গল্পঃ_আত্মা | রহস্যময় গল্প ২০২৪

 পৃথিবীর রহস্যময় মৃত্যু

পৃথিবীর রহস্যময় মৃত্যু

বাবা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো, এই ঝড় বৃষ্টির রাতে বৃদ্ধাশ্রম থেকে চলে আসার মানে কি, আজকে সকালেই মাত্র তোমাকে সেখানে রেখে এলাম, আর এসেছো ভালো কথা, বাসায় না এসে এই বাগানে দাঁড়িয়ে আছো কেন, তোমার না বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যায়, আমাকে আর কত জ্বালাবে তুমি, কবে নিজের খেয়াল রাখা শিখবে.........!


একটানা কথাগুলো বলে গেলাম বাবা-কে উদ্দেশ্য করে, বাবা আমার কথায় কর্ণপাত না করে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলো, আমি পেছন থেকে বললাম " আবার কোথায় যাচ্ছো, এখন আপাতত বাসায় আসো, কাল সকালে আমি অফিস যাওয়ার পথে তোমাকে আশ্রমে নামিয়ে দিবো......!


বাবা থামলো না, যেতে যেতে শুধু বললো " আমি ফিরে আসবো, আমার আরো অনেক কাজ বাকি আছে......!


ধুর তোমার যা করার করো, আমি বাসায় চলে গেলাম, এই বলে আমি বাসার দিকে হাঁটা দিলাম বাগান থেকে...!

আমি ফজলে রাব্বি আর আমার স্ত্রী শায়লা দুজনেই চাকরিজীবি হওয়ায় বাবার খেয়াল রাখার মতো কেউ নেই বাড়িতে, মা মারা গেছে কয়েক বছর আগে, তাই শায়লার কথা মতো শহরের সবচেয়ে ভালো বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসলাম বাবা-কে, বাবা অবশ্য রাজি ছিলো না, এক প্রকার ধমক দিয়েই রেখে আসলাম আজকে সকালবেলা, কিন্তু রাত না হতেই উনি বাসায় চলে আসছে, তাও আবার এমন ঝড় তুফানের ভিতর, তাই রাগ করে আর তাকে ফেরলাম না, যেদিকে যাওয়ার যাক, একটুপর যাওয়ার জায়গা না পেয়ে বাসায় ফিরে আসবেই.......!


★রুমে ঢুকে দেখলাম শায়লা নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে, আমি টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম বৃদ্ধাশ্রম থেকে পাঁচটা মিসডকল, মনে হয় বাবাকে সেখানে না পেয়ে কল দিয়েছিলো, আমি সাথে সাথে কলব্যাক করলাম, ওপাশ থেকে সালাম দিয়ে বললো " রাব্বি সাহেব একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে, আপনাকে কিভাবে যে বলি, আপনি নিজেকে শক্ত করুন....!


আমি বললাম " ভাই আমি জানি বাবা বৃদ্ধাশ্রম থেকে চলে এসেছে, চিন্তা করবেন না আমি কাল সকালে বাবাকে নিয়ে আসবো.....!


//আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন রাব্বি সাহেব, আপনার বাবা কিছুক্ষণ আগে ফেন-এর সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, এই খবর দেওয়ার জন্যই আপনাকে বারবার কল করছিলাম কিন্তু আপনি রিসিভ করেন নি..........!


★এতো রাতে কল করে আপনি আমার সাথে মজা করছেন, আপনার বিরুদ্ধে আমি হেরেসম্যান্টের মামলা করবো, আপনাকে দেখতে তো ভালো মানুষ মনে হয়েছিলো কিন্তু এসব কি ভাই.....!


//দেখেন রাব্বি সাহেব আপনি আমাকে ভালো ভাবেন নাকি খারাপ ভাবেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আপনার বাবা একটু আগে মারা গেছে, কাল সকালে এসে তার লাশটা নিয়ে যাবেন, আমরা কোন পুলিশি ঝামেলা চাই না এখানে......!


★ভাই এটা কিভাবে হতে পারে আপনি বলেন, একটু আগেও আমি বাবার সাথে কথা বলেছি, সে আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো, ওটা আমার মনের ভুল হতে পারে না.........!


// কাল সকালে এসে যখন তার লাশ দেখতে পাবেন তখন বিশ্বাস হবে আপনার, নেশা টেশা করে আবল তাবোল বলতাছেন, আপনাদের মতো বড়লোকদের ভালো করেই চেনা আছে আমার......!


এই বলে ফোনটা রেখে দিলো ওপাশ থেকে....! 

এগুলোর মানে কি, আমি নেশা করি নি আজকে, চোখে ঘুম আছে কিন্তু ঘুমের কারণে এতো বড় ভুল হতে পারে না, কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো না আমি, এখনই যাবো আশ্রমে, যদি লোকটার কথা মিথ্যা হয় বা এটা কোন প্রাঙ্ক হয় তাহলে মার্ডার করে ফেলবো আজ তাকে......!


রেইন কোর্ট টা পড়ে শায়লা কে কিছু না বলেই বেড়িয়ে পড়লাম, আগে বাবা-কে খুঁজতে হবে, বাবা হয়তো আশেপাশেই আছে, বাবা-কে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে হাজির হবো তাহলে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া যাবে লোকটাকে....!

বৃষ্টি থামার কোন নাম গন্ধও নেই, বাতাসের তিব্রতা এতো বেশি যে আমি সামনে এগুতে পারছিলাম না, মাঝে মাঝে বিকট শব্দে বজ্রপাতের সাথে বিদ্যুৎ চমকানো, বাবা কোথায় গেলো, এতক্ষণে বেশি দূর যাওয়ার কথা না, আশেপাশে অনেক খুঁজলাম কিন্তু বাবাকে কোথাও পেলাম না, হতে পারে বাবা আশ্রমে চলে গেছে, এখন সোজা সেখানেই যাবো....!


পেছন থেকে বাবার কন্ঠে কেউ ডাক দিলো " বাবা রাব্বি আমি এখানে, আমাকে নিয়ে যা.....!


সাথে সাথে পিছনে তাকিয়ে বাবাকে খুঁজতে লাগলাম, কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই, হন্ন হয়ে খুঁজলাম চারপাশে কাউকেই পেলাম, মনের ভুল ভেবে আশ্রমের উদ্দেশ্যে সোজা হাঁটা শুরু করলাম......!


★একদম কাক ভেজা হয়ে আশ্রমে গিয়ে উঠলাম, প্রায় শেষ রাত, অনেকে নামাজ পড়ার জন্য উঠেছে, পরক্ষণেই ঐ লোকটা আসলো যে আমাকে ফোন করেছিলো, আমি রাগী চেহারায় তার দিকে তাকিয়ে বললাম " কোথায় আমার বাবার লাশ, দেখি আমি নেশা করছি নাকি আপনি......!


