গল্প:সাপ লুডু | রহস্যময় গোয়েন্দা গল্প

 রহস্যময় গল্প

রহস্যময় গল্প

সাপ লুডু...🫣👻

পর্ব: ০১ 


আমার বিয়ের ঠিক দুই দিন আগে আমার হবু বউয়ের বাজে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।


এক রাতেই শহরের দেয়ালে বাজে ছবি দিয়ে পোস্টার লাগিয়ে ভর্তি করে দিয়েছে। ভার্চুয়াল জুড়ে এখন মিলির বাজে ছবি এবং বাজে ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে। বিয়ের জন্য সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এক মুহুর্তে সবকিছু তছনছ হয়ে গেলো।


খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম কারণ মিলিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। মিলিতো এই ধরনের কোন মেয়ে না। কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে মিলিকে বাজে বানানোর উদ্দেশ্য কি আর কে'ই বা এমন করল। মিলির সাথে আমার কোনো প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু আমি নিজ থেকে মিলিকে অনেক পছন্দ করি।

আমি পেশায় একজন ডাক্তার আর মিলি আমি যে হসপিটালে জব করি সেই হসপিটালের একজন ডাক্তার।আমরা দুজনেই পেশায় ডাক্তার। ওর সাথে আমার পরিচয় দুই বছর আগে থেকেই আমরা দুজনে একসাথে এমবিবিএস পাশ করে এই হসপিটালে জয়েন করেছি।


আমার যেহেতু মিলিকে পছন্দ সেহেতু আমার ফ্যামিলির অমতের কোনো কারনই নেই।আমার কথা অনুযায়ী আমার বাবা মা মিলির বাবা মায়ের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলেছে।তাদেরও কোনো ধরনের আপত্তি ছিলো না।


দুই পরিবারে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিকঠাক করে রাখা হয়েছিল। আমি আমার বন্ধুবান্ধব বা আমার যতগুলো স্টাফ ছিল সবাইকে আমি আমার বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই এমন একটা পরিস্থিতি হয়ে গেছে যে আমি এখন কারো সামনে মুখ দেখাতে পারব না।


মিলির আপত্তিকর ভিডিও ছবি ভাইরাল এরপরে আমি মিলির সাথে দেখা করতে বাসায় যাই। আমি আসলে বুঝতে পারি যে কেউ হয়তো শত্রুতা ভাবে মিলিকে ফাঁসিয়েছে। মিলি শুধু আমাকে এটুকুই বলেছিল যে আগে কখনো কারো সাথে রিলেশনে জড়ায়নি।


আমার একটা ফ্রেন্ড পুলিশ অফিসার। মিলির এই ব্যাপার নিয়ে আমি আমার ফ্রেন্ডকে জানাই


আমি জানি যে মিলির কোন দোষ নেই কিন্তু আমি আমার ফ্যামিলিকে কিভাবে বুঝাবো যে মিলি নির্দোষ। হয়তো কেউ কোন বাজে ভিডিও সাথে মিলির ছবি ম্যাচিং করে এমন একটা পরিস্থিতি ঘটিয়েছে।


মিলির এইসব ঘটনা শুনে আমার বাবা আমাদের বিয়ে ক্যান্সেল করে দিয়েছে। আমার বাবা বেক্তিগতভাবে মিলির বাবাকে অনেক অপমান করেছে। আমি আমার বাবাকে কিছু বলে বুঝাতে পারি নাই। আমি শুধু মিলিকে আশ্বাস দিলাম যারা মিলির এত সর্বনাশ করেছে তাদের যেকোনো ভাবে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।মিলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক্তারি করবে না।


মিলি রিজেইন দিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে। মিলির সাথে আমার প্রায়ই কথা হতো,কিন্তু মিলি কোথায় আছে সেটা আর আমাকে জানায়নি। আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছি ঠিকানাটা আমাকে জানাতে। কিন্তু না আমি ব্যর্থ হয়েছি ঠিকানাটা জানতে।


এর মাঝে হঠাৎ করে মিলি আমাকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে বলে যে মিলি আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি সময় করে মিলির সাথে দেখা করি...


- আবিদ।!আপনি আমাকে চিনেন। যেহেতু আমরা দুজনে একই মেডিকেলে আছি। বিশ্বাস করুন আমার অন্য কারো সাথে কোন ঝামেলা ছিল না কিন্তু দেখেন কে বা কারা আমাকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আমার বাবা-মাকে লোকজনের কাছে অপমান করেছে। লোকজনের কাছে মুখ দেখাব কিভাবে?


- মিলি আমি আপনাকে শুধু একটা কথাই বলবো যারা আপনার এভাবে ক্ষতি করেছে তারা একসময় পাপের শাস্তি ঠিকই পেয়ে যাবে। কিন্তু আপনার রিজেইন নেওয়া ঠিক হয়নি। আপনি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে ডাক্তারী পাশ করেছেন। আপনার বাবা-মা আপনাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। তাদের স্বপ্নটা আপনার নষ্ট করা ঠিক হয়নি। আপনার হাতে এখনো সময় আছে রিজেইন লেটার তুলে নিয়ে আপনি আবার ডাক্তার হয়ে ফিরে আসুন। আর আমি আমার বাবা মাকে বুঝাবো আপনাকে নিয়ে যা হয়েছে কিনা তাতে আমার কোন আপত্তি নাই আর হ্যাঁ আমি আপনার বিষয়টা দেখবো।


- আপনার আর কিছুই দেখতে হবে না। আসলে আমি এই শহরের আশপাশে রয়েছি। আমাদের দেশের বাড়িটা পুরোপুরি ঠিক না করে সেখানে যেতে পারতেছিনা। আপনার সাথে আমার একটা জরুরী কথা ছিল সেজন্য আপনাকে এখানে আসতে বলা।


- জি বলুন। কি বলবেন আমাকে আমি আপনাকে? শুধু একটাই রিকোয়েস্ট করবো আবার মেডিকেল এ জয়েন করুন।


- ডাক্তার নেহাল আমাকে বিয়ের করার প্রস্তাব দিয়েছিলো। আমি সরাসরি না করে দিয়েছিলাম কারণ তাকে আমার মোটেও ভালো লাগে না। আমি বলছি না যে সে একটা খারাপ মানুষ। যথেষ্ট ভালো তারপরও নিজের মন থেকে আমি তাকে পছন্দ করতে পারি নি। সে যদি কাউকে দিয়ে আমার আমার সর্বনাশ করে?


- কী বলছেন এসব? ডাক্তার নেহাল তো এমন ধরনের কোন লোক নয় আর তাছাড়া ডাক্তার নেহাল আমার একটা ভালো বন্ধু।আমাদের বিয়ের কথা শুনে খুশি হয়েছিলো।


- হ্যাঁ আপনার বন্ধু হতে পারে কিন্তু আমার ভাবনার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে যে ডাক্তার নেহার হয়তো এমনটা করেছে।


- আচ্ছা আপনি আগামীকাল আমার সাথে দেখা করতে পারবেন? আমার একটা জরুরী কাজ ছিল আর তাছাড়া আমার আজকে রাতে ডিউটি রয়েছে আমার একটু তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে।


- ঠিক আছে! আপনার কাজ থাকলে আপনি যেতে পারেন।তবে আমি আপনার সাথে আগামীকাল দেখা করতে পারব কিনা তার জানিনা। আপনার সাথে হয়তো আমার আর একটিবার কথা হতে পারে তারপর আপনার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হবে না।


- দেখুন আমি যেহেতু আপনাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাকেই বিয়ে করবো।


- আমার এইসব জানা শোনার পরে যদি কেউ আমাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে হয়তো সে আমাকে করুণা করে বিয়ে করবে। আমি এমবিবিএস পাশ করে ডাক্তার হয়েছি তাতে কি হয়েছে? আমার নামে যে একটা কলঙ্ক হয়ে গেছে এটাতো আমি মুছে ফেলতে পারবো না।আর কাউকে বোঝাতে পারবোনা যে আমার আসলে কোনো দোষ নেই।


- আপনি চুপ করেন তো। এভাবে ভাবছেন কেন? আপনাকে আমার ভালো লাগে!কিন্তু আমি বলছি না যে আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তবে আমি আমার নিজ থেকেই কিন্তু ফ্যামিলিতে বলেছিলাম আমি আপনাকে বিয়ে করবো। আর এখন যদি আমি আপনাকে বিয়ে বিয়ের কথা বলি এটা কি করুণার মধ্যে পড়বে?


- আমি এখন কিছু শুনতে চাচ্ছি না। তবে আমি আপনাকে এটাই জানিয়ে রাখলাম যে আমার এসবের পিছনে হয়তো ডাক্তার নেহালের হাত রয়েছে। আর এটাই জানাতে আমি আজকে আপনাকে আমার কাছে আসতে বলেছি। এখন আমি উঠি।


- আপনার যদি ডাক্তার নেহাল কে পুরোপুরিভাবে সন্দেহ হয় তাহলে আপনি থানায় ডায়েরি করে রাখতে পারেন।


- ডায়েরি করে আর কি হবে? ভালো কোনো সমাধান আমি পাবো?আমার নামে তো বাজে কথা রটিয়ে দিয়ে গেছে। তাতো আর কখনো মুছে ফেলতে পারবো না। আমি আপনাকে রিকোয়েস্ট করছি আপনি আর আমাকে এই ব্যপারে কথা বলবেন না। এখন উঠি আপনি ভালো থাকুন।


- আচ্ছা শুনুন সবকিছু বাদ দিয়ে আপনি আবার জয়েন করুন। আমাদের মেডিকেলে ফিরে আসুন। ভালো একটা সমাধান আপনি পাবেন। এভাবে হতাশ হওয়ার কোন মানেই নেই। মানুষের জীবনে কোনো না কোনো ভাবে আসবেই বাঁধা আসবে। বাঁধা পেড়িয়ে এই জীবনটা চালিয়ে যেতে হবে। আর আমার একটাই রিকুয়েস্ট আপনি আপনার ফোন কখনো অফ করবেন না আপনি কোথায় থাকেন সেই এড্রেস টা আমাকে একটু জানাবেন। আমি আমার মাকে নিয়ে আপনাদের বাসায় আবার আসবো।


মিলির সাথে কথা বলে আমি সোজা আমার বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমার ডিউটিতে চলে গেলাম। পরের দিন দুপুরবেলা আমি বাবা মা একসাথে খেতে বসেছি। খেতে খেতে বাবাকে বললাম....


