ভালোবাসার গল্প
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__০১)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
★হটাৎ করেই বিয়েটা হয়ে গেলো। আজকে যে আমার বিয়ে হবে সেটা আমি আজকে সকালেও ভাবিনি। কি থেকে কি হয়ে গেলো নিজেও জানি না। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো? কারন যার সাথে আমার বিয়েটা হয়েছে সেটা আর কেউ নয়, আমার ভাবি। হুম আমার আপন বড় ভাইয়ের বউ। যাকে আজকে সকালেও আমি ভাবি বলে ডেকেছি,,কিন্তু এখন আমার বউ।
এখন দাঁড়িয়ে আছি বাসার ছাদের উপর?? আর ভাবি মানে আমার বউ বাসর ঘরে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। কিছুই বুঝতে পারছেন না তাই তো। চলেন পুরো বিষয় টা আপনাদের বুঝিয়ে বলি.......👇👇
আজ থেকে প্রায় এক বছর আগে ভাবির আর ভাইয়ার বিয়ে হলো। খুব সুন্দর ভাবে দিন যাচ্ছিলো। ভাইয়া ইটালি থাকতো, আমি আম্মু আব্বু বাড়িতে থাকতাম।। আমি তখন অনার্স ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট ছিলাম?? ভাইয়া আর আমার সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মতো। দুজন খুবই ক্লোজ ছিলাম।
বাবার একটা দোকান ছিলো.?? ভাইয়া ইটালি যাওয়ার পর বিক্রি করে দিয়েছে। কারণ ভাইয়ার নিষেধ ছিলো বাবা যেন আর কোনো কাজ না করে। এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছিলো। আমিও বন্ধু বান্ধব,পড়ালেখা
আড্ডা এসব নিয়েই অসাধারণ লাইফ কাটাচ্ছিলাম।
হটাৎ একটা ঝড় এসে আমাদের এই সুখি লাইফটাকে তছনছ করে দিয়েছে।
ভাইয়া বিদেশ থেকে বাড়িতে আসলো? আমরা ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করে দিলাম। যদিও ভাইয়া বিয়ের জন্য রেড়ি ছিলো না। তবুও আব্বু আম্মুর জোরাজোরিতে রাজি হয়ে গেলো। অনেক গুলো মেয়ে দেখার পর একটা মেয়েকে ভাইয়ার জন্য আমরা পছন্দ করলাম।। মেয়েটা দেখতে অসাধারণ,,,,,,
প্রথম দেখায় মেয়েটাকে যে কেউ পছন্দ করবে।ভাইয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। ভাইয়াও মেয়েটাকে পছন্দ করে ফেললো?? মেয়েটা আমার সাথেই পড়তো, অর্থাৎ অনার্স ৩য় বর্ষে?? শুধু ক্যাম্পাসটা ভিন্ন ছিলো।। নাম হচ্ছে অবন্তী।
দুই ফ্যামিলির সম্মতিতে মহা ধুম ধামে ভাইয়ার বিয়েটা হয়ে গেলো। ভাইয়া আর ভাবির আন্ডারেস্টিং টা ছিলো অসাধারণ। দুজন দুজনকে অল্প দিনেই অনেক ভালোবেসে ফেললো?? সেটা উনার হাবভাব দেখলেই বুঝা যায়।।
বিয়ের পর ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে অনেক ঘুরাফেরা করলো?? আমিও ভাবির সাথে অনেক মস্করা করতাম। ভাবি সব ক্লোজ ভাবে নিতো।। ভাবিও অল্প দিনে আব্বু আম্মুর মন জয় করে নিলো। আম্মু নিজের হাতে ভাবির মাথায় তেল দিয়ে দেয়, রান্না শিখায়।
আব্বু আর আম্মু ভাবিকে কখনো ছেলের বউ হিসেবে দেখেনি। নিজের মেয়ের মতোই দেখেছে। ভাবির আব্বু আম্মুকে নিজের বাবা মায়ের মতোই সেবা যত্ন করতো। সব কিছুতে হেল্প করতো।
ভাবি বাসায় আসার পর থেকে যেন বাসাটা অন্যরকম হয়ে গেলো, খুব সুন্দর ভাবে আমাদের দিন যাচ্ছিলো।
বিয়ের দুই মাস পরে ভাইয়ার ছুটি শেষ,, তাই আবারও ইটালি চলে যেতে হবে? যদিও ভাইয়ার যাওয়ার মতো মন মানসিকতা ছিলো না?? কারণ নতুন বিয়ে করেছে আরো কিছু দিন থাকার ইচ্ছা ছিলো? বাট নিজের ক্যারিয়ার ও ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে ভাইয়া ইটালি চলে গেলো।
ভাইয়া চলে যাওয়ার পর প্রতিদিন আমাদের সবার সাথে কথা হতো?? আমি এটা ওটা বলে ভাইয়াকে খেপাতাম। এভাবে কিছু দিন চলে যায়।।।
একদিন আমি কলেজ থেকে বাসায় আসছি এমন সময় একটা বিদেশি নাম্বার থেকে কল আসে। আমি ভেবেছিলাম ভাইয়া কল দিয়েছে। কিন্তু না, আমি কলটা রিসিভ করলাম....
আমিঃ>>হ্যালো ভাইয়া,কেমন আছিস?
কিন্তু ওপাশ থেকে অন্য একটা লোক বললো....
লোকটাঃ>>আমি আপনার ভাই না। আপনার
নাম কি জুয়েল???
আমিঃ>>হুম, আমিই জুয়েল বাট আপনি কে?
আমাকে কি ভাবে ছিনেন?
লোকটাঃ>>আমি তোমার ভাইয়ের বন্ধু, এক সাথেই
কাজ করি। আমার নাম রহিম??
আমিঃ>>ও আচ্ছা। তো ভাইয়া কেমন আছে?
রহিমঃ>>......... (চুপ)
আমিঃ>>কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেনো?
ভাইয়া কেমন আছে?
রহিমঃ>>তোমার ভাই,,,
আমিঃ>>হুম আমার ভাই কি? কি হয়েছে ভাইয়ার?
রহিমঃ>>তোমার ভাই আর বেঁচে নেই?
কথাটা শুনার সাথে সাথেই আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো?? আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ি? হটাৎ চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসলো।।।
আমিঃ>>কি বলছেন, এটা হতে পারে না। আমি আজ সকালেও ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি??(কাঁদতে কাঁদতে)
রহিমঃ>>হুম ঠিকই বলছি, কিছুক্ষণ আগে তোমার ভাই ডিউটিতে যাচ্ছিলো, প্রতিদিন আমি আর তোমার ভাই একসাথেই কাজে যেতাম কিন্তু আজকে আমার সিপ্ট সকালে ছিলো আর তোমার ভাইয়ের রাতে। একটু আগে বাস উলটে তোমার ভাই সহ ওই কোম্পানির প্রায় ১৩ জন মারা যায়। বাকিদের অবস্থাও খুব ভালো না??
আমিঃ>>না আমার বিশ্বাস হয় না। আপনি ভালো করে দেখেন,আমার ভাইয়ের কিছু হয়নি??
রহিমঃ>>দুই দিনের মধ্যে লাশ দেশে পাঠিয়ে
দেওয়া হবে??
★এই কথা বলেই রহিম ভাই কলটা কেটে দিলো? আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে কোনো কথা আসছে না। আমি আব্বু আম্মুকে কি জবাব দিবো? কি বলে বুঝাবো ভাবি কে? মাত্র দুই মাস পরে বিধবা হয়ে গেছে এটা শুনলে ভাবির কি অবস্থা হবে। আব্বু আম্মুকে যদি বলি তোমাদের বড় সন্তান আর নেই কি হবে উনাদের?
নাহ আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা। মাথাটা ঘুরছে। তাড়াতাড়ি বাসায় যাই,,,একটা রিক্সা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গেলাম।
কলিং বেল দেওয়ার একটু পর ভাবি এসে দরজা খুলে দেয়। ভাবি আমাকে বললো..........👇👇
ভাবিঃ>>কি ব্যাপার,আজকে আমার দুষ্টু দেবরটা এতো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসছে কেন? নিশ্চই কলেজ ফাঁকি দিয়েছে??
ভাবির মুখে এই কথা শুনে আমার ভিতরটা আবারও মোছড় দিয়ে উঠলো, আমি কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলাম। দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম, পানি ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছামতো কাঁদতে লাগলাম। অনেকক্ষণ পর বের হলাম। ভাবি আমার রুমের দরজায় টোকা দিতে লাগলো....👇👇
ভাবিঃ>>কি ব্যাপার দেবর সাহেব, মন খারাপ
কেনো? কি হয়েছে?
মনে মনে বললাম...কি হয়েছে সেটা যদি শুনেন তাহলে আপনি নিজেকে স্থির রাখতে পারবেন না। ভাবি যেনো কিছু না বুঝে সেজন্য বললাম.......👇👇
আমিঃ>>কিছু না.??
ভাবিঃ>>না না, কিছু তো একটা হয়েছে। চোখমুখ
লাল কেনো??
আমিঃ>>বললাম তো ভাবি কিছু হয়নি??
ভাবিঃ>>আচ্ছা খেতে চলো, আব্বু আম্মু বসে আছে??
আমিঃ>>আপনারা খেয়ে নেন, আমি খাবো না??
ভাবি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো তার আগেই আমি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। যেখানেই যাই ভাইয়ার স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো?? মনে হচ্ছে ভাইয়া আমার পাশে গল্প করতেছে?? নিজেকে কোনো ভাবেই শান্তনা দিতে পারছি না।।
রাতের বেলা রুমে বসে বসে ভাইয়ার ছবি গুলো দেখছি আর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। এমন সময় আম্মু আমার রুমে আসলো। আর আমাকে বললো..... 👇👇
আম্মুঃ>>কিরে কি করিস?
আমিঃ>>কিছু না.??
আম্মুঃ>>কাঁদতেছিস কেনো?
আমিঃ>>কই না, মনে হয় চোখে কিছু একটা
পড়েছে??
আম্মুঃ>>মিথ্যা বলবি না। তোর হাতে কার ছবি?
আম্মু ছবি গুলো আমার হাত থেকে নিয়ে দেখে আমার আর ভাইয়ার ছবি। তারপর আম্মু আমাকে বললো.....
আম্মুঃ>>ভাইয়ের কথা মনে করে কাঁদতেছিস?
আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম.......👇👇
আম্মুঃ>>এই হটাৎ করে তোর কি হলো?
আমিঃ>>কিছু না, ভাইয়াকে খুব মিস করতেছি?
আম্মুঃ>>পাগল একটা,ওরে কল দিয়ে কথা বল। আচ্ছা ভালো কথা সকাল থেকে তোর ভাই কল দেয়নি, অবন্তী নাকি কল দিয়েছিলো বার বার মোবাইল অফ পাচ্ছে। তুই একটু দেখতো.??
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম। তারপর আম্মু রুম থেকে চলে আমি আবারও ছবি গুলো দেখতে লাগলাম। এভাবে দুই দিন চলে গেলো, আম্মু আব্বু ভাবি সবাই অনেক টেনশন করতেছে, ভাইয়ার কোনো খবর নাই। আমি জেনেও উনাদের কিছু বলতে পারছিনা।
পরের দিন, একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে,,,,
আমিঃ হ্যালো!
লোকঃ আপনার নাম কি জুয়েল?
আমিঃ জ্বি! আপনি কে?
লোকঃ আমি কাস্টমস থেকে বলতেছি, আপনার ভাইয়ের লাশ এসেছে। এসে নিয়ে যান,,,,,
★আমি আর কোনো কিছু না বলে দৌড় দিলাম। একটা গাড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট গেলাম। দেখলাম অনেক গুলো লাশ একসাথে শুইয়ে রাখছে। দেখেই ভিতরটা কেঁদে উঠলো। তারপর কয়েকজন পুলিশ লাশ গুলোকে পোস্টমর্টেম করার জন্য লাশবাহি গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
অনেক রিকুয়েস্ট করার পরও ওরা আমাদের কারো কথা শুনলো না.?পুলিশের পিছে পিছে হাসপাতালে গেলাম, অনেকক্ষণ ধরে হাসপাতালে বসে আছি।
চারপাশে অন্যান্য লোক গুলো কেঁদেই যাচ্ছে,,আমারও চোখ দিয়ে পানি ঝরতেছে। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমার ভাই আর বেঁচে নেই।।
তারপর প্রত্যেকটা লাশ তাদের আত্নীয়দের নিকট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে?? আমি ভাইয়ার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাইয়ার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম?
দেখে মনে হচ্ছে আমার ভাইটা এখনো হাসতেছে,কিছুই হয়নি। কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে আমার ভাই,,,আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কাঁদতেছি এমন সময় কেউ একজন কাঁধের উপর হাত দেয়, ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি একজন ডাক্তার। উনি আমাকে বললেন......... 👇👇
ডাক্তারঃ>>লাশ বেশিক্ষণ উপরে রাখা ঠিক হবে না,, মেডিসিন দেওয়া উনাদের শরীরে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফনের ব্যবস্থা করেন??
আমি আর কিছু বললাম না??হাসপাতাল থেকে একটা এম্বুলেন্স নিয়ে ভাইয়ার লাশটা উঠালাম। গাড়ি তার আপন মনে চলতেছে। আমি আব্বু আম্মু আর ভাবিকে কি জবাব দিবো সেটাই ভাবতেছি?
কিছুক্ষণ পরেই এম্বুলেন্স আমাদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এম্বুলেন্স এর আওয়াজ শুনে আব্বু, আম্মু, ভাবি সহ আশেপাশের সবাই বাইরে আসলো। আমাকে নামতে দেখে সবাই একটু অবাক হলো।
আমি এম্বুলেন্স এর পেছনের দরজাটা খুলে ভাইয়ার লাশটা বের করলাম, আম্মু আব্বু, ভাবি সবাই এগিয়ে আসলো।
আব্বুঃ>>কিরে এম্বুলেন্স কেনো? আর এটা
কার লাশ?
আমি কোনো কথা না বলে ভাইয়ার মুখের উপর থাকা সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিলাম। তারপরেই.......
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__০২)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
আমি কোনো কথা না বলে ভাইয়ার মুখের উপর থাকা সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিলাম? ভাইয়াকে দেখে আম্মু একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো।? বাবা এসে জড়িয়ে ধরলো। আর ভাবি ঠাস করে বসে যায়।
অঝোর ধারায় সবাই কান্না করতে লাগলো?? এরপর ভাইয়ার কাফন দাপন শেষ হলো? আমি আর বাবা অনেক সময় ভাইয়ার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাবা বাসায় আসতে চায়নি। এক সময় আমি জোর করে বাসায় নিয়ে আসলাম।।।
বাসায় আসার পর ভাবি আর আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না শুরু করলো। আমিও আর নিষেধ করিনি। আমি স্ট্রং ছিলাম, কারণ আমিও যদি ভেঙ্গে পড়ি ফ্যামিলির কেউই হয়তো ভালো থাকবে না।।
সেদিন থেকে আমাদের পরিবারের মুখের হাসি টা উড়ে গেলো? ভাবি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো?? ভাইয়া মারা যাওয়ার পর ফ্যামিলিতে ক্রাইসিস শুরু হয়?? কারণ আগে ভাইয়ার টাকা দিয়েই সব খরচ চলতো। আব্বুর দোকানটাও বিক্রি করে দিছে।।
আর আব্বুর এখন যে অবস্থা তার দ্বারা কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে আমি নেমে গেলাম জীবন যুদ্ধে? অনার্স টা শেষ না করার কারণে ভালো কোনো চাকরি পাইনি। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিই।
আমার কাজ হচ্ছে বাজারের প্রত্যেকটা দোকানে গিয়ে কার কি মাল রাখবে সেটা লিখে এনে মাল গুলো আবার পৌঁছে দেওয়া। যাকে বলা হয় এস আর??
ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়তো।। কতো কষ্ট করে ভাইয়া টাকা ইনকাম করতো এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
বেতন ছিলো কম, মাত্র ৮ হাজার টাকা। যেটা দিয়ে ফ্যামিলি কোনো মতে চললেও আব্বু আম্মুর মেডিসিন কেনা প্রায় অসম্ভব।
তাই বন্ধুদেরকে বলে কয়েকটা টিউশনি নিয়ে নিলাম।
সকাল ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত আমার এই যুদ্ধ চলতে থাকে?? নিজের পড়ালেখা প্রায় শেষ করেই দিলাম। কিন্তু ভাবিরটা কন্টিনিউ রাখলাম।
এরমাঝে ভাবির বাবা মা অনেক বার এসেছে আমাদের বাসায় ভাবিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য? কিন্তু আব্বু উনার হাত ধরে অনেক রিকুয়েস্ট করে ভাবিকে রেখে দেয়। ভাবিকে এতো ভালোবাসতো যে অন্য কারো ঘরে পাঠানোর চিন্তাও আব্বু আম্মু করতো না।
সেদিন আমি কাজ শেষ করে টিউশনি করিয়ে বাসায় আসলাম।। রুমে গিয়ে চেইঞ্জ করে নিলাম তখন বাবা আমার রুমে আসলো....
আমিঃ>>আরে আব্বু! আসো ভিতরে আসো??
বাবাঃ>>আমার পাশে বস??
আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম,বাবা আমার হাত ধরে বললো....
বাবাঃ>>তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনারে?
আমিঃ>>আরে ধুর এগুলো কি বলো?
বাবাঃ>>তোর জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি, তুই আমাদের মাফ করে দিস।
আমিঃ>আব্বু তুমি কি পাগল হইছো,এগুলো কি বলো। আমার ফ্যামিলি আমি না দেখলে কে দেখবে? আর আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না??
বাবাঃ>>অবন্তীর বাবা আসছিলো??
আমিঃ>>হুম কি বললো?
বাবাঃ>>ওরে নিয়ে যেতে চায়,এভাবে নাকি
দিন যায় না??
আমিঃ>>তুমি কি বললে?
বাবাঃ>>আমি তো বলে দিয়েছি আমি আমার মেয়েকে জীবনেও দিবো না??
আমিঃ>>ও আচ্ছা??
বাবাঃ>>বেয়াই যদি আবার আসে?
আমিঃ>>আসবে না, টেনশন করার দরকার নেই??
বাবাঃ>>তোর কাছে কিছু টাকা হবে? (করুনার সুরে)
আমিঃ>>এভাবে কেন বলো? কত টাকা লাগবে সেটা বলো??
বাবাঃ>>অবন্তীর বই নাই, বই কিনতে হবে তাই??
--আমি মানিব্যাগ চেক করে দেখলাম মাত্র ৫৭৬ টাকা আছে। যেটা আমার পুরো মাসের পকেট ও যাতায়াত খরচ?? এটা যদি দিয়ে দিই তাহলে পুরো মাস পায়ে হেটে কাজ করতে হবে।
★ধুর এতো কিছু চিন্তা করে লাভ নেই.? পুরো টাকাটা বাবার হাতে দিয়ে দিলাম। বাবা টাকা হাতে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে গেলো। পরেরদিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম। কেননা আমাকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে, গাড়ি ভাড়া নাই।
তাই তাড়াতাড়ি উঠে রওনা দিলাম। তারপরও অফিস পর্যন্ত যেতে ২০ মিনিট দেরি হয়। বস ইচ্ছা মতো ঝাড়ি দিলো। তারপর গত কালকের মাল গুলোর রিসিট কেটে নিয়ে আসছি সেগুলো দোকানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা কাভার ভ্যান নিয়ে রওনা দিলাম।
অন্য একজন ভ্যান চালাচ্ছে আমি পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি??হাতে অনেক গুলো মালের সেম্পল,,,,একটা দোকানে মাল দিয়ে আসার পথে ভাবিকে দেখলাম অনেক গুলো মেয়ের সাথে।
মনে হয় ক্লাস শেষ করে বাসায় যাচ্ছে। ভাবির চোখ দেখেই চিনে ফেললাম যে এটা ভাবিই হবে।
আমি তখন ভ্যান ঠ্যালতেছি?? ভাবি আমাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে? আমি উনার চোখে স্পর্শ পানি দেখলাম.?? আমি ভাবিকে দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে গেলাম।।
এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছে?? বাস্তবতা কি জিনিষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
আজকে শুক্রবার,চাকরি টিউশনি সব কিছুই বন্ধ। তাই ঘুমিয়ে আছি। অনেক দিন ধরে ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না। ভাবি আমার রুমে আসলো আর বললো........
ভাবিঃ>>জুয়েল! এই জুয়েল?
আমিঃ>>আরে ভাবি আপনি কখন আসলেন?
ভাবিঃ>>এই তো একটু আগে, অনেক বেলা হইছে এবার ঘুম থেকে উঠো?
আমিঃ>>হুম উঠতেছি, আসলে শরীরটা কেমন যেনো ব্যাথা করতেছে, তাই ঘুমটা একটু বেশিই হলো?
ভাবিঃ>>তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?
আমিঃ>>আরে ধুর এগুলো কি বলেন, আমি তো সুন্দর লাইফ কাটাচ্ছি। কোনো প্রবলেম হচ্ছে না??
ভাবিঃ>>আমি দেখেছি কেমন সুন্দর লাইফ কাটাচ্ছো??
আমিঃ>>আচ্ছা আপনার পড়ালেখার কি অবস্থা? (কথা ঘুরিয়ে নিলাম)
ভাবিঃ>>মোটামুটি তুমি আর পড়বে না?
আমিঃ>>দেখি কি করা যায়, কলেজে যাওয়ার মতো তো সময় নাই। পরীক্ষাটা দিবো। যদি কপালে পাশ লেখা থাকে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ??
ভাবিঃ>>হুম, আসো খেয়ে নাও??
আমিঃ>>আপনি যান,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি??
তারপর ভাবি চলে গেলো? আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। এভাবে আমাদের দিন যাচ্ছিলো। এমন একটা লাইফ কাটাচ্ছি যেটাতে নিজের স্বাধীনতা বলতে কিছু নাই?? পরিবারের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে সব ত্যাগ করতে হয়।
একদিন খেয়াল করে দেখলাম মায়ের শাড়ি গুলো সব পুরাতন হয়ে গেছে। ভাবিও প্রতিদিন একটা ড্রেস গায়ে দিয়ে কলেজে যায়। বাবারও পাঞ্জাবি গুলোতে ময়লা জমে গেছে। ভাবির মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে যায় এরপর আর মোবাইল নেয়নি?? তারপর লজ্জায় আর আমাদের কাওকে বলেনি? সব কিছু মিলিয়ে সবারই অবস্থা খারাপ।
তাই নিজের শখের জিনিষ গুলো বিক্রি করে দিলাম.?? হুম আমার কম্পিউটার, গিটার, হাতের ঘড়ি এবং শখের মোবাইলটাও বিক্রি করে দিলাম সবার অজান্তে।
তারপর আব্বু আম্মু আর ভাবিকে নিয়ে শপিং করতে গেলাম। আব্বুর জন্য কয়েকটা লুঙ্গি, পাঞ্জাবি আর গেঞ্জি নিয়ে নিলাম। আম্মুর জন্য শাড়ি, ছায়া, ব্লাউজ আরো টুকটাক জিনিষ নিলাম।
ভাবিকে উনার পছন্দ মতো নিতে বললাম? উনি কয়েক টা থ্রি পিছ, জুতা,কিছু কসমেটিক্স নিলো। কিছুক্ষণ পর আম্মু বলে উঠলো.....
আম্মুঃ>>তোর জন্য কিছু নিবি না?
আমিঃ>>নাহ! আমার সব আছে?(মুছকি হাসি দিয়ে)
এরপর উনাদের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি একটা মোবাইলের দোকানে গেলাম। আমার জন্য একটা নরমাল মোবাইল নিলাম আর ভাবির জন্য একটা স্মার্ট ফোন নিলাম। তারপর উনাদের নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতের বেলা সবাই আমার রুমে আসলো.....
আমিঃ>>কি ব্যাপার সবাই একসাথে?
আম্মুঃ>>কেনো আসতে পারি না?
আমিঃ>>আরে আজব না পারার কি আছে?
আসো,,??
সবাই এসে বসলো।আমি ব্যাগ থেকে ভাবির জন্য কেনা মোবাইলটা ভাবির হাতে দিলাম। এরপর ভাবি আমাকে বললো.........
ভাবিঃ>>কি এটা?
আমিঃ>>মোবাইল আপনার জন্য নিলাম?
ভাবিঃ>>আমার তো এখন মোবাইলের কোনো
দরকার নেই,টাকা নষ্ট করলে কেনো?
বাবাঃ>>সত্যি করে বলতো তুই টাকা কোথায় পেলি?
আমিঃ>>আমার কাছে জমানো ছিলো??
আম্মুঃ>>মিথ্যা বলিস কেন? সত্যি করে বল টাকা কোথায় পাইছিস?
আমিঃ>>কম্পিউটার, গিটার আর মোবাইলটা বিক্রি করে দিয়েছি??(মাথা নিচু করে)
বাবাঃ>>কেনো তোরে এগুলো বিক্রি করতে কে
বলেছে??
আমিঃ>>তোমাদের সবার জামা কাপড় গুলো পুরাতন হয়ে গেছে, দেখতেই তো খারাপ লাগে। সেজন্য,,,??
ভাবিঃ>>ই বলে এগুলো বিক্রি করে দিবে?
আমিঃ>>আরে ধুর কোনো সমস্যা নাই.? আর তাছাড়া এখন আর কম্পিউটার চালানোর মতো সময় পাই না। আর গিটার তো বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। এগুলো একটারও আমার দরকার নেই?
ভাবিঃ>>মোবাইল কেনো বিক্রি করলে?
আমিঃ>>এখন আর এতো দামি মোবাইলের কাজ নেই। এখন, সারাদিন কাজে থাকি মোবাইল চালানোর সময় কই? আর তাছাড়া এখন আর মোবাইলের প্রতি এতো শখ নেই। একটা নরমাল হলেই চলবে??
★কেউ আর কিছু বললো না। নির্বাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো? সবার চোখে যে পানি চলে আসছে সেটা আমি ভালো করেই দেখছি?? কিছুদিন পর আমি শুয়ে আছি, সকাল ১০ঃ০০ টার মতো বাজে?? সোফার রুমে চিল্লাচিল্লি শুনে তাড়াতাড়ি সেখানে গেলাম।। গিয়ে দেখি তালোই মানে ভাবির বাবা আর মা এসেছে।
আমি গিয়ে সালাম দিলাম।। তারপর কৌশল বিনিময় করে বাজারে গেলাম বাজার আনতে। কারণ মেহমান আসছে ভালোমন্দ কিছু না হলে খারাপ দেখা যায়।
আমি বাজার থেকে কিছু বাজার করে নিয়ে আসলাম। তারপর রান্না ঘরে দিয়ে আসলাম ভাবি আর মা রান্না করতেছে.?? আমি গিয়ে উনাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।
দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়া করে সবাই সোফা রুমে গিয়ে বসলাম? আমি বসিনি আব্বু আম্মু আর ভাবির বাবা মা সবাই বসছে?? মনে হয় কিছু বলবে। ভাবি দরজা পাশে ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর ভাবির আব্বু মানে আংকেল বললো.........
আংকেলঃ>>দেখেন বেয়াই সাব যে কারনে আমরা আসছিলাম??
বাবাঃ>>জ্বি বেয়াই বলুন??
আংকেলঃ>আমার মেয়েটার বয়স খুব একটা বেশি না। এই বয়সে সে বিধবা হয়ে যাবে কল্পনাও করিনি। যাইহোক আল্লাহর যা পছন্দ হয়েছে তাই করেছে। আমার মেয়েটা মাত্র দুইমাস জামাইয়ের সাথে ছিলো। তারপর কি হলো সেটা তো জানেন? এখন কথা হচ্ছে ওর তো একটা ভবিষ্যৎ আছে, এভাবে তো আর তার জীবন চলবে না??
বাবাঃ>>তো এখন কি করতে পারি?
আংকেলঃ>>আপনাদের কিছু করতে হবে না।আমাদের মেয়েকে আমরা নিয়ে যাবো। ওর অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবো। এভাবে থাকলে তো আর হবে না??
বাবাঃ>>না বেয়াই এটা করবেন না। আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন না??
আংকেলঃ>>দেখেন আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না। বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। হুম এটা ঠিক যে আমার মেয়ের কপাল অনেক ভালো, আপনাদের মতো শ্বশুর শাশুড়ি পেয়েছে। খুব কম মেয়েই এই রকম শ্বশুর শাশুড়ি পেয়ে থাকে। কিন্তু আপনারা তো আর ওর কিছু করতে পারবেন না। ওকি আপনাদের সাথে জীবন কাটাতে পারবে? আপনাদের ওতো বয়স হয়েছে। মরতে তো হবেই। আপনাদের কিছু হয়ে গেলে আমার মেয়েটার কি হবে??
★ভাবি নির্বাক দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে, না পারছে বাবার পক্ষে কিছু বলতে না পারছে শ্বশুরের পক্ষে কিছু বলতে।
বাবাঃ>>কিন্তু এখানে তো ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব ঠিকঠাক মতো আছে??
আংকেলঃ>>হুমম সব আছে বাট স্বামী তো নেই। একটা মেয়ে কি এভাবে লাইফ কাটাতে পারে? আপনিই বলুন, আপনার মেয়ে হলে আপনি কি করতেন?
বাবাঃ..........(মাথা নিচু করে বসে আছে)
আংকেলঃ>>আমি জানি আপনি অবন্তীকে অনেক ভালোবাসেন,নিজের মতোই দেখেন। কিন্তু অবনন্তীকে আমরা আর এখানে থাকতে দিতে পারি না। অন্তত পক্ষে ওর বাবা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব??
বাবাঃ>>আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে, আমি আমার মেয়েকে যেতে দিবো না??
আংকেলঃ>>আপনি এসব কি বলছেন?
বাবাঃ>>হুম আমার এক ছেলে হয়তো আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আরেক জন তো আছে। আপনি না অবন্তীকে বাইরে বিয়ে দিতে চেয়েছেন। বাইরে দেওয়ার দরকার নেই। আমার ছোট ছেলের কাছেই ওর বিয়ে দিবো। এবার তো আর বলতে পারবেন না যে আপনার মেয়ে বিধবা? ওর স্বামী নাই। এগুলো তো আর বলতে পারবেন না??
আমি বাবার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম?? এটা কেমনে হয়? এখনো আমি অবন্তীকে ভাবি ডাকি আর সে নাকি আমার.... না এটা কিছুতেই সম্ভব না?? আমার মাথা ঘুরতেছে। হটাৎ করে বাবা আমার দুহাত চেপে ধরে বলে উঠলো......
বাবাঃ>প্লিজ বাবা,তুই না করিস না। তুই অবন্তীকে বিয়ে কর, আমার মেয়েকে আমার কাছে থাকতে দে। প্লিজ বাবা, আমার অনুরোধ টা রাখ। নাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না??
বাবার কথা শুনে আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আম্মুও করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আম্মু আমাকে বললো..........
আম্মুঃ>>জুয়েল! বাপ আমার প্লিজ না করিস না??
আমি বাবার হাত ধরে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম। ভাবির দিকে তাকিয়ে দেখি উনি চোখ মুছতে মুছতে রুমে চলে গেলো। ভাবির আব্বু বললো.....
আংকেলঃ>>বেয়াই (আব্বুকে) আপনি মানুষ না,, ফেরেশতা। একটা মানুষ এতো ভালো হয় কেমনে। আমি নিজেও জীবনে আমার মেয়ের জন্য এতোকিছু করিনি যেটা আপনি করলেন??
বাবাঃ>>আচ্ছা বেয়াই মশাই, বিয়েটা আজকেই হয়ে যাক। আমি কাজী ডেকে নিয়ে আসি??
আংকেলঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে,আমি আমার ছেলেকে আর ছেলের বউকে আসতে বলি?? আর অবন্তীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে সাজিয়ে আনার জন্য বলবো??
বাবাঃ>>আচ্ছা আমি বাজারে গেলাম??
কোনো রকম অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেলো। আজ ভাবিকে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে?? প্রথম বিয়ের ছেয়েও বেশি।।শুধু একটা জিনিষের অভাব। সেটা হচ্ছে মুখের হাসিটা।
ভাইয়ার সাথে যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন ভাবির মুখে খুব সুন্দর হাসি ছিলো।। আজকে সব আছে সেটাই নেই?? হয়তো এমন কিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি।। তারপরেই তো........
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__০৩)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
কোনো রকম অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেলো। আজ ভাবিকে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে?? প্রথম বিয়ের ছেয়েও বেশি।।শুধু একটা জিনিষের অভাব। সেটা হচ্ছে মুখের হাসিটা।
ভাইয়ার সাথে যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন ভাবির মুখে খুব সুন্দর হাসি ছিলো।। আজকে সব আছে সেটাই নেই?? হয়তো এমন কিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি।।
তারপর মনে পড়লো আমার ছোট বেলার কথা?? ছোট বেলা থেকেই আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো খুব সুন্দর করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবো?? ভালো একটা চাকরি পাওয়ার পর বিয়েটা করবো। কিন্তু সবকিছু তো সবার কপালে থাকে না😥😥
আমার কপালেও হয়তো নেই।আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি জীবনে এমন একটা সময় আসবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। ভাবিকে বিয়ে করতে হবে তাও নিজের অজান্তে। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তে কখন যে চোখে পানি চলে আসলো টের পাইনি? কেউ একজন পেছন থেকে কাঁধের উপর হাত দেয়, তাকিয়ে দেখি বাবা..........
আমিঃ>>আব্বু এখনো তুমি এখানে? ঘুমাও নি??
বাবাঃ>>পৃথিবীর নিকৃষ্ট বাবার মধ্যে আমিই একজন, যে অন্যের মেয়ের জন্য নিজের ছেলেকে কোরবানি করে দিলাম??
আমিঃ...........(চুপ করে রয়েছি)
বাবাঃ>>তোর সাথে আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি.? এই বয়সে সবাই ঘুরাফেরা করতেছে আর আমি তোর কাঁধে সব চাপ তুলে দিলাম।
আবার তোর অমত থাকা স্বত্ত্বেও অবন্তীর সাথে তোর বিয়ে দিলাম। তুমি আমাকে মাফ করে দিস বাবা,,?? (হাত ধরে)
আমিঃ>>ধুর তুমি এগুলো কি বলো? তোমার যেটা ভালো মনে হয়েছে সেটাই করেছো??
বাবাঃ>>অবন্তীকে অনেক ভালোবাসিরে, মেয়েটাকে ছাড়া ঘরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে??
আমিঃ...........(চুপ করে রইলাম)
বাবাঃ>>যা, অনেক রাত হয়েছে। এবার ঘরে যা। মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে?
★আমি আর কোনো কথা না বলে নিচে চলে আসলাম। এসে রুমে চলে গেলাম। দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে দেখি ভাবি মানে অবন্তী ভাইয়ার একটা ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদতেছে।।
আমার ঠিক কি করা উচিত কিছুই বুঝতেছি না। আমি খাটের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর ভাবি, (না আর ভাবি বলবো না কারণ সে এখন আমার স্ত্রী!) বললো......
অবন্তীঃ>>জুয়েল.??
আমিঃ>>জ্বি..??
অবন্তীঃ>>তোমার সাথে কিছু কথা আছে??(চোখ মুছতে মুছতে)
আমিঃ>>হুম বলেন??
অবন্তীঃ>>আমি জানি তুমি ছেলেটা অনেক ভালো?? তোমার মতো ছেলেকে স্বামী হিসেবে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের বেপার। কিন্তু আমি তোমাকে কখনো স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না??
আমিঃ........ (অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম)
অবন্তীঃ>>তুমি তো জানো তোমার ভাইকে আমি কতটা ভালোবাসি?? তোমার ভাইয়ের জায়গায় আমি অন্য কাউকে জীবনেও কল্পনা করতে পারবো না??
আমিঃ...........( চুপ করে রইলাম )
অবন্তীঃ>>যেদিন প্রথম বউ সেজে তোমাদের বাসায় এসেছিলাম তখনই আমি ওয়াদা করেছি তোমার ভাইকে ছাড়া জীবনে আর কারো দিকে তাকাবো না। আমার থেকে তোমার ভাই আমাকে বেশি ভালোবাসতো। কতটা বাসতো সেটা হয়তো কল্পনাও করা যাবে না??
আমিঃ........ (এখনো চুপ)
অবন্তীঃ তুমি হয়তো আমাকে প্রশ্ন করতে পারো,,, আমি যদি অন্য কাওকে স্বামী হিসেবে না মানতে পারি তাহলে তোমাকে কেনো বিয়ে করলাম? ?
হ্যা এটার উত্তরও দিয়ে দিচ্ছি। তোমার সাথে বিয়ে না হলে অন্য কোথাও ঠিকই বাবা মা আমার বিয়ে দিয়ে দিতো। কিন্তু আমি এইখানে আব্বু আম্মুর আর তোমার কাছ থেকে যে ভালোবাসা, আদরযত্ন পেয়েছি অন্য কোথাও সেটা নাও পেতে পারি।
আমার মনের অবস্থাটা তোমরা একটু হলেও বুঝবে বাট অন্যরা বুঝবে না??
