ভালোবাসার গল্প
গল্পঃ_চরিত্রহীন_ছেলের_ভালোবাসা_
(পর্ব_০১)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
ঠাসসস..কি ভাবলেন কেউ আমাকে চড় দিয়েছে। হুমম ঠিক ভেবেছেন আমাকে চড় দিয়েছে। কিন্তু কে
দিয়েছে সেটা জানেন, আমার বউ। হ্যা আমারই বিয়ে করা বউ। কিন্তু কেনো দিয়েছে বুঝতে পারছেন না
তাই না।। গল্পের সাথে থাকুন সবকিছু বুঝতে পারবেন। বউ আমাকে চড় দিয়ে বললো..........
নিশিঃ কুত্তার বাচ্চা তোকে না মানা করেছি আমার বিছানায় সুবি না। তুই কোন সাহসে সুইলি আমার বিছানায়??
আমিঃ দেখো নিশি তুমি আমাকে যা বলো না কেনো, কিন্তু আমার বাবা মাকে নিয়ে কথা বলবে না??
নিশিঃ বললে কি করবি তুই। আর আমার নাম ধরে ডাকার সাহস কে দিয়েছে তোকে?
আমিঃ তুমি আমার বউ। আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকতেই পারি, এতে সাহসের কি আছে?
নিশিঃ কিসের বউ হে। আমি তোকে বলছি না, আমি তোকে মেনে নিতে পারবো না। তাহলে তুই কেনো
বার বার বউ, বউ করিস হে?
আমিঃ সরি ভুল হয়েছে আর এমনটা হবে না?
নিশিঃ সকালের মুড টাই নষ্ট করে দিয়েছে ধুররর?
এই বলে নিশি চলে গেলো।। আর আমি নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। সকালে নিশির রুমে এসে বিছানায় সুয়ে ছিলাম। তাই আমার সাথে নিশি
এমনটা করেছে। শুধু আজকে না,আমার সাথে প্রতিটা দিন এমন ঘটনা ঘটে।
নিশি আমার মামাতো বোন। দুই জনের বিয়ে হয়েছে পরিবার থেকে মাত্র দুই মাস হলো। নিশি আমাকে
বিয়ে করতে চায় নি,, কিন্তু মামার কারনে বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছে।
আমি নিশিকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু নিশি আমাকে ভালোবাসে না। ভালোবাসা তো দূরের কথা, আমাকে দেখতেই পারে না..জানিনা কি কারনে।
আমি আর নিশি আমাদের শহরের বাড়িতে থেকে পড়া শোনা করি। আর বাবা মা গ্রামের বাড়িতে থাকে। আমরা দুজনে একই ক্লাসে পড়ি।। কিছুক্ষণ পর নিশি আসলো আর বললো...........
নিশিঃ কিরে এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো.? আর এসব ন্যাকা কান্না আমার সামনে কাঁদবি না। যা আমার জন্য খাবার নিয়ে আয়, আমার খুব খুদা লেগেছে?
আমিঃ আচ্ছা নিয়ে আসতেছি?
আসলে বাসার সব কাজ আমাকেই করতে হয়? নিশি কিছুই করেনা। আমাদের চাইতে নিশিদের অবস্থা
একটু ভালো। আমরা মধ্যবিত্ত,,নিশি বড় ঘরের মেয়ে। তাই নিশি সব সময় আমাকে খোটা দিয়ে চলে।
আমিই বা কি করবো, নিশিকে অনেক ভালোবাসি তাই কিছু বলতে পারিনা। সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে যাই।খাবার নিয়ে এসে নিশিকে বললাম........
আমিঃ এই যে খাবার টা নাও?
নিশিঃ খাবারটা কে বেড়ে দিবে হ্যা?
আমিঃ হুমমম দিতেছি?
তারপর খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।।
রুমে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম,কি কারনে নিশি আমার সাথে এমনটা করে। কি দোষ করেছি আমি। নাকি নিশি অন্য কাউকে ভালোবাসে। এই না না আমি নিশিকে অন্য কারো হতে দিবো না।। নিশি শুধু আমার।
আমি নিশিকে আমার জীবনের থেকেও অনেক বেশি ভালবাসি। যতই সে আমাকে অবহেলা করুক, আমি তো তাকে মন থেকে ভালোবাসি। বাসার কাজ শেষ করে কলেজে চলে গেলাম। নিশি আগেই চলে গেছে। কলেজে গিয়ে দেখা হলো আমার বন্ধু নাহিদের সাথে। তাকে দেখেই আমি বললাম.......
আমিঃ কিরে কেমন আছিস?
নাহিদঃ ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?
আমিঃ হুমম ভালো?
নাহিদঃ কি রকম ভালো সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে আমার। আচ্ছা কারনটা কি জানতে পারলি,
কি কারনে নিশি তোর সাথে এমন করে.??
আমিঃ জানি না রে?
নাহিদঃ ওহহহহ তুই ওরে ছেড়ে দে না?
আমিঃ নারে পারবোনা আমি, ওরে অনেক ভালোবাসি আমি?
নাহিদঃ তুই ভালোবাসিস ও তো তোকে ভালোবাসে না।
তোর সাথে তো ও পশুর মতো ব্যাবহার করে?
আমিঃ যত কিছুই হোক আমি নিশিকে ভুলতে পারবো না?
তখনই আমার বন্ধু রনি কোথায় থেকে দৌড়ে আসলো। আসতেই আমি তাকে বললাম..........
আমিঃ কিরে এভাবে দৌড়ে আসলি কেনো?
রনিঃ একটা কাজের জন্য তুই একটু আমার সাথে চল?
আমিঃ কোথায়..?
রনিঃ আগে আয় তোকে একটা জিনিস দেখাবো?
আমিঃ আচ্ছা চল?
তারপর রনি আমাকে কলেজের পাশের পার্কে নিয়ে গেলো। আমি রনিকে বললাম...........
আমিঃ কিরে এখানে কেনো নিয়ে আসলি?
রনিঃ তোর সামনের দিকে তাকিয়ে দেখ, তাহলেই বুঝতে পারবি কেনো ডেকে নিয়ে আসলাম?
সামনে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম। পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে গেলো। মাথায় জেনো আসমান
ভেঙে পড়লো।। এইটা আমি কি দেখতেছি। নিশি অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করতেছে...
নিশি সদ্য বিবাহিত মেয়ে হয়েও এইটা কি ভাবে করতে পারলো। নাহ কিছুই ভাবতে পারছি না। মাথাটা চক্কর দিয়ে ঘুরতে লাগলো।। পরক্ষণেই রনি আমাকে বলতে শুরু করলো........
রনিঃ ছেলেটা আমাদের কলেজে পড়ে। নিশি ছেলেটার সাথে প্রেম করে?
আমিঃ ভাই আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। আমি বাসায় গেলাম?
রনিঃ আচ্ছা যা। তবে এটা দেখার পর আশাকরি একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিবি। দেখ একতরফা ভালোবেসে কোনো লাভ নাই। একতরফা ভালোবাসায় তুই শুধু কষ্ট পাবি, আর কিছুই না?
আমিঃ হুমমম ভেবে দেখবো এবার?
এই কথা বলে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে সুয়ে পড়লাম। আর ভাবতে লাগলাম..তাহলে এই কারনেই নিশি আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আমাকে বললেই হতো, আমি সরে দাঁড়াতাম তাদের পথ থেকে।
কালকে নিশির জন্মদিন। আর এই জন্মদিনের গিফট হিসেবে তাকে আমি মুক্তি দিয়ে দিবো।
আর বেধে রাখবো না নিশিকে। যদি সে না থাকতে চায় আমি কিভাবে আটকে রাখবো। আমারই ভুল ছিলো।
ভেবে ছিলাম কোনো,না কোনো একদিন নিশি আমাকে ভালোবাসবে..
কিন্তু এটা জানতাম না যে, একতরফা ভালোবাসায় শুধু কষ্ট পেতে হবে। আজকে নিশির জন্মদিন। আব্বু আম্মু মামা, মামি সবাই এসেছে নিশির জন্মদিন উপলক্ষে.. নিশির অনেক বন্ধুও এসেছে।আমি ফুল বাগানে একা বসে আছি। তখনই মা আমার কাছে এসে বললো.......
আম্মুঃ কিরে তুই এখানে বসে আছিস কেনো?
আমিঃ এমনি আম্মু?
আম্মুঃ তুই এই সময় এখানে বসে থাকবি কেনো কিছু হয়েছে কি?
আমিঃ না আম্মু। আসলে আমি প্রতিদিন এই সময় এখানে বসে থাকি। অনেক ভালো লাগে এখানে
বসে থাকতে?
আম্মুঃ আচ্ছা আমি ওইদিকে গেলাম। তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। আজকে না তোর বউয়ের জন্মদিন?
আমিঃ হুমমমম যাও আমি আসতেছি?
আম্মু চলে গেলো। হুহহহ বউ?? যদি সে আমাকে মেনে নিতো তবেই তো সে আমার বউ হতো.. কিছুক্ষণ পরে আমার মোবাইলে একটা কল আসলো। নাম্বারটা
দেখে আমি অনেক অবাক হলাম,, কারন নিশি আমাকে কল দিয়েছে।। আজকে প্রথম নিশি আমাকে কল দিয়েছে। আমি কল টা রিসিভ করে বললাম........
আমিঃ হ্যালো?
