সন্তানদের দেওয়া কষ্ট | বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

 বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

আজ কেমন জানি খুব ইচ্ছা করতেছে পালং শাক দিয়ে ভাত খেতে কিন্তু ৩০ টাকা দিয়ে যে পালং শাক কিনবো সেই টাকাও অামার কাছে এখন নাই।খুব লজ্জা লাগতেছে অামার ছোট ছেলের কাছে টাকা চাইতে।একসময় আমি অনেক টাকা ইনকাম করেছি ছেলেরা ঘুম থেকে উঠার আগে অামার স্ত্রী নুর জাহানের হাতে টাকা দিয়ে রাখতাম যাতে করে ছেলেরা স্কুলে যাওয়ার সময় টাকা নিয়ে যায়।অনেকটা লজ্জা নিয়ে ছোট ছেলের কাছে গিয়ে বলি-

.

_পালং শাক খেতে ইচ্ছা করতেছে, পালং শাক কিনতে বাজারে যাবো থাকলে কিছু টাকা দেয়।

_আমার কাছে তো ভাংতি টাকা নাই বাবা।

.

ছেলের মুখ থেকে এই কথা শুনে খুব লজ্জা লাগছে।লজ্জা আর দ্বিতীয়বার টাকা চায় নাই। মাথা নিচু করে বাহিরে চলে গেলাম অাকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আমি নিজে নিজেকে বলি-

.

_কার জন্য জীবনে এত কষ্ট করেছি যার কাছে টাকা চাইতে গেলে ভাংতি নাই এই কথা শুনতে হয়।

.

অামার ঘরে ফ্রিজ ভরা মাছ,হাসের মাংস সব আমার ছেলের ইচ্ছা কিনা, এগুলো থাকার পরেও অামার খুব ইচ্ছা পালং শাক দিয়ে ভাত খাবো কিন্তু টাকার জন্য সেই ইচ্ছাটা পূরণ হলো না।অামার অবস্থা আগে এমন ছিলো না অনেক সুখের ছিলো, কিন্তু এই সুখ তো আর সবসময় থাকে না।বড় ছেলে জব করতো লোভে পড়ে গেলো প্রবাসে সেখানে কিছুদিন থেকে চলে আসছে, গেলো অামার অনেকগুলো টাকা।ছোট ছেলেও প্রবাসে যাওয়ার সময় অনেক টাকা খরচ হয় তখন।অাদরের কন্যা অবন্তী।অবন্তীর বিয়েতে অনেক টাকা খরচ করি অামি।অামার যত জমা টাকা ছিলো সব ছেলে সন্তানের জন্য খরচ করি। অারো অনেকগুলো টাকা ঋণ ছিলো সেই টাকা পরিশোধ করার আগে অামার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।

.

ছেলে সন্তানের সুখের জন্য যে টাকা ঋণ করেছি তাদের মধ্যেয়ে একজন পাওনা টাকার জন্য কিছুদিন আগে অামার কাছে আসে নাম তার সিরাজ।সিরাজ ভাই অনেক ভালো মানুষ উনি, অনেকদিন হয়ে গেলো তার টাকাগুলো দিয় নাই।মুচকি হাসি দিয়ে সিরাজ ভাইকে বলি"- দুইদিন পরে টাকা দিয়ে দিবো

.

 টাকার চিন্তায় অামি মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাই অনেক চিন্তার পরে সিন্ধান্ত নিলাম- জমি বিক্রি করে দিবো।কিন্তু হঠাৎ এই জমি কে কিনবে?দুদিনের মধ্যেয়ে সিরাজ ভাইয়ের টাকা দিতে হবে এই চিন্তায় নিয়ে অামি অস্থির।অামার অস্থিরতা দেখে অামার ছেলে সামির বলে-

.

_বাবা জমি আমি কিনবো।

.

অামার ছেলের মুখে এই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।ছেলের কাছে টাকা আছে,কিন্তু টাকা চাইলে দিবে না আমি জানি। কিন্তু এটা কখনো চিন্তা করি নাই-ঋণ পরিশোধ করতে নিজের ছেলের কাছে জমি বিক্রি করা লাগবে।মুচকি হাসি দিয়ে অামি বলি-

.

_আচ্ছা সিরাজের টাকা দিয়ে দিস,জমি তোর নামে হয়ে যাবে।

.

অামার ছেলেদের সব ইচ্ছা আমি পূরণ করেছি কিন্তু ছেলেরা কখনো আমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে নাই। আজ ও ঋণের টাকা দেওয়ার জন্য ছেলের কাছে জমি বিক্রি করা লাগে।ছোট ছেলে নিজ থেকে বিয়ে করেছে আমি হাসিমুখে মেনে নিছি।সংসার করতে গেলে বৌ শাশুড়ি অনেক কিছু হয় তাই বলে এই না বৌয়ের কথা শুনে মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।এক ঘরে থাকে অথচ অামার ছেলে সামির তার মায়ের সাথে আজ তিন বছর ধরে কথা বলে না।আজ ছেলেদের কাছে টাকা আছে শাসন ও করতে গেলে ভয় লাগে।যদি বলে-

.

_বাড়ি থেকে বাহির হয়ে যান এই বাড়ি আমার।

.

হেলান দিয়ে চেয়ারে বসে আছি ইদানিং শরীর কেনো জানি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ে।হঠাৎ আমার কাঁদে অালতো করে কে জানি হাত রাখে,পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি অামার স্ত্রী নুর জাহান।৪০ বছর সংসার করতেছে সুখে দুঃখে অামার পাশে ছিলো।নুর জাহান আমার হাতে ১০০ টাকা দিয়ে বলে-

.

_বাজার গিয়ে পালং শাক নিয়ে আসেন।

_নুর জাহান তুমি টাকা কই পাইছো?

_আমার কাছে ছিলো,দুপুর হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি বাজার থেকে পালং শাক নিয়ে অাসেন আজ আমি নিজের হাতে আপনার জন্য পালং শাক রান্না করবো।

.


গল্প.. পালং শাক"


এমন আরও বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।