পরকিয়া ফল সব সময় খারাপ | পরকিয়া গল্প

 পরকিয়া প্রেম

পরকিয়া প্রেম

পরকীয়া আসক্ত আমার স্বামী!আমি বিয়ের দুই মাসের মাথায় জানতে পারলাম।তাও আবার কার সাথে? বিবাহিত দুই বাচ্চার মায়ের সাথে, মহিলাটা কিনা আমার স্বামীর থেকেও বেশি বয়সের। আমি লেখা এইচএসসি দিয়েই বাবা মা আমায় বিয়ে দেন পারিবারিক ভাবেই।পাশের গ্রামে বাড়ি আমার স্বামী নাজমুল এর।নাজমুলদের আর্থিক অবস্থা ভালো ।সে পরিবারের একমাত্র ছেলে তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। নাজমুল‌ই বড়, বাজারে তাদের বড় বড় দুটি দোকান আছে।দেখতে শুনতেও ভালো।অপর দিকে আমার ফ্যামিলির অবস্থা নিম্নমধ্যবিত্ত।আমি দেখতে মোটামুটি, নাজমুলের নাকি প্রথম দেখায় আমায় ভাল লেগেছিল তার তিনদিন পরেই এক স্বন্ধ্যায়  নাজমুল তার বাবা মা দুই দুলাভাই সহ হঠাৎ করেই আমাদের বাড়িতে আসেন।বিয়ের প্রস্তাব দিলে বাবা ভীষণ খুশি হয় কারণ ছেলে তার ফ্যামিলি সব দিক থেকেই আমাদেরদের তুলনায় যথেষ্ট ভালো।বাবা আর দ্বিমত করে নি, আমার মতামত না নিয়েই সে রাতে কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে আমায় তুলে দেয়।তখন যদি বাবা তাড়াহুড়ো না করে ভালো করে খোঁজ নিতেন তাহলে নাজমুলের এমন অনেক কেচ্ছা পাওয়া যেতো।


যাইহোক এসব জানার পরে নাজমুলের সাথে রাগারাগি হয় আমার। আমি বাবার বাড়ি যেতে নিলে উনি এক পর্যায়ে আমার কাছে হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে একবার সুযোগ চায়।আঠারো বছরের কিশোরী আমি, আবেগ প্রবণ হয়ে আমিও ক্ষমা করি। কিন্তু তখন ত আর জানতাম না,কয়লা ধুলে ময়লা যায় না।একমাস ভালোই চলছিলো।মধ্যরাতে একান্ত সময় কাটিয়ে নাজমুল ঘুমিয়ে পড়ে আমার ঘুম আসছে না,কেন জানি অদ্ভুত কষ্ট হতো। হঠাৎ পাশেই নাজমুলে ফোন বেজে উঠে, অচেনা নাম্বার আমি রিসিভ করে হ্যালো বলতে নিবো তার আগেই নারী কন্ঠে বলে উঠে,


-'আজ রাত আমার সঙে কাটানোর কথা ছিলো তোমার আসো নি কেন?তুমি আসবে বলে আমি আমার দুই বাচ্চাকে ওদের দাদির কাছে রেখে এসেছি।দুই দিন আগে এসে ছিলে...


 আর কিছু না শুনে ফোন কেটে দেই।নাজমুল দুই দিন আগে দোকানে মাল তুলবে বলে শহরে যাওয়ার কথা বলে স্বন্ধ্যায় বেরিয়ে পরে পরেরদিন ভোরে আসে।পরবর্তীতে জানতে পারি এই মহিলার সঙ্গে ছিলো।কল লিস্ট চেক করে গত দুই দিনের কল মেসেজ দেখে আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হছে।ছিঃ কি অশ্লীল! হাউমাউ করে কেঁদে উঠার শব্দে নাজমুল জেগে যায় প্রথমে বুজতে না পারলেও পরে আমার হাতে ফোন দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। ভীতু স্বরে বলে,


-'লেখা তুমি আমার ফোন ধরেছে কেন?'

