বিয়ে নিয়ে ছোট কিছু গল্প | বিয়ের গল্প

বিয়ে নিয়ে স্ট্যাটাস

বিয়ে নিয়ে স্ট্যাটাস

তোকে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে। বাবা-মা কি দেখে যে তোকে পছন্দ করেছে।" ভাত খেতে খেতে আফসোসের সুরে অনিমাকে কথাগুলো বললো রুদ্র।


কি দেখে আবার আমার বাবার টাকা পয়সা দেখে।" রুদ্রের প্লেটে তরকারি তুলে দিতে দিতে বলল অনিমা।অনিমার কথা শেষ হতে দেরি কিন্তু রুদ্রের রাগ উঠতে মোটেও দেরি হলোনা। সে প্লেটটা ছুঁড়ে অনিমার গায়ে ফেলে দেলো। সব ভাত তরকারি অনিমার সারা শরীরে লেগে একাকার অবস্থা। চেয়ারটা লা*ত্থি মেরে রুদ্র অনিমার চুল মুঠি করে ধরল।


খুব বাপের টাকার অহংকার না? তোর বাপ কি দিয়েছে? সেইদিন বললাম আমাকে ৫ লক্ষ টাকা দিতে কিন্তু তোর বাপ ইনি বিনিয়ে আমাকে না করে দিলো।"


আমার বাবার কাছে নেই তাই দেয়নি, যখন ছিলো তখন তো দিয়েছে। কই কোনদিনও তো তা বলোনি।বলবে কি করে তোমরা তো শুধু নিতেই জানো।"


অনিমার কথা শুনে রুদ্র রেগে তাকে ধাক্কা মেরে চলে গেলো। নিচে বসে অনিমা হাসতে হাসতে মাটিতে পড়ে থাকা খাবারগুলো তুলে নিলো। এখন আর অনিমার কষ্ট হয়না,সহ্য হয়ে গিয়েছে এসব। বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছিলো,তারা নাকি খুব খোঁজ-খবর নিয়েছে।ছেলের নাকি কোন দোষ নেই। অনিমা দু'একবার না করেছিলো কিন্তু পরিবার মানেনি বিধায় সেও আর পরবর্তীতে কোন কথা বলেনি। ভেবেছিলো পরিবারের মানুষরা যখন খোঁজ নিয়েছে তখন ভালোই হবে, হয়তো সুখে থাকবে। সুখে আছে সে তবে সেটা লোক দেখানো।


নিশাত তুই আজ শেষকথা বল এই মেয়েকে তুই বাড়িতে থেকে বিদেয় করবি নাকি আমিই চলে যাবো?"


আবার কি হয়েছে?সারাদিন অফিস থেকে ফিরেও কি একটু শান্তি পাবোনা?" বিরক্ত নিয়ে বললো নিশাত।


তুই জানিস তোর আদরের বউ আজ কি বলেছে?"


" নাবিলা আবার কি বলেছে?"


বিকেল বেলা আমি তাকে বলেছিলাম আমার পায়ে একটু তেল মালিশ করে দিতে সে বলেছে সে নাকি পারবেনা,সতার সময় নেই। কিছুক্ষণ পর এসে দেখি সে মোবাইল নিয়ে বসে আছে। দেখ নিশাত এই মেয়ে মোটেও ভালোনা, নিশ্চয়ই কোন ছেলের সাথে চক্কর আছে। তাই বলছি বাবা ওকে ছেড়ে দে সময় থাকতে।না হলে দেখা যাবে কবে আমাদের বাড়ি থেকে সব নিয়ে পালিয়ে যায়।"


ব্যস নিশাতের মাথা গরম করার জন্য এই কথাগুলোই যথেষ্ট ছিলো। দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে এসে সে নাবিলাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো।


এই বল তোর কার সাথে চক্কর আছে? বল? আমার মতো আর কয়টা ছেলেকে ফাঁসিয়েছিস? রিলেশনে থাকাকালীনই আমার সন্দেহ ছিলো তোর উপর কিন্তু আমি তা পাত্তা দেয়নি। ভালোবাসায় অন্ধ হয় তোকে ঘরে তুলে এনেছিলাম। বল কার সাথে তোর প্রেম চলছে?"


এসব তুমি কি বলছো নিশাত? আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।"


রাখ তোর ভালোবাসা তোর কাছে। তোর কারো সাথে সম্পর্ক না থাকলে তুই সারাদিন ফোন নিয়ে কি করিস হ্যাঁ? বিকেলে মাকে তেল মালিশ করে কেন দিলি না?"


নিশাত উনি যখন বলেছিলেন তখন আমার অনেক কাজ বাকি ছিলো।আমি বলেছিলাম কাজ শেষ করে মালিশ করে দেবো। কিন্তু পরে যখন গেলাম উনি বললো উনার নাকি মালিশের দরকার নেই।"


চুপচাপ একদম মিথ্যা কথা বলবিনা। বিকেলে কার সাথে কথা বলেছিলি তুই? মা নিজের চোখে দেখেছে তোকে ফোন রাখতে।"


নিশাত আমি আজ সারাদিনে শুধু তোমার সাথে কথা বলেছিলাম। তুমিই তো বিকেল বেলা আমাকে ফোন দিলে মায়ের কোন কোন ঔষধ লাগবে সেটা জানার জন্য।"


নাবিলার কথা শুনে নিশাত তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো। নাবিলা জানে নিশাত কোথায় যাচ্ছে।নিশাত ঘরে গিয়ে এখন তার ফোনটা নিয়ে দেখবো আসলেই সে সত্যি বলছে কিনা। নাবিলা চোখ মুখে আবারো রান্না করতে শুরু করলো। যত যাই হয়ে যাক তাকে এখানেই থাকতে হবে,প্রেমের বিয়ে তো তাদের তাই এসব সে সহ্য করবে না তো কে করবে। যাওয়ার জায়গা থেকেও নেই। ছোট থেকে এক নরকে ছিলো এখন এসে পড়েছে আরেক নরকে। নাবিলার বয়স যখন ৫ তখন তার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপর তার মাকে আবারো বিয়ে করানো হয়।নাবিলা তার মায়ের সাথেই ছিলো।কলেজে উঠে নিশাতের সাথে প্রেম হলো। যখন নাবিলার সৎ বাবা তার বিয়ে ঠিক করলো তখনই সে নিশাতের সাথে পালিয়ে আসে। এখন ফিরে যাওয়ার কোন পথ খোলা নেই।এমনিতেই ওই নরকে তার মা ভালো নেই, সে গেলে আরো অশান্তি বেশি হবে।


পরিশিষ্টঃ বিয়ে পারিবারিক ভাবেই হোক আর প্রেম বিয়েই হোক, দুটোর কোনটাতেই নিশ্চয়তা নেই যে ভবিষ্যতটা সুন্দর হবে। সব নির্ভর করে পরিস্থিতি আর আশেপাশে থাকা মানুষগুলোর উপর।


সমাপ্ত


গল্প-বিয়ে  লেখক: অনন্যা_অসমি


বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।