প্রতিটা বউ শাশুড়ির জন্য শিক্ষা ও ভালোবাসার গল্প

 বউ শাশুড়ির সম্পর্ক

বউ শাশুড়ির সম্পর্ক

আমার বিয়ের ঠিক ৪দিন পর শ্বাশুড়ি আমার হাতে ৫কেজি ওজনের একটা রুইমাছ দিয়ে বললো,

~"আমাদের বংশের রীতি অনুযায়ী নববধূ বিয়ের চারদিন পর সবাইকে নিজ হাতে মাছ রান্না করে খাওয়ায়।তোমাকেও আজ রান্না করতে হবে"


বড়মাছ দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। বিয়ে ঠিক হবার পর ইউটিউব দেখে টুকটাক রান্না শিখেছি কিন্তু মাছ কাটা তো শিখি নি। মাছ হাতে নিয়ে কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। শ্বাশুড়ি তখন বললো,

~"কি হলো! মাছ কাটছো না কেন?


আমি শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,

-" মা, আমার বিয়ে কি একা একা হয়েছে?"

শ্বাশুড়ি অবাক হয়ে বললো,

~"একা আবার বিয়ে হয় নাকি? বিয়ে তো আমার ছেলের সাথেই হয়েছে"

আমি তখন হেসে বললাম,

-বিয়েটা যেহেতু আমার একা একা হয় নি তাহলে আমি কেন একা একা রান্না করবো? নতুন বর-বধূ একসাথে রান্না করবে...


আমার কথা শুনে পিছন থেকে আমার স্বামী বলে উঠলো, 

--"শ্রাবণীর কথায় যুক্তি আছে মা। নিয়মটা পাল্টানো দরকার"


এইকথা বলে পিয়াস(আমার স্বামী) আমার হাত থেকে মাছটা নিলো কাটার জন্য। আর শ্বাশুড়ি রাগ করে রান্নাঘর থেকে চলে গেলো। পিয়াস তখন মুচকি হেসে বললো,

--"তুমি একদম চিন্তা করো না। মাছ কাটার আমার প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে। মেসে থাকতে একা একা মাছ কেটে অনেকবার রান্না করেছি"


আমি অবাক হয়ে পিয়াসকে দেখছিলাম। বেচারার মাছ কাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বউকে একটু সাপোর্ট দিতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলো। আমি হলকা গলা কেঁশে বললাম, 

-বেশি কষ্ট হচ্ছে কি?


পিয়াস লাজুক হেসে বললো,

--"মেসে তো ছোট সাইজের মাছ কাটতাম। এতো বড় সাইজের মাছ কখনো কাটি নি।তাই একটু অসুবিধা হচ্ছে"


 বিয়ের আগে পিয়াসের সাথে যখন আমার প্রথম দেখা হয় তখন আমি ওকে বলেছিলাম,

 -ধরেন বিয়ের পর আমিও জব করি। কিন্তু ফ্যামিলির এমন একটা অবস্থা দাঁড়ালো, হয় আপনার চাকরি ছাড়তে হবে নয়তো আমাকে চাকরি ছাড়তে হবে।এমন অবস্থায় আপনি কাকে চাকরি ছাড়তে বলবেন?


পিয়াস সেদিন মাথা নিচু করে উত্তর দিয়েছিলো,

--" দেখেন একটা মেয়ে যেভাবে সংসার গুছিয়ে রাখে একটা ছেলে হয়তো সেভাবে গুছিয়ে রাখতে পারবে না। তাই বলে যে ছেলেরা সংসার গুছিয়ে রাখতে পারবে না এমনটা না। ছেলেরাও সংসারের অনেক কাজ পারে।হয়তো মেয়েদের মতো করে পারে না। বাংলাদেশে অনেক পরিবার আছে যেখানে স্বামী বেকার স্ত্রীর ইনকামে সংসার চলছে। আমাদের এমন পরিস্থিতি যদি হয় তাহলে দুইজনে বসে আলোচনা করবো। কার চাকরির কি কি সুযোগ সুবিধা সেগুলো নিয়ে কথা বলবো। যার চাকরি ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বেশি সে চাকরি করবে আর যার কম সে হয় চাকরি ছেড়ে দিবে"


পিয়াসের কথা শুনে আমি বলেছিলাম,

-ধরেন আপনার মায়ের সাথে আমার বনিবনা মিললো না। বউ শ্বাশুড়ি সারাক্ষণ ঝগড়া করি। এমন অবস্থায় আমি যদি আপনাকে নিয়ে আলাদা থাকতে চাই তখন আপনি কি রাজি হবেন? 


