বউ শাশুড়ির সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ২০২৪

বউ শাশুড়ির সম্পর্ক

বউ শাশুড়ির সম্পর্ক

 সকালে দেখলাম ভাইয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি এসেছেন। ঠিক তখন থেকেই বাড়িতে রান্না-বান্নার বেশ তোরজোর চলছে।


সারা বাড়ি পোলাও-গোস্তোসহ ভালো, ভালো খাবারের ঘ্রাণে মাতোয়ারা। আমি আম্মার ঘরে জানালার পাশে বসে মোবাইল দেখছিলাম। এখান থেকে ভাইয়ার ঘরের ভেতর সবকিছু পরিস্কার দেখা যায়।

কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম ভাবি বিছানায় বসিয়ে তার বাবা-মা’কে যত্ন করে খাবার বেড়ে খাওয়াচ্ছেন। এদিকে আমার কথা বাদই দিলাম, আমার বয়স্ক আম্মাকে ভাবি একবারও ডাকার প্রয়োজনবোধ করলেন না।


মনে পড়ে গেলো আমার স্বামীর বোনেরা বেড়াতে আসলেওতো আমি হাসিমুখে কখনো তাদের সাথে দুটো কথা বলি না। ভালোমন্দ রান্না করলেও তাদের নিয়ে একসাথে খেতে বসি না।


এই যে গতকাল আমার আম্মাকে দেখতে আসার সময়ও তার পচ্ছন্দের চিংড়ি মাছ দিয়ে তিন পদ রান্না করে এনেছি। অথচ সেই চিংড়ি মাছ দিয়েই গতপরশু পালং শাক রান্না করে আমার শাশুড়িকে ছোট্ট একটা বাটিতে সামান্যই দিয়েছিলাম।


আমি বোধহয় কিছু সময়ের জন্য ভাবির সাথে নিজেকে মেলানোর চেষ্টা করছিলাম। আম্মার ডাকে সেই ঘোর কাটলো। তাকিয়ে দেখলাম আম্মার হাতে আমাদের জন্য খাবারের বাটি। গরুর গোস্তের হাড়-চর্বিসহ কয়েক টুকরো, ইলিশ মাছের লেজের পাশের পিসটা, পাতলা ডাল, আর অল্প কিছু পোলাও।


আমি আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলাম না। বিছানা থেকে এক লাফে উঠে দাঁড়ালাম ভাইয়ার ঘরের উদ্দ্যেশে। পেছন থেকে আম্মা হাতটা টেনে ধরে বললেন,

- থাম তুই, আমি মানিয়ে নিয়েছি এসবে। এটা ওদের সংসার, ওদের মতো করে চলতে দে। তুই কেন একদিনের জন্য এসে অশান্তি সৃষ্টি করবি?


হঠাৎ কেউ যেন আমার ভেতর থেকে বলে উঠলো,

- আজ নিজের মায়ের সাথে এসব দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? যখন অন্যের মায়ের সাথে একই কাজ করিস, তখন তোর এই শক্ত বিবেক কোথায় লুকিয়ে থাকে?


পরক্ষণেই আমার চোখদুটো ভিজে উঠলো। হ্যাঁ ঠিকইতো, এই দৃশ্যটা আমার কাছে কেন নতুন মনে হচ্ছে না? এটাতো রোজকার দিনের ঘটনা। যা আমিও আমার শাশুড়ির সাথে করে থাকি৷

মাছের লেজের পিস থেকে শুরু করে মুরগির গোস্তের ছোট-ছোট টুকরোসহ একবাটি ঝোল আলু সমেত তরকারি দেওয়া আমার নিত্যদিনের রুটিন।


আমার স্বামী জানতেও পারেনা তাকে জন্ম দেওয়া, কষ্ট করে বড় করা বৃদ্ধা মায়ের জন্য তার স্ত্রী এই রকম খাবার বরাদ্দ রাখে। ঠিক যেমন আমার ভাইও জানলো না আজ।


.


আমি আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালাম না। আম্মা আমাকে তাড়াহুড়া করে বোরকা পড়া দেখে প্রশ্ন করলো কোথায় যাচ্ছি? ছলছল চোখে আম্মাকে বললাম ভুলগুলো শোধরাতে। জানি না আম্মা আমার কথায় কি বুঝে বসলো। অবশ্য তাদের বোঝার কথাও না৷


কেননা তাদের সবার কাছেই আমি ভালো মেয়ে। তবে কোনো একজনের কাছে যে আজও ভালো ছেলের বউ হয়ে উঠতে পারিনি।


ছেলের বউ

সোনিয়া শেখ


বাস্তব জীবনের সমস্ত গল্প গুলো পড়ুন।