অহংকারী মানুষ | বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প

স্বার্থপর অহংকারী মানুষ

স্বার্থপর অহংকারী মানুষ

 বাসার নিচে দারোয়ান আংকেল ওনার পরিবার নিয়েই থাকেন,ওনার স্ত্রী এবং একটা ৬ থেকে ৭ বছরের ছেলে।


প্রতিদিন বিকালে ভাড়াটিয়াদের ছেলে-মেয়েরা নিচে গ্যারেজে খেলতে আসে,কিন্তু কেউ কখনো এই দারোয়ান আংকেলের বাচ্চাটাকে খেলায় নেয় না। সেদিন ক্যাম্পাস থেকে এসে মাত্র গেট দিয়ে ভেতরে ডুকলাম,তখন দেখি দুইটা ছেলে দারোয়ান আংকেলের ছেলেটাকে ডেকে বলছে, 


-- " এই দারোয়ানের ছেলে বল'টা বাহির থেকে এনে দে তো, "


তখন আরিফ হাসি মুখেই দৌড়ে গিয়ে বাহির থেকে বলটা নিয়ে এলো।


আরিফ মাঝেমধ্যে পড়া না বুঝলে আমার কাছে আসে,ক্লাস টু তে পড়েও, টুকটাক পড়া দেখিয়ে দিই। সেদিন রাতে আসলে আমি ওকে জিজ্ঞাসা করি,


-- ''আরিফ, তোমার তো একটা সুন্দর নাম আছে,নিচে দেখলাম দুইটা ছেলে তোমাকে দারোয়ানের ছেলে বলে ডাকলো,ওরা তোমার নাম জানেনা? '' 


আরিফ হাসি দিয়ে বললো, 

-- " জানে ভাইয়া ,তবুও ওরা আমাকে দারোয়ানের ছেলে বলেই ডাকে।"


আমি আবার জানতে চাইলাম, 

-- " তোমার মন খারাপ হয়না ? "


-- " আমার বাবা তো দারোয়ান ভাইয়া, " আরিফ হেসে উত্তর দিলো ।


আমরা বেশির ভাগ সময় এমনটাই করি,আত্মীয় স্বজন কিংবা প্রতিবেশী সবার সাথেই আমরা কেমন আচরণ করবো তা নির্ভর করে তার বাবা কি করে কিংবা তার বাবার কত টাকা সেটার উপর।


আমরা প্রায় বলি,এই রিক্সাওয়ালার ছেলে,এই দারোয়ানের ছেলে,এই ময়লাওয়ালার ছেলে,এই কুলির ছেলে।এতে একটা মানুষ নিজেকে কতটা ছোট ভাবেন তা আমরা কখনো ভেবে দেখিনা,চিন্তাও করিনি।


গতকাল যখন দারোয়ান আংকেল বললেন, 

-- " মামা কালকে আরিফ রাতে রুমে এসে অনেক কান্না করলো,সবাই ওকে দারোয়ানের ছেলে বলে ডাকে সে জন্য। "


আমি কিছু বলার আগে তিনি আবার বললেন, 

-- " ছেলেটা যখন কান্না করতে করতে বললো বাবা, তুমি দারোয়ান কেনো,তুমি ওদের বাবার মতো বড় হতে পারোনাই। সত্যি মামা তখন কান্না ধরে রাখতে পারিনি। "


আমি আংকেলের গায়ের উপর হাত রেখে বললাম,

-- " কিছু কিছু মানুষের ব্যবহার কখনো ঠিক হবেনা,এদের কথায় মন খারাপ করবেন না। "


তখন তিনি প্রায় কান্না করে দিয়ে বললেন,

-- " ক্লাস ফোরে যখন ভর্তি হই তখন বাপ মারা যায়,খাবার পাইনি ঠিক মতো,মা অন্যের বাসায় কাজ করতো,আর আমি কাঠের মেইলে,এই কথা ছেলেকে কিভাবে বুঝাই। "


আমি মামাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম,কিন্তু এই কাজটা আমি কখনোই ভালো করতে পারিনা।


তখন মামা চোখ মুছে বললো,

-- " ছেলেকে অনেক বড় করবো,দোয়া কইরেন মামা। "

.

.

.

.

আমাদের সামান্য একটা কথা কিংবা একটা সম্বোধন একটা মানুষকে কতটা কষ্ট দিতে পারে তা আমরা কখনো চিন্তাও করিনা। যাইহোক,আমরা সবাই সবাইকে সম্মান দিয়ে চলি,প্রতিটা মানুষের অবস্থানের পিছনে একটা গল্প জুড়ে থাকে,তা আমরা সবাই জানিনা,তাই কাউকে যেনো ভুলে ছোট করে না দেখি,কষ্ট না দিই।


ভালো থাকুক সবাই।

-------------------------------

– সৃষ্টি ও সম্মান ~ 

কলমেঃ সিদ্দিক আরমান

-------------------------------


এমন আরও বাস্তব জীবনের গল্প পড়ুন।