নিশিঃ কোথাই তুই?
আমিঃ বাগানে?
নিশিঃ বাগানে কি করিস। আমার রুমে তাড়াতাড়ি করে চলে আয়.?
আমিঃ কেনো..?
নিশিঃ আমার মুখের উপর কথা বলিস। তোকে আসতে বলেছি তাড়াতাড়ি আয়?
আমিঃ হুমমম আসতেছি?
হটাৎ কি কারনে নিশি আমাকে ডাকলো।। তাও আবার কল করে বুঝতে পারলাম না। যাই গিয়ে দেখি হুট করে কি কারনে নিশি আমাকে ডাকলো।
আমি নিশির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজা কয়েক বার নক করলাম। ভিতর থেকে কোনো সারাশব্দ না পেয়ে দরজা টা একটু হালকা করে ধাক্কা দিলাম।। দরজা টা খুলে গেলো। ভিতরে গিয়ে দেখি কেউ নেই..
নিশি তো ফোন করে আমাকে রুমে আসতে বললো। তাহলে নিশি কোথায় গেলো। তখনই কে যেনো
রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি আরহি।। মানে নিশির বান্ধবী।। আমি আরহিকে দেখে বললাম.........
আমিঃ কি ব্যাপার আরহি তুমি দরজা বন্ধ করলে কেনো?
আরহি কোনো কথা না বলে, নিজের জামার হাতার কিছুটা ছিড়ে ফেললো। আর ওর গায়ের ওড়নাটা আমার দিকে ছুড়ে মারলো, যা সোজা এসে আমার গায়ে পড়লো। আমি আরহিকে বললাম..........
আমিঃ কি ব্যাপার আরহি তুমি এসব কি করতেছো। তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?
আরহিঃ বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতেছে?
আমিঃ আরহি চুপ করো কেউ শুনতে পাবে আর এই অবস্থায় দেখলে সবাই খারাপ ভাববে?
আরহি আমার কথা না শুনে চিৎকার করেই যাচ্ছে...??
একটু পর আরহির চিৎকার শুনে সবাই দরজার সামনে এসে ধাক্কা দিতে শুরু করেছে৷ এর মধ্যে আরহি আমার কাছে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। আর আমার উপর শুয়ে পড়লো। আমি আরহিকে সরানোর চেষ্টা করতে থাকলাম।। কিন্তু আমি ব্যার্থ হয়ে গেলাম তার কাছে।
কারন ঠিক তখনই দেখি আব্বু,আম্মু, মামা, মামি সবাই দরজা ভেঙে ভিতরে চলে আসলো,সাথে নিশিও আছে।
তারা আসার পরে আরহি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে নিশিকে জড়িয়ে ধরলো। আর বলতে লাগলো.....
আরহিঃ নিশি তোরা সঠিক সময়ে না আসলে নিশান আমার সর্বনাশ করে দিতো। আমি তোকে ডাকতে
তোর রুমে আসি। এসে দেখি তুই নেই নিশান আছে। আমি বলি নিশি কোথায়,ও বলে বহিরে। আমি
বাহিরে যেতে ধরলেই নিশান আমাকে বাঁধা দেয়,
আর দরজা বন্ধ করে.....??( নিশান আমার নাম )
এসব কথা শুনে আম্মু আমার কাছে আসলো। এসে দুই গালে ঠাসসসস ঠাসসসস দুটি চড় বসিয়ে দিলো। আমি বললাম.......
আমিঃ আম্মু.......?( পুরোটা না বলতে দিয়ে )
আম্মুঃ তুই আমাকে এই মুখে আম্মু বলে ডাকবি না।ছিহ আমার তো ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে তুই আমার ছেলে। আসলে তোকে জন্ম দিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি৷ তোকে ছোট থাকতেই মেরে ফেলা উচিৎ ছিলো। তাহলে এইদিন আজ দেখতে হতো না..??
আমিঃ বিশ্বাস করো আম্মু আমি এমন কিছুই করিনি। ও যা বলেছে সব মিথ্যা?
আম্মুঃ আমরা সবাই নিজ চোখে দেখেছি। কিভাবে অবিশ্বাস করবো হ্যা?
মামাঃ নিশান আমি তোমাকে বিশ্বাস করে আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে ছিলাম। আর
তুমি তার এই প্রতিদান দিলে?
আমিঃ আপনারা সবাই বিশ্বাস করেন, আমি কিছুই করিনি ওর সাথে?
আম্মুঃ কি বিশ্বাস করতে বলছিস হ্যা।। এই মেয়েটা কি মিথ্যা কথা বলতেছে। কোনো মেয়ে নিজেকে
সমাজের কাছে ছোট করবে। আসলে আমাদের ভুল হয়েছে তোর মতো চরিত্রহীন কুলাঙ্গার কে জন্ম দিয়ে?
আমিঃ আম্মু...... ( কিছু না বলতে দিয়ে )?
আম্মুঃ তুই ওই মুখে আমাকে আম্মু বলে ডাকবি না। তুই এখনই এই বাসা থেকে বের হয়ে যা। আজকে থেকে মনে করবো আমাদের কোনো ছেলে সন্তান ছিলো না৷ কি হলো যাচ্ছিস না কেনো?
তারপর আম্মু আমার হাত ধরে টানতে টানতে গেটের সামনে নিয়ে আসলো। গেটের কাছে গিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিলো। আর বলতে শুরু করলো............
গল্পঃ_চরিত্রহীন_ছেলের_ভালোবাসা
(পর্ব_০২)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
তারপর আম্মু আমার হাত ধরে টানতে টানতে গেটের সামনে নিয়ে আসলো। গেটের কাছে গিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিলো। আর বলতে শুরু করলো............
আম্মুঃ তোর মতো চরিত্রহীন ছেলে আমাদের দরকার নেই। তুই আর কোনোদিন ও আমাদের কাছে
ফিরে আসবি না। আমরা আজ থেকে ভুলে যাবো আমাদের একটা ছেলে সন্তান ছিলো?
এ কথা বলার পর আব্বু বাসার দরজা বন্ধ করে দিলো। রাস্তায় ল্যাম্পপোষ্ট এর নিচে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আর ভাবতেছি এখন কি করবো কোথায় যাবো। আরহি কি কারনে আমার সাথে এমনটা করলো। আর আব্বু আম্মু তারাও আমাকে ভুল বুঝলো।
ভেবেছিলাম সবাই ভুল বুঝলেও বাবা-মা আমাকে ভুল বুঝবে না। কিন্তু আমি ভুল প্রমানিত হলাম। রাস্তায়
বসে বসে এসব কিছু ভাবছি৷ এমন সময় আমার বন্ধু রনি কল দিলো। কল রিসিভ করতেই রনি বললো......
রনিঃ কিরে কি হয়েছে। কি শুনছি আমি এগুলো নিশির কাছ থেকে। নিশি আমাকে বলতেছে তুই নাকি আরহির সাথে.??
আমিঃ দোস্ত তুইও কি আমাকে অবিশ্বাস করিস। বাবা মা বিশ্বাস করলো না। শেষে তুইও বিশ্বাস করলি না?
রনিঃ আমি তোকে সে কথা বলেছি। আমি নিজ চোখে দেখলেও বিশ্বাস করতাম না,তুই এমন কাজ করছিস।
আচ্ছা কি হয়েছে আমাকে একটু বল তো?
তারপর আমি রনিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ঘটনা খুলে বললাম৷ রনি আমাকে বললো........
রনিঃ দোস্ত এটা মনে হয় নিশির কাজ?
আমিঃ আমারও তাই মনে হয়।। আমি তো নিশিকে ডিভোর্স দিয়ে দিতাম। এটা করার দরকার ছিলো
না। আমাকে সবার সামনে ছোট করে দিলো?
|||
নিশির কারনে বাবা-মা আমার গায়ে হাত তুলেছে।
বাসা থেকে বের করে দিয়েছে৷ যে বাবা মা কখনো আমার গায়ে ফুলের টোকা পড়তে দেয়নি।
অথচো নিশির কারনে সেই বাবা মা আমাকে.??
রনিঃ তুই কান্না করিস না। তুই কোথায় আছিস আমাকে বল। আমি তোর কাছে আসতেছি?
কিছুক্ষণ পর রনি এসে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়৷ বাসায় যাওয়ার পর রনি আমাকে বললো......
রনিঃ তুই রেস্ট নে আমি তোর জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করতেছি?
আমিঃ নারে ভাই আমি কিছু খাবো না?
রনিঃ বেশি কথা না বলে চুপ করে শুয়ে থাক আমি আসতেছি?
এই বলে রনি বাহিরে চলে গেলো। বাবা মাকে না দেখে আমি কিভাবে থাকবো কিছুই বুঝতে পারছি না। বাবা মার কথা মনে পড়তেই তাদের কথা গুলো মনে পড়ে গেলো। হটাৎ করেই দেখি চোখ দিয়ে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর রনি এসে আমাকে বললো......
রনিঃ কিরে তুই আবার কান্না করতেছিস?
আমিঃ আমি কিভাবে থাকবো রে বাবা-মাকে ছাড়া। তারা আমার জন্য সমাজে ছোট হয়ে গেলো?
রনিঃ শোন এখন কান্না করলে কি সব সমাধান হবে?
