গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ | ভালোবাসার গল্প

 রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ (পর্ব_০১)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।

সকাল বেলায় ঘুমাইতেছি,এমন সময় পুরা খাট কাঁপতে শুরু করলো। আমি ভাবছি ভুমিকম্প হইতেছে তাই তাড়াতাড়ি উঠে দিছি এক দৌড়। একটু দূরে গিয়ে দেখি ভুমিকম্প-টা শুধু আমার বিছানার উপর হইতেছে। পরে বিছানার কাছে গিয়ে দেখি মোবাইলে কল আসছে।


সালার মোবাইল vibration mood ছিলো আমার জানা ছিলোনা। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি তন্নির কল। কলটা রিসিভ করতেই বলতে শুরু করলো.........


তন্নিঃ এই কুত্তা কল ধরিস না কেনো?


আমিঃ সরি-রে ঘুমে ছিলাম। এবার বল এতো সকাল সকাল কল দিলি কেনো?


তন্নিঃ আজকে একটু তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে আছিস।তোদেরকে একটা গুড নিউজ দিবো?


আমিঃ কি গুড নিউজ? 


তন্নিঃ সেটা ক্যাম্পাসে আসলে দেখতে পারবি। আর হ্যা সানি আয়মানকেও বলে দিস তাড়াতাড়ি আসার জন্য। আমি ফারিহাকে বলে দিছি?


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে এখন ফোন রাখ। আমি 

ফ্রেশ হবো? 


তন্নিঃ ওকে? 


টুট টুট টুট কলটা কেটে দিলো।। আমি উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। চলেন ফ্রেশ হতে হতে আপনাদেরকে পরিচয় টা দিয়ে দেই। আমি অপুর্ব। আপাতত স্টুডেন্ট লাইফে আছি।আর একটু আগে যে কল করছিলো সে হলো আমার বেস্টফ্রেন্ড তন্নি।


ফ্রেশ হওয়া শেষ।। নাস্তা করে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম।

ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি আমি ছাড়া সবাই বসে আছে। আমি যাওয়ার পর পরই তন্নি রাগি লুক নিয়ে আমাকে বললো............


তন্নিঃ কিরে হারামি তোকে আজকে তাড়াতাড়ি আসতে বললাম। আর তুই আজকে দেড়ি করে আসলি? 


আমিঃ সরিরে রাস্তায় অনেক জ্যাম?


সানিঃ তোর জন্য সব সময় জ্যাম থাকে। আমরা রাস্তা দিয়ে আসি না?


আমিঃ এই হরামি তুই চুপ থাক। সব সময় শুধু 

চামচামি করিস?


ফারিহাঃ আচ্ছা বাদ দে না। এখন তন্নি কি বলবি তাড়াতাড়ি বল। আমরা ক্লাসে চলে যাবো? 


তন্নিঃ আজকে কোনো ক্লাস হবেনা। আজকে আমরা একটা পার্টি দিবো?


সানিঃ দেখ এখন এগুলো করার সময় নেই। অন্য দিন করবো। আগে বল তোর কি কথা আছে?


তন্নিঃ দোস্ত আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ছেলে অনেক বড় ব্যাবসায়ি। কালকে আমাদের বাসায় এসে আমাকে রিং পড়িয়ে দিয়ে গেছে?


তন্নির কথাটা শুনে আমার মাথার উপরে যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। কারন সেই কলেজ লাইফ থেকে তন্নিকে আমি অনেক ভালোবাসি।৷ কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কখনো বলতে পারিনি।


আমি চেয়েছিলাম আগে নিজের পায়ে দাঁড়াই। ভালো একটা চাকরি পাই। তারপর তন্নিকে আমি আমার মনের কথা বলবো। কিন্তু এটা কি হলো। আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। আমার মাথা ব্যাথা করতেছে।


এদিকে সানি আয়মান এবং ফারিহা তন্নিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমার নীরবতা দেখে তন্নি বললো.........


তন্নিঃ কিরে তোর আবার কি হয়েছে। তুই খুশি হসনি?


আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম.........


আমিঃ হুমম আমি অনেক খুশি হয়েছি? 


তন্নিঃ তাহলে তুই এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? 


আমিঃ দোস্ত তুই সত্যি বিয়েটা করবি? 


তন্নিঃ হুম অবশ্যই। এর থেকে ভালো ছেলে আর কোথায় পাবো বল। আর তাছাড়া বিয়ের বয়স 

হয়ে গেছে? 


আমিঃ........... (চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম )


আয়মানঃ আচ্ছা বাদ দেতো এখন বল বিয়ে কখন? 


তন্নিঃ এইতো আগামী শুক্রবার। তোরা সবাই অবশ্যই আসবি। এই নে কার্ড?


এ কথা বলে তন্নি আমাদের সবাইকে একটা করে কার্ড দিলো। আমার কেনো জানি বুক ফেটে কান্না আসছে।

মনে হচ্ছে আমার জীবন থেকে অনেক বড় কিছু একটা চলে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি চলে আসলো। আমার এমন অবস্থা দেখে তন্নি বললো..


তন্নিঃ কিরে কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেনো?


আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুচে বললাম........


আমিঃ আরে না এমনি। তোর বিয়ে হবে শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে আসলো? 


তন্নিঃ পাগল! আচ্ছা শোন। রায়হান কল দিচ্ছে। আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি, তোরা থাক? 


আয়মানঃ রায়হান টা আবার কে? 


তন্নিঃ তোদের দুলাভাই। আচ্ছা থাক পরে কথা হবে আল্লাহ হাফেজ??


কথাটা বলে তন্নি চলে গেলো। আমি অবাক দৃষ্টিতে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আস্তে আস্তে চোখটা ঝাপসা হয়ে গেলো। মনে হয় আবার পানি এসে জমা হয়ে গেছে। এমন সময় ফারিহা বললো............


ফারিহাঃ আচ্ছা আমি ক্লাসে যাচ্ছি। তোরা কেউ যাবি?


সানিঃ তুই যা আমরা একটু পরে আসছি? 


ফারিহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে? 


ফারিহা চলে গেলো। তারপর সানি ও আয়মান আমার কাছে এসে বললো.........


সানিঃ কিরে ঘটনা কি? 


আমিঃ কিসের ঘটনা? 


আয়মানঃ তোর চোখে পানি কেনো? 


আমিঃ এমনিই চোখে পানি চলে আসছে?


সানিঃ তুই কি ভাবছিস আমরা কিছুই বুঝতে পারি না। আমরা তোর বন্ধু না? 


আয়মানঃ এখনো সময় আছে বলে দে তুই যে তন্নিকে ভালোবাসিস? 


আমিঃ কি সব বলছিস তোরা?


সানিঃ দেখ এখন এসব নাটক করার সময় নাই। যদি সত্যি ভালোবাসিস তাহলে তাকে বলে দে। কিছুই 

হবে না আমরা আছি? 


আমি আর কোনো কিছু না বলে সোজা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসলাম। এরপর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। তন্নির কথা ভাবছি আর চোখ দিয়ে বৃষ্টি পড়তেছে। ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম মনে নেই।


ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধা হয়ে গেছে। সেই ১১ টা বাজে ঘুমিয়েছি আর এখন সন্ধা ঘুম থেকে উঠেছি। তন্নির কথা মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না।। এর মধ্যেই আম্মু আমার রুমে আসলো আর বললো.............


আম্মুঃ কিরে এই অবস্থা হইছে কেনো তোর? 


আমিঃ কি হইছে আমার? 


আম্মুঃ চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে তুই কান্না করছিস?


আমিঃ আরে কি যে বলো না মা। আমি কেনো কান্না করবো। অসময়ে ঘুমিয়েছি তাই হয়তো চোখ লাল

হয়ে আছে। পানি দিলে ঠিক হয়ে যাবে??


আম্মুঃ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি চা নিয়ে আসছি?


এরপর ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে ছাদে চলে আসলাম। ছাদের এক কোনে গিয়ে বসলাম। আর আকাশের চাঁদটার দিকে অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।। মনের মধ্যে শুধু তন্নির সাথে কাটানো সময় গুলি উকি দিচ্ছে।


খুব ইচ্ছে করে চিৎকার করে বলি...তন্নি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু পারছিনা। মনের মধ্যে অজানা একটা ভয় চেপে রেখেছে।। একটু পর দেখলাম তন্নি কল করেছে।। কলটা ধরতে ইচ্ছে করছিলো না।কয়েক বার দেওয়ার পর রিসিভ করলাম।


তন্নিঃ কিরে তুই কল রিসিভ করিস না কেনো?


আমিঃ একটু ব্যাস্ত ছিলাম কি বলবি বল? 


তন্নিঃ শুন দোস্ত কালকে আমরা শপিং করতে যাবো।তুই ও আমাদের সাথে যাবি?


আমিঃ সরি আমি পারবোনা। তুই সানি অথবা আয়মান কে নিয়ে যা। তাছাড়া ফারিহা তো তোর সাথেই আছে?


তন্নিঃ ওরা কেউ যাবেনা। প্লিজ তুই চল?


আমিঃ দেখ আমার একটু কাজ আছে। আমি যেতে পারবো না?


তন্নিঃ আমি এতকিছু বুঝিনা। তুই আমাদের সাথে যাবি? 


এই কথা বলেই কলটা কেটে দিলো। এমনিতে ওর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে যদি শপিং-এ যাই তাহলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। মাথায় কিছুই ডুকছে না। যা হওয়ার তা পরে হবে।। আমি কালকেই তন্নিকে আমার মনের কথা বলে দিবো।


পরের দিন ঘুম ভাঙলো তন্নির কলে।। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ২০টা কল দিছে। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে একটা টেক্সট পাঠালাম....আমি আসছি।


সারাদিন তন্নির সাথে শপিং করলাম। কথাগুলো বলতে চেয়েও পারলাম না। কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে। তন্নির দিকে খেয়াল করলাম দেখলাম ও অনেক খুশি।এখন কথা গুলো কিভাবে বলবো।। যদি ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করে ফেলে।


আমি আর কিছু না বলে বাসায় চলে আসলাম.?? চিন্তা করলাম এখানে আর থাকবোনা।চোখের সামনে তন্নিকে অন্য কারো হাতে তুলে দিতে পারবো না।


মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম তন্নিকে সব খুলে বলবো। যদি সে রাজি হয় তাহলে এখানে থেকে যাবো। আর না হলে দেশের বাহিরে চলে যাবো। তাড়াতাড়ি করে আম্মুর কাছে গেলাম। গিয়ে বললাম..........


আমিঃ আম্মু আমি দেশের বাহিরে চলে যাবো। এখানে আর পড়া লেখা করবো না? 


আম্মুঃ তুই না বলেছিলি এখানে বন্ধু বান্ধবদের সাথে থাকবি। বাহিরে যাবি না? 


আমিঃ সেটা আগে বলেছি। এখন আমি আর দেশে থাকবো না। তুমি আব্বুকে ভিসা প্রসেসিং করতে 

বলো। আমি শুক্রবারের আগে চলে যেতে চাই??


আম্মুঃ এতো তাড়াতাড়ি কি হবে। সময় লাগবে? 


আমিঃ এতকিছু আমি জানিনা। আমি শুক্রবারের আগে যেতে চাই?


আম্মুঃ আচ্ছা তোর আব্বু বাসায় আসুক আমি তার সাথে কথা বলবো? 


এরপর আমি আর কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। বসে বসে ভাবতে লাগলাম তন্নি কি আমাকে মেনে নিবে। নাকি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিবে.....


যেটা হবে হোক আমাকে বলতেই হবে। এভাবে দুই দিন কেটে গেলো। তন্নির বিয়ের তারিখ চলে আসলো। বৃহস্পতিবার বিকাল বেলায় সানি আর আয়মান আমাদের বাসায় এসে বসে রয়েছে।। কারন এক সাথে তন্নির হলুদে যাবে বলে। আমার মোবাইল বন্ধ দেখে ওরা বাসায় চলে আসছে।


সানি,,আয়মান দুজনে বসে বসে বাবার সাথে কি যেনো 

আলাপ করতেছে।। আমি সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে আমাকে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেলো। তারপর বাবা আমাকে বললো........


বাবাঃ তন্নির বিয়ে আগে বলতি। তোর ফ্লাইট কয়েক দিন পরে করতাম?


আমি কিছু না বলে উঠে চলে যাচ্ছিলাম। এমন সময় বাবা বলে উঠলো.......


বাবাঃ শোন কোথায় যাচ্ছিস?


আমিঃ বাবা ওদের সাথে যাচ্ছি? 


বাবাঃ আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি আসিস। আজ রাত ৯ টায়

তোর ফ্লাইট। কথাটা যেনো মাথায় থাকে?


সানি আর আয়মান আমাদের কথা শুনে হা করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবতেছে এতো অল্প সময়ে কিভাবে কি করলাম,এবং ওদের না জানিয়ে। এরপর আমি রেড়ি হয়ে ওদের সাথে তন্নিদের বাসায় চলে গেলাম।


ওই খানে যাওয়ায় পরে আমাদের আরো অনেক গুলো বন্ধুকে দেখলাম। সানি আর আয়মান ব্যাস্ত হয়ে গেছে।

আমি একপাশে গিয়ে বসে আছি,আর তন্নিকে খুঁজছি। কিন্তু দেখছিনা মনে হয় সাজতেছে।


একটু পর তন্নি বের হয়ে আসলো। সাথে আরো কয়েক জন মেয়ে ছিলো। আজকে তন্নিকে অনেক সুন্দর লাগছে। যে কেউ দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে। আমারও আর ব্যাতিক্রম কিছু হলো না। তন্নির দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম।। কিছুক্ষণ পর তন্নির ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আসলাম।


তন্নিঃ কিরে এই ভাবে হা করে কি দেখছিস?


আমিঃ কিছু না (মাথা নিচু করে)। তন্নি তোর সাথে আমার কিছু সিরিয়াস কথা আছে?


তন্নিঃ কি কথা বল?


আমিঃ এখানে না ছাদে চল?


তন্নিঃ এখন ছাদে যাবো। আচ্ছা ঠিক আছে চল?


তারপর আমি আর তন্নি ছাদে চলে গেলাম। ছাদে গিয়ে আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।। আমার নিরবতা দেখে তন্নি বললো.........


তন্নিঃ কিরে চুপ কেনো,,কি বলবি তাড়াতাড়ি বল। আমার নিচে অনেক কাজ আছে? 


আমিঃ তন্নি তোকে আমি ভালোবাসি।। যেদিন তোকে প্রথম দেখেছি সেদিন থেকে। তোর আমার ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি এতদিন কিছু বলিনি?


তন্নিঃ দেখ এখন মজা করার সময় না। কি বলবি বল আমি নিচে চলে যাচ্ছি??


আমিঃ তন্নি বিশ্বাস কর আমি তোকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি??


তন্নিঃ দেখ ফাইজলামি বন্ধ কর৷ নাটক দেখতে দেখতে তুই ও নাটক শুরু করে দিয়েছিস?


আমিঃ সত্যি তোকে আমি অনেক ভালোবাসি। তন্নি তোকে ছাড়া আমার জীবনে কল্পনা করতে পারিনা।প্লিজ তুই বিয়ে টা বন্ধ করে দে.??


তন্নিঃ দেখ তোর ড্রামা বন্ধ কর।। কালকে আমার বিয়ে আর তুই বলছিস বিয়ে বন্ধ করে দিতে। ছিহহহ তুই 

এতো নিচু আগে জানতাম না। তুই জাস্ট আমার ফ্রেন্ড এর চাইতে বেশি কিছু না??


আমিঃ আমি তোকে অনেক বার বলতে চেয়েও বলতে পারিনি। আমি সত্যি বলছি আমি তোকে অনেক ভালোবাসি??


এই কথাটা বলে আমি তন্নির গালে একটা কিস বসিয়ে দিলাম। আর সে রাগি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে অনেক জোরে একটা ধাক্কা দেয়। এবং ঠাসস ঠাসসস করে দু গালে চড় বসিয়ে দেয়। আর বলতে থাকে......


তন্নিঃ ছিহ আমার ভাবতেই অবাক লাগে। আমি তোর মতো ছেলের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করেছি। তাও আবার বেস্টফ্রেন্ড??


আমিঃ..........(চুপ করে রইলাম) 


তন্নিঃ কালকে আমার বিয়ে আর তুই আজকে এসেছিস আমাকে প্রপোজ করতে। তোর কি একটু লজ্জা সরম নেই নাকি?


আমিঃ তুই আমার কথাটা শোন?? 


তন্নিঃ তোর কোনো কথা আমি শুনবো না।। তুই এখনই আমাদের বাসা থেকে চলে যা। তোকে যেনো আর কোনদিন আমার সামনে না দেখি। তোর আর আমার ফ্রেন্ডশিপ এখানেই শেষ। আজ থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না???


আমিঃ তন্নি প্লিজ আমার কথাটা শোন......(পুরোটা বলতে না দিয়ে )


তন্নিঃ তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।। তুই এখান থেকে চলে যা। নাহয় গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো?


আমি আর কোনো কথা না বলে চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম। এর পরেই তো....


গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ (পর্ব_০২)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


এই কথাটা বলে আমি তন্নির গালে একটা কিস বসিয়ে দিলাম। আর সে রাগি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে অনেক জোরে একটা ধাক্কা দেয়। এবং ঠাসস ঠাসসস করে দু গালে চড় বসিয়ে দেয়। আর বলতে থাকে......


তন্নিঃ ছিহ আমার ভাবতেই অবাক লাগে। আমি তোর মতো ছেলের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করেছি। তাও আবার বেস্টফ্রেন্ড??


আমিঃ..........(চুপ করে রইলাম) 


তন্নিঃ কালকে আমার বিয়ে আর তুই আজকে এসেছিস আমাকে প্রপোজ করতে। তোর কি একটু লজ্জা সরম নেই নাকি?


