গল্প:রহস্যময় এলাকা | রহস্যময় ঘটনা

 রহস্যময় স্থান

রহস্যময় স্থান

রহস্যময় এলাকা...🏚️👽

পর্ব: ০১


তখন গভীর রাত। আমি ঘুমে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, আর চোখ মেলে চমকে যাই!

আমি বাসায় ছিলাম। আর এখন কোথায় আছি কিছুই বুঝতে পারছিনা।

প্রথমে উপরে থাকাই, দেখি আকাশ দেখা যায়।

আকাশের কোথাও চাঁদ নেই। একটি তারকার অস্তিত্ব ও নেই।

মনে হচ্ছে মেঘের আড়ালে চাঁদ তাঁরা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কিন্তু তবুও আকাশটা বেশ পরিষ্কার। বেপারটা আকস্মিক। 

যেখানে নেই চাঁদের দেখা সেখানে মনে হচ্ছে পুরো আকাশটাতে কেউ আটা-ময়দা মেখে দিয়েছে কেরাম খেলার জন্য।

আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। কী হচ্ছে আমার সাথে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না!

এতক্ষণ আকাশটা দেখতে দেখতে আমি বিস্ময় বোধ করি, আর ভাবতে থাকি কী করবো এখন।

যখন আকাশ থেকে চোখ নেমে জমিনে দৃষ্টি পড়ে, তখন আমি শুধু বিস্মিত নয় অনেকটাই চিন্তিত ও ভীত হয়ে পড়ি!

পুরোটা জমিন যেন আকাশের প্রতিচ্ছবি! স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, আমি মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি।

কোনো রাস্তাঘাট নেই। আমার বাসার রাস্তাটাও পর্যন্ত খোঁজে পাচ্ছি না!


কোথাও কোনো নড়াচড়া ও প্রাণের আবাস ও পাচ্ছি না।

কোনো মানুষের আওয়াজ তো দূরে থাক

কোনো গাছের পাতার মৃদু শব্দ ও পাচ্ছি না।

উপর সাদা, নিচ সাদা। যেন উপরনিচ সাদাময় মরুভূমি। 

কোনদিকে যাবো? কোথায় যাবো?

কী করবো? কিছুই বুঝতে পারছি না।


তারপর দু চোখ বন্ধ করে একমিনিটের মত সামনে হাটি।

তারপর চোখ খুলে চতুর্দিকে থাকিয়ে দেখি কোনদিকে যাওয়া যায়।

কিন্তু না, কোন ফলাফল নির্ধারণ করতে পারি নি।

হঠাৎ দেখলাম আমার বাম দিকে কিছুটা দূরে কিছু একটা চলছে।

আমি সাহস করে অনেকটা ওইদিকে আগাই।

কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দেখি, আকাশ আর জমিন যতটা না সাদা তার চেয়েও আরো বেশি সাদা কিছু একটা চলছে।

সাহস করে আরো সামনে যেতে থাকি। ৬/৭ মিনিট হাঁটার পর দেখি, ওটা ছোটখাটো একটা নদী।

পানি গুলো পুরো দুধের মত সাদা।


আমি নদীর কাছে যেতে থাকি। যত কাছে যাই দেখি আমি তত দূরে যাই।

তারপরও হাল ছাড়ি নাই। আমি সামনে যেতে থাকি। এবং অনেক্ষণ হাঁটার পর দেখলাম আমি প্রায় নদীর কাছাকাছি চলে এসেছি।

আর কিছুক্ষণ হাঁটলে হয়ত একেবারে নদীর তীরে পৌঁছে যাবো। কিন্তু না, নদীর তীরে পৌঁছতে আমাকে আরো অনেকক্ষণ হাঁটতে হয়েছে।

নদীর তীরে পৌঁছে যা দেখলাম, তাতে আমার কিছুটা ভরসা জাগলো।

দেখলাম, নদীর ওপারে জাঁকজমকপূর্ণ দু'তলা অনেক গুলো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে।

প্রতিটা বিল্ডিং একই সাইজের, একই সমান, একই রঙের, সাদা।

কিন্তু সেখানো যাবো কী করে!

হঠাৎ নদীর একপাশে দেখলাম, ছোটখাটো একটা নৌকা।

নৌকাতে সর্বোচ্চ দু'জন মানুষের জায়গা হবে।

নৌকাটির কাছে গিয়ে দেখি, কোনো বৈঠা, লাঠি, বাঁশ কিছুই নেই।

আরেকটু হতাশা বাড়লো। কীভাবে ওপারে যাবো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারতেছি না। 

অবশেষে, আল্লাহর নাম নিয়ে নৌকাতে উঠি।

উঠার পর দেখি, নোকাটির ঠিক মধ্যখানে গোলাকার একটি বৃত্ত রেখা।

ভাবছিলাম, হাত দিয়ে পানিতে ঠেলে ঠেলে ওপারে যাবো,

কিন্তু আশ্চর্য! বৃত্তে পা পড়া মাত্রই নোকাটি অটো চলতে থাকলো একদম সোজা।

ওপাড়ে পোঁছে নোকাটি থেমে যায়। আমি নৌকা থেকে নেমে বিল্ডিং গুলোর কাছে যেতে থাকি।

যাওয়ার সময় আমি পুরাই চমকে যাই! রাস্তার দু'পাশে সুন্দর সুন্দর অনেক গুলো বিল্ডিং, যা আমি এই আধুনিক যুগে ও ইতোপূর্বে কখনো দেখি নাই।

আরো চমকে যাই যখন দেখি, ঠিক মানুষের মত অনেক গুলো লোক রাস্তায় হাঁটছে রোবটের মত।

মাথা থেকে পা অবধি সাদা জামা পরিহিত। চুল, দাড়ি, গোঁফ সবই সাদা। আর দাড়ি অনেক লম্বা। কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। মনে হচ্ছে সবাই কম্পিউটার গেইমের মত সেটাপ করা।

বিল্ডিং গুলো প্রত্যকটাই দু'তলা। আবার ওখানকার প্রত্যেকটা মানুষই বিল্ডিংয়ের সমান লম্বা।

আমি ও ভয়কে জয় করে তাদের মাঝে হাঁটতে থাকি আর বের হওয়ার পথ খোঁজতে থাকি।


দু'তলা বিল্ডিংয়ের সমান সাদা জামা পরিহিত লোক গুলোর অনেককে দেখলাম বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করতে।

তাই আমি ও মনের ভিতর কৌতূহল জাগা থেকে তাদের পেছন পেছন বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করি।


বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করার পর যা দেখতাম, তাতে আমার গা শিউরে উঠল! যাদের পেছন পেছন বিল্ডিংয়ে যাই এখন বিল্ডিংয়ের ভিতরে তাদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না! 

