গল্প:অতৃপ্ত | ভয়ের গল্প | রহস্যময় গল্প ২০২৪

ভূতের গল্প

ভূতের গল্প

গল্প:অতৃপ্ত

পর্ব: ০১


প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা ৭ টার মত বাজে।কিন্তু আজ অফিসে বস না আসায়  বিকালেই অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম।আমার বাসা টা শহর থেকে একটু দূরে।যার জন্য অফিস থেকে বাসায় আসতে যেতে দেড় ঘন্টার মত সময় লাগে। 


সেইদিন অফিস থেকে  তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসায় ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসে সূর্যাস্ত দেখছি আর কড়া এক কাপ চা খাচ্ছি। বাসা টা শহর থেকে দূরে হওয়ার জন্য প্রায় লোডশেডিং লেগেই থাকে।আজও তার ব্যতিক্রম হয় নাই। সন্ধ্যা লাগতেই লাগতেই লোডশেডিং।তাই ঘরের ভিতরে না গিয়ে  বারান্দায় বসে আছি।


আমার থেকে বেশ কিছু দূরে একটা আলো জ্বলছে  আর সেই আলোতে একটা  প্রতিচ্ছায়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বেশ কিছুক্ষণ ধরে।এই ভরসন্ধ্যা বেলায় অন্ধকারে কে ওখানে, এতক্ষণ ধরে  কী করছে?দূর থেকে  ভালোমত বুঝা যাচ্ছে না। চেয়ার থেকে উঠে  দাড়ালাম।তারপরও ঠিক মত ব্যাপার টা বুঝাতে না পেরে ২তলার বারান্দা থেকে নিচে নেমে গেলাম।বাসায় নিচে নেমে ২ পা সমানে যেতেই দেখি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারই ছায়া আলোতে দেখা যাচ্ছে কিন্তু এই সন্ধ্যা বেলায় মেয়েটা এখানে কী করছে?এটা ভেবে আমি ডাক দিলাম


- কে আপনি? এখানে কী করছেন?


আমার কথা গুলো বলা শেষ হতেই আলো টা নিভে গেল আর তার সাথে  মেয়েটাও অন্ধকারে হারিয়ে গেল।আমি ভাবলাম হয়তো এটা আমার মনের ভুল।তাই উল্টা ঘুরে ঘরে যাচ্ছি  এমন সময়  বিদ্যুৎ চলে আসলো।বিদ্যুৎ চলে আসায় অফিসের কিছু জরুরি কাজ সেরে নিলাম।


রাতের খাওয়া শেষ করে প্রতিদিনের মত আজকেও ঘুমানোর আগে বাসার সামনে ফাঁকা জায়গায়  হাঁটাহাটি করছি। এমন সময়  আবার লোডশেডিং তাই আজকের হাঁটার সময়টা বৃদ্ধি পেল।হাঁটাহাঁটি করার সময় খেয়াল করি আবার দূরে আলো জ্বলছে।  আর আলোতে একটা মেয়ের প্রতিচ্ছায়া বেশ ভালো ভাবেই বুঝা যাচ্ছে ।আমি এবার কাছে না গিয়ে দূরে থেকেই বলে উঠলাম


-এই যে কে আপনি??এত রাতে এখানে কী করছেন???


আবারও আগের মত আমার প্রশ্ন শেষ হতেই মেয়ে আর আলো ২টাই হারিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পরে বিদ্যুৎ চলে আসায় আমি ঘরে গিয়ে  ঘুমিয়ে গেলাম।


পরেরদিন প্রতিদিনের মত অফিস গেলাম। অফিস শেষে বাসায় ফিরে এসে বারন্দা বসে চাও খেলাম।কিন্তু আজ মেয়েটার প্রতিচ্ছায়া দেখলাম না।চা খাওয়া শেষে সোফায় বসে টিভি দেখছি। হঠাৎ লোডশেডিং, মোমবাতিটা জ্বালিয়ে সোফায় বসে আছি।একটু দূরে মোমবাতি জ্বলছে।খেয়াল করলাম মোমবাতির আলোতে গতকালের মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে ।বাসার মেইনগেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। কিন্তু কালকের থেকে আজকে আরো ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে।হয়তো মোমবাতিটার আলোর  জন্য। মেয়েটা আজ দেখি লাল রঙের  একটা শাড়ি পড়ে এসেছে। মেয়েটা বাসার মেইন গেট থেকে আমার রুমের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে।আমার রুমে  প্রবেশ করতে যাবে এমন সময় আমি বলে উঠলাম।


-কে আপনি???আমার রুমে যাচ্ছেন কেন??