আমিঃ তুই আমার কথাটা শোন?? 


তন্নিঃ তোর কোনো কথা আমি শুনবো না।। তুই এখনই আমাদের বাসা থেকে চলে যা। তোকে যেনো আর কোনদিন আমার সামনে না দেখি। তোর আর আমার ফ্রেন্ডশিপ এখানেই শেষ। আজ থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না???


আমিঃ তন্নি প্লিজ আমার কথাটা শোন......(পুরোটা বলতে না দিয়ে )


তন্নিঃ তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।। তুই এখান থেকে চলে যা। নাহয় গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো?


আমি আর কোনো কথা না বলে চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসলাম।


বাসায় এসে রেড়ি হয়ে বাবা আর আমি এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। সানি আর আয়মানকে কিছুই জানালাম না।।এরপর এয়ারপোর্ট বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম দেশ ছেড়ে।

||||

অনেক কষ্ট হয়েছিল প্রিয় মানুষদের জন্য। কিন্তু আমি এখানে থাকলে হয়তো আরো বেশি কষ্ট পাবো।

|||

চলে যাওয়ার আগে নিজের ভার্চুয়াল জগতের সবকিছু ডিলেট করে দিলাম। একটা নাম্বারও ওপেন রাখলাম না। সেখানে গিয়ে কিছুদিন মন খারাপ করে বসে ছিলাম। পরে নতুন ক্যাম্পাস নতুন বন্ধু পেয়ে তন্নির কথা প্রায় ভুলে গেলাম।। এবং আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলাম।

|||

দেখতে দেখতে প্রায় দুই বছর চলে গেলো।।আমার পড়া লেখাও শেষ।চিন্তা করলাম এখানেই একটা চাকরি করবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। আব্বু আম্মু কল দিয়ে কান্না করতেছে। আব্বুকে অনেক বার বলেছি আমি এখানে একটা চাকরি করবো।কিন্তু আব্বু বললো নিজেদের ব্যাবসা দেখা শোনা করার জন্য।

|||

সেদিন রাতে বসে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজ করছি এমন সময় বড় খালা আসলো। ( আমি বিদেশে বড় খালার বাসায় ছিলাম। আর এখানে থেকেই পড়া লেখা করেছিলাম) আমার রুমে খালাকে দেখে বললাম........


আমিঃ খালামনি ঘুমাও না এখনো? 


খালামনিঃ নারে বাবা ঘুম আসেনা। তুই কি করছিস?


আমিঃ কিছু না খালামনি, একটু কাজ করতেছি।

কিছু বলবে?


খালামনিঃ হুম বাবা একটা কথা বলতাম। যদি তুই 

অনুমতি দিস?


আমিঃ আরে কি আজব। আমার সাথে কথা বলতে তোমার অনুমতি লাগবে নাকি। বলো কি বলবে?


খালামনিঃ দেখ বাবা আমার কোনো সন্তান নাই। তুই আমার নিজের সন্তানের মতো। তুই যেদিন এখানে এসেছিলি সেদিন আমি কি পরিমানে খুশি হয়েছি 

বলে বুঝাতে পারবো না। আমি ভাবছি তোকে সারা জীবনের জন্য আমার কাছে রেখে দিবো। কিন্তু সেটা অসম্ভব??


আমিঃ কেনো অসম্ভব। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও 

যাবো না। আর তোমার সন্তান নাই কে বলেছে। আমি তো তোমার সন্তান??


খালামনিঃ কাল রাত্রে তোর আম্মু কল করেছিলো? 


আমিঃ হুম কি বলেছে? 


খালামনিঃ অনেক অসুস্থ?? সারাদিন বাসায় থাকতে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। তোর বাবা সারাদিন বাহিরে বাহিরে থাকে। তাই আমি বলছি তুই দেশে চলে যা। তোর মায়ের কাছে থাক। আর একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে কর। তোর মা বাবা অনেক খুশি হবে.??


আমিঃ খালামনি সবকিছু ঠিক আছে কিন্তু আমি দেশে যাচ্ছি না। এন্ড বিয়ে তো ইম্পসিবল? 


এরপর খালামনি আমার হাত ধরে বললো...........


খালামনিঃ প্লিজ বাবা এমন করিস না।। তোর মা বাবার কথা একবার চিন্তা কর। ওদের কি ইচ্ছে করে না ছেলের বউয়ের সাথে সময় কাটাতে,নাতিদের সাথে একটু খেলা করতে। প্লিজ বাবা তুই দেশে ফিরে যা। প্রয়োজনে মাঝে মাঝে এখানে আসিস। কিছুদিন থাকবি ঘুড়বি ভালো লাগবে। প্লিজ বাবা না করিস না?


খালামনি এই কথাটা বলেই আমার হাতে একটা টিকেট ধরিয়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম......


আমিঃ খালামনি এটা কখন করলে? 


খালামনিঃ তোর এতকিছু জানার দরকার নেই। আর শোন আমি কিছু জিনিস কিনে রেখেছি ওগুলো 

নিয়ে যাবি। এখন ঘুমা?


পরের দিন সবকিছু রেডি করে খালামনির থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম দেশে৷ বাবা মা আগে থেকে এয়ারপোর্টে ছিলো। আমাকে দেখেই কান্না শুরু করে দিলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম।।কারন মা অনেক অসুস্থ হয়ে গেছে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না। বাবার অবস্থাও আগের মতো নেই।


এরপর বাবা আর মায়ের সাথে বাসায় চলে আসলাম।।বাসায় এসে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে আগের সিম কার্ড-টা আবার ওপেন করলাম। কল আর ম্যাসেজ এসে পুরো সিম ফুল হয়ে গেছে। তবে একটা জিনিস দেখে খারাপ লাগলো। তন্নি কল তো দূরের কথা একটা ম্যাসেজও দেয়নি। হয়তো অনেক সুখে আছে। তাই আমাকে আর প্রয়োজন মনে করেনি। চোখের কোনে পানি এসে জমা হয়ে গেলো।


এরপর আমি সানির নাম্বারে কল দিলাম।। কয়েক বার দেওয়ার পর কল ধরে সানি বলতে শুরু করলো........ 


সানিঃ কিরে তুই বেঁচে আছিস?


আমিঃ কেনো মরলে খুশি হতি নাকি?


সানিঃ এই সালা কথা বলবি না তুই। তোর সাথে কোনো কথা নাই। আমি তোর কেউ না? 


আমিঃ প্লিজ ভাই রাগ করিস না। তোকে আমি সবকিছু বলবো?? 


সানিঃ কিছু বলতে হবে না তোর। তুই তোর মতো থাক?


আমিঃ আচ্ছা শোন বিকেলে কফিশপে আয়। তোদের সাথে দেখা করবো। আর কিছু কথা আছে। আয়মান আর ফারিহাকে কষ্ট করে বলে দিস??


সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


এই কথা বলে কলটা কেটে দিলাম। বিকাল বেলায় বের হয়ে কফিশপের দিকে রওয়ানা দিলাম।। রাস্তা ঘাট সব কিছু কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেছে। 


কিছুক্ষণ পর কফিশপে এসে গেলাম। এসে দেখি সবাই বসে আছে। আজকেও আমার লেট হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।। তারপর তিনজন মিলে কিল আর ঘুসি দিতে লাগলো।


এতোদিনের জমানো সবগুলো এক সাথে দিয়ে দিলো।ওদের সাথে কৌশল বিনিময় করলাম। তারপর আমি সানিকে বললাম.......... 


আমিঃ তোর কি অবস্থা চাকরি বাকরি কিছু করিস 

নাকি??


সানিঃ হুম আমি আর ফারিহা একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করি??


আমিঃ গুড। আয়মান তুই কি করিস??


আয়মানঃ কি আর করবো! বাবার সাথেই আছি ব্যাবসা নিয়ে। তো তুই কি করবি দেশে থাকবি না আবার উধাও হয়ে যাবি?? 


আমিঃ আরে না তোদের ছেড়ে আর যাচ্ছি না। তোর বউ কোথায়?? 


আয়মানঃ আরে আমি এখনো বিয়ে করিনি। তবে আব্বু উনার বন্ধুর মেয়ের সাথে ঠিক করে রেখেছে। ওর পড়া লেখা শেষ হলে তারপর বিয়ে?? 


আমিঃ আচ্ছা ভালো। তোদের দুজনের কি অবস্থা?? (সানি আর ফারিহাকে বললাম)


দেখি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসতেছে। তারপর আয়মান বললো........


আয়মানঃ মামা ওরা নিজেরা নিজেরা সারাই ফেলেছে?


আমিঃ কিহ তোরা এই কাজ করলি। যাক খুশি হলাম?সারাজীবন এক সাথে ছিলি আর থাকবি। ভালো হইছে?


সানিঃ তো তুই কবে করছিস?? 


আমিঃ হা হা হা আমার মতো ছেলেকে কে মেয়ে 

দিবে বল?? 


ফারিহাঃ ধুরর ফাইজলামি করিস না?? 


আমিঃ এই তন্নি কেমন আছে রে। মনে হয় অনেক সুখে আছে তাই না?


এই কথা শুনার পর ওরা তিনজন একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো। এরপর আয়মান বললো....... 


আয়মানঃ আসলে তন্নির বিয়ে হয়নি?? 


আমিঃ মানে! মস্কারা করছিস তাই না। দেখ জোকস একদম ভালো লাগে না?? 


ফারিহাঃ নারে আয়মান ঠিক বলেছে ওর বিয়ে 

হয়নি??


আমিঃ কি বলছিস তোরা বিয়ে হয়নি কেনো??


আয়মানঃ তুই তো সেইদিন চলে গিয়েছিলি, থাকলে 

তুইও দেখতি কেনো বিয়ে হয়নি??


আমিঃ এতো কথা না বলে কেনো বিয়ে হয়নি 

সেটা বল??


আয়মানঃ আসলে রায়হান ছেলেটার সাথে অন্য একটা মেয়ের রিলেশন ছিলো। বিয়ের দিন সে ওই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়?? 


আমিঃ তারপর.?? 


আয়মানঃ তারপরে আর কি.ওরা বিয়েটা ভেঙে দিলো। তন্নির বাবা ওদের হাতে পায়ে ধরেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরে আমরা তোকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু তুই চলে গেলি। তন্নির বাবা আমাকে অনেক বার বলেছে তন্নিকে বিয়ে করার জন্য কিন্তু আমি বিয়ে করিনি।শুধু মাত্র তোর কথা ভেবে। কারন তুই পরে বুঝবি আমি আর তন্নি ছিট করে বিয়ে করেছি???


আমিঃ আরে ধুর এসব কেনো বলছিস৷ আমি কিছুই বলতাম না। তুই বিয়েটা করে ফেলতি?? 


আয়মানঃ না বন্ধু সেটা হয় না?? 


এরপর ফারিহা বললো......... 


ফারিহাঃ সেদিন থেকে তন্নি পাথরের মতো হয়ে গেছে।। ঠিক মতো খায়না,ক্যাম্পাসে যায় না আমাদের সাথেও মিশে না। দরকার ছাড়া কোনো কথা বলবেনা। সারাদিন জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে??


আমিঃ ওর আর বিয়ের জন্য প্রপোজাল আসেনি?? 


সানিঃ আসছে কিন্তু সে করবে না। আমাদের বিয়ের সময় ও এসে গিফট দিয়েই চলে গেছে??


আমিঃ তন্নি কি এখন এখানেই থাকে না চলে 

গেছে?? 


ফারিহাঃ না আগের বাসায় আছে?? 


আমিঃ আমি একটু ওর সাথে কথা বলবো। তোরা 

যাবি আমার সাথে?? 


আয়মানঃ আজকে তো সময় নাই। কালকে বিকাল বেলায় সবাই ফ্রি আছি। কালকে চল যাই?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


সবাই মিলে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।। তারপর ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতেছি ওর বাবা মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে কেমন হয়। ইশ আমি যদি সেদিন থাকতাম এতদিনে আমাদের বাচ্ছাও বড় হয়ে যেতো। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।


পরের দিন আমরা ৪জন ওদের বাসায় গেলাম। দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজালাম। কিছুক্ষণ পর ওর মা এসে দরজা খুলে দেয়। আমাদের দেখে উনি অনেক খুশি হন।আমাকে দেখে বললেন..........


আন্টিঃ আরে অপুর্ব! তুমি এতদিন পরে কোথায় থেকে আসলে। এতদিন কোথায় ছিলে বাবা??


আমিঃ আন্টি আমি তো দেশে ছিলাম না?? 


আন্টিঃ ও আচ্ছা। এই দাড়িয়ে কেনো আসো সবাই ভিতরে আসো??


তারপর আমরা সবাই ভিতরে গেলাম।। কিছুক্ষণ বসে আন্টির সাথে গল্প করলাম। কিন্তু তন্নিকে কোথাও দেখছি না। আমি ফারিহাকে ইশারায় বললাম তন্নিকে দেখতে সে উঠে তন্নির রুমে গেলো। গিয়ে অনেকক্ষণ 

পরে আসলো। তারপর আমি বললাম.......... 


আমিঃ কিরে ও বাসায় নেই?? 


ফারিহাঃ হুম আছে ভিতরে। এখানে নাকি আসবে না। তুই কথা বললে ভিতরে যা??


এরপর আমি উঠে চলে ভিতরে গেলাম।গিয়ে দেখি তন্নি জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অনেকক্ষণ ধরে পিছনে দাঁড়িয়ে রইলাম। কেমন জানি নার্ভাস লাগতেছে। কিন্তু ওর কোনো নড়াচড়া নাই। তারপর আমি একটা কাঁশি দিলাম। দেখলাম পিছনে তাকালো। এরপর সে বললো......


তন্নিঃ কিরে কখন আসছিস?? 


আমিঃ এই তো কিছুক্ষণ হলো।কেমন আছিস তুই? 


তন্নিঃ হুম ভালো। তুই এখানে কেনো আসছিস?? 


কথাটা শুনে অনেক খারাপ লাগলো।কতদিন পরে দেখা হলো জিজ্ঞেস করবে আমি কেমন আছি,তা না করে বলছে তুই এখানে কেনো আসছিস। আমি বললাম.......


আমিঃ এখনো রাগ করে আছিস। সে দিনের জন্য আমি অনেক সরি?? 


তন্নিঃ আমি কারো উপর রাগ করিনা। সেই অধিকার আমার নেই। এতদিন কোথায় ছিলি?? 


আমিঃ বিদেশে?


তন্নিঃ তা এখন এখানে কেনো এসেছিস??


আমিঃ তোকে দেখতে?? 


তন্নিঃ দেখা হয়ে গেছে এখন যা??


আমিঃ কেনো তোর কি বিরক্ত লাগছে নাকি?? 


তন্নিঃ তুই রুম থেকে বের হলে আমি খুশি হবো। প্লিজ এখান থেকে যা??


আমি আর কিছু না বলে সোজা বাহিরে চলে আসলাম। এক রকম অপমানিত হয়ে। এরপর আন্টি নাস্তা নিয়ে আসলো। আমরা নাস্তা খেতে খেতে কথা বলতেছি।এরপর আমি আন্টিকে বললাম.........


আমিঃ আন্টি একটা কথা বলতাম। যদি কিছু না মনে করেন??


আন্টিঃ হুম বাবা বলো??


আমিঃ আন্টি আমি তন্নিকে বিয়ে করতে চাই?? 


আমার কথা শুনে আয়মান সানি আর ফারিহা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আন্টি বললো.....


আন্টিঃ কিন্তু বাবা তোমার মা বাবা কি রাজি হবে। আর তন্নির তো বিয়ে করার ইচ্ছে নেই বলতেছে??


আমিঃ আন্টি আমার মা বাবা আমার উপর কোনো কথা বলবে না। আপনি যদি রাজি থাকেন আমি 

তন্নিকে বিয়ে করবো??


আন্টিঃ বাবা ঠিক আছে! কিন্তু তন্নি....?? 


আমিঃ বিয়ের পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে?? 


আন্টিঃ আচ্ছা বাবা দেখি কি করা যায়?? 


এর পরেই তো....... 


গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ (পর্ব_০৩)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


আমার কথা শুনে আয়মান, সানি আর ফারিহা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আন্টি বললো.....


আন্টিঃ কিন্তু বাবা তোমার মা বাবা কি রাজি হবে। আর তন্নির তো বিয়ে করার ইচ্ছে নেই বলতেছে??


আমিঃ আন্টি আমার মা বাবা আমার উপর কোনো কথা বলবে না। আপনি যদি রাজি থাকেন আমি 

তন্নিকে বিয়ে করবো??


আন্টিঃ বাবা ঠিক আছে!  কিন্তু তন্নি....?? 


আমিঃ বিয়ের পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে?? 


আন্টিঃ আচ্ছা বাবা দেখি কি করা যায়?? 


এরপর আমি, আয়মান, সানি ও ফারিহা তন্নিদের বাসা থেকে চলে আসলাম। এরপর বাসায় গিয়ে আমি আব্বু  আম্মুকে বললাম তন্নির কথা।


আমার কথা শুনে উনারা অনেক খুশি। বললেন তোর পছন্দই আমাদের পছন্দ। আর মা বললেন "তন্নি মেয়েটাকে আমারো অনেক ভালো লাগে"।


অবশেষে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো।। তন্নিকে এক রকম জোর করে বিয়েটা দেওয়া হয়েছে। কবুল বলার সময় দেখলাম কবুল বলতে চাচ্ছে না। ফারিহা আর ওর মায়ের জোরাজুরিতে বলেছে।


এখন প্রায় রাত ১১ টা বাজে। আমি,সানি,আয়মান বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় ফারিহা ছাদে আসলো। আর এসে আমাকে বললো...... 


ফারিহাঃ কিরে তুই এখানে?? (অবাক হয়ে )


আমিঃ তো কোথায় থাকবো?? 