//রাব্বি সাহেব শান্ত হোন, আমার সাথে আসেন, ঐ রুমে আপনার বাবার লাশ রাখা আছে.....!


★লোকটাকে অনুসরণ করে সেই রুমে গেলাম, ষাট ওয়াট এর হলুদ বাতি তে দেখলাম চকির ওপর সাদা কাপড়ে মোড়ানে একটা লাশ রাখা, আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে লাশের মুখ থেকে কাপড় টা সড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম, সত্যিই আমার বাবা আর নেই, বুঝতে পারছি না কাঁদবো নাকি অবাক হবো, তাহলে বাগানে আমি কার সাথে কথা বললাম, মৃত্যুর পর কি করে সে আমাকে দেখা দিলো....!

হঠাৎ পকেটে আমার ফোনটা বেজে উঠলো, স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম শায়লা ফোন করেছে, হয়তো ঘুম ভেঙে আমাকে না পেয়ে ফোন করেছে, আমি ফোন রিসিভ করে বললাম " একটু জরুরি কাজে বাইরে আসছি, ফিরতে একটু দেরি হবে...!

শায়লা বললো " সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোমার বাবা তো বৃদ্ধাশ্রম থেকে চলে আসছে, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে...........


গল্পঃ_আত্মা

পর্ব_১


.


গল্পঃ_আত্মা

পর্ব_২


শায়লা বললো " সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোমার বাবা তো বৃদ্ধাশ্রম থেকে চলে এসেছে, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে........!


★আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম, বাবার লাশ আমার সামনে, শায়লা বলছে বাবা আমার বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে, সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আমার, শায়লা-কে জোড় গলায় বললাম " যা কিছু হয়ে যাক তুমি দরজা খুলবে না, আমি এখন-ই আসছি, ফোন ধরে রাখো কানে, আমার সাথে কন্টাক্টে থাকো......!

এই বলে লাশ রেখেই আশ্রম থেকে দৌড় দিলাম, পেছন থেকে ঐ লোকটা ডাকছে " কি হয়েছে রাব্বি সাহেব, লাশ না নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, আমরা এই লাশের জিম্মা নিতে পারবো না, সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো, তারপর পুলিশে ইনফর্ম করবো.......!


★কথা গুলো শুনেও পিছনে ফিরে তাকালাম না, আমাকে বাসায় যেতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, শায়লার জীবন হুমকির মুখে, ওপাশ থেকে শায়লা বারবার জিজ্ঞেস করছে " কি হয়েছে, তুমি এমন করছো কেন, ঠিক আছো তো, আব্বা বারবার দরজা ধাক্কা দিচ্ছে, খুললে সমস্যা কি......!


★তোমাকে যা বলছি তা করো, দরজা খুলবে না, ওটা আমার বাবা না, তার দিকে নজর রাখো, আমি এখনই আসছি......!


**মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি, যা বলার ক্লিয়ারলি বলো, আমি স্পষ্ট আব্বা কে দেখতে পাচ্ছি আর তুমি বলছো ওটা বাবা না, সত্যি করে বলো তুমি কোথায় গিয়েছো, মদ-টত খেয়েছো নাকি......!


★দেখো শায়লা উল্টাপাল্টা কথা বলবে না, আমি এসে তোমাকে সব খুলে বলবো, অনেক খারাপ কিছু ঘটছে আমাদের সাথে.....!


**সেটা আমি জানি রাব্বি, যা হচ্ছে খুব খারাপ হচ্ছে, আমাকে একা রুমে রেখে যাওয়া তোমার ঠিক হয় নি, আমার খুব ভয় করছে.....!.


★কি ব্যাপার তুমি এমন গম্ভীর ভাবে কথা বলছো কেন, আর ভয়ের কিছু নেই, আমি বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি, ঐ লোকটা কি এখনো দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে নাকি চলে গেছে.......!


**এখনো দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে, আর তাকে ঐ লোক বলছো কেন, সে তোমার বাবা, আমি যাচ্ছি দরজা খুলতে, বেচারা বৃষ্টিতে ভিজে কি অবস্থা হয়েছে, দেখে খুব মায়া লাগছে, তুমি যা বলার বাসায় এসে বলো.......! 


★খবরদার শায়লা, আমার কথা শুনো ঐ লোকটা আমার বাবা না, আমার বাবা মারা গেছে, দরজা খুলবে না তুমি আমি না আসা পর্যন্ত......। 


**************


ওপাশ থেকে আর কোন আওয়াজ এলো না, আমি ফোনটা হাতে বারি দিচ্ছি বারবার, হ্যালো শায়লা, কথা বলছো না কেন, হ্যালো হ্যালো......... কল কেটে গেছে, তার মানে শায়লা আমার শেষের কথা গুলো শুনতে পায় নি, ও দরজা খুলে দিবে.....!

ফোন পকেটে রেখে দৌড়ের গতি আরো বাড়িয়ে দিলাম, প্রায় সকাল হয়ে এসেছে, বৃষ্টিও থেমে গেছে, চারোদিকে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে, আমাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আমার সেদিকে লক্ষ্য নেই, হঠাৎ একটা গাড়ি এসে আমাকে মেরে দিলো, রাস্তা থেকে ছিটকে অনেক দূরে গিয়ে পড়লাম, এক মূহুর্তের জন্য সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেলো, আধো আধো চোখে দেখলাম গাড়ি টা আমাকে পাশ কাটিয়ে ফুল স্পীডে চলে গেলো, আশেপাশে মানুষজন জড়ো হয়ে গেছে, আমি অনেক কষ্টে উঠে দাড়িয়ে দেখলাম পা টা অনেকখানি কেঁটে গিয়েছে........।


★দূর থেকে দেখা যাচ্ছে শায়লা বাসার গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে জড়োসড়ো হয়ে, শায়লাকে অক্ষত দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম, যাক চিন্তামুক্ত হলাম, ধীরে ধীরে শায়লার কাছে গিয়ে বললাম " তুমি ঠিক আছো তো, কি হয়েছিলো, তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন.....?


★শায়লা আমার কন্ঠ শুনে চমকে গেলো, রাগী চেহারার আমার দিকে তাকিয়ে বললো " আমাকে একা রেখে কেন গিয়েছিলি তুই, জানোস আমি কত ভয় পেয়েছি, একদিকে তোর বাবা আরেকদিকে একটা লাশ.....!


★লাশ মানে কার লাশ, বাসার ভিতর লাশ আসলো কোথা থেকে, আর তোমাকে না বলেছিলাম দরজা না খুলতে, ওটা বাবা ছিলো না, বাবা মারা গিয়েছি রাতেই, আমি সেখানেই গিয়েছিলাম......!


