কষ্টের ভালোবাসার গল্প | অবহেলার কষ্টের গল্প

 চাপা কষ্টের স্ট্যাটাস

চাপা কষ্টের স্ট্যাটাস

বেকাররা একবার হলেও পড়বেন : 

গত ৫ বছর আগের ঘটনা তখন আমি প্রতিদিন সকালে শার্ট-প্যান্ট পরে একটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতাম চাকরির উদ্দেশ্যে। আর সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে ধ'পা'স করে চেয়ারের ওপরে বসে পড়ে বলতাম "আজকেও হল না।

এই ইন্টারভিউতেও কোনো সুবিধে করতে পারলাম না।"


আমার পরিবার বলতে শুধু মা-বাবা, আর স্কুলজীবনের প্রেমিকা পিয়ালী। প্রথম প্রথম যখন আমি চাকরি না পেয়ে ঘরে ফিরতাম, তখন মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। বলতো, "চেষ্টা কর, পরেরবার নিশ্চয়ই হবে।"


ধীরেধীরে মায়ের ব্যবহারও বদলাতে লাগল। তখন আমি বাড়ি ফিরলে মা আর সান্ত্বনা দিত না, বরং খো'টা দিতো। মা ও বুঝে গেছিল এই ছেলের দ্বারা আর কিচ্ছু হবার নয়। কিন্তু পিয়ালী সাথে ছিল। সে বরাবর বলত, "তুই চাকরি না পেলেও আমাদের বিয়ে হবেই"।

ছেলেদেরকেই স্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হবে তার কোনো মানে নেই, কলেজটা শেষ হলেই আমি চাকরিতে ঢুকব, তারপর সংসার সামলানোর দায়িত্ব আমার।"


এভাবে দু'মাস কে'টে গেল। সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েই দেখলাম মোবাইলে পিয়ালীর ফোন ঢুকছে। ফোন ধরামাত্র পিয়ালী জিজ্ঞেস করল, "আজকেও কিছু হলনা তো?"

উত্তর দিলাম, "না।" পিয়ালী বলল, "শোন, আমার বাড়ি থেকে কিছুতেই মেনে নিচ্ছেনা তোর সাথে সম্পর্ক। একজন বেকার ছেলের সাথে থাকা যায়না। আমি মিউচুয়াল ব্রেক"আপ চাই।" আমি একদম চু'প করে গেলাম। তারপর ধীরেধীরে বললাম...

 "কিন্তু তুই যে কথা দিয়েছিলিস।" পিয়ালী বলল, "তুইও কথা দিয়েছিলিস চাকরি পেয়ে দেখাবি। কিন্তু বুঝে গেছি তোর দ্বারা কিছু হবার নয়। আমি আমাদের কলেজের সুমনের সাথে সম্পর্কে চলে গেছি। পারলে আমায় ভু'লে যা।"


ওপার থেকে লাইন কে'টে গেল। আমি বরাবরেই খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে, খুব ক'ষ্ট হলেও কখনও সেটা প্রকাশ করি না। আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিলনা, পিয়ালী অন্য কারুর সাথে সম্পর্কে যেতে পারে। সেই মেয়েটা, যে আমাকে এত ভালোবাসত, যে সারাজীবন সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যে বলেছিলো আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবে না।

 আমার ছোটবেলার প্রেম।

আমার হঠাৎ করে

ছেলেবেলার কথা মনে পড়ল। তখন খুব ক'ষ্ট হলে মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁ'দ'তা'ম। আমি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে একবার মায়ের সামনে দাঁড়ালাম, আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একবার মাকে জড়িয়ে ধরতে। মা দেখতে পেল আমাকে। তারপর ঝাঁ'ঝা'লো গলায় বলল, "শোন কাল থেকে আর ইন্টারভিউতে যেতে হবে না। তোর বাবা বলেছে একটা চায়ের দোকান খুলে দেবে, নাহলে বাজারে সবজি বিক্রি করবি। অন্তত সংসারে একটু টাকা তো ঢুকবে। আমাদের থেকে টাকা নিয়ে রোজ বাস ভাড়া দিয়ে ইন্টারভিউ দেবার কোনো দরকার নেই।"


আমার একটু আগেই ইচ্ছে হচ্ছিল মাকে জড়িয়ে ধরে একটু য'ন্ত্র'ণা'টা লাঘব করতে। কিন্তু মায়ের কথাগুলো তী'রের মত আমার বুকে গিয়ে বিঁ'ধ'ল। একবারও বলতে পারলাম না, ''মা আমার খুব ক'ষ্ট হচ্ছে। আমি তোমার ছেলে।'' চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।