ফারিহাঃ আজকে না তোর বাসর রাত। তন্নি অনেক আগে থেকে একা একা বসে আছে। যা ঘরে যা??


আয়মানঃ হুম বন্ধু যা। আর বসে থাকা ঠিক হবে না?? 


এরপর আমি উঠে আস্তে আস্তে রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। এমন সময় সানি বলে উঠলো.........


সানিঃ মামা মনে করে বিড়াল-টা মারিস। আর কোনো দরকার হলে আমাকে কল দিস?? 


ফারিহাঃ এই ফাজিল তোর মুখে কি কিছু আটকায় না। সবাই কি তোর মতো না কি?? 


আমি আর কিছু না বলে মুসকি হেসে ছাদ থেকে নেমে আসলাম। বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কেমন জানি ভয় হচ্ছে আবার লজ্জাও। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে করে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম। এবং দরজা-টা আবার লাগিয়ে দিলাম।


দেখলাম তন্নি মাথা নিচু করে বসে আছে।। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম। ঠিক তখনই তন্নি আমাকে বলে উঠলো........ 


তন্নিঃ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে?? 


আমিঃ কি কথা বল। আর শোন আজকে থেকে আমি তোর স্বামী। সুতারাং তুই করে বলবি না,,,তুমি করে বলবি। এবং আমিও বলবো?? 


তন্নিঃ দেখ তোকে আমি কখনো স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পরবোনা৷ তুই জাস্ট আমার ফ্রেন্ড?? 


আমিঃ তাহলে বিয়েতে মত দিলি কেনো?? 


তন্নিঃ তোর কি ধারনা আমি নিজের থেকে মত দিয়েছি, জীবনেও না। মা আমাকে উনার মরার কসম দিয়েছে।সে জন্য আমি বিয়ে-টা করছি?? 


আমিঃ তোর মায়ের কসমের জন্য আমার জীবন-টা নষ্ট করবি নাকি। সুতারাং তুই এখন কি চাস??


তন্নিঃ তুই জীবনেও আমার কাছে স্বামীর অধিকার দেখাতে পারবি না। তুই তোর মতো আর আমি 

আমার মতো করে থাকবো?? 


আমিঃ ওকে আমি তোর উপর কোনো অধিকার খাটাবো না। অন্ততো আমার মা বাবার সামনে 

একটু নাটক করিস। না হলে উনারা অনেক কষ্ট পাবে??


তন্নিঃ চেষ্টা করবো??


আমি আর কিছু না বলে খাটে ঘুমাতে যাবো। ঠিক সেই  সময় তন্নি আবারো চিৎকার দিয়ে উঠে আর আমাকে  বলতে শুরু করে...... 


তন্নিঃ কি করছিস তুই?? 


আমিঃ কি করলাম ঘুমাতে যাচ্ছি?? 


তন্নিঃ ঘুমাবি ভালো কথা,,কিন্তু খাটে কেনো?? 


আমিঃ তাহলে কোথায় ঘুমাবো??


তন্নিঃ যেখানে খুশি সেখানে ঘুমা। দরকার হলে সোফায় গিয়ে ঘুমা। বাট খাটে ঘুমাতে পারবি না?? 


আমিঃ এটা আবার কেমন কথা। খাট থাকতে সোফায় কেনো ঘুমাতে হবে??


তন্নিঃ কারন তোর সাথে এক খাটে ঘুমানোর ইচ্ছা আমার নেই। সো তুই খাটে ঘুমাবি না?? 


আমি আর কিছু না বলে একটা বালিশ নিয়ে লাইট বন্ধ করে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম। তন্নি খাটের উপর শুয়ে পড়লো।। আমার কিছুতেই ঘুম আসছে না। পরে আমি উঠে বেলকনিতে চলে গেলাম।


বেলকুনিতে গিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলাম......আমার মতো অভাগা পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। এই বাসর ঘর নিয়ে কতকিছু চিন্তা করে রেখে ছিলাম। কিন্তু কিছুই হলো না।


মনে মনে ভাবলাম...তন্নির সাথে ফ্রেন্ডশিপ-টা না হলেই ভালো হতো। সুন্দর একটা জীবন পেতাম। নিয়তি বার বার আমাকে ওর কাছে নিয়ে আসছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কোনে পানি চলে আসছে বুঝতে পারিনি। এমন সময় খেয়াল করলাম রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। আমি তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে লাইট-টা অন করলাম।


দেখলাম তন্নি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁন্না করছে। লাইট অন করাতেই তন্নি কান্না বন্ধ করে দিলো। তারপর আমি বললাম......


আমিঃ কিরে তুই এখনো ঘুমাস নি।  আর কান্না করছিস কেনো??


তন্নিঃ না এমনি! তুই কোথায় ছিলি??


আমিঃ বারান্দায় ছিলাম। ঘুমিয়ে পড়,,রাত অনেক হয়েছে। রাত বেশি জাগলে শরীর খারাপ হবে??


তন্নিঃ হুম তুই-ও ঘুমিয়ে পড়?? 


আমি আর কিছু না বলে লাইট বন্ধ করে দিলাম।খেয়াল    করে দেখলাম ওর মোবাইলে রায়হান ছেলেটার ছবি। এবার বুঝতে পারছি তন্নি কেনো কান্না করেছে।।হয়তো ছেলেটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে তাই।


মনে মনে ভাবতে লাগলাম বালিকা তুমি আমাকে চিনো না,আমি কোন জালের মাছ। তোমাকে আমার প্রতি দুর্বল করে তারপর প্রত্যেকটা কথার প্রতিশোধ নিবো।

কোথাকার একটা ছেলের জন্য আমার ভালোবাসাকে দুই টাকার দাম দিচ্ছো না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম মনে নেই।


সকাল বেলায় একটা মিষ্টি কান্ডে ঘুম ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি তন্নি। এই মাত্র গোসল করে আসছে। ওর চেহারা টা অনেক মায়াবি লাগছে।। আমি অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকার পর তন্নি বললো..... 


তন্নিঃ ওই,,এই ভাবে ছ্যাঁচড়াদের মতো তাকিয়ে না 

থেকে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নে। আম্মা এসে কয়েক বার ডেকে গেছে নাস্তা করার জন্য??


আমি কিছু না বলে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হতে হতে ভাবলাম তন্নি আমাকে জীবনেও মেনে নিবে না। ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখলাম তন্নি মন মরা হয়ে বসে আছে।। তন্নি আমাকে দেখে নিচে চলে গেলো।আমি রেড়ি হয়ে নিচে গেলাম।। গিয়ে দেখি আমি ছাড়া সবাই বসে আছে। সবাই এক সাথে নাস্তা করলাম। এরপর বাবা বললেন...... 


বাবাঃ নাস্তা করে দেখতো সানি আর আয়মান কোথায়। ওদের-কে বাবুর্চির কাছে পাঠিয়ে ছিলাম??


বাবার কথা শুনে আমি হাসতে শুরু করলাম?? হায়রে আমার বন্ধু গুলো বাবুর্চির কাজ করছে। তারপর বাবা বললেন..... 


বাবাঃ না হেসে ওদের বাহিরে গিয়ে দেখ?? আর শোন কালকে তাড়াতাড়ি উঠিস,অফিসের কলিগদের সাথে পরিচিত হবি অফিস বুঝে নিবি। আমি আর যাবো না?


আমিঃ কিন্তু বাবা...??(পুরোটা না বলতে দিয়ে)


বাবাঃ কোনো কিন্তু না যেটা বলছি সেটাই??


তারপর নাস্তা করে সানি আর আয়মানকে খুজতে শুরু  করলাম। বেশ ভালো ভাবেই বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ হলো??


এরপর রাতে যখন আবার ঘুমাতে যাই। গিয়ে দেখি তন্নি আগে থেকেই বিছানায় শুয়ে আছে। আমি কিছু না বলে ছাদে চলে গেলাম। সারারাত ওখানেই কাটিয়ে দিলাম।


পরেরদিন সকালে নাস্তা করে বাবার সাথে অফিসে চলে গেলাম। বাবা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এবং এটাও বললেন আজ থেকে আমি ওদের বস। সবাই আমাকে অভিনন্দন জানালো?? সেই দিন সবার সাথে পরিচিত হয়ে বাসায় চলে আসলাম। 


এই ভাবে এক সাপ্তাহ চলে গেলো.? তন্নির সাথে আমার আর তেমন কথা হয় না। দরকার ছাড়া আর কোনো কথা নেই। সেদিন সকালে নাস্তা করে অফিসে এসে কিছু দরকারি কাজ সেরে নিলাম। তারপর চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখটা বন্ধ করে রিলেক্স করতেছি। এমন সময় ইউসুফ এর কল......... 


ইউসুফঃ কিরে দোস্ত কি অবস্থা। বিয়ে করে তো আমাদের ভুলে গেলি?? 


আমিঃ আরে না কি যে বলিস। তোদেরকে 

কেনো ভুলবো?? 


ইউসুফঃ দোস্ত তোর বিয়েতে আসতে পারিনি। আম্মু অসুস্থ ছিলো। কিছু মনে করিস না?? 


আমিঃ আরে না কিছু মনে করিনি। তো বল আন্টি কেমন আছে??


ইউসুফঃ আগের থেকে ভালো। তোর বাসার সবাই কেমন আছে??


আমিঃ নারে দোস্ত তেমন ভালো নাই। আব্বু আম্মু দুজনেই অসুস্থ?? 


ইউসুফঃ এক কাজ কর উনাদেরকে নিয়ে ধুরে কোথাও থেকে ঘুরে আয়। যদি পারিস দেশের বাহিরে চলে যা ভালো লাগবে?? 


আমিঃ ঠিক বলেছিস আচ্ছা দেখি কি করা যায়?? 


এই কথাটা বলে কলটা কেটে দিলাম?? মনে মনে চিন্তা করলাম কোথাও থেকে ঘুরে আসলে মন্দ হয় না।এগুলো ভাবতে ভাবতে দেখি টিপিনের সময় হয়ে গেছে। আমি হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। এরপর চিন্তা করলাম তন্নিকে একটা কল দেই। খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করি। এরপর তন্নিকে কল দিলাম। কিছুক্ষন

রিং হওয়ার পর কলটা ধরলো। বিরক্ত হয়ে বললো....


গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ (পর্ব_০৪)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


এই কথাটা বলে কলটা কেটে দিলাম?? মনে মনে চিন্তা করলাম কোথাও থেকে ঘুরে আসলে মন্দ হয় না।এগুলো ভাবতে ভাবতে দেখি টিপিনের সময় হয়ে গেছে। আমি হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। এরপর চিন্তা করলাম তন্নিকে একটা কল দেই। খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করি। এরপর তন্নিকে কল দিলাম। কিছুক্ষন

রিং হওয়ার পর কলটা ধরলো। বিরক্ত হয়ে বললো....


তন্নিঃ কি ব্যাপার তুই এ সময়ে কেনো কল দিলি?? 


আমিঃ না মানে খেয়েছিস কিনা জানার জন্য?? 


তন্নিঃ দেখ তোর আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না। আমাকে আমার মতো থাকতে দে??


কথাটা বলে কল কেটে দিলো।। বুঝতে পারলাম না তন্নি কেনো আমার সাথে এমন ব্যাবহার করে। আমি তো ওর ভালো চাই। তবুও সে কেনো বুঝে না।


না থাক আজ থেকে আর ওর কেয়ার করবো না। ওর মতো ও থাকবে আমার মতো আমি থাকবো। এগুলো চিন্তা করতে করতে আবার কাজে মন দিলাম।


রাতে বাসায় গিয়ে দেখলাম বাবা বসেবসে খবর দেখছে আর মা রান্না ঘরে৷ আমি বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার দাঁড়িয়ে থাকা দেখে আব্বু বললো........


বাবাঃ  কিরে কিছু বলবি??


আমিঃ জ্বি বাবা একটা কথা বলার ছিলো। যদি কিছু 

না মনে করো তাহলে বলতাম?? 


বাবাঃ আরে পাগল আমার সাথে কথা বলতে তোর অনুমতি লাগবে নাকি। বল কি বলবি??


আমিঃ আসলে বাবা বলছিলাম কি! সারাদিন অফিসের কাজ করতে করতে তোমাদেরকে সময় দিতে পারি না। চলো না আমরা সবাই মিলে কয়েক দিনের জন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসি। সবার ভালো লাগবে?? 


বাবাঃ  কথাটা ঠিক বলেছিস কিন্তু যাওয়া হবে না?? 


আমিঃ কিন্তু কেনো বাবা??


বাবাঃ গত কাল রাতে তোর দাদুকে স্বপ্নে দেখেছিলাম। কবরটা নাকি ভেঙ্গে পুকুর হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি আর তোর মা ১০-১৫ দিনের জন্য গ্রামের বাড়ি যাবো। কয়েক জন হুজুর আর এতিমদের খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করবো৷ যদি সুযোগ পাই কবরের চার পাশে দেওয়াল করে আসবো??


আমিঃ ও আচ্ছা! তাহলে তোমরা গ্রামে যাও ঘুরে আসো ভালো লাগবে?? 


এ কথা বলে আমি রুমের দিকে চলে যাচ্ছি। এমন সময় আবার বাবা ডাক দেয়.......


বাবাঃ শোন তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে?? 


আমিঃ কি কথা বাবা বলো?? 


বাবাঃ বলেছিলাম কি, তোর বিয়ের পর তো কোথাও ঘুরতে যাসনি। তন্নি একা একা বাসায় বসে থাকে।

তাই আমি বলেছি কি তুই আর তন্নি কোথাও থেকে 

ঘুরে আয়??


আমিঃ না বাবা তোমরা না গেলে আমরা ও যাবো না?? 


বাবাঃ আরে পাগল,,আমরা যে কয়েক দিন গ্রামের বাড়িতে আছি,সে কয়েক দিন কোথাও থেকে ঘুরে 

আয় ভালো লাগবে?? 


আমিঃ কিন্তু বাবা অফিস?? 


বাবাঃ আমি ম্যানেজার-কে বলে দিছি সে দেখবে। আর শোন তোর বড় খালার ওখানে চলে যা।তুই গেলে উনিও খুশি হবে। উনার সাথে কথা বলে আমি সব ঠিক করে রেখেছি। তোর মায়ের কাছে তোদের দু জনের টিকেট রেখে দিয়েছি?? 


আমিঃ এগুলো আবার কখন করলে?? (অবাক হয়ে)


বাবাঃ এতোকিছু তোর জানার দরকার নেই। পরশু দিন তোদের ফ্লাইট? 


আমি আর কোনো কথা না বলে মুসকি হাঁসি দিয়ে রুমে চলে গেলাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম তন্নি কি রাজি হবে। যেই মেয়ে বিয়ের দিন রাতে আমাকে বলে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না।।সে কি রাজি হবে বাহিরে হানিমুনে ঘুরতে যেতে। 


দূর যা হবার তা পরে হবে আগে কিছু খেয়ে নেই অনেক খিদা লাগছে। তারপর হালকা নাস্তা করে নিলাম। কিন্তু তন্নিকে দেখছি না কোথাও। রান্না ঘরে গেলাম সেখানে ও নেই। আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম....... 


আমিঃ আম্মু তন্নিকে দেখছি না ও কোথায় গেছে ?? 


আম্মুঃ তন্নি একটু বাপের বাড়ি গেছে। আমিও আর না করিনি। সারাদিন বাসায় বসে থাকে। বাইরে থেকে 

ঘরে আসলে মনটা একটু হালকা হবে??

|||

আর আমি তন্নিকে বলে দিয়েছি তুই ও আজকে ওদের বাসায় যাবি। রাতটা ওখানে কাটাবি। সকাল হলে তন্নিকে নিয়ে বাসায় চলে আসবি??


আমিঃ দূরর আমি গিয়ে কি করবো??


আম্মুঃ এই তুই কি পাগল! মেয়েটা একা একা ওখানে গেছে।। আর যদি একা একা আসে তাহলে ওদের বাসার সবাই কি ভাববে??


আমিঃ আচ্ছা আমি সকালে গিয়ে নিয়ে আসবো??


আম্মুঃ সকালে মানে! এখন যাবি তুই যা রেড়ি হয়ে আয়??


কি আর করার ইচ্ছে না থাকা স্বর্তেও রেড়ি হয়ে ওদের বাসার রওয়ানা দিলাম। তন্নিকে অনেক বার কল দিলাম, কিন্তু সে কল ধরছে না। 


তারপর আমি আয়মান আর সানির সাথে চ্যাটিং করতে করতে ওদের বাসার সামনে চলে আসলাম। গাড়ি থেকে নেমে ওদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন প্রায় রাত ৯টা বাজে। তারপর ভিতরে গেলাম। আমাকে দেখে শ্বশুর- শ্বাশুড়ি অনেক খুশি হলেন। তাদের সাথে অনেকক্ষন কথা বলে নিলাম। এরপর শ্বাশুড়ি বললো...


শ্বশুড়িঃ যাও বাবা রুমে যাও, তন্নি রুমে আছে। ওখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো। আমি  খাবার রেড়ি করছি??


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


এ কথা বলে আমি তন্নির রুমের দিকে হাঁটা দিলাম। ওর দরজার সামনে গিয়ে শুনতে পেলাম রুম থেকে অনেক জোরে হাঁসির শব্দ আসছে। সবার থেকে ওর হাঁসিটা আলাদা। অনেক দিন পর সে হাঁসছে। আমি বাইরে থেকে উকি দিয়ে দেখলাম ওর কয়েকজন কাজিন বসে বসে গল্প করছে। তাদের মধ্যে একজন আমাকে দেখে ফেলে তারপর বলে........ 


তন্নির ফ্রেন্ডঃ আরে দুলাভাই আপনে আসছেন। আমরা আপনার কথাই বলছিলাম। আসুন ভিতরে আসুন?