এবার শায়লা খুব অসহায় ভাবে বললো " যদি তোমার কথা শুনে দরজা টা না খুলতাম তাহলে ঐ লাশটা দেখতে হতো না আমাকে, আমাকে ক্ষমা করে দিও......!


★কি সব আবল তাবোল বলতাছো তুৃমি, আসো আমার সাথে, দেখি কোন লাশ, কার লাশ, রাত থেকে সবাই আমার মাথা টা খেয়ে দিচ্ছে এসব বলে....।

শায়লার হাত ধরতে গেলে ও দূরে সরে গিয়ে বললো " আমাকে ছুঁবে না, তুমি বাসায় যাও আমি তোমার পেছনে আসছি, খুব ভয় করছে.....!


শায়লার এরূপ আচরণ আমাকে অবাক করলেও বেশি মাথা ঘামালাম না, আমি বাসার ভিতরে পা বাড়ালাম, শায়লাও আমার পিছন পিছন আসছে, 

মেইন দরজা টা লাগানো, আমি গিয়ে আস্তে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো......।


যা দেখলাম তাতে নিজের চোখ-কে বিশ্বাস করতে পারছি না, এটা হতে পারে না, শায়লার রক্তাক্ত দেহ টা মেঝে তে পড়ে আছে, ওর চোখ দুটো উপড়ে ফেলা হয়েছে, গলা থেকে এখনো ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। 

এই দৃশ্য দেখে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, মেঝে তে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম, আমার মুখ থেকে একটা টু শব্দও বের হচ্ছে না, পেছনে তাকানোর সাহস হচ্ছে না, একটু আগেও শায়লা আমার সাথে কথা বলেছে। 

সাহস করে কাঁপতে কাঁপতে পেছনে তাকিয়ে দেখি শায়লা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায় যেভাবে সে মেঝে তে পড়ে আছে, আমি শায়লার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম, কি থেকে কি হয়ে গেলো....।


★শায়লা প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না, আমি তোমাকে ছাড়া অসহায় হয়ে যাবো, আমি বাঁচতে পারবো না, প্লিজ একবার বলো এগুলো আমার চোখের ভুল....!


**আমরা ভুল করেছি রাব্বি, আব্বা-কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা ঠিক হয় নি, আমি আমার ভুলের মাশুল দিয়েছি, তুমিও প্রস্তুত থাকো, খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে আমাদের......!


এই বলে আস্তে আস্তে আমার চোখের সামনে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো শায়লা, আমি চিৎকার করে বললাম " যেও না প্লিজ, আমাকে একা করে দিও না শায়লা,তোমাকে ছাড়া একটাদিনও থাকতে পারবো না আমি......... প্লিজ


শায়লা চলে গেলো, ওর রক্তাক্ত দেহটার সামনে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদছি আমি, আমার নিজের বাবা এমন এক ক্ষতি করলো, এই ক্ষতি কোন কিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব না, মাথায় প্রতিশোধের ঘোর নেশা জেগে উঠলো, কিন্তু একটা মৃত মানুষকে আমি কি শাস্তি দিবো, সে তো আমার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে.....!


তার দেহ মরে গেছে ঠিক-ই কিন্তু আত্মা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি তার আত্মা-কে কঠিন শাস্তি দিবো, তাকে দ্বিতীয় বারের মতো মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করাবো.................


গল্পঃ_আত্মা

পর্ব_৩_ও_৪


তার দেহ মরে গেছে ঠিক-ই কিন্তু তার আত্মা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি তার আত্মাকে কঠিন শাস্তি দিবো, তাকে দ্বিতীয় বারের মতো মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করাবো............।


হঠাৎ একটা অট্টহাসির শব্দ আমার কান ভেদ করে কলিজায় আঘাত করলো, হাসিটা ছিলো আমার বাবার, সে আমাকে উদ্দেশ্য করে ইয়ার্কির স্বরে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে, আমি রাগে গড়গড় করতে করতে চারদিকে খুঁজতে লাগলাম হাসির উৎস, চিৎকার করে বললাম " আমি তোমার হাসি চিরতরে বন্ধ করে দিবো, তুমি আমার শায়লা-কে হত্যা করেছো, সাহস থাকলে সামনে আসো আমার, কাপুরুষের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে হাসছো কেন..........!


<>আমি আসবো আমার প্রিয় ছেলে, অবশ্যই আসবো, তোকে আমি নিজ হাতে মারবো না, তুই প্রতিশোধের যন্ত্রণায় মানসিক চাপে এমনিতেই ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবি, ঐদিন পর্যন্ত আমি তোর পিছু ছাড়বো না.......!

পিছনে তাকিয়ে দেখ আমি এখানে, নে আমাকে ধর, মেরে ফেল, তোর প্রতিশোধ নে, আয় আমার প্রাণের প্রিয় সন্তান......! 


★পেছনে তাকিয়ে দেখি ড্রেসিং-এর আয়না তে বাবার প্রতিবিম্ব ভেসে উঠেছে, আয়নার ভিতর থেকে সে আমার সাথে কথা বলছে, একটা আত্মার কাছে আজ নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে, ধীর কন্ঠে বললাম " বাবা তুমি কেন এমনটা করলে, তোমাকে তো আমি বা শায়লা মারে নি, তুমি নিজেই নিজেকে মেরে ফেলেছো, তাহলে আমাকে এমন শাস্তি কেন দিলে তুমি.....!


<>আমার মৃত্যু একদিনে হয় নি রাব্বি, আমি বেঁচে থাকতে প্রতিদিন, প্রতি মূহুর্তে মরেছি, তোরা আমাকে বাঁচতে দেস নি, তোদের অবহেলা সহ্য করতে করতে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম, তোর সামনে তোর স্ত্রী আমাকে নানান কষ্টদায়ক কথা বলতো তখন তুই কিছুই বলতি না, আমি আশা করতাম তোর কাছে আমার পক্ষে কিছু কথা কিন্তু তুই নীরব, নিজের জীবন যৌবন সবকিছু শেষ করে দিয়েছি তোকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে, মানুষ যখন বলতো নিজের জন্য কিছু সেইভ করেন, সন্তান যখন বৃদ্ধ বয়সে আপনাকে রাস্তায় নামিয়ে দিবে তখন বুঝবেন, সবকিছু সন্তানের জন্য উজাড় করে দিবেন না....!