- বাবা আপনিও জানেন আমিও জানি যে মিলির কোন দোষ নেই কেউ হয়তো মিলিকে ভাবে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। সেজন্য কি আমাদের উচিত হবে আমাদের এই বিয়েটা ক্যানসেল করে দেওয়ার। আর তাছাড়া মিলি যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে আমি মিলিকে চিনি একসাথে আমরা ডিউটি করেছি।


- আবিদ আমাদেরও তো একটা মান-সম্মান রয়েছে। তুই যদি মিলিকে বিয়ে করিস তাহলে লোকজনের মুখে বা তোর বন্ধুবান্ধবের কাছে তোর সারাটি জীবন পস্তাতে হবে। কেউ না কেউ তোকে খোটা দিবে তখন তোর অনেক কষ্ট লাগবে।আমিও তো বাহিরে চলাফেরা করি। আমিই বা কিভাবে লোকজনের সামনে মুখ দেখাবো। সুতরাং আমি একটা কথাই বলবো যে মিলির ব্যাপারে সমস্ত চিন্তা ভাবনা তোর মাথা থেকে মুছে ফেল। আর তুই একজন ডাক্তার। বেশ ভালো একটা ফ্যামিলির মেয়ে আমরা তোর জন্য নিয়ে আসতে পারবো। মিলির চেয়ে সুন্দরী মেয়ে তোর জীবনে আসবে। প্লিজ এই মিলির ব্যাপারে আমার কাছে আর কিছুই বলিস না। আর আমি কখনোই মেনে নিতে পারব না। আর তুই আমার একটা মাত্র সন্তান আমরা চাই তোর ভালই হোক।


আমি বাবার কাছ থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসলাম। আমি তাদের সামনে আর কিছুই বলতে পারলাম না। ওই যে তারা আমাকে লালন-পালন করে বড় করিয়েছে। টাকা ব্যয় করে আমাকে ডাক্তারী পাশ করিয়েছে এখন আমি তাদের জন্য ডাক্তার। তাদের কথা অমান্য কখনো হতেই পারবোনা।


পরের দিন ভোরবেলা আমি জানতে পারি ডাক্তার নেহাল খুন হয়েছে। খুব বিশ্রীভাবে ডাক্তার নেহালকে খুন করা হয়েছে। আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল ডাক্তার নেহাল কেন খুন হবে?.....


সাপ লুডু...🫣👻

পর্ব: ০২


ডাক্তার নেহাল খুন হয়েছে তার নিজ বাসাতেই। গত রাতে তার মেডিকেলে ডিউটি ছিল। ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরছে একা। ডাক্তার নেহালের ড্রাইভার কয়েকদিন এর জন্য তার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। সেজন্য ডাক্তার নেহাল নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে মেডিকেলে যেত আর বাসায় ফিরত। তার বাসায় আর কেউ ছিলনা। চার নাম্বার ফ্লোরে ডাক্তার নেহাল থাকতো।


সকালে ডাক্তার নেহালের একটা অপারেশন ছিল কিন্তু সকালে ডাক্তার নেহাল মেডিকেলে যায়নি। কয়েকবার ডাক্তার নেহালকে ফোন করা হয়েছিল মেডিকেল থেকে। কিন্তু ফোন পিক করেনি। একপর্যায়ে মেডিকেল থেকে ডাক্তার নেহালের বাসায় এক লোক যায়। গিয়ে দেখে দরজা ভেতর থেকে লক করা। কয়েকবার ডাকাডাকি করার পরেও ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ পেলো না।


বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন ডাক্তার নেহাল দরজা খোলো না। তখন সে লোকটা থানায় ফোন করে পুলিশ আনে।


দরজা ভেঙে ডাক্তার নেহালের রুমে যাওয়ার পরে দেখে ডাক্তার নেহাল উলঙ্গ ভাবে ফ্লোরে পড়ে আছে। সমস্ত ফ্লোর রক্তাক্ত করা। ডাক্তার নেহালের ডান হাতের পাঁচটা আঙ্গুল একটা ট্রেতে রাখা। ডাক্তার নেহাল যে বাসায় থাকতো সেই বাসাটা সম্পূর্ণভাবে পুলিশরা ঘেরাও করে আছে। তদন্ত পুলিশ অফিসার ডাক্তার নেহালের রুম তদন্ত করতে লাগল কোন রকমের ডকুমেন্ট পেল না। ডাক্তার নেহালের ডান হাতের পাঁচটা আঙ্গুল পাশের একটা ট্রেতে রাখা। তার বুকে চালিয়েছে ছুরি।ছয় ছয়টা ছুরির আঘাত ডাক্তার নেহালের বুকে করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম করানোর জন্য ডাক্তার নেহালকে পাঠিয়ে দেওয়া হল।


আমার কাছে এই ঘটনাটা একটা ঘোলাটের মতো লাগলো।গতকালই মিলি আমাকে বলল যে নেহাল নাকি মিলি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। এবং ডাক্তার নেহালকে নাকি মিলির সম্পূর্ণরূপে সন্দেহ হচ্ছে। তাহলে এই খুনটা মিলি করলো না তো?


ডাক্তার নেহাল খুন হয়েছে এই বিষয়টা মিলিকে জানানোর জন্য মিলির নাম্বারে কয়েকবার ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন দিয়ে দেখি মিলির নাম্বার অফ। কয়েকবারই চেষ্টা করেছি কিন্তু ফোন দিতে ব্যর্থ হলাম।


এখন আমার নিজেরই সন্দেহ হচ্ছে যে মিলি ডাক্তার নেহাকে খুন করেছে হয়ত।


দিন পেরিয়ে গেল সাতদিন। এর মাঝে মিলির সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারলাম না। এবং ডাক্তার নেহালের খুনের রহস্য খুঁজে পেল না পুলিশ অফিসার।


দিন দশেক পরে আমার নাম্বারে একটা রেড অ্যালার্ট এর মেসেজ আসলো। আমি মেসেজটা ওপেন করতেই অবাক হয়ে গেলাম। মেসেজটা ছিল এমন...


- মিস্টার আবিদ ধরুন আমি আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি কে তার পরিচয় আপনাকে আমি দিব না। তবে একটা কথা শুনে রাখুন ডাক্তার নেহালের খুনের পরের টার্গেট কিন্তু আপনি। সুতরাং আমি একটা কথাই বলবো আপনি নিজেকে একটু সেফ রাখবেন। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা। আপনি যে মেডিকেলে জব করেন আপনার শত্রু সেই মেডিকেলে রয়েছে এবং আপনাদের মধ্যেই হয়তো কেউ আপনাকে খুন করার চেষ্টা করবে যেমনটা ডাক্তার নেহাল কে করা হয়েছিল। এই বিষয়টা আপনাকে জানানোর দরকার ছিল সেজন্য আপনাকে জানালাম। তবে একটা কথা। আমাকে খুঁজে বের করার জন্য আপনি মোটেও চেষ্টা করবেন না। যদি আমাকে খুঁজে বের করতে চান তাহলে হয়তো আপনি আপনার নিজের জীবনটা রক্ষা করতে পারবেন না। তবে আপনি আপনার ফোন সবসময় সাথে রাখবেন আমি আপনাকে মেসেজ দিয়ে জানাবো। আপনি ভালো থাকবেন। "


মেসেজটা পড়ার পরে আমি সেই নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন দিলাম কিন্তু সেই নাম্বারে ফোন আর ঢুকাতে পারলাম না। এখন আমি কি করবো বুঝতে পারতেছি না। এই মেসেজের ব্যাপারে আমি কি আমার বাবা-মাকে জানাবো? আর আমি যদি তাদের জানাই

 তাহলে তো আরো বেশি চিন্তা করবে আমাকে নিয়ে।


 আমার যে বন্ধুটি পুলিশ অফিসার আমি ওকে ফোন দিলাম...


-নিলয় তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে তুই কি আমার সাথে দেখা করতে পারবি?


- বন্ধু আমিতো ডিউটিতে রয়েছি এই মুহূর্তে আমি কিভাবে তোর সাথে দেখা করবো।


-প্লিজ যদি পারিস আমার কাছে আয়। আমি মনে হয় খুব বিপদে পড়ে যাচ্ছি।


-আচ্ছা কি হয়েছে আমাকে বল।


-না আমি ফোনে বলতে পারবো না, সামনাসামনি বলতে হবে।আর তাছাড়া আমার খুব ভয় লাগতেছে।


-আচ্ছা আমার ডিউটি শেষ করতে আরো ঘন্টা তিনেকের মত আছে তারপরে আমি তোর সাথে দেখা করতে পারবো।


- ঠিক আছে।ডিউটি শেষ করে আমার বাসায় আয় তারপর আমি তোকে সব খুলে বলবো।


নিলয়ের সাথে কথা বলা শেষ করে চুপচাপ বসে আছি। কি করব বুঝতে পারতেছিনা। আমার বাবা-মা বারবার আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করতেছে। আমার কি হয়েছে? আমি তাদের জবাব দিতে পারতেছিনা।

আমি যদি আজকের এই ম্যাসেজটার ব্যাপারে বাবা-মাকে কিছু বলি তারা অনেক চিন্তিত হয়ে যাবেন।


রাত দশটার দিকে নিলয় আমার বাসায় আসলো। আমরা দুজনে ড্রয়িং রুমে বসে আছি নিলয় আমাকে জিজ্ঞেস করলো..


- কি হয়েছে এখন বল?


- আচ্ছা ছাদে চল তারপরে বলি।


- হুম চল।


আমরা দুজনে ছাদের এক কোনায় বসে আছি। নিলয় পকেট থেকে সিগারেট বের করে জ্বালালো আর আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল.... 


- এই নে তুই! এটা টান। তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুই বেশ চিন্তিত।


- তোমার নাম্বার একটা মেসেজ আসছে। আমাকে কেউ নাকি খুন করার জন্য ওত পেতে আছে।এখন আমি কি করবো বুঝতে পারতেছি না। এই দেখ আমার নাম্বারে একটা মেসেজ এসেছে এটা পড় তাহলে তুই বুঝতে পারবি।


- কি বলিস এসব?তোকে কেন খুন করতে যাবে মানুষ?


