স্ত্রীর গর্ভবস্থায় পাশে থাকুন | স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা

 স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

গল্পঃ_তুমি_বাবা_হতে_চলেছো

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


মহিমাঃ খবরদার একদম ঘরে ঢুকবে না, বাহিরে 

দাঁড়িয়ে থাকো। 


আমিঃ তাহলে দরজা খুলেছো কেনো?


মহিমাঃ দরজা খুলেছি তোমাকে দেখার জন্য। 


আমিঃ আমার অপরাধটা কি বলবে তো?


মহিমাঃ তোমার কাছে ঘড়ি আছে? 


আমিঃ আছে তো।


মহিমাঃ দেখো তো কয়টা বাজে?


আমিঃ মাত্র ১০ টা বাজে।


মহিমাঃ অফিস ছুটি হয়েছে কয়টা বাজে?


আমিঃ কয়টায় আবার ৫ টায়। 


মহিমাঃ তাহলে এতো দেরি হলো কেনো?


আমিঃ রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো। 


মহিমাঃ জ্যাম ছিলো নাকি অন্য মেয়ের সাথে ট্যাংকি মেরে আসলা।


আমিঃ তুমি এসব কথা বলতে পারলা? তুমি না 

আমার ময়না পাখি? প্লিজ ঘরে ঢুকতে দাও। 

তোমার জন্য না একটা গিফট এনেছি। 


এই কথা বলে আমি মহিমাকে বাহু-ডোরে জড়িয়ে ঘরে ঢুকলাম। আসলে গাড়ির জ্যাম টেম কিছুই না। 

রাস্তায় কলেজ লাইফের বন্ধুদের সাথে দেখা, আর সেখানেই দেরি। বন্ধুদের আড্ডায় মেতে থাকায় বাসায় আসার কথা ভুলে গিয়েছি। রুমের ভেতর আসতেই মহিমা আমাকে বললো.........


মহিমাঃ কই দেখি আমার জন্য কি গিফট এনেছো?


আমিঃ তাহলে চোখ বন্ধ করো।


বউ আমার চোখ বন্ধ করলো।। আর এই সুযোগে আমি মহিমার ঠোঁটে চুমু এঁকে দিলাম। সত্যি বলতে আমি গিফট টিফট কিছুই আনিনি। মহিমা আমাকে বললো...


মহিমাঃ এটাই বুঝি তোমার গিফট?


আমিঃ হ্যা এটাই আমার গিফট! ভালোবাসার গিফট। 


মহিমাঃ কিন্তু তোমাকে আজ আমি একটা গিফট দিবো, সেই গিফট এর কথা শুনলে তুমি পাগল হয়ে যাবে। 


আমিঃ কি সেটা?


মহিমাঃ তাহলে তুমিও চোখ বন্ধ করো।


আমি চোখ বন্ধ করলাম। মহিমা আমার কানের কাছে ওর মুখটা এনে আস্তে আস্তে বললো.......


মহিমাঃ তুমি বাবা হতে চলেছো। 


কথাটা শুনে খুশিতে বউকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে ওর কপালে একটা চুমু এঁকে দিলাম। আজকে সত্যি আমি অনেক আনন্দিত। বাবা হবো কথাটা ভাবতেই সত্যি অনেক ভালো লাগছে। দিন যায় মাস যায় আমাদের বাচ্চাটাও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে ওর পেটে। 

তবে বউটা আস্তে আস্তে অসুস্থ হতে থাকে। স্বাভাবিক উপসর্গের বাইরেও কিছু জটিলতায় ও অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে থাকে।আমি এখন বাহিরে আড্ডা না দিয়ে সময় মতো বাসায় চলে আসি। 


ঘরের কাজগুলো এখন আর ওকে করতে দেইনা। পরম মমতায় আর ভালোবাসায় ওকে আগলে রাখি। সময় মতো চেকআপ করা,ডাক্তার দেখানো কোনো কিছুতেই ক্রুটি রাখিনা। কিন্তু ও কেনো জানি মনে করে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ও মারা যাবে। তাই বারবার আমাকে অনুরোধ করে বলে.......


মহিমাঃ আমাদের সন্তানকে দেখে রেখো। কোনো রকম কষ্ট যেনো না পায় আমাদের সন্তান, আমি হয়তো বাঁচবো না।


মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করি পৃথিবীতে কারো প্রিয় মানুষ যেনো সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে চিরতরে 

ছেড়ে না যায়। আল্লাহর দরবারে এটাই আমার চাওয়া। আল্লাহ যেনো আমার দোয়া কবুল করেন আমীন 🤲বিয়ে না করলেও কিছুটা অনুভব করি স্ত্রী হারানোর যন্ত্রণা কতটা ভয়ংকর ও বিষাক্ত😓😓


মহিমার কথা শুনে আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম.......