দু'তলা বিল্ডিং পুরোটা শূন্য। ভিতরে কোনো রুম বা পিলার নেই। পুরোটা ভিতর একদম ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই। অথচ তার ভিতরে অনেককে প্রবেশ করতে দেখেছি। তারপরও মনে অনেক সাহস নিয়ে আরো ভিতরে যেতে থাকি। একপর্যায়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার সামনে একটা দেয়াল পড়ে। দেয়ালটা একদম আয়নার মত। তাতে আমাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে দেয়ালের ওপাশে রহস্যময় কোনোকিছু আছে। কিন্তু ওপাশে যাওয়ার মত তো কোনো রাস্তা দেখছি না। ঠিক রাস্তা খোঁজাখুঁজির সময়, আমার সামনে সেই ছোট নৌকায় থাকা বৃত্তের মত একটি বৃত্ত চোখে পড়ল। পূর্ব অভিজ্ঞতায় সেই বৃত্তে গিয়ে দাঁড়াই। বৃত্তে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই সোজা বরাবর দেয়ালের কিছু অংশ খোলে যায়। খোলে যাওয়া অংশ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করি। ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই ঐ সাদা জামা পরিহিত লোক গুলোকে ভিতরে দেখতে পাই।

সেখানে আরো নতুন নতুন জিনিস আমার সামনে আসতে লাগল। যে লোকেরা রাস্তায় রোবটের মত চলাফেরা করত: এখন তারা উঠবস করছে, এমনকি পরস্পরে কথাও বলছে। তাদের মাঝে আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম, তাদের ভাষাটা অন্যরকম, যা আমি কখনই বুঝতে পারছি, এবং বুঝতে পারবোও বলে মনে হচ্ছে না। তাদের মাঝে আবার ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ও আছে, যারা এক তলা বিল্ডিংয়ের সমান লম্বা হবে। 

তাদের কারো কাছেই আমি যাচ্ছি না ভয়ে।

দূর থেকেই তাদের সবকিছু দেখছি। হঠাৎ তাদের মধ্য থেকে একজন আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করলেন কাছে যাওয়ার জন্য।

আমি ইতস্ততবোধ করে সামনে যাই। 

সামনে যাওয়ার পর, দেখলাম ঐ ব্যক্তিটি বিশাল আকারের একটি কলম ও একটি খাতার কাগজ আমার সামনে রাখলেন।

তারপর তাতে তিনি কিছু একটা লেখলেন, লেখার পর তা আমার সামনে তুলে ধরলেন।


এখন আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, তাতে কী লিখা।

কারণ, তার লেখার নিচে বাংলায় ট্রান্সলেট করা ছিল।

ওটাতে লেখা ছিল, "তুমি কী কিছু খাবে?

আমরা মেহমানদের অনেক সম্মান করি"


কিন্তু এখন কী খাবো সেটা আমার মাথায় আসছে না! মাথায় এখন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, তা বাংলায় ট্রান্সলেট হল কীভাবে! এবং তিনি কীভাবে জানলেন যে, আমার ভাষা, বাংলা।


তাকে কোনো প্রশ্ন ও করতে পারছি না।

আমি শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম, হ্যাঁ খাবো।

অনেকক্ষণ ধরে কিছুই খাই না। অথচ খাবারের কথা আমার একটু ও স্বরণ নেই।


ঐ লোকটা স্বরণ করে না দিলে আমার মনে হয় স্বরণই হত না খাবারের কথা।


কিন্তু এরা কারা? পরোপকারীতাও তাদের মাঝে আছে।

নিশ্চিত এরা মানুষ নয়। কারণ, তাদের মাঝে কোনো হিংস্র ভাব নেই, নেই কোনো অহংকার।


আমার খুব ভালই লাগছে।

আর এপর্যন্ত কোনো অস্বাভাবিক কিছু তাদের মাঝে লক্ষ করিনি।

তবে কিছু ভয় অন্তরে কাজ করছিল। এখানে কোনো অঘটন ঘটলেও আমাকে হেল্প করার মত কেউ নেই।

তাদের সাদা সাদা দাড়ি গুলো এত লম্বা ছিল যে, তাতেই আমার কিছুটা ভয় কাজ করত।

তাদের মাঝে পুরুষ কে আর মহিলা কে তা আলাদা করা যাচ্ছিল না। কারণ সবারই মুখ ভর্তি দাড়ি। আর তাদের মাঝে মহিলা আছে কিনা তাও আমি সিওর না।

তবে তাদের বয়সটা আলাদা করা যাচ্ছে। কে ছোট কে বড় তা বুঝা যাচ্ছে।


অবশেষে, ঐ লোকটির আদেশে তার মতই অন্য আরেকজন লোক সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা বড় একটি পাত্রে কিছু একটা নিয়ে এসেছেন।

পাত্রটি আমার সামনে ঠেলে দেওয়া হলো। খাবারের পাত্রটি অনেক বড় ছিল, তাই আমি একদম পাত্রের উপরে উঠে যাই।

ওই সাদা জামা পরিহিত লোকটি পাত্রের উপর থেকে সাদা কাপড়টি সরালেন।

তারপর খাবার দেখে আমি পুরাই অবাক!


রহস্যময় এলাকা...🏚️👽

পর্ব: ০২


ঐ লম্বা দাড়ি বিশিষ্ট সাদা জামা পরিহিত লোকটি খাবারের পাত্র থেকে কাপড়টি সরালেন।

খাবার দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। এরকম খাবার আগে কখনও দেখিনি। দেখতে ঠিক কাঁঠাল ফলের মত, বাট একদম সাদা। কীভাবে খাবো? কিছুই বুঝতেছি না।


হঠাৎ ঐ লোকটি আবার কাগজে কী যেন একটা লেখতে লাগলেন।

লেখার পর আমার সামনে তা তুলে ধরলেন।

লেখা ছিল, "আপনি ইহা ভক্ষণ করুন। ইহা আমাদের এখানের বিশেষ খাবার।"


লোকটিকে বিশ্বাস করে আমি তা খেতে শুরু করি।

ওয়াও! খুব সুস্বাদু। যেমনটা ভেবেছিলাম তেমন নয়। অনেক সুস্বাদু। এবং এরকম খাবার আমার জীবনে কোনোদিন ও খাই নাই। চোখেও দেখি নাই। 

সব গুলো খেতে পারি নাই। হালকা কিছু অবশিষ্ট ছিল।

অবশেষে ঐ লোকটি বিশেষ একটি গ্লাসে বিশেষ একটি পানীয় দিলেন।

গ্লাসটি আমার কাছে বড় একটি জগের মত লাগছে।

হয়তো তাদের কাছে ইহা একটি ছোট গ্লাস। আমার উদরে অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গা উক্ত পানীয় দিয়ে পূর্ণ করলাম।

বেশ মজা ছিল। উদর খালি থাকলে সবটুকু খেয়ে নিতাম।


এখন আমার মাথায় একটাই চিন্তা। এখান থেকে বের হবো কীভাবে? তাদেরকে কিছুই বলতে পারছি না।


খাবারের পর ঐ লোকটি আবার কাগজে লেখলেন, "আমার সাথে আসুন, পরিচয় করিয়ে দেই আপনার পরিচিত কারো সাথে"


পুরাই চিন্তায় পড়ে যাই! এখানে আমার পরিচিত কে আছে?

আমি তো এখানকার কাউকে চিনি না। তো তিনি কার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিবেন?

কোথাও আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে না তো? আচ্ছা যাক, তারপরও লোকটাকে বিশ্বাস করে আমি তার সাথে যাই।

তিনি আমাকে অনেক বড় একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন।

এই সামান্য দু'তলা বিল্ডিংয়ে এত বড় কক্ষ ও থাকতে পারে! আমার চোখকে তা বিশ্বাস করাতে পারছি না। কী টেকনোলজিরে বাবা!


