বিয়ে নিয়ে শিক্ষামূলক গল্প | বিয়ে নিয়ে স্ট্যাটাস

হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প

হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প

 টিউশনি থেকে ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা বেজে গেল। কলিং বেলটা টিপ দিতেই ছোট ভাই দৌড়ে এসে দরজাটা খুলে দিলো।ঘরে ঢুকতেই অনেক মানুষ দেখতে পেলাম।মা দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে দ্রুত রুমের ভিতর নিয়ে গেলেন।আমি কিছু বলার আগেই মা বললেন,


– ❝ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে তোকে দেখতে এসেছে। ❞


– ❝ আমাকে না জানিয়ে কেন তোমরা এমন করো?সারাদিন অফিস শেষ করে টিউশনি শেষ করে মাত্র ঘরে ঢুকলাম আমার কি একটু বিশ্রাম দরকার নেই? ❞


– ❝ মারে পাগলামী করিছ না, বিয়েতো করতেই হবে আজ হোক আর কাল হোক।আর যে জীবন থেকে চলে গেছে তার কথা ভেবে লাভ কি বল। ❞


– ❝ মা আমি কাউকে নিয়ে ভাবছি না।আমি তোমাদের নিয়ে ভাবছি।বাবার বয়স হয়েছে সে চাকরি করতে পারে না।আমার বিয়ে হয়ে গেলে ছোট ভাইটার লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।এর  আগেও চার জন ছেলে দেখে গিয়েছে, জানইতো যৌতুক ছাড়া কেউই বিয়ে করতে চায় না।আর আমিও চাইনা যৌতুক দিয়ে বিয়ে বসতে তার চেয়ে তুমি উনাদের চলে যেতে বলো। ❞


– ❝ কথা না বাড়িয়ে দ্রুত রেডি হয়ে আয় ❞ বলে মা চলে গেলো।


আমি কোন রকমে হাত মুখটা ধুয়ে, কপালে একটা কালো টিপ পড়ার চেষ্টা করছি কিন্তু আজ কোন ভাবেই টিপটা ঠিক জায়গায় বসছে না,তাই অবশেষে কোন রকমে কপালে লাগিয়েই বের হয়ে গেলাম।জানি তারা এমনিতেও বিয়েতে রাজী হবে না।


অতঃপর তাদের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বসলাম।ছেলের বাবা, মা আমাকে অনেক রকম প্রশ্ন করছে।আমি তার উত্তর দিচ্ছি।ছেলের খালা আমাকে খুব ভাল করে নিঁখুত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।সে যখনি আমাকে উঠে হেঁটে দেখাতে বললো, তখনি ছেলে বলে বসলো,


– ❝ কি করছো তোমরা বাজারে মাছ কিনতে এসেছো নাকি?মাত্রই তো উনি সবার সামনে দিয়ে হেঁটে ঘরে গেলো, আবার ঘর থেকে বের হয়ে আসলো।তোমরা থাকো আমি উনার সাথে একান্তে কথা বলবো।যদি দু'জনের মনে হয় আমরা দু'জনের জন্য উপযুক্ত তবেই তোমরা বাকি কথাবার্তা চালাবে। ❞


এই ছেলেটাকে একে বারেই অন্য রকম লাগলো তাই আমি হেঁটে বারান্ধায় যেয়ে দাঁড়ালাম পেছনে সেও আসলো।


– ❝ আমি আবির, ❞


– ❝ আমি ইসরাত, বলুন কি বলবেন? ❞


– ❝ আসলে তেমন কিছু না, উনাদের কথায় বোরিং লাগছিল, তারা এখনো সেই আগের যুগেই পরে আছে। ❞ (আবির)


আমি একটু হেসে উত্তর দিলাম, 

– ❝ এটা কি স্বাভাবিক নয়।প্রতিটা বাবা, মা চায় তার সন্তানের জন্য ভালো মেয়ে কেই ঘরের বউ করে নিতে। ❞ (আমি)


– ❝ হ্যা চায় কিন্তু কখনো কি ভাবে ছেলে কি সেই মেয়েকে নিয়ে সুখে থাকতে পারবে কিনা? ❞ (আবির)


– ❝ সেটাতো আমি বলতে পারবো না। তবে আমার মনে হয় বাবা, মার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাদের ছেলের বউকে দেখে নেবার। ❞ (আমি)


