সত্যি বাস্তব বড় কঠিন | বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

 বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

আমি এক ছাত্রকে চিনতাম। হল থেকে হেঁটে হেঁটে সে ধানমন্ডি ১৫ তে যেতো টিউশনি করাতে। টিউশনি শেষ করে আবার হেঁটে হেঁটে হলে ফিরতো। তখন হাতে মোবাইল ছিলোনা। তার হাতে থাকতো নোট। হাঁটার সময় সে নোট পড়তো আর হেঁটে টিউশনি করে ভাড়া বাচাতো। 


একদিন সে ছাত্রকে পড়াচ্ছে। এমন সময় সে শুনে ছাত্রের পিতা ছাত্রের মাকে বলছেন-

স্যারকে আজ দেখলাম হেঁটে হেঁটে আসছেন।

মা বলছেন- হেঁটে যখন আসতে দেখলে - তখন তুমি ওনাকে রাইড দিলে না কেন?

রাইড দিলাম না কারণ- এতে হয়তো উনি লজ্জা পেতেন বা বিব্রত বোধ করতেন। তাছাড়া, প্রতিদিনতো আমি রাইড দিতে পারবোনা।প্রতিদিন রাস্তায় উনার সাথে আমার দেখাও হবেনা। একটা কাজ করো- আজ থেকে স্যারকে আর রাতে নাস্তা দিবানা। রাতে খাবার খেতে দিবা।

ছাত্রের চোখ অশ্রুসিক্ত হলো। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের এরকম অসংখ্য অদেখা অশ্রু আছে । সব অশ্রু শুধু প্রেমঘটিত না। জীবন ঘটিত অশ্রুপাতও আছে।  


এক ছাত্রকে চিনতাম। হুট করে বাবা মারা গেলেন। ভাই বোন এগারো জন। সে পরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান। কি করবে সে। সে হলো নৌকার মাঝি। নৌকা বেয়ে বেয়ে সে পরিবারের হাল ধরলো। ভাইবোন সবাইকে শিক্ষিত করালো। সবাইকে বিয়ে শাদি দিলো। মাকে হজ্ব করালো। কিন্তু অসম্ভব মেধাবী হওয়ার পরও তার আর পড়ালেখা হলোনা। ভাই বোন সবার স্বপ্ন বুনে দিতে গিয়ে নিজের সংসার করাও তার হলোনা। জীবনের কত ঘাত প্রতিঘাতে কত মেধাবীরা এরকম ঝরে পড়ে গেছে, কত মেধাবীরা খেয়া নৌকার মাঝি হয়ে গেছে সেটা কেউ জানেনা। আমরা ম্যুভি,স্পোর্টস, সংগীত জগতের তারকাদের চিনি কিন্তু একেকটি মধ্যবিত্ত পরিবারে পর্দার আড়ালে থাকা এই সব জীবন যোদ্ধা তারকাদের চিনিনা। লড়াই করেও হেরে যাওয়া সংগ্রামী মানুষের কথা কোথাও লিখা থাকেনা। 


অসংখ্য ছাত্র আছে যারা গণরুমে রাত কাটিয়ে, গণ শৌচাগারে লাইন ধরে প্রাতঃক্রিয়া শেষ করে এর পর রেডি হয়ে কোনো রকমে কলা রুটি খেয়ে বা না খেয়ে ক্লাসে উপস্থিত হয়। কয়েকদিন আগে ইউ টিউবে একটা ডকুমেন্টারি দেখলাম-একদিকে ছাত্ররা যখন জুমে ক্লাস শিখছে। অন্যদিকে আফ্রিকার হাজারো হাজারো শিশুরা ঘুম থেকে জেগে ওঠে দু তিন ঘন্টা পানির জন্য হাঁটছে। 


মোটিভেশন দিতে গিয়ে অনেকেই বলেন- দিনরাততো সবার জন্য চব্বিশ ঘন্টা। ও পারলে নিশ্চয়ই তুমিও পারবে।

 

জ্বিনা। যে ছাত্রটি হেঁটে হেঁটে টিউশনিতে যায় আর যে প্রাইভেট কারে ক্যাম্পাসে যায় তাদের চব্বিশ ঘন্টা সমান না। যে ছাত্রটি গণশৌচাগারে লাইন ধরে প্রাতঃক্রিয়া শেষ করে কোনো রকমে কলা রুটি মুখে গুজে ক্লাসে যায় আর যে ঘুম থেকে জেগে ওঠে ডাইনিং টেবিলে খাবার রেডি পায় তাদের চব্বিশ ঘন্টা সমান না। যে শিশুটি পানির জন্য প্রতিদিন দু তিন মাইল হাঁটে আর যে শিশুটি ঘরে বসে অনলাইন দুনিয়ার নানা জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতে হাঁটে তাদের চব্বিশ ঘন্টা সমান না। অসম্ভব মেধাবী হওয়ার পরও জীবন চালানোর প্রয়োজনে যাকে খেয়া নৌকার মাঝি হতে হয় আর যে আনন্দের জন্য খেয়া নৌকায় চন্দ্রিমা রাত উদযাপন করে তাদের চব্বিশ ঘন্টা সমান না। 


ডিসকভারির ডকু আছে। একটা ফিশ ট্যাংকে একটা শার্কের যেখানে বড়জোড় আট ইণ্চি গ্রোথ হয়। সেখানে সমূদ্রে একটা শার্কের গ্রোথ হয় আট ফুট। এখানে, শার্কের দোষ না। দোষ হলে পানির, পানির ট্যাংকের, শার্কের বেড়ে ওঠা পরিবেশের।


"সবার জন্য সমান চব্বিশ ঘন্টা" এটা কেবল মাত্র ঘড়ির কাটার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে না। একেক জীবনের গল্প ও ভাই একেক রকম। একই গজ ফিতা দিয়ে ভূমি মাপা যায় । কিন্তু মানুষের জীবন মাপা যায়না।


-Arif Mahmud 


বাস্তব জীবনের গল্প ও ঘটনা পড়ুন।