শাশুড়ি কেন তার ছেলের বউয়ের সাথে এমন করে?

 বউ শাশুড়ির গল্প

বউ শাশুড়ির গল্প

আজ আমার স্বামী বিদেশ থেকে আসছে তিন বছর পর। ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে  আমার বড় ভাসুর নিয়ে আসছে। আমার ছেলে ওর বাবাকে দেখে সে কী খুশি একবার বাবার জামা ধরে টানছে, আবার চুল ধরে টানছে ওর যেনো খুশি আর ধরে না। ভিডিও কলে বাবাকে দেখে এক দেখাতে চিনে ফেলছে। আধো আধো বুলিতে বাবার সাথে কথা বলছে।


আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে এসব দেখতেছি সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। শ্বাশুড়ি মা কিনা কী মনে করেন। আমার শ্বাশুড়ি মা অনেক গরম প্রকৃতির মানুষ আমার শশুরও ভয় পায় উনাকে।

আমার স্বামী বিদেশ থাকতে কল করলে ১০ মিনিটের বেশি কথা বললে রাগারাগি শুরু করেন। মায়ের ভয়ে উনিও তেমন কল করেন না। রাত হলে নিজের রুমে গিয়ে যা একটু কথা বলি। 


এইছে উনি আসছেন এতোক্ষণ হয়ে গেছে আমি এখনো উনাকে ভালো করে দেখি নাই উনিও আমাকে দেখেননি। আমি রান্না করতেছি বড়ো জা'সহ উনি দুইদিনের জন্য আসছে ভাসুরের চাকরির জন্য উনারা বাসা ভাড়া করে শহরে থাকেন। আবার এদিকে উঠানে ধান সিদ্ধ করছে সেগুলো রোদে দিছি সে ভয়ে উনি কিছু বলেছেন না আমাকে রুমে যেতে।


সব কাজ শেষ করে উঠান থেকে ধান উঠিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে ফ্রি হতে হতে ৪টা বেজে যায়। উনারা সবাই খাবার-দাবার করে যার যার রুমে চলে যায়। আমি আর আমার জা' রুমে যাবো সে মুহূর্তে আমার শ্বাশুড়ি মা বলে।

- মাসুদ ঘুমাক ও ক্লান্ত তোমরা দু'জনে মিলে কাঁথাটা সেলাই করে ফেলো।

মাসুদ আমার স্বামীর নাম, শ্বাশুড়ি মা কাঁথাটা দিয়ে ঘরে চলে যায়। শ্বাশুড়ি মা'র কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসে। জা' আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে,

- কী করবি বল? তোর স্বামীরও দোষ আছে ও তোকে ডাকলে আম্মা কী ওকে খেয়ে ফেলবে। আমিও তো কিছু বলতে পারছি না বললে বলবে দুইদিনের জন্য এসে ফটর ফটর করবে না। দেখলি না ওইদিন তোর হয়ে কথা বলছি বলে তোর ভাইয়াকে দিয়ে আমাকে থাপ্পড় খাওয়াইছে। ভাগ্যিস ওর চাকরির জন্য দূরে থাকতে পারছি, 

না হলে আমাকেও আগে জ্বালিয়ে মারছে। ধৈর্য ধর দেখবি আল্লাহ তোর জন্য ভালো কিছু রাখছে।

জা'য়ের কথা শুনে মনকে শান্ত করি, আমার জা' অনেক ভালো যখন ধানে সময় আসে বা অন্য ক্ষেত ফসলের সময় আসে তখন ছেলে মেয়েকে আমার ভাসুরের কাছে রেখে আমাকে সাহায্য করতে চলে আসে। সব কাজ শেষ করে তারপর যায় যাওয়ার সময়ও শ্বাশুড়ি মা কিছুই দেয় না ক্ষেতের ফসলাদি। তারপরও আসে শুধু আমার উপর সব কাজ গিয়ে পড়বে বলে।


সন্ধ্যা পযন্ত কাজ শেষ করে হাসঁ,মুরগী খোয়াড়ে ঢুকিয়ে দু'জনে মিলে নাস্তা বানাতে যাই। আমারও আস্তে আস্তে স্বামীর প্রতি অভিমান জমতে শুরু করে। মাকে এতো ভয় পাওয়ার কী আছে এমন নয় যে আমরা সবাইর সামনে অসভ্যতামি করতেছি। আমিও মনে মনে পণ করি রাতে কথা বলতে আসলে কথা বলবো না দেখি তখন উনার কেমন লাগে।


রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর সব গোছগাছ করে ছেলেকে নিয়ে রুমে আসি। ওকে ঘুম পাড়িয়ে আমিও ঘুমের ভান ধরে শুয়ে পড়ি। প্রায় রাত ১টার দিকে বাবা-মার সাথে কথা বলে উনি রুমে আসেন আমার তখন চোখ লেগে আসছিলো। আমি নাড়াচাড়া না করে আগের মতো শুয়ে থাকি।


উনি দুই,তিন বার আমাকে ডাকেন আমার তখন রাগ হয় সে সকাল ১০টায় আসছে আর এখন ডাকতেছে দিনে কোথায় ছিলো?? স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে তো শুধু শারীরিক চাহিদার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আরও কতো ভাবে ভালোবাসা যায় দুইজন দু'জনের চোখে চোখ রেখে হাতে হাত রেখেও কতো কথা বলা যায়। 

আমার সাড়া না পেয়ে উনি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে বলে। 


- সরি বউ আমি জানি তোমার অভিমান হইছে, কিন্তু কী করবো বলো মাকে ছোট্ট বেলা থেকে আমরা ভয় পেয়ে আসছি। এখনো সেটা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। মাফ করে দাও আমার মায়ের উপরও রাগ করে থেকেও না। মুরব্বি মানুষ কী করবে বলো?

উনার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি কিন্তু কিছু বলিনি এখনো হইতো অভিমান পুরাপুরি কাটেনি।

 

(এখন অনেকে বলবেন এমন হয় না-কি,, কিন্তু এটা বাস্তবে ঘটছে তাই কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না। আমাদের সমাজে যেমন ভালো শ্বশুড়ি আছে তেমন এরকম কাটখোট্টা শ্বাশুড়িও আছে। ভুল-ভ্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন) 


~সমাপ্ত~


,,অনুগল্প 

,,অভিমানী 

,,জিনাত আফরোজ


এমন আরও বউ শাশুড়ির গল্প পড়ুন।