পরকিয়া প্রেমের গল্প | হাতে নাতে ধরা

 পরকিয়া প্রেমের স্ট্যাটাস

পরকিয়া প্রেমের স্ট্যাটাস

আমি বাসায় ঢুকেই দেখলাম এক মহিলা আমার পোশাক পরে আমার বেডরুমে বসে আছে। অবাক হয়ে গেলাম। কারণ, দু মাস আগে আমার বিয়ে হয়েছে। আর এই বাসায় আমি আর আমার স্বামী মাহিন ছাড়া কেউ থাকে না।গত তিনদিন আগে একটা কাজে আমি বাবার বাড়ি গিয়েছিলাম।আরো তিনদিন পরে ফিরে আসার কথা ছিলো। কিন্তু আজই ফিরে এলাম।আর ফিরে এসে দেখলাম আমার ঘরে অন্য নারী! কে এই মহিলা? 


ওই মহিলাও আমায় দেখে হকচকিয়ে গেছে। আমি বেশ রাগত স্বরেই বললাম, 

-- "কে আপনি? এখানে কী চাই?"


মহিলা আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমার স্বামী মাহিন কিচেন থেকে বের হয়ে এলো। আমায় দেখে সেও অবাক হলো ভীষণ! সে বললো, 


-- "কী ব্যাপার, তুমি? আজই চলে এলে যে? "


-- "আমি বললাম, এই মেয়ে কে মাহিন? "


কিছুটা চমকে উঠে মাহিন বললো, 


-- "আমার বোন।" 

-- "মানে?" 


-- "মানে আবার কী, জান! ও হলো মিলি। আমার চাচাতো বোন। চট্টগ্রাম থেকে আসছে গতকাল। ও ই তো আমাদের বিয়েতে থাকতে পারে নি।আরে, তুমি চিনলে না? ওর কথা তোমায় বলেছিলাম। চট্টগ্রামে পড়াশোনা করে।আমরা খুব খেলতাম ছোটবেলায়।"


আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। মাহিন আবার বললো, 

-- "মিলি, এই হচ্ছে তোর ভাবী রূপা।"


আমার সাথে মিলির চোখাচোখি হলো। বিনা বাক্য ব্যয়ে কেবল হাসি বিনিময় করলাম। 


আমার কপাল থেকে চিন্তার রেখাটা যাচ্ছে না। আমি মনে মনে অনেক কিছু ভেবে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করাটা এই পরিস্থিতিতে সমীচীন কিনা ভাবছি। হঠাৎ করে মাহিন আমার হাত ধরে দ্রুত অন্য রুমে নিয়ে গেলো। তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিলো। এরপর বিছানায় নিয়ে আমায় চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো। আমি আরো অবাক হয়ে যাচ্ছি। এতো আদর দিচ্ছে কেনো মাহিন? 


আমি বললাম,


-- "কী ব্যাপার, ঘটনা কী?"

-- "আমি কী আমার বউকে আদর করতে পারি না?"

-- "না, তা না। আদরের মাত্রাটা বেশি মনে হচ্ছে।"

-- "আসলে বিয়ের পর তোমায় ছাড়া একদিনও থাকি নি। খুব মিস করছিলাম গো।"

-- "তাই নাকি? তুমি এতো রোমান্টিক বুঝি নি তো!" হেসে বললাম। 

-- "এখন থেকে বুঝবা!"


-- "আচ্ছা, এবার আসল কথা বলো।মিলি এখানে কেনো এসেছে?আর ও আমার ড্রেস পরে আছে কেনো?ওর নিজের ড্রেস কোথায়?মিলি এসেছে সে কথা তো তুমি একবারও জানাও নি আমায়।কেনো বলো নি কিছু?" 