যাই হোক, উক্ত কক্ষ পুরোটাই ফাঁকা কোথাও কেউ নেই। 

কক্ষটির একদম বাম দিকের শেষ মাথায় আমাকে তিনি নিয়ে গেলেন। ওখানে আরেকটা বৃত্ত আমার চোখে পড়ে। ঐ লোকটি উক্ত বৃত্তে পা রাখলেন। পা রাখার সাথে সাথে বিশাল আকারের একটি রুমের অস্তিত্ব দেখা যায়।

রুমটা আমাদের সামনে ভেসে উঠেছে মনে হচ্ছে।

রুমটার ঠিক মধ্যখানে একটা বড় দরজা আছে, আর দরজার সামনে আরেকটি বৃত্ত। বৃত্তে পা রাখলে দরজাটি খোলে যায়।

উক্ত দরজা দিয়ে আমাকে নিয়ে উক্ত রুমে প্রবেশ করলেন। 

ভিতরে বিশাল জায়গা। এক কথায় সবকিছু আছে সেখানে।

হঠাৎ দেখলাম, মানুষের মত একটি মেয়ে দৌড়ে আসছে আমাদের কাছে।

ঐ লোকটি আমাকে কিছু না বলে এখান থেকে চলে যাচ্ছেন।

আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।

কিন্তু ঐ মেয়েটা কাছে আসার পর আমাবে বলে, "আপনি এখানে কীভাবে আসলেন?"

তার মুখ থেকে বাংলা শব্দ শুনে আমার ভয় কেটে যায়।

আমি তাকে সবকিছু খুলে বলি। 

মেয়েটাকে জিগ্যেস করি, আপনি এখানে কীভবে আসলেন আর আপনার নাম কী?

মেয়েটি বলল, আমার নাম মিম। আমি আপনার মতই হঠাৎকরে নিজেকে এখানে দেখতে পাই। কিন্তু একটা ভুল করার কারণে আমি এখান থেকে বের হতে পারছি না। প্রায় তিন বছর ধরে আমি এখানে আছি। যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে ওরা।

-ওরা কারা? (আমি বললাম)

-আপনি যাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন তারাই।

-কিন্তু এদেরকে তো দেখে ভালই মনে হচ্ছে। আর এমনিতেই আমার কোনো ক্ষতি তারা করেনি।

-হ্যাঁ, এরা ভালো। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার হাতে ঐ ঘড়িটি আছে ততক্ষণ পর্যন্ত।

-ঘড়ি!

-হ্যাঁ ঘড়ি। আর এই ঘড়িই সব।


আমার হাতে একটা ঘড়ি আছে। যেটা আমি খেয়াল করিনি। ঘড়িটা একদম সাদা বেল্টের। ঘড়িতে কোনো টাইম বুঝার কোনো সিস্টেম দেখছি না। যাস্ট কাটা গুলো ঘুরছে। 

যেটা আমি এইমাত্র খেয়াল করলাম মিমের কথা শুনে।


-(মিমকে বললাম) তোমার ঘড়িটা কোথায়? কী হয়েছে?

-যখন আমি এই রহস্যময় এলাকায় নিজেকে আবিষ্কার করি, তখন আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই। আর কান্নাকাটি শুরু করি। আর এই ঘড়িটাকে দোষারোপ করে রাগ করে খুলে ফেলে দেই। কারণ এই ঘড়িটা পরেই রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম, আর ঘুমের পরে এখানে এসেছি।

-আমি বিষয়টা এখন কিছুটা বুঝতে পারি। এখন এখান থেকে বের হবো কীভাবে বলো?

-আপনার বের হওয়া সহজ, কিন্তু আমার না।

-তোমার জন্য কী করতে হবে? 

-প্রথমে আমার ঘড়িটা খোঁজে বের করতে হবে। তারপর বের হওয়ার রাস্তা আমি বের করবো।

-তাহলে চলো ঘড়িটা আমরা দু'জন মিলে খোঁজে বের করি।

-না, আমি বের হতে পারবো না। আমি বের হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

-তাহলে এরা কেন তোমাকে মারছে না? এরা আর ওরা তো একই।

-আসলে এদের কারণেই আমি বেঁচে আছি। এই বাসায় যারা থাকে বিশেষ করে যে লোকটি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে তিনি অত্যন্ত ভালো। উনি না থাকলে আমি বাঁচতে পারতাম না। আচ্ছা থাক সে কথা, অন্যদিন বলবো।

এখন আপনি আমার ঘড়িটা খোঁজে বের করুন। আর সাবধান! আপনার হাতের ঘড়িটা কখনই হাত খেকে খুলবেন না।

-আচ্ছা ঠিক আছে


অবশেষে মিমের কথামত বের হওয়ার জন্য রেডি হই। কিন্তু এই রুম থেকে আমি বের হতে পারছি না।

কোথাও কোনো দরজা বা বৃত্ত ও খোঁজে পাচ্ছি না!


অতঃপর মিম বলল, আপনি এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খোঁজে পাবেন না।

আপনার ঘরিটা দেখি, আপনি খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, আপনার ঘড়িটা একটা বৃত্তাকার ঘড়ি। দরজার সামনে গিয়ে বৃত্তটি ঘুরালেই হয়তো দরজাটি খোলে যেতে পারে।


আমি মিমের কথামত দরজার কাছে গিয়ে, হাতে পরিহিত বৃত্তাকার ঘড়িটি ঘুরাই।

সাথে সাথে দরজাটি খোলে যায়। আস্তে আস্তে এই অচেনা শহরের গোপন কোড গুলো আমার জানা হয়ে যাচ্ছে। খুব ভালই লাগছে।


মিমকে রেখে মিমের ঘড়িটা খোঁজতে বের হয়ে যাই। যাওয়ার সময় মিম আমাকে বলে দেয়, 

"আপনার হাত থেকে কখনও ঘড়িটা খোলবেন না। আর ঐ দুধের মত সাদা নদীটা পার হওয়ার সময় একটু ও বিচলিত হবেন না, কারণ আপনাকে হেঁটে হেঁটে নদীটা পার হতে হবে।"


-(আমি বললাম) হেঁটে হেঁটে কেন? ছোট নৌকাটি কোথায়?

-নোকাটা আর এপাড়ে পাবেন না ওটা ওপাড়ে তার জায়গায় চলে গেছে।

-তাহলে হেঁটে হেঁটে কীভাবে পাড় হবো?

-নদীতে সাদা সাদা যে পানি দেখেছেন, তাতে পা দিলে আপনার কোনো সমস্যা হবে না।

-কিন্তু আসার সময় তো দেখলাম পানি একদম তরল!

-আসার সময় পানি তরলই দেখা যায়, কিন্তু যাওয়ার সময় পানি একদম কাঠের মত শক্ত থাকে।

-তুমি এতকিছু জানো কীভাবে?

-সে কথা অন্যদিন বলবো। এখন আপনি যান। আর হ্যাঁ, নদীটার ঠিক মধ্যখানে হালকা বড় একটি বৃত্ত আছে, যদি ওখানে আপনার পা পড়ে তাহলে আপনি একদম নদীর নিচে চলে যাবেন। তাই দেখেশুনে নদী পাড় হবেন।


'ঠিক আছে' বলে মিমকে রেখে চলে আসি। আসার সময় রাস্তাটাও প্রায় ভুলে গেছি। এদিক সেদিক ছুটাছুটির পর ঐ সাদা দাড়ি বিশিষ্ট লোকের দেখা পাই, যিনি খাবারের পাত্রটি নিয়ে এসেছিলেন। আমি ইশারা-ইঙ্গিতে রাস্তা ভুলে যাওয়ার কথা তাকে বলি, কিন্তু সে বুঝে নাই। 

ঐ লোকটি আমাকে ইশারা দিয়ে বলল, তার পেছন পেছন যাওয়ার জন্য।

আমি তার পেছন পেছন যাই। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দেখি লোকটা আমাকে তার মুনিব তথা ঐ ভদ্র লোকের কাছে নিয়ে যায়, যিনি আমাকে মিমের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।

অতঃপর আমি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করি যে, আমি রাস্তা ভুলে গেছি। 

তিনি বুঝতে সক্ষম হন এবং কাগজ আর কলম বের করেন। তাতে লেখলেন, "তোমাকে আমি রাস্তা দেখিয়ে ঐ নদীর পাড় পর্যন্ত নিয়ে যাবো, তবে শর্ত হলো- রাস্তায় আমার সাথে কোনোপ্রকারের কথা বা ইশারা ইঙ্গিত কিছুই করতে পারবে না। তুমি শুধু আমার পেছন পেছন হাঁটবে"


আমি মাথা নেড়ে সম্মতি প্রদান করলাম। অতঃপর বিশাল আকারের লোকটির পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করি।

তিনি আমাকে নদীর পাড়ে পৌঁছে দিয়ে, ঠিক রোবটের মত আবার ব্যাক করলেন।


এখন নদীর পাড়ে আমি একা। ঐ সাদা লোক গুলো আমার থেকে অনেকটাই দূরে। এখন আমাকে নদীটা পাড় হতে হবে। প্রথমে নদীর পানিতে হাত লাগিয়ে চেক করি যে, আসলেই পানি কি তরল নাকি শক্ত? 