- তুই তো জানিস আমাদের মেডিকেলের ডাক্তার নেহাল খুন হয়েছে। অথচ দেখ ডাক্তার নেহাল অনেক ভালো একজন ডাক্তার এবং ভালো একজন মানুষ কে বা কারা তাকে খুন করেছে। আজ পর্যন্ত তোরা বের করতে পারলি না ডাক্তারের খুনের রহস্য।তার মতো আমাকেও নাকি খুন করার জন্য বসে আছে।


-তুই এক কাজ কর।থানায় ডায়েরি কর খুব তাড়াতাড়ি। না হলে তুই বিপদে পড়ে যাবি।আর আংকেল আন্টিকে এই ব্যাপারটা কিছু জানাস না।তাহলে তারা অনেক টেনশনে পরে যাবে।


-কিন্তু আমাকে তো ওই লোকটা বললো তাকে যেনো খুজে বের করার চেষ্টা না করি।তাহলে নাকি আমি কোনো আপডেট জানতে পারবো না।


-তুই গোপনে একটা ডাইরি করে রাখবি। যে বিষয়টা তুই আমি ছাড়া আর কেউই জানবেনা। আর যে নাম্বারটা থেকে তোর কাছে মেসেজ এসেছে সেই নাম্বারটা আমার কাছে দে আমি নাম্বার ট্র্যাক করে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।


- আর একটা বিষয় আমি তোকে জানাতে চাই ডাক্তার নেহাল খুন হওয়ার একদিন আগে মিলির সাথে আমার দেখা হয়। মিলিকে নাকি ডাক্তার নেহাল বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিল। এবং মিলির নামে যে বাজে ভিডিও বাজে ছবি ভাইরাল হয়েছে তার জন্য নাকি সম্পূর্ণ ডাক্তার নেহাল দায়ী।


- ডাক্তার নেহাল খুন হওয়ার পিছনে হয়তো অন্য একটা রহস্য রয়েছে। আমি মনে করছি না যে মিলি ডাক্তার নেহাল কে খুন হয়েছে। কারণ পুলিশ অফিসার তদন্ত করার পর জানতে পেরেছে ডাক্তার নেহালের নাকি নারীদের প্রতি অনেক নেশা ছিল। এবং যে বাড়িতে থাকতো সেই বাড়ির মালিক পুলিশ অফিসারদের জানিয়েছে প্রায় রাতেই নাকি ডাক্তার নেহাল মেয়েদের নিয়ে ওর ফ্ল্যাটে উঠতো। আমার মনে হয় যে কোনো মেয়ে এই শত্রুতা শেষ করার জন্য ডাক্তার নেহালকে খুন করে দিয়েছে। এবং এই খুনের রহস্য খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত অফিসারেরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আশা করি খুব তাড়াতাড়ি খুনি ধরা পড়ে যাবে।


-কিন্তু তুই তো জানিস আমার এমন কোনো বাজে নেশা ছিলো না।তাহলে আমাকে খুন?


- ঘাবড়ে যাস না কিছু একটা হবে তো। আচ্ছা আজ উঠি অনেক রাত হয়েছে। তোর ভাবি বাসায় ওয়েট করতেছে। আর আমি কালকে যখন থানায় যাব তখন পুলিশ অফিসারদের সাথে আমি এই ব্যপারে আলাপ আলোচনা করবো।


নিলয় আমার বাসা থেকে চলে যাওয়ার পরে রাত আনুমানিক দুইটার দিকে মিলির নাম্বার থেকে আমার ফোনে ফোন আসে। ফোন দিয়ে মিলি বলে...


-আবিদ সাহেব!আমি দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছি।হয়তো আপনার সাথে আমার আর কখনো যোগাযোগ হবে না।


- ডাক্তার নেহাল খুন হয়েছে সেই ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন?


- হ্যাঁ আমি সব জানি। এটাও জানি যে আপনি হয়তো সন্দেহ করতেছেন ডাক্তার নেহাল কে আমি খুন করেছি। কিন্তু ডাক্তার নেহাল যেদিন খুন হয়েছে সেদিন আমি এই শহরের বাহিরে ছিলাম।


- আমাকে খুন করার টার্গেট নিয়েছে এটা কি আপনি জানেন?


- হ্যাঁ আমি এটাও জানি। আপনার ব্যাপারে আমার নাম্বারে একটা মেসেজ এসেছে আমি আপনার নাম্বারে পাঠিয়ে দিচ্ছি দেখে নিবেন। আপনার সাথে আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। আপনি ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।


 কথা এড়িয়ে মিলি ফোনটি কেটে দিলো......


সাপ লুডু...🫣👻

পর্ব: ০৩


মিলি কি তাহলে নেহালকে খুন করে তারপরে দেশের বাইরে পালিয়ে যাচ্ছে নাকি আত্মসম্মানের জন্য এই দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছে?


আমি রীতিমত অবাক হয়ে যাচ্ছি নেহালের খুনের ব্যাপারে মিলি সবকিছুই জানে এবং আমাকে খুন করার যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার ব্যাপারে মিলি সব কিছু জানে।


মিলির নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে হুট করে একটা মেসেজ আসে... 


- "আবিদ একটু কষ্ট করে অনলাইনে আসবেন? আমার কাছে যে নাম্বার থেকে মেসেজ আসছিল আমি সেই নাম্বারের স্ক্রিনশটটি আপনার ইনবক্সে দিয়ে দিচ্ছি একটু চেক করে দেখবেন।"


আমি মিলির টেক্সটি পেয়ে মিলিকে আবার ফোন দিলাম কিন্তু ফোন রিসিভ করতেছে না। কোন দিশা না পেয়ে আমি মিলির নাম্বারে একটা মেসেজ দিলাম...


-" আমি আপনাকে বারবার ফোন দিচ্ছি আপনি কেন ফোন পিক করতেছেন না? আর দেখুন আপনার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে এখন যদি আপনি আমাকে এড়িয়ে চলেন তাহলে হয়তো আমিও নিহালের মতন খুন হয়ে যাবো। আমার এই ব্যাপারে সবকিছু জানতে হবে।


- দেখুন আমার লাইফের সাথে আমি আর কাউকে জড়াতে চাইনা। আমি তো পস্তাতে পস্তাতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। সাথে আমার ফ্যামিলি অপমানিত হচ্ছে লোকজনের কাছে। আর আমি চাইনা যে আমার লাইফের সাথে আর কেউ জড়িয়ে যাক। আমি স্রেফ একা থাকতে চাই। প্লীজ লীভ মি।


- কিন্তু আমার যে এই বিষয়ে সব কিছু জানতে হবে। আর কে বা কারা আমাকে খুন করার হুমকি দিচ্ছে তাও তো আমার বের করতে হবে।


- নেহালের খুনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই আর আপনাকে খুনের হুমকি দেওয়ার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। আমি চাইনা এইসব বিষয়ে বেশি ঘোলাটে হোক। যাইহোক আমি আপনাকে একটি স্ক্রিনশট দিয়ে দিচ্ছি। ম্যাসেজটি পড়ে নিবেন। আর হ্যাঁ আপনি সতর্ক থাকবেন। টেক কেয়ার।


- আপনি আমার সাথে ফোনে একটিবার একটু কথা বলুন আর যদি পারেন আপনি আমার সাথে একটু দেখা করুন।


মেসেজটার মিলির নাম্বারে গেলোনা, ডেলিভারি রিপোর্ট আসেনি আমার কাছে।


পনেরো দিনের মতো দিন পার হয়ে গেল। সেই নাম্বার থেকে আর কোন মেসেজ আসলো না। আর মিলির সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হলো না। আমি ঠিকঠাক  মতো মেডিকেলে যেতে লাগলাম। কোনো রকমের সমস্যা বোধ করলাম না আমি। তাই আমার মতই চলাফেরা করতে লাগলাম।


আর আমার থানায় ডায়েরি করা হলো না। আমার ফ্রেন্ড অন্য জায়গায় মিশনের জন্য চলে গেছে। সেখান থেকে দেখতে বেশ কিছুদিন দেড়ি হবে।


এখন মিলিকে আর আমার বেশি একটা মনে পরে না। কিন্তু তারপরও আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে মিলি কেমন আছে, কি করছে, কোথায় আছে? তবে আমি একটা কথাই বলবো মিলি রিজেইন দিয়ে ওর জীবনের অনেক বড় একটা ভুল কাজ করে ফেলছে। কারণ প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে কোন না কোনভাবে একটা বাজে সময় আসবে এবং সামনে চলার পথ আটকে যাবে। হয়তো কারো পথ আটকাবে খুব খারাপভাবে আর কারো পথ আটকাবে খুব স্বাভাবিকভাবে।


দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ।মেডিকেলে আমার ডিউটি ছিল ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। গাড়ি নিয়ে যখন বের হই তখন কিছু দূরে যাওয়ার পরে আমি লক্ষ্য করি আমার পিছন থেকে কে যেন একটা গাড়ি নিয়ে ফলো করতেছে। মেডিকেল থেকে আমার বাসা টা বেশ দূরে তিন থেকে চার ঘণ্টা দূরের পথ। একটা গাড়ি যেহেতু আমাকে দেড় ঘণ্টা ধরে ফলো করতেছে সেহেতু আমি ভেবে নিতে পারি যে হয়তো আমার কোন ধরনের বিপদ ঘটতে যাচ্ছে। আমি ড্রাইভারকে বললাম গাড়িটা আরো দ্রুত চালাতে। আমার গাড়িটার যত স্পিড বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে পিছনের গাড়িটা তত দ্রুত আমার পিছন পিছন আসতেছে।


আমি চলতি অবস্থায় পাশের একটি থানায় ফোন দিলাম ফোন দিয়ে ইনফর্মেশন জানালাম আমি কোথায় আছি কোন রোডে যাচ্ছি সব কিছু ইনফরমেশন জানালাম। কিন্তু ফোন করার একটু পরেই পিছনের গাড়িটা আর দেখতে পারলাম না। বাসায় এসে আমার বন্ধু নিলয়কে ফোন দিয়ে আজকের ব্যাপারটা জানালাম।


নিলয় বলল থানায় ব্যাক করতে আরো তিন চার দিনের মত লাগবে। থানায় কথা বলে একটা ডায়েরি করে রাখবে।


সেদিন যে নাম্বার থেকে আমার ফোনে মেসেজ আসছিলো সেই নাম্বার থেকে আমার ফোনে আরেকটি মেসেজ এসেছে আমি মেসেজটা দেখে আরো চমকে উঠলাম।