আমার প্রশ্ন শেষ হতে মেয়েটা আগের দিনের মত অন্ধকারে হারিয়ে গেল। রাতে খাওয়া শেষ করে ১০ মিনিট হাঁটাহাটি করে সেইদিনের মত ঘুমাতে গেলাম।


পরেরদিন অফিসে হাতের কাজ বেশি থাকায় কাজ শেষ করতে করতে প্রায় রাত ৯ টা বেজে গেল। অফিস থেকে বের হবো এমন সময় হঠাৎ লোডশেডিং। মোবাইলের টর্চ লাইট জ্বালিয়ে অফিস থেকে বাহিরে বের হলাম।বাহিরে এসে দেখি চারিদিকে বেশ অন্ধকার তাই হাতে থাকা টর্চ লাইট নিয়ে হেঁটে হেঁটে  সামনে দিকে আগাতে থাকি ।কিন্তু একি! টর্চ লাইটের আলোতে দেখি সেই মেয়েটি, আমার সামনে হাঁটছে । আমি যে পথ দিয়ে অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসি মেয়েটাও দেখি ঐ পথ দিয়েই আমার সামনে সামনে হাঁটছে।মেয়েটা আমার থেকে একটু  জোরে  হাঁটছে যারজন্য মেয়েটাকে ক্রস করে সামনে যেতেও পারছি না। পিছন থেকেই আমি বলে উঠলাম


-এই যে আপনার নাম কী???বাসায় কোথায় আপনার???


আজ হঠাৎ মেয়ে টা উত্তর দিয়ে। বলল আমার নাম আলো।


এটা বলার পরই মেয়ে টা আগের মত  হারিয়ে গেল।চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করলাম মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না।


বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আজ অফিস থেকে ফিরতে দেরী হওয়ার জন্য খাওয়া শেষে হাঁটাহাটি টাও আর করা হলো না।


মধ্যরাতে লোডশেডিং। গরমে  ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। বারান্দায় বসে আসি।বসে বসে চাঁদ দেখছি। এমন সময় হঠাৎ নূপুর এর শব্দ কানে আসে,এত রাতে নূপুরের শব্দ আসে কোথায় থেকে? পাশে ফিরে তাকাতেই  দেখি আমার থেকে কিছু দূরে ঐ মেয়েটা।চাঁদের আলোতে মেয়েটাকে বেশ ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে।আর মেয়েটা আমার দিকে আস্তে আস্তে  এগিয়ে আসছে।মেয়েটা আমার সামনে আসতেই অন্যদিনের মত হারিয়ে গেল।কিছুক্ষণে পরে বিদ্যুৎ আসায় ঘরে গিয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না।মাথার মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরছে।


কে হতে পারে মেয়েটা?শুধু লোডশেডিং হলে দেখতে পাই কেন?মেয়েটাকে কী  আমার পরিচিত?আমাকে কিছু  বলতে চায় নাকি?এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানিনা।


পরেরদিন অফিস কাজের অবসরে  কিছুক্ষণ বসে ছিলাম।সেই ফাঁকে ঘুমে চোখটা লেগে গেল।  হামিদের ডাকে ঘুম ভাঙ্গালো। 

-আরে ভাই এভাবে ঘুমালে চলবে।তাওতো এখনও বিয়ে করেন নাই।বিয়ে করলে কী যে হবে?

