বাস্তব জীবনের গল্প
আব্বা দুইশো টাকা দাও।” চাকরিজীবী ছেলে মাসের অর্ধেক না যেতেই টাকা চায়! ব্যাপার কী?
বাবা অবাক হয়ে বললেন, খুচরা নেই বুঝি?
– “ না আব্বা, মানিব্যাগ ফাঁকা। ”
– “ বলিস কী! এতগুলো টাকা বেতন পাস, করিসটা কী? ”
প্রশ্ন এড়িয়ে বললাম,
– “ দাও তো তারাতাড়ি। ”
দুইদিন না যেতেই আবার আব্বার কাছে টাকা চাইলাম।
বরাবরের মতই অবাক হয়ে বললেন,
– “ সেদিনই না নিলি! ”
– “ দুইশো টাকায় দুইদিন চলে বলো?আজ অর্ধেক দাও। একশো। ”
– “ চলে না মানে? এতগুলো টাকা বেতন পাস তবুও চলে না? ”
– “ তুমি বুঝছো না আসলে, এই বাজারে এই টাকা কোন টাকাই না।দাও, তারাতাড়ি দাও তো। ”
পরদিন মা আমাকে বললেন,
– “ তুই নাকি রোজ তোর আব্বার কাছে টাকা চাচ্ছিস? ”
– “ হ্যাঁ। ”
– “ কেন? বেতন পেয়ে করিস কী? ”
– “ চলতে পারি না মা, দাও, তুমি একশোটা টাকা দাও তো। ”
– “ সে কী! আমার কাছেও চাচ্ছিস? ” মা একশো টাকা দিয়ে বিদায় করলেন।
এক সপ্তাহ হয়ে গেল টুকটাক হাতখরচ বাবার টাকায় চলছি।মাঝে মাঝে মায়ের কাছ থেকে নিই। আব্বা ভীষণ বিরক্ত।
আমায় ডেকে বললেন,
– “ বাপের কাছ থেকেই যদি হাতখরচ নিবে তাহলে চাকরি করার দরকারটা কী? ”
– “ ঠিক বলেছো, দরকার নেই। ”
– “ তাহলে ছেড়ে দে। ”
– “ দিয়েছি তো বাবা। ”
মা পাশ থেকে আতঙ্কের স্বরে বললেন,
– “ কী! কী বললি? চাকরি ছেড়ে দিয়েছিস? ”
– “ হ্যাঁ মা। ”
আব্বা বললেন,
– “ সত্যি বলছিস? ”
– “ হ্যাঁ, আব্বা। ”
– “ তাহলে গত সপ্তাহে সকালে কোথায় গিয়েছিলি? ”
– “ ছেড়েছি পাঁচদিন হল, ভাবলাম একবারে বললে তোমরা সহ্য করতে পারবে না, তাই কিছুদিন পরে বললাম।রোজ রেডি হয়ে সোজা যাই পাবলিক লাইব্রেরিতে।বসে বসে গল্প পড়ি। ”
আব্বা বিশ্বাস করলেন না।ভাবলেন, আমি মজা করছি।কিন্তু পরের সপ্তাহে যখন অফিস যাওয়া বাদ দিয়ে রুমে শুয়ে রইলাম তখন ঠিকই বিশ্বাস হল।আব্বার মুখ শুকনা হয়ে গেল।কয়েক দিনের ব্যবধানে তিন বছর আগের চেহারায় ফিরে গেলেন।চোখে মুখে হতাশার ছাপ।মার তো কাঁদোকাঁদো অবস্থা।মুখের হাসি নিলাম হয়ে গেছে।পরিবারের একমাত্র ছেলে, তার ওপর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও পেরিয়ে গেছে।কয়েকটা আবেদন করা আছে।ওগুলো গেলে সারাজীবন বেকার থাকতে হবে।ছেলেকে নিয়ে আব্বা পড়লেন মহা চিন্তায়।
– “ ফাইনালি রিজাইন দিছিস? ফেরত পাবার কোন উপায় আছে? ”
– “ না আব্বা। ”
– “ ছাড়লি কেন? ”
– “ ভাল লাগছিল না তাই। ”
– “ এটা কী ধরণের ছেলেমানুষি?একবারও ভাবলি না দুই বুড়ো মানুষের কথা। ”
– “ ওহ বাবা, প্লিজ থামো।দাও দুইশোটা টাকা দাও, বের হবো।তাড়া আছে আমার। ”
– “ তুই কি আমার সাথে ফাজলামো করছিস? দূর হ। ”
দিন যায় আব্বার চিন্তা বাড়তে থাকে।ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, ডাক্তার দেখাতে হবে। আব্বা মা দু'জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ডাক্তার দেখাবেন।এই যুগে সোনার হরিণ কেউ ছেড়ে দেয়?এ কী পাগল নাকি মহাপাগল?
ডাক্তার সাহেব কিছু টেস্ট ফেস্ট করে ওষুধ দিলেন।পর্যাপ্ত ঘুমাতে বললেন।আব্বা মা কিছুটা স্বস্তি পেলেন।
দুপুরবেলা খেতে বসেছি।আব্বা বললেন,
– “ অন্য চাকরির চেষ্টা কর। ”
– “ না, করবো না। ”
আব্বা অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,
– “ কী বলিস? তুই কি পাগল হয়ে গেলি? চাকরি ছাড়া চলবে কীভাবে? ”
– “ আব্বা, আমি বিজনেস করবো। সাত লাখ টাকা দাও। ”
আব্বা গম্ভীর গলায় বললেন,
– “ আমি কোন টাকা পয়সা দিতে পারবো না। ”
মাকে নির্দেশ দিলেন, – “ তোমার মাথা নষ্ট ছেলেটাকে বোঝাও। ”
পুরো বাড়িতে শোকের আবহ। আব্বা ঠিকমত খান না, ঘুমান না। মা সারাদিন গালে হাত দিয়ে চিন্তা করে।আমার কাছে এসে এমন কিছু প্রশ্ন করে, এমন কিছু বুঝ দেয়, যেন তার ছেলে পাগল হয়ে গেছে।
সন্ধ্যায় আব্বা বললেন,
– “ তুই পড়ায় মন দে।আবার পরীক্ষা দে।টাকা পয়সার সব ব্যবস্থা আমিই করবো। তুই পারবি। আমার সে বিশ্বাস আছে। ”
আব্বার চোখের কোণে জল দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। ফাঁস করেই দিলাম।
– ❝ আব্বা, আমি পনেরো দিনের শ্রান্তি বিনোদন ছুটিতে আছি।হুট করে তিন বছর আগের সেই বেকারের বাবা মাকে মিস করছিলাম।নতুনভাবে পুরাতন ফিলিংস নিতে ইচ্ছে হচ্ছিল।তাই একটু মজা করলাম আরকি। ❞
আব্বা চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে বললেন,
– ❝ তুই কি সারাজীবন এমন দুষ্টুই থাকবি? ভাল হবি না? ”
----সমাপ্ত-----
ছোটগল্প
-শ্রান্তিতে_বিনোদন -বেলাত_উজ্জ্বল