আমিঃ নিশি কি কারনে আমার সাথে এমনটা করলো। নিশি যদি আমাকে বলতো তার জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে। আমি নিজ ইচ্ছায় তার জীবন থেকে সরে দাঁড়াতাম।। কিন্তু সে একটি বারও আমার পরিবারের কথা ভাবলো না?
রনিঃ শোন নিশি মেয়েটাকে আমার একদম ভালো লাগে না। তুই তো পাগলের মতো ভালোবাসিস নিশিকে। তার প্রতিদান দিয়েছে নিশি তোকে।
তোকে কতবার বলেছিলাম ভাই ছেড়ে দে এই
মেয়েকে। কিন্তু তুই আমাদের কথা শুনলি না.???
আমিঃ কি করতাম বল আমি ওরে পাগলের মতো ভালোবাসতাম। ভাবছিলাম কিছু দিন পর হয়তো
নিশি আমাকে মেনে নিবে?
রনিঃ এখন যা হবার হয়েছে, এসব নিয়ে চিন্তা করে লাভ নাই। এই নে খাবার গুলো খেয়ে নে?
আমিঃ না আমি খাবো না?
রনিঃ দেখ অনেক রাত হয়েছে খাবার গুলো খেয়ে নে। নয়তো শরীর খারাপ হবে?
আমিঃ আমি খাবো না, ভালো লাগছে না?
রনিঃ যতটুকু পারিস ততটুকু খেয়ে নে?
আমিঃ খাবো না আমি?
রনিঃ আরে ভাই খাবার টা খেয়ে নে, বুঝিস না কেনো। খাবার না খেলে সব কিছু কি আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে?
আমিঃ ভাই আমার বাবা মা হয়তো না খেয়ে আছে। আমি খাবার কিভাবে খাবো বল?
রনিঃ তোকে একটা কথা বলি?
আমিঃ কি কথা বল?
রনিঃ আন্টি একটু আগে আমার কাছে কল দিয়েছিলো?
আমিঃ কি......?
রনিঃ হুমমম তোর কথা জিজ্ঞেস করলো।। আর আমি আন্টিকে সব সত্যি কথা বলে দিয়েছি। তারপর আন্টি অনেক কান্নাকাটি করলো। তোকে আমার কাছে থাকতে বলেছে। শোন তুই কি এখন নিশির ব্যাপারে কোনো ব্যাবস্থা করবি.??
আমিঃ হুমমম অবশ্যই। আমাকে নিশি সমাজের কাছে চরিত্রহীন বানিয়েছে। আমি এর প্রতিশোধ নিবো ওর কাছ থেকে..??
রনিঃ ভালো তবে এমন কাজ করিস না, যেটার জন্য তোকে অথবা তোর পরিবারকে প্রস্তাতে হয়?
আমিঃ হুমমম?
পরের দিন রনি আমাকে এক রকম জোর করে কলেজে নিয়ে গেলো। আমি যেতে চাইছিলাম না। কিন্তু রনি আমাকে ছাড়া যাবে না। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্বেও কলেজে যেতে হলো৷ বিকেলে রনির বাসায় শুয়ে আছি। তখনই রনি কোথায় থেকে এসে আমাকে বলেলো........
রনিঃ ওই চল?
আমিঃ কোথায়?
রনিঃ কাজ আছে?
আমিঃ কি কাজ। আর কোথায় ছিলি এতক্ষণ?
রনিঃ এখন চল। সব জানতে পারবি?
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল?
আমি বাসার সামনে এসে দেখি.....একটা মাইক্রো গাড়ি দাঁড় করানো। আর সব বন্ধুরা আছে দেখছি। আমি রনি কে বললাম.......
আমিঃ কিরে মাইক্রো গাড়ি কেনো। কোথায় যাবি?
রনিঃ আগে উঠ তারপর বলতেছি?
আমিঃ হুমম এবার বল আমরা কোথায় যাচ্ছি?
রনিঃ আরহিকে তুলে আনতে?
আমিঃ কিহহহহ?
রনিঃ হুমমম ওই মেয়ের জন্য এতকিছু। ওকে আগে তুলে আনি, তারপর দেখ কি করি?
আমিঃ পাগল হইছিস নাকি। আরহিকে কিডনাপ করবি?
নাহিদঃ তুই কোনো কথা বলবি না, চুপ থাক। আজকে দেখ শালির কি করি। আমাদের বন্দুর চরিত্র নিয়ে ছিনিমিনি খেলা?
আমিঃ ভাই কাজটা মনে হয় ঠিক হবে না?
রনিঃ তুই চুপ করে বসে থাক?
কিছুক্ষণ পর গাড়িটা একটা গলিতে দাঁড় করালো।। এই গলি দিয়ে আরহি কলেজ থেকে বাসায় যায়। আর
এই গলিতে তেমন কোনো মানুষ থাকে না।। আর এখন তো আরহি আসার সময় হয়ে গেছে। এক ঘন্টা বসে থাকার পর দেখলাম আরহি আসতেছে হেঁটে হেঁটে। আরহিকে দেখে রনি রুমালে ক্লোরোফোম নিলো। আমি রনিকে বললাম.........
আমিঃ দেখ রনি এটা না করলে হয় না?
রনিঃ তুই আবার কথা বলছিস, চুপ থাকতে বলছি না তোকে?
আরহি যখন গাড়ির কাছে আসে ঠিক তখনই রনি আর নাহিদ গাড়ি থেকে নেমে আরহির নাকে রুমাল টা ধরে। আরহি অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর আরহিকে গাড়িতে করে রনির বাসায় নিয়ে আসা হয়....
দীর্ঘ ২ ঘন্টা পর আরহির জ্ঞান পিরে আসে। এর মধ্যেই আরহিকে চেয়ারের সাথে বেধে ফেলে। আমি সবকিছুু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেছি। আরহি জ্ঞান ফিতরেই বলে উঠলো.........
আরহিঃ তোমরা আমাকে কেনো তুলে নিয়ে আসলে। কেনো আমাকে এভাবে বেধে রেখেছো৷ আমাকে
ছেড়ে দাও,নাহলে তোমাদের অবস্থা খুব খারাপ হবে?
রনিঃ চুপ থাক।।তোর কারনে আজ আমার বন্ধু সমাজে চরিত্রহীন। আর তুই বলছিস তোকে এখানে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে। আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো?
এই কথা বলেই রনি গিয়ে আরহির গালে ঠাসস ঠাসস করে চার টা চড় বসিয়ে দিলো।। এটা দেখে আমি রনি কে আটকালাম৷ আর বললাম........
আমিঃ পাগল হয়ে গেলি নাকি৷ ও মেয়ে মানুষ ওকে এভাবে মারিস কেনো?
রনিঃ মেয়ে মানুষ হুহহ।। ওর কারনে আজ তোর এই অবস্থা। ওকে দেখলে আমার শুধু মারতে ইচ্ছে
করে। তুই আমাকে ছেড়ে দে। তুই যে মিথ্যা অপবাদে বাসা ত্যাগ করছিস, আজ তা সত্যি করবো?
আরহিঃ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও৷ আমার ইচ্ছায় এমন করিনি। নিশি আমাকে করতে বলেছে?
রনিঃ নিশি বলেছে আর তুই করবি। একটা বার ভাবলি না এর পরিনাম কি হবে ছেলেটার। সমাজে কতটা
ছোট হতে হবে?
আরহিঃ আমার ভুল হয়েছে, আমাকে মাফ করে দাও। আমি সবাইকে সত্যি টা বলে দিবো?
রনিঃ এখন তো বলবাই৷ এখন বললে কি লাভ হবে?
আমিঃ আহহহ রনি চুপ কর, তুই একটু বাহিরে যা। আমি ওর সাথে একটু কথা বলবো?
রনিঃ হুমমমম?
আমিঃ আচ্ছা আরহি আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো সত্যি সত্যি উত্তর দিবা?
আরহিঃ আচ্ছা.....?
আমিঃ নিশি কি কারনে আমার সাথে এমন করলো তুমি কি জানো?
আরহিঃ না তেমন কিছু জানিনা। তবে এতটুকু জানি নিশি তোমার কাছ থেকে মুক্তি চায়?
আমিঃ ওওও আচ্ছা। নিশি প্রেম করে কত দিন থেকে?
আরহিঃ ৫ মাস?
আমিঃ আমাদের বিয়ের আগে থেকে?
আরহিঃ হুমমমম?
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি এখন যাও?
আরহিঃ হুমমম?
আমিঃ আরহি শুনো একটা কথা বলি। প্লিজ এরকম কাজ আর কারো সাথে করিওনা। এমন কাজ
করার ফলে একটা ছেলের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। ছেলেটার সাথে সাথে ছেলেটার পরিবারও সমাজের কাছে ছোট হয়ে যায়। আশা করি এমন কাজ আর কখনো করবে না। যাও ভালো থেকো। আর নিশিকে এসবের কিছুই বলো না?
আরহিঃ হুমমম?
আমিঃ রনি আরহিকে নামিয়ে দিয়ে আয়?