নাহ, মিমের কথাই সত্য। পানি একদম কাঠের মত শক্ত। মনে হচ্ছে দুধের টাইলস লাগানো হয়েছে নদীতে। কিন্তু পানি গুলো প্রবহমান। মাথায় কিছুটা খটকা লাগলে ও সেদিকে মনোযোগ দেইনি। বিসমিল্লাহ্ বলে নদীতে পা রাখি। ভয়ে ভয়ে সামনে আগাই। ঠিক নদীর মধ্যখানে এসে যখন পৌঁছলাম তখন সাধারণ বৃত্ত থেকে কিছুটা বড় একটি বৃত্ত দেখতে পেলাম। পুরোটা নদীর ঠিক মধ্যখানে এরকম সারি সারি বৃত্ত। কোথাও ফাঁকা জায়গা নেই, যে এখান দিয়ে চলে যাওয়া যাবে। এখন আমার ভয় হচ্ছে আমি কি লাফ দিয়ে বৃত্তটা পাড় হতে পারবো কি না?


কিছুটা পিছিয়ে এসে, কয়েকবার লাফ দিয়ে প্র্যাকটিস করি। দেখি, পারবো। তারপর আবারো আল্লাহর নাম নিয়ে লাফ দেই, আর সফল হই।

অবশেষে নদীর ওপাড়ে পৌঁছলাম। ওপাড়ে পৌঁছে আমি ঐ বৃত্তটি খোঁজতে লাগলাম যেই বৃত্তটির কথা মিম বলেছিল। অর্থাৎ ঐ বৃত্তটি যেই বৃত্তেটির মাধ্যমে এই দুনিয়ায় প্রবেশ করি।

প্রায় দেড় ঘন্টার মত খোঁজাখুঁজির পর আমি ঐ বৃত্তটা খোঁজে পাই।

বৃত্ত খোঁজে পাই ঠিক আছে কিন্তু মিমের ঘড়ি কোথাও খোঁজে পাচ্ছি না।

বৃত্তের আশপাশ পুরোটা জায়গা খোঁজে নিয়েছি কোথাও আর ঘড়িটি খোঁজে পাইনি।


রহস্যময় এলাকা...🏚️👽

পর্ব: ০৩


বৃত্তের আশপাশ পুরোটা জায়গা খোঁজে নিয়েছি, কোথাও আর ঘড়িটি পাইনি।

ঘড়ি খোঁজতে খোঁজতে হয়রান এমন সময়, কিছুটা দূরে মানুষের মত কারো অবয়বের নড়াচড়া দেখলাম। ঘড়ির চিন্তা বাদ দিয়ে তার কাছে যেতে থাকি। কাছে গিয়ে দেখি, আমার মতই একটা ছেলে।

সে ঐ সাদাময় মরুভূমিতে বসে বসে কাঁদতেছে। তার কাঁধে হাত রাখতেই সে চমকে যায়। 

আমি তাকে অভয় দেই। আর বুঝতে পারি সেও আমার মত এখানে এসেছে। কোথাও কোনো রাস্তা না পেয়ে ভয় পেয়ে কাঁদতেছে। আমার সাথে ঘটে যাওয়া এখানখার সমস্ত কিছু তার সাথে শেয়ার করি।

আমাকে পেয়ে তার ভয় কিছুটা দূর হয়।


-(আমি বললাম) ভাই, তোমার নাম কী?

-ফাইয়াজ।

-আচ্ছা আমি তোমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তুমি যাও।

-না ভাই, আপনার সাথেই যাবো।

-কিন্তু আমি তো একা না, মিমকে ও নিয়ে যেতে হবে আমার সাথে।

-যেহেতু এখানে আমরা তিনজন আছি, তাই আমরা তিনজন একসাথে যাবো। আর আমরা ফিরে গিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে যে, এরকম ঘড়ি পরে যেন রাতে কেউ না ঘুমায়।

-ঠিক বলেছো, তবে মিমের ঘড়িটাতো খোঁজে পাচ্ছি না। তোমার ঘড়িটা সাবধানে রেখো, হাত থেকে কখনো খুলো না।

-ঠিক আছে ভাই। আসুন আরেকবার খোঁজে দেখি ঘড়িটা পাই কিনা?

ফাইয়াজের কথামত আবার ঘড়িটা খোঁজতে লাগলাম। নাহ, কোথাও খোঁজে পাইনি।


-ফাইয়াজ চলো মিমের কাছে যাই।

-কিন্তু ঘড়ি ছাড়া! আবার দুই ঘড়িতে তিনজন ফিরে আসবে কীভাবে?

-তুমি চলো, আসার ব্যবস্থা আমি করবো।

-ওকে, চলেন।

-নদী পাড় হওয়ার সময় কোনো ভয় পাবে না। আর বিশেষ ধরণের যে লোক গুলো আছে তাদেরকে দেখে ও কোনো ভয় পাবে না। ঠিক আছে?

-হুমম, ঠিক আছে।

-ওকে চলো।


আমি ফাইয়াজকে নিয়ে নদীর পাড়ে যাই। দেখি ছোট নোকাটা তার জায়গায়ই আছে।

সর্বোচ্চ দুইজনের জায়গা হবে নৌকাতে। আর আমরা এখন দুইজনই আছি।

আমি নৌকাতে আগে উঠি, তারপর ফাইয়াজকে তুলি।

বৃত্তে পা রাখার পর নৌকাটি আমাদেরকে ওপাড়ে নিয়ে যায়। ওপাড়ে যাওয়ার পর ফাইয়াজ জাঁকজমকপূর্ণ বিল্ডিং গুলো দেখে চমকে যায়। আর সাদা সাদা দাড়ি বিশিষ্ট লোক গুলোকে দেখে কিছুটা ভয় ও পায়।

আমি তাকে আবারও অভয় দেই। 

মিমের কাছে যাওয়ার রাস্তা আমি আবারো ভুলে যাই। অনেকক্ষণ খোঁজতে খোঁজতে সেই বিল্ডিংয়ের খোঁজ পাই, যেখানে মিম আছে।

আমি যথারীতি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফাইয়াজকে নিয়ে বিল্ডিংয়ের ভিতরে যাই।


-(ফাইয়াজ বলল) ভাই, এত সুন্দর জায়গা, এত সুন্দর বিল্ডিং, মনে হচ্ছে এখানেই থেকে যাই। কিন্তু ঐ লোক গুলোকে দেখলে খুব ভয় করে। মনে হয়, কোনো পূর্ণিমা রাতে কবরের সব লাশ গুলো উঠে রোবটের মত হাঁটছে।


