ে খেতে বললো, না খেয়ে কোনো উপায় ছিল না।


ওই এক টুকরো মাংস মুখে যেতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। এতো সুস্সাদু খাবারও পৃথিবীতে ছিল। আমি কি সত্যি মানুষের মাংস খাচ্ছি। নাকি কোনো অমৃত খাচ্চি আমি নিজে বুঝতে পারছি না। 


খুব তৃপ্তি নিয়ে এক টুকরো মাংস খাওয়ার পর আমি মিরার দিকে দেখলাম। দেখলাম ও এখনো খাচ্ছে। অনেক মায়াবী লাগছে দেখতে। ওর এই মায়াবী চেহারা যতবার দেখি ততবারই ওর প্রেমে পড়ে যায়।


কিন্তু মাঝে মধ্যে ওর খাওয়ার মধ্যে ওর মাথার চুল খুব বিরক্ত করছে, বার বার চুল সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু চুল গুলো খুব বেহায়া, প্রতিবারই ওর সামনে চলে আসছে। কিন্তু বেপার না, ওকে যা সুন্দর লাগছে বলে বোঝানো যাবে না।


মিরার মাংস খাওয়া শেষে আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। তারপর আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা খাবার উপহার দেওয়ার জন্যে। এইটা বলেই মিরা আমার মুখে লেগে থাকা রক্তটুকু মুছে দিলো।


আমিও একটা হাসি দিয়ে বললাম, ভালোবাসি।


আমার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে আমার নাকে হাত দিল। নাকে হাত দিয়ে একটু টান দিলো আর একটা মিস্টি হাসি দিয়ে বললো, পাগল একটা। তুমি বিছানায় বসো আমি মুখ ধুইয়ে আসছি। 


আমি ওকে যেতে বলে বিছানাই বসলাম, বসে মিরার কথা ভাবছি। মেয়েটা কি অদভ্যুৎ, যতবার ওর দিকে তাকাই ততবারই মুগ্ধ হই। আসলেই কোনো এক জাদু আছে ওর মধ্যে। আমার সকল শক্তির উৎস এই মিরা। আমার শরীরের প্রতি ফোটা রক্তে মিশে আছে মিরার দেওয়া শক্তি। জানিনা কতদিন এই শক্তি বহন করতে পারবো। তবে এই শক্তি যত দিনই থাক কারো ক্ষতি করবো না।


মিরার সাথে আমার সম্পর্ক শুরু একটা অদ্ভুত মাদ্ধমে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। এইভাবে যে মিরা কে পাবো, আমার বউ বানাবো, তার সব আবদার পুরো করতে পারবো আমি কোনদিন ভাবতেই পারিনি।


চলেন আপনাদের মিরা কে পাওয়ার গল্পটা শোনাই।

এই গল্পটা আজ থেকে সাত আট মাস আগের। তখন আমি অনেক বই পড়তাম। বলতে পারেন বই পড়া আমার এক প্রকার নেশা ছিল। আমি একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরী করি। বেশ মোটা অংকের একটা সেলারি পাই। সেই সময় সারাদিন কাজ করতাম আর রাতে প্রায় বারোটা পর্যন্ত গল্পের বই পড়তাম। 


একদিন অফিস থেকে ফেরার সময় দেখলাম, আমার বাসার একদম সামনে একজন লোক কিছু বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ রাতে পড়ার মতো কোনো বই ছিল না তাই আমিও আর কিছু না ভেবে লোকটির কাছে এগিয়ে গেলাম।


লোকটি দেখতে একদম বনমানুষ। মুখে বড় বড় দাড়ি, মাথায় জট পাকানো বড় বড় চুল। শুধু দেখতে বললে ভুল হবে, তিনি আসলেই একজন বনমানুষ বলে আমার মনে হয়।

লোকটির সামনে আসতেই তার হাতে থাকা একটা বেশ মোটা বই আমার হাতে দিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম এই বইটির দাম কত। তিনি কোনো কথা না বলে তার বাম হাতের দুইটা আঙ্গুল উঁচু করলেন।


আমি ভাবলাম লোকটা হয়তো বোবা তাই কথা বলতে পারছে না, আর এতো মোটা একটা বই এর মূল্য মাত্র দুইশত টাকা চাচ্ছে তাই একটু অবাক হলাম।

মানিব্যাগ থেকে একটা পাঁচশত টাকার নোট বের করে লোকটার হাতে দিলাম, ভাবলাম লোকটার একটু উপকার হোক।


কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, লোকটি পাঁচশত টাকার নোটটি এপিঠ ওপিঠ ঘুরিয়ে দেখে আমার কাছে ফিরিয়ে দিল। ফিরিয়ে দিয়ে আবার তার দুই আঙ্গুল উপরে উঠিয়ে বিরক্তিকর একটা শুকনা হাসি দিল।


ওনার হাসি দেখে বুঝলাম উনি বিরক্ত বোধ করছেন তাই পাঁচশত টাকার নোটটি মানিব্যাগে ঢুকিয়ে, দুইটা একশত টাকার দুটি নোট বের করে ওনার হাতে দিলাম।


এইবার উনি সত্যি তার মুখে অনেক বিরক্তির একটা ভাব এনে আমার হতে একশত টাকার নোট দুটি ফিরিয়ে দিল। তারপর তার কাঁধের ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু একটা বের করলো। প্রথমে আমি চিনতে পারিনি তবে খুব ভালো করে দেখার পর চিনলাম। তার হাতে ছিল এক টাকার দুটি নোট।


খুব অবাক হলাম। এত মোটা বই এর দাম শুধু মাত্র দুই টাকা?

বে আমার বাসায় এক টাকার নোট আছে। তাই ওনার হাতে বইটি দিয়ে একটু অপেক্ষা করতে বললাম। উনি একটা মিষ্টি হাসি দিলেন। তারপর আমার বাসাই থেকে খুঁজে খুব কষ্টে এক টাকার দুইটি নোট নিয়ে আসলাম।


এসে দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছেন। তাই ওনার কাঁধে হাত দিলাম। কাঁধে হাত দিতেই অবাক হয়ে গেলাম। আসলে এমন মানুষ কি সত্যি পৃথিবীতে হয়। ওনার শরীর একদম ঠান্ডা, আর শরীরে মাংস নেই বললেই চলে।


ওনার গায়ে হাত দিতেই উনি চমকে উঠলেন। চমকে উঠেই আমার থেকে একটু দূরে সরে গেলেন। তারপর রাগী চোখ নিয়ে আমার দিকে তার হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমিও ওনার হাতে টাকা টা দিয়ে বই টি নিলাম।

উনি একটা হাসি দিয়ে আমাকে চলে যেতে বললেন।


আমি পিছে ঘুরে চলে যাচ্ছি। তখনই অদ্ভুত একটা চিকন গলা শুনলাম। আমাকে কেউ একজন দাঁড়াতে বললেন। পিছে তাকিয়ে দেখি সেই লোকটি হাসছে। আমি খুব অবাক হয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলাম। তখন তিনি বললেন, আলভী সাবধান বাবা। ভুল কিছু করিস না। তুই তো আমাদের এক মাত্র ভরসা বাবা। 

এইটা বলেই উনি পিছে ঘুরে হাটতে লাগলেন।


আমিও ওনার পিছু নিলাম আর ওনাকে দাঁড়াতে বলছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। হনহানিয়ে উনি একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়লেন। তারপর আর লোকটিকে খুঁজে পাইনি তাই সোজা আমার বাসায় চলে আসলাম।


বাসায় আসার পথে বইটির কভার পৃষ্ঠা খুব ভালো করে দেখলাম। বাংলায় কিসব চিং ফিং লিখা তাও আবার বানান ভুল। কিছুই বুঝলাম না তবে বইটি আইয়তনের থেকে একটু বেশি ভারী। 


আমার রুমে এসে ফ্রেস হয়ে, বইটি নিয়ে বসলাম। বইটি পড়ার জন্যে উত্তেজনা আর ধরে রাখতে পারলাম না, তাই আজ রাতে খাওয়া বাদ।