আমিঃ........( চুপ করে আছি)
অবন্তীঃ>>জানো জুয়েল আমি হচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভাগা, সুখ ঠিকই আসলো কিন্তু কপালে লেখা ছিলো না??
আমিঃ.........( চুপ করে আছি)
অবন্তীঃ>>তুমি আমাকে মাফ করে দিও। তোমার সুন্দর জীবনটা আমি নষ্ট করে দিলাম। জানো আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো তোমার জন্য খুব সুন্দর একটা মেয়ে দেখে তারপর তোমার সাথে বিয়ে দিবো। আমরা জাল হিসেবে নয় বোন হিসেবে থাকতাম। একবার চিন্তা করো কতো সুন্দর হতো আমাদের ফ্যামিলিটা??
আমিঃ.......(এখনো চুপ)
অবন্তীঃ>>তুমি প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারছি না?
আমিঃ>>অনেক রাত হইছে, ঘুমিয়ে পড়ুন?
এই কথা বলে বারান্দায় চলে গেলাম? এমন কিছু হবে আমি জীবনেও কল্পনা করিনি। আমি ভাবছি অন্য কোথাও অবন্তীর বিয়ে হয়ে গেলে সে সুখে থাকবে না। সব কিছু মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে।
★আমার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো অবন্তীর কোনো আফসোস থাকতো না। কিন্তু কি ভাবলাম আর কি হয়ে গেলো? আসলে সবকিছু সবার কপালে থাকে না।।
★আমার কপাল যে এতো খারাপ হবে আমি কখনো ভাবিনি। কতো সুখেই না ছিলাম আমি, কিন্তু আজ? সুখের চিহ্নও নাই,,, মনে মনে বাবার উপর রাগ হচ্ছে।
★উনার আবেগ রাখতে গিয়ে আমার জীবনটাই শেষ।। ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়তেছে। আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। ভাইয়ার কবরের কাছে যাবো। ঘড়িতে দেখলাম ১২ঃ০০টা বাজে। আমি কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।।
বাহিরে খুব সুন্দর চাঁদের আলো,,একা একা হাটতেছি। কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম? কবরের বেড়াটা ধরে তাকিয়ে রইলাম কবরের দিকে.?? ভাইয়া আর আমার স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো।।
★নিজেই নিজেই বলতে শুরু করলাম?? ভাইয়া কেমন আছিস? তোর কি সময় হবে একটু কথা বলতাম। জানিস তুই যে আমার মাথার উপর ছায়ার মতো ছিলি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। যখন যেটা চেয়েছি সেটাই তুই আমাকে দিয়েছিস। কিন্তু দেখ আমি কি হতভাগা তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম না।।
★তুই যখন ফ্যামিলি চালাইছিস রাজার মতো চলেছি আমরা। অথচ দেখ আমি কিভাবে চালাচ্ছি একবেলা খেলে পরের বেলা না খেয়ে থাকতে হয়?? বাবা মাকে আমি সুখে রাখতে পারছি না।
জানিস ভাই এখনো আমি কোনো জিনিস কিনলে তোর জন্যও কিনে রাখি?? আমি যেখানেই যাই না কেনো সব সময় যেনো মনে হয় তুই আমার পাশেই আছিস।
--ভাই তোর কি মনে আছে তুই যেদিন বাইক কিনেছিলি
চাবিটা আমার হাতে দিয়ে দিলি আর বললি বাইকটা আজ থেকে তোর, তুই আমার জন্য অনেক sacrifice করেছিস।। কিন্তু দেখ আমি কতো বড় হারামি! তোর জন্য তো কখনো sacrifice করিনি বরং তোর বউটাকে নিজের বউ করে নিয়েছি।।
ভাই বিশ্বাস কর,, আমি অনন্তীকে বউ হিসেবে কল্পনাও করিনি। তোর যাতে মনে কষ্ট না যায় সেজন্য আমি কখনো অবন্তীর দিকে খারাপ নজরেও তাকাই নি। তুই সব সময় আমাকে বলতি অবন্তীকে দেখে রাখতে কিন্তু দেখ আমি কতো বড় বেইমান দেখে রাখার নাম করে আমি নিজেই ওরে বিয়ে করে ফেলেছি।।
ভাই,এই ভাই,আর একবার আমাদের মাঝে আয়। আমি যে আর পারছি না। মা বাবাকেও কিছু বুঝতে দিতেছি না কারণ আমি যদি ভেঙ্গে পড়ি তাহলে ওদের কি হবে?
ভাই আমি তোর সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি তুই আমাকে মাফ করে দিস,,,,,
আর কোনো কথা মুখ দিয়ে আসছে না। শুধু ভাইয়ার চেহারাটা চোখে ভাসতেছে। আরো কিছুক্ষণ কবরের পাশে থেকে বাসার দিকে হাঁটা দিলাম।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি হয়তো একমাত্র ব্যক্তি যে বাসর রাতে নিজের বউয়ের সাথে না থেকে একটা কবরস্থানের মধ্যে রাত কাটিয়ে দিলো। বাসায় যাওয়ার পর দেখলাম অবন্তী এখনো নাক টেনে টেনে কাঁদতেছে।
ওর কান্না দেখে আমি বললাম.........
আমিঃ>>কি ব্যাপার আপনি এখনো ঘুমান নি?
অবন্তীঃ>>কোথায় গিয়েছিলে?
আমিঃ>>ছাদে,রাত অনেক হইছে ঘুমিয়ে যান?
★তারপর আমি একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল বেলায় ফজরের আজানের সময় ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি উঠে নামাজ পড়ার জন্য রেড়ি হচ্ছি।
অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে??তারপর বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে চলে গেলাম।
★নামাজ পড়ে এসে দেখি অবন্তীও উঠে গেছে?? আমি ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করে নিলাম। কাজে চলে যেতে হবে। পকেটে কোনো টাকা নাই, তাই হেটেই যেতে হবে। তাড়াতাড়ি না গেলে বসের ঝাড়ি খেতে হবে।।
গোসল করে রেড়ি হয়ে রুম থেকে বের হলাম? দেখি মা রান্না করছে আর অবন্তী সেগুলো সাজিয়ে দিচ্ছে। বাবা বসে বসে খবরে রকাগজ পড়তেছে। আমাকে এতো সকাল সকাল রেড়ি হতে দেখে বললো....
বাবাঃ>>কিরে তুই কই যাস?
আমিঃ>>আব্বু কাজে যাচ্ছি। কালকেও যাইনি,,,??
বাবাঃ>>কয়েকটা দিন বাসায় থাক। সবে মাত্র বিয়েটা হলো, আরো কয়েকদিন পরে যাবি??
আমিঃ>>না আব্বু, বাসায় তো তেমন কোনো কাজ নাই। সো বসে থেকে কোনো লাভ নাই??
বাবাঃ>>আচ্ছা শোন,,,,??
আমিঃ>>হুম বলো।??
বাবাঃ>>অবন্তীর তো সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। কলেজের তো ফিস,বেতন সব রয়ে গেলো??
আমিঃ>>আচ্ছা, আমি রাতে দিয়ে দিবো। কতো টাকা হয়েছে আমাকে বলে দিও। সেকি আজকে কলেজে যাবে?
বাবাঃ>>হুম যাবে.??
আমিঃ>>ওকে তাহলে কলেজে গিয়ে কত টাকা হয়েছে সেটা জেনে আমাকে কল দিয়ে বলার জন্য বলিও??
বাবাঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে??
আমিঃ>>ওকে আমি বের হচ্ছি??
★তারপর বের হয়ে গেলাম?? কি করবো বুঝতেছি না। অবন্তীর ফাইনাল পরীক্ষা,মানে তো আমারও ফাইনাল পরীক্ষা। কারণ অবন্তী আর আমি সেম ইয়ারেই পড়ি।। শুধু ক্যাম্পাসটা ভিন্ন।
যখন কলেজে নিয়মিত যাইতাম,, টাকা খরচ করতাম কত বন্ধুবান্ধব ছিলো। আর এখন টাকাও নাই বন্ধুও নাই। ফাইনাল এক্সাম চলে আসছে অথচ কেউ একটু আমাকে জানালোও না।
আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো অন্তত অনার্স শেষ করা। কিন্তু কিভাবে কি করবো? অবন্তীর টাকা দেওয়ার মতো টাকাও তো আমার হাতে নাই? প্রতিদিনের মতো গোডাউনে চলে গেলাম, বস সেখানে বসে আছে।।।
আমিঃ>>আসসালামু আলাইকুম বস??
বসঃ>>হুম কি অবস্থা মিঃ জুয়েল। কালকে কাজে আসো নি কেনো.??
আমিঃ>>বস একটু কাজ ছিলো??
বসঃ>>এতো কি কাজ তোমার? এতো কাজ হলে চাকরি করার কি দরকার?
আমিঃ.......(চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি)
বসঃ>>যাও আজকে সবগুলো মাল সেল করে আসবে। না হলে বেতন কেটে নিয়ে নেওয়া হবে।
আমিঃ......... (এখনো দাঁড়িয়ে আছি)
বসঃ>>কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কিছু
বলবা নাকি?
আমিঃ>>জ্বি বস,একটা কথা ছিলো।
বসঃ>>কি কথা??
আমিঃ>>আমাকে যদি এই মাসের টাকাটা অগ্রিম দিতেন উপকার হতো। আমার খুব দরকার.??
বসঃ>>তোমার কাজ করার দরকার নাই। আসছে উনি কাজ ছাড়া টাকা নিতে। ভালো লাগলে করো না হলে চলে যাও??
আমি আর কোনো কথা না বলে মাল গুলো নিয়ে বের হয়ে গেলাম??অবন্তীর পরীক্ষার টাকা কোথায় পাবো সেই চিন্তায় আমি শেষ। হাতের ঘড়িটা অনেক দামি ছিলো,ভাইয়া ইটালি থেকে নিয়ে আসছিলো। অনেক দামি একটা ঘড়ি। উপায় না পেয়ে সেটা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলাম।।
ভাইয়ার শেষ চিহ্নটুকুও বিক্রি করে দিলাম। কয়েকটা দোকানে মাল সেল দেওয়ার পর আয়মান (স্কুল বন্ধু) এর সাথে দেখা। সে আমাকে দেখেই বললো...........
আয়মানঃ>>কিরে জুয়েল! তুই এগুলো কি করিস?
আমিঃ>>আয়মান বন্ধু তুই? হায় রে কতো দিন পর দেখা। কি অবস্থা তোর?
আয়মানঃ>>আমি তো আছি। তুই এগুলো কি করিস?
আমিঃ>>চাকরি নিয়েছি।
আয়মানঃ>>ধুর ব্যাটা এটা কোনো চাকরি হলো? আর তোর বাবা ইনকাম করে ভাইয়া ইনকাম করে তুই এগুলো কেনো করিস। তোর তো রাজার হালে থাকার কথা..??
আমিঃ>>হুম ছিলাম বাট এখন প্রজা থেকেও আমার অবস্থা খারাপ??
আয়মানঃ>>কেনো কি হইছে?
আমিঃ.....(সব কিছু খুলে বললাম)
আয়মানঃ>>কি বলিস তুই? তো তোর পড়ালেখা?
আমিঃ>>শেষ করে দিলাম,আমি পড়তে গেলে অবন্তীর আর পড়া হবে না। দুই জায়গায় টাকা দেওয়ার মতো অতো টাকা আমার কাছে নাই??
আয়মানঃ>>তোর রেজিস্ট্রেশন করা আছে?
আমিঃ>>হুম, বাট সেটা দিয়ে আর কি হবে??
আয়মানঃ>>তোর পরীক্ষার টাকা আমি দিবো। তুই পরীক্ষা দে,,??
আমিঃ>>ধন্যবাদ বাট আমি টাকা নিতে
পারবো না??
আয়মানঃ>>কেনো??
আমিঃ>>দেখ আমার টাকা নাই এটা সত্য। কিন্তু কারো করুণা নেওয়ার মতো ছেলে আমি না। সেটা তুই ভালো করেই জানিস??
আয়মানঃ>>আজকে যদি তোর ভাই দিতো তাহলে কি বলতি ভাই তোর প্রতি করুণা করছে?
আমিঃ........( চুপ করে রইলাম)
আয়মানঃ>>মনে কর আমিই তোর ভাই। তাই টাকাটা দিচ্ছি। কিন্তু মনে রাখিস একেবারে দিচ্ছি না। তুই ভালো কোনো চাকরি পেলে আমার টাকা দিয়ে দিবি? (হাসতে হাসতে)
আমিঃ>>ওকে.??
আয়মানঃ>>চল কলেজে যাই, সবকিছু ঠিক
করে আসি??
আমিঃ>>না দোস্ত তুই যা। আমার এগুলো সেল করতে হবে। তুই গিয়ে আমার নামে টাকা জমা দিয়ে দিস??
আয়মানঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকিস, আমি আবার দেখা করবো??
আমিঃ>>ওকে তুই বাসায় আসিস??
এরপর আয়মান চলে গেলো? মনের মধ্যে একটু শান্তি আসলো। তারপর বাকি মাল গুলো বিক্রি করে বসের কাছ থেকে টাকা আর ঘড়ি বিক্রি করা টাকা নিয়ে টিউশনি করতে চলে গেলাম? সেখানেও অগ্রিম টাকা নিলাম। সব মিলিয়ে ৬ হাজারের মতো।।
আবারও হাঁটতে হাঁটতে বাসায় চলে আসলাম।রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে? আমি বাসায় গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আব্বুকে ডাকলাম??? আমার ডাক শুনে আব্বু আম্মু আর অবন্তী আসলো। আব্বু আমাকে বললো.....
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__০৪)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
এরপর আয়মান চলে গেলো? মনের মধ্যে একটু শান্তি আসলো। তারপর বাকি মাল গুলো বিক্রি করে বসের কাছ থেকে টাকা আর ঘড়ি বিক্রি করা টাকা নিয়ে টিউশনি করতে চলে গেলাম? সেখানেও অগ্রিম টাকা নিলাম। সব মিলিয়ে ৬ হাজারের মতো।।
আবারও হাঁটতে হাঁটতে বাসায় চলে আসলাম।রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে? আমি বাসায় গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আব্বুকে ডাকলাম??? আমার ডাক শুনে আব্বু আম্মু আর অবন্তী আসলো। আব্বু আমাকে বললো.....
বাবাঃ>>কিরে এতো দেরি হলো যে?
আমিঃ>>কাজের চাপ ছিলো। এই নাও?? (টাকা গুলো দিলাম)
বাবাঃ>>কি এখানে?
আমিঃ>>তোমার মেয়ের পরীক্ষার খরচ। ৬ হাজার আছে?
★বাবা টাকা গুলো হাতে নিয়ে অবন্তীকে দিয়ে দিলো। তারপর অবন্তী বললো....
অবন্তীঃ>>আব্বু একটা কথা বলতাম?
বাবাঃ>>হুম মা বল?
অবন্তীঃ>>জুয়েলের একা ইনকাম দিয়ে এতো কিছু করা সম্ভব না। তাই বলছিলাম কি আমিও একটা চাকরি করি। তাহলে মোটামুটি আমাদের পরিবারে একটু স্বচ্ছলতা আসবে??
আমিঃ>>এই পরিবারে আর কারো ইনকাম করার দরকার নেই। আমি এখনো বেঁচে আছি,, মরিনি।
যদি করার এতো ইচ্ছা থাকে তাহলে আমি মরার
পরে করিয়েন?
সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেলাম।
★আসল কথা হচ্ছে আমি চাইনা অবন্তী কোনো কাজ করুক। এমনিতে আমি সারাদিন বাহিরে থাকি। এখন যদি অবন্তীও বাহিরে চাকরি করে তাহলে আব্বু আম্মুকে কে দেখবে? বুড়া বয়সে দুজনেরই কষ্ট হবে।
★রাতে খেয়ে আমি বাহিরে থেকে ঘুরে আসলাম। রুমে এসে দেখি অবন্তী ভাইয়ার ছবিটা হাতে নিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখার পর ছবিটা রেখে দিলো। আমি বিছানা থেকে একটা বালিশ আর কাঁথা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর অবন্তী বলে উঠলো........
অবন্তীঃ>>জুয়েল একটা কথা বলতাম?
আমিঃ>>হুম বলেন?
অবন্তীঃ>>তুমি খাটে ঘুমাও, আমি ফ্লোরে ঘুমাই?? সারাদিন কাজ করে আসছো এখন ফ্লোরে ঘুমালে হয়তো ঘুম আসবে না??
আমিঃ>>আমি কাপুরুষ নই যে একটা মেয়ে মানুষকে নিচে ঘুমাতে দিয়ে আমি নিজে খাটে ঘুমাবো। আপনি ঘুমান, এমনিতে অনেক রাত হইছে??
আর কোনো কথা না বলে আমি ফ্লোরে ঘুমিয়ে গেলাম।। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি অবন্তী গোসল করে আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করতেছে? ভেজা চুলে একটু অন্যরকম সুন্দর দেখাচ্ছে।
আমি দেখেও না দেখার ভান ধরে শুয়ে রইলাম.? পরে মনে হলো যে পায়ে হেঁটে কাজ করতে হবে রোমান্টিক মুডে থাকার মতো সময় নাই।
এরপর উঠে ফ্রেশ হয়ে গোসল করে রেড়ি হয়ে বের হয়ে গেলাম। আজকেও অনেকগুলো মাল নিয়ে কভার ভ্যান ঠ্যালতে শুরু করলাম।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম,অবন্তী কেনো আমাকে মেনে নিচ্ছে না। যেখানে আমিই ওকে মেনে নিবো না সেখানে তার উলটো টা হচ্ছে? এভাবে দিন যেতে লাগলো, বিয়ে করেও আমার অবন্তীর সম্পর্ক ভাবি দেবরের মতোই রয়ে গেলো।।
মাঝে মাঝে অবন্তীর উপর অনেক রাগ হয়? কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না? আব্বু আম্মুর জন্য আজকে আমার এই অবস্থা।। দেশে মেয়ের অভাব পরেছে যে আমার সাথে ভাবিকে বিয়ে দিতে হলো। সারাদিন কাজ করে এসে আবার রাতে ফ্লোরে ঘুমনো..জীবনটা অসহ্য লাগছে।।।
পরের দিন কাজে গেলাম,,শরীরটা ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রাত পর্যন্ত কাজ করলাম। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম। গভীর রাতে আমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে.?ঠিক মতো চোখও মেলতে পারছি না।।
হটাৎ করে কপালে কারো নরম হাতের স্পর্শ পেলাম। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি অবন্তী ডাকতেছে.......
অবন্তীঃ>>জুয়েল,এই কি হইছে তোমার? এই রকম করছো কেনো??
আমার অবস্থা এতোই খারাপ যে..ওর সাথে কথা বলার মতো শক্তিও আমার নেই। অবন্তী আমাকে উঠিয়ে খাটে শুইয়ে দিলো। তারপর সারা রাত মাথায় পানি ঢাললো। এরপর আর কি কি করছে কিছু মনে নেই।জ্বরের ঘোরে কোনো কিছু অনুভব করতে পারিনি।
সকাল বেলায় অবন্তীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো??? তাকিয়ে দেখি আব্বু আম্মু সবাই বসে আছে? অবন্তী নাস্তা হাতে দাঁড়িয়ে আছে?? তারপর অবন্তী নিজের হাতে আমাকে নাস্তা খাইয়ে দিয়ে,মেডিসিন খাইয়ে দিলো?? এরপর আব্বু আমাকে বললো........
বাবাঃ>>এখন কেমন লাগছে?
আমিঃ>>ভালো। তোমরা খেয়েছো?
আম্মুঃ>>হুম, ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করিস না তাই এমন হলো?
বাবাঃ>>ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন রেষ্টে থাকতে?
আমিঃ>>ডাক্তার কখন আসলো?
বাবাঃ>>আরো আগে,তুই ঘুমে ছিলি। অবন্তী কল
দিয়ে আসতে বলেছে?
আমি আর কোনো কথা বললাম না। সেদিন আর কাজে যাইনি?? রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় অবন্তী আমাকে বললো.....
অবন্তীঃ>>সরি?
আমিঃ>>সরি কেনো?
অবন্তীঃ>>আমার জন্য আজকে তোমার এই
অবস্থা?
আমিঃ>>আরে ধুর এগুলো কি বলেন, আপনার
জন্য হবে কেনো?
অবন্তীঃ>>ফ্লোরে ঘুমানোর কারনে এমন হইছে?
আমিঃ......(চুপ করে আছি)
অবন্তীঃ>>প্লিজ তুমি খাটে ঘুমাও আমি নিচে ঘুমাচ্ছি?
আমিঃ>>দরকার নাই, আমার জন্মই হয়েছে নিচে ঘুমানোর জন্য। আমি থাকতে পারবো,সমস্যা নেই। আপনি ঘুমান?
অবন্তীঃ>>কিন্তু.?
আমিঃ>>কোনো কিন্তু না। নিচে ঘুমালে আপনারও
তো সমস্যা হতে পারে। তখন কি করবেন, সুতরাং
ঘুমিয়ে পড়ুন?
অবন্তী কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো,,বাট আমি বলার আর সুযোগ না দিয়ে উলটো পাশ হয়ে শুয়ে গেছি। ফকিন্নি এটা বলতে পারছে না যে আসো আমরা দুজনে খাটে ঘুমাই??
দুই জন খাটে ঘুমালে কি এমন সমস্যা হয়ে যাবে? আব্বু আম্মু বুঝে যাবে তাই অন্য রুমেও যেতে পারছি না। দেখবো অবন্তী ম্যাডাম,আপনি কতদিন এভাবে থাকতে পারেন। কয়েকদিন পর মোটামুটি সুস্থ। আবারও কাজে চলে গেলাম। এমন সময় আয়মানের সাথে দেখা হলো,,,
আয়মানঃ>>কিরে দোস্ত কি অবস্থা?
আমিঃ>>এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর?
আয়মানঃ>>ভালোই, তোর কাজ শেষ হতে
কতক্ষন লাগবে?
আমিঃ>>সন্ধ্যা হবে?
আয়মানঃ>>আচ্ছা কাজ শেষে দেখা করিস, অনেক দিন এক সাথে আড্ডা দেই না?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে?
কথাটা বলে আবার কাজে চলে গেলাম। বিকাল বেলায় আয়মানের সাথে দেখা করার জন্য গেলাম?? আয়মান আমাকে দেখে বললো...........
আয়মানঃ>>আসছিস?
আমিঃ>>হুমম,বল কি অবস্থা?
আয়মানঃ>>এই তো চলছে। এই জানিস আগামী
মাস থেকে তো পরীক্ষা?
আমিঃ>>কিহ! আগামী মাসে পরীক্ষা?
আয়মানঃ>>হুমম,তোর প্রিপারেশন কেমন?
আমিঃ>>হা হা হা, পরীক্ষাও তো দেওয়ার কথা ছিলো না। তুই তো টাকার ব্যবস্থা করে দিলি। আর বইও তো কিনিনি। প্রিপারেশন কেমন হবে তুই বল?
আয়মানঃ>>তোর ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেছে?
আমিঃ>>হুমম,বাস্তবতা কি জিনিষ এখন বুঝতেছি?
আয়মানঃ>>তোর ভাবি কেমন আছে?
আমিঃ>>ভাবি না, বউ আমার?
আয়মানঃ>>বউ মানে?
আমিঃ>>ভাবির সাথেই আব্বা আমার বিয়ে দিছে?
আয়মানঃ>>কিহ,কখন? আমাকে তো কিছুই
বলিস নি?
আমিঃ....... (পুরো ঘটনা শেয়ার করলাম)
আয়মানঃ>>এতো কিছু হয়ে গেছে অথচ আমাকে কিছুই জানালি না?
আমিঃ>>সরি দোস্ত, বলার মতো তেমন সুযোগ
ছিলো না??
আয়মানঃ>>তো অবন্তীর জন্য তো এটা প্লাস পয়েন্ট তবুও তোকে মেনে নিচ্ছে না কেনো?
আমিঃ>>জানিনা রে, হয়তো আমি ওর যোগ্য নই?
আয়মানঃ>>তো এখন কি করবি?
আমিঃ>>কি আর করা এভাবেই দিন যাবে?
আয়মানঃ>>শোন জুয়েল,এটা কোনো জীবন নয়, তোর
তো একটা ভবিষ্যৎ আছে। এভাবে তো তোর কিছুই হবে না??
আমিঃ>>তো এখন কি করবো?
আয়মানঃ>>অবন্তীর সাথে কথা বলে সবকিছু
ঠিকঠাক কর?
আমিঃ>>কোনো লাভ হবে না। ও আমাকে মেনে
নিতে পারবে না?
আয়মানঃ>>না নিলে ডিভোর্স দিয়ে দে। অন্য কোথাও বিয়ে হলে তখন ঠ্যালা বুঝবে??
আমিঃ>>ধুর তুই বেটা পাগল, ওরে রাখার জন্যই
আব্বু আমার সাথে বিয়ে দিছে ওর। আর তুই
বলছিস ডিভোর্স??
আয়মানঃ>>ভালো তো, তাহলে সারা জীবন সিঙ্গেল থাক,ভাবি আর দেবরের মতো জীবন কাটা?
শোন ভাই, জীবন অনেক কঠিন সেটা তুই আমার
থেকে ভালো জানিস??
আমিঃ>>সেটা ঠিক বাট অবন্তীকে ডিভোর্স দেওয়া তো দূরের কথা ডিভোর্স এর নাম মুখেও আনা যাবে না?
আয়মানঃ>>দেখ যা করবি ভেবে চিন্তে কর?? আবেগ দিয়ে জীবন চলে না?? আব্বা কি বললো আম্মা কি বললো এগুলোর দিকে কান দিয়ে নিজের মন কি
বলে সেটা দেখ? তোর লাইফ তোকেই হ্যান্ডেল করতে হবে বুঝলি??
আমিঃ>>হুম ঠিক??
আয়মানঃ>>তুই একটা কাজ কর?
আমিঃ>>কি?
আয়মানঃ>>তুই অবন্তীর সাথে সরাসরি এই ব্যাপারে কথা বল?
আমিঃ>>কোন ব্যাপার?
আয়মানঃ>>তোকে স্বামী হিসেবে মেনে নিবে নাকি নিবে না সেটা?? যদি না মেনে নিবে বলে তাহলে তুইও অবন্তীকে বলে দিবি, যে তুই ওরে ডিভোর্স দিয়ে দিবি?
আমিঃ>>এটা কি করে হয়?
আয়মানঃ>>সব হয়, তুই কথা বল?
আমিঃ>>এখন না। পরীক্ষাটা শেষ হোক, তারপর?
আয়মানঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে?
তারপর আয়মানের সাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম? এভাবেই দিন যাচ্ছে? অবন্তীর সাথে এখন আর দরকার ছাড়া তেমন একটা কথা বলি না? কেমন যেনো অস্বস্তি লাগে??
দেখতে দেখতে পরীক্ষার সময় চলে আসলো? আমি আর অবন্তী এক সাথেই পরীক্ষা দিলাম?? আমার পরীক্ষার কথা শুনে আব্বু আম্মু অনেক খুশি হলেন।
★পরীক্ষার কিছুদিন পর একদিন সকাল বেলায় অবন্তী বসে বসে মোবাইল টিপতেছে?? আব্বু আম্মু মামার বাড়িতে গেছে.? আমি মনে মনে ভাবলাম এটাই সুযোগ অবন্তীর সাথে এবার বোঝাপড়া টা হয়ে যাক? আমি অবন্তীর সামনে গেলাম। অবন্তী আমাকে বললো.........
অবন্তীঃ>>কিছু বলবে?
আমিঃ>>হুমম,,,?
অবন্তীঃ>>বলো কি বলবে?
আমিঃ>>আপনি কি চান?
অবন্তীঃ>>মানে?
আমিঃ>>মানে আপনি কি আমার কাছে থাকতে চান নাকি আমার কাছ থেকে মুক্তি চান, কোনটা?
অবন্তীঃ>>জুয়েল তোমার মাথা ঠিক আছে, এগুলো
কি বলছো?
আমিঃ>>আপনি উত্তর দেন। এখানে থাকলে কি
আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে?
অবন্তীঃ>>না,,,,?
আমিঃ>>তাহলে আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে
আপনার সমস্যা কোথায়?
অবন্তীঃ>>দেখো আমি তোমাকে আগেই বলেছি এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়?
আমিঃ>>যদি আপনার অন্য কোথাও বিয়ে হতো?
অবন্তীঃ.......... (চুপ করে আছে)
আমিঃআমার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে আপনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না, কিন্তু অন্য কোথাও হলে কি পারতেন? জীবনেও না? আমি কোনো দিন আপনাকে কোনো কথা বলিনি। তারমানে এই নয় যে সারাজীবন এভাবে থাকবো?
আমারওতো একটা লাইফ আছে। আমারও তো ইচ্ছা করে সুন্দর করে সংসার করতে??
আব্বু আম্মু আপনাকে অনেক ভালোবাসে, নিজের মেয়ের মতো দেখে। এখন যদি উনাদের বলি আপনাদের আদরের মেয়ে বিয়ের পরের দিন থেকে আমাকে ফ্লোরে রাখছে,তখন কি হবে চিন্তা করছেন??
অবন্তীঃ........ ( চুপ করে আছে )
আমিঃ>>আপনার সাথে বিয়েটা হয়েই আমার জীবনটা শেষ? সারাদিন এতো কাজ করার পরেও কোনো শান্তি নাই? আপনার সামনে দুটো রাস্তা খোলা আছে?
অবন্তীঃ..... (প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো)
আমিঃ হয় আপনি আমাকে মুক্তি দেন নাহয় আমি আপনাকে......??
পুরোটা বলার আগেই অবন্তী আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো.? আর কোনো কথা না বলে সে রুমে চলে গেলো। তারপর ঠাস করে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো।।
আমি সোফায় গিয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি অবন্তী ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে যাচ্ছে? থামাতে গিয়েও থামাইনি। যাক তাতে আমার কি? এসব আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না?
আমি তো ওরে জোর করে বিয়ে করিনি.? আমাকে যদি এতোই অপছন্দ করতো তাহলে বিয়ের দিন বলে দিলেই পারতো। সারাদিন একা বাসায় কাটিয়ে দিলাম? আব্বু আম্মু কেউ নেই? বাসাটা কেমন খালি খালি লাগতেছে। বিকাল বেলা বের হতেই দেখি........
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__০৫)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
আমি সোফায় গিয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি অবন্তী ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে যাচ্ছে? থামাতে গিয়েও থামাইনি। যাক তাতে আমার কি? এসব আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না?
আমি তো ওরে জোর করে বিয়ে করিনি.? আমাকে যদি এতোই অপছন্দ করতো তাহলে বিয়ের দিন বলে দিলেই পারতো। সারাদিন একা বাসায় কাটিয়ে দিলাম? আব্বু আম্মু কেউ নেই? বাসাটা কেমন খালি খালি লাগতেছে। বিকাল বেলায় বের হতেই দেখি আয়মান আমাদের বাসার সামনে বসে আছে.........
আমিঃ>>কিরে তুই এখানে?
আয়মানঃ>>কেনো আসতে পারি না?
আমিঃ>>আরে ধুর সেটা না, এই সময় তুই তো এদিকে আসিস না, সেজন্য জিজ্ঞেস করলাম?
আয়মানঃ>>তোকে অনেকবার কল দিতেছিলাম মোবাইল অফ দেখাচ্ছে, তাই চলে আসলাম?
আমিঃ>>আচ্ছা ভিতরে আয়?
তারপর আয়মানকে নিয়ে আবার বাসায় গেলাম।
আয়মানঃ>>কিরে কাওকে দেখছি না যে?
আমিঃ>>আব্বু আম্মু মামার বাসায় গেছে। আসতে
রাত হবে??
আয়মানঃ>>আর তোর বউ?
আমিঃ>>ও ওর বাপের বাড়িতে চলে গেছে?
আয়মানঃ>>কেনো?
আমিঃ>>আমার সাথে ঝগড়া করে?
আয়মানঃ>>তুই আবার কি করলি?
আমিঃ........(পুরো ঘটনা শেয়ার করলাম)
আয়মানঃ>>তো এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি,অবন্তীকে
রাখবি নাকি ডিভোর্স দিয়ে দিবি?
আমিঃ>>এখনো কিছু চিন্তা করিনি?
আয়মানঃ>>যেটা ভালো মনে হয় সেটা কর?
আমিঃ>>হুম?
★আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে, আয়মান চলে গেলো।
মাগরিবের পরে নামাজ পড়ে আর বাসায় আসিনি। ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম.?? কবরের পাশে বসে নিজে নিজেই বলতে শুরু করলাম.........
ভাইয়া কেমন আছিস? তোর এই অকৃতজ্ঞ ভাইটা তোর বউকে সুখে রাখতে পারছেনা রে.? তুই আমাকে মাফ করে দিস ভাই? আমি কি করবো বল,,এতো অল্প টাকা বেতনে ফ্যামিলি চালাতেও আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।।।
তুই জানিস ভাই আমি সকাল বেলা কখন নাস্তা করেছি ভুলে গেছি। শুক্রবার ছাড়া দুপুর বেলা আমার পেটে ভাত পড়েনা? শুধু পানি আর এক টুকরো পাউরুটি ছাড়া? জানিস ভাই আমি দুইটা শার্ট দিয়ে পুরো বছরটা কাটিয়ে দিয়েছি?? নিজের স্বাদ ইচ্ছা সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি?? নিজের কম্পিউটার,মোবাইল,ঘড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি ওদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।
জানিস ভাই আমি পড়া লেখাটাও শেষ করে দিয়েছি শুধু অবন্তীর জন্য।। কিন্তু দেখ সে আজকে আমাকে রেখে চলে গেছে।।
আসলে ভাই দোষটা আমারই।। আমি ওদের কাওকে ঠিক মতো সুখে রাখতে পারছি না।
কি করবো বল। সারাদিন এতো কাজ করে বাসায় এসে আমার ফ্লোরে থাকতে ইচ্ছা করে না?
আমার ইচ্ছে করে অন্তত রাতের বেলায় কেউ একজন আমার সাথে ভালো ব্যবহার করুক।ঠিক মতো আমার যত্ন নিক?? কিন্তু দেখ কপালটা এতোই খারাপ যে এই সামান্য চাওয়া টুকুও আল্লাহ কপালে রাখলো না।।
ভাই তুই আমাকে মাফ করি দিস। আমি কাউকে সুখে রাখতে পারছি নারে ভাই।। আর কিছু বলতে পারলাম না, ভাইয়ার স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। আরো কিছুক্ষণ ভাইয়ার পাশে থেকে,কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে গেলাম।।
বাসায় গিয়ে দেখি তালা আগে থেকেই খোলা। তারমানে আব্বু আম্মু এসে গেছে। দরজাও খোলা। দেখলাম বাবা মা চোখ মুখ লাল করে বসে আছে।। তাদেরকে দেখে আমি বললাম.........
আমিঃ>>আব্বু কখন আসছো?
আব্বুঃ>>তার আগে বল আমার মেয়ে কোথায়?
আমিঃ........(মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি )
বাবাঃ>>কি হলো কথা বলছিস না যে?
আমিঃ>>ওর বাবার বাড়িতে গেছে। অনেক দিন নাকি ওর আম্মুকে দেখেনি?
বাবাঃ>>বাবার বাড়ি গেছে নাকি তুই পাঠিয়েছিস?
আমিঃ>>আরে আজব আমি কেনো পাঠাবো? ও নিজেই গেছে?
আম্মুঃ>>অবন্তী আমাদের সবকিছু বলেছে। যা মেয়েটাকে নিয়ে আয়?
আমিঃ>>নিয়ে আসবো মানে? এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে? আর সে যখন নিজে থেকে গেছে আবার নিজে থেকেই আসবে?
আম্মুঃ>>এতো কথা কেনো বলিস। আর বিয়ের পর থেকে তো তুই ওই বাড়িতে যাস নি। এখন যা.??
আমিঃ>>এখন গেলে আসবো কখন??
বাবাঃ>>তোকে কি বলেছি এখন চলে আসতে। যা এখন যখন ভালো লাগবে তখন আসবি। পারলে
২ দিন থেকে আয়?
আমিঃ>>হুম আমি ওখানে দুই দিন থাকি আর এই দিকে আমার চাকরিটা চলে যাক??
বাবাঃ>>হইছে যা এখন?
কি আর করা রেড়ি হয়ে অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। রাত প্রায় ৯ঃ২০ওদের বাসায় গিয়ে পৌছালাম।
কলিংবেল দিলাম।।প্রায় ৫ মিনিট পর অবন্তীর মা মানে শাশুড়ি এসে দরজা খুলে দিলো।
আমিঃ>>আসসালামু আলাইকুম...
শাশুড়িঃ>>আরে বাবা তুমি! আসো আসো ভিতরে আসো??