-আরে ভাই বিয়ে না করেই রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না।আর বিয়ে করলে তো দিন রাতের সব ঘুম হারাম হয়ে যাবে।

-এখন কথা বাদ দিয়ে এখন স্যারের রুমের যান।স্যার আপনাকে ডাকছে।


স্যার রুমে গিয়ে জানতে পারলাম পোর্টে আমাদের কোম্পানির কিছু মাল এসেছে  তাই আজকে  আমি সহ আরো কিছু জনকে চট্টগ্রাম গিয়ে মালগুলো বুঝে নিতে হবে।


স্যার কথা মতো আমি সহ আরো ৪ জন চট্টগ্রাম গেলাম।যেতে বেশ রাত হওয়ায় সেইদিন আর পোর্ট না গিয়ে রাতে খাওয়া শেষে হোটেলে রেস্ট নিচ্ছি।ক্লান্ত ভাব থাকার জন্য ঘুমটাও আসলো বেশ তাড়াতাড়ি।


 

দেখি সেই মেয়েটাকে।মেয়েটা আজ হলুদ রঙের শাড়ি আছে, পা থেকে নূপুরের  আওয়াজ  আসছে।মেয়েটা আমাকে এক ঝলক দেখা দিয়ে রুম  থেকে বের হয়ে করিডোর  দিয়ে হাঁটতে লাগলো আমিও মেয়েটার পিছে পিছে  বের হয়ে করিডোর দিয়ে হাঁটছি। হাঁটার সময় মেয়েটাকে বলি


-আপনি এখানে আসলেন কীভাবে??

-আমি যেতে পারি সব জায়গাতে শুধু যেতে পারিনা আপনার হৃদয়ে ।

-মানে কী??আপনি এসব কী বলছেন?

-যে বুঝার ক্ষমতা রাখে সেই বুঝতে পারবে। 

-আপনার কথা কিছুই বুঝলাম না।

-তাহলে একটু সময় নেন সব বুঝতে পারবেন।

-আচ্ছা সময় নাহয় নিলাম কিন্তু  আপনাকে শুধু রাতে লোডশেডিং হলে দেখা যায় কেন?সারাদিন কোথায় থাকেন আপনি???

-হা হা  আমার নাম যে আলো তাই লোডশেডিং হলেই আমাকে দেখা যায়।


মেয়েটার কথা শেষ না হয়তেই এর্লাম এর শব্দে  ঘুম ভেঙ্গে গেল। তারমানে আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখলাম।মেয়েটা তাহলে এখানে আসে নাই।শুনেছি ভোর বেলায় মানুষ যেটা স্বপ্নে দেখে সেটা নাকি সত্যি হয়। আবার মানুষ যেটা নিয়ে বেশি ভাবে সেটা নাকি স্বপ্নে দেখে। তাহলে কী মেয়েটাকে নিয়ে বেশি ভাবচ্ছি নাকি আমি?


ফ্রেশ হয়ে পোর্টের দিকে গেলাম।সারাদিন কাজকর্মের চাপ একটু বেশি ছিল। একদিনে সব কাজ শেষ হলো না। সারাদিন কাজকর্ম করে রাতে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম আর মেয়েটার কথা ভাবতে থাকলাম।ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি আমি নিজেইও জানি

না।হঠাৎ দেখি সেই মেয়েটি।আজও  শাড়ি পড়ে এসেছে কিন্তু নূপুর পড়ে আসে নাই।অন্যদিনের মত নূপুরের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।আজও গতদিনের মত মেয়েটার পিছে পিছে রুমে থেকে বের হয়ে করিডোর দিয়ে হাঁটছি।করিডোরের শেষ মাথায় বারান্দায় গিয়ে মেয়েটা থামলো। মেয়েটা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মেয়েটার পিছনে দাঁড়িয়ে। 


-আচ্ছা,আপনাকে  সব সময় দেখতে পাই না কেন???

-আমাকে সব সময় দেখে কী করবেন??আমাকে বেশি দেখা স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। 

-মানে আমি আপনার কথা কিছুই বুঝছি না।

-বুঝবেন বুঝবেন সময় হলে সব বুঝবেন।তা আজ রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলেন কেন??

-আপনি আমার ব্যাপারে জানলেন কীভাবে?

