গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট | খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প

কষ্টের ভালোবাসার গল্প

কষ্টের ভালোবাসার গল্প

 গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_০১)

        অজানা ভালোবাসার গল্প।

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহ জালাল।


আমি আকাশ চৌধুরী। আব্বু আম্মুর  আদরের একমাত্র ছেলে। পড়া লেখা শেষ করে আব্বুর অবর্তমানে অফিস  

সামলাতে  হচ্ছে। অফিসে  বসে  আছি। একটু  পর মেঘ [অফিসের কর্মকর্তা] এসে আমাকে বলে উঠলো........ 


মেঘঃ-May I come in sir


আকাশঃ-yes come


মেঘঃ-স্যার কেনো ডেকেছেন আমায়?


আকাশঃ-হ্যা বলছি এখানে বসো?


মেঘঃ-থ্যাকং ইউ স্যার?


আকাশঃ-শুনলাম তোমার টাকার দরকার 

কথাটা কি সত্যি?


মেঘঃ-আসলে স্যার.......?(পুরোটা বলতে না দিয়ে) 


আকাশঃ-সত্যি কি না সেটা বলো?


মেঘঃ-হ্যা স্যার টাকা দরকার?


আকাশঃ-কত টাকা দরকার?


মেঘঃ-প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মতো?


আকাশঃ-টাকা গুলো আমি তোমাকে দিবো?


মেঘঃ-আপনে কেনো আমাকে এতগুলো টাকা দিবেন।তাছাড়া আমি এত টাকা আপনার কাছ থেকে নিতে পারবো না??


আকাশঃ-টাকা তো তোমার খুব ইম্পরট্যান্ট। আর টাকা গুলো তোমাকে এমনি এমনি দিবো না?


মেঘঃ-হুমম ইম্পরট্যান্ট। কিন্তু আমি আপনার কাছ থেকে টাকা গুলো নিতে পারবো না? 


আকাশঃ-টাকা গুলো আমি তোমাকে এমনি এমনি 

দিবো না?


মেঘঃ-তাহলে কেনো দিবেন টাকা গুলো?


আকাশঃ-আমার একটা কাজ করে দিতে হবে তোমাকে?


মেঘঃ-কি এমন কাজ যার জন্য আপনি আমাকে 

এত গুলো টাকা দিবেন??


আকাশঃ-সেটা কিছুক্ষণ পরে বলবো। এখন বলো

টাকা গুলো তুমি নিবে কি না??


মেঘঃ-স্যার টাকা  আমার দরকার  কিন্তু সেটা আমি এমনি এমনি নিতে পারবো না। কি কাজ আর সেটা কতটা ইম্পরট্যান্ট আগে আমাকে জানতে হবে।

না হয় টাকা আমি নিতে পারবো না?


আকাশঃ-তাহলে তোমার মাকে বাঁচাবে কি ভাবে।

যদি টাকা জোগাড় না হয়?


মেঘঃ-আপনি কি ভাবে জানেন আমার মায়ের ব্যাপারে?[অনেকটা অবাক হয়ে]


আকাশঃ-সেটা তোমার দেখার বিষয় না। এখন ভেবে দেখো তুমি কি করবে?


মেঘঃ-কি কাজ করতে হবে বলুন?


আকাশঃ-একটা এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন 

করতে হবে? 


মেঘঃ-কিসের এগ্রিমেন্ট?


আকাশঃ-বিয়ের...?


মেঘঃ-মানে.....?


আকাশঃ-মানে হলো একটা  বিয়ের এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন করবে তুমি। তাহলে আমি তোমাকে টাকা গুলো দিবো। আর হ্যা এগ্রিমেন্ট হবে ১বছরের জন্য। ১বছর পর তুমি তোমার পথ দেখবে আর আমি আমার পথ?


এই কথা শুনে মেঘ বলে উঠলো.......... 


মেঘঃ-সরি স্যার আমার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়?


আকাশঃ-ভেবে দেখো সময় মাত্র ২৪ ঘন্টা?


এরপর মেঘ কোনো কিছু না বলেই নিজের ডেস্কে চলে গেলো। আর গিয়ে বসে বসে ভাবতে থাকে...........

|||

ডাক্তার বলেছে..যেই ভাবে হোক টাকা গুলো জোগাড় করতে। নয় তো তাদের আর কিছুই করার থাকবে না।


যেই ভাবে হোক মাকে বাঁচাতেই হবে। প্রয়োজনে নিজের জীবনের  বিনিময়ে  হলেও  মায়ের  ট্রিটমেন্ট  আমাকে করতেই হবে..। কিন্তু স্যার আমার মায়ের খোঁজ পেলেন কি ভাবে। আর এগ্রিমেন্ট পেপারই বা কেনো...


বিয়ে যদি করতে না চায় তাহলে বিয়ের নাটক কেনো। 

আসল রহস্য কি আমাকে জানতেই হবে? এসব কথা ভাবতেছে মেঘ। হটাৎ করে তার সহকর্মী তানহা এসে মেঘ কে বললো......... 


তানহাঃ-কিরে মেঘ কি ভাবছিস?


মেঘঃ-.........?[চুপ করে আছে কোনো কথা বলছে না]


তানহাঃ-মেঘ কি ভাবছিস বলবি তো নাকি?


মেঘঃ-হুমম তানহা তুই কি বলবি বল?


তানহাঃ-বলবি তো তুই?


মেঘঃ-মানে কি বলবো আমি?


তানহাঃ-তোকে স্যারের সাথে কথা বলতে দেখলাম। কিছু হয়েছে নাকি?


মেঘঃ-না তেমন কিছু না।। তানহা তুই তো জানিস এই দুনিয়ায় মা ছাড়া আর কেউ নেই আমার। আজ যদি সেই মাকে বাঁচাতে না পারি  তাহলে বিবেকের  কাছে অপরাধী হয়ে যাবো। যেই মা নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছে। নিজের সুখ না দেখে আমার সুখের জন্য ভেবেছে আজ সেই মায়ের মৃত্যু কি ভাবে নিজের 

চোখে দেখবো বলতে পারিস?


তানহাঃ-মন খারাপ করিস না। কিছু একটা উপায় নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে?


মেঘ সারারাত একটুও ঘুমাতে পারেনি। কি ভাবে ঘুমাবে মা যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে.। তাহলে মেয়ে হয়ে কি ভাবে ভালো থাকবে। 


কোনো ভাবে রাতটা পার করে মেঘ সকাল বেলায় নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো। গিয়ে আকাশের সাথে  দেখা করতে গেলো.........


মেঘঃ-স্যার আসবো? 


আকাশঃ-আরে তুমি? কি ব্যাপার আজ নিজ থেকে আসলে। any problem..?


মেঘঃ-স্যার সমস্যা তো একটাই?


আকাশঃ-তার মানে তুমি আমার প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি তাইতো?


মেঘঃ-আর কোনো অপশন কি নেই?? 


আকাশঃ-না আর কোনো অপশন নেই। মা তোমার লাইফ তোমার সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে?? 


মেঘঃ-আচ্ছা স্যার আমি রাজি??


আকাশঃ-গুড আমি জানতাম তুমি এই প্রস্তাব

ফেলতে পারবে না?? 


মেঘঃ-স্যার টাকা গুলো আজই দরকার??


আকাশঃ-হুমম টাকা আজই দিবো আর বিয়েটাও আজই হবে??


মেঘঃ-কিন্তু.......??[পুরোটা বলতে না দিয়ে]


আকাশঃ-কোনো কিন্তু নেই। এসো আমার সাথে কোনো প্রশ্ন করো না, যেখানে যাবো সাথে তুমিও যাবে। আর হ্যা ভয় পেওনা কিন্তু তোমার মায়ের ট্রিটমেন্টের টাকা আমি দিচ্ছি এটাই ফাইনাল?? 


মেঘঃ-থ্যাংক ইউ স্যার??


আকাশঃ-এসব না বললেও চলবে, আগে আসো??


আকাশ মেঘ কে নিয়ে গাড়িতে বসালো। তারপর গাড়ি ড্রাইব  করতে শুরু করলো। এরপর মেঘ আকাশ কে বলতে শুরু করলো......... 


মেঘঃ-আমরা কোথায় যাচ্ছি?? 


আকাশঃ-গেলে বুঝতে পারবে,,এত প্রশ্ন করো

কেনো তুমি?? 


মেঘঃ-না স্যার এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম?? 


এরপর মেঘকে নিয়ে একটা বাড়ির ভিতরে ডুকলো,মেঘ

অবাক হয়ে  চারদিকে তাকিয়ে  আছে। এটা বাড়ি নাকি রাজপ্রাসাদ। এতো সুন্দর বাড়ি কারো হয় নাকি।


আকাশের সাথে মেঘ ভিতরে ডুকলো। ভয়ে মেঘের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু মেঘ একটা কথাও মুখ ফুটে বলতে পারছে না। হটাৎ করে আকাশ বলে উঠলো...... 


আকাশঃ-মামনি মামনি দেখো কাকে নিয়ে এসেছি?? 


কিছুক্ষণ পর হুইল চেয়ারে বসে একজন মহিলা এগিয়ে আসলো আকাশের কাছে। হ্যা উনি আকাশের মা।


একটা এক্সিডেন্টের পর থেকে  উনি প্যারালাইজড হয়ে যান। সেই থেকে হাটাচলা করতে পারেন না। তিনি এসে আকাশ কে বললো........... 


আম্মুঃ-এই তো আমি,,কি হয়েছে এতো চিৎকার

করে ডাকছিস কেনো??  


আকাশঃ-কাকে নিয়ে এসেছি দেখো??


আম্মুঃ-বাহহ খুব সুন্দর তো,,এই কি সেই মেয়ে 

যাকে তুই??[পুরোটা বলতে না দিয়ে]


আকাশঃ-মামনি মামনি শোনো,,,আজকে ওর সাথে  আমার বিয়ে তুমি সব কিছু আয়োজন করো। আমি একটু আসছি ওকে নিয়ে শপিং করতে যাবো??


আম্মুঃ-এতদিনে একটা কাজের  মতো কাজ করতে যাচ্ছিস। ঠিক আছে আমি তোর উকিল আংকেল 

কে ফোন আসতে বলি। সব কাগজ পত্র রেডি করে 

রাখি। তোরা শপিং করে আয়..??


আকাশঃ-আচ্ছা ঠিক আছে মামনি??


আম্মুঃ-এদিকে একটু আসবে মা...??[মেঘ কে উদ্দেশ্য করে]


মহিলার মুখে মা ডাক শুনে  মেঘের  বুকে কেমন জেনো মুচড় দিয়ে উঠলো। মেঘ উনার কাছে গিয়ে পায়ের কাছে বসে হাতে হাত রাখলো। আর আকাশের মা বলে উঠলো........ 


আম্মুঃ-আজ থেকে আমার এই বাদর ছেলের সব দায়িত্ব কিন্তু তোমার,,ওকে দেখে রাখবে কেমন।

আমার ছেলের পছন্দ যে এতো সুন্দর তা আগে 

জানা ছিলো না?? 


মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে,কি বললো এটা উনি। মেঘের মাথায় জেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। 

মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ ওর এমন করে তাকানো দেখে বললো........ 


আকাশঃ-এই ভাবে তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি আসো শপিং করতে হবে?? 


মেঘ রিতীমতো ভয় পেয়ে গেলো,, আকাশের এই রকম কথায়। কি আজব লোক রে বাবা। নিজের সার্থ রক্ষা করার জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাইছে, নাকি উনার এই বিয়ের পিছনে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। জানি না কি চান উনি। 


উনার মতিগতি বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দেয়নি মনে হয়। যাই হোক এতে ভেবে লাভ নেই। এখন মাকে বাঁচানোর এই একটাই উপায়। যে ভাবেই হোক মাকে আমার চাই ই চাই।


দুজনে টুকটাক কিছু শপিং করে বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে আকাশ মেঘ কে একটা শাড়ী পড়ে রেডি হতে বললো। একটু পরে কাজী আসবে।


তারপর থেকে  মেঘের আগামী এক  বছর চুক্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকবে। একটা সম্পর্ক কি চুক্তি দিয়ে শুরু হয়। 

মেঘ এসব কথা ভাবছে। হটাৎ করে আকাশ বললো.....


আকাশঃ-এই যে হ্যালো তাড়াতাড়ি রেডি হও কাজী চলে আসবে?? 


মেঘঃ-স্যার আমার মা??


আকাশঃ-তোমার মায়ের অপারেশন আজকে হবে।

তুমি সেখানে যাবে কিন্তু আগে আমাদের বিয়ে টা

হোক তারপর??


মেঘঃ-অপারেশনের টাকা??


আকাশঃ-ওটা অলরেডি জমা হয়ে গেছে। আর ডাক্তারের সাথে আমার কথাও হয়েছে?? 


মেঘঃ-ওহহহ??


আকাশঃ-তুমি রেডি হয়ে আসো,,আমি নিচে 

অপেক্ষা করছি??


মেঘঃ-হুমম??


আকাশঃ-ও হ্যা একটা কাজ বাঁকি?? 


এই কথা বলে আকাশ আলমারি থেকে একটা কাগজ বের করে মেঘের হাতে দিলো...। মেঘ কাগজ টা হাতে নিয়ে বলে উঠলো......... 


মেঘঃ-এটা কি স্যার??


আকাশঃ-এটা এগ্রিমেন্ট পেপার??


মেঘ হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো। আকাশ মেঘ কে থামিয়ে দিয়ে বললো.......


আকাশঃ-এখন এটা পড়ে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি সাইন করো??


মেঘঃ-এক্ষুনি সাইন করতে হবে?? 


আকাশঃ-হ্যা এক্ষুনি সাইন করতে হবে?? 


মেঘ ভয়ে ভয়ে হাতে কলম তুলে নিলো। আর ভাবতে শুরু করলো.....

|||

হে আল্লাহ বাঁচার কি কোনো উপায় নেই? শেষ পর্যন্ত একটা এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন করে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হবে।


কিন্তু যদি তামিম এটা জানে তাহলে তাকে কি ভাবে জবাব দিবো। অবশ্য ওর আর এখন আমার লাইফ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। যদি থাকতো তাহলে 

এই ভাবে..........


পুরোটা বলার আগেই আকাশ বলে উঠলো.......


আকাশঃ-এতো ভেবে লাভ নেই। যা হবে অবশ্যই ভালো হবে। তোমার মাকে তো পিরে পাবে তাইনা??


মেঘ ভাবতে লাগলো...একটা সাক্ষরের মাধ্যমে আমি

আমার সব কিছু হারাতে যাচ্ছি। তবে যাই হোক এর কারনে তো আমার মাকে ফিরে পাবো। এটাই আমার কাছে অনেক। 


অবশেষে মাকে বাঁচাতে গিয়ে আজ নিজের জীবনকে চুক্তির ভিতরে নিয়ে নিলাম।


হুট করে মেঘ এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন করে কাগজ টা আকাশের হাতে দিলো। আকাশ সেটার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।


তারপর আকাশ এগ্রিমেন্ট পেপার আলমারিতে রেখে মেঘ কে নিচে আসতে বলে নিজ রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। 


মেঘ খুব জোরে কান্না করতে লাগলো। আজ সব শেষ হয়ে গেলো সব। অবশেষে বিয়ে টা সম্পুর্ণ হলো। 

বিয়ে শেষ করে কাজী চলে গেলো।। মেঘ আকাশকে বলতে শুরু করলো.......... 


গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_০২)

        অজানা ভালোবাসার গল্প।

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহ জালাল।

 

মেঘ খুব জোরে কান্না করতে লাগলো। আজ সব শেষ হয়ে গেলো সব। অবশেষে বিয়ে টা সম্পুর্ণ হলো। 

বিয়ে শেষ করে কাজী চলে গেলো। ।মেঘ আকাশকে বলতে শুরু করলো.........


মেঘঃ-স্যার এবার তো আমি মায়ের কাছে যেতে পারি?


আকাশঃ-হুমম চলো?


মেঘঃ-এই পোশাকে.?


আকাশঃ-হুমম এটাই পড়ে যাবে। তোমার মায়ের কাছ থেকে আসির্বাদ নিতে হবে না। ওনার তো দেখা 

দরকার ওনার মেয়েকে বউ সাজে কেমন লাগে। তাও আবার চুক্তির_বউ


আম্মুঃ-কিরে কি এমন বলছিস ওকে?


আকাশঃ-মামনি মেঘ ওর মায়ের সাথে দেখা করতে চায়?[ কথা ঘুরিয়ে ]


আম্মুঃ-ঠিক আছে তুই ওকে নিয়ে যা। আর হ্যা পৌঁছে আমাকে একটা কল করিস আমি চিন্তায় থাকবো।

আর তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসিস কেমন??


আকাশঃ-মামনি তুমি চিন্তা করিও না, আমরা দ্রুত পিরে আসবো। মিলি এই মিলি কোথায় তুই??

[কাজের লোক]


মিলিঃ-জ্বি ভাইজান বলেন?? 


আকাশঃ-মামনির খেয়াল রাখিস। আমি একটু

বাহিরে যাবো??


মিলিঃ-জ্বি ভাইজান রাখবো আপনি কোনো টেনশন কইরেন না??


আকাশঃ-গুড। মেঘ চলো আমাদের বের হতে হবে?? 


মেঘঃ-আসছি মা..??


আম্মুঃ-তাড়াতাড়ি আসিস মা??


মেঘঃ-আচ্ছা ঠিক আছে মা..??


এরপর দুজনে হসপিটালে চলে গেলো। হসপিটাল গিয়ে মেঘ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলো........


মেঘঃ-ডাক্তার আমার মা কোথায়। এখন মায়ের কি অবস্থা কেমন আছে?? 


ডাক্তারঃ যদিও অপারেশন সাকসেসফুল। কিন্তু ওনার অবস্থা খুব একটা ভালো না। মনে হয় না ওনাকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে?? 


মেঘঃ-মানে কি ডাক্তার...?? 


ডাক্তারঃ-দেখো আকাশ জীবন মরন সবই আল্লাহর হাতে। উনি চাইলে মানুষকে বাঁচাতে পারেন আবার মারতেও পারেন। আপনার মা আর বেশি দিন 

বাঁচবেন না..?? 


মেঘঃ-আপনি পাগল হয়ে গেছেন ডাক্তার,এটা কখনোই হতে পারে না। আমার মা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। আমি আমার মায়ের কাছে যাবো??


এই কথাটা বলেই মেঘ এক দৌড়ে মায়ের কেবিনে গিয়ে 

মায়ের পাশে বসে কান্না শুরু করলো। এ দিকে আকাশ ডাক্তারের সাথে কথা বলতেছে.......


আকাশঃ-ডাক্তার উনাকে কবে রিলিজ করবেন??


ডাক্তারঃ-দুই দিন পর উনাকে রিলিজ করে দিবো।

আর একটা কথা?? 


আকাশঃ- জ্বি ডাক্তার বলুন....??


ডাক্তারঃ-প্লিজ উনার একটু খেয়াল রাখবেন। উনার হাতে বড় জোর ৪/৫ মাস সময় আছে। উনাকে 

একটু দেখে রাখবেন..??


আকাশঃ-okay doctor i will try my best


ডাক্তারঃ-Thank you Akash 


আকাশঃ-আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসছি??


ডাক্তারঃ-ওকে আসুন..??


আকাশ কেবিনে এসে দেখে মেঘ পাগলের মতো কান্না করতেছে। আকাশ কি ভাবে মেঘকে সামলাবে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে.. মেঘের ঘাড়ে হাত রেখে বলতে শুরু করলো......... 


আকাশঃ-প্লিজ মেঘ তুমি এভাবে ভেঙে পড়োনা। তুমি  যদি ভেঙে পড়ো তাহলে মাকে কে সামলাবে। মা তো এখনো জানেন না, যে তার হাতে সময় মাত্র কয়েকটা মাস...??


মেঘ পিছনে ঘুরে আকাশ কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আর বলতে লাগলো......... 


মেঘঃ-মায়ের কিছু হলে আমি বাঁচবো না স্যা। মা ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই। আমি যে বড্ড একা হয়ে যাবো??


আকাশঃ কেনো আমরা আছি তো তোমার সাথে।

আমি আছি মামনি আছে। তুমি কেনো ভেঙে

পড়ছো মেঘ নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করো??


আকাশের কথায় মেঘ ওকে ছেড়ে দিয়ে সরে যায়। আর বলতে থাকে.........


মেঘঃ-I am sorry sir


ঠিক সেই সময় মেঘের আম্মা বলে উঠলো....... 


আম্মাঃ-মেঘ...??


মেঘঃ-মা তুমি ঠিক আছো তো??


মেঘের মা উঠতে গেলে আকাশ উনাকে ধরে পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে উনাকে বসিয়ে দেয়...। এরপর মেঘের মা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো........ 


আম্মাঃ-বাহহ তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে এই পোশাকে??[বিয়ের পোষাক দেখে]


মেঘঃ-মা আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমাকে না জানিয়ে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি?


আম্মাঃ-আকাশ আমাকে সব কিছু বলেছে??


মেঘঃ-তুমি জানো..?? 


আম্মুাঃ- হ্যা অপারেশনে যাওয়ার আগে আকাশ আমাকে সব কিছু বলেছে। আমি নিজে ওকে

অনুমতি দিয়েছি তোকে বিয়ে করার জন্য?? 


মেঘের মনে ভয় ডুকে গেলো।। কি বলে মাকে বিয়ের জন্য রাজি করলো। তাও আবার একটা এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন করা বিয়ে। মা কি এটা জানে।


মা এটা জানলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। মেঘ আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। আর তখন তার মা বলতে লাগলো........


আম্মাঃ-তুই খুব সুখি হবি মা। আমি তোর জন্য রোজ আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে এমন এক জনকে চেয়েছি যে তোকে অনেক ভালো রাখবে। মা আকাশ খুব ভালো ছেলে ও তোকে অনেক ভালো রাখবে?? 


মেঘঃ-মা এখন এসব কথা ছাড়ো তো। এখন তোমার কাছে কেমন লাগছে সেটা বলো??


আম্মাঃ-আমি একদম ঠিক আছি??


আকাশঃ-মা এখন একটু রেস্ট নেন নয়তো শরীর আরো অসুস্থ হয়ে যাবে?? 


আম্মাঃ-আচ্ছা ঠিক আছে?? 


আকাশঃ-মেঘ চলো আমরা বাসায় যাই মামনি অপেক্ষা করতেছি?? 


মেঘঃ-স্যার আমি এখানেই থাকি..মাকে ছেড়ে আমার যেতে ইচ্ছে করছে না??


আম্মাঃ-কিন্তু মা আজ তো তোদের বিয়ের প্রথম...?


মেঘঃ-মা প্লিজ.. আমি এখন কোথাও যাচ্ছি

না এটাই ফাইনাল?? 


মেঘ বাচ্চাদের মতো মাকে জড়িয়ে ধরে রাখে। এরপর মেঘের মা বলে উঠলো........ 


আম্মাঃ-পাগল মেয়ে?? 


মেঘঃ-😭😭কান্না করেই যাচ্ছে?? 


আকাশঃ-মা মেঘ না গেলে আমি না হয় চলে যাই??