রনিঃ হুমমমম 😠😠
এরপর ওরা আরহিকে নামিয়ে দিতে গেলো। আর আমি বারান্দায় সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বসলাম। দুই দিন থেকে এটাই আমার একমাত্র সঙ্গী। তবুও রনি দেখলে খেতে দেয় না। এটা খেলে কিছুটা হলেও প্রশান্তি মিলে।
সিগারেট খাইতেছি আর ভাবতেছি। নিশি আমার সাথে অন্যায় করলো,না আমি নিশির সাথে অন্যায় করলাম।
কারন নিশি বিয়ের আগ থেকেই অন্য ১টা ছেলের সাথে রিলেশন করেতেছে। আর আমি তার জীবনে কাটা হয়ে এসেছি। তাহলে সে আমাকে কিভাবে মেনে নিবে।
নাহহ আর চিন্তা করতে পারছি না।। মাথা ব্যাথা করছে
তাই বিছানায় শুয়ে পড়লাম। একটু পরে ঘুমের রাজ্যে হাড়িতে গেলাম।। ঘুম থেকে উঠতেই রনি আমাকে বলে উঠলো........
রনিঃ কিরে ঘুম হলো?
আমিঃ হুমম। তুই কখন আসলি?
রনিঃ একটু আগে৷ আচ্ছা শোন আমাকে একটু গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে?
আমিঃ কেনো?
রনিঃ একটু কাজ আছে। তুইও যাচ্ছিস আমার সাথে?
আমিঃ আমিই কেনো আবার?
রনিঃ হুমম চল তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে নে?
আমিঃ আমি না গেলে হয় না?
রনিঃ না যেতে হবে। কথা না বলে তাড়াতাড়ি চল। আর ও হ্যা তোর তো কাপড় চোপড়া নেই এখানে৷ যাওয়ার আগে মার্কেট হয়ে তারপর যেতে হবে?
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?
তারপর রেড়ি হয়ে মার্কেটে চলে গেলাম। জামা কাপড় কিনে যখনই মার্কেট থেকে বের হবো, ঠিক তখন দেখলাম নিশি মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি রনিকে বললাম............
আমিঃ আচ্ছা রনি তুই একটু সামনের দিকে এগিয়ে যা৷ আমি আসতেছি....?
রনিঃ কেনো কি হইছে?
আমিঃ যা, না একটু?
রনিঃ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চলে আছিস?
আমি নিশির সামনে গিয়ে,নিশির হাত টেনে নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় গেলাম। নিশি আমাকে বললো.......
নিশিঃ কি ব্যাপার তোর এত সাহস, তুই আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসছিস?
আমিঃ তুমি কেনো এমন করলে নিশি। তুমি আমাকে বললে আমি নিজেই তোমাকে ছেড়ে দিতাম?
নিশিঃ আমি যেটা করেছি, একদম ঠিক কাজ করেছি?
আমিঃ তোমার কারনে আজকে আমি আমার মা বাবার কাছ থেকে দূরে?
নিশিঃ তা এতে আমি কি করতে পারি৷ আর হে ডিভোর্স লেটার আমি পাঠাবো, না তুই পাঠিয়ে দিবি?
আমিঃ ডিভোর্স চাই তোর?
নিশিঃ হুমমম?
আমিঃ আচ্ছা দিতেছি তোকে ডিভোর্স, আয় আমার সাথে?
এ কথা বলে নিশিকে টেনে নিয়ে গেলাম গাড়ির কাছে। যেই গাড়িটা দিয়ে আমি আর রনি ওর গ্রামের বাড়িতে যাবো। এনে আমি নিশিকে বললাম.........
আমিঃ উঠ গাড়িতে?
নিশিঃ কেনো?
আমিঃ তোর ডিবোর্স চাইনা, তাহলে গাড়িতে উঠ?
নিশিকে গাড়িতে তুলে আমি রনি কে বললাম.......
আমিঃ রনি আমি যেতে পারবো না?
রনিঃ কি বললি?
আমিঃ যা বলছি তাই?
রনিঃ কেনো?
তারপর নিশিকে নিয়ে রনির বাসায় চলে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে নিশিকে রুমে নিয়ে গেলাম। রুমের ভিতরে গিয়ে রুমের দরজা টা আটকিয়ে দিলাম। এরপর নিশি আমাকে বললো..........
গল্পঃ_চরিত্রহীন_ছেলের_ভালোবাসা
(পর্ব_০৩)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
তারপর নিশিকে নিয়ে রনির বাসায় চলে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে নিশিকে রুমে নিয়ে গেলাম। রুমের ভিতরে গিয়ে রুমের দরজা টা আটকিয়ে দিলাম। এরপর নিশি আমাকে বললো..........
নিশিঃ কি হলো দরজা বন্ধ করলি কেনো?
আমিঃ তোর ডিভোর্স চাইনা, তার ব্যাবস্থা করার জন্য। তোর জন্য আমার চরিত্র নিয়ে কথা উঠেছে। সমাজে চরিত্রহীন ছেলের খ্যেতি পেয়েছি। বাবা মা তাদের সম্মান হারিয়েছে। আর তুই ভাবলি কি করে, আমি তোকে এত সহজে ছেড়ে দিবো?
নিশিঃ মানে তুই কি করতে চাচ্ছিস আমার সাথে?
আমিঃ তুই যেটা ভাবছিস সেটাই?
__এই কথাটা বলেই আমি শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে নিশির দিকে এগিয়ে গেলাম। নিশি আমাকে বলতে শুরু করলো........
নিশিঃ কি ব্যাপার তুই আমার দিকে এগিয়ে আসছিস কেনো?
আমিঃ এতদিন তোর উপর কোনো অধিকার খাটাইনি। কিন্তু আজ যখন চরিত্রহীন ছেলে উপাধি দিয়েই দিলি, সো আজ অধিকার জোর করে আদায় করবো?
নিশিঃ প্লিজ আমার দিকে আসিস না, আমি তোর পায়ে পড়ি?
আমিঃ তোর কোনো কথাই শুনবো না কারন আমি তো চরিত্রহীন। চরিত্রহীন ছেলেরা কখনো কারো আকুতি মিনতি শুনতে পায় না?
তারপর নিশিকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় পেলে দিলাম।নিশি নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে,
বাট আমার শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারেনি।
একটু পর নিশি শুধুই কান্না করতেছে৷ আমি নিশির কান্না দেখে বললাম..........
আমিঃ কান্না থামা, কান্না করতেছিস কেনো?
নিশিঃ.........?? ( কান্না করেই যাচ্ছে )
আমিঃ এই তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ করবি। কান্না বন্ধ কর, নয়তো কপালে খারাপ আছে৷ এতদিন ভালো ব্যাবহার করেছি, কিন্তু আর না?
নিশিঃ তুই আসলেই চরিত্রহীন ছেলে?
আমিঃ চরিত্রহীন ছেলে সেটাতো তুই আমাকে বানালি। আমি তো চরিত্রহীন ছিলাম না, একজন সাধারন ভদ্র ছেলে ছিলাম। কিন্তু তুই আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চরিত্রহীন ছেলে বানিয়েছিস সমাজে.??
|||
তোকে ভালোবাসা টা কি আমার ভুল ছিলো।। যেহেতু আমি ভুল করেছি,সেহেতু আমাকেই ভুলটা শোধরাতে হবে। সুতারাং আজ থেকে তুই এখানেই থাকবি, এই বন্ধী অবস্থায়। এই চরিত্রহীন ছেলের সাথে.??
নিশিঃ প্লিজ আমাকে যেতে দাও?
আমিঃ এসব ন্যাকা কান্না করে কোনো লাভ হবে না। চুপচাপ বসে থাক?
নিশিঃ তুমি আমার সাথে যা করার তা তো করেই নিছো এখন আমাকে যেতে দাও?
আমিঃ এখনও আমার প্রতিশোধ নেওয়া হয়নি। কিভাবে যেতে দিবো তোকে?
নিশিঃ প্রতিশোধ......?
আমিঃ হুম প্রতিশোধ। আমি যেমন কষ্ট পেয়েছি তেমন কষ্ট আমি তোকেও দিবো। তুই বিয়ের পর আমার
সাথে যা যা করেছিস, সব করবো তোর সাথে?
নিশিঃ সব মানে?
আমিঃ সেটা সময় হলে বুঝতে পারবি৷ এখন থাক তুই, আমি বাহিরে থেকে আসতেছি?
এই বলে আমি দরজা লক করে রান্না ঘরে চলে গেলাম খাবার রান্না করতে। আমি শুধু আজকে রান্না করবো। কালকে থেকে সব নিশিকে দিয়ে করাবো৷ খাবার রান্না করে নিশির কাছে গেলাম। তারপর আমি নিশিকে বললাম.........
আমিঃ খাবার টা খেয়ে নে?
নিশিঃ..........? ( কান্না করেই যাচ্ছে )
আমিঃ কি হলো, কি বলতেছি কানে যায় না?
নিশিঃ প্লিজ আমাকে যেতে দাও, আব্বু আম্মু খুব চিন্তা করবে আমার জন্য?
আমিঃ চিন্তা করবে কেনো তুই এখন আমার কাছে আছিস৷ তোর বরের কাছে সুতারাং কিসের এতো চিন্তা। আচ্ছা এই নে ধর ফোন দে বাসায়?
নিশিঃ কেনো?
আমিঃ ফোন দিয়ে বল আমি শ্বশুড় বাড়িতে আছি?
নিশিঃ না আমি বাড়িতে যাবো?
ঠাসস ঠাসস করে দুইটা চড় বসিয়ে দিলাম ওর কোমল দুটি গালে এরপর বললাম.......
আমিঃ সোজা কথা বুঝতে পারিস না। চড় আরেক টা দেওয়ার আগে ফোন দিয়ে বল?
