bangla romantic golpo | romantic golpo 2024

 best romantic golpo

best romantic golpo

বউ বয়সে দুই বছরের বড়ো হলে বিষয়টা কেমন হবে আগে কখনো ভেবে দেখিনি। 


ইদানীং আমার চেয়ে দুই বছরের বড়ো দোলা মনের মধ্যেও দোলা দিচ্ছে। অবশ্য এর জন্য দোলাকে এককভাবে দায়ী করা যায় না। তাহলে কাকে কাকে দায়ী করা যায়? শুরুতেই যার কথা বলতে হয় সে হলো দোলার মা নাসিমা আন্টি। দোলা তখন ক্লাস টেনে আর আমি এইটে। আমরা একই স্কুলে পড়ি এবং বাসাও পাশাপাশি। দোলা যেহেতু দেখতে বেশ সুন্দর কাজেই নাসিমা আন্টি দোলাকে একা স্কুলে পাঠানো আর নিরাপদ বোধ করলো না। তাছাড়া দোলা স্কুলে যাওয়া-আসার পথে না কি এলাকার বখাটে ছেলে-ছোকরা দোলার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে! 


অবশেষে এই গুরুদায়িত্বটা আমাকেই পালন করতে হলো। প্রথমে একটু বিব্রতবোধ করতাম। দুই চার দিন পর সাহস সঞ্চয় করে দোলাকে বললাম,

-রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এদিক ওদিক তাকাবা না।

-ওই তুমি আমার ওপর কোনো খবরদারি করবা না কিন্তু।

-তাহলে কালকে থেকে একা একা স্কুলে যেও।

-খুব সুযোগ নিচ্ছো তো?

- কোথায় সুযোগ নিচ্ছি?

- আমাকে তুমি আপু ডাকো না কেন?

-নাম ধরেও তো ডাকি না।

-কী বলো তুমি আমাকে? এই যে! শোনো! এইসব কারা সম্বোধন করে জানো?

- কারা?

- হাজবেন্ড ওয়াইফ!

-যাও তো! আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।

-ফাজিল! 


এরপর যাকে দায়ী করা যায় সে আমাদের স্কুলের ম্যাথ টিচার শাহীন স্যার। প্রতিদিন বাসায় এত কঠিন কঠিন হোম ওয়ার্ক দিয়ে দিতো আমি তার কিছুই বুঝতাম না। তাই সন্ধ্যা হতেই দোলার কাছে ম্যাথ সলভ করার জন্য যেতাম। দোলা মাঝে মাঝে বিরক্তও হতো।

-তুমি প্রতিদিন আমার পড়ার সময় এসে বিরক্ত করো কেন?

-আমি তোমাকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাই না?

-এইজন্য আমাকে কিনে নিয়েছো?

-আমার কি ওত টাকা আছে? মাটির ব্যাংকটা ভাঙলেও সত্তর-আশি টাকার বেশি হবে না।

-উফ! কী ফাজিল ছেলেরে বাপ! 


নাসিমা আন্টি পাশের রুম থেকে উচ্চস্বরে দোলাকে বলতো, ছেলেটা এসেছে। কথা কম বলে অংকগুলো করে দে। কোনো কোনো দিন অংকগুলো করা হয়ে গেলেও দোলার রুমে বসে থাকতাম । বোধকরি দোলার অস্বস্তি হতো।

-যাচ্ছো না কেন এখনও?

-আন্টি তো আজকে এখনও চা দেয়নি। 


দোলার ওপর আমার খবরদারি খুব বেশিদিন করা হয়নি। এস.এস.সি পাশ করার পর দোলা জেলা স্কুল ছেড়ে ঢাকায় একটা কলেজে ভর্তি হলো। আমি নিজেও পড়াশোনায় মনোযোগী হলাম। তারপর কী করে যে জীবন থেকে ছয়টা বছর কেটে গেল বুঝতেও পারলাম না। বড়ো হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম ছোটবেলায় দোলার ওপর খবরদারি করা যতটা সহজ ছিল, এখন একটুখানি মেশা তারচেয়ে হাজারগুণ কঠিন।


