গল্প:আম্মুর সাথে থাকা জ্বীন | রহস্যময়ী নারী

 রহস্যময় ঘটনা

রহস্যময় ঘটনা

আম্মুর সাথে থাকা জ্বীন...☠️👽

পর্ব: ০১


২০০৯ সাল আমি তখন ৬ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। আমি আমার পরিবার এর সাথে মীরপুর থাকতাম। আমরা নতুন একটা ৭তলা বিল্ডিং বাসায় ভাড়া উঠি। আর আমরা ঠিক ৭তলা তেই থাকতাম। আমার পরিবারে আমার বাবা-মা আর আমার বড় বোন আর আমি।সবকিছুই সুন্দর চলছিলো কয়েক দিন। সবার প্রথমে আমার বড় বোন এক রাতে আওয়াজ পায় কে যেনো সিড়ি তে উঠানামা করতেছে।আমার বোন তেমন ভয় পায় না।কারন ও সবসময় নামায পড়ে আর আয়াতুল কুরসী পড়ে শরীর বন্ধ রাখে। তারপর এমন করে আমরা সবাই আওয়াজ পেতে থাকি।এখন শুধু আর কেউ উঠানামা করে এই শব্দ এর সাথে নূপুর এরো আওয়াজ হওয়া শুরু করলো। আর ঠিক রাত ১টার পর এমন হয়। বাবা যখন গেট খুলে, দেখে কিছুই নেই।

প্রথমে আমরা ভাবতাম শুধুমাত্র আমরাই হয়তো এই আওয়াজ পাই। আমাদের ঐ বিল্ডিং ৫ম তলার ফ্লাটে যেই পরিবার থাকতো তারা ছিলো বেহারি,তারাও নাকি সবসময় আমাদের মতই আওয়াজ পায় এবং তারাও যখন দরজা খুলে দেখে কিছুই নেই। সবচেয়ে মজার বেপার হলো আমরা ৭তলায় থাকতাম যার ফলে সিড়ির বারান্দার মতো যেই যায়গা ছিলো  সেদিকে আমাদের পড়ার টেবিল ছিলো তো মাঝে মাঝে দেখতাম বইখাতা সবকিছু উলট পালট হয়ে থাকতে। আর যেই বাড়িতে উঠেছিলাম সেই বাড়ির  মালিক থাকতো বিদেশ তার পরিবার নিয়ে। আর মালিকটা ছিলো হিন্দু। আর বাড়িটা তে কখনো মিলাদ পড়ানো হয়নি। বাড়ির যে ম্যানেজার ছিলো সেও ছিলো হিন্দু। তার সাথে আমাদের ভালো খাতিল ছিলো।তার মাধ্যমে আরো অনেক কিছু জানতে পারি।এই বাড়ি করার সময় ৪জন শ্রমিক মারা গিয়েছিল কোনো কারণ ছাড়াই কাজ করার সময়। আর ম্যানেজার সপ্ন দেখেছিলো ২বার তাকে নাকি বলা হয়েছিলো মিলাদ পড়াতে কিন্তু তারপর ম্যানেজার বাড়ির  মালিককে বল্লেও মালিক মিলাদ পড়ায়নি। ৫ম তলার সেই পরিবার তারাও ফ্লাট ছেড়ে দিয়েছিল এসব কারনে। আর আমরাও কয়েকমাস পর ঐ বাসা ছেড়ে দেই তার কারণ অভাব লেগেই থাকতো সবসময় কেমন জানি ঐ বাসায় উঠার পরেই। এই কারনেই মূলত ছেড়ে দেওয়া এবং মিলাদ না পড়ানোর কারনে। এইজন্য হয়তো নতুন কোনো বিল্ডিং বা কিছু করলে মিলাদ পড়িয়ে নিতে হয়।


আমি তখন ৫ম শ্রেণীতে পড়ি। আমার বাবা একজন সরকারী চাকুরীজীবি। আমার বোন বড়। আর আমার মা গৃহিণী।সবকিছু ভালোই চলছিলো। এমন দিন কখনো আসবে তা হয়তো আমরা কল্পনা করিও নাই।আমরা তখন থাকতাম মীরপুর কালশীর ই-ব্লক ৭নং লাইনের ১৬বা১৭নং বাসাতে নিচ তলার ফ্ল্যাটে (বাসা নং আমার সঠিক মনে নেই)।আমরা গিয়েছিলাম নানির বাসায় সবাই।নানীর বাসা কাছে হওয়াতে সপ্তাহে অনেকবার যাওয়া হতো।আমার নানুর নিজেদের বাড়ি মীরপুরেই, সেকশন-৭ রোড নং-৫ বাসা নং-***। তো ঐদিন সবাই কথা বলতে বলতে নানির বাসায় অনেক সময় হয়ে যায়।রওনা দেওয়ার আগে নানি আর মামারা বলে রাত ভালোই হয়ে গিয়েছে বাসায় যেয়ে আবার খাবি তাই রাতের খাবার এদিকেই খেয়ে যা।তো ডিনার করতে করতে ১১টার বেশি বেজে যায়।বাবা রিকশা নিতে চাইলেও আম্মু মানা করে,বলে মাত্র খেয়েছি হেটে হেটে যাই ভালো লাগবে আর আমি ও বোন দুইজন সায় দিলাম।তারপর হাটতে লাগলাম তখন বাবা বললো মেইন রোড না দিয়ে ধ-ব্লক দিয়ে ঢুকে পড়ি, তাড়াতাড়ি হবে। রাত মনে হয় তখন ১২টা বেজেও গিয়েছে।


(আগে বলে নিই মীরপুর যারা থাকেন তারা অনেকই ধ-ব্লক চিনেন।এখন মীরপুর অনেক বেশী উন্নত হয়েছে কিন্তু আগে ধ-ব্লক ছিলো ময়লা আবজনা বেশি আর রাস্তার দু-পাশেই ড্রেন ছিলো। আর জায়গাও খারাপ ছিলো।)


আমাদের তখন খেয়াল ছিলো না,আমরা যে নানির বাসায় রাতের খাবার খেয়েছিলাম তখন ইলিশ মাছ খেয়েছিলাম।আর খাওয়ার শেষেই তারাতারি রওনা হয়েছিলাম।