আম্মাঃ-না বাবা মেঘ যাবে। আজ মাত্র ওর বিয়ে হলো।  আজতো ওর বরের বাড়িতে থাকার কথা। তাছাড়া আমি এখন ভালো আছি। তোমরা সকালে এসো রাতে তো দুজনে এখানে থাকতে পারবে না। এটা হসপিটাল এখানে কি এত লোকজন allow করবে??


মেঘঃ-কিন্তু মা আমি তোমাকে ছাড়া....??[পুরোটা বলতে না দিয়ে]


আম্মাঃ-রাতটাই তো সকালে আসিস অনেক সময় মিলে আড্ডা দিবো মা মেয়ে মিলে। এবার যাও মা

তোর তোর সংসার সাজানোর প্ল্যান কর??


মেঘঃ-😭😭..মা??


আম্মাঃ-কাঁদে না মা। আজকে যে সুখের দিন এইদিনে কাঁদতে নেই??


মেঘঃ-মা আমি যাবো না??


আম্মাঃ মায়ের কথা শুনতে হয়। আর তোর শ্বাশুড়ি মা অপেক্ষা করছে তোদের জন্য?? 


মেঘঃ-তাতে কি হয়েছে??


আম্মাঃ-আকাশ ওকে নিয়ে যাও তো বাবা??


মেঘঃ-মা তুমি এমন করছো কেনো??


আম্মাঃ-পাগলী মেয়ে নিজের বরের বাড়িতে যাবি না এখানে থাকবি সেটা হয় নাকি??


আকাশঃ-মা মেঘ খুব জেদি ও আমার একটা কথাও শুনে না। ওকে বকা দিন তো একটু??


আম্মাঃ-মেঘ কি শুরু করলি তুই যাবিনা ওর সাথে?? 


মেঘঃ-যাচ্ছি তো নিজের মেয়ের থেকে মেয়ের জামাইকে প্রায়োরিটি দিচ্ছো,তুমি খুব পঁচা??


মেঘ এই কথা বলে রাগ দেখিয়ে বের হয়ে চলে গেলো।

এদিকে মা আমাকে বলতে শুরু করলো........ 


আম্মাঃ-বাবা তোমার কাছে আমার একটা

অনুরোধ?? 


আকাশঃ ছি মা অনুরোধ কেনো বলছেন। বলেন না কি বলবেন??


আম্মাঃ-আমি জানি আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমি যখন থাকবো না..তুমি তাকে দেখে রেখো বাবা।

আমি চলে গেলে ও একা হয়ে যাবে। এটা একটা সন্তানের কাছে মায়ের অনুরোধ বাবা??


আকাশঃ-মা আমি আগেই আপনাকে সব কিছু বলেছি।

আপনি ভাববেন না, দায়িত্ব যখন নিয়েছি তাকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার? আজ হোক কাল হোক মেঘ আমার হবেই।

|||

হ্যা মেঘ আগে এক জনকে ভালোবাসতো। হয়তো সে থাকলে মেঘ আজকে আমার হতো না। মা আমি আপনাকে ওয়াদা করছি আজ থেকে মেঘকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।

|||

একফোঁটা কষ্ট ও মেঘকে স্পর্শ করবে না.। মা আপনি শুধু আমাদেরকে দোয়া করবেন। আমি জেনো আমার সবটা দিয়ে মেঘকে ভালো রাখতে পারি??


আম্মাঃ-আমি দোয়া করি একদিন তোমার ভালোবাসা জয় হবেই??


আকাশঃ-চিন্তা করবেন না, বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে তখন ও চাইলেও এই পবিত্র বন্ধন থেকে বের হতে পারবে না। আমি ওকে মুক্ত দিবো না। সারাজীবন আমার কাছেই রেখে দিবো। আচ্ছা মা আসি মেঘ গাড়িতে একা??


আম্মাঃ-আচ্ছা ঠিক আছে বাবা যাও??


তারপর আকাশ গিয়ে গাড়িতে উঠলো।। তারপর গাড়ি স্টার্ড করলো। মেঘ চুপচাপ বসে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। ভাগ্যিস মেঘ তখন কেবিনে ছিলো না। 

নয়তো সব শুনে ফেলতো...


মেয়েটা এমনিতেই অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আর ওকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। এসব ভাবতে ভাবতে বাসার কাছে চলে আসলো গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে দুজনে ভিতরে চলে যায়....


ঘরে গিয়ে আকাশ মেঘকে  আলামারি থেকে কিছু শাড়ি নামিয়ে দিয়ে বললো ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য। এরপর মেঘ ফ্রেশ হয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে রান্না ঘরে যায়। তারপর রাতের খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে মেঘ।


আকাশ রুমে ডুকে মেঘ কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কিছু না বলেই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আর ভাবতে থাকে আজকের দিনটার কথা। 


মেঘ কে কতটা কষ্ট দিলো একটা চুক্তির কাগজ দিয়ে। 

মেঘ নিজেও জানেনা তার সাথে কি হচ্ছে....। আকাশ নিজেকে বারবার বকা দিচ্ছে..। 


ওকে সত্যিটা বলতে পারতো কিন্তু যদি মেঘ দুরে সরে যায়। সেই ভয়ে একটা চুক্তি করে নিলো.। জেনো মেঘ আকাশকে ছেড়ে না যেতে পারে।


কিন্তু আকাশ কি পারবে এই  এক বছরের চুক্তির মধ্যেই মেঘের মন জয় করে নিতে। পারবে মেঘের ভালোবাসার  মানুষ হয়ে উঠতে। নাকি মেঘ আকাশকে ভুল বুঝে এক বছর পর দুরে সরিয়ে দিবে। শেষটা জানতে অবশ্যই লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকুন।। এরপর আকাশ তার ডায়রী টা হাতে নিয়ে লিখতে শুরু করে.......


আকাশের একটাই অভ্যাস এই পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব কিছুই এই ডায়রীতে লিপিবদ্ধ করে রাখা।


সেটা যত সুখ কিংবা যত দুঃখের হোক না কেনো। সব কিছু এই ডায়রীতে লিখে রেখেছে....। লিখতে লিখতে আকাশ চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছে...


মাঝ রাতে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়। রুমের লাইট টা  অন দেখে মেঘ অনেকটা অবাক হয়। এতো রাতে লোকটা লাইট জ্বালিয়ে রাখলো কেনো। চারদিকে তাকিয়ে পরে দেখতে পায় আকাশ চেয়ারে ঘুমিয়ে আছে...


মেঘ উঠে আকাশের কাছে যায়। তারপর হাতের নিচে একটা ডায়রী দেখতে পায়..


মেঘ সেটা ধরবে কি ধরবে না এই সব ভাবতে ভাবতে ডায়রী টা হাতে নিয়েও আবার টেবিলে রেখে দিলো।


কারন মেঘ জানে কারো পার্সোনাল জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দেওয়া টা চরম অন্যায়। মেঘ সেই অন্যায় কিছুতেই করবে না। মেঘ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় শেষের দিকে.। তাই মেঘ ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করে ওজু করে আসলো...। 


ওজু করে এসে তাহাজ্জুদ  নামাজ আদায় করে নিলো। তারপর কোরআন তেলওয়াত করে ফজরের আজান দিলে নামাজ আদায় করে নিলো। একটু পর চারদিকে আলোয় চিকচিক করবে। তাই দেরি না করে মেঘ রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো....


ঠিক তখনই ওর শ্বাশুড়ি মায়ের রুম থেকে আওয়াজ শুনা যাচ্ছিলো। উনার ফুঁপানির কন্ঠ শুনে মেঘের বুঝতে বাকি রইলো না..যে উনি কান্না করছেন।


কিন্তু এতো সকালে কেনো কান্না করছেন সেটা জানার জন্য মেঘের বড্ড কৌতুহল হয়। তাই মেঘ দরজার কাছে কান পেতে শুনতে লাগলো। এমন কিছু কথা শুনে মেঘ স্তব্ধ হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে..


কিছুক্ষণ পরে নিজেকে সামলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। সকালের সব নাস্তা মেঘ নিজের হাতে রেডি করলো। তারপর আকাশের মায়ের রুমের কাছে গিয়ে দরজায় নক দিয়ে বলতে লাগলো.......


গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_০৩)

        অজানা ভালোবাসার গল্প। 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহ জালাল।


কিছুক্ষণ পরে নিজেকে সামলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। সকালের সব নাস্তা মেঘ নিজের হাতে রেডি করলো। তারপর আকাশের মায়ের রুমের কাছে গিয়ে দরজায় নক দিয়ে বলতে লাগলো.......


মেঘঃ-মা দরজাটা খুলবেন...??


আম্মুঃ-দাঁড়াও মা আসছি..??


উনি উইল চেয়ার ঠেলে দরজা খুলো দিলেন।। মেঘ কে দেখে উনি একেবারে অবাক হয়ে গেলেন। ঘরের লক্ষী

হাতে চায়ের কাপ, চুলে খোঁপা, শাড়ির আচল কোমরে গোঁজা। এরপর মেঘ বলে উঠলো.......


মেঘঃ-মা আপনার চা..??


আম্মুঃ-এত সকালে তুমি রান্না ঘরে গেলে কেনো মা। মিলি কোথায়.?? 


মেঘঃ-মিলি অন্য কাজ করছে তাই আমি রান্নাটা করে নিলাম.??


আম্মুঃ-ইশশ প্রথম দিনেই রান্না ঘরে কেনো গেলে মা।

মিলি করে দিতো.??


মেঘঃ-মা এতদিন সব কাজ মিলি করেছে,, আজ থেকে আমি করবো,আপনি কিন্তু আপত্তি করতে পারবেন না।

আর আপত্তি করলেও আমি শুনবো না। আমি কিন্তু 

খুব বেয়াদব টাইপের মেয়ে কথা না শুনার অভ্যাস আছে আমার..??


আম্মুঃ-তোমার সাথে কথায় পারবো না মা। এখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে আসো?


মেঘঃ-চা টা নিন আর কি খাবেন সেটা বলুন আমি রান্না করে নিয়ে আসছি??


আম্মুঃ-কিছু লাগবে না মা এতদিনে আমার ঘরে একটা লক্ষী এসেছে।। বাদর ছেলেটা এবার একটু হলেও ভালো থাকবে..??


মেঘঃ-কেনো মা উনি কি আগে ভালো থাকতেন না??


আম্মুঃ-না মা ঠিক তা নয়।। তুমি ওর স্ত্রী ওর সব কথা জানার অধিকার তোমার আছে। তবে সেটা আজকে 

না অন্যদিন তোমাকে বলবো..?? 


মেঘঃ-মা আপনি কি কিছু লুকচ্ছেন আমার কাছ থেকে.?? 


আম্মুঃ-তোমার কাছ থেকে কোনো কিছু লুকানোর অধিকার আমার নেই মা। এখানে আসো বসো??


মেঘঃ-তাহলে এভাবে বলছেন কেনো মা। বলুন না মা কি হয়েছে আমি কি জানতে পারি না.??


আম্মুঃ-জানবে তবে সেটা আকাশের কাছ থেকে।।আমি যদি কিছু বলি তাহলে আকাশ কষ্ট পাবে। আমি চাই তুমি কথা গুলো আকাশের কাছ থেকে জানে। আর ওর ভিতরে একটা গিল্টিং ফিলিংস আছে যেটা তোমায় 

দূর করতে হবে। বারবার নিজেকে দোষী ভাবছে..কিন্তু আমি তো মা আমি জানি আমার ছেলেটার কোনো অন্যায় নেই...ও অন্যায় করতে পারে না...?? 


মেঘঃ-আমি কি ভাবে জানবো মা...??


আম্মুঃ-বোকা মেয়ে তুমি ওর বিবাহিত স্ত্রী। এমন কিছু 

ব্যাপার নেই যে আকাশ তোমার কাছ থেকে লুকাবে।

তবে কিছু একটা নিয়ে আকাশ খুব কষ্ট পাচ্ছে সেটা আজও আমার কাছে অজানা। শত চেষ্টা করেও 

রহস্য জানতে পারছি না।। কিন্তু বুঝতে পারি আমার ছেলের কষ্ট..?? 


মেঘ কথা গুলো শুনতেছে,আর ভাবতেছে কি এমন কষ্ট উনার। যে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেন তিনি।

আমি কি পারবো সত্যি ঘটনা গুলো জানতে। নাকি আমাকে আবারো ব্যার্থ হতে হবে। কিছুক্ষণ পর আবার আম্মু বলে উঠলো......


আম্মুঃ-জানিস মা,আমি সব সময় একটা জিনিস ফলো করতাম। আকাশ রোজ রাতে একটা ডাইরীতে কি যেনো লিখে রাখে। কিন্তু এটা জানি আমার ছেলেটার মনে কি ঝড় বইছে। ও খুব কষ্ট পাচ্ছে। পারবি না ওকে তোর ভালোবাসা দিয়ে সুন্দর একটা জীবন গড়ে দিতে?


কি করবো মা....আমি যে একটা চুক্তির ভিতরে আটকে আছি। যেটা ১ বছর পর শেষ হয়ে যাবে। তারপর তো দুজনে দুই দিকে ছিটকে পড়বো... 


এক বছরে কি ভাবে পারবো আমি উনার কষ্ট গুলো দুর করতে। জানিনা কি আছে উনার মনে। তবে যাই থাকুক না কেনো সেটা আমাকে জানতেই হবে....?[মনে মনে ভাবলো কথা গুলো] এরপর আম্মু বলে উঠলো......


আম্মুঃ-কিরে মা রাখবি না আমার এই অনুরোধ..?? 


মেঘঃ-ছিঃ ছিঃ মা আপনি এভাবে বলবেন না।আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো উনার কষ্ট গুলো দুর করার?


আম্মুঃ-যা গিয়ে দেখ আকাশের কি লাগে। আমি একটু রান্না ঘরে গিয়ে দেখছি মিলি কি করে.?? 


মেঘঃ-মা আপনি বিশ্রাম নিন,তাছাড়া আমি তো আছি। আমি থাকতে আপনি রান্না ঘরে যাবেন সেটা কি হয় বলেন তো..??


আম্মুঃ-ঠিক আছে রান্না ঘরে যাবো না আমাকে একটু সোফার কাছে নিয়ে চল মা...একটু বসবো??


মেঘঃ-ঠিক আছে আসুন...??


এরপর মেঘ উইল চেয়ার ঠেলে উনাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। তারপর নিজের রুমে গিয়ে দেখলো আকাশ চেয়ারে নেই। ওয়াশ রুম থেকে টেপ এর আওয়াজ আসতেছে.... তারমানে উনি ওয়াশ রুমে।


মেঘ অঘোচালো রুমটা ঠিকঠাক করে নিচে চলে যায়।

তারপর সব নাস্তা রেডি করে সবাইকে খাবার দিলো।

সকালের নাস্তা শেষ করে আকাশ রেডি হয় অফিসে যাবে বলে।। ঠিক সেই সময় মেঘ রুমে ডুকতে ডুকতে বললো......


মেঘঃ-একি আপনি রেডি..অনেক দেরি হয়ে গেলো তাইনা। ইশশ কখন অফিসে যাবো...?? 


আকাশঃ-কোথায় যাবে..??


মেঘঃ-কিনো অফিসে যাবো আজকে না একটা মিটিং আছে অফিসে....??


আকাশঃ-হুমম তো কি হয়েছে..??


মেঘঃ-কি হয়েছে মানে অফিসে যাবো রেডি হতে

হবে না...??


আকাশঃ-তুমি কোথাও যাচ্ছো না...??


মেঘঃ-মানে কি.....??


আকাশঃ-মানে খুব সহজ.. তুমি অফিসে যাচ্ছো না।

আমি একাই যাচ্ছি...?? 


মেঘঃ-কিন্তু কেনো...?? 


আকাশঃ-তোমার পোস্টে আজ থেকে অন্য একজন জয়িন করবে....??


মেঘঃ-মানে কি আমার জব....??


আকাশঃ-নেই...??


মেঘঃ-what...??


আকাশঃ-কি হলোটা কি তোমার..?? 


মেঘ এবার কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো........


মেঘঃ-এখন আমি কি করবো মায়ের ট্রিটমেন্টের এত টাকা কোথায় পাবো। কি ভাবে মায়ের ঔষধের টাকা জোগাড় করবো। কি ভাবে মাকে বাসায় নিয়ে যাবো।তাছাড়া বাড়িওয়ালার অনেক দেনা বাকি। এখন কি করবো আমি...সবটা কি ভাবে ম্যানেজ করবো..?? 


আকাশঃ-মেঘ হয়েছে কান্না করছো কেনো...?? 


মেঘঃ-আমার চাকরি টা কেনো কেড়ে নিলেন 

জানতে পারি...?? 


আকাশঃ-তোমার চাকরির কি দরকার।। ঘরের বউ হয়ে অফিসে কাজ করবে এটা আমার কাছে বড্ড বেমানান তাইনা..??


মেঘঃ-ওহহ ভালো ঘরের বউ হয়ে মায়ের দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত হলাম....??


আকাশঃ-মানে কি বলছো...??


মেঘঃ-কিছু না আপনি যান আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আজ তো জরুরী মিটিং আছে...?? 


আকাশঃ-মিটিং কেন্সেল করে দিয়েছি....??


মেঘঃ-কেনো....?? 


আকাশঃ-অন্য একটা কাজ আছে...?? 


মেঘঃ-ওহহ তাহলে তাড়াতাড়ি যান দেরি হয়ে যাবে আবার...?? 


আকাশঃ-তুমি রেডি হও এক সাথে বের হবো দুজনে..?


মেঘঃ-কেনো? আর আমি কোথাও যাবো না...?? 


আকাশঃ-এতো প্রশ্ন করার অধিকার আমি তোমাকে দেইনি। তুমি আমার স্ত্রী তাই আমি যা বলবো তাই তোমাকে করতে হবে। যাও গিয়ে রেডি হয়ে 

আসো....??[ধমক দিয়ে]


মেঘঃ-আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম..আমি আপনার চুক্তির_বউ_ >>সুতারং আপনি যা বলবেন তাই

করতে হবে আমাকে।। সেই অধিকার থেকে একটা 

কথা জানতে চাইবো বলবেন.??


আকাশঃ-কি জানতে চাও বলো...??


মেঘঃ-আপনি তো একজনকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো?তাও আবার একটা এগ্রিমেন্ট পেপারে সই করিয়ে।  আমি কি খুব বড় 

ক্ষতি করেছি আপনার। যার জন্য এত বড় শাস্তি 

দিলেন আমায়??


আকাশ চুপ করে অবাক দৃষ্টি নিয়ে এক নজরে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো। এক মুহুর্তের জন্য আকাশের চোখের পলক পড়েনি। মেঘের কন্ঠ গুলো এতটাই মায়াবী যা প্রকাশ করা অসম্ভব.......মেঘ আবার বলে উঠলো......


মেঘঃ-বলতে পারেন আজ অব্দি কোন কথাটা শুনিনি আপনার। অফিসের সব কাজ সব সময় ঠিক করে দিয়ে নিজের মাকে নিয়ে যে দুনিয়া টা ছিলো এখন 

তো সেটাও শেষ হয়ে গেলো। কেনো করলেন এমনটা আমার সাথে...?? 


আকাশঃ-আমি তোমার সব কথার জবাব দিতে বাধ্য নই। একটা কথা ভালো করে শুনে রাখো আকাশ আহমেদ আজ অব্দি যা চেয়েছে তার মা বাবা তাকে সেটাই এনে দিয়েছে। আর আজ তার মায়ের চাওয়ার কোনো গুরুত্ব দিবে না এটা তো হতে পারে না।

|||

আমি আমার মামনি কে সুখী দেখতে চাই...? আমার মামনি আমার সব চাওয়া পুরন করেছে। তাই আমি আমার মামনিকে একটু হলেও ফিরিয়ে দিতে চাই।

আর হ্যা আজ থেকে আমি ততটুকু জানার অধিকার দিবো ততটুকু জানবে। একদম বেশি জানার চেষ্টা করবে না..??


মেঘঃ-আপনি কেনো অামার সাথে এমন করছেন যেটা জানতে চাইলাম সেটার উত্তর দিন না প্লিজ। কেনো আমার জীবন টা নিয়ে খেলতেছেন, কি অধিকারে..??

|||

অন্যায় আপনি করেছেন, আর অপরাধী অমি বাহ মিঃ আকাশ আহমেদ বাহ কি সুন্দর কথা বললেন আপনি।

যাইহোক আমি একাই যেতে পারবো,,আপনাকে আর 

আমার জন্য কষ্ট করতে হবে না। আপনি অফিসে যান...??


আকাশঃ-চুপচাপ গিয়ে রেডি হয়ে আসো মাকে দেখতে যাবো। তারপর তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমি আবার অফিসে যেতে হবে.?? 


আকাশ আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে গেলো। মেঘ রেডি হয়ে নিচে নেমে কোনো কথা না বলে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলো।


আকাশ ড্রাইভ করছে। মেঘ বারবার আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ একটা কথাও বললো না শুধু ড্রাইভ করছে। 


আকাশের চোখে জলের চিহ্ন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। দু চোখ নোনা জলে টলমল করছে যা বুঝতে বাকি রইলো না মেঘের। 


আকাশের এমন অবস্থা দেখে মেঘ ভাবতে থাকে.....কি এমন কষ্ট উনার। যার জন্য উনি এখনো এতো কষ্ট পান। আমার সাথেই বা এমন এগ্রিমেন্ট কেনো করলো। কি ভাবে জানবো আমি,, কি ভাবে বুঝবো আমি সকল সত্য ঘটনা....


কি এমন গোপন তথ্য লুকিয়ে আছে যার জন্য আমাকে উনার চুক্তির_বউ হতে হয়েছে।এত কিসের কষ্ট উনার সব কিছু জানতে হবে আমাকে সব জানতে হবে?


যেই ভাবেই হোক মায়ের কথা আমাকে রাখতেই হবে।।আমি মাকে কথা দিয়েছি উনার সব কষ্ট দূর করে উনার মুখে হাসিটা আবার ফিরিয়ে আনবো...আমাকে যে পারতেই হবে পারতেই হবে আমাকে। শত হলেও আমি উনার এগ্রিমেন্ট করা বউ। আর ১ বছর তো অনেক সময়। এই একটা বছর আমাকে কাজে লাগাতেই হবে।


হসপিটালের সামনে এসে আকাশ গাড়ি ব্রেক করতেই 

মেঘ ধাক্কা খায়। সাথে সাথে মেঘের ঘোর কাটে। গাড়ি ব্রেক করে আকাশ বললো.......


আকাশঃ-নামো..? 


মেঘঃ-আপনি ভিতরে যাবেন না...?


আকাশঃ-না আমার অফিসে কাজ আছে।তুমি অপেক্ষা করো আমি বিকেলে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো..?


মেঘঃ-আপনি না বললেন মিটিং কেন্সেল করেছেন..?


আকাশঃ-হ্যা করেছি...?


মেঘঃ-তাহলে কিসের কাজ অফিসে..? 


আকাশঃ-নতুন যে আসবে তাকে সব বুঝিয়ে দিতে হবে..?


মেঘঃ-সেটা তো ম্যানেজার কে বলে দিলে হয়। আপনার যাওয়ার কি দরকার...?