ভিতরে গেলাম,,শ্বশুর বের হয়ে আসলো। আমি সালাম দিলাম.? এরপর কিছুক্ষণ কথা বললাম? তারপর উনি বললো..অবন্তী রুমে আছে, তুমি যাও বাবা।।।
আমি ওর রুমের কাছে গেলাম, দেখলাম অনেক গুলো মেয়ের সাথে বসে বসে হাসছে।।। ভাইয়া মারা যাওয়ার পর এই প্রথম অবন্তীকে এইভাবে হাসতে দেখছি।
এ মুহূর্তে আমার রুমে যাওয়া উচিত হবে কিনা ভাবছি।। রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলাম। কেউ একজন আমাকে দেখে ফেলেছে মনে হয়। তারপর দুলাভাই দুলাভাই বলে ডাকতে শুরু করলো? ভিতরে গেলাম দেখি অবন্তী আর ওর কয়েকটা কাজিন বসে বসে গল্প করছে।।
সবার সাথে পরিচিত হওয়ার পর এক এক করে সবাই চলে গেলো?? তারপর আমি গিয়ে সোফায় বসলাম?? কেউ কোনো কথা বলছি না??? নীরবতা ভেঙ্গে অবন্তী বললো.....
অবন্তীঃ>>কেনো আসছো?
আমিঃ>>আব্বু আম্মু আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে?
অবন্তীঃ>>তারা বলেছে সেজন্য এসেছো, নিজে
থেকে আসো নি?
আমিঃ........(চুপ করে রইলাম)
অবন্তীঃ>>আমি তো তোমাকে প্যারা দিই, আমি না থাকলে তুমি ভালোই থাকবে?
আমিঃ>>সরি,আসলে সকাল বেলায় আমার মাথা
ঠিক ছিলো না, তাই ভুলভাল বলে ফেলছি?
অবন্তীঃ>>সরি আমি যেতে পারবো না?
আমিঃ>>কেনো?
অবন্তীঃ>>এমনিতে তুমি অনেক কিছু করেছো আর দরকার নেই?
আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় অবন্তীর আম্মু এসে খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গেলো?? তারপর অবন্তী তখন বললো....
অবন্তীঃ>>খেতে আসুন??
আর কোনো কথা না বলে খেতে চলে গেলাম। বাহ!অল্প সময়ের মধ্যে এতো আইটেম।। জামাই আদর আসলেই অনেক মজার।। কিন্তু আমার মনের মধ্যে অন্য চিন্তা ঘুরতেছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলাম। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম। অনেকক্ষণ পর অবন্তী আসলো। আমি উঠে সোফায় চলে গেলাম।। অবন্তী আমাকে বলে উঠলো.........
অবন্তীঃ>>তুমি খাটে ঘুমাও?
আমিঃ>>আর আপনি?
অবন্তীঃ>>আমি সোফায় ঘুমাবো?
আমিঃ>>দরকার নেই, আপনি খাটে ঘুমান। সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠিয়েন। আমি আপনাকে বাসায় দিয়ে আমাকে আবার কাজে যেতে হবে?
অবন্তীঃ>>তোমারে বলেছিনা আমি যাবো না?
আমিঃ>>যাবেন না মানে?
অবন্তীঃ>>যাবো না মানে যাবো না?
আমিঃ>>তারমানে আপনার কাছে আব্বু আম্মুর ভালোবাসার কোনো দাম নেই?
অবন্তীঃ.........( চুপ করে আছে)
আমিঃ>>সকালে রেড়ি থাকবেন?
অবন্তীঃ>>বললাম তো আমি যাবো না?
ধুর না গেলে নাই। এতো অনুরোধের কিচ্ছু নাই। দেখি কয়দিন না গিয়ে থাকতে পারে? আমারও তো একটা পার্সোনালিটি আছে।
এরপর ঘুমিয়ে গেলাম.? সকালে কাওকে কিছু না বলে চলে গেলাম। বাসায়ও গেলাম না, সরাসরি কাজে চলে গেলাম? এর মধ্যে আব্বু কয়েকবার কল দিয়েছে কিন্তু ধরিনি।।
রাতের বেলা বাসায় গেলাম। আব্বু আম্মু দুজনে আমার উপর ফায়ার?? আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।।
আব্বু আমার রুমে আসলো আর বললো.........
বাবাঃ>>কিরে কি করিস?
আমিঃ>>কিছু না। কিছু বলবা নাকি?
বাবাঃ>>হুম অবন্তীর সাথে আমাদের কথা হয়েছে। ও কিছুদিন ওখানে থাকুক মন মানসিকতা ভালো হোক তারপর চলে আসবে?
আমিঃ>>সেটা আমাকে বললেই তো পারতো?
বাবাঃ>>হুম, আচ্ছা শোন?
আমিঃ>>হুম বলো..?
বাবাঃ>>অবন্তীর কোন ফ্রেন্ডের নাকি বিয়ে। যদি ওর হাতে কিছু টাকা দিতি?
আমিঃ>>তোমাকে কে বললো?
বাবাঃ>>সে নিজেই বলেছে। তোকে নাকি বলতে লজ্জা করছে তাই আমাকে বলেছে?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে, দিয়ে দিবো?
বাবাঃ>>বিয়েতো কয়েকদিন পর,কালকে দিতে
পারবি??
আমিঃ>>আচ্ছা দেখি?
তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম?? সকালে কাজে যাওয়ার আগে টিউশনিতে গেলাম?? পড়ানো শেষে টাকাটা অগ্রিম চেয়ে নিলাম.? টাকাটা নিয়ে আবার কাজে চলে গেলাম।।
দুপুর বেলা আমি নামাজ পড়ে বাহিরের একটা দোকানে পানির মধ্যে পাউরুটি চুবিয়ে খাচ্ছি। ঠিক তখনই দেখি একটা মেয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ভালো করে তাকিয়ে দেখি এটা অবন্তী.? তার কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে কোথাও যাচ্ছে মনে হয়?? বাসের জন্যই অপেক্ষা করছে।।
আমি তাদের দেখেও না দেখার ভান করে কভার ভ্যান এর চালককে তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বললাম? সে ভ্যান চালাচ্ছে?? আর আমি পিছন থেকে ঠ্যালতেছি।
রাতের বেলা বাসায় আসলাম। দরজা টোকা দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দিলো।। তাকিয়ে দেখি অবন্তী।
রীতিমতো একটা টাসকি খেলাম। কি ব্যাপার অবন্তীকে আমি নিয়ে আসতে গেলাম, আসলো না। কিন্তু এখন নিজে থেকেই এসে হাজির! অবশ্য ভালোই হয়েছে। সে কোনো কথা না বলে চলে গেলো। আমি দরজা লাগিয়ে রুমে গেলাম।এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই মিলে খেতে বসলাম। খাওয়ার এক পর্যায়ে বাবা বললো......
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__০৬)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
রাতের বেলা বাসায় আসলাম। দরজা টোকা দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দিলো।। তাকিয়ে দেখি অবন্তী।
রীতিমতো একটা টাসকি খেলাম। কি ব্যাপার অবন্তীকে আমি নিয়ে আসতে গেলাম, আসলো না। কিন্তু এখন নিজে থেকেই এসে হাজির! অবশ্য ভালোই হয়েছে। সে কোনো কথা না বলে চলে গেলো। আমি দরজা লাগিয়ে রুমে গেলাম।এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই মিলে খেতে বসলাম। খাওয়ার এক পর্যায়ে বাবা বললো......
বাবাঃ>>একটা কথা বলার ছিলো?
আমিঃ>>কি কথা?
বাবাঃ>>তোমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হইছে, এবার অন্তত ভবিষ্যৎ এর কথা কিছু চিন্তা করো?
আমিঃ>>কি বলছো কিছুই তো বুঝকে পারছি না?
আম্মুঃ>>বাসাটা খালি খালি লাগে, আমাদেরও তো ইচ্ছা করে নাতি/নাতনীর সাথে খেলতে?
আম্মুর কথা শুনে আমার গলায় ভাত আটকে গেলো?? কাশতে শুরু করলাম?
আর মনে মনে বললাম এখনো ফ্লোর থেকে খাটে উঠতে পারিনি।আর আম্মু বাচ্ছার চিন্তা করতেছে। আম্মু দিল্লী এখনো বহু দূর। তোমার কপালে নাতি নাই।।
কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলাম?? রুমে গিয়ে বসে আছি? একটু পর অবন্তী আসলো। আমার দিকে তাকিয়ে রইলো? দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে? তাই আমি তাকে বললাম........
আমিঃ>>কিছু বলবেন?
অবন্তীঃ>>হুম একটা কথা ছিলো?
আমিঃ>>বলুন?
অবন্তীঃ>>তুমি আরেকটা বিয়ে করো?
আমিঃ>>কিহ! বিয়ে করবো মানে? আপনার মাথা
ঠিক আছে?
অবন্তীঃ>>মাথা একদম ঠিক আছে। আব্বু আম্মু ঠিকই বলেছে, বাসাটা কেমন খালি খালি লাগে। উনাদের জন্য হলেও বিয়েটা করো??
আমিঃ>>বিয়ে করে লাভ কি হবে?
অবন্তীঃ>>তোমারও মনের আশা পূরণ হলো আর উনাদেরও নাতি নাতনী আসলো?
আমিঃ>>শুনেন বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয়, যে বললেই বিয়ে করে ফেলবো। বিয়ে মানুষের লাইফে একবারই হয়। বুঝলেন..???
অবন্তীঃ>>কিন্তু আমার লাইফে তো একাধিক।
সেটাকে কি বলবে?
আমিঃ>>শুনেন এটা একটা এক্সিডেন্ট। আপনি তো আর ইচ্ছা করে করেন নি,পরিস্থিতির স্বীকার। আর আমি মনে করি আপনার লাইফে ২য় বিয়ে হয়নি?
অবন্তীঃ>>হয়নি মানে, কি বলছো?
আমিঃ>>জ্বি আমি ঠিকই বলছি। বিয়ের পর থেকে আপনার আর আমার সম্পর্ক সেই দেবর/ভাবির
মতোই রয়ে গেলো। না আছে কোনো আন্ডারেস্টিং।
না আছে শেয়ারি আর না আছে কেয়ারিং??
আগে তো একটু হলেও হেসে হেসে কথা বলতেন
কিন্তু বিয়ের পর থেকে তো সেটাও নাই??
অবন্তীঃ>>আমি তো আব্বু আম্মুর জন্য বলতেছি?
আমিঃ>আম্মুর জাস্ট ইচ্ছা হয়েছে যে যদি একটা নাতি থাকতো তাহলে খেলতে পারতো। তার মানে এই নয় যে, ইচ্ছাটা পূরন করার জন্য আমাকে আবার বিয়ে করতে হবে?
আমারওতো অনেক ইচ্ছা ছিলো ভালোভাবে পড়ালেখা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবো?? মহা ধুমধামে বিয়ে করবো? ভাইয়া আর আমি মিলে অনেক সুন্দর একটা বাড়ি করবো?? প্রতিদিন ভালোমন্দ খাবো কিন্তু ইচ্ছা কি পূরণ হয়েছে, হয়নি.? কারণ একজন মানুষের সব গুলো ইচ্ছা পূরণ হয় না।।।
পড়ালেখা শেষ করা তো দূরের কথা পরীক্ষাটাও অন্যের সহযোগিতায় দিয়েছি। আর ভালো চাকরি সেটা তো এখন করতেছি। এই যে ভ্যান গাড়ি ঠ্যালতেছি। এর থেকে ভালো চাকরি আর কি হতে পারে? ভালো খাবার সেটা তো প্রতিদিনই খাচ্ছি। পানিতে পাউরুটি চুবিয়ে খাইতেছি এর থেকে ভালো খাবার আর কি হতে পারে?
আর বিয়ে সেটার কথা নাই বা বলি। এমন বিয়ে করেছি ধুমধাম তো দূরের কথা যাদের সাথে বড় হয়েছি,পড়া লেখা করেছি সেই বন্ধু গুলোরে এখনো বলতে পারিনি। যেখানে মানুষ বিয়ের পরে সুখি হয় ভালোভাবে থাকে সেখানে আমি খাট ছেড়ে ফ্লোরে ঘুমাই। সো একজন মানুষের সবগুলো ইচ্ছা পূরণ হয় না। আম্মু আব্বুরটাও হয়তো হবে না???
অবন্তীঃ....... (চুপ করে আছে)
আমিঃ>>আপনি যে বললেন আমাকে আবারো বিয়ে করতে! কোন মেয়ে আমার কাছে বিয়ে বসবে?
কোন বাপ তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে? কি আছে আমার, না আছে পড়ালেখা না আছে টাকা পয়সা। আর না আছে ভালো কোনো চাকরি? কিছুই নেই আমার?
তার উপর যদি শুনে আমি আরো এক বিয়ে করেছি সেখানে আমাকে মেয়ে তো দূরের কথা ঝাড়ুর বাড়ি ছাড়া কিছুই দিবে না।
আপনি বলছেন বিয়ে করার জন্য, বিয়ে করে খাওয়াবো কি? যে টাকা পাই সেটা দিয়ে নিজেও তো চলতে পারি না। এক বেলা খেলে অন্য বেলা না খেয়ে থাকি। প্রতিদিন হেটে হেটে কাজে যাই।
দুপুরে যেখানে সবাই লান্স করে সেখানে আমি পানিতে পাউরুটি চুবিয়ে খাই। সো এগুলো বাদ দেন??
অবন্তীঃ....... (আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের কোনে স্পর্শ পানি দেখা যাচ্ছে)
আমিঃ>>হুম এটা ঠিক যে,, আমি আপনার আর আব্বু আম্মুর সবগুলো চাওয়া পূরণ করতে পারছি না। যা যা দরকার সেগুলো দিতে পারছি না। কিন্তু কি করবো বলেন আমিও অনেক চেষ্টা করতেছি। কিছুই হচ্ছে না। হয়তো একদিন সব হবে। সুতরাং এসব আজাইরা কথা বাদ দিয়ে অন্য কথা থাকলে বলুন??
অবন্তীঃ>>তুমি ঘুমাও,অনেক রাত হইছে?
আমিঃ>>আপনার বান্ধবীর বিয়ে কখন?
অবন্তীঃ>>আগামী সপ্তাহে?
আমিঃ>>ওকে আমি আব্বুর কাছে ৫ হাজার টাকা দিবো। আপনি শপিং করিয়েন আর বিয়েতে কিছু একটা গিফট দিয়েন?
অবন্তীঃ>>লাগবে না। আমি বিয়েতে যাবো না?
আমিঃ>>যাবেন না কেনো?
অবন্তীঃ>>তুমি এতো টাকা দিয়ে দিলে ঘর
চলবে কিভাবে??
আমিঃ>>সেটা আপনার না জানলেও চলবে। এখন ঘুমান..?
আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম?? অবন্তী কিছু বলতে গিয়েও বলেনি। মাঝরাতে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো.? লাইট টা অন করে দেখি অবন্তী ভাইয়ার ছবি নিয়ে বসে আছে। আর কান্না করতেছে।
আমিঃ>>কি ব্যাপার আপনি ঘুমান নি এখনো?
অবন্তীঃ..... (চুপ করে আছে)
আমিঃ>>কি হইছে কথা বলেন না কেনো?
অবন্তীঃ>>না, ঘুম আসছে না। তুমি ঘুমাও.??
আমিঃ>>কেমনে ঘুমাবো, চিল্লাচিল্লির মধ্যে কি
ঘুমানো যায়?
অবন্তীঃ>>সরি তুমি ঘুমাও??
আমি আবারও ঘুমাতে গেলাম ঘুম আসছে না। অবন্তীর হাতে ভাইয়ার ছবিটা দেখে ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। ঘড়ি দেখলাম ২ঃ২০ টা বাজে। আমি উঠে বাসা থেকে বের হয়ে ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম।
বসে বসে কল্পনা করতে লাগলাম ভাইয়ার স্মৃতি গুলো। তারপর নিজে নিজে বলতে লাগলাম,,,,
ভাইয়া কেমন আছিস.? তোর কথা খুব মনে পড়ছে তাই চলে আসলাম। ভাইয়া তোর অবন্তীকে আমি সুখে রাখতে পারছিনা রে। কি করবো বল। সে এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে। সবকিছুর মাঝে তোর অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায়।
জানিস তুই খুব লাকি,অবন্তী তোকে এতোই ভালোবাসে যে তোর জায়গায় অন্য কাওকে বসানো তো দূরের কথা, কল্পনাও করে না?? জানিস ভাই সে এখনো তোর ছবি নিয়ে কান্না করে।।।
তুই চলে যাওয়ার পর আমাদের সবার মুখের হাসিটা চলে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক আছে তবুও কেমন জানি একা একা লাগে।??অবন্তী এখনো তোর পথ চেয়ে বসে থাকে। ওর ধারণা তুই আসবি।।
অবন্তী তোকে এতোটাই ভালোবাসে যে, আমাকে বিয়ে করার পরেও সে আমাকে বলছে অন্য কাওকে বিয়ে করে সংসার করতে। জানিস ভাই মাঝে মাঝে অবন্তীর উপর খুব রাগ হয়, ইচ্ছা করে ওরে অনেক বকা দিই কিন্তু ওর দিকে তাকালেই তোর কথা মনে পড়ে।।
জানিস ভাই আমারও খুব কষ্ট হয় তোরে ছাড়া থাকতে। চাইলেও ভেঙ্গে পড়তে পারি না আব্বু আম্মুর কথা চিন্তা করে।।। ভাই তুই যেমন আমাদের সব চাওয় পাওয়া মিটিয়ে ছিলি আমি তেমন পারছি না রে ভাই? ভাই তুই আমাকে মাফ করে দিস। আর দোয়া করিস আমার জন্য আমি যেনো ওদের সবার মুখে হাসি ফুটাতে পারি। >>>>>
★আরো কিছুক্ষণ সেইখানে থেকে বাসায় চলে গেলাম। তাহাজ্জুত এর নামাজ পড়ে নিলাম??তারপর ফজরের নামাজ পড়ে আবারও ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম.? কবর জিয়ারত করে বাসায় এসে রেড়ি হলাম। প্রতিদিনের মতো রওনা দিবো তখন অবন্তী আসলো....
অবন্তীঃ>>জুয়েল, একটা কথা বলতাম?
আমিঃ>>হুম বলেন?
অবন্তীঃ>>বিয়েতে তুমি যেতে পারবে?
আমিঃ>>আমি গিয়ে কি করবো। আপনার বান্ধবীর বিয়ে আপনিই যান?
অবন্তীঃ>>আমার অন্য বান্ধবীরা সবাই ওদের হ্যাসবেন্ডকে সাথে নিয়ে যাবে?
আমিঃ>>সমস্যা কি, আপনি একা যাবেন?
অবন্তীঃ>>প্লিজ না করো না?
আমিঃ>>আমার কাজ আছে, আপনি নিজেই
চলে যাবেন?
অবন্তীঃ>>তুমি না গেলে আমিও যাবো না। আমার নিজেরওতো একটা পার্সোনালিটি আছে?
আমিঃ>>তারমানে আপনার পার্সোনালিটি রক্ষা করার জন্য আমাকে নিয়ে যাবেন?
অবন্তীঃ>>না তোমাকে......( পুরোটা না বলতে দিয়ে )?
আমিঃ>>হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না। আমি
যাবো না?
এমন সময় আব্বু আসলো আর বলল........
আব্বুঃ>>কি ব্যাপার এতো চিল্লাচিল্লি কিসের?
অবন্তীঃ>>দেখো না আব্বু তোমার ছেলেকে আমার সাথে যাওয়ার জন্য বলছি সে নাকি যাবে না?
বাবাঃ>>কিরে সত্যি নাকি?
আমিঃ>>আব্বু আমার কথাটা শোনো,,,,?
বাবাঃ>>কোনো কথা শোনার দরকার নেই। তুই
বিয়েতে যাবি এটাই ফাইনাল?
কিছু বলতে গিয়েও পারলাম না?? এরপর সোজা বাসা থেকে বের হয়ে কাজে চলে গেলাম। রাস্তায় আয়মানের সাথে দেখা হলো.....
আয়মানঃ>>কিরে জুয়েল! দোস্ত কি অবস্থা?
আমিঃ>>আছি। তোর কি খবর?
আয়মানঃ>>সব ঠিকঠাক, কয়েকদিন পর তো
রেজাল্ট দিবে?
আমিঃ>>কোনদিন দিবে জানিস?
আয়মানঃ>>মনে হয় ৫ তারিখ। তুই জানিস না,,,?
আমিঃ>>না রে। তোর কাছেই শুনলাম,,, আগের মতো অনলাইনে থাকি না তেমন কোনো নিউজ জানা নেই?
আয়মানঃ>>আচ্ছা শোন তোর জন্য একটা সুখবর আছে?
আমিঃ>>কি?
আয়মানঃ>>একটা কোম্পানিতে কয়েক জন সুপার ভাইজার নিয়োগ দিবে, স্নাতক কমপ্লিট করা লাগবে। তোর রেজাল্ট ভালো আসলে তুই আবেদন করিস?
আমিঃ>>থ্যাংকস দোস্ত?
আয়মানঃ>>অবন্তী এসেছে?
আমিঃ>>হুম এসেছে?
আয়মানঃ>>তুই নিয়ে আসছিস নাকি নিজে
থেকেই এসেছে?
আমিঃ>>ও নিজে থেকেই এসেছে। আমি যখন ওর বাবার বাড়িতে গিয়েছিলাম ওরে আনতে তখন আসেনি। গত কাল নিজে থেকেই এসেছে?
আয়মানঃ>>তো এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি? ডিভোর্স দিবি?
আমিঃ>>জানি না, তবে আমার মনে হচ্ছে অবন্তী ঠিকই আমাকে মেনে নিবে কিন্তু একটু সময় লাগবে। ভাইয়ার স্মৃতি থেকে আমি নিজেই এখনো বের হতে পারিনি। আর অবন্তী এতো তাড়াতাড়ি বের হতে না পারাটাই স্বাভাবিক.???
আয়মানঃ>>হুম তাহলে তো ভালোই?
আমিঃ>>হুম। আচ্ছা দোস্ত তুই থাক আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। পরে বস হারামিটা ঝাড়ি দিবে?
আয়মানঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে যা?
তারপর কাজে চলে গেলাম। রাতে আসার সময় বেতন নিয়ে আসলাম?? বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আব্বুর হাতে টাকাগুলো দিলাম? আব্বু অবন্তীকে ডেকে টাকাগুলো দিলো। অবন্তী আব্বুকে বললো....
অবন্তীঃ>>আব্বু একটা কথা বলতাম?
আব্বুঃ>>হুম মা বল?
অবন্তীঃ>>আপনি একটু জুয়েলকে বলে দেন যাতে কালকে আমার সাথে একটু শপিং এ যায়। আমি
কিছু গিফট কিনবো?
আব্বুঃ>>যাবে সমস্যা কি? এই জুয়েল কালকে ওর সাথে বের হইছে?
আমিঃ>>বাবা আমার কাজ আছে,আমি পারবো না?
বাবাঃ>>পারবি না কেনো?
আমিঃ>>আজকেই বেতন দিয়েছে আর কালকে যদি কাজে না যাই, পরের দিন গেলে লাথি দিয়ে বের করে দিবে?
বাবাঃ>>তাহলে সন্ধ্যায় যাবি?
আমিঃ>>তখন টিউশনি করানো লাগবে?
বাবাঃ>>একদিন না করালে কিছু হয় না। কালকে ওরে নিয়ে শপিংয়ে যাবি এটাই ফাইনাল?
আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম। পরেরদিন কাজে গেলাম??সেখান থেকে এসে রেড়ি হয়ে অবন্তীকে নিয়ে বের হলাম?? বিয়ের পর এই প্রথম অবন্তীকে নিয়ে বের হইছি? একটা রিক্সা নিয়ে যাচ্ছি, আমি একটু সরে বসে আছি। অবন্তী আমাকে বললো...........
অবন্তীঃ>>তোমার কি আমার পাশে বসতে অস্বস্তি লাগছে?
আমিঃ>>না,,কেনো?
অবন্তীঃ>>তাহলে ওদিকে চেপে বসছো কেন? আরো ক্লোজ ভাবে বসো?
আমিঃ>>সমস্যা নেই, আমি ঠিক আছি?
তারপর দুজনেই চুপ,,নীরবতা ভেঙ্গে অবন্তী বললো.....
অবন্তীঃ>>জুয়েল?
আমিঃ>>হুম বলেন?
অবন্তীঃ>>তোমার কি মন খারাপ?
আমিঃ>>না কেনো?
অবন্তীঃ>>গোমড়া মুখ করে বসে আছো তাই?
আমিঃ>>ওহ, না আমি ঠিক আছি?
কথা বলতে বলতে শপিং মলের সামনে চলে আসলাম?অবন্তী অনেক গুলো গিফট দেখলো?? তারপর একটা চয়েস করে ওটা কিনলো? এরপর একটা শাড়ির দোকানে গেলাম??? আমাকে বললো শাড়ি পছন্দ করে দেওয়ার জন্য। দোকানের মধ্যে অনেক লোক তাই কিছু না বলে নীল রঙের একটা শাড়ি পছন্দ করে দিলাম।
ভাইয়ার সাথে যখন ওর বিয়ে হয়েছিলো, তখন একদিন অবন্তী ওদের বাসায় যাওয়ার সময় একটা নীল শাড়ি পরেছিলো। সেদিন অনন্তীকে অনেক সুন্দর লাগছিলো। সাথে ভাইয়া নীল পাঞ্জাবি পরেছিলো। দুজনকে অনেক সুন্দর লাগছিলো।।।
তাই অবন্তীর জন্য নীল শাড়িটাই পছন্দ করে দিলাম?? তারপর অবন্তী আমাকে বাহিরে দাঁড়িয়ে রেখে কোথায় যেনো গেছে,,অনেকক্ষণ পর আসলো.......
আমিঃ>>কোথায় গিয়েছিলেন?
অবন্তীঃ>>ওয়াশরুমে?
আমিঃ আর কিছু নিবেন নাকি রিক্সা ডাকবো?
অবন্তীঃ>>রিকশা নেওয়ার দরকার নেই, হেঁটে
হেঁটে যাবো?
আমিঃ>>পাগল নাকি আপনি হাটবেন তাও এই
রাতের বেলায়?
অবন্তীঃ>>কেনো রাতের বেলায় হাঁটলে
সমস্যা নাকি?
আমিঃ>>সেটা না?
অবন্তীঃ>>এতো কথা না বলে হাঁটো?
তারপর দুজনে হাটতে শুরু করলাম??খুব দারুণ একটা অনুভূতি কাজ করলো। রাস্তায় আমার আর ওর কোনো কথা হয়নি?
অনেকক্ষণ হাটার পর বাসায় গেলাম। তারপরে আমি ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম??কিছুক্ষন পর আমি আব্বু, আম্মু আর অবন্তী খাবার খেয়ে নিলাম.? রুমে গিয়ে সোফায় বসে আছি? কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো,এসে কিছুক্ষণ আনাগোনা করলো। তারপর বললো........
অবন্তীঃ>>জুয়েল! একটা কথা বলতাম?
আমিঃ>>হুম বলেন?
অবন্তীঃ>>এই নাও, এটা তোমার জন্য। (একটা প্যাকেট)?
আমিঃ>>কি এটা?
অবন্তীঃ>>খুলে দেখো?
আমি প্যাকেট টা খুললাম? দেখলাম একটা পাঞ্জাবী? অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম....
আমিঃ>>এটা কখন কিনলেন?
অবন্তীঃ>>এতো কিছু তোমার না জানলেও চলবে। হলুদের দিন তুমি এইটা গায়ে দিবে?
আমিঃ.... (হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম)?
অবন্তীঃ>>মনে থাকে যেনো?
আমি আজকেও একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে কারো নরম হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি জেগে গেলাম কিন্তু না জাগার ভান ধরে রাখলাম।। যাতে কেউ কিছু না বুঝতে পারে।
আমি আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে, মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর কান্না করতেছে?? আমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে শুয়ে আছি, ভালোই লাগতেছে। বিয়ের পর এই প্রথম ওর স্পর্শ পেলাম।।
★কিছুক্ষণ পর আমি চোখ বন্ধ করে বললাম..."অনেক হইছে,,এবার ঘুমিয়ে পড়ুন?? অবন্তী আমার কথায় অবাক হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে খাটে চলে যায়। আমি ওপাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল বেলায় রেড়ি হয়ে কাজে যাচ্ছি এমন সময় আব্বু আর অবন্তী আমার সামনে পথ আটকে দাঁড়ালো??অবন্তী আমাকে বললো........
বাবাঃ>>কিরে জুয়েল কই যাস?
আমিঃ>>কই আবার, কাজে?
বাবাঃ>>কালকে তোকে কি বললাম?
অবন্তীঃ>>আমার বান্ধবীর বিয়ে যে, সে কথা বলিনি?
আমিঃ>>হুম মনে আছে?
বাবাঃ>>তাহলে কাজে কেন যাচ্ছিস?
আমিঃ>>সারা দিন বাসায় থেকে কি করবো? বিয়েতে যাবো সন্ধ্যায়?
বাবাঃ>>সন্ধ্যায় গেলে খাবি কখন?
আমিঃ>>আরে ধুর আজকে বিয়ে না। আজকে গায়ে হলুদ। সো সন্ধ্যায় গেলে হবে?
অবন্তীঃ>>প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসিও?
★আমি আর কিছু না বলে বের হয়ে গেলাম? সারাদিন কাজ শেষ করে বিকাল বেলায় বাসায় চলে আসলাম। এসে দেখি অবন্তী আগে থেকে রেডি। আমিও ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম?? অবন্তী একটা ব্যাগে জামা কাপড় নিয়ে নিলো??? তারপর আব্বু আম্মুকে বলে বের হয়ে গেলাম।
★একটা CNG নিলাম। অনেকক্ষণ পর বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। চারপাশ খুব সুন্দর করে সাজানো।বাড়িতে গেলাম, অবন্তীকে দেখেই ওর ফ্রেন্ড জড়িয়ে ধরলো। তারপর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
এরপর একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বললো সেখানে যেতে। আমি ওখানে গিয়ে বসলাম? রাতের বেলায় একা একা ভালো লাগছে না? এদিক ওদিক হাঁটতেছি। এমন সময় কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম। তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে? আমার দিকে না তাকিয়েই বলতে লাগলো"""ওই মিয়া চোখে দেখেন না,, দিলেন তো শাড়িটার ১২ টা বাজিয়ে"
তারপর আমার দিকে তাকালো, আমি তো ওরে দেখেই একটা টাসকি খেলাম। এটা যে লিমা,আমার ক্লাসমেট। আমাকে দেখেই বলতে লাগলো....
লিমাঃ>>আরে জুয়েল! তুই?
আমিঃ>>কিরে তুই, কি অবস্থা তোর?
লিমাঃ>>আমি তো ভালোই আছি তোর কি খবর?
আমিঃ>>আছি আলহামদুলিল্লাহ?
লিমাঃ>>তো বিয়েতে আসলি নাকি?
আমিঃ>>হুম, তুইও কি সেম?
লিমাঃ>>হুম, আমার মামাতো বোনের বিয়ে। মাহি (পাত্রী) তোর কি হয়?
আমিঃ>>অবন্তীর বান্ধবী?
লিমাঃ>>অবন্তী কে?
আমিঃ>>তোর ভাবি,,,,,?
লিমাঃ>>কিহ তুই বিয়ে করেছিস? হারামি একটু বললিও না??
আমিঃ>>সরি রে হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেছে?
লিমাঃ>>হুম হইছে। চল আমার কাজিন গুলার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই?
আমিঃ>>সবার সাথে তো পরিচিত হলাম?
লিমাঃ>>অবন্তীর জামাই হিসেবে হইছিস,আমার বন্ধু হিসেবে তো আর হসনি। চল তো,,,,?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে চল?
তারপর লিমার সাথে গেলাম।। সবার সাথে আবারও পরিচিত হলাম। তারপর আমি আর লিমা কলেজের কথা গুলো মনে করে খুব হাসাহাসি করতেছি।
★অন্যদিকে চোখ পড়তেই দেখি অবন্তী তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি ওরে দেখে আরো জোরে হাসতে শুরু করলাম? অবন্তী হটাৎ করে এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।। আর বললো.........
অবন্তীঃ>>ওই এখানে কি করো?
আমিঃ>>দেখেন না কি করি? আড্ডা দিচ্ছি??
অবন্তীঃ>>আড্ডা দিচ্ছো মানে? ওই মেয়েটা কে?
আমিঃ>>ও আমার বেস্টফ্রেন্ড?
অবন্তীঃ>>কিহ! তোমার মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড আছে? কই আগে তো কখনো শুনিনি?
আমিঃ>>আপনাকে কেনো সবকিছু বলবো?? আর আমার পার্সোনাল ব্যাপার আমার কাছেই থাকবে?
অবন্তীঃ>>আচ্ছা খেয়ে যাও?
আমিঃ>>আপনি খেয়ে নেন। আমি ওদের সাথে খাবো?? (একটু ভাব নিলাম)
অবন্তীঃ>>কাদের সাথে?
আমিঃ>>আমার ফ্রেন্ড আর ওর কয়েকজন বান্ধবী?
অবন্তী কিছু না বলে রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতেছি এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন টোকা দিলো। তাকিয়ে দেখি লিমা.....
লিমাঃ>>কিরে তোর বউ তো রেগে গেলো?
আমিঃ>>হা হা হা, নাহ রাগে নি?
লিমাঃ>>জুয়েল ভাই তুই আর আমার সাথে কথা
বলিস না। পরে দেখবি তোরে চিবায় খাইবো?
আমিঃ>>শোন তোকে একটা অভিনয় করতে হবে?
লিমাঃ>>কি অভিনয়?
আমিঃ.......(সব শিখিয়ে দিলাম)
লিমাঃ>>না ভাই আমি পারবো না। তুই অন্য কাওকে বল। তোর বউ যে রাগি পরে আমার মাথা পাটাবে?
আমিঃ>>প্লিজ না করিস না, তুই ছাড়াতো এতো ক্লোজ কোনো ফ্রেন্ড নাই আমার?? (একটু পাম দিলাম)
লিমাঃ>>আচ্ছা দেখি কি করা যায়?
আমিঃ>>দেখি না কাজটা তোকেই করতে হবে। আর তোর সাথে আরো কয়েকটা মেয়ে নিয়ে নে.?
লিমাঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে?
এরপর আমরা আমাদের প্ল্যান অনুসারে কাজ করতে শুরু করলাম। লিমা আমার হাত ধরে মাহির (পাত্রী) রুমে আসলো?? অবন্তীও সেখানে ছিলো? আমাদের এই অবস্থায় দেখে অবন্তীর চোখ কপালে উঠে গেলো।
আমি আর লিমা কথা বলতেছি।। লিমা হাসতে হাসতে বার বার আমার গায়ে পড়তেছে। এদিকে অবন্তী রেগে লাল হয়ে আছে? মনে মনে বললাম জানু তোমার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করতেছি।
তারপর আমি,লিমা আর ওর কয়েকটা কাজিন মিলে আড্ডা দিচ্ছি আর হাসাহাসি করতেছি?? এমন সময় দেখি অবন্তী দূর থেকে আমাকে ফলো করতেছে।
রাতে খাবার খাওয়ার সময় আমি আর লিমা এক সাথে বসলাম?? অবন্তীও আমাদের টেবিলে ছিলো?? আরো কয়েকজন মেয়ে ছিলো।।
লিমাঃ>>>জুয়েল দোস্ত তোর মনে আছে কলেজে থাকতে তুই আমাকে খাইয়ে দিতি আমিও তোকে খাইয়ে দিতাম?
ওর কথাটা শুনে নিজেই আবুল হয়ে গেলাম?? অভিনয় করতে বলেছি,কিন্তু এমন অভিনয় করবে আমি জীবনে কল্পনাও করিনি।
আমিঃ>>হুম মনে থাকবে না কেনো তুই কতবার যে আমার আঙ্গুলে কামড় দিছস, দিন গুলো কি এতো সহজে ভুলতে পারি?
লিমাঃ>>মনে আছে আমার জন্মদিনে আমাকে খুব সুন্দর একটা গিফট দিয়েছিলি?
আমিঃ>>হুম, তোর জন্মদিন এর তারিখ কখনো
আমি ভুলি না?
অবন্তী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। চোখের মধ্যে পানি টলোমলো করতেছে। আমাদের আরো কথাবার্তা দেখে সে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।
তারপর সবাই খেয়ে উঠলাম। অন্য মেয়ে গুলো জানে আমাদের প্ল্যান সম্পর্কে।।
তারপর বাইরে চলে আসলাম.? বিয়ে বাড়িতে চিৎকার চেচামেচির জন্য কোনো কথা ভালোভাবে শোনা যাচ্ছে না। হুট করে লিমা আমাকে বললো.........
লিমাঃ>>জুয়েল তোর বউ কিন্তু তোকে অনেক ভালোবাসে?
আমিঃ>>কচু, তুই তাহলে কিছুই জানিস না। আচ্ছা তোর কথা বল, বিয়ে করেছিস?