[অনেকই জানেন শুটকি ও গরুর গোশত ও ইলিশ মাছ এই জিনিস গুলো সাদ হলেও অনেক সমস্যা হয়,আর সাথে সাথে খেয়ে কোথাও বের হওয়া ঠিক না কোনো নিদিষ্ট সময়ে]


তারপর সবাই বাসায় পৌছে গেলাম।সবাই অনেক ক্লান্ত ছিলাম। যার কারনে বিছানা গুছিয়ে সবাই শুয়ে পরি। 


রাত তখন বাজে ১ঃ৩৫/৪০ এর মতো। আমার আম্মু হঠাৎ চিল্লিয়ে উঠে আর নিজের দাতগুলো কেমন যেনো করতে থাকে। আমার বড় আপু সাথে সাথে লাইট অন করে তারপর আমার আম্মুকে দেখে সবাই চমকে উঠি।


লাইট অন করার পর যা দেখলাম তার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আম্মুর চোখ কেমন উল্টিয়ে যাচ্ছিলো আর দাতের সাথে দাত লেগে যাচ্ছিলো,আর উপরের দাতের সাথে নিচের দাতগুলো জোরে জোরে বারি খাওয়াচ্ছিলো।আমার বাবা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না।আমি আমার আম্মুর এই অবস্থা দেখে কেদে দেই,ভয় পেয়ে যাই,এমন অবস্থা আমি কখনো দেখিনি আমার আম্মুর।আমার বোন এর সাহস ছিলো অনেক।কারন ও সবসময় নামায আর কোরআন শরীফ পরতো ছোট থেকেই।


 আমার আম্মুর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো আর কোনো কথাই বলতে পারতেসিলো না, শুধু বুঝাচ্ছিলো হাতের ঈশারা দিয়ে যে তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমার বড় বোন সাথে সাথে পাশের ফ্ল্যাট এর তাদের কাছে গেলো তেল আনার জন্য আর বললো আম্মু এমন করা শুরু করছে,তারাও আসলো উনারা এসে এই অবস্থা দেখে উনারাও আতঙকিত হয়ে উঠে। তারপর উনারাও সাহায্য করতে থাকে এক আন্টি আম্মুর পা তেল দিয়ে ডলতে থাকে তার কারন পা একদম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো।আর আমার আপু পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করে যেনো আম্মুর দাত আটকে না যায়।বাবা আবার এর মধ্যে দুধ গরম দেয়।


বাবা চিন্তা করে হয়তো দুধ খাওয়ালে গরম করে শরীলটা একটু ভালো হবে।তখন কারো মধ্যে এইটুকু খেয়াল আসে নাই হয়তো আম্মুর বাতাস লাগছে।দুধ গরম করার পরে আম্মুকে বসিয়ে কষ্ট করে খাওয়ালে তারপর আম্মুর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।এখন শুধু চোখ আর দাত না একসাথে পা দিয়ে খাটে জোড়ে জোড়ে বারি দিতে থাকে আর শক্তি দেখাতে থাকে।দুইজন মিলে পা ধরে রাখার পরেও কেউ আম্মুকে দমাই রাখতে পারতেসে না। হাত-পা সব জোরে জোরে লাফাতে থাকে আর চোখ গুলো বড় বড় করে উল্টিয়ে রাখে আর দাতগুলো কিড়মিড় দিয়ে রাখে।তখন পাশের বাসার ফ্লাট এর আন্টি বলে ভাই ভাবির অবস্থা অনেক খারাপ হয়তো খারাপ কিছু আছর করছে তাড়াতাড়ি আপনার শশুর বাড়ির লোকজন দের খবর দেন।


রাত ২টার বেশি তখন আমার দুই মামা আর আমার দুই খালামনি আর আমার এক খালামনির খালু আর তাদের বাসায় ভাড়া থাকে এক আঙকেল আসছিলো। উনারা হেটে আসে কারন রাস্তায় তারা কিছু পায় নাই কোনো রিকশা ছিলো না।উনারা এসে এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায়।আমিতো শুধু কেদেই যাচ্ছিলাম আম্মুর জন্য। আমি একটুও আমার আম্মুর সামনে যাই নি ভয়ে।পরে বড় মামা বললো এদিকে রেখে লাভ নাই।ওরে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চলো। তখন আমার খালামনি আর বাবা দুইজন মিলে সূরা পরে ফু দিয়ে কিছুটা ঠিক করার চেষ্টা করলো যেনো কোনাভাবে নেওয়া যায়।কথায় আছে বিপদ যখন আসে সব দিক দিয়ে আসে।মামা বাইরে কোনো কিছুই খুজে পাচ্ছিলো না,পরে ভাবলো হেটেই যাবে সবাই একসাথে। তখন আমার আম্মুকে মাঝখানে রাখা হলো আর সবাই হাটা ধরলাম।সবাই হাটছি তখন আম্মু হঠাৎ আমার বোন কে জিজ্ঞেস করে কে তুমি?আমার বোন তখন বলে মা তুমি আমাকে চিনো না আমি মুন্নি।


 তখন আম্মু বলে কে মা তোমার আমার তো কেউ নাই,আর তুমি আমাকে এভাবে শক্ত করে ধরে রাখছো কেন হাত ছাড়ো আমিতো আর চলে যাবো না,আর মুন্নি তুমি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর আর এভাবে কেউ শক্ত করে ধরে।আমার বড় মামা তখন বলে কথা কম বল তুই তোর নিজের মেয়ে রে চিনোস না হাটতে থাক।এভাবে সবাই হাটতে হাটতে মেইন রাস্তায় যাওয়ার আর অল্প রাস্তা বাকি তার মধ্যেই আমরা এমন জায়গায় তখন যার ডান পাশ দিয়েই গলিতে ঢুকলে ধ-ব্লক এর রাস্তা কিন্তু আমরা সেদিক দিয়ে যাবো না, আমরা যাবো মেইন রোড দিয়ে।তখনি আম্মু বলে উঠে কিরে মেইন রাস্তা দিয়া নিবি তাই না কিন্তু আমিতো সেদিক দিয়ে যাবো না,এই গলি দিয়ে ঢুক সবাই..................