নিশিঃ হুমম বলতেছি, তবুও মেরো না.? ( কান্না করতে করতে বললো )
সবশেষে নিশির হাতে আমার মোবাইল টা দিয়ে তার আব্বুকে আমার শিখিয়ে দেওয়া কথা গুলো বলে দিলো।। কথা শেষ করার পর আমি নিশিকে বলতে শুরু করলাম......
আমিঃ এই নে খাবার টা খেয়ে নে?
নিশিঃ খাবো না?
আমিঃ এত ডং করিস না। কালকে থেকে তোকে বাসার সব কাজ করতে হবে?
নিশিঃ খাবো না, খাবো না?
আবার ঠাসসস করে দিলাম একটা চড় বসিয়ে। এরপর আমি নিশিকে বললাম........
আমিঃ চুপচাপ খেয়ে নে। হ্যা কর, কর হ্যা?
নিশিঃ কথায় কথায় মারা লাগে? ( কান্না করতে করতে বললো )
আমিঃ তুই আমার সাথে কি করেছিস মনে নেই৷ ভুলে গেছিস নাকি সব কিছু। এখন হা কর খাবার খা?
এরপর নিশিকে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম৷ খাবার খাওয়ানোর পর আমি নিশিকে বললাম.........
আমিঃ এখন শুয়ে পড় আমি এগুলো রেখে আসতেছি?
খাবার প্লেট রেখে এসে দেখি নিশি ঘুমিয়ে গেছে।। এতো তাড়াতাড়ি কি ভাবে ঘুম ধরে। ৫ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলো।নাকি ঘুমের নাটক করতেছে৷ চেক করার
জন্য ডাক দিলাম। কিন্তু নাহহ সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেছে। এর পরেও আবার ডাকতে লাগলাম........
আমিঃ এই কথা বলছি কানে যায় না। তাড়াতাড়ি উঠ বলছি, লাঠি নিয়ে আসলে কিন্তু খবর আছে?
কথাটা বলতেই নিশি এক লাপে উঠে পড়লো। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। এরপর আমি নিশিকে বললাম.....
আমিঃ হুমম ভালো করেছিস। এখন আমার মাথা আর পা, টা টিপে দে?
নিশিঃ কে আমি?
আমিঃ হুমম তুই?
নিশিঃ পারবো না?
আমিঃ বেশি কথা বলিস না, যা বলছি তাই কর..? (থাপ্পড় দেখিয়ে বললাম )
নিশিঃ দিতেছি দিতেছি?
আমিঃ আগে পা টিপে দে, পরে মাথা টিপে দিস?
নিশিঃ হুমমমম?
আমিঃ এতো জোরে দিতেছিস কেনো আস্তে আস্তে দে?
নিশিঃ হুমমমম?
নিশি আমার মাথা টিপে দিতেছে।।আর আমি সুয়ে সুয়ে তা উপভোগ করতেছি। সুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি, নিজেও জানিনা। মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি কেউ একজন আমার বুকের উপর সুয়ে আছে। আর একটা হাত আমার মাথায় ছিলো। তার মানে নিশি এতক্ষণ আমার মাথা টিপে দিতেছিলো।
তারপর আমি নিশিকে বুকের উপর থেকে নামিয়ে দিতে চাইলাম। কিন্তু নিশি ঘুমের ঘোরে আমাকে আরও
শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ভাবলাম না থাক, এরপর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নিশি নেই।। ভাবলাম পালিয়ে গেছে নাকি।
তাই তাড়াতাড়ি উঠে রুম থেকে বাহির হয়ে বাসার সব যায়গায় খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। মনে হয় চলে গেছে আর প্রতিশোধ নেওয়া হলো না।
হতাশ হয়ে রুমে ফিরে এলাম৷ রুমে এসে বিছানায় মাত্র বসলাম। এমন সময় দেখি নিশি বাথ রুম থেকে গোসল করে বের হলো। এটা দেখে তো আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেলো। নিশির চুল গুলো ভিজা। টপ টপ করে পানি পড়ছে। মেয়েটার চুল গুলো খুব সুন্দর। ইচ্ছে করে তার চুলে নিজেকে হাড়িয়ে ফেলি।
ঠোঁটগুলো পানিতে ভিজে কেমন যেনো আকর্ষনিয় হয়ে গেলো। যা আমাকে বার বার তার দিকে টানতেছে।
আমি আস্তে আস্তে নিশির দিকে এগিয়ে যেতে
লাগলাম নেশা ভরা চোখের চাহনি নিয়ে। আর নিশি আস্তে আস্তে পিছনে যেতে লাগলো,আমি একটা ঘোরের মধ্যে আছি।। কি করছি নিজেই জানিনা। ঠিক তখনই নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বললো........
নিশিঃ তু তু তুমি আমার দিকে এভাবে তা তাকিয়ে আছো কেনো?
কথাটা বলার সাথে সাথেই আমি নিশির হাত ধরে টেনে আমার বুকে জড়িয়ে নিলাম। আমার ঠোঁট গুলো
নিশির ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে দিলাম। আহ কি যে মিষ্টি লাগছে বলার ভাষা আমার নেই। ইচ্ছে করছে ঠোঁট গুলো ছিড়ে খেয়ে ফেলি। কিন্তু চিন্তা করলাম এখন যদি ছিড়ে খেয়ে ফেলি পড়ে কি খাবো😄😄
বেশ কিছুক্ষণ পর আমার হুঁশশ আসলো। এই আমি কি করছি যে মেয়ে আমাকে চরিত্রহীন বানিয়েছে তাকে আমি....না না, তাড়াতাড়ি নিশিকে ছেড়ে দিয়ে
বাথরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি নিশি এখনও সেখানে দাড়িয়ে আছে। আমি নিশির ওই রকম দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললাম..........
আমিঃ কি ব্যাপার এখনও এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো?
নিশিঃ না মানে.......?
আমিঃ কি মানে মানে করছিস। এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকলে সকালের নাস্তা কে বানাবে?
নিশিঃ সকালের নাস্তা তো একটু আগেই খেয়েছিস?
আমিঃ কথা না বলে তাড়াতাড়ি নাস্তা রেড়ি করতে যা?
নিশিঃ আমি তো কিছু করতে পারি না?
আমিঃ কি কারনে পারিস না। বাসার সব কাজ তোকে করতেই হবে। এখন যা আমার জন্য কিছু খাবার বানিয়ে নিয়ে আয়। আমার খুব ক্ষুদা লাগছে?
নিশি চুপ করে দাড়িয়ে আছে। আমি তাকে বললাম.....
আমিঃ কি হলো তাড়াতাড়ি যা??( ধমক দিয়ে বললাম )
নিশিঃ যাচ্ছি যাচ্ছি?
কিছুক্ষণ পর নিশি একটা প্লেট হাতে করে নিয়ে রুমে আসলো। আর আমাকে বললো........
নিশিঃ এই নাও?
আমিঃ কি এগুলো?
নিশিঃ ডিম আর পরোটা?
আমিঃ এটা পরোটা.?? 😲😲
নিশিঃ কেনো কি হয়েছে?
আমিঃ পরোটা এতো কালো কেনো? পরোটা না ছাই। পরোটা একদম পুড়িয়ে ফেলেছিস?
নিশিঃ সেটাতো বলতে পারবো না কেনো?
আমিঃ পরোটা এভাবে বানায়?
নিশিঃ পারিনা তো, যা পারছি তাই বানিয়েছি?? ( গল্প পড়ে এমন অনেক আপু আছে, যারা পরোটা বানাতে গেলে আদা মরিচ ব্যাবহার করে 🥴🥴)
আমিঃ আচ্ছা যা ফ্রিজ খুলে জ্যাম আর ডাইনিং টেবিল থেকে পাউরুটি নিয়ে আয়?
নিশিঃ পাউরুটি তো আমি খেয়ে ফেলেছি?
আমিঃ কিহহ সব খেয়ে ফেলেছিস?
নিশিঃ হুমমম?
আমিঃ আমি তাহলে কি খাবো এখন হ্যা?
নিশিঃ আসলে খুব ক্ষুদা লেগেছিলো তাই খেয়ে ফেলেছি?
আমিঃ আমাকে জিজ্ঞেস না করে এখন থেকে এক গ্লাস পানিও খাবি না।৷ আর হ্যা ইউটিউব দেখে রান্না করা শিখে নিবি কেমন। বিকেলে রান্না করে নিবি। আমি বাহিরে চলে গেলাম। রুমে এসে জেনো দেখি রান্না করা হয়ে গেছে। রান্না হলে আমার এই জামা কাপড় গুলো ধুয়ে দিবি কেমন?
নিশিঃ হুমমম?
আমিঃ আর সব কাজ গুলো জেনো সঠিক ভাবে হয়। নয়তো খবর আছে। আর তোর মোবাইল টা দে?
নিশিঃ কেনো?
আমিঃ দে বলছি?
নিশিঃ দিবো না?
আমিঃ দিতে বলছি দে.?? ( চড় দিয়ে বললাম )
নিশিঃ এই নাও??( গালে হাত দিয়ে কান্না করে বললো )
আমিঃ হুমমম। আর আমি বাহিরে তালা দিয়ে যাবো?
নিশিঃ কেনো?
আমিঃ যদি পালিয়ে যাস তাই৷ আর মোবাইল নিলাম জেনো কাউকে কল না দিতে পারিস?
নিশিঃ প্লিজ দরজায় তালা দিয়ে যেওনা। আমার এভাবে থাকতে ভয় করবে?
