মায়ের ভালোবাসা
আমার ওয়াইফের জন্য একটা শাড়ি কিনবো, তাই শাড়ি দেখতেছিলাম। আমার পাশেই এক ইয়াং ছেলে শাড়ি দেখতেছে। সে বেশ কয়েকটা শাড়ি দেখলো।
দোকানদার খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো ' ভাই আপনি যে শাড়ি কিনবেন তা আমাদের দোকানে নেই। আপনি পাশের দোকানটায় দেখুন।'
আমার জানা মতে এই মার্কেটে সব চেয়ে ভালো এবং দামী শাড়ি এই দোকানেই পাওয়া যায়। ছেলেটা হয়তো তার পছন্দের কাউকে শাড়ি গিফট করবে। গার্লফ্রেন্ড নয়তো অন্য কেউ। আমার কেনা শাড়িটা দোকানদার প্যাক করছিলো সেই ফাঁকে আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম
"ভাই এর মধ্যে একটা শাড়িও কি পছন্দ হচ্ছে না আপনার?
- ভাইয়া আসলে আমার চয়েস করে শাড়ি কেনার অভিজ্ঞতা নেই। দোকানদারকে বললে সে পছন্দ করে যে শাড়িটা দেয় সেটাই নিয়ে যাই। শাড়ি নেওয়ার পরে ভালো মন্দ কিছুই বলে না।
-শাড়িটা কার জন্য নিতে চাচ্ছেন।
- মা! আমার মায়ের জন্য ভালো একটা শাড়ি নিতে চাচ্ছি।
-ওহ আচ্ছা। তাহলে এই গুলো বাদ দিয়ে অন্য শাড়ি দেখতে হবে। কারণ এগুলো যারা ইয়াং তারা পরে থাকেন সাধারণত।
- আসলে আমার মায়ের চকচকে শাড়ি পছন্দ। আমার বাবা বয়স্কদের শাড়ি কিনে দিলে খুবই রাগ করতেন ভীষণ।
- ওহ আচ্ছা বুঝলাম। তাহলে আমি একটা পছন্দ করে দেই?
- আচ্ছা দিন। তাহলে আমার ভালোই উপকার হয়।
কয়েকটা শাড়ি দেখে তার মধ্যে একটা শাড়ি পছন্দ হলো আমার। সেটা দেখিয়ে বললাম 'এটা আপনার কাছে কেমন লাগছে?'
ছেলেটার মুখে উজ্জ্বল হাসি দেখতে পেলাম। হাসি দিয়ে জবাবে বললো...
" এমনটাই খুঁজছিলাম আমি। ভালোই লাগছে।"
ছেলেটা বিল দিতে দিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ দিয়ে বললো " ভাইয়া আসলে জানেন কি আমার মা বেঁচে নেই। বাবা চলে যাওয়ার কয়েকমাস পরে মা'ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।"
ছেলেটার কথা শুনে আমার হার্টবিট কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো। মায়ের জন্য কতটা পাগল হলে মৃত্যুর পরেও আলমিরার তাকে মায়ের শাড়ি গুছিয়ে রাখে নতুন নতুন শাড়ি কিনে।
আমার মা বেঁচে আছেন। তবুও তাকে আমি কবে শাড়ি কিনে দিয়েছি আমার ঠিক মনে নাই। মা বেঁচে থাকতেও মূল্যায়ন করছিনা তার। অথচ আমি নাকি উচ্চ শিক্ষিত সমাজের লোকেরা বলে আমার কথা। আমি নাকি ভদ্র সমাজের লোক।
লেখাঃ Md. Nazmul Huda