(আমরা তখন ছিলাম ঠিক শহীদ জিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ এর সামনে রাস্তাতে, যারা মীরপুর থাকেন তারা অবশ্যই চিনেন আর এই এই কলেজের সামান্য আগেই ডান পাশ দিয়ে গলি ঢুকেছে ধ-ব্লক এর)


বিঃদ্রঃ (আমার বাবার সবচাইতে বড় ভুল ছিলো ঐ সময়ে আম্মুকে গরম দুধ খাওয়ানো যার ফলে ঐ জিনিসটা আম্মুর রক্তের সাথে মিশে গিয়েছিলো।যদিও বাবা কিছু বুঝে উঠতে পারেনি তখন তাই এমন বড় ভুল টা হয়েছিলো, যার জন্য এই ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে)


জানতে পারবেন সবকিছু। আমি যা যা কিছু লিখবো এই টপিক টা নিয়ে তা একটুও বানিয়ে লিখবো না কোনোকিছু।কারন সবকিছুই সত্যি ঘটেছিলো।


আম্মুর সাথে থাকা জ্বীন...☠️👽

পর্ব: ০২


৪/৫ জন মিলেও তখন আম্মুর সাথে শক্তি দিয়ে পারছিলো না রাস্তার মধ্যেই এমন অবস্থা।সে ঐ রাস্তা দিয়ে ঢুকবেই,তারপর অনেক হুরাহুরির পর জোর করে সবাই মিলে শক্ত করে ধরে হাটা শুরু করলাম সবাই।মেইন রাস্তা দিয়ে সবাই যেতে লাগলাম।তখন আম্মু একদম স্বাভাবিক, রাস্তায় আর কোনো সমস্যা করেনি।আমরা সবাই নানির বাসায় পৌছে গেলাম।আমার নানিরা থাকতো তিন তলায়।আম্মু সাথে সাথে তখন অজ্ঞান হয়ে গেলো।তার ৫মিনিট পরেই আম্মু চোখ খুললো আবার অমন করতে লাগলো আর বলতে লাগলো অনেক পেট ব্যাথা করছে আর এমন মনে হচ্ছে ভিতরে আগুন জলছে।নানি সাথে সাথে পানি পরা দিলো তাও কোনো কাজ হচ্ছিলো না আর কেমন করে যেনো হাসতেছিলো।আমি তখন থেকে শুধু কেদেই যাচ্ছিলাম আমার মা হঠাৎ এমন করা শুরু করলো কেন আর অনেক ভয় পেতে লাগলাম।আমাদের নানির বাসার নিচে একজন হুজুর থাকতো এত রাতেই তাকে ডাক দেওয়া হলো।তিনি আসার সাথে সাথে আম্মু সালাম দিলো আর আমার খালাকে বললো উড়না টা ঠিক করে দে আর আমার মাথায় ঘোমটা দিয়ে দে।তারপর আম্মু হুজুর কে বললো আপনি আসছেন কেন আমার কিছু হয়নি তো।হুজুর বলে আমি এভাবেই আপনাকে দেখতে আসছি।তারপর হুজুর আমার বাবাকে বলে কনি আঙুল ধরতে তারপর উনি হয়তো সূরা ৪কুল আর ফাতিহা পরে ফু দেয়।তারপর হঠাৎ আম্মু ঐ হুজুর কে জোরে খামছি মেরে বসে এতে করে হুজুরের হাতে রক্ত পরা শুরু করে।আম্মু এমন খামছি দেয় চামড়া কিছুটা উঠে যায় হুজুরের আর আম্মু তখনই আমার মেজো খালামণি কে বলে পিড়ি টা দেতো পিড়ি দিয়ে কয়টা বাড়ি দিয়া ওর মাথাটা ফাটাইয়া দেই,কত বড় সাহস অয় আমারে ফু দিতে আসে,তুই কী ভাবসোস আমারে ফু দিয়ে সরাতে পারবি? আমি ওর রক্তের সাথে মিশে গিয়েছি।ভালো ভালোই এদিক থেকে চলে যা নাইলে তোর অবস্থা খারাপ করে ফেলবো।আম্মু কে তখন আবারো ৩/৪জন মিলেও শক্তি দিয়ে পারছিলো না আটকাতে। তখন বড় মামা বুঝতে পারে এইসব দিয়ে কোনো কাজ হবে না এবং হুজুর কে চলে যেতে বলে কারণ তিনি বাচ্চাদের পড়ায় আরবী এসব কাজ কখনো করেনি আগে আর এভাবে যদি ক্ষতি হয় এজন্য মামা বলে চলে যেতে আর আমার ছোট মামা স্যাভলন দিয়ে দেয় ঐ জখম জায়গায়।হুজুর চলে গেলে আম্মু শুধু বলতে থাকে তার পেটের ভিতর কেউ মনে হয় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে এমন মনে হচ্ছে।সবাই আম্মুর সাথে আছে কারো চোখে ঘুম নাই সবারি অপেক্ষা কখন ফজরের আযান দিবে।ফজরের আযান দেওয়ার সাথে সাথেই আম্মু অজ্ঞান হয়ে পরে তারপর পানি ছিটালে আম্মুর জ্ঞান ফিরলে বলে উঠে আমার বাবাকে কি গো আমরা এই বাসায় কেন? কখন আসলাম?আমরা না আমাদের বাসায় চলে গিয়েছিলাম?আম্মুর কী হয়েছিলো আম্মু নিজেও বলতে পারে না আর বলতে থাকে শরীর কেমন কেমন যেনো ব্যাথা করছে,এই বলে আম্মু ওয়াশরুমে যেয়ে অযু করে এসে নামায পড়ে।আমার মামা আর আন্টিরাও কিছু বলে নাই তার সাথে কি হয়েছে রাতে।তারপর সকাল বেলা আম্মু নাস্তা বানাতে থাকে তার বোনদের সাথে সবার জন্য। এমন মনে হয়েছিলো যেনো আম্মুর কিছুই হয়নি।আম্মু আমার জন্য পরোটা বানিয়ে ডাক দিলে খেতে আমি তখনও আমার আম্মুর কাছে যাইনি ভয়ে।আমার আম্মু যতই ডাক দেয় না কেনো আমি যাই না আমি ছোট ছিলাম তাই ভাবতাম আম্মুর সাথে ভূত আছে।ছোট মামা আমার জন্য পাউরুটি নিয়ে আসে আমি তাই খেয়ে নিই।আমার আম্মু তার মা কে বলতে থাকে কি গো মা আমার কী হয়েছে আমার ছেলে আমার কাছে আসে না কেনো।নানী বলে কিছুই হইনি ছোট মানুষ তো তাই এমন করতেছে।তখন আম্মু আমার কাছে এসে বলে বাবা আসো আম্মু খাওয়াই দেই তোমার জন্য মচমচ করে পরোটা বানাইসি। আমি জোরে কান্না শুরু করে দেই,আমার মনে হয় আমার আম্মুর সাথে ভূত আছে আমাকে খেয়ে ফেলবে এতটাই ভিতূ ছিলাম।আমার মেজো খালামণি এসে আমাকে বুকে নেয় আর আমার কান্না থামায়।