আকাশঃ-জয়িন যে করবে সে একজন মেয়ে আর আমার খুব কাছের কেউ...??


আকাশের এমন কথায় আকাশ একটু কষ্ট পেলেও পরে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো............


মেঘঃ-স্পেশাল কেউ হয়..??


আকাশঃ-হুমম স্পেশাল..?? 


মেঘ এবার আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।

একটি বারের জন্য পিছনে পিরে তাকায়নি। একরকম দৌড় দিয়ে হসপিটালের ভিতর চলে যায়।আকাশ গাড়ি স্টার্ড দিয়ে অফিসে চলে গেলো। মেঘ সারাদিন তার মায়ের সেবা যত্ন করেছে।। মায়ের সাথে অনেক আড্ডা দিলো। এক সময় মেঘের মা বলে উঠলো......


গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_০৪)

        অজানা ভালোবাসার গল্প। 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহ জালাল। 


মেঘ এবার আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।

একটি বারের জন্য পিছনে পিরে তাকায়নি। একরকম দৌড় দিয়ে হসপিটালের ভিতর চলে যায়।আকাশ গাড়ি স্টার্ড দিয়ে অফিসে চলে গেলো। মেঘ সারাদিন তার মায়ের সেবা যত্ন করেছে।। মায়ের সাথে অনেক আড্ডা দিলো। এক সময় মেঘের মা বলে উঠলো......


আম্মুঃ-মেঘ একটা কথা বলবো...? 


মেঘঃ-হ্যা মা বলো কি বলবে...? 


আম্মুঃ-তুই আকাশের সাথে ভালো আছিস তো...?


মেঘঃ-মা এটা কেমন প্রশ্ন। ভালো না থাকলে কি আজ আকাশ নিজে এখানে নামিয়ে দিয়ে যেতো...?


আম্মুঃ-মি জানতাম আকাশ তোকে বুঝবে...?


মেঘঃ-হুমমম..?


আকাশ অফিসে চলে যায়,যাওয়ার পর অফিসের নতুন কর্মচারীকে কাজ বুঝিয়ে দেয়। তারপর হসপিটাল চলে আসে। এসে সোজা কেবিনে চলে যায়। গিয়ে বললো....


আকাশঃ-এটা কি হলো মা..?


আম্মুঃ-কেনো বাবা কি হয়েছে...? 


আকাশঃ-মেয়েকে কাছে পেয়ে ছেলেকে ভুলে গেছেন।

এটা কিন্তু ঠিক হলো না...? 


আম্মুঃ-শোনো ছেলের কথা, এদিকে আসো তো...?


আকাশ একটা চেয়ার টেনে ওনার পাশে বসলো?? মেঘ বারবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবতেছে.... ছেলেটা মায়ের কাছে আসলেই কেমন জেনো হয়ে যায়।

আর বাসায় সব সময় গোমড়া মুখ নিয়ে বসে থাকে।


কি আছে ওনার মনে। কেনো এমন অভিনয় করছেন।

নিজে তো কষ্ট পাচ্ছে সাথে আমাকেও একটা চুক্তির মাঝে বন্ধি করে রেখেছেন। ওনি আসলে চায় টা কি।


মেঘ এসব কথা ভাবতেছে। হটাৎ করে মেঘের মা বলে উঠলো.......


আম্মুঃ-বাবা একটা কথা বলবো...? 


আকাশঃ-হ্যা মা বলুন...?


আম্মুঃ-আমার না এখানে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,,আর পারছি না এখানে থাকতে...?


মেঘঃ-কি বলছো মা তুমি ঠিক আছো তো ডাক্তারকে ডাকবো...? 


আম্মুঃ-না রে মা আমি ঠিক আছি।  আমার না বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছে করছে আমাকে নিয়ে চল এখান থেকে.? 


মেঘ একবার আকাশের দিকে তাকায় তারপর আবার মায়ের দিকে তাকায়। আকাশ হয়তো বুঝতে পারছে

মেঘের চোখের ভাষা। তাই নিজেই মুখ খুললো.......


আকাশঃ-মা আমি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে দেখছি রিলিজ দেয় কি না....?


মেঘঃ-কিন্তু মাকে নিয়ে যাবো কোথায়..? 


আকাশঃ-কেনো আমার বাড়ি আছে কি জন্য...? 


মেঘঃ ওখানে নেওয়াটা ঠিক হবে না...? 


আকাশঃ-আমি তোমার কোনো কথা শুনছি না।। আজ মা আমাদের ওখানেই যাবে। আর এখন থেকে ওখানে থাকবে এটা আমার ডিসিশন। তুমি কোনো কথা বলবে না এটাই ফাইনাল।আমি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে দেখছি কি বলে..??


এরপর আকাশ ডাক্তারের রুমে চলে যায়। গিয়ে ডাক্তারকে বললো.......


আকাশঃ-ডাক্তার আসবো....? 


ডাক্তারঃ-হ্যা আকাশ আসো.. কিছু বলবে...?


আকাশঃ আসলে আমি চেয়েছিলাম মাকে আজকে বাসায় নিয়ে যেতে। এখানে থাকতে হয়তো ওনার অসুবিধা হচ্ছে...?? 


ডাক্তারঃ-সেটা ঠিক আছে আকাশ ওনার ঠিক মত যত্ন নিতে হবে। যদিও ওনার হাতে সময় খুব কম যতদিন বাঁচে ততদিন তোমাদের একটু কষ্ট করতে হবে...?? 


আকাশঃ-এটা কোনো ব্যাপার না ডাক্তার।আমি আর মেঘ সব সামলে নিবো। ওনার যত্নের কোনো ক্রুটি 

আমি রাখবো না....??


ডাক্তারঃ-সেটা আমি জানি আকাশ..? তোমাকে তো আমি আজ থেকে জানিনা,,তোমার মায়ের দিকটাই দেখো না!! আজ দু বছর ধরে ওনার এই অবস্থা।

অথচ তুমি তাকে সব রকম ভাবে সাহায্য করছো.?


আকাশঃ-মামনির এই অবস্থার জন্য তো আমি দায়ী ডাক্তার। যদি একটু সেবা করে আমার পাপের 

বুঝা টা একটু হাল্কা করতে পারি সেটাই বা কম কিসের।। আর তাছাড়া সন্তান হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য..??


ডাক্তারঃ-দেখো আমি এভাবে বলিনি...?? তুমি আমার কথায় কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত। আকাশ আসলে এই পর্যন্ত তোমার মায়ের চিকিৎসা এই হসপিটাল থেকে নেওয়া হয়েছে আর সেটা আমিই হ্যান্ডেল করেছি সবই তো জানি তাই বলেছি...I am sorry akash....??


আকাশঃ-It's okay doctor.....আমি কি এখন মাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারি...??


ডাক্তারঃ-তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে। দাঁড়াও

আমি তোমাকে সব ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি তুমি ওনাকে আজকেই নিয়ে যাও...??


আকাশঃ-Thank you doctor...Thank you so much


ডাক্তারঃ-এটা আমার দায়িত্ব আকাশ। আমি জানি ওনার কোনো অযত্ন হবে না...?? 


আকাশঃ-আসি তাহলে..?? 


ডাক্তারঃ-তুমি যাও আমি ওনার রিলিজের সব কাগজ পত্র ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি....??


তারপর আকাশ কেবিনে চলে যায়..গিয়ে মেঘের মায়ের সাথে গল্প করতে লাগলো। ডাক্তার ডিসচর্জ পেপারে সই করতে বলে মেঘের মাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দেয়। এরপর সবাই বাসায় চলে আসলো।


বাসায় আসার পর মেঘকে সব দিকটা সামলাতে হচ্ছে।

এক দিকে মায়ের সেবা অন্য দিকে শ্বাশুড়ি মায়ের যত্ন  সব মিলিয়ে মেঘ একটু চাপে থাকলেও কাউকে কোনো প্রকার কষ্টে ফেলতে চায় না। নিজের হাতেই সব কিছু সামলে নেয়.।


আকাশও যতটা সময় বাসায় থাকে মেঘের কাজে হেল্প করে। এভাবেই তাদেন দিন কাটতে থাকে। দেখতে দেখতে আকাশ আর মেঘের বিয়ের ৪ মাস কেটে যায়। 


মেঘ অনেক বার চেষ্টা করেছে আকাশ এর ব্যাপারে সব কিছু জানতে? কিন্তু বরাবরই মেঘকে হার মানতে হচ্ছে।


একটা সময় ছিলো মেঘ শুধু মাত্র আকাশের একজন স্টাফ ছিলো। কিন্তু আজ সে আকাশের বিবাহিত বউ।


যদিও বিয়ে টা একটা চুক্তির মাঝে সীমিত ছিলো তবুও এই কয়েক টা মাসে আকাশের প্রতি মেঘের একটা টান

জন্মাতে শুরু করে। মেঘ নিজেও জানেনা সে নিজেকে 

আকাশের মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে। অথচ এই সম্পর্ক টা আর পাঁচটা সম্পর্কের মত স্বাভাবিক নয়....


মেঘ বারবার আকাশের অতীত সম্পর্কে জানতে চায়..।

কিন্তু আজও তার জানা হয়ে উঠেনি.....।এই ৪ টা মাস ভালো কাটলেও বিপত্তি ঘটে ৫ মাসের মাথায়। মেঘের জীবন থেকে হাড়িয়ে যায় তার সব চাইতে কাছের মানুষ

বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। 


হ্যা সে আর কেউ নয় মেঘের মা।। আজ সকালের ঘটনা

আকাশ অফিসে যাবার পর মেঘ,মেঘের মা আর মেঘের শ্বাশুড়ি সবাই মিলে বসে গল্প করতেছে। হটাৎ করেই মেঘের মা বুকের ব্যাথায় চটপট করতে থাকে....


মেঘ দ্রুত ডাক্তার কে কল করে একটা এম্বুলেন্স এ করে তার মাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। আকাশের মাকে 

বাসায় রেখে গেলো।। এরপর মেঘ কল করে আকাশকে

হসপিটাল আসতে বলে। আকাশ অফিস থেকে দ্রুত হসপিটাল এসে মেঘের মায়ের হাতে হাত রেখে বলে.....


আকাশঃ-মা প্লিজ শান্ত হন কিছুই হবে না আপনার এক্ষুনি ঠিক হয়ে যাবেন আমি ডাক্তারকে ডাকছি?


মেঘঃ-মা ও মা কথা বলো না প্লিজ কথা বলো। এভাবে

একা করে দিওনা মা। মা আমি কি ভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া। ও মা কথা বলো না প্লিজ চুপ করে থেকো না। ও মা ওকটু তাকাও না আমার দিকে..??


মেঘের কান্না দেখে আকাশ থমকে গেলো। ডাক্তারকে ডাক দিলে উনি এসেই পালস চেক করে উনাকে মৃত ঘোষণা করেন।


এরপর থেকে মেঘ আজ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি। কেমন জেনো হয়ে গেছে মেয়েটা। কারো সাথে কথা বলে না।। আকাশ জানাজা শেষ করে ওনাকে দাফন করে বাসায় চলে আসলো।


হসপিটাল থেকে আসার পর মেঘ এখন পর্যন্ত নিজ ঘর থেকে বের হয়নি। আকাশ তার মায়ের সাথে কথা বলে 

নিজের রুমে চলে গেলো। মেঘ কেমন যেনো ধুম মেরে 

বসে আছে কোনো দিকে তাকাচ্ছে। আকাশ এসে মেঘের পাশে বসলো। মেঘের হাতে হাত রেখে আলতো স্বরে বললো.......


আকাশঃ-মেঘ কিছু খেয়ে নিবে আসো...??


আকাশের ছোঁয়া পেয়ে মেঘের জেনো হুঁশ ফিরে এলো।

ঝাপটে ধরে আকাশকে। সারাদিন ধরে কান্না করেছে

তবুও যেনো কান্না থামার নাম নিচ্ছে না। আকাশকে 

জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো মেঘ। মেঘের কান্না দেখে আকাশ বললো........


আকাশঃ-মেঘ প্লিজ শান্ত হও..এটা তো হওয়ারই ছিলো তাইনা। কেউ তো সারাজীবন বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেনি। আজ অথবা কাল আমাদেরকে ও এক সময় চলে যেতে হবে।। পৃথিবীতে আমরা কেউ চিরস্থায়ী না..?? 


মেঘ কোনো কথা না বলে বরাবরই কান্না করতেছে। আকাশ আবার বলতে লাগলো.....


আকাশঃ-আমাদের জন্য পর কাল বলেও একটা জীবন আছে। ইহকাল ছেড়ে আমাদের সবাইকে একদিন পরপারে আশ্রয় নিতে হবে। প্লিজ মেঘ একবার বুঝার চেষ্টা করো তুমি তো জানোই তোমার মায়ের কত বড় রোগ ছিলো..??

|||||

হার্টের পুটো অপারেশন করেও রোগী বাঁচানো যায় না।

অথচ তুমি মাকে পাঁচ মাস তোমার নিজের কাছে পেয়েছো। এই রকম রোগী তো অপারেশন থ্রিয়েটারে 

মারা যায়। আল্লাহ কত মহান যে তোমার মাকে কিছু দিন বেঁচে থাকার সুযোগ দিয়েছেন..?? 


মেঘঃ-😭😭😭???[কান্না করেই যাচ্ছে ]


আকাশঃ-প্লিজ মেঘ একটু শান্ত হও..?? 


মেঘঃ-ডাক্তার মিথ্যা বললো কেনো। উনি তো ৬ মাস সময় দিয়েছিলেন তাহলে কেনো আজ মা আমাকে একা করে চলে গেলো,,কেনো এমন হলো...??


আকাশঃ-তুমি তো জানো মেঘ মায়ের কন্ডিশন কেমন ছিলো। তবুও বোকার মত কথা বলছো কেনো। আর ডাক্তার কি মানুষের জীবন মরনের খবর জানে নাকি।

ওনারা শুধু নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে সামান্য কিছু বুঝার চেষ্টা করে,আর সেই অভিজ্ঞতা থেকে উনি ৬ মাস সময় বলেছিলেন...??? 


আকাশ মেঘকে কোনো রকম বুঝিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে বসায়। মেঘ এক মনে খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। খেতে ইচ্ছে করছে না, খাবার গলা দিয়ে নামছেই না।। কিন্তু খাবার না খেলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে।


মেঘ খাবার খাচ্ছে না দেখে আকাশ নিজেই তার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে। আকাশ খাবার তুলে দিতেই 

মেঘ নিজ থেকে হা করে খাবার টা খেয়ে নেয়।। হয়তো 

আকাশ বকা দিবে এই ভেবে মেঘ খাবার খেয়ে নেয়।


তারপর আকাশ মেঘকে খাইয়ে দিয়ে মুখ মুছে দেয়। 

দুজন খাবার শেষ করে রুমে চলে যায়।রুমে নিয়ে মেঘ কে বিছানায় বসিয়ে ঘুমাতে বললো। কিন্তু মেঘ আবার কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগে........ 


মেঘঃ-কেনো এমন হলো😭😭😭


মেঘ আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।আকাশ ওর পাশে বসে মাথাটা বালিশে রেখে মাথায় হাত বুলাতে থাকে আর বলতে থাকে........


আকাশঃ-প্লিজ মেঘ আর কান্না করে নিজেতে কষ্ট দিও না। এতে তুমি নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবে...?? 


মেঘঃ 😭😭😭[মেঘ কান্না করেই যাচ্ছে ]


আকাশঃ-বললাম না ঘুমিয়ে পড়তে তুমি কেনো বুঝো না। মেঘ তোমার কিছু হলে আমি....??? 


মেঘ কথাটা শুনে চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাক মেঘের ওমন তাকানো দেখে বলে উঠলো.....


আকাশঃ- এই ভাবে তাকাবে না ঘুমাও বলছি....??


মেঘ সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিছুক্ষণ পর 

মেঘ ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো। আকাশ উঠে মায়ের রুমে যাবে ঠিক তখনই টান খেয়ে পড়ে যায়।


আকাশ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারায় মেঘের উপরে গিয়ে পড়লো। এদিকে মেঘ ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে। 

মেঘের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ।

আজ যেনো মেঘকে নতুন রুপে দেখছে।


আকাশ মেঘের অনেকটা কাছে চলে গেলো..।। মেঘের প্রতিটা শব্দ এসে আকাশের বুকে লাগছে। এক অদ্ভুত ভালো লাগা আকাশকে ছুয়ে যাচ্ছে।


হটাৎ করে আকাশের চুক্তির কথা মনে পড়ে যায়। যার জন্য উঠতে গেলে আবার বিছানায় পড়ে যায়।


আকাশ ভাবতেছে মেঘ তো ঘুমিয়ে পড়লো। তাহলে টান লাগলো কোথায়। তখনই ওর চোখ পড়ে নিজের 

হাতে থাকা গড়ির দিকে। আকাশের হাতে থাকা ঘড়ি মেঘের শাড়ির আঁচলের সাথে আটকে গেছে।


এই জন্যই আকাশ যখন উঠতে গিয়েছিলো শাড়ির টান লেগে পড়ে যার। ঘড়ি থেকে আঁচল টা সরিয়ে মেঘের থেকে দূরে সরে যায়। আর মনে মনে বলে......


তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি মেঘ। কি করবো বলো আমি 

যে নিরুপায়। যদি আমাদের মাজে চুক্তি টা না আসতো 

তাহলে এভাবে তোমাকে কষ্ট দিতাম না।

|||

জানিনা তোমাকে সত্যিটা কখনো বলতে পারবো কিনা।

শুধু এতটুকু বলতে পারি এই চুক্তির মাধ্যমে তোমাকে ১ বছরের জন্য হলেও নিজের বউ হিসেবে পেয়েছি এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।

|||

এই চুক্তি টা না থাকলে তুমি আজ আমার থাকতে না।

১ বছর মেঘ মাত্র ১ বছর কিন্তু এই ১ টা বছর আমার কাছে অনেক কিছু।


কথা গুলো বলার সময় আকাশের দুই চোখে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। চোখের জল আড়াল করতে রুম থেকে 

বের হয়ে পাশের রুমের বেলকুনিতে চলে গেলো।


এভাবেই কয়েকটা দিন কেটে গেলো। আকাশ মেঘকে অনেকটা সময় দেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও অফিসের  কাজ সামলে খুব একটা সময় পায় না তবুও চেষ্টার কোনো ক্রুটি রাখে না।


সকাল বেলায় আকাশ নাস্তা করে অফিসে চলে যায়..।।

মেঘ আর ওর শ্বাশুড়ি সোফায় বসে গল্প করছে। এমন সময় মেঘের ফোনে একটা কল আসে।মেঘ ওর শ্বাশুড়ি মাকে বলে যে বাহিরে একটা কাজ আছে যেতে হবে।


মেঘের শ্বাশুড়ি খুব ভালো মনের একজন মানুষ।। উনি কোনো  রকম বাধা দেয়নি। মেঘ মিলিকে মায়ের খেয়াল রাখতে বলে বাসা থেকে বের হয়ে একটা টেক্সি করে রেস্টুরেন্টে চলে গেলো। রেস্টুরেন্টে গিয়ে 

দেখে আগে থেকেই তার বান্ধবী অরিন ওর জন্য অপেক্ষা করছে। এরপর মেঘ চেয়ারে বসে আর কফি অর্ডার করে। এরপর মেঘ তানহকে বলে উঠলো........



গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_০৫)

        অজানা ভালোবাসার গল্প। 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহ জালাল। 


মেঘের শ্বাশুড়ি খুব ভালো মনের একজন মানুষ।। উনি কোনো  রকম বাধা দেয়নি। মেঘ মিলিকে মায়ের খেয়াল রাখতে বলে বাসা থেকে বের হয়ে একটা টেক্সি করে রেস্টুরেন্টে চলে গেলো। রেস্টুরেন্টে গিয়ে 

দেখে আগে থেকেই তার বান্ধবী অরিন ওর জন্য অপেক্ষা করছে। এরপর মেঘ চেয়ারে বসে আর কফি অর্ডার করে। এরপর মেঘ তানহকে বলে উঠলো........


মেঘঃ-তানহা বল কেনো ডেকেছিস..??


তানহাঃ-মেঘ তুই কেমন আছিস..??


মেঘঃ-ভালো.....??


তানহাঃ-স্যারের সাথে বিয়ে হওয়ার পর তো তোর 

সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। আন্টি মারা গেলেন

তাও গিয়ে দেখতেও পারলাম..না সরি রে...??


মেঘঃ-দূর তুই সরি কেনো বলছিস সব আমার 

কপাল রে....??


তানহাঃ-সত্যিই কি তুই ভালো আছিস...??


মেঘঃ-ভালো না থাকার কি আছে। এতো বড়লোক মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে ভালো না থেকে উপায় আছে...?? 


তানহাঃ-তোর কথা বার্তা এমন লাগছে কেনো মনে

হয় তুই কিছু একটা আড়াল করতেছিস....??


মেঘঃ-ছাড় তো এসব কথা। এখন বল তুই কেনো আমায় ডেকেছিস...??


তানহাঃ-তুই কি কিছুই জানিস না...??


মেঘঃ-কোন ব্যাপারে.....??


তানহাঃ-স্যার মানে তোর স্বামী....??


মেঘঃ-কেনো কি হয়েছে...??


তানহাঃ-অফিসে তোর পদে একজনকে জব দেওয়া হয়েছে...?? 


মেঘঃ-জানি সে একজন মেয়ে...?? 


তানহাঃ-জানিস তাহলে চুপ করে আছিস কেনো...?? 


মেঘঃ-মানে..?? 


তানহাঃ-স্যার ৩ মাসের জন্য রিধিকে[মেয়েটার নাম] নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছে....??


মেঘঃ-তো কি হয়েছে...??


তানহাঃ-মেঘ কি হয়েছে তোর।। আর উনি তোর স্বামী, তুই উনাকে আটকাবি না। কি দরকার এসব ডিল 

করার আর ৩ মাসের জন্য অন্য দেশে যাওয়ার। 

আর ওই মেয়েটাকেই বা কেনো নিয়ে যাবেন অফিসে অন্য স্টাফরাও তো আছে..??


মেঘঃ-অফিসের কাজে যাবে তুই এত ভাবছিস কেনো?


তানহাঃ-মেঘ তুই তো এত বোকা না। রিধি মেয়েটা সারাক্ষণ স্যারের মাথায় ছড়ে বসে থাকে। স্যার 

যেখানে যাবেন ওই রিধি মেয়েটা সেখানে যাবে??


মেঘঃ-তানহা এতে এত ভাবার কি আছে। অফিসের কাজেই তো যাচ্ছে...?? 


তানহাঃ-মেঘ বাচ্চাদের মত বিহ্যেভ করিস না। কেনো বুঝেও না বুঝার ভান করছিস। তোর স্বামী তোকে না বলে অফিসের অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে আমেরিকা যাবে আর তুই একা একা থাকবি.???


মেঘঃ-তানহা প্লিজ এই সব কথা বাধ দে, আমার এখন ভালো লাগছে না এসব কথা শুনতে। অন্য কিছু বল?


তানহাঃ-ওহহহ সরি। একটা কথা বলবো মেঘ...??


মেঘঃ-কি কথা শুনি...??