পিয়াস মাথা নিচু করেই উত্তর দিয়েছিলো,

--" না রাজি হবো না। দেখেন প্রতিটা সংসারে বউ শ্বাশুড়ির মাঝে টুকটাক ঝগড়া হয় তাই বলে যে বৃদ্ধা মাকে রেখে বউ নিয়ে অন্য বাসায় উঠবো এতো বড় পাপ কাজ আমি করতে পারবো না। বউ শ্বাশুড়ির ঝগড়া হলে আমি নিরপেক্ষ থেকে আগে বুঝার চেষ্টা করবো দোষটা কার। যার দোষ আমি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করবো। একবার না বুঝলে দ্বিতীয়বার বুঝাবো, দ্বিতীয়বার না বুঝলে তৃতীয়বার বুঝাবো। তবুও যদি না বুঝে আমি ততক্ষণ পর্যন্তই বুঝাবো যতক্ষণ পর্যন্ত না বুঝে। আমি সন্তান হিসাবে মায়ের প্রতি যেমন কর্তব্যের একচুলও কমতি রাখবো না তেমনি স্বামী হিসাবে স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বের একটুও অবহেলা করবো না"


আমি তখন বললাম, 

-যদি কখনো জানেন বিয়ের আগে আমার অন্য একটা ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। তখন কি করবেন?


পিয়াস তখন আমার চোখে চোখ রেখে বলেছিলো,

--"আপনার বয়স কতো?"

আমার চোখে সরাসরি চোখ রাখার জন্য আমি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললাম,

-জ্বি ২৩ 


পিয়াস মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললো,

--"বিয়ের আগের ২৩ বছর জীবনে আপনি কখন কি করেছেন সে বিষয় আমি কখনোই আপনাকে প্রশ্ন করবো না। শুধু খেয়াল রাখবেন বিয়ের পর যেন এমন ভুল না হয়"


পিয়াসের মুখ থেকে এই উত্তর গুলো শোনার পর আমি ওকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলাম...


  দুপুরে সবাই মিলে যখন খাচ্ছিলাম তখন আমি শ্বাশুড়িকে বললাম,

- মা, তরকারি কেমন হয়ছে?

শ্বাশুড়ি খেতে খেতে জবাব দিলো,

~"আমার ছেলের হাতের রান্না বরাবরই ভালো হয়"

আমি আর কিছু না বলে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলাম


বিকালের দিকে শ্বাশুড়ি রুমে এসে দেখি শ্বাশুড়ি মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,

-মা, আপনার মাথায় তেল দিয়ে দিবো?

শ্বাশুড়ি তখন ভারী গলায় বললো,

~"না"

আমি শ্বাশুড়ির পাশে বসে বললাম,

-মা, পাঁচ বছর বয়সে আমার মা মারা যায়। বাবা আমার কথা ভেবে আর বিয়ে করে নি। মেয়েরা সাধারণ মায়ের থেকে রান্না শিখে। আমার তো মা ছিলো না। তাই রান্নাটাও তেমন ভাবে শেখা হয় নি


এইকথা বলে আমি যখন চলে যাবো তখন শ্বাশুড়ি ভারী গলায় আমায় বললো,

~"মাথায় একটু তেল দিয়ে যাও। আর শুনো কাল থেকে আমি যখন রান্না করবো তখন আমার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তা দেখবে। তোমাদের ঐসব ভার্সিটির পড়াশোনার থেকেও রান্নাটা অনেক কঠিন। আমি প্রতিদিন রান্না শিখাবো আর সপ্তাহে একদিন পরীক্ষা করে দেখবো তোমার রান্না শিখা কতদূর হলো"


শ্বাশুড়ি কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে হাসতে লাগলাম। আর আমার হাসি দেখে শ্বাশুড়িও হেসে দিলো...