আমিঃ হুহহহহ তা হবে না?
এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। আসার সময় দরজা লাগিয়ে দিয়েছি বাহির থেকে। বিকেলের দিকে বাসায় এসে দেখি নিশি সুয়ে সুয়ে টিভি দেখছে। আমি নিশিকে বললাম...........
আমিঃ কি ব্যাপার এভাবে বসে বসে টিভি দেখতেছিস রান্না করেছিস?
নিশিঃ হুমমম?
আমিঃ কাপড় গুলো ধুয়েছিস?
নিশিঃ আসলে.......?
আমিঃ আসলে কি হ্যা, কি কারনে ধুয়ে রাখিস নাই। মাথা নিচু করে আছিস কেনো এদিকে তাকা৷ তাকা আমার দিকে, হুমম এবার বল কি কারনে ধুয়ে দিস নাই...??
নিশিঃ আমি ধুইলে পরিস্কার হয় না তাই?
আমিঃ পরিস্কার হোক বা না হোক সেটা জানার বিষয় না। তোকে ধুইতে বলেছি তুই ধুয়ে দিবি। এখন তাড়াতাড়ি গিয়ে কাপড় গুলো ধুয়ে দে যা?
নিশিঃ আচ্ছা ঠিক আছে?
আমিঃ হুমমম যা?
আমি রুমে সুয়ে সুয়ে টিভি দেখতেছি।।হটাৎ করে নিশি বাথরুম থেকে আহহ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
আমি দৌড়ে বাথরুমে গেলাম। গিয়ে দেখি নিশি ডিটারজেন্ট পাউডার এর উৎপন্ন ফেনায় পিচলে পড়ে গেছে। নিশি কান্না করতে করতে বললো.....
নিশিঃ মাগো কোমর টা মনে হয় ভেঙে গেলো?
আমি নিশির কান্ড দেখে হাসতে লাগলাম। নিশি আমার হাসি দেখে আমাকে বললো......
নিশিঃ এভাবে হাঁসার কি আছে। আমি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাইছি। আমাকে না তুলে হাঁসছো কেনো?
আমিঃ এই টুকুতেই এই অবস্থা। আর তুমি আমাকে দিয়ে কি কি করিয়েছিলে মনে নেই?
আমার কথা শুনে নিশি চুপ করে আছে..। কোনো কথা বলছে না। আমি নিশির কাছে গেলাম,,,গিয়ে নিশিকে কোলে তুলে নিলাম। নিশি আমার গলা জড়িয়ে ধরে এক মনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বিছানায় গিয়ে নিশিকে বিছানায় ফেলে দিলাম।
নিশিঃ আহহহ..?? ( কোমরে হাত দিয়ে )
আমিঃ এভাবে চিৎকার দিতেছিস কেনো?
নিশিঃ এভাবে কেউ ফেলে দেয়। কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা পাইছি। এর মধ্যে এত জোরে ফেলে দিলে চিৎকার দিবো না?
আমিঃ হইছে হইছে এখন চুপ করে থাক। আমি মলম নিয়ে আসতেছি?
মলম নিয়ে এসে নিশির হাতে দিলাম। আর বললাম....
আমিঃ এই নে এটা কোমরে লাগিয়ে দে। কোমরের ব্যাথা কমে যাবে?
মলম নিয়ে নিশি কোমরে লাগাতে চেষ্টা করতেছে। কিন্তু পারছে না। আমি বসে বসে শুধু দেখতেছি। নিশি যখন মলম লাগাতে ব্যার্থ হলো, তখন আমার মুখের দিকে অসহায়ের মতো তাকালো। আর আমাকে বললো........
গল্পঃ_চরিত্রহীন_ছেলের_ভালোবাসা
(পর্ব_০৪)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
মলম নিয়ে নিশি কোমরে লাগাতে চেষ্টা করতেছে। কিন্তু পারছে না। আমি বসে বসে শুধু দেখতেছি। নিশি যখন মলম লাগাতে ব্যার্থ হলো, তখন আমার মুখের দিকে অসহায়ের মতো তাকালো। আর আমাকে বললো........
নিশিঃ এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। মলম টা আমি লাগাতে পারছি না। একটু লাগিয়ে দাও? ( মলম টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে )
আমিঃ আমি পারবো না। আমি তোকে এখানে রেখেছি কষ্ট দেওয়ার জন্য। তোর সেবা যত্ন করার জন্য না?
নিশিঃ প্লিজ এটুকু হেল্প করো। তুমি একটু লাগিয়ে দাও। আমি তো লাগাতে পারছি না। প্রচন্ড ব্যাথা করতেছে?
আমিঃ আচ্ছা এতো করে যেহেতু বলতেছিস মলম দে লাগিয়ে দেই। মলম লাগিয়ে দেওয়া শেষ। এবার গিয়ে আমার খাবার রেড়ি কর যা?
নিশিঃ আর একটু পর যাই। এখনও পচন্ড ব্যাথা করতেছে?
আমিঃ হুমম ব্যাথা। এই সামান্য ব্যাথায় এই অবস্থা আর আমি যখন ১০৪° জ্বরে ভুগেছিলাম, তুই কি আমাকে কাজ থেকে মাফ করেছিস?
|||
তুই আমাকে চড়ও দিয়েছিস কাজ করতে একটু দেরি হয়েছিলো বলে। তার পরেও তোকে আমি রান্না করে খাওয়াই ছিলাম। ভেবেছিলাম তুই তো আমারই বউ। কোনো না কোনো একদিন তুই তোর ভুল বুঝতে পারবি।। কিন্তু তুই কি করলি, আমাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দিলি...???
আমার কথা গুলো শুনে নিশি চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইলো। কোনো কথা বললো না। আমি আবারও বললাম.....
আমিঃ যা খাবার রেডি কর তাড়াতাড়ি। আমার খুব ক্ষুদা পেয়েছে?
এরপর নিশি রান্না করতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর নিশি আমাকে ডাকতেছে,খাবার টেবিলে যাওয়ার জন্য।
খাবার টেবিলে গেলাম। খাবার খেয়ে তো আমার মাথা পুরাই হ্যাং হয়ে গেলো। মাছের তরকারিতে লবন বেশি দিয়েছে। মাংসের তরকারিতে মরিছের গুড়া মনে হয় সব ঢেলে দিয়েছে।। কি ঝাল রে বাবা। খাবারের এমন অবস্থা দেখে আমি নিশিকে বললাম..........
আমিঃ এগুলো কি রান্না করেছিস হ্যা৷ একটাতে লবন বেশি এর মধ্যে ঝাল?
নিশিঃ না পারলে কি করবো হ্যা?
আমিঃ কি শিখছিস তাহলে। কিভাবে মানুষ কে ছোট করা যায় এগুলো। এখানে এসে বস?
নিশিঃ কেনো?
আমিঃ বসতে বলেছি বস?
নিশিঃ হুমমম?
আমিঃ এবার এই মাংস গুলো খা..?
নিশিঃ এত্তগুলো 😱😱
আমিঃ হুমম সব গুলো খেতে হবে কিন্তু?
নিশি ২ পিস মাংস খেয়ে আর খাচ্ছে না। বুঝতে পারছি ঝাল লাগতেছে। তাই আমি নিশিকে বললাম....
আমিঃ কি হলো খাচ্ছিস না কেনো?
নিশিঃ আমি খেতে পারবো না?
আমিঃ তোকে খেতেই হবে। এটা তোর শাস্তি?
নিশি আমার ধমক শুনে খেতে শুরু করলো। ১ টা করে মাংসের পিস খাচ্ছে, আর চোখের জল নাকের জল এক করছে। ৬ পিস মাংস খাওয়ার পর খাওয়া বন্ধ করে দিলো।। এখন শুধু পানি খেয়ে যাচ্ছে। আমি এই কান্ড দেখে হাঁসতে শুরু করলাম।
কিছুক্ষণ পর নিশি পানি খাওয়া বন্ধ করে আমার দিকে তাকালো। আমি নিশির মুখ দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম। কারন মুখ টা লাল হয়ে গেছে, চোখ দিয়ে আঝড়ে পানি পড়ছে।
অনেক ভয়ংকর সুন্দর লাগছে নিশিকে। হুট করে নিশি এসে আমাকে কিছ করতে শুরু করলো। যার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না৷ আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর নিশি আমাকে ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে যায়। আর আমি বেকুবের মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি, আর ভাবছি একটু আগে কি হয়ে গেলো।
নিশির মুখের ঝাল আমার মুখেও কিছুটা এসেছে। যার জন্য আমারও কিছুটা ঝাল লাগতেছে। তবে সেটা খুবই সামান্য।
বিকেল বেলায় রুমে শুয়ে আছি।। শুয়ে শুয়ে মোবাইলে
ফেসবুকিং করছি৷ আর নিশি রুম ঝাড়ু দিতেছে। আমি নিশিকে বললাম.........
আমিঃ ভালো করে রুম ঝাড়ু দাও?
এই কথাটা বলার সাথে সাথে নিশি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো৷ আমি তো রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম। তারপর আমি নিশিকে বললাম.......
আমিঃ এভাবে তাকিয়ে লাভ নাই। সবে তো শুরু?
নিশিঃ আর কত কাজ করতে হবে?
আমিঃ যতক্ষণ না শেষ হয়?
নিশিঃ আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসো না। আমার এখানে কোনো জামা কাপড় নেই?