"আপনি রাতে যখন বাসায় ফিরবেন তখন আপনার সাথে দুই একজনকে নিয়ে তারপর বাসায় ফিরবেন। আজকে আপনাকে একদল মানুষেরা ফলো করে ছিলো। আপনার ভাগ্যে জোরে অল্প একটুর কারনে বেচে ফিরছেন। দেখুন আপনি আমাকে ভয় পাবেন না। আমি আপনার ভালোর জন্যই বলতেছি আর আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না। আমি যদি আপনার ক্ষতি করতাম তাহলে আপনাকে দিনদিন নিউজ দিতাম না। আপনাকে সেদিন নিষেধ করার পরও আপনি আপনার বন্ধু নিলয়কে আমার ব্যাপারে জানিয়েছেন। আমি যে মেসেজটা আপনাকে দিয়েছিলাম সেই মেসেজটাও আপনি তাকে দিয়েছেন। তবে একটা কথা জেনে রাখুন আমাকে কেউ খুঁজে বের করতে পারবেন না। সো প্লিজ আপনি আমাকে খুঁজে বের করার কখনো চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাকে আজকে একটা জরুরী মেসেজ দিচ্ছি। আগামী পরশু দিন আপনি যে ক্যাফেতে বসে কফি খান আমি সেই ক্যাফেতে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। আপনাকে খুন করার জন্য যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সবকিছুর ডকুমেন্ট আমার কাছে রয়েছে। আমি চাই সেইসব ডকুমেন্টস গুলো থানায় জমা দেন তাহলে হয়তো ডাক্তার নেহালের খুনের রহস্য এবং আপনাকে খুন করার হুমকি কারণ জানতে পারবেন। থানা পুলিশকে ইনফর্ম করার কোন দরকার নেই। আপনি স্রেফ একা চলে আসবেন এবং সময় সন্ধ্যা সাতটার দিকে আসবেন। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো আর আপনি যদি আমার সাথে দেখান না করেন তাহলে আপনি হয়তো অনেক বড় বিপদে পড়ে যাবেন। আপনি ভালো থাকুন আর নিজের খেয়াল নিয়েন।"


মেসেজটা দেখার পর আমি কি করবো বুঝতে পারতেছি না। যেহেতু সেই লোকটা আমাকে জানিয়ে দিলো যেন থানা পুলিশকে কোন ইনফর্ম না করি কিন্তু আমার কি একা যাওয়া ঠিক হবে?


হ্যাঁ আমি কাউকে এই ব্যাপারে কিছুই জানাবো না আমি একাই যাবো। নিজে যেচে গিয়ে কোন বিপদের ফাঁদে পা ফেলতেছি না তো?


দুদিন পরে আমি একাই গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম সাথে আমার ড্রাইভারকে নিলাম না।


ক্যাফেতে পৌঁছানোর পরে আমার ফোনে একটি মেসেজ আসলো....


" আপনি গাড়ি থেকে নেমে ক্যাফের পূর্ব দিকে হাঁটা শুরু করবেন। ৫ মিনিটের পথ আসার পরে আমি আপনাকে আরেকটি মেসেজ দিবো।"


আমি ম্যাসেজটি পড়ে হাঁটতে লাগলাম কিছুক্ষণ হাঁটার পরে আর একটি মেসেজ আসলো...


" রাস্তার অপজিট সাইডে একটা কালো কালারের গাড়ি আছে আপনি এদিক সেদিক না তাকিয়ে সে গাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ুন।"


আমি গাড়িতে উঠলাম ড্রাইভারের  মুখ বাঁধা। ড্রাইভার আমাকে বলল আমার ফোনটি তার হাতে দিয়ে দিতে আমি কিছু না বলে তার হাতে আমার ফোনটি দিয়ে দিলাম।


আমার পিছনের সিট থেকেই এক লোক উঠে আমার মুখ বেধে দিল এবং চোখটি কালো কাপড় দিয়ে বেধে দিলো। আমার পিছনে যে কোনো লোক রয়েছে সেদিকে আমি লক্ষ্য করিনি।


ঘন্টাখানেক পরে আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমি একটা ফাঁকা ফ্ল্যাটের মধ্যে আছি। এখনো আমার চোখ কালো কাপড় দিয়ে বাধা এবং হাত দুটো বাধা। বুঝতে আর বাকি রইল না আমার জীবন হয়তো এখানেই শেষ আমিও হয়তো ডাক্তার নেহালের মতো খুন হয়ে যাবো।


আমাকে একটি চেয়ারের উপর বসিয়ে দিলো। আমার সমস্ত শরীর বেঁধে রাখলো।আমার সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো।


এরই মধ্যে একটি মেয়ের ভয়েস আমার কানে ভেসে উঠল এবং বলল...


- ওর চোখ খুলে দাও এবং ওর হাতের বাধন খুলে দাও......


সাপ লুডু...🫣👻

পর্ব: ০৪


আমাকে যখন হাইজ্যাক করে তখন আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমার চারপাশে মাত্র চারজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। যখন একটি মেয়ের ভয়েস আমার কানে ভেসে ওঠে তখন আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি একটি মেয়ে। তার মুখ সম্পূর্ণ ভাবে বাধা। আমি তার চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে চিনতে পারছিনা।


তবে আমি এটাও শিওর যে এই মেয়েটা মিলি নয় কারণ মিলির চোখের চাহনি অথবা ভয়েস এমন না।


আমার মুখ খুলে তারপরে আমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলাম সেই মেয়েটিকে....


- আপনারা কারা? আর আপনারা আমাকে কেন হাইজ্যাক করেছেন? আমি আপনাদের কোন ক্ষতি করেছি?


-আমরা কে বা কারা তা আপনার জানতে হবে না। আপনাকে আমাদের এখানে আনার একমাত্র কারণ তা হলো আপনার সাথে আমাদের একটা চুক্তি রয়েছে। যদি আমাদের চুক্তিতে আপনি রাজি থাকেন তাহলে আপনি বাঁচতে পারবেন। আপনাকে অনেকদিন ধরেই টার্গেট করে রয়েছি আমরা। আর যখন ডাক্তার নেহাল খুন হয় তখন আমাদের জন্য আসে একটা সুবর্ণ সুযোগ। সেই সুযোগে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকি আমরাই। আপনাকে খুন করার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আপনাকে আমাদের এখানে আনতে পেরেছি।


- আমি শুনতে চাই আপনারা আমাকে কেন এখানে নিয়ে আসছেন আর আমি কি করলে আপনারা আমাকে ছেড়ে দিবেন?


- খুব সহজ একটা কাজ। একজন ডাক্তারের পক্ষে সে কাজটা একেবারে সহজ আপনি যদি চান তাহলে আপনি দুই সেকেন্ডের মধ্যে সেই কাজটা করে ফেলতে পারবেন।


- জি বলুন আমার কি করতে হবে?


- আপনার একটা পেশেন্টকে মেরে ফেলতে হবে। কাজ শুধু এটুকুই আপনার আর কোন কাজ নেই।


-হোয়াট? কি বলছেন আপনারা এ সব? আমি একজন ডাক্তার। আমার কাজ একটা অসুস্থ রোগীকে সুস্থ বানিয়ে তোলা। এবং মানুষের সেবা করা। আর আপনারা বলছেন একটা মানুষকে খুন করে ফেলবো। অসম্ভব! এটা আমি কখনো করতে পারবোনা।


- তাহলে আমরাও আপনাকে বাঁচাতে পারবো না। সেই সাথে মরতে পারে আপনার ফ্যামিলির লোকজন।


- প্রয়োজনে আপনারা আমাকে মেরে ফেলুন কিন্তু। আপনার কু প্রস্তাবে রাজী হতে পারবো না। আর প্লিজ দয়া করে আপনারা আমার বাবা মায়ের দিকে তাকাবেন না।


- আমি বলছি না আপনি এখনি আমাকে রেজাল্ট দেন।তাকে মেরে ফেলবেন কি ফেলবেন না তার জন্য আপনার হাতে সময় রয়েছে বিশ দিন। এই বিশ দিনের মধ্যে আমাকে একটিবার জানাতে পারলে হবে। আর যদি না পারেন তাহলে আপনি আপনাকে বাঁচাতে পারবেন না। যেদিন আপনি রাজি হবেন আমরা সেদিন আপনাকে জানিয়ে দেবো যে কাকে মেরে ফেলতে হবে। কে সেই তা আপনি রাজি না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা বলবো না। এখন আপনি একটু ভেবে দেখবেন।


- উঁহু আমার পক্ষে সম্ভব না। যে হাত দিয়ে হাজার হাজার রোগী সুস্থ করে তুলি আর আমি সেই হাত দিয়ে একটা প্রাণ শেষ করে দিতে কখনও পারব না। প্লিজ আমাকে দিয়ে এমন কাজ করাবেন না।


- আপনার জন্য আরেকটা অফার আছে। আপনি যদি কাজটা করে দিতে পারেন তাহলে আপনার একাউন্টে জমা হবে চার কোটি টাকা।


- যত টাকায দেন না কেন আমার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব না। আর যদি আপনাদের মনে হয় যে আমাকে খুন করে ফেলবেন তাহলে এখনি খুন করতে পারেন আমার কোন কিছু বলার নেই। যেহেতু আমি এখন আপনাদের হাতে বন্দি আমি চাইলেই কিছু করতে পারবোনা। কিন্তু আমার দ্বারা আমার সেই পেশেন্ট কে মেরে ফেলা সম্ভব নয়।


- আমি আগেই বলেছি যে আপনার এখন কিছুই করতে হবে না আপনার হাতে সময় আছে বিশ দিন। আপনি যদি বিশ দিনের মধ্যে আমাকে জানান যে আপনি তাকে মেরে ফেলতে পারবেন। তাহলে আপনি চার কোটি টাকা একাউন্টে পেয়ে গেলেন সাথে আপনি আপনার জীবন প্লাস আপনার ফ্যামিলির সবার জীবন রক্ষা করতে পারলেন।


- আমাকে যেতে দিন।আমি কি করবো কি করবো না তা আমি আপনাদের সময় মত জানিয়ে দিবো।


 -খবরদার!আজকের এই ব্যাপারে আপনি কোথাও কাউকে জানাতে পারবেন না এমনকি কোনো আইনের ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। তাহলে কোন না কোন দিক দিয়ে আমরা আপনাকে ফাসিয়ে দিবো। আর এটাও জেনে রাখুন আপনি আপনার জীবন রক্ষা করতে পারবেন না সুতরাং মাত্র বিশ দিন টাইম।


চেয়ারে বসা অবস্থায় আমার হাত-পা বেঁধে দিলো। আমাকে আবার তার গাড়িতে উঠিয়ে বসলো কিছুদূর যাওয়ার পর আমার চোখ ও মুখের বাধন খুলে দিলো। চোখের বাধন খুলে দিয়ে আমার হাতে মোবাইলটি দিয়ে দিলো। আমি যে ক্যাফের সামনে আমার গাড়িটা রেখেছিলাম আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে ছোঁ মেরে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।


গাড়ি থেকে নামার পরে আমার হাত পা সম্পূর্ণভাবে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। আমি আস্তে করে ক্যাফের মধ্যে ঢুকে বসে পড়লাম। আমার সমস্ত শরীর ঘামিয়ে একাকার হয়ে গেছে।সেখানের এক কর্মচারী আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমার কি হয়েছে? আমি আর তাকে কিছু বললাম না। তিন তিনটে ঘন্টায় আমার সাথে যে কি হয়ে গেছে কিছু বুঝতে পারতেছি না।


কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে আমি থানার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কিছুদুর যাওয়ার পর আমি ভাবলাম যে, না থাকায় এই মূহুর্তে যাওয়া যাবে না। আগে আমার বন্ধু আসবে তারপরে ওকে নিয়ে না হয় একবারে থানায় যাবো।এবং সমস্ত ব্যাপারে দেরি করে আসবো


 বাসায় না গিয়ে আমি মেডিকেলের দিকে রওনা হলাম। কোনো রোগীর ট্রিটমেন্ট না দিয়ে আমি চুপটি মেরে বসে আছি। এবং আজকে বলে দিলাম যে কোন রোগী দেখবো না আমি। মেডিকেলে থেকে তারপর আমি বাসার দিকে রওনা হলাম। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিলাম। রাতে যখন খাবার টেবিলে বসলাম তখন আমাকে বাবা বললো...