তারপর আমি ভিতরে গেলাম, অনেকক্ষণ তাদের সাথে গল্প করলাম। এরপর ওরা সবাই চলে গেলো। তখন তন্নি আমাকে বললো.........


তন্নিঃ তুই এখানে কেনো আসছিস?? 


আমিঃ মানে কি!! তোর বাসায় আসার জন্য মনে হচ্ছে আমার ঠেকা পড়ছে। আম্মু আমাকে আসতে বলেছে? 


তন্নি মুখে বিরক্ত নিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে।। এমন সময় শ্বশুড়ি আম্মা এসে আমাদেরকে ডেকে নিয়ে গেলেন খাবার খাওয়ার জন্য। আমি আর কিছু না বলে সোজা খেতে চলে গেলাম।


খাবার টেবিলে বসে তো অবাক এতো খাবার।। আসলে শ্বশুর বাড়ি রসের হাড়ি। সবগুলো খাবার আমার পছন্দের। এরপর খাবার শেষ করে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর তন্নি রুমে আসলো। আর এসেই চেঁচামেচি শুরু করে দিলো..... 


তন্নিঃ কিরে তুই বিছানায় শুয়ে আছিস কেনো?? 


আমিঃ তো কোথায় শুবো। তোর রুমে তো সোফা নেই?


তন্নিঃ সোফা নেই তো কি হয়েছে ফ্লোর আছে না। 

ফ্লোরে শুয়ে পড়?? 


আমিঃ মানে! ফ্লোরে শুয়ে পড়বো মানে?? 


তন্নিঃ এতো মানে টানে বুঝিনা আমি তোর সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারবো না??


আমিঃ কেনো ঘুমাতে পারবি না।শুন বিয়েটা যে ভাবেই হোক এখন আমি তোর স্বামী। আর তোর ভয়ের কিছু নেই,আমি তোকে কিছু করবো না। সেটা যদি না হয় তাহলে তুই নিজে ফ্লোরে শুয়ে পর। ফ্লোরে আমার ঘুম আসে না??


আমার খুব বিরক্ত লাগতেছে মেয়েটার কর্ম কান্ড দেখে। ইচ্ছে করছে কানের নিচে দুই-টা দিয়ে দেই। এরপর সে আবার বলতে শুরু করলো..... 


তন্নিঃ এই শোন! এটা আমার রুম সো বিছানাটা ও আমার। আমার বিছানায় আমি ঘুমাবো?? 


আমিঃ তো কি হয়েছে। ভুলে গেছিস এতদিন আমার বিছানায় ছিলি আর আমি সোফায় ছিলাম??


তন্নিঃ আমি নিজের ইচ্ছায় ঘুমাইনি। তুই বলেছিস আমি বিছানায় ঘুমাতে?? 


দূরর এই ফালতুর সাথে কথা বলে পারা যাবে না।। তাই আমি নিজেই ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে ভাবছি তন্নি যদি কালকে আমাদের বাসায় যাওয়ার পর শুনে, যে আমি হানিমুনে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে আসছি তখন কি করবে।


এসব ভাবতে ভাবতে দেখলাম ফকিন্নি খুব আরাম করে ঘুমিয়ে আছে। মনে মনে বললাম তন্নি তুই হয়তো জানিস না আমি কি জিনিস। তোকে আমি এমন সোজা করবো যে তুই আমাকে ছাড়া কিছু বুঝবি না।


এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম মনে নেই। খুব সকাল বেলায় ঘুমটা বেঙ্গে গেলো। ঘুম থেকে উঠতে যাবো এমন সময় দেখি পুরা শরীর ব্যাথা করছে। করারও কথা,সারারাত ফ্লোরে শুয়ে ছিলাম। তাই একটু বেশিই ব্যাথা করছে।


খাটের উপর তাকিয়ে দেখলাম তন্নি খুব আরামে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে ওকে একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে। মুখটা অনেক মায়াবী লাগছে,, আমি ওর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।


একটু পর দেখলাম ওর কয়েকটি চুল উড়ে এসে মুখটা ঘুরে গেছে। ইচ্ছে করছে চুল গুলো আলতো করে পিছনে সরিয়ে দেই। বিয়ের পর থেকে এখনো তন্নিকে টাস ও করিনি।


খুব ইচ্ছে করছে ওর মায়াবী মুখটায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু যদি জেগে যায় তাহলে আমার ১২টা বাজাবে। কিন্তু নিজের ইচ্ছা টাকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। ওর মুখের চুল গুলো আস্তে আস্তে করে সরাতে লাগলাম। হটাৎ করেই তো........


গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ (পর্ব_০৫)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


খুব ইচ্ছে করছে ওর মায়াবী মুখটায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু যদি জেগে যায় তাহলে আমার ১২টা বাজাবে। কিন্তু নিজের ইচ্ছা টাকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। ওর মুখের চুল গুলো আস্তে আস্তে করে সরাতে লাগলাম। হটাৎ করেই তো......👇👇


হটাৎ করে তন্নির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আর আমাকে ওর এতো কাছে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো। এবং সাথে সাথে আমার মুখে ঠাসস ঠাসস করে দুইটা চড় বসিয়ে দিলো। তারপর রেগে চোখ মুখ লাল করে আমাকে বলতে শুরু করলো.........


তন্নিঃ ছিঃ তুই এতো নোংরা! আমি তোকে ভালো মানুষ ভাবছিলাম। কিন্তু তুই যে এতো নিম্ন-মানের সেটা আমি আগে জানতাম না। তোর সাথে কথা বলতেই আমার রাগ হয়??


আমিঃ তুই ভুল ভাবছিস আমার কথা শোন.....(পুরোটা বলতে না দিয়ে)


তন্নিঃ তোর কোনো কথাই আমি শুনবো না?? 


এমন সময় তন্নির আম্মু এসে আমাদেরকে ডাক দিলো।

আর বললো তাড়াতাড়ি নিচে যেতে নাস্তা রেড়ি। 


এরপর আমি আর কোনো কিছু না বলে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে তন্নির রুমে বসে আছি সেও কোথায় যেনো গেছে।


বসে বসে ভাবছি... মানুষ এতো সহজে অবিশ্বাস করতে পারে। আমি যদি জোর করে কিছু করতাম,, তাহলে তো বিয়ের প্রথম রাতেই করতাম।


একটু পর তন্নি এসে আমাকে নিয়ে নাস্তা করতে গেলো। আমিও কোনো কথা না বলে নাস্তা করে রুমে চলে আসলাম।। এসে রেড়ি হচ্ছি কারন তন্নিকে বাসায় দিয়ে আমাকে অফিসে যেতে হবে! তন্নিও রেড়ি হলো।


অতঃপর তন্নিকে বাসায় দিয়ে আমি অফিসে আসলাম।

অফিসে এসে দেখি অনেক কাজ জমে আছে। এক নাগাড়ে করতে লাগলাম।। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি  দুইটা বেজে গেছে। এখন আর কাজ করা যাবে না।


এরপর আমি উঠে নামাজ পড়লাম.? নামাজ শেষ করে কেন্টিনে গেলাম নাস্তা খাওয়ার জন্য ঠিক তখনই তন্নির কল আসলো। আমি কলটা রিসিভ করে বললাম....... 


আমিঃ হুম বল কি হয়েছে?? 


কিন্তু কলটা দিয়েছে বাবা তারপর বাবা বললেন.......


বাবাঃ তন্নি না আমি তোর বাবা বলছি?? 


আমিঃ বাবা এ সময় কল দিয়েছো কিছু বলবে?? 


বাবাঃ তুই এখন কোথায়??


আমিঃ ক্যান্টিনে এসেছি নাস্তা করার জন্য??


বাবাঃ নাস্তা করার দরকার নেই, তুই বাসায় চলে 

আয় এক সাথে খাবো?? 


আমিঃ কিন্তু বাবা.....( পুরোটা বলতে না দিয়ে) 


বাবাঃ কোনো কিন্তু না তোর সাথে কথা আছে?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আসতেছি?? 


তারপর আমি বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখি সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। মনে হচ্ছে আমার অপেক্ষায় করছে। আমি গিয়ে মায়ের পাশে বসলাম, খাওয়া দাওয়া শুরু হলো।ঠিক তখনই বাবা বললো... 


বাবাঃ তোকে-যে বলে ছিলাম আমরা গ্রামের বাড়ি যাবো মনে আছে তোর। তোর দাদা দাদুর কবর 

পাকা করবো??


আমিঃ মনে আছে! কিন্তু বাবা?? 


বাবাঃ কিন্তু কি??


আমিঃ আমি কোথাও যেতে পারবো না??


বাবাঃ আরে তুই আমাদের সাথে যাবি কেনো। তোরা তো ঘুরতে যাচ্ছিস??


আমিঃ না বাবা আমরা কোথাও যাচ্ছি না। দরকার 

হলে তন্নিকে তোমাদের সাথে নিয়ে যাও??


দেখলাম তন্নি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর মা বললেন........ 


মাঃ এটা কেমন কথা তুই না কালকে বললি তোরা ঘুরতে যাবি?? 


আমিঃ হুম বলেছিলাম কিন্তু এখন যাবো না। আমার কাজ আছে তাই সব ক্যান্সেল করে দিয়েছি?? 


তারপর বাবা তন্নিকে জিজ্ঞেস করলেন উনাদের সাথে যাবে কিনা...তন্নি না করে দিলো। আমি আর কিছু না বলে সোজা রুমে চলে  গেলাম।। বিকাল বেলায় আর অফিসে গেলাম না। 


বিকাল বেলায় সানি আর আয়মানের সাথে অনেকক্ষণ 

আড্ডা দিলাম। হটাৎ করে আয়মান আমাকে বললো...


আয়মানঃ এই অপুর্ব তন্নি তোকে মেনে নিয়েছে৷ নাকি এখনো পাগলামি করে??


আমি টেনশনে পড়ে গেলাম সত্যি বলবো নাকি মিথ্যা বলবো চিন্তা করতেছি। আমার চুপ করে থাকা দেখে সানি বললো.........


সানিঃ আমরা সব জানি তবুও তোর মুখ থেকে শুনতে চাই৷ তাহলে আমরা নিজেরা কিছু করে সব ঠিকঠাক করতে পারবো মনে হয়?? 


সানি আর আয়মানের কথা শুনে একটু শান্তি লাগলো।।আসলে বন্ধু ছাড়া কিছু হয় না। যদি হয় স্বার্থ ছাড়া বন্ধু।

কারন বর্তমান দুনিয়াতে সবাই স্বার্থ খুঁজে। খুব কম মানুষই আছে...যারা স্বার্থ নয় বন্ধুত্বের ভালোবাসাকেই প্রাধান্য দেয়।


তারপর আমি পুরো ঘটনা তাদের দুজনের মাঝে সেয়ার করলাম।৷ এরপর আমি সানিকে বললাম...... 


আমিঃ এই সানি ফারিহাও তো আমাদের বন্ধু। তুই যে ফারিহাকে বিয়ে করেছিস সে কি তোর সাথে এমন করে?? 


সানিঃ আরে নাহ! ও আমার অনেক কেয়ার করে?? 


আয়মানঃ আরে সানি তো বাসর রাতেই বিড়াল মেরে ফেলছে??😁😁 


এই কথা বলে সবাই হাসাহাসি শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর আয়মান আমাকে বললো......


আয়মানঃ অপুর্ব শোন একটা বুদ্ধি দেই। আমার ধারনা আশাকরি ১০০% কাজে দিবে?? 


আমিঃ আরে তারাতারি বল?? 


আয়মানঃ তুই আজ থেকে তন্নির কোনো কেয়ার করবি না। ওকে সব সময় এরিয়ে চলবি। খারাপ ব্যাবহার করবি। দেখবি সোজা হয়ে গেছে?? 


আমিঃ আরে না এটা কি করে হয়,,আমি তো ওকে অনেক ভালোবাসি??


সানিঃ আরে বেটা ভালোবাসি বললে তো লাভ হবে না। ওর মনে ভালোবাসা আনতে হবে??


আয়মানঃ হুম তুই আজকে থেকে ওকে এড়িয়ে চল। দেখবি ঠিক হয়ে যাবে?? 


আমিঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়?? 


এরপর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম। রুমে ঢুকলাম সাথে সাথে তন্নি প্রশ্ন করা শুরু করলো........


তন্নিঃ কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?? 


আমিঃ অফিসে ছিলাম?? 


তন্নিঃ অফিস কি ১২টা পর্যন্ত হয় নাকি?? 


আমিঃ সেটা তোর না জানলে ও চলবে। আর আমি কি করবো না করবো, কোথায় যাবো না যাবো তোকে বলতে হবে নাকি?? 


তন্নিঃ আমাকে বলতে হবে না, এতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে আমি পারবো না??


আমিঃ তোকে জেগে থাকতে কে বলেছে,,তুই ঘুমা??


তন্নিঃ তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো?? 


আমিঃ কিভাবে বলছি। সারাদিন অফিস করে আসছি বিরক্ত লাগছে এখন, তুই যা?? 


তন্নিঃ ও এখন-তো বিরক্ত লাগবেই তাই না?? 


আমিঃ চুপ করবি নাকি কানের নিচে দুইটা দিবো??


তন্নিঃ কিহ তুই আমাকে মারবি?? 


আমিঃ তোকে মারতে কারো পারমিশন লাগবে নাকি। চুপ কর নাহলে লাথি দিয়ে রুম থেকে বের করে দিবো??


দেখলাম তন্নি চোখ মুখ লাল করে শুয়ে পড়লো। মনে মনে আয়মানকে ধন্যবাদ দিলাম। আসলে আপনারা যেমন-টা দেখছেন বাস্তবে আমি তেমনটা নই। এমন ব্যাবহারের মাধ্যমে যদি তন্নি ভালো হয় সেজন্য এমন করতেছি।


আমি আর কিছু না বলে লাইট অফ করে সোফায় শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তন্নি বিছানায় নেই। আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম,দেখলাম তন্নি আব্বু আম্মুর ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। আমি যাওয়ায় পর সবাই নাস্তা করতে বসলাম। ঠিক তখনই মা বলে উঠলো.......


মাঃ শোন একটা কথা বলতাম?? 


আমিঃ হুম বলো কি বলবে??


মাঃ আমরা যাওয়ায় পর তন্নি একটু ওর বাপের বাড়ি যাবে। তুই একটু দিয়ে আসিস?? 


আমিঃ আমার সময় নাই। যে যাওয়ার সে একাই যাবে৷ আর বাপের বাড়ি থেকে তো কালকেই আসলো??


মাঃ আমরা যাওয়ায় পর বাসায় তো কেউ থাকবে না। তুই থাকবি অফিসে তাই বললাম?? 


আমিঃ দেখো এতোকিছু আমি বুঝি না। ও গেলে 

একাই যাবে? 


আমি আর কিছু না বলে নাস্তা শেষ করে উঠে গেলাম?? এরপর বাবা মাকে বাস স্টাপে দিয়ে আসলাম। বাসায় এসে দেখি তন্নি নেই। তন্নিকে না দেখে কল দিলাম কিন্তু  কল ধরছে না।


এবার আমি আর কল না দিয়ে রেড়ি হয়ে অফিসে চলে গেলাম।দুপুর বেলায় ক্যান্টিনে খাবার খেতে গেলাম। তারপর বাবা মাকে কল দিলাম কতদূর গেছে সেটা জানার জন্য। অনেকক্ষণ কথা বলার পর কল কেটে দিলাম। হটাৎ করে তন্নির কথা মনে পড়লো। আমি এবার তন্নিকে কল না দিয়ে শ্বাশুড়িকে কল দিলাম......


আমিঃ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম?? 


শ্বাশুড়িঃ ওয়ালাইকুম সালাম। বাবা কেমন আছো?? 


আমিঃ জ্বি ভালো আছি। আপনারা সবাই কেমন আছেন??


শ্বাশুড়িঃ আছি সবাই ভালো?? 


আমিঃ খাওয়া দাওয়া করেছেন, তন্নি করেছে?? 


শ্বাশুড়িঃ এইতো আমরা করতেছি, তুমি করছো?? 


আমিঃ জ্বি নাস্তা করতেছি?? 


শ্বাশুড়িঃ অফিস শেষ করে আমাদের এখানে চলে আসিও৷ তোমার আব্বু আম্মুর সাথে আমার কথা হয়েছে?? 


আমিঃ কিন্তু......( পুরোটা বলতে না দিয়ে) 


শ্বাশুড়িঃ কোনো কিন্তু না, আমি বলেছি তুমি চলে আসিও?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কলটা কেটে দিলাম। তারপর সানি আর আয়মানকে কল দিলাম। কল দিয়ে সবকিছু বললাম। ওরা বলেছে এভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য।


রাত প্রায় ৮ টা বাজে আমি ওদের বাসার সামনে গিয়ে পৌঁছালাম। তন্নিকে কল দিবো চিন্তা করলাম, কিন্তু দিলাম না। কলিং বেল দেওয়ার সাথে সাথে তন্নি এসে দরজা খুলে দিয়ে গেছে।  মনে হয় আমার জন্য ওয়েট করতেছিলো।


এরপর আমি শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে তন্নির রুমে গেলাম। তন্নি আমার সাথে কথা বলতেছে না। আমি ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।


কিছুক্ষণ পর শ্বাশুড়ি এসে খাওয়ার জন্য ডেকে গেলো। আমিও সোজা নিচে চলে গেলাম। খাওয়া দাওয়া করে ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে আব্বুকে কল দিলাম এবং অনেকক্ষণ কথা বললাম।


কথা বলা শেষ করে রুমে চলে আসলাম। রুমে আসার সাথে সাথে তন্নি অনেক জোরে দরজা লাগিয়ে দিলো।

ওর এমন কান্ড দেখে আমি বললাম........... 