বইটির কভার পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখলাম আমার ছবি। খুব অবাক হলাম, আমার ছবি এইখানে কেন আবার খুব সুন্দর করে নীচে আমার নাম লেখা "আলভী"। তাঁর পরের পৃষ্ঠায় আছে সুচিপত্র, প্রায় কয়েক হাজার পৃষ্ঠাকে কেন্দ্র করে এই সুচিপত্র।


সুচিপত্র শেষ করতে কারেন্ট চলে গেল। খুব বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের আলো দিয়ে একটা মোমবাতি খুঁজে বের করলাম।

মোমবাতির আলোতে লিখাগুলো ঝক ঝক করছে। একটু পরেই দেখলাম মোমবাতি অস্সাভাবিক ভাবে জ্বলছে। মনে হচ্ছে একটা আগুনের গোলা। তারপরই বুঝতে পারলাম আমার হাতের বইটি অনেক গরম হয়ে উঠছে। 


একটু পরেই বই থেকে অনেক ধোঁয়া বের হয়ে আমার রুম একদম ভর্তি হয়ে গেল। কিছুই দেখা যাচ্চে না। তবে অবাক করা বেপার এত ধোয়ার মধ্যেও আমার একটুও কাশি হচ্ছে না, বেশ কিছুক্ষণ পর ধোঁয়া কমছে। তখন যা দেখলাম তা দেখার জন্যে আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না।


দেখলাম ফ্লোরে একটা মেয়ে শুইয়ে আছে।তবে মেয়েটা একদম উলঙ্গ, মেয়েটির শরীরে কোনো কাপড় নেই তবে তাকে দেখতে একদম পরী। মেয়েটিকে দেখে যেকোনো পুরুষ পাগল হয়ে যাবে। যে কেউ যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকবে। আসলেই মেয়েটি দেখতে একটা পরি শুধু মাত্র একজোড়া ডানার অভাব।


অলৌকিক বউ...👹👿

পর্ব: ০২


দেখলাম ফ্লোরে একটা মেয়ে শুইয়ে আছে।তবে মেয়েটা একদম নগ্ন, মেয়েটির শরীরে কোনো কাপড় নেই তবে তাকে দেখতে একদম পরী। মেয়েটিকে দেখে যেকোনো পুরুষ পাগল হয়ে যাবে। যে কেউ যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকবে। আসলেই মেয়েটি দেখতে একটা পরি শুধুমাত্রএকজোড়া ডানার অভাব।

.

.

কিসব ভাবছি আমি। আর আমি এখন কি করবো। কি করা উচিত আমার। একটা মেয়ে এখানে অজ্ঞেন অবস্থায় পড়ে আছে তাও আবার নগ্ন। 


এতকিছু ভেবে লাভ নাই। আগে মেয়েটির সম্মান বাঁচানো উচিত। আমার বিছানায় সব সময় একটা ব্ল্যাংকেট থাকেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব ব্ল্যাংকেটটি নিয়ে মেয়েটির শরীর ঢেকে দিলাম।


এখন আমি কি ভাবছি, হঠাৎ চোখ পড়ল মেয়েটির মাথার চুল দিকে, দেখলাম চুল গুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। তাই মাথার চুল গুলো আগে খুব যত্নে ব্ল্যাংকেটের উপর রেখে দিলাম। তবে এখন যা মনে হচ্ছে মেয়েটির মাথার নীচে একটা বালিশ না দিলেই নয়। তাই আমার বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে মেয়েটির মাথা একটু উঁচু করে মাথার নিচে দিয়ে দিলাম।


বাহ, এখন সব ঠিক আছে। মেয়েটি এখন সেফ এইটা ভাবতেই মুখে একটু হাসি চলে আসলো। হঠাৎ মেয়েটির মুখের দিকে চোখ পড়ে গেলো। এখন খুব গভীর থেকে মেয়েটির মুখ দেখলাম। দেখতে অনেক মায়াবী আর তারসাথে পাগল করা চেহারা। আমি যে মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেছি এইটা বলাই যায়।


একটু একটু করে মেয়েটির সামনে এগিয়ে গেলাম। মেয়েটির মুখের সামনে এসে হাটু গেড়ে বসলাম। বাহঃ সৃষ্টিকর্তার এইটা কেমন সৃস্টি। একবার দেখলে চোখ ফেরাতে মন চায় না। কতক্ষন মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে আছি জানি না। একটু পরই মাথায় এলো, আরে মেয়েটির মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে হয়নি। 


একবার চেষ্টা করে দেখি। এইটা ভেবে একটা গ্লাসে করে পানি নিয়ে এলাম। মেয়েটার মুখে কএকবার পানির ঝাপটা দিলাম কিন্তু কাজ হয়নি।


একটু পরেই বুঝলাম মেয়েটা আসলে ঘুমাচ্ছে। তাই আর ঘুম নষ্ট করলাম না।


মোমবাতি প্রায় নিভু নিভু অবস্থা তাই আরও একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে টেবিলের উপর রাখলাম। মোমবাতি রাখার সময় লক্ষ করলাম মোমবাতির আলোতে বইটি আগের মতোই জ্বলছে। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে আবার বইটি খুললাম। সুচিপত্রের পর দেখলাম কিছু একটা লিখা আছে। তবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ওই পৃষ্ঠার পরই পুরো বইটাই বিশ থেকে ত্রিশটি মতো পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলাম। কিছুই বুজছি না।


হঠাৎ আবার আমার মনোযোগ এই মেয়েটির দিকে চলে গেলো।

আমি কি এইটা স্বপ্ন দেখছি? এইটা ভাবতে ভাবতে বিছানায় সুইলাম। গায়ে চিমটি কেটে দেখলাম, নাহ এইটা বাস্তব। তাহলে মেয়েটি এইখানে কিভাবে এলো। কে এই মেয়ে। এইটা ভাবতে ভাবতে ফ্লোরে মেয়েটির দিকে দেখলাম। এখনো শুইয়ে আছে। মেয়েটিকে দেখার কিছুক্ষন পরেই গুমিয়ে গেছি।


সকালে চোখ খুলতেই যেইটা দেখলাম এইটা দেখার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। দেখলাম মেয়েটি দিব্বি বসে আছে। তবে মেয়েটি এইটা কেমন পোশাক পরে আছে। দেখতে সাদা তবে খারাপ না। তবে চুল গুলো কিন্তু বেশ বড় আর খুব সুন্দর। দেখে মনে হয় মেয়েটার চুলের যত্ন নেওয়ার জন্যে আলাদা লোক আছে।


সবই বুঝলাম কিন্তু মেয়েটি ঐদিকে তাকিয়ে, এভাবে বসে কি করছে। দেখার জন্যে আমি মেয়েটার সামনে গেলাম। সামনে এসে দেখলাম সে কান্না করছে তবে চোখ বন্ধ। আর বইটি ওর সামনে খোলা। তার চোখে পানি দেখে খুব কষ্ট লাগছে। কি হয়েছে ওর। কান্না করছে কেনো। আর ওর কান্নায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে কেন। আমিতো যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি ওকে সুরক্ষিত রাখতে। কি হইছে এইটা জানার জন্যে একটু নরম গলায় বললাম, কি হইছে আপনার? আপনি এভাবে কান্না করছেন কেনো।


আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বন্ধ করে কান্না করেই চলেছে, এখনো চোখ খোলেনি। তবে অনেকবার জিজ্ঞেস করার পর তিনি একটু নড়ে উঠলেন। তারপর চোখ খুললেন। চোখ খুলেই কান্না জড়িত গলায় বললো, কেনো করলেন এইটা। আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি। আপনি আমাকে এতবড় শাস্তি কেন দিলেন।


আমি বললাম, কি দোষ আমার। কি করেছি।


সে একটু চুপ থেকে যা বললো এইটা শোনার পর আমার এইটা স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে।

মেয়েটা বললো সে নাকি অন্য একটা দুনিয়ার মানুষ। মানে মানুষ ঘুমাইলে যেই ডাইমেনশন চলে যায় সেই ডাইমেনশন। মেয়েটি যেখানে থাকতো সেইটা নাকি সব সময় অন্ধকার। এই বইটি নাকি তাদের দুনিয়াতে যাওয়ার পথ।


এইটা শোনার পর অবাক হয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে আপনি এখানে আসলেন কিভাবে?


