বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প | বাসর রাতের মিলন

 বাসর রাতের গল্প

বাসর রাতের গল্প

ঘুমের ঘোরে কোলবালিশটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। লেপের ভেতরে উষ্ণ শরীরে ঘুমিয়ে থাকতে ভালই লাগছে। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম কোলবালিশ নড়াচড়া করছে! কোলবালিশ তো নড়াচড়া করে না। কাহিনি কি! চোখ খুলে দেখলাম এটা কোলবালিশ না! একটা মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখছে। ভাল করে দেখে বুঝলাম এটা আমার বউ। কালকে আমার বিয়ে হয়েছে!


চোখ খুলে বুঝলাম সকাল হয়ে গিয়েছে। দরজায় ধাক্কা শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছে। মিষ্টির দিকে তাকালাম...এখনো ঘুমাচ্ছে...ঘুমানোর সময় মানুষকে সবচেয়ে নিষ্পাপ লাগে। ওর মুখে রাজ্যের সব সৌন্দর্য এসে ভিড় করেছে। তাকে জাগানোর ইচ্ছা হচ্ছে না কিন্তু দরজায় শব্দের কারনে বেশিক্ষণ ওকে দেখতে পারলাম না...!!তাকানোর সাথে সাথে আমার চোখে চোখ পড়ল...!!মুচকি হেসে বলল....


মিষ্টিঃ শুভ সকাল....

আমিঃ শুভ সকাল....

মিষ্টিঃ তুমি শুয়ে থাক...আমি দরজা খুলে দিচ্ছি....


মিষ্টি বিছানা ছেড়ে উঠে শাড়ি ঠিক করল...!! রাতে নিজেই ওর কুচি ঠিক করে দিয়েছিলাম...!! কিন্তু এখন সেটা নেই...!! আমি লেপের মধ্যে শুয়ে ওইএ দেখছি...!! দরজা খুলে দিতেই দুই ভাবি ভেতরে ঢুকল...!!আমার আপন কোন ভাবি নেই। তবে ফুফাতো, মামাতো ভাবি আছে কয়েকটা। দুইজন ভাবি বিছানার কাছে এসে বলল....


ভাবিঃ দেবর! এখনো ঘুমাচ্ছ!

আমিঃ হুম...!!ঘুমাতে দাও...

ভাবিঃ রাতে অনেক ধকল গিয়েছে। তুমি ঘুমাও...


কথা শেষ করেই হেসে উঠল। আরেক ভাবি তার সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে থাকল...!!চোখ খুলে মিষ্টির দিকে তাকালাম সে কিছুটা লজ্জা পেয়েছে....


ভাবি মিষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বললো....


ভাবিঃ একি! তুমি দাঁড়িয়ে কেন! এখানে বস....


মিষ্টি  বিছানায় বসল...ভাবি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল....


ভাবিঃ তুমি শাড়ি পড়তে পার!

মিষ্টিঃ না....

ভাবিঃ তাহলে রাতে কিভাবে পড়েছিলে...!

মিষ্টিঃ ও পড়িয়ে দিয়েছিল....


মিষ্টি  মাথা নিচু করে আছে... নতুন মানুষের সামনে লজ্জা পাওয়া স্বাভাবিক। ভাবি আমাকে খোঁচা মেরে বললো....


ভাবিঃ একি দেবর! এখনি শাড়ি করে দিতে শুরু করেছ! এখন তাহলে তুমি পড়িয়ে দিবে নাকি আমরা!


পাশ থেকে অন্য ভাবি বলল...


____আরে নাহ। এখন সে পারবে না। চলো আমরা পড়িয়ে দেই....


দুই ভাবি মিষ্টিকে সাথে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। সে এখনো ফ্রেশ হয়নি। আমি শুধুই চুপচাপ শুয়ে আছি। এখন আমাকে ঘুম থেকে উঠে পড়া উচিত। ফ্রেশ হয়ে বাইরে যাওয়া লাগবে। লেপ ছেড়ে একটা চাদর জড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম.....


____এতক্ষণে উঠলি! আমি তো ভাবছিলাম তুই উঠবি না আজ....


পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, আমার ছোট চাচাত ভাই তাকিয়ে আছে...মুচকি মুচকি হাসছে...ওকে কাছে ডেকে বললাম....


আমিঃ উঠব না কেন!


____ নতুন বউ পেলে কেউ কি উঠতে চায়....


আমি চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার এই ভাই বাশ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সে কথার মাধ্যমে আমাকে বাশ দেয়। সুন্দর একটা বাশ দিয়ে চুপ করে থাকে। তবে ভাইকে অনেক ভালবাসি....


রুমে ঢুকে দেখলাম মিষ্টি ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসেছে। বিছানায় তিনজন একসাথে বসে আছে। ভাবি তাকে টুকটাক সাজিয়ে দিচ্ছে। ব্রাশ হাতে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম....!!


বাইরে এসে দেখলাম বাবুর্চিরা রান্না করছে। বাড়ি মোটামুটি উৎসব মুখর হয়ে গিয়েছে। লোকজনের আনাগোনা দেখছি। ছোটবেলায় কারো বিয়ে দেখলে ভাবতাম, আমার বিয়েতেও এমন করা হবে। আমার ছোট মামা বলত, আমার একমাত্র ভাগ্নের বিয়েতে অনেক মজা করা হবে....


আপুঃ মিষ্টি কে সকালবেলা কিছু খাইছে....


হঠাৎ আপু আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। আমি খেয়েছি নাকি সেসবে কোন মাথা ব্যাথা নেই! আমি বললাম.....