-- "জানি, তোমার মনে এখন হাজারো প্রশ্ন। আমি ধীরে ধীরে জবাব দিচ্ছি। শোন, মিলি একটা ছেলের সাথে ঢাকায় পালিয়ে এসেছে।কিন্তু ছেলেটা মিলির কাছে থাকা মূল্যবান সব গহনা আর টাকার ব্যাগ নিয়ে মিলিকে একা রেখে পালিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সে একা বাসায় ফিরতে পারছে না।তাই আজ সকালে আমাদের বাসায় এসেছে।ও তো জানতোও না যে তুমি বাসায় নেই।আর আমি তোমাকে জানানোর অবসর করে উঠতে পারি নি। "


আমি শুধু বললাম, 

-- " আহা রে! মেয়েরা যে কেনো একই ভুল করে!এখন মেয়েটা কীভাবে বাসার লোকদের ম্যানেজ করবে?"


-- "আরে, তুমি তো দেখছি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছো। টেনশন করো না, ব্যবস্থা একটা হবেই। তুমি এখন শুধু মিলিকে কিছু বলো না। "


-- "আচ্ছা, ঠিক আছে।"


এর দুদিন পর আমি দুজনকে খুব ঘনিষ্ট অবস্থায় আবিষ্কার করলাম।তখন ভর দুপুর।আমি খেয়ে কখন ঘুমিয়েছি জানি না।ছুটির দিন ছিলো। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে মাহিনকে না পেয়ে পাশের ঘরে উঁকি দিতেই দেখলাম মিলি মাহিনের বুকে শুয়ে আছে।এরা নিজেদের মধ্যে এতোটাই মশগুল যে আমি দরজায় এসে দাঁড়িয়েছি বা আমি এই গোটা মানুষটা আজ বাসায় আছি তা নিয়ে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।নিজ মনেই হাসলাম।ওখান থেকে সরে আসলাম।আমার বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলাম।  


একটু পর মাহিন গুটি গুটি পায়ে এসে আমার বিছানায় বসলো।আমিও নড়েচড়ে উঠে বসলাম। আমায় এমনভাবে দেখে মাহিন বোধ হয় অস্বস্তি অনুভব করলো।


বললো,

-- "কী ব্যাপার, উঠে বসলে যে? ঘুম হলো?"

-- "হুম, চমৎকার হয়েছে। ঠিক তোমার যেমন হলো।" 

-- "মানে কী?"

-- "কিছু না, মাহিন। মাথাটা খুব ধরেছে। চা বানাবো। তুমি চা খাবে তো?"

-- "হুম, খাবো। আচ্ছা, মিলিকে জিজ্ঞেস করে দেখি সেও খাবে কিনা।"


আমি হাসলাম।বললাম,

-- "অবশ্যই জিজ্ঞেস করো। একসাথে চা খেতে খেতে আড্ডা দেয়া যাবে।"


মাহিন হাসিমুখে উঠে গেলো।আমার যে মাথা ব্যথা করছে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। 

মিনিট বিশেক পর আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আমার বেডরুমে প্রবেশ করলাম।দেখলাম মাহিন আর মিলি খোশগল্প করছে।আমার হাত থেকে চায়ের কাপ ওদের হাতে দিলাম।মিলি বললো,


-- " থ্যাংক ইউ, ভাবি। ইউ আর সো সুইট।" 


আমি আবারো হাসলাম। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে খুবই রিলাক্স ভঙ্গিতে চায়ে চুমুক দিচ্ছি।পাশাপাশি উপভোগ করছি এক জোড়া কপোত-কপোতীর নির্লজ্জ প্রেম! 


হঠাৎই ডোরবেল বেজে উঠলো। চমকে উঠলাম আমরা তিনজনই। মাহিন চায়ের কাপটা রেখে দরজা খুলতে গেলো।আমিও গেলাম পিছু পিছু। দরজা খোলার পর দেখলাম তিনজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছেন।মাহিন বললো, 


-- "আপনারা? কী চাই? "


পুলিশ কিছু না বলে ভেতরে প্রবেশ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 


-- " আপনিই কী মিসেস রূপা?" 