আমিঃ বিকেলে মার্কেটে নিয়ে যাবো। যতদিন না
আমার প্রতিশোধ শেষ হচ্ছে, ততদিন কোনো
চালাকি চলবে না?
নিশিঃ আর কত?
আমিঃ জানিনা, চুপচাপ কাজ কর। এত কথা বলিস কেনো?
বিকলে বেলায় নিশিকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম। তারপর কিছু জামা কাপড় কিনে দিলাম নিশিকে। এখন একটা পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমি ফোনে কথা বলছি। নিশি বাইকের পিছনে বসে আছে। রনির বাইক নিয়ে আসছি।
ফোনে কথা বলা শেষ করে বাইকের পিছন দিকে চেয়ে দেখি নিশি নেই। ভাবলাম পালিয়ে গেছে নাকি। কিন্তু নাহ, দেখলাম নিশি হাঁটতে হাঁটতে পার্কের ভিতরে চলে গেছে। আমিও পিছনে পিছনে গেলাম।
গিয়ে দেখি নিশি যে ছেলেটার সাথে প্রেম করতো...সেই ছেলেটা অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম করতেছে। এটা দেখে নিশি ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ছেলেটা নিশিকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। ছেলেটা দাঁড়াতেই নিশি ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।।আর ছেলেটাকে বলতে লাগলো........
নিশিঃ কুত্তার বাচ্চা এই তোর ভালোবাসা। তোর জন্য আমি আমার স্বামীকে কত অবহেলা করেছি।
চরিত্রহীন বানিয়েছি। ফুফা ফুফুকে সকলের কাছে ছোট বানিয়েছি। আর তুই কি না..??
ছেলেটাঃ তো আমি কি করবো হ্যা?? তোর বিয়ে হয়ে গেছে, তোকে আমার জীবনে মেনে নেওয়া অসম্ভব। এক সাথে কত রাত কাটিয়েছিস নিশানের সাথে তার
কোনো হিসাব আছে। নাই তাহলে কি কারনে তোকে আমি ভালোবাসবো বিয়ে করবো।
তোকে আমি ছেড়ে দিতাম যখন তুই দেখে নিয়েছিস সো আমাকে আর কষ্ট করে বলতে হবে না।
মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করতে হবে না। আমার কাজটা আরো সহজ হয়ে গেছে?
নিশিঃছিহ তোর মতো এমন ছেলেকে আমি ভালোবেসে ছিলাম। যে কিনা নিজের ভালোবাসা কে বিশ্বাস করে না..??
এই কথা বলে নিশি ছেলেটাকে আরও দুইটা চড় বসিয়ে দিলো। এরপর কান্না করতে করতে পার্কের বাহিরে চলে আসলো, আমিও নিশির পিছনে পিছনে চলে আসলাম।
বাহিরে এসে দেখি নিশি বাইকের পাশে বসে বসে কান্না করতেছে। আমি বাইকে উঠে নিশির উদ্দেশ্যে হর্ন দিতে লাগলাম। এরপর আমি নিশিকে বললাম........
আমিঃ কি হলো উঠিস না কেনো। তোর জন্য আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো?
নিশিঃ...........?? ( কথা না বলে কান্না করেই যাচ্ছে
আমিঃ কি ব্যাপার তোকে বাইকে উঠতে বলছি না। কথা কানে যায় না?
আমার ধমক শুনে কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। চুপচাপ এসে বাইকের পিছনে বসে পড়লো। বাসায় আসার পর নিশি বাইক থেকে নেমেই সোজা রুমে চলে গেলো। আমি বাইক রেখে এসে দেখি নিশি বিছানায় শুয়ে বালিশের মধ্যে মুখ গুজে কান্না করতেছে৷ এরপর আমি নিশিকে বললাম.............
আমিঃ এই তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ করবি। আমার এসব একদম ভালো লাগে না। এখন কান্না বন্ধ করে আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয় যা?
নিশিঃ হুমমমম?
রাতে রনির গিটার নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। অনেক দিন পর গিটার হাতে নিলাম। আসলে গিটার বাজানো আমার পুরনো শখ। তবে নিশির সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে আর হাতে নেওয়া হয়নি। আস্তে আস্তে গিটার বাজানো শুরু করলাম। কিছুক্ষণ হুদাই বাজানোর পর, আমার প্রিয় গানের টিউন তুলে গান গাওয়া শুরু করলাম।।গান গাওয়া শেষে যেই না ঘুরে নিচে
আসতে যাবো ঠিক তখনই দেখি নিশি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিশিকে বললাম..........
গল্পঃ_চরিত্রহীন_ছেলের_ভালোবাসা
(পর্ব০৫_শেষ_পর্ব)
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
রাতে রনির গিটার নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। অনেক দিন পর গিটার হাতে নিলাম। আসলে গিটার বাজানো আমার পুরনো শখ। তবে নিশির সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে আর হাতে নেওয়া হয়নি। আস্তে আস্তে গিটার বাজানো শুরু করলাম। কিছুক্ষণ হুদাই বাজানোর পর, আমার প্রিয় গানের টিউন তুলে গান গাওয়া শুরু করলাম।।গান গাওয়া শেষে যেই না ঘুরে নিচে
আসতে যাবো ঠিক তখনই দেখি নিশি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিশিকে বললাম..........
আমিঃ কি ব্যাপার তুই এখানে?
নিশিঃ না মানে তোমার গিটারের সুর আর গান শুনে এখানে আসলাম। তুমি তো অনেক সুন্দর করে গান গাইতে পারো?
আমিঃ তোকে কি আমি জিজ্ঞেস করেছি,,, আমার গান শুনতে কেমন লাগে। আমি গিটার কেমন বাজাই হে।
আর হ্যা কালকে সকালে তোকে বাড়িতে দিয়ে আসবো আমার প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে?
নিশিঃ না আমি যাবো না? ( মাথা নিচু করে )
আমিঃ যা বলেছি এটাই ফাইনাল কালকে সকালে রেড়ি হয়ে থাকবি। সকালে বাসায় দিয়ে আসবো আমি। এর উপর আজকে তোর সাথে যা হলো...?? 😁😁
আমি এই কথাটা বলার সাথে সাথে নিশি আমার দিকে তাকালো। হালকা আলোয় নিশির চোখ দেখে বুঝতে পারলাম কান্না করতেছে..। আমি কিছু না বলে সোজা নিচে চলে আসলাম।
পরের দিন সকালে নিশিকে তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসলাম। চলে যাচ্ছি এই দেশ ছেড়ে। নিজের পরিবার কে ছেড়ে। পরিবার..সে তো অনেক আগেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি আর কি ভাবে তাদের কে ছেড়ে যাবো?? রনিকে কল দিয়ে শেষ বারের মতো কথা বলে নিলাম।
রনি আমাকে বিদেশে যেতে মানা করতেছে।। সে নাকি ঢাকায় ব্যাক করতেছে। কিন্তু আমাকে থাকা যাবে না।কারন রনি আসলে আমাকে কখনও যেতে দিবে না। আমাকে যেতেই হবে,আর এখানে থাকা যাবে না। এই বলে রওয়ানা দিলাম,,,নতুন ঠিকানায়....
দীর্ঘ ১বছর পর.........
চলে আসলাম নিজের দেশ ছেড়ে। দেখতে দেখতে প্রায় এক বছর শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে হাজার বার
বাবা মা, আর রনির কথা অনেক মনে পড়েছে৷ সত্যি তাদের কে খুব মিচ করছি। যা আমার মুখ দিয়ে প্রকাশ করা অসম্ভব।
নিশির কথাও খুব মনে পড়ে।। এতোদিনে মনে হয় নিশি আরও একটা বিয়ে করে নিয়েছে। দেখতে দেখতে চার বছর পুর্ণ হয়ে গেছে।। আজকেই চার বছর পর আবার নিজের দেশে পিরে আসলাম।
দেশে এসে সোজা রনির বাসায় চলে গেলাম।। রনিকে সারপ্রাইজ দিবো বলে অনেকক্ষণ ধরে রনির বাসার কলিং বেল বাঝাচ্ছি কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। অনেকক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে দরজাটা খুলে দেয় আর আমাকে বলে...........
মেয়েঃ জ্বি বলুন কাকে চান?
আমিঃ রনি আছে কি?
মেয়েঃ জ্বি আছে?
আমিঃ দাঁড়ান আমি ঢেকে দিতেছি?
মেয়েঃ কই গো.... ( রনির উদ্দেশ্য )?
রনিঃ কি হয়েছে? ( ভিতর থেকে )
মেয়েঃ তোমার সাথে কে দেখা করতে এসেছে?
রনিঃ কে এসেছে আমার সাথে দেখা করতে? ( বাহিরে আসতে আসতে )
বাহিরে এসে রনি আমাকে দেখে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছি না।
শুধু আছে দুজনের চোখে হাজারো অভিমান।হটাৎ করে রনি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আর কান্না করে দিলো, আমিও কান্না করে দিলাম। এরপর রনি আমাকে বললো.......
রনিঃ এতোদিন পরে এই হতো ভাগা বন্ধুর কথা মনে পড়লো?
আমিঃ হুমম মনে তো পড়েছে প্রতিটা দিন,,,তাইতো তোর সাথে দেখা করতে চলে আসলাম?
রনিঃ আসার কি দরকার ছিলো। কেনো আসলি,না আসলেও পারতি। চলে যা তুই?
