অনেক কষ্টের গল্প | ভালোবাসা কষ্টের গল্প ২০২৪

 অবহেলা কষ্টের গল্প

অবহেলা কষ্টের গল্প

আমার বৌ এর রান্না ভালো ছিলো না😭

ওর রান্নায় কোনদিন নূন কম হত তো কখনো মশলার গন্ধ করতো। 

আম্মা অনেক চিল্লাইতো।

আম্মার কমন ডায়লোগ ছিলো - 


এইডি কি রান্ধো? 

খাওন যায় না। 

আমি মইরা গেলে আমার পোলার তো না খায়া ম/রা লাগবো।


ও যখন রেগে রেগে আমাকে জিজ্ঞাসা করতো 


- কি রান্না কেমন হইসে? খাওন যায়?


আমি খুব নরম স্বরেই বলতাম 


- হুম যাবে না কেন?


ভয় পাইতাম কিনা জানিনা। কেন মিথ্যা বলতাম তাও জানিনা। 

চাইলে বলতে পারতাম 

- এমনে না ওমনে রান্না কইরো। 

তাহলে ভালো হবে।


কোনদিন বলি নাই।


একদিন অফিসে খাবারের বাটি খোলার সাথে সাথে খুব সুন্দর ঘ্রাণ আসলো। 

বিয়ের ৭ মাসে এই ঘ্রাণ আমি ওর রান্নায় পাই নাই। 

সেদিন খাবার এত মজা হইসিলো যে আমাকে আরো ২ প্লেট খেতে দিলে খেয়ে ফেলতে পারতাম।


আবেগ ধরে রাখতে না পেরে ওকে ফোন করলাম। হয়ত বলা উচিৎ ছিলো 


- আজ রান্না অনেক দারুন হইসে। 

এমনে রান্না কইরো। 


কিন্তু প্রশংসা করলাম না। 

আমার কাছে জিনিসগুলা খুব বিব্রতকর লাগতো। 

স্বামী আবার স্ত্রীকে থ্যাঙ্কস , স্যরি , প্রশংসা কেন করবে? 

রান্নাটা তার ডিউটি। ভালো করলে প্রশংসা করাটা আমার ভালো লাগে না। 


আমি ফোন করে বললাম 


- কই আজকে না মার্কেটে যাইতে চাইসিলা?রেডি হয়ে আমার অফিসে ৫ টার সময় চলে আইসো।


বৌ ব্যাপক খুশি হয়ে গেলো। 

আচ্ছা বলে ফোনটা রেখে দিলো।


আমি অফিস শেষ করে ঘড়ির কাটায় দেখলাম ৫.১০ বাজে। 

ফোন দিলাম। 

ফোন রিং বাজে কেউ ধরে না। 

ফোন দিতেই থাকলাম। 

ফোন বাজতেই থাকলো। 

কোন খবর নাই। 

আম্মা কে ফোন দিলাম পরে শুনলাম ও অনেক আগেই বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।

 ৬ টা বেজে গেলো। 

অস্থির লাগা শুরু করলো।


এদিক সেদিক খোঁজ করা শুরু করলাম। 

হাতে ফোনটা দিয়ে কল দিয়েই যাচ্ছি। এরপর একজন ফোন ধরলো।


দৌড়ে গেলাম আয়েশা মেমরিয়াল হাসপাতালে। মহাখালীর ফ্লাইওভার পার হওয়ার সময় বাসের চাপা খেয়েছে বৌ আমার। 

পা দুইটা নাকি ঐখানেই ঝুলতেসিলো। 

ফোন ধরলো এক সার্জেন্ট … সে ই বললো। 

এতক্ষণ ফোনটা তারা খেয়াল করে নাই। 

তাই রিসিভ করতে পারে নাই।

যত দ্রুত সম্ভব গেলাম।


আমাকে দেখতে দেয় না ডাক্তাররা। বারবার অনুরোধ করলাম। দিলোনা। বলল


- এত মুমূর্ষু অবস্থায় আপনি দেখতে পারবেন না।


৪ ঘন্টা পর তখন রাতের ১২.৩০ টা বেজে গেছে। 

ঢাকায় যত আত্মীয় ছিলো সবাই চলে আসলো। 

আমাকে ডাক্তার ডেকে বলল 


- পা তো আমরা কেটে ফেলেছি। রক্ত অনেক গিয়েছে। জ্ঞান নেই। আসলে আপনে দেখে আইসেন।


ভোর হয়ে গেলো। ঘুমাইতে পারলাম না। ঘুম আসলোও না। কারো সাথে কথা বলতে পারছিলাম না। 


এরপর নার্স এসে বলল

- জ্ঞান এসেছে কিন্তু বেশি মানুষ যাবেন না। ১/২ জন যেতে পারেন।


আইসিউতে ঢুকে কলিজা কামড় দিয়ে উঠলো। 

ওর দুইটা পা নাই। চেহারায় কোন মেকাপ নাই। কাঁটা ছেঁড়া দাগ। কিন্তু আজকে ওকে অনেক সুন্দর লাগছিলো।


সামনে গিয়ে কেন যেনো ঐদিন মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো - তোমাকে আজ সুন্দর লাগছে।


ওর মুখে অক্সিজেন মাক্স। হাতে প্লাস্টার। সম্ভবত হাত ধরতে চাচ্ছিলো আমার। ইশারা দিয়ে কি যেন বলসিলো।


৫ মিনিটও থাকতে পারলাম না। 

নার্স বের করে দিলো।


কে জানতো ঐটা আমাদের শেষ দেখা হবে।

বিকেলেই শারিরীক অবস্থা খারাপ হতে লাগলো। 

মাগরিবের পরপর জীবনের সাথে যুদ্ধ করে চলেই গেলো।


৯ বছর হয়ে গেছে ও মারা গেছে। 

আমি হোটেলে খেতে বসলেই বাবুর্চিকে খুঁজে বলি

- রান্না অনেক ভালো হইসে। 

এমনেই রান্না কইরেন।


আমার কাছে মনে হয় আমার মুখে প্রথম আর শেষবারের মত প্রশংসা শুনতেই আল্লাহ তারে ঐ আধা বেলা বাঁচায়া রাখসিলো। 

তাও আফসোস লাগে সেদিন ফোনে একবার বলা দরকার ছিলো


- রান্নাটা অনেক ভালো হইসে……❤️💔


.. সমাপ্ত


এমন আরও গল্প পড়ুন।