- আজকে আমি আর তোমার মা তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। তুমি কবে দেখতে যাবে এখন সেটা আমাকে বলো।


-এই মূহুর্তে বিয়ে করা সম্ভব না। আর আপনারা আমার বিয়ের চিন্তা আপাতত বাদ দেন। আমাকে আরো কিছুদিন সময় দিন। এমনিতেই আমি রয়েছি একটা মহা ঝামেলার মধ্যে। আর আপনারা এখন আমার জন্য মেয়ে দেখেছেন?


- ঝামেলা। কিসের ঝামেলা? আমরা তো কোন ঝামেলা দেখতেছি না।


- না কিছু না। তবে আমি বলছি যে এখন আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না। আমাকে আরো বেশ কিছুদিন সময় দিন প্লিজ।


- মেয়েটা দেখো। দেখার পর যদি তোমার পছন্দ হয় তাহলে আকদ করে রাখি। তারপর যখন তোমার সময় হবে তখন না হয় তুমি তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবে।


- না মেয়েও দেখতে হবে না। আর আকদ করে রাখতেও হবে না। যখন সময় হবে আমি আপনাদের বলব।


- ঠিক আছে তোমার ইচ্ছা। তোমার যখন যেটা ভালো হবে সেটা করো। কিন্তু এটা মনে রাখবে তোমার মা কিন্তু দিনদিন বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে তার কষ্ট হয়। তার মুখের দিকে তাকিয়ে তুমি কি বুঝনা যে এই সংসার একটা বউ লাগে।


- আমার সময় হলে আমি বলব এখন আমাকে খেতে দিন। না হলে এখান থেকে উঠে যাচ্ছি।


বাবা আর কিছু বললো না চুপচাপ খেতে লাগল। পরের দিনই আমার বন্ধু আমাদের বাসায় এসে হাজির।


নিলয় কে নিয়ে বাসায় একটা মুহূর্ত দেরী করলাম না। ওকে নিয়ে একটা নীরব নিশ্চুপ এলাকার দিকে রওনা হলাম।


সেখানে যাওয়ার পরে নিলয় আমার কাছে জিজ্ঞেস করছে, কি হয়েছে? ঠিক তখনই আমার মাথায় একটা চিন্তা ভাবনার কাজ করলো।


আমি যদি নিলয় কে নিয়ে থানায় গিয়ে ডায়েরী করি কালকের ব্যাপারটা নিয়ে। কিন্তু সেই লোকটা যে কোন দুর্ভাগ্যক্রমে মারা যায় তাহলে হয়তো সেই খুনের দায় কেউ না কেউ আমার উপর চাপিয়ে দিতে পারে। থানায় ডায়েরি করার আগে আমার আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু জানতে হবে।


তাই নিলয় কে নিয়ে সেখানে কিছু না বলেই আমি কথা অন্যদিকে ঘুড়িয়ে নিয়ে গেলাম।


 হাঁটতে হাঁটতে বেশ কিছুদূর যেতেই দেখি মিলি হাটতে হাটতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।


আমাকে দেখেই মিলি থমকে দাঁড়িয়ে পরলো.....


সাপ লুডু...🫣👻

পর্ব: ০৫


আমাকে দেখে অন্য দিকে হাটা শুরু করলো,আমি ডাক দিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম..


-মিলি আপনি এখানে কি করেন? আপনার না দেশের বাড়ি যাওয়ার কথা?


-না যাওয়া হয় নি!


- তাহলে কি আবার মেডিকেলে ফিরে আসবেন?


- মেডিকেলে আর কখনো ব্যাক করবো না তবে আমার ঝামেলাটা শেষ হলে আমি দেশের বাইরে চলে যাবো।


- আপনার ফোন নাম্বার অফ কেন? আমিতো আপনাকে কয়েকবার ফোন দিছিলাম?


- ফোন অফ করে রেখেছি। এখানে বাসা নিয়েছি সেই বাসায় আপাতত আছি। আচ্ছা আমার বাসায় একটু কাজ আছে আমি বাসায় চলে যাবো। আপনার সাথে আমি পরে একসময় যোগাযোগ করবো ফোনে।


- আচ্ছা ঠিক আছে মনে করে আমাকে একটা বার ফোন দিয়েন।


আমি মিলির সাথে কথা বলতেছিলাম নিলয় ডিউটিতে চলে গেছে। আমাকে সময় দিতে পারেনি। গতকালের ঘটনা আমি নিলয় কে শেয়ার করিনি।


আমি বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। রেস্ট নেওয়ার প্রায় ঘন্টাখানেক পরে মিলির একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন করে.....


- আবিদ সাহেব এটা আমার নতুন নাম্বার। আমি আপনার কাছে একটা হেল্প চাচ্ছি। যদি আমাকে কিছু দিনের জন্য হেল্প করতেন তাহলে আমার খুব ভালো হতো।


- জি বলুন আমি আপনাকে কিভাবে হেল্প করতে পারি?


- আসলে আমার কিছু টাকা  দরকার ছিলো। ফ্যামিলিগত ভাবে একটু প্রবলেম এর মধ্যে পড়ে গেছি। এখন আমার কাছে পুরোপুরি টাকা নাই যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন আমার খুব উপকার হতো। আমি আপনাকে আবার সময় করে টাকাটা ফিরিয়ে দিতাম।


- হ্যাঁ বলুন আপনার কত টাকা লাগবে? আর কখন নিতে চান?


- আমার আপাতত লাখ তিনের মত টাকা শর্ট আছে। যদি আমাকে তিন-চার দিনের মধ্যে দিতেন তাহলে আমার খুব ভালো হতো।


- আচ্ছা তাহলে সময় করে এক সময় নিয়ে যাবেন। আর যখন নিবেন তার কিছু সময় আগে আমাকে ফোন দিয়ে একটা মিনিট একটু জানিয়ে দেবেন।


- আপনাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারতেছি না। আসলে আমার এই মুহূর্তে টাকাটা অনেক দরকার ছিল আপনার উপকারের জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।


- আচ্ছা মিলি আপনার কাছে কি সেই নাম্বার থেকে কোনো মেসেজ এসেছে পরে?


- না আমার কাছে তো নতুন করে আর কোন মেসেজ আসে নি। সেদিন যে আপনাকে মেসেজ টা দিলাম ওটাই প্রথম এবং শেষ মেসেজ ছিলো।


- আচ্ছা আপনি আমাকে একটা সত্যি কথা বলবেন?


- হ্যাঁ বলার হলে অবশ্যই বলবো। কেন বলবো না?


- সত্যি করে বলুন তো আপনার সাথে কারো কোন শত্রুতা রয়েছে? বা আপনাকে কেউ কোন ধরনের ব্ল্যাকমেইল করেছে কিনা?


- নাতো! আমার কোন শত্রুতা নেই আর আমাকে তো কেউ ব্ল্যাকমেইলও করে নি।


- তাহলে হঠাৎ করে আপনার নামে বাজে কথা ভাইরাল কেনো হলো?আমার তো মনে হচ্ছে আপনি কিছু লুকিয়ে রাখছেন।


- না লুকিয়ে রাখি নাই। আমার এতবড় একটা সর্বনাশ হয়ে গেল সেখানে আমার লুকানোর কি রয়েছে?আমি তো সঠিক বিচার চাইবো তাই না?


- আমার জন্য তো বাসা থেকে মেয়ে দেখতেছে। আর  আমাকে পুরোপুরি ভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমার বিয়ের জন্য।


- আচ্ছা এখন রাখছি। আপনার সাথে আমি অন্য একসময় কথা বলবো। আর তিন-চার দিনের মধ্যে টাকাটা দরকার হবে,কাইন্ডলি একটু ম্যানেজ করে রাখবেন দয়া করে।


-জি অবশ্যই।


মিলি ফোন কাটার পরে আমি বাসায় নিজের কাজ করলাম। কাজ শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালবেলা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। তখন আমার ফোনে একটা ফোন আসে। ফোনটা রিসিভ করার পরে সেই মেয়েটির ভয়েস শুনতে পাই। যে মেয়েটি গত দুইদিন আগে আমাকে কিডন্যাপ করেছিলো।


-আবিদ সাহেব কোন কিছু চিন্তা করলেন?


-আমি বলেছি তো আপনাদের এই বাজে প্রস্তাবে আমি কখনো রাজি হবো না। যদি আমার জীবন চলে যায় যাবে।


- তাহলে যে আপনার সাথে আপনার বাবা-মায়ের জীবন চলে যাবে!


- আমার বাবা-মা আপনার কি ক্ষতি করেছে? আর আমার সাথে আপনারা তাদের কেন জড়িয়ে নিতে চাইতেছেন? প্লিজ আমার বাবা মায়ের কোন ক্ষতি করবেন না।


- আমাদের স্বার্থ হাসিল না হলে অনেক কিছুই করে ফেলবো।


- আচ্ছা আমি আপনাদের প্রস্তাবে রাজি আছি তবে একটা শর্ত!