লিমাঃ>>করেছি আবার করিও নি?
আমিঃ>>মানে?
লিমাঃ>>বিয়ে ঠিক হয়ে আছে?? কিন্তু উনি দেশের বাহিরে। এমনিতে মোবাইলে সারাদিন কথা হয়।
বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাবে তো তাই সবকিছু ঠিকঠাক করতে একটু সময় লাগছে?
আমিঃ>>বাহহ! তাহলে দেশের বাইরে চলে যাবি। দেখিস আমাদের আবার ভুলিস না?
লিমাঃ>>একটা মাইর দিবো, ভুলবো কেনো। আচ্ছা তোর ভাই কোন দেশে থাকেরে?
ভাইয়ার কথা বলার কারনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো,,,,
আমিঃ>>ভাইয়া এমন এক দেশে থাকে যেই দেশে
গেলে কেউ আর ফিরে আসে না??
লিমাঃ>>মানে?
আমিঃ.....(পুরো ঘটনা বললাম)
লিমাঃ>>সরি দোস্ত আমি জানতাম না?
আমিঃ>>ইটস ওকে?
লিমাঃ>>তারপর তুই তোর ভাবি মানে অবন্তীকে
বিয়ে করে নিলি?
আমিঃ>>হুমম??
লিমাঃ>>ভালো করছিস, মেয়েটা যথেষ্ট ভালো। তো এখন কি করিস?
আমিঃ>>তেমন কিছু না, চাকরি নাই। বেকার
ঘুরতেছি?
সত্যিটা বললাম না, কারণ যতোই হোক না কেনো একটু হলেও মান ইজ্জত আছে আমার?
লিমাঃ>>কি বলিস তাহলে ফ্যামিলি কে দেখে?
কিভাবে চলে.????
আমিঃ>>আল্লাহ চালাইতেছে কোনো ভাবে?
লিমাঃ>>এই আমাদের কোম্পানির জন্য কয়েক জন লোক দরকার। তুই চাকরি করবি,আমি বাবাকে বলে দিলে তোর কোনো ইন্টার্ভিউ নিবেনা সরাসরি চাকরি দিয়ে দিবে??
আমিঃ>>কিন্তু...?
লিমাঃ>>কিন্তু কি?? বেতনের কথা বলতেছিস তো??আচ্ছা বেতনও বাড়িয়ে দিবে। তুই তোর সার্টিফিকেট জমা দিয়ে দিস?
আমিঃ>>থ্যাংকস দোস্ত?
লিমাঃ>>আরে থ্যাংকস এর কি আছে? চাকরি হয়ে গেলে ট্রিট দিবি?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে দিবো?
মনে মনে ভাবতেছি..এই মেয়েটার সাথে কলেজে তেমন একটা কথা বলতাম না, জাস্ট হাই/হ্যালো ছাড়া। আর আজকে সেই আমাকে চাকরি দিয়ে দিলো। আসলেই উপরওয়ালা কাকে কখন প্রয়োজনে এনে দেয় বলা যায় না। তারপর একটি মেয়ে এসে আমাদের যেতে বললো, হলুদ নাকি শুরু হয়ে গেছে। লিমা আমাকে বললো.......
লিমাঃ>>এই শোন?
আমিঃ>>হুম বল?
লিমাঃ>>এবার তোর বউকে আসল ডোজ দিবো?
আমিঃ>>কি সেটা?
লিমাঃ>>তুই শুধু দেখ?
তারপর লিমা আমার হাত ধরে স্টেজের সামনে গেলো। অবন্তী আমাদেরকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।
গায়ে হলুদ শুরু হলো,,সবাই গায়ে হলুদ দিচ্ছে?? সব শেষে আমি আর অবন্তী রয়ে গেলাম। তারপর দুজনে এক সাথে স্টেজে উঠলাম,, মাহিকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম?? মাহি আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো। আমিও দিলাম। অবন্তীও দিলো??তারপর আমি একটা মিষ্টি অবন্তীর মুখের কাছে নিলাম।
সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর মিষ্টিটার কিছু অংশ খেলো? তারপর সেও আমাকে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলো।
ভিতরে ভিতরে আমার মনটা নাচানাচি করতেছে এমন সময় লিমা একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলো,সে স্টেজে উঠে অনেক গুলো হলুদ নিয়ে আমার পুরো মুখে মেখে দিলো।।। আমিও অবন্তীকে দেখিয়ে লিমাকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম।
লিমার কাজিন গুলা এসে আমার মাথা থেকে শুরু করে হাত মুখ সব জায়গায় হলুদের পুরো অংশ ঢেলে দিলো।
অবন্তী আমাদের এই অবস্থা দেখে উঠে চলে গেলো?? তারপর বাইরে এসে আমি আবারও লিমার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় অবন্তী কোথায় থেকে এসে আমার পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো?? তারপর ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।।
এর পরেই তো......
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__০৭)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
অবন্তী আমাদের এই অবস্থা দেখে উঠে চলে গেলো?? তারপর বাইরে এসে আমি আবারও লিমার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় অবন্তী কোথায় থেকে এসে আমার পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো?? তারপর ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।।
এর পরেই তো......
আমিঃ>>কি ব্যাপার এই ভাবে ধরে নিয়ে আসলেন কেনো??
অবন্তীঃ>>ওই মেয়েকে দেখলেই কি কথা বলতে
মন চায় হুমম??
আমিঃ>>তাতে আপনার সমস্যা কোথায়??
অবন্তীঃ>>আছে অনেক সমস্যা। তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না?
আমিঃ>>কেনো?
অবন্তীঃ>>সেটা না জানলেও চলবে?
আমিঃ>>আমার যেহেতু কেউ নেই সেহেতু আমি অন্যদের সাথে অবশ্যই কথা বলবো?
অবন্তীঃ>>না তুই কারো সাথে কথা বলতে পারবি না। আর যেনো ওই মেয়েটার সাথে না দেখি?
আমিঃ>>আপনার সমস্যা কোথায়?
অবন্তীঃ>>বলছি না কথা না বলতে?
আমিঃ>>যদি বলি?
অবন্তীঃ>>তাহলে আমি আব্বুকে কল দিয়ে বলবো তুমি আমাকে চড় মেরে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছো?
আমিঃ>>কিহ! আপনি এই কথা বলতে পারবেন?
অবন্তীঃ>>হুমম। এখন পাঞ্জাবী টা খুলে শুয়ে পড়ো?
আমিঃ>>আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
অবন্তীঃ>>পরে দেখা যাবে। তুমি শুয়ে পড়ো?
তারপর আমি পাঞ্জাবী টা খুলে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আপাতত কেউ নাই,, একা একা শুয়ে আছি।
শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি অবন্তী এমন রাগ দেখালো কেনো। সেও কি আমাকে ভালোবাসে নাকি? ধুর এটা হয় না। সে আমাকে এখনো দেবরের মতোই দেখে। বুঝতেছি না কেনো যে অবন্তী আমাকে মেনে নিচ্ছে না?? আল্লাহ-ই ভালো জানে।
>ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না।? সকালে ঘুম থেকে উঠতে যাবো এমন সময় বুকের উপর ভারি কিছু একটা অনুভব করলাম।তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে।
এটা কি হলো?? আমি তো নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছি না।। বাহ! এটা তো মেঘনা চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো?? আমি উঠতে গিয়েও উঠিনি,, এই প্রথম অবন্তী আমাকে স্পর্শ করলো তাও এমন একটা মুহূর্ত।। আমি কেনো পৃথিবীর কোনো পুরুষই এই অবস্থা থেকে উঠতে চাইবে না।
আমি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলাম?? দেখি অবন্তী কি করে। কিছুক্ষণ থাকার পর অবন্তী উঠলো, উঠে শাড়ি ঠিক করে নিলো। আমি যেনো না বুঝতে পারি তাই সে আস্তে করে রুম থেকে চলে গেলো।।
আমি মনে মনে হাসতেছি। বালিকা নিজের জামাইয়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাইছো সেটা দেখলে সমস্যা কোথায়। যাক কিছুক্ষণ পর সে আবার রুমে আসলো। এসে আমাকে বললো.........
অবন্তীঃ>>জুয়েল! এই জুয়েল??
আমি ঘুমের ভান ধরে বললাম....
আমিঃ>>হুমম,,,?
অবন্তীঃ>>এই উঠো, অনেক দেরি হয়ে গেছে?
আমিঃ>>আপনি যান, আমি আরেকটু ঘুমাই?
অবন্তীঃ>>না আর ঘুমাতে হবে না। উঠো উঠো। একটু পর বর পক্ষ এসে যাবে?
আমিঃ>>আচ্ছা উঠছি। এই একটা কথা বলেন তো?
অবন্তীঃ>>কি?
আমিঃ>>আপনি কালকে রাতে কোথায় ছিলেন?
অবন্তীঃ>>মাহির সাথে। কেনো কিছু হয়েছে?
আমিঃ>>না এমনি। কালকে কেউ একজন আমার পাশে শুয়েছিলো,,মনে হয় লিমা হবে??(রাগানোর জন্য)
অবন্তীঃ>>কিহ, আবারও অই মেয়েটার কথা
বলছো? (রাগ দেখিয়ে)
আমিঃ>>তাহলে কে হতে পারে? আপনি কাউকে দেখেছেন?
অবন্তীঃ>>এই নাও তোমার ব্রাশ তাড়াতাড়ি
ফ্রেশ হয়ে আসো?
এ কথা বলে অবন্তী এক রকম চোরের মতো রুম থেকে চলে গেলো। আমি বসে বসে হাসছি।। ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। বাহিরে গিয়ে লিমার সাথে দেখা হলো। লিমা আমাকে দেখে বললো............
লিমাঃ>>কিরে তুই বেঁচে আছিস?
আমিঃ>>তোর কি মনে হয়?
লিমাঃ>>আমার তো মনে হয় তুই মারা গেছিস। তোর আত্বা ভুত হয়ে ঘুরতেছে?
আমিঃ>>হাহাহা হটাৎ করে এ কথা বললি কেনো?
লিমাঃ>>কালকে রাতে তোর বউ যেই ভাবে তোরে
ধরে নিয়ে গেছে সেটা দেখে মনে হইছে যে তুই
আজকে শেষ??
আমিঃ>>আরে না, তেমন কিছু না?
লিমাঃ>>তোকে তো মনে হয় ভালোবাসে?
আমিঃ>>আরে না,,অবন্তী নিজেও ঠিক মতো কথা
বলে না,অন্য মেয়েদের সাথেও কথা বলতে দেয়না। একটা প্যারার মধ্যে আছি??
লিমাঃ>>হুম বুঝছি। আচ্ছা আর কয়েকটা ডোজ
দিবো তোর বউকে?
আমিঃ>>আর দরকার নেই দোস্ত। যেগুলো দিয়েছিস সেগুলোতেই আমার ১২ টা বাজছে। আর দিলে কি করবে আল্লাহ-ই জানে?
লিমাঃ>>সমস্যা নেই, হালকা করে একটা
দিয়ে দিবো?
আমিঃ>>আচ্ছা দিস?
এমন সময় অবন্তী কল দিলো আর বললো.......
অবন্তীঃ>>এই জুয়েল কই তুমি?
আমিঃ>>আছি বাহিরে?
অবন্তীঃ>>বাহিরে কি? দরকারের সময় খুঁজে পাই না?
আমিঃ>>কি জন্য কল দিছেন বলুন?
অবন্তীঃ>>তাড়াতাড়ি রুমে আসো?
আমিঃ>>কেনো?
অবন্তীঃ>>ধুর তুমি এতো কথা বলো কেনো? আসতে বলছি আসো?
আমিঃ>>আচ্ছা আসতেছি?
কলটা কেটে দিলাম। লিমা আমাকে বললো..........
লিমাঃ>>কিরে কে কল দিলো?
আমিঃ>>তোর ভাবি,রুমে যেতে বলছে?
লিমাঃ>>মনে হয় আমাকে তোর সাথে দেখেছে। যা তোর খবর আছে?
আমিঃ>>তুই দাঁড়া আমি একটু আসছি?
লিমাঃ>>যা বেঁচে থাকলে দেখা হবে। ওপাড়ে
ভালো থাকিস বন্ধু হাহাহা..?
আমিঃ>>ফাজিল,থাক আমি আসছি?
তারপর আমি রুমে গেলাম?? অবন্তীকে দেখেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। শাড়ি একটাকে উল্টা পাল্টা করে পড়ে আছে। আমি অবন্তীকে বললাম......
আমিঃ>>কি ব্যাপার আপনার এই অবস্থা কেনো?
অবন্তীঃ>>এই তুমি আসছো??
আমিঃ>>হুম। কি হইছে?
অবন্তীঃ>>ধুর একা একা শাড়ি পড়া যায় নাকি? দরজাটা লাগিয়ে এদিকে আসো?
আমিঃ>>দরজা কেনো লাগাবো?
অবন্তীঃ>>তো কি দরজা খুলেই শাড়ি পরবো? যাও লাগিয়ে আসো?
আমি গিয়ে দরজা লাগিয়ে আসলাম। অবন্তী আমাকে বললো........
অবন্তীঃ>>এই শাড়ির আঁচল টা একটু ধরো তো?
আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। এটা কি বলে।। এরপর অবন্তী আবার বলে উঠলো........
অবন্তীঃ>>ওই আবুলের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
আমিঃ>>না মানে স্বপ্ন নাকি বাস্তব সেটাই তো বুঝতে পারছি না?
অবন্তীঃ>>সামান্য শাড়িটা ধরতে বলেছি এতেই এই অবস্থা,অন্য কিছু বললে কি হতো?
আমিঃ>>অন্য কিছু কি?
অবন্তীঃ>>ওই এতো কথা বলো কেনো? যেটা করতে বলেছি সেটা করো?
আমি গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে শাড়ির কুচিগুলো ধরলাম আর বললাম........
আমিঃ>>আপনি শাড়ি পড়তে পারেন না?
অবন্তীঃ>>পারি তবে পুরোপুরি ভাবে পারি না?
আমিঃ>>তাহলে কাল কিভাবে পড়েছেন?
অবন্তীঃ>>বাসা থেকে আসার সময় আম্মু
পড়িয়ে দিয়েছে?
আমিঃ>>ও আচ্ছা?
অবন্তীঃ>>যাও তুমি গিয়ে গোসল করে রেড়ি হয়ে নাও। একটু পর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে?
তারপর গোসল করে রেড়ি হয়ে নিলাম? অবন্তী নিজের হাতেই আমার শার্টের বুতাম লাগিয়ে দিলো। একটা জামাই জামাই ভাব আসলো শরীরে।। আমি রেড়ি হয়ে বাহিরে গেলাম।? মাহির বাবা ডেকে নিয়ে গেলো উনার সাথে একটু দেখাশোনা করার জন্য।
★আমি উনার সাথে গেলাম। কিছুক্ষণ পর বরপক্ষ চলে আসলো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হলো কাজের মাঝ খানে আমি নিজেও খেয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ পর মাহিকে মানে পাত্রিকে আনা হলো। মাহির সাথে অবন্তী সহ আরো কতো গুলো মেয়ে ছিলো। অবন্তীকে দেখে আমি আবারও ক্রাশ খেলাম?? কালো একটা শাড়িতে একটু অন্যরকম লাগছে।
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি?? এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন টোকা দিলো তাকিয়ে দেখি লিমা। লিমা আমাকে বললো...........
লিমাঃ>>কিরে নিজের বউকে কেউ এভাবে দেখে?
আমিঃ>>আরে না, আমি বিয়ে দেখতে ছিলাম?
লিমাঃ>>বুঝি বুঝি ডালমে কুচ কালা হে। আচ্ছা বাদ দে, তুই খেয়েছিস?
আমিঃ>>হুমম। তুই?
লিমাঃ>>ভেবেছিলাম আরো পরে খাবো, আম্মু জোর করে খাইয়ে দিছে?
আমিঃ>>ভালো করছে?
লিমাঃ>>এই ১৫ তারিখ তো রেজাল্ট দিবে, জানিস?
আমিঃ>>কিসের রেজাল্ট?
লিমাঃ>>আরে আমাদের অনার্স পরীক্ষার?
আমিঃ>>ও আচ্ছা। তোর নাম্বারটা দেতো। তোদের অফিসে যাওয়ার আগে কল দিবো?
লিমাঃ>>ওকে, এই নে.....?? (নাম্বার টা বললো)
আমিঃ>>দোস্ত তোরে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না?
লিমাঃ>>হইছে, চল তোর বউকে একটু রাগিয়ে দিই?
আমিঃ>>কেমনে?
লিমাঃ>>গেলেই দেখবি?
এরপর লিমা আমার একটা হাত ধরে স্টেজে নিয়ে যায়। তারপর বর আর কনের মাঝে বসিয়ে ফটো তুলা শুরু করলো? অবন্তীকে বললো আমাদের ছবি তুলে দিতে।। এটা দেখে অবন্তী রাগে লাল হয়ে গেছে।। আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।।
আমিও একটু রাগানোর জন্য লিমার সাথে ক্লোজ হয়ে বসে ছবি তুলতেছি। এভাবেই দিনটা চলে গেলো। বিকাল বেলায় বসে আছি এমন সময় বস কল দিলো। কলটা রিসিভ করলাম আর বললাম.......
আমিঃ>>আসসালামু আলাইকুম.??
বসঃ>>হুম, জুয়েল কোথায় তুমি?
আমিঃ>>আমি তো একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসছি?
বসঃ>>কালকে কাজে আসবে?
আমিঃ>>কিন্তু বস বিয়ে তো এখনো শেষ হয়নি বউ-ভাত বাকি আছে?
বসঃ>>তোমাকে আর কাজে আসতে হবে না। তুমি বিয়ে খাও.?
আমিঃ>>না বস, ঠিক আছে আমি কালকে আসবো?
বসঃ>>মনে থাকে যেনো। নাহলে চাকরি ডিসমিস?
এই কথা বলে কলটা কেটে দিলো? মনে মনে ভাবতেছি শালা লিমাদের ওখানে চাকরিটা একটু পাই তখন দেখবি?? তোর এই ব্যবহারের ফল আমি সুদে আসলে দিবো। অবন্তীর কাছে গেলাম। গিয়ে বললাম...........
আমিঃ>>একটু এদিকে আসেন তো?
অবন্তীঃ>>আমাকে কেনো ডাকতেছো? তোমার তো আর মেয়ে ফ্রেন্ডের অভাব নেই?
আমিঃ>>দেখেন বাজে কথা না বলে সাইডে আসেন?
অবন্তীঃ>>কি হইছে?
আমিঃ>>আপনি থাকেন আমি চলে যাচ্ছি?
অবন্তীঃ>>চলে যাচ্ছো মানে, কোথায় যাচ্ছো?
আমিঃ>>বস কল করেছিলো,, কালকে কাজে না গেলে চাকরি থাকবে না। এখান থেকে তো আর কাজে যাওয়া সম্ভব না। তাই বলছিলাম আপনি থাকেন বিয়ে শেষ হলে তারপর আমি এসে নিয়ে যাবো?
অবন্তীঃ>>দরকার নেই। দাঁড়াও আমিও যাবো?
আমিঃ>>মানে কি! এখনো বিয়ে শেষ হয়নি?
অবন্তীঃ>>আসলটা শেষ, আর এখানে থেকেও
কোনো মজা পাবো না। মাহি তো চলে যাবে।
সো দাঁড়াও আমিও আসছি?
আমি কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছি। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। লিমাকে ইশারায় বলেছি মোবাইলে কথা বলবো। তারপর একটা CNG নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসতেই আম্মু আমাকে বললো..........
আম্মুঃ>>কিরে চলে আসলি যে? বিয়ে শেষ নাকি?
আমিঃ>>না, কাজ আছে। বস কল করেছিলো তাই?
তারপর আমি রুমে চলে গেলাম।।ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে গেলাম। আয়মানকে কল দিয়ে বাসায় আসতে বললাম। আসার পর ওর কাছে পুরো ঘটনা ওর সাথে শেয়ার করলাম। আয়মান আমাকে বললো..........
আয়মানঃ>>বাহহ! তার মানে সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে?
আমিঃ>>এখনো সিউর না। আরো কয়েকদিন দেখি?
আয়মানঃ>>লিমার ডোজটায় কাজ হয়েছে না হলে অবন্তী এতো সহজে নরম হতো না?
আমিঃ>>হুমম বন্ধু ঠিক বলছিস। লিমা অনেক
হেল্প করেছে?
★আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।। রাতে খেয়ে রুমে গেলাম। দেখলাম অবন্তী বিয়েতে তোলা ছবি গুলো দেখতেছে। আমি গিয়ে কাঁথা আর বালিশটা নিয়ে ফ্লোরে ঘুমানোর জন্য রেড়ি হচ্ছি।
অবন্তীর দিকে বার বার তাকাচ্ছি সে কিছু বলে কিনা। কিন্তু না কিছু বললো না।
আমিও শুয়ে গেলাম।। শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি, অবন্তী তো কিছুই বললো না। তাহলে বিয়েতে কেনো শুয়েছিলো এক সাথে? মনে হয় এটা অন্যদের দেখানোর জন্য, মান সম্মান রক্ষার্থে এমনটা করেছে হয়তো। আমার কপালে এগুলো নেই।।তাই এগুলো নিয়ে চিন্তা না করাই বেটার।
অবন্তী আগেও আমাকে মেনে নেয়নি,এখনো নিচ্ছে না। আর ভবিষ্যৎ-এ নিবে বলে মনে হয় না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাচ্ছি এমন সময় আব্বু সামনে দিয়ে ঘুরাঘুরি করতেছে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে। আমি আব্বুকে বললাম...............
আমিঃ>>আব্বু কিছু বলবে?
বাবাঃ>>তোর কাছে কিছু টাকা হবে? তোর মায়ের মেডিসিন শেষ?
আমি জানি পকেটে মাত্র ২০ টাকা আছে।। কারণ যেগুলো ছিলো সব বিয়েতে খরচ হয়ে গেছে। যাতায়াত, বিয়ের উপহার,অবন্তীর শাড়ি পুরো মাসের বেতন শেষ। কি বলবো বুঝতে পারছি না?? তারপর আমি আব্বুকে বললাম..........
আমিঃ>>আচ্ছা প্রেসক্রিপশন টা আমাকে দাও আমি আসার সময় নিয়ে আসবো?
★তারপর বাবার থেকে প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে বের হয়ে গেলাম।। ভাবতে লাগলাম কিভাবে কি করবো। হেঁটে হেঁটে কাজে চলে গেলাম। প্রতিদিনের মতো সেই দোকানে দোকানে মাল দেওয়া আর ভ্যান ঠ্যালা। কাজ শেষ করে আসার সময় বসের কাছে কিছু টাকা চাইলাম।শালা টাকাতো দিলোই না,উল্টো আরো ঝাড়ি দিলো।
এরপর আয়মানকে কল করে দেখা করতে বলেছিলাম। ওর কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে আম্মুর জন্য মেডিসিন গুলো কিনে নিয়ে আসলাম।।
এভাবে দিন যেতে লাগলো?? কয়েক দিন পর আমাদের রেজাল্ট দিবে। এটা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথা নেই। কারণ আমার পরীক্ষা যে খারাপ হইছে, সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ফেল করবো এটাই শিউর।। এদিকে অবন্তী রেজাল্টের চিন্তায় শেষ।
দেখতে দেখতে রেজাল্টের দিন চলে আসলো। আমি যথারীতি কাজে চলে গেলাম?? দুপুর বেলায় অবন্তী আমাকে কল দিলো আর বললো........
অবন্তীঃ>>এই জুয়েল, তুমি কোথায়?
আমিঃ>>কাজে আছি কেনো কি হইছে?
অবন্তীঃ>>রেজাল্ট দিয়ে দিছে, আমি পাশ করেছি?
আমিঃ>>congratulation....
অবন্তীঃ>>thanks...এই তোমার রোল নাম্বার আমি ভুলে গেছি আমাকে বলো তো?
আমিঃ>>আমি নিজেও ভুলে গেছি, এডমিন
কার্ড দেখো?
অবন্তীঃ>>আচ্ছা দেখতেছি?
তারপর কলটা কেটে দিলো। পাশে বস ছিলো, আমার মোবাইলে কথা বলা দেখে উনি বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো...
বসঃ>>ওই মিয়া কাজ করতে আসো নাকি প্রেম করতে?
আমিঃ>>সরি বস?
বসঃ>>আরে রাখো তোমার সরি?? মোবাইল বন্ধ করো মিয়া। এতোই যখন বউ বউ করো তাহলে কাজে আসো কেনো? বউ এর কাছে থাকলেই তো পারো?
এই শালার উপর যতটা রাগ হচ্ছে,, ঠিক অবন্তীর উপর ততটাই রাগ হচ্ছে। কল দেওয়ার আর সময় পেলো না। রেজাল দিয়েছে তো কি হইছে বাসায় গেলেও তো বলা যেতো। আমি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখে দিলাম।
★তারপর কাজ শেষ বসের কাছে টাকা চাইলাম।। উনি মুখের উপর বলে দিয়েছে,মাস শেষ হওয়া ছাড়া কোনো টাকা দিবে না?? যদি অতিরিক্ত করি তাহলে অতিরিক্ত কাজের টাকা দিবে।
★আমি আরো দুই ঘন্টা করে ১০০ টাকা নিলাম?? তার হিসেবে নাকি আরো কম পাবো। তারপর গেলাম টিউশনিতে, পড়ানোর এক পর্যায়ে ছাত্রের মা আসলো। টাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে??তাই আমি আন্টিকে বললাম.........
আমিঃ>>আন্টি কিছু বলবেন?
আন্টিঃ>>এই নাও তোমার এই মাসের বেতন?
আমিঃ>>কিন্তু আন্টি মাস তো এখনো শেষ হয়নি?
আন্টিঃ>>জানি, তোমাকে আর আসার দরকার নেই। আমি ওর জন্য নতুন টিচার দেখেছি?
আমিঃ>>কিন্তু আন্টি কেনো?
আন্টিঃ>>তুমি রাত করে আসো, তার উপর দেখে
মনে হয় ক্লান্ত, তোমার পড়ানো নাকি ওর কাছে
ভালো লাগে না। আর....?
আমিঃ>>আর কি?
আন্টিঃ>>আর তুমি নাকি ভ্যান গাড়ি ঠ্যালো? তোমাকে আজকে সকালে ওর ফ্রেন্ডেরা সবাই দেখেছে। তারপর স্কুলে গিয়ে ওরে অনেক রকম কথাবার্তা বলেছে। ঠাট্টা করেছে??
আমি কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি?? শালা ভ্যান গাড়ির সাথে পড়ানোর কি সম্পর্ক এখনো আমার মাথায় আসছে না?? কিছু না বলে ওই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।
এবার কি হবে?? টিউশনির টাকাটা দিয়ে আব্বু আম্মুর মেডিসিন কিনি। কিন্তু এবার কি হবে? হটাৎ করেই অবন্তীর রেজাল্টের কথা মনে পড়লো, আন্টির দেওয়া বেতন গুলো দেখতে লাগলাম। পুরো টাকা দেয়নি। অর্ধেক দিয়েছে।
★বাঁশ আসলে সব দিক দিয়েই আসে।।অবন্তীর জন্য ২ কেজি মিষ্টি নিলাম। তারপর হেঁটে হেঁটে বাসায় গেলাম। কলিং বেল দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দিলো।। তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার সামনে।। সে আমাকে দেখার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
আমি তো পুরা টাসকি খেয়ে গেলাম। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
কিছুক্ষণ পর আম্মু রুম থেকে বের হয়ে দেখে অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে?? আম্মু হাসতে হাসতে আবার রুমে চলে গেলো?? আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। তারপর অবন্তী আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলতে শুরু করলো..........
অবন্তীঃ>>জুয়েল আমি পাশ করেছি?
আমিঃ>>Congratulation. এই নিন,, মিষ্টি গুলো
নিয়ে যান?
অবন্তীঃ>>ওই আমি পাশ করছি সেজন্য আমি এতো খুশি হয়নি। খুশি হইছি এই জন্য, তুমিও ভালো পাশ করছো??
আমিঃ>>কিহহহ?
অবন্তীঃ হুম তুমিও করছো, শুধু পয়েন্ট টা একটু কম,এটা কোনো ব্যাপার না?
আমি আর কোনো কথা না বলে অবন্তীকে কোলে নিয়ে নিলাম।। আসলে খুশিতে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনি। ওরে কোলে নেওয়ার কারণে ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো?? এরপর আমি বলতে শুরু করলাম.......
আমিঃ>>সরি,আসলে এমন একটা খুশির খবর শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি?
অবন্তীঃ>>ইটস ওকে। যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো?
★আমি রুমে চলে গেলাম।। মনে মনে ভাবলাম এবার লিমাদের অফিসে যাবো। দেখি চাকরিটা হয় কিনা।
ফ্রেশ হয়ে আব্বু আম্মুর কাছে আসলাম, আব্বু আম্মু দুজনেই অনেক খুশি। বসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। তারপর খাওয়াদাওয়া করে রুমে চলে গেলাম। অবন্তী রুমে আসার আগেই শুয়ে পড়লাম।
একটু পর সে আসলো, আমার পাশে বসলো। তারপর কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে খাটে চলে গেলো। অবন্তী ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি উঠলাম।
উদ্দেশ্য হলো ভাইয়ার কাছে যাবো। আজকে এমন একটা দিনে ভাইয়া থাকলে হয়তো তিনি আমাদের চাইতেও বেশি খুশি হতেন।
আমি উঠে অজু করে ভাইয়ার কবরের দিকে রওয়ানা দিলাম।। কিছুক্ষণ পর আমি কবরের কাছে গেলাম। আমি জানি ভাইয়া আমাকে দেখে অনেক খুশি হবে। আমি কবরের মাথার পাশে গিয়ে বসলাম আর নিজে নিজে বলতে শুরু করলাম.....~~~~
°°°°°ভাইয়া কেমন আছিস? এতো রাতে তোরে ডিস্টার্ব করার জন্য সরি। জানি তুই অনেক বিরক্ত হবি কিন্তু কি করবো বল কথা গুলো তোকে না বললে যে আমার ঘুম আসবে না।
আজকে আমাদের রেজাল্ট দিয়েছে?? যদিও রেজাল্ট নিয়ে আমার তেমন একটা মাথাব্যথা নেই, আমি চিন্তায় ছিলাম অবন্তীকে নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ সে পাশ করেছে। আমিও করেছি কিন্তু সেটা হয়তো তোর মনের মতো হবে না।
★ভাইয়া তোর স্বপ্ন টা পূরন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তোর আর অবন্তীর ইচ্ছা ছিলো অবন্তী যেন গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে।
আজকে সেই দিন যেটার জন্য তুই স্বপ্ন দেখতি,আজকে সব ঠিক আছে শুধু তুই নেই আমাদের পাশে। তোর স্বপ্ন গুলো আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও পূরণ করবো।
★জানিস ভাই আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো খুব ভালো একটা রেজাল্ট করার জন্য কিন্তু কি করবো বল সেটা হয়তো আমার কপালে নাই। তারপরও যে পাশ করেছি সেটার জন্য আলহামদুলিল্লাহ।
ভাইয়া তুই যদি থাকতি হয়তো আমিও ভালো কিছু করতাম। তুই চলে যাওয়ার পর থেকে আমার পুরো পৃথিবীটাই পাল্টে গেছে।
এখন বুঝতে পারছি তুই কতটা কষ্ট করে আমাদের স্বপ্ন গুলো পূরণ করেছিস। এতো কষ্ট করার পরও নিজেকে সব সময় হাসিখুশি রেখেছিস।
ভাই তোর জন্য তো আমি কিছুই করতে পারিনি।। সারা জীবন তুই আমাদের জন্য করে গেছিস।
★জানিস ভাইয়া অবন্তী এখনো আমাকে মেনে নেয়নি। হয়তো নিবেও না। কিন্তু তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। সে এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে।
অবন্তীর জন্য না হয় আমার জীবনটা স্যাকরিপাইস করে দিলাম। সে যেমন থাকতে চায় তেমনই থাকুক।
ভাই আমার টাকা পয়সা কিছুর দরকার নেই শুধু তোকে দরকার। তুই আরেকবার আমাদের মাঝে ফিরে আয়, কখনো তোকে হারাতে দিবো না। প্লিজ ভাই আয় আরেক বার।।।
আর কোনো কথাই আসছে না মুখ দিয়ে।। বসে বসে ভাইয়ার স্মৃতি গুলো মনে করতে লাগলাম, তারপর উঠে কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে আসলাম।
এসে দেখি অবন্তী মন খারাপ করে বসে আছে। তাই আমি তাকে বললাম..........
আমিঃ>>কি ব্যাপার আপনি ঘুমান নি?
অবন্তীঃ>>কোথায় গিয়েছিলে???
আমিঃ>>এই তো একটু বাইরে, ঘুম আসছেনা
তাই ঘুরে এলাম?
অবন্তীঃ>>মিথ্যা বলো কেনো? সত্যি করে বলো?
আমিঃ>>ভাইয়ার কবরের কাছে?
অবন্তীঃ>>এতো রাতে?
আমিঃ>>জিয়ারত করতে গেছিলাম?
অবন্তীঃ>>কি কি বলেছো তোমার ভাইয়াকে?
আমিঃ>>কিছু না, জাস্ট জিয়ারত করে চলে আসছি?
অবন্তীঃ>>আমি সব শুনেছি?
আমিঃ>>আপনি কিভাবে শুনেছেন?
অবন্তীঃ>>তোমার পিছনে পিছনে গিয়েছিলাম?
আমিঃ>>রাত অনেক হইছে ঘুমিয়ে পড়ুন??(কথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য)
অবন্তী কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি গিয়ে শুয়ে পরলাম। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাবো এমন সময় অবন্তী সামনে আসলো.......
আমিঃ>>কিছু বলবেন?
অবন্তীঃ>>হুমম একটা কথা ছিলো?
আমিঃ>>হুমম বলেন?
অবন্তীঃ>>আমি একটু আমাদের বাসায় যাবো, যদি দিয়ে আসতে ভালো হতো?
আমিঃ>>কিন্তু আমি তো কাজে যাচ্ছি।। আর হটাৎ করে ওই বাসায় কেনো?
অবন্তীঃ>>রেজাল্ট দিয়েছে আম্মু আব্বু শুনে অনেক খুশি হয়েছে, আর এমনিতেই অনেক দিন যাইনি। সকালে আম্মু কল দিয়ে তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে?
আমিঃ>>আম্মু আব্বুকে বলেছেন?
অবন্তীঃ>>হুম,,,?
আমিঃ>>কি বলেছে?
অবন্তীঃ>>যাওয়ার জন্য বলেছে। যদি তুমিও যাও তাহলে ভালো হতো?
আমিঃ>>না আমি যেতে পারবো না?
অবন্তীঃ>>কেনো গেলে সমস্যা কোথায়?
আমিঃ>>কাজ আছে। কালকে এমনিতে অগ্রিম টাকা নিয়ে নিয়েছি। এখন কাজ না করলে বের করে দিবে। পরে দেখা যাবে চাকরিটাও যাবে?
অবন্তীঃ>>তাহলে আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তারপর যেও, প্লিজ না করো না। আমার একা
একা ভয় করে?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে, রেড়ি হয়ে নেন?
অবন্তীঃ>>ওয়েট, যাবো আর আসবো?
আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলাম।। অবন্তী রেড়ি হয়ে আব্বু আম্মুকে সালাম করে বের হয়ে আসলো। একটা রিকশা নিয়ে ওদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। কালকে যেই মিষ্টি গুলো আমি কিনে নিয়ে আনলাম সেগুলো আম্মু ওর সাথে দিয়ে দিয়েছে?? যাতে আর ওখানে যাওয়ার সময় কিছু কেনা না লাগে।
কিছুক্ষণ পর অবন্তীদের বাসায় চলে আসলাম?? ওর ব্যাগপত্র নামিয়ে দিয়ে চলে আসতে যাবো এমন সময় অবন্তী ডাক দিলো.....
অবন্তীঃ>>জুয়েল?
আমিঃ>>হুম বলেন,,?
অবন্তীঃ>>কিছু খেয়ে যাও?
আমিঃ>>এখন না, এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আসি, আল্লাহ হাফেজ?
অবন্তীঃ>>জুয়েল?
আমিঃ>>আবার কি?
অবন্তীঃ>>রাতে আসতে পারবে?
আমিঃ>>রাতে এসে কি করবো?
অবন্তীঃ>>আম্মু তোমাকে আসতে বলেছে। রাতে এসে দেখা করে নিও? রাত থেকে পরের দিন এখান থেকে কাজে যেও??
আমিঃ>>চেষ্টা করবো?
