বাবারা কেন তার মেয়েকে এতটা ভালবাসে | বাবা মেয়ের ভালোবাসা

বাবা মেয়ের ভালোবাসার স্ট্যাটাস

বাবা মেয়ের ভালোবাসার স্ট্যাটাস

 "আমার একটা আবদার আছে। ঠিক আবদার নয় শর্ত বলা যায় একে।"

আপ্যায়ন শেষে আগত অতিথিদের কথাটি বলল রহমত শেখ।


পাত্রপক্ষ ধাক্কা খেলো গাড়ির ব্রেকফেইল করার মতো। মুরব্বিগোছের একজন পুরুষ তার মেহেদি দেওয়া গোঁফ দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে নিতে নিতে শুধালেন,


" আপনার মেয়ের একাধিক বিয়ে ভেঙ্গে গেলো শুনলাম। যদিও আমরা কারণ জানি না। তারমধ্যে কন্যার বাপ হয়ে উল্টো আপনার শর্ত ? হাস্যকর। তা পেশ করুন শুনি?"


" তা আপনারা মিছে শুনেন নি। এবং জানি আমার কন্যার এই সম্বন্ধটাও হয়তো ভেঙ্গে যাবে। তবুও আমি আমার শর্ত তুলে নিব না। আপনারা শুনতে আগ্রহী? " 

স্বতঃস্ফূর্ত গলায় বলল কন্যার পিতা রহমত শেখ। 


" নাহ ! আমরা ভারী অনাগ্রহী ও বিরক্ত। শোনার আবশ্যক মনে করি না।" 


এই বলে সেই লোকসহ বাকি সবাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো প্রস্থান নেওয়ার জন্য। কিন্তু পাত্রের পিতা জয়নব তালুকদার কৌতুহল বোধ করলেন। তিনি হাত উঁচিয়ে তাদের থামিয়ে নিলেন। রহমত শেখের মুখপানে চেয়ে সৌহার্দপূর্ণ হাসি দিলেন। বললেন, 


" ভাইজান আপনার শর্ত শুনতে আমি আগ্রহী। নিসংকোচে বলুন আপনি। "


"আমি আপনাদের কোন পণ দিব না কন্যার জন্য। কোন সোনা গহনা দিব না আমার কন্যাকে। আমার কন্যাকে একটি নতুন ঘর বা বাড়ি বানিয়ে দিবো আমার সামর্থ্যের মধ্যে। যেটা হবে একান্তই আমার কন্যার একটা আপন ব্যক্তিগত ঘর কিংবা নিজের ঘর। যেখানে সে ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির কোনরকম হস্তক্ষেপ থাকবে না। যেমন মা,বাবা,ভাই,স্বামী,সন্তান, শ্বশুর শাশুড়ী।"


" আপনার কন্যার বিয়ে কি এজন্যই ভেঙ্গে যেতো?"


" জ্বি। কারণ আমার এই চাওয়া কেউই মেনে নিত না। বলতো এ অনুচিত। এ অসম্ভব! বিবাহিত মেয়েদের নামে পিতামাতা এভাবে বাড়ি বা ঘর বানিয়ে দিলে তারা প্রশ্রয় পেয়ে যাবে। উদ্ধত

 আচরণ করবে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে। বড়দের মান্য করে চলবে না। অবাধ্য আচরণ করবে। কিন্তু আমি এটা মানি না। কখনোই আমার কন্যা এমন করবে না। যেই কন্যা এমন করবে। তার পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ গড়ে উঠেনি সেভাবে। প্রতিটি কন্যার একটা নির্ভরতার জায়গা দরকার। তার জীবনে কোন দুর্দিন আসলে সে যেন শান্তির নিঃস্বাস ফেলতে পারে। জীবনের গোধূলীলগ্নে সে যেন নিজের মানুষদের দ্বারা গৃহ থেকে বিতাড়িত হলে তার একান্ত নিজের ব্যক্তিগত ঘরে গিয়ে থাকতে পারে।


 পিতামাতার অবর্তমানে ভাইয়ের সংসারে ভাঙ্গাকূলো হয়ে বাঁচতে হবে না আমার কন্যার। পুত্রবধূর নিদারুণ অবহেলা সহ্য করতে হবে না অসহায়ের মতো। শুনতে হবে না কারো খবরদারি। এখানে পানের ফিক কেন ফেলেছো? আমাদের বিছানা নষ্ট করেছ কেন? ওয়াশরুম নোংরা করে রেখেছ কেন?

 চাঁদ জ্বলা রাতে খোলা গগনপানে চেয়ে নিরবে অশ্রুপাত করতে হবে না। "


জয়নব তালুকদার কিয়ৎক্ষণ থম মেরে বসে রইলেন। উঠে দাঁড়িয়ে রহমত শেখের কাঁধে ভরসার হাত রাখলেন। ঠান্ডা সুরে বললেন, 


" ভাইজান। আপনার আবদার কিংবা শর্ত শুনলাম এবং আমি মানলাম। দ্বিমত করার সাধ্য আমার নেই। তবে এখন আমার একটা আবদার বা শর্ত আছে আপনার কাছে।"


রহমত শেখ বিষম খেলেন। তড়িতেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন পাত্রের পিতার দিকে। জয়নব তালুকদার বললেন, 


" আপনার কন্যাকে আমি পুত্রবধূ করে নিবো। এবং তার ব্যক্তিগত গৃহে আমিও অংশীদার হতে চাই। আপনি হয়তো অন্যত্র তার জন্য ঘর বা বাড়ি করে দিবেন। সেখানে হয়তো সবভাবে খুব ভালোও থাকবে সে। কিন্তু এতে আপনার বিবাহিত কন্যার গৌরব কমবে বৈকি বাড়বে না। 

কারণ আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থান ভেদে একটা মেয়ের সমস্ত গৌরব ও মর্যাদা শ্বশুর বাড়িকে কেন্দ্র করেই। সেখানে সে একটু কম ভালো থাকলেও সেটা পরিতৃপ্তির ও প্রশান্তির।


সুতরাং আমি আমার বাড়িতেই আপনার কন্যার নামে সমস্ত শর্ত ত্যাগ করে সবার উপস্থিতিতেই কিছু জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিবো। আপনি সেখানে তারজন্য একটা ব্যক্তিগত ঘর বানিয়ে দিবেন। যেই ঘর হবে তার আপনের চেয়েও আপন। একান্তই নিজের। একটু মন খারাপ হলেই,একটু অভিমান হলেই যেন আপনার কন্যা তার ঘরে গিয়ে ইচ্ছেমতো চোখের জল ফেলতে পারে। ইচ্ছেমতো অভিমান পুষে রাখতে পারে। কন্যাদের স্বাধীনভাবে জল ফেলার স্থানটুকুরও যে বড় অভাব। আমিও কন্যার পিতা। তাই আপনার চাওয়া যে আমারই চাওয়া।"


আপন ঘর 

রেহানা পুতুল


সংসার জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।