আমি তখন তাদেরকে অহংকার করে বলতাম আমার সন্তান সবার থেকে আলাদা, সে কখনও আমাকে ফেলে দিবে না, এখন আমি যেমন আমার সন্তানের প্রতি সবকিছু উজাড় করে দিচ্ছি, যখন আমি অক্ষম হবো তখন আমার সন্তানও আমাকে তার সবকিছু উজাড় করে দিবে.....।


কিন্তু আমি ভুল ছিলাম, ঐ মানুষগুলো সঠিক ছিলো, আমার সন্তানের কখনও সময় হয় নি আমার জন্য, আমাকে কখনও জিজ্ঞেস করে নি আমার কিছু লাগবে কি না, অথচ আমি তার চাওয়া গুলো মুখ ফুটে বলার আগেই এনে দিতাম, তার চোখের পানি মাটিতে পড়ার আগেই ধরে ফেলতাম........।


তোরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবি ছিলি, মাঝে মধ্যে বাসায় রান্না হতো তোদের খেয়াল খুশিমতো, সব সময় তোরা বাইরে থেকেই খেয়ে আসতি, আমি তোর বাবা, কোনদিনও জানতে চাস নি আমি কিভাবে খাই, কোথা থেকে খাই, আমার ঔষধের জন্য তোর কাছে মাথা নিচু করে হাত পাতা লাগতো, অথচ তোর উচিত ছিলো আমার শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়া, তোর স্ত্রী যখন বলতো এই আপদ কবে বিদায় হবে, বয়স তো কম হলো না তখন তুই নিচের দিকে তাকিয়ে ল্যাপটপে মশগুল থাকতি......!


তোর ছয় বছরের ছেলেটাকে হোস্টেলে রেখে পড়ালেখা করাস যাতে আমার সঙ্গ ত্যাগ করতে পারে, তোর স্ত্রীর ভাষ্যমতে আমার সাথে থাকলে নাকি তোর ছেলে নষ্ট হয়ে যাবে.......!


তোদের এই মানসিক অত্যাচার এক সময় গাঁ সয়ে গিয়েছিলো, তবুও আমি আশা ছাড়তাম না যে একদিন তুই নিজের ভুল বুঝতে পারবি, আমাকে বাবা হিসেবে পূর্ণ সম্মান করবি তাই বাইরের কাউকে এ সম্পর্কে কোনদিন জানতে দেই নি, যাদের কাছে আমি সন্তান নিয়ে গর্ব করতাম তারা যদি এসব জানতো তাহলে আমি কিভাবে মুখ দেখাতাম সবাইকে, নিজের কষ্ট মনের ভিতর চেপে রেখেই দিনগুলো কাটিয়ে দিচ্ছলাম......!


কিন্তু যেদিন তোরা সিদ্ধান্ত নিলি আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবি সেদিন আমি পুরোপুরি ভেঙ্গে গিয়েছিলাম, সবাই জেনে গেছে বিশিষ্ট শিল্পপতি হারুন চৌধুরীর ছেলে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে, এটা আমি মেনে নিতে পারি নি, তাই এই তোদের পৃথিবী-কে বিদায় জানিয়ে চলে গেলাম, ভেবেছিলাম মুক্তি পেয়ে যাবো কিন্তু তোকে নিজ হাতে শাস্তি দেওয়ার আকাঙ্খা আমাকে মুক্ত হতে দিলো না, আমি ধীরে ধীরে তোর সবকিছু ধ্বংস করে দিবো, তোকে তিলে তিলে মারবো...........!


★বাবার কথাগুলো শুনে আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম, কি বলবো এখন আমি, সত্যি-ই তো আমি ভুল করেছি, 


বাবা আমি আমার ভুল শিকার করছি, আমি জানি এই ভুলের কোন প্রায়শ্চিত্ত নেই তবুও তোমার কাছে আমি মন থেকে ক্ষমা চাচ্ছি, তুমি কাছে থাকলে তোমার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতাম, প্লিজ বাবা আমাকে মাফ করে দাও......!


আমার কাকুতিমিনতি বাবার হৃদয় গলাতে পারলো না, ভয়ংকর এক হাসি দিয়ে আয়নার ভিতর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো, তার এই হাসির রহস্য বুঝতে পারলাম না, সে আবার আসবে, আমার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সে আমার পিছু ছাড়বে না, এতক্ষণ প্রতিশোধের নেশা মাথায় ঘুরলেও এখন বাবার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে, অনেক অন্যায় করেছি তার সাথে, এর জন্য শায়লা-কে হারালাম, এখন নিজেকে বাঁচাতে হবে তার হাত থেকে, আমাকে কোন ভালো হুজুরের স্মরনাপন্ন হতে হবে, এর একটা সমাধান খুঁজে বের করে বাবার আত্মা-কে মুক্তি দিতে হবে.........!


তার আগে এখন শায়লার লাশ লুকিয়ে ফেলতে হবে, পুলিশি ঝামেলা হলে আমি ফেঁসে যাবো, আমার এসব আত্মা কাহিনি কেউ বিশ্বাস করবে না, নিজেকে শক্ত করলাম, শায়লার লাশটা বিছানা চাদরে মুড়িয়ে বাড়ির পেছনে পুকুর পারে দাফন করে ফেললাম, বাসায় এসে মেঝে পরিস্কার করছিলাম এমন সময় বৃদ্ধাশ্রম থেকে কল আসলো, এতকিছুর মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম বাবার লাশ এখনো আনা হয় নি, তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে বললাম " ভাই আমি দশ মিনিটের ভিতর আসছি লাশ নেওয়ার জন্য......!


উনি বললো " আপনার আর আশ্রমে আসা লাগবে না রাব্বি সাহেব, আপনার দেরী দেখে আমরা পুলিশকে খবর দিয়ে দিয়েছি, পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেছে ময়নাতদন্তের জন্য আর আপনার ঠিকানাও দিয়ে দিয়েছি, তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করবে......!


রাগে ফোন টা কেটে দেয়ালে ঘুষি দিয়ে হাত ফাটিয়ে ফেললাম, ভেবেছিলাম পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হবে না, এখন তারা যদি বাসায় আসে তাহলে এলাকার মানুষজনের কাছে জানাজানি হয়ে যাবে.....!


আমাকে এখন-ই এই বাসা ত্যাগ করতে হবে, নিজেকে বাঁচাতে হবে, পুলিশের সাথে ঝামেলায় পড়ে গেলে বাবার আত্মা থেকে আমি বাঁচতে পারবো না....।

তাড়াতাড়ি করে ব্যাগে কিছু কাপড় চোপড় নিয়ে মেইন গেইটে বড় তালা ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাইক নিয়ে......!

বাবা তখন আমার ছেলের হোস্টেলের কথা উল্লেখ করেছিলো, সে বলেছে আমার সবকিছু ধ্বংস করে তিলে তিলে মারবে আমাকে, তাহলে কি আমার ছেলের জীবনও হুমকির মুখে, শিট শিট শিট এটা বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেলো, আমাকে হোস্টেলে যেতে হবে তাড়াতাড়ি.................