 

আমিঃ কিচ্ছু হবে না তোমার, এতো ভয় পেও না তো।


হঠাৎ একদিন মহিমার ব্যাথা উঠেছে। ডাক্তারের দেওয়া তারিখ অনুযায়ী আমি অফিস থেকে ১ সপ্তাহের ছুটি নিয়ে রেখেছি আগে থেকে। যেদিন খুব বেশি প্রয়োজন সেদিন রাস্তায় জ্যাম থাকে প্রচুর। তবুও শত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে বউকে ক্লিনিকে নিতে সক্ষম হলাম। 


ডাক্তার জানিয়ে গেছেন নরমাল ডেলিভারি হবে না তাই সিজারের প্রয়োজন। কিন্তু আমার কেনো জানি ভয় করছে।। বারবার ওর কথা মনে পড়ছে। তবুও অনুমতি দিতে বাধ্য হই, এই ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। অতীতের কথাগুলো মনে পড়ছে বারবার। ওর সাথে খুনসুটি, ভালোবাসা, আদর, অভিমান। কত স্মৃতিই না জড়িয়ে আছে এই ছোট সংসার জীবনে। অসম্ভব রকমের ভালোবাসা কেয়ারিং পেয়েছি ওর কাছ থেকে।


আল্লাহ না করুক আজ যদি ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার বেঁচে থাকা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে। তবুও আল্লাহর উপর ভরসা। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে 

খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না, ইনশাআল্লাহ। ভিতর থেকে বাচ্চার কান্নার শব্দ আসছে। এই মুহূর্তে আমার খুশী হওয়ার কথা বাট আমি খুশি হতে পারছি না, কারন আমি একটু বেশি চিন্তিত আমার বউকে নিয়ে। বউয়ের কি অবস্থা জানার জন্য উদাসীন হয়ে আছি আমি। কিছুক্ষন পর অপারেশন থিয়েটার থেকে 

ডাক্তার বের হয়ে আসলেন। মুখে স্মিত হাসি...........


ডাক্তারঃ কনগ্রেসুলেশন মিঃ শামীম! আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। 


আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু ডাক্তার আমার বউ কেমন আছে?


ডাক্তারঃ হ্যা মা মেয়ে দুজনেই ভালো আছে। সামান্য ব্লিডিং হয়েছে। এখন রোগীকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। আশাকরি ঘন্টা ২/১ এর ভিতর সব ঠিক হয়ে যাবে। 


বউয়ের পাশে সুন্দর ফুটফুটে একটা রাজকন্যাকে নিয়ে বসে আছি আমি। কি তুলতুলে শরীর, মায়াবী চেহারা! দেখতে ওর মতোই হয়েছে। মনে হচ্ছে আমার দিকে তাকিয়ে বলতেছে "বাবা আমাকে কোলে নিছো গিফট দাওনা কেনো এখনো।" এই ছোট বাবুর দিকে তাকিয়ে যুগ থেকে যুগ পার করা যায়। বউ আমাকে বললো.....


মহিমাঃ আচ্ছা তুমি খুশি হয়েছো তো?


আমি ওর দিকে টলমল চোখে তাকালাম।। একটা সময় আমার চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। হয়তো এই গড়িয়ে পড়া অশ্রু টুকু বলে দেয় আমার মতো খুশি এই মুহূর্তে পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। 


বাবা না হলেও বাবা হওয়ার আনন্দ কতটা সেটা আমি বুঝি। আপনার স্ত্রীর গর্ভবস্থায় তার সাথে থাকুন, কেয়ার করুন! এটাই পরিচয় দিবে আপনি তার প্রতি কতটা দায়িত্বশীল। দায়িত্ব সবাই নিতে পারে, কিন্তু কতজন সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে। সুতরাং দায়িত্ব পালন করতে শিখুন। আমি মনে করে এটি একটি মহৎ গুন। যা সবার মাঝে থাকে না। যার মাঝে থাকে সে প্রকৃত কেয়ারিং স্বামী। যে পায় এমন স্বামী নিঃশ্বন্দেহে সেই নারী ভাগ্যবান।


 পৃথিবীর সব জোড়া কবুতর গুলোর ভালোবাসা অটুটু

    থাকুক যুগ থেকে যুগান্তর। ভালোবাসা বিশুদ্ধ🥰


**************সমাপ্ত************


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।