-(আমি বললাম), ঠিক বলেছো ফাইয়াজ। তবে আমাদের ঠিকানা এটা নয়। আমরা পৃথিবীর বাসিন্দা। আমাদেরকে পৃথিবীতেই ফিরে যেতে হবে।

-হুম ভাই।


আমি ফাইয়াজকে নিয়ে ঐ ভদ্র লোকের কাছে নিয়ে যাই, যিনি গতবার মিমের কাছে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

ভদ্র লোকের কাছে যাওয়ার পর, তিনি তার রীতি অনুযায়ী ফাইয়াজ আর আমাকে খাবার পরিবেশন করান। ফাইয়াজ প্রথমে খেতে চায় নি কিছুটা ভয়ে।

আমি খাওয়ার জন্য ইশারা করলে, সে খায়।

যাহোক, খাবার শেষে তিনি আমাদেরকে মিমের কাছে নিয়ে যান।

মিমের কাছে যাওয়ার পর ঐ ভদ্র লোক চলে আসেন।

মিমের সাথে আমি ফাইয়াজের পরিচয় করিয়ে দেই।

দেখালাম, ওরা দু'জন পাশাপাশি এলাকার। যাক, ভালই হয়েছে।


-মিমকে বললাম, তোমার ঘড়িটি পাওয়া যায়নি।

-(মিম বলল), তাহলে এখন উপায়?


আমি আমার ঘড়িটা খোলে মিমের হাতে দিয়ে বললাম, এটা তোমার হাতে দাও।

তারপর তোমরা দু'জন পৃথিবী তথা বাড়িতে যাও।

-(মিম বলল), আর আপনি?

-আমি ফাইয়াজের জন্য এখানে অপেক্ষা করবো।

-(ফাইয়াজ বলল), মানে?

-মানে তুমি মিমকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আবার এখানে আসবে। মিমের যে ঘড়ি অর্থাৎ আমার যে ঘড়িটা মিমকে দিয়েছি সেটা তুমি আসার সময় নিয়ে আসবে। পরে আমরা দু'জন যাবো।

-(ফাইয়াজ বলল) কিন্তু আমি যদি আবার না আসতে পারি?

-একবার যখন আসতে পেরেছো তাহলে আবার পারবে। আর এখন আসার সময় উভয় ঘড়িটাই নিয়ে আসবে। রাতে ঘুমানোর সময় দুই হাতে উভয় ঘড়িটাই পরে ঘুমাবে।

-(মিম বলল), কিন্তু আপনাকে রেখে আমরা যেতে পারবো না।

-দেখো, এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

-(মিম বলল) উপায় আছে, আপনারা দুজন যান। তারপর আপনি উভয় ঘড়ি নিয়ে আবার ফিরে আসবেন। ততক্ষণ আমি এখানেই অপেক্ষা করবো।

-না, এটা হবে না। আমি এখানে থাকতে পারবো। আমি চাই না তুমি রিস্কে থাকো। কথা না বাড়িয়ে তোমরা দু'জন তাড়াতাড়ি যাও।

আর এখানে ফাইয়াজ আসা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো।


মিম যেতে রাজি না হলেও আমি জোর করে তাদেরকে পাঠাই।

অবশেষে ফাইয়াজ আর মিম চলে যায়।


আমি এই ঘরে বসেই ফাইয়াজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।

ভিতরে বিশাল জায়গা, ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগলাম।

মিমের বিছানার পাশে, নিজ হাতে বানানো একটা কলম আর কাগজ কেটে ছোটখাটো একা ডায়েরি পেলাম।

মিম মেয়েটা মনে হয় ডায়েরিতে কিছু লিখেছে। আর যাওয়ার সময় তা নিতে ভুলে যায়।


আমি ডায়েরিটা পড়তে শুরু করলাম। ডায়েরির প্রথম পেইজেই বড় করে লিখা ছিল মিমের নাম।

ডায়েরিতে লিখা ছিল, "আমার নাম মুনতাহা মিম। আমার কোনো ভাই বোন নেই। পরিবার বলতে মা-বাবা আর আমি। পড়াশুনা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত। আমি খুব মেধাবী স্টুডেন্ট ছিলাম। লেখা-পড়ায় সবসময় ফাস্ট হতাম। মেধা ভালো ছিল বলেই মা-বাবা সাইন্স নিয়ে পড়ায়। নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী আমি আমার দৈনন্দিন কাজ করতাম। তবে যখন আমার সামনে নতুন কোনোকাজ আসতো, তখন রুটিনের তোয়াক্কা না করে ঐ কাজটি করার চেষ্টাই করতাম। একদিন রাতে নেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে আমার সামনে একটি 'ব্ল্যা ম্যাজিক'- এর আর্টিকেল আসে। আমি কৌতূহল নিয়ে সেই আর্টিকেলটা পড়ি। প্রথমে আমি তা বিশ্বাস করিনি। তারপরও সখে পড়তে থাকি। আর্টিকেলে লিখা ছিল, এমন এক জগতের কথা, যে জগতে কোনো ঘুম নেই, নেই কোনো অশান্তি। আছে শুধু আরাম আয়েশ আর চোখ ধাঁধানো চাকচিক্যময় দৃশ্য। আমি আরো কৌতূহল নিয়ে পুরোটা আর্টিকেল পড়ি। উক্ত আর্টিকেলে এটাও লিখা ছিল যে, কীভাবে ঐ জগতে প্রবেশ করতে হয়।

আমার কিছুটা অবিশ্বাস হলেও, আমি একদিন রাতে, বাবা-মা ঘুমিয়ে পরার পর, আর্টিকেলের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু করতে লাগলাম।

আর্টিকেলে প্রথমে একটি ঘড়ি বানানোর কথা বলা হয়।

আর আমি ঐ দিন রাতেই হুবহু দুইটা ঘড়ি বানাই। সর্বশেষে বলা হয়েছিল উক্ত ঘড়িটা হাতে পরে রাতে ঘুমালে ঐ জগতে প্রবেশ করা যায়।

কিন্তু আমি রাতে তা হাতে পরে ঘুমাইনি। পরেরদিন সকালে আমি সানিকে ফোন দেই। (সানির সাথে আমার দুই বছরের রিলেশন। আমি যা বলি সে তাই করে)

ফোন রিসিভ করার পর সানিকে বলি, তুমি এখন কোথায় আছো? তাড়াতাড়ি আমার বাসার সামনে আসো। তোমার জন্য একটা গিফট্ আছে।

সানি বলল, ওকে আসতেছি।

 তারপর ফোন কেটে দিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।


প্রায় পনেরো মিনিট পর সে আসে।

আমি তার কাছে গিয়ে ঘড়িটা গিফট্ করি।

-(সানি বলল), এটা কেমন ঘড়ি? এত সাদা কেন?

-এটা আমি নিজে বানিয়েছি শুধু তোমার জন্য। আচ্ছা এখন যাও আর রাতে ফোন দিও।

তাই বলে আমি তার কাছ থেকে চলে আসি, আর সে ও চলে যায়।

রাত ১১টার সময় সে আমাকে ফোন দেয়,

-(আমি) তোমার হাতে ঘড়িটা আছে?

-(সানি) হুমম আছে।

-ঘড়িটা পরেই রাতে ঘুমাবে, কেমন?