পর্ব_৪


আমার ছেলের ছেলের জীবন হুমকির মুখে, আমাকে তাড়াতাড়ি হোস্টেলে যেতে হবে.......।


★পাগলের মতো বাইক টেনে হোস্টেলে গিয়ে পৌঁছলাম, সিকিউরিটি গার্ড আমাকে দেখে বললো " আরে সাহেব আপনি আবার আসছেন, কিছু কি ফেলে গিয়েছেন, আমাকে বলেন আমি গিয়ে নিয়ে আসছি......!


★মানে কি বলতে চাচ্ছেন আপনি, আমি তো এইমাত্র এলাম, আপনি ফাহিম-কে একটু ডেকে দেন (আমার ছেলের নাম ফাহিম)

ফাহিমের সাথে আমার একটু দরকারি কথা আছে.....! 


"" কি বলছেন সাহেব, দিনে দুপুরে তো দেখছি পুরা পিনিকে আছেন, একটু আগেই তো আপনি এসে ফাহিম বাবাজি রে নিয়া গেলেন, ফাহিমের আম্মু নাকি খুব অসুস্থ.......!


আমার মাথায় যেন আগুন ধরে গেলো, ঠাস করে সিকিউরিটি গার্ডের কলার ধরে বললাম " আপনি কি বুঝতে পারছেন কি বলছেন, আমি এইমাত্র আসলাম, একটু আগে কার সাথে ফাহিম গিয়েছে সত্যি করে বলেন, না হলে এখন আপনাকে খুন করবো আমি......!


সে খুব ভয় পেয়ে গেলো আমার এরূপ আচরণ দেখে, সে হয়তো এটা মোটেও এক্সপেক্ট করে নি আমার কাছে, ভয়ে ভয়ে বললো " সাহেব আমি সত্যি বলছি কিছুক্ষণ আগে আপনি এসেই ফাহিম-কে ডেকে দেওয়ার জন্য বলেছেন, আমি ফাহিম-কে ডেকে এনে দিয়েছিলাম, তখন আপনি বললেন যে ফাহিমের আম্মু খুব অসুস্থ, এই বলে ফাহিমের হাত ধরে নিয়ে চলে গেলেন, যাওয়ার সময় আমাকে পাঁচশো টাকা বকশিসও দিয়েছেন......!


এই বলে পকেট থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট বের করে দেখালো সে......!


★তার কলার ছেড়ে দিয়ে নিচে বসে গেলাম আমি, বুঝতে বাকি রইলো না এটা বাবার আত্মার কাজ, সে ফাহিম-কে নিয়ে গেছে, আমি দেরি করে ফেলেছি, আমার ছেলেকে আমি বাঁচাতে পারলাম না, বাবা হিসেবে আমি ব্যর্থ, এখন আর বেঁচে থাকার কোন মানে নেই, একটা আত্মার হাতে মরার চেয়ে নিজেই নিজেকে শেষ করে দিবো........।


সিকিউরিটি গার্ড আমাকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে ধরে নিয়ে সামনের একটা বেঞ্চে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো " সাহেব আমি জানি না আপনার কি হয়েছে কিন্তু দেখে বুঝতে পারছি খুব খারাপ কিছু হয়েছে, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমাকে বলেন, দেখি আমি কিছু করতে পারি কি না আপনার জন্য......! 


★তার দিকে লাল লাল চোখে তাকিয়ে দেখি অধীর আগ্রহে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়। 

আমি তাকে বললাম " ভাই প্রথমত আমাকে ক্ষমা করেন এরকম আচরণের জন্য, আর আপনার জানামতে কোন ভালো হুজুর থাকলে বলেন, যে প্যারানরমাল বিষয়ে অনেক এক্সপার্ট, আমি অনেক বড় বিপদে ফেঁসে গিয়েছি, ফাহিম-কে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তি আমি ছিলাম না, আমার রূপ ধারণ করা অন্য কেউ.........!


"" বলেন কি সাহেব, এটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার, আমার বাসার পাশে বড় একটা মসজিদ আছে, লোকমুখে শুনেছি ঐ মসজিদের ইমাম নাকি জ্বীন পালে, মানে জ্বীন দিয়ে বিভিন্ন কাজ কাম করায়, আপনি চাইলে তার ঠিকানা দিতে পারি........!


★অনেক ধন্যবাদ ভাই, আমাকে তার ঠিকানা টা দিন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে তার সাথে কথা বলতে হবে......!


তার কাছ থেকে ঠিকানা টা নিয়ে তাড়াতাড়ি রওয়ানা দিলাম, ফাহিমকে যদি মেরে ফেলা উদ্দেশ্য হতো তাহলে হোস্টেলেই মেরে ফেলতো, তাকে নিয়ে যাওয়ার পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। 

বাবা তুমি কি করতে চাচ্ছো, আমার ছেলেকে না মেরে আমাকে মেরে ফেলো, আমার ছেলে তো ছোট এখনো, ও তো তোমার কোন ক্ষতি করে নি......!


এসব ভাবতে ভাবতে হুজুরের ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম, মসজিদের পাশেই ছোট একটা কুটিরের মতো বাসা, দরজায় নক করার কিছুক্ষণ বাদে দরজা খুলে গেলো ভেতর থেকে, দরজা কে খুলেছে জানি না, ওপাশে কেউ নেই, ঘরের ভেতর হালকা নিভু নিভু মোমবাতির আলো, গম্ভীর কণ্ঠে ভেতর থেকে কেউ বললো " ভিতরে আসার ইচ্ছে না থাকলে দরজায় টোকা দিলে কেন.....!


★আমি ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে দরজা টা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেলো ধপাস করে, মোমবাতির আলো টা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো, এক পর্যায়ে রুম টা পুরো আলোকিত হয়ে গেলো, চোখে পড়লো একজন বয়স্ক লোক খাটের ওপর বসে আছে, তার পোষাক আসাক খুব-ই সাধারণ, মুখ ভর্তি দাড়ি আর হাতে তসবি, আমাকে ইশারায় তার সামনে বসতে বললো......! 


★আমি নির্দ্বিধায় তার সামনে গিয়ে বসলাম, সে আমাকে বললো " এবার বলো তুমি কেন এখানে এসেছো.....?


আমি তাকে প্রথম থেকে সবকিছু খুলে বললাম, তার কাছে কাকুতিমিনতি করে বললাম " আমার ছেলে কে ঐ আত্মার হাত থেকে বাঁচান প্লিজ, প্রয়োজনে আমি আমার জীবন দিবো তবুও আমার ছেলেকে বাঁচান......! 