সেবার ইদের ছুটি কাটিয়ে হলে ফিরবো। রাতে গোছগাছ করে নিচ্ছি। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ। দরজা খুলে দেখি দোলার বাবা সাদেক আংকেল। মা বাবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে আলাপ করার পর সারমর্ম যা দাঁড়ালো তা হলো, কাল দোলা রাজশাহী যাবে ওর আন্টির বাসায়। যেহেতু আমিও রাজশাহী যাচ্ছি সেহেতু আমি যেন দোলাকে সাথে নিয়ে যাই। শুধু সাথে নিয়ে গেলেই হবে না তাকে তার আন্টির বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। স্কুলের ম্যাথ টিচার শাহীন স্যারের পর তাই দায়ীদের লিস্ট করেলে যার নাম আসবে সে দোলার বাবা স্বয়ং সাদেক আংকেল।   


পরদিন। ট্রেনটা হেলেদুলে বেশ দ্রুত গতিতেই চলছে। দোলার সাথে পাশাপাশি বসেও কেমন একটা জড়তা কাজ করছিল! অথচ মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সবকিছু সহজ হয়ে গেল! আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম,

-রাজশাহীতে কতদিন থাকবা?

-তোমাকে বলতে হবে কেন?

-আমি সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি যে।

-এইজন্য আমাকে কিনে নিয়েছো না কি?

-ট্রেনের টিকিট তো কিনে দিয়েছি। 


দুজনেই হেসে ফেললাম। সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল।এরপর দোলা জিজ্ঞেস করলো,

-তারপর বলো কেমন যাচ্ছে সময়?

-খুব দ্রুত। দেখছো না ট্রেন কত দ্রুতবেগে যাচ্ছে?

-কথা চালাচালিতে তুমি আগে থেকেই পটু।

-তবু এখন অবধি পটেনি কেউ!

-ট্রাই করেছো না কি?

-সেই সুযোগ আর পাচ্ছি কই?

-কেন?

-দেখছো না ট্রেন কত দ্রুত চলছে?

-ফাজিল একটা! সিনিয়রের সাথে ফ্লার্টিং?

-তোমার সার্টিফিকেটে ডেট অব বার্থ দেখেছি আমি। দু বছর কমানো আছে।

-তুমি কিন্তু ছোটবেলার চেয়ে আরও বেশি ফাজিল হয়েছো!

-হ্যান্ডসামও হয়েছি। বলো হইনি?

-তা হয়েছো। তবু আমার মনে ধরছে না।

-ছি! মন এত ছোট! আমার মতো একটা মানুষ মনে ধরছে না তোমার?

-তা তোমার মনে বুঝি পৃথিবীর সব সুন্দরী মেয়েদের ধরে রেখেছো? অনেক বড়ো? অনেক জায়গা?

-এইজন্য তোমার খুব জ্বলছে বুঝি?

-ইশ! আমি কিন্তু ট্রেন থেকে নেমে যাব?

-ট্রেনের চেইন টানো তবে।

-ঠিক আছে। জরিমানা তুমি দিয়ে দিও।

-তোমার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব আমাকে নিতে বলছো?

-আবার? 


সাদেক আংকেলের পর সবচেয়ে বেশি দায়ী বোধহয় আমাকেই করা যায়। তা নাহলে দোলা সেবার রাজশাহীতে ওতদিন থাকতে যাবে কেন আর আমারই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে তাকে রাজশাহী শহরটা ঘুরিয়ে দেখানোর ওত দায় কেন? সেদিন পদ্মার পারে ফুচকা খাওয়া শেষে বিল দিতে যেয়ে তাই দোলাকে বললাম,

-সিনিয়র হোক আর জুনিয়র হোক সব মেয়েদেরই কিন্তু একটা ব্যাপার খুব কমন?

-কোন ব্যাপারটা?

-তাদের পকেট নেই।

-আছে তো । এই যে দেখো জিন্সের প্যান্ট পরেছি আজ।

-পরলেই কী! ওয়ালেট তো নেই আর?

-সেটাও আছে!

-তাহলে বিল বার বার আমিই দিচ্ছি কেন?