-আচ্ছা বাবু, ঠিক আছে। আমি তো ঘড়িটা এখন পর্যন্তও হাত থেকে খুলিনি।

-গুড বয়। আচ্ছা এখন রাখি, তুমি ঘুমাও। পরে কথা হবে।

-ওকে, আমার ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাই। বায়।

-ওকে বায়।


আমি তাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক সম্পর্কে কিছুই বলিনি।


ঐ রাতে সানি আর আমি ঘড়ি দুটো পরে ঘুমিয়ে পড়ি। আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছিল না। তারপরও কিছুটা বিশ্বাস আর ভয়ের কারণে তাকেও ঘড়িটা পরতে বলি। যদি সত্যি সত্যিই ঐ জগতে প্রবেশ করি, তাহলে যেন তাকেও সাথে পাই। তাই ঘড়িটা সানিকেও পরাই।

১২ টার আগেই আমরা দুজন ঘুমিয়ে পড়ি। 

হঠাৎ ঘুম ভাঙে আর নিজেকে আবিষ্কার করি সাদা আকাশ আর সাদা জমিনের মাঝে।

একটু দূরেই দেখি সানিকে দেখা যায়। দেখছি, বেচারা হ-হুতাশ করছে। তার কাছে গিয়ে তাকে অভয় দিয়ে সবকিছু খোলে বলি।

কিন্তু সে আমার উপর অনেকটাই রাগ করে।

আর তার ঘড়ি খুলে দূরে কোথাও ছুড়ে মারে।

এখন আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। ঘড়ি ছাড়া তো আর ফেরত যেতে পারবো না। তাকে অনেকক্ষণ বুঝিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে শান্ত করি। তারপর ঘড়িটা খোঁজতে থাকি, কিন্তু কোথাও ঘড়িটা পাইনি।

তারপর তাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নদীর কাছে যাই।

সেখানে গিয়ে দেখি ঐ চাকচিক্যময় বিল্ডিং আর সাদা সাদা মানুষ গুলোকে দেখা যাচ্ছে।

সানি ভয় পেলে ও আমি তাকে অভয় দেই। আর আর্টিকেলে যেরকম লিখা ছিল আমি সেরকমই সব করতে থাকি। তাকে নিয়ে নৌকায় উঠি। তারপর বৃত্তে পা রাখি। নৌকাটি সোজা চলতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ মধ্যখানে গিয়ে নৌকাটি থেমে যায়। কিছুতেই নৌকাটি সামনে ও যাচ্ছে না আবার পিছনেও আসছে না। পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় আমরা পানিতেও নামতে ও পারছি না।


হঠাৎ দেখলাম সাদা সাদা লোক গুলো আমাদের নৌকার দিকে আসছে। কিন্তু আর্টিকেলে লিখা ছিল যে, তারা নদীর পাড়ে আসে না। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। তারা আসতে আসতে একদম আমাদের কাছে চলে আসে।

তারা পানির উপর দিয়ে খুব আস্তে আস্তে রোবটের মত হেঁটে আমাদের নৌকার একদম কাছে চলে এসেছে।

এবার সানি আর আমি দু'জনেই খুব জোরে চিৎকার দেই। নাহ, এরা কিছুতেই থামছে না। 

এরা আমাদের নৌকার কাছে এসে, শুধু সানিকে টেনে নৌকা থেকে নিয়ে যায়। সে খুব জোরে চিৎকার করছে আর আমি খুব জোরে কাঁদতেছি। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে তার হাতে ঘড়িটি না থাকায় তারা এমন করছে। আর এদিকে সানিকে নৌকা থেকে নামানোর সাথে সাথে নৌকাটি চলতে শুরু করে আর আমাকে ওপাড়ে নিয়ে যায়।

আর তাকে ওরা দু'হাতে ধরে টেনে টেনে পানির উপর দিয়েই কোথাও যেন নিয়ে যাচ্ছে।

অবশেষে আমি আমার ঘড়িটা খুলে তার কাছে উড়িয়ে মারি।

কিন্তু সে তা ধরতে পরেনি, আর ঘড়িটা পানির নিচে চলে যায়। সানি এখন আমাকে বলতেছে, 'মিম ভাগো, মিম ভাগো'। কী করবো কিছুই বুঝতেছি না! দেখলাম ওদের কয়েকজন এখন আমার দিকে আসছে।

আমি ভাগতে শুরু করলাম"


একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মিমের ডায়েরিটা আমি বন্ধ করে দিলাম, আর ভাবতে লাগলাম,

এই রহস্যময় এলাকায় আমি, ফাইয়াজ, সানি ও মিম ছাড়া আরো অনেকেই মনে হয় এসেছে, যারা ঐ আর্টিকেলটি পড়েছে।

আর এদিকে তিনদিন হয়ে গেল এখনো ফাইয়াজের আসার কোনো খবর নেই!


রহস্যময় এলাকা...🏚️👽

পর্ব: ০৪ ও শেষ 


আরো এক সপ্তাহ হয়ে গেল, এখনো ফাইয়াজের কোনো খবর নেই।

ফাইয়াজের আশা ছেড়ে দেই।

আর মিমের ডায়েরি পুরোটা পড়ে যা বুঝলাম, তা হলো- সানির কাছে ঘড়ি না থাকায় তাকে তারা মেরে ফেলে।

আর মিম পালিয়ে তার জীবন রক্ষা করে। 

এখন আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে। কিন্তু আমার কাছে কোনো ঘড়ি নেই। তাই প্রথমে আমাকে একটা ঘড়ি খোঁজে বের করতে হবে। কিন্তু বিশাল আকারের এই চার দেয়ালের ভিতরে ঘড়ি কোথায় পাবো? আর ঘড়ি ছাড়া তো দরজাও খুলতে পারবো না! 

মাথায় নানান চিন্তা নিয়ে ঘরের পুরোটা ভিতর ঘুরে বেড়াচ্ছি। 

হঠাৎ দেখি কিছু সামনে গ্লাসের একটি দেয়াল। কিছু আশা নিয়ে আমি দেয়ালের কাছে যাই।

একদম কাছে গিয়ে দেখি, দেয়ালের ওপাশে যাওয়ার মত কোনো ব্যবস্থা নেই।

গ্লাসের ভিতর দিয়ে ওপাশের সবকিছু দেখা যাচ্ছে।

এই প্রথম আমি ওখানে দেখলাম, সবুজের সমারোহ।

মনে হচ্ছে ওখানে সবুজ ঘাস আছে। কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলাম, এখানে সবুজ ঘাস কেন? আর কোথাও তো ঘাস দেখিনি!

ভাবতে ভাবতে বুঝতে পারলাম ওখানে তাদের কবরস্থান। তাদের কেউ যদি মারা যায় তাহলে ওখানেই মনে হয়, তাদেরকে দাফন করা হয়।

আমি ঠিক করলাম, ওখানে যাবো এবং কবর খোঁড়ে দেখবো যে, কোনো লাশে ঘড়ি আছে কিনা। 

কিন্তু জায়গাটা আমার কাছে অনেক ভয়ংকর মনে হচ্ছে।

কখনো তো সূর্যের দেখা পাইনি আবার পরিবেশটা আরো ভৌতিক, তাই অনেকটাই ভয় হচ্ছে।

আমাদের পৃথিবীতে রাতের আকাশ ডুবে যাওয়ার পর আর সূর্য উদিত হওয়ার আগে যেই সাদা আভা আকাশে দেখা যায়, ঠিক তেমনই লাগছে ওখানকার পরিবেশ।

আর এখন ঘড়ি ছাড়া এখান থেকে কোনো ভাবেই বের হতে পারবো না।

তাই একটা চক আঁকলাম। আমাকে যেকোনো ভাবেই এই গ্লাসের দেয়াল টপকাতে হবে। তাই প্রতিদিন আমি দেয়ালের নিচ দিয়ে মাটি খোঁড়তে থাকি।