আমিঃ চলে যাবো?
রনিঃ হুমমম যা চলে যা তুই?
আমিঃ সত্যি সত্যি কিন্তু চলে যাবো?
রনিঃ হুমমমম যা?
আমিঃ ওকে?
এই বলে,, যেই আমি চলে আসতে যাবো। রনি আমাকে টেনে তার বুকে নিয়ে নিলো। আর আমাকে বলতে শুরু করলো.........
রনিঃ হালা দীর্ঘ চার বছর পর দেখা দিলি। আর বলছিস চলে যাবি?
আমিঃ তুই তো বলছিস চলে যেতে?
রনিঃ আমি বললে তুই চলে যাবি হুমম?
আমিঃ আরে না আমি তো একটু মজা করলাম?
রনিঃ হুমম। ও এই কে জানিস?
আমিঃ কে....?
রনিঃ তোর ভাবি,,,ওর নাম নিধি। দুই বছর হয়েছে বিয়ে করেছি। আর নিধি ও হচ্ছে....?( পুরোটা না বলতে দিয়ে )
নিধিঃ থাক আর বলতে হবে না,, উনার নাম নিশান। যার কথা তুমি প্রতিদিন বলো?
রনিঃ চলে ভিতরে চল। অনেক কথা জমে আছে, আজ সব বলবো। আগে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রেস্ট নে?
আমিঃ হুমমম চল?
দিনটা রনি আর নিধির সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিলাম। পরের দিন সকালে ঘুমিয়ে আছি। হটাৎ করে মনে হলো আমার বুকের উপর কিছু আছে। যার কারনে হালকা ভারি ভারি লাগছে।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি একটা বাচ্চা মেয়ে আমার বুকের উপর বসে আছে। এই দরেন ৩/৪ বছর বয়স হবে।
মেয়েটা দেখতে অনেক কিউট? কিছুটা আমার চেহারার সাথে মিল রয়েছে। কিন্তু কে এই মেয়ে। রনি আর নিধির তো কোনো সন্তান নেই।
যাই হোক বাচ্চা টা কার সেটা পরে জানা যাবে।। আমি একটু খেলা করি বাচ্চাটার সাথে। বাচ্চাদের সাথে
খেলা দুলা করতে আমার আমার অনেক ভালো লাগে।
অল্প কিছুক্ষণ খেলা ধুলা করলাম মেয়েটার সাথে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো মেয়টি একবারের জন্য কান্না করেনি।। কিছুক্ষণ পর মেয়েটাকে কোলে করে বাহিরে আসলাম,,ডাইনিং রুমে।
বাহিরে এসে আমি পুরাই অবাক।থথ হয়ে এক যায়গায় দাঁড়িয়ে আছি.। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। চোখ দিয়ে দুই ফোটা নোনা ঝল বের হলো। কারন বাহিরে এসে দেখি আব্বু,আম্মু,বোন, মামা, মামি সবাই বসে আছে। আর রনির সাথে কথা বলতেছে।
আম্মু আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। আমিও কান্না করে দিলাম।। আমার ছোট বোন এসে আমার কোল থেকে বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে নিলো। আর আম্মু আমাকে বললো.....
আম্মুঃ আমাদের কে ছেড়ে কি ভাবে এতোদিন ছিলি৷ আমাদের কথা একুটও মনে পড়েনি?
আমিঃ পড়েছে মা প্রতিটা দিন মনে পড়েছে। কিন্তু তুমি আব্বু মানা করেছো বাসায় না যাইতে তাই যাইনি?
আম্মুঃ তুই কি এখনও আমাদের উপর রাগ করে আছিস?
আমিঃ এগুলো কি বলো আম্মু। আমি তোমার উপর রাগ করতে পারি বলো?
আম্মুঃ তুই দেশ ছেড়ে যাবার পর নিশি আমাদের কে সব খুলে বলেছে৷ আর আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পারছি। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে?
আমিঃ এসব কথা থাক না এখন?
আম্মুঃ আমাদের মাফ করে দে?
আমিঃ তোমাদের উপর কখনো রাগ করিনি৷ তাহলে মাফ করার কথা কোথায় থেকে আসে......?
আম্মুঃএটা কে জানিস? ( পিচ্চি মেয়েটার কথা বললো)
আমিঃ কে....?
আম্মুঃ তোর আর নিশির মেয়ে....?
আমিঃ কিহহহহ?
আম্মুঃ হুমমম?
তারপর আমি মেয়েটাকে আবার কোলে তুলে নিলাম।। নিয়ে কান্না করে দিলাম। আম্মু আমার কান্না করা দেখে বললো.........
আম্মুঃ কিরে কান্না করতেছিস কেনো?
আমিঃ এমনিতেই খুশিতে আম্মু?
এরপর আমি একবার চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম নিশি এসেছে কিনা। তখনই আম্মু আমাকে বললো.........
আম্মুঃ কিরে কি খুঁজতেছিস
আমিঃ কিছু না?
আম্মুঃ আমি জানি তুই কাকে খুঁজতছিস। খুঁজে লাভ নাই। সে আসে নাই?
তারপর বিকেলের দিকে নিজের বাসায় চলে গেলাম।।
বাসায় এসে দেখি বাসা টা সেই রকম করে সাজানো। ঠিক যেই রকম টা আমি চলে যাবার সময় ছিলো নিশির জন্মদিনে। বাসায় আসছি দুই ঘন্টা হয়ে গেলো এখনো নিশিকে একটা বারের জন্য দেখলাম না।
আমি আমার ছোট বোনকে বললাম..........
আমিঃ এই জেরিন?
জেরিনঃ হুমমম?
আমিঃ আমার মেয়েটাকে একটু নিয়ে আয় তো। কতক্ষণ হয়েছে দেখিনি?
জেরিনঃ জ্বি ভাইয়া আনতেছি?
তারপর নিজের মেয়ের সাথে অনেকক্ষণ খেলা দুলা করলাম। এমন সময় মনে হলো কে যেনো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু যখনই দরজার দিকে তাকাই তখনই সরে যায়। রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। এখন পর্যন্ত নিশির দেখা পেলাম না।
আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতেছি,, কি কারনে নিশি আমার কাছে আসছে না। না আমার কাছে আসতে নিজেকে অপরাধী ভাবছে। এই সব কিছু ভাবতেছি আকাশের দিকে তাকিয়ে।
তখনই মনে হলো কেউ একজন ছাদে এসেছে। তাই আমি একটু সাইডে গিয়ে দাঁড়ালাম।
নিশি ছাদে এসেছে.।। ছাদে এসে কি জেনো খুঁজতেছে হয়তো আমাকে।। চাঁদের আলোয় নিশিকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমার মুখে কিভাবে তার সুন্দর্য বর্ণনা করবো, আমি বুঝতে পারছি না। এতটা সুন্দর লাগছে নিশিকে....
হটাৎ করে গিয়ে নিশিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। নিশি অনেক টা ভয় পেয়ে গেলো। আর আমাকে দেখে মাথা নিচু করে রাখলো। আমি নিশিকে বললাম........
আমিঃ তুমি আমার কাছ থেকে দুরে দুরে পালিয়ে আছো কেনো। কি হলো কথা বলো?
নিশিঃ আমি তোমার সাথে যা করেছি,, তাতে তোমার সাথে কথা বলার অধিকার হারিয়ে ফেলেছি?
আমিঃ আমি কি তা বলেছি। যেদিন এ দেশ ছেড়ে চলে গেছি। সে দিন আমি সব কিছু ভুলে গেয়েছি। আচ্ছা আমরা কি সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে পারি?
এই কথা শুনে নিশি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো।
নিশির চোখে পানি টলোমলো করছে।। এরপর নিশি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। আর বলতে লাগলো..........
নিশিঃ হুমমম পারি?
আমিঃ আমাকে কি ভালোবাসবে?
নিশিঃ হুমমম ভালোবাসবো। যতদিন এই দেহে প্রাণ আছে ততদিন। আর কখনো অবহেলা করবো না?
আমিঃ আমিও ভালোবাসবো তোমাকে?
নিশিঃ চলো একটু ওই খানে গিয়ে বসে বসে চাঁদ দেখি। অনেক দিনের স্বপ্ন দুজন এক সাথে চাঁদ দেখবো?
আমিঃ নিশি একটা কথা বলি?
নিশিঃ কি বলবে বলো?
আমিঃ আমাদের মা-মনির জন্য একটা বাবু দরকার না। দুজনে এক সাথে খেলা দুলা করবে৷ চলো একটা বাবু আনার ব্যাবস্থা করি?
নিশিঃ যাহ সবার সামনে কি বলো এসব আমার লজ্জা করেনা,গল্প পড়ে যারা ওরা সব কথা শুনতেছে। ওদের কে তুমি বলে দাও চলে যেতে?
~~~এই যে গল্প পাঠক ভাই বোনেরা আর থাকিয়েন না প্লিজ। আমার বউ খুব লজ্জা পাইছে তো। আপনারাও আজব লোক, অন্যের বাসর দেখার জন্য বসে থাকেন। আপনার বাসর দেখতে কি আমি যাই বলেন, যাইনা 😁😁 তাহলে আপনারা আমার রোমান্টিক সময়ে ডিস্টার্ব করতে আসেন কেনো 🤗 লজ্জা করেনা বুঝি আমার।
**************সমাপ্ত************