সে কান্না করতে করতে বললো, মোমবাতির আলো এই বইটিতে লেগে আমাদের দুনিয়ার সাথে আপনাদের এই দুনিয়ায় আসার একটা পথ তৈরি হয়েছিলো। এই পথটি কোথাই যায় এইটা জানার জন্যে আমি এখানে চলে আসি। তারপর আপনি আমাকে দেখেফেলাই আমি আর আমার দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারিনি। আর আপনি আমাকে দেখেছিলেন তাই আমি অজ্ঞেন হয়ে গিয়েছিলাম।


এইটা বলেই মেয়েটি মুখে হাত দিয়ে কান্না শুরু করে। আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম: আপনি এতো সুন্দর করে কথা বলছেন কিভাবে? আর কি করলে আপনি আবার ফিরতে পারবেন।


এরপর মেয়েটি সত্যি একটা অদ্ভুত কথা বললো, সে বললো আমার সকল ভাষা, জ্ঞান, দক্ষতা জাদু করে সে নিয়ে নিয়েছে। আর কিছু অদ্ভুত শক্তি আমার মধ্যে দিয়েছে। এই শক্তি নাকি আমি রাতে ছাড়া ব্যবহার করতে পারবো না।


এইটা শুনে আমার মুখের কথা বন্ধ হয়ে গেল খুব অবাক হয়ে শরীরের সব শক্তি একত্র করে আবার জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে আপনি আবার কিভাবে ফিরে যেতে পারবেন।


সে বলল জানি না তবে আমার দুনিয়া থেকে আমাকে জানিয়ে দেবে। একটু আগেই আমি আমার দুনিয়ার লোকের সাথে যোগাযোগ করেছি।


আচ্ছা এইবারএইবার বুঝতে পারছি। চোখ বন্ধ করে এইভাবে কান্না করার মানে হচ্চে মেয়েটি ওর দুনিয়ায় লোকের সাথে কথা বলছিলো।


সব কিছু শোনার পর ওর নাম জিজ্ঞেস করলাম। নাম শুনে আমি হাসবো নাকি কান্না করবো বুঝতে পারছি না। ওর নাম বললো "মিরাকুশ্রীলা"।


ওর নাম শুনে চোখ বড় বড় করে হাঁসি হাঁসি মুখ নিয়ে বললাম, এইটা কি আপনার নাম? 

মেয়েটি একটা মিস্টি হেসে মাথা নিচু করলো। তারপর আমি বললাম, আপনাকে আমি মীরা বলে ডাকবো।


তারপরই কিছুদিন পর মীরার মতামত নিয়ে ওকে বিয়ে করে ফেললাম। বিয়ের পর শুনলাম মাঝেমধ্যে ওরা নাকি মানুষের মাংস খাই তবে মৃত মানুষের মাংস ছাড়া খাইনা।


এইটা হচ্ছে মীরাকে পাওয়ার ঘটনা। তবে আজও খুব যত্নে বইটি লুকানো আছে। কয়েক মাস সংসার করছি তবে ওর কোনো ত্রুটি আমি পাইনি।

আচ্ছা অনেক কথা বললেন তবে মীরা কোথায়। বাথরুম থেকে এখনও আসছে না কেনো। এতক্ষন তো লাগার কথা না।


তারপর বাথরুমে গিয়ে যা দেখলাম এইটা দেখার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। এতদিন পর আবার কি হলো এইটা। এইটা দেখার পর আমার চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে নিচে পড়লো।


অলৌকিক বউ...👹👿

পর্ব: ০৩


তখন বাথরুমে গিয়ে যা দেখলাম এইটা দেখার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। এতদিন পর আবার কি হলো এইটা। এইটা দেখার পর আমার চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে নিচে পড়লো।

.

বাথরুমে গিয়ে দেখলাম মীরা নীচে পড়ে আছে। তবে সে অজ্ঞেন। 


মীর যে অজ্ঞেন এইটা স্বাভাবিক, তবে মীরার চোখ দিয়ে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। কেন এইটা হচ্ছে জানি না তবে যার জন্য এমন টা হইছে তাকে আমি ছাড়বো না। 


এক দৌড়ে মীরার কাছে গেলাম। মীরার কাধের নীচে আমার বাম হাত দিয়ে উপরে উঠিয়ে ধরলাম। এখন মীরার মাথা আমার বুকের কাছে। আর ডান হাত দিয়ে মীরার চোখের রক্ত মুছিয়ে দিচ্ছি আর মীরাকে ডাকছি। নাহ, কেন সাড়া দিচ্ছে না। মুখে পানির ঝাপটা দিলাম এবারও কোনো কাজ হয়নি।


তাই কোলে তুলে নিলাম আর বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলাম। 


বাথরুমের হালকা আলোয় যেইটা চোখে পড়েনি এখন সেইটা চোখে পড়ছে। দেখলাম মীরার গোলাই আঙ্গুলের দাগ। বেশ মোটা মোটা পাঁচটি আঙ্গুল খুব সুন্দর ভাবে বোঝা যাচ্ছে। আর যেখানে যেখানে আঙ্গুল এর দাগ ঠিক সেখানে সেখানে কালো হয়ে গেছে।


গলায় এইটা কিসের দাগ এইটা বোঝার জন্যে আমি দাগের ঐখানে হাত দিলাম। হাত দিতেই আমি চমকে উঠলাম। দেখলাম মীরার শরীর একদম ঠান্ডা। অন্য কিছু না ভেবে মীরার বুকের বাম পাশে আমার কান দিলাম।


কতক্ষণ এভাবে ছিলাম জানি না। তবে আমার চোখের জল যখন আমার বাম গালে অনেকখানি জমে গেছে তখন বুঝলাম কিছুই ঠিক নাই। মীরার যে হৃৎপিন্ড কাজ করছে না এইটা ভেবেই কান্না করছি। তখন মীরার নিথর শরীর টাকে আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শরীরের সব শক্তি দিয়ে একটা চিৎকার দিলাম।


বাঁধ ভাঙ্গা চোখের জল। দেখলাম আমার চিৎকারের সাথে সাথে কয়েক ফোঁটা পানি গাল বেয়ে নিচে পড়ছে। চোখকে আর আটকাইনি। তবে মীরার এই নিথর শরীরটির সাথে আমি একটা ওয়াদা করে ফেলেছি, যেভাবেই হোক আমি মীরাকে ফেরাব।


এইটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়লো বইটির কথা। নিশ্চুই ওই বইটির মধ্যে কোনো সমাধান আছে। তাই খুব যত্নে মীরাকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। চোখ মুছতে মুছতে লুকানো বইটি বের করলাম।


অনুভব করলাম বইটি স্পর্শ করার সাথে সাথে কিছু একটা আমার পিছে আছে। পিছে ঘুরে দেখলাম, কিন্তু না, সেখানে কিছুই নেই। আজ বইটি আগের থেকে অনেক বেশি ভারী। বইটি নিয়ে নীচে বসলাম। আর সাথে তিনটা মোমবাতি নিলাম।

বইটি আমার সামনে রাখলাম আর প্রথমদিন যেভাবে মীরাকে দেখেছিলাম সেভাবে বসলাম। আর মোমবাতি তিনটি জ্বালিয়ে আমার ডান পাশে একটা, বাম পাশে একটা আর বইটির সামনে একটা রাখলাম। এইবার বইটিতে হাত দিলাম। হাত দিয়ে বইটি খোলার আগে একবার মীরার মুখের দিকে দেখলাম। তখন দেখলাম মীরার মুখ আগের থেকে অনেক কালো হয়ে গেছে। এইটা দেখে খুব কষ্ট আর রাগ হচ্ছে।


এইবার চোখ বন্ধ করে বইটির মাঝখান থেকে খুলে ফেললাম। বইটি খোলার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমি হওয়ায় ভাসছি। কোনো কিছু অনুভন করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।