-আপনজনের দিকে খেয়াল রাখতে হয়।

-আমি আপনার আপনজন হলাম কীভাবে??আমি তো আপনাকে চিনিই না।

-আপনি চাইলেই আমাকে আপনজন বানিয়ে নিতে পারবেন।এত বড় রাত না খেয়ে কাটিয়ে দেওয়া ঠিক না। যান খাবার খেয়ে আসেন।


আমি কিছু বলার আগে আবার আগের দিনের মত এর্লাম শব্দে ঘুমটা আবার ভেঙে গেল।ঘুম থেকে উঠে মেয়েটার ব্যাপারে ভাবতে লাগলাম। মেয়েটা আমার কাছে থেকে কী চায়?? আগে তো সামনাসামনি দেখা হতো তাহলে কী আমি দূরে চলে আসার জন্য  মেয়েটাকে এখন স্বপ্নে দেখতে পাচ্ছি?মেয়েটার কথাগুলো এমন কেন? কিছুই ঠিকমত বুঝতে পারি না।সারাজীবন একাকী থাকার পর একটা মেয়ে নিজে থেকে এসে আমার সাথে কথা বলছে তাও স্বপ্নে।তাহলে কী আমার স্বপ্নে প্রেম হচ্ছে?? মানুষের তো দেখি বাস্তবে প্রেম হয়। আমার বেলায় দেখি উল্টো। 


গল্প:অতৃপ্ত

পর্ব: ০২ ও শেষ 


সেইদিন অফিসের যাবতীয় কাজকর্ম শেষ করে রাতের বাসে রওনা দিলাম।একদিকে সারাদিনে কাজকর্মে ক্লান্ত শরীর আর অন্যদিকে বৃষ্টি হয়ে আবহাওয়া ঠান্ডার থাকার জন্য বাসের সিটে বসার সাথে সাথে ঘুম চলে আসলো।


রাত তখন অনেক গভীর পাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা আমার পাশের সিটে বসা।কিন্তু এখানে তো নাজমুল ভাই বসেছিল তিনি কই গেলেন??আশেপাশে চারিদিকে তাকিয়ে দেখতেই মেয়েটার চোখে আমার চোখ পড়ল।আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা


-চারিদিকে কী দেখছেন?

-আমার পাশে না নাজমুল ভাই ছিলো।আপনি আসলেন কীভাবে?

-ওনাকে পিছনের সিটে পাটিয়ে দিয়েছি।

-মানে?ওনাকে তো পিছনেও দেখলাম না।

-উনি পিছনে আছেন।এত টেনশন করার কিছু নাই। 

-আপনি এখানে কেন??আপনি আপনার সিটে গিয়ে বসুন।

-আপনজনের পাশে তো আপনজনই বসে যায় তাই না।নাকি আলাদা বসে যায়??

-আপনার কথা তো আমি কিছুই বুঝছি না।আপনি কী চাচ্ছেন আমার কাছে থেকে বলেন তো?

-মেয়েদের চাওয়া তো বেশি কিছু না।ঔ একটু আদর,,ভালোবাসা,,যত্ন,,খেয়াল,,, রাখার মত একজন বিশস্ত মানুষ। 

- তা আমাকে দেখে কী এমন একজন মনে হচ্ছে?? 

-মনে না হলে কী পিছে পিছে এমনি ঘুরছি।

-তাহলে সামনাসামনি এসে দেখা করেন।


নাজমুল ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গালো। আরে মিয়া ঘুমায় ঘুমায় এত ঠোঁট নাড়েন কেন??স্বপ্ন দেখছেন নাকি??

-এই আরকি।

-তাড়াতাড়ি উঠেন গাড়ি হোটেল ব্রেক দিয়েছে। 

-হুমম আপনি যান আমি আসছি।


খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছি আর মেয়েটার কথা ভাবচ্ছি। কে মেয়েটা?আমি তো তাকে আগে কোনদিন দেখি নাই।তাহলে আমাকে সে চিনলো কীভাবে?মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে তাহলেই সব জানা যাবে।কিন্তু মেয়েটাকে খুঁজে পাবো কোথায়??মেয়েটা আমাকে তার বিশস্ত আপনজন ভাবচ্ছে তাহলে সামনাসামনি দেখা করছে না কেন??


-এই মিয়া আপনার কী হয়েছে বলেন তো?খাবার টেবিল বসে কী এত ভাবছেন??তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করেন নাহলে বাস আপনাকে রেখে চলে যাবে ।

-আরে ভাই কিছু না।

-কিছু তো একটা হয়েছে সেটা আপনাকে গত ২ দিন ধরে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কী হয়েছে আমাকে বলেন সমস্যা নাই।

-নাহ ভাই কিছু হয়নাই।

-আর সমস্যা কথা বললে সমস্যার সমাধান সহজ হয়।

-আপনি যেমন ভাবচ্ছেন আসলে তেমন কিছুই হয় নাই।

-তাহলে ঐ তেমন টাই বলেন।

-ভাই তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করি নাহলে বাস আবার আমাদের রেখে চলে যাবে।