এ কথা বলে আবার রওনা দিলাম।। মনে মনে ভাবলাম আজকে হটাৎ করে অবন্তী এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে! কারন কি। মনে হয় কাল রাতে সবকিছু শুনে ফেলেছে।
ধুর এতকিছু ভেবে লাভ নেই। আমি জানি ও আমাকে কখনোই মেনে নিবে না?? ভালো পাশ করার কারনে হয়তো কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছে।
এরপর অবন্তীকে ওদের বাসায় রেখে আমি কাজে চলে গেলাম। সারা দিন কাজ করলাম এর মাঝে অবন্তী বেশ কয়েক বার কল দিয়েছে।। খেয়েছি কিনা, ভালো আছি কিনা, ওদের বাসায় কখন যাবো আরো অনেক কিছু বলেছে?? রাতে আমি আমাদের বাসায় চলে গেলাম।।
আম্মু আমাকে বললো............
আম্মুঃ>>কিরে তুই এখানে কেনো?
আমিঃ>>মানে কি..?
আম্মুঃ>>অবন্তী তোকে কিছু বলেনি?
আমিঃ>>হুম বলেছে, ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য বলেছে?
আম্মুঃ>>তো যাস নি কেন?
আমিঃ>>আরে আজব তো? সে বললেই কি যেতে হবে?
আম্মুঃ>>হুমম অবশ্যই। অবন্তী অনেক বার কল দিয়েছিলো তুই আসলে যেনো ওদের বাসায়
যেতে বলি?
আমিঃ>>আমি যাবো না এখন। অন্যদিন যাবো,,,,?
বাবাঃ>>যাবি না মানে? এক্ষুনি যা,?
আমিঃ>>কিন্তু বাবা?
বাবাঃ>>কোনো কিন্তু নয়, রেড়ি হয়ে অবন্তীর কাছে যা?
কি আর করার ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও রেড়ি হয়ে ওদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। প্রায় ৩০ মিনিট পর ওদের বাসার সামনে গেলাম।
কলিং বেল দেওয়ার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো??কি ব্যাপার এটা কি হলো? মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দরজা খুলে গেলো। মনে হয় দরজার কাছে কেউ ছিলো?? তাকিয়ে দেখি অবন্তী? আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বললো........
অবন্তীঃ>>এতো দেরি হলো যে?
আমিঃ>>রাস্তায় জ্যাম ছিলো?
অবন্তীঃ>>যাও সোফা রুমে যাও। আম্মু আব্বু
ওখানে আছে?
আমি ওই রুমে গেলাম। উনাদের সালাম করলাম।। অনেকক্ষণ বসে বসে গল্প করলাম। তারপর একসাথে খেয়ে আমি অবন্তীর রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে খাটে শুয়ে রইলাম এমন সময় অবন্তী আসলো। আমি যেই উঠতে যাবো, তখনই অবন্তী বলে উঠলো.........
অবন্তীঃ>>এই কই যাও?
আমিঃ>>আপনি ঘুমাবেন না?
অবন্তীঃ>>হুম ঘুমাবো তো, কিন্তু তুমি খাট থেকে
নামো কেনো?
আমিঃ>>না নামলে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
অবন্তীঃ সেটা তোমার জানতে হবে না। তুমি ঘুমাও,,?
আমিঃ>>কিন্তু...?
অবন্তীঃ>>ওই ঘুমাতে বলছি না! ঘুমাও,,,?
আমি কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম?? অবন্তী রুম থেকে চলে গেলো। মনে হয় অন্য রুমে থাকবে। যাক ভালোই হলো। আজ আমি অন্তত খাটে ঘুমাতে পারবো?? এতদিন ফ্লোরে থাকতে থাকতে পিটে ব্যথা হয়ে গেছে।
আর তাছাড়া শ্বশুর বাড়ি এসে যদি নিচে থাকি সেটা যদি কেউ দেখে তাহলে আমার মান ইজ্জত সব শেষ।
শুয়েশুয়ে ভাবতেছি অবন্তী কি আসলেই আমাকে মেনে নিবে না?? আমারও তো ইচ্ছা করে বউয়ের সাথে থাকতে। ওর সাথে ভালো একটা সম্পর্ক রাখতে। মনের গহিনে যত কথা লুকিয়ে আছে সবগুলো শেয়ার করতে
কিন্তু এমন কপাল নিয়ে দুনিয়াতে আসছি যেই কপালে সুখ নামের কোনো কিছুই লেখা নেই?? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম,,,,
>>>রাতের বেলায় মনে হলো কিছু একটা আমার মুখের উপর চাপ দিয়ে আছে।। আস্তে আস্তে চোখ খুললাম তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশেই শুয়ে আছে আর একটা হাত আমার মুখের উপরে অন্য একটা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। স্বপ্ন দেখছি নাতো? নাহ স্বপ্ন না আসলেই সত্যি। কিছুক্ষণ অবন্তীর মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম?? দেখে মনে হচ্ছে ছোট একটা বাচ্ছা আমার বুকে শুয়ে আছে। তারপর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ওর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো.........
অবন্তীঃ>>কি ব্যাপার মহারাজ, আর কতো ঘুমাবেন। কাজে যাবেন না?
আমিঃ>>ওহ সরি, আপনি আমাকে আরো একটু
আগে ডেকে দিতেন?
অবন্তীঃ>>সমস্যা নেই এখনো সময় বেশি হয়নি।
আমি নাস্তা রেড়ি করতেছি তুমি ফ্রেশ হয়ে হয়ে
ডাইনিং রুমে আসো?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান, আমি আসছি?
★অবন্তী চলে গেলো, আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম। এতো গুলো নাস্তা দেখে একটু টাসকি খেলাম। আসলে অনেক দিন হইছে এতো নাস্তা একসাথে খেয়েছি যে। প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বাইরে গিয়ে কলা পাউরুটি খেয়ে নিতাম।
যাইহোক সবাই মিলে নাস্তা করে নিলাম, নাস্তা করে ওর আব্বু আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে আমি ওদের বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য কাজে যাবো। গেইটের বাহিরে আসতেই অবন্তী ডাকলো....
অবন্তীঃ>>জুয়েল?
আমিঃ>>কিছু বলবেন?
অবন্তীঃ>>কাজে না গেলে হয় না?
আমিঃ>>আজকে বাজার করতে হবে, কাজে না
গেলে কি দিয়ে বাজার করবো?
অবন্তীঃ>>এখানে আবার আসবে?
আমিঃ>>জানি না, তবে মনে হয় না?
অবন্তীঃ>>প্লিজ আসিও?
আমিঃ>>চেষ্ঠা করবো?
তারপর বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসলাম।। সোজা কাজে চলে গেলাম। কাজ করতেছি এমন সময় লিমার কথা মনে পড়লো, সে তো বলেছে রেজাল্টের পর ওর বাবার অফিসে যেতে। রেজাল্ট তো দিলো, দেখি কিছু একটা হয় কিনা। সেখানে চাকরিটা হয়ে গেলে অন্তত আর ভ্যান গাড়ি নিয়ে হেঁটে হেঁটে মাল বিক্রি করা লাগবে না।
লিমাকে কল দিলাম। কয়েকবার রিং হলো কিন্তু ধরলো না।।। আবার দিলাম, এবার ধরলো....
আমিঃ>>হ্যালো লিমা কেমন আছিস?
লিমাঃ>>জুয়েল নাকি রে?
আমিঃ>>হুম,ভুলে গেলি নাকি?
লিমাঃ>>আরে হারামি তোরে কেনো ভুলবো।
বল কি অবস্থা?
আমিঃ>>এইতো মোটামুটি। তোর কি অবস্থা?
রেজাল্ট কি?
লিমাঃ>>বলিস না ভাই যেটা আশা করেছিলাম সেটা হয়নি। তোর কি?
আমিঃ>>কোনো মতে পাশ করছি। আচ্ছা একটা
কথা ছিলো?
লিমাঃ>>হুমমম বল?
আমিঃ>>তুই যে বলেছিলি তোদের অফিসে লোক লাগবে, সেই ব্যাপারে তুই কি তোর বাবার সাথে
কথা বলেছিস?
লিমাঃ>>কথা বলা লাগবে না, তুই তোর সব কাগজ পত্র নিয়ে চলে আসিস, আমি থাকবো। ঠিকানা
তোরে মেসেজ করে দিবো?
আমিঃ>>থ্যাংকস দোস্ত?
লিমাঃ>>থ্যাংকস দিয়ে কাজ হবে না। ট্রিট দিবি,,?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে দিবো। কাল কয়টায় আসবো?
লিমাঃ>>১০ টায় আসিস?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে?
কলটা কেটে দিলাম। মনের মধ্যে একটু শান্তি আসলো। বিকাল পর্যন্ত কাজ শেষ করে,বাজার করে বাসায় চলে গেলাম? অবন্তী কয়েক বার কল দিয়েছে ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য,আমি না করে দিয়েছি।
★খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে ঘুম থেকে দেরিতে উঠলাম কারন কাজে যাবো না। ৯ টার সময় রেড়ি হয়ে আব্বু আম্মুকে সালাম করলাম। আম্মু আমাকে বলতে শুরু করলো.........
আম্মুঃ>>কিরে তোর আবার কি হইছে?
আমিঃ>>কেনো সালাম করতে পারি না?
বাবাঃ>>আরে পারবি না কেনো,, কিন্তু হটাৎ করে করতেছিস তো তাই জিজ্ঞেস করলাম?
আম্মুঃ>>কিছু কি হয়েছে?
আমিঃ>>সেটা বিকাল বেলায় বলবো?
বাবাঃ>>এখন বল?
আমিঃ>>সারপ্রাইজ,,,?
এই কথা বলে বাসা থেকে রওনা দিলাম। লিমার দেওয়া ঠিকানা মতো চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে আগে থেকে দেখি লিমা বসে আছে। লিমা আমাকে দেখে বললো....
লিমাঃ>>কিরে আসছিস?
আমিঃ>>হুমমম??
লিমাঃ>>আয় বাবার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই। আর বাবাকে তোর ব্যাপারে সব বলেছি?
আমিঃ>>থ্যাংকস দোস্ত?
লিমাঃ>>যা ভিতরে যা, সব কিছু দিয়ে আয়?
আমি ভিতরে গেলাম, সবার সাথে পরিচিত হয়ে কাগজ পত্র সব জমা দিলাম। এরপর বাইরে এসে লিমার সাথে বসলাম।। কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার এসে আমাকে আর লিমাকে ডেকে নিয়ে গেলো। ভিতরে গেলাম,,লিমার বাবা বললো....
আংকেলঃ>>দেখো বাবা তোমার SSC & HSC এর রেজাল্ট ভালো ছিলো কিন্তু অনার্সের রেজাল্ট খুব একটা ভালো না। আমাদের রুল অনুযায়ী চাকরিটা তুমি আসলে পাচ্ছো না?
আমিঃ.......(চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম)
আংকেলঃ>>কিন্তু আমার মেয়ে এতো করে বলছে চাকরিটা না দিয়ে পারছি না। তুমি চাইলে কালকে থেকে জয়েন করতে পারো?
আমিঃ>>ধন্যবাদ স্যার?
খুশিতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো আমার। আমি আর লিমা ওর বাবার রুম থেকে বের হলাম?? তারপর বাহিরে গিয়ে আমি লিমাকে বললাম..........
আমিঃ>>লিমা কি বলে তোকে ধন্যবাদ দিবো
বুঝতে পারছি না?
লিমাঃ>>হুম, তোর বউ কেমন আছে?
আমিঃ>>আছে ভালোই?
লিমাঃ>>এখন কি ঠিক হইছে?
আমিঃ>>আগে থেকে একটু ঠিক হইছে। বাকিটা আগের মতোই?
লিমাঃ>>টেনশন করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে?
আমিঃ>>হুম। চল এখন,,?
লিমাঃ>>কোথায়?
আমিঃ>>ট্রিট নিবি না?
লিমাঃ>>আজকে না, অন্যদিন?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে, আজকে যাই। বসের সাথে কিছু হিসাব আছে ওগুলো শেষ করে আসি?
লিমাঃ>>হুম যা, কালকে থেকে চলে আসিস?
আমিঃ>>ওকে আল্লাহ হাফেজ,,,?
তারপর লিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওদের অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলাম। আয়মান কল দিলো ওর সাথে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছি এমন সময় কিছু একটা সজোরে গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিলো।। ধাক্কা খেয়ে অনেক দূরে গিয়ে পড়। । তারপর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান আসলো নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে আছে। আমি ওর দিকে তাকালাম।। আমার তাকানো দেখে অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বললো......
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ__পর্ব__০৮
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
তারপর লিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওদের অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলাম। আয়মান কল দিলো ওর সাথে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছি এমন সময় কিছু একটা সজোরে গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিলো।। ধাক্কা খেয়ে অনেক দূরে গিয়ে পড়। । তারপর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান আসলো নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে আছে। আমি ওর দিকে তাকালাম।। আমার তাকানো দেখে অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বললো......
অবন্তীঃ>>এখন কেমন লাগছে?
আমিঃ>>ভালো?
অবন্তীঃ>>টেনশন এর দরকার নাই।। খুব বেশি কিছু হয়নি,ডাক্তার বলেছে ২-১ দিনের মধ্যেই বাসায় চলে যেতে পারবে?
আমিঃ>>হুমমম?
অবন্তীঃ>>আমি তোমার আব্বু আম্মুকে কল দিয়ে আসতে বলেছি?
কিছুই বুঝলাম না?? অবন্তী হটাৎ করে আমার আব্বু আম্মু বলছে কেনো? তারও তো আব্বু আম্মু। কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
অবন্তীঃ>>উনারা আসছে, তুমি শুয়ে থাকো?
আমিঃ>>আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
অবন্তীঃ>>আমার একটু কাজ আছে?
আমার এই অবস্থায় অবন্তী আমার পাশে থাকবে সেটা না করে বলতেছে তার নাকি কাজ আছে।
আমিঃ>>বাবা মা আসা পর্যন্ত থাকুন?
অবন্তীঃ>>না দেরি হয়ে যাবে, অন্য কোনো দিন
দেখে যাবো?
এই কথা বলে অবন্তী উঠে চলে গেলো।আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম হটাৎ করে অবন্তীর কি এমন হলো যে এতো কাজ আমাকেও জানাচ্ছে না।
আম্মু আব্বু আসলো, এসে আমাকে ধরে কান্না করতে লাগলো। আম্মুকে শান্তনা দিলাম যে আমি ঠিক আছি। শুধু মাথায় একটু আঘাত লাগছে।
আম্মুঃ>>অবন্তী কই?
আমিঃ>>এই তো একটু আগে গেছে। ওর নাকি
খুব একটা জরুরী কাজ আছে?
বাবাঃ>>কি এমন জরুরী কাজ যে তোর পাশে
থাকতে পারছে না?
আমিঃ>>বাদ দাও, আবার চলে আসবে?
আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম। সেদিন হাসপাতালে থেকে গেলাম। আব্বু আম্মুও থেকে গেলো। পরেরদিন হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে গেলাম। কিন্তু এই ২দিনে অবন্তী একবারও আসেনি এবং একটা কলও দেয়নি।।। আমিও আর নিজে থেকে দিই নি।
এক সপ্তাহ পর মোটামুটি সুস্থ। তাই চিন্তা করলাম নতুন অফিসে জয়েন করে ফেলি,, বসে থাকা ঠিক হবে না। তাই রেড়ি হয়ে সকাল বেলায় বের হতে যাবো এমন সময় আম্মু সামনে আসলো আর আমাকে বললো.......
আম্মুঃ>>কোথাও যাচ্ছিস?
আমিঃ>>হুমম,নতুন চাকরী পেয়েছি,বেতনও আগে থেকে ভালো। কষ্টও কম তাই চিন্তা করলাম আজ থেকে শুরু করে দিই?
আম্মুঃ>>সে কিরে, তুই তো আমাদের একবারও বলিসনি। কখন পেলি নতুন জব??
আমিঃ>>যেদিন এক্সিডেন্ট করেছিলাম সেদিন?
আম্মু বাবাকে ডেকে বললো,বাবাও অনেক খুশি, হলো। দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হবো এমন সময় আবার দাঁড়িয়ে গেলাম....
বাবাঃ>>কিছু বলবি?
আমিঃ>>অবন্তীকে কেউ কিছু বলবে না,বলার
দরকার নেই?
আম্মুঃ>>কেনো রে এমন একটা খুশির খবর
মেয়েটাকে না দিয়ে পারি?
আমিঃ>>না দেওয়ার দরকার নেই। সময় হলে জানবে। এখন নিজে থেকে কেউ কিছু বলবে না?
বাবাঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না?
আমি আর কিছু না বলে রওনা দিলাম?? ৩০ মিনিট পর অফিসে গেলাম। ম্যানেজারকে সালাম দিলাম। উনি সব কিছু ঠিকঠাক করে দিলো। আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমার ডেস্ক দেখিয়ে দিলো। এবং কাজ বুঝিয়ে দিলো।
নতুন অফিস নতুন কাজ ভালোই লাগছে। কিন্তু বারবার অবন্তীর কথা মনে পড়তে লাগলো? আজকে এতোদিন অবন্তী একবারও একটা কল দেয়নি কারনি কি?
অবন্তী কি নতুন কারো সাথে!! না এটা হতে পারে না।
বসে বসে ওর কথা ভাবতেছি এমন সময় লিমা এসে একটা টোকা দিলো......
লিমাঃ>>কি ব্যাপার স্যার, ম্যাম এর কথা খুব মনে পড়ছে বুঝি?
আমিঃ>>আরে না, তুই কখন আসলি?
লিমাঃ>>আসছি তো অনেক আগে,এসে দেখলাম
তুই বসে বসে কি নিয়ে চিন্তা করতেছিস?
আমিঃ>>না তেমন কিছু না?
লিমাঃ>>নতুন অফিস কেমন লাগছে?
আমিঃ>>ভালোই?
লিমাঃ>>কোনো প্রবলেম হলে ম্যানেজারকে বলিস?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে?
লিমাঃ>>তুই থাক আমি বাবার সাথে দেখা
করে আসি?
আমিঃ>>ওকে যা?
তারপর আবার কাজ করতে লাগলাম।। কিন্তু বার বার অবন্তীর কথাই মাথায় ঘুরতে লাগলো। বিকাল বেলায় অফিস শেষ করে আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম। আয়মান আসলো, দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম,কিছু খাবার অর্ডার দিলাম। আয়মান আমাকে বললো........
আয়মানঃ>>কিরে তুই তো পুরাই চেইঞ্জ, চাকরি পাইছিস?
আমিঃ>>হুমম?
আয়মানঃ>>শালা একবারও বললি না?
আমিঃ>>তোর জন্য সারপ্রাইজ ছিলো। এখন তো বলে দিলাম?
আয়মানঃ>>হুমম, তা আজকে কয়দিন?
আমিঃ>>আজকেই জয়েন করলাম। লিমাদের অফিসে??
আয়মানঃ>>কোন লিমা?
আমিঃ>>আরে আমাদের কলেজ ফ্রেন্ড লিমা?
আয়মানঃ>>ও আচ্ছা ভালো। আমার জন্যও
একটা দেখ??
আমিঃ>>তুই চাকরি করলে তোর বাবার
টাকা কে খাবে???
আয়মানঃ>>আরে না আগের মতো টাকা দেয়না।
আব্বা কি পরিমাণ কিপটে তুই সেটা ভালো
করেই জানিস?
আমিঃ>>আচ্ছা দেখবো?
আয়মানঃ>>তোর ভাবি বউ কেমন আছে?
আমিঃ>>ভাবি বউ মানে?
আয়মানঃ>>আগে ছিলো ভাবি এখন হইছে বউ।
দুইটা মিলে ভাবি বউ?
আমিঃ>>তুই কোনো দিন ঠিক হবি না?
আয়মানঃ>>তো কি অবস্থা উনার,এবার তো
অনেক খুশিতে থাকবে তাই না?
আমিঃ>>ওরে কিছু জানাই নি?
আয়মানঃ>>কেনো?
আমিঃ.......(সব কিছু বললাম)
আয়মানঃ>>জুয়েল, দোস্ত! তোরে আমি আগে যেই কথাটা বলছি এখনো সেই কথাই বলতেছি। ওই মেয়েটার মধ্যে কোনো ঘাবলা আছে?
আমিঃ>>যেমন..?
আয়মানঃ>>প্রথমত তোর ভাই মারা যাওয়ার পর অবন্তী যদি তোদের বাসা থেকে চলে যেতো খুব ভালো বিয়ে করতে পারতো না। ওর ভাগ্য ভালো যে তুই ওরে আবার বিয়ে করেছিস?? দ্বিতীয়ত তোর বাবা মা অবন্তীকে যে পরিমাণ ভালোবাসে আদর করে আমার মনে হয়না পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন আদর পাবে।
সবকিছু থাকা স্বত্বেও অবন্তী তোর সাথে এক খাটে থাকে না,একসাথে মিশে না। এই থেকেই তো বুঝা যায় ওর মাঝে কোনো ঘাবলা আছে??
আমিঃ>>কিন্তু আমি তো ওরে কোনো অভাব দেখাইনি। ওর সবগুলো স্বপ্নই পূরণ করেছি?
আয়মানঃ>>আমার মনে হয় ওর কোনো পুরোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?
আমিঃ>>আরে না, এটা হয় না?
আয়মানঃ>>এটাই হবে, গরিবের কথা বাসি
হলেও মিষ্টি হয়?
আমিঃ>>কি করবো বল, আম্মু আব্বুর দিকে
তাকিয়ে ওরে কিছু বলতেও পারছি না?
আয়মানঃ>>ও এখন কোথায়?
আমিঃ>>ওর বাবার বাসায়। আমার এক্সিডেন্ট এর আগে গেছে এখনো আসেনি?
আয়মানঃ>>একবারও আসেনি?
আমিঃ>>না, কল করে জিজ্ঞেসও করেনি আমি
বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি?
আয়মানঃ>>তাইলে সিওর থাক ওর অন্য কোথাও রিলেশন চলতেছে?
আমিঃ>>দোস্ত ওরে ফলো করতে পারবি?
আয়মানঃ>>ওকে করলাম, সমস্যা কোথায়। কিন্তু এটা সিওর যে অবন্তী তোর কাছে থাকবে না??আগে হোক আর পরে হোক ওরে ডিভোর্স দিতে হবেই?? তুই না দিলেও সে তোকে দিবে???
আমিঃ>>আচ্ছা তুই শুধু ফলো কর?
আয়মানঃ>>ওকে?
আরো কিছু কথা বলে বাসায় চলে আসলাম।এসে ফ্রেশ হলাম। আম্মু রুমে আসলো....
আমিঃ>>কিছু বলবে?
আম্মুঃ>>হুম?
আমিঃ>>বলো। আব্বু কোথায়???
আম্মুঃ>>বাইরে গেছে?
আমিঃ>>ও কি বলবা বলো?
আম্মুঃ>>মেয়েটা অনেক দিন বাসায় নেই। বাসাটা কেমন খালি খালি লাগছে, যা না বাপ গিয়ে ওরে
নিয়ে আয়??
আমিঃ>>কাকে?
আম্মুঃ>>অবন্তীকে। ওরে অনেক মিস করছি, তোর আব্বু বলেছিলো বিকাল বেলায় যাবে কিন্তু আমি দিইনি। আমি বলেছি তুই গিয়ে নিয়ে আসবি??
আমিঃ>>ও নিজে থেকে আসবে,আমি নিয়ে
আসতে পারবো না?
আম্মুঃ>>এটা কেমন কথা, একা একটা মেয়ে কি
করে আসবে?
আমিঃ>>আরে আজব এতো রাতে ওরে কেমনে নিয়ে আসবো। সকাল হোক আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো, ও চলে আসবে?
আম্মুঃ>>না তুই এখন যা, ওরে নিয়ে আয়?
আমিঃ>>মানে কি এখন নিয়ে আসবো মানে? এই রাতের বেলা,,,,?
আম্মুঃ>>তোরে কি বলছি আজকে রাতে নিয়ে আসতে হবে,আমি বলছি তুই এখন যাবি রাতটা ওখানে থাকবি কালকে সকালে ওরে নিয়ে আসিস?
আমিঃ>>পারবো না?
আম্মুঃ>>ঠিক আছে আমি যাচ্ছি?
আমিঃ>>পাগল হইছো! এতো রাতে ওদের
বাসায় যাবা মানে?
আম্মুঃ>>হুম যাবোই তো, তুই যেহেতু যাবি না আমি নিজেই গিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে আসবো?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি?
★ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও রেড়ি হয়ে অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। ৪০ মিনিট পর ওই বাসায় গেলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯.০০ টা বাজে। কলিং বেল দিলাম কিছুক্ষণ পর অবন্তীর মা এসে দরজা খুলে দেয়।
আমি সালাম দিলাম ভিতরে গেলাম,উনি বললো অবন্তী রুমে আছে। আমি অবন্তীর রুমে গেলাম গিয়ে দেখি অবন্তী কার সাথে হেসে হেসে মোবাইলে কথা বলতেছে, আমাকে দেখে এক রকম চোরের মতো হয়ে গেলো।। আর বলে উঠলো.........
অবন্তীঃ>>তু তু তুমি এখানে?
আমিঃ>>কোনো প্রবলেম?
অবন্তীঃ>>প্রবলেম না, কিন্তু আসতে তো
পারমিশন লাগে?
হায়রে কপাল নিজের বউয়ের রুমে আসবো সেখানেও পারমিশন!! এরপর আমি বললাম........
আমিঃ>>ওকে সরি?
অবন্তীঃ>>কেনো আসছো?
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর বললাম......
আমিঃ>>আম্মু আব্বু আপনাকে অনেক মিস করছে। এখানে আসলেন যে তো অনেক দিন হইছে, এবার বাসায় চলেন?
অবন্তীঃ>>দেখো তোমাকে অনেক দিন ধরে একটা
কথা বলবো ভাবতেছি কিন্তু বলা হয়নি?
আমিঃ>>এখন বলেন?
অবন্তীঃ>>দেখো আমারও তো ইচ্ছা আছে আমি
চাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে?
আমিঃ>>মানে?
অবন্তীঃ>>মানে আমি মাস্টার্স করবো তারপর
একটা ভালো জব করবো?
আমিঃ>>আপনাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি আমি চাইনা আপনি চাকরি করেন?
অবন্তীঃ>>তোমার চাওয়া না চাওয়ায় আমার
কিছু যায় আসে না?
আমিঃ>>আপনি এগুলো কি বলতেছেন?
অবন্তীঃ>>তুমি আমার জন্য অনেক করছো? তোমার ফ্যামিলিতে থাকা মানে তোমার করুণায় থাকা। কিন্তু আমি কারো করুণা নিয়ে থাকতে চাই না?
আমিঃ>>করুণা করছি মানে? স্বামী হিসেবে
এগুলো আমার দায়িত্ব?
অবন্তীঃ>>কিন্তু আমি তোমাকে কখনো স্বামী
হিসেবে মানতে পারবো না?
আমিঃ>>আপনি এতোদিন পর এগুলো কি
বলতেছেন?
অবন্তীঃ>>আমারওতো একটা ভবিষ্যৎ আছে,?
আমিঃ>>আপনি কি বলতে চাইছেন ক্লিয়ার
করে বলেন?
অবন্তীঃ>>দেখো জুয়েল,আমি তোমার সাথে
এই ভাবে থাকতে পারবো না?
আমিঃ>>আব্বু আম্মুকে কি বলে বুঝাবেন? উনারা কি আপনাকে নিজের মেয়ের চেয়ে কম কিছু করেছে?
আমিঃ>>দেখো আমি এতোকিছু বুঝি না,আমি জাস্ট মুক্তি চাই। তোমার সাথে আমার যায় না?
আমিঃ>>যায় না মানে?
অবন্তীঃ>>মানে তোমার এই টানাটানির সংসারে
আমি থাকতে পারবো না? যে টাকা বেতন পাও
তা দিয়ে কিছুই হবে না?
আমিঃ>>টাকাই কি সব?
অবন্তীঃ>>হুমম টাকাই সব? কয়টা ইচ্ছা পূরণ করেছো আমার? কয় টাকা হাত খরচ দাও আমাকে? কয়বার শপিংয়ে নিয়ে গেছো আমাকে? বিয়ের পর থেকেই তো এইভাবে রাখছো লজ্জা করেনা আবার নিজেকে স্বামী বলে দাবি করতে???
আমিঃ>>আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আর
কি করবো?
অবন্তীঃ>>আমি এতো কিছু বুঝি না?
আমিঃ>>তারমানে আপনি যাবেন না এইতো?
অবন্তীঃ>>হুমমম?
আমি আর কোনো কথাই বললাম না।। অবন্তীদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। কাউকে কিছু বললাম না। এতো রাতে বাসায় যাওয়াও ঠিক হবে না। আব্বু আম্মুকে যদি জানাই তাহলে উনারা অনেক কষ্ট পাবে। আর কিছুদিন দেখি পরে না হয় সময় করে সব উনাদের জানাবো।।
এরপর আয়মানকে কল দিলাম।আজ রাতে ওর সাথেই থাকতে হবে। কারণ এতো রাতে বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না।।আয়মানকে বলাতে, আয়মানও বললো ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য।
যেতে যেতে ভাবতে লাগলাম অবন্তীর জন্য আমি এতো কিছু করলাম অথচ সে এক মুহূর্তেই সব ভুলে গেলো।। তাহলে ২ রাতে যে আমার সাথে ঘুমাইছে,,, ওটা কেনো করলো???
আমি আব্বু আম্মুকে কি বলবো। উনারা তো অবন্তীকে না পেলে মরেই যাব। অবন্তী এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা করবে আমি তো কোনো দিন কল্পনাও করিনি? ভাবতে ভাবতে আয়মানদের বাসায় চলে গেলাম।।।কলিং বেল দিলাম কিছুক্ষণ পর আয়মান বেরিয়ে আসলো......
আয়মানঃ>>জুয়েল আসছিস?
আমিঃ>>হুমম?
আয়মানঃ>>আয় ভিতরে আয়?
তারপর আমি ভিতরে গেলাম।। ওর আম্মুকে দেখে সালাম দিলাম।। উনি আমাকে বললেন....
আন্টিঃ>>আরে জুয়েল যে, কতো দিন পর
আসছো। কেমন আছো বাবা?
আমিঃ>>জি আন্টি আমি ভালো আছি। আপনি
কেমন আছেন????
আন্টিঃ>>আছি বাবা! বয়স হয়ে গেলে যা হয় আরকি। জুয়েল তোমার আব্বু আম্মু কেমন আছে?
আমিঃ>>জ্বি আন্টি সবাই ভালো?
আর কিছুক্ষণ কথা বলে আয়মানের রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মাত্র বসলাম আন্টি এসে ডেকে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য। খাওয়াদাওয়া শেষে আবার আয়মানের রুমে গেলাম,খাটে আমি আর আয়মান পাশাপাশি শুয়ে আছি এমন সময় আয়মান বললো.....
আয়মানঃ>>জুয়েল! এই জুয়েল??
আমিঃ>>হুমম বল?
আয়মানঃ>>কি হয়েছে এবার বল?
আমিঃ.......(অবন্তীর কথা গুলো বললাম)
আয়মানঃ>>তোরে আমি আগেই বলেছি এই
মেয়েটার মধ্যে কোনো ঘাবলা আছে?
আমিঃ>>দোস্ত আমার মাথায় কিছু আসছে না, অবন্তী আমার সাথে এমন করবে আমি ভাবতেই পারিনি?
আয়মানঃ>>দেখ জুয়েল! তোরে আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি ওই মেয়েটার সাথে তোর হবে না। তুই ওরে ডিভোর্স দিয়ে দে?
আমিঃ>>ধুর তোর কাছে এই কথা ছাড়া আর অন্য কোনো কথা নেই? সারাদিন শুধু ডিভোর্স ডিভোর্স করস। ওরে ডিভোর্স দিলে আব্বু আম্মুকে কি বলে বুঝাবো,আমি নিজে কিভাবে থাকবো? ?
আয়মানঃ>>দেখ জুয়েল আবেগ দিয়ে তো আর
জীবন চলে না, আবেগ আর বাস্তবতা এক না?
আমিঃ>>আবেগ দিয়ে জীবন চলবে যদি চালাতে পারিস?
আয়মানঃ>>কিন্তু ওতো তোকে এখনো মেনেই নিচ্ছে না, ফ্লোরে ঘুমাতে হয় তোকে?
আমিঃ>>দেখ ফ্লোরে ঘুমালে সমস্যা নাই। আমি চাই অবন্তী আমার সাথেই থাকুক।। আব্বু আম্মুর মেয়ে
হয়ে থাকুক?
আয়মানঃ>>কিন্তু জুয়েল! অবন্তী তো তোরে
ভালোই বাসেনা?
আমিঃ>>ও না বাসুক, আমি তো অবন্তীকে ভালোবাসি। অবন্তী কেনো আমাকে ভালোবাসে না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি
আয়মানঃ>>কেনো?
আমিঃ>>কারণ অবন্তী ভাইয়াকে কতটা ভালোবাসতো তোরে বলে বুঝাতে পারবো না।
ভাইয়ার সাথে বিয়ের পরে অবন্তী আমাকে ভাইয়ের মতোই দেখেছে। সো হুট করে আমাকে বিয়ে করে তো আর স্বামীর মর্যাদা দিয়ে দিতে পারবে না।
সেটা অবন্তী কেনো পৃথিবীর কোনো মেয়েই পারবে না?
এবং ভাইয়া মারা যাওয়ার পর থেকে অবন্তী ঠিক মতো খেতো না,ঘুমাতো না,শরীরের প্রতি তার কোনো কেয়ার ছিলো না।।।।
কারণ অবন্তীর মনটা পাথর হয়ে গিয়েছিলো।। যেদিন ওই পাথরে ফুল ফুটবে সেদিন অবন্তী জুয়েলকে মেনে নিবে। আমিও সেই দিনের অপেক্ষায় বসে আছি।
আমি কোনো দিনও অবন্তীকে কোনো ব্যাপারে জোর করিনি আর এখনও করবো না????
আয়মানঃ>>কিন্তু অবন্তী তো আজকে বলে দিছে তোকে মেনে নিবে না?
আমিঃ>>সেটাই তো বুঝতে পারছি না হটাৎ করে অবন্তীর কি হলো? হাসপাতালে গিয়েও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছিলো। তারপর কিছু
একটা চিন্তা করে ছেড়ে দিয়েছে?
আয়মানঃ>>আচ্ছা দোস্ত কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম?
আমিঃ>>হুম বল, মনে করার কি আছে?
আয়মানঃ>>অবন্তীর কি কারো সাথে রিলেশন
আছে বা ছিলো?
আমিঃ>>আমার জানা মতে নাই। কারণ অবন্তীর আম্মু বলেছিলো অবন্তীর নাকি কোনো ছেলে ফ্রেন্ডও নাই। সে জায়াগায় বয়ফ্রেন্ড আসার তো প্রশ্নই আসে না?
আয়মানঃ>>তো তুই এখন কি করবি? তোর আব্বু আম্মুকে বলে দিবি ওর ব্যাপারে?
আমিঃ>>এখন না, আরো কিছু দিন দেখি। এখন বলে দিলে উনারা অনেক কষ্ট পাবে?
আয়মানঃ>>জুয়েল আমার মাথা ঘুরতেছে। তুই তোর আব্বু আম্মুকেও বলবি না, নিজেও করবি না। তাহলে কি করবি?
আমিঃ>>আমার মনে হয় এখানে বিশাল একটা
রহস্য আছে যেটা আমি জানি না?
আয়মানঃ>>তো কি করবি এখন?
আমিঃ>>দোস্ত তোকে একটু কষ্ট করতে হবে?
আয়মানঃ>>কি?
আমিঃ>>দেখ আমি তো অফিসে চলে যাবো,সারাদিন ওখানেই থাকতে হবে?? তুই তো ফ্রি আছিস, তুই যদি অবন্তীকে ফলো করতি ও কি করে, কার সাথে যায়। তোর বাইক আছে সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে আমি তোরে তেলের টাকা দিয়ে দিবো?
আয়মানঃ>>এই হারামি তুই পাগল হইছিস,তোর কাছে থেকে আমি টাকা নিবো? তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড, তোর জন্য আমি সব করতে রাজি আছি??
আমিঃ>>থ্যাংকস দোস্ত। তাহলে কালকে থেকে ওরে ফলো করা শুরু কর।। আমি তোরে অবন্তীদের বাসা দেখিয়ে দিবো?
আয়মানঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে। এখন ঘুমা?
★তারপর একপাশ হয়ে শুয়ে গেলাম। ঘুম আসছে না।।বার বার অবন্তীর কথাই মনে পড়তে লাগলো।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে আয়মান আর আমি বাইক নিয়ে বের হলাম। আয়মানকে অবন্তীদের বাসা দেখিয়ে আমি অফিসে চলে গেলাম।
কাজ করতে লাগলাম আর আয়মানকে বার বার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম, কিন্তু কোনো খবর নাই। অফিস শেষ করে বাসায় গেলাম। আব্বু আম্মু আমার উপর ফায়ার হয়ে আছে। বাসায় যেতেই আব্বু আমাকে বললো.........
আব্বুঃ>>কিরে তুই একা কেনো? আমার মেয়ে কোথায়?
আমিঃ>>আসেনি?