আমিঃ কিরে এতো জোরে দরজা দিলি কেনো?? 


তন্নিঃ তুই এখানে কেনো আসছিস?? 


আমিঃ মানে কি! তোর মায়ে তো বললো?? 


তন্নিঃ মা বললে আসতে হবে নাকি??


আমিঃ দেখ বেশি কথা বলবি না। তোকে দেখলেই আমার রাগ হয়৷ যা শুয়ে পর?? 


তন্নিঃ আমার রুম থেকে বের হ.??


আমিঃ তুই কি আমাকে অপমান করছিস??


তন্নিঃ ধরে নে তাই। তুই আমার রুমে থাকতে পারবি না??


আমিঃ ভুলে গেছিস সব সময় আমার রুমে থাকিস। এন্ড আমার খাটে??


তন্নিঃ তুই কি যাবি, না গলা ধাক্কা দিবো??


আমি আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। চিন্তা করলাম নিজের বাসায় চলে যাই। কিন্তু এতো রাতে যাওয়া রিস্কি হয়ে যাবে। তাছাড়া শ্বশুর শ্বাশুড়ি খারাপ মনে করবে। আর কিছু চিন্তা না করে সোজা নিচে চলে গেলাম। তারপর অনেকক্ষণ হাঁটাহাটি করলাম। সময় যাচ্ছে না কিছুতেই।। তারপর গিয়ে গেস্ট রুমের সোফায় শুয়ে পড়লাম।


সকাল বেলায় শ্বাশুড়ির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো আমার। আমাকে সোফায় দেখে উনি বললেন...........


শ্বাশুড়িঃ কি বাবা তুমি সোফায় কেনো ঘুমিয়েছো কেনো। রুমে যাওনি?? 


আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় তন্নি কোথায় থেকে তার আম্মুকে বলে..... 


তন্নিঃ আম্মু তোমার জামাই কি করেছে জানো?? 


শ্বাশুড়িঃ কি করছে??


তন্নিঃ কালকে রাতে আমাকে একটা গান শুনানোর জন্য বলেছিলাম, সে শুনায়নি। তাই শাস্তি দিয়েছি আজকে আমার সাথে ঘুমাতে পারবে না??


আমি তো পুরা টাসকি খেয়ে বসে গেছি।। ফকিন্নি কতো বড় মিথ্যা কথা বললো। বাহ কি সুন্দর নিজেকে বাঁচিয়ে নিলো। তারপর শ্বাশুড়ি আমাকে বললো...... 


শ্বাশুড়িঃ বাবা আমার মেয়েটা গান পছন্দ করে তুমি মাঝে মাঝে ওকে একটু গান শুনাইয়ো। আর তুইও (তন্নিকে) সামান্য একটা গানের জন্য বুঝি কেউ 

রুমে থাকতে দেয়না???


আমি দুঃখ ভারক্রান্ত একটা হাঁসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। তারপর নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম।


কিছুক্ষণ পর আমাদের অফিসের কলিগ(মেয়ে) আমার রুমের সামনে আসলো। আর এসেই বললো.......


আদিবাঃ হ্যালো স্যার আসতে পারি??


আমিঃ আরে আদিবা আসো আসো?? 


আদিবাঃ থ্যাংস স্যার?? 


আমিঃ কিছু বলবে??


আদিবাঃ বলিছিলাম কি স্যার আগামী সপ্তাহে আমি একটু বাড়ি যাবো। আমার চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে?? 


আমিঃ ও আচ্ছা ছুটি লাগবে এইতো?? 


আদিবাঃ জ্বি স্যার?? 


আমিঃ কতদিন লাগবে?? 


আদিবাঃ এক সপ্তাহ হলে ভালো হতো স্যার?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিলাম যাও। ভালো ভাবে যাবে?? 


আদিবাঃ ধন্যবাদ স্যার?? 


এরপর দেখলাম আদিবা কিছু বলবে, কিন্তু বলছে না৷ শুধু চটপট করছে। তাই আমি তাকে বললাম........ 


আমিঃ কি কিছু বলবে নাকি?? 


আদিবাঃ আসলে স্যার একটা কথা বলার ছিলো?? 


আমিঃ সমস্যা নাই বলো?? 


আদিবাঃ আসলে স্যার এখানে তো আমার কেউ নেই।

আপনাকে বড় ভাইয়ের মতো দেখি। যদি ভাই হিসেবে একটা উপকার করতেন,,অনেক খুশি হতাম??


আমিঃ আরে পাগল নাকি। সমস্যা নেই কি বলবে নির্ভয়ে বলো?? 


আদিবাঃ স্যার অনেক দিন পর বাড়ি যাচ্ছি তো আব্বু আম্মুর জন্য কিছু শপিং করবো। আপনি যদি বিকেল বেলায় আমার সাথে একটু শপিং-এ যেতেন তাহলে অনেক উপকার হতো???


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাবো?? 


আদিবাঃ ধন্যবাদ স্যার??


কথাটা বলেই আদিবা তার ডেস্কে চলে গেলো।। বিকাল বেলা আদিবার সাথে শপিংমল গেলাম। ওর বাবা মার জন্য অনেক কিছু কেনা-কাটা করলো। অনেক কিছু কেনা-কাটার পর আদিবা একটা কসমেটিকস এর দোকানে গেলো।। আমিও ওর পিছনে পিছনে গেলাম। আদিবার ব্যাগ গুলো আমার কাছেই ছিলো।


কসমেটিকস এর দোকানে যাওয়ায় পরে আমি আর আদিবা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে গিয়ে বিশাল আকারে একটা শকট খেলাম আমি।

||||

কারন তাকিয়ে দেখি তন্নিও সেখানে। তার বান্ধবীদের সাথে কি যেনো কিনতেছে। আমাকে আদিবার সাথে দেখেই তো........


গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ (পর্ব_০৬)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


কসমেটিকস এর দোকানে যাওয়ার পরে আমি আর আদিবা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে গিয়ে বিশাল আকারে একটা শকট খেলাম আমি।

||||

কারন তাকিয়ে দেখি তন্নিও সেখানে। তার বান্ধবীদের সাথে কি যেনো কিনতেছে। আমাকে আদিবার সাথে দেখে আমার সামনে এসে বলে উঠলো........ 


তন্নিঃ মেয়েটা কে?? 


আমিঃ ও আমার......


পুরোটা বলার আগেই আমার গালে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো। আর চোখ মুখ লাল করে কাঁদতে কাঁদতে দোকান থেকে বের হয়ে গেলো। এরপর তন্নির কয়েকটা বান্ধবী এসে আমাকে বললো....... 


বান্ধবীঃ ছিহ ভাইয়া বাসায় বউ রেখে বাইরে মেয়ে মানুষ নিয়ে ঘুরতে লজ্জা করেনা আপনার??


তারপর দোকান থেকে সবাই বের হয়ে গেলো। লজ্জায় আমার পুরো মুখ লাল হয়ে গেলো। খারাপ টা সবাই দেখলো, আসল কাহিনী-টা কারো চোখে পড়লো না।


তারপর আমি আর আদিবা দোকান থেকে বের হয়ে গেলাম।৷ আদিবা আমাকে বললো...... 


আদিবাঃ সরি স্যার আজকে আমার জন্য আপনাকে অপমানিত হতে হয়েছে?? 


আমিঃ আরে ধুর এগুলো কিছু না। তোমার কি দোষ কেউ তো আসল ঘটনা যানে না, সে জন্য রিয়েক্ট করছে??


আদিবঃ মেডাম কিন্তু অনেক রাগ করেছে?? 


আমিঃ এটা কোনো সমস্যা না,সব ঠিক হয়ে যাবে?? 


আদিবাঃ স্যার একটা কথা বলতাম? ?


আমিঃ হুম বলো?? 


আদিবাঃ মেডামের নাম্বার-টা আমাকে দিবেন৷ আমি সব বুঝিয়ে বলবো?? 


আমিঃ আরে তুমি কল দিলে আরো বেশি রিয়েক্ট করবে, উলটো তোমাকে অপমান করবে?? 


আদিবাঃ সমস্যা নেই স্যার আপনে নাম্বার-টা আমাকে দেন৷ আর এটা ধরেন?? (একটা ব্যাগ)


আমিঃ কি এটাতে?? 


আদিবাঃ স্যার আপনার বিয়েতে তো যেতে পারিনা,তাই মেডামের জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা গিফট??


আমিঃ তুমি আবার এটা কখন কিনলে?? 


আদিবাঃ সেটা আপনার না জানলেও চলবে৷ আপনি এটা নেন আর নাম্বার-টা দেন??


আমিঃ ধন্যবাদ, এই নাও নাম্বার?? 


তারপর আমি নাম্বার-টা দিয়ে দিলাম।। গিফট-টা নিয়ে আদিবাকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম।


বাসায় এসে গিফট-টা খুলে দেখলাম একটা নীল শাড়ী।অনেক সুন্দর। তন্নিকে অসাধারণ লাগবে।


এরপর আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো,,ফারিহাকে কল দিয়ে সব কিছু বলে দিলাম।। কারন তন্নি আজকে ফারিহার সাথে বিষয়-টা সেয়ার করবে৷


আমি ফারিহাকে কল দিয়ে সবকিছু বলে দিয়েছি। এবং এটাও বলে দিয়েছি,এমন ভাবে কথা বলতে যাতে তন্নির প্রচুর রাগ হয়।


বাসায় একা একা ভালো লাগে না। আব্বু আম্মুও নাই, তন্নিও নাই। আমি তন্নিকে কল দিলাম কিন্তু মোবাইল বন্ধ। এরপর তন্নির আম্মুর কাছে কল দিলাম।।কলটা রিসিভ করতেই আমি বললাম........ 


আমিঃ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম?? 


শ্বাশুড়িঃ ওয়ালাইকুম আসালাম,,বাবা কেমন আছো?? 


আমিঃ জ্বি ভালো??


শ্বাশুড়িঃ তন্নি কোথায়। ওর মোবাইল বন্ধ কেনো??


শ্বাশুড়িঃ কি জানে বাবা বিকালে কোথায় থেকে কাঁদতে কাঁদতে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক বার ডেকেছি দরজা খুলছে না,,কিছু খাচ্ছেও না। তোমার সাথে কি কিছু হয়েছে?? 


আমিঃ না আমার সাথে কিছু হয়নি?? 


শ্বাশুড়িঃ তো বাবা আজকে আমাদের বাসায় আসবে না??


আমিঃ না আজকে আসবো না?? 


শ্বাশুড়িঃ কেনো বাবা, বাসায় তো কেউ নেই। এখানে তন্নিও একা, তুমি চলে আসো?? 


আমিঃ না একটু কাজ আছে। আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকবেন পরে কথা হবে?? 


এই কথা বলে কলটা কেটে দিলাম। আর মনে মনে চিন্তা করলাম...তন্নি ও হয়তো আমাকে ভালোেসে ফেলেছে। নাহলে এতো রিয়েক্ট করতো না। সত্যি আয়মানের বুদ্ধি অনেক কাজে লাগছে। 


এ ভাবে কয়েক দিন চলে গেলো। আমি তন্নিদের বাসায় যাই না। মাঝে মাঝে ওর মায়ের সাথে একটু একটু কথা হয়। প্রায় ১০ দিন পর ওর মা আমাকে কল দেয়। তখন আমি অফিসে ছিলাম। কলটা রিসিভ করে বললাম.....


আমিঃ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম?? 


শ্বাশুড়িঃ ওয়ালাইকুম আসালাম,বাবা কেমন আছো?? 


আমিঃ ভালো আপনারা কেমন আছেন?? 


শ্বাশুড়িঃ আছি সবাই ভালো। বাবা তুমি একটু আজকে আমাদের বাসায় আসতে পারবে??


আমিঃ আসলে আমার একটু কাজ ছিলো। কেনো! কোনো সমস্যা হইছে নাকি?? 


শ্বাশুড়িঃ আসলে আমার বড় বোন নাকি খুব অসুস্থ তাই আমি আর তোমার শ্বশুর আব্বা ওখানে যাচ্ছি। যদি তুমি এখানে থাকতে,,তাহলে ভালো হতো??


আমিঃ তন্নিকে নিয়ে যান তাহলে??


শ্বাশুড়িঃ ও যেতে চাচ্ছে না তাই আমরা একটু টেনশনে আছি। সে একা একা বাসায় কি ভাবে থাকবে। যদি তুমি আসতে তাহলে ভালো হতো??


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে! আপনারা যান আমি সন্ধার সময় আসবো?? 


এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কলটা কেটে দিলাম। কেমন জানি খুব খারাপ লাগছে। আজকে অনেক দিন পর ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।


রাত প্রায় ০৮ঃ০০ টার দিকে আমি ওদের বাসার সামনে গিয়ে গেলাম। কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো৷ মনে হয় আমার জন্য অপেক্ষা করেছিলো।


এরপর আমি ভিতরে গেলাম। দেখলাম চোখ মুখ লাল করে বসে আছে। দেখতে বাচ্চাদের মতো লাগতেছে। তারপর আমি বললাম.......... 


আমিঃ কেমন আছিস?? 


তন্নিঃ তুই এখানে কেনো আসছিস?? 


আমিঃ আম্মা বলেছে তাই?? 


তন্নিঃ লজ্জা করেনা অন্য মেয়েদের সাথে ঘুরে এখন এখানে আসতে??


আমিঃ সেটা আমার ব্যাপার আমি তো তোর কেউ না। আমাকে নিয়ে তোর এতো মাথা ব্যাথা কেনো??


তন্নিঃ তোর মতো ফালতুকে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে৷ আগে জানলে জীবনেও কবুল বলতাম না? 


আমিঃ আমার মাথা গরম করবি না?? 


তন্নিঃ কি করবি তুই?? 


রাগে আমার পুরো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। আমি কোনো কথা না বলে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি তন্নি নেই। মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে।


আমি আর তন্নির রুমে গেলাম না।। সামনে গেস্ট রুমের সোফায় শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসে না। একটু পর আস্তে আস্তে উঠে তন্নির রুমের দিকে গেলাম। দেখলাম তন্নি ঘুমিয়ে গেছে। অনেকক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে ওকে দেখলাম, আহারে বেচারা।


হটাৎ করে খেয়াল করলাম ওর পুরো শরীর কাঁপতেছে। আমি তাড়াতাড়ি রুমে ডুকে গেলাম। কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে পুরা শরীর পুড়ে যাচ্ছে।


আমি তো টেনশনে পড়ে গেলাম।। কি করবো না করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। পরে কিচেন রুম থেকে একটা বল নিয়ে এসে মাথায় জল পট্রি দিলাম অনেকক্ষণ। কিন্তু কিছুতেই কমছে না।


এরপর এক বালতি পানি নিয়ে এসে ওর মাথায় দিলাম।প্রায় দুই ঘন্টা পানি দেওয়ার পর ওর জ্বর কিছুটা কমলো। লক্ষ করে দেখলাম পানি দিতে দিতে ওর পুরো শরীর ভিজিয়ে দিলাম এখন কাপড় চেঞ্জ করতে হবে বাট কিভাবে করবো বুঝতে পারছি না।। তন্নি যদি দেখে আমি ওর কাপড় চেঞ্জ করেছি তাহলে আমার অবস্থা শেষ।


সকাল বেলায় নাস্তা নিয়ে ওর রুমে গেলাম,দেখলাম সে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। আমার হাতে নাস্তা দেখে চমকে উঠলো। তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর গায়ে যে জামাটা ছিলো সেটা নেই আরেকটা। তারপর রাগে চোখ মুখ লাল করে উঠে এসে আমার কলার ধরে বলতে শুরু করলো......... 


তন্নিঃ ওই কুত্তা আমার কাপড়ের এই অবস্থা করেছে কে?? 


আমিঃ আসলে কালকে রাতে..... 


পুরোটা বলার আগে ঠাসসস ঠাসসস দুইটা চড় বসিয়ে দিলো। আর বলতে লাগলো.......... 


তন্নিঃ তুই এত খারাপ আমি ভাবতেও পারিনি৷ আমাকে ঘুমের মধ্যে পেয়ে ছিহ আমার ভাবতেও ঘৃনা লাগে। তোকে আমি আস্তে আস্তে বিশ্বাস করতে লাগলাম,কিন্তু তুই এতো খারাপ আমি জীবনেও ভাবিনি। যা বেড়িয়ে যা এখান থেকে???


আমিঃ প্লিজ আমার কথাটা শোন?? 


তন্নিঃ তুই যাবি নাকি আবার চড় খাবি??


আমি আর কিছু না বলে নাস্তার প্লেট-টা টেবিলের উপর রেখে চলে আসতে যাবো এমন সময় দেখি দরজার সামনে নিলা(তন্নির চাচাতো বোন) দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয় আমাকে চড় মারার দৃশ্য দেখে ফেলেছে। লজ্জায় পুরো লাল হয়ে গেলাম আমি।


মাথা নিচু করে কিছু না বলে সোজা রুমের বাইরে চলে আসলাম আমি। এরপর নিলা ভিতরে গেলো, যাওয়ার পর বললো......


নিলাঃ তুই উনাকে চড় মেরেছিস কেনো??


তন্নিঃ ভালো করেছি ও আমার কাপড় চেঞ্জ করেছে কেনো?? 


নিলাঃ সে করেনি। আমি চেঞ্জ করেছি??


তন্নিঃ মানে??


নিলাঃ তুই জানিস কালকে রাতে তোর অনেক জ্বর আসছিলো৷ উনি তোর মাথায় জলপট্রি দিয়েছিলো৷ জ্বর না কমার কারনে সারারাত তোর মাথায় পানি দিয়ে ছিলো৷ পানি গুলো দিয়ে তোর পুরা শরীর ভিজে যায়। ঠান্ডা লেগে যাবে তাই সকাল সকাল আমাকে কল দিয়ে আসতে বলে। আর আমি তোর কাপড় চেঞ্জ করেছি। আর তুই না জেনেই উনাকে চড় মেরে দিলি। তোর ভাগ্য অনেক ভালো যে তুই উনার মতো স্বামী পেয়েছিস???