সব শুনে উনি হাতের তসবি টা পাশে রেখে আমার গালে ঠাস করে একটা কষিয়ে থাপ্পর বসিয়ে দিলো, আমি থাপ্পর খেয়ে পুরো জ্ঞান হারানোর অবস্থা, একজন বৃদ্ধ মানুষের হাতে এতো শক্তি, মনে হয়েছে আমাকে লোহা দিয়ে আঘাত করেছে, নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি.....!


উনি বললো " যখন তুমি আমার ঘরে সালাম না দিয়েই প্রবেশ করছো তখন-ই বুঝতে পেরেছিলাম তোমার শিক্ষার অভাব আছে, আর এখন যা শুনলাম, নিজের বাবার সাথে যা করেছো তুমি তাতে আমার কিছু করার নেই, তোমার মতো অকৃতজ্ঞ সন্তানের জন্য এটাই প্রাপ্য, আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারবো না, তুমি যেতে পারো..........!


★আমি হুজুরের পা জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম, প্লিজ হুজুর আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না, ভুল আমি করেছি, শাস্তিও আমি পেতে চাই, আমার ছেলে নিষ্পাপ, একটা নিষ্পাপ বাচ্চা-কে তার বাবার ভুলের জন্য মরতে দিবেন না, আমাকে সাহায্য করেন দয়া করে, আমি এখন সম্পুর্ন নিরুপায়......!


হুজুর আমাকে ছাড়িয়ে বললো " দেখো বাছা আমি তোমাকে সাহায্য করবো না ঠিক কিন্তু তোমার নিষ্পাপ ছেলে কে অবশ্যই সাহায্য করবো, আমার জ্ঞান অনুসারে তোমার বাবার আত্মা ঐ বাচ্চার কোন ক্ষতি করবে না, তোমাকে মানসিক চাপে রাখার জন্যই সে তোমার ছেলেকে নিয়ে গেছে, তবুও একটা সন্দেহ থেকেই যায়, শত হলেও সে একটা আত্মা। তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না, তাই ঐ আত্মা-কে আমার সামনে হাজির করতে হবে এবং তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তোমার ছেলেকে বাঁচানোর কিন্তু সে যদি তোমাকে মেরে ফেলতে চায় তাহলে আমি তোমাকে বাঁচাতে পারবো না........!.


★ঠিক আছে হুজুর, আমি আমার জীবনের পরোয়া করি না, আপনি আমার ছেলেকে বাঁচান, এতেই আমি খুশি, আমাকে কি করতে হবে বলেন.......!


**তোমার বাবার আত্মা হাজির করতে হলে তার মরা দেহ এখানে নিয়ে আসতে হবে তোমাকে, কারণ তাকে এখনো দাফন করা হয় নি তাই দেহ ছাড়া আত্মা হাজির করা সম্ভব না, তুমি গিয়ে তোমার বাবার দেহ টা নিয়ে আসো এখানে, আমি এদিকে সব প্রস্তুতি গ্রহন করে রাখছি......!


★বাবার লাশ তো এখন পুলিশের হেফাজতে, এটা আমার জন্য খুব কঠিন হবে, তবুও আমি যেভাবেই হোক বাবার দেহ এখানে নিয়ে আসবো, আর সময় নষ্ট না করে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা দিলাম যেখানে বাবার লাশ রাখা আছে.......।


হাসপাতালে পৌঁছে কাউন্টারে আমি আমার পরিচয় দিলাম এবং বললাম আমি বাবার লাশ নিয়ে যেতে চাই, তারা আমাকে জানালো পুলিশের লেটার ছাড়া আমাকে লাশ হস্তান্তর করতে পারবে না,অনেক তর্কাতর্কি হলো তাদের সাথে কিন্তু কিছুতেই তারা আমার কাছে লাশ হস্তান্তর করলো না, তর্কাতর্কির মাঝে কেউ পুলিশ-কে ইনফর্ম করে দিয়েছে, আমি হাসপাতাল ত্যাগ করার আগেই সেখানে পুলিশ চলে আসলো.........!


★ধ্যাত যেটা চাচ্ছিলাম না সেটাই হলো, কোনভাবেই পুলিশকে আত্মার বিষয়ে জানানো যাবে না, তারা আমাকে সাইকো ভাববে আর সন্দেহের তীর আমার দিকেই ঘুরাবে। 

পুলিশের এস আই এসে আমাকে একটা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গেলো এবং বললো " রাব্বি সাহেব আপনি হঠাৎ করেই কোথায় উধাও হয়ে গেলেন, আমরা আপনার বাসায়ও গিয়েছিলাম, গেইটে বড় একটা তালা ঝুলানো, আশ্রমের ম্যানেজার আমাকে বললো আপনি নাকি বাবার মৃত্যুর খবর শুনে সেখানে গিয়েছিলেন এবং লাশ না নিয়েই আবার চলে হুটহাট করে চলে গিয়েছেন, এখন আবার আসছেন বাবার লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য, সত্যি করে বলুন তো কি করতে চাচ্ছেন আপনি, আপনার উদ্দেশ্য কি..........


গল্পঃ_আত্মা

অন্তিম_পর্ব 


পুলিশের এস আই বললো " সত্যি করে বলুন তো কি করতে চাচ্ছেন আপনি, আপনার উদ্দেশ্য কি.........।


★দেখুন এস আই সাহেব আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই, সেদিন বৃদ্ধাশ্রমে থাকাকালীন আমার একটা জরুরি ফোন এসেছিলো তাই বাবার লাশ না নিয়েই চলে যেতে হয়েছিলো, আশ্রম থেকে জানালো লাশ পুলিশের হেফাজতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাই নিতে চলে আসলাম, আমার বাবার লাশ দাফন করা টা কি আমার কর্তব্য না.......!


//সেটা অবশ্যই আপনার কর্তব্য কিন্তু আপনার বাবা মারা গেলো অথচ আপনার মাঝে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি না রাব্বি সাহেব, আর কি এমন জরুরি কাজ ছিলো আপনার যে বাবার লাশ টা নিতে আসতে এতো দেরি হলো........।


★মানে কি বলতে চাচ্ছেন, একটা মানুষের কি কাজ থাকতে পারে না, আর আমার বাবা আত্মহত্যা করেছে এই জন্য তার জন্য বেশি কষ্ট লাগছে না, সে কেন এই মহাপাপের পথ বেছে নিলো, মানুষ যখন জানতে পারবে বিশিষ্ট শিল্পপতি হারুন চৌধুরী আত্মহত্যা করে মারা গেছে তাহলে আমাদের বংশের কত বদনাম হবে বুঝতে পারছেন.......!