তানহাঃ-তুই কি তামিমের কারনে স্যারকে দূরে সরিয়ে রাখছিস...??


মেঘঃ-তানহা তামিমকে এর মাঝে টেনে আনছিস কেনো...??


তানহাঃ-মেঘ তুই যদি মনে করিস তামিমের জন্য স্যার কে অবহেলা করবি তাহলে যেনে রাখ তুই কিন্তু তোর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করতে যাচ্ছিস..??


এই কথাটা শুনে মেঘ একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়। তারপর বলতে থাকে......


মেঘঃ-ভুল তো সেদিন করেছি যে দিন আকাশ আহমেদ এর বউ হয়ে ওই বাড়িতে পা রেখেছি....??


তানহাঃ-মেঘ😠😠


মেঘঃ-তুই স্যারের জন্য আমাকে ধমক দিলি...??


তানহাঃ-সরি রে মেঘ। শোন একটা কথা বলি.. তুই কিন্তু ভালো করেই জানিস তামিম একটা প্রতারক। আর তুই তামিমের জন্য কেনো স্যারকে দূরে সরিয়ে রাখবি বল?


মেঘঃ-তামিম প্রতারক না তানহা...??


তানহাঃ-ভালোবাসার মায়া জালে আটকা পড়েছিস তুই তাই বুঝতে পারছিস না কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক। তবে হ্যা যখন বুঝতে পারবি তখন যেনো খুব বেশি দেরি না হয় মেঘ...??


মেঘঃ-তামিম কে নিয়ে তোর মুখ থেকে আর একটা 

কথাও শুনতে চাই না। আর হ্যা উনি আমার স্বামী উনাকে নিয়ে আমি কি ভাববো না ভাববো সেটা 

আমি জানি। আর আমি এটাও জানি আমাকে কি করতে হবে।আর তো মাত্র ৩ মাস তারপর সবকিছু 

শেষ হয়ে যাবে....???


তানহাঃ-মানে। কি সব উল্টা পাল্টা বলছিস...??


মেঘঃ-জাস্ট ওয়েট এন্ড সি..??


এই বলে মেঘ উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য। পিছন থেকে তানহা শুধু একটা কথাই বললো....


তানহাঃ-অতীতে যেই ভুলটা করেছিলি সেই ভুলটা

আর করিস না মেঘ। সব হারাবি তুই...?? 


তানহার কথা শুনে অবাক হয়ে পিছনে তাকায় মেঘ। তারপর বলতে থাকে........ 


মেঘঃ-হারানোর মতো নেই কিছুই। যা ছিলো অনেক আগেই হারিয়েছি। নতুন করে কিছু হারাবে না

আমার। আর হ্যা অতীতে আমি কোনো ভুল করিনি? 


এই কথা বলে মেঘ সামনের দিকে হাটতে শুরু করে। তারপর বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে বারবার তানহার কথা গুলো মনে পড়তে থাকে। ভুলে যেতে চাইলেও কানে বাজে একটা কথা..অতীতের ভুলটা করিস না মেঘ। মেঘ রুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

আর নিজে নিজে বলতে থাকে...... 


মেঘঃ-আমি তো কোনো ভুল করিনি..তাহলে কেনো আমাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে। কেনো আমার সাথে এমনটা হচ্ছে...কেনো কেনো কেনো।

|||

সব কিছু ভুলে গিয়ে তো ভালোই ছিলাম আমি। তাহলে কেনো স্যার চুক্তিটা মাঝখানে নিয়ে এলো। কেনো এই চুক্তি দিয়ে আমার মনে তামিমের দেওয়া আঘাত গুলো ফিরিয়ে দিলো কেনো কেনো কেনো??


মেঘের কান্না যেনো থামছেই না।। রাতে আকাশ বাসায় 

এসে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে শুরু করলো।মেঘ খাবার 

খেতে ডাকতে এসে দেখে আকাশ ব্যাগ গুছাচ্ছে।ব্যাগ গুছাতে দেখে মেঘ বলে উঠলো....... 


মেঘঃ-আমি হেল্প করবো..??


আকাশঃ-না আমি নিজেই করে নিবো..??


মেঘঃ-আচ্ছা ঠিক আছে। মা অপেক্ষা করছে খাবার টেবিলে...?? 


আকাশঃ-তুমি যাও আমি আসছি..??


মেঘ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো ঠিক তখনই আকাশ ডাকলো....


আকাশঃ-মেঘ শোনো..


মেঘঃ-জ্বি বলেন..??


আকাশঃ-কোথায় যাচ্ছি ব্যাগ কেনো গুছাচ্ছি 

জিজ্ঞেস করবে না...??


মেঘঃ-কারো পার্সোনাল ব্যাপারে কোনো কিছু জানার তেমন ইচ্ছে বা আগ্রহ আমার নেই...?? 


আকাশঃ-কিন্তু তুমি তো আমার...?? 


মেঘঃ-হুমম আমি তো আপনার চুক্তির বউ। তাই আমার মনে হয় না কোনো কিছু জানার অধিকার আমি রাখি। ১ বছর তো চলেই যাচ্ছে হাতে গনা আর মাত্র ৩ মাস ১৫ দিন। তারপর আপনার এই এগ্রিমেন্ট থেকে আমি মুক্ত...??? 


মেঘ কথাটা বলে চলে গেলো..? আকাশের মনেই ছিলো না আর মাত্র ৩ মাস ১৫ দিন তার হাতে। তার মাঝে ৩ মাস আকাশ আমেরিকাতে থাকবে। ইচ্ছে করছে ডিল টা কেন্সল করে দিতে। কিন্তু সেই চান্স এখন আর নেই।


আগেই সবকিছু ফাইনাল হয়ে গেছে। আকাশ বসে বসে এসব ভাবছে। হটাৎ করে রিধির কল আসলো। আকাশ কলটা রিসিভ করে বললো.......


আকাশঃ-হ্যা রিধি বলো...??


রিধিঃ-স্যার আপনি ঠিক আছেন তো..??


আকাশঃ-হ্যা আমি ঠিক আছি। কি জন্য কল 

দিছো সেটা বলো...??


রিধিঃ-স্যার আমরা কালকে সকালেই এয়ারপোর্ট যাচ্ছি আপনি আমাকে কষ্ট করে পিক করতে পারবেন..??


আকাশঃ-তুমি নিজে এয়ারপোর্ট চলে এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো..??


রিধিঃ-একই জায়গায় যখন যাচ্ছি তখন এক সাথে গেলেই বা কি দোষ...??? 


আকাশঃ-ওকে ফাইনাল এক সাথে যাবো...??


এই কথা বলে কলটা কেটে দিলো। আর আকাশ রাগে

গজ গজ করতে লাগলো। কি জন্য যে ওকে জব দিতে 

গেলো এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। 


এই মেয়ে সারাক্ষণ মাথার কাছে ছাড়পোকার মত ঘুড়ে বেড়ায়। খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই নাকি।

হাত থেকে মোবাইল বিছানায় ছুড়ে মেরে নিচে চলে যায় খাবার খেতে। খাবার টেবিলে বসেই তার মামনিকে বললো.........


আকাশঃ-মামনি কালকে সকালের ফ্লাইটে আমেরিকা যেতে হচ্ছে ৩ মাসের জন্য।। একটা ডিল ফাইনাল করতে যাচ্ছি তুমি একটু সাবধানে থেকো...??


মামনিঃ-তিন মাস অনেকটা লম্বা সময় হয়ে গেলো না??


আকাশঃ-কিছু করার নেই মামনি সাইন করে ফেলেছি যেতেই হবে..??


মামনিঃ-এক কাজ কর বউ মাকে নিয়ে সাথে যা, বিয়ের পর তো ওকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় নি। সারাদিন বাসায় একা একা থাকে.???


মেঘঃ-না মা আমি এখানেই ভালো আছি। আমার জন্য কারো কোনো ক্ষতি হোক এটা আমি চাই না।

আর আমি চলে গেলে আপনার দেখা শোনা করবে 

কে শুনি...???


মামনিঃ-সে কি রে মা তাই বলে তুই যাবি না..???


মেঘঃ-না মা আমি যাবো না..??


আকাশঃ-কারো যাওয়া লাগবে না রিধি আছে আমার সাথে,, আমি সব সামলে নিবো...??


খুব জোরে কথাটা বলে আকাশ খাবার না খেয়ে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো। আকাশের মা পিছন থেকে ডাকলেও তার ডাকে কোনো সাড়া দিলো না। মেঘ খুব 

সকালে ঘুম থেকে উঠলো। তারপর নাস্তা বানাতে চলে গেলো কারন আজ আকাশ চলে যাবে তাই। 


সকাল ৮ টার দিকে আকাশ তার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হবে তখনই পিছনে পিরে একবার তাকায়। মেঘ বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে।


আকাশ মেঘ কে ডাক দিবে ভেবে থেমে যায়। তারপর কিছু না বলেই বের হয়ে যায়। 


আকাশ ভাবছে....হয়তো মেঘের মনে আমার জন্য বিন্দু মাত্র অনুভুতির জন্ম হয়নি। তাই মেঘ দূরে দূরে থাকছে।


অন্যদিকে মেঘ ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ যখন  গাড়িতে উঠেছিলো তখন আবার উপরে তাকায়।


আকাশ কে নিচে দেখে ঘোর কাটে আর বলতে থাকে।।

একি উনি তো চলে যাচ্ছেন আমাকে একবারের জন্যও  ডাকলেন না কেনো। 


এরপর আকাশ গাড়িতে উঠে পড়লো। আর গাড়িটা আপন মনে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে চলতে থাকে।


এদিকে মেঘের মন  ঘরে ঠেকছে না।। বারবার মাথায় তানহার কথা গুলো বাজছে। তানহার কথার মাঝে কেমন যেনো রহস্যের ছাপ ছিলো। মেঘ সেটা বুঝতে পারছে ঠিকই কিন্তু কি লুকাচ্ছে তানহা সেটাই বুঝতে পারছে না মেঘ।


আকাশ আমেরিকা পৌঁছে তার মাকে জানিয়ে দিলো।। মেঘ আকাশের এমন আচরণে একটু কষ্ট পেলেও পরক্ষনেই মনে পরে মেঘ তো আকাশের চুক্তির_বউ 

তাহলে কেনোই বা আমার কাছে কল করবে আমি তো উনার কিছুই না। 


এসব ভাবতে ভাবতে মেঘের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। 

মেঘ আকাশকে নিয়ে ভাবতে গেলেই মনে পড়ে আর তো মাত্র কয়েক মাস তারপরই তো সব শেষ। কি দরকার এসব। কেনোই বা মায়ার বাধনে জড়াবে। কিছুদিন পর তো আলাদা হয়ে যাবে তাহলে আর এত ভাববে কেনো।


এইদিকে আকাশ চলে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর মেঘ আর ওর শ্বাশুড়ি বসে বেশ ভালোই আড্ডা দিচ্ছেন।

হটাৎ করে কলিং বেলের আওয়াজ পেলো। আওয়াজ পেয়ে মেঘ দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। আর ভাবতে 

থাকে..এই সময়ে কে আসতে পারে কারো তো আসার কথা না তাহলে কে এলো এই সন্ধা বেলায়।


মেঘ দরজাটা খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে তানহা কে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো তারপর ওকে ভিতরে নিয়ে বসালো। আর বলতে লাগলো...... 


মেঘঃ-আজ হটাৎ কি মনে করে..??


তানহাঃ-কেনো আমি কি আসতে পারিনা..?? 


মেঘঃ-এই কথা এত পেছাচ্ছিস কেনো..?? 


তানহাঃ-দেখেন না আন্টি আপনার বউমা কত শয়তান 

বিয়ের পর তো নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে ভুলেই গেছে একবার খোঁজ খবর নিয়েও দেখেনি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি। আর এখন আমি দেখতে আসছি তাও বললো আজ হটাৎ কি মনে করে.?? 


মামনিঃ-হ্যা তাইতো। বউমা তুমি ওর খোঁজ খবর নাওনি এটা কি সত্যি...??


মেঘঃ-ওর কথা বিশ্বাস করবেন না তো মা। গত সপ্তাহে আমরা দেখা করলাম আর শাঁকচুন্নি টা সেটা চেপে যাচ্ছে?? 


তানহাঃ-বেশি বকবক করিস না আমার জন্য চা নিয়ে আয়। চা খেতে খেতে এই সন্ধা বেলায় একটা আড্ডা হয়ে যাবে...??? 


মামনিঃ-হ্যা বউমা তুমি গিয়ে চা নিয়ে আসো। আমি ওর সাথে বসে গল্প করি..??


মেঘ চলে যাওয়ার পর মেঘের শ্বাশুড়ি আর তানহা বসে বসে গল্প করতে লাগলো.......


তানহাঃ-আপনার শরীর এখন কেমন আছে আন্টি..??


মামনিঃ-এই তো আছিরে মা তোর কি খবর...??


তানহাঃ-ভালো আছি আন্টি। স্যার কেমন আছে..??


মামনিঃ-কাজ নিয়ে অনেক ব্যাস্ত কল করার সময় পায় না মাঝে মাঝে কল করে খবর নেয়...??


তানহাঃ-আন্টি মেঘ কি এখনো কিছু জানতে পারেনি..??


মামনিঃ-মেঘ এখনো ওর সাথে স্বাভাবিক হতে পারেনি।

তানহা ওরা দুজন যে আলাদা থাকে সেটা আমি জানি। 

আমি মেঘকে বলেছি আকাশের কাছ থেকে সব জেনে নিতে। কিন্তু মেয়েটা কেনো জানি এক পা সামনে গিয়ে 

দুই পা পিছিয়ে পড়ে..??


তানহাঃ-আপনি নিজেই তো বলে দিতে পারতেন...??


মামনিঃ-আমি চাই মেঘ নিজে থেকে বুঝে নিক। আকাশ ওর স্বামী, আকাশের ব্যাপারে কথা বলার অধিকার 

ওর আছে। কিন্তু কেনো জানি মেয়েটা স্বাভাবিক হতে পারছে না। সেটাই মাথায় ঢুকছে না.??


তানহাঃ-সেদিন আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ইচ্ছে করলে মেঘ স্যারকে 

আমেরিকা যাওয়া থেকে আটকাতে পারতো..??


মেঘঃ-আমাকে রেখে কি কথা হচ্ছে শুনি...??  


তানহাঃ-আর কথা হলো কই। চাইলাম একটু আন্টির সাথে সুখ দুঃখের কথা ভাগাভাগি করতাম তার 

মাঝে তুই এসেই জল ঢেলে দিলি..??


মেঘঃ-গরম চা ঢেলে দিবো বলে দিলাম কিন্তু..? তুই মায়ের সাথে কথা বলবি আমি জল ঢালবো কেনো।

আমি তোকে মানা করছি তুই মায়ের সাথে আড্ডা 

দিস না। এক নাম্বার শয়তান মেয়ে...?? 


মামনিঃ-থামবি তোরা কোথায় বান্ধবীকে নিয়ে গল্প করবি তা নয় ঝগড়া করে যাচ্ছিস...???


মেঘ একটু হেসে তানহার পাশে বসে ৩জন মিলে আড্ডা 

দিয়ে অনেকটা সময় কাটায়। তারপর রাতের খাবার খেয়ে তানহা চলে যায়। মেঘ অনেক জোর করলো তানহাকে রাখার জন্য কিন্তু তানহা কাজের অজুহাত দেখিয়ে চলে গেলো।


দেখতে দেখতে দীর্ঘ ২ মাস কেটে গেছে। ২ মাস পর.....


আজ আকাশ দেশে ফিরছে.। মনের ভিতর অজানা প্রশ্ন মেঘ আকাশ কে দেখে কি ভাবে রিয়েক্ট করবে। 

আকাশ আমেরিকা ৩ মাসের জন্য গেলেও মেঘকে এতটা মিচ করেছিলো যে ৩ মাসের কাজ ১৫ দিন আগে কমপ্লিট করে দেশে ফিরছে। মেঘকে চমকে দিবে বলে বাসায় কাউকে জানায়নি।


এদিকে আকাশ ভাবতেছে মেঘকে সারপ্রাইজ দিবে।। অন্যদিকে আকাশ নিজেও জানেনা তার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। 


আকাশ বাসায় আসার জন্য এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাসায় আসার জন্য গাড়ি রিজার্ভ করে। আকাশ

ইচ্ছে করলেই বাসা থেকে ড্রাইবারকে দিয়ে গাড়িটা আনিয়ে নিতে পারতো। কিন্তু এতে সারপ্রাইজ দেওয়া হবে না।।


আকাশ বাসায় এসে কলিং বেল চাপ দেয়। মেঘ তখন রান্না ঘরে রান্না করছিলো। 


মেঘ বিড়বিড় করে দরজাটা খুলেই অবাক হয়ে গেলো।

আকাশ আসবে তাও এইভাবে ভাবনার বাহিরে ছিলো। 

অনেকক্ষণ ধরে মেঘ আকাশের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আকাশের ডাকে ঘোর কাটে মেঘের।


আকাশঃ কি ব্যাপার ভিতরে যেতে দিবে নাকি এখানে দাঁড় করিয়ে রাখবে। এমনিতেই জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি..??


মেঘের চোখের সামনে আঙুল দিয়ে তুরি বাজায় আকাশ। এরপর মেঘ বলে......


মেঘঃ-আপনি আজ...??


আকাশঃ-কেনো খুশি হওনি। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করেছিলো তাই চলে এলাম..??


মেঘঃ-কি বললেন..??


আকাশঃ-বললাম যে কাল রাতেই ডিলটা ফাইনাল হয়ে গেছে তাই চলে আসালাম। ওখানে যেই কাজের জন্য যাওয়া সেটা শেষ করে বসে থেকে কি করবো বলো?? 


মেঘ অবাক হয়ে আকাশের ব্যাবহার দেখছে। এর আগে 

আকাশ মেঘের সাথে যত বার কথা বলেছে সব সময় রাগী রাগী ভাব থাকতো।। আজ কি এমন হলো যে এত ভালো বিহ্যেভ করছে। মেঘ এসব ভাবতেছে আকাশ বলে উঠলো........ 


আকাশঃ-কি হলো ভাবনাতে থাকবে নাকি দরজা

থেকে সড়ে দাঁড়াবে..?


মেঘঃ-ওহহ হ্যা আসুন...??


এরপর আকাশ ঘরের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো.....


আকাশঃ মামনি কোথায়...??


মেঘঃ-উনার রুমে..??


আকাশঃ-আচ্ছা...??


আকাশ তার মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় ঠোকা দেয় আর বলতে থাকে....... 


আকাশঃ-মামনি দরজা খুলো আমি আকাশ...?? 


একটু পর দরজা খোলার আওয়াজ। আকাশ ভিতরে যাবে তখনই চোখ যায় তার মায়ের দিকে। তারপর চোখ থেকে অবিরাম জল গড়িয়ে পড়ছে আকাশের।


নিজের চোখে বিশ্বাস করতেই পারছে না যে এটা তার মা। এক ছুটে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আকাশের এমন কান্না দেখে তার মা বলে উঠলো......


-গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_৬)

        অজানা ভালোবাসার গল্প। 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


একটু পর দরজা খোলার আওয়াজ। আকাশ ভিতরে যাবে তখনই চোখ যায় তার মায়ের দিকে। তারপর চোখ থেকে অবিরাম জল গড়িয়ে পড়ছে আকাশের।


নিজের চোখে বিশ্বাস করতেই পারছে না যে এটা তার মা। এক ছুটে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আকাশের এমন কান্না দেখে তার মা বলে উঠলো......


মামনিঃ-পাগল ছেলে কান্না করছিস কেনো...?? 


আকাশঃ-মামনি এটা কি ভাবে সম্ভব হলো..??


আকাশ কান্না করতে করতে তার মায়ের পায়ের দিকে ইশারা করে। আকাশের কান্নার কারন হচ্ছে সে তার মাকে প্রায় ৩ বছর পর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে।


মাকে এই অবস্থায় দেখে আকাশ যে কতটা খুশি হয়েছে তা বলে বুঝানো যাবে না। এরপর আকাশ তার মাকে বলে উঠলো.........


আকাশঃ-মামনি তুমি ভালো হয়ে গেছো। ইয়াহুহ আমার মামনি আবার হাঁটা চলা করে...??


আকাশ তার মাকে ধরে চারদিকে ঘুরছে আর চিৎকার করে কথাটা বলেছে। এরপর তার মা বলে উঠলো.....


মামনিঃ-আকাশ পড়ে যাবো থাম এবার.....??


আকাশঃ-মামনি তোমার পা ঠিক হলো কবে...?? 


মামনিঃ-এটার জন্য ক্রেডিট মেঘের...??


আকাশঃ-মেঘ কি ভাবে তোমার পা...??[পুরোটা বলতে না দিয়ে]


মামনিঃ-সেটা পরে বলছি আগে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আয়..??


আকাশঃ-ওকে আমি এক্ষুনি আসছি....??


আকাশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এর মাঝেই মেঘ আকাশের জন্য শরবতের গ্লাস 

নিয়ে আসলো। এসে শরবতের গ্লাস রাখলো। যেই 

চলে যাবে ঠিক তখনই আকাশ মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো........


আকাশঃ-থ্যাংক ইউ মেঘ..??


মেঘঃ-কিসের জন্য....?? 


আকাশঃ-মামনিকে সুস্থ করে তোলার জন্য...?? 


মেঘঃ-ওহহ মাকে সুস্থ করার জন্য থ্যাংকস দিয়ে ছোট করতে চাইছেন...??


আকাশঃ-আসলে ঠিক সেটা নয় মেঘ...??


মেঘঃ-আমার বুঝা হয়ে গেছে। মেয়ে মাকে সুস্থ করার জন্য মায়ের সেবা করেছে আর আপনি সেটাকে অন্য ভাবে নিলেন...?? 


আকাশঃ-মেঘ এটা আমি কখন বললাম। আমি শুধু বলতে চেয়েছি হাজার চেষ্টা করেও আমি মামনিকে

সুস্থ করতে পারিনি। আর তুমি মামনিকে ৩ মাসের মধ্যেই সুস্থ করে তুললে....??


মেঘঃ-আর বুঝাতে হবে না। শরবত খেয়ে নিচে আসুন খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে...?? 


আকাশঃ-ট্রাস্ট মি মেঘ, আমি ওভাবে বলিনি..?? 


মেঘ আর কিছু না বলে নিচে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর আকাশ খাবার খেতে নিচে যায়। খাবার টেবিলে বসলে তার মা নিজ থেকেই বলতে থাকে.......


মামনিঃ-তুই চলে যাওয়ার পরে বউ মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে দিনের পর দিন আমার সেবা করেছে। প্রতিদিন ২বার করে পায়ে মালিশ করতো

টাইম মতো ঔষধ খাইয়ে দিতো...??

|||

মাঝে মাঝে ঘুম পারিয়ে দিতো। প্রতিদিন ভোর ৫টায় 

আর সন্ধার আগে ২ বার করে পার্কে নিয়ে যেতো। 

হাতে হাত রেখে হাঁটতে শিখাতো।

|||

একটা সময় পায়ের টান গুলো হালকা কমতে থাকে।

ডাক্তারের ট্রিটমেন্টও এর সাথে ছিলো। এই ভাবে 

ধীরে ধীরে পায়ের ফুলা গুলো কমতে থাকে।একদিন তো উইল চেয়ার থেকে পড়ে গেছিলাম।

|||

মেঘ যখনই আমাকে তুলতে যাবে তার আগেই আমি নিজে নিজে উঠার চেষ্টা করি। এরপর থেকে একটু 

একটু করে হাঁটতাম। আর এখন সম্পুর্ণ সুস্থ সবই আমার এই মায়ের জন্য..??? 


মেঘকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো। মেঘ এতোক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। আকাশ মেঘের দিকে একবার তাকায় আবার মায়ের দিকে তাকায়।


আকাশের তাকানো দেখে মেঘ মাথা নিচু করে ফেলে। এরপর আকাশের মা বলতে থাকে....... 


মামনিঃ-মেঘ না থাকলে আজ আমি হাঁটতেই 

পারতাম না...??


মেঘঃ-মা কি সব ফালতু কথা বলছেন,আপনার হাঁটার পিছনে আপনার মনের জোরটাই ছিলো সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি তো শুধু আপনার লাঠি হিসেবে কাজ করেছি।

|||

আপনার মনে আবারো স্বাভাবিক হওয়ার ইচ্ছে শক্তি 

ছিলো তাই আপনি শতবার পড়ে যাওয়ার পরেও হার মানেন নি। আর তার ফল হিসেবে আজ আপনি হাঁটা চলা করতে পারছেন..??


মামনিঃ-তোর সাথে কথায় পারবো না। এখানে এসে বস আজ আমি তোকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো..??


মেঘঃ-আপনি খেয়ে নিন আমি পরে খাবো....?? 


মামনিঃ-মায়ের কথা অমান্য করে আয় এখানে..??


মেঘঃ-সরি মা আর এমনটা হবে না...?? 


এরপর মেঘ মায়ের চেয়ারের পাশে বসলো। মিলি এসে 

কি লাগবে না লাগবে দেখে গেলো। আকাশের মা ভাত 

মেখে মেঘের মুখের সামনে তুলে ধরলেন। মেঘ এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না।


আজ অনেক দিন পর মেঘ তার মায়ের হাতে খাবার খাবে,, সেই খুশিতে মেঘের চোখের কোনে অশ্রু ধরা দিলো। মেঘের চোখে পানি দেখে মামনি জিজ্ঞেস করলো.........


মামনিঃ-কিরে মা কান্না করছিস কেনো...??


মায়ের কথা শুনে আকাশ চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো মেঘ সত্যি কান্না করছে। আকাশ বুঝতে পারলো না মেঘ হটাৎ করে কেনো কান্না করছে।


আকাশ বুঝতেই পারলো না মেঘের কান্নার রহস্য কি। মেঘ কান্না করেই যাচ্ছে থামার কোনো নিশানা নেই।

মেঘের এসন কান্না দেখে মামনি বললো........


মামনিঃ-পাগল মেয়ে এভাবে কেউ কান্না করে...?? 


মেঘঃ-মা 😭😭😭[ কান্না করেই যাচ্ছে ]


অনেক দিন পর শ্বাশুড়ি মায়ের হাতে খাবার খাচ্ছে।

যেনো মনে হচ্ছে খুব আদর করে মেঘের মা মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছেন। মেঘের কান্না থামছেই না মামনি 

এবার মেঘের চোখে পানি মুছে দিয়ে বললো.......


মামনিঃ-ভাতের প্লেটে চোখের জল ফেলতে নেই মা।

নে হা কর আর কান্না করিস না...???


মেঘঃ-হুমম..??


এরপর সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলো। আকাশ ও তার মা বসে বসে গল্প করছে। হুট করে আকাশের মা বলে উঠলো......... 


মামনিঃ-আকাশ কালকের তারিখ টা তোর মনে আছে...??


আকাশঃ-কালকের তারিখ....??


আকাশ একটু ভাবনায় পড়ে যায়,, কালকে কি সেটা নিয়ে। কিছুক্ষণ পরে যখন মনে পড়লো কালকে কি।

তখনই আকাশ তার মায়ের দিকে একপলক তাকায় মুহুর্তেই ভয়ানক দিনটার কথা মনে পড়ে যায়? 


সাথে সাথে আকাশ তার মায়ের পাশ থেকে উঠে সোজা 

ছাদে চলে গেলো। আর এক মুহূর্ত মায়ের পাশে থাকলে নিজেকে সামলানো অনেক বেশি কষ্ট কর হয়ে যাবে।

আর আকাশের মাও পারবে না নিজেকে সামলাতে।


আকাশ চলে যাওয়ার সাথে সাথে মেঘ তার শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে বসে আর জিজ্ঞেস করে..........


মেঘঃ-মা কালকে কি আছে আর উনি এভাবে চলে গেলেন কেনো...?? 


মেঘের শ্বাশুড়ি কান্না করছে কোনো কথা বলছে না।

মেঘের শ্বাশুড়ির কান্না দেখে মেঘ বললো........


মেঘঃ-মা কি হয়েছে কান্না করছেন কেনো...?? 


মামনিঃ-জানতে চাস কালকের দিনে কি হয়েছে.....??


মেঘঃ-কি হয়েছে...??


মামনিঃ-কালকে আকাশের বাবার মৃত্যু বার্ষিকী...??


মেঘঃ-কত বছর হয়েছে...??


মামনিঃ-কাল ৩ বছর পুর্ণ হয়েছে...??


মেঘঃ-ওহহহ। মা বাবা মারা গেছেন কিভাবে, উনার কি কোনো রোগ ছিলো...??


মামনিঃ-না রে মা। একটা এক্সিডেন্টে সব শেষ করে দিলো। ওই এক্সিডেন্টের পর থেকে আমি হাঁটা চলা করতে পারতাম না। আর আকাশ ওই দিনের পর 

থেকে নিজেকে প্রতিটা মুহুর্ত অপরাধী ভাবছে..??


মেঘঃ-এক্সিডেন্টে উনি নিজেকে অপরাধী কেনো ভাববে এটা হয়তো আল্লাহর ইচ্ছে, কেনো উনি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন। কালকের দিন থেকে উনি হাসবে। উনাকে যে আগের মতো হতেই হবে.?? 


মামনিঃ-তুই পারবি তো মা...??


মেঘঃ-আমাকে পারতেই হবে। মা আমি একটু বাহিরে যাবো আমার একটু কাজ আছে। চিন্তা করবেন না 

সন্ধা হওয়ার আগেই আমি চলে আসবো...??


মামনিঃ-ঠিক আছে মা তবে যেখানে যাবি সাবধানে কেমন...??


এরপর মেঘ নিজের পার্টস আর কিছু টাকা নিয়ে বের হয়ে গেলো। বিকেল গরিয়ে সন্ধার কিছু সময় 

আগে মেঘ বাসায় ফিরে আসে। রুমে গিয়ে দেখে আকাশ রুমে নেই তাই মিলিকে জিজ্ঞেস করে.........


মেঘঃ-মিলি তোর ভাইজান কে দেখছিস..??


মিলিঃ-ভাইজান তো সেই দুপুরের পর থেকে ছাদে এখনো নিচে আসেনি...??


মেঘঃ-ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে....?? 


মেঘ দ্রুত করে ছাদে চলে গেলো।। ছাদে গিয়ে দেখলো আকাশ দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। মেঘ অনেকক্ষণ ধরে আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।

কিন্তু আকাশের এক মুহূর্তের জন্য অনুভব হয়নি তার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এরপর মেঘ নিজ থেকেই আকাশের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলতে শুরু করে......


মেঘঃ-এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন....??


আকাশ পিছনে ফিরে মেঘকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। পাগলের মত কান্না করছে আর বলছে.....


আকাশঃ-বিশ্বাস করো মেঘ আমি বাপিকে মারিনি..?? কিভাবে যেনো এক্সিডেন্ট টা হয়ে গেলো। আমার জন্য আমার মামনি ৩ বছর নিজের পায়ে হাঁটতে পারেনি.?

|||

আমার জন্য মামনির গায়ে সাদা শাড়ি জড়াতে হলো।

আমি অনেক চেষ্টা করেছি বাপিকে বাঁচানোর, কিন্তু বাঁচাতে পারিনি।


মেঘঃ-প্লিজ একটু শান্ত হন...??


আকাশঃ-জানো বাপি মারা যাওয়ার কিছুদিন পর জানতে পারলাম... কেউ একজন আমাকে মেরে ফেলার জন্য গাড়ির ব্রেক ফেইল করিয়ে রাখে।

|||

আর বাপি সেটা জেনে যায়। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে সেদিন বাপি নিজেকে শেষ করে দিলো

 বাপির মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী মেঘ আমি দায়ী.?? 


মেঘঃ-প্লিজ আপনি একটু শান্ত হন।। আপনি নিজেকে কেনো দোষী ভাবছেন। দেখুন কেউ যদি আপনার ক্ষতি করতে,আপনাকে মেরে ফেলতে চায় আর সেটা আপনার বাবা জেনে গিয়েও কিভাবে হাত ঘুটিয়ে বসে থাকবেন..??

|||

আপনার বাবার এই সবকিছুই তো আপনার জন্য। সেই 

আপনাকে যদি উনি সুখ দিতে না পারেন তাহলে উনি নিজেকে খুব অপরাধী মনে করবেন। আর শুনুন আজ 

থেকে নিজেকে কোনো দোষ দিবেন না.??? 

|||

কারন আপনি নিজে খুব ভালো করেই জানেন আপনি দোষী নন। শুধু শুধু নিজেকে কেনো নিজেক কষ্ট দিচ্ছেন। আর আপনি এটা জানার চেষ্টা করেন, কে আপনাকে সেদিন মারতে চেয়েছিলো..??


আকাশঃ-কি ভাবে জানবো আমি...???


মেঘঃ-আমার মন বলছে মা কিছু একটা আড়াল করছে উনি পারবেন আপনাকে আসল অপরাধীর কথা বলতে। যদি উনি জেনো থাকেন তাহলে.?? 


আকাশঃ-হতে পারে। এই জন্যই মামনি বারবার অফিস এর বিষয় নিয়ে চিন্তায় থাকেন। আমি কত বুঝাই আমি সবকিছু ঠিকঠাক মত দেখা শোনা করছি। তবুও কি যেনো চিন্তা করে..??


মেঘঃ-হুমম তাহলে কালকে থেকে আমরা খুঁজবো কে এর পিছনে আছে....?? 


আকাশঃ-তুমি আমার সাথে থাকবে...???


মেঘঃ-হ্যা কেনো থাকবো না। এখনো আমাদের চুক্তির এক বছর পুর্ণ হয়নি যে মাঝপথে আপনাকে ছেড়ে 

চলে যাবো। যতদিন চুক্তির মেয়াদ আছে ততদিন 

আমি আপনার সাথেই থাকবো...??


আকাশঃ-ওহহহ। চুক্তি শেষ হলে চলে যাবে...??


মেঘঃ-হুমম যেতে তো আমাকে হবেই। কারন এই চুক্তিটা যে শুধু মাত্র এক বছরের জন্য ছিলো.?


মেঘ মনে মনে বলতে থাকে.....এই চুক্তি কেনো দেওয়া এক বছর কেনো। যদি আমার মৃত্যুর পর আরো 

কোনো জনম থাকে সেই জনমেও আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না। জানিনা এই চুক্তিতে কি আছে কেনো এই চুক্তি কি কারন আছে তার শুধু সময়ের অপেক্ষা।


আমি অতীতের ভুলটা আর করতে চাইনা।। আমি আর হারাতে পারবো না কিছু। কারন আমার সেই শক্তি নেই। 


তবে ভালোই হয়েছে অতীতে যদি ভুল টা না করতাম তাহলে চোখ খুলতো না। জানতেও পারতাম না আর বুঝতেও পারতাম না আসল ভালোবাসা টা কি।


আকাশ দরজা খুলে রুমে ডুকে চারদিকে তাকিয়ে মেঘ

বলে চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো। মেঘ আকাশের চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি করে আকাশের রুমে আসে।

আকাশ মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে.......... 


আকাশঃ-এসব কি মেঘ...??


আকাশ রুমের ভিতরটা দেখিয়ে কথাটা বললো।। মেঘ পুরো রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। চরদিকে মোমবাতির নিবু নিবু আলো পুরো রুমটার সুন্দর্য যনো দশগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।


শুধু মোমবাতি নয়....সামনে ছোট টেবিলে ছোট একটা কেক আর তাতে লেখা ছিলো.........


________Happy Birthday My Dear Akash_______


এগুলো দেখে আকাশের মাথায় রক্ত চেপে যায়?? মেঘ কিছুটা ভয়ে ভয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে আর বলে উঠে.......


মেঘঃ-আসলে একটু পর তো আপনার জন্মদিন তাই..??


আকাশঃ-কে বলেছে এসব করতে আমি বলেছি। আমি 

বলেছি আমার জন্মদিনে আমাকে উইশ করো। আমি বলেছি আমার জন্মদিনে পার্টি করো। আমি বলেছি আমার জন্মদিনে আমাকে সারপ্রাইজ দাও..??


আকাশ ধমক দিয়ে কথা গুলো বললো।। মেঘ কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। আকাশ মেঘকে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালে সাথে ধরলো...????


এমন ভাবে হাত দুটি চেপে ধরেছে মেঘ ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো। মেঘ ব্যাথা পাচ্ছে দেখে আকাশ মেঘের হাত ছেড়ে দেয় আর বলতে থাকে........ 


আকাশঃ-কেনো এসব করছো একবার আমাকে বলতে পারতে...??


মেঘঃ-সরি আমি বুঝতে পারিনি আপনি এভাবে রিয়েক্ট করবেন। একটু শান্ত হয়ে আমার কথা গুলো শুনুন..??


আকাশঃ-কি শুনবো আমি। আমার কোনো কিছু শুনার ইচ্ছে নেই আমাকে একা থাকতে দাও..??


মেঘঃ-দূরর একা থাকবেন বলে কি আমি এতকিছু করলাম। তখন কি বললেন আপনি আর এখন কি বলছেন....???


আকাশঃ-তখন ভাবনার বাহিরে ছিলো তুমি আমার জন্মদিনে এমন কিছু করবে..???


মেঘঃ-হুমম তাই নাকি। আচ্ছা বাদ দিন এখন আসুন কেক কাটবেন...??


এই কথা বলে মেঘ আকাশের হাত ধরে টানতে টানতে কেকের সামনে নিয়ে দাঁড় করায় ঠিক তখনই আকাশ বলে উঠলো....... 


আকাশঃ-কেনো এমন করছো মেঘ। এই দিনটা আমি ভুলে যেতে চাই, তুমি কেনো বুঝো না...?? 


মেঘ আলতো করে আকাশের গালে এক হাত রাখলো।।

অন্য হাতে আকাশের এক হাত ধরে আছে। আর বলতে শুরু করে......


মেঘঃ-আপনি তো কোনো রকম অন্যায় করননি তাহলে আপনি কেনো কষ্ট পাবেন। আর আমি যখন জেনে গেছি বাবার মৃত্যুর পিছনে কেউ জড়িত তখন তাকে খুঁজে বের করা আমার দায়িত্ব। আর আজ থেকে আপনার মুখে হাসি ফোটানো আমার দায়িত্ব....??? 


আকাশঃ-এক মাসের জন্য...?? 


মেঘঃ-হোক না এক মাস তাতে কি। এই এক মাসকেই 

আমি কাজে লাগাবো...?? 


আকাশঃ-কি করবে এই এক মাসে, যা আমি তিন বছরেও পারিনি...??


মেঘঃ-উফফ সেটা আমি দেখবো আসেন তো আগে কেক কাটবেন। আমি মাকে কথা দিয়েছি আমার 

কথা আমাকে রাখতে দিন প্লিজ...???


মেঘ এর কথায় আকাশ আর কিছু না বলে... ছুরি হাতে নিয়ে কেক কাটে। আর মেঘ হাততালি দিয়ে আকাশকে উইশ করতে থাকে। অন্য দিকে আকাশের মা দরজার পাশে থেকে এই সব দেখে মুখে একটা তৃপ্তি মাখা হাসি নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।


তারপর মেঘ আর আকাশ অনেকক্ষণ গল্প করলো।

সেদিনের পর থেকে আকাশ অনেকটা বদলে গেছে। আগের মতো হাসি আনন্দ নিয়ে মেতে থাকে।


কিন্তু একটাই চিন্তা আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই মেঘ চলে যাবে।


তাহলে আকাশ কি ব্যার্থ হলো মেঘকে তার ভালোবাসা বুঝাতে। হয়তো আকাশ ব্যার্থ হলো নয়তো না। তাহলে কি পারবে না আকাশ মেঘকে আটকাতে। তার জীবন সঙ্গী হিসেবে পথ চলার সাথী করতে।


অন্য দিকে মেঘ একটু একটু করে জানার চেষ্টা করছে কে মারার প্লান করতে পারে আকাশকে। কে ওর এত বড় ক্ষতি করতে চায়।


ধীরে ধীরে মেঘ সব রহস্য জানতে পারলো। মেঘ যখন জানতে পারলো এর পিছনে কার হাত আছে তখন সে বিশ্বাসই করতে পারলো না যে মেঘের সামনে এমন কিছু আসবে আর মেঘকে বিপদের দিকে ঠেলে দিবে।


আজ মেঘ আর আকাশের বিয়ের এক বছর পুর্ণ হবে।

একদিকে আকাশ ভাবছে মেঘকে কিভাবে ডিবোর্সের

কথা বলবে। অন্যদিকে মেঘ চাইছে আজ এমন কিছু হোক যেনো আকাশ মেঘকে কোনো ভাবেই না ছাড়ে।


পরের দিন সকাল বেলায় মেঘ কাউকে কোনো কিছু না বলে বের হয়ে যায়। সারাদিন পার হয়ে যাচ্ছে মেঘের বাসা পেরার কোনো নাম নেই।


আকাশ কয়েক বার মেঘের ফোনে কল দিলো...কিন্তু বারবার ব্যার্থ হয়। কারন মেঘের মোবাইল নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে।


আকাশ পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে...শেষমেশ মেঘ কি চলে যাবে আকাশকে ছেড়ে। আকাশ আর ওর 

মা ভাবতেছে পুলিশকে রিপোর্ট করবে। এর মধ্যেই আকাশের মোবাইলে একটা কল আসে। কলটা রিসিভ 

করতেই একটা লোক বললো.......


গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_০৭)

        অজানা ভালোবাসার গল্প। 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।  


আকাশ পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে...শেষমেশ মেঘ কি চলে যাবে আকাশকে ছেড়ে। আকাশ আর ওর 

মা ভাবতেছে পুলিশকে রিপোর্ট করবে। এর মধ্যেই আকাশের মোবাইলে একটা কল আসে। কলটা রিসিভ 

করতেই একটা লোক বললো.......


লোকটাঃ-মেঘকে বাঁচাতে চাইলে তাড়াতাড়ি করে এই ঠিকানায় চলে আসো??[একটা ঠিকানা দিয়ে কথাটা বললো]


এরপর কলটা কেটে গেলো। আকাশ একটু আগে আসা নাম্বারে ডায়াল করে, কিন্তু ততক্ষণে নাম্বার টা বন্ধ হয়ে গেছে।। আকাশ তাড়াতাড়ি করে ওই ঠিকানা অনুযায়ী যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো আর তানহাকে কল দিয়ে মাকে সামলাতে বললো।


আকাশ বিশাল একটা মাঠের মধ্যে গাড়ি থামায়। এবং 

চার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে এটা সেই ঠিকানা কিনা। হ্যা এটা তো সেই ঠিকানা কিন্তু মেঘ কোথায়।


আকাশ চার দিকে খুঁজতে শুরু করলো হটাৎ করে কেউ একজন পিছন থেকে আকাশের চোখ দুটি বেধে ফেলে। 

আর জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। একজন ওর মাথায় রিভাল ভার ধরে রাখছে, আরেক জন শক্ত করে চেপে ধরেছে। আর বারবার আকাশকে নড়াচড়া করতে বারণ করছে।


কিছু সময় পরে একটা নির্জন জায়গায় গাড়ি থামায়।

তারপর আকাশের মাথায় রিভাল ভার ঠেকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বলে। যদিও আকাশের চোখ বাধা তারপরেও তাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। 


এরপর আকাশকে একটা ঘরে নিয়ে আকাশের হাত পা বেধে ফেলে। তারপর আকাশের চোখের বাধন খুলে দিলে তাকিয়ে দেখে একই ভাবে মেঘকেও বেধে রাখা হয়েছে।


আকাশ মেঘকে দেখে ওদেরকে বারবার বলতে লাগলো মেঘকে ছেড়ে দিতে। আকাশ হাত পায়ের বাধন খোলার 

চেষ্টা করে কিন্তু ব্যার্থ হয়। এরপর আকাশ তাদেরকে

উদ্দেশ্য করে বললো........


আকাশঃ-মেঘকে এখানে কেনো বেধে রেখেছেন, কারা আপনারা,কেনো এমন করছেন, কি চাই আপনাদের?


কেউ কোনো কথা বলছে না। এরপর আকাশ মেঘকে বলতে শুরু করলো...... 


আকাশঃ-মেঘ তুমি চিন্তা করো না ওরা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না...?? 


মেঘঃ-ওরা আমার ক্ষতি করবে না ওরা আপনার ক্ষতি করতে চায়। আপনি কেনো ওদের ফাঁদে পা দিলেন??


আকাশঃ-আমার ক্ষতি কে করবে.??


মেঘঃ-তিন বছর আগে আপনাকে যে লোকটা মেরে ফেলার জন্য গাড়ির ব্রেক ফেইল রাখে তারই রক্ত? 


আকাশঃ-মানে কি বলছো তুমি? কে সে..যে আমাকে মেরে ফেলতে চায়.?? 


কথাটা বলার সাথে সাথে একটা আওয়াজ আসে। ঠিক তখনই আকাশ চুপ হয়ে যায় ভালো করে বুঝার জন্য। দুজনেই চুপ করে থাকে। এরপর আওয়াজ টা আরো স্পষ্ট হয়। একটু একটু করে একটা লোক এসে আকাশের সামনে দাঁড়ায়।। মুখে কালো মুখোশ পড়া। লোকটাকে দেখে আকাশ বললো.......


আকাশঃ-কে আপনি? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি 

যার জন্য আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন। আবার মেঘকেও এই ভাবে শাস্তি দিচ্ছেন.?? 


এরপর লোকটা নিজের মুখ থেকে মুখোশ টা খুলে নিচে ফেলে দিলো। তারপর মাথাটা নিচু থেকে ধীরে ধীরে উপরে তুলতে লাগলো। তারপর বললো.....


লোকটাঃ দেখো তো আকাশ আমাকে চিনতে পারো কিনা.??


আকাশঃ-তামিম তুমি.?? 


তামিমঃ-হুমম আমি। তোমার একমাত্র শত্রু??


আকাশঃ-এসব কি বলছো তামিম, আমরা তো খুব ভালো বন্ধু.?? 