এই কথা বলে নিলা বাহিরে চলে আসলো। আমি তন্নির মাকে ওর অসুস্থতার কথা জানালাম। তারপর কিছু না বলে সোজা অফিসে চলে গেলাম।


এরপর থেকে তন্নিকে আর কোনো কল দেই না। তন্নির আম্মুর কাছে কল দিয়ে মাঝে মাঝে আর তাদের খবর নেই। জাস্ট এতটুকুই। কয়েক দিন পর বাবা মা চলে আসলো। এসে আমাকে বললো.........


বাবাঃ কিরে বউ মা কই?? 


আমিঃ ওর বাপের বাড়ি?? 


বাবাঃ তা তুই কি এতদিন ওখানে ছিলি?? 


আমিঃ না মাঝে মাঝে যেতাম??


বাবাঃ চুপ কর বেয়াদব! তুই কি ভাবছিস আমি কোনো খবর রাখি না। ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরতে তোর লজ্জা করে না। বউ মা আমাকে সবকিছু জানিয়েছে?? 


বাহহহ ফকিন্নি নিজের দোষ না স্বীকার করে আমাকে ফাঁসিয়ে দিলো। জানি এখন সত্যি কথা বললে বাবা বিশ্বাস করবে না। তাই বলিনি। এরপর বাবা বললো..


বাবাঃ এখন ওদের বাসায় যা। আর তন্নিকে তোর সাথে করে নিয়ে আয়??


আমিঃ কিন্তু বাবা এখন তো....(পুরোটা বলতে না দিয়ে)


বাবাঃ কোনো কিন্তু না! যেটা বলছি সেটাই?? 


আমিঃ এখন তো রাত হয়ে গেছে! এখন কি ভাবে আনবো। কালকে নিয়ে আসলে হবে না?


বাবাঃ গর্দভ! এখন আনতে কে বলেছে৷ তুই এখন যাবি রাত থেকে সকালে নিয়ে আসবি?? 


আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় বাবার দিকে লক্ষ করে দেখলাম রেগে আছে। তাই আমি আর কিছু না বলে তন্নিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।


রাত প্রায় ৯ঃ৩০মিনিট,আমি ওদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কলিংবেল দেওয়ার সাথে সাথেই তন্নির মা এসে দরজা খুলে দিলো। তারপর বললো.........


গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ_পর্ব_০৭ 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় বাবার দিকে লক্ষ  করে দেখলাম রেগে আছে। তাই আমি আর কিছু না বলে তন্নিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।


রাত প্রায় ৯ঃ৩০মিনিট,আমি ওদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কলিংবেল দেওয়ার সাথে সাথেই তন্নির মা এসে দরজা খুলে দিলো। তারপর বললো.........


শ্বাশুড়িঃ বাবা আসছো! পথে কোনো সমস্যা হয়নি তো? 


আমিঃ না কোনো সমস্যা হয়নি? 


শ্বাশুড়িঃ আচ্ছা বসো খাওয়া দাওয়া করে নাও?


তন্নি বসে আছে। আমি কিছু বলছি না সেও বলছে না। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলাম। গিয়ে একটা চেয়ারের উপর বসে আছি। কিছুক্ষণ পর তন্নি এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। আর আমাকে বললো.....


তন্নিঃ সরি? 


আমিঃ কেনো সরি?? (অবাক হয়ে)


তন্নিঃ সেদিন রাতের ঘটনার জন্য। আমি ভাবছি তুই আমার সাথে.......(পুরোটা বলতে না দিয়ে)


আমিঃ থাক বলতে হবে না। আমার কপালে ওগুলো ছিলো। তুই ঘুমা,,সকালে তাড়াতাড়ি যেতে হবে?? 


তন্নিঃ তুই কোথায় ঘুমাবি?? 


আমিঃ আমাকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। তুই ঘুমা??


তন্নিঃ তুই খাটে ঘুমা আমি নিচে ঘুমাবো?? 


আমিঃ কেনো তোর চড় খাওয়ার জন্য। নাকি তোর কাছে অপমানিত হওয়ার জন্য?? 


তন্নি আর কিছু না বলে শুয়ে পড়লো। আমিও একটা বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়লাম।


সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে গেলাম। তন্নিও 

আমার পিছন পিছন আসলো। দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে বাট বলতে পারছে না। এরপর আমি ওকে বললাম....... 


আমিঃ কিছু বলবি?? 


তন্নিঃ তুই কি সত্যি আমাকে ভালোবাসিস??


আমিঃ পাগল নাকি তোকে কেনো আমি ভালোবাসবো?

(মিথ্যে বললাম দেখি ও কি রিয়েক্ট করে) 


তন্নিঃ তাহলে এতদিন যে বললি, তুই আমাকে ভালোবাসিস?? 


আমিঃ মিথ্যা বলেছি তোর সাথে থাকা বা কথা বলার কোনো ইচ্ছা আমার নেই?? 


তন্নিঃ তাহলে আমাকে নিতে আসলি কেনো?? 


আমিঃ আব্বু আম্মু বলেছে তাই। না হয় জীবনেও আসতাম না??


তন্নিঃ বাহ ভালো তো। নতুন কাউকে পেয়ে গেছিস এখন তো আমার আর দরকার নেই?? 


আমিঃ তোকে দরকার কখনো ছিলো না, থাকবেও না। আদিবার সাথে আমি খুব ভালো আছি??( রাগানোর জন্য মিথ্যা বললাম) 


এই কথা শোনার পর তন্নি আর কিছু না বলে চোখ মুখ লাল করে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলো।


মনে মনে বন্ধু আয়মানকে ধন্যবাদ দিতে লাগলাম।। ওর বুদ্ধিটা কাজে লেগেছে। এই রকম জানলে আরো আগে থেকেই এমন করতাম।


যাইহোক কিছুক্ষণ পর আমিও নিচে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি তন্নি চুপ করে বসে আছে। ওর বসে থাকা দেখে আমি বললাম.......


আমিঃ রেড়ি হয়ে নে বাসায় যেতে হবে??


তন্নিঃ আমি যাবো না তুই যা.?? 


আমিঃ তোর ন্যাকামি দেখার সময় নেই আমার।আদিবা অপেক্ষা করছে আমার জন্য। তারাতারি রেড়ি হয়ে নে?


তন্নিঃ বললাম তো আমি যাবো না??(চিৎকার দিয়ে) 


আমিঃ ওকে একটু পর নিজেই যাবি??


তন্নিঃ তুই এখান থেকে চলে যা। তোকে যেনো এখানে আর না দেখি??


আমিঃ চলেই যাবো এখানে থাকতে আসিনি??


তন্নিঃ তুই আর এক সেকেন্ডও এখানে থাকতে পারবি না। এখনই বের হয়ে যা?? 


আমি আর কিছু না বলে,,নাস্তা না করে ওর বাবা মাকে না জানিয়ে সোজা অফিসে চলে গেলাম। বাসায় গেলে বাবা চিৎকার চেঁচামেচি করবে তাই বাসায় যাইনি। অফিসে কাজ করতেছি এমন সময় আদিবা আসলো।

আর এসেই বললো........ 


আদিবাঃ আসতে পারি স্যার?? 


আমিঃ আরে আদিবা আসো,বসো?? 


আদিবাঃ ধন্যবাদ স্যার। আপনার কি মন খারাপ?? 


আমিঃ আরে না এমনি ভালো লাগছে না?? 


আদিবাঃ আমি জানি স্যার,,মেডাম আপনাকে কিছু বলেছে৷ আসলে স্যার সেদিন যদি জানতাম মেডাম মার্কেটে যাবে। তাহলে আপনাকে যেতে বলতাম না? 


আমিঃ আরে এটা কোনো ব্যাপার না?? 


এমন সময় বাবা কল দিলো। আদিবা উঠে চলে গেলো।

কলটা রিসিভ করতেই বাবা বললো........


বাবাঃ এই কোথায় তুই?? 


আমিঃ অফিসে আমি?? 


বাবাঃ তোকে না বললাম বউ মাকে নিয়ে বাসায় আসতে?? 


আমিঃ ও আসবে না বলেছে। তাই আমি অফিসে চলে এসেছি?? 


বাবাঃ চুপ কর বেয়াদব! ও আসবে না বলেছে। না তুই নিয়ে আসিস নি?? 


আমিঃ মানে? আমি কেনো নিয়ে আসবো না?? 


বাবাঃ চুপ হারামজাদা! তন্নি আমাকে সবকিছু বলেছে। তোর লজ্জা করে না ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে??


আমিঃ আরে তুমি এসব কি বলছো। সবগুলো মিথ্যা কথা?? 


বাবাঃ চুপ কর তন্নি আমাদের সব বলেছে৷ মেয়েটা কখন থেকে কান্না করছে?? 


আমি আর কিছু না বলে কল কেটে দিলাম। ফকিন্নি-টা বাবাকে আনিয়ে বানিয়ে কি বলেছে আল্লাহ জানে। নিজে সব দোষ করে,এখন আমাকে ফাসাই দিতেছে।

বিকেল বেলায় আয়মান কল দিলো??? কলটা রিসিভ করেতেই বললো........ 


আয়মানঃ কিরে দোস্ত কি অবস্থা?? 


আমিঃ মামা কি বুদ্ধি দিলি তন্নি তো ফেঁসে গেছে??


আয়মানঃ আরে কি বলিস! আচ্ছা শোন সন্ধার সময় তুই আর তন্নি কফিশপে আসিস। কথা আছে??


আমিঃ ধুর আমি তন্নিকে নিয়ে আসতে পারবো না।তোরা বল আসতে??


আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলবো। তুই অন্ততো সাথে করে নিয়ে আসিস। সানি আর ফারিহাও থাকবে??


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে??


বিকেল বেলা কাজ শেষ করে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে দেখি তন্নি রেড়ি হয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে বললো....... 


তন্নিঃ আয়মান কিছু বলেছে??


আমিঃ না কিছু বলেনি! কেনো?? 


তন্নিঃ কফিশপে যাওয়ায় জন্য বলেছে??  


আমিঃ তো যা আমাকে বলছিস কেনো??  


তন্নিঃ তোকেও যেতে বলেছে?? 


আমিঃ আমি যাবো না তুই যা?? 


তন্নিঃ এক সাথে যেতে বলেছে। তুই না গেলে আমিও যাবো না?? 


মনে মনে তো আমার মনে লাড্ডু ফুটতেছে। আহা কি যে আনন্দ বলে বুঝাতে পারবো না। যাইহোক বেশি মোড নিতে গেলে এক সাথে যাওয়া হবে না। 


কিছুক্ষণ পর আমি আর তন্নি বের হয়ে গেলাম। তারপর একটা রিকশা নিলাম। এই প্রথম বিয়ের পর রিকশা নিয়ে ঘুরতেছি।। যখন ওর সাথে ফ্রেন্ড হিসেবে ঘুরতাম কি মজাই না হতো। সবকিছু মনে পড়তে লাগলো। আমি রিকশার এক পাশে সরে বসে আছি। তন্নি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে।


একটু পর কফিশপে চলে আসলাম। দেখলাম আয়মান সানি ফারিহা বসে আছে। আমাদের দেখে বললো...... 


ফারিহাঃ বাহ দুজনের এখন আসার সময় হলো?? 


আমিঃ নারে একটু কাজ ছিলো তাই?? 


ফারিহাঃ বুঝি বুঝি কি এমন কাজ?? 


তন্নি গিয়ে ফারিহাকে জড়িয়ে ধরলো। এদিকে আয়মান আমাকে ইশারা দিয়ে বলতেছে কাজ হচ্ছে। এমন সময় সানি বললো....... 


সানিঃ দোস্ত শোন, তোরা থাক আমার একটু কাজ আছে যেতে হবে??  


আমিঃ সে কি মাত্র তো আসলাম কফি টা খেয়ে যা?? 


সানিঃ নারে অনেক কাজ সময় কম তাড়াতাড়ি যেতে হবে?? 


তন্নিঃ আচ্ছা তুই যা ফারিহা থাকুক?? 


সানিঃ নারে ওকে ছাড়া আমার কোনো কাজ হয় না। ওর কপালে চুমু না খেলে কাজে মন বসে না?? 


ফারিহাঃ চুপ কর ফাজিল, আচ্ছা তোরা থাক। পরে কথা হবে আমি গেলাম?? 


এই কথা বলে সানি আর ফারিহা চলে গেলো। কিছুক্ষণ 

পর আয়মানও কেমন জানি চটপট করতে লাগলো। ওর এমন কান্ড দেখে আমি বললাম.........


আমিঃ কিরে তোর আবার কি হয়েছে?? 


আয়মানঃ আসলে দোস্ত বাসায় একটা কাজ ফেলে চলে আসছি। এখনই বাসায় যাওয়া লাগবে?? 


আমিঃ মানে কি? তোদের সবার কাজ আছে আগে বলতি। তোরা না বললি এক সাথে কফি খাবি??


আয়মানঃ তোরা খা আমি একটু আসি?? 


এই কথা বলে আয়মান চলে গেলো।। আমি আর তন্নি বসে আছি। একটু পর কফি আসলো,,দুজনে খেলাম।

দুজনের নীরবতা ভেঙ্গে তন্নি বললো...... 

    

তন্নিঃ একটা কথা বলতাম?? 


আমিঃ হুম বল?? 


তন্নিঃ অনেক দিন কোথাও ঘুরি না। চল পার্ক থেকে একটু ঘুরে আসি??


আমিও কেনো জানি তন্নির এই আবদার-টা না রেখে পারলাম না। অনেকক্ষণ দুজনে এক সাথে হাঁটলাম

বেশ ভালো লাগলো।


রাত প্রায় ৮ঃ০০ টায় বাসায় আসলাম। দেখলাম বাসায় কেউ নেই। কিন্তু দরজা খোলা। বাবা মা দুজনকে ডাক দিলাম। কারো কোনো সারা শব্দ নেই। হটাৎ করে দেখি তন্নি ভয়ে কাঁপতেছে৷ 


একটু পর নীরবতা ভেঙ্গে শুরু হলো আমাদের দুজনের মুখের উপর স্প্রে মারা। আর সবাই এক সাথে বলতে লাগলো....... 


Happy Birthday Tonni....Happy Birth day too you.......


বাব, মা, সানি, আয়মান আর ফারিহা সবাই এক সাথে। এসব দেখে আমরা পুরা অবাক। আমি নিজেও ভুলে গেছি আজকে তন্নির জন্মদিন। কিন্তু বন্ধু গুলোর মনে আছে। এখন বুঝতে পারছি এই কারনে তারা কফিশপ থেকে তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।


তারপর বড় একটা কেক কাটা হলো। তন্নি সবার আগে আমাকে খাইয়ে দিয়েছে আমি ও খাইয়ে দিয়েছি। একেক করে সবাইকে খাইয়ে দিয়েছে। এমন সময় তন্নি বললো...... 


তন্নিঃ এতোগুলো আয়োজন কে করেছে?? 


সবাই এক সাথে আমাকে দেখিয়ে দিলো৷ আমিতো পুরা টাসকি খেয়ে গেলাম। আমি নিজেই কিছু জানিনা। আর ওরা বলছে আমি করছি।


সেদিন সবাই এক সাথে খাওয়া দাওয়া করলাম। ওদের বাসায় যেতে দেইনি। আমি সানি আয়মান এক সাথে ঘুমিয়েছি। তন্নি আর ফারিহা এক সাথে ঘুমিয়েছে।


পরের দিন যার যার মতো করে চলে গেছে। আমিও অফিসে চলে গেলাম। দুপুর বেলায় আদিবা আমার রুমে আসলো আর বললো.....


আদিবাঃ স্যার আসতে পারি?? 


আমিঃ হুম আসো, বসো?? 


আদিবাঃ স্যার একটা কথা বলতাম?? 


আমিঃ হুম অবশ্যই,,কি বলবে বলো?? 


আদিবাঃস্যার আমার একজনের সাথে রিলেশন আছে। বাবা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো। তাই আমি পাহাদের (আদিবার বয় ফ্রেন্ড) কথা বলেছি। বাবা বলেছে ওকে নিয়ে বাবার সাথে দেখা করার জন্য। যদি আজ বিকালে আমাকে ছুটি দিতেন তাহলে ভালো হতো??


আমিঃ আরে এটা কোনো কথা। তুমি আমাকে আগে বলবে না ওকে যাও দিলাম?? 


আদিবাঃ ধন্যবাদ স্যার??


আমিঃ আদিবা! একটু কষ্ট করতে পারবে??


আদিবাঃ জ্বি স্যার বলুন?? 


আমিঃ তোমার পাশের আলমারি টার উপর একটা হলুদ রঙের ফাইল আছে। যদি একটু কষ্ট করে 

দিতে উপকার হতো?? 


আদিবাঃ এতে কষ্টের কি আছে?? 


এই কথা বলে আদিবা ফাইলটা নিতে গেলো। আলমারি উঁচু হওয়ার কারনে সে একটু উপরের দিকে উঠে পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে ফাইল-টা নিতে যাবে। এমন সময় পা স্লিপ করে উলটে যেতে লাগলো। 

আমি তারাতারি উঠে ওকে ধরে ফেললাম। আর এমন সময় তন্নি এসে উপস্থিত হলো।। আমাদের দুজনকে এভাবে এক সাথে দেখেই......... 


গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ (পর্ব_০৮)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


এই কথা বলে আদিবা ফাইলটা নিতে গেলো। আলমারি উঁচু হওয়ার কারনে সে একটু উপরের দিকে উঠে পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে ফাইল-টা নিতে যাবে। এমন সময় পা স্লিপ করে উলটে যেতে লাগলো। 

আমি তারাতারি উঠে ওকে ধরে ফেললাম।। আর এমন সময় তন্নি এসে উপস্থিত হলো। আমাদের দুজনকে এভাবে এক সাথে দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠলো।


তন্নির দিকে তাকিয়ে দেখলাম হাতে ১ টা টিফিন বাটি। মনে হয় দুপুরের খাবার নিয়ে আসছে। ধুর সালার কেনো যে আদিবাকে ফাইলটার কথা বললাম। যদি না বলতাম তাহলে তন্নি হয়তো কিছুই দেখতো না। আর এমন পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হোতো না। এরপর আমি আদিবাকে ছেড়ে দিলাম। তন্নি রেগে চোখ মুখ লাল করে আমাকে বললো........


তন্নিঃ ছিহ তুই এতো খারাপ?? 


আমিঃ প্লিজ তুই শান্ত হ। আমার কথা শোন? 


তন্নিঃ কি শুনবো। নিজের চোখেই তো সব দেখলাম?? 


আমিঃ প্লিজ তুই আমার কথাটা শোন?? 


তন্নিঃ চুপ কর,,তোর মতো ফালতুর সাথে আমি কোনো কথা বলবো না। ভেবেছিলাম তুই সত্যি আমাকে ভালোবাসিস। আমিও তোকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেললাম।৷ কিন্তু তুই অন্য মেয়ের সাথে ছিহ! আমার ভাবতেই অবাক লাগে??? 


আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় আদিবা বললো.....


আদিবাঃ ম্যাম শুনেন আপনার ধারণা ভূল?? 


তন্নিঃ চুপ করো! লজ্জা করেনা অন্যের স্বামীর সাথে এসব করতে। যত্তসব ফালতু?? 


আদিবাঃ ম্যাম আপনি আমাকে যা ইচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু স্যারকে কিছু বলবেন না। সারের কোনো দোষ নেই? 


তন্নিঃ চুপ করো তুমি। সেদিন তো শপিং করতেও দেখেছি তোমাদের৷ আবার বড় বড় কথা বলছো 

লজ্জা করে না?? 


আদিবাঃ ম্যাম সেদিন রাতে আমি আপনাকে অনেক বার কল দিয়েছি, সত্যিটা বলার জন্য। কিন্তু আপনি কল ধরেন নি? 

|||

সেইদিন আমি স্যারকে জোর করে শপিং করতে নিয়ে গেছি। আসলে এখানে আমার কেউ নেই। স্যারকে আমি ভাই ডেকেছি৷ একটা কাজিনের বিয়ে ছিলো। প্রায় ৬ মাস পর বাড়ি যাচ্ছি তাই বাবা মার জন্য কিছু জিনিস কিনতে গেছিলাম। আর আপনি সেখানে আমাদের দেখে পেলেন। স্যারকে সবার সামনে চড় দেন। জানেন সেদিন আমি আপনার জন্য একটা নীল শাড়ী কিনে ছিলাম। স্যার অনেক বার বলেছিলো আপনাকে নাকি নীল শাড়ীতে খুব ভালো মানায়। আপনাদের বিয়েতে না যেতে পারায় একটা নীল 

শাড়ী কিনে আমি স্যারের হাতে দিয়েছিলাম আপনার জন্য। বিনিময়ে আপনি স্যারকে চড় দিয়েছেন নয়তো অপমান করেছেন??


তন্নিঃ সেদিনের কথা বাদ দাও। আজকেরটা তো আমি নিজের চোখেই দেখলাম। আজকে কি ছিলো তাহলে?


আদিবাঃ আমার একজনের সাথে রিলেশন আছে। বাবা বলেছে তাকে বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। তাই 

আমি স্যারের কাছে এসেছি বিকেল বেলায় ছুটি নেওয়ার জন্য। স্যার আমাকে ছুটি দিয়েছে। আমি চলে যাওয়ার সময় স্যার আমাকে বললেন ফাইল টা দিতে। আমি ফাইল টা নিতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় স্যার আমাকে ধরে ফেললেন??? 


তন্নিঃ.......... (চুপ করে আছে)


আদিবাঃ শুনেন একটা কথা বলবো? আপনার কপাল অনেক ভালো যে আপনি উনার মতো এক জনকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। আপনার মতো মেয়ের কোনো যোগ্যতা নেই উনার সাথে থাকার। নিজেকে তো অনেক কিছু মনে করেন। এগুলো বাদ দিয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা করুন??? 


আদিবা এ কথা গুলো বলে চলে গেলো। তাকিয়ে দেখি  তন্নির চোখে পানি চলে এসেছে। আমি এতক্ষণ কিছুই বললাম না। শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে দুজনের কথা শুনে ছিলাম।  আদিবার কথা গুলো শুনে নিজরর কাছে অনেক ভালো লাগলো। মনে মনে কয়েক বার ধন্যবাদ জানালাম।


একটু পর তন্নি আমার দিকে তাকালো। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তারপর আমাকে বললো........ 


তন্নিঃ নিজেকে খুব চালাক মনে করিস তাই না?? 


আমিঃ মানে??(অবাক হয়ে) 


তন্নিঃ তুই কি ভাবছিস আমি কিছু জানিনা?? 


আমিঃ কি জানিস তুই?? 


তন্নিঃ এই যে এতদিন অবহেলার নাটক করেছিস। তুই আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছিস। নিজেকে 

হিরো ভাবছিস?? 


মনে মনে ভাবতে লাগলাম...তন্নিকে এসব কথা কে বলে দিলো। সালা আয়মান বলে দিলো নাকি।  এরপর আমি বললাম....... 


আমিঃ এগুলো সব মিথ্যা কথা আমি যা করেছি মন থেকে করেছি৷ তোকে এই কথা গুলো কে বলেছে?? 


তন্নিঃ তুই কি ভাবছিস ওরা শুধু তোর ফ্রেন্ড আমার ফ্রেন্ড না। ফারিহা আমাকে সব কিছু বলেছে?? 


সালার মেয়েদের পেটে কোনো কিছুই হজম হয় না। কি দরকার ছিলো তন্নিকে এগুলো বলার। তারপর আমি বললাম..... 


আমিঃ তোকে এ কথা গুলো ফারিহা বলেছে। দেখ ওর কি হাল করি?? 


তন্নিঃ কি করবি তুই ফারিহার?? 


তন্নি এই কথা বলে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগোতে লাগলো। আমি বললাম...... 


আমিঃ কি ব্যাপার তুই এদিকে কেনো আসছিস?? 


তন্নিঃ কেনো আসছি তাইনা?? (আরো এগিয়ে এসে) 


আমিঃ দেখ একদম কাছে আসবি না। আমি কিন্তু চিৎকার দিবো?? 


তন্নিঃ চিৎকার কর দেখি কে আস??(আমার কলার ধরে)


আমি পিছাইতে পিছাইতে দেয়ালের সাথে লেগে গেছি।

এরপর আমি বললাম........ 


আমিঃ কি করছিস তুই.......


পুরো কথাটা বলার আগেই ওর ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরলো। আমার পুরো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।। এই ভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর আমি তন্নিকে একটু ধুরে সরিয়ে দিলাম। আর বললাম......


আমিঃ এই তুই কি পাগল! এটা আমার অফিস

বেডরুম না, যদি কেউ দেখে ফেলতো?? 


তন্নিঃ দেখুক তাতে আমার কি?? 


আমিঃ খাইছিস?? 


তন্নিঃ হুম! মাত্রই তো খাইলাম? ?


আমিঃ আরে ধুর এটা না,,দুপুরে খাইছিস?? 


তন্নিঃ না। তোর জন্য রান্না করে নিয়ে আসছি?? 


আমিঃ তুই রান্না করেছিস না আম্মু করেছে?? 


তন্নিঃ দুজনেই করেছি! তুই এতো কথা বলিস কেনো??


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না। তুই ফ্রেশ হয়ে আয় এক সাথে খাবো দুজনে?? 


তন্নিঃ ওকে?? 


তারপর তন্নি ওয়াশ রুমে চলে গেলো। আমি মনে মনে ভাবছি অবশেষ তন্নি লাইনে এসেছে। হারামী বন্ধু 

গুলো না থাকলে হয়তো কিছু  সম্ভব হতো না। একটু পর তন্নি ফ্রশ হয়ে আসলো।।আমি একটা প্লেটে ভাত দিয়ে তাকে বললাম.....


আমিঃ এই ধর খেয়ে নে?? 


তন্নিঃ আমি খাবো না??(অভিমানি সুরে) 


আমিঃ কি আজব! তুই না একটু আগে বললি 

খাবি??


তন্নিঃ এভাবে খাবো না?? 


আমিঃ তো কি ভাবে খাবি?? 


তন্নিঃ যদি কেউ একজন খাওয়াই দেয় তাহলে 

খাবো?? 


আমি আর কিছু না বলে ওকে খাওয়াই দিলাম নিজেও খেয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তন্নিকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। তন্নি চলে যাওয়ার পর ফাইল-টা হাতে নিলাম। এমন সময় আয়মানের কল আসলো। কলটা রিসিভ করতেই বললো......... 


আয়মানঃ দোস্ত কি অবস্থা?? 


আমিঃ আরে মামা কি বুদ্ধি দিলি। তন্নি তো পুরাই ফিদা হয়ে গেছে?? 


আয়মানঃ আরে কি বলিস?? 


আমিঃ হুম। আর তন্নির জন্মদিনে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম ওর জন্মদিন??


আয়মানঃ আরে মামা সারপ্রাইজের কি দেখলা আরো বড় সারপ্রাইজ রয়ে গেছে??


আমিঃ আরে কি বলিস! কি সারপ্রাইজ তাড়াতাড়ি বল?? 


আয়মানঃ না এখন না বিকেলে সবাই কফিশপে আয়।

বাকিরা আসবে সবাইকে এক সাথে বলবো?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


এই কথা বলে কল-টা কেটে দিলাম। অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে তন্নিকে বললাম রেড়ি হতে৷ সে রেড়ি হতে চলে গেলো। 


আমি রেড়ি হয়ে একটা কালো শার্ট পড়ে বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আছি তন্নির জন্য। একটু পর তন্নিও আসলো বাহহ তন্নিও কালো শাড়ী পরেছে। আমি দেখে আরো একবার ক্রাশ খেলাম। হা করে তাকিয়ে আছি। 


একটু পর তন্নির ঝাকানিতে বাস্তবে ফিরে এলাম? তন্নি আমাকে বললো......... 


তন্নিঃ এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো। মশা ঢুকবে?? 


আমিঃ আরে না একটা কথা চিন্তা করতেছিলাম?? 


তন্নিঃ কচু চিন্তা করছিলি! এখন যা রিকশা নিয়ে আয়?? 


তারপর আমি একটা রিকশা নিলাম.? আমি একটু দূরে সরে বসতে চাইলাম,কিন্তু তন্নি আমার বাম হাতটা চেপে ধরে বসে আছে। 


একটু পর কফিশপে পৌছে গেলাম,দেখলাম সবাই বসে আছে। আমাদের দেখে সবাই দাঁড়ালো। এবং ফারিহা বলতে শুরু করলো.......


ফারিহাঃ কিরে আজ এতো ম্যেসিং! ঘটনা কি?? 


তন্নিঃ কিসের?? 


সানিঃ বুঝি বুঝি সবই বুঝি?? 


আমিঃ আচ্ছা বুঝলে ভালো?? 


আয়মানঃ এই হারামির দল চুপ কর। সবাই আগে বস??


এরপর আমরা সবাই বসলাম। আয়মান সবার জন্য কফির অর্ডার দিলো। এরপর আমি বললাম...... 


আমিঃ বন্ধু এবার বল কি এমন সারপ্রাইজ। যেটা মোবাইলে বলা যায় না। এখানে বলতে হবে?? 


আয়মানঃ দোস্ত আমার বিয়ে?? 


সানিঃ সত্যি??


আয়মানঃ হুম সত্যি? ?


তারপর আমরা সবাই আয়মানকে congratulation জানালাম। এরপর আমি বললাম..... 


আমিঃ তো বিয়ে কবে??


আয়মানঃ পরশু দিন?? ( পাঠক ভাই ও বোনদের দাওয়াত রইলো) 


সানিঃ হারামি আগে বলিস নি কেনো? ?


আয়মানঃ দোস্ত আমি নিজেও জানতাম না। আজকে সকালে আব্বা বলেছে৷ আচ্ছা শোন কালকে তোরা সবাই থাকবি। অনেক কিছু কেনা কাটা করতে হবে? 


আমিঃ আমি পারবো না তোরা সবাই আসিস??


আয়মানঃ না পারলে তুই বিয়েতে আসিস না?? (রাগ করে)


আমিঃ ওরে ভাই কাঁদিস কেনো! আচ্ছা ঠিক আছে আসবো?? 


আমার কথা শুনে সবাই হাঁসতে শুরু করলো?? তারপর অনেকক্ষণ কথা বলে আড্ডা দিয়ে যার যার মতো করে বাসায় চলে গেলো। আমরাও বাসায় চলে আসলাম।


আমি ফ্রেশ হয়ে বাবার সাথে কথা বলতেছি। তন্নি তখন ফ্রেশ হচ্ছিলো। অনেকক্ষণ কথা বার্তা বলে রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখলাম......... 


গল্পঃ_বেস্ট_ফ্রেন্ড_যখন_বউ (পর্ব_০৯_শেষ_পর্ব)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


আমার কথা শুনে সবাই হাঁসতে শুরু করলো?? তারপর অনেকক্ষণ কথা বলে আড্ডা দিয়ে যার যার মতো করে বাসায় চলে গেলো। আমরাও বাসায় চলে আসলাম।


আমি ফ্রেশ হয়ে বাবার সাথে কথা বলতেছি। তন্নি তখন ফ্রেশ হচ্ছিলো। অনেকক্ষণ কথা বার্তা বলে রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখলাম তন্নি সোফায় বসে আছে। আমি যাওয়ার সাথে সাথে আমাকে বললো...... 


তন্নিঃ একটা কথা বলতাম?? 


আমিঃ তো বল! অনুমতির কি আছে?? 


তন্নিঃ আজকে খাটে ঘুমা। আমার কোনো সমস্যা হবে না?? 


আমিঃ কেনো চড় খাওয়ার জন্য নাকি??


তন্নিঃ দেখ এগুলোর জন্য সরি। তুই খাটে ঘুমা আমার সমস্যা হবে না??


আমিঃ দরকার নেই তুই খাটে ঘুমা?? 


এই কথা বলে আমি সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম। তন্নি মন খারাপ করে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লো।


পরের দিন তন্নির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো.?? ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম। নাস্তা করে রুমে যাওয়ায় পর আয়মান কল দিলো। কলটা রিসিভ করতেই বললো....


আয়মানঃ হ্যালো দোস্ত কোথায় তোরা৷ তাড়াতাড়ি 

আয় আমরা সবাই অপেক্ষা করতেছি?? 


আমিঃ দোস্ত আমি না আসলে হয় না। তন্নিকে 

পাঠিয়ে দিবো??


আয়মানঃ ওকে তুই আমার বিয়েতে_ও আসিস না?? 


আমিঃ আচ্ছা রাগ করিস না আসছি?? 


তারপর তন্নিকে বললাম রেড়ি হতে?? দুজনে রেড়ি হয়ে মার্কেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। একটু পর মার্কেটে চলে আসলাম।। মার্কেটে আসতেই সানি আমাকে বলে উঠলো........ 


সানিঃ কিরে হারামি এতো দেরি কেনো??


আমিঃ আরে বলিস না তন্নি আটা ময়দা মাখতে মাখতে দেরি করে ফেলেছে??(তন্নিকে রাগানোর জন্য বললাম) 


তন্নি রেগে লাল হয়ে গেলো আর বলতে শুরু করলো..... 


তন্নিঃ কিহহ আমি আটা ময়দা মাখি। এই হারামি তুই_ও তো ঘুম থেকে উঠতে দেরি করছিস৷ এখন আমার দোষ দিতেছিস তাইনা?? 


ফারিহাঃ এই তোদের ঝগরা বন্ধ কর। দেরি হয়ে যাচ্ছে??


আমিঃ আচ্ছা চল কেনা কাটা শুরু করি??


শুরুতে সবাই একটা স্বর্ণের দোকানে গেলাম।।তন্নি আর ফারিহা দুজনে আয়মানের বউয়ের জন্য গয়না পছন্দ করতেছে। অনেক ঘাটাঘাটির পর অনেক গুলো জিনিস কিনলো। তন্নি একটা নেকলেস নিয়ে বার বার নিজের গলায় জড়িয়ে দেখতে লাগলো। আমি খেয়াল করে দেখেছি। মনে হয় ওর নেকলেস_টা পছন্দ হয়েছে। কিন্তু কিছু বলছে না।


তন্নি আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। আমিও দেখে না দেখার ভান করে সানির সাথে কথা বলতেছি।


তারপর সবাই একটা শাড়ির দোকানে গেলাম।। শাড়ীর

দোকানে গিয়ে সবার জন্য শাড়ী কিনলো। আয়মানের মা, বোন,খালা আরো অনেকের জন্য কেনাকাটা হলো।

কিছুক্ষণ পর তন্নি একটা নীল শাড়ী নিজের গায়ে জড়িয়ে আমাকে বললো.......


তন্নিঃ এই অপুর্ব?? 


আমিঃ হুম বল?? 


তন্নিঃ শাড়িটা খুব সুন্দর তাইনা। আমাকে ভালো মানিয়েছে?? 


আমিঃ তো এখন কি করবো?? 