//ও আচ্ছা বাবা আত্মহত্যা করলে সমাজে আপনার স্ট্যাটাস ডাউন হয়ে যাবে কিন্তু বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসলে বোধহয় স্ট্যাটাস অনেক উপরে ওঠে তাই না রাব্বি সাহেব..... আর আপনার স্ত্রী কোথায়, সে কেন আপনার সাথে আসলো না, বাসায় যেহেতু তালা ঝুলানো সেহেতু সে বাসায় নেই, কোথায় আছে উনি.......!


★শায়লার কথা জিজ্ঞেস করা তে আমি থতমত খেয়ে গেলাম, শায়লা কে তো নিজ হাতে মাটি চাপা দিয়ে এসেছি, নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম " আমার স্ত্রী অফিসের কাজে একটু ঢাকার বাইরে গেছে, আর আমার ছেলে হোস্টেলে থেকে পড়া লেখা করে, তাই আমি একাই আসলাম বাবার দেহ নিতে.........!


★এস আই সাহেব কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন " ঠিক আছে আমরা আপনাকে লাশ হস্তান্তর করছি কিন্তু আপনার ওপর আমার নজর থাকবে, এখনো পুরোপুরি সন্দেহ দূর হয় নি আমার.......!


★ঠিক আছে স্যার আপনি নজর রাইখেন, আমি তো জানি আমি নির্দোষ তাই আমি এটা নিয়ে বিচলিত না একটুও, এখন আমাকে বাবার শেষ কাজ টা সম্পাদন করতে হবে, ছেলে হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব.........!


★যাক বাবা অনেক কষ্টে এই পুলিশের ঝামেলা থেকে রক্ষা পেলাম, কত প্রশ্ন করে সন্দেহের ভিত্তি তে, মনের ভিতর একটা ভয় ঢুকে গিয়েছিল যখন শায়লার কথা জিজ্ঞেস করলো, শায়লার চেহারা টা চোখে ভেসে উঠতেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো, কত স্বপ্ন ছিলো দুজনের, কত স্মৃতি, কত গল্প সবকিছু এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো, আমাদের একটা ভুল পুরো জীবনটাই এলোমেলো করে দিলো.......!


★লাশ নিয়ে হুজুরের বাসায় পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো, গিয়ে দেখি হুজুর এখনো মাগরিব নামাজ পড়ে বের হয় নি মসজিদ থেকে, ভেন থেকে লাশ টা নামিয়ে হুজুরের বাসার দরজার সামনে রাখলাম, ভেন ওয়ালা কে বিদায় দিয়ে বসে রইলাম বাবার লাশের পাশেই, কি থেকে কি হয়ে গেলো, আমার এতে রঙ্গিন জীবন টা এতো দুর্বিষহ হয়ে পড়বে কখনও কল্পনাও করি নি, চলে গেলাম ছোট বেলার স্মৃতিতে, বাবা কত ভালোবাসতো আমাকে, মা সব সময় বলতো ছেলে কে এতো আদর দিও না, ভবিষ্যতে খুব পস্তাতে হবে, বাবা খুব রাগ করতো মায়ের সাথে এটা নিয়ে, আমিও ভাবতাম আম্মুর বোধ হয় সহ্য হয় না বাবা আমাকে এতো ভালোবাসে বলে, কিন্তু আজ আমার আম্মুর কথাই সঠিক হলো, আমার বাবা-কে খুব পস্তাতে হয়েছে, নিজের জীবন দিয়ে পস্তাতে হয়েছে, এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে দু চোখ বেয়ে পানি পড়লো টের-ই পাই নি........!


★একটা ঠান্ডা হাত আমার কাঁধে রাখলো পেছন থেকে কেউ, আমি চমকে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেখলাম হুজুর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে, আমার চোখে পানি দেখে বললো " এখন আর আফসোস করে কি হবে বাছা, অনেক দেরি হয়ে গেছে তোমার চোখ খুলতে, সব হারিয়ে এখন তুমি নিঃস্ব অথচ তোমার টাকা পয়সার কোন কমতি নেই, তুমি চাইলে সারাজীবন পায়ের ওপর পা তুলে বসে খেতে পারবে তবুও আজ তুমি ফকির, কিছুই নেই তোমার........!


★হুজুর আপনি ঠিক বলেছেন, আমার চেয়ে হতভাগা এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই, ইচ্ছে করছে চোখ দুটো নিজেই অন্ধ করে দেই, সময় থাকতে সঠিক টা দেখতে পাই নি, সত্যি আজ আমি বড্ড অসহায়......!


**থাক বাছা আর আফসোস করতে হবে না, এখন আমাদের কাজ শুরু করতে হবে, তোমার ছেলের খোঁজ করতে হবে, সে তাকে কোথায় রেখেছে সেটা জানতে হবে।

লাশ টা ভিতরে নিয়ে আসো, ভিতরে ঢোকার সময় সালাম দিয়ে ঢুকবে......!


★আমি হুজুরের কথামতো সালাম দিয়ে লাশ নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম, ঘরের মেঝেতে একটা গর্ত করা হয়েছে, গর্তের চারপাশে বিভিন্ন রঙের মোমবাতি জ্বালানো এবং দুই পাশে দুইটা কঙ্কালের মাথা......!


আমাকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হুজুর বললো " তুমি কি ভেবেছো কারো আত্মা হাজির করা খুব সহজ হবে, আগেই বলে দেই ভয় পেলে চলে যাও, এই জায়গা শুধু সাহসীদের জন্য, এখানে আসতে হয় মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে........!


★এমন টা বলবেন না হুজুর, এখন আমার বেঁচে থাকার চেয়ে মারা যাওয়াটাই বেটার, তাই মৃত্যুর ভয় আমি করি না, আমার জীবনের বিনিময়ে ছেলেকে বাঁচানো-ই এখন আমার লক্ষ্য.....! 


**তাহলে শুরু করা যাক, দেখি তুমি মৃত্যু থেকে পালিয়ে যাও কি না, লাশ টা এই গর্তে এনে রাখো এবং তুমি লাশের পায়ের কাছে বসে পড়ো, আমি মাথার কাছে বসবো, যা কিছু হয়ে যাক তুমি বসা থেকে উঠবে না আর পেছনে তাকাবে না......!