আম্মুঃ>>আসেনি, তুই কালকে ওর সাথে ঝগড়া করে চলে আসছিস কেন?
আমিঃ>>কিহ! তোমাদের এসব কথা কে বলেছে?
আব্বুঃ>>তুই কি ভাবছিস অবন্তীর সাথে আমাদের কথা হয়না? অবন্তীই আমাদের বলেছে?
আমিঃ......(কি বলবো বুঝতেছিনা)?
আম্মুঃ>>কালকে কোথায় ছিলি?
আমিঃ>>আয়মানদের বাসায়?? (মাথা নিচু করে)
আম্মুঃ>>অবন্তী তোরে কি বলেছে?
আমিঃ>>আরো কিছুদিন ওখানে থাকবে?? (মিথ্যা বললাম)
আম্মুঃ>>যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়?
★যাহ বাবা বেঁচে গেলাম।। মনে হচ্ছে আমাকে রিমান্ডে দিয়েছে। শালা অবন্তী আব্বু আম্মুকে কি বুঝিয়েছে কে জানে!! আমার সাথে একরকম করলো আর আব্বু আম্মুর সাথে অন্যরকম বুঝলাম না।
যাইহোক খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম?? পরেরদিন ঘুম থেমে উঠে রেড়ি হয়ে অফিসে চলে গেলাম। এভাবে ২ দিন গেলো, অবন্তীর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। সেও আমাকে কোনো কল বা মেসেজ দেয়নি।।
একদিন অফিসে কাজ করতেছি। ১০ঃ৩০ বাজে এমন সময় আয়মান কল দিলো........
আয়মানঃ>>হ্যালো জুয়েল?
আমিঃ>>হুম বল?
আয়মানঃ>>তুই কই?
আমিঃ>>অফিসে। তুই কোথায়???
আয়মানঃ>>আমি তো অবন্তীদের বাসার সামনে?
আমিঃ>>কোনো খবর পাইছিস?
আয়মানঃ>>এইমাত্র একটা গাড়ি অবন্তীদের
বাসার সামনে আসলো আর অবন্তী সেটাতে
উঠে চলে যাচ্ছে?
আমিঃ>>গাড়িতে কে দেখছিস???
আয়মানঃ>>না দেখা যাচ্ছে না?
আমিঃ>>আচ্ছা দোস্ত তুই গাড়িটা ফলো কর,কি হয় আমাকে জানা?
আয়মানঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে?
কলটা কেটে দিলো। আমি একটু টেনশনে পড়ে গেলাম। অবন্তী কার সাথে ঘুরতেছে।। ১১ঃ২০ মিনিটে আয়মান আবার কল দিলো। আর আমাকে বললো......
আয়মানঃ>>জুয়েল?
আমিঃ>>হুম বল?
আয়মানঃ>>ঘটনা তো কিছুই বুঝলাম না?
আমিঃ>>কেনো কি হইছে?
আয়মানঃ>>তোর অবন্তী তো লিমার সাথে?
আমিঃ>>কোন লিমা???
আয়মানঃ>>আরে বেটা আমাদের ফ্রেন্ড, তোর
বসের মেয়ে?
আমিঃ>>অবন্তী তো লিমার কথাই শুনতে পারেনা?
আয়মানঃ>>জানি তোর বিশ্বাস হবে না। আমি ছবি পাঠাচ্ছি তুই দেখ?
আমিঃ>>আমার কাছে নরমাল মোবাইল?
আয়মানঃ>>আচ্ছা বিকালবেলা দেখা করিস?
আমিঃ>>ঠিক আছে। আচ্ছা আজকে অবন্তী লিমার সাথে কি করে?
আয়মানঃ>>আমি কেমনে বলমু? তুই লিমারে
জিজ্ঞেস করিস?
আমিঃ>>আচ্ছা তুই আরেকটু ফলো কর?
আয়মানঃ>>ওকে?
আমিঃ>>হুম আমি বিকালে তোর সাথে দেখা করবো?
আয়মানঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে ?
এ কথা বলে কল কেটে দিলো। কাজ শেষ করে বিকাল বেলায় আয়মানের সাথে দেখা করলাম। আয়মান ওর মোবাইলে তোলা ছবি গুলো আমাকে দেখাতে লাগলো। আসলেই তো এটা যে লিমা।
কিন্তু অবন্তীতো লিমার নামও শুনতে পারে না।আমাকে কয়েকবার হুমকি দিয়েছে যাতে লিমার সাথে দেখা না করি।। কিন্তু এখন দেখছি সে নিজেই লিমার সাথে হাত ধরাধরি করে হাটছে।।
কাহিনী তো একটা আছে? যেটা আমি জানি না।। কিন্তু আমাকে এভাবে বসে থাকলে চলবে না, এই কাহিনী টা কি সেটা বের করতে হবে।
আয়মানঃ>>এই জুয়েল কি ভাবতেছিস?
আমিঃ>>দুজন একসাথে কি করে সেটা?
আয়মানঃ>>লিমাকে জিজ্ঞেস কর তাহলে কাহিনী
বুঝে যাবি?
আমিঃ>>কিন্তু লিমা কি আমাকে বলবে?
আয়মানঃ>>বলবে না কেনো, অবশ্যই বলবে?
আমিঃ>>নারে লিমার পেট থেকে সহজে কথা
বের হয় না?
আয়মানঃ>>ওরে ইমোশনাল করে বের করতে হবে?
আমিঃ>>কিন্তু কিভাবে?
আয়মানঃ>>কিছু একটা চিন্তা কর?
আমিঃ >>হুম দেখি। আচ্ছা এখন কল দিবো?
আয়মানঃ>>তুই পাগল হয়ে গেছিস,এখন দিলে ভুলেও বলবে না। তোর সাথে যখন দেখা হবে তখন সিস্টেমে জিজ্ঞেস করে নিবি?
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে?
★আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে গেলাম।। খাওয়া দাওয়া করে বসে বসে ভাবতে লাগলাম আসলে অবন্তী কি করতে চাচ্ছে?২ দিন পর আমি অফিসে কাজ করতেছি এমন সময় লিমা আমার ডেস্কে আসল। এসে আমাকে বললো..........
লিমাঃ>>কিরে জুয়েল কি খবর?
আমিঃ>>ভালো না রে?
লিমাঃ>>কেনো বউয়ের জন্য খারাপ লাগছে বুঝি?
এইতো ফকিন্নির মুখ দিয়ে আসল কথা বের করে দিছে, বাকি কথা গুলো বের করে নিই।।
আমিঃ>>নারে দোস্ত বউয়ের জন্য না?
লিমাঃ>>তাহলে?
আমিঃ>>আমি আর বেশি বাঁচবো নারে?
লিমাঃ>>তুই এগুলো কি বলিস, পাগল হলি নাকি?
আমিঃ>>সত্যিই বলছি। ডাক্তার বলেছে আর
বেশি দিন নাই?
লিমাঃ>>এই তোর শরীর ঠিক আছে তো?
আমিঃ>>দোস্ত আমি তো চলে যাবো, যাওয়ার আগে একটা রিকুয়েস্ট রাখবি প্লিজ?? (একেবারে নরম গলায়)
লিমাঃ>>তুই কি বলতেছিস এগুলো,আমার মাথা ঘুরতেছে। তোকে তো দেখে ভালোই মনে হচ্ছে?
আমিঃ>>নারে, বল আমার রিকুয়েস্ট টা রাখবি?
লিমাঃ>>কি রিকুয়েস্ট বল?
আমিঃ>>অবন্তীর সাথে কি চলতেছে বলবি, মরার আগে যানতে চাই?
লিমাঃ....... (চুপ করে আছে)?
আমিঃ>>কি হলো বল?
লিমাঃ>>তুই কিভাবে জানিস?
আমিঃ>>তোকে আর অবন্তীকে আমি একসাথে দেখেছি। প্লিজ বল,,,?
লিমাঃ>>তোর সাথে যখন আমি মাহির বিয়েতে হেসে হেসে কথা বলেছিলাম তখন অবন্তী এসে আমার হাত ধরে কান্না করতে লাগলো আর বললো যাতে তোর সাথে না মিশি?
আমিঃ>>তো তুই কি বললি?
লিমাঃ>>আমি বলেছি তুই আর আমি জাস্ট ফ্রেন্ড আর কোনো সম্পর্ক নেই। অবন্তীকে রাগানোর জন্যই আমরা বিয়েতে এমন করেছি।
এরপর থেকে আমার আর অবন্তীর মাঝে ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়। আমরা এখন একে অন্যকে তুই করে ডাকি?
আমিঃ>>তো আমাকে বলিস নি কেন?
লিমাঃ>>অবন্তী বলতে নিষেধ করেছে। তোরে নাকি শাস্তি দিবে?
আমিঃ>>কি শাস্তি?
লিমাঃ >>তুই যাতে অন্য মেয়ের সাথে আর জীবনে কথা না বলিস?
আমিঃ>>আমি যে এখানে চাকরি পেয়েছি
সেটাও কি বলে দিয়েছিস?
লিমাঃ>>হুম, তুই জয়েন করতে আসার আগেই ওরে বলে দিয়েছি। আর সে তোর আব্বু আম্মুকে জানিয়ে দিয়েছে?
আমিঃ>>তারমানে আমি বলার আগেই আব্বু আম্মু আর অবন্তী জেনে গেছে?
লিমাঃ>>হুমমমম?
আমিঃ>>আচ্ছা এখন আমাদের মধ্যে একটু ঝামেলা চলতেছে তুই সেটা জানিস?
লিমাঃ>>জানবো না কেনো, আমার বুদ্ধি দিয়েই তো অবন্তী এগুলো করতেছে?
আমিঃ>>তার মানে এসবের মধ্যে তুইও আছিস?
লিমাঃ>>হুম রে দোস্ত আমি অনেকবার না করেছি কিন্তু অবন্তী আমাকে কিছুতেই ছাড়েনি। তাই করতে বাধ্য হলাম,,, কিন্তু আসল কথা কি জানিস?
আমিঃ>>কি?
লিমাঃ>>অবন্তী তোকে অনেক ভালোবাসে?
আমিঃ>>কচু বাসে। ও জীবনেও আমাকে মেনে
নিবে না?
লিমাঃ>>নিবে দেখিস। আচ্ছা এবার বল
তোর কি হয়েছে?
আমিঃ>>আমার আবার কি হবে???
লিমাঃ তুই না একটু আগে বললি তুই আর
বেশি দিন নেই?
আমিঃ>>আরে ফকিন্নি এটা মিথ্যা ছিলো, তোর পেট থেকে আসল কথা বের করার জন্যই এমন করেছি?
লিমাঃ>>কিহ! তুই এটা করতে পারলি?
আমিঃ>>তুই যদি পারিস আমি কেনো পারবো না?
লিমাঃ>>দাঁড়া আমি অবন্তীকে সব বলে দিবো?
আমিঃ>>বলে দে, তাতে তুই বাঁশ খাবি। আমার কি?
লিমাঃ>>ধুর আমি তোদের কারো সাথে নাই?
আমিঃ>>মনু মাইনক্যা ছিপায় আটকাইছো, বের হওয়ার সুযোগ নেই। বেশি চালাকি করলে এই অবস্থাই হবে?
লিমাঃ>>আমি আর এসবের মধ্যে নেই?
আমিঃ>>তুই আগে ছিলি, এখনো আছস এন্ড আগামীতেও থাকবি। শোন,,,?
লিমাঃ>>আবার কি? আমি আর তোকে কোনো ইনফরমেশন দিবো না। তুই এতো হারামী আগে জানতাম না,,,?
আমিঃ>>আরে আগে কথা শোন?
লিমাঃ>>হুম বল?
আমিঃ>>আমি যে সব কিছু জেনে গেছি অবন্তী যাতে না জানে?
লিমাঃ>>আমি ওরে বলে দিবো?
আমিঃ>>ওকে বলিস , আমি অবন্তীকে বলবো লিমা নিজেই এসে আমাকে সত্যি কথা বলে দিছে। তখন অবন্তীর পক্ষ থেকে খুব সুন্দর আর সাজানো একটা বাঁশ খাবি। সো অবন্তীকে কিছু বলবি না?
লিমাঃ>>আচ্ছা?
লিমা চলে গেলো।। আমি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলাম। এবার একটু শান্তি আসলো, শালার অবন্তী জীবনটা শেষ করে দিলো। কোথায় এসে আমার সাথে রোমান্স করবে সেটা না উল্টা আমাকে বাঁশ দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে?? বালিকা তুমি চলো ডালে ডালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়?? জুয়েল কি জিনিষ এবার ভালো করে টের পাবা।।।
আয়মাইন্না হারামিরে কল দিয়ে আসার জন্য বললাম। দেখা করবো, সন্ধ্যার সময় আসলো। আয়মানকে সব কিছু বললাম।। আয়মান তো পুরা টাসকি খেয়ে বসে আছে। এরপর আয়মান আমাকে বললো.....
আয়মানঃ>>আরে কি বলিস?
আমিঃ>>হুম সত্যিই?
আয়মানঃ>>অবন্তীর দিকে তাকালে তো মনে হয় নিষ্পাপ একটা মেয়ে,,কিছুই জানে না। ভাঁজা
মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। কিন্তু ওর ভিতর
এতো প্যাঁচ??
আমিঃ>>দাঁড়া আমি ওর প্যাঁচ বের করছি?
আয়মানঃ>>একটা জিনিষ আমার মাথায়
আসছে না?
আমিঃ>>কি?
আয়মানঃ>>অবন্তী তোরে হটাৎ শাস্তি দিতে
যাবে কেনো?
আমিঃ>>আমি জানি না, সেখানেও হয়তো
কোনো রহস্য আছে?
আয়মানঃ>>দেখ এবার কি হয়?
আমিঃ>>দোস্ত আমি যাই, কালকে দেখা করবো?
আয়মানঃ>>কোথায় যাবি?
আমিঃ এখন বাসায় যাবো। রেড়ি হয়ে অবন্তীদের বাসায় যাবো?
আয়মানঃ>>অবন্তীদের বাসায় কেনো?
আমিঃ>>তুই এখনো ছোট, বুঝবি না কিছু। আরো বড় হয়ে নে তারপর নিজে নিজে বুঝে যাবি?
আয়মান আবুলের মতো তাকিয়ে রইলো। এরপর আমি বাসায় চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে আব্বুর কাছে আসলাম। আব্বু আমাকে বললো........
বাবাঃ>>কোথাও যাবি নাকি?
আমিঃ>>হুমম?
বাবাঃ>>কোথায়?
আমিঃ>>তোমার বেয়াই মশায়ের বাসায়?
বাবাঃ>>এতো রাতে ওখানে কেনো?
আমিঃ>>কেনো যেতে পারি না?
বাবাঃ>>পারবি না কেনো, শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি।
যখন ভালো লাগে তখন যাবি। এখন কি অবন্তীর
কথা খুব মনে পরছে?
আমিঃ>>আরে এগুলো কি বলো, ধুর যাবোই না?
বাবা বসে বসে হাসছে?? আমি রান্না ঘরে আম্মুর কাছে গেলাম।। আম্মুকে বলে বের হয়ে গেলাম।। প্রায় ৩০ মিনিট পর অবন্তীদের বাসায় গেলাম? কলিং বেল চাপ দিলাম। একটু পর দরজা খুলে দিলো। তাকিয়ে দেখি অবন্তীর আম্মু।। আমাকে দেখেই মোটামুটি একটা টাসকি খেয়েছে?? খাওয়ার কথা যেখানে জুয়েলকে বলতে বলতেও আসে না,,সেখানে নিজে থেকেই এসে হাজির তাও আবার রাতের বেলায়। এরপর শ্বাশুড়ি মা আমাকে বললেন...........
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__০৯)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
বাবা বসে বসে হাসছে?? আমি রান্না ঘরে আম্মুর কাছে গেলাম।। আম্মুকে বলে বের হয়ে গেলাম।। প্রায় ৩০ মিনিট পর অবন্তীদের বাসায় গেলাম? কলিং বেল চাপ দিলাম। একটু পর দরজা খুলে দিলো। তাকিয়ে দেখি অবন্তীর আম্মু।। আমাকে দেখেই মোটামুটি একটা টাসকি খেয়েছে?? খাওয়ার কথা যেখানে জুয়েলকে বলতে বলতেও আসে না,,সেখানে নিজে থেকেই এসে হাজির তাও আবার রাতের বেলায়। এরপর শ্বাশুড়ি মা আমাকে বললেন...........
শাশুড়িঃ>>আরে জুয়েল! আসো বাবা
ভিতরে আসো??
আমি সালাম দিয়ে ভিতরে গেলাম। অবন্তীর বাবা বসে বসে টিভি দেখছে আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আমি উনার সাথে কৌশল বিনিময় করলাম।
শ্বশুরঃ>>অবন্তী রুমে আছে যাও??
আমিঃ>>যাবো এখন না, একটু পর??
শ্বশুরঃ>>তাহলে বসো, গল্প করি??
আমি উনার পাশে গিয়ে বসলাম।। বাবা মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলো,চাকরী বাকরির কি খবর জিজ্ঞেস করলো।।আমিও উনার পাশে বসে সব কিছুর উত্তর দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো।।এসে আমাকে দেখে ভুত দেখার মতো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।। আমি ওরে পাত্তা না দিয়ে আবারও শ্বশুরের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। এরপর এক সাথে খেয়ে আমি অবন্তীর রুমে চলে গেলাম। একটু পর অবন্তী আসলো। আর আমাকে বললো........
অবন্তীঃ>>কি ব্যাপার তুমি এখানে আসছো কেনো??
আমিঃ>>সেটা আপনাকে কেনো বলবো????
অবন্তীঃ>>আজব তো! আমার রুমে এসে শুয়ে
আছো অথচ আমাকেই বলবে না।
আমিঃ>>আমি আমার বউয়ের রুমে আসছি।
আপনার সমস্যা কোথায়?
অবন্তীঃ>>জুয়েল এসবের মানে কি?
আমিঃ>>মানে খুব সোজা। আমি আমার বউয়ের
কাছে আসছি আর বউয়ের সাথেই থাকবো??
অবন্তীঃ>>দেখো জুয়েল ভালো হবে না কিন্তু।
আমি কিন্তু চিৎকার করবো??
আমিঃ>>তো করেন, দেখি কে আসে?
অবন্তী একটু ভয় পেয়ে গেলো। তারপর আমার একটু সামনে আসলো আর বললো........
অবন্তীঃ>>জুয়েল তুমি সত্যি করে বলো তো
কেনো আসছো?
আমিঃ>>কেউ এক জনকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ওরে ছাড়া থাকতে পারছিনা তাই চলে আসলাম??
কথাটা শুনে অবন্তী কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।। তারপর আমার পাশে এসে বসলো আর বললো.......
অবন্তীঃ>>কাকে ভালোবাসো????
আমিঃ>>যে এখন আমার পাশে বসে আছে??
অবন্তীর চোখে পানি টলোমলো করতেছে।। আমি ওর একটা হাত ধরে বললাম....
আমিঃ>>আমি কি এতোই বাজে? এতোই খারাপ যে আপনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না?
অবন্তীঃ........ (চুপ করে আছে)
আমিঃ>>এটা ঠিক যে আপনি কখনো আমাকে মন থেকে মেনে নিবেন না। আবার এটাও জানি কোনো
এক কারনে আপনি আমাকে শাস্তি দিতে চেয়েছেন কিন্তু এমন শাস্তি দিচ্ছেন আর একটু হলে তো আমি
এই পৃথিবী ছেড়ে......??
কথাটা শেষ করার আগেই মুখে হাত দিয়ে দিলো।। আর বলে উঠলো.......
অবন্তীঃ>>না প্লিজ। এগুলো ভুলেও মুখে আনবে না। এক জনকে হারিয়ে ফেলেছি, আর কাওকে হারাতে চাইনা। এই সব কিছুর জন্য আমি অনেক অনেক সরি??
আমিঃ>>তো কেনো এমন করলেন আমার সাথে। আমার দোষটা কি ছিলো???
অবন্তীঃ>>তুমি যখন মাহির বিয়েতে লিমার সাথে হেসে হেসে কথা বলতেছিলে সেটা দেখে আমার ভিতর একটা মোছড় দেয়। মনে হলো আমি খুব দামি একটা জিনিষ হারিয়ে ফেলতেছি??
তোমার আড়ালে আমি লিমাকে সব বলি।। তখন উনি হাসি মুখে সব বলে দেয় এটা তোমার আর ওর প্ল্যান ছিলো??? তবুও আমার মনে একটা ভয় ছিলো যে তোমাকে যদি কেউ নিয়ে যায় বা তুমি যদি অন্য কারো হয়ে যাও। সেজন্য সেদিন রাতে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম??
আমিঃ>>সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আমি এক্সিডেন্ট হওয়ার পর একবারও যাননি কেনো??
অবন্তীঃ>>গিয়েছি সেটা তুমি দেখার আড়ালে।। তুমি যখন ঘুমে থাকতে তখন যেতাম। আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবার
চলে আসতাম??
আমিঃ>>কিন্তু এতো নাটক করার মানে কি?
অবন্তীঃ>>জুয়েল!! তুমি যখন চাকরিটা পাইছো তখন আমি কি পরিমান খুশি হয়েছি তা বলে বুঝাতে পারবো না। কিন্তু দুঃখের বিষয় তুমি তোমার চাকরির ব্যাপারে কিছুই বলো নি। উলটো লিমাই আমাকে বলেছে,,??
আমিঃ>>তখন বলিনি ঠিক আছে। কিন্তু বাসায় এসে বলতাম। আমি ভাবছিলাম মিষ্টি কিনে নিয়ে গিয়ে আব্বু আম্মু আর আপনাকে এক সাথে খুশির খবর দিবো??
অবন্তীঃ>>সেটা না হয় ঠিক আছে, কিন্তু একবার
কল করে বললে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো?
আমিঃ>>ক্ষতি হতো না,আমার ইচ্ছা ছিলো বাসায় গিয়ে বলবো। আচ্ছা সেদিন রাতে আমাকে এতো অপমান কেনো করলেন তাহলে?
অবন্তীঃ>>জুয়েল! আমি জানি তুমি অনেক ভালো?? তোমাকে হিট করার মতো কোনো কথা আমার কাছে ছিলো না। তাই সেদিন আবোল তাবোল কি বলছি নিজেও জানি না??
আমিঃ>>তো কেনো বললেন?
অবন্তীঃ>>তোমার ভাইয়া যখন ছিলো তখন আমাদের মাঝে খুব ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো?? কিন্তু তুমি প্রতিদিন কাজ থেকে এসে ফ্লোরে ঘুমিয়ে যেতে??
আমিঃ>>আপনিই তো বলেছেন আপনি আমাকে মেনে নিতে পারবেন না, সেজন্যই তো ফ্লোরে থাকতাম??
অবন্তীঃ>>জুয়েল জানো তোমার ভাইয়াকে এতো ভালোবেসে ছিলাম যে, তোমার ভাইয়ার জায়গায় অন্য কাউকে কোনো দিন কল্পনাও করতে পারিনা। তাই তোমাকে কথা গুলো বললাম। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে এইভাবে তো আর লাইফ যায় না??
আমিঃ>>তো আমাকে বলতেন,,?
অবন্তীঃ>>সব কথা মুখে বলতে নেই, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। তুমি যদি ফ্লোরে না থেকে খাটে থাকতে
আমি কি কিছু করতে পারতাম??
আমিঃ>>সেটা না হয় পারতেন না। কিন্তু পরে বলতেন সব পুরুষ সমান। শুধু মেয়েদের সাথে থাকতে চায়,??
অবন্তীঃ>>মোটেও না??
আমিঃ>>তো এতো কিছু করার কারন টা কি???
অবন্তীঃ>>দেখলাম?
আমিঃ>>কি দেখলেন?
অবন্তীঃ>>আমার বরটা আমাকে ভালোবাসে কিনা??
আমিঃ>>তাই নাকি?
অবন্তীঃ>>হুমমম??
আমিঃ>>তো কি রেজাল্ট পেলেন?
অবন্তীঃ>>সেটা জানি না। তবে এটা মনে হচ্ছে পৃথিবীর ভাগ্যবতী নারীদের মধ্যে আমিই একজন। যে তোমার ভাইয়ার মতো ছেলেকে পেয়েছি। নিজের বাবা মায়ের চাইতেও ৩ গুণ ভালো শ্বশুর শাশুড়ি পেয়েছি। আর সেরা ভাগ্যবতী এই জন্য,,সব শেষে তোমাকে পেয়েছি?
আমিঃ........ (কি বলবো বুঝতে পারছি না)
অবন্তীঃ>>খুব ভালোবাসি তোমায়,যা বলে বুঝাতে পারবো না??
আমিঃ>>কিন্তু আপনি তো বলছেন আমি অন্য
কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে। তাই আমি
আয়মানকে বলে দিয়েছি অন্য মেয়ে খুঁজতে??
অবন্তীঃ>>ওই কি বললে তুমি? খুন করে ফেলবো??
আমিঃ>>কেনো আপনিই তো বললেন??
অবন্তীঃ>>আমি বললেই কি করতে হবে??
আমিঃ>>হুম, আপনার আবদার না রেখে পারি?
অবন্তীঃ>>খুব ভালোবাসি তোমায়, পারবো না
তোমাকে ছাড়া থাকতে। পারবো না তোমাকে
অন্য কারো হতে দিতে??
আমিঃ>>ভাবতেছি আপনাকে এখন কি বলে
ডাকবো, ভাবী নাকি অবন্তী??
অবন্তীঃ>>মাইর খাবা কিন্তু,ভাবি কেনো ডাকবে হুম? আচ্ছা মাঝে মাঝে ভাবি ডাকিও। ভাবি ডাক শুনার মাঝেও অন্যরকম একটা আনন্দ আছে??
আমিঃ) >>ও তাই নাকি?
অবন্তীঃ>>হুম। বাট একটা শর্ত আছে??
আমিঃ>>কি সেটা?
অবন্তীঃ>>আজ থেকে আপনি নয় তুমি করে
বলতে হবে??
আমিঃ>>হুম...... (কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম)
অবন্তীঃ>>এই জুয়েল! চুপ করে আছো কেনো?
আমিঃ>>ভাবতেছি??
অবন্তীঃ>>কি ভাবছো?
আমিঃ>>আব্বু আম্মুর ইচ্ছা টা কিভাবে পূরণ করবো। আজ থেকে কার্যক্রম শুরু করবো কিনা সেটা ভাবছি?
অবন্তীঃ>>কোন ইচ্ছা?
আমিঃ>>ওই যে নাতী/নাতনীর ইচ্ছাটা??
অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। তারপর বললো....
অবন্তীঃ>>এই একদম ফাজলামো করবে না??
আমিঃ>>ফাজলামো করি তাই না??
এই কথা বলেই অবন্তীর হাতটা ধরে একটা টান দিলাম। অবন্তী নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আমার বুকের উপর এসে পড়লো।। আর তখনই অবন্তী আমাকে বলে উঠলো..........
অবন্তীঃ>>এই জুয়েল শোনো শোনো??
আমিঃ>>হুম বলো??
অবন্তীঃ>>তোমার না অনেক ইচ্ছা ধুমধাম
করে বিয়ে করা??
আমিঃ>>হুম, ছিলো বাট এখন বলে লাভ কি?
অবন্তীঃ>>বলে লাভ আছে। আমাদের বিয়েটা আবারও হবে এন্ড সেটা তোমার ইচ্ছা মতোই??
আমিঃ>>অনেক টাকা লাগবে কিন্তু পাবো কোথায়?
অবন্তীঃ>>সেটা তুমি জানো। বাট যদি বিয়ের অনুষ্ঠান না হয় তাহলে কিন্তু আমি তোমাদের বাসায় যাবো না। আর আমাকে টাচও করতে দিবো না??
আমিঃ>>এটা কেমন কথা?
অবন্তীঃ>>যেটা বলেছি সেটাই হবে??
আমিঃ>>আরে ধুর, এই মুহূর্তে টাকা কই পাবো আর আব্বু আম্মুকে কি বলবো?
অবন্তীঃ>>আচ্ছা আব্বু আম্মুকে বোঝানোর
দায়িত্ব আমার??
আমিঃ>>আচ্ছা দেখি কি করা যায়??
অবন্তীঃ>>হুম দেখো, আর এখন নিচে থাকবা??
আমিঃ>>মানে! সব কিছুতো ঠিক আবার নিচে কেনো?
অবন্তীঃ>>কোনো কিছুই ঠিক নেই। বলছি না অনুষ্ঠান ছাড়া তোমার মনের আশা পূরণ হওয়া ছাড়া খাটে উঠতে দিবো না??
আমিঃ>>এটা কোনো কথা?? নিচে থেকে থেকে
আমার সমস্যা হয়ে গেছে। প্লিজ আজকে অন্তত
উপরে থাকতে দাও??
অবন্তীঃ>>ওকে দিবো বাট একটা শর্ত আছে??
আমিঃ>>আবার কি শর্ত?
অবন্তীঃ>>আমাকে টাচ করতে পারবে না। দুজনের মাঝখানে কোলবালিশ থাকবে??
আমিঃ>>আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, তারপরও
উপরে থাকি??
অবন্তীঃ>>ওকে ওই পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ো??
আমিঃ>>আপনি ঘুমাবেন না?
অবন্তীঃ>>বলছি না তুমি করে বলতে।
আমিঃ>>ও সরি,,??
অবন্তীঃ>>তুমি ঘুমাও, আমি পরে ঘুমাবো??
কি আর করার অবশেষে মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম?? আমি আবার সব সময় কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।
রাতের বেলা মনে হচ্ছে কোলবালিশ নাড়াচাড়া করছে। কিন্তু কোলবালিশ এতো নরম কিভাবে হয়। আস্তে করে তাকিয়ে দেখি কোল বালিশ নিচে পড়ে আছে আর অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এই জন্যই তো বলি কোল বালিশ এতো নরম কেনো।।
এটা যে আসল কোলবালিশ।। যাইহোক এবার আমিও কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম কারো মিষ্টি হাসি দেখে। বাহ! ভেজা চুল দেখে আবারও ক্রাশ খেলাম।
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর নাস্তা করে আবার রুমে এসে অফিসের জন্য রেড়ি হয়ে নিলাম?? অবন্তী রুমে আসলো। এসে আমাকে বললো.........
অবন্তীঃ>>এই তুমি কি এখন চলে যাবে?
আমিঃ>>হুমম??
অবন্তীঃ>>আচ্ছা সাবধানে যেও, আর যাওয়ার পর আমাকে একটা কল দিও। ওকে.???
আমিঃ>>ওকে, ওইটা কি দেখেন তো?
অবন্তীঃ>>কোনটা?
★অবন্তী এই কথা বলে,আমি যেই দিকে ইশারা করেছি সেদিকে তাকালো আর আমি এই সুযোগে ওর গালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলাম। অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আর আমাকে বললো.........
অবন্তীঃ>>এটা কি করলে?
আমিঃ>>কোনটা?
অবন্তীঃ>>এই যে এক্ষুনি দিলা??
আমিঃ>>আমার বউকে আমি দিয়েছি, আপনার
সমস্যা কোথায়?
অবন্তী হাসতে শুরু করলো। আমি অবন্তীকে বললাম...
আমিঃ>>এই রাতে আসবো?
অবন্তীঃ>>জ্বি না মশাই? এখন থেকে আপনি আর এই বাসায় আসবেন না। আবার বিয়ের জন্য প্রিপারেশন নেন। নতুন বউ সেজে আপনাদের বাসায় যাবো। তখন পেট ভরে আদর করিয়েন। এর আগে যাতে আপনার চেহারাও না দেখি?
আমিঃ>>আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে?
অবন্তীঃ>>না পারার কি আছে? এই তুমি বকবক না করে অফিসে যাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে,,আর হে আমি আব্বু আম্মুকে আবার বলে দিবো??
আমিঃ>>ওকে,,??
★অবন্তীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসলাম। আজকে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতেছে।
তারপর অফিসে চলে গেলাম। সারাদিন অফিসে কাজ করলাম এর মধ্যে বেশ কয়েকবার অবন্তীর সাথে কথা বললাম।।
বিকাল বেলায় আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম। ওর সাথে দেখা করে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। অবন্তীর কথা গুলো বলতে লাগলাম। আমার কথা গুলো শুনে আয়মান বলে উঠলো.........
আয়মানঃ>>যাক বাবা, বেঁচে গেলাম। জানিস জুয়েল আমি কতো টেনশনে ছিলাম??
আমিঃ>>আরে আমিও তো অনেক টেনশনে ছিলাম। যে অবন্তী আব্বু আম্মুকে ছাড়া কিছু বুঝে না সে কি করে আব্বু আম্মুকে ছাড়া থাকবে??
আয়মানঃ>>হুম সেটাই। যাইহোক সব কিছু মিটমাট হয়েছে??
আমিঃ>>নারে আরো বড় একটা প্যারায় ফেলেছে আমাকে??
আয়মানঃ>>আবার কি?
আমিঃ>>আমাদের বিয়ের তো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি আবার অনেকে জানেও না। তাই অবন্তী চাইছে বড় করে অনুষ্ঠান করে ওরে আবার নতুন করে বউ
সাজিয়ে নিয়ে যেতে??
আয়মানঃ>>ভালো তো। তোরও তো ইচ্ছা ছিলো ভালোভাবে বিয়েটা করা??
আমিঃ>>হুম ইচ্ছা তো ছিলো, কিন্তু এখন টাকা
কোথায় পাবো? অনেক টাকার দরকার,,??
আয়মানঃ>>টাকা তো লাগবেই, টাকা ছাড়া
কিছুই হবে না??
আমিঃ>>আগামী ১ বছর টাকা জমাতে হবে যদি অনুষ্ঠান করতে চাই??
আয়মানঃ>>আরে না, এটা পসিবল হবে না। তুই কি এই এক বছর অবন্তীকে ওর বাবার বাসায় রেখে দিবি? এটা কিছুতেই হয় না??
আমিঃ>>সেটাই তো ভাবছি।
আয়মানঃ>>জুয়েল! আমার মাথায় একটা
বুদ্ধি এসেছে??
আমিঃ>>কি?
আয়মানঃ>>তুই তোর অফিস থেকে লোন নে। তাহলে তোর বেতন থেকে প্রতি মাসে একটা করে পার্সেন্টিস ওরা রেখে দিবে। এতে করে তোর উপর খুব বেশি প্রেশার পরবে না??
আমিঃ>>জয়েন করেছি অল্প কিছু দিন হলো, এখন কি লোন দিবে? পুরাতন চাকরীজীবী ছাড়া লোন দেয়না??
আয়মানঃ>>আরে বেটা, তুই লিমার সাথে কথা বল। দেখনা কিছু একটা হয় কিনা??
আমিঃ>>হুম দেখি??
এরপর আর কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে আমি বাসায় চলে আসলাম।। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোফা রুমে গেলাম।। আব্বু বসে বসে টিভি দেখছে। আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম। বাবা আমাকে বললো.......
বাবাঃ>>কিরে কি অবস্থা, চাকরি কেমন চলছে??
আমিঃ>>এইতো ভালোই??
বাবাঃ>>আমার মেয়ে কেমন আছে?
আমিঃ>>ভালো। তোমাদের সাথে কথা হয়নি?
বাবাঃ>>হুমম সব সময় হয়। তুই নাকি মহা ধুমধামে বিয়ে করতে চাস??
আমিঃ>>এগুলো কি বলো.?? (লজ্জায় আমার
অবস্থা শেষ)
বাবাঃ>>ঠিকই তো বললাম। তোর নাকি সেই ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন মহা ধুমধাম করে বিয়ে করবি।
এখন আবার সেই ইচ্ছাটা জেগে উঠেছে??
আমিঃ>>ধুর এখানে বসবোই না??
★আমি উঠে চলে গেলাম।। বাবা বসে বসে হাসছে আর আমি আম্মুর কাছে গেলাম,আম্মু রান্না করতেছে। আম্মু আমাকে বললো..........
আম্মুঃ>>কিরে বাবার কাছ থেকে চলে আসলি কেনো?
আমিঃ>>আরে ধুর আব্বু শুধু উল্টাপাল্টা কথা বলে??
আম্মুঃ>>ঠিকই তো বলছে??
আমিঃ>>আম্মু তুমিও বলছো। ধুর আমি রুমে গেলাম,??
রুমে এসে বসে রইলাম। চারপাশে যেনো অবন্তীর স্মৃতি গুলো ছড়িয়ে আছে।। আমি অবন্তীকে কল দিলাম।। কলটা রিসিভ করতেই আমি বললাম........
আমিঃ>>কি করেন??
অবন্তীঃ>>একজনের কথা ভাবতে ছিলাম আর
উনিই কল দিলো??
আমিঃ>>আমিও, খুব মিস করছি। প্লিজ চলে আসো, অনুষ্ঠান পরে করবো।
অবন্তীঃ>>জ্বি না সাহেব, সেটা হচ্ছে না??
আমিঃ>>আমার উপর বেশি প্রেশার হয়ে যাচ্ছে না?
অবন্তীঃ>>আমার বরের উপর প্রেশার পরবে এতে আপনার সমস্যা কোথায়??
