সম্পূর্ণ গল্পে বউ শাশুড়ির শিক্ষা রয়েছে | বউ শাশুড়ির সম্পর্ক

 বউ শাশুড়ির সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

বউ শাশুড়ির সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

আজ আমার শাশুড়ির বাপের বাড়ি থেকে তার দুই বোন এসেছেন। রান্না যেহেতু আমিই করি।তাই আম্মা এতটা খোঁজ নেন না।আর উনি জানেন মেহমান আসলে আমি বেশ খাতির যত্নই করি।এটা অবশ্য আমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা। মা বলে, নিজেরা যাই খাই না কেন মেহমান আসলে তাদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে আপ্যায়ন করবে।


আসল কথায় আসি।তো দুপুরের যখন খাবার দিলাম টেবিলে আম্মা হা করে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন।এরপর আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে আগুন ছুঁয়ে মারলেন।বাঘের মতো গর্জন করে বললেন, কী হলো রুমি? এগুলো কী রান্না করেছো? এতো আমাদের প্রতি দিনের খাবার। মেহমান এসেছে দেখনি?ভালো কিছু রান্না করলে কী তোমার বাপের বাড়ির সম্পদ কমে যেত?


আমি স্বাভাবিক ভাবেই বললাম, তা কেন হবে আম্মা? এই বাজার আমার শশুর আব্বা আর জামাইয়ের টাকায় করা।আমার বাপের কমে যাবে কেন? তাছাড়া এগুলো খারাপ খাবার তো না?আর বোনের বাড়িতে যাই দিয়েই খান নিজের মানুষ। কিছু মনে করবেন না। আপনি না বললেন, বউদের বাপের বাড়ির মানুষকে এত খাতির করার কী আছে? তো আমি ভাবলাম শুধু শুধু টাকা খরচের কী দরকার? নিজেদেরই তো মানুষ। আপনি যদি ভালো ভালো খাবার রান্না করলে রেগে যান।


আম্মা মনে হলো পারলে ড্রাগন হয়ে আমার দিকে আগুন ছুঁড়ে মারেন।একজন খালা শাশুড়ি বললেন, তোমার মা বুঝি এসব শিখিয়ে দিয়েছে? আমি শান্ত ভাবেই বললাম, না খালা আম্মা।আমার মা তো বলেছে,নিজে যা তা দিয়ে খেলেও মেহমানের কদর করতে।কিন্তু এ বাড়িতে বিষয় ভিন্ন। বউদের বাপের বাড়ির মানুষের সম্মান নাই। মেয়ের বাড়িতে শুধু ব্যাগ ভরে আনবেই।তাদের কোনো সম্মান থাকবে না।সেদিন আমার মা ভাই এসে এসব দিয়েই খেয়ে গেছে। তো আপনাদের এসব দিয়ে খেলে কী সমস্যা? আম্মাও তো এ বাড়ির বউ তাই না?তারা আর কথা বাড়ালো না।কোন রকমে গিলে উঠে গেল।


তবে আমি জানি এখানেই এসবের শেষ না।আমার স্বামী আর শশুর এলে বিচার হবে।আর আম্মা চাইবে বিচারে তালগাছ তার হোক।ঠিক তাই হলো। আম্মা রাতে খাবার টেবিলে ঝড় তুললেন।


হারুন তোর বউয়ের এতো বড় সাহস আমার মুখের উপর কথা বলে।আজ তোর বড় খালা আর ছোট খালা এসেছিল।তোর বউ আমার নাক কাটলো।মেহমানদের জন্য ভালো কিছু রান্না করেনি।আমরা যা খাই তাই দিয়েই খাওয়ালো।আমরা কী ফকির?


হারুন মায়ের দিকে না তাকিয়ে খেতে খেতে বলল, দেখ মা তোমরা বউ শাশুড়ি যা ইচ্ছা করো।তোমাদের বিষয়ে আমি নাই।আমি বলির পাঠা হতে চাই না।তুমি সেদিন বললে,তোমাদের বিষয়ে নাক না গলাতে।বাড়ির মহিলাদের বিষয়ে কথা না বলতে।আমি এসবের কিছুই জানতে চাই না।সারাদিন পরে বাসায় এলে তোমরা কেউ কারো নামে আমার কাছে কিছুই বলবে না।যা পারো নিজেরাই করো।


ছেলের কাছে যখন ডাল গললো না।আম্মা তখন শশুর আব্বার কাছে বিচার দিলেন।

কী গো তুমি যে কিছু বলছো না তোমার আদরের ছেলের বউকে?


আব্বা হেসে বললেন,আমি ওকে এখন আর কিছুই বলি না।সেদিন তুমিই বললে, আমি নাকি আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলেছি।আমি যেন কিছু না বলি আর রুমিকে।এখন তুমিই বলো,যাকে ভালোবাসার অধিকার নাই। তাকে শাসন করি কীভাবে? তুমিই দেখো কী করা যায়।তোমার ছেলের বউ।সব অধিকার তোমার একার।তুমি যাই শিক্ষা দিবে ও তাই করবে।এখন তুমিও ওর মা।ওর ভালো মন্দ সবকিছুর জন্য মানুষ তোমাকেই বলবে।তাই তুমি নিজের ভালোটুকু ওকে শিখিয়ে দেও।ওর ভুল সংশোধন করে দিও। রুমি সারাজীবন এ বাড়ির বউ হয়ে থাকবে।এ বাড়ির সম্মান এখন ওর হাতে।আর কী বেলবো? 