– ❝ জ্বী তা অবশ্যই কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো? ❞ (আবির)


– ❝  হ্যাঁ বলুন, ❞


– ❝ আসলে ঠিক বলবো না অনুমতি নিবো আপনার কপালে হাত দেবার।না মানে টিপটা ঠিক জায়গায় বসেনি। ❞ (আবির)


 আমি কোন কিছু বলতে পারলাম না। চুপ হয়ে আছি।


– ❝ সরি আমি মনে হয় ভুল করে ফেললাম। ❞ (আবির)


– ❝ না না ঠিক আছে আপনি চাইলে ঠিক করে দিতে পারেন। ❞


 আবির আলতো স্পর্শ করে কপালের টিপটা ঠিক করে দিলো।


– ❝ আচ্ছা আপনি কি এই বিয়েতে রাজী আছেন? ❞ (আবির)


– ❝ আমি দেখুন আপনাকে আগে আমার কিছু কথা শোনতে হবে। ❞


– ❝ জ্বী বলুন। ❞


– ❝ আমার একটা সম্পর্ক ছিল আগে এক জনের সাথে। জানি না সে কোথায় আছে।বেঁচে আছে হয়তো, কিন্তু যখন আমি তাকে বিয়ের কথা বলেছিলাম।তখন সে আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে আর এক সময় নিখোঁজ হয়ে যায়।আমি তাকে ভুলতে পেরেছি কিনা জানি না।তবে বিয়ের পর হয়তো কোন ভাবে তার কথা জানতে পারেন আপনি আমাকে খারাপ মনে করতেই পারেন।


আর দ্বিতীয়তো আমার পরিবারে উপার্জন করার মত কেউ নেই, আমার উপার্জনেই সংসারটা চলে।তাই বিয়ের পরেও আমি চাকরিটা করতে চাই।আর সে টাকাটা আমার বাবা মাকে দিতে চাই।এখন ভেবে দেখুন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন কিনা? ❞


– ❝ আমি আপনার দুই নাম্বার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শুরু করছি।বিয়ের পর আপনি যেমন আমার বাবা, মাকে নিজের বাবা, মার মর্যাদা দিবেন।ঠিক একই ভাবে আমিও আপনার বাবা মাকে মর্যাদা দিবো।আর যেহেতু উনারা তখন আমার ও বাবা, মা সো তাদের প্রতি আমার ও দ্বায়িত্ব অবশ্যই থাকবে।আর হ্যাঁ আপনি যদি মনে করেন আপনি নিজের সংসার চালিয়ে চাকরি করবেন তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।তবে চাকরি না করলেও কিন্তু আমি আপনার বাবা মার দ্বায়িত্বটা নিবো।


এবার আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেই, হ্যাঁ চাইলেও আমরা খুব সহজে অতীতটাকে ভুলে যেতে কিংবা পরিবর্তন করতে পারি না।তবে চাইলেই কিন্তু পারি আমরা সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ পেতে। ❞

.

আমি মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনে যাচ্ছি, এতো সুন্দর করেও কেউ কথা বলতে পারে।


– ❝ এখন যদি আপনি বলেন তবেই আমি ভবিষ্যৎ এর ব্যপারে আলোচনা করতে বলতে পারি। ❞ (আবির)


আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি জানালাম। শুধু আমি নই পৃথিবীর কোন মেয়েই হয়তো তার কথা শোনে না বলতে পারবে না।সে খুশি হয়ে ঘর থেকে বের হলো,আমি ডাক দিয়ে বললাম, 


– ❝ দেখবেন যৌতুকে কিন্তু শুধু আমাকেই পাবেন। ❞


সে আমার দিকে তাকিয়ে ছোট করে একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।আমি জানি এর চেয়ে ভালো আগামী আমার জীবনে আর আসবে না।ভাবতে ভাবতে দুচোখ থেকে দু'ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।পড়ুক না... এটা আনন্দের অশ্রু।।।

--------------

-সমাপ্ত

-ছোটগল্প

-এইতো_জীবন

-শাহরিয়ার

---------------


এমন আরও অনেক গল্প হয়েছে এখানে ক্লিক করুন এবং পড়ুন।