আমিঃ>>সত্যিই মিস করছি??
অবন্তীঃ>>হুম, আমিও করছি??
আমিঃ>>ওকে রাখি??
কল কেটে দিলাম। অবন্তীর কথা ভাবতেছি এমন সময় আম্মু রুমে আসলো, ডেকে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য। আমি আব্বু আর আম্মু এক সাথে খাবার খাচ্ছি এমন সময় আব্বু বললো....
বাবাঃ>>জানিস জুয়েল??আমাদের মানে তোর আম্মুর আর আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো আমাদের ছোট ছেলের বিয়েটা অনেক সুন্দর ধুমধাম করে হবে। সবাই অনেক আনন্দ করবে, কিন্তু দেখ কেমন বাবা হলাম আমি সেই ইচ্ছাটাও পূরণ করতে পারলাম না??
আমিঃ>>আব্বু এগুলো কি বলো? টাকা হলে সব
করা যাবে। এতে টেনশন করার দরকার নেই??
আব্বুর মন খারাপ দেখে আমি উঠে চলে রুমে গেলাম।রাতের বেলায় আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে গেছে।। আমি উঠে বের হয়ে গেলাম।।।।
ভাইয়ার কাছে যাবো।। কয়েকদিন ভাইয়ার কাছে যেতে পারিনি।। আমার ভাইটা মন খারাপ করবে।। বাইরে চাঁদের আলো ছিলো। আমি হেঁটে হেঁটে ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম। কবরের মাথা বরাবর গিয়ে বসলাম।
ভাইয়ার কবরের পাশে কয়েকটা গাঁদাফুল গাছ লাগিয়ে ছিলাম সেগুলোতে ফুল ফুটেছে। দেখে মনে হচ্ছে ভাইয়া হাসতেছে।। ভাইয়া কেমন আছিস?? তুই হয়তো ভাবছিস আমি তোকে ভুলে গেছি।। নারে ভাই আমি তোকে ভুলিনি?? সময় পাইনি তোর কাছে আসার।।।
তোর কর্তব্য গুলো আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতেছি কিন্তু তোর মতো পারছি না। তবুও চেষ্টা করতেছি। ভাইয়া যেখানেই যাইনা কেনো তোর অভাব আমি অনুভব করি, তোর স্মৃতি গুলো আমাকে ঘুমাতে দেয় না।। ঘুমাতে গেলে তোর সাথে ঘুমানোর কথা মনে পড়ে, খেতে গেলে তোর সাথে ভাগাভাগি করে খাওয়ার কথা মনে পড়ে।।
খেলা দেখতে গেলে তোর দলের বিরোধিতা করার কথা গুলো মনে পড়ে। আজ সবকিছু আছে, ভালো একটা চাকরিও পেয়েছি, টাকা এখন নেই হয়তো ভবিষ্যৎ এ হবে।। সবকিছু হয়তো পাবো কিন্তু তোকে আর পাবো না।
ভাইয়া আমি জানি তুই আমার উপর অভিমান করে আছিস। ভাই বিশ্বাস কর ১ সেকেন্ডের জন্যও আমি তোকে ভুলিনি। তোর অবন্তীকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ভালো রাখার। পড়া লেখা করানোর। আমি সফল হয়েছি ভাইয়া।।।
★জানিস ভাইয়া প্রতি রাতে আমি মায়ের কান্নার শব্দ শুনতে পাই কিন্তু আমি মাকে শান্তনা দিই না। তুই আবার এটা ভাবিস না আমি স্বার্থপর। আমি আম্মুকে শান্তনা দিই না এই জন্য যে আম্মুকে সান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার নেই।।
★জানিস অবন্তী এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে।। আমাকে মেনে নিলেও অবন্তীর মনে তুই যে জায়গাটা করে নিয়েছিস সেটাতে তুই সারা জীবন থাকবি।।
ভাই আজকে সব আছে শুধু তুই নেই।। আর একবারের জন্য আমাদের মাঝে ফিরে আয়। দেখে যা ওদের আমি ঠিকমতো রাখতে পারছি কিনা।। আর একবার এসে আমার সাথে ঝগড়া করে যা।। এবার আর তোর সাথে মারামারি করবো না। তুই শুধু একবার আয়।।।।
চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেছে আর কোনো কথা আসছে না আমার মুখ দিয়ে।। আরো কিছুক্ষণ ওখানে বসে কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে আসলাম।। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। ১১ টার দিকে লিমা আসলো আর বললো.......
লিমাঃ>>দুলাভাই জুয়েল নাকি এইটা?
আমিঃ>>মনে হয়??
লিমাঃ>>কি অবস্থা?
আমিঃ>>ভালো নারে। বিপদে আছি,,??
লিমাঃ>>কেনো আবার কি হইছে। এবার তো সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে। অবন্তী আমাকে সবকিছু বলেছে। তুই তো হারামি কিছুই বলবি না। এখন বল আবার কি হইছে??
আমিঃ...... (সব কিছু বললাম)
লিমাঃ>>ওরে অনেক টাকা লাগবে??
আমিঃ>>হুম। লোন দিবে না, কারন নতুন জয়েন করেছি??
লিমাঃ>>হুম, আচ্ছা আমি ম্যানেজারকে বলে দিবো, দেখ কিছু হয় কিনা??
আমিঃ>>থ্যাংকস দোস্ত??
লিমাঃ>>একটা শর্ত আছে??
আমিঃ>>কিসের শর্ত? আচ্ছা বল শুনি,,??
লিমাঃ>>যদি টাকা দেয় তাহলে তোদের বাসর ঘরটা আমি সাজাবো। আমার অনেক দিনের শখ, কিন্তু
কেউ আমাকে সাজাতে দেয় না??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে। তুই আগে ম্যানেজারকে বলে দেখ??
লিমাঃ>>ওকে.??
এই কথা বলে লিমা আমার ডেস্ক থেকে চলে গেলো।। আমি অবন্তীকে কল দিয়ে কথাটা বললাম।। অবন্তী কথাটা শুনেই আমাকে বললো........
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__১০)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
এই কথা বলে লিমা আমার ডেস্ক থেকে চলে গেলো।। আমি অবন্তীকে কল দিয়ে কথাটা বললাম।। অবন্তী কথাটা শুনেই আমাকে বললো........
অবন্তীঃ>>হইছে আর ঢং করতে হবে না। টাকা হাতে পেলে তারপর বলবে??
এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মোবাইল টা রেখে দিলো। লিমা কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার এর রুম থেকে বের হলো আর বললো....
লিমাঃ>>এই জুয়েল??
আমিঃ>>হুম বল??
লিমাঃ>>আমি ম্যানেজারকে বলে দিয়েছি, দেখ
উনি কি বলে??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে??
লিমাঃ>>হুম ম্যানেজার হয়তো তোকে ডাকবে,, যদি জিজ্ঞেস করে টাকা কেনো দরকার তাহলে বলবি যে বাসার কাজ চলতেছে??
আমিঃ>>ওকে??
লিমাঃ>>আরো একটা গুড নিউজ আছে??
আমিঃ>>কি?
লিমাঃ>>আজকে সানি আসবে, আমি ওরে নিয়ে
আসার জন্য যাচ্ছি??
আমিঃ>>সানি কে?
লিমাঃ>>তোর দুলাভাই, আমার হবু,,,,??
আমিঃ>>বাহ! বিয়ের আগেই এতো প্রেম, বিয়ের
পর কি করবি?
লিমাঃ>>তুই আর অবন্তী যেটা করবি আমরাও
সেটা করবো??
আমিঃ>>আমাকে একটু বলিস,তোরা কি কি করস??
লিমাঃ>>মাইর খাবি ফাজিল। আচ্ছা আমি গেলাম,,,??
আমিঃ>>ওকে, আল্লাহ হাফেজ,,??
এরপর লিমা চলে গেলো। আমি বসে বসে কাজ করতে লাগলাম।। দুপুর শেষ হয়ে বিকাল হয়ে গেলো, কিন্তু ম্যানেজারের কোনো খবর নাই।।আমি ভাবতেছি টাকা হয়তো দিবে না। ছুটি হওয়ার প্রায় ২০ মিনিট আগে পিয়ন আসলো আমার কাছে। এসে আমাকে বললো....
পিয়নঃ>>স্যার আপনাকে ডাকছে..??
আমিঃ>>কে?
পিয়নঃ>>ম্যানেজার স্যার। এখন গিয়ে দেখা করেন??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি??
এক বুক আশা নিয়ে ম্যানেজারের রুমে গেলাম।। গিয়ে আমি বললাম.........
আমিঃ>>স্যার আসবো?
ম্যানেজারঃ>>মিঃ জুয়েল! আসুন ভিতরে আসুন??
আমিঃ>>থ্যাংক ইউ স্যার??
ম্যানেজারঃ>>হুম, বসুন??
ম্যানেজারঃ>>আপনার নাকি টাকার খুব প্রয়োজন?
আমিঃ>>জ্বি স্যার?
ম্যানেজারঃ>>কত টাকা?
আমিঃ>>৩ লক্ষ হলে হবে?
ম্যানেজারঃ>>এতো টাকা দিয়ে কি করবেন?
আমিঃ>>স্যার বাসার কাজ চলতেছে?
ম্যানেজারঃ>>কিন্তু মিঃ জুয়েল আপনি জয়েন করেছেন যে এখনো একমাস হয়নি। আমরা এই মুহূর্তে আপনাকে এতো টাকা দিতে পারি না??
আমিঃ>>কেনো স্যার, অন্যান্য কোম্পানি গুলোতে তো যারা কর্মকর্তা তাদের কে লোন দেয়,আর মাস শেষে বেতন থেকে কেটে নিয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রেও এটাই করিয়েন??
ম্যানেজারঃ>>হুম লোন দেয়, আমরাও দিই। কিন্তু সেটা পুরাতন লোকদের কে। আপনি যে এই অফিসে সারাজীবন কাজ করবেন তার কোনো গ্যারান্টি আছে?
আমিঃ>>সেটা না হয় ঠিক আছে, কিন্তু আমি তো আর এই মুহূর্তে চলে যাচ্ছি না। আর আমার সব কাগজপত্র আপনাদের কাছে, আপনারা ওগুলো না দিলে তো আমি অন্য কোথাও চাকরি করতে পারবো না?? আমি যদি এই অফিস থেকে চলেও যাই তাহলে আপনাদের টাকা শোধ করে তারপরেই যাবো??
ম্যানেজারঃ>>সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এতো গুলো টাকার জন্য আপনাকে কিছু ডোকোম্যান্ট জমা দিতে হবে??
আমিঃ>>কি?
ম্যানেজারঃ>>আপনাদের বাড়ির কাগজপত্র,যদি কোনো কারনে আপনি টাকা না দিয়ে চলে যান
আমরা আপনার বাড়ি দখল করবো??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে দিবো??
ম্যানেজারঃ হুমম। আর আপনার বর্তমান বেতন ২৫ হাজার টাকা, আমরা প্রতি মাসে ৫ হাজার কেটে
নিবো। বাকি ২০ হাজার পাবেন??
আমিঃ>>ওকে স্যার?
ম্যানেজারঃ>>ওকে কালকে আসার সময় বাড়ির কাগজপত্র নিয়ে আসবেন?
আমিঃ>>আসি স্যার?
সালাম দিয়ে বের হয়ে গেলাম। তারপর কাজ শেষ করে বাসায় চলে গেলাম। রাতে বসে বসে ভাবতেছি কি করে আব্বু আম্মুকে কাগজের কথা বলবো। খাওয়ার সময় আব্বুকে বলেই দিলাম দলিলের কথা। বাবা কিছুই বললো না খাওয়া শেষ করে আমি রুমে চলে গেলাম।।
কিছুক্ষণ পর আব্বু একটা ফাইল নিয়ে আমার রুমে আসলো। আমার হাতে দিয়ে বললো....
আব্বুঃ>>এখানে সবকিছু আছে। আমি জানি তুই খারাপ কিছু করবি না। আমি তোকে আমানত দিলাম,,,??
★আমি হ্যা সুচক মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।। বাবা চলে গেলো। আমি ফাইলটা রেখে দিলাম। তারপর অবন্তীকে কল দিলাম। কিছুক্ষণ ওর সাথে কথা বলে মোবাইল রেখে দিলাম। তারপর ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। সোজা ম্যানেজারের রুমে গেলাম। ফাইলটা উনার হাতে দিয়ে আমি আমার ডেস্কে গিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম।
১১ টার দিকে পিয়ন এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো। ম্যানেজার নাকি আমাকে ডাকতেছে। ম্যানেজার এর রুমে গেলাম। উনি আমাকে একটা চেক কেটে দিলো।। আমি তো খুশিতে শেষ। যাইহোক ম্যানেজার থেকে ১ ঘন্টার জন্য ছুটি নিলাম। নাহলে বিকাল বেলায় ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম।। প্রায় ১০ মিনিট পর আয়মান আসলো।
ওরে নিয়ে ব্যাংকে গেলাম।। তারপর ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে আনলাম। তারপর আবার অফিসে চলে গেলাম। কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসলাম। রাতে অবন্তীকে কল দিলাম.........
অবন্তীঃ>>বলেন সাহেব! সারাদিন কোনো খবর ছিলো না আপনার এখন মনে হয়েছে তাই না?
আমিঃ>>সরি, কাজে ছিলাম তো তাই। তুমিও
তো দাওনি??
অবন্তীঃ>>মোবাইলে টাকা ছিলো না। তোমারে তো বলেছিলাম টাকা পাঠাতে বাট তুমি তো দাওনি??
আমিঃ>>সরি, মনে ছিলো না??
অবন্তীঃ>>কয়দিন পর দেখা যাবে আমি যে তোমার
বউ সেটাও মনে থাকবে না??
আমিঃ>>সেটা ভুলবো না। আচ্ছা শোনো??
অবন্তীঃ হুম বলো??
আমিঃ>>কালকে বিকালে একটু দেখা করিও তোমার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে ??
অবন্তীঃ>>কি কথা এখন বলো??
আমিঃ>>মোবাইলে বলা যাবে না। সরাসরি বলবো??
অবন্তীঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে। খাইছো?
আমিঃ>>না মাত্র বাসায় আসলাম। তুমি?
অবন্তীঃ>>না খাবো,একটু পর। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে??
তারপর খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম?? সকালে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেলাম। এর মাঝে কয়েকবার অবন্তীকে কল দিলাম ওরে বলে দিলাম শাড়ি পড়ে আসতে?বিকাল বেলায় আমাদের কলেজের সামনেই আসতে বললাম।। আমি কাজ শেষ করে সোজা কলেজের সামনে চলে গেলাম??কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো। ওকে দেখেই আমি বললাম..........
আমিঃ>>কি ব্যাপার এতো দেরি হলো কেনো?
অবন্তীঃ>>এই সরি সরি, আসলে শাড়ি পরতে
দেরি হয়ে গেছে??
আমিঃ>>মানে?
অবন্তীঃ>>তুমি তো জানো আমি শাড়ি পড়তে পারি না। কারো না কারো হেল্প লাগে। আজকে আম্মুও বাসায় নেই মামার বাড়ি গেছে। একটা কাজিন কে বলেছিলাম আসার জন্য। সে আসতে দেরি করে ফেললো। তাই আমারও দেরি হয়ে গেলো??
আমিঃ>>এতো কষ্ট হলে শাড়ি পরার কি দরকার ছিলো?
অবন্তীঃ>>শাড়ি পড়ে না আসলে তো তোমার চেহারার দিকে তাকানো যেতো না। বলবে যে একটা রিকুয়েস্ট করেছি সেটাও রাখেনি??
আমিঃ>>আচ্ছা এবার বসো। বলো কি খাবে?
অবন্তীঃ>>আগে বলো তুমি যে এখানে আসছো
আব্বু আম্মুকে বলেছো??
আমিঃ>>না বলার সময় পাইনি। অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি??
অবন্তীঃ>>এটা কোনো কথা হলো?
আমিঃ>>সমস্যা নাই, আমি বাসায় গিয়ে বলে দিবো??
অবন্তীঃ>>এবার বলো কি এমন কথা যেটা মোবাইলে বলা যাবে না, সরাসরি বলতে হবে??
আমিঃ>>লোন তো পেয়ে গেছি??
অবন্তীঃ>>বাহ! আগে বলোনি কেনো?
আমিঃ>>এখন তো বললাম। এখন কথা হচ্ছে আমি কয়দিনের ছুটি নিবো?
অবন্তীঃ>>ছুটি কেনো?
আমিঃ>>আরে পাগল! বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে হবে, তারপর বিয়ের অনুষ্ঠান কোন দিন হবে সেটা তো ঠিক করতে হবে নাহলে আমি আন্দাজি ছুটি কিভাবে নিবো?
অবন্তীঃ>>তুমি এক সপ্তাহের জন্য ছুটি নাও??
আমিঃ>>এতো দিন দিবে না। সর্বোচ্চ দিলে ৩ দিন দিবে??
অবন্তীঃ>>তাহলে তোমার বিয়ে করার দরকার নেই??
আমিঃ>>আরে ধুর এগুলো কি বলো??
অবন্তীঃ>>ঠিকই তো বললাম, আচ্ছা তুমি কালকে অফিস করো। তারপরের কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিও??
আমিঃ>>ওকে, শপিং কোন দিন করবে?
অবন্তীঃ>>শপিংয়ে যাবো পরশুদিন??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে??
অবন্তীঃ>>আচ্ছা শোনো বাসায় কেউ নেই, আমি চলে যাচ্ছি। রাতে মোবাইলে কথা হবে, আর পরশুদিন তো দেখা হচ্ছেই??
আমিঃ>>এখন চলে যাবা?
অবন্তীঃ>>হুম??
আমিঃ>>এই যাওয়ার আগে একটা দিয়ে যাওনা??
অবন্তীঃ>>কি?
আমিঃ..... (গাল দেখিয়ে দিলাম)
অবন্তীঃ>>মাইর খাবা, বিয়ের আগে এগুলো কিচ্ছু হবে না। আসি আমি,,??
অবন্তী চলে যাচ্ছে আর আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভিতরে ভিতরে হাসতেছি। তারপর আমিও বাসায় চলে গেলাম। রাতে আব্বু আম্মুকে সব কিছু বললাম......
আম্মুঃ>>তোর বলা লাগবে না। অবন্তী আমাদের
সব বলেছে??
আমিঃ>>ও, তাহলে তো ভালোই??
আম্মুঃ>>হুম, তুই ছুটি বেশি করে নিতে পারিস
কিনা দেখিস??
আমিঃ>>এটাও বলেছে?
আব্বুঃ>>বলবে না কেনো, ও কি তোর মতো
হারামি নাকি?
আমিঃ>>আমি হারামি?
আম্মুঃ>>হুম আমাদের আদরের হারামি। যা বাবা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যা??
তারপর রুমে গিয়ে অবন্তীকে কল দিয়ে কিছুক্ষণ কথা
বললাম। কথা বলা শেষ করেই ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। সোজা ম্যানেজার এর রুমে গেলাম...
আমিঃ>>স্যার আসতে পারি?
ম্যানেজারঃ>>মিঃ জুয়েল! আসুন??
আমিঃ>>ধন্যবাদ স্যার?
ম্যানেজারঃ>>হুম কি অবস্থা বলেন?
আমিঃ>>এইতো স্যার আছি মোটামুটি।
ম্যানেজারঃ>>কিছু বলবেন নাকি?
আমিঃ>>জ্বি স্যার একটা কথা বলার ছিলো?
ম্যানেজার>>হুম বলেন?
আমিঃ>>স্যার আমার কয়েকদিন ছুটি লাগবে। আমি দরকার হলে পরের দিন গুলোতে কাজ বাড়িয়ে করে দিবো??
ম্যানেজারঃ>>সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু ছুটি কয়দিনের জন্য চাচ্ছেন?
আমিঃ>>স্যার ১ সপ্তাহ।
ম্যানেজারঃ>>এতো দিন কি করবেন?
আমিঃ>>আসলে স্যার আমার বিয়ে?? (মাথা নিচু করে বললাম)
ম্যানেজারঃ>>congratulations
আমিঃ>>থ্যাংক ইউ স্যার??
ম্যানেজারঃ>>তো বিয়ে কখন?
আমিঃ>>আপনার ছুটির উপর নির্ভর করবে??
ম্যানেজারঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে দিলাম??
আমিঃ>>ধন্যবাদ স্যার,, আপনার আর আপনার পুরো ফ্যামিলির দাওয়াত রইলো অবশ্যই আসবেন। স্যার বিয়ের কার্ড এখনো বানানো হয়নি তাই দিতে পারিনি। আজকে গিয়ে বানাবো আর প্রথমটা আপনাকে দিবো?
ম্যানেজারঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে দিয়েন?? (হাসতে হাসতে)
আমিঃ>>ওকে স্যার আমি আসি তাহলে??
ম্যানেজারঃ>>আজকে কি কাজ করবেন?
আমিঃ>>জ্বি স্যার, কালকে থেকেই ছুটি কাটাবো??
ম্যানেজারঃ>>ওকে যান??
তারপর বের হয়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করলাম?? কাজ শেষ করে বাসায় চলে গেলাম। মনের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ বইতেছে। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। আয়মানকে কল দিয়ে আমাদের বাসায় আসার জন্য বললাম। আব্বু আম্মুকেও রেড়ি হতে বলেছিলাম। এরপর অবন্তীকে কল দিলাম.......
অবন্তীঃ>>হ্যালো জুয়েল! তোমার নাম্বার অফ
ছিলো কেনো?
আমিঃ>>রাতে বন্ধ করে ঘুমাইছিলাম। রেড়ি হইছো?
অবন্তীঃ>>না হইতেছি।
আমিঃ>>আসার সময় আব্বু আম্মুকে নিয়ে
আসিও??
অবন্তীঃ>>আমার কাজিন প্রেমা আসতে চাইছে??
আমিঃ>>ওকে নিয়ে আসো??
অবন্তীঃ>>হুম, কোথায় আসবো?
আমিঃ>>গাজী সুপার মার্কেটের সামনে আসো।
আমরা ওখানে থাকবো??
অবন্তীঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে??
আমিঃ>>ওকে??
কল কেটে দিয়ে আমিও ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে গেলাম। তারপর একটা CNG ডেকে আব্বু আর আম্মুকে পিছনে বসতে দিলাম?? আমি আর আয়মান সামনে দিয়ে বসলাম।
তারপর শপিং মল চলে গেলাম? অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি অবন্তীর আসার কোনো খবর নাই।।
যাইহোক ৩০ মিনিট পর ওরা আসলো। বেয়াই বেয়ান একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো, কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললো। আমারও ইচ্ছা হয়েছিলো অবন্তীকে জড়িয়ে ধরি।। কিন্তু পাব্লিক প্লেসে এগুলো করা যাবে না।
যাইহোক তারপর ভিতরে গেলাম। প্রথমে আব্বু আম্মুর জন্য কেনাকাটা শুরু করলাম।। আব্বুর জন্য পাঞ্জাবি, পায়জামা, গেঞ্জি, জুতা আরো কিছু জিনিষ নিলাম। আম্মুর জন্য শাড়ি, ব্লাউজ সহ আরো অনেক কিছু নিয়েছে। শ্বশুর শাশুড়ির জন্যও সেম জিনিষ নিলাম।।
তারপর আয়মানকে নিতে বললাম কিন্তু সে নিচ্ছে না। অনেক জোরাজুরি করে একটা পাঞ্জাবি নিলাম ওর জন্য, সেম কালারের আমিও একটা নিলাম।।
প্রেমাকে বলার আগেই কেনাকাটা শুরু করে দিলো?? আসলে মেয়েদের শখ একটু বেশিই,, সেটা যদি জামা কাপড় এর উপর হয় তাহলে তো কথাই নাই। প্রেমাও অনেক গুলো জামা নিলো। এরপর আমার সিরিয়াল আসলো।
আমার জন্য সব কিছু অবন্তী নিজেই চয়েস করলো?? আব্বু আম্মুর জন্যও অবন্তী চয়েস করলো। আমি অল্প কিছু নিলাম কারন টাকা টা হিসাবের মধ্যে রাখতে হবে পরে যাতে টানাটানি না হয়।। এরপর অবন্তীর পালা আসলো। অবন্তী একটা নীল শাড়ি পছন্দ করলো।
আমিঃ>>বিয়েতে কেউ নীল শাড়ী পড়ে? বিয়েতে তো
শাড়ী লাল পড়ে??
অবন্তীঃ>>আমার নীল পছন্দ?? আর কোথাও লেখা আছে যে বিয়েতে শুধু লাল পড়তে হবে, অন্য কোনো কালারের শাড়ি পড়া যাবে না??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে যেটা ভালো লাগে
সেটাই কিনো.??
★অবন্তীর জিনিষ কিনতে কিনতে হয়রান হয়ে গেছি।। অন্তত ৫০টা দোকান গেছে। মেয়েদের যে এতো জিনিষ লাগে বিয়ে না করলে বুঝতাম না। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা শেষ অবন্তীর শপিং শেষ হলো। তারপর সবাই মিলে একটা হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।।
এরপর যে যার মতো করে বাসায় চলে গেলাে। আগামী কাল মেহমানদের দাওয়াত করতে হবে,পরশুদিন গায়ে হলুদ আর পরের দিন বিয়ে। বাসায় এসে ঘুমিয়ে গেলাম?? সারাদিন ঘুরাঘুরির কারনে ক্লান্ত লাগছিলো তাই শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসলো।
★পরের দিন ঘুম থেকে উঠে আয়মানকে সাথে নিয়ে বিয়ের কার্ড বানাতে চলে গেলাম।। তারপর কার্ড গুলো রেড়ি করে আত্নীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবাইকে দাওয়াত দিলাম।। আব্বুর হাতে অনেক গুলো কার্ড দিয়ে দিলাম উনার পরিচিত যারা আছে তাদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য।
★আয়মান ডেকোরেশন করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা শুরু করলো। পরের দিন মানে হলুদের দিন, সকাল থেকেই বাসা সাজানো শুরু করলো। চারপাশে লাইট, ফুল দিয়ে বাসাটা অন্যরকম ভাবে সাজানো হলো।
অনেক দিন পর এই বাসায় একটু কোলাহল শুরু হলো। আত্নীয় স্বজনরা এক এক করে আসতে শুরু করলো। আমি আর আয়মান বাজারে গেলাম।। তারপর বাজার করে নিয়ে আসলাম। বিকাল বেলায় আমি অবন্তীকে কল দিলাম।। তারপরেই.......
গল্পঃ__ভাবি__যখন__বউ (পর্ব__১১)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
অনেক দিন পর এই বাসায় একটু কোলাহল শুরু হলো। আত্নীয় স্বজনরা এক এক করে আসতে শুরু করলো। আমি আর আয়মান বাজারে গেলাম।। তারপর বাজার করে নিয়ে আসলাম। বিকাল বেলায় আমি অবন্তীকে কল দিলাম।। তার কিছুক্ষণ পর অবন্তী কল ধরলো....
আমিঃ>>ওই কল ধরতে এতো দেরি করো কেনো?
অবন্তীঃ>>ধুর আর বলিও না, বাচ্চাকাচ্চা গুলা পুরা পাগল করে দিচ্ছে। আমার সব জিনিষ এলোমেলো করে ফেলেছে??
আমিঃ>>ওওও,,,?
অবন্তীঃ>>এই জুয়েল??
আমিঃ>>হুম বলো?
অবন্তীঃ>>কি করো?
আমিঃ>>এতোক্ষন কাজ করলাম তাই তোমার খবর নিতে পারিনি, তাই এখন কল দিলাম??
অবন্তীঃ>>ও আচ্ছা??
আমিঃ>>তুমি কি করো?
অবন্তীঃ>>এই তো পার্লারে যাবো রেড়ি হচ্ছি??
আমিঃ>>আমি আসবো?
অবন্তীঃ>>তুমি আসবা কেনো?
আমিঃ>>তোমাকে কিভাবে সাজায় দেখবো, আর সাজালে কেমন লাগে সেটাও দেখবো??
অবন্তীঃ>>অতো দেখতে হবে না। সারা জীবন দেখছো, ভবিষ্যতেও দেখবা। সো টেনশন করার দরকার নেই?
আমিঃ>>হুমমম??
অবন্তীঃ>>আচ্ছা রাখি, পরে কথা বলবো??
কথাটা বলে কল কেটে দিলো। বিকাল থেকেই মেহমান আসতে শুরু করে দিয়েছে। একে একে সবাই আসলো। আয়মানও ব্যাস্ত.....
আয়মানঃ>>কিরে তুই এখানে?
আমিঃ>>হুম, আচ্ছা তুই আমাদের বন্ধুদেরর সবাইকে কল দিয়ে দেখতো ওদের কি অবস্থা! কখন আসবে?
আয়মানঃ>>আচ্ছা দিতেছি। লিমা আসবে?
আমিঃ>>যাহ শালা! আমি তো লিমার কথা ভুলেই গেছিলাম। দাঁড়া কল দিই, ও না থাকলে আমার
বিয়েও হতো না??
লিমাকে কল দিলাম আর বললাম..........
আমিঃ>>হ্যালো লিমা??
লিমাঃ>>হুম দোস্ত বল??
আমিঃ>>কিরে তুই আসবি কখন??
লিমাঃ>>আমি এসে কি করবো, তোরা সেরে নে।
আমি নাহয় কালকে আসবো??
আমিঃ>>কালকে আসবি মানে! আমি এতো কিছু
বুঝি না। তুই এক্ষুনি আসবি??
লিমাঃ>>কিন্তু আমার সাথে তো সানি আছে??
আমিঃ>>তো সমস্যা কোথায়? সানিরেও নিয়ে আয়??
লিমাঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে,নিয়ে আসছি??
আমিঃ>>হুম তাড়াতাড়ি আয়??
এই কথা বলে কল কেটে দিলাম।। তারপর আরো কিছু কাজ সেরে নিলাম। সন্ধ্যায় গোসল করে নিলাম। এরপর রেড়ি হলাম, আয়মান আমাকে সাজিয়ে দিলো। দুজনে একই পাঞ্জাবি পরলাম।
রাত প্রায় ১১ টা পর্যন্ত গান বাজনা হলো। আমার বন্ধুরা হাকিম,ফাহাদ, ফারুক, সাদ্দাম সবাই উরাধুরা নাচলো। ওদের সাথে আমিও নাচলাম। আসলে নিজের বিয়েতে নিজে নাচার মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ আছে।
কিছুক্ষণ পর লিমা আসলো। আমি ওর সাথে কথা বলে নিলাম। লিমা আমাকে সানির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর আমি ওদের ভিতরে যেতে বলি।
রাত ১১টার পর হলুদের কাজ শুরু হলো। শুরুতে আব্বু আম্মু দুজনে আসলো, আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে যখন হলুদ মাখতে যাবে তখনই দুজনে কাঁধতে শুরু করলো।। আমি নার্ভাস হয়ে গেলাম।। তারপর আয়মান হাকিম ফাহাদ এসে উনাদের সব বুঝিয়ে আবারও পরিস্থিতি ঠিক করলো।
তারপর আয়মান, হাকিম, ফাহাদ, লিমা, সানি, সাদ্দাম একে একে সবাই হলুদ মেখে গেলো। আত্নীয় স্বজন সবার হলুদ দেওয়া শেষ শুধু একজন ছাড়া।। যে জীবনেও আমাকে হলুদ দিতে পারবে না। সে হচ্ছে আমার ভাই, ভাইয়া বেঁচে থাকলে হয়তো ভাইয়া সবার আগে আমাকে হলুদ দিতো।
ভাইয়ার কথা মনে পরতেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।। আমার মন খারাপ দেখে বন্ধুরা সবাই আসলো। এরপর আয়মান আমাকে বললো..........
আয়মানঃ>>কিরে আপসেট কেনো?
আমিঃ>>এমনি??
হাকিমঃ>>মামা একটা কাজ কর??
আমিঃ>>কি?
হাকিমঃ>>চল তোর বউকে হলুদ দিয়ে আসি??
আমিঃ>>আরে ধুর জামাই কখনো বউকে হলুদ
দিতে দেখেছিস?
ফাহাদঃ>>আরে ব্যাটা কয়জন জামাই পারবে নিজের বউকে গায়ে হলুদ দিতে। চল এটা হবে অন্যরকম
গায়ে হলুদ??
আমিঃ>>তারপরেও..??
হাকিমঃ>>আরে ব্যাটা এতো কথা বলছ কেনো? চলতো,,??
আমিঃ>>এতো রাতে গাড়ি কোথায় পাবি?
আয়মানঃ>>গাড়ি লাগবে না, বাইক আছে। আমার টা আর ফাহাদের টা নিলে হয়ে যাবে??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে চল??
এরপর বাইক নিয়ে আমি আর হারামি গুলা অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। পুরো রাস্তা ফাঁকা, গভীর রাত হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি তেমন নেই? স্প্রীডে চালিয়ে অবন্তীদের বাসার সামনে চলে গেলাম।
গেইট পার হয়ে ভিতরে গেলাম। চারপাশে কেমন হইচই। আমার এক প্রকার লজ্জা করতেছে। হলুদের রাত কোথায় জামাই নিজের বাসায় থাকবে সেটা না করে বউয়ের বাসায় চলে এসেছে। মানুষ কি বলবে আল্লাহই ভালো জানে। আমাদের কে দেখে সবাই একটু অবাক হলো?? আসলে হওয়ারই কথা? অবন্তীর বাবা এগিয়ে আসলো আর বললো......
শ্বশুরঃ>>আরে জুয়েল! বাবা আসো আসো..??
হাকিমঃ>>জুয়েলের অনেক ইচ্ছা হইছে, সে নাকি অবন্তীকে মানে আপনার মেয়েকে হলুদ লাগাবে??
শ্বশুর হাসতে লাগলো, হারমিটা আমাকে জায়গা মতো বাঁশ দিলো।। শ্বশুর সামনে দিয়ে হাটতে লাগলো আর আমরা পিছনে,,,
আমিঃ>>এই শালা আমি এসেছি নাকি তোরা নিয়ে আসছিস?
ফাহাদঃ>>ঠিক আছে চল তাহলে তোর হলুদ দেওয়া লাগবে না??
আমিঃ>>মানে কি! তাহলে নিয়ে আসলি কেনো?
হাকিমঃ>>এই চুপ থাক। আমরা এসেছি ভালো
কোনো মেয়ে পাই কিনা সেটা দেখার জন্য??
আমিঃ>>শালা এতক্ষনে তোদের মতলব বুঝেছি।
দাঁড়া আমি সবাইকে বলে দিবো??
ফাহাদঃ>>তাহলে বলবো তুই বাসা থেকে চুরি করে এখানে এসেছিস। কাউকে না জানিয়ে, পিছনের দরজা দিয়ে চোরের মতো বের হয়ে এখানে এসেছিস??
আমিঃ>>ব্যাল্কমেইল করছিস?
আয়মানঃ>>এই চুপ থাক। আগে ভিতরে চল??
★ভিতরে গেলাম। সবাই অবন্তী কে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত। আমাদের কে দেখে একটু টাসকি খেলো। ভিতরে গিয়ে বসলাম। অবন্তীর হলুদ লাগানো প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর কয়েকজন বাকি আছে। অবন্তীর আত্নীয়রা সবাই এসে আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলো।। যথেষ্ট আপ্যায়ন করা হলো।
অবন্তী আমাকে দেখে বার বার তাকাতে লাগলো।।আর আমি অবন্তীর দিক থেকে চোখ অন্য কোথাও ফিরাচ্ছি না।। কারণ অবন্তীকে অসাধারণ লাগছে।।আমরা গিয়ে কয়েকটা চেয়ার নিয়ে বসলাম। আমাদের কে হলুদ দেওয়ার জন্য ডেকে নিলো।
★প্রথমে সাদ্দামকে পাঠালাম, তারপর ফাহাদ, হাকিম, আয়মান সব শেষে আমি। আমি গিয়ে অবন্তীর পাশে বসলাম। কানে কানে বললাম.....
আমিঃ সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম?
★অবন্তী মুছকি মুছকি হাসছে, একটু পর হাকিম এসে আমার কানে কানে বললো....
বাটির মধ্যে যতো গুলো হলুদ আছে সব গুলো একসাথে মাখবি, যদি একটুও কম হয় তাহলে এখানে চিৎকার দিয়ে এমন বাঁশ দিবো কল্পনাও করতে পারবি না।
★আমি পুরা আবুল হয়ে গেলাম। বাকি হারামি গুলোর দিকে তাকালাম ওরা ইশারায় সেটা করতে বললো।
কি করবো বুঝতে পারছি না। এমন সময় অবন্তী একটা মিষ্টি আমার মুখের সামনে তুলে ধরে। আমার দিকে তাকিয়ে মুছকি একটা হাসি দিলো, আমি খেয়ে নিলাম তারপর ওরেও খাইয়ে দিলাম।
★তারপর অবন্তী অল্প একটু হলুদ নিয়ে আমার মুখে আর গলায় মেখে দেয়, আমি ওই হারামী গুলোর দিকে তাকালাম। সবাই ইশারায় বলতেছে সব গুলো লাগিয়ে দেওয়ার জন্য।
★তারপর আমি অবন্তীকে ইশারায় অন্য দিকে তাকাতে বললাম, সে যখন অন্য দিকে তাকালো। আমি পুরো বাটির হলুদ নিয়ে ওর মুখে মেখে দিলাম। অবন্তী তো পুরা টাসকি খেয়ে গেলো। তারপর অবন্তী ওর মুখ থেকে কতো গুলো হলুদ নিয়ে আমার চোখ, কান গলা আর কোথাও বাকি রাখেনি।
হাকিম, ফাহাদ আর আয়মান আমার কাছে আসলো। তারপর ওরা আমার পুরো শরীরে হলুদ লাগাতে শুরু করলো?? আয়মান আমাকে ডাক দিয়ে সাইডে নিয়ে আসলো।। গিয়ে দেখি বাকিরাও এখানে আছে....