- শর্ত? আপনার আবার কিসের শর্ত? আমি তো বলেই দিয়েছি আপনি যদি আপনার সেই পেশেন্টকে মেরে ফেলতে পারেন তাহলে আমি আপনার একাউন্টে চার কোটি টাকা দিবো।


- আপনার কাছে আমি একটা কথা জানতে চাই। যদি আমাকে সবকিছু জানান তাহলে আমি আপনার ব্যাপারে রাজি আছি।


-কি জানতে চান?


- যাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন সে আপনার কি হয় আর তাকে মেরে ফেললে আপনার কি লাভ হবে?


- এসব প্রশ্নের জবাবতো আমি আপনাকে দিতে পারবো না। আমিতো চাইলে নিজেই তাকে কোনো-না-কোনোভাবে মেরে ফেলতে পারি। কিন্তু আপনাকে দিয়ে তাকে মেরে ফেলার আমার যথেষ্ট কারণ আছে। আমি আশা করছি যে আপনি কোনো কারন আমার কাছে জানতে চাইবেন না।


- কবে কখন সেই প্রেসেন্ট আমার কাছে আসবে?


- আমি আপনাকে এখন বলতে পারব না। তবে দুই মাস এর মধ্যে যেকোনো এক সময় হুট করে আমি আপনাকে সবকিছু জানিয়ে দিবো।


- ওকে! আর আর কিছু করতে হবে?


-উহু আর কিছু আপনার করার দরকার নাই। তবে আপনাকে আবারো জানিয়ে দিচ্ছি আমাদের সব কথোপকথনের কথা আপনি কাউকে জানাতে পারবেন না। আপনার যে বন্ধু পুলিশ অফিসার আছে তাকেও না। আমাকে ফাঁসাতে চাইবেন তো আপনি নিজেই ফেঁসে যাবেন কারণ আমি কোন কিছু না জেনে শুনে কোন দিকে এগিয়ে যাই না।আপনার কথার রেকর্ড আমার কাছে আছে।আপনি আমাকে খুজে পাবেন না কিন্তু আপনাকে আমি ফাসাতে পারবো।


- আচ্ছা জানাবো না।


উনার সাথে কথা বলার পর আমি ভাবছি যে আমাকে দিয়ে লোকটাকে মেরে ফেললে তার কি লাভ হবে? কোন শত্রুতা নাকি কোন ধন সম্পদ পাওয়ার লোভে খুন করবে।যেহেতু আমাকে দিয়ে মেরে ফেলতে চাচ্ছে এবং আমাকে চার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলতেছে তাহলে তো অবশ্যই কোন না কোন ফায়দা আছে। নাকি আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।


বেশ কয়েকদিন খুব ভালোভাবে দিনগুলো পার করতেছিলাম। এরই মাঝে আমি ডিউটিতে থাকা অবস্থায় মিলি আমাকে ফোন দেয়।...


- আবিদ সাহেব! আমাকে আজ সন্ধ্যাবেলায় টাকাটা দিতে পারবেন?


- সন্ধ্যা কয়টার দিকে দিতে হবে? আমিতো মেডিকেল থেকে চারটার পরে বের হবো।


- সাতটার দিকে।যে ক্যাফেতে বসে আমরা একদিন কফি খেয়েছিলাম সেখানে।


- আচ্ছা আমি আসবো।


- আচ্ছা তাহলে এখন রাখতেছি তখন কথা হবে।


আমি ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরলাম বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে বাবার কাছে গেলাম...


- বাবা এই মূহুর্তে আমার তিন লাখ টাকা লাগবে। টাকাটা যদি দিতেন তাহলে ভালো হতো।


- হঠাৎ করে এত টাকা কিসের দরকার?


- একটা কাজ রয়েছে সেখানে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। আপনি কাইন্ডলি টাকাটা দিন।


বাবার কাছ থেকে টাকাটা নিলাম। আমি মিলির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে রওনা হলাম ক্যাফেতে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। সেখানে গিয়ে দেখি মিলি মাথা নিচু করে বসে আছে আমাকে দেখে হকচকিয়ে উঠলো....


- সরি! একটু লেট করে ফেললাম।আসলে রাস্তায় জ্যাম ছিলো আর বাসায় একটু লেট হয়ে গেছে।


- আরে না না। ঠিক আছে সমস্যা হতেই পারে।


- সব টাকা আছে আপনি চাইলে দেখতে পারেন চেক করে।


-নাহ থাক।বাসায় গিয়ে দেখবো।


- কি খাবেন বলুন?


- কিছু খাবো না। আমার বাসায় একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে।


- আমি আপনাকে একটা কথা বলতে পারি?


-হ্যা বলুন কি বলবেন?


-আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই।


- সম্ভব না। আপনি চাইলেও আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। যেখানে আপনার বাবা-মা আমার বাবা-মাকে অপমানিত করেছে সেখানে কখনো সম্ভব না। আর আমি এখন সমাজে একটা বাজে মেয়ে কেউ আমাকে বুঝতে চাইবে না।আপনার সাথে আমার একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে সেজন্য আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করছি আর আপনার কাছে হেল্প চেয়েছি। নতুবা আমি আপনার সাথে কোন ভাবে যোগাযোগ করতাম না। আর যদি মনে করেন এখন আপনি আমাকে হেল্প করবেন না তাহলে আপনি টাকাটা নিয়ে যেতে পারেন কিন্তু তারপরও আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা। আর আমি চাইনা আমাকে কেউ দয়া করে বিয়ে করুক। টাকা দিয়ে সাহায্য করে যদি দুর্বলতার সুযোগ খুঁজে পেতে চান তাহলে আপনি একটা ভুল কিছু ভেবেছেন। দেখুন আমি যা বলি সামনাসামনি বলার চেষ্টা করি। আমিও তো একটা মানুষ আমার জায়গায় যদি অন্য একটা মেয়ের লাইফে এমন কিছু ঘটতো হয়তো সে আত্মহত্যা করত কিন্তু আমি এখনো সবার মাঝে টিকে আছি সবার সাথে লড়াই করে যাচ্ছি।


- সরি। আপনি বাসায় যেতে চাইলে যেতে পারেন। আমার বাসায় ফিরতে একটু দেড়ি হবে আর এখানে কিছুক্ষণ থাকবো।


মিলি আমার কাছ থেকে উঠে চলে গেলো। তবুও আমি মিলিকে যেভাবে হোক বিয়ে করবো।


কফিতে চুমুক দিতে না দিতে সেই মেয়েটি আমাকে আবার ফোন করলো। আপনার অপারেশন আগামী পরশু। পরশু দিন মেরে ফেলতে হবে তাকে।.......


সাপ লুডু...🫣👻

পর্ব: ০৬


সিরিয়াল নাম্বার বাইশ। লতিফ চৌধুরীকে আমার মেরে ফেলতে হবে। রোজ রবিবার আমি যখন মেডিলেকে গেলাম আমার চেম্বারে বাইশ নাম্বার সিরিয়ালের যে পেসেন্ট এসেছে তার নাম লতিফ চৌধুরী। তার বয়স পয়ষট্টি। চৌধুরীর সাথে এসেছেন তার স্ত্রী। প্রত্যেক মাসে একবার করে তার শরীরে ব্লাড দিতে হয়। তার ব্লাড ক্যান্সার দীর্ঘদিন ধরেই। রোগীর সাথে কথা বলতে বলতেই আমার ফোনে আর একটা মেসেজ আসে।...


- লতিফ চৌধুরী মারা যাওয়ার ঠিক এক ঘন্টার মধ্যে আপনার একাউন্টে টাকা জমা হয়ে যাবে। আপনার সাথে আমার দেখা হচ্ছে না তবে আমার একটা বন্ধু আপনার কাছে টাকা নিয়ে যাবে।


আমি তাকে ছোট্ট করে ম্যাসেজ দিলাম....


- আপনি চিন্তা করবেন না আর কিছুক্ষণ পরে শুনতে পারবেন যে লতিফ চৌধুরী আর বেঁচে নেই।


লতিফ চৌধুরীর শরীরে যখন ব্লাড দিতে শুরু করলাম। তখন আমি লতিফ চৌধুরি পাশ থেকে তার স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিলাম। জানিয়ে দিলাম যে তার কাছে যেনো সে এক ঘণ্টা পরেই যেন আসে। ব্লাড দেওয়ার একঘন্টা পরে আমি লতিফ চৌধুরীর স্ত্রীকে ঘোষণা দিলাম.... 


-লতিফ চৌধুরী আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। তিনি মারা গেছেন।


যেই বলেছিলাম লতিফ চৌধুরী আর বেঁচে নেই। এই কথাটি শুনে লতিফ চৌধুরীর স্ত্রী সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। সাথে এসেছিলেন লতিফ চৌধুরীর ছোট শ্যালক। আমি চৌধুরীর শ্যালককে চৌধুরীর কাছে যেতে দিলাম না।


কিছুক্ষণ পরেই আমাকে পুলিশ এসে অ্যারেস্ট করে। পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসা করি আমাকে এরেস্ট করার কারণ কি।


পুলিশের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। পুলিশ বলে আমি নাকি লতিফ চৌধুরী খুন করেছি। আমি অবাক হয়ে ভাবছি এই ব্যাপারটা পুলিশ জানলো কিভাবে?


মেডিকেলের মধ্যে একটা হট্টগোল বেধে গেলো।কিছুক্ষন পরেই লতিফ সাহেব হাটতে হাটতে আমাদের মাঝে আসলো।লফিত সাহেব কে দেখে সবাই পুরোপুরি শকড খেলো।


এরই মাঝে আমার বন্ধু নিলয় এসে হাজির।সবার মাঝে এসে নিলয় বলতে শুরু করলো...


- আপনারা এবার সবাই চুপ করুন আমাকে কিছু বলতে দিন আমি তিনটি বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তার মধ্যে ছিলাম এবং রহস্য খুঁজতে ব্যস্ত ছিলাম। আজ আমি সমস্ত রহস্য খুঁজে বের করে আপনার মাঝে তুলে ধরবো। আপনারা সবাই চুপ করুন। লতিফ সাহেব আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব সেই প্রশ্নগুলোর এন্সার আমাকে সঠিক দিবেন।


-লতিফ সাহেব আপনার ফ্যামিলিতে আপনার শত্রু রয়েছে তা আপনি জানেন?


-কি বলছেন এসব?


