সবাই যখন পর | বাস্তব জীবনের গল্প

অনেক কষ্টের গল্প

অনেক কষ্টের গল্প

 মা যখন দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন,তখন তিন্নির বয়স চার বছর।তিন্নির নতুন দাদী তাকে মা'র বাসর ঘর থেকে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেননি। তিন্নি কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মা'র কাছে চলে গিয়েছিল। 


মা'কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো, 

– “ আমি তোমার কাছে থাকব, মা। তুমি ছাড়া আমার ঘুম আসে না। ”


মা তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে হেসেছিলেন।বলেছিলেন, 

– “ আচ্ছা, তুমি আমার কাছেই থাকো। ”


তিন্নির নতুন বাবা আরাফাত হাসান ঘরে প্রবেশ করেই মা'কে বলেছিলেন, 

– “ তিন্নি এখানে কেন? ওঁকে মা'র কাছে পাঠিয়ে দাও। ”


মা বলেছিলেন, 

– “ কান্নাকাটি করছে। থাক না আমার কাছে! ”


তিন্নি বলেছিল, 

– “ এই লোক, আপনি এখানে কেন?মা'র ঘরে আপনি কেন?বেরিয়ে যান।এ ঘরে আমি আর মা থাকব। ”


সেদিন আরাফাত হাসান মা'র কথা শুনেননি। তিন্নিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন।তিন্নি কত কেঁদেছিল।লোকটার গালে গলায় নখের আঁচড় বসিয়েছিল।তা-ও শেষ রক্ষা হয়নি।লোকটা তিন্নিকে একটা অন্ধকার ঘরে বন্দি করে দিয়েছিলো।


নতুন বাবা তিন্নিকে কখনোই দেখতে পারতেন না। সামনে পড়লেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতেন। তিন্নিও তার সামনে যেত না। তবে সুযোগ পেলেই লুকিয়ে লুকিয়ে মা'র কাছে চলে যেত। মা'কে জড়িয়ে রাখত অনেক্ষণ। মা-ও তিন্নিকে মন ভরে আদর করে দিতেন। অল্প সময়ের আদরে তিন্নির সব দুঃখ শেষ হয়ে যেত।


বছরখানেক বাদেই তিন্নির ছোটো ভাইয়ের জন্ম হয়।তার নাম রাখা হয় আবু হাসান।তার পর থেকে শুরু হয় তিন্নির জীবনের দুর্দশা। মা সব সময় আবু হাসানকে নিয়ে পড়ে থাকতেন।তাকে আদর করতেন।রাতের বেলা তাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতেন।অপরদিকে তিন্নিকে দেখা মাত্রই গালাগাল করতেন।দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতেন।তিন্নির খুব রাগ হত।হিংসে হত।


একদিন মা তাকে বিনা কারণে মারধর করেছিলেন।তিন্নি রেগে গিয়ে কোলের শিশু আবু হাসানের হাত কামড়ে দিয়েছিল।যার শাস্তি হিসেবে মা তিন্নির হাত মুখ বেঁধে চামড়ার বেল্ট দিয়ে পি'টিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার পর টানা চারদিন তাকে খাবার দেওয়া হয়নি। 

.

.

.

আঠারো বছর বয়স হতেই তিন্নিকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো।বাবা-মা চাইলেই তিন্নিকে ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারতেন।কিন্তু তারা তা করেননি।তারা চাননি তিন্নির দুঃখ, দুর্দশা কমুক। আর তাই তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন রিকশা চালকের কাছে।সেই রিকশা চালক কাউসার মিয়া। চব্বিশ বছর বয়সের রোগা-সোগা একটা ছেলে।ঘরে অসুস্থ মা।ছোটো ছোটো চারটি বোন। কাউসার রিকশা চালিয়ে যা পায়, তা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা।তার উপর তিন্নি নতুন সদস্য যুক্ত হলো।


সেই ছোটোবেলা থেকে অযন্ত, অবহেলা আর অত্যাচার সহ্য করে করে তিন্নির গা সওয়া হয়ে গেছে।শরীর ও মন দু'টোই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।তাই তিন্নিও সাতপাঁচ ভাবেনি।হয়তো দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হবে।অসুস্থ শাশুড়ির বকাঝকা শুনতে হবে।রিকশা চালক স্বামীর মার খেতে হবে।


কিন্তু তেমন কিছু হলো না। বিয়ের এক বছর হয়ে গেল, এই এক বছরে কেউ তিন্নিকে তুই করেও বলেনি। তিন্নির শাশুড়ি তাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখেন। আর কাউসার। কাউসার তিন্নিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। হয়তো দামি কাপড় কিনে দিতে পারে না। হয়তো দামি গাড়ি চড়াতে পারে না। হয়তো ভালো রেস্তোরাঁয় ডিনারে নিয়ে যেতে পারে না। তবে প্রতিদিন ঘরে ফেরার সময় কিছু না কিছু নিয়ে আসে। আজ চকোলেট তো কাল গোলাপ। পরশু নতুন কিছু। সেই নতুন কিছু কী, তা তিন্নি জানে না। সে সারাদিন কাউসারের অপেক্ষায় থাকে। দিনশেষে কাউসার আসে। পেছনে হাত লুকিয়ে রেখে বলে, – “ কউ তো, আজ তোমার জন্য কী আনছি? ”


একদিন রাতে তিন্নি ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিল। কাউসার হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে এসে তিন্নির পাশে দাঁড়াল। 


তিন্নির চোখ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলের ফোঁটা চোখে পড়তেই আঁতকে উঠেছিল, 

– “ কাঁনতাছো ক্যান, বউ? কী হইছে তোমার? ”


তিন্নি মুখ তুলে তাকিয়ে বলেছিল, 

– “ অট্টালিকায় শুয়ে যা পাইনি, তুমি ভাঙা ঘরে রেখে তার থেকেও বেশি দিয়েছো।সত্যি, ভালোবাসতে টাকা লাগে না।লাগে সুন্দর মন আর উদার মানসিকতা। ”

---------------------------

-সমাপ্ত

-ছোটগল্প

-ভাঙা_ঘরে_চাঁদ

-মোঃ_ইয়াছিন

---------------------------


আমাদের ওয়েব সাইটের গল্প গুলো আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এমন আরও গল্প পড়ুন।