-'কেন ফোন ধরে খুব বেশি সমস্যা করে ফেললাম আপনার?'


নাজমুল শুকনো ঢুক গিলে বলল,

-'এভাবে কথা বলছো কেন?'

-'কি ভাবে বলব আশা করছিলেন?দুই দিন আগে রাতে কোথায় ছিলেন আপনি‌।ওই মহিলার সঙে তাই না?ফোন না ধরলে ত বুঝতেই পারতাম না।ছিঃ আজ এর একটা বিহিত করতেই হবে।ঘরে ব‌উ রেখে আপনি অই মহিলার কাছে যান।'


আমার চিৎকারে ভোর রাতে শশুড় শাশুড়ি জেগে দরজার সামনে এসে কড়া নাড়ের।আমি তড়িঘড়ি করে উঠে আসতে নিলে তিনি আবার ক্ষমা চান আর বাবা মাকে বলতে নিষেধ করেন।আমি তাকে ঝটকা দিয়ে ফেলে দরজা খুলে দেয়। শাশুড়ি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি সব কিছু বলে দেই। শাশুড়ি মা শুনে নির্বিকার কারণ তিনি আমায় খুব একটা পছন্দ করতেন না। আমার বাবার টাকা নেই যা দিয়ে ওনার বাড়িতে নানান কিছু পাঠাবে। কিন্তু আমার শশুড় ঘরে যেয়ে নাজমুলকে টেনে তুলে গায়ের জোরে তিন চারটা থাপ্পর মারলেন। শাশুড়ি আটকাতে গেলে চোখ রাঙানি দেন‌। আমি আর ঘরে ঢুকলাম না,দুই ঘন্টা বাহিরে বসে থেকে ছয়টার সময় খালি হাত পায়ে বাবার বাড়িতে আসি।মা বাবাকে সব বললে বাবা রেগে যায় মা কিছু বলে না। সিদ্ধান্ত নেই ডির্বোস নিবো কিন্তু মা বাঁধা দেয় বলে,


গল্প:-চিত্রলেখা_সেই_আমি 

ফারিহা খান নোরা


গল্প:-চিত্রলেখা_সেই_আমি 

ফারিহা খান নোরা

২শেষ


-'ছেলে মানুষ এই বয়সে একটু আধটু খারাপ পথে যাবেই।একটা বাচ্চা নে ঠিক হয়ে যাবে।জামাইয়ের ত দোষ নাই দোষ ত অই ম* এর সেই তো ডাকতো।বলি কি মা তুই আমাদের সম্মানের কথা ভাব।'


মায়ের কথা শুনে অবাক হলাম। মানুষের বিবেক বুজি এমন ই হয়।মেয়ের থেকে সম্মান আগে।তবে বাবা আমার সাথে ছিলো।তিন মাসের মধ্যে ডির্বোস কমপ্লিট।এই তিনমাসের মধ্যে কতো কি দেখেছি,গ্রামের মানুষের রূপ,মায়ের আসল রূপ দেখেছি। নাজমুল কয়দিন পর পর এসে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতো আমি যাই নি।ডির্বোস ত সে দিবে না, শশুড় জোর করেছে।তিনি শেষ বার আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তার ছেলের জন্য।আর বলেছিলেন নতুন করে সব শুরু করতে। আমি মেধাবী ছাত্রী ছিলাম তখনকার সময়ে এইচএসসি পাস করেই প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতো আমি এতো কিছুর পরেও চেষ্টা করি আর পেয়েও যাই।বাড়িতে মা সব সময় অশান্তি করে বুঝে না আমায়। আমি ছয়মাসের ট্রেনিং এ চলে যায় আমাদেয় গ্রাম থেকে তিন ঘন্টা দূরে ট্রেনিং সেন্টার।এই ছয়মাসে পুরোনো সবকিছু ভুলে নিজেকে পুরোপুরি ভাবে নতুন করে তৈরি করেছি যদিও কষ্ট হয়ছে তবু ত করতে হবেই।নিজের জন্য!