[আমি ছোটবেলা থেকে এখন যে গল্প লিখছি এখনো আমি আমার আম্মুর হাতে খাই নিজের হাতে খেতে পারি না তেমন।কিন্তু ঐ সময় আমি আর আম্মুর হাতে খেতাম না আর আমার আম্মুর থেকে আমাকে অনেকটাই দূর করে দেয় যার জন্য দায়ী ছিলো আমার ভয়।আমার আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছিলো হয়তো কারণ আমিই তার একমাত্র ছেলে।আমাকে তখন আমার খালামনিরা বা আমার নানী বা আমার বড় মামী খাওয়াই দিতো]


আমার বড় মামা আর আমার বাবা দুইজনেই সরকারী চাকুরীজীবি। আর আমার আম্মুর ফেমিলি বেশিরভাগ সবাই সরকারী চাকুরীজীবি।আম্মু সারাদিন ঠিকঠাক মাগরিব আযান এর পর আম্মু নামায পড়ে উঠলো তার কিছুক্ষণ পর বলা শুরু করলো নানিকে,মা আমার কেমন জানি লাগতেছে অনেক পেট ব্যাথা করতেসে এটা বলার পরপরই আম্মু চিল্লানি দিয়ে উঠলো আর বলতে থাকলো মা আমার তলপেটে পানি দাও মনে হচ্ছে ভিতরে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। নানি তার পড়া পানি দিতে থাকে তাও কোনো কাজ হচ্ছিলো না।বড় মামা তখন ছোট মামাকে বলে উনার চিনা মীরপুর মিল্কভিটার পাশেই মল্লিকা এলাকা আছে ঐ মসজিদের ঈমাম কে নিয়ে আসতে উনি এসব ঝাড় ফোক করে থাকেন।ছোট মামা তাড়াতাড়ি গিয়ে নিয়ে আসে।ঐ হুজুর আমাদের নানির পরিবারের সবার সাথেই পরিচিত,তিনি তখন মল্লিকা মসজিদের ঈমাম ছিলেন।তিনি আসার সাথে সাথে আম্মু একদম সুস্থ, যেনো কোনো কিছুই নেই।উনি আসার পর অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করে দেখে যে আগের মত হয় কিনা তারপর দেখে কিছুই না আর আসেও না।তখন উনি চলে যায় কারণ তার মসজিদে এশার নামায পড়াতে হবে এবং উনি বলে যায় কোনো সমস্যা হলে ফোন দিও আমি দরকার হলে এশার নামাযের পর আসবো।উনি চলে যাওয়ার পর আম্মু আবার ওমন শুরু করে,আমার বাবা আর মেঝো খালামণি ফু দিচ্ছিলো তাও ৫মিনিট এর মতো ঠিক থাকে আবার শুরু হয়।বড় মামা আবার ফোন দেয় হুজুর কে উনি বলে এশার নামায টা পরিয়ে তারপর আসবে।উনি আসার পর দেখে আম্মু আবার ঠিক কোনো কিছুই নেই।তখন উনি বলে কিরে ভান ধরছিস আমাকে দেখে, এখন চলে গিয়েছিস এটা ভেবে আমি চলে যাবো তারপর আবার কষ্ট দিবি।তারপর হুজুর আমার বাবাকে বলে জামাই বাইরের থেকে গরুর গোশত কিনে আনো তো আজকে ওরে কাচা গরুর গোশত খাওয়াবো দেখি অয় মুসলমান নাকি হিন্দু।তখনি আমার আম্মুর সাথে থাকা ঐটা ঈশারা দিয়ে না করে এতে করে হুজুর বুঝে যায় আম্মুকে যেটা ধরেছে সেটা হিন্দু।আমার নানী বলে উঠে গোশত কিনতে বাইরে যাওয়া লাগবে কেনো আমিতো রান্নায় বসাইছি।ঐদিক থেকে নিয়ে আসবো নাকি।হুজুর বলে উঠে দাড়ান আপা আগে জিজ্ঞাসা করি ও কী ভালো ভালোই যাবে নাকি ওকে গরুর গোশত খাওয়াবো। হুজুর নাম জিজ্ঞাসা করে অনেকবার কিন্তু কিছু বলে না তখন হুজুর বলে কিরে তুই কী বোবা নাকি ভান ধরেছিস। তারপর নানীকে বলে শুকনা মরিচ পোড়া দিয়ে আনতে।নানী আনার পর শুকনা মরিচ নাকের সামনে ধরলে তা সয্য করতে পারে না। তখন ঐ শয়তান নিজের নাম না বলে আম্মুর নাম ই বলতে থাকে।তখন হুজুর রেগে যায় নারে তোর সাথে ভালোভাবে ব্যবহার করে লাভ নাই আর নানীকে বলে আপা রান্না করা গরুর গোশত নিয়ে আসেন।নানী নিয়ে আসে তারপর বাবা কে বলে শক্ত করে হাত টা ধরো দুইটা আর খালামণিকে বলে হা করাতে তখনই কথা বলে উঠে আর নিজের নাম বলে আর আসলে আমার নাম টা মনে নেই শুধু এটা বলেছে ওরা হিন্দু ওরা দুই ভাই আর ওদের মা হলো কালী।তখন হুজুর বলে আচ্ছা তোরা হিন্দু কিন্তু তোর তো কোনো ক্ষতি করেনি ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে যা তারপর বলে যে চলে যাবে, তখন হুজুর বলে আচ্ছা তোরা যে যাবি তার প্রমাণ কী অনেক গুলো জুতা আছে এইদিক থেকে যেকোনো একটা মুখে করে নিয়ে ফেলে যাবি নাকি ওর জামাই দুই পা ফাক করে দাড়াবি তার নিচ দিয়ে যাবি। দ্বিতীয় টায় রাজি হয় তখন বাবা পা দুটো ফাক করে দাড়ায় তারপর হয়তো চলে যায় তখন আম্মু আবার অজ্ঞান হয়ে পরে।তারপর হুজুর পানি পড়া আর তেলপড়া দিয়ে যায় বলে আর কিছু হবে না। তারপর উনি চলে যায়।আম্মু ঘুমিয়েই থাকে।আর সবাই ঘুমিয়ে পরে খাওয়া দাওয়া করে।রাত বাজে ২টা আম্মু আবারো চিল্লিয়ে উঠে..............