★হুজুরের কথামতো আমি পায়ের কাছে বসলাম এবং হুজুর মাথার কাছে, উনি চোখ বন্ধ করে কিছু পড়তে শুরু করলেন এবং তসবির পুতিগুলো একটা একটা করে ছাড়তে লাগলেন, হাতের খালি মুষ্টি লাশের দিকে ঝাড়া মারলেন এবং ধুলো জাতীয় কিছু বের হয়ে লাশের পুরো দেহ তে মিশে গেলো, হঠাৎ বাবার লাশ নড়চড়া শুরু করলো, এবার সত্যি খুব ভয় পেয়ে গেলাম, বুঝতে না দিয়ে হাতের মুষ্টি শক্ত করে চেপে ধরে বসে আছি, হুজুর বলেছিলো কোন কারণেই যেন উঠে না যাই, হুজুর যখন চোখ খুলে তাকালো তখন সবচেয়ে বেশি ভয় টা পেলাম, উনার চোখে আগুন জ্বলছে, দুই পাশের শিকারি দাঁত গুলো হালকা লম্বা হয়ে বেরিয়ে এসেছে, এটা দেখে আমার কলিজা তে আর পানি নেই, কিন্তু ভয় পাওয়া টা যেন আরো বাকি ছিলো.......।


হঠাৎ বাবার লাশ উঠে বসে পড়লো, চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বলতে লাগলো " এখানে কেন ডাকা হয়েছে আমাকে, হুজুর আমি জানি আপনার শক্তি অনেক বেশি, আপনি চাইলে আমাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারেন কিন্তু আমি আপনার কাছে হাত জোড় করে বলছি আমাকে আমার প্রতিশোধ নিতে বাঁধা দিবেন না, এটা আমার প্রতি অন্যায় করা হবে.......!


★এবার হুজুর তার স্বাভাবিক রূপে ফিরে এলো এবং বললো " আপনাকে এখানে ডেকেছি শুধু একটা কারণে, ঐ নিষ্পাপ বাচ্চা টা কোথায়, তাকে ছেড়ে দিন, আপনার ছেলের সাথে আপনি যা খুশি তা করতে পারেন,এর এতে আমি কোন বাঁধা দিবো না কিন্তু ঐ বাচ্চার কোন ক্ষতি হলে আমি আপনাকে কঠিন শাস্তি দিবো......!


বাবার আত্মা বললো " আমার ছেলের মৃত্যু ওর জন্য খুব সহজ শাস্তি হবে হুজুর, তাই ওকে মৃত্যুর আগে আরেকবার মারার জন্য ওর ছেলেকেও আমি মেরে ফেলবো, তাহলে ও বুঝবে আমি কতোটা কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছেড়েছি......! 


★বাবা প্লিজ এমন করবে না, ফাহিম কে তো তুমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতে, সে তোমার একমাত্র আদরের নাতি, ওর কোন ক্ষতি করো না বাবা, আমাকে মেরে ফেলো.......!


হুজুর বললো " হারুন সাহেব আমি জানি আপনার সাথে অন্যায় করা হয়েছে কিন্তু এখানে আপনার দোষ টা বেশি, আমার মতে আপনার ছেলে কে শাস্তি দেওয়ার অধিকার আপনার নেই......!


বাবা খুব রেগে গিয়ে বললো " হুজুর কি বলছেন আপনি, ওদের অবহেলা আর অযত্নেই আমি মারা গিয়েছি, আর আপনি বলছেন সব দোষ আমার.....! 


**সব দোষ আপনার, আপনি আপনার ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত বানিয়েছেন কিন্তু সুশিক্ষিত বানাতে পারেন নি, আপনার ছেলে কে দুনিয়ার শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন কিন্তু দ্বীনের শিক্ষা দিতে পারেন নি, ভেবে দেখুন তো কখনও কি তাকে নামাজের জন্য শাসন করেছেন, আপনার ছেলেকে কি আপনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন, তাকে কি শিখিয়েছেন মা বাবার সাথে কিরূপ ব্যবহার করতে হয়, আমাদের রাসূল (স) এর জীবনী পড়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন কখনও, মা বাবার মর্যাদা সম্পর্কে তাকে কি কখনও অবগত করেছেন, ইসলামে পিতা মাতার মর্যাদা কত উঁচুতে সেটা কি তাকে বুঝিয়েছেন কখনও।

আপনার উত্তর হবে না, আপনি কচু গাছ লাগিয়ে তো আঙুর ফলের আশা করতে পারবেন না, আমি বলবো আপনি বাবা হিসেবে ব্যর্থ, এই পরিস্থিতির জন্য আপনি নিজেই দায়ী.........! 


কি ব্যাপার হারুন সাহেব আপনি নীরব কেন, এখন কোন কথা বলছেন না কেন, প্রতিশোধ নিবেন না, তাড়াতাড়ি প্রতিশোধ নেন, আপনার আত্মা কে শান্তি দিন......!


//সত্যি হুজুর আপনার মতো করে কখনও ভেবে দেখি নি, আমি নিজেও সারাজীবন শুধু টাকার পিছনে ছুটেছি, আমি ভেবেছি টাকা-ই সবকিছু, টাকা ছাড়া পৃথিবীতে সত্য বলতে আর কিছু নেই, আমার ছেলেকেও আমি শিখিয়েছি কিভাবে টাকা ইনকাম করতে হয়, কিভাবে শীর্ষ ধনীদের একজন হওয়া যায়, কিন্তু টাকা যে মানুষকে অমানুষ বানিয়ে দেয় সেটা কখনও বুঝতে পারি নি, আপনি সত্যি বলেছেন হুজুর ওর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার কোন অধিকার আমার নেই, আমি বাবা হিসেবে ব্যর্থ......!


আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো " রাব্বি আমাকে মাফ করে দিস বাবা, অনেক হয়রানি করেছি তোকে, তোর স্ত্রী কে কেড়ে নিয়েছি আর ফাহিমের কোন ক্ষতি আমি করিনি, তাকে হোস্টেলেই রেখে এসেছি আবার, হুজুর কে অনেক ধন্যবাদ যার জন্য মৃত্যুর পর হলেও সত্য টা বুঝতে পেরেছি......!


★বাবা তুমিও আমাকে মাফ করে দিও, আমি তোমার যত্ন নিতে পারি নি, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, তোমাকে এবং শায়লা-কে হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু সত্য টা খোঁজে পেয়েছি, আমি আমার ছেলে কে সু শিক্ষা দিয়ে বড় করবো, দুনিয়াবি শিক্ষার আগে কোরআন শিক্ষা দিবো তাকে, আমার বৃদ্ধ বয়স টাও যেন তোমার মতো হয়ে না যায়........!


//ঠিক আছে আমার প্রিয় সন্তান, অনেক অনেক দোয়া রইলো তোমার জন্য, আমার জানাজা টা ঠিক ভাবে সম্পন্ন করো আর আমার জন্য দোয়া করো, এটাই আমার শেষ ইচ্ছে তোমার কাছে.......!


এই বলে বাবার আত্মা বাতাসের মতো চলে গেলো আর দেহ টা আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়লো.........................!!💀💀💀💀


সমাপ্ত


পর্রবের আরও গল্প পড়ুন।