-হ্যা আমি সত্যি বলছি আপনার নিজেরই ভাইয়ের মেয়ে আপনাকে খুন করার জন্য ডাক্তার আবিদের সাথে চুক্তি করেছে।


-এটা আমি মানি না,আমার ভাইয়ের মেয়ে আমাকে খুব ভালোবাসে।ওর বাবা মা সেই ওর ছোট বেলায়ই একটা রোড এক্সিডেন্ট মারা গেছে।


-আমারও প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আপনার ভাইয়ের মেয়ে আপনাকে খুন করার জন্য চেষ্টা করতেছে। বিগত সপ্তাহখানেক আগে ডাক্তার আবিদকে আপনার ভাইয়ের মেয়ে কিডন্যাপ করে কিডন্যাপ করে হুমকি দেয় যে আবির যদি আপনাকে মেরে না ফেলে তাহলে আবিদ এবং আবিদের বাবা-মাকে খুন করে ফেলবে। কিন্তু এইসব ব্যাপারে আমাকে আবিদ আগে থেকে কিছুই জানায়নি যখন গতপরশু আবিদকে আপনার ভাইয়ের মেয়ে ফোন দিয়ে বলে যে আজকে নাকি আবিদের চেম্বারে আপনি ডাক্তার দেখাতে আসবেন এবং আপনার শরীরের প্রত্যেক মাসে একবার করে ব্লাড দিতে হয়। সেই ব্লাডের সাথে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে আপনাকে যেন মেরে ফেলা হয়। আবিদ তার কথায় রাজি হয়েছিল এবং আবিদকে সে চার কোটি টাকা দেওয়ার জন্য শিকার হয়েছে।


আবিদকে প্রথমত একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ দিতো। এবং সেটি ছিলো বাহিরের নাম্বার। যে নাম্বার দিয়ে মেসেজ দিত সেই নাম্বারটি সাথে সাথে অফ করে ফেলতো।


কিন্তু ভুলবশত আপনার ভাইয়ের মেয়ে আবিদ কে তার নিজ নাম্বার থেকে ফোন দেয় এবং যত কথা হয়েছে সমস্ত রেকর্ড আমার কাছে আছে সবকিছুই আমি আপনাদের শোনাবো। সেই ভুল নাম্বারটি আপনার ভাইয়ের বোনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় নাম্বারটি আমি সাথে সাথে ট্রেক করতে থাকি। ট্রেক করে দেখি সমস্ত ডকুমেন্ট। ট্রেক করে দেখতে পাই আপনার ভাইয়ের মেয়ের নাম নিহা স্নিগ্ধা।

আমি গোয়েন্দা পুলিশ লাগিয়ে দেই আপনার ব্যাপারে এবং আপনার ভাইয়ের মেয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে থাকি। খোঁজখবর নিয়েও আমি চুপচাপ থেকেছিলাম।আর আজকের দিনটির জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম কখন ডাক্তার আবিদের কাছে একটা মেসেজ আসে এবং থানায় আবিদের নামে একটি ডায়েরি হয়। আমি জানতাম যে আবিদের সাথে যে চার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে টাকাটা আপনার ভাইয়ের মেয়ে ডাক্তার আবিদকে কে দিতে পারবে না। কারণ আপনার ভাইয়ের মেয়ের এবং আপনার অতো টাকার সামর্থ নাই। যে চার কোটি টাকা ডাক্তার আবিদকে দিবে। তাই আমি ধরে নিয়েছিলাম আপনি খুন হওয়ার পরে ডাক্তার আবিদকে আপনার ভাইয়ের মেয়ে ফাসিয়ে দিবে।


থানায় যখন আবিদের নামে ফোন আসে এক ঘণ্টার মধ্যেই তখনই সাথে সাথে আপনার ভাইয়ের মেয়ের নাম্বারটা ট্রেক করি। একদল পুলিশ এই মেডিকেলে আসে আর একদল পুলিশ আপনার ভাইয়ের মেয়েকে এরেস্ট করার জন্য যায়। একটু পরেই আপনার ভাইয়ের মেয়েকে সদর থানায় নিয়ে আসা হবে আপনারা আমার সাথে থানায় চলুন।


আমাদের সবাইকে নিয়ে নিলয় সদর থানায় চলে গেল। থানায় গিয়ে দেখি লতিফ চৌধুরীর ভাইয়ের মেয়ে নেহা অ্যারেস্ট হয়েছে। গত পরশুদিন আমাকে নেহা ফোন দিয়ে বলে যে আজকে লতিফ চৌধুরীকে খুন করতে হবে। তখনই আমি আমার বন্ধু নিলয়কে সবকিছু জানিয়ে দেই। কারণ নেহা আমাকে ফোন দিয়েছিল ওর একটি ব্যাক্তিগত নাম্বার থেকে তখন আমি ধরে নিয়েছিলাম যে এই মেয়েটিকে আমি খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারব। যার কারণে আমি আইনের আশ্রয় নেই।#Kalponik_F__ 😊


থানার ওসি নেহা কে জিজ্ঞেস করতে থাকে যে তার বড় কাকাকে কেন খুন করতে চাচ্ছে নেহা?


নেহা বলতে শুরু করল....


-আমার বাবা-মা যখন রোড এক্সিডেন্টে করেন তখন আমার মা সেই জায়গায় মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু আমার বাবা তখনও বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর আগে আমার বাবার কাছ থেকে সই করে আমার বাবার সমস্ত সম্পদ এইযে লতিফ চৌধুরী আত্মসাৎ করেন। আমি তখন আমার বাবার পাশেই বসে ছিলাম। আমার বয়স তখন এগারো কি বারো হবে। তখন আমি কিছু একটা বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার বাবার কাছ থেকে লতিফ চৌধুরী মানে আমার এই যে চাচা তিনি আমার বাবার কাছ থেকে কিছু একটা জোর করে কেড়ে নিচ্ছেন। আমার বাবা সই করতে চেয়েছিলেন' না। কিন্তু তারপরেও জোর করে আমার চাচা বাবার কাছ থেকে সই করে নেন।


হ্যা তবে এটা সত্য আমাকে লালন পালন করে বড় করেছেন আমার এই চাচা। সিড়িতে পড়ি তখন আমি আমার কাকার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম কাকা আমার বাবার যে সম্পত্তি রয়েছে আমিতো কিছুই চিনি না আমাকে যদি তার জায়গা জমি গুলো দেখে দিতেন ভালো হতো তাহলে আমি আমার পড়াশোনার জন্য বাবার কিছু জায়গা জমি বিক্রি করে পড়াশোনা করতে পারতাম। তখনই আমার কাকা আমাকে বলে যে তোমার বাবার তো কোন জায়গা জমি ছিল না। কিন্তু ছোটবেলায় আমার বাবা আমাকে তার পাশে বসে অনেক গল্প করতেন। বাবা একদিন আমাকে তার পাশে বসিয়ে বলতে লাগলেন মা আমাদের যত জায়গা জমি আছে সমস্ত জায়গা জমি আমি তোমার নামেই করেছি একসময় তুমি বড় হলে এই জায়গা জমির মালিক হবে তুমি আমাদের তো আর কোনো সন্তান নেই তুমি তো আমাদের একটা মাত্র মেয়ে। তাইতো সমস্ত কিছুর মালিক আমি তোমাকে বানিয়ে দিলাম তবে একটা কথা তুমি ঠিকমতো পড়াশোনা করবে একদিন অনেক অনেক বড় হবে আমরা গলা উঁচু করে বলতে পারব যে আমার মেয়ে অনেক শিক্ষিত আমার মেয়ে ভালো একটা চাকরি করে। আমার বাবার এই কথাটা স্পষ্ট ভাবে মনে আছে কিন্তু আমার কাকা যখন বললেন যে আমাদের কোনো সম্পত্তি নয় তখনই আমি বুঝে নিয়েছিলাম যে আমার কাকা কোনো-না-কোনোভাবে আমাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে ফেলেছেন।


সাপ লুডু...🫣👻

পর্ব: ০৭ ও শেষ 


নেহা এসব বলতে বলতে কেঁদে দিলো।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলতে শুরু করলো...


আমি মেডিকেলে চান্স পাই। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরে অনেক টাকা দরকার। আমি কাকাকে বলেছিলাম কাকা আমার বাবার যে জায়গা আছে সেখান থেকে কিছু জমি বিক্রি করে আমাকে কিছু টাকা দেন আমি পড়াশোনা করি। কিন্তু আমার কাকা আমাকে সেই টাকাটা দেয়নি। আমি আর মেডিকেলে পড়তে পারলাম না এবং সেখানেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিলাম।


হঠাৎ করে আমার কাকা অসুস্থ হয়ে পড়েন দেশের বাহিরে নিয়ে যায় চিকিৎসা করানোর জন্য। এবং চিকিৎসা করে জানতে পারা যায় যে আমার কাকার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। মাসে মাসে রক্ত দিতে হবে তার শরীরে।


মিলি আমার বান্ধবী। আমরা একসাথে পড়াশোনা করেছি এবং আমরা একসাথেই মেডিকেলে চান্স পেয়েছিলাম। মাসে মাসে কাকার ব্লাড দেওয়ার জন্য মিলি যে মেডিকেলের জব করে আমি সেই মেডিকেলেই কাকাকে নিয়ে যেতাম। মিলি আমার ব্যাপারে সব কিছুই জানত এবং আমি মিলি কে পড়াশুনা না করার কারন বলেছিলাম।সবকিছুই আমি মিলির সাথে শেয়ার করতাম।


আমার কাকা আমার বাবার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে সেই রাগটা আমি মেনে নিতে পারেনি। একদিন মিলিকে বলেছিলাম -"মিলি তুই যদি আমার কাকাকে মেরে ফেলতে পারিস তাহলে আমি তোকে অনেক টাকার মালিক করে দিবো। "আমার এই প্রস্তাবের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।যেনো মনে হলো ও নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।মিলি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আসলে কোনো ডাক্তার রাজি হবে না যে একটা পেশেন্ট কে মেরে ফেলার জন্য। তারপর আমি মিলিকে বারবার রিকোয়েস্ট করতে থাকি। কিন্তু মিলি রাজি হয়নি। একপর্যায়ে বলেছে যে এই খুনের ব্যাপারে আর যদি একটাবার বলি তাহলে থানায় ডায়েরি করতে বাধ্য হবে।


তখন আমার মিলি উপর অনেক রাগ হয়। বান্ধুবী হয়ে বান্ধুবীর এমন একটা কাজ করে দিতে পারবে না।মিলি তো জানতো আমার লাইফের ব্যাপারে।আমি ভাবতে থাকি মিলির জীবনটা ও আমার জীবনের মতো নষ্ট করে দিবো। 