-আমার তো খাওয়া প্রায়ই শেষ।আপনি একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়।


নাজমুল ভাই যে দেখি নাছোরবান্দা ব্যাক্তি। বাসে উঠার পরও তিনি ৬/৭ বার জানতে চাইলো আমার কী হয়েছে। আমি বিভিন্ন কথা বলে কাটিয়ে নিলাম। নাজমুল ভাইকে সবকিছু বলা কী ঠিক হবে??এইদিকে আমাকে মেয়েটাকেও খুঁজে বের করা জরুরি নাহলে প্রতিদিন এভাবে চলতে থাকলে আমি তো কোন কিছুই ঠিকমতো করতে পারবো না।যাইহোক না কেন নাজমুল ভাইকে বলে দেখি তিনি কোন উপায় বলতে পারবেন নাকি।আগে পিছে আর না ভেবে, নাজমুল ভাইকে সব কিছু খুলে বললাম।নাজমুল ভাই সবটা শুনে বলে


-আরে মিয়া আপনি তো দেখি স্বপ্নে ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছেন। 

-আরে আমি আছি আমার জ্বালায় আর আপনি মজা করেছেন।


-আচ্ছা কাল চলেন আমার এক পরিচিতি স্কেচ আর্টিস্টের কাছে।দেখি আপনার রমনীটা দেখতে কেমন।

-আপনার কী সব জায়গাতেই মজা করতে হয়।

-আরে ভাই মজা না। দেখা যাচ্ছে আমি আপনার রমনীকে কোনভাবে চিনি বা কোথায়ও দেখেছি, তখন তো আপনারই সুবিধা হবে।

-তাও ঠিক বলেছেন।


নাজমুল ভাইয়ের কথাটা আমার মনে কেন জানি গেঁথে গেল। মেয়েটাকে খুঁজে বের করার ইচ্ছা আমারও ছিল তারজন্য হয়তো। 


পরেরদিন বিকালে নাজমুল ভাইয়ের সাথে গেলাম সেই স্কেচ আর্টিস্ট এর কাছে।স্কেচ আর্টিস্ট আমার কথা শুনে হুবহু আমার স্বপ্ন দেখা মেয়েটার ছবি এঁকে দিলো। 


নাজমুল ভাই এই যে সেই মেয়েটা।


নাজমুল ভাই মেয়েটার ছবি দেখে কেন জানি কিছুক্ষণ থমকে ছিলেন।আমি অনেকবার বললাম নাজমুল ভাই কী হয়েছে?? মেয়েটাকে চিনেন নাকি??নাজমুল ভাই শুধু বললেন ছবি হাতে নিয়ে বাহিরে চলো বাকিটা রাস্তায় বলছি।


আমি নাজমুল ভাইয়ের কথা মত ছবিটা নিয়ে বাহিরে আসলাম।আরে ভাই এমন করেন কেন??কী হয়েছে বলবেন তো??মেয়েটার ছবি দেখে আপনি কেন জানি চমকে গেলেন???মেয়েটাকে চিনেন নাকি?? এক নিশ্বাসে সব বলে দিলাম।


আমি আসলে যেটা আন্দাজ করেছিলাম সেটাই হলো।


কী আন্দাজ করেছিলেন?? বলবেন তো ভাই।


  একটু থামো বলছি সব।


আমি নাজমুল ভাইয়ের কথা শুনে থেমে থাকলাম। কিন্তু মনের মধ্যে হাজার ও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।এইদিকে নাজমুল ভাই স্থির হয়ে বসে আছেন। একটু পরে নাজমুল ভাই বলেন


তোমার এই অফিসে যোগদানের তো ২ বছর হয়েছে। তাই তুমি এই অফিসের অনেক কিছুই জানো না।তুমি তো জানো আমি এখানে গত ১০ বছর ধরে আছি তাই অনেক কিছুই জানি।


আরে ভাই এর সাথে মেয়েটার সম্পর্ক কী??