{আমার নানী খুবি সাহসী।আমার নানী খুবই পরহেজগার। আমার নানী হজ্জ করার আগের কাহিনী। আমার নানীকে ধরতে গেলে মীরপুর ৭এর সবাই চিনে। আমার নানী মৃত মহিলাদের লাশ গোসল করিয়ে থাকে। আমার নানী লাশ গোসল করানোর সময় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন অশুভ কিছুর তা নিয়েও আমি একদিন সময় করে লিখবো। আর আপনারা সবাই আমার নানীর জন্য দুয়া করবেন সে যেনো আরো অনেক বছর আমাদের সাথে বেচে থাকে}


(আমি ঐদিন রাত থেকে আমি আমার আম্মুর কাছে যাইনি অনেকদিন।আমার সবকথাগুলো এখনো মনে আছে।আম্মু কাদতো আমাকে বুকে নেওয়ার জন্য,সবাই মিলে আমাকে বুঝালেও আমি আমার আম্মুর কাছে যেতাম না,বাবাকে ধরে শুয়ে থাকতাম অনেক ভয় কাজ করতো,বাবাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরতাম মনে হতো সবসময় আমাকে হয়তো আমার আম্মুর ভূত সাথে করে নিয়ে যাবে)


সবার সাথে সাথে ঘুম ভেংগে যায়, আম্মুর আবারো ওমন অবস্থা এবার আরো বেশি রাগ দেখাচ্ছে আম্মুর সাথে থাকা জ্বীনটা এবার যেনো আরো বেশি রাগ দেখাচ্ছে আর বলছে আমাকে তাড়াবি তাই না দেখবোনে কীভাবে তাড়াস আর আম্মুকে আরো বেশী কষ্ট দিতে থাকে,এবার আরো শক্তি বেশি দেখাতে থাকে।বড় মামা যে হুজুর কে ফোন দিয়ে আনবে ভাবলো একটা মানুষকে এতো রাতে আনলে খারাপ দেখায় তার কারণ সবারি বিশ্রাম প্রয়োজন আছে।তারপর আম্মুর ঐটা বলে উঠে শফিক আম্মুর কাছে আসো তুমি এত ভয় পাও কেনো, আমি তোমাকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো তারপর হাহাহা করে হাসে আর বলে ভয় পাওয়াই দিলাম ছেলেটাকে।


আমি এই কথা শুনে তখন আমি আর ভয়ে আমার আম্মুর দিকে আর তাকাই না আন্টিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকি। ওর এই কথা শুনে সবাই অবশ্য ভয় ও পেয়ে যেয়ে তখন নানি আবার সাথে সাথে ওযু করে আমাকে একটা কাইছনি আমার হাতে বেধে দেয় কী যেনো পড়ে।

(কাইছনি বলতে আসলে কালো সুতা/কালো কায়তন কে বুঝানো হয়)


আমার বাবা আর আন্টি মিলে অনেক বুঝাতে থাকে দেখ এভাবে কষ্ট দিস না, তোর এমনভাবে কষ্ট দেওয়াতে আমাদের সবারি অনেক কষ্ট হচ্ছে।তোর কী লাগবে বল আমরা তোকে তাই দিবো তাও তুই ছেড়ে দিয়ে চলে যা,এরপরেও যাচ্ছিলো না উলটা আমার আম্মুকে শুধু কষ্ট দিয়েই যাচ্ছিলো। তারপর আমার বড় বোন আর ছোট মামা মিলে আম্মুর দুই পাশে কোরআন পড়তে থাকে তখন কিছুটা আম্মুর কষ্ট কম হয় কিন্তু যখনই আবার কোরআন শরীফ পড়া বন্ধ করে তখন আবার ওমন শুরু করে সবাই বুঝতে পারে এটা হয়তো আবার ফজর এর আযান এর সাথেই যাবে।সবারি অপেক্ষা আবারো ফযর আযানের,আবার কারো চোখে ঘুম নাই।ফযর এর আযান দেওয়ার সাথে সাথে আম্মু আবারো ঠিক এবারো যেনো কিছু হয়নি তার কিছুই খেয়াল নেই।সকালে আবারো সারাদিন ঠিকঠাক আর মামা ফোন করে হুজুর কে বলে রেখেছে সন্ধ্যার পর আসতে।সন্ধ্যার পর আবার ওমন একই সবকিছু। 

হুজুর আসে আর বলে কীরে তুইতো মনে হয় ভালো না রে, ভেবেছিলাম তুই তোর কথা রাখবি কিন্তু কথা রাখলি না,আমার সাথে ওয়াদা করে গেলি আবার আসলি আসলে তোরা শয়তান এর কোনো ভরসা নাই।তুই কী আসলে কিছু চাস ওদের থেকে, কী চাস বল তাও তুই চলে যা কিন্তু আর ফিরে আসবে না সেই ওয়াদা করবি আর ধোকা করবি না।


আম্মুর সাথে থাকা সেটা বলে উঠে একদামে একটা খাসি কিনে সেটা আম্মুর নামে বিলিয়ে দিতে তাহলে একেবারে চলে যাবে আর আসবে না।


তখন হুজুর বলে আচ্ছা দিয়ে দিবো কিন্তু তুই ওয়াদা করবি তুই আর কখনো ফিরে আসবি না আর। 


 মা কালির কসম ও খেয়ে বলে আর আসবে না।আর রাতেও কোনো জ্বালা যন্ত্রণা করবে না।


তারপর হুজুর বলে কোনদিক দিয়ে যাবি বল আর কী চিহ্ন দিয়ে যাবি তখন বলে ও যাওয়ার সময় আমার মামার জুতা নিচ তলার সিড়িতে রেখে যাবে।তারপর ঠিকি চলে গিয়েছিলো আর ছোট মামা তার কিছুক্ষণ পরেই গিয়ে দেখে আসলেই জুতা রেখে গিয়েছে।