আমি বললাম,

-- "জ্বি। আমিই ফোন করেছিলাম।"


মাহিন ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো।ইশারায় জানতে চাইছে এসবের মানে কী।কোন উত্তর দিলাম না তার ইশারার।পুলিশ আবার বললো, 


-- " আসামী কই?" 


আমি ঘরটা দেখিয়ে দিলাম। মাহিন বলে উঠলো, 

-- " হচ্ছে টা কী এসব? মিলি আসামী মানে?" 


বললাম,

-- " দেখো মাহিন, আমি সবকিছু জেনে গেছি। মিলি আসলে তোমার চাচাতো বোন না। ওর আসল নাম রেবেকা।ও তোমার প্রেমিকা।মিলিকে নিয়ে যে ঘটনাটা তুমি আমায় বলেছো তা সত্য ছিলো কিন্তু কাহিনীটাকে তুমি উল্টে দিয়েছো।মিলির বয়ফ্রেন্ড মিলির সবকিছু নিয়ে যায় নি, মিলি তার বয়ফ্রেন্ড এর কাছে থাকা সব মূল্যবান জিনিস নিয়ে চলে আসছে।আর তুমি দ্রুত বড়লোক হওয়ার নেশায় আমার মতো ধনী বাবার মেয়েকে বিয়ে করেছো।সুযোগ পেলেই টাকা পয়সা নিয়ে মিলিকে নিয়ে দেশ ছাড়তে, তাই না?তোমরা প্ল্যান করে ধনী ছেলে মেয়ে গুলোকে ফাঁদে ফেলছো। " 


মাহিন আমতা আমতা করছে। পুরো হতভম্ব হয়ে গেছে সে। কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম, -- " হয়তো ভাবছো আমি এতোকিছু জানলাম কীভাবে?"  


-- "বিয়ের ১ মাসের মধ্যেই তোমাকে নিয়ে আমার সন্দেহ হয়৷খোঁজ নিলাম তোমার ব্যাপারে। পরকীয়ার বিষয়ে জানতে পারি।কিন্তু কোন মেয়ে তা জানতে পারছিলাম না।মিলিকে এখানে দেখতে পেয়ে তাকে খুব চেনা চেনা লাগে। পরে মনে হয় গত দুদিন আগে এই মেয়েটার একটা নিউজ আমার ফেসবুক নিউজফিডে ঘুরছিলো।মিলির বয়ফ্রেন্ড মিলির সব রকম তথ্য দিয়ে প্রতারণার একটা নিউজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয়।আমি দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাই। মিলির বয়ফ্রেন্ড এর সাথে যোগাযোগ করি।তাছাড়া আমি তোমার চাচা চাচী র সাথেও যোগাযোগ করি।এই মিলি তোমার চাচাতো বোন মিলি নয়।"


মাহিন অবিশ্বাস্য চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি যে এতো বুদ্ধিমতী সে হয়তো তা বুঝে উঠতে পারছিলো না। শুধু বললো, 


-- " তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে, রূপা!"


-- " হুম, ভুল হচ্ছে না, ভুল করেছিলাম।কোন খোঁজ খবর না নিয়ে,তোমার মিষ্টি কথায় ভুলে তোমায় বিয়ে করে ভুল করেছিলাম।" 


-- "দেখো রূপা, আমিও তো মানুষ।ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। "


আমি এবার শব্দ করে হাসলাম। কাছে গিয়ে বললাম,


-- "ডিয়ার বর, কিছু ভুলের ক্ষমা হয় না, কখনোই হয় না। ডিভোর্স লেটার টা পাঠিয়ে দিবো। জেলে বসে সিগনেচার করে দিও।" 


পুলিশ দুজনকে নিয়ে যাচ্ছে হাতকড়া পড়িয়ে।আমি শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে আছি তাদের দিকে। 


সমাপ্ত 


গল্প: ঘটনার অন্তরালে


এমন আরও গল্প পড়ুন।