ট্রেনিং এর পর আমার পোস্টিং হয় জেলা শহরে।কাছের মানুষ,পরিবার,গ্রাম ,সমাজ সব কিছু ছেড়ে আজ আমি অনেক দূরে। আমার কলিগ ইরশাদ সাহেব,উনি আজকাল আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।কখনো চোখে চোখ পড়লে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,


-'ম্যাম ভালো আছেন?'


ওনার সাথে আমার তেমন পরিচয় নেই তবুও জবাব দিতে হয়।ওনার তাকানোতে আমি কখনো খারাপ কিছু দেখিনি শুধু দেখেছি একরাশ মুগ্ধতা।কিন্তু এই মুগ্ধতায় আমার আটকানো যাবে না।তার ছয় মাস পর এক স্বন্ধ্যায় উনার সাথে আমার দেখা হয়।উনি নিসংকোচে বলেন,আমাকে উনার ভালো লাগে। আমি আমার জীবনের সব ঘটনাই উনাকে খুলে বলি।আরোও একবার আমায় অতীত মনে করতে হবে এটা ভাবি নি।উনি কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলেন।আমি হাসলাম,আমার মত মেয়েকে কেই বা চাইবে?নিজের প্রতি নিজেই অসন্তুষ্ট আমি।


ঠিক একসপ্তাহ পর ইশরাদ সাহেব তার মাকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন।আমি তখন একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে একাই থাকতাম। হঠাৎ ওনার মা আমায় বাড়ি ব‌উ করতে প্রস্তাব দেয়। আমি বাকরুদ্ধ!কারণে আমি এই প্রস্তাব আশা করি নি।আর তাছাড়াও আমার মত মেয়েকে ইরশাদ সাহেব ডির্জাব করে না।উনি ভদ্র ও শান্ত স্বভাবে চরিত্র বান পুরুষ।উনার মা জোর করে আমার বাবার কাছে ফোন দেন,বাবার সাথে কি কথা হলো জানি না।বাবা আমায় বললেন, 


-'মা জীবণ তোমার তাই সিদ্ধান্ত ও তোমার গতবার আমি যে ভুল করেছি এবার তা করবো না।তবে একটা কথা এভাবে একা একটা মেয়ে কখনো চলতে পারে না।চলার পথে নানান বাঁধা ও অনেক কথা শুনতে হবে যা তোমার প্রাপ্য না।'

_________

আজ পাঁচ বছর আমি ও ইরশাদ দুইজন একসাথে অতিক্রম করতে চলেছি। আমাদের একটা তিন বছরের ছেলে সন্তান ও রয়েছে।নাম লামিদ।সেদিন বাবার কথা শুনে আরও একবার নিজের জীবণ এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেই।এখন বুজতে পারি আমি এবার আর কোনো ভুল করি নি।গ্রামে গেলে আর সবাই হাসাহাসি করে বাঁকা চোখে তাকায় না।মা আমায় নিয়ে গর্ব করে,যে মা আমার বিপক্ষে ছিল।শুনেছি নাজমুল অই মহিলার রুমে চার বছর আগে ধরা পরেছিল যার কারণে তাকে বিয়ে করতে হয়েছে।এখন সে নাকি আমার অপেক্ষা করে।আগের ভুল বুজতে পেরেছে। হাস্যকর! দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বুঝলে যা হয় আরকি।


আমি বেশ আছি ইরশাদ আমাদের সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে। শাশুড়ি আমার ভীষণ ভালো।নিজের মায়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে।আর ইরশাদ! সে এখন আমার কাছে আস্তো একটা ভালোবাসা।আর আমি ইরশাদ এর কাছে সম্মান তার চিত্রলেখা!


পরিশেষে,সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সেজন্য সময় থাকতে আপনাদের কাছের মানুষকে যথার্থ মর্যাদা দিবেন।


সমাপ্ত


এমন বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।