কষ্টের ভালোবাসার গল্প | অবহেলার কষ্টের গল্প

 ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

আমার হাতে একটা মাঝারি সাইজের বাক্স ধরিয়ে দিয়ে মুখে হাসি আর চোখে জল নিয়ে কোর্ট থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল সুরভি।আমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিলো।সেদিন তার মুখের হাসিটা আমার চোখে পড়লেও চোখে পড়ে নি তার চোখের জল।কেন জানি সেদিন ওর মায়াভরা মুখটাও আমার খুব অসহ্য লেগেছিলো। 


আমি আদনান।সুরভি ভালোবেসে আদি বলতো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম তাকে।একদিন ভার্সিটির প্রোগ্রামে নীল শাড়ি পরিহিতা মেয়েটিকে দেখে ভিষণ ভাবে প্রেমে পড়েছিলাম।তাকে যখন প্রপোজ করেছিলাম সে বলেছিলো, 


– "হারাম রিলেশনশিপে আমি জড়াতে চাই না।যদি আমায় সত্যিই ভালোবেসে থাকেন তাহলে বিয়ে করুন আমায়।" 


তার এই কথাটা শুনে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে চলে গেলাম তার বাড়ি। বিয়েও হলো।তখন আমি একটা ছোটখাটো চাকরি করতাম।কিন্তু কোনোদিন সুরভির কোনো ইচ্ছেই আমি অপূর্ণ রাখি নি।যদিও ও কোনোদিনই আমার কাছে বড় কোনো আবদার করে নি।সবসময় বলতো, 


– "কী দরকার অযথা টাকা খরচ করার? শুধু প্রতিদিন বাড়ি ফেরার সময় আমার জন্য একটা গোলাপ ফুল আর একটা বেলি ফুলের মালা আনলেই আমি খুশি।"


তার কথা শুনে আমি হাসতাম।আর ভাবতাম কী সুন্দর করে সবটা মানিয়ে চলে মেয়েটা তারপরও কোথাও একটা আফসোস রয়ে যেত। মনে হতো আমি যেন তার সব ইচ্ছে পূরণ করতে পারছি না।


একদিন সুরভিকে বলছিলাম, 

– "বুঝলে সুভি, ভাবছি একটা বড় কোম্পানিতে চাকরির এপ্লাই করবো।এই ছোট চাকরি দিয়ে আর কতোদিন চলবো বলো?"


সে হেসে বলেছিলো, 

– "চাইলে করতে পারো। কিন্তু কি বলো তো, কথায় আছে মানুষ যখন একবার টাকার ঘ্রাণ নেয় তখন সেই ঘ্রাণের কাছে ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়।"


আমিও তাকে বলেছিলাম,

– "ধুর পাগলি। সেটা আমি কখনো হতেই দেবো না।" 


বলে তাকে পরম যত্নে বুকে আগলে নিয়েছিলাম।কিন্তু কে জানতো সুরভির এই কথাটা একদিন সত্যিতে পরিণত হবে?দুই বছরের সংসার ছিলো আমাদের। যখন ছোট চাকরি করতাম তখন আমাদের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না।ভেবেছিলাম বড় চাকরি করে তাকে অনেক দামী দামী গিফট দেবো,অনেক জায়গায় ঘুরতে যাবো।বড় চাকরি পেয়েছিও।প্রথম স্যালারি দিয়ে তাকে অনেক কিছু কিনে দিয়েছিলাম।ফাইভস্টারেও গিয়েছিলাম তাকে নিয়ে।কিন্তু সময় যতো যেতে লাগলো আমি ততো কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতে লাগলাম।শুধু তাই নয়, প্রমোশন পেয়ে যখন আরো উপরে উঠলাম তখন এই সুরভিকে কেন জানি আর ভালো লাগতো না। 


যেখানে আমার অফিসের অন্যান্য অফিসারদের বউরা অনেক মডার্ন সেখানে আমার কাছে বোরকা-হিজাবধারী সুরভিকে খুব ব্যাকডেটেড লাগতে শুরু করলো।অথচ এই সুরভির প্রেমেই একদিন অন্ধ ছিলাম আমি।এর মধ্যেই হঠাৎ দেখা পেলাম মিথির।খুবই মডার্ন মেয়েটা।বাইরের কলুষিত জগতের ছোঁয়ায় যখন সুরভিকে অসহ্য লাগতো তখন মিথির মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলাম আমি অন্যরকম এক সুখ।আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করলো।রাতে দেরিতে বাড়ি ফেরা, কখনো তো বাড়িতেই ফিরতাম না।যেখানে আমি সুরভিকে জড়িয়ে না ধরে একরাতও ঘুমাতে পারতাম না, সেখানে আমি রাতের পর রাত জেগে ব্যস্ত থাকতাম মিথির সাথে চ্যাটিং এ। সুরভিও বুঝতে পেরেছিলো আমার হঠাৎ এমন পরিবর্তন।কিন্তু কোনোদিনও সে সন্দেহের বশে আমার ফোন চেক করে নি। এমনকি যখন আমি তার সাথে বিনা কারণেই রাগারাগি করতাম তখন সে সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করতো।যদিও তার কোনো দোষ থাকতো না।


একদিন আমায় বলেছিলো, 

– "আগে আমাদের সম্পর্কটা কতো সুন্দর ছিলো তাই না?"