হঠাৎ আমার কাঁধে খুব ব্যথা অনুভব করলাম। কি হইছে এইটা দেখার জন্যে আমার কাধে হাত দিচ্ছি, কিন্তু কোনো অনুভব শক্তি কাজ করছে না। হঠাৎ আরেক সমস্যার সামনে পড়লাম। কে যেন আমার গলায় খুব জোরে চেপে ধরেছে। আমার শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। 


কে এমনটা করছে দেখার জন্য যেই চোখ খুলেছি তখনই অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম আমি পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। আমিতো আমার ঘরের মধ্যে ছিলাম তাহলে এইখানে কিভাবে এলাম। এমন অনেক প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরছে।


নীচে তাকাতেই আবার অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম আমি অন্য পোশাক পরে আছি। যেমন পোশাক সেইদিন মীরা পড়েছিল একদম সেই পোশাক।


মাথার উপর তাকিয়ে দেখলাম নীল আকাশ। একটুও মেঘ নেই। আর সামনে যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। আর নীচে আমার পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পানি।


পোশাক দেখে খুব বিরক্ত লাগছে, তাই একটু বিরক্তির ভাব নিয়ে পোশাকটি উঠিয়ে ধরলাম। একদম সাদা, অন্য কোনো রং নেই। কেমনপোশাক পরে আছি এইটা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আমার পিছনে একটা গলা শুনলাম।


গলাটা খুব চেনা। পিছে কে কথা বললো তাকিয়ে দেখলাম।

দেখলাম আমার থেকে প্রায় কয়েক হাজার মাইল দূরে একজন দাঁড়িয়ে।


কে এইটা চেনা যাচ্ছে না। তবে যেখানে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে থেকে একটা আলোর ঝলক এখানে আসছে। লোকটির সাথে কথা বলা খুব প্রয়োজন তাই অনেক জোরে জিজ্ঞেস করলাম, কে আপনি।


প্রথম ডাকে কোনো কথার উত্তর না দিলেও দ্বিতীয় ডাকে ঠিকই উত্তর পেয়েছি। তবে আমার পিছে থেকে উত্তর টা পেয়েছি।


এইবার পিছে ঘুরে খুব অবাক হলাম। দেখলাম লোকটি লোক একদম আমার সামনে। এই লোকটিকে দেখার পর আবার পিছে তাকিয়ে দেখলাম কিন্তু সেখানে কেউ ছিল না। আরে এইটাতো সেই লোক। যার কাছে থেকে বইটি কিনেছিলাম। ইনি এখানে কিভাবে?


খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার নাম কি? আপনি কে? আপানি থাকেন কোথায়?


আমার এতগুলো প্রশ্ন শুনে তিনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন: আমি বলেছিলাম সাবধান,

তুই কেন আরো সাবধান হতে পারলি না?


ওনার কোনো কথাই আমি বুঝতে পারলাম না। কি বলতে চাচ্ছেন ইনি। তাই চোখে অনেক অবাক ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম: আমার কি দোষ আর আমার উপর কেমম দায়িত্ব ছিল আমিতো এইটাই জানতামই না।


তিনি তখন খুব অবাক করা করা কথা বললেন: তিনি বললেন, তুই এখন দাঁড়িয়ে আছিস সেই বইটির মধ্যে, আর তুই যার সাথে বিয়ে করেছিস সে আমার মেয়ে। তোকে আমি আমার সকল শক্তি দিয়েছি তাহলে তুই কেন আমার মেয়েকে রক্ষা করতে পারলী না।


ওনার কথা শুনে খুব অবাক হলাম আবার খুব রাগও হলো তারপর আমি বললামঃ আপনার মেয়েকে আপনি রক্ষা করতে পারেননি, সেখানে আমি কিভাবে রক্ষা করবো। আর আপনি যদি আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিতেন তাহলে আমি অবশ্যই আপনার মেয়েকে রক্ষা করতাম।


আমার কথা শুনে হয়তোবা তিনি একটু কষ্ট পেয়েছেন বা খুব গভীর ভাবনায় ডুবে আছেন। অনেক্ষন চুপ থাকার পর অনেকখানি করুন হয়ে বললেন: বাবা আলভী, আমার মেয়েকে তুমি বাঁচাও। জানি আমার ভুল হয়েছে তবে তুমি আমার মেয়েটাকে বাঁচাও। আমার মেয়েটিযে বড্ড বিপদে আছে।


মীরা যে বিপদে এইটা শোনার পর আমার বুক ধক করে উঠলো। খুব অস্থিরতার সাথে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় মীরা?


তিনি আমার মুখে মীরা নাম শুনে খুব রাগী গলায় বললেন: এইটা আমার মেয়ের আসল নাম না। তুমি ওর আসল নাম ধরে ডাকো।

ওনার কথা শুনে আমি একটু ভয় পেয়েছি, তারপর ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় মীরাকুশ্রীলা।


তখন তিনি একটু মন খারাপ করে বললেন, সে এখন একটা বদমাইশ লোকের কাছে বন্দি। সেই লোকটি যদি মীরাকুশ্রীলা কে একবার বের করে তাহলে সে হবে এই দুনিয়ার রাজা। তুমি আমি আমার মীরাকুশ্রীলা সবাই মারা পড়বো আর যে এই বইটিতে হাত দিবে সে এই দুনিয়াতে চলে আসবে আর তোমাদের দুনিয়াতে 

তাঁদের শক্তি বাড়বে।


উনার কথা শুনে আমি বললাম তাহলে কোথায় সেই লোকটা, আমি তার মুখোমুখি হতে চাই।


তারপর মীরাকুশ্রীলার বাবা যা বললেন এইটা শোনার পর আমার নিজেরই মরে যেতে ইচ্ছা করছে। এইটা কিভাবে সম্ভব। কিভাবে আমার মীরা কে উদ্ধার করবো এইটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম।।।


অলৌকিক বউ...👹👿

পর্ব: ০৪


তারপর মীরাকুশ্রীলার বাবা যা বললেন এইটা শোনার পর আমার নিজেরই মরে যেতে ইচ্ছা করছে। এইটা কিভাবে সম্ভব। কিভাবে আমার মীরা কে উদ্ধার করবো এইটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম।।।


তিনি বললেন, এই পুরো দুনিয়াটা আমার আর ভবিষ্যতে আমার মেয়ে যার সাথে থাকবে সে এই দুনিয়ার সম্রাট হবে। 

আর যে মীরাকুশ্রীলা কে আটকিয়ে রেখেছে সে এক সময় আমার শিষ্য ছিলো। আজ সে যেই শক্তি নিয়ে আমাকে প্রতিহত করছে, ওই সকল শক্তি আমার শেখানো। আমার মাদ্ধমে সে এমন শক্তি আয়ত্ত করতে পেরেছে।


আমি চাইলে ওই শয়তান টাকে হত্যা করতে পারি তবে একদিন এমন দিন আসবে যে ওর থেকেও বেশি শক্তিশালী লোক আমার মীরাকুশ্রীলার উপর আক্রমণ করবে। আর সেইদিন আমি তোমাদের সাথে থাকবো না।


তাই আমি চাই ওই শয়তানটার সাথে তুমি লড়াই করো। আমার বিশ্বাস আছে তুমিই জিতবে বাবা, তুমিই জিতবে।


এইটা বলেই উনি আমার দিকে একটা করুন দৃস্টিতে তাকিয়ে আছেন। এইটা শোনার পর আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আসলে আমার কি বলা উচিত এইটাও জানি না।


নিজের মধ্যেই অনেক হিসেব করতে শুরু করলাম। আমি যদি সেই শয়তানটার সাথে লড়াই করতে যায় তাহলে হয়তো আমার মৃত্যু হবে। আমার যে মৃত্যু হবে এটাই স্বাভাবিক কারণ এদের জাদুতে আমি পারদর্শী না। কিন্তু আমি যদি না যায় তাহলে মীরাকে ফিরে পাওয়ার শেষ চেষ্টা টাও ব্যর্থ হবে। মীরাকে মিথ্যা ভালোবাসা দিয়ে ঠকানো হবে। আর আমি চাইনা আমার মীরার কাছে আমি ঋণী থাকি। যদি মরতেই হয় একসাথে মরবো আর বাঁচতে হলে একসাথে বাঁচবো।