-সেদিন ট্রেনে তুমি আমার সমস্ত দায়-দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ দেখালে না?

- তা আসার সময় আংকেল ব্যাপারটা একটু আনুষ্ঠানিকতা করে দিলেই পারতো! 


এতদিন যা বলেছি বলেছি! আজ দোলাকে একথা বলে নিজেই কেমন চুপসে গেলাম! কী করছি আমরা? কী হতে যাচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। কেমন একটা ঘোর লাগা সময়; মোহের মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি। 


সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দুজনেই পদ্মার পারে চুপচাপ হাঁটছিলাম। কী হবে হলে ফিরে? মাঝরাত অবধি দোলার সাথে সেই চ্যাটিং,ফ্লার্টিং! সুযোগ বুঝে দোলারও সুযোগ নেওয়া! গত সাতদিন তো এভাবেই চলছে। দোলা নীরবতা ভাঙলো,

-দীপ।

-বলো।

-এবার তো ফিরতে হবে।

-হ্যাঁ, রাত হয়ে এলো। 

-ঢাকায় ফিরতে হবে। মাস্টার্সের ভর্তি শুরু হয়ে গেছে।

-কেন এসেছিলে?

- কেন আবার? বেড়াতে।

-বেড়ানো হয়ে গেছে? 


আমি জানি এই প্রশ্নের জবাব দোলা সহসাই দিতে পারবে না। আমারই কেন এত তাগিদ দোলাকে প্রতিদিন সময় দেওয়ার? ইচ্ছে করেই পরদিন দোলাকে বিদায় জানাতে গেলাম না। মাঝেমাঝে বিরহ জমতে দেওয়া ভালো। নাটাই যদি হাতের মুঠোয় থাকে ঘুড়ি উড়ে আর কতদূর যাবে? 


দোলা ঢাকায় ফেরার ঠিক দশদিন পর সেদিন রাতে ফেসবুকে লগ ইন করে ওর মেসেজ পেলাম। দোলা লিখেছে,

- জুনিয়র হোক বা সিনিয়র! পুরুষ পুরুষই হয়!

-যেমন?

- কাছে পেলে খুব ফ্লার্টিং, একটু দূরে গেলেই ভুলে যায়!

-তাহলে বলছো শুধু ফ্লার্টিং ছিলো? আর কিছু না?

- আর কী?

- সেটা বোঝোনি বলেই তো নক দিতে দশদিন লেগে গেল! 


চিমটি চিমটি অভিমান আর ছোট ছোট অনুযোগে সমস্ত রাত কেটে গেলো। কাক ডাকা ভোরে বুঝতে পারলাম জল অনেকদূর গড়িয়েছে! 


তারপরের সাতটা দিন ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। কোনো কারণ ছাড়াই দোলার নাম্বার বন্ধ।  ফেসবুক ডিএক্টিভেট! সাত পাঁচ কত কী ভাবলাম! তাহলে দোলা কি আমাকে এভোয়েড করতে চাচ্ছে? আমার গ্র‍্যাজুয়েশন তখনও শেষ হয়নি, দোলা এমনিতেও দুই বছরের সিনিয়র! এভোয়েড করতে চাওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু না। কিংবা দোলার কি অন্য কোনো পছন্দ বা রিলেশনশিপ আছে? গত ছয় বছরে তো দোলার সাথে আমার কোনো যোগাযোগই ছিলো না। সেরকম কিছু থাকাও তো অস্বাভাবিক না! মাথায় কিছুই ঢুকছিলো না। 


সেদিন বৃহস্পতিবার। ক্লাস শেষে রুমে এসে নিজের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি মাত্র। মা ফোন দিয়ে বললো, আজ বিকেলের ট্রেনেই বাসায় আয়। ভাবলাম বিপদ আপদ কিছু হলো কিনা! একরকম দুঃশ্চিন্তা নিয়েই রাত দশটার দিকে বাসায় এসে পৌঁছলাম। সব নরমাল! রাতে খাওয়ার পর ছোটো বোন মিন্নির রুমে গিয়ে নানা কথা বলে ইনিয়েবিনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 

-মা আমাকে আজকেই আসতে বললো কেন? তুই জানিস কিছু? 