হঠাৎ দেখলাম ফোনে আবার পিয়ালীর ফোন ঢুকছে। আমি ফোন ধরতেই ওপার থেকে পিয়ালীর গলা ভেসে এলো, "শোন, আমি তোকে যে গিফটগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো আমায় ফেরত দিয়ে দিস। আমার বয়ফ্রেন্ড চায়না আমার এক্সের কাছে আমার কোনো স্মৃতি থাকুক। কাল সন্ধ্যে সাতটায় আমাদের বাড়ির নীচে জিনিসগুলো নিয়ে চলে আসিস।" ফোন আবার কে'টে গেল।


পরের দিন কাঁ'টায় কাঁ'টায় সাতটার সময় দেখা হল দুজনের। আমি ব্যাগ থেকে এক এক করে তিলেতিলে জমানো প্রতিটা উপহার ফিরিয়ে দিলাম পিয়ালীকে। হঠাৎ আমার শার্টের ফাঁকে চোখ পড়তেই পিয়ালী জিজ্ঞেস করল, "তোর গলায় ওটা কিসের আইডি কার্ড ঝোলানো রে?" আমি স্বভাবত শান্তস্বরে জবাব দিলাম, "আমার অফিসের"।


পিয়ালী অবাক হয়ে বলল, "অফিসের মানে? চাকরি কবে পেলি?" বললাম, "দু'মাস আগেই। প্রথম ইন্টারভিউটা থেকেই চাকরি পেয়েছিলাম। এতদিন আমি ইন্টারভিউয়ের নাম করে আসলে অফিসেই যেতাম।" বেশ খানিক্ষণ দুজনেই চু'প। তারপর ছলছলে চোখে পিয়ালী জিজ্ঞেস করল, "এতবড় মিথ্যেটা কেন বললি? এতদিন ধরে এভাবে ধোঁ'কা দিয়ে গেলি?" আমি ফ্যাকাসে হেসে বললাম, "নাহলে আসল রূপটা কিভাবে দেখতে পেতাম?


 মাঝেমাঝে সফলতার পাশাপাশি ব্য'র্থ'তার গল্প শোনানোটাও জরুরী। একমাত্র ব্য'র্থ'তাই পারে শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রকৃত স্বরূপ চিনিয়ে দিতে।"


পিয়ালী চোখ ব'ন্ধ করে ফেলল, হয়ত সে কা'ন্না লুকোবার চেষ্টা করছিল। আমি বাড়ি ফিরে যেতে উদ্যত হলেই পিয়ালী আমার হাত চে'পে ধরে বলল, "আমায় ছেড়ে যাস না। ভু'ল বুঝেছিলাম তোকে। আমাদের এতদিনের ভালোবাসার সম্পর্ক।" আমি আলতো করে ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, "ভালোবাসার নয়, ব্যবসার সম্পর্ক।

যেখানে লাভ আর লোক'সানের হিসেব ক'ষা হয়, সেটা বিজনেস। ভালোবাসা স্বার্থহীন হয়।"

আমি বাড়ির দিকে চলতে শুরু করলাম আর দুই হাতে মুখ চে'পে ধরে দাঁড়িয়ে রইল পিয়ালী।


বাড়ির বেল বাজাতেই মা দরজা খুলল। মুখে একটা তি'র্য'ক হাসি নিয়ে বলল, "আজকেও মুখ কা'লো করে ফিরেছিস তো? এত দেরী হল ফিরতে? চু'রি'চা'মা'রি করছিলিস নাকি?" আমি শান্তভাবে ঘরে ঢুকে জুতো খুললাম, হাত মুখ ধুলাম। তারপর ব্যাগ থেকে একটা মোটা খাম বের করে টেবিলে রেখে বললাম...


 "দু'মাসের মাইনেটা ব্যাঙ্ক থেকে ক্যাশে তুলে আনলাম। অনেক বড় সংখ্যা, সময় নিয়ে গুনো। আর পাশে আমার আইডিটা রইল, সব উত্তর ওই চৌকো কার্ডের মধ্যে পেয়ে যাবে।" মা অবাক হয়ে চেয়ে রইল, আর আমি নিজের ঘরে ঢুকে দরজাটা টে'নে দিলাম....


এমন আরও বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।