---

------


একদিন শ্বাশুড়ি আমায় ডেকে বললো,

~বউমা, আমাদের বংশের একটা নিয়ম আছে। ছেলের বিয়ের একমাস পর শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়ে জামাইকে একটা খাসি(ছাগল) দেয়। তুমি তোমার বাবাকে বলো একটা খাসি দিতে। তা নাহলে পাড়া প্রতিবেশী কথা শুনাবে


আমি মুচকি হেসে বললাম,

- ঠিক আছে মা


আমি দুপুরের দিকে পিয়াসের অফিসে গেলাম। পিয়াস আমায় হঠাৎ করে ওর অফিসে দেখে অবাক হয়ে বললো,

--" তুমি হঠাৎ আমার অফিসে"

আমি তখন বললাম,

- আমার একটা ছাগলের বাচ্চা লাগবে

পিয়াস বিস্ময়ের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 

--" মেয়েরা বিড়ালের বাচ্চা আবদার করে কিন্তু তুমি ছাগলের বাচ্চা আবদার করছো কেন?"

আমি মুখ গোমড়া করে পিয়াসকে পুরোটা বললাম আমি কেন ছাগলের বাচ্চা চাচ্ছি। আমার সব কথা শুনে পিয়াস মুচকি হেসে বললো,

-- ঠিক আছে আমি ছাগলের ব্যবস্থা করছি


এই ঢাকা শহরে ছাগল পাওয়া খুব কঠিন। পিয়াস অনেক কষ্টে এক কসাইয়ের থেকে একটা ছাগলের ব্যবস্থা করলো। ছাগল নিয়ে যখন আমি ফ্ল্যাটের ভিতর ঢুকে পরলাম তখন শ্বাশুড়ি অবাক হয়ে বললো,

~"আরে আরে! তুমি ছাগল নিয়ে এলে কোথা থেকে?"


আমি তখন বললাম,

- সকালে না বললেন ছেলের বিয়ের একমাস হয়েছে দেখে ছাগল লাগবে। তাই বাবাকে বলে ছাগলের ব্যবস্থা করলাম


শ্বাশুড়ি তখন বললো,

~"সে নাহয় বুঝলাম। তা এই ছাগল রাখবো কোথায় এখন?"

- তা তো আমি জানি না। আপনি ছাগলের কথা বলেছেন আমি ছাগল এনেছি। এখন কোথায় রাখবেন সেটা আপনি জানেন 


এইকথা বলে আমি শ্বাশুড়ি হাতে ছাগলের দঁড়িটা দিয়ে আমার রুমে এসে পরলাম। ছাগল তখন সমানে ব্যা ব্যা করছে আর শ্বাশুড়ি কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।


রুমে ঢুকেই আমি পিয়াসকে ফোন করে বললাম উপরে আসতে। পিয়াস বাসায় ঢুকে শ্বাশুড়িকে দেখে বললো,

--" মা তুমি বাসার মধ্যে ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমি কি ছাগল চুরি করেছো? কার ছাগল চুরি করলে?


শ্বাশুড়ি তখন রাগে লাল হয়ে বললো,

~"একটা থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো। আমি কেন ছাগল চুরি করবো? তোর বউকে বলেছিলাম বাপের বাড়ি থেকে একটা ছাগল আনতে। ঐ মেয়ে যে আজকেই সত্যি সত্যি ছাগল আনবে কে জানে"

পিয়াস একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

--"ছাগল না আনলে তুমি তো আবার আমার বউকে কথা শুনাতে"


শ্বাশুড়ি তখন কাঁদো-কাঁদো গলায় বললো,

~"নারে বাবা আমি বউমাকে কোন কথা শুনাবো না। তুই বরং তোর শ্বশুরকে ছাগলটা ফিরিয়ে দিয়ে আয়। আমার ছাগলের দরকার নেই"


পিয়াস তখন মুচকি হেসে ছাগল নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো আর আমি পিয়াসকে ফোন করে বললাম,

-ছাগল ফিরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। আমি তোমার প্রিয় খিচুড়ি রান্না করছি....