ঐদিন রাতে আম্মুর আর কোনো সমস্যা হয়নি। তারপরের দিন সকালে আমার বড় মামা বাজার থেকে একদামে একটা খাসি নিয়ে এসে বিলিয়ে দেয় আমার আম্মুর নামে গরীব মানুষদের।


তারপর আমরা আরো একটাদিন নানুর বাসায় থাকি।তারপরের দিন আমরা আমাদের নিজেদের বাসায় এসে পড়ি।এভাবে ৪/৫দিন ভালোই যাচ্ছিলো,তারপর এভাবেই আমার বাবা-আম্মুর সামান্য কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো কিন্তু আম্মু সামান্য এই বেপার নিয়ে হুদাই বাবার সাথে ঝগড়া করতে থাকে তারপর হঠাৎ আম্মু এক হাতে খাট উসকিয়ে ধাপ করে তারপর বাবাকে বলতে থাকে তোর কত বড় সাহস তুই আমার সাথে তর্ক করিস এটা বলে আম্মু সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়।আমার বাবা অবাক হয়ে যায় এত শক্তি কই থেকে আসলো, তারপর বাবা আম্মুর মুখে পানি ছিটালে আম্মুর জ্ঞান ফিরে আসে,আমার বাবা আম্মুকে বলে একটু খাট উচকিয়ে দেখাও তো।

আমার আম্মু বলে কী বলো এসব আমি কিভাবে উস্কাবো এটা,আর আম্মু যে বাবার সাথে তর্ক করেছে সেটাও তার খেয়াল নেই।


সন্ধ্যার পর আম্মু আবার ওমন শুরু করে আর বলে আমার অনেক দম নিতে কষ্ট হচ্ছে আমি হয়তো আর বাচবো না, তোমার সাথে কত অন্যায় করেছি তুমি আমাকে মাফ করে দিও আর আমার ছেলে মেয়েকে দেখে রাইখো। আমার মা তখন বলে আমার দাদা দাদীকে ফোন দিতে তাদের থেকেও দায়দাবি ছাড়িয়ে নেয়,আর তার দেবর আর ননদ সবাইকে ফোন দিয়ে দাবি ছাড়িয়ে নেয়।আমার বাবাও এবার কাদতে থাকে আর বলে কী বলিস তুই এসব, তোর এই দুই বাচ্চাকে রেখে কিভাবে যাবি এসব উলট পালট বলিস না তোর কিছু হবে না।

(আমার বাবার পুরো ফেমিলি সবাই গ্রামে থাকে)


আমার মামা তাড়াতাড়ি সিএনজি নিয়ে আসে আম্মুকে  নিয়ে যেতে।আমার এখনো খেয়াল আছে আমার আম্মু সিএনজি তে উঠার আগে সেই বাসার ফ্ল্যাট এর যারা থাকতো সবার থেকে দাবি ছাড়িয়ে নেয়।আর তখন ফ্ল্যাট এর এক আন্টি বলে কী বলেন এসব আপা আপনার ছেলে মেয়ে এখনো কত ছোট আপনার কিছুই হবে না আল্লাহ ভরসা।


আমার মামা আমাকে আর বড় আপুকে রিকশা করে নানুর বাসায় পাঠিয়ে দেয়। আর মামা আর বাবা আম্মুকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন নিয়ে যায় কিন্তু তারা কোনো কিছুই বুঝে না উল্টা বড় মামাকে বলে আপনারা এমন সুস্থ মানুষকে নিয়ে এসেছেন কেনো হাসপাতালে তার কোনো কিছুই হয়নি একপ্রকার রাগ করে বলে।


(মামা ভেবেছিলো হয়তো বুকে কোনো সমস্যা হয়েছে তাই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো)


তারপর আম্মুকে নানির বাসায় নিয়ে আসলে,আম্মুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলে আম্মু ঘুমায় না,এমনকি বড় ভাই কে বলে তখন ভাই আপনি আমার জন্য যা করেছেন তা কেউই কখনো করবেনা,আম্মু সবার থেকে দাবি ছাড়িয়ে নিতে থাকে আর নানীকে বলে দেখো আম্মু বাবা আমাকে নিতে এসেছে আর দাদী আমার পাশে বসে আছে আর আমার নানী দাড়িয়ে আছে আমার জন্য, আমার বাবা আমাকে বুকে নিতে চাচ্ছে।ঐদিন আমার নানুর বাসায় সবার কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায় আর আমার নানির বাসার আশেপাশের সবাই নানীর বাসায় এসে ভীড় জমিয়ে ফেলে,আত্মীয় সজন সবাই এসে পরে আম্মুর এমন অবস্থা দেখে,আম্মুর এই অবস্থা দেখে সবাই কেদে দেয়, আমার বড় মামা সবচেয়ে বেশি আদর করে আমার আম্মুকে তখন মামা রাগে হুজুর কে ফোন করে অনেক কিছু বলে আর রাগারাগি করে যে আপনি কি করেছেন আর ঐটা তাও আমার বোনের এমন ক্ষতি করে ফেললো।আপনি এসব এর কিছুই বুঝেন না।


আমার আম্মুকে সবাই ঘুমাতে বললেও আম্মু ঘুমায় না,আমার আম্মু নানীকে বলে মা তুমি সরে যাও আমার বাবাকে আসতে দাও আমাকে নিয়ে যাক আমার আর এই কষ্ট ভালো লাগে না আমাকে চলে যেতে দাও আমার বাবার কাছে। 


আমার নানী তখন বলে খুব শখ হয়েছে না বাবার কাছে যেতে আর এদিক যে আমার নাতি-নাতনী আছে ওদের খেয়াল রাখবে কে,তোর কিছুই হবে না মা তুই একটু ঘুমা মা আমি দেখছি সব কিছুই হবে না তোর।


আমার দাদি আমার বাবাকে ফোন দিয়ে বলে আম্মুকে যেভাবেই হোক কালকে নিয়ে যেনো রওনা দেয় গ্রামে আম্মুর চিকিৎসা ঐদিকেই করাবে।


আমার আম্মু আমাকে বলে শাকিব আমার বুকে আয়,আমি যদিও যেতে চাই না ভয়ে কাদতে থাকি তখন সবাই মিলে আমাকে বুঝিয়ে তারপর আমার আম্মুর বুকে যাই তারপর আমার বড় বোনকেও আম্মু বুকে নেয়।আমার নানী তখন বলে নে এবার একটু ঘুমা মা তোর বুকে দুইজন আছে একটু শান্তিতে ঘুমা মা তোর কিছুই হবে না।আম্মু ঘুমানোর চেষ্টা করে আমাদের বুকে নিয়েই।তারপর আমার নানী সাথে সাথে কী নামায যেনো পরে সেটা আমি জানি না আসলে হয়তো নফল তারপর ঐ পানি আমার আম্মুকে এসে খাওয়াই দেয়।তারপর আমার আম্মু শান্তিতে একটু ঘুম দেয়।