সব হিসাব শেষ। মীরাকে আমি উদ্ধার করবোই। এইটা ভাবতেই মীরার গলার সেই আঙ্গুলের দাগ আর ওর মায়াবী চোখের কথা মনে পড়লো। খুব কষ্ট লাগছে তাই আমার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আমার চোখ বন্ধ করতে মীরার মুখের সেই পাগল করা হাসি আমার চোখের সামনে ভাসছে।


মীরার কথা মনে পড়তেই খুব রাগ হচ্ছে তাই প্রচুর রাগ নিয়ে চোখ খুললাম। রাগে অগ্নিশর্মা হওয়া চোখ নিয়ে সেই লোকটির দিকে দেখলাম। 


আমার মনে হয় আমার এমন চোখ দেখে তিনি আমার মনের কথা বুঝতে পারছেন। তারপরই তিনি মুখে একটা অদ্ভুত হাসি দিলেন। তার হাসির মধ্যে একটা প্রতিশোধের আভা দেখা যাচ্ছে। হয়তো তার মধ্যে জমে আছে অনেক দিনের প্রতিশোধের নেশা।


তারপর উনি আমাকে ডাকলেন, আমার পিছে পিছে এসো। কোনো কিছু দুখে ভয় পেয়েও না। আমি যতক্ষন তোমার সাথে আসছি কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। 

এইটা বলেই উনি চলতে শুরু করলেন।


পানির মধ্যে দিয়ে হাঁটছি। পা থেকে পানি ছিটকে একটু দূরে গিয়ে পড়ছে। আর প্রতি সেকেন্ডে মীরার জন্যে ওই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ পানির মধ্যে থেকে একটা আলোর ঝলক চোখে পড়লো। এইটা কোনো স্বাভাবিক আলো না। মনে হচ্ছে দূর আকাশ থেকে একটা জ্বলন্ত নক্ষত্র নীচে নেমে এসেছে।


অনেক আগ্রহ নিয়ে ওই আলোটির উপর হাত দিলাম। এইটা কোনো স্বাভাবিক কিছু না। তাই মীরার বাবাকে উদ্দেশ করে বললাম, একটু দাঁড়ান। এইখানে কিছু একটা আছে।


আমার কথা শুনে উনি ঘুরে আমাকে ঘুরে দেখলেন। তারপর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, কি হয়েছে। এখনো অনেক পথ বাকি। 

এইটা বলেই হঠাৎ উনি আমার পাশে পানির মধ্যে বসে পড়লেন। বসেই ওই আলোর ঝলকটি ধরে টানাটানি শুরু করলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বেশ কিছুক্ষণ টানাটানির পর উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে ঐখান থেকে দূরে যেতে বললেন।


আমিও একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তারপরই অবাক করা একটা দৃশ্য চোখে পড়লো। দেখলাম উনার মাথার মধ্যে থেকে অনেক মোটা একটা আলোর ঝলক বের হয়ে পানির মধ্যে সেই আলোর ঝলকের মধ্যে পড়লো। কিন্তু একটু পরেই তিনি পানির মধ্যে লুটিয়ে পড়লেন।


কি হলো এইটা বুঝলাম না। আমি ওনার কাছে গিয়ে ধরতে চেষ্টা করলাম কিন্তু তিনি আমাকে নিষেধ করলেন। তার এমন অবস্থা দেখে খুব মায়া লাগছে। তারপরই উনি বললেন, এইটা অসম্ভব। 


তারপর আমার সামনে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, চলো আমাদের পথে ফিরে যায়। 

ওনার কথা শুনে একটু বিরক্ত হয়ে বললাম, চলে যাবো? আমিতো চেষ্টা করে দেখলাম না ঐটা কি। আগে আমি চেষ্টা করি তারপর যায়।


এইবার উনি বেশ রাগি গলায় বলেন, এইটা অসম্ভব, আমি এখানকার রাজা হয়ে যা পারিনি, তুই পারবি কিভাবে।


ওনার কথার সম্মান জানিয়ে আমি আমার মাথা নিচু করলাম। তারপরই উনি চলতে শুরু করলেন। কিন্তু আমিতো হাল ছাড়ার পাত্র না। উনি যাক, আমি একবার চেষ্টা করবোই। না চেষ্টা করে আমি এখন থেকে যাচ্ছি না।


তারপর ওই আলোর ঝলকটির পাশে গিয়ে বসলাম। ওই ঝলকটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হাত দিয়ে অনুভব করলাম। তারপরই বুঝতে পারলাম অস্সাভাবিক কিছু একটা আছে। তাই ওই অস্সাভাবিক জায়গাটিকে অনেক মজবুত করে ধরলাম। আর চোখ বন্ধ করে অনুভব করলাম। 


এইবার শরীরের সকল শক্তি দিয়ে অনেক জোরে একটা চিৎকার দিয়ে টান দিয়েছি। বুঝলাম কাজ হয়েছে, ঐটা যেটাই হোক এখন আমার হাতে। তখন নিজের অজান্তেই ঐটা মাথার উপর তুলে ধরলাম।


চোখ খুলে যা দেখলাম খুব অবাক হলাম। দেখলাম একটা তলোয়ার। স্বাভাবিক লাগছে না তবে খুব সুন্দর। এই তলোয়ার পানির মধ্যে থেকে তোলার সময় যতটা ভারী লাগছিলো, এখন মোটেই এইটা ভারী না।


কিন্তু আমার সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না কেনো। এতক্ষন আমার হাত উপরে উঠানো ছিল। এখনো ওঠানো আছে তবে আমার সামনে অনেক ধোঁয়ায় ভর্তি। তারপরই আমার হাত নীচে নামিয়ে ধরলাম।


এখন সবকিছু দেখা যাচ্ছে। আমার হাত নিচে নামিয়ে ধরতেই সব ধোঁয়া জাদুর মতো কোথায় জানি উধাও হয়ে গেল। ধোঁয়া উধাও হতেই আমার সামনে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। সামনে দেখলাম মীরাকুশ্রীলার বাবা আমার সামনে হাট গেড়ে বসে আছে। তার হাত দুইটা জোড়া করে উপরে উঠানো আর মাথাটা নিচু।


ওনার এই অবস্থা দেখে তলোয়ারটি নীচে ফেলে দিলাম আর ওনার দুই কাঁধে হাত দিয়ে ওনাকে দাঁড় করাইলাম।


দাঁড় করিয়ে দেখলাম উনার চোখে পানি। তারপর বিনীত ভাবে বলছেন, মাফ করুন মহারাজ, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। 

এইটা বলেই সে কান্না করছে।


আমি জিজ্ঞেয় করলাম, মহারাজ মানে? কে মহারাজ। আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।


আমার কথার উত্তর না দিয়ে বললেন, আগে তলোয়ারটি উঠান আর চলুন এখন। পরে সব বলবো, এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে না।


আমি বললাম, আচ্ছা চলুন।

এইটা বলেই তলোয়ারটি উঠাইলাম। হাত দিয়ে ধরার সময় গতবারের মতো কঠিন লাগেনি তবে আমার শরীর অনুভব করতে পারছে এই তলোয়ার এর মধ্যে অদ্ভুত কিছু একটা আছে।

প্রায় কয়েক ঘন্টা হাঁটার পর উনি বললেন আমরা নাকি চলে এসেছি। কিন্তু আমার চোখে কিছু পড়ছে না। যতদূর দেখতে পাচ্ছি শুধু পানি আর পানি। তাই ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম: সত্যি কি আমরা চলে এসেছি? কিন্তু আমিতো পানি ছাড়া কিছু দেখতে পাচ্ছি না।