আমি বলেছিলাম, 

– "সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়।"


সুরভি ছলছল চোখে বলেছিলো,

– "তা এখন কি তুমি তোমার বউটাকেও পরিবর্তন করে ফেলতে চায়ছো আদি?"


আমিও সেদিন বলে দিয়েছিলাম, 

– "যদি চাই তো কী করবে?"


সে কান্নাভেজা গলায় বললো, 

– "যদি তুমি এই পরিবর্তনটাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারো তবে পরিবর্তন করতে পারো।হাসি মুখে সব মেনে নেবো।অন্তত তোমার এই ব্যবহারটা আমাকে সহ্য করতে হবে না।"


ব্যসস।যে সুরভির একটা কথায় তাকে বিয়ে করতে ছুটে গিয়েছিলামসেই সুরভির এই একটা কথাতে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে দুইবারও ভাবি নি।একটা মেয়ে যে কতোটা কষ্ট সহ্য করলে এই ধরনের কথা বলতে পারে তা আমি সেদিন বুঝতে পারি নি।


যেদিন আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায় তার আগের দিন সুভি আমার কাছে এসে ভাঙা গলায় বলেছিলো, 

– "একটা কথা বলবো? আজ পর্যন্ত তোমার কাছে আমি কিছুই চাই নি। আজকে একটা জিনিস চাইবো? শেষবারের মতো একবার জড়িয়ে ধরবো?"


আমি শুধু তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ছিলাম। হ্যাঁ বা না কিছু বলার আগেই সে আমাকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছিলো।কেন যে ওর সেই চোখের জল সেদিন আমার মন গলাতে পারলো না জানি না।


ডিভোর্সের দিনই তার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিলো।এরপর এখন পর্যন্ত তাকে আর দেখি নি।সেদিন ও আমাকে যে বাক্সটা দিয়ে গিয়েছিল তা একবারের জন্যও খুলে দেখার প্রয়োজন বোধ করি নি আমি।কিন্তু আজ প্রায় ৬ মাস পর তাকে খুব মনে পড়ছে।মিথিকে বিয়ে করে আনার পর থেকে বুঝতে পেরেছি আমি কী হারিয়েছি।বাড়ির প্রতিটি কোণায় সুভির অনুপস্থিতি ভিষণ কষ্ট দেয় আমায়।অনেক খুঁজেছি তাকে।কিন্তু পাই নি।যদিও জানি সে আর কোনোদিন আমার হবে না।তার দেওয়া সেই বাক্সটা খুলে দেখি আমি তাকে যতগুলো উপহার দিয়েছিলাম সবকিছু ফেরত দিয়ে গেছে।সাথে একটা কাগজও আছে।তাতে লেখা আছে,


❝ জানি তোমার কাছে এখন আর আমার কোনো দাম নেই। তারপরও কিছু কথা বলতে চাই। যাকে বিয়ে করে আনবে তাকে কোনোদিন কষ্ট দিও না।কারণ সে তোমার ভরসায় তোমার হাত ধরে তার প্রিয়জনদের ছেড়ে এসেছে যা একদিন আমি করেছিলাম।তার দিক থেকে কোনোদিন মুখ ফিরিয়ে নিও না,খারাপ ব্যবহার করো না।এই জিনিসটা যে কতোটা কষ্টদায়ক তা আমি খুব ভালো করে বুঝেছি।যদি কোনোদিন আমায় মিস করো তবে আমাকে ভুলে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।কারণ এখন আমি তোমার কাছে কেবলই একজন পরনারী।আর তুমিও আমার কাছে পরপুরুষ।অযথা একজন পরনারীর কথা চিনতা করে গুনাহর বোঝা বারিয়ে কী লাভ?তবে আমি জানি একদিন তুমি ঠিক বুঝতে পারবে আমি তোমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম।কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।ভালো থেকো আদি। ❞


কাগজটা পড়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। হু হু করে কেঁদে দিলাম।হ্যাঁ সুভি, আমি বুঝতে পেরেছি তোমার গুরুত্ব।কিন্তু সত্যিই খুব দেরি হয়ে গেছে।সোনার সন্ধান করতে গিয়ে হীরে টাকেই যে হারিয়ে ফেললাম।


-------সমাপ্ত-------

-ছোটগল্প

-সুরভির_শূণ্যতা

-লেখক:🔳®Md. Rezaul Hok......!



এমন আরও অনেক ভালোবাসার কষ্টের গল্প পড়ুন।