অবহেলার কষ্টের গল্প | কষ্টের গল্প

 স্বামী স্ত্রীর কষ্টের স্ট্যাটাস

স্বামী স্ত্রীর কষ্টের স্ট্যাটাস

প্রেগ্ন্যান্সি কিট টা ওয়্যার ড্রপের ড্রয়ারে লুকিয়ে রেখে মুচকি হেসে রান্না ঘরে চলে যায় শুভা। এদিকে শার্টের হাতায় একটু ময়লা লেগে থাকায় সকাল সকাল চেচিয়ে উঠে রাজন। শুভা রান্না ঘরে নাস্তা বানাচ্ছিলো। রাজনের চিৎকার শুনে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে আসে শুভা। শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো,


' কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করছো কেনো?


শুভার কথা শেষ হতে না হতেই রাজন হাত থেকে শার্ট টা শুভার মুখের উপর ছুড়ে মারে। চিৎকার করে বলে উঠলো,


'শার্ট টা কাল ধুয়ে দিতে বলেছিলাম। কই? ধুয়ে দিয়েছিলে?


শুভা শার্ট টা হাতে নিয়ে ভালোভাবে নেড়ে চেড়ে দেখে। তার স্পষ্ট মনে আছে এই শার্ট টাই কাল সে ধুয়ে দিয়েছিলো। তাই সে গলার আওয়াজ  নিচু করে বলে,


'তুমি অফিসে যাওয়ার পর পর ই আমি এটা ধুয়েছিলাম। 


শুভার কথা শুনে রাজন আরও রেগে যায়। শার্টের হাতা দেখিয়ে চিৎকার করে আবার বলে,


'ধুয়ে দিলে শার্টে ময়লা থাকে কি করে? আমার কাজ করার ইচ্ছে না থাকলে সরাসরি আমাকে বলতে পারো। আমার কাজ আমি নিজেই করবো। তুমি তোমার বাপের বাড়ি চলে যেও। এমন দায়সারা কাজ কর্ম আমার দরকার নেই।


কথা গুলো বলে ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসে চলে যায় রাজন। শুভা শার্ট টা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। শার্ট টা সে সত্যি সত্যি ই ধুয়েছিলো। অসাবধানতায় একটু ময়লা রয়ে গেছে। তার জন্যই রাজন তাকে এতো গুলা কথা শুনিয়ে দিলো। 


এমন ঘটনা যে আজ প্রথম এমন নয়। চুন থেকে পান খসলেই  রাজন শুভাকে উঠতে বসতে কথা শুনায়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শুভা অবহেলিত হচ্ছে রাজনের কাছ থেকে। শুভার প্রতি তার কোনো দায়িত্ব বোধ নেই কেয়ার নেই। বরং দিন রাত শুভাকে কথার ছুবলে বিষিয়ে দেয় রাজন। শুভা নিরবে সহ্য করে যায়। ভেবেছিলো আজ রাজন অফিসে যাওয়ার আগে প্রেগ্ন্যান্সির খবর টা তাকে জানাবে। সে ভেবেছিলো রাজন বাবা হবে এ কথা টা জানতে পারলে সে হয়তো শুভার প্রতি একটু সিরিয়াস হবে। তাকে একটু ভালোবাসবে। কিন্তু রাজন তাকে কোনো সুযোগ ই দিলো না। বরং এক দফা বকাঝকা করে চলে গেলো অফিসে। 


শুভা কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে বিছানায় শরীর টা এলিয়ে দেয়। সকালের নাস্তা টা আর করা হলো না। ইদানীং শরীর টা তার ভালো যাচ্ছে না। বেশ দুর্বল লাগে। হুট হাট পেটের ডান পাশ ব্যথায় কেঁপে উঠে। শুভা দাতে দাত চেপে সব সহ্য করে নেয়। রাজন কে কিছু বুঝতে দেয় না।