তারপর উনি চোখ বন্ধ করে ওনার ডান হাত সোজা করলেন। সোজা করেই হাতের মুঠো খুললেন। তখন দেখলাম ওনার হাতের সামনে কিছু একটা আছে। ঘোলা ঘোলা কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। তারপর উনি চোখ খুললেন আর আমাকে বললেন, আসুন মহারাজ, আপনার রাজত্বে আপনাকে স্বাগতম। 

এইটা বলেই উনি ভেতরে চলে গেলেন।


আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। একটু ভয় লাগছে। তবে না ঢুকলে কেমন হয়। এইটা ভেবেই একটু একটু করে সামনে এগিয়ে গেলাম। পায়ে হেটে ঘোলা ঐটার মধ্যে ঢুকে পড়লাম। একটু পর বের হয়ে পড়লাম। বের হতেই আমার চোখে একটা ঝলক লাগলো। জানি না কেমন ঝলক তবে আমার তলোয়ারের মতো না।


এখন আমার চোখের সামনে সব কিছু স্পষ্ট।

আমি একটা পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আর আমার সামনে বিশাল একটা প্রাসাদ দেখা যাচ্ছে। আর যেই ঝলকটি এলো ঐটি প্রাসাদের মাথা থেকে।


তবে প্রাসাদে যাবার আগে অনেক বড় একটা ফাঁকা ময়দান পর হতে হবে। প্রাসাদটি দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। আসলেই এত বড় আর এত সুন্দর কি কিছু হতে পারে। তবে মীরাকে দেখে যতটা অবাক হয়েছিলাম তার থেকে অনেক কম অবাক হয়েছি।


আমিযে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি এইটা দেখে মীরার বাবা একটু বললেন, এইটা তো অবাক হওয়ার শুরু। এখনো অনেক কিছু আছে। যা দেখে আপনার বাকশক্তি হারিয়ে যাবে।


ওনার কথা শুনে বললামঃ এখনই আমার বাকশক্তি হারিয়ে গেছে। আসলেই এত সুন্দর কিছু যে দেখতে পাবো এইটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।

এইটা বলেই ওনার পিছে দেখলাম।


ঐখানে কিছু একটা আছে। ঐটা দেখেই বললাম, কে ওখানে।


কোনো উত্তর পেলাম না। আরও কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। তারপরই মীরার বাবা খুব অবাক করা একটা কথা বললেন। বললেন,সৃস্টিকর্তা রক্ষা করুন।


আমি ওনার কথা শুনে খুব অবাক হলাম তারপরই অনেক দূরে দেখলাম অদ্ভুত কিছু প্রাণী আমাদের দিকে আসছে। ঐটা দেখার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ঐগুলো?


উনি বললেন, এই প্রাসাদের রক্ষাকর্মী। ওদের ধ্বংস না করে আমরা প্রাসাদে যেতে পারবো না। আর ওদের ধ্বংস করা অসম্ভব। ইতিহাসে ওদের সাথে অনেক বীর যুদ্ধে গেছে কিন্তু কেউ ওদের হারাতে পারেনি। তবে যদি একবার ওরা কারো কাছে মাথা নত করে তবে ওরা তার গোলাম হয়ে যাবে।


ওনার মুখে এমন কথা শুনে খুব ভয় লাগছে। তারপরই লক্ষ করলাম পায়ের নিচের মাটি কাঁপছে। যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। তারপরই আবার লক্ষ করলাম আমার হাতের তলোয়ারটি একটু জলে আবার নিভে গেলো।


এইটা দেখে খুব অবাক হলাম। তারপরই আবার অবাক হলাম আরো একটা জিনিষ দেখে। সেটা হচ্ছে তলোয়ার থেকে আমার পুরো হাত লোহার বর্মে আটকে গেছে। একটু পর দেখলাম আমার পুরো শরীর একপ্রকার লোহাই আটকানো।


আমার কেমন অবস্থা উনি এখনো দেখেননি। উনি এখন যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উনি প্রাসাদের রক্ষাকর্মী গুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। আমিও ওদের দেখলাম। ওরা দেখতে অদ্ভুত, পায়ের নিচে থেকে পেট পর্যন্ত দেখতে মহিষের মতো আর তারা উপরে কিছুটা শকুনের মতো। তবে মানুষের মতো অস্র আছে। আবার শকুনের পাখির মতো ডানা আছে। ওদের দেখতে খুব অদ্ভুত।


আমি ওদের দেখে একটু একটু করে পিছে পাহাড়ের মাথায় উঠে গেলাম। তারপর নীচে দেখলাম উনি ওদের বিপক্ষে লড়াই করছে। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। তবে শরীরের সকল শক্তি একত্র করে ওদের সাথে লড়াই যাওয়া উচিত। তাই চোখ বন্ধ করে অনেক জোরে একটা চিৎকার দিয়ে তলোয়ারটি উপরে উঠিয়ে ধরলাম। উপরে উঠিয়ে তলোয়ারের দিকে তাকিয়ে চোখ খুললাম। আমার চোখ তলোয়ারের দিকে। একটু পর দেখলাম তলোয়ারটি থেকে অনেক আলো বের হচ্ছে। আমি কোনো ভাবেই তলোয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারতেছি না। তাই চোখ বন্ধ করলাম।


একটু পর বিকট একটা শব্দে চোখ খুললাম। চোখ খুলে তলোয়ারটি নীচে নামিয়ে ধরলাম। নিচে নামাতেই যা দেখলাম। আমি পুরো শেষ। এইটা আমি মোটেও আশা করিনি। এই এমনটা যে হবে আমি মোটেও কল্পনা করিনি। এইটা দেখার পর আমি হা হয়ে গেলাম। আর মনে মনে ভাবছি, এইটা কিভাবে সম্ভব।।


অলৌকিক বউ...👹👿

পর্ব: ০৫ ও শেষ 


একটু পর বিকট একটা শব্দে চোখ খুললাম। চোখ খুলে তলোয়ারটি নীচে নামিয়ে ধরলাম। নিচে নামাতেই যা দেখলাম। আমি পুরো শেষ। এইটা আমি মোটেও আশা করিনি। এই এমনটা যে হবে আমি মোটেও কল্পনা করিনি। এইটা দেখার পর আমি হা হয়ে গেলাম। আর মনে মনে ভাবছি, এইটা কিভাবে সম্ভব।।

.

দেখলাম ওই অদ্ভুত আকৃতির জীবগুলো আমার সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের ডান পা সামনে আর বাম পা পিছে তবে শরীরের সমস্ত ভর বাম পায়ে। ডান পা সোজা অবস্থায় আছে আর ডান পায়ের উপর হাত দিয়ে মাথা নত।


এই দৃশ্য দেখে আমি একদম অবাক। 


মীরাকুশ্রীলার বাবা ওদের মধ্যে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এখন অবশ্য ভালোই বুঝির পারছি অমন শব্দ কেন হলো।


আসলে তলোয়ার উপরে উঠিয়ে ধরার কারণে এই অদ্ভুত জীব গুলো আমার আয়ত্তে চলে এসেছে। মানে আমি ওদের হারিয়েছি তাই এখন ওদের রাজা আমি। আর ওরা যে আমার কাছে হেরে গেছে এইটা সব এই তলোয়ার এর জন্যে। হয়তো তলোয়ার থেকে কোনো এই শক্তি ওদের হার মানতে বাধ্য করেছে তাই এমন শব্দ হইছে।


আমার হাতের তলোয়ারটি এখনো আগুনের শিখার মতো জ্বলছে। তলোয়ারটি হাতে নিয়ে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে অনেক ভালো লাগছে। একটু পরে আমি হাতের ইশারা দিয়ে ওদের উঠতে বললাম। ওই অদ্ভুত জীবগুলো আমার কথা মতো উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। তখনই মীরাকুশ্রীলার বাবা এক দৌড়ে আমার কাছে চলে আসলো।


তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িত গলায় বললেন, ওই শয়তানের কাছে থেকে আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে আর কেউ আটকাইতে পারবে না। আমিও সান্তনা স্বরূপ ওনাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললাম, হুম আমাদেরই জয় হবে। এইটা বলেই একটা রাগী চোখ নিয়ে দূরের ওই প্রাসাদের দিকে দেখলাম।