সম্পর্ক আছে দেখেই বলছিল।তোমাদের মত বয়সে ছেলেদের দেখি সহ্য শক্তি একদম কম।একটু ধৈর্য ধরো সব বলছি।


আচ্ছা ভাই আপনি বলেন।মুখে এক কথা বললেও মনে ভিতরে হাজারও প্রশ্নের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। 


হুমম, আমি বলছি তুমি চুপচাপ সব শোন আমার কথা বলা শেষ হলে তুমি কথা বলবে।তুমি যে মেয়েটাকে স্বপ্নে এবং অন্ধকারে আলোতে দেখেছো সেই মেয়েটার নাম হলো আলো আজ থেকে ৮ বছর আগে আমাদের অফিসে চাকরী করতো।অফিস চাকরি করার সময় আমাদের অফিসের আরেক কর্মচারী সাব্বির সাথে তার ভাব ভালোবাসা শুরু হয়। শুরুতে তারা লুকিয়ে রাখলেও পরে আমরা অফিসের সবাই জানতে পেরেছিলাম। তাদের মধ্যে বিয়ের ও কথা চলছিল।একদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে জানতে পারি অফিসে আগুন লেগেছে। খবর শুনার মাত্রই অফিসে ছুটে যাই। অফিসের বাহির দেখি সবাই দাড়িয়ে আছে কিন্তু আলো নেই।অনেকজন মিলে অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরে জানতে পারলাম আলোর হাতের কাজ শেষ না হাওয়ার জন্য সে অফিসের ভিতরেই ছিলো।পরে তার আগুনে পুড়ে যাওয়া মৃত্যুদেহ উদ্ধার করা হয়।


কী বলেন ভাই আপনি। এই মেয়েটার সাথে তো আমার স্বপ্ন বাদেও কিছুদিন আগেও বাসায় দেখা হয়েছে ।কিন্তু লোডশেডিং জন্য চেহেরাটা ঠিকমত বুঝা যায়নি।  


তোমাকে না বললাম পুরো কথা শুনে কথা বলতে।


আচ্ছা আপনি বলেন। 


আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান করে জানতে পারি আমাদের অফিস অনেক কষ্ট করে একটা বড় প্রোজেক্ট পেয়েছিল।সেটার দায়িত্বে ছিল আলো আর সাব্বির। সাব্বির অন্য কোম্পানির লোকের সাথে হাত মিলিয়ে অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়।আর এই দিকে অফিসের ভিতরে আলো ছিলো এটা হয়তো সাব্বির জানতো না।জানলে হয়তো তখন আগুনটা লাগাতো না আবার লাগাতেও পারতো । কারণ আমাদের কোম্পানিতে আগুন লাগানোর কিছুদিন সাব্বিরকে ঔ কোম্পানির ম্যানেজার বানানো হয় আর সেই কোম্পানির চেয়ারম্যানের মেয়ের সাথে সাব্বির বিয়ে হয়।আর মেয়েটা মারা যাওয়াতে সাব্বিরের যে কোন কষ্ট লাগে নাই সেটা তার চেহেরায় সেইদিন ভালোমতোই লক্ষ্য করা গেছে। 


আলো তোমার সাথে শুধু এমন করেছে তাই না, অফিসের আরো লোককে আলো এমনভাবে স্বপ্নে কিংবা অন্ধকারে দেখা দিয়েছে ।কিন্তু কেন করে তা আমরা এখনও জানতে পারি নাই।তবে একটা বিষয় খেয়াল করে দেখেছি যে, আলো শুধু অফিসের অবিবাহিতদের সাথেই এমন করেছে।হয়তো সে আবার এই অফিসের কোন অবিবাহিত সাথে আগের মত ভাব ভালোবাসা করতে চায়। যারজন্য হয়তো অবিবাহিত সবাইকে অন্ধকারে, স্বপ্নে দেখা দেয়।


কী বললেন নাজমুল ভাই এসব! এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?? 


এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় একটাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করা নাহলে এমনই হতে থাকবে।


কী বলেন ভাই এখন তো আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।


সম্ভব নাহলে কী আর করার এইভাবে আলোকে দেখতে থাকো নাহলে অফিসে নতুন অবিবাহিত না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকো।


.......সমাপ্ত.......

গল্প:অতৃপ্ত

লেখক:ইমতিয়াজ এ আশিক


রহস্যময় সমস্ত গল্প পড়ুন আমাদের ওয়েব সাইটে।