মেঘঃ-বন্ধু হুহহ ও বন্ধুত্বের মানে বুঝে। ওর কাছে তো ইম্পর্ট্যান্ট টাকা পয়শা ব্যাংক ব্যালেন্স আর আপনার সম্পত্তি.?? 


আকাশঃ-মানে এসব কি বলছো মেঘ...??


তামিমঃ-হ্যা আকাশ তোমার বউ...দূর কিসের বউ। মেঘ তো তোমার এগ্রিমেন্টের বউ। যাই হোক ও ঠিক বলেছে আমি তোমার সম্পত্তি চাই..???


আকাশঃ-তামিম তোমাকে এর আগেও আমি অনেক টাকা দিয়েছি সেটা কি ভুলে গেছো..?? 


তামিমঃ-না না আকাশ তোমার এত বড় উপকারের কথা আমি ভুলবো কি করে। তুমি টাকা না দিলে এতদিনে মেঘকে উপরে পাঠিয়ে দিতাম.???


আকাশঃ-তাহলে কেনো আমাকে আর মেঘকে এভাবে বেধে রেখেছো এটা তো হওয়ার কথা ছিলো না..??


তামিমঃ-রাইট এটা হওয়ার কথা ছিলো না। কেনো এটা হলো এটাই তো জানতে চাও তাইনা..??


আকাশঃ-কি কারনে এমন অমানুষের মতো কাজ করলে তুমি.?? 


তামিমঃ-তাহলে শোনো আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কাহিনী। তোমার বাবা আসরাফ মাহমুদের কম্পানিতে 

ম্যানেজারের দায়িত্বে কাজ করতেন আমার বাবা ইমতিয়াজ আহমেদ.?? 


আকাশঃ-তুমি ম্যানেজার আঙ্কেল এর ছেলে..??


মেঘঃ-তামিমের বাবা সেদিন আপনাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু আল্লাহ আপনাকে বাঁচিয়ে বাবাকে নিয়ে নিলেন। সেদিন ওদের প্ল্যান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই তামিম প্ল্যান করে আপনাকে চুক্তির কথা বলে.??


আকাশঃ-তুমি কি ভাবে জানলে এসব...?? 


মেঘঃ-তামিম নিজেই বলেছে এসব আমাকে। কিন্তু সে নিজেও জানেনা সে কত বড় ভুল করলো.??


তামিমঃ-তামিম কোনো কাজের প্রমাণ রাখে না..সেদিন যেমন আমার বাবা কোনো প্রমাণ রাখেনি, আজ আমিও রাখবো না। তবে বাবা একটা ভুল করে ফেলেছে। বাবার প্ল্যান এর কথা তোমার মা বাবা জেনে যায়। এই একটা জায়গায় বাবা ভুল করলেও আর সবকিছু ঠিক ভাবে করেছে। আর আজ বাবার ফেলে রাখা কাজটা আমি শেষ করবো.??


মেঘঃ-তুমি শত চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারবে না।

মা সব জানিয়েছেন আমাকে। আর আমি তো তোমাদের চুক্তির কথা জেনেই গেলাম। তাহলে এখন নতুন করে কি প্ল্যান করবে তুমি.?? 


তামিমঃ-জেনে গেছো ভালোই হয়েছে। এবার তোমার মতামত জানিয়ে দাও। তাহলে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে তাইনা আকাশ...??


আকাশ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তামিম এমন ভাবে প্রতারণা করবে আকাশের কল্পনার বাহিরে ছিলো। কিন্তু এখন তো সব মেঘের হাতে। আজ মেঘের একটা সিদ্ধান্ত সব বদলে দিতে পারে। 


অন্যদিকে তানহা আকাশের মাকে বাসায় সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে। আকাশের মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাহলে কি এবার আকাশের বাবার মতো আকাশও হারিয়ে যাবে।


এমন হাজারো প্রশ্ন বিরাজমান করছে আমারদের মনে। 

শেষ পর্যন্ত কি হবে। আকাশ তার বাবার মতো হারিয়ে যাবে না তো। আর মেঘ তামিম কে বিয়ে করে নিবে না তো। সঠিক টা কি হবে জানতে চোখ রাখুন পেজে এবং গল্পের শেষ পর্যন্ত লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকুন। 


এই দিকে তামিম আকাশ চিন্তায় ভেঙে পড়ে না জানি মেঘ কি সিদ্ধান্ত নেয়। সত্যি সত্যি মেঘ ছেড়ে যাবে না তো আকাশকে।  এরপর আকাশ মেঘকে বললো......


আকাশঃ-কাম অন মেঘ স্পিক আপ..??


মেঘঃ-তামিম প্লিজ উনাকে ছেড়ে দাও...??


তামিমঃ-আরে আরে এতো দরদ জাগছে কেনো ওই বিয়েটা তো মিথ্যে...?? 


আকাশ মেঘের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সত্যি কি এই সম্পর্ক টা মিথ্যে বলে প্রমানিত হবে। আকাশের ভালোবাসার কি কোনো মুল্য ছিলো না। মেঘ চুপ করে আছে কেনো। কেনো কিছু বলছে না। এই সব কথা ভাবছে আকাশ। হুট করে তামিম বলে উঠলো.........


তামিমঃ-মেঘ তোমার মতামত আমি ভালো করে জানি। এই চুক্তির কথা অনুযায়ী এই এক বছরে আকাশের প্রতি তোমার বিন্দু মাত্র অনুভূতি জাগে নি।। তুমি এখনো তামিম আই মিন আমাকে ভালোবাসাে। 

আর এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী আজ এক বছর শেষ, তাই আজ তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। এরপর তুমি আমাকে বিয়ে করবে..??


মেঘঃ-নিজেকে খুব চালাক তাইনা তামিম। তোমার সব ভাবনা সত্যি হয়ে যাবে, তুমি যা বলবে তাই হবে..??


তামিমঃ-এগ্রিমেন্ট তো এটাই ছিলো..??


একটা চুক্তির মাধ্যমে আকাশ চৌধুরীর সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলো কাশফিয়া হাসান মেঘ। 


এই একটি বছরে যদি মেঘের মনে আকাশ এর জন্য অনুভূতি না জন্মায় তাহলে মেঘ সারা জীবনের জন্য আকাশের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। 


আর এই চুক্তির কথা মতো আকাশের সাথে মেঘের ডিভোর্সের পর তামিমের সাথে মেঘ আবারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।


মেঘ একবার আকাশের দিকে তাকায়.। আকাশ চোখ দুটি বন্ধ করে নিচের দিকে দিয়ে রেখেছে। এরপর পর তামিম বলে উঠলো....... 


তামিমঃ-মেঘ আর চুপ করে থেকে দেরি করো না প্লিজ। 

এবার তুমি ওকে বলে দাও তুমি আমাকে ভালোবাসো।

যদি তুমি বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে কিন্তু আমি আকাশকে মুক্তি দিবো...???


মেঘ চুপ করে রইলো। কি বলবে না বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মাথা যেনো কোনো কিছুই কাজ করছে না। এরপর আবারো তামিম বললো........


তামিমঃ-মেঘ দেরি করো না এখনো অনেক কাজ বাকি প্লিজ তাড়াতাড়ি করো....??


মেঘঃ-আমি..??


তামিমঃ-তুমি বলো মেঘ প্লিজ বলো....??


মেঘঃ-আমি..??


এই কথা বলার সাথে সাথে খুব জোরে একটা শব্দ হয়। তামিম কোনো কিছু বুঝার আগেই পুলিশ এসে তামিমের মাথায় রিভাল বার ধরলো। আকাশ সামনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। এই কাকে দেখছে সে। এটা কি করে সম্ভব। এদিকে পুলিশ তামিমকে বললো........


পুলিশঃ-ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিঃ তামিম আহমেদ..??


মেঘ পুলিশের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।

আর আকাশ অবাক হয়ে পুলিশের দিকে তাকায়। আর ভাবতে থাকে পুলিশ এখানে আসলো কি ভাবে। আমি তো কাউকে কল করিনি,তাহলে এরা জানলো কি করে।

এরই মঝে আরো একজন পুলিশ এসে ভিতরে ঢুকে আর তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে........


পুলিশঃ-এই বার শ্বশুর বাড়ি চলো মিঃ তামিম। অনেক ক্ষতি করছো তুমি এদের, এবার বাকি জীবন জেলে বসে কাটিয়ে দিবে চলো..??


আকাশঃ-রিধি তুমি...?? 


রিধিঃ-হ্যা স্যার। আমি এখান কার থানার একজন কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার.??


মেঘঃ-রিধি তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখছো আগে বাঁধন টা খুলে দিতে বলো এদের। আর কতক্ষণ এভাবে থাকবো.??


রিধিঃ-হ্যা মেঘ...??


এরপর রিধি ওর সাথে আসা পুলিশ কনস্টেবলকে মেঘ ও আকাশের বাধন খুলে দিতে বলে। এরই মাঝে তামিম বলে উঠলো....... 


তামিমঃ-এটা কিন্তু ঠিক হলো না। আমি তোমাদের দেখে নিবো...??


রিধিঃ-আরে দূর তুমি কি দেখবে সেটা আমার জানা আছে। জেলে নিয়ে গেলেই বুঝবে কত ধানে কত চাল.??


রিধি একজন কনস্টেবলকে ডেকে তামিমের হাতে হাত কড়া লাগাতে বললো। তারপর তামিমের সব চেলাদের ধরে নিয়ে গেলো। এরই মধ্যে মেঘ বলে উঠলো........... 


মেঘঃ-থ্যাংক ইউ রিধি। তুমি না থাকলে আজ এখান থেকে বেঁচে ফিরতাম না.??


আকাশঃ-রিধি আমার মাথায় কোনো কিছুই ঢুকছে না। তোমরা একে অপরকে চিনো কিভাবে?? 


রিধিঃ-ওয়েট স্যার আগে তামিমের ব্যাবস্থা করে নেই। বিকেলে আমি আপনাদের বাসায় যাবো.??


আকাশঃ-থ্যাংক ইউ রিধি...??


রিধিঃ-ইটস মাই প্লেজার। আর হ্যা আমাদের সাথে তোমরাও আসো বাসায় পৌঁছে দিবো.??


রিধি ওদের সবাইকে ধরে নিয়ে গাড়িতে বসালো। মেঘ তখন মগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না।

মেঘের এমন অবস্থা দেখে আকাশ বললো....... 


আকাশঃ-দাঁড়িয়ে আছো কেনো বাসায় যাবে না...??


মেঘ মগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইলো কোনো সাড়া শব্দ নেই। আকাশ আবার বললো........


আকাশঃ-মেঘ কিছু বলছি তোমায়। কি ভাবছো এতো..??


মেঘঃ-ক ক কই কিছু না...?? 


আকাশঃ-তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো। নাও উই আর অলমোস্ট সেইফ...??


রিধিঃ-কি ব্যাপার তোমরা এখনো দাঁড়িয়ে কেনো। এসো দেরি হয়ে যাচ্ছে বাসায় যেতে হবে না..?? 


আকাশঃ-হুমম চলো আমরা আসছি...??


রিধি গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। আকাশ মেঘের হাত ধরে গাড়িতে উঠালো তারপর নিজেও উঠে বসলো। ওদের জন্য আলাদা একটা গাড়ি আনা হয়েছে। গাড়িতে উঠে মেঘ কোনো কথা বলছে না,, কি জেনো ভেবেই যাচ্ছে।


হ্যা মেঘ নিশ্চয়ই এটাই ভাবছে আর একটু পরে আকাশ আর মেঘ আলাদা হয়ে যাবে।। ভাবতেই মেঘের ভেতরে একটা ঝড় বয়ে যায়।


অন্যদিকে আকাশের ভেতরে একটা ভাবনা বিরাজমান করছে। আকাশের মনে যেই ঝড়টা যাচ্ছে সেই একই ঝড় মেঘের হৃদয়ে বইছে।। দুজনেই একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে।৷ 


এসব ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে চলে আসলো। রিধি ওদেরকে নামিয়ে দিয়ে বাকিদের নিয়ে থানার দিকে চলে গেলো।।এদিকে আকাশ আর মেঘ বাসায় ডুকতেই আকাশের মা মেঘকে জড়িয়ে ধরে বললো....... 


গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_০৮)

        অজানা ভালোবাসার গল্প। 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।   


এসব ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে চলে আসলো। রিধি ওদেরকে নামিয়ে দিয়ে বাকিদের নিয়ে থানার দিকে চলে গেলো।।এদিকে আকাশ আর মেঘ বাসায় ডুকতেই আকাশের মা মেঘকে জড়িয়ে ধরে বললো....... 


মামনিঃ-কোথায় ছিলি সারাদিন জানিস কত টেনশনে ছিলাম। এইভাবে কোনো কিছু না বলে কেউ বাসা থেকে বের হয়। আর যদি কখনো এমন হয় তাহলে মায়ের হাতে মাইর খাবি...?? 


মেঘঃ-মা শুনুন আপনার হাতে মাইর খাওয়ার জন্য এমন ভুল আমি বারবার করতে রাজি..??


আকাশঃ- কি তুমি আবারো ওই গুন্ডাদের কাছে যেতে চাও। দেখলে তো কি হলো..??


মেঘঃ-কিছুই হতো না। আপনি কেনো তাদের ফাঁদে পা দিতে গেলেন.?? 


আকাশঃ-মেঘ আমি না গেলে ওরা তোমাকে মেরে ফেলতো..??


মেঘঃ-পাগল নাকি তামিম মারবে আমাকে। এর আগেই তো ওর সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি..??


আকাশঃ-মানে কি ভাবে...?? 


মেঘঃ-আজ তামিম আমাকে ধরে নিয়ে গেলো কিভাবে।

গুন্ডা পাঠিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে গেছে তাইতো এটাই ভাবছেন তাইনা। আরে তামিমের এতো বড় সাহস নেই আমার কিছু করার। একটা সময় ও তো আমাকে ভালোবাসতো..??? 


আকাশঃ-তাহলে তুমি ওখানে গেলে কিভাবে...??


মেঘঃ-সবটাই প্ল্যান ছিলো। নিজে থেকেই ওর কাছে ধরা দিলাম। যাতে ওকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারি...??


আকাশঃ-প্ল্যান মানে...???


এরই মধ্যে বাসায় রিধি চলে আসলো। আর এসেই আকাশকে বললো......


রিধিঃ-হ্যা স্যার প্ল্যান....??? 


আকাশঃ-আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না..?? 


মেঘঃ-দাঁড়ান বুঝিয়ে বলছি.? রিধি তুমি বলো...??


রিধিঃ-হুমমম....???


মামনিঃ-আকাশের বাবা আপনার বাবার কম্পানি দখল করার জন্য,আপনার বাবার সব সম্পত্তি দখল করার জন্য আপনার বাবা ম্যানেজারকে চুরির দায়ে কম্পানি থেকে বরখাস্ত করেন। আর সে জন্যই তামিম ও তার বাবা আপনাকে মারার প্ল্যান করেছেন।।সেদিন মারতে পারেনি।

|||

কারন সেদিন আপনার বাবা জেনে গিয়েছিলো। সেদিন আপনাদের গাড়ির ব্রেক ফেইল করানো হয়েছে, তাই আপনার বাবা আপনাকে বাঁচাতে নিজে ড্রাইভ কন্ট্রোল করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেন..???


আকাশঃ-আর তামিম এতদিন মেঘের নাম ব্যাবহার করে টাকা নিতো...???


রিধিঃ-হুমম স্যার। তামিম এটাতে শিওর ছিলো মেঘের ক্ষতির কথা বললে আপনি মেঘকে বাঁচাতে নিজের জীবন টাও দিয়ে দিবেন। তাই ওর নিজের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মেঘকে ব্যাবহার করেছে।। ভাগ্য ভালো মেঘ তামিমের আসল রুপ জেনে গেছে। নয়তো আজ সত্যি মেঘের বড় কোনো বিপদ হতো.???


আকাশঃ-তুমি ওখানে গেলে কিভাবে...?? 


রিধিঃ-আজকে তামিম মেঘকে কিডন্যাপ করবে এটা মেঘ আর আমার প্ল্যান। কারন তামিমকে ধরার আর কোনো ভালো উপায় ছিলো না...?? 


আকাশঃ-যদি মেঘের কোনো ক্ষতি হতো...??


রিধিঃ-আমি থাকতে মেঘের কোনো ক্ষতি হতে দিতাম না। মেঘকে কিডন্যাপ করার কিছুক্ষন আগে মেঘ কল করে আমাকে। তারপর নিজের ফোন নাম্বার কলিং এ রেখে দেয়..? 

|||

আর আমি ওদের লোকেশন মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাই।

তাই ওখানে যেতে কোনো অসুবিধা হয়নি। আজ মেঘ নিজে যদি তামিমকে ধরতে হেল্প না করতো তাহলে তামিম দুই একদিনের মধ্যেই আপনার উপর এ্যাটাক করতো...???


আকাশঃ-থ্যাংক ইউ রিধি আজ তুমি না থাকলে আমরা কেউই বেঁচে ফিরতাম না...???


রিধিঃ-থ্যাংকস তো মেঘের প্রাপ্য। সময় মতো কল না দিলে আমি ওখানে যেতে পারতাম না...? 


আকাশঃ-তাহলে আমার সাথে ডিল ফাইনাল করতে যে আমেরিকা গেলে...??


রিধিঃ-তামিম আমেরিকা ছিলো। ওকে ফলো করার জন্য ইচ্ছে করে একটা ডিল করা। আর আপনাকে 

প্রটেক্ট করা....???


আকাশঃ-আমার বুঝা হয়ে গেছে। এবার একটু আড্ডা দেই। টেনশন করতে করতে প্রাণের বারোটা বেজে গেছে...?? 


মেঘঃ-আপনাকে টেনশন করতে কে বলেছিলো..??


আকাশঃ-তুমি বুঝবে কিভাবে। তুমি তো আর...??


পুরোটা বলার আগেই আকাশের মামনি বললো........


মামনিঃ-হয়েছে আর টেনশন করতে হবে না।। আসল অপরাধীর সাজা তো হয়ে যাবে এইবার। এখন আর টেনশন করতে হবে না।। মেঘ তুই একটু চা করে আনতে পারবি। আজ সারাদিন ধরে তোর হাতের চা খুব মিচ করছি..?? 


মেঘঃ-আচ্ছা মা আমি চা নিয়ে আসছি...???


এরপর মেঘ রান্না ঘরে গিয়ে সবার জন্য চা নিয়ে আসে। 

সবাই চা খেতে খেতে বেশ আড্ডা দিচ্ছে। আকাশ বার বার মেঘকে দেখছে, কিছু একটা বলতে চাইছে।। কিন্তু সবার সামনে চাইলেও বলতে পারছে না। 


মেঘ সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। তাই এখান থেকে উঠে রান্না ঘরে চলে যায়। রান্না ঘরে গিয়ে ইচ্ছে করে অনেক গুলো রান্নার আয়জন শুরু করে।


কিছু সময় পর রিধি চলে গেলো। আকাশের মা রিধিকে 

অনেক রিকুয়েষ্ট করলো খাবার খেয়ে যেতে, কিন্তু রিধি জরুরী কাজে চলে যায়।


এরপর সবাই রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে।। খাবার খেয়ে মেঘ আর তানহা ছাদে বসে বসে গল্প করছে। গল্প করতে করতে এক পর্যায় তানহা বলে উঠলো..........


তানহাঃ-এখন কি করবি কিছু ভাবলি...??


মেঘঃ-হুমমম..??


তানহাঃ-কি সিদ্ধান্ত নিলি..??


মেঘঃ-চলে যাবো...??


তানহাঃ-মেঘ..??


মেঘঃ-হ্যা রে চলে যাবো। এগ্রিমেন্টের এক বছর পার হয়ে গেছে। কাল সকালে এই বাড়ি ছাড়তে হবে। 

আর বিপদ বাড়িয়ে কি লাভ...??


তানহাঃ মেঘ তুই একটা বার স্যারের কথা চিন্তা 

করবি না.???


মেঘঃ-উনার কথা চিন্তা করেই বলছি।। আর তাছাড়া এগ্রিমেন্টে এটাই লিখা ছিলো,এক বছর পর যে যার রাস্তা বেঁচে নিবে। আমার খেয়ালই ছিলো না আজ একবছর পুর্ণ হতে যাচ্ছে...?? 


তানহাঃ-মেঘ তুই কি জানিস স্যার তোকে...??


মেঘঃ-আমাকে কি...??


তানহাঃ-মেঘ তুই আবারো ভুল করিস না, একটা বার স্যারের সাথে কথা বল...??


মেঘঃ-আমার কোনো কিছু বলার নেই...?? 


তানহাঃ-তোর নেই কিন্তু ওনার থাকতে পারে মেঘ...??


মেঘঃ-উনি যা বলার একবছর আগেই বলে দিয়েছেন।

এখন আর নতুন করে কি বলবেন...??


তানহাঃ-তুই একটু এখানেই বসে থাক আমি আসছি.??


তানহা উঠে নিচে চলে গেলো,মেঘ বিড়বিড় করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। একটু পর তানহা মেঘের কাধে হাত রেখে পাশে বসে। আর মেঘ বলতে থাকে.........


মেঘঃ-কিরে এসেছিস...??


তানহাঃ-হুমমম..?? 


এই কথা বলে তানহা মেঘের হাতে একটা ডাইরি দিলো আর বললো......


তানহাঃ-এটা ধর...?? 


মেঘঃ-কি এটা...??


তানহাঃ-দেখতেই পারছিস একটা ডাইরি....?? 


মেঘঃ-হ্যা তো এটা দিয়ে কি করবো..??


তানহাঃ-পড়বি এটা স্যারের ডাইরি...??


মেঘঃ-স্যারের ডাইরি আমি পড়তে যাবো কেনো..?? 


তানহাঃ-তোর এখনো অনেক কিছু অজানা মেঘ। এটা পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবি...??


মেঘঃ-কিন্তু..??


তানহাঃ-কোনো কিন্তু না মেঘ। তুই পড়..??


মেঘঃ-হুমমম..??