অদ্ভুত ওই জীবগুলোকে তাদের আগের জায়গায় ফিরে যেতে বলে আমরা প্রাসাদের দিকে হাঁটছি। আমার প্রতি পদক্ষেপে মনে পড়ছে মীরার কিছু স্মৃতি। ওর সাথে কথা বলা, ঝগড়া করা, কাঁচা মাংস এনে দেওয়া সব কিছু।


হঠাৎ একটু পর মীরার বাবা বলে উঠলেন: আমি ৮০ বছর যাবৎ এখানে রাজত্ব করছি। আমার পাঁচ ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটা সবার ছোট। 


আমার সকল সন্তানকে ওই শয়তানটা মেরেছে। আমি ভাবতাম সে আমার বন্ধুর মতো কিন্তু না। আমি ভুল ছিলাম। সে একটু একটু করে আমার সকল জাদু আয়ত্ত করে আর এক সময় আমার বিরুদ্ধে এসে দাঁড়ায়।


যেইদিন আপনার কাছে সেই বইটি দিয়ে আসি ওইদিন যদি বইটি না খুলতেরন তাহলে আমার মীরাকুশ্রীলা আজ জীবিত থাকতো না। ওই শয়তানটা রাজ্য পাবার লোভে কাউকে ছাড়বে না।


এইটা বলেই উনি পথ চলা থামিয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। আমি জানি এখন আমার কি বলা উচিত, আর কি করা উচিত।

তাই আমার বাম হাত ওনার কাঁধের উপর দিয়ে বললাম: আমি প্রতিশোধ নিবই। আসার সময় মীরাকুশ্রীলার প্রাণহীন শরীর চুইয়ে শপথ করে এসেছি আমি এর প্রতিশোধ নিব।


তারপরই খেয়াল করলাম উনি মাথা নিচু করলেন। ওনার চোখ থেকে একফোঁটা পানি।নিচে গড়িয়ে পড়লো। তারপর উনি আমার হাতের উপর হাত দিয়ে বললেন: অবশ্যই আপনার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।


এইটা বলেই উনি হাটতে শুরু করলেন। কিন্তু আমি ওনার পিছে না হেটে ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে জিজ্ঞেয় করলামঃ আচ্ছা, এই তলোয়ার সম্পর্কে কিছু বলেন।


তখন উনি পথ চলা থামিয়ে আবার পিছে এসে আমার মুখোমুখি দেখলেন। কোনো কথা বলছেন না। এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। 


এই লোকটি আসলেই অনেক অদ্ভুত। মুখ ভর্তি সাদা দাঁড়ি, আর মাথা ভর্তি সাদা চুল। সাথে তো সাদা পোশাকে আছেই। সব মিলিয়ে একদম অন্য রকম একটা মানুষ। তারপরই উনি বলতে শুরু করলে: এই তলোয়ার এর ইতিহাস এখন থেকে প্রায় ছয় লক্ষ বছর আগের ঘটনা।


এই জাদুর সম্রাজ্য তৈরি করেন একজন পিশাচ। সে কিন্তু একজন মেয়ে। আর সে এই সম্রাজ্য তৈরি করে তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে।


তার স্বামী ছিলেন একজন খুব বড় পিশাচ। সে চাইলে যুগ যুগান্তর ঘুরতে পারতো। কিন্তু তার অকাল মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর শোকে তিনি তৈরি করেন এই রাজ্য।


এই রাজ্য পরিচালনার জন্যে তৈরি করেন আপনার হাতের এই তলোয়ার। এই তলোয়ার এর মধ্যে আছে এই রাজ্য স্রষ্টার এক অশেষ শক্তি। তারপর উনি উনার সম্প্রদায় নিয়ে এইখানে থাকতে শুরু করেন। ওনার মৃত্যুর পর একের পর এক নতুন সম্রাট আসতে থাকে তবে এই তলোয়ারএর সন্ধান কেউ দিতে পারতো না। আর আপনি দ্বিতীয় মানব যে কিনা এই রাজ্য সৃস্টি করিনি রানীর পর আজ এই তলোয়ার ধরলেন।


তারপর আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম: তারমানে আমি এখন পৃথিবীর সব থেকে বড় শক্তিশালী পিশাচ। আমি চাইলে এই দুনিয়া ঘুরতে পারবো তাইতো।


তিনি আমার এমন প্রশ্ন শুনে হেসে পিছে ঘুরে হাটতে শুরু করলেন। আমিও ওনার পিছে হাঁটছি। কিছুক্ষন পর উনি বললেন: আপনি চাইলে অতীতে গিয়ে দেখে আসরে পারেন মীরাকুশ্রীলার সাথে কি হয়েছিল। কিন্তু এখন যাবেন না। যতক্ষণ সূর্য আছে ততক্ষণ আমার মীরাকুশ্রীলার জীবিত। সূর্য ডোবার আগেই ওর শরীরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা লাগবে।


এইটা শুনেই আমি এক দৌড়ে ওনার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম: আর কতদূর যেতে হবে।


তিনি আমার এমন প্রশ্নে শুনে খুব একটা কিছু না ভেবে বললেন: বেশি দূর না। আর মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। তবে আপনার সামনে যা দেখছেন এইটা পুরাই জাদু। এইটা বলেই উনি হাটতে শুরু করলেন।


কিছুক্ষন পর আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম মীরাকুশ্রীলার বাবা এক নিমিষে অনেক দূরে চলে গেলেন। এইটা কি ঘটলো কিছু বুঝলাম না। তাই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর দেখলাম উনি আবার আমার সামনে চলে আসলেন।


আমি জিজ্ঞেস করলাম এইটা কি হলো। উনি হা হা করে হেসে উঠলেন। তারপর উনি আমার বললেন এইটা নাকি সব জাদু। আমরা প্রাসাদের এরিয়ার মধ্যে ঢুকছি তাই এমন লাগছে। তারপরই উনি আমাকে ওনার পাশে নিয়ে হাঁটছেন।


একটু পরেই প্রাসাদের মস্র বড় একটা গেটের সামনে এসে দাঁড়াইলাম। সামনে দেখলাম অনেক বড় একটা মূর্তি। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে মূর্তির হাতে একটা তলোয়ার আছে। আমার হাতের তলোয়ার আর মূর্তির হাতের তলোয়ার একই।


তারপরই মীরাকুশ্রীলার বাবা মূর্তির দিকে আঙ্গুল ইশারা করে বললেন: এইটা আপনি মহারাজ।


ওনার কথা শুনে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম: আমি মানে? আমি কিভাবে আর আমাকে কেউ কি আগে কখনও দেখেছে?


তিনি মুখে হাসি নিয়ে বললেন: অবশ্যই, প্রায় ছয় লক্ষ বছর আগে এই মূর্তি বানানো। যিনি এই রাজ্য বানিয়েছেন তিনি জানতেন একদিন আপনি আসবেন আর এই তলোয়ার দ্বিতীয় বার আপনি ধরবেন।


মীরাকুশ্রীলার বাবা এই কথা শেষ করার আগেই কে যেন খুব জোরে আমার মাথায় আঘাত করলো। তারপর আর কিছুই মনে নাই।


যখন চোখ খুলে দেখলাম। তখন আমি একটু উপরে ঝুলছি। আমার হাত, পা, কোমর খুব সুন্দর করে বাঁধা।


খুব কষ্টে মাথা তুললাম। দেখলাম এখন মাত্র বিকেল। সামনে আমার তলোয়ারটি পর আছে। তলোয়ারটি দেখে এখন থেকে বের হতে চেষ্ঠা করলাম। কিন্তু পারলাম না।


হঠাৎ দেখলাম কে যেনো আমার গালে হাত দিয়ে স্পর্শ করলো। কিন্তু কৈ কেউতো নাই এখানে। তারপরই অবাক করা একটা গলা শুনলাম। সে আমার নাম ধরে ডাকছে। খুব হালকা একটা শব্দ আমার কানের কাছে এসে আমার নাম ধরে ডাকলেন। 


