খুব সুন্দর বাছাইকৃত সেরা গল্প | স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা

 বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

ফাহমিদা আমার অফিসের কলিগ।বয়সেও আমার চেয়ে ছোট আবার আমার জুনিয়র।জুনিয়র সবাই আমাকে 'শাহাদাত ভাই' নয়তো 'শাহাদাত ভাইয়া' বলে ডাকে কিন্তু ফাহমিদা আমাকে ডাকে 'শাহাদাত স্যার'।আমি আমার জুনিয়রদের নাম ধরেই সম্বোধন করি।


ফাহমিদাকে কখনো ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তে দেখি নি।সে সবসময়ে সেলোয়ার কামিজই পড়ে।কিন্তু তার সেলোয়ার কামিজ পরার ধরণটাও আকর্ষণীয়।দেহের সাথে মিশে থাকা কামিজের উপরেও তার দেহাবয়ব অস্পষ্ট বোঝা যায়।


বেশ কিছুদিন ধরে ফাহমিদা আমার আশপাশ ঘুরছে।আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। আমার সাথে কথা বলার সময়ে গা ঘেষে দাঁড়ায়। অনেকবার ফাইল দেয়া নেয়ার সময়ে হাতও ধরার চেষ্টা করেছিল।ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ভালোই লাগছে।শুধু আমার কেন যে কোনো পুরুষের ভালো লাগবে কোনো নারী তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলে।


আজ ফাহমিদা আমায় ডিনারের অফার দিয়েছে।বেশ আনন্দের সাথে ঘরে ফিরলাম তৈরি হতে। বাসায় আসতেই দেখি আমার স্ত্রী সিরাত মায়ের পা টিপে দিচ্ছে।আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে আলমারির সামনে দাঁড়ালাম,কি পড়ে যাবো? 


সিরাত আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, 

-- "কোথাও যাবে?" 


আমি হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে বললাম, 

-- "স্যারের সাথে ডিনার করবো, সাথে একটা প্রজেক্টের ব্যাপারে কথা বলবো।" 


সিরাত আলমারির সামনে এসে হালকা নীল রঙের একটা শার্ট আমার হাতে দিয়ে বললো, 

-- "এটা পড়ে যাও। তোমাকে মানাবে।"


আমি কিছু না বলে তার হাত থেকে শার্টটা নিলাম।কেমন কেমন যেন লাগছে।বিবাহিত হয়ে পরনারীর সাথে ঘুরতে যাচ্ছি আর আমার স্ত্রী আমায় কাপড় পছন্দ করে দিচ্ছে।


তৈরি হয়ে বেড় হতে যাবো এমন সময়ে সিরাত আমার কালো কোর্টটা এনে বললো, 

-- "এটা পড়ে নাও বাহিরে অনেক ঠান্ডা।" 


আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।সে আমাকে কোর্ট পড়িয়ে দিয়ে আমার মেয়ে সায়মাকে খাওয়াতে নিয়ে গেলো।আমি সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।দেখলাম আমার মেয়েটা খেতে চাচ্ছে না।সে অনেক কষ্টে তার মুখে এক লোকমা তুলে দিচ্ছে।এরই মাঝে মা ডাক দিলেন তাকে পানি দিতে।সিরাত উঠে মাকে পানি দিয়ে আবার সায়মাকে খাওয়াতে শুরু করলো।নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে।যে মহিলা আমার সংসার সাজাতে গিয়ে নিজের যত্ন নিতে ভুলে গেছে আমি তাকে ঠকাতে যাচ্ছিলাম।যে মহিলা নিজেকে অবহেলা করে আমার বাচ্চাদের দেখাশুনা করে তাকে আমি ঠকাতে যাচ্ছিলাম।সিরাত কিছু কিছু স্ত্রীদের মতো কখনো বলে নি তোমার বাবা মা কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে যাও বরং তাদের নিজের বাবা মায়ের মতো সেবা করার চেষ্টা করেছে।মা'ও সিরাতকে বেশ ভালোবাসেন।তাদের মাঝে কখনো দুই কথা হলে নিজেরাই মিটমাট করে নেয় কখনো কেউ আমাকে নালিশ দেয় নি।এমন সময়ে ফাহমিদার কল আসলো৷আমি কিচ্ছুক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে কলটা কেটে মোবাইল বন্ধ করে দিলাম। 


জুতা খুলে রুমে ঢুকতেই সিরাত বললো, 

-- "যাও নি এখনো? কিছু লাগবে?" 


আমি বললাম, 

-- "ডিনার কেন্সেল হয়ে গেছে।" 


-- "আচ্ছা বসো।তোমায় ভাত দিচ্ছি" 


বলে সিরাত উঠতেই আমি তার হাত ধরে বললাম,

-- "তুমি খাইয়ে দাও?" 


সিরাত মুচকি হেসে আমার মুখে এক লোকমা ভাত তুলে দিলো। আমার মেয়ে সায়মা কান্না শুরু করে দিলো।তার ভাত কেন আমাকে খাইয়ে দিয়েছে।স্ত্রী-মেয়ের সাথে খুনসুটি করতে সময়ে পাড় করে ফেললাম।

.

.

পরদিন অফিসে ঢুকে সোজা বসের রুমে গিয়ে বললাম, ট্রান্সফারের কথা।বস উত্তর দিলেন, আমাকে ট্রান্সফার করা সম্ভব না।আমি রিজাইন করে চলে আসলাম।অফিস থেকে বের হতেই চিন্তা করতে লাগলাম এই ব্যস্ত শহরে নতুন চাকরী কিভাবে জোগাড় করবো।এমন সময়ে আমার বন্ধু রিদওয়ান কল দিয়ে বললো, তার অফিসে নাকি একজন মার্কেটিং ম্যানেজারের প্রয়োজন। আমার পরিচিত কেউ থাকলে ইন্টারভিউর জন্য পাঠাতে।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইন্টারভিউর জন্য পথ ধরলাম আর মনে মনে ভাবলাম, 


              " উদ্দেশ্য সৎ থাকলে সৃষ্টিকর্তা কাউকে নিরাশ করেন না! "


(সমাপ্ত)

ছোটগল্পঃ বিশ্বস্ততার_ফলাফল

কলমেঃ নাজিফাহ_সুবহা

--------------------------------------------

সমাপ্ত-------


এমন বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।