দেয়াল এতটাই গভীর ছিল যে, তার নিচের অংশ আমাকে খোঁজে বের করতে ১১ দিন লেগে যায়।

অতঃপর ১৫ দিনের মাথায় দেয়ালের ওপাশে যেতে সক্ষম হই।

এই পনেরো দিনের ভিতরে নতুন কোনো লাশ দাফন করতে দেখিনি।

দেয়ালের ওপাশে গিয়ে প্রথমে আমি চতুর্দিক চেয়ে চেয়ে দেখি, যে তাদেরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে কি-না।

যদি তারা আমাকে দেখে ফেলে তাহলে আমার মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে।

আর দেয়ালের নিচ দিয়ে যে সুরঙ্গ করেছি তাতে শুধু আমিই বা একজন মানুষ প্রবেশ করতে পারবে এবং বের হতে পারবে।

তাদের মত কোনো লোক তাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই যদি কোনোভাবে সুরঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করতে পারি তাহলে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি।


এখন নতুন কবর খোঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোনটা নতুন কোনটা পুরাতন কিছুতেই বুঝতে পারছি না। একেকটা কবর প্রায় ১৬ থেকে সতেরো হাত লম্বা।

একটা কবর দেখে কিছুটা নতুন মনে হচ্ছে অন্য কবরের তুলনায়।

ঐ কবর টা খোঁড়তে শুরু করলাম। খোঁড়তে খোঁড়তে অনেকটাই খোঁড়ে ফেললাম কিন্তু কোনো লাশ পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।

হঠাৎ দেখলাম, ঐ সাদা সাদা লোক গুলো রোবটের মত সারি বেঁধে কবরস্থানের দিকে আসছে, আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে সুরঙ্গের ভিতর দিয়ে গ্লাসের দেয়ালের ওপাশে চলে যাই।

তাদেরকে দেখলাম, সুরঙ্গের দিকেই আসছে। আমি এখান থেকে সরে যাই।

দূরে গিয়ে দেখতে লাগলাম তারা কী করে? দেখলাম তাদের প্রথমে যে ছিল সে সুরঙ্গের ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করছে।

আমি নিশ্চিত যে, তাদের কেউ এই দিকে প্রবেশ করতে পারবে না।

প্রায় আধ ঘন্টা পর তারা এখান থেকে চলে যায়।


আমি আবার অনেক সাহস আর ভয় নিয়ে সুরঙ্গেরর ভিতর দিয় কবরস্থানে যাই।

প্রথমে চারপাশটায় আবার ভালোভাবে চোখ বুলাই।

দেখলাম তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না।


আবার কবর খোঁড়তে শুরু করি। হঠাৎ আমার মাথায় কেউ পেছন থেকে আঘাত করে।

আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আর কিছুই বলতে পারি না।


কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে, নিজেকে একটি অন্ধকার গুহায় দেখতে পাই। আমার মাথার কাছে এক লোককে পেরেশান অবস্থায় দেখতে পাই। অন্ধকারে তার চেহারাটা না দেখতে পারলেও বুঝা যাচ্ছে যে,ঐ লোকটি খুব পেরেশানে আছে।

তার শারীরিক গঠন আর আকৃতিতে বুঝা যাচ্ছে যে, সে আমাদের মতই একজন মানুষ।

আমার নড়াচড়ার শব্দ পেয়ে ওই লোকটি আমাকে বলতে লাগল, "প্লীজ আপনি ভয় পাবেন না।"

-(আমি বললাম), আপনি কে? আর আমার মাথায় আঘাত করলেন কেন?

-আমি আপনার মতই একজন মানুষ, আপনাকে দেখে ভয় পেয়ে যাই আর আমার হাতে থাকা কংকালের একটি হাড় দিয়ে আপনার মাথায় আঘাত করি, আর সাথে সাথেই আপনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর স্পষ্টভাবে আপনার চেহারা দেখার পর বুঝতে পারি আপনি এই জগতের কেউ নন। তাই আপনাকে এই গুহায় নিয়ে আসি।

-এটা কীসের গুহা? আর এই গুহাটা কোথায়?

-এটা মূলত কোনো গুহা নয়, আমি নিজের সেইফটির জন্য অনেক গভীর করে এই জয়গাটা গুহার মত খনন করি। আর এটা কবরস্থানের পাশেই।

-তা বুঝলাম, কিন্তু আপনি এখানে আসলেন কীভাবে?

-সে অনেক লম্বা কাহিনী। আপনি আসলেন কীভাবে?


আমি তাকে এখানে আসার সমস্ত কাহিনী বললাম। এবং মিম, ফাইয়াজের কাহিনী ও সানির মৃত্যুর ঘটনা ও তাকে খুলে বললাম।

আমার এই সংবাদ শুনার সাথে সাথে সে বলল, "আমি ও আপনাদের মত এখানে এসেছি, তবে ঘড়ির কাহিনী সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই।

এবং আমি ছাড়া আরো অনেকেই যে এখানে এসেছে, তার সম্পর্কেও আমার কোনো ধারনা ছিল না।"


-(আমি বললাম), আপনাকে দেখে প্রথমেই বুঝতে পারি যে, আপনিও আমাদের মত ভুক্তভোগী। আচ্ছা আপনার নাম কী?

-আমার নাম সাইফ, আর আপনার?

-আমার নাম আবরার। কিন্তু আপনার ঘড়িটা কোথায়? হারোলো কীভাবে?

-ঘড়িটা হারায়নি, ঘড়িটা কিছুক্ষণের জন্য হাত থেকে খুলেছিলাম, তারপরই দেখি, ওই সাদা সাদা লোক গুলো আমার দিকে আসছে, আমি ভয় পেয়ে ঘড়িটা রেখেই এখানে পালিয়ে আসি। পরবর্তীতে সবার হাতে ঘড়ি দেখে আমার মনে হলো এখানে থাকতে হলে বা নিজের জান বাঁচাতে হলে ঘড়িটা খুব প্রয়োজন। তাই এই কবরস্থানের পাশে অনেক কষ্ট ও ভয় নিয়ে প্রায় পাঁচ দিনে গুহার মত একটি গর্ত খনন করি, আর এখানে লুকিয়ে থেকে নতুন লাশের অপেক্ষা করতে থাকি।

নতুন চারটা লাশকে দাফন করতে দেখেছিলাম। যখন চিন্তা করলাম একটু পরে কবর খোঁড়ে লাশ থেকে ঘড়ি চিনিয়ে আনবো তখনই ওই লোক গুলোকে এখানে আসতে দেখি। তাই আবার গর্তে ঢুকে যাই। তারা চলে যাওয়ার পর আবার বের হই আর আপনাকে দেখি আর ভয় পেয়ে আপনার মাথায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি হাড় দিয়ে আঘাত করি।

-(আমি বললাম) সব ঠিক আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে খুব তাড়াতাড়ি আমাদেরকে দু'টো ঘড়ি সংগ্রহ করতে হবে। নতুন চারটি লাশকে কোথায় দাফন করা হয়েছে?

-এইতো একটু সামনেই।

-ওকে, তাহলে চলো এবার আমরা এই গর্ত থেকে বের হই।


আমরা গর্ত থেকে বের হয়ে নতুন কবর গুলোর পাশে যাই। আর আমি সাইফকে বলে দেই, আপনি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ান, আমি খবর খুঁড়ছি।

আর তাদের আসার কোনো আবাস দেখলেই আমাকে ইশারা দিয়ে আমার তৈরা করা সুরঙ্গের ভিতর দিয়ে সোজা ঐ রুমে চলে যাবেন। আমি ও খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবো।


যথারীতি, আমি সাইফকে পাহারায় রেখে ধারালো কিছু হাড় দিয়ে খবর খোঁড়তে থাকি।

চারটা নতুন কবরের মাঝে একটা কবরের প্রায় অনেকটাই খোঁড়ে ফেললাম।

একেকটা কবর যেহেতু ১৬ থেকে ১৭ হাত লম্বা ছিল, তাই কবরের একপার্শ খনন করতে থাকি।

কিছুটা গভীরে যাওয়ার পর দেখলাম, সাদা একটি বক্স দেখা যায়।

আমি সাইফকে ডেকে দু'জনে মিলে বক্সটি উপরে তুললাম। কিন্তু বক্সটি খোলার কোনো মাধ্যম দেখছি না। আমি ও সাইফ দুজনেই সাহস হারিয়ে ফেলি। মনে হচ্ছে ঘড়ি ছাড়া বক্সটি ও খোলা যাবে না।

কী করা যায়! সত্যিই কি ঘড়ি ছাড়া বক্স খোলা যাবে না?