মীরার গলা শুনে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। খুব জোরে মীরার নাম ধরে ডাক দিলাম আর তারপরই শরীরের সকল শক্তি একত্র করে ওই বাধন থেকে মুক্ত হয়ে নিচে পড়লাম।


নীচে পড়ার পর শরীর কে ওই তলোয়ার এর আছে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। তবুও কোনো রকম হামাগুড়ি দিয়ে ওই তলোয়ারের কাছে চলে আসলাম। এখন ভাবছি এই ভেঙে পড়া শরীর নিয়ে কিভাবে আমি প্রাসাদে যাবো।


তবুও খুব কষ্টে তলোয়ারটি স্পর্শ করলাম। তলোয়ারটি স্পর্শ করার সাথে সাথে শরীরের সকল ক্লান্তি, ব্যথা, যন্ত্রনা চলে গেলো। মনে হচ্ছে আমি কখনো ক্লান্ত হয়নি।


তারপরই শরীরের সকল শক্তি একত্র করে আবার অনেক জোরে একটা চিৎকার করলাম। আমি বুঝতে পারলাম আমার এক চিৎকারে আকাশে কেমন একটা ঝড় ওঠার মতো অবস্থা হয়েছে। আমার হাতের তলোয়ারটি দিয়ে আগুনের গোলা বের হচ্ছে।


তারপর প্রাসাদের দিকে হাঁটছি। এমন সময় লক্ষ করলাম জোরে দৌড়ে কিছু লোক আমার দিকে আসছে। ওদের চিৎকার আমার কানে আসছে। তবুও চুপ করে আমি ঐখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। যখন ওড়ার আমার থেকে কয়েক হাত দূরে আছে তখনই আমার দুই হাত দিয়ে তলোয়ারটি চেপে ধরলাম। অলৌকিক একটা ব্যাপার ঘটলো।


দেখলাম তলোয়ার থেকে একটা আলোর শিখা বের হচ্ছে আর ওরা সবাই অনেক ধীর হয়ে গেছে। তখন আমি দুই হাত দিয়ে তলোয়ারটি চেপে ধরে ওদের দিকে দৌড় দিলাম।


এক এক করে সবাইকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করলাম। সবাইকে খুব সাবধানে আর ধৈর্য নিয়ে আহত করলাম। তারপর তলোয়ারটি থেকে এক হাত ছেড়ে দিতে সবাই এক সাথে মাটিতে পড়ে গেলো। ওদের দিকে আর এর নজর না দিয়ে প্রাসাদের মধ্যে ঢুকলাম। দেখলাম মীরার বাবা নীচে পড়ে আছেন। এক দৌড়ে আমি ওনার কাছে গিয়ে বসলাম তখন উনি অনেক কষ্টে আমাকে কিছু কথা বললেন।


উনি তার বাম হাত একটা সিঁড়ির দিকে ইশারা করে বললেন, এইদিকে যাও বাবা। আমার মেয়ের প্রাণ এখন তোমার হাতে । দেখ একটা সাদা বোতলের মধ্যে অনেক ধোঁয়া আছে। যে করেই হোক এই বোতল থেকে ধোঁয়া গুলি বের করতে হবে।


এক দৌড়ে সিঁড়ির কাছে গেলাম। দেখলাম সিঁড়িটি নিচে যাচ্ছে। আমিও ওই সিঁড়িটিকে অনুসরণ করলাম। একটু একটু করে নীচে চলে আসলাম। দেখলাম এই ঘরের মাঝখানে একটা বোতল। ওনার বর্ণনার সাথে এই বোতলটি একদম মিলে যাচ্ছে। তারপর আমি বতলটির কাছে যেতেই সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেলো।


দেখলাম আমার পিছে আর কোনো সিঁড়ি নেই। চারিদিকে টগবগে লাভা। আকাশ একদম লাল। আর মনে হচ্ছে কোনো রকম এই জায়গাটি এখানে আছে। একবার নীচে পড়লেই সব শেষ। তারপরই দূরে দেখলাম কে একজন দাঁড়িয়ে আছে। ওর শরীরের গঠন দেখে বুঝলাম এই সেই শয়তান। তারপরই সে আমার দিকে ঘুরে দেখলো। খুব ভয়ংকর চেহারা তার।


আগুনের তৈরি একটা মানুষ, শরীরে কালো একটা পোশাক, মাথায় বেশ বড় একটা মুকুট, যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে আগুন জ্বলছে। দেখে মনে হচ্ছে এই একটা ফুটন্ত লাভা। 


এক দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে ওকে আহত করতে চেষ্টা করলাম কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সে দূরে সরে গেলো। এমন ভাবে আরো আরো অনেক বাট মারতে চেষ্টা করলাম কিন্তু আমি ব্যর্থ। তারপরই অনেক জোরে সে আমাকে আঘাত করলো। আমি একটু দূরে গিয়ে ছিটকে পড়লাম। দেখলাম আমার তলোয়ারটি আমার থেকে দূরে চলে গেল।


খুব রাগ হলো তাই তলোয়ারটি আবার হাতে তুলে নিলাম। এইবার দুইহাত দিয়ে ধরে তলোয়ারটি সোজা করে নিলাম।সোজা করে নিয়ে অনেক জোরে চেপে ধরলাম। এবারও সব কিছু আগের মতোই থেমে গেছে। তাই এক দৌড়ে ওই শয়তান টার কাছে গিয়ে ওর মাথায় আঘাত করলাম। 


এই তলোয়ার এর একটা আঘাতেই শয়তানটা দূরে সরে গেল। আরো কয়েকটা আঘাত করলাম। এইবার সে আমার থেকে একটু দূরে গিয়ে খুব অর্তনাথ করতে লাগলো। একটু পর শয়তানটার শরীরের বিশাল এক বিস্ফোরণ ঘটলো।


সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেল। দেখলাম বোতলটি এখনো ঐখানে আছে। তাই বোতলটি নিয়ে মীরার বাবার কাছে চলে আসলাম।


উনি এখন ঐখানে উঠে বসে আছেন। আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বললেন, আমি জানতাম তুমি পারবে। এখন বোতলটি খোল। 


ওনার সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়লাম। তারপর তলোয়ারটি নীচে রেখে বোতলটি খুললাম। দেখলাম অনেক ধোঁয়া বের হচ্ছে। একটু একটু করে সমস্ত ধোঁয়া কোথায় হারিয়ে গেল।


তারপর মীরার বাবা বললেন, তুমি সফল হয়েছ বাবা। আমি যদি তোমাকে বাছাই না করতাম তাহলে জানি না আজ কি হতো। 


এইটা বলেই উনি বললেন তুমি এখন ফিরে যাও। প্রয়োজন হলে আমি তোমাকে ডাক দিব।


আমি তখন বললাম, কি ভাবে ফিরবো। আবার কি ওখানে যাওয়া লাগবে?


তিনি বললেন মোটেও না। তুমি এখানে বসো আর বইটির কথা মনে করো।


আমি তখন তলোয়ারটি পাশে রেখে ঐভাবে বসলাম। আবার সেই আগের মতো অনুভূতি। আমি হাওয়াই ভাসছি। কাঁধের কাছে একটা ছোট্ট ব্যথা। তারপরই খেয়াল করলাম আমার মুখে পানি। তাই খুব তাড়াতাড়ি চোখ খুললাম।


চোখ খুলে দেখি মীরা আমার পাশে বসে কান্না করছে। আর ওর হাতে পানির গ্লাস।


আমার চোখ খুলতে মীরা কান্না করে খুব শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ভালোবাসি। বাথরুম থেকে এসে দেখি তুমি অজ্ঞেন অবস্থায় শুয়ে আছো। জানো, খুব ভয় লাগছিলো।


তারমানে মীরার কিছুই মনে নাই। তখন আমি মীরাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। যেন মীরা আমার শরীরের সাথে মিশে আছে। তারপর একটু আলতো স্বরে বললাম: তোমার জন্যে সব করতে পারি, খুব ভালোবাসি।।।


.......সমাপ্ত........


গল্প:অলৌকিক বউ

লেখক: আলভী


আরও রহস্যময় গল্প পড়ুন।