এই কথা বলে মেঘ আকাশের ডাইরিটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলো........

 ||||👇👇

ডাইরির প্রথমেই লিখা ছিলো___আকাশের মেঘ♥♥

|||

মেঘ লেখাটা দেখে কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকালো। তানহা ইশারা করে পরের পেজটা উল্টাতে বলে,মেঘ তানহার কথায় মাথা নেড়ে সায় দেয়। পেজের

দ্বিতীয় পাতায় উল্টিয়ে দেখে কিছু লিখা ছিলো...👇👇

|||

আমি লাইফে আজ প্রথম দিন অফিসে জয়িন করলাম। কম্পানিতে জয়িন করার পর জানতে পারলাম..আগের ম্যানেজার আঙ্কেলকে চাকরি থেকে বাতিল করা হয়েছে

|||

কিন্তু কেনো বাতিল করা হয়েছে কেউ কখনো আমাকে 

জানায়নি বা আমারো জানার ইচ্ছে হয়নি।

|||

আজ প্রথম অফিসে জয়িন করে বুঝতে পারলাম বাপি কতটা প্রেশারের মাঝে থাকতো। সারাদিন এতো এতো কাজ করেও বাসায় হাসি মুখে ফিরতো আর আমাদের সাথে আড্ডা দিতো।

|||

আমার দুঃখ একটাই বাপিকে বুঝতে আমি দেরি করে ফেলেছি। আগে যদি বুঝে নিতে পারতাম তাহলে হয়তো এতো তাড়াতাড়ি বাপিকে হারাতাম না।

|||

একটু একটু করে কম্পানির সব দায়িত্ব বুঝে নিলাম।

নতুন একজন ম্যানেজার নিয়োগ করলাম। দেখতে দেখতে কম্পানিটা বেশ উন্নত হতে লাগলো।

|||

এরপর একটা করে নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তি পেপারে দিলাম।

নতুন কর্মচারি লাগবে এইটা উল্লেখ করে। এরপর কয়েক জনের ভাইবা নিয়ে সিলেক্ট করলাম।

|||

আজ আবার নতুন কর্মচারির জয়নিং করার দিন। নতুন একজন জয়িন করলো তাও আবার একটা মেয়ে।

|||

দেখতে একদম পরীর মতো?? টানা টানা চোখ,,মায়াবী মুখ। বাঁকা ঠোঁটের হাসি লাজুক মুখের চাহনি একদম পরীর মতো দেখতে। যে একবার দেখবে সে প্রেমে পড়ে যাবে। আমারও ঠিক তাই হয়েছে।

|||

প্রথম দেখায় মেয়েটাকে আপন ভেবে নিয়েছিলাম। বাট জানতাম না। যেই মেয়েকে নিয়ে আমার মনের গহীনে অজানা একটা সুখের ঠিকানা গড়ে তুলেছি সে মেয়েটা অন্য কাউকে ভালোবাসে।

|||

বাপিকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওকে দেখে পাগলামি গুলো থামানোর একটা মাধ্যম খুঁজে পেলাম। কিন্তু যেই দিন জানতে পারলাম পরীটা অন্য কাউকে ভালোবাসে সেইদিন আবারো খুব কষ্ট অনুভব করলাম। বুকের ভেতর কেমন যেনো ব্যাথা হতে লাগলো


|||

মামনি আমার কষ্টগুলো মেনে নিতে পারছিলো না। বার 

বার জানতে চাইতো তাই একদিন মামনিকে সব কিছু বলে দিলাম। মামনি আমাকে সব সময় বুঝাতো,বলতো আমার ভালোবাসা সত্যি হয় তাহলে একদিন সে আমার হবেই।

|||

আর আমার নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস ছিলো।

সেই বিশ্বাসটা হয়তো আমাকে বাঁচাতে শিখালো।


এরপর থেকে মেঘ কখন অফিসে আসতো কখন কি করতো সবকিছুর নজর রাখতাম আমি। এই রকম পাগল ছিলাম আমি ওর জন্য। ও হ্যা পাগল আমি এখনো ওর জন্য। মনের গহীনে আজও আমি ওকে অনুভব করি।


কিন্তু সমস্যা তো বাধলো অন্য জায়গায়। এমনটা হবে কখনো ভাবিনি কল্পনাও করিনি আমি। কি থেকে কি হয়ে গেলো মুহুর্তের মধ্যে সব কিছু শেষ হয়ে গেলো। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কি করা উচিৎ মাথায় ঢুকছে না। অবশেষে একজনকে ফেলাম হেল্প করার জন্য। যে আমাকে প্রতিটা মুহুর্তে হেল্প করেছে। তাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। কিন্তু তবুও আমি তাকে ধন্যবাদ দিলাম। তার মাধ্যমে আসল ঘটনা জানতে পারলাম। হ্যা সে আর কেউ নয় তানহা। একমাত্র তানহাই আমাকে সাহায্য করেছে।

|||

মেঘ তানহার নামটা দেখে মাথা তুলে তানহার দিকে তাকালো তারপর আবার পড়া শুরু করলো....👇👇


তানহা বলেছিলো মেঘ নাকি তার খুব ভালো বন্ধু।।আর তানহা ওর সম্পর্কে সব কিছু জানতো। যাই হোক আমি মেঘকে ভালোবাসি এটা তানহাকে মুখে না বললেও তানহা কিভাবে যেনো বুঝে গেলো। আর তখন তানহা আমাকে এটাও বললো মেঘ নাকি অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসে। 

|||

বেশ কিছুদিন পর জানতে পারলাম..মেঘ যে ছেলেটাকে 

ভালোবাসে সে ছেলেটা অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। তাও ওকে না জানিয়ে। খবরটা শুনে খুব কষ্ট হয়েছে ওর যা আমি অনুভব করতাম।


কাউকে কতটা ভালোবাসলে তার দেওয়া কষ্টগুলো সহ্য করা যায় না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আর জানি বলেই ওকে সুখী দেখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু খটকা একটা জায়গায়..মেঘ যে আমাকে ভালোবাসে না...

|||

দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে গেলো।। আজ ওকে খুব কান্না করতে দেখলাম। কিন্তু এই ভাবে মেঘ কেনো কান্না করলো। মেঘ কি এখনো ভালোবাসার মানুষটার জন্য রাত জেগে কান্না করে। মেঘের কান্নার কারন জনতে তানহাকে ডেকে পাঠাই। তারপর তানহার কাছ থেকে জানতে পারি ওর কান্নার কারন টা কি।


মেঘের মায়ের হার্টের ফুটো অপারেশন করতে অনেক টাকার দরকার৷ মেঘ একা সবকিছু সামলাতে পারবে না তাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। সত্যিই তো কি করার থাকতে পারে ওর। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে শত কষ্ট বুকে নিয়ে অফিসের সব কাজ সামলে নিতো।


আমিও সব সময় ওকে ইচ্ছে করেই কাজ বেশি দিতাম। সারাক্ষণ কাজের মাঝে ডুবিয়ে রাখতাম,যাতে করে সে স্বাভাবিক হতে পারে৷ 

|||

আমি জানতাম ওর মায়ের অপারেশন এর জন্য টাকা গুলো কাজ ছাড়া দিলে দান হিসেবে দেখবে। ভাববে আমি তাকে করুনা করছি। কিন্তু সত্যি তো এটা আমি ওর মুখে একটু খানি হাসির ছোঁয়া দেখতে চাই।


তখন ভাবলাম ওকে টাকা গুলো আমি দিবো কিন্তু টাকা গুলো এমনি এমনি নিবে না কি করবো এসব কথা ভাবতে লাগলাম।


এরপর যখন ওকে বিয়ের কথা বলতে যাবো তখন ওর প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা হয়ে যায়। আর সে আমায় 

তার মনের কথা গুলো বলে। 


বেচারা অন্যদেশে গিয়ে নাকি অনুভব করেছে সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে কতটা ভালোবাসে। তাই ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দেশে ফিরে এসেছে।

|||

আমিও খুব বোকা সহজে তার কথা গুলো বিশ্বাস করে নিলাম।৷ কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র আমি নই। তাই আমি ওকে বলে দিলাম যে....আমি তাকে বিয়ে করবো আর সেটা আজকেই। তখনই ও মেঘকে মারার হুমকি দেখায় আর অন্যান্য ভাবে ব্লেকমেইল করতে থাকে।


একটা সময় আমরা দুজনেই একটা সিদ্ধান্ত নিলাম..?? আর সিদ্ধান্ত এটাই যে মেঘকে বিয়ে করে যদি ওর মনে এক বছরের মধ্যে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারি তাহলে সে আমার। নয়তো তাকে তার অতীতের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।


এরপর বাধ্য হয়ে তাকে আমার বাসায় চুক্তির বউ করে আনি। আমি চাইনি ওকে কষ্ট দিতে কিন্তু আমি যে খুব অসহায় ছিলাম।। ওই মুহুর্তে তার মাকে বাঁচানো ছিলো আমার একমাত্র লক্ষ।


এরপর মেঘকে বউ করে নিয়ে আনলাম ঘরে। কিন্তু ওর মন থেকে ওর ভালোবাসার মানুষকে মুছে দিতে পারলাম না। একটা মিথ্যে মায়াজালে বন্ধি ছিলো সেটা বুঝাতে পারলাম না।

|||

আজ ওর জীবন থেকে সবচেয়ে কাছের মানুষ হারিয়ে গেলো। ওর মা ওকে এভাবে ছেড়ে চলে যাবে আমি বা বাসার কেউ কল্পনাও করিনি। সেই দিন ওর কষ্ট গুলো সহ্য করতে পারছিলাম না ইচ্ছে করছে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে বলি..মেঘকে কষ্ট দিওনা আল্লাহ ওর কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না। 


সেদিন ওকে অনেক কষ্ট করে বুঝাই। মাকে হারিয়ে কেমন জেনো হয়ে গেছে মেয়েটা।। এরপর অনেক কষ্টের বিনিময়ে মেঘকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনলাম।

|||

আজ ওকে ছেড়ে তিন মাসের জন্য আমেরিকা যাবো। 

জানিনা এই তিনটা মাস আমার কিভাবে কাটবে। শুধু জানি আমি আমার মায়াবতী কে খুব মিছ করবো।

এরপর আর কিছু লেখা নেই......   

             ________________________________

    _________________________________________

________________________________________________

এরপর মেঘ কয়েকটা পেইজ উল্টিয়ে দেখলো আরও কিছু লেখা.....👇👇


আজ দেশে ফিরলাম। তিন মাসের কাজ দুই মাসে শেষ করলাম। একটা ডিল ফাইনাল করতে যাওয়া। বাসায় এসে মেঘকে সারপ্রাইজ দিবো ভেবেছিলাম।। কিন্তু মেঘ যে আমার জন্য বিরাট সারপ্রাইজ রাখবে আমার জানা ছিলো না। আজ ৩ বছর পর মামনিকে হাটতে দেখেছি আর সেটা শুধু মেঘের জন্য। 


দেশে ফিরে বার বার মেঘকে বলতে চেয়েছি,,মেঘ আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু কোথায় যেনো একটা বাধা 

আমাকে আটকে দিতো। এই একটা চুক্তির জন্য মেঘকে 

সত্যি কথাটা বলতে পারছি না। কিযে কষ্ট লাগে না বলা

কথা গুলো চেপে রাখতে সেটা শুধু আমি জানি।


আজ আমার জন্মদিনে মেঘ আমার জন্য যে আয়োজন করলো। প্রথমে একটু কষ্ট লাগলেও ওর কথা গুলো শুনে নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছিলো।


মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ একমাত্র আমি। কিন্তু ওর কথা দ্বারা এটা বুঝতে পারলাম ওর এই বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার খুব ইচ্ছে।


হয়তো মেঘ পারেনি আমাকে ভালোবাসতে। কিন্তু ও কি জানে,, সে যদি এই বন্ধন ছেড়ে চলে যায় পরের দিন আমি মারা যাবো। ওকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কি করবো এখন..................


মেঘ পেজ উল্টাচ্ছে কিন্তু তাতে আর কোনো কিছু লেখা 

নেই। মেঘ ডাইরিটা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।

আর বলতে লাগলো.......... 


গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_০৯)

        অজানা ভালোবাসার গল্প। 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।    


আজ আমার জন্মদিনে মেঘ আমার জন্য যে আয়োজন করলো। প্রথমে একটু কষ্ট লাগলেও ওর কথা গুলো শুনে নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছিলো। মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ একমাত্র আমি। কিন্তু ওর কথা দ্বারা এটা বুঝতে পারলাম ওর এই বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার খুব ইচ্ছে।


হয়তো মেঘ পারেনি আমাকে ভালোবাসতে। কিন্তু ও কি জানে,, সে যদি এই বন্ধন ছেড়ে চলে যায় পরের দিন আমি মারা যাবো। ওকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কি করবো এখন..................


মেঘ পেজ উল্টাচ্ছে কিন্তু তাতে আর কোনো কিছু লেখা 

নেই। মেঘ ডাইরিটা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।

আর বলতে লাগলো.......... 


মেঘঃ-কেনো এতো ভালোবাসলেন উনি আমাকে। আমি যে তামিমের জন্য উনাকে মেনে নিতে পারতাম না। বার বার মনে হতো আমি তামিমকে ঠকাচ্ছি। কিন্তু তামিম আমাকে এই ভাবে ঠকাবে আমি কল্পনাও করিনি...??

|||

আমি এটাও জানতাম না তামিম অন্য কাউকে বিয়ে করে আমার থেকে দূরে সরে গেছে।। অথচো আমি কিনা তামিমকে ভালো ভেবে এসেছি...??


তানহাঃ-এইবার তো জানলি..??


মেঘঃ-উনি এখন কোথায়....?? 


তানহাঃ-জানিনা রুমে দেখিনি...?? 


মেঘ তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে যায়।। তারপর ডাইরিটা রুমে রেখে মায়ের কাছে গেলো। মেঘ মায়ের রুমে গিয়ে বলতে লাগলো.......... 


মেঘঃ-মা উনাকে দেখেছেন....??


মামনিঃ-গাড়ি নিয়ে কোথায় যেনো গেলো, কিন্তু এখনো ফিরছে না কেনো..??


মেঘঃ-মা আপনাকেও কিছু বলে যায়নি, আমাকেও কিছু বলে যায়নি তাহলে কোথায় গেলো উনি..?? 


মেঘ আকাশ এর ফোনে বার বার কল দিচ্ছে বাট ফোন বন্ধ। এতো রাতে লোকটা গেলো কোথায়। এরপর মেঘ বললো.......


মেঘঃ-আমি এখন কি ভাবে খুঁজবো কোথায় পাবো উনাকে...??


মেঘ টেনশনে পড়ে গেছে কি করবে এইটা ভেবে। তানহা মেঘকে বুঝানোর চেষ্টা করছে টেনশন না করার জন্য।

কিন্তু টেনশন কি বলে হয়। টেনশন তো নিজের অজান্তে 

আসে। এরপর মেঘ বললো........... 


মেঘঃ-তানহা আমার খুব ভয় হচ্ছে উনি বাসায় আসছে না কেনো..?? 


তানহাঃ-মেঘ তুই এতো চিন্তা করিস না। একটু পর চলে আসবে। কাজ পড়ে গেছে হয়তো তাই বেরিয়ে গেছে। তুই এতো টেনশন নিস না...??


মেঘঃ-এতো রাতে কিসের কাজ থাকতে পারে। রাত ১১টা বাজে তানহা। তার কি একবারও মাথায় যায় 

না। কেনো এভাবে বাসার সবাইকে চিন্তায় রেখে 

বাহিরে গেলো। এমন কেনো উনি...??


মেঘ কপালে হাত দিয়ে টেবিলের সাথে কনুই লাগিয়ে বসে আছে। একটু পর কলিং বেলের আওয়াজ। মেঘ তাড়াতাড়ি করে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।


আকাশকে দেখে একটু রাগী লুক নিয়ে কোমরে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকালো। আকাশ একটু ভয় পেয়ে যায়। মেঘকে এভাবে দেখে একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো.......


আকাশঃ-কি ব্যাপার এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? 

সরে দাঁড়াও ভিতরে যাবো...??


মেঘঃ-এতক্ষণ কোথায় ছিলেন..?? 


আকাশঃ-তোমাকে সব কিছু বলতে বাধ্য নই....??


মেঘঃ-কিহহহ....??


আকাশ কিছু না বলে মেঘের হাতে আলতো করে ধরে সামনে থেকে সরিয়ে ভিতরে যায়। তারপর তানহার কাছে গিয়ে কি যেনো বলে। এরপর তানহা তাড়াতাড়ি মেঘের কাছে গিয়ে খাবার আনতে বলে.....


তানহাঃ-মেঘ খুদা লাগছে খাবার রেডি করবি আয়..?


মেঘঃ-উফফ তানহা আগে জানতে দে না উনি কোথায় ছিলেন এতক্ষণ..?? 


তানহাঃ-ধুরর সেটা পরে জানলেও হবে আমার খুদা লাগছে আগে খাবার দিবি আয় দোস্ত...??


মেঘঃ-এই মেয়ের শুধু খাওয়ার জ্বালা..??


মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে রান্না ঘরে চলে যায়।

তারপর সবাইকে খাবার খেতে দিয়ে নিজেও খাবার খেতে বসে।। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেঘ রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে মেঘ তো পুরাই অবাক। 


কারন টেবিলের উপর একটা কাগজ রাখা ছিলো। আর সারা রুম খুঁজেও মেঘ আকাশকে পেলো না। মেঘ পেপারটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।আর নিজে নিজে বলতে শুরু করলো............


মেঘঃ-এটা কি? উনি এটা কেনো করলেন। খুব শখ আমাকে ডিভোর্স দেওয়া তাই না। আজ দেখবো 

আমি কি ভাবে আমাকে ডিভোর্স দেয়...??? 

|||

এই বুঝি উনার ভালোবাসা। এক বছরে সব অনুভুতি শেষ হয়ে গেলো। এই জন্য তখন বাহিরে গেছিলো। শয়তান বানর হনুমান কোথায় গেলো এখন। এই ডিভোর্স পেপারের বারোটা আমি বাজাচ্ছি...??


এই কথাটা বলে মেঘ রান্না ঘরে গিয়ে দিয়াশলাই আনে। 

তারপর পেপারে আগুন জ্বালিয়ে পুড়ে ফেলে। পেপার টা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মেঘ এক হাত দিয়ে অন্য হাতে তালি বাজিয়ে বলতে থাকে.......... 


মেঘঃ-এবার দেখবো আকাশ চৌধুরী আমাকে ডিভোর্স দেন কিভাবে। কিন্তু বজ্জাত টা গেলো কই। ড্রয়িং রুমেও দেখলাম না। তানহার সাথে আড্ডা দিতে গেলো 

নাকি দেখি তো। 


এই কথা বলে মেঘ তানহার রুমের সামনে চলে গেলো।।

গিয়ে দেখে তানহার রুমের দরজা লক করা। তারমানে

তানহা ঘুমিয়ে পড়েছে।এরপর মায়ের রুমের গিয়ে দেখে 

মাও ঘুমাচ্ছে। বাকি রইলো একটা জায়গা ছাদ। ছাদে নয়তো উনি।। এরপর মেঘ নিজে নিজেই বললো.........


মেঘঃ-এতো রাতে উনি ছাদে যাবে কেনো। ধুরর এতো ভেবে কাজ নেই গিয়ে দেখে আসি..??? 


মেঘ ছাদের দিকে পা বাড়ালো। ছাদে গিয়ে দেখে পুরো ছাদটা জুড়ে মোমবাতি জ্বালানো। মোমবাতি জ্বালানো দেখে মেঘ নিজে নিজেই বললো.......... 


মেঘঃ-এমা উনাকে আবার ভুতে ধরলো নাকি। এভাবে কেউ ছাদের উপর মোমবাতি জ্বালায় নাকি। কিন্তু 

উনি গেলেন কোথায়....???? 


মেঘ ঘুরে ঘুরে ছাদের চারপাশে দেখছে। চারপাশে মোম বাতির আলোয় ভরে উঠেছে। হটাৎ মেঘের মনে হলো কেউ ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। এমন ভাবেই জড়িয়ে ধরেছে যেনো মেঘ পালাতে না পারে।। আকাশ এর এমন কান্ড দেখে মেঘ বলে উঠলো......... 


মেঘঃ-এসবের মানে কি..??


আকাশঃ-বুৃজলে কি ভাবে আমি এসেছি..??


মেঘঃ-মন বলেছিলো..??


আকাশঃ-আর কি বলে শুনি...??


মেঘঃ-আমার মাথা বলে। এই ভাবে সারা ছাদ জুড়ে মোমবাতি কেনো...?? 


আকাশঃ-কেনো মানে আজকে তো আমাদের বিবাহ বার্ষিকী তাই...??


মেঘঃ-ঘোড়ার ডিম। কিসের বিবাহ বার্ষিকী। দিন শেষ হয়ে রাত পার হয়ে যাচ্ছে আর উনার মাথায় এখন 

বুদ্ধি এসেছি আজ নাকি বিবাহ বার্ষিকী..???


আকাশঃ-ইহহহ বললেই হলো এখনো ৫ মিনিট বাকি আছে....???


মেঘঃ-তাতে কি হয়েছে...?? 


আকাশঃ- Happy Anniversary My dear wife 


মেঘঃ-ধুরর ছাড়েন তো...?? 


মেঘ জোরে ধাক্কা দিয়ে আকাশকে সরিয়ে দিলো। তখন আকাশ মেঘকে বলে উঠলো...... 


আকাশঃ-এটা কি হলো। আজ আমাদের Anniversary 

আর তুমি কিনা এই ভাবে রিয়েক্ট করছো...???


মেঘঃ-Anniversary হ্যা Anniversary....একটা নকল বিয়ের এক বছর পুর্ণ হলো। যে বিয়ের কোনো মানে নেই। নেই কোনো স্বপ্ন নেই কোনো আশা। আর সেই বিয়ের উপলক্ষে এসব তাইতো। কি দরকার আছে এসবের...??


আকাশঃ-মেঘ...??


মেঘঃ-হুম ঠিকই বলছি। আপনি যা ভাববেন যা চাইবেন তাই হবে একবারো অন্যের ইচ্ছার মুল্য দিবেন না। একবারো বুঝবেন না আমি কি চাই,আমার মন কি চায় একবারো জানতে চেয়েছেন আমার মনে কি আছে??


আকাশ মেঘের কথা শুনে চুপ করে রইলো। কোনো কথা বলছে না। মেঘ আবার বলে উঠলো........ 


মেঘঃ-ডিভোর্স দিবেন তাইতো।। ঠিক আছে আপনার ইচ্ছাতেই সব হবে। এই বিয়েটা যখন আপনার ইচ্ছায় হয়েছে ডিভোর্স টাও আপনার ইচ্ছায় হবে...???


আকাশ মেঘের সামনে গিয়ে তার দুই কাঁধে হাত রাখে আর বলে.......


আকাশঃ-মেঘ আমার কথা শুনো...?? 


মেঘঃ-কি আর শুনবো। সব কথাই তো শুনি আপনার? আজও শুনবো ভাবছেন কি ভাবে আপনি। ডিভোর্স পেপার রেডি করে আনলেন এক বারের জন্য আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। আমি কি এতটাই খারাপ। আমার কথা বলার মতো প্রকাশ করার কি কোনো ইচ্ছে নেই। কোনো দাম নেই আমার...???


মেঘ এই কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করে দিয়েছে। আকাশ কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না। মেঘ যে

ভীষণ রেগে আছে এটা আকাশ ঠিকই বুঝতে পারছে।


অন্য দিকে অভিমান ও জমেছে অনেক।। সত্যিই তো আকাশ কি ভাবে ভুলটা করলো,,মেঘকে না জানিয়ে ডিভোর্স পেপারটা আনা উচিৎ হয়নি। একটা বারের জন্য মেঘকে জানাতে পারতো।


আকাশ কি করবে না করবে বুঝতে না পেরে হুটট করে মেঘকে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। আর বললো.........


আকাশঃ-আই এম সরি মেঘ। খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছি। আর কখনো এমন হবেনা লক্ষীটি। প্লিজ কেঁদো না..??


আকাশের কথা শুনে মেঘের কান্না আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। মেঘ খুব কান্না করছে আকাশের শার্টের 

পিছনে খামছে ধরে। অনেকটা সময় পর মেঘের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে। আর আকাশকে বলতে থাকে........ 