বাহ! তুমি তো ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে আমাকেই জ্ঞান দিলে।ভালো কথা। এসব আমার মনে থাকবে।আমি আর কোনো কথাই বললাম না।কারণ আব্বা আর হারুন উত্তর দিয়ে দিল।আমি মাথা নিচু করে শুনলাম।


রাতে আব্বা আমাকে বারান্দায় ডেকে বললেন, আমি জানি তুমি এমনি এমনি এসব করোনি।সেদিন তুমি খুব কষ্ট পেয়েছো।তোমার বাবার বাড়ির মানুষের সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব। সব দোষ তোমার শাশুড়ির না।আমার মা যতদিন বেঁচে ছিলেন উনিও এসবই করে গেছেন।ছেলের বউদের এভাবেই কঠোর ভাবে পরিচালনা করতেন।তোমার শাশুড়ি ঐ সব কষ্ট ভুলেনি।সেই রাগ কষ্ট তোমার উপর পড়ছে।সারাজীবন এক সাথে থাকবে তোমরা তাই এসব ঠিক না।আমি তোমার মা'কে বুঝিয়ে বলবো।


আমি আব্বার কাছে ক্ষমা চাইলাম।আমি এসব করতে চাইনি আব্বা। কিন্তু এসব দূর হোক বাড়ি থেকে এটা চাই। আমাদের সম্পর্ক সারাজীবনের।আমার বাবা, মা, ভাই, বোন এখানে এসে যেন সম্মান পায়।তারা আমাকে দেখে যেন শান্তি পায় এটাই চাই। আমি চাই না তারা আমার কথা চিন্তা করে কষ্ট পাক।আমি আম্মার কাছে ক্ষমা চাইবো।


না থাক।এখন আর কিছু বলো না।


কয়দিন পরে আম্মা তার ছোট মেয়ে হেনার বাড়িতে বেড়াতে গেলেন।সেখানে গেলে ব্যাগ ভরে কতকিছু যে নিয়ে যান। যাতে মেয়ের সম্মান বাড়ে।একদিন থাকার কথা ছিল। কারণ হেনা প্রেগন্যান্ট। মেয়ের সাথে তাই একদিন থাকবেন ভেবেছেন।কিন্তু আম্মা বিকাইলে চলে আসলেন।মনটাও খারাপ। আমি প্রথমে ভাবলাম হয়তো হেনার শরীর ভালো না।


তাই জিজ্ঞেস করলাম।আম্মা হেনা ভালো আছে তো? কোনো সমস্যা হয়েছে? তাহলে হারুনকে বলি হেনাকে কিছু দিনের জন্য নিয়ে আসুক।আম্মা উত্তর না দিয়ে বলল, টেবিলে খাবার দেও।আমি খুব অবাক হলাম।এই সময়ে খাবার! কিছু না বলে খাবার দিলাম।খাওয়া শেষে আম্মা চা দিতে বললেন।


দুজনের জন্য দু কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসলাম।আম্মার হাত ধরে বললাম, কী হয়েছে? কোনো চিন্তা করবেন না।আমরা সবাই আছি।হেনার কোনো কষ্ট হবে না।এখনো চার মাস বাকি।আর দুই মাস গেলে নিয়ে আসবো আমরা। আম্মার চোখ দিয়ে পানি পড়লো। আমি আম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম আম্মা ভয় হচ্ছে। কী হয়েছে বলুন তো?


আজ মেয়েটা অসুস্থ তাই হয়তো চা নাস্তা দিয়ে বিদায় করতে চাইলো।আমি তো খালি হাতে যাইনি।এই সম্মান পেলাম?দুপুর বেলা কেউ এসব দেয়?আমি আর থাকতে পারলাম না।হেনা নিজেই রান্না করতে যাচ্ছিল।আমার যাওয়া দেখে হেনার শাশুড়ি নাস্তা দিয়ে পাশে তার মেয়ের বাসায় চলে গেল।আমার কী কোনো আত্মসম্মান বোধ নেই?হেনার কষ্ট হবে ভেবে চলে আসলাম।


তুমিও সেদিন কষ্ট পেয়েছো বউমা।আমার এমন করা ঠিক হয়নি।কী করবো বলো? জীবনে এত তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে যা বলে শেষ হবে না।আগামী শুক্রবার তোমার বাপের বাড়ির সবাইকে আসতে বলবো।আমি নিজের হাতে রান্না করবো।

আমি আম্মার হাত ধরে বললাম, আপনি বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক। আর কিছু লাগবে না।


বেশি বুঝো না।আমি একটু নরম হলেও আমিই তোমার শাশুড়ি। আমার কথাই কথা। আমার শাশুড়ি হতে এসো না।


তাহলে আমিও আপনার ছেলের বউ।সেদিন খালাদেরও আসতে বলবো।ঐদিন ওভাবে এতকিছু বলা ঠিক হয়নি।আর এমন ব্যবহার করাও উচিত হয়নি।কষ্টে দুঃখে ভালো কিছু রান্না করিনি।


আম্মা হেসে বললেন,আচ্ছা বলো।হঠাৎ মনে হলো পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। দেখি পর্দার আড়ালে আব্বা আর হারুন দাঁড়িয়ে আছে। তারাও হাসছে।বউ শাশুড়ির হাসি তাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। 

তিক্ত স্মৃতি মুছে যাক ভালোবাসার ছোঁযায়।


-ছোট গল্প -ঃ -সম্মান


এমন আরও বউ শাশুড়ির গল্প পড়ুন।