[ ঐদিন আমার নানীর বাসায় রাত ১টা পর্যন্ত মানুষে ভড়া ছিলো।সবারি চোখে কান্না ছিলো।আমার বাবাকেও এবং আমার দুই খালামনি ও দুই মামা কেউ কাদতে দেখেছি তখন আমার এখন পর্যন্ত বেচে থাকার মধ্যে ।আমরাও কেউ ভাবিনি আমার মা আর বেচে থাকবে আমার মাঝে।শুধু আমার নানী শক্ত ছিলো যে তার মেয়েকে কিছু হতে দিবে না। ]


(আমাকে যদি বলা হয়,আমি আমার কোন দিনটিকে ভুলতে চাই আমি অবশ্যই বলবো এই দিনটিকে ভুলতে চাই। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই তিনি আমার মা কে বাচিঁয়ে রেখেছেন,আমার থেকে হারিয়ে যেতে দেননি।আমি তখন খুব ভিতু ছিলাম যা আমাকে আমার আম্মুর কাছে যেতে দেয়নি তবে এখন আর ভয় পাই না এসব কিছু) 


আমার আম্মুর ঐ জিনিসটা রাতে আর কিছু করেনি হয়তো এত মানুষ বাসায় জড়ো হয়ে যাওয়ার কারনে।তারপরের দিন বাবা আমাকে আর বড় বোন আর আম্মুকে নিয়ে রওনা হয় গ্রামের উদ্দেশ্য.........


আম্মুর সাথে থাকা জ্বীন...☠️👽

পর্ব: ০৩ ও শেষ 


আমাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা,চরফ্যাশন । আমাদের দেশে সাধারণত যেতে হয় লঞ্চে।লঞ্চে রাতে একটু সমস্যা করলেও তেমন কোনো সমস্যা হয় না।ভোর সকালে আমরা পৌছে যাই। আমাদের গ্রামে একটু ভূত-প্রেত-জ্বীন এসব কথা বেশি হয়ে থাকে,আর কোনো কিছু হলেই ভাবে জ্বীন এসব করেছে।কথা না বাড়িয়ে মেইন ঘটনায় আসি।


দাদী বলে আজ কাউকে দেখানো দরকার নেই,এত দূর থেকে এসেছিস বিশ্রাম নে সবাই। আমার দাদীর সাথে পরী আছে সেগুলো রাতে দাদীর সাথে ভারে আসে এবং বললো রাতে জিজ্ঞাসা করবে। রাতের অপেক্ষা সবার।তারপর দাদী ভারে বসলে তখন আম্মু কে দেখে সব বলে দেয় কীভাবে কী হয়েছে।


তখন আমার দাদা বলে ওরা পারবে কীনা সরিয়ে দিতে।তখন দাদীর সাথে থাকা সেই পরীরা বলে উঠে সব দোষ তো তর ছেলের, তোর ছেলে গরম দুধ খাওয়ানোর ফলেই এটা ওর রক্তের সাথে মিশে গেছে এবং সরাতে খুব কষ্ট হবে।ওরা পারবে না সরাতে তার কারণ আম্মুর সাথে যেটা আছে ঐটা অন্য জাতের আর খারাপ। তারপর বলে অন্য জায়গায় চিকিৎসা নিতে এটা বলে চলে যায়।


তারপরের দিন সকালে আমার বাবার এক জেঠা ছিলো উনাকে ডাক দেওয়া হয় উনি এসব ঝাড়পোঁছ করে থাকে।তারপর আম্মুকে মাটিতে বসানো হয় এবং গোল করে দাগ দেওয়া হয় লোহা দিয়ে আম্মু সেটার মধ্যে বসে থাকে।এই গোল দাগ সাধারণত দেওয়া হয় যেনো শয়তান বেড়িয়ে যেতে না পারে। আমাদের সামনেই আম্মুকে ঝাড়ফুঁক করতে থাকে এবং অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে কিন্তু আম্মু কিছুই বলে না এমন ভান ধরে থাকে মনে হয় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে।সবকিছুই শয়তানের ভেলকি। তারপর সেই বাবার জেঠা জুতা রাখে আর সাথে লাঠি আনে ভাবে এগুলো দিয়ে মেরে শয়তানের মুখ খোলাবে।সবকিছুই আমাদের সামনে হচ্ছিলো। এরকম চিকিৎসা দেখে আমি আর আমার বোন কাদতে থাকি কী হচ্ছে আমার আম্মুর সাথে এসব আসলে।তারপর কবিরাজ আম্মুর গায়ে লাঠি দিয়ে একবার আঘাত করে তারপর আবার আঘাত করতে গেলে দাদী বাধা দেয়।


আমার দাদীর কষ্ট হয় এসব দেখে আর ভাবে তার নাতি নাতনী সামনে আছে ওর আম্মুর সাথে এমন হচ্ছে এসব দেখে আমরা কষ্ট পাচ্ছি দাদি বুঝতে পারে।দাদী বলে আপনার এসব করা লাগবে না এতে করে আমার বউয়ের কষ্ট হচ্ছে,আমরা অন্য কাউকে দিয়ে করাবো আপনি চলে যান।আমার ছেলের বউ শহরের মেয়ে এইসব কিছু তে কষ্ট হচ্ছে এভাবেই তার মধ্যে এসব করলে আমার ছেলের বউ আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।


তারপর ঐ কবিরাজ বলে উঠে আমি তো মারছি শয়তান রে তোমার বউকে এসব করছি নাকি আর ব্যাথা তো পাচ্ছে শয়তান। দাদী তাও বলে যাই হোক আমার বউ এভাবেই থাকুক। শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে আসছে বেড়িয়ে যাবে যা হওয়ার আমরা বুঝে নিবো।