----

--------


সকালে নাস্তার টেবিলে জোড়া কলা খেয়েছি বলে শ্বাশুড়ি প্রচন্ডরেগে গিয়ে বললো,

~"বউমা তোমার বাচ্চা পেটে আর তুমি জোড়া কলা খেলে। এখন তো তোমার যমজ বাচ্চা হবে"

আমি হেসে বললাম,

-জোড়া কলা খেলে যমজ বাচ্চা হয় এটা আপনায় কে বলেছে? যমজ বাচ্চা কেন হয় আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি 


শ্বাশুড়ি আমায় তখন থামিয়ে বললো,

~" আমায় জ্ঞান দিতে হবে না। আমি তোমার মতো এতো শিক্ষিত না হলেও কিছু তো বুঝি। জোড়া কলা খেলে যে যমজ বাচ্চা হয় সেটা আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে সবাই মেনে এসেছে। তোমরা এখন দুইকলম পড়াশোনা করে বেশি বুঝো আর কি 


আমি আর শ্বাশুড়িকে কিছু বললাম না। কারণ এখন কিছু বুঝাতে গেলেই শ্বাশুড়ি আমার ভুল বুঝবে 

|

|

 আমার আল্ট্রাসনোগ্রাম করার আগেই শ্বাশুড়ি শতভাগ নিশ্চিত আমার নাকি যমজ বাচ্চা হবে কারণ আমি জোড়া কলা খেয়েছি

 

 একাহাতে তিনি দুই বাচ্চার যত্ন ঠিকভাবে নিতে পারবেন না । তাই তিনি গ্রাম থেকে কাজের মেয়ে আনার ব্যবস্থা করছেন। সারাদিন কাঁথা সেলাই করেন। আমি অনেকবার বলেছি এতো কাঁথা সেলাই করতে হবে না। উনি আমায় ধমক দিয়ে বলে দুইজনের জন্য কাঁথা বেশি লাগবেই। পিয়াসকে বলে দুইটা দোলনা আনিয়েছে। পিয়াস প্রথমবার একটা দোলনা এনেছিলো বলে শ্বাশুড়ি পিয়াসের উপর খুব রেগে গিয়েছিল। বেচারা পিয়াস পরেরদিন আবার আরেকটা দোলনা কিনে আনলো। শ্বাশুড়ির এমন পাগলো দেখে আমি নিজে নিজেই একা একা হাসি। মনে মনে ভাবলাম আমার সন্তান হওয়ার পর শ্বশুড়িকে যমজ সন্তান হওয়ার থিওরিটা ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবো... 

---

-------


আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর ডাক্তার ফারজানা ইসলাম মুচকি হেসে যখন বললো আমার যমজ বাচ্চা হবে তখন আমি অবাক দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পিয়াস হাসতে হাসতে আমায় জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বললো,

--"জয় জোড়া কলার জয়"


পিয়াসের ফাজলামো করে বলা কথাগুলো আমার মাথায় ঢুকছিলো না। আমার মাথায় তখন একটা চিন্তায় ঘুরপাক করছিলো। আর সেটা হলো, শ্বাশুড়িকে আমার আর যমজ সন্তানের থিওরি বুঝাতে হবে না৷ আজকের পর শ্বাশুড়ি আমায় জোড়া কলা থিওরি বুঝাবেন।


--------সমাপ্ত-------

-ছোটগল্প

গল্প-হ্যাপি_ফ্যামিলি 

আবুল_বাশার_পিয়াস


গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন।🥰


এমন আরও বউ শাশুড়ির শিক্ষামূলক গল্প পড়ুন।