আমিঃ>>কিরে এখানে নিয়ে আসলি কেনো??
আয়মানঃ>>জুয়েল বন্ধু আরো একটা কাজ বাকি আছে??
আমিঃ>>আবার কি?
ফাহাদঃ>>তুই অবন্তীকে কোলে করে রুমে দিয়ে আসবি??
আমিঃ>>মানে কি! এতো মেহমানের সামনে ওরে
কোলে নিলে সবাই কি বলবে?
হাকিমঃ>>আরে ব্যাটা লোকে বলুক তাতে তোর সমস্যা কোথায়? তুই তোর বউকে কোলে নিবি??
আমিঃ>>আরে না এটা হয় না??
ফাহাদঃ>>হবে হবে, সব হবে??
আমিঃ>>কেমনে?
হাকিমঃ>>সবার সামনে গিয়ে বলবো আপনাদের আদরের জামাই এখানে আসার আগে মদ খেয়ে আসছে, যার কারনে এগুলো করতেছে??
আমিঃ>>মানে কি! সবাই তো জানে আমি
ভালোবেসে এগুলো করছি??
ফাহাদঃ>>তোমার ভালোবাসার উপর একটু পরেই
ঠাডা পড়বে??
আমিঃ>>না ভাই এগুলো করিস না। আমার একটা ইজ্জত আছে??
হাকিমঃ>>তোর ইজ্জতের গুষ্টি গিলাই। যেটা
বলছি সেটা কর,??
আমিঃ>>তুই অন্তত আমাকে সাপোর্ট দে,??(আয়মানকে)
আয়মানঃ>>আরে রাখ তোর সাপোর্ট, ওরা
যেটা বলেছে সেটাই কর??
আমিঃ>>এই সাদ্দাইম্মা, তুই অন্তত আমার
পক্ষে থাক??
সাদ্দামঃ>>আমি তোর পক্ষে থাকি আর ওরা সবাই আমাকে মারুক, দরকার নেই ভাই। ওরা যেটা
বলেছে সেটাই কর। পড়ে গেলাম মাইনক্যা চিপায়?
আমিঃ>>আচ্ছা দাঁড়া! একটু পর??
আয়মানঃ>>আগে স্টেজে চল??
তারপর আবারও স্টেজের সামনে আসলাম। দেখলাম অবন্তী ওর কাজিন আর বান্ধবীদের সাথে নাচতেছে।। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি.......
আয়মানঃ>>কিরে তুই নাচবি নাকি?
আমিঃ>>আর বাঁশ দিস না ভাই, এমনিতে যেগুলো দিছিস সারা জীবন মনে থাকবে??
হাকিমঃ>>এই জুয়েল! মামা এবার যা,,সবাই
বাসায় চলে যাচ্ছে??
আমিঃ>>একটু পর যাই??
ফাহাদঃ>>শালা এখন যাবি নাহলে,,,??
আমিঃ>>না না ভাই যাচ্ছি??
শালা তোরা বন্ধু নামের শত্রু, এতো সুন্দর করে সাজিয়ে আমাকে বাঁশ দিবে কল্পনাও করিনি। যাই হোক ৫০০ গ্রাম সাহস নিয়ে অবন্তীর সামনে গেলাম।। সে আমাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো "কি"!!
আমি কোনো কথা না বলে অবন্তীকে একটা টান দিয়ে কোলে তুলে নিলাম।। বিয়ে বাড়ির সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
এদিকে আয়মান,হাকিম, ফাহাদ হাত তালি দেওয়া শুরু করলো। ওদের তালি দেওয়া দেখে বাকিরাও হত তালি দেওয়া শুরু করলো।
অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেছে?? তারপর আমার বুকে মাথা লুকিয়ে ফেলে। আমি অবন্তীকে কোলে নিয়ে ওর রুমে নিয়ে গেলাম।। খাটের উপর রাখলাম। তারপর আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম। ঠিক সেই সময় অবন্তী বলে উঠলো ...........
অবন্তীঃ>>ওই কি করো?
আমিঃ>>কিছু না, জাস্ট একটু.??
অবন্তীঃ>>এই না, এখন না। গায়ে হলুদে এগুলো
কেউ করে না??
আমিঃ>>সমস্যা কোথায়, কালকে তো বিয়ে হবেই??
অবন্তীঃ>>জ্বি না মশাই, কালকেই করিয়েন??
আমিঃ>>আজকে এখানে থেকে যাই?
অবন্তীঃ>>কোনো দরকার নেই,? আজকে চলে যাও কালকে তো দেখা হচ্ছেই??
আমিঃ>>তাহলে একটা আদর দাও.??
অবন্তীঃ>>মাইর খাবা বলে দিলাম। যাও এখন কেউ চলে আসবে,দরজাও খোলা??
আমিঃ>>দাঁড়াও দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসি??
আমি উঠে দরজার কাছে গেলাম ঠিক তখনই দেখলাম অবন্তীর কাজিনরাই সবাই আসতেছে। ধুর সব জায়গায় আমি ব্যার্থ?? অবন্তীর দিকে একরাশ হতাশা নিয়ে তাকালাম সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।।
তারপর ওর রুম থেকে বাহিরে চলে আসলাম।। বাহিরে এসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আবার আমাদের বাসার দিকে রওনা দিলাম।
আমি বাইকের পেছনে বসে রইলাম।। আয়মান ড্রাইভ করতেছে আর বাকি হারামি গুলা আমারে নিয়া ট্রল করতেছে।।একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো। যদিও বাঁশ দিয়েছে কিন্তু আমারই উপকার হয়েছে।।
যাইহোক অবশেষে বাসায় চলে আসলাম। এসে ওদের সবাইকে রুম দেখিয়ে দিলাম ঘুমানোর জন্য।
তারপর আমি রান্না ঘরে গেলাম,,কোথাও হলুদ আছে কিনা দেখার জন্য। হুম একটা ছোট বাটির মধ্যে অল্প একটু আছে। আমি ওগুলো নিয়ে বের হয়ে গেলাম। সবাই হলুদ দিয়েছে শুধু একজন ছাড়া।। তার কাছেই যাচ্ছি............
ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি?? সব কিছু ভুলে গেলেও আমার ভাইয়ার কথা আমি ভুলিনি। এতো আনন্দের মধ্যেও ভাইয়ার শূন্যতা আমি অনুভব করি।। হাঁটতে হাঁটতে আমি ভাইয়ার কবরের পাশে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম, তারপর বলতে শুরু করলাম......
ভাইয়া কেমন আছিস??আমি জানি তুই অভিমান করে আছিস। প্লিজ ভাই অভিমান করিস না। আমি ব্যস্ত ছিলাম তাই আসতে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্বাস কর তোর কথা আমার মনে ছিলো।
★ভাইয়া তুই তো জানিস আজকে আমার গায়ে হলুদ।। সত্যি বলতে আজকে গায়ে হলুদের কোনো কথা ছিলো না। কারন আমার বিয়েটা অনেক আগেই হয়ে গেছে। হুম অনুষ্ঠান ছাড়া হয়েছে, কিন্তু ছোট বেলার ইচ্ছা আর অবন্তীর জন্যই এই অনুষ্ঠান করতেছি।
ভাইয়া সবাই তো আমাকে হলুদ দিলো, তুই দিবি না😥 জানি তুই অভিমান করে আছিস😌কারণ আমি তোর অবন্তীকে বিয়ে করছি তাই।
কিন্তু বিশ্বাস কর আমি জীবনেও কল্পনা করিনি এমনটা হয়ে যাবে।। আমার খুব ইচ্ছা ছিলো তোর মতো ভালো চাকরি পেয়ে তারপর মেয়ে দেখে বিয়ে করবো।
তোদের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো এটাই ইচ্ছা ছিলো। আমি সব সময় ভাবতাম আমার বিয়েতে তুই কি পরিমাণ ব্যস্ত থাকবি।
★তোর মনে আছে ভাইয়া তোর বিয়েতে সবার শেষে আমি তোকে হলুদ দিয়েছিলাম,আর পুরো বাটি দিয়ে দিয়েছিলাম। তুইও আমাকে দিয়েছিলি। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়েছিস।
আজকে যখন আমি অবন্তীকে পুরো হলুদ মেখে দিলাম তখন অবন্তীর চেহারায় আমি তোকে দেখেছিলাম। জানিস ভাইয়া আমার বুক ফেঁটে কান্না আসতে ছিলো কিন্তু কাওকে কিছু বুঝতে দেইনি।
ভাইয়া তুই তো আমাকে হলুদ দিতে যাসনি, তাই আমিই চলে আসছি, দিবিনা ভাইয়া আমাকে হলুদ? দেখ সত্যিই আমি আসছি। নিবি না আমাকে বুকে জড়িয়ে।। ডাকবি না জুয়েল বলে.? আর একবার ডাকনা ভাইয়া? তোর মুখ থেকে আবার জুয়েল ডাকটা শুনতে চাই।।
দেনা ভাইয়া আমাকে একটু হলুদ লাগিয়ে, অল্প একটু দে ভাইয়া?? আচ্ছা তোর দেওয়া লাগবে না।। আমিই তোকে লাগিয়ে দিচ্ছি,,,,,,
★তারপর বাটি থেকে হলুদ গুলো নিয়ে কবরের উপরে ভাইয়ার মুখ বরাবর মেখে দিলাম। না পারলাম না আর চোখের পানি ধরে রাখতে। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম। আমি ভাইয়ার কবরের কাছে বসে আছি এমন সময় আব্বু কল দিলো..........
আব্বুঃ>>কিরে কোথায় তুই?
আমিঃ>>এই তো বাইরে আসছি??
আব্বুঃ>>একটু পর ফজরের আজান দিবে, তুই বাইরে কি করিস? তাড়াতাড়ি বাসায় আয়??
আমিঃ>>আসছি.??
কল কেটে দিলো। আমি ভাইয়ার পাশে আরো কিছুক্ষণ বসে রইলাম ।।তারপর উঠে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে ভাইয়া আমাকে যেতে দিচ্ছে না,,পেছন থেকে টানতেছে?? আসলেই আমার ভাইয়া আমাকে যেতে দিচ্ছে না।
কারন আমি জানি এখানে আমার ভাইয়া খুব একা।।যে ভাই বাসায় থাকতে আমাকে ছাড়া ঘুমাতো না।। রাতে কোথাও গেলে আমাকে সাথে নিয়ে যেতো। ভুতের ভয়ে বেশি রাতে বাসার বাইরে যেতো না সেই ভাই এখানে একা একা কি করে থাকবে।
আমি স্বার্থপরের মতো হাঁটা দিলাম। ভাইয়ার কথা যতো মনে পরছে ততোই চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।।
তারপর আমি বাসায় চলে আসলাম।।বাবার সাথে কথা বলে নিলাম। বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কোথায় গিয়েছি কারন পাঞ্জাবিতে মাটি লেগে আছে,,, বাবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।। উনার চোখেও আমি স্পষ্ট পানি দেখলাম। তারপর বললো ""যা বাবা, অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পর"
আমি কোনো কথা না বলে রুমে গিয়ে আয়মানের পাশে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো অবন্তীর কলে......
অবন্তীঃ>>কি ব্যাপার, নতুন জামাই ঘুমাচ্ছে নাকি?
আমিঃ>>হুমম??
অবন্তীঃ>>ভালো, ভালো! এখন উঠে যাও।
অনেক কাজ আছে??
আমিঃ>>হুম, রেড়ি হবে কখন?
অবন্তীঃ>>মাত্র উঠলাম, কিছুক্ষণ পর পার্লারে যাবো সেখান থেকে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে,,??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে??
অবন্তীঃ>>তাড়াতাড়ি উঠে যাও, আব্বু আম্মুকে
একটু হেল্প করো??
আমিঃ>>ওকে??
অবন্তীঃ>>আচ্ছা রাখি এখন??
অবন্তী কল কেটে দিলো?? আমি হারামি গুলার দিকে তাকালাম।।একটার শরীর খাটে পা ফ্লোরে, সাদ্দাম হা করে আছে। হাকিমের লুঙ্গি মাথার উপরে উঠে গেছে।
আয়মানের মোবাইলটা নিয়ে সবার একটা ছবি তুললাম। শালারা এতোদিন আমাকে বাঁশ দিয়েছে।। এবার দেখ আমি তোদের কিভাবে বাঁশ দিই।
ছবি তুলে ওদের ডেকে দিলাম। আমি চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। বাইরে এসে দেখি সবাই উঠে গেছে, আমি গিয়ে নাস্তা করে আবার রুমে আসলাম।।কমিউনিটি সেন্টারে কল দিলাম কি অবস্থা জানার জন্য,সেখানে আব্বু আর মামা আছে। যাক তাহলে আর সমস্যা নাই।
হারামি গুলা এখনো ঘুমাচ্ছে। লাথি দিয়ে সবাইকে তুললাম। ওরা উঠে গেলো। নাস্তা করে নিলো।
লিমা আর সানিকে দেখতেছিনা, তাই কল দিলাম।
আমিঃ কিরে কই তোরা???
লিমাঃ আমরা তো কালকে রাতেই চলে আসছি। তোকে খুঁজেছিলাম। কিন্তু কোথাও পাইনি পরে আংকেল আন্টিকে বলে চলে আসছি??
আমিঃ>>ও আচ্ছা। তো এখন চলে আয়,,??
লিমাঃ>>নারে আমরা সেন্টারে থাকবো??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস,,??
হারামি গুলা নাস্তা করে আসলো আর বললো.......
আয়মানঃ>>জুয়েল??
আমিঃ>>বল,,??
আয়মানঃ>>তোর তো দুলাভাই নাই?
আমিঃ>>না কেনো?
হাকিমঃ>>তোরে গোসল দেওয়ার জন্য??
আমিঃ>>আমার গোসল কেন দুলাভাই দিবে?
ফাহাদঃ>>আরে বিয়ের গোসল দুলা ভাইরা দেয়??
আমিঃ>>আমারটা আমিই দিবো??
হাকিমঃ>>চল আমরা দিয়ে দিচ্ছি??
আমিঃ>>তোরা কেনো দিবি?
আয়মানঃ>>চুপ থাক, চল এখন??
ওরা জোর করে নিয়ে গেলো।। তারপর টাউটারি করতে করতে গোসলটা শেষ করলো। রুমে এসে ফাটাফাটি করে রেডি করে দিলো। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ক্রাশ খেলাম। কিছুক্ষণ পর এই হারামি গুলো আমার সামনে এসে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে......
আমিঃ>>কিরে কি হইছে?
হাকিমঃ>>টাকা দে??
আমিঃ>>কিসের টাকা?
ফাহাদঃ>>গোসল করালাম যে??
আমিঃ>>অদ্ভুত গোসল করালে টাকা দিতে হবে নাকি? আমার কাছে কোনো টাকা নাই??
হাকিমঃ>>টাকা দিবি নাকি জায়গা মতো আমরা তোকে বাঁশ দিবো??
আমিঃ>>আরে তুই কি বাঁশ দিবি আমিই তোদের
বাঁশ দিবো??
হাকিমঃ>>তাকি নাকি, দেখি তো তুই কি বাঁশ দিস??
আমি আয়মানের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে হাকিমের লুঙ্গি উঠা ছবিটা দেখালাম।।। ওরা তো হাসতে হাসতে শেষ। আমি বললাম..........
আমিঃ>>টাকা আর নিবি?
হাকিমঃ....?? (মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)
সবাই রেড়ি হলো। আমি আর বন্ধুরা সবাই মেহমানদের কে গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম? সবার শেষে আমি আর হারামি গুলা একসাথে গেলাম। আমি গিয়ে বসে আছি কিন্তু অবন্তীর কোনো খবর নাই।।কল দিলাম সে নাকি এখনো পার্লারে।
★মেয়েদের এতো কিসের সাজ আল্লাই ভালো জানে।।
খাওয়া দাওয়া শুরু হলো।।হারামি গুলা আমাকে রেখে খেতে বসে গেলো। ওদের খাওয়া দেখে আমারও খেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু দুলা তো খাওয়ার সিস্টেম নাই।
★প্রায় ১ ঘন্টা ৩ মিনিট পর অবন্তীকে নিয়ে আসলো।। আমি ওরে দেখে হা করে তাকিয়ে আছি। আয়মান এসে আমাকে একটা টোকা দিয়ে বললো....
আয়মানঃ>>ওই হা করে না থেকে ওর পাশে
গিয়ে বস। যা,,,?
★আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম, অবন্তী আমার কানের কাছে ওর মুখ এনে বললো............
গল্পঃ__ভাবি__যখন (বউ__পর্ব__১২শেষ__পর্ব)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।।
★প্রায় ১ ঘন্টা ৩ মিনিট পর অবন্তীকে নিয়ে আসলো।। আমি ওরে দেখে হা করে তাকিয়ে আছি। আয়মান এসে আমাকে একটা টোকা দিয়ে বললো....
আয়মানঃ>>ওই হা করে না থেকে ওর পাশে
গিয়ে বস। যা,,,?
★আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম, অবন্তী আমার কানের কাছে ওর মুখ এনে বললো............
অবন্তীঃ>>এই যে মিঃ জুয়েল.??
আমিঃ>>জ্বি ম্যাম বলেন??
অবন্তীঃ>>তোমার খবর আছে,,??
আমিঃ>>কেনো আমি কি করেছি?
অবন্তীঃ>>তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকাইছো কেনো?
আমিঃ>>আরে আজব আমি কখন তাকাইলাম??
অবন্তীঃ>>আমি নিজের চোখে দেখেছি, দাঁড়া বিয়েটা শেষ হোক তারপর তোমার ১২ টা বাজাবো??
আমিঃ>>ওকে ম্যাম দেখা যাবে! আপনি আমার ১২ টা বাজান নাকি আমি আপনার ১২ টা বাজাই??
অবন্তীঃ>>হুম দেখবো??
আমিঃ>>আব্বু আম্মুর ইচ্ছার কথা মনে আছে?
কথাটা শুনে অবন্তী লজ্জায় আরো লাল হয়ে গেলো??আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছি। একটু পর বড় প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসা হলো। আমি অবন্তীকে খাইয়ে দিচ্ছি অবন্তী আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আহহহ! কি এক ভালো লাগা সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
★এতো আনন্দ বিয়েতে আগে জানা ছিলো না।।খাওয়া দাওয়া শেষ, আমাদের এখন আর বিয়ে পড়ানো হবে না। কারণ আমরা আগে থেকেই স্বামী স্ত্রী। আগে যেহেতু কালিমা পড়ে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে অবন্তীকে বিয়ে করেছি, তাই এখন নতুন করে এগুলো লাগবে না। শুধু অনুষ্ঠান টা করে নিলাম।
এরপর শুরু হলো ছবি তোলা।। যদিও এর মধ্যে কয়েক হাজার ছবি উঠানো হয়ে গেছে। ছবি তোলা শেষে আমি আর অবন্তী সবার সাথে কথা বলে নিলাম।
একেবারে শেষ মুহূর্ত অবন্তীকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছি।।হারামী গুলা আসলো আমার কাছে। এসে বলতে শুরু করলো..........
হাকিমঃ>>জুয়েল! বন্ধু,,??
আমিঃ>>হুম বল??
হাকিমঃ>>অবন্তীকে দেইখা রাখিস, বেশি কিছু
করিস না??
ফাহাদঃ>>হুম অবন্তী তোর ভাবি লাগে। সো রেসপেক্ট দিয়ে সব কিছু করবি??
আমিঃ>>আরে হারামখোর! ভাবি আগে ছিলো
এখন তো বউ??
হাকিমঃ>>তবুও ভাবির দৃষ্টিতে দেখিস??
আমিঃ>>চুপ থাক হারামি??
আয়মানঃ>>ওই জুয়েল তুই গাড়িতে যা। অবন্তী উঠে গেছে??
আমিঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে তোরা অন্য গাড়িতে
বাসায় চলে আয়। আসলে দেখা হবে??
আয়মানঃ>>আচ্ছা ঠিক আছে যা.??
তারপর আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম। অবন্তীর সাথে একদম গা লাগিয়ে বসলাম?? ঠিক তখনই অবন্তী আমাকে বলে উঠলো.......
অবন্তীঃ>>ওই আরো দূরে যাও.??
আমিঃ>>কেনো সমস্যা কি?
অবন্তীঃ>>ড্রাইভার আর ওরা দেখতেছে??
আমিঃ>>দেখলে দেখুক। আমার কি? আমি আমার বউয়ের সাথে কিভাবে বসবো সেটা আমি বুঝবো?
আমি অবন্তীর একটা হাত ধরলাম।। ঠিক সেই সময় ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। গাড়ি চলছে তার আপন মনে?? আর আমি অবন্তীর হাত ধরে স্বপ্নে হারিয়ে গেলাম।।।।
অনেকক্ষণ পর বাসায় আসলাম। আমার এক খালাতো ভাইয়ের বউ অবন্তীকে কোলে করে বাসায় নিয়ে গেছে।
আমি বের হয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে বাহিরে চলে আসলাম। তারপর হাকিম, ফাহাদ, আয়মান আর সাদ্দাম ওদের সাথে বাইরে বের হলাম। রাত ৯ঃ০০ টার সময় সবাই বাসায় আসলাম। এসে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ছাদে চলে গেলাম।। অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। ১০ঃ ০০ টার দিকে আব্বু ছাদে আসলো। আর বললো....
আব্বুঃ>>জুয়েল তুই এখানে?
আমিঃ>>জি আব্বু.??
আব্বুঃ>>এতো রাতে এখানে কি করিস??
আমিঃ>>এই তো ওদের সাথে বসে আছি??
আব্বুঃ>>আচ্ছা এবার রুমে যা। অবন্তী অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে??
আমিঃ>>আচ্ছা যাচ্ছি, আপনি নিচে যান আমি আসছি??
আব্বুঃ>>তাড়াতাড়ি আয়??
আব্বু চলে গেলো। আর হারামী গুলা আমারে নিয়ে ট্রল করতে শুরু করে দিলো। হাকিম আমাকে বললো.......
হাকিমঃ>>যা বন্ধু যা। এই যুদ্ধে তুই যেন জয়ী হতে পারিস এ দোয়াই রইলো??
ফাহাদঃ>>পানি লাগলে আমারে বলিস??
আয়মানঃ>>সব কিছু ঠিক ভাবে করিস??(মুছকি হেসে)
ফাহাদঃ>>জুয়েল বন্ধু তোর লাইফটা অনেক দারুণ দুইবার বাসর। তাও আবার একই বউয়ের সাথে?
★আমি মনে মনে বললাম ওটা বাসর ছিলো না। আমার লাইফের সবচেয়ে বড় বাঁশ ছিলো।
আমিঃ>>আচ্ছা তোরা যা। ঘুমিয়ে পড়, আজকে অনেক খাটাখাটি করেছিস??
ফাহাদঃ>>আরে আমরা কি করেছি করবি
তো তুই এখন??
আমিঃ>>ধুরর শালা তোদের সাথে কোনো
কথাই নাই??
আমি নিচে চলে আসলাম।।রুমের সামনে গিয়ে দরজায় হাত দিবো এমন সময় ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আজকে তো আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করিনি। দরজার সামনে থেকে নিজেকে ঘুরিয়ে নিলাম। বের হয়ে হাটা দিলাম ভাইয়ার কাছে। ভাইয়ার কবরের পাশে গিয়ে বসলাম........
ভাইয়া কেমন আছিস রে? প্লিজ ভাইয়া রাগ করিস না আমার উপর।। আমার আসতে দেরি হয়ে গেলো।
তুই আবার এটা ভাবিস না আমি বিয়ে করে তোকে ভুলে গেছি। আরে পাগল তুই সব সময় আমার পাশে আছিস। জানিস ভাইয়া আমি যখন বিয়ের পেড়িতে বসেছি তখন চোখের সামনে তোকে দেখেছি। প্রতিটা সময় আমার মনে হতো তুই আমার বিয়ের সব কাজ করছিস।
ভাইয়া আজকে আমার বাসর রাত। তুই থাকলে হয়তো আরো বেশি মজা হতো বিয়েতে। আমি জানি তোর অবন্তীকে আমি বিয়ে করেছি দেখে তুই আমার উপর রাগ করে আছিস।
কিন্তু কি করবো বল আমি না করলে অবন্তীর অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যেতো।
ভাইয়া আমি অবন্তীকে তোর মতো করে ভালো রাখার চেষ্টা করবো। তুই আমার জন্য দোয়া করিস ভাইয়া।।।
এমন সময় অবন্তী কল দিলো,,আমি কল কেটে দিলাম। আরো কিছুক্ষণ থেকে তারপর বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসায় ডুকে যেই রুমের দিকে পা বাড়ালাম তখনই লিমা আর সানি আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়ায়।।
আর লিমা বলে উঠলো..........
লিমাঃ>>এই যে মিঃ জুয়েল! কোথায় যাওয়া হচ্ছে??
আমিঃ>>তোর ভাবি অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে??
লিমাঃ>>কিন্তু আমাদের পাওনা??
আমিঃ>>তোর আবার কিসের পাওনা?
লিমাঃ>>বাহ ভুলে গেলি??
সানিঃ>>এই যে এতো কষ্ট করে আপনার বাসর ঘর সাজালাম। সেটার পাওনা??
আমিঃ>>লিমা বোন আমার, সানি ভাই আমার আমাকে এখন মাফ করে দে। অন্যদিন ডাবল দিবো??
লিমাঃ>>জ্বি না মিঃ এখন মাফ করা যাবে না??
আমিঃ>>আচ্ছা এই নে?? (৫০ টাকা দিলাম)
লিমাঃ>>এটা কি দিলি?
আমিঃ>>তোদের বখশিষ??
লিমাঃ>>ফকিন্নি ৫ হাজারের কমে এক টাকাও
নিবো না??
আমিঃ>>ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন? এটা কি বললি? পুরো বিয়েতেও তো ৫ হাজার খরচ হয়নি। আর বাসর ঘরের জন্য ৫ হাজার দিবো?
সানিঃ>>জ্বি ভাইয়া, বাসর ঘরটাই তো আসল??
শালা মাইনক্যা চিপায় পড়ে গেলাম?পরে ১হাজার দিয়ে কোনো মতে ভিতরে গেলাম।। যাক আল্লাহ বাঁচাইছে। ভিতরে গেলাম দেখলাম অবন্তী গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আমি জানি দেরি করার কারণে এমন ভাবে গাল ফুলিয়ে রাখছে। আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম....
আমিঃ>>এই সরি সরি??
অবন্তীঃ>>তোমার কোনো ক্ষমা নাই??
আমিঃ>>এই সরি বললাম তো। আচ্ছা যাও কান ধরলাম।??
অবন্তীঃ>>উঠবস করো??
আমিঃ>>এই না প্লিজ এটা করো না??
অবন্তীঃ>>তাহলে তোমার সাথে কথা নাই??
আমিঃ>>প্লিজ কথাটা শোনো??
অবন্তীঃ>>কি শুনবো, এতোক্ষন কোথায় ছিলা?
★যদি সত্যিটা বলি, আমি ভাইয়ার কাছে গিয়ে ছিলাম তাহলে অবন্তীর মন খারাপ হয়ে যাবে। হয়তো ভাইয়ার স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যাবে তাই বললাম....
আমিঃ>>আরে ওই হারামী গুলার সাথে ছিলাম আসতে দিচ্ছিলো না। তারপর এখানে আসার সময় লিমা আর সানি আক্রমণ করে। সব কিছু ঠিকঠাক করে আসতে একটু সময় লেগে গেছে। প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও আর হবে না??
অবন্তীঃ>>মনে থাকে যেনো। এবার রুমের বাইরে যাও??
আমিঃ>>বাইরে কেনো??
অবন্তীঃ>>আমি কাপড় চেইঞ্জ করবো??
আমিঃ>>তো আমার সামনে করলে সমস্যা কি?
অবন্তীঃ>>তুমি বাইরে যাবে নাকি মাইর খাবে??
আমিঃ>>আচ্ছা বাবা যাচ্ছি?
★বাইরে চলে এলাম। প্রায় ১০ মিনিট হবে কিন্তু এখনো দরজা খুলছে না। আমি কল দিলাম.....
আমিঃ>>এই কি হলো??
অবন্তীঃ>>আর ২ মিনিট??
ধুর বাসর ঘর এমন হয় নাকি। বিরক্ত লাগছে। আরো ৭ মিনিট মোট ১৭ মিনিট পর অবন্তী দরজা খুলে দিলো।। আমি ভিতরে গেলাম। তারপর অবন্তীর পাশে গিয়ে বসলাম? একটা হালকা নীল রঙ্গের শাড়ী পড়ে নিলো? একটু অন্যরকম লাগছে......
অবন্তীঃ>>এই তোমার অজু আছে?
আমিঃ>>ছিলো বাট এখন নেই??
অবন্তীঃ>>যাও অজু করে আসো??
আমি ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে যখন অবন্তীর সামনে আসলাম তখন অবন্তী পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাবে এমন সময় আমি ওর হাত ধরে ফেললাম। তারপর ওরে বুকে জড়িয়ে বললাম.......
আমিঃ>>এই তোমার জায়গা পায়ে নয়, আমার
এই বুকে??
অবন্তীঃ>>আসো ২ রাকাত নামাজ পড়ে নিই??
আমিঃ>>হুমমম??
তারপর দুজনে নামাজ পড়ে নিলাম। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম, অবন্তীও আমার পাশে এসে বসলো.....
আমিঃ>>এই আমার খুব ঘুম পাচ্ছে??
অবন্তীঃ>>মাইর দিবো। আজকে ঘুমটুম কিছু হবে না। আজকে সারা রাত গল্প করবো??
আমিঃ>>এতো গল্প কোথায় থেকে আসবে??
অবন্তীঃ>>চুপচাপ শুনতে থাকো??
আমিঃ>>এই ভাবে গল্প শুনে মজা নাই??
অবন্তীঃ>>তো কিভাবে শুনবে??
আমিঃ>>এই যে মনে করো আমি কারো কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকবো।। আর সে আমার মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে গল্প করবে??
অবন্তী মুছকি হাসলো।। আমি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে গেলাম। আর অবন্তী আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আমাদের ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন গুলো বলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর আমি উঠে বসলাম।।তারপর অবন্তীর একটা হাত ধরে বললাম..........
আমিঃ>>মনে আছে??
অবন্তীঃ>>কি?
আমিঃ>>আব্বু আম্মুর ইচ্ছে.??
অবন্তীঃ>>এই জুয়েল না একদম না.??
-আমি অবন্তীর কোনো কথা না শুনে ওর হাত ধরে টান দিলাম।। টান দিতেই আমার সামনে চলে আসলো। আমি একটু একটু আগাচ্ছি আর অবন্তী পিছাচ্ছে। ওর ঠোট গুলো কাঁপতেছে। আমি আস্তে আস্তে ওর মুখের কাছে গেলাম। তারপর চার ঠোঁট এক হয়ে গেলো। দুজনেই হারিয়ে গেলাম অন্য এক জগতে?? শুরু হলো আমাদের নতুন জীবনের নতুন অধ্যায়...
তবে এখন মাঝে মাঝে মান অভিমান হয় দুজনের মধ্যে। কারণ আমি এখনো কিছুটা নিজের ভাবির মত দেখি অবন্তীকে।। আর এইটা অবন্তীর পছন্দ না। তাই সে অভিমান করে,শেশমেষ না পেরে একদিনতো সে বলেই দিলো,আমাকে ভালো না লাগলে বিয়ে করলে কেনো?
অবন্তীর অভিযোগ আমি নাকি সব সময় ওর থেকে দূরে থাকি। আর ওকে ঠিক মত সময় দেই না। ওকে নাকি ভালোবাসি না।
আসলে এত কিছুর কারন হলো,,আমি এখনো সব কিছু সামলে উটতে পারিনি তাই এমন হয়। পরে চিন্তা করে দেখলাম,অবন্তীর কথাই ঠিক,তাই ওকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসা শুরু করলাম।আর সেইদিন ই অবন্তীকে মন ভরে আদর করলাম।
after 4 years .............
রিনীঃ>>আব্বু, এই আব্বু উঠো। অফিসে যাবে না?
আমিঃ>>না মা আজকে অফিসে যাবো না। তোমাদের নিয়ে ঘুরতে যাবো??
রিনীঃ>>ও কি মজা কি মজা। আচ্ছা আব্বু
কোথায় যাবে?
আমিঃ>>সেটা না হয় পরে বলবো। তোমার আম্মু কোথায়?
রিনীঃ>>আম্মু তো নাস্তা রেড়ি করছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো??
আমিঃ>>ওকে মামুনি। তুমি যাও আমি আসছি??
ফ্রেশ হতে হতে আপনাদের কাহিনী টা বলে দিই। এই যে একটু আগে যে কথা বললো সে হচ্ছে আমার মেয়ে রিনী। হুম, আমাদের কন্যা সন্তান হয়েছে। রিনীর চেহারাটা ভাইয়ার সাথে প্রায় মিল।। ওর মধ্যেই আমরা ভাইয়াকে খুঁজে পাই।
এই ৪ বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি আর অবন্তী এক সাথে মাস্টার্স কমপ্লিট করি। তারপর আমি আগের অফিস মানে লিমাদের ওখান থেকে ভালো একটা অফিসে ম্যানেজার পদে চাকরি পাই।
ইচ্ছা ছিলো লিমাদের ওখানে থেকে যাবো। আমাদের বিয়ের কিছুদিন পর লিমারও বিয়ে হয়ে যায় সানির সাথে। তারপর তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়। লিমার কোনো ভাই বোন না থাকায় তার আব্বু কোম্পানি বিক্রি করে লিমার ওখানেই চলে গেছে।। আমি অন্য একটা কোম্পানিতে চাকরি নিই।
★আয়মানও খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছে?? তবে আফসোস আমার ফ্রেন্ডটা আমার সাথে নেই। চাকরীর কারনে দুইজন দুই প্রান্তে। কিন্তু সব সময় কথা হয়। আর হাকিম ফাহাদ সাদ্দাম ওরাও চাকরি করে বিয়ে সাদি করে যে যার মতো সেটেল। মাঝে মধ্যে কথা হয়।
★আমার আর অবন্তীর সম্পর্কটা আরো গভীর হলো। ভালোবাসা দিনে দিনে অনেক বেড়ে যায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। আমি আব্বু আম্মুকে রেড়ি হতে বললাম। উমারা সবাই রেড়ি হলো।
তারপর নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে উনাদেরকে ঘুরানোর জন্য নিয়ে গেলাম। আসলে আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি। আমি গাড়ি নিয়ে সোজা ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম। আমরা সবাই গাড়ি থেকে নামলাম।। নেমে ভাইয়ার কবর জিয়ারত করলাম।। হুট করে রিনী বলে উঠলো........
রিনীঃ>>আব্বু এখানে কি?
আমিঃ>>এখানে তোমার বড় আব্বু আছে??
অনাঃ>>উনাকে বলো না আমাদের সাথে ঘুরতে
বের হতে??
আমিঃ>>হুম আম্মু বলেছি। রাতের বেলা আমাদের বাসায় আসবে??
★আব্বু আম্মু আর অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি ওদের চোখে পানি এসে গেছে। হয়তো ভাইয়া থাকলে আমাদের ফ্যামিলিটা আরো সুন্দর হতো। আজকে সব আছে আমার। টাকা আছে, সুখ আছে, ফ্যামিলি আছে, সম্মান আছে কিন্তু নেই শুধু আমার কলিজার ভাইটা।
যদি আমার জীবনের বিনিময়েও ভাইয়া আবার ফিরে আসতো তাহলে হাসতে হাসতে জীবনটা দিয়ে দিতাম। নিজেকে সান্তনা দিতাম আমার ভাই, আমার কলিজা আবার ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে।
কবর থেকে হয়তো আমার ভাই বলছে""জুয়েল কাঁদিস না ভাই? আমাদের আবার দেখা হবে, খুব শীগ্রই দেখা হবে? ইহকালে না হোক পরকালে দেখা হবে?? তখন আমরা আবার এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঘুরবো।।
ভালো থাকবি সব সময়। দেখে রাখবি আব্বু আম্মুকে আর সুখে রাখবি আমার মামুনি রিনীকে সাথে তোর অবন্তীকে।।
*************সমাপ্ত***********