আমিঃ জানিনা....ভাইয়ের খাওয়ার খবর না নিয়ে ভাবির খাওয়ার খোঁজ নিচ্ছিস...!!

আপুঃ তুই তো এই বাড়ির মানুষ। তোর ইচ্ছা মত নিয়ে খেতে পারবি ও নতুন এসেছে ও পারবে না....বুঝিস তো....

আমিঃ তুই ঘরে গিয়ে দেখ....


আপু চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ পরে খাওয়া দাওয়া করে রুমে গেলাম। আমার রুমে ঢুকে দেখি সেইরকম অবস্থা। সবাই মিলিয়ে একরকম মিটং বসিয়েছে... মিষ্টি তাদের মিটিং এর মধ্যমনী... ভাবি আমাকে ডেকে বলল....


ভাবিঃ দেবর! নতুন বউ পেয়ে পুরাতন বউ দের ভুলে যেও না....

আমিঃ না গো। তোমাদের ভুলব না। তোমরা হল পুরাতন ভাল বউ। নতুন বউ এত ভাল হয়....


মিষ্টির দিকে তাকালাম। একটু অভিমান করেই তাকিয়ে আছে...ভাবিদের সাথে মজা করে কথা বলায় এমন হয়েছে...ভাবি ওর দিকে আমাকে বিছানায় বসতে বলল....


বিছানায় উঠে বসতেই আমাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হল। ভাবি মহলের সবাই গোল হয়ে বসে আছে। আমি তাদের আলোচনার মধ্যমনী হয়ে গেলাম। এক ভাবি আমার ছোট বেলার গল্প শুরু করল। আমার যখন মুসলমানি করানো হয়, তখন উনি গোসল করিয়েছিল। কথাগুলো বলেই সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করে দিল! মিষ্টি লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে আছে।


ভাবিদের মাঝে বেশিক্ষণ থাকা হল না। তারা আমার যত হাসির কাহিনি বলা শুরু করে দিয়েছে। আরো কিছুক্ষণ থাকলে ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিত। আমার তিনটা বোন খুব ব্যাস্ত। বিয়ের আগে থেকেই তারা ব্যস্ত হয়ে আছে। ভাইয়ের বিয়েতে কোনকিছুর যেন কমতি না থাকে। বাবুর্চিদের রান্নার কাছে বসলাম। বাবা সেখানে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখিয়ে দিচ্ছে। বাবার এক কথা.....


_  আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে। কোনকিছুর কমতি যেন না থাকে....


সারাদিন ব্যাস্ততার মাঝেই শেষ হল। অনুষ্ঠান বাড়িতে হইচই, আনন্দ সবকিছু হল। সন্ধ্যার সময় শ্বশুড়বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। গাড়িতে ওঠার আগে ছোট আপুকে ডেকে বললাম.....


আমিঃ আপু, ওদের বাড়িতে আসার আগে কান্না করল।এখন কান্না করে না কেন!

আমিঃ ধুর.... এখন তো বাবার বাড়ি যাচ্ছে....

আমিঃ এখন কাঁদতে বল....


আমার কথায় মিষ্টি বড় বড় চোখ করল। ভাবা খানা এমন যে....


___চুপ কর....নাহলে খবর আছে....


শ্বশুড়বাড়ি এসেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম...!!মাথা ব্যথা করছে খুব। সারাদিন চেঁচামেচির ভেতর থাকার কারনে এই অবস্থা! মিষ্টি আমার কাছে এসে বলল....


মিষ্টিঃ কি হয়েছে?

আমিঃ মাথা ব্যথা করছে...

মিষ্টিঃ আমি ওষুধ নিয়ে আসছি...


মিষ্টি ওষুধ এনে দিল। ডাক্তারদের কাছে সবসময় এই জাতীয় ওষুধ থাকে। ওষুধ খাওয়ার আগে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। চোখে মুখে পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে নিলাম...!!


ঠান্ডা পানিতে মাথা ধুয়ে একটু শান্তি লাগছে। মাথা মুছে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। মিষ্টি কোমরে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কি কারনে এভাবে তাকিয়ে আছে! সন্ধ্যায় যে কথা বলেছি তার শোধ তুলবে নাকি! নিজের বাড়ি বলে কথা!


মিষ্টিঃ এভাবে মাথা মুছে! এদিকে আসো....


সে তোয়ালে নিয়ে এসে মাথা মুছে দিতে থাকল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। মুগ্ধ হয়ে দেখছি। আমাকে বাচ্চা শিশুর মত শাষন করছে! এই মেয়ে আমাকে সবসময় কেয়ার করবে সেটা বুঝতে পারছি। তবে বেশি কেয়ার করলে স্বাধীন জীবন শেষ...!!


মিষ্টিঃ তুমি শুয়ে পড়ো....আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি....


লেপ গায়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আভাও আমার পাশে শুয়ে পড়ল। সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে দুই একটা কথা বলছে...!!


হঠাৎ কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল...


•••লাভিউ....!!


আমি তার উত্তর না দিয়ে চোখ বুজে থাকলাম...!!এখন আর মাথা ব্যাথা নেই...ব্যাথা সেড়ে নতুন এক সুখের অনুভূতি বিরাজ করছে নিজের মাঝে...!!🥰


                             •••সমাপ্ত•••


গল্পের নামঃ বাসর রাতের পরের গল্প


লেখকঃ MR.SHADOW


এমন আরও রোমান্টিক গল্প পড়ুন।