নারীর বদলে যাওয়ার গল্প | অবহেলা কষ্টের গল্প

  স্বামীর অবহেলার গল্প

স্বামীর অবহেলার গল্প

আজ ছুটির দিন। বিহান দুপুরে খেয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে একটুখানি সুয়েছে কেবল। এমন সময় তার স্ত্রী "আয়রা" এসে আবদার জুড়ে বললো, 


"বিহান শাড়ী পড়েছি আমি। এই চলো না দু'জন মিলে বাহির থেকে একটুখানি ঘুরে আসি।"


বিহান উল্টো দিকে সুয়ে বিরক্ত হয়ে বললেন, তোমার মতো সারাদিন বাসায় বসে থাকি না আমি, সপ্তাহে একটা দিন ছুটিতে থাকি তাও তোমার সহ্য হয় না আয়রা?"


"ছি! কি বলছো বিহান?আসলে...."


"উঁহু হয়েছে! তোমার সাথে কোথাও যেতে পারবো না আমি। আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে। একটা দিনইতো একটু শান্তি দেও, প্লিজ!" 


আয়রা আশাহত মনটা নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। ছলছল চোখে শখের শাড়ীটা পড়া ছেড়ে  দিলো সেদিন।

.

.

পরদিন রাতে বিহান অফিস থেকে ফিরতেই তার স্ত্রী মুচকি হেসে বললো, "ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি খাবার রেডি করছি বিহান।"


"তুমি খেয়ে নেও। আমি আজ বাহির থেকে খেয়ে আসছি আয়রা।"


"খেয়ে আসছো বিহান? তুমি'তো জানো আমি রোজ তোমার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করি। তোমার সাথে না খেলে আমার পেটই ভরে না, চলো না আমার সাথে অল্প করে খাবে।"


 "প্রতিদিন তোমার এসব ঢঙ আর ভাল্লাগছে না আয়রা! বললাম না, আমি খেয়ে আসছি। সারাদিনটা খে'টে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি আমি। কই একটু রেস্ট করবো, তা না বাসায় ফিরলেই তোমার যওসব আজাইরা আবদার শুরু হয় যায়।"


তীব্র রাগ নিয়ে কথা গুলো বলে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো বিহান। আয়রা মেয়েটা অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বামীর চলে যাওয়া দেখলো কেবল। প্রিয় মানুষটার কথা গুলো তী'রে'র মতো  বিঁ'ধ'লো তার বুকে। কাজ কি শুধু সেই একাই করে,আয়রা করে না? এই যে সকাল থেকে রাত বারোটা অবধি নিজ হাতে সংসার সামলায়। তার শরীরে কি ক্লান্তরা ভর করে না? শত ব্যস্ততার মাঝে প্রিয় মানুষটার কাছে একটু আহ্লাদ, একটুখানি ভালোবাসতে চাওয়া কি খুব বড় আজাইরা আবদার? থাক না, আজ থেকে না হয় নিজের আবদার গুলো গুটিয়ে নিলো মেয়েটা। নিজের ভাবনার মাঝে টুপ করে অশ্রুকণারা গড়িয়ে পড়লো তার গাল বেয়ে। মেয়েটা তড়িঘড়ি করে সেটুকু মুছে নিলো অবলীলায়। সেই রাতটা না খেয়েই সুয়ে পড়লো আয়রা।

অতঃপর একটু একটু করে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করলো মেয়েটা। এখন আর প্রয়োজন ছাড়া বকবক করে না সে। রাতে না খেয়ে কারো জন্য অপেক্ষা ও করে না। ছুটির দিন আসলে স্বামীর কাছে ঘুরতে যাওয়ার বায়নাও ধরে না। বিহানও যেন মুক্তি পেলো।

________


মাস ছ'য়েক পর, বিছানায় চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে বিহান। মাথাটা বড্ড ব্যথা করছে তার। আয়রাকে ডেকে আবদার করে বললেন, "মাথাটা বড্ড ধরেছে গো। একটু মালিশ করে দেও না আয়রা।"


বিপরীতে আয়রা তাড়া দেখিয়ে বললেন, "রান্না ঘরে ভাত চাপিয়ে এসেছি আমি। আমার বড্ড তাড়া বিহান। তুমি বরং ঔষধ খেয়ে নেও, সেরে যাবে।"


বিহান মুখ কালো করে সুয়ে পড়লো। আয়রা এসব দেখেও দেখছে না, রান্না ঘরে চলে গেলো। 


দুপুরে খাবার টেবিলে খাবার সামনে বসে আছে বিহান। এমন সময় আয়রা এসে বললেন,  "কি হলো খাওয়া শেষ করোনি এখনো?"


বিহান মুচকি হেসে বললো, "তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তুমিও বসো আয়রা, আজ এক সাথে খাই।"


"অপেক্ষা করার কি দরকার বিহান? তোমার কত কাজ, সারাদিন কাজ করো তুমি। এখন বরং তাড়াতাড়ি খেয়ে রেস্ট নেও। আর হ্যাঁ, আমি খেয়ে নিয়েছি।"


বিহান আজ যেন নিজের কথা ফেরত পাচ্ছে, তার খুউব কষ্ট হচ্ছে। বিবেক জাগ্রত হলো তার, এভাবেই তো তার বলা কথায় আঘাত পেতো মেয়েটা। আজ অনুশোচনা হচ্ছে, কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেলো। নিজেকে সামলে পুনরায় বিহান আবারো বললেন,


 "আয়রা কতদিন শাড়ী পড়না তুমি,চোখে কাজল দেও না। আজ একটা শাড়ি পড়বে আয়রা? তোমাকে নিয়ে বড্ড ঘুরে বেড়াতে মন চাচ্ছে।" 


"শাড়ী পড়ার এতো সময় আমার নেই বিহান। বিকেলে রান্না করতে হবে আমার। কত কাজ! তোমার ইচ্ছে হলে তুমি একাই যেতো পারো।"


আয়রা চলে গেলো নিজের কাজে। এরপর শত বলেও কখনো কোন আবদার জুড়ে দেয়নি আয়রা। এক ঘরে থেকেও তাদের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব।   শত পেয়েও বিহান অবহেলা করছে, আজ মিস করছে সেই পুরনো মানুষটাকে। দুরত্ব পেয়ে তবেই গুরুত্ব বুঝলো সে।  কিন্তু নারী একবার নিজেকে গুটিয়ে নিলে তুমি শত চেয়েও নারীর ভালোবাসা পাবে না।


বদলে যাবো, বদলে যাবো বলেও অনেক নারী বদলায় না,কালবৈশাখী ঝড়ের মতো জীবনট উল্টো পাল্টা হয়ে গেলেও  তারা বদলায় না।

নারী বদলায় প্রিয় মানুষের থেকে আঘাত পেয়ে, চুপিসারে নিভৃতে। একবার নারী বদলে গেলে তাদেরকে আর ধরা-ছোঁয়া যায় না।নারী বদলে  গেলেই সম্যাসা,নারীর অন্তর বদলাতে বাধ্য করো না।নারী একবার বদলে গেলে সব অধিকার হারিয়ে ফেলবে।নারী বদলে গেলে পুরো পৃথিবীর উল্টো হয়ে গেলেও তারা আর আগের রুপে ফিরে আসবে না!!!


সমাপ্ত


বাস্তব জীবনের গল্প পড়ুন