এভাবে চলতে থাকে শুভার সাংসারিক জীবন। কয়েক দিন পর


রাজন হাত মুখ ধুয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে পড়ে। শুভা তখনও বিছানায় শুয়া। শুভার পেটের ব্যথাটা দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। রাজন কে খাবার টেবিলে বসতে দেখে বিছানা থেকে উঠে আস্তে আস্তে ড্রয়িং রুমে যায় শুভা। পেটে ব্যথা নিয়েই রাজন কে খাবার বেড়ে দেয় প্লেটে। এক লুকমা খাবার মুখে দিতেই চেঁচিয়ে উঠে রাজন,


' 'আজকাল এসব কি রান্না করো শুভা? খাবার তো মুখেই দেওয়া যায় না। আজ লবন বেশী তো কাল ঝাল বেশী? এভাবে কি সংসার করা যায়? রান্না করার ইচ্ছে না থাকলে সরাসরি বলে দিও। আমি বাইরে থেকেই খেয়ে আসবো। 


বলেই খাবার প্লেটে পানি ঢেলে রুমে চলে যায় রাজন। শুভা কোনো কথা বললো না। ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে কোমড়ে হাত দিয়ে রুমে ঢুকে বিছানার এক কোনে বসে পড়ে। রাজন তখন বসে বসে ফোন চালাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুভা বললো,


আমাকে কিছু টাকা দিবে?


'কি করবে?


' আমার শরীর টা ভালো নেই। তাই বলছিলাম কাল একটু ডক্টরের কাছে যাবো।


' মাসের শেষ। এখন হাতে টাকা নেই। তাছাড়া একটু কিছু হলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অভ্যাস টা কমাও। সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে শরীরে রোগ বালাই বাসা বাঁধবেই। শরীরটা একটি খাটাও। আর কোনো অসুস্থতা থাকবে না।


বলেই ফোন চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রাজন। রাজনের কথা শুনে শোভা না চাইতেও আজ রেগে গেলো। চিৎকার করে বললো,


' আমার কোনো কিছুই তুমি সিরিয়াস নাও না কেনো? আমিও যে একজন মানুষ এটা তোমার মনে হয়? সারাদিন অফিস করে এসে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেই শুরু করে দাও ঝগড়া। রুমে এসে ফোন চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি একা মানুষ সারাদিন রোবটের মতো থাকি। তোমার সাথে দুটো কথা বলার সুযোগ হয় না।আমি তোমাট কি ক্ষতি করেছি?  এতো অবহেলা আমার প্রতি কেনো?


কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে উঠে শুভা। রাজন তখনও ফোন চালাচ্ছে।  শুভার কন্না দেখে ফোন টা রেখে উঠে দাড়ালো। শুভার দিকে তাকিয়ে বললো,


' এতো অভিযোগ নিয়ে এখানে থাকার কোনো দরকার নেই। মনে চাইলে এখানে থাকো নয়তো বাপের বাড়ি চলে যাও।


কথাটা বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো রাজন। শুভা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। এতো অবহেলা এতো যন্ত্রণা সে আর মানতে পারছেনা। কাঁদতে কাঁদতেই অভুক্ত শরীরে রাতে ঘুমিয়ে গেলো।


সকাল বেলা একটু দেরিতে ঘুম ভাঙে রাজনের। ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সাড়ে আট টা বেজে গেছে। নয়টায় তার অফিস। ঘুম থেকে উঠে শুভা কে ডেকে বললো তাড়াতাড়ি টেবিলে নাস্তা দিতে। সে তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যেতেই দেখে টেবিলে এখনো খাবার দেওয়া হয়নি। রাজন রেগে যায়। চিৎকার করে ডাকতে থাকে শুভাকে। কিন্তু শুভা কোথাও নেই। রাজন রান্নাঘর, ওয়াশরুম থেকে শুরু করে পুরো বাড়ি খুজতে থাকে কিন্তু কোথাও শুভা নেই। রাজন একটু চিন্তিত হলেও তেমন গুরুত্ব দিলো না। তাড়াতাড়ি করে অফিসে চলে গেলো। সন্ধায় বাড়ি ফিরে রাজন দেখলো তার পুরো বাড়ি সকালের মতোই অগুছালো হয়ে পড়ে আছে। বাড়িটা বেশ চুপচাপ। রাজন খাটে বসে শার্টের হাতা খুলতে খুলতে শুভা কে ডাকে কিন্তু তখনও শোভার সারা শব্দ পাওয়া যায় না। রাজন আবারও পুরো বাড়ি খুজে।  কিন্তু শোভা কে পেলো না। 


ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গেলো। টেবিলে কোনো খাবার নেই। এবার হুট করেই রাজনের মন কিছু টা খারাপ হয়ে গেলো। হয়তো শোভার অনুপস্থিতি সে টের পাচ্ছে।  মন খারাপ করে রুমে চলে গেলো। সেদিন রাতে আর তার খাওয়া হলো না। এক প্রকার ছটফট করতে করতেই তার রাত কেটে গেলো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হাতের কাছে শার্ট,প্যান্ট, টাই কোনো কিছুই না পেয়ে শুভাকে ডাকতে গিয়েও থেমে গেলো সে। হঠাৎ মনে পড়লো শোভা তো এ বাড়িতে নেই। ওয়ারড্রবের ড্রয়ার খুলে শার্ট প্যান্ট হাতে নিতেই একটা প্রেগন্যান্সির কিট টা দেখতে পেলো সে।


কাঁপা কাঁপা হাতে কিট টা হাতে নিলো। সে বুঝতে পারলো কতটা কষ্ট নিয়ে শোভা এ বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। কি যেনো ভেবে এক মুহুর্ত দেরি করলো না রাজন। কোনো মতে শার্ট টা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো। 


কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দিলো রুপালি বেগম। রাজন বিধ্বস্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলে দিতেই ভেতরে প্রবেশ করলো রাজন। মাথা নিচু করে শ্বাশুড়ি রুপালি বেগমের উদ্দেশ্যে বললো,


' মা শোভা কোথায়?


রুপালি বেগম হাতের ইশারায় শোভার ঘর টা দেখিয়ে দিলেন। রাজন এক মুহুর্ত দেরি না করে শোভার রুমে ঢুকে গেলো। শোভা বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। অসুস্থ টায় শরীর টা শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে।  রাজনের মনে হচ্ছে অনেকদিন পর শোভার মুখটা সে  ভালো করে দেখছে।কত দিন সে শোভা কে একটু ভালোভাবে দেখে না। ভালোবাসে না। ধীর পায়ে শোভার কাছে গেলো সে। শোভার মাথার কাছে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।মাথায় কারও স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় শোভার। চোখ মেলতেই মাথার কাছে রাজন কে দেখতে পায় সে। রাজনের চোখ পানিতে টলমল করছে। সে এই একদিনে বুঝে গেছে শোভা ছাড়া তার সংসার প্রানহীন মৃত্যু পুরী। সে এতো দিন অন্যায় করেছে শোভার সাথে। এসব ভেবেই চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠছে। শোভা মুখ খুলে কিছু বলে উঠার আগেই রাজন বললো,


'আমার সন্তানের থেকে দুরে রাখার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?


' তুমিই তো বলেছিলে তোমার বাড়ি থেকে চলে আসতে!


' খুব বাধ্য স্ত্রী হয়ে গেছো তুমি তাই না? বাড়ি চলো।


'কেনো যাবো?


' তুমি ছাড়া আমি একা হয়ে গেছি শোভা। ভীষন একা।


কথা টা বলেই রাজন জড়িয়ে ধরে শোভাকে। শোভা বুঝতে পারে রাজন কাদছে। রাজনের সে চোখের পানিতেই শোভার সমস্ত রাগ অভিমান কষ্ট সব ধুয়ে মুছে গেলো।


 মাঝে মাঝে নিজের গুরুত্ব বুঝাতে একটু দুরে যেতে হয়। তাতে করে নিজের অবস্থান বুঝা যায়। স্ত্রী কে অবহেলা না। সবটা দিয়ে ভালেবাসা স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য...


-অবহেলায় অনুরাগ

-বর্ষা ইসলাম


যারা গল্প পড়তে ভালোবাসেন,তারা প্রতিনিয়ত এমন অসাধারন সব গল্প পড়তে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথেই থাকুন।কথা দিলাম গল্পগুলা আপনাদের মনছুয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ 


এমন আরও গল্প পড়ুন।