বেইমান বন্ধু গল্প | বন্ধু নিয়ে কষ্টের স্ট্যাটাস

 দুই বন্ধু গল্প

দুই বন্ধু গল্প

প্রায় ২৫ বছর পর বন্ধুর সঙ্গে দেখা। স্ত্রী কন্যা নিয়ে শপিং করতে এসেছে।

অনেক কথাবার্তার পর বন্ধু জিজ্ঞেস করল, আমার ছেলে মেয়েরা কোথায়। স্ত্রী কোথায়। তারা এসেছে কিনা।

খুশি হয়ে বললাম, হ্যাঁ এসেছে। উপরে কিছু একটা চেঞ্জ করতে গেছে। এক্ষুনি আসবে।

বন্ধু খুশি হয়ে বলল, ভালোই হলো। পরিচয়টা হয়ে যাবে।

আমিও বললাম, হ্যাঁ বাচ্ছাদের সঙ্গে পরিচয় থাকলে মাঝে মাঝে গল্প গুজব করতে পারবে। শহরে ছোটদের বন্ধু-বান্ধবের বড় অভাব।

এক মিনিটও হয় নি। হঠাৎ বন্ধু পত্নী উদ্বিগ্ন হয়ে স্বামীকে একটা খোঁচা দিয়ে বলল, আর ওয়েট করোনা। মেয়ের টিউশনি আছে। দেরি হয়ে যাবে। 

বন্ধুর গায়ে যেন হঠাৎ বজ্রপাত হলো। নয়তো কারেন্টের শক খেলো। সে তৎক্ষণাৎ ১০০ ডিগ্রি ঘুরে স্ত্রীর থেকে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে চোখ মুখ পাকিয়ে বলতে লাগলো, আর বলিস না। এক্ষুনি মেয়ের টিউশনি আছে। না গেলে হবেই না। অন্য একদিন পরিচয় করবে। আসিরে বন্ধু। বলেই চোখের নিমেষে প্রায় উড়তে উড়তে শপিংমল থেকে মেয়ে টানতে টানতে বেরিয়ে গেল।

অবাক হয়ে বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম। অথচ একটা সময় বন্ধুর সঙ্গে গলায় গলায় কত ভাব ছিল। কত গল্প গুজব করে করেছি। সারাদিন মাঠে মাঠে ঘুরেছি। মাছ ধরেছি বিলে। পড়াশুনা লাটে তুলে কতদিন হারিয়ে গেছি। সন্ধ্যার আগে দুই বন্ধু ফিরেছি চুপি চুপি। বকা খেয়েছি একসঙ্গে!

অথচ এখন দশটা মিনিট ওয়েট করতে পারলো না। অথবা ইচ্ছে করেই করলো না। অথবা আমাকে একেবারে ভুলে গেছে।

মনে হয় বন্ধু আমার মেয়েকে ইঁদুর দৌড়ে নাবিয়েছে। তারা ধরেই নিয়েছে মেয়ে ডাক্তার নয়তো ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। এক মিনিট নষ্ট হলে যদি ফসকে যায়! ওর থেকে এগিয়ে যায় অন্য কেউ! 

সেজন্য সন্তানের খেলাধুলা, আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে মেলামেশা একেবারে বন্ধ রেখেছে। করেছে পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। ঠাকুমা, দাদু, কাকা, কাকি, জেঠিমা এদের চেনায়নি। এদের কোন দাদা দিদি থাকতেও নেই। খেলার সাথী নেই। 

মানসিক ব্যাধি নিয়ে বড় হচ্ছে ছোটরা। বড় হয়ে তাই মানতে পারছে না অন্যকে। বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা। একা থাকার ঝোঁক।

       

সমাপ্ত


-বাবুরাম_মন্ডল


এমন আরও বাস্তব জীবনের গল্প পড়ুন।