আমার দাদার বাড়ী থেকে আরেকটু দূরে এক মহিলা আছে উনি এসব চিকিৎসা করে থাকে।তার বাড়িতে নাকি মাগরিবের পরে পরী নামে।আর সেই পরী ঐ মহিলার উপর ভর করে তখন মানুষের এসব চিকিৎসা করে থাকে। দাদী ভাবে সেদিকেই আম্মুকে নিয়ে যাবে।সন্ধ্যার পর আম্মুকে সেদিক নিয়ে যাওয়া হয়।তারপর আম্মুকে কী যেনো করে তা ঠিক আমি জানি না কারণ আমাদেরকে সেদিক নেওয়া হয়নি শুধু দাদী গিয়েছিলো আম্মুকে নিয়ে।আর আম্মুকে তেলপড়া ও পানিপড়া দেওয়া হয় আর তাবিজ দেওয়া হয় গলায় ও মাঝায়।


(কেউ তর্কাতর্কি করতে আসবেন না আমার সাথে কমেন্ট এ যে তাবিজ দেওয়া ঠিক না এসব।আমি কোনো কিছুকেই বুঝাচ্ছি না যে তাবিজ ভালো নাকি খারাপ।আমি মূল ঘটনা লিখছি কোন কিছু বানিয়ে লিখছি না।যা হয়েছিলো তাই লিখছি।)


তারপর আম্মু কিছুদিন ভালোই ছিলো এবং আমরাও কিছুদিন গ্রামে বেড়িয়ে তারপর ঢাকায় এসে পরি।তারপর একদিন আম্মু তাবিজ গুলো খুলে রাখে কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই দেখে তাবিজ গুলো নেই।আমরা আসলেই এখনো বুঝলাম না তাবিজ গুলো আসলে কে নিয়ে গিয়েছিলো। 

তার তিনদিন পর আম্মুর আবার সেই আগের মত অবস্থা।তারপর আমার বড় মামার শ্বশুর বাড়ি ডেমরা এদিকে এক কবিরাজের কাছে নিয়ে আসা হয়।কিন্তু আসলে সত্যি বলতে এই শালায় ও ছিলো ভন্ড। হুদাই সবই টাকা খাওয়ার ধান্দা।


আমার বাবা সরকারি চাকুরীজীবি তা আগেই বলেছি,আমার বাবা ছোট একটি পোষ্ট চাকরি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।সেখানের কেন্দ্রীয় মসজিদের ঈমামের সাথে তখন বাবা কথা বলে এবং আম্মুর বেপারে সবকিছু খুলে বলে এবং তিনি বলে আম্মুকে নিয়ে যেতে তার বাসায়।


তার বাসায় নিয়ে গেলে তিনিও তেল ও পানি পড়া দেন আর নিয়ম কানুন সবকিছু বলে দেন।আল্লাহর রহমতে আমার আম্মুর এরপর কোনো সমস্যা হয়নি। 


তারপর ২০১৬ এর দিকে আম্মুর ওমন সমস্যা হয় তখন বাবা যে ঐ হুজুরের কাছে নিয়ে যাবে তা সম্ভব হয় না কারণ সেই ঈমাম সাহেব মারা গিয়েছে।তবে এবার আম্মুর ওমন সমস্যা হলেও তেমন কষ্ট হয় না এটা জিগিড় ও আল্লাহর নাম নিয়ে চলে যায় এমন করে তবে পরে আম্মু বেথা অনুভব করে তার পেটে।


(আমার বড় মামার একজন পীর ছিলো তাকে আম্মুর বেপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে আম্মুর সাথে ছোট বেলা থেকেই একটা কিছু আছে তবে সেটা খারাপ না।সেই জিনিসটা আম্মুকে ধরেছিলো আমাদের নানীর বাসার ছাদে একটা বড়ই গাছ ছিলো সেটা থেকে।)


তারপর মীরপুরেই এক কবিরাজ কে দেখানো হয় তিনি মূলত বেহারি ছিলেন তিনিও একই কাজ করেন তেল পড়া ও পানি দেন এরপর সমস্যা হয়নি।এবং তিনি বলেন আম্মুকে নির্দিষ্ট কিছু সময় মেনে চলতে। আমার আম্মু এখনো দুপুর ১২টার পর আর সন্ধার পর এই সময় গুলো তে ঘরেই থাকে বের হয় না। কবিরাজ বলে ছিলো এটা আম্মুর কোনো বা পরিবারের ক্ষতি করবে না এবং এটা আম্মুর কাছেও আসলে আসতে পারে না ও দূর থেকেই আকর্ষণ করে থাকে। এরপর আম্মুর তেমন কোনো কিছুই হয়নি।

২০১৯ এর শুরুতে আম্মুর কিছুটা এমন হয়েছিলো তখন আম্মুর ঐটার সাথে আমার বাবা আর আমি ও বোন কথা বলি তখন সে বলে আমি চলে যাবো শুধু বলতে এসেছি ও যেনো নামায বাদ না দেয় আর আমি এসেছি ও কয়দিন নামায পড়েনি বলে।তারপর আমার বাবা বলে তুই কোনো সমস্যা করিস না ও সবসময় নামায পড়বে।তারপর চলে যায়।


[ আমি এ থেকে যা বুঝতে পারি, আম্মুকে যেটা ধরেছিলো ধ-ব্লক থেকে সেটা খারাপ ছিলো আর সেটাই আমার আম্মুকে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু সেটা ছেড়ে গিয়েছে বাবা যখন সেই কেন্দ্রীয় মসজিদের ঈমাম কে দেখায় তখন কারণ তার মাধ্যমে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমার আম্মু সেই শয়তান থেকে মুক্তি পেয়েছিলো।

পরে যেটা একটু সমস্যা করেছিলো এটা কখনোই আম্মুকে তেমন কষ্ট দেয় নাই শুধু আম্মুকে সতর্ক করে গিয়েছে যেনো ঠিকমত নামায পড়ে ও বলে গিয়েছিলো বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামায পড়তে। আর পীরের কথা ঠিক ছিলো এটাই হয়তো সেটা যেটা আম্মুর সাথে ছোট বেলা থেকেই ছিলো কিন্তু বুঝতে দেয়নি]


{আমার আম্মু এখন পুরোপুরি সুস্থ আল্লাহর রহমতে।সবাই আমার আম্মুর জন্য এবং পরিবারের জন্য দুয়া করবেন।}


........সমাপ্ত........


মো শফিকুল ইসলাম


রহস্যময় সমস্ত গল্প গুলো পড়ুন এখানে ক্লিক করুন।