- তা আর জানবো না? দোলা আপুর বিয়ে কাল। তোমাকেও দাওয়াত দিয়েছে তো, এইজন্য।

- দোলার বিয়ে! 


পরদিন যা ঘটলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

মিন্নি সাত সকালে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসালো। বাবা সরাসরি জিজ্ঞেস করলো, 

-এই সংসারটা কে ডমিনেট করে বল তো? 

মুখ কাচুমাচু করে মা এর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে কোনোমতে বললাম, মা।

- তোর মা আমার চেয়ে কত বছরের ছোট জানিস?

- না।

- আট বছরের। 


মা রেগে বললো, ছেলেকে কি বলবা সেটাই বলো। আমাকে টানছো কেন? বাবা প্রসঙ্গ পাল্টালেন না। শুধু ক্যারেক্টারে বৈচিত্র‍্য আনলেন। 

- আচ্ছা বল দোলাদের সংসার ডমিনেট করে কে?

-দোলার মা। 

-দোলার বাবার চেয়ে দোলার মা কতদিনের ছোটো জানিস?

- না।

- দশ বছরের। 

- আর দোলা তোর চেয়ে কতদিনের বড়?

- দুই বছরের।

- বুঝবা তুমি! বুঝবা! 


কী বুঝব না বুঝবো সেটা পরের কথা। আপাতত সব  কিছুই যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে! ছোট বোন মিন্নিকে এক দুইবার চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম। 

ওমা! পাত্তাই দিলো না। 


দুপুরের পর দোলার মা নাসিমা আন্টি আমাদের বাসায় এলে একটু একটু বুঝতে পারলাম ঘটনাটা! সারমর্ম হলো, 

দোলার বিয়ে কথা হচ্ছিল। পাত্রপক্ষ- কনেপক্ষ উভয়েই রাজি! কনে কে হঠাৎ ফোন দিয়ে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হলো। বর সিডনিতে ফিরবে এইজন্য বিয়ের খুব তাড়া। সবই ঠিকঠাক, হঠাৎ শুরু হলো কনের কান্না। বিয়ের দিন কনে কান্না করবে সেটা খুব স্বাভাবিক কিন্তু বিয়ের আগেই যদি কান্না শুরু হয় তবে ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যা! তারচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো কনে কেন কাঁদছে সেটা সে জানে না!

কনের মা জিজ্ঞেস করে, তোর কারো সাথে রিলেশন আছে?

কনে বলে, না! 

কনের বাবা জিজ্ঞেস করে, তোর কোনো পছন্দ আছে?

কনে বলে, না!

তাহলে?

কনে কিছু বলতে পারে না। কাঁদে আর কাঁদে! 


বিকেলে আমাদের বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি সাদেক আংকেল! ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সালাম দিলাম কোনোমতে! আংকেল জিজ্ঞেস করলেন,

- গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট হতে কতদিন বাকি?

- ফাইনাল ইয়ার। 


কবে কমপ্লিট হবে! কবে চাকুরী হবে! বলতে বলতে সাদেক আংকেল যেমন এসেছিলো তেমনি চলে গেলো! লোকটাকে খুব নৈরাশ্যবাদী মনে হলো! 


আমি যেমন দাঁড়িয়ে ছিলাম তেমনি দাঁড়িয়েই রইলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি মিন্নিকে সাথে নিয়ে দোলা এসেছে। দোলাকে এর আগে হাজার বার হাজার দিন দেখেছি, কিন্তু আজকের দেখাটা আলাদা! জীবনে এই দিনটা না এলে ছেলেদের বুঝি সত্যিই পুরুষ হয়ে ওঠা হয় না! মিন্নি টিপ্পনী কেটে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, বউ দুই বছরের বড়ো হলে বিষয়টা কেমন হবে আগে কখনো ভেবে দেখেছো?

দোলার চোখে চোখ রেখে জবাব দিলাম, উঁহু! ভাবিনি! 


-গল্পঃ চোখ কেড়েছে চোখ।

মঈনুল সানু।


সব ধরনের রোম্যান্টিক মজার গল্প পড়ুন।