তাহলে কি আমরা আর ঘড়ি সংগ্রহ করতে পারবো না?

তখনই সাইফ আমাকে প্রত্যেকটা কবরের মাথায় একটি বৃত্ত  দেখায়।

বৃত্তটি দেখার পর এখন মনে কিছুটা আশার জোগান দেয়।

আমি সাইফকে আবার পাহারায় রেখে বৃত্তটির কাছে যাই। আর ভয়ে ভয়ে বৃত্তে পা রাখি আর সাথে সাথেই বক্সটি খোলে যায়। কিন্তু বক্সের ভিতরে কোনো ঘড়ি তো দূরে থাক কোনো লাশই নেই। কী অবাক করা কাণ্ড! লাশ নেই শুধু বক্স কেন?

সাইফ দূর থেকে বিষয়টা দেখে খুবই অবাক হয়।

আমি বক্সটাকে বন্ধ করে আবার কবরে রেখে দেই।

এবার দ্বিতীয় কবরের বৃত্তে পা রাখার জন্য এগিয়ে যাই।

আমি বৃত্তে পা রাখি আর এমন সাইফ বলল ওরা আসতেছে। সাইফ এ কথা বলেই সে সুরঙ্গের ভিতরে চলে যায়।

আর আমি বৃত্ত থেকে পা সরিয়ে দৌড় দিতে যাবো এমতাবস্থায় আমি আর পা সরাতে পারছি না।

দেখতে পেলাম ওই লোক গুলো কবরস্থানের দিকেই আসছে।

আমি অনেক চেষ্টা করলাম পা সরানোর জন্য কিন্তু কিছুতেই পারছি না।

ত্রিশ সেকেন্ডের মাথায় হঠাৎ আমার পা নিচের দিকে মানে কবরের ভিতরের দিকে যেতে থাকে। আর এক মিনিটের ভিতরে আমার পুরো দেহ কবরের ভিতরে চলে যায়। আর এদিকে সুরঙ্গের ভিতর থেকে সাইফ 'আবরার, আবরার' বলে চিৎকার করছে।

কবরের ভিতরে চলে যাওয়ার পর আমি আর কোনো চিৎকাররে আওয়াজ শুনতে পাইনি। কবরের ভিতরটা বেশ অন্ধকার। আর অনেক পঁচা গন্ধ আসছে। আমার বমি বমি ভাব হচ্ছে। হঠাৎ হাতের মাঝে তরল পিচ্ছিল কী যেন একটা লেগেছে। আমি হাত সরিয়ে নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি, আর এমন সময় দেখি আমার পুরো শরীর পিচ্ছিল আর হালকা ভিজে গেছে। তখন বুঝতে পারলাম আমি একটা লাশের উপর শুয়ে আছি। আমি জোরে চিৎকার আর কান্না করতে লাগলাম, তখন দেখলাম আমার কান্নার আওয়াজ আমার কানেই ফিরে আসছে। তখন আরো নিশ্চিত হলাম আমি শুধু কবরের ভিতর নয়, সাদা বক্সের ভিতরে একটি লাশের উপরে শুয়ে আছে। কি জঘন্য আর বাজে স্মেল! ওয়াক, থু! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। শরীরের প্রত্যেকটা জোড়া ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। এখানে আর এক সেকেন্ড থাকলে মনে হয় আমি মারা যাবো।

হঠাৎ লাশটার নড়াচড়া অনুভব করলাম।

মনে মনে দোয়াদরুদ পড়তে লাগলাম।

এই অবস্থাতেও আমার ঘড়ির চিন্তাটা মাথায় আসে,  আর আমি তখনই লাশের হাত চেক করি।

আর ঘড়িটা পেয়ে যাই। কিন্তু আমার যে নিঃশ্বাস বাকি আছে, তাতে মনে হয় না আমি ঘড়িটি লাশের হাত থেকে খুলতে পারবো।

আমার নিঃশ্বাস একদম সংকীর্ণ হয়ে আসছে। আর এদিকে লাশের সাদা দুটি হাত নড়েচড়ে উঠতে লাগল। আমার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ অনুভব করলাম আমি খুব ফ্রী ভাবেই শ্বাস নিতে পারছি। চোখ মেলে দেখি সাইফ বক্সটা খুলেছি। এবার প্রাণভরে অনেক নিশ্বাস নেই।

আর আমি বেঁচে আছি দেখে সাইফ একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।

আর তার ফাঁকে সাইফ লাশের হাত থেকে ঘড়িটা খুলার চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না।

আমি দ্রুত শোয়া থেকে উঠে ধারালো একটি হাড় নিয়ে লাশের লম্বা সাদা হাতটির অর্ধেক কেটে ফেলি।

আর ঘড়িটি টান মেরে বের করে নেই। ঘড়ি খোলার সাথে সাথে লাশটির নড়াচড়া ও বন্ধ হয়ে যায়।

এবার আরো একটি ঘড়ির প্রয়োজন। এবার দেড়ি না করে তাড়াতাড়ি আরেকটা কবরে গিয়ে সাদা বক্স বের করে, বৃত্তে পা রেখে বক্সটি খোলে খুব সাধারণ ভাবেই লাশের হাত থেকে দ্বিতীয় ঘড়িটি বের করি।

এবার দু'জনে দুটো খুশির চিৎকার দেই।

সাথে সাথেই ঘড়িটি হাতে দেই। কিন্তু এ কি! আমাদের দুজনের দেহ'ই বিশাল আকার ধারণ করে। আর শরীর একদম সাদা হয়ে যায়। আর দাড়ি অনেক লম্বা হয়ে যায়।

একবারে সেম টু সেম তাদের মত দেখতে দেখাচ্ছে।

ঘড়িটা আবার হাত থেকে খুলে দেখি, আমাদের শারীরিক গঠন আগের মতই হয়ে যাই।

তাই নিশ্চিন্ত হয়ে দুজনে ঘড়িটা পরে তাদের সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে হেঁটে আমরা নদীটা পার হই।

তারপর মূল  বৃত্তের কাছে গিয়ে ঘড়িটা ঘুরাই আর কিছুক্ষণ পর দেখি আমরা পৃথিবীতে চলে এসেছি।

আশেপাশে কোনো লোকজন আমাদের শারীরিক আকৃতি দেখার আগেই ঘড়িটা খুলে ফেলি।

ওয়াও! কি যে ভালো লাগছে।


তারপর মিম আর ফাইয়াজকে খুঁজতে থাকি, কিন্তু তাদেরকে কোথাও খোঁজে পাইনি।

তারপর দেশে সরকারি ভাবে সবাইকে এসব ঘড়ির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।

এবং সব ঘড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়।


কিন্তু আমার ঘড়িটা আমি রেখে দেই :)


.......সমাপ্ত.......


লেখক: Abrar Faiyaz Sani


এমন আরও রহস্যময় গল্প পড়ুন।