মেঘঃ-এই বিয়ের তো কোনো মানে নেই তাই বলছি কি আমাদের ডিভোর্স টা হয়ে যাক। আপনি তো ডিভোর্স পেপার রেডি করে আনলেন তাই আর দেরি করা ঠিক হবে না। বারোটা অলরেডি বেজে গেছে আর ১ বছর চুক্তির সময়ও শেষ...??? 


মেঘের কথায় আকাশের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।

এই সব কি বলছে মেঘ। আকাশ মেঘকে বুক থেকে সরিয়ে নেয়। এরপর মেঘের হাতে হাত রেখে বলে........


আকাশঃ-তুমি এসব কি বলছো..?? 


মেঘঃ-হ্যা ঠিকই তো বলছি। আমি কালকে সকালেই চলে যাবো। শুধু আজকের রাতটা এখানে..??


আকাশঃ-মেঘ স্টপনদিস ননসেন্স..?? 


আকাশের ধমকে মেঘ অনেক টা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে।

এক হাত দিয়ে শাড়ির আচঁল আঙুলের সাথে পেছাচ্ছে। অন্য হাতে শাড়িটা ধরে আছে।ভয়ে কোনো কথা বলছে না। আকাশ আবার বলে উঠলো.......... 


আকাশঃ-ভালোবাসি দূরে থাকার জন্য নয় মেঘ। এটা ঠিক যে তোমাকে একরকম জোর করে বিয়ে করেছি।

আমি তখন অসহায় ছিলাম,তোমাকে বাঁচানোর 

কোনো উপায় ছিলো না আমার কাছে।

|||

তবুও তোমার মতামত নেওয়ার দরকার ছিলো।। আর এখন যেহেতু মতা মতের কথা উঠলো তো ঠিক আছে তুমি যেতে চাইলে যেতে পারো আমি তোমাকে বাধা দিবো না। তোমার ইচ্ছার মুল্য আমি দিবো।

|||

তুমি চাইলে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবো।। সব করতে রাজি আমি, কিন্তু প্লিজ তোমাকে ভুলে যেতে বলো না। এই কাজটা আমি করতে পারবো না মেঘ কোনো দিনও না.???


আকাশ কথা গুলো বলে ছাদ থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। যেই আকাশ চলে যাবে ঠিক তখনই মেঘ আকাশের হাতটা ধরে ওকে আটকায়। আকাশ মেঘের দিকে ঘুরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।।একি মেঘ তো কান্না করছে। মেঘের কান্না দেখে আকাশ বললো....... 


গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট

(পর্ব_১০_শেষ_পর্ব)


        অজানা ভালোবাসার গল্প। 


লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।    


আকাশ কথা গুলো বলে ছাদ থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। যেই আকাশ চলে যাবে ঠিক তখনই মেঘ আকাশের হাতটা ধরে ওকে আটকায়। আকাশ মেঘের দিকে ঘুরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।।একি মেঘ তো কান্না করছে। মেঘের কান্না দেখে আকাশ বললো....... 


আকাশঃ-কি হলো এখনো কান্না করছো কেনো? বলছি তো তোমার ইচ্ছার মুল্য আমি দিবো। আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে নিয়ে আসছি তুমি সাইন.....?


পুরোটা বলার আগে মেঘ বললো.......


মেঘঃ-আর একবার ডিভোর্স এর কথা উঠলে মাথা ফাটিয়ে দিবো...??


আকাশঃ-এখন তো তোমার ইচ্ছে..?? 


মেঘঃ-আমি কি একবারো বলেছিলাম আমার ডিভোর্স চা। আমি কি একবারো বলেছিলাম আমি আপনার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই। আমি কি একবারো বলেছিলাম আমি আপনাকে ঘৃণা করি...??

|||

সব সময় নিজের যা ভালো মনে হলো তাই করলেন। আবার এখন বলছেন ডিভোর্স দিবেন। ডিভোর্স কি এতো সহজ নাকি যে আপনি চাইবেন আর আমি 

দিয়ে দিবো..??


আকাশঃ-মানে...??


মেঘঃ-মানে খুব সোজা আমি ডিভোর্স পেপারটা পুড়িয়ে ফেলেছি..??


আকাশঃ-কি কখন করলে এটা...??


মেঘঃ-কেনো খুশি হননি...??


আকাশঃ-ওটা পুড়িয়ে দিলে কেনো..?? 


মেঘঃ-পুড়ালাম কেনো আবার,,আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই পুড়িয়ে ফেলেছি..?? 


আকাশঃ-তোমার ইচ্ছে হলে ওটা পুড়াবে কেনো আমাকে জানাবে না..?? 


মেঘঃ-বেশ করেছি..??


আকাশঃ-আমি আবার আনবো..??


মেঘঃ-আমি আবারো পুড়িয়ে ফেলবো..??


আকাশঃ-তবুও আমি আবার আনবো??


মেঘঃ-আমি তবুও ওটা পুড়াবো.??


আকাশঃ-কেনো পুড়াবে.??


মেঘঃ-ভালোবাসি তাই.??


আকাশঃ-মেঘ..??


মেঘ নিজে থেকে আকাশকে জড়িয়ে ধরলো। আকাশও নিজের দু হাত দিয়ে মেঘকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নেয়। এরপর মেঘ বলতে শুরু করে।


মেঘঃ-জানেন তামিম যখন আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলো 

খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। জানতাম না তামিম এতোটা খারাপ মনের মানুষ। যেদিন তানহা বললো তামিম প্রতারক বিশ্বাস হয়নি তানহার কথা গুলো.?? 

|||

কিন্তু যেদিন জানতে পারলাম তামিমের বাবা আপনাকে 

মেরে ফেলার জন্য বার বার চেষ্টা করেও মানতে পারছে না তখন নিজের অজান্তেই মনের ভিতর ঝড় বইতে শুরু করে। মাকে হারিয়েছি এখন যদি আপনাকে হারাই 

তাহলে আমি কিভাবে বাঁচবো বলতে পারেন...?? 

|||

মাকে জিজ্ঞেস করে অনেক কষ্টে ম্যানেজার আঙ্কেলের বাষার ঠিকানা জোগাড় করি,তারপর জানতে পারলাম ম্যানেজার আঙ্কেলের ছেলে হলো তামিম। তামিম তার বাবার সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকে মেরে ফেলতে চায়।৷ তখন ইচ্ছে করেছিলো নিজের হাতে তামিমকে মেরে ফেলি..??

|||

যেই তামিম আপনাকে মেরে ফেলতে চায় তার সাথেই হাত মিলিয়ে আপনি আমাকে #চুক্তির_বউ করে আনলেন। জানেন তামিমকে ভুলতে শুরু করেছিলাম কিন্তু আপনার দেওয়া চুক্তিটা দেখে আবারো মনের ভিতর কষ্টের পাহাড় গড়ে উঠে.??

|||

অফিসে একটা মেয়ে জব করে।। চুপি চুপি তাকে দেখে ভালোবেসে ফেললেন। আবার মিথ্যা চুক্তি দিয়ে বিয়েও করলেন। একটি বার বলতে পারলেন না তাকে আপনি ভালোবাসেন। বলতে পারলেন না, মেঘ আমি তোমাকে

ভালোবাসি..???

|||

কেনো বলেন নি সত্যিটা আমাক। আমি কি পারতাম সত্যিটা জেনেও আপনার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারতাম এই বন্ধন ভেঙে দিতে..??


আকাশঃ-মেঘ সরি আর জীবনেও এমন কথা মুখে আনবো না। কোনোদিনও তোমাকে দূরে যেতে 

দিবো না...??


মেঘঃ-এই চুক্তিটা যদি সত্যি হতো যদি এমন হতো আপনার কাছ থেকে আলাদা হতে হতো তাহলে

আমি মরেই......???


পুরোটা বলার আগেই আকাশ মেঘের ঠোঁটে হাত দিয়ে আটকায়। আর বলতে থাকে....... 


আকাশঃ-এসব বলবে না। চুক্তিটা সত্যি হোক বা মিথ্যা এই চুক্তির মাধ্যমেই আমি তোমাকে বউ করে পেয়েছি।

মেঘ প্রতিটা মুহূর্ত মনে হতো এক বছরে তুমি আমাকে ভালোবাসবে নাকি ছেড়ে চলে যাবে..? 

|||

যদি আমাকে নিয়ে তোমার মনে ভালোবাসার জন্ম না হতো তাহলে জানিনা আমি কি করতাম.??


এবার মেঘ আকাশকে জড়িয়ে ধরলো।।এরপর মেঘ পা থেকে জুতা খুলে আকাশের পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে একদম কাছে চলে গেলো। মেঘ এর নিশ্বাসের প্রতিটা ছোঁয়া আকাশের মুখে গিয়ে লাগছে।

|||

আকাশ জেনো একটা ঘোরের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে সেই এক অনুভুতি কাজ করতেছে। এরপর আকাশ মেঘের কোমরে দুই হাত দিয়ে টেনে মেঘকে আরও কাছে নিয়ে  

আসে। সব সময় ভালোবাসি কথাটা বলার প্রয়োজন হয় না। ভালোবাসার মানুষের প্রতিটা ছোঁয়া ভালোবাসি বলে যায়।

|||

অন্যদিকে মেঘ দুই চোখ দিয়ে আকাশকে দেখছে গভীর এক দৃষ্টি দিয়ে। মেঘ আকাশের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে। খুঁজে পেয়েছে তার আসল ঠিকানা।। এই ঠিকানা ছেড়ে মেঘের চলে যাওয়ার শক্তি নেই। মেঘ চায় না আজ এই মায়া কাটাতে। মেঘ চায় আজ আকাশের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিতে। 

|||

আকাশ একটু একটু করে মেঘকে তার মাঝে মিশিয়ে নিচ্ছে। মেঘ বুঝতে পারে আকাশ তার ঠোঁটের স্পর্শ নিতে একদম কাছে চলে এসেছে।

|||

মেঘের ঠোঁট দুটি কাঁপতে শুরু করলো।। আকাশ মেঘের

ঠোঁটে কিছ করতেই মেঘ চোখ দুটি বন্ধ করে নেয়। এক  

হাত দিয়ে মেঘ আকাশের চুল গুলো শক্ত করে ধরে আছে অন্য হাতে আকাশের পিঠে খামছে ধরে রাখলো।

আকাশ আজ মেঘের ঠোঁটে নিজেকে ডুবিয়ে নিচ্ছে।

|||

প্রায় মিনিট দুয়েক পর আকাশ মেঘকে ছেড়ে দেয়। মেঘ

নিচের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।

আকাশ মেঘের দু গালে হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে কপালে 

ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে কোলে তুলে নিলো।

আকাশের এমন কান্ড দেখে মেঘ বলে উঠলো.............


মেঘঃ-আরে আরে করছেন টা কি..??


আকাশঃ-কেনো দেখতে পাচ্ছো না আমি আমার বউকে কোলে তুলে নিলাম...?? 


মেঘঃ-ছিহহ এভাবে কোলে নিতে লজ্জা করে না আপনার..??


আকাশঃ-আমার বউকে আমি কোলে নিছি লজ্জা করবে কেনো...?? 


মেঘঃ-যদি কেউ দেখে ফেলে...??


আকাশঃ-কেউ দেখবে না পাগলী। আর দেখলে দেখুক আমি কোনো কিছুই ভয় করি না। আমি কি অন্যের বউকে কোলে নিছি নাকি, নিজের বউকে নিছি..???


এইবার মেঘ দুই হাত দিয়ে আকাশের গলা জড়িয়ে ধরে লজ্জায় বুকে মুখ লুকায়। আকাশ মেঘকে কোলে করে রুমে চলে আসেলো। মেঘ লজ্জায় চোখ মেলে তাকাতে পারছে না।

|||

এরপর কি হয়েছে আমি আর জানিনা?? অবিবাহিত পুরুষ জানবোই বা কি ভাবে। বিয়ে করে না হয় পরে অন্য কোনো দিন বলবো।

|||

হয়তো বাকিটা ইতিহাস হয়ে গেছে যেটা আমার আজও অজানা। আর আপনারাও আজব অন্যের এই গুলো শুনতে বা দেখতে নেই বুঝলেন।

|||

সকাল বেলায় মেঘের ঘুম ভাঙতেই দেখে... আকাশ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আর মেঘ আকাশের কলার চেপে 

ধরে আছে। আকাশের এমন তাকিয়ে থাকা দেখে মেঘ আকাশকে রেখে বিছানা থেকে নামতে যাবে ঠিক তখনই আকাশ মেঘের হাত ধরে আটকে নেয়। মেঘ নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে বাট পারছে না। এরপর আকাশ মেঘকে বলে উঠলো....... 


আকাশঃ-গুড মর্নিং তো বলে যাও..??


মেঘঃ-প্লিজ হাত ছাড়ুন। সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে রান্না করতে হবে আর তাছাড়া কেউ দেখে ফেলবে তো...??


আকাশঃ-না ছাড়বো না...??


এবার আকাশ নিজেই উঠে দাঁড়ায়,এরপর পিছন থেকে 

মেঘকে জড়িয়ে ধরে মেঘের চুলে মুখ গুঁজে দেয়। মেঘ বাধ্য হয়ে আকাশের দিকে ঘুরে আকাশের কপালে চুমু দেয়। এরপর আকাশ নিজ থেকেই মেঘকে ছেড়ে দেয়।

মেঘ এক দৌড়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে ঢুকে। ঠিক তখনই আকাশ বলতে শুরু করে.............


মেঘঃ-সময় আমারো আসবে তখন দেখে নিবো হুমম...??


এরপর সবাই এক সাথে খাবার টেবিলে নাস্তা করতে যায়। নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছে। একটু পর আকাশ এর দিকে তাকিয়ে মেঘ আর তানহা হাসতে শুরু করে। ওদের হাসি দেখে আকাশ বললো..........


আকাশঃ-ওভাবে হাসছো কেনো..?? 


মেঘঃ-হিহিহি কই কিছু না এমনি..?? 


মেঘ উঠে আকাশের কাছে যায়। তারপর শাড়ির আঁচল 

দিয়ে আকাশের কপালে লেগে থাকা লিপস্টিক গুলো মুছে দেয়। আকাশের মা কোনো কথা না বলে মুছকি হেসে নিজে নিজেই খেতে শুরু করেন। এদিকে তানহা

হেসেই যাচ্ছে। তানহার হাসি দেখে মেঘ বললো..........


মেঘঃ-তানহা এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। তোর বেলায় দেখবো কি করিস তুই.??


তানহাঃ-ধুরর বাবা দেখবি কি ভাবে। তোকে তো আমার বিয়েতে ইনবাইট করবো না। শুধু দুই জনকে করবো 

আর সেটা হলো স্যার আর আন্টি তাইনা গো আন্টি??


তানহার এই কথা গুলো শুনে আকাশ আর আকাশের মা হেসে উঠলো। মেঘ এবার একটু রেগে গিয়ে বলে উঠলো........ 


মেঘঃ-আমাকে দাওয়াত দিবি না..??


তানহাঃ-না দেবো না তুই তো আমার একমাত্র শত্রু।

আর শত্রুকে কেউ বিপদ বাড়াতে ডাকে নাকি..??


মেঘঃ-আমি তোর শত্রু তাইনা...??


তানহাঃ-হ্যা তুই আমার একমাত্র শত্রু...??


মেঘঃ-বের হয়ে যা এখুনি..??


তানহাঃ-ওই এটা তোর বাসা নয়, এটা আমার বেস্টুর বাসা...?? 


মেঘঃ-কে তোর বেস্টু...?? 


তানহাঃ-কেনো তুই জানিস না। আমার বেস্টুর নাম কাশফিয়া হাসান মেঘ ওরুপে মিসেস আকাশ মাহমুদ..?? 


মেঘঃ-তবে রে আজ তোকে আমি...??


মেঘ তানহার পিছনে ছুটছে। দুজনে সারা ঘর ছুটাছুটি

করলো। একটা সময় তানহা গিয়ে আকাশের পিছনে দাঁড়ায়। ঠিক তখনই মেঘ বলে উঠলো....... 


মেঘঃ-বেঁচে গেলি ডাইনি..??


তানহাঃ-স্যার থুক্কু দুলাভাই বলি আজ থেকে। দেখেন না আপনার বউটা কি শয়তান নিজের বান্ধবীকে কেউ এভাবে দৌড়ানি দেয় বলেন.??


আকাশঃ-মেঘ এবার একটু থামো। বেচারি হাপিয়ে গেছে আর ছুটাছুটি করতে পারবে না.?? 


মেঘঃ-আপনিও ওর দলে। ঠিক আছে আমিও দেখবো?


আকাশঃ-কি দেখবে তুমি..??


মেঘঃ-আপনাকে দেখে নিবো.??


আকাশঃ-এক বছর ধরে তো দেখছো আর কি দেখবে.?


মেঘঃ-ধুরর ছাই ভাল্লাগে না..?


কথাটা বলে মেঘ রাগ করে সোফায় গিয়ে বসে। কারো সাথে কথা বলছে না মেঘ। তানহা ওর রাগ ভাঙানোর জন্য মেঘের পাশে গিয়ে বসে। মেঘ নিজের পা দুটি সোফায় তুলে দুই হাত দিয়ে ধরে পা নাচিয়ে যাচ্ছে.... তানহা মেঘের কাছে গিয়ে বললো..........


তানহাঃ-মেঘ বলছি কি আমার বিয়েতে তুই এক সপ্তাহ আগেই যাস। তোকে ছাড়া তো আমি কনে সাজতে পারবো না রে...??


মেঘঃ-তুই কে রে তোর বিয়েতে আমি কেনো যাবো..??


তানহাঃ-প্লিজ রাগ করিস না। আমি তোর সাথে ফান করছি..??


মেঘঃ-হ্যা করবি তো। মাও ছেড়ে চলে গেছে সার্থপরের 

মতো এখন তুইও যা। আমার কাউকে লাগবে না সবাই চলে যাও সবাই..?? 


তানহাঃ-মেঘ আই এম সরি। আমি ওভাবে বলিনি কেনো ভুল বুঝছিস..???


মামনিঃ-মেয়ে বলে কি, আমি আবার কখন মরলাম..?? 


মেঘ চুপ করে আছে কোনো কথাই বলছে না। মামনি আবার বলতে লাগলো........


মামনিঃ-আমি কি তোর মা নই, আমাকে তুই পর করে দিবি। তোর জন্য আমি আবার নতুন করে হাঁটতে শিখছি। আর তুই কিনা বললি তোর মা তোকে ছেড়ে চলে গেছে তাহলে আমি তোর কি হই মেঘ...???


মেঘঃ-মা...??[কান্না করতে করতে কথাটা বলে মেঘ]


মামনিঃ-তাহলে কিভাবে বললি আমি সার্থপর..??


মেঘঃ-সরি মা...???


মামনিঃ-হয়েছে আর সরি বলা লাগবে না। আমার তো তোকে নিয়ে কত চিন্তা হচ্ছিলো। আমার ছেলের বোকামির জন্য না আবার তোকে হারিয়ে বসে। এমন এমন কাজ করে যার জন্য কষ্ট পায়.???


মেঘ মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ মেঘ

এর দিকে তাকাতেই মেঘ মুখ ভেংচি দিয়ে মায়ের বুকে মাথা রাখে। আর বলতে থাকে......... 


মেঘঃ-মা আমাদের মাঝে ওই পাজি ছেলেটাকে টানবেন না তো। কত বড় সাহস ওর, ও আমাকে এগ্রিমেন্ট এ সই করিয়ে বিয়ে করে। আবার নিজেই কষ্ট পায় কি বুদ্ধি উনার.??


আকাশঃ-মা আর মেয়ে মিলে এখন আমাকে পঁচানি দিবে। তানহা দেখেছো তোমার বান্ধবী কত বড় সার্থপর। আমার মাকে নিজের মা বানিয়ে আমাাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছে....??


তানহাঃ-হ্যা তাইতো মেঘ তুই এতো শয়তান কেনো..?? 


মেঘঃ-এই ডাইনি তাই আসবি না মা মেয়ের মাঝে। উনি আমার মা আর কারো না বুঝলি..???


মামনিঃ-ঝগড়া থামাও আমি দুজনেরই মা। হয়েছে এবার শান্তি...?? 


আকাশের মা মেঘ আর আকাশকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরেন। অন্য দিকে তানহা তাদের খুশি দেখে কান্না আটকাতে পারলো না। এরপর তানহা পিছনে গুরে চোখের জল টা মুছে মেঘের দিকে তাকালো।। ঠিক তখনই আকাশ বলে উঠলো...... 


আকাশঃ-ভেবো না তানহা মেঘের এখানে কোনো অযত্ন হবে না। ওর জীবনটাকে সুখ দিয়ে ভরিয়ে দিবো আমি?


তানহাঃ-আমার সেই বিশ্বাস আছে স্যার। সেই কারনে তো মেঘের সব তথ্য আমি আপনাকে দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছি। আমার এটা মনে হয়েছিলো যে ওর মায়ের পরে যদি কেউ বুঝে সেটা আপনি...??? 


আকাশঃ-থ্যাংকস এ লট। আজ তোমার কারনেই মেঘ আমার হয়েছে..?? 


তানহাঃ-থ্যাংকস না দিয়ে আমাকে এমন কাউকে খুঁজে দিন না তাহলেই তো হয়..??


মেঘঃ-ভাবিস না তোর জন্য আমি এমন একজনকে সিলেক্ট করবো সে সারাজীবন তোকে জ্বালাবে..??


তানহাঃ-সত্যিই তুই আমার শত্রু.??


এই ভাবে কাটতে থাকে আকাশ ও মেঘের দিন গুলো??

অবশেষে মেঘ চুক্তির বউ থেকে আকাশের সত্যিকারের বউ হয়ে উঠলো। ওদের সংসারে এমন খুনসুটি লেগে থাকুক। হাসি খুশি আর আনন্দে ভরে উঠুক ওদের এই 

মিষ্টি ও মধুর সংসার।


ভালোবাসার জোর থাকলে সম্পর্ক যেমনই হোক...এক দিন না একদিন তা পুর্নতা পাবেই। অনেক কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে মেঘ সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধান পেলো। এবং তার ভালোবাসার মায়াবতীকে ভালো থাকুক ভালোবাসা। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো। সত্যিকারের ভালোবাসা অটুট থাকুক যুগ থেকে 

যুগান্তর।


দীর্ঘ ৪ বছর পর......আকাশ ও মেঘের ঘরে আলোকিত করে এক কন্যা সন্তানের আগমন হয়। বেশ ভালোই কাটছে তাদের দিন গুলো মেঘের নাম অনুসারে মেয়ের নাম রাখা হয়েছে মেঘলা।


আকাশের মা তার নাতনির সাথে বেশ হাসি খুশি সময় কাটায়। আকাশও ব্যাবসা বানিজ্য খুব ভালো করেই করতে থাকে।। সব কিছুর মাঝে প্রতি শনিবার এলেই মেঘ ও তার পিচ্চি পরী মামনি টাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। এই ভাবেই তাদের দিনকাল কাটতে থাকে.....


 আপনারা সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন। তাদের

        ভালোবাসা যেনো সারাজীবন অটুট থাকে।


_______সমাপ্ত_____


পর্রবের আরও অনেক সেরা গল্পের লিন্ক