ডাক্তার আবিদ এবং মিলির বিয়ের খবর আমি জানতে পারি এবং তাদের বিয়ে ঠিক দুই দিন আগেই আমি মিলির নামে বাজে ভিডিও ভাইরাল করে দেই ফেসবুকের মাধ্যমে। এর দুদিন পরেই আমার কাকার শরীরে ব্লাড দেওয়ার জন্য আমি আমার মেডিকেলে যাই। তখন ডিউটিতে ছিলেন ডাক্তার নেহাল আমি ডাক্তার নেহালকে রিকোয়েস্ট করেছিলাম যে সে যদি আমার কাকাকে মেরে ফেলতে পারে তাহলে আমি তাকে এক কোটি টাকা দিবো। আসলে আমি টাকার কথা বলে তাকে লোভ দেখিয়েছিলাম।


ডাক্তার নেহাল আমার কাছে এডভান্স পঁচিশ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। আমি জালিয়াতি করে আমার কাকার একটা জমি বিক্রি করে দেই। বিক্রি করে ম্যানেজ করি পঁচিশ লাখ টাকা। এবং আমি ডাক্তার নেহাল কে পঁচিশ লাখ টাকা দিয়ে দেই।কারন আমি এই আত্মসাতের প্রতিশোধ নিতে পাগল হয়ে গেছিলাম।হঠাৎ করে নেহাল আমাকে একটা বাজে প্রস্তাব দিয়েছিলো। সাথে নাকি আমার শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে হবে।


আমি তাকে বলেছিলাম যে এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার এই কথা শোনার পরে নেহাল বলে যে সে আমার কাকাকে মেরে ফেলতে পারবে না। আর আমি যে টাকা দিয়েছি সেই টাকা আমাকে ফেরত দিতে পারবে না। আমি যদি তার সাথে শারীরিক মেলামেশায় না জড়াই।


 শেষ পর্যন্ত আমি ডাক্তারের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলাম। সন্ধ্যার পরে ডিউটি শেষ করে নেহাল আমাকে নিয়ে তার ফ্ল্যাটে উঠে।

"ভৌতিক গল্প ও রহস্যময় কাহিনী" পেজের সাথেই থাকুন। আমাদের পেজের লিংক facebook.com/voutik03 পেজটাতে লাইক এবং ফলো দিয়ে রাখবেন যাতে পরবর্তী গল্প গুলো সহজেই আপনি পেতে পারেন।


রাত যখন দশটার দিকে ডাক্তার নেহাল আমাকে যখন তার কাছে ডাকতেছে। তখন আমি তাকে সূক্ষ্মভাবে মেরে ফেলার চিন্তা করি। শরবতের গ্লাসে পাওয়ারি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দেই। যখন উলঙ্গ অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে তখনই তাকে খুব সূক্ষ্মভাবে মেরে ফেলি।


অনেকদিন আগে মিলি আমাকে বলেছিল ডাক্তার নেহালের ব্যাপারে। ডাক্তার নেহাল নাকি মিলির সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে চায়। মিলিকে নাকি ডাক্তার নেহালের খুব পছন্দ। আমি মিলিকে বলেছিলাম যে সেও একজন ডাক্তার আর মিলিও একজন ডাক্তার। তাদের সমস্যা কি? আর তাদের তো বিয়ের বয়স হয়েছে।নেহালের প্রস্তাবে রাজী হতে বলেছিলাম। কিন্তু মিলি রাজি হয়নি। তবে একটা কথা বলেছিল ডাক্তার নেহালকে মিলির অপছন্দ। এবং তাকে নাকি ভালো লাগেনা। 


মিলির এই কথাটা আমার মনে ছিল। তাই তো ডাক্তার নেহালকে খুন করার পরে আমি ডাক্তার আবিদের সাথে যোগাযোগ করি। আমি আবিদকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করি।


প্রথমে ডাক্তার আবিদকে সতর্ক করি যে কেউ একজন তাকে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করতেছে।সেই সাথে আমি মিলিকে একটা ম্যাসেজ দিয়েছিলাম।


"ডাক্তার আবিদ যেকোনো মূহুর্তে খুন হয়ে যাবে ডাক্তার নেহালের মত।আপনার সাথে যেহেতু আবিদের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক রয়েছে এবং আপনাদের যেহেতু বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সেহেতু আপনি তাকে একটু সাবধানে থাকতে বলবেন।আমি আবিদকেও সতর্ক করেছি কিন্তু সে হয়তো আমার কথাটা বিশ্বাস করবে না।তাই আপনাকে জানিয়ে রাখলাম।


আমি মিলি এবং আবিদকে ম্যাসেজ দিয়ে দুজনার বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছি।তবে আমি জানতাম যে ডাক্তার আবিদ তার বন্ধু নিলয়ের সাহায্য নিবে।তাই তাকে বলেছিলাম আমাকে যেনো না খুঁজে তাহলে আমি কোনো আপডেট জানাতে পারবো না।


কিন্তু আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি মেসেজ যে মেসেজটা আমি ভুল করে আমার পার্সোনাল নাম্বার থেকে পাঠিয়েছিলাম। আজ সেই একটি ভুলের জন্যই আমি গ্রেপ্তার হয়েছি। আমার বান্ধবী মিলির বাজে ভিডিও আমি নিজেই ভাইরাল করেছিলাম এবং ডাক্তার নেহাল কে আমার হাতেই খুন হয়। সবকিছুর অপরাধ আমার। কেউ পাপ করলে বা অন্যের ক্ষতি করলে তার পাপের শাস্তি পাবেই।এখন আপনারা আমার যে শাস্তি দেবেন সেই শাস্তি আমি মাথা পেতে মেনে নেবো। কিন্তু আমার একটাই আবদার আমার বাবার নামে যত সম্পত্তি আছে সে সম্পত্তির ভোগ তোমার কাকা করতে পারবে না। কেননা আমাকে সব দিক দিয়ে ঠকিয়ে দিয়েছে। আমার তো আর কোনো ভাইবোন নেই আমি চেয়েছিলাম মেডিকেলে পড়াশোনা করব কিন্তু আমার কাকার জন্য আমি মেডিকেলে পড়াশোনা করতে পারিনি। সামান্য কিছু টাকা আমি আবদার করেছিলাম তাদের কাছে।


নেহাকে জেলবন্দি করা হয়। থানা থেকে বেরিয়ে এসে মিলির নাম্বারে বার বার ফোন দিলাম কিন্তু মিলির নাম্বার অফ। আমি শহরে মিলিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু সাত দিনের মতো হয়ে গেল তারপরও মিলের কোন খোঁজ পেলাম না।


সপ্তাহ পেরিয়ে মাস হয়ে গেল তারপরও আমি মিলির কোনো সন্ধান পেলাম না। আমার ফ্যামিলিকে জানিয়েছি যে আসলে মিলের কোন দোষ নেই মিলিকে নেহা ফাঁসিয়ে দিয়েছে।সব কিছু বের হয়ে এসেছে।


অন্যদিকে মিলির খোঁজ খবর না পেয়ে আমার ফ্যামিলি আমার বিয়ের জন্য খুব তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমার একটাই কথা আমি মিলিকে যেহেতু ভালোবেসেছি আমি মিলিকেই বিয়ে করবো। জানিনা মিলি আমার কাছে কবে ফিরে আসবে?


ছয় মাসের মত হয়ে গেল আমি আর মিলিকে খুঁজে পেলাম না জানিনা মিলি কেমন আছে কোথায় আছে আর আমার কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নেই কিবা করেছে। অন্যদিকে আমার বাবা মা আমার জন্য মেয়ে দেখেছে তাদের পছন্দ হয়েছে। খুব অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের বিয়ে হবে।


কিন্তু হঠাৎ করে মিলির ফোন আসে আমার কাছে।


- আবিদ আমি এখনএখন অস্ট্রেলিয়ায় আছি। আমি যখন ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দেই তখন আমার মা মানসিকভাবে প্রচুর অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্ট্রোক করে কোমায় চলে যায়। তার চিকিৎসার জন্য আমাদের অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের কাছে অত টাকা ছিল না। যার কারণে আমি আপনার কাছে তিন লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলাম। আমার ফ্যামিলি সহ আমরা সবাই অস্ট্রেলিয়া চলে এসেছি। আমি ছোটখাটো একটা জব করি। এতদিন আপনার টাকাটা আমি ম্যানেজ করতে পারিনি যার কারনে আপনার সাথে আমি যোগাযোগ করেনি। আসলে কোন মুখ নিয়ে বা যোগাযোগ করব। আপনি তো আমাকে বিশ্বাস করে টাকাটা দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি এতদিনে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেনি। যার কারনে আপনার সাথে আমি যোগাযোগ করতে পারিনি। আজ আমি আপনার টাকা যোগাড় করেছি। আপনার একাউন্টে আমি আপনার দেওয়া তিন লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিব। আর আমি জানি যে আপনি হয়তো এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করতেছেন। কিন্তু তারপরও আমার কিছুই করার নেই। আপনার ফ্যামিলির কথা মত আপনি বিয়ে করে নিয়েন। আজকের পর থেকে আপনার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হবে না। আমি আর চাই না যে আমার আর কারো সাথে যোগাযোগ হোক।আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক এটাও আমি চাইনা। একটা কথাই বলবো আপনি আমাকে ভুলে যাবেন। আপনি ভালো থাকবেন।


কথাগুলো শুনে আমার খুব কষ্ট লাগলো নিজের অজান্তে কখন যে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো অনুভব করতে পারলাম না।মনে হলো খুব বড় একটা কিছু হাড়িয়ে ফেলেছি।হয়তো মিলির প্রতি আমার আস্তে আস্তে ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আজ আমি সেই আমার ভালোবাসাটা হারিয়ে ফেললাম। তবে আমার একটাই কথা মিলি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটা সব সময় থাকবে। আর যারা মিলিকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে তারা যেনো সঠিক শাস্তি পায়।


আসলে যারা একসময় একে অন্যকে নিয়ে সাপ লুডু খেলতে যায় একসময় দেখা যায় তারা উপরে উঠতে গিয়ে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। হয়তো তার লাইফটা ওখানেই শেষ হয়ে যায়। আমার সাথে সাপ লুডু খেলার জন্য আমি আমার মিলিকে হারিয়ে ফেললাম।


......সমাপ্ত.......


লেখক: Md Nazmul Huda


রহস্যময় সব গল্প পড়ুন।