চোখে পানি চলে আসবে | বাবা কষ্ট | বাবা মানে হাজার বিকেল

বাবা তুমি কেমন আছো

বাবা তুমি কেমন আছো

 আশিক কোথায় যাচ্ছিস বাবা.....??

এইতো  আমি একটু বাইরে যাচ্ছি কেন তোমার কিছু লাগবে। না মানে আসলে কথাটা কেমন করে বলি বলতে ও লজ্জা লাগছে আমার, না বলে ও পারছি না। আমকে ১০ টা টাকা দিবি বাবা। ১০ টাকা!

হ্যাঁ বাবা আসলে আমার স্যান্ডেল  টা ছিরে গিয়েছে তো তাই ভাবলাম এটা একটু সেলাই করে নিয়ে আসি। তুই শুধু বেশি না আমাকে ১০ টা টাকা দে।  আমি বাজারে হেঁটে যাবো হেঁটে আসবো। আসলে কি আমার কাছে কোন টাকা নেই, আমি হেঁটে আসা যাওয়া করলে টাকা লাগবে না ঠিক আছে কিন্তু স্যান্ডেল  সেলাই করতে টাকা লাগবে তাই না। আর তুই এতো দিন পর দেশে আসলি।  তাছাড়া বাইরে সবার সাথে যাবি ঘুরবি ফিরবি আনন্দ করবি তাই তোকে আর জালাতন করছি না। আমি নিজেই যাবো। আমার স্যান্ডেল  টা ছিরে গিয়েছে আমি ঠিক মতো হাঁটতে পারি না। সেদিন বাড়ির উঠানে পরে গিয়েছিলাম। কোমরে একটু লাগছে, আসলে স্যান্ডেল  ছারা তেমন চলা যায় না তো। নামাজ কালাম পড়তে হয়। খালি পায়ে মসজিদে গেলে রাস্তায় অনেক নাপাক কিছু থাকে। আর মসজিদে গিয়ে আমি দুদিন করে অন্যের স্যান্ডেল  পরে পা ধুয়ে মসজিদে যেতাম। কিন্তু ওইযে  দুলাল আছে না ও সেদিন সবার সামনে আমায় বলে দিল। আমি নাকি কিপ্টা। আমার কিপ্টামো স্বভাব  এখনো যায় নাই। একটা স্যান্ডেলের দাম কয় টাকা আর কিনতে পারে না। ছেলে এতো বড় চাকরি করে, বাসায় সব পাকা ঘর বাড়ি আর একটা স্যান্ডেল কিনতে পারে না।


দে না বাবা ১০ টা টাকা থাকলে। বিশ্বাস কর আমার আর কিছু লাগবে না। এ কথা গুলো সব এক মনে আমার বাবা বলে গেলেন, আর এসব শুনে আমার মাথায় যেমনি আকাশ ভেঙে পরার মতো অবস্থা তেমনি চোখ দিয়ে পানি পরছে টপ টপ করে। আমি এতো দিন টাকার পিছে ঘোড়ার রেসের মত ছুঁটেছিলাম।  তাই হয়তো আমার চোখের সামনের আমারই আপনজন। আপন মানুষ গুলোর কষ্ট  আমি কখনো দেখতে পাইনি। মা-বাবার প্রতি সন্তানের যে একটা কর্তব্য আছে,সেই বিবেকবোধ গুলো আমি হয়তো সাময়িক হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু বাবা আজ এমন আকুতিভরা কন্ঠে যখন নিজের সামান্য চাওয়া টুকু বললেন, তখন আমার বিবেকটা রীতিমতো  নাড়িয়ে উঠলো।

 মনে পড়ে গেল সেই ছোট বেলার কথা। যখন আমি কোন জিনিসের জন্য বায়না করতাম, শুধু একবার বলতাম আমার এটা চাই। আব্বা বলতো আমার কাছে টাকা নাই আমি এতো বাজে খরচ করতে পারবো না।কিন্তু ওমা এটা কি  তাজ্জব  ব্যাপার  কিছুক্ষণ পরে দেখতাম আমার সেই জিনিস টা আমার রুমে বালিসের পাশে রাখা।তখন আম্মুকে বলতাম যে আম্মু এটা কোথা থেকে আসলো।

আম্মু বলতো কি জানি তবে তোমায় মাঝে মাঝে বলি না ভাত খেয়ে নাও নইলে দৈত্য  আসবে। তুমি লক্ষ্মী ছেলের মতো খেয়ে নিতা তাই মনে হয় সেই দৈত্য খুশি হয়ে এসব দিয়ে গিয়েছে। আর আমি ও খুব খুশি হয়ে ইয়ে ইয়ে আমার পোষা দৈত্য আছে আমি যা চাই সে তাই দেয়।আমি আব্বুকে বলতাম তুমি খুব পঁচা আমায় কিচ্ছু দাও না কিন্তু দেখছো দৈত্য কত্ত ভালো সে আমায় কত্ত কিছু দেয়।কিন্তু যখন আস্তে আস্তে বড় হলাম  তখন বুঝতে   পারলাম  যে আসলে দৈত্যটা কে। 

 বাবা হলো আমাদের জীবনে সেই অদৃশ্য  দৈত্য যা আমরা বুঝতে পারি, কিন্তু একটা সময় এই মানুষ গুলোর সঠিক মুল্যায়ন দেই না। 


 যে মানুষ গুলো দিনের পর দিন নিজের শরীরের ঘাম জড়িয়ে তোমাকে মানুষ করলেন। তাদের ঋন হয়তো আপনার শরীরের চামড়া দিয়ে ও শোধ করতে পারবেন না। আজ আপনে বড় চাকরীজীবি, আপনার বাড়ি আছে, গাড়ি আছে।  কিন্তু এই সব কিছুর মূল বীজ দাতা  হলেন আপনার বাবা। তাই  বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি  আরো যত্নবান হয়ে উঠুন।


-ছোট_গল্প 

-বাবার_স্যান্ডেল 


মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।