তন্নিঃ না এমনি বললাম??( মন খারাপ করে) 


বাহ ফকিন্নি সব কিছু ঠিক করে নিয়েছে। দাম দেওয়ার জন্য আমাকে এ কথা গুলো বলেছে। আর তন্নিকে এই শাড়ী টায় বেশ মানিয়েছে। 


আমি দোকানদারকে বললাম..শাড়ী_টা একটা আলাদা প্যাকেট করে দিতে। তন্নির মুখে এক রাজ্যের হাঁসি দেখলাম?? কিছু না বলে তাড়াতাড়ি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বসে আছে।


আরো অনেক কিছু কেনা কাটা করার পর সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আমরা সানি আয়মানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একটা রিকশা নিলাম।। একটু পথ যাওয়ার পর রিকশা_ওয়ালাকে বললাম...... 


আমিঃ মামা একটু দাঁড়ান?? 


তন্নিঃ এই তোর আবার কি হলো?? 


আমিঃ তুই বসে থাক আমি একটু আসছি?? 


এই  কথাটা বলে আমি আবার মার্কেটে গেলাম?? গিয়ে তন্নির পছন্দ করা নেকলেস_টা কিনে নিলাম। দাম বেশি হওয়ায় ক্যাশ টাকা দিতে পারিনি৷ দোকান দারের বিকাশ নাম্বার নিয়ে কলিগকে দিয়ে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিলাম।। তারপর রিকশায় আসলাম। রিকশায় বসতেই তন্নি বলে উঠলো........... 


তন্নিঃ কিরে কোথায় গিয়েছিলি??


আমিঃ সেটা তোর না জানলে ও চলবে। মামা চলেন?? 


কিছুক্ষণ পর বাসার সামনে চলে আসলাম। বাসার সামনে এসে আমি তন্নিকে উপরে পাঠিয়ে দিলাম। রিকশা ভাড়া দিয়ে আমিও উপরে গেলাম। দেখলাম তন্নি রুমে নেই। মনে হয় ওয়াশ রুমে গেছে। আমি নেকলেস_টা ওর ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি। 


একটু পর তন্নি ওয়াশ রুম থেকে বের হলো।। খুব হাঁসি খুশি লাগছে। তারপর নিচে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে আগের দিনের মতো সোফায় শুয়ে পড়লাম। তন্নি কিছু বলতে গিয়েও বলেনি। 


পরেরদিন আয়মানের বিয়ে,সকাল থেকে শুধু কল দিয়ে যাচ্ছে। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি তন্নি মায়ের সাথে রান্না ঘরে কাজ করছে। কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। একটু পর নাস্তা করে রেড়ি হয়ে তন্নিকে বললাম,, তাড়াতাড়ি রেড়ি হতে আমরা বিয়েতে যাবো।আর অনেক কাজ আছে। তন্নি হ্যা সুচক ইশারা দিয়ে চলে গেলো রেড়ি হতে আমি বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। 


একটু পর তন্নি রেড়ি হয়ে আসলো।। আমি_তো দেখে আবার ক্রাশ খেলাম, চোখ সড়াতে পারছি না। কালকের সেই শাড়ীটা পড়েছে, আর গলায় নেকলেস_টা পড়েছে। সাথে হালকা লিবিস্টক, ওহ মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর বুঝলাম কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। আর বলতছে.......


তন্নিঃ কিরে এমন হা করে কি দেখছিস। মনে হয় 

আগে কোনো দিন আমাকে দেখিস নি??


আমিঃ দেখেছি! তবে আজকে একটু অন্য রকম লাগছে??


এবার তন্নি আমার কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। দেখতে আরো বেশি কিউট লাগছে। তারপর একটা রিকশা নিয়ে রওয়ানা দিলাম। তন্নি আমার বাম হাতটা চেপে ধরে রেখেছে। একটু পর বললো....... 


তন্নিঃ ধন্যবাদ?? 


আমিঃ হাটাৎ ধন্যবাদ??( অবাক হয়ে )


তন্নিঃ এই যে আমার পছন্দের নেকলেস_টা কিনে 

দিলি তাই?? 


আমিঃ এখানে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নাই?? 


তন্নিঃ তুই কি কালকে দোকানে আমায় খেয়াল করেছিলি?? 


আমিঃ হুম একটু একটু?? 


দুজন কথা বলতে বলতে আবার মার্কেটে চলে গেলাম। এরপর বিয়ের জন্য একটা গিফট কিনলাম। এরপর আয়মানদের বাসায় চলে গেলাম। 


সারাদিন খাওয়া দাওয়া আর মেহমানদের নিয়ে বিজি ছিলাম সবাই।। সন্ধার পরে আয়মান এসে আমাকে বলে উঠলো......


আয়মানঃ দোস্ত একটা কাজ করতে হবে?? 


আমিঃ কি কাজ বল?? 


আয়মানঃ দোস্ত তুই আর তন্নি আমার বাসর ঘরটা সাজিয়ে দে?? 


আমিঃ কিন্তু......??(পুরোটা বলতে না দিয়ে)  


আয়মানঃ কোনো কিন্তু না!! প্লিজ দোস্ত না করিস না। সানিকে বাবার সাথে বাজারে পাঠাইছি। আর ফারিহা মিলির(আয়মানের স্ত্রী এর নাম) সাথে আছে?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


আয়মানঃ হুম ওই খানে ফুল আর সব জিনিস আছে। বাবা থাকলে বাবা তোকে বলতো। আমার তো একটু লজ্জা লাগছে তাই অন্য কাউকে বলিনি??


আমিঃ হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। যা আমি দেখতেছি?? 


এরপর তন্নিকে খুঁজতে লাগলাম।। দেখি নতুন বউয়ের সাথে সেলফি তুলছে। সারাদিন কয়েক হাজার 

সেলফি তুলছে তাও মন ভরেনি। আমি ইশারা দিয়ে তন্নিাে ডাক দিলাম। এরপর আসলো এসে বললো.....


তন্নিঃ হুম বল কেনো ডেকেছিস?? 


আমিঃ আরে বাসর ঘর সাজাতে হবে। এখানে নাকি কেউ পারে না?? 


তন্নিঃ আরে কি বলিস এখনো সাজায়নি?? 


আমিঃ সাজালে কি তোকে ডাকতাম?? 


তন্নিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল??


তারপর তন্নি আর আমি বাসর ঘর সাজাতে লাগলাম। সাজানো প্রায় শেষ। হটাৎ করে তন্নি বলে উঠলো...... 


তন্নিঃ জানিস বাসর ঘর নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো??


আমিঃ তাই নাকি?? 


তন্নিঃ হুমম! জানিস আমি কি কি কল্পনা করেছি বাসর রাত নিয়ে?? 


আমিঃ কি কি?? 


তন্নিঃ আমার জামাই আসবে,আমি মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাখবো। সে ঘোমটা সরাবে, তারপর আমি তার পা ছুয়ে সালাম করবো। তারপর সে আমাকে গান শুনাবে,আমি তাকে শুনাবো। তার কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো। কিছুকক্ষণ নাঁচবো,তারপর দুজন ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখবো। সে আমাকে দোলনায় দুলাবে,হটাৎ করে বৃষ্টি হবে???


আমিঃ তুই পাগল নাকি! চাঁদ উঠলে আবার বৃষ্টি 

হয় কিভাবে? 😁😁😁


তন্নিঃ তুই চুপ থাক। তারপর আমরা অনেক সময় ধরে ভিজবো। তারপর আবার রুমে চলে আসবো। আমি তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়বো??


আমি তন্নির কথাগুলো শুনে একটু অভিমানের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আয়মানের বাসর ঘরে গোলাপ ফুল ছিটাচ্ছি। আমার এমন মুখ দেখে তন্নি বলে উঠলো.....


তন্নিঃ কিরে তোর আবার কি হলো?? 


আমিঃ কই কিছু না?? 


তন্নিঃ মুখটা এমন প্যাঁচার মতো করে রাখছিস কেনো??


আমিঃ সবার কপালে কি আর বাসর রাত থাকে?? অভাগাদের কপালে কিছুই থাকে না??(অভিমানী শুরে )


তন্নিঃ হইছে আর ডং করতে হবে না। এই নে এটা ধর??(একটা ব্যাগ )


আমিঃ কি এটাতে?? 


তন্নিঃ সেরোয়ানি। আমরা এখন বাসায় যাবো, আমরাও বাসর ঘর করবো?? 


আমিঃ কিহ??😱😱( অবাক হয়ে )


তন্নিঃ হুম। আমি একটা লাল বেনারসি শাড়ী পড়বো। তুই ৩০ মিনিট পরে রুমে যাবি?? 


আমিঃ ৩০ মিনিট কি করবি?? 


তন্নিঃ এতো কিছু তোর জানতে হবে না। যা বলছি 

তাই করবি?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু এতোকিছু তুই 

কখন করলি??


তন্নিঃ সারপ্রাইজ কি তুই একাই দিতে পারিস, আমি পারি না। আমি আর ফারিহা মিলে এসব করেছি।

এখন তুই যা একটা গাড়ি ঠিক কর বাসায় যাবো?? 


আমিঃ ওকে??


এরপর একটা CNG নিয়ে আমি আর তন্নি তাড়াতাড়ি বাসায় গেলাম। বাসায় গিয়ে আমি সেরোয়ানি পড়ে রেড়ি হয়ে বসে আছি। কখন ত্রিশ মিনিট হবে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। অবশেষে ত্রিশ মিনিট হলো। আমি বাসর ঘরের দিকে যাচ্ছি। 


কেমন জানি লজ্জা লাগতেছে? সব সময় একই রুমে থাকি তবুও আজকে কেমন জানি লাগছে। ধুর এতো সরম পেয়ে লাভ নাই,,,আগে ভিতরে যাই। 


আস্তে করে দরজা_টা খুলে ভিতরে গেলাম। তন্নি বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমি গিয়ে ঘোমটা উঠালাম।


তন্নি খাট থেকে নেমে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করলো। আমি বললাম........ 


আমিঃ বেঁচে থাকো মা😁😁 বেঁচে থাকো☺☺স্বামীর সংসার নিয়ে অনেক সুখী হও মা.??😁😁


একটু পর আমি হায় হায় এটা কি বললাম🙉🙉। তন্নি আমাকে একটা গুতা দিয়ে বলে উঠলো..... 


তন্নিঃ এই কুত্তা আমি তোর মা হই হুম??😠😠


আমিঃ এই না না ভুল হয়ে গেছে। এই যে কান ধরলাম আর হবে না?? ☺☺


তন্নিঃ ওকে এখন একটা গান শুনা?? 


আমিঃ এই আমি তো গান পারি না?? 


তন্নি কি বললি??(রাগ দেখিয়ে) 


আমিঃ আচ্ছা শুনাচ্ছি?? 


তন্নিঃ হুম শুরু কর?? 


আমিঃ বন্ধু তুই লোকাল বাস। বন্ধু তুই লোকাল 

বাস??😁😁


তন্নিঃ এই হারামি এটা কোনো গান??😠😠


আমিঃ আরে মমতাজ খালামনির গান?? 


তন্নিঃ রাখ তোর মমতাজ খালামনির গান। ভালো গান গা নইলে ধাক্কা দিয়ে রুমে থেকে বের করে দিবো?? 


এরপর আমি এই গানটা শুনালাম। গানটা হলো👇👇


®®®®

সানাইটা আজ বলছে কি...আমি জানি সেই কথা...রাত জেগে কেউ শুনছি কি...আমি শুধু শুনছি তা....কি করে বলি এই প্রাণ যায়..যায়.....আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা.....আজ মধু রাত আমার ফুল শয্যা.....আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা......আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা..........


এই বাসর ঘর ফুলে সাজানো......আর জ্বলছে সু-পৃতীর সুগন্ধে......এই বাসর ঘর ফুলে সাজানো....আর জ্বলছে সু-পৃতীর সুগন্ধে....ওই পালংকে বসেছো যে তুমি..এতো দিম আর ভঙ্গি ছন্দে..ওই ঘোমটা ফেলে দাও,এই হাতটা ধরো না..আর রাত বাকি নেই আর..কিছু গল্প করো না..

এই রাত ভোর হলে ফিরে পাবে না........আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা... আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা..

আজ মধুর আমার ফুল শয্যা....আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা.........


এই একটি রাত জাগবো বলে.....আর কত  রাত করেছি প্রতিক্ষা...এই একটি রাত জাগবো বলে.. আর কত রাত করেছি প্রতিক্ষা... আজ সব কিছু দিলাম তোমায়...দাও আমায় ভালোবাসায় দিথা....


কোনো সাত ফাঁকে-তে নয়....কোনো মন্ত্র বুঝি না....যদি

মনটা পাই তোমার..কিছু আর তো খুঁজি না..প্রাণে প্রাণে বাধা রাখি খোলা যাবে না..আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা....আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা...আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা......আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা......


সানাইটা আজ বলছে কি আমি জানি সেই কথা....

       রাত জেগে কেউ শুনছি কি আমি শুধু শুনছি তা....

কি করে বলি এই প্রাণ যায়..যায়.....

             আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা.....

আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা.... 

             আজ মধুর রাত আমার ফুল শয্যা.....

আমার খুব খুব পছন্দের প্রিয় একটা গান ♪ ♪ ♬ ♬ 


গানটা শেষ করতেই তন্নি আমাকে বললো.......👇👇


তন্নিঃ বাহহ তুই তো খুব সুন্দর গান পারিস..??


আমিঃ জানিস এই গানটা মুখস্থ করেছি শুধু মাত্র এই দিনটার জন্য। সেই ছোট বেলা থেকেই খুব স্বপ্ন দেখতাম??


তন্নিঃ হুমম ভালোই তো.??


এরপর তন্নিও আমাকে রবিন্দ্র সংগীত শুনালো। তন্নির কন্ঠ বেশ চমৎকার। এরপর তন্নি বললো....... 


তন্নিঃ আয় এবার একটু নাঁচি??💃💃


আমিঃ ধুরর আমি নাঁচতে পারিনা?? 🚶🚶


তন্নিঃ হালকা নাঁচ। যেমন তেরিমেরি গানটাতে 

হালকা নাঁচি আয়?? 


আমিঃ আমি তো সানি লিয়ন আর উর বাশির গান ছাড়া নাঁচতে পারিনা??😁😁


তন্নিঃ মাইর খাবি কিন্তু?? 😠😠


এরপর উরাধুরা কিছু নাঁচ দিলাম দুজনে মিলে 👯👯💃💃।। আমি তো হাঁসতে হাঁসতে শেষ 😁😁।। তন্নি বললো...... 


তন্নিঃ চল ছাদে যাবো?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল?? 


তন্নিঃ এই ভাবে না। আমাকে কোলে কোরে নিয়ে চল?? 


কি আর করার। এরপর তন্নিকে কোলে করে ছাদে নিয়ে গেলাম।এই ফাস্ট টাইম কোনো মেয়েকে কোলে নিলাম। ছাদে গিয়ে তন্নিকে কোল থেকে নামিয়ে বললাম.👇👇


আমিঃ এই তুই কি খাস🙂🙂। ওরে আল্লাহ এতো ওজন তুই 🙉🙉। আর একটু হলে তো আমি মারা যেতাম??😜😜


তন্নি কিছু না বলে...আমার একটা হাত ধরে হাঁটতে শুরু  করলো। আমারো অসম্ভব ভালো লাগা শুরু হলো। এরপর আমি তন্নিকে কোলে নিয়ে পুরা ছাদে ঘুড়লাম। একটু পর শুরু হলো ঝুম ঝুম বৃষ্টি। তন্নির ইচ্ছেটা উপর ওয়ালা পুরন করে দিলো।


দুজনে অনেক সময় ধরে ভিজলাম?? হটাৎ একটা বাজ পড়ার সাথে সাথে তন্নি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দুজনে নিচে চলে আসলাম। 


এরপর তন্নি ভিজা কাপড় চেঞ্জ করে আসলো। আমিও চেঞ্জ করে আসলাম। একটু পর বললাম...... 


আমিঃ এই শোন আমরা ফ্রেন্ড ছিলাম ঠিক আছে,,কিন্তু এখন তো স্বামী স্ত্রী হয়ে গেছি. সো এখন আর তুই করে বলবো না তুমি করে বলবো??


তন্নিঃ ধুর না,,আমি তুই করেই বলবো?? 


আমিঃ কিন্তু কেনো?? 


তন্নিঃ আচ্ছা ঠিক আছে সবার সামনে তুমি করে বলবো। আর এমনিতে তুই করে বলবো?? 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


তন্নিঃ এই শোন আমার না অনেক ইচ্ছা আমার টুইন বেবি হব??😍😍


আমিঃ তাই নাকি তাহলে তো আমাকে ডাবল কষ্ট করতে হবে??🙈🙈


তন্নিঃ কেনো?? 🤔🤔


আমিঃ একটা ছেলের জন্য যতটুকু কষ্ট করতে হবে। দুজনের জন্য তো ডাবল কষ্ট করতে হবে তাইনা??


তন্নিঃ এই তোর মতলব কিন্তু আমি বুঝে গেছি?? 


আমিঃ তাই নাকি তাহলে তো ভালো?? 


তন্নিঃ খবর দার কাছে আসবি না বলে দিলাম?? 


আমিঃ আসলে কি হবে শুনি?? 


আমি আস্তে আস্তে আগাতে লাগলাম আর তন্নি পিছনে যেতে লাগলো। পিছনে যেতে যেতে খাটের উপর পড়ে গেলো। 


তন্নি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।। একটা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। আমি কাপড়_টা সরিয়ে ওর মিষ্টি মাখা ঠোঁটে আস্তে করে আমার ঠোঁট বসিয়ে দিলাম। তারপর দুজনে হারিয়ে গেলাম এক অজানা রাজ্যে। 


নিশ্চয়ই বাকিটা সবার অজানা নয়,,সুতরাং আর বলতে পারছি না। 


আরে ভাই অনেক কিছু দেখে ফেলেছেন এবার থামেন।

এবার তো অন্তত আমাদেরকে একা থাকতে দিন।


 **********সমাপ্ত ************


ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ওয়েব সাইটের সাথেই থাকবেন